ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুব্লক দূরে ( ১৮০ মিটার) প্রস্তাবিত মুসলিম কমিনিউটি সেন্টার-পোষাকি নাম পার্ক ৫১-এখন আমেরিকার মিডিয়া ডার্লিং। এই ১৩ তলা বিলডিংটির পরিকল্পনা এখন সব বিতর্কের শীর্ষে-কিছু কিছু গবেষক বলছেন এই বিতর্কই নাকি আমেরিকায় মুসলিমদের ভবিষ্যত নির্ধারন করবে! যদিও আমি নিশ্চিত নই আজ থেকে ১০০ বছর বাদে ধর্ম বলে কিছু থাকবে কি না-তবে এই নিয়ে বাতবিতন্ডার ফলে অনেক কিছুই মিডিয়াতে সামনে আসছে-যা আগে এত প্রকাশ্যে আসে নি। ৯/১১ এর পর থেকে মুসলিমদের প্রতি আমেরিকানদের রাগ ছাইচাপা আগুনের মতন ছিল। গ্রাউন্ড জিরো বিতর্ককে কেন্দ্র করে অগ্নুৎপাত ( মতান্তরে মিডিয়াপাত) হচ্ছে।

মসজিদ বিরোধিরা বলছেন এর ফলে সন্ত্রাসীরা উৎসাহী হবে। কারন ৯/১১ এর সন্ত্রাসীরা সবাই ধর্মীয় সন্ত্রাসী-যাদের জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞানছিল ইসলামের বিজয়।ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারের দু ব্লক দূরে যদি, ইসলামিক কমিনিউটি সেন্টার তৈরী করা যায়, তাদের মনস্বত্ত্বকেই চাঙ্গা করা হবে। এবং ৯/১১ এ যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি এ এক ভয়ানক অবিচার।

মসজিদের পক্ষে যারা আছেন, তাদের বক্তব্য হচ্ছে-এটি প্রাইভেট সম্পতি। ব্যাক্তিগত সম্পত্তির ওপর ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সবার আছে। আমেরিকাত আর সৌদি আরব বা ব্রুনেই না, যে সেখানে ইসলাম ছারা অন্য ধর্মপালনের অনুমতি নেই! বিভেদের মাঝে মিলন মহানই আমেরিকার সংবিধানের মূল সূর। ওবামাও আমেরিকার সংবিধানের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। ফলে আমেরিকাতে তার জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে। কিন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার বক্তব্য নির্ভুল-তিনিই আমেরিকান সংবিধানের প্রথম রক্ষক।

এর বিপক্ষে যে যুক্তি আসছে সেগুলি এই রকম-

প্রথমত আমেরিকাতে ব্যাক্তিস্বাধীনতা থাকলেও কমিনিউটি সেন্টার বা ঐ জাতীয় কিছু গড়তে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমতি লাগে। এই ক্ষেত্রে তাতে আটকায় নি। নিউ ইয়ার্কের মেয়র ব্লুমবার্গের অনুমতি ছিল। সমস্যা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরকানদের তাতে সমর্থন নেই। কিন্ত সেইব্যাপারে ত কোন আইন নেই।

দ্বিতীয় একটা ব্যাপার এই কমিনিউটি সেন্টারের মালিকানা নিয়ে। বর্তমান মালিক ইমাম ফয়জাল আবদুল রাউফ বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব। তিনি একজন বিশিষ্ট মৌলবাদি। অন্যান্য আমেরিকান মুসলিম মৌলবাদিদের মতন তার পদ্ধতিও হচ্ছে ধর মাছ, না ছুঁই পানি। ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধেও সে কিছু বলবে না-আবার তাদের পক্ষ নিয়েও বলবে না আমেরিকায় থাকার জন্যে। এই ক্যাঙারু সার্কাসে অনেকেই পাকা খিলাড়ি-রাউফ তাদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশেষ। সে একদিকে নিজেকে মডারেট বলে দাবি করে- অন্যদিকে বলে-” আসল অকৃত্রিম ইসলামের” কথা! অন্যান্য ধর্মগুরুদের মতন চুড়ান্ত স্ববিরোধিতায় ভর্তি এমন একজনের হাতে এই কমিনিউটি সেন্টারের দ্বায়িত্ব গেলে সেখানে কিসের চাষাবাদ হবে সেটা বলা মুশকিল।

তবে আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যেও অনেকেই গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ বানানোর বিরুদ্ধে। সুফী মুসলিমরা এমনিতেই মসজিদের গুরুত্বে বিশ্বাস করে না। তারা এর বিরুদ্ধেই কারন তাদের কাছে ইসলাম দ্বীনের ধর্ম-সেখানে এই ধরনের লোক দেখানো ইমারত বানানো ইসলামের মূল দর্শনের বিরুদ্ধে।

এই ব্যাপারে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রেখেছে এবারের মিস আমেরিকা রিমা ফাকিহা। রিমা প্রথম কোন আরব মুসলিম যে মিস আমেরিকা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ওর বক্তব্য হল আইনত এবং সংবিধানে কোন সমস্যা না থাকলেও মুসলিমদের উচিত আমেরিকানদের সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানে মসজিদ বানানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসা।

রিমা আরো কিছু বক্তব্য রেখেছে, যা এখানে আলোচনার দাবি রাখে।যেমন কোন এক মোল্লা রিমাকে বিকিনি পড়ার কারনে বাজে মুসলিম বলে গালাগাল দিয়েছিল। রিমার উত্তর হলে এই এক বিংশ শতকে জন্ম সূত্রে আমাদের একটা ধর্মীয় পরিচয় আছে ঠিকই-কিন্ত আমরা কেওই অতীতের সেই ধর্মাচরন মানি না-বরং একটি ধর্মবিহীন সার্বজনীন আধ্যাত্মিক চেতনার দিকেই বর্তমান বিশ্বের ঝোঁক।

রিমা যেটা বলতে চেয়েছে-সেটা বিবর্তনের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন। আমার ধারনা যেভাবে তথ্য বিস্ফোরন হচ্ছে তাতে ধর্মের গাঁটামো মানার লোক আর কয়েক দশকবাদে খুঁজে পাওয়া যাবে না-বরং আস্তে আস্তে ধর্ম বিহীন সার্বজনীন কিছু আস্তিক চিন্তা তখনো থেকে যাবে। তখন এই ধরনের মসজিদ, মন্দিরের প্রয়োজন আর থাকবে না। তাই এই বাজে বিতর্কের ও দরকার হবে না। PROTEST MARCH