(আমি কাঠখোট্টা ধরনের মানুষ, বই, কবিতা উৎসর্গ করলে কি হয় তা আজও বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ এর মৃত্যুতে আমি বেশ শোকাহত। তাই না বুঝেই তার উদ্দেশ্যে আমার এই অকবিতাটি উৎসর্গ করা হলঃ)
কাক আমার খুব প্রিয় একটি পাখি
কুৎসিত সৌন্দর্য নামক জিনিসটা
এর মধ্যে বিপুল পরিমানেই আছে
ঝাঁ চকচকে মসৃন অন্ধকার দেহ
সুদৃঢ় চঞ্চু, বিদ্রোহী নখর এবং
আরও আছে,
বন্ধুর সাহায্যে জীবন দেয়ার মত
অমলিন নিখাদ একটি মন।
যান্ত্রিক এই ঢাকায় সমস্ত পাখি যখন
বিলাসী জীবনের খোজে দেশান্তরী হয়েছে
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্যে
আমার প্রিয় বন্ধু কাক আজও রয়ে গেছে
বিন্দুমাত্র প্রতিবাদী না হয়ে, মানিয়ে নিয়েছে
সচ্ছন্দে মানুষ নামক জানোয়ারদের সঙ্গে।
সব সময়ই আমি কাকেদের ভালোবাসাবোধ
দেখে মুগ্ধ হই। বন্ধুর তরে জীবন বোধ করি
এই একবিংশ শতাব্দীতে আমার প্রিয় কাক
ছাড়া আর কেউই দিতে পারবে না। কেননা
বিজ্ঞানমনষ্ক যান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের
সুযোগ সন্ধানী হতে শেখায় । মন্দের ভালো,
কাকেরা বিজ্ঞান্মনষ্ক নয়। তাহলে মানব জাতির
মত তাদেরও বন্ধুবৎসল্য বিলীন হত, আর
দুঃখজনক ভাবে আমার প্রিয় এই পাখিটি
আমার পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ত।
বস্তুত আমি ভিষন দুঃখ পেতাম।
কিন্তু সম্প্রতি আমি কাকেদের মধ্যে ব্যাপক
পরিবর্তন লক্ষ করছি। তারা আগের মত
নিখাঁদ কালো নেই। ক্রমাগত তারা পান্ডুর
বর্ণ ধারন করছে। তাদের সংখ্যা ক্রমশই
কমছে। তাদের মধ্যে আগেকার পরোপকারিতা
আর লক্ষ করা যাচ্ছে না। বোধ করি তারা
আমাদের মত বিজ্ঞান্মনষ্ক হচ্ছে। তারা আমার মত
মধ্যবিত্তে পরিনত হচ্ছে। তারা সুবিধাবাদী হচ্ছে।
এখন এক কাকবন্ধুর জন্যে অন্য কাক বন্ধু কা-কা
রব তুলছে না। তাদের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে
হলুদ সাংবাদিকতার ব্যাপক প্রসার হচ্ছে।
শহরে আজ উপকারী কাকের বড় অভাব,
বোধ করছি, কিছু বুদ্ধিজীবি কাকেদের
মহাপ্রয়ানের হেতুই এই পরিবর্তন। কিন্তু
হে কাক সম্প্রদায়, আমিতো তোমাদের
আন্তরিক ভালোবেসেছি, তোমাদের বিদ্রোহ
আমাকে বিদ্রোহী করত, তোমাদের প্রতিবাদ
আমাকে স্বপ্ন দেখাত, তোমাদের আত্নত্যাগ
আমাকে উদারতা শেখাত। তারপরেও কি
তোমরা অভিমান করে থাকবে?
তোমাদের অতীত প্রতিবাদ, বিদ্রোহ
আমাকে আজও স্বপ্ন দেখায়, আমাকে
বিদ্রোহী করে। আমি স্বপ্ন দেখি,দিগন্তের
ওপার থেকে তোমরা আসছ স্বপ্নের মত
ঝাঁক বেধে,সমস্ত মিথ্যের আলোকে
তোমাদের নিষ্পাপ আঁধারে ঢাকতে। আমি
স্বপ্ন দেখি শহরের প্রত্যেকটি কার্নিশে আছো
সদা জাগ্রত প্রহরী তোমরা, তুমি
বন্ধু, কাক পাখি।
অভিমানী বিদায়ী বন্ধু পাখি কাক
চাই না মিথ্যে আলো, চাই তোমাদের
নিষ্পাপ কালো অন্ধকার সর্বদা জেগে থাক।।
মুক্তমনায় আব্দুল মান্নান সৈয়দের ওপর একটা লেখা আশা করছিলাম!
🙂
কবিতাটা ভাল লাগল!
@লাইজু নাহার,
ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করছি। ভালো থাকবেন।
@সাইফুল ইসলাম,
ঠিক সময়ে এই পোষ্ট অত্যান্ত ভালো লাগল। খুব মর্মস্পর্শি, পত্রিকায় পড়ে মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার এই কবিতাটি বেশ ভালই লাগল। আব্দুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যুতেও দুঃখ পাচ্ছি, যদিও তার কোন কবিতা পড়েছি বলে মনে পড়ে না।
@রৌরব,
ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
সমস্যা নাই একদিন হয়ত পড়ে ফেলবেন। 🙂
আজকে এক বাংলা চ্যানেলে আব্দুল মান্নান সৈয়দের রেকর্ডকৃত একটি সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছে।আশ্চর্যের বিষয়,একজন স্ব-ঘোষিত অস্তিত্ত্ববাদী হয়েও,তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের নামায-রোযা ইত্যাদি ইত্যাদি কেন সাহিত্যে আসছে না তা নিয়ে আক্ষেপ করলেন।তিনি এ-ও বললেন যে, আমাদের সাহিত্যিকদের সংকীর্ণ মানসিকতা না-কি এ জন্য দায়ী।আমাদের সাহিত্যে নাকি আযান নামায নেই।এ জন্য তিনি খুব দুঃখ পান।আমদের নাকি একটা আসল জাতীয়তা ও একটি আসল ধর্ম আছে।তিনি বললেন যে তিনি নিরাশাবাদী নন।আবার এ এসলামী সাহিত্য আমাদের জাতীয় জীবনে প্রবেশ করবে-এটাই তার কামনা।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের মানুষ হিসেবে সীমাবদ্ধতা থাকবেই। আমি জানি একজন বিশ্বাসী মওদুদির চেয়ে একজন বিশ্বাসী আব্দুন মান্নান সৈয়দ আমাদের বেশি প্রয়োজন। তিনি পরিচিত তার কবিতার জন্য, তার ধর্মবিশ্বাসের জন্য নয়। আমি এসকল মানুষকে সাধারনত ভন্ড বলি। কিন্তু এমনতো নয় এক দিক দিয়ে ভন্ড হলেই সে মানুষটা আর কোন ভালো কাজ করতে পারবে না? তাই না? 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
না আপনি ঠিকই বলেছেন।কিন্তু লেখকদের বা সেলিব্রেটিদের দোষগুলো দেখছি লোকজন বেশি অনুসরণ করে।এদিকটা একটু নজরে রাখলেই হয় আর কি।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
নিজস্ব স্বকীয়তার দরকার আমাদের।
মাত্র ৩-৪ দিন আগে কালের কন্ঠ পত্রিকায় আব্দুল মান্নান সৈয়দের সাক্ষাৎকার পড়লাম। ওখানে তার একটি কবিতার কিছু লাইন পড়ে ভাল লেগেছিল তাই ভাবছিলাম তার কবিতার বই কিনব। এমন ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শুনলাম তিনি মারা গেছেন। খুবই খারাপ লেগেছে। তার মৃত্যুর কথা শুনে আমার এক বন্ধু মন্তব্য করেছিল, এই যে এই মানুষগুলো যে যাচ্ছে, কাউকে তো রেখে যাচ্ছেনা। আশা করি এমন না হোক।
এই কবিতাটির কিছু লাইন বেশ ভাল লেগেছে । :yes:
@লীনা রহমান,
আমাদের জন্য বেশ বিরাট এক ক্ষতি কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যু। আমাদের মত পাবলিকের আসলে পৃথিবীতে না আসলেও তেমন কিছু হত না, কিন্তু এদের মত মেধাবী মানুষের জন্যই পৃথিবীটা সচল আছে। এরা যদি আজীবন বেঁচে থাকতে পারত তাহলে কি ভালোই না হত।
ধন্যবাদ কবিতাটা পড়ার জন্য।
ভাই অসাধারণ লিখেছেন।আপনার কবিতা পড়ে বহুদিন পড় একটি খাঁটি কবিতা পড়ার স্বাদ পেলাম।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ডালিম ভাইকে ধন্যবাদ। নিয়মিত হবেন আশা করছি। ভালো থাকুন। 🙂