পাকিস্তান সেনাবাহিনী মতাদর্শগতভাবেই হিন্দুবিরোধী। তারা মনে করে, হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়াই উচিত। এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্যরা যে দমন অভিযান চালাচ্ছে, তার বিশেষ লক্ষ্য হিন্দু সম্প্রদায়। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের জান-মালের কোনো নিরাপত্তাই এখন নেই।
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপন দলিলে এভাবেই তুলে ধরা হয় অধিকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাম্প্রদায়িক দমননীতির চিত্র। আর জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী এ ধরনের দমন-পীড়ন যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ।
পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর চার পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট দেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মরিস জে উইলিয়ামস। রিপোর্টে তিনটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এগুলো হলো_(ক) পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই সীমিত হয়ে পড়া, (খ) পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীতি ও অভিযান এবং (গ) ইয়াহিয়া খানের কূটনীতির বিষয়বস্তু ও রূপ। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের একটি উপ-অনুচ্ছেদের শিরোনাম হলো ‘পূর্ব পাকিস্তানকে হিন্দুমুক্ত করার নীতি সেনাবাহিনীর’।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাম্প্রদায়িক দমননীতির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার তথ্যও উল্লেখ আছে ওই গোপন রিপোর্টে। রিপোর্ট মতে, জেনারেল ফরমান আলী খানও স্বীকার করেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮০ শতাংশ সদস্যই পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। ফরমান আলী অব দ্য রেকর্ড (গোপন রাখার শর্তে) জানান, ৬০ লাখের মতো লোক দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে’ নাগাদ আরো ১৫ লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিতে পারে। ইউএসএআইডির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ওই সময় পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫ লাখের মতো সদস্যই অবশিষ্ট ছিল।
রিপোর্টের শুরুতেই বলা হয়, ২৭ অক্টোবর ইসলামাবাদে কেবিনেট সেক্রেটারি গোলাম ইসহাক খান ইউএসএআইডি কর্মকর্তাকে জানান, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনীর রিপোর্টিং প্রেসিডেন্টকে বিভ্রান্ত করছে।
ইউএসএআইডির রিপোর্টে ইয়াহিয়ার বিচ্ছিন্নতার আলামত তুলে ধরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে সেনা কমান্ডাররা যার যার মতো করে অভিযান চালাচ্ছেন। বেসামরিক পুতুল গভর্নর মালেক ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে সামনে রেখে মূলত প্রদেশ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। আর মালেক ও তাঁর মন্ত্রীরা নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও পুরোপুরি সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল।
আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী দলের নেতা-কর্মী, বাঙালি ছাত্র-যুবক ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায় যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও এর স্থানীয় দোসরদের হত্যা-নির্যাতনের বিশেষ শিকার ছিল, তার প্রমাণ আছে একাত্তরের যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গোপন দলিলেও। একাত্তরের ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে যে টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে উল্লেখ আছে, ‘মনে হচ্ছে হিন্দুরাই সামরিক অভিযানের বিশেষ লক্ষ্য, যদিও হিন্দু অধ্যুষিত নয় এমন এলাকাও ওরা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।’
আমেরিকান যাজকদের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্লাডের ওই টেলিগ্রাম বার্তায় বলা হয়, পুরান ঢাকায় কিছু ব্যারিকেড ছাড়া বাঙালিদের দিক থেকে কোনো উস্কানি না থাকা সত্ত্বেও অগি্নসংযোগ ও গুলিবর্ষণ করে লোকজনকে হত্যা করেছে সৈন্যরা। সৈন্যদের কৌশলটা ছিল, প্রথমে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। প্রাণ বাঁচাতে ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করলে তখন তাদের গুলি করে মারা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ১১ সদস্যের একটি পরিবারের সবাইকে গুলি করে মারার তথ্যও আছে ওই টেলিগ্রামে।
১৯৯৮ সালে দলিলটির ওপর থেকে গোপনীয়তা তুলে নিয়ে আর্কাইভে উন্মুক্ত করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
আপনি যে তথ্যগুলো দিলেন, তার সূত্র কোথায়। আপনি যে বানিয়ে বানিয়ে লেখেননি (আমরা আগে থেকেই যা জেনে আসছি), তার প্রমাণ কি? ৪ পৃষ্ঠার রেকর্ড বা যে ছবিটি আপনি দিয়েছেন, তার ওয়েবলিঙ্ক দিন।
চন্দন দা’র আরেকটি তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। চলুক। :rose:
—
লেখার ভেতরের দলিলটির আকৃতি ছোট হওয়ায় পড়তে পারছি না। অ্যাডমিন, প্লিজ হেল্প। 🙁
খুব ভালো লিখেছেন।
এবং যুদ্ধের সময় তা কার্যকরি হতেও দেখা গিয়েছে।
তথ্যসূত্র এবং দলিলের লিংক দিন।