dolit-dhal-pur4

ছবি ঃ ইত্তেফাক

দি ডেইলি ইত্তেফাক সেপটেমবার ২০, ২০১০, সম্বারঃ ৫ আশ্বিন, ১৪১৭ এ প্রকাশিত \” দারিদ্র ও বঞ্ছনা পিছু ছাড়ছে না দলিতদের \” আবলম্বনে আমার এই লেখা।

পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে ধলপুর সুইপার কোলনির ম্যাথরদের মানবেতর জীবন কাহীনি। জানতাম না যে বাংলাদেশের এই জমাদার শ্রেনী দুশ আড়াইশ বছর আগে জীবিকার তাড়নায় দক্ষিন ভারত থেকে বেরিয়ে পড়েছিল ভারতের অন্যান অঞ্ছহলে।

জানাতা না যে, যে জমাদার শ্রেনীকে আমারা গ্রামের সরকারী ডাক বাংলো , টাউনে, শহরে দেখি তারা আসলে বাংগালীনা । তাঁদের চেহারা দেখেও ছোট বেলায় বুঝতে পারতাম না তাঁরা বাংগালী না। তাঁরা ত আমাদের সাথে বাংলাতেই কথা বলত।

এঁদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে গেলে তাদের সাথে আন্য ছেলে মেয়েরা কথা বলে না। এক সংগে বসতে দ্বিধা করে। ম্যাথর বলে গালিও দেয়। ঠিক যেমন বি আর আম্বেদকর নিজেই এই চরম আবমাননার শিকার হয়েছেন তাঁর ছাত্র জীবনে। এক দিকে দারিদ্রতার কঠোরাঘাত অন্য দিকে সামাজিক আঘাত। যেন এই দুইটি মিলিয়ে এঁদের জীবনকে করে তুলছে আরও দুর্বিসহ।

১৯৭১ সালের কিছু আগের একটা ঘটনা। গ্রামের সরকারী ডাকবাংলো। হরিদাস পুরের লনছ ঘাটের পাশে মধুমতি ও তার থেকে বের হওয়া গোপালগঞ্জ মুখি একটা ছোট শাখা নদীর ত্রিমোহনায় অবস্থিত এই ডাকবাংলো। ইটের দেয়াল তোলা শনের ছাদের ডাক বাংলো।

ডাকবাংলোর পাশে বড় ঝাউ গাছ। মধুমতির তীর নদী হতে ডাক বাংলোর উপর পর্যন্ত ইটে বাধান। সেই ইটে বাঁধান ঢালু, জল ছুঁই ছুঁই তলে লাইন করে লাগান ছিল মেহেন্দি গাছ । ঝাউ গাছটি মধুতির বাতাস নিয়ে খেলা করত আর আনন্দে শোঁ শোঁ শব্দ করত। দিনে দেখতাম কত বাদুড় ঝুলে থাকতে ওই ঝাউয়ের ডালে।

ডাকবাংলোয় কত রকমের ফুল গাছ। মধুমতির বাতাস ও ফুলের গন্ধে চারিদিক আবেসিত থাকত। শোনা যায় খুলনা থেকে ট্যাকের হাট গামি লন্সের আপার ক্লাশের যাত্রিরাও ত্রিমহনা দিয়ে যাবার সময় ফুলের গন্ধ পেত। এই রকম ফুলের ঘ্রান আমি কোন দিন আর পাই নি শুধু একটা যায়গা ছাড়া। এই সুবাস এক মাত্র পেয়েছিলাম দিল্লির চানক্যপুরির আমেরিকান এম্বাসির পাশ দিয়ে যাবার সময়। তখ্ন আমাদের গ্রামের সেই ডাকবাংলোর কথা মনে আসে। গন্ধ কি ভাবে হঠাত মনের আজ্ঞাতে ছোট বেলাকে মনে করিয়ে দেয়। কিছু ক্ষনের জন্যে ফিরে যাই গ্রামের সেই ডাকবাংলোয়। আনাঅন্দ ও বেদনা মধুর স্মৃতিতে মন কিছু ক্ষনের জন্যে সিক্ত হয়।

ডাকবাংলোর আশে পাশে আরো অনেক গুলি অফিস ঘর। বছরের সব সময় ই যেন ঘরগুলির দরজা বন্ধ থাকত। কিন্তু ওভারশিয়ার কাকা ও সামন্য একটু দুরে মদনদের ঘরই যেন ডাক বাংলোর মধ্যে সর্বদা মানুশের উপস্থিতি বইত।

মদনের মা, মদন, মদোনের ছোট ভাই ও বোন নিয়ে তাদের সংসার। তারা ডাকবাংলোর জমাদার ছিল।

একদিন সন্ধ্যে বেলা আমার মা রান্না ঘরে রান্না করছে। আমি রান্না ঘরে দাঁড়ানো। মদোনের মাকে দেখলাম রান্নাঘরের দরজার পাশে চোইকাঠে এক পা রেখে দাঁড়িয়ে মার সংএ কথা বলছে।কথা বলতে বলতে কি হলো জানিনা। মদোনের মা পা বাড়িয়ে রান্না ঘরে ধুক্তে উদ্দতো এমোন সময় মা আস্তে বল্লো, ‘ ও খানেই দাঁড়াতে ‘। মদোনের মা আর ভেতরে ঢুকলোনা । মদোনের মা আর যেন কোন কথা কইল না। মুখে চোখে কেমন এক অভিব্যক্ততি। মদোনের মা নিশব্দে চলে গেল। মাকে গিজ্ঞেস করলাম কেন মদোনের মাকে ভিতরে ঢোকালে না। মার মুখে কন কথা নেই।

অথচ আমি খেলা করতে করতে ডাকবাংলয় গিয়ে মদনদের ঘরে ঢুকতাম। আমার সম বয়সী মদনের ছোট বনের সাথে খেলা করতাম। মদনের বোন আমাকে নিয়ে নামত ইট বাধান নদীর কুলের সারি বদ্ধ মেহেন্দি গাছের কাছে। মেহেন্দি ফুল তুলে আমাকে দিত।

আজও আমার সেই দিনের মদনের মার সেই মুখের অভিব্যক্তির কথা মনে পড়ে। বুকের মাঝে এক চাপা কষ্ট ধাক্কা মারে। মানুস হয়ে মানূসের মান মর্জাদার স্বত্তাকে এই ভাবে আমারা পদদলিত করি।

ডাকবাংলোর ফুলেরা ওভারশিয়ার কাকাদের যে সুবাসে আমদিত করত সেই একই
সুভাসে পুলকিত করত মদনদেরকেও। ফুলেরা মদন দের কে কখনো তাদের ঘ্রান হতে বঞ্ছিত করে নাই। মদনেরা শুধু বঞ্ছহিত হল মানুসদের হতে।