[প্রশ্নের কারণ]
প্রশ্নকর্তা সকল সময়ই জানিতে চায় সত্য কি? তাই সত্যকে জানিতে পারিলে তাহার আর কোন প্রশ্নই থাকে না। কিন্তু কোন সময় কোন কারণে কোন বিষয়ের সত্যতায় সন্দেহ জাগিলে উহা সম্পর্কে পুনরায় প্রশ্ন উঠিতে থাকে।
কোন বিষয় বা কোন ঘটনা একাধিকরূপে সত্য হইতে পারে না। একটি ঘটনা যখন দুই রকম বর্ণিত হয়, তখন হয়ত উহার কোন একটি সত্য অপরটি মিথ্যা অথবা উভয়ই সমরূপ মিথ্যা; উভয়ই যুগপৎ সত্য হইতে পারে না হয়ত সত্য অজ্ঞাতই থাকিয়া যায়। একব্যক্তি যাহাকে “সোনা” বলিল অপর ব্যক্তি তাহাকে বলিল “পিতল”। এ ক্ষেত্রে বস্তুটি কি দুই রূপেই সত্য হইবে? কেহ বলিল যে অমুক ঘটনা ১৫ই বৈশাখ ১২টায় ঘটিয়াছে; আবার কেহ বলিল যে, উহা ১৬ই চৈত্র ৩টায়। এস্থলে উভয় বক্তাই কি সত্যবাদী? এমতাবস্থায় উহাদের কোন ব্যক্তির কথায়ই শ্রোতার বিশ্বাস জন্মিতে পারে না। হয়ত কোন একজন ব্যক্তি উহাদের একজনের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিল, অনুরূপ অন্য একব্যক্তি অপরজনের কথা সত্য বলিয়া স্বীকার করিল, অপরজন তাহা মিথ্যা বলিয়া ভাবিল। এইরূপে উহার সত্যাসত্য নিরূপণে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ঘটিল মতানৈক্য। আর এইরূপ মতানৈক্য হেতু ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ঘটিয়া থাকে নানারূপ ঝগড়া-কলহ, বিবাদ-বিসম্বাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা। এই রকম বিষয় বিশেষ ব্যক্তিগত মতানৈক্যর ন্যায় সমাজ বা রাষ্ট্রগত মতানৈক্যও আবহমানকাল হইতে চলিয়া আসিতেছে; যাহার পরিণতি সাম্প্রদায়িক কলহ ও যুদ্ধবিগ্রহরূপে আজ আমরা চোখের উপরই দেখিতে পাইতেছি।
জগতে এমন অনেক বিষয় আছে, যে সব বিষয়ে দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্ম এক কথা বলে না। আবার ধর্মজগতেও মতানৈক্যের অন্ত নাই যেখানে একইকালে দুইটি মত সত্য হইতে পারে না, সেখানে শতাধিক ধর্মে প্রচলিত শতাধিক মত সত্য হইবে কিরূপে? যদি বলা হয় যে, সত্য হইবে একটি; তখন প্রশ্ন হইবে কোনটি এবং কেন? অর্থাৎ সত্যতা বিচারের মাপকাঠি (Criterion for truth) কি? সত্যতা প্রমাণের উপায় (Test for truth) কি এবং সত্যের রূপ (Nature of truth) কি?
আমরা ঐ সকল দুরূহ দার্শনিক তত্ত্বের অনুন্ধানে প্রবিষ্ট হইব না, শুধু ধর্ম-জগতের মতানৈক্যের বিষয় সামান্য কিছু আলোচনা করিব।
আমাদের অভিজ্ঞতা হইতে আমরা জানিতে পাইতেছি যে, বিশ্বমানবের সহজাত বৃত্তি বা “স্বভাবধর্ম” একটি। এ সংসারে সকলেই চায়-সুখে বাঁচিয়া থাকিতে, আহার-বিহার ও বংশরক্ষা করিতে, সন্তান-সন্ততির ভিতর দিয়া অমর হইতে। মানুষের এই স্বভাবধর্মরূপ মহাব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সংসারে সৃষ্টি হইল কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প, সমাজ, নীতি এবং রাষ্ট্র; গড়িয়া উঠিল জ্ঞান-বিজ্ঞানময় এই দুনিয়া। মানুষ যেখানে যে কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন, একটু চিন্তা করিলেই দেখা যাইবে যে, সে তার “স্বভাবধর্ম” বনাম “স্বধর্ম” পালনে ব্রতী। এই মহাব্রত উদযাপনে কাহারো কোন প্ররোচনা নাই এবং এই ধর্ম পালনে মানুষের মধ্যে কোন মতানৈক্য নাই।
এই স্বভাবধর্মই মানুষের ধর্মের সবটুকু নয়। এমন কি “ধর্ম” বলিতে প্রচলিত কথায় এই স্বভাবধর্মকে বুঝায় না। যদিও একথা স্বীকৃত হইয়া থাকে যে পশু, পাখী, কীট, পতঙ্গ এমন কি জলবায়ু, অগ্নি ইত্যাদিরও এক একটা ধর্ম আছে, তত্রাচ বিশ্বমানবের ধর্ম বা “মানব-ধর্ম” বলিয়া একটি আন্তর্জাতিক ধর্মকে স্বীকার করা হয় না। সাধারণত আমরা যাহাকে “ধর্ম” বলি তাহা হইল মানুষের কল্পিত ধর্ম। যুগে যুগে মহাজ্ঞানীগণ এই বিশ্ব সংসারের স্রষ্টা ঈশ্বরের প্রতি মানুষের কর্তব্য কি তাহা নির্ধারণ করিবার প্রয়াস পাইয়াছেন। স্রষ্টার প্রতি মানুষের কি কোন কর্তব্য নাই? নিশ্চয়ই আছে, “এইরূপ চিন্তা করিয়া তাঁহারা ঈশ্বরের প্রতি মানুষের কর্তব্য কি তাহা নির্ধারণ করিয়া দিলেন। অধিকন্তু মানুষের সমাজ ও কর্মজীবনের গতিপথও দেখাইয়া দিলেন সেই মহাজ্ঞানীগণ। এইরূপে হইল কল্পিত ধর্মের আবির্ভাব। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মনীষী বা ধর্মগুরুদের মতবাদ হল ভিন্ন ভিন্ন।
এই কল্পিত ধর্মের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিল উহাতে মতভেদ। ফলে পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-ভাইয়ে এমন কি স্বামী-স্ত্রীতেও এই কল্পিত ধর্ম নিয়া মতভেদের কথা শোনা যায়। এই মতানৈক্য ঘুচাইবার জন্য প্রথমত আলাপ আলোচনা পরে পরে বাক-বিতণ্ডা, শেষ পর্যন্ত যে কত রক্তপাত হইয়া গিয়াছে, ইতিহাসই তার সাক্ষী। কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে বিশ্বমানব একমত হইতে পারিয়াছে কি?
কেবল যে বিভিন্ন মত এমন নহে। একই ধর্মের ভিতরেও মতভেদের অন্ত নাই। হিন্দু ধর্মের বেদ যাহা বলে উপনিষদ সকল ক্ষেত্রে তাহার সহিত একমত নহে। আবার পুরাণের শিক্ষাও অনেক স্থলে অন্যরূপ। “বাইবেল” এর পুরাতন নিয়ম (Old Testament) ও নূতন নিয়মে (New Testament) অনেক পার্থক্য। পুনশ্চ প্রোটেষ্ট্যান্ট (Protestant) ও ক্যাথলিকদের (Roman Catholic) মধ্যেও অনেক মতানৈক্য রহিয়াছে।
পবিত্র কোরানপন্থীদের মধ্যেও মতবৈষম্য কম নহে। শিয়া, সুন্নী, মুতাজিলা, ওহাবী, কাদিয়ানী, খারীজী ইত্যাদি সাম্প্রদায়ের মত এক নহে। আবার একই সুন্নী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত ¬ হানাফী, শাফী ইত্যাদি চারি মজাহাবের মতামত সম্পূর্ণ এক নহে। এমন কি একই হানাফী মজহাব অবলম্বী বিভিন্ন পীর ছাহেবদের যথা জৌনপুরী, ফুরফুরা, শর্ষিণা ইত্যাদি বিভিন্ন খান্দানের বিভিন্ন রেছালা। মহাত্না রাজা রামমোহন রায়ের অতি আধুনিক ব্রাহ্মধর্মও আধুনা দুই শাখায় বিভক্ত হইয়াছে।
এতোধিক মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও ভক্তদের নিকট আপন আপন ধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ, সনাতন ও ঈশ্বর অনুমোদিত, মুক্তি বা পরিত্রাণের একমাত্র পন্থা। বলা বাহুল্য যে, এরূপ ধারণা প্রত্যেক ধর্মেই বিদ্যমান। কোন ধর্মে একথা কখনও স্বীকার করে না যে, অপর কোন ধর্ম সত্য অথবা অমুক ধর্মাবলম্বী লোকদের স্বর্গপ্র্রাপ্তি, মুক্তি বা নির্বাণ ঘটিবে। বরং সকল সম্প্রদায়ের ধর্মযাজকেরা এই কথাই বলিয়া থাকেন যে, তাঁহাদের আপন আপন ধর্মই একমাত্র সত্যধর্ম অন্যকোন ধর্মই সত্য নহে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকদের স্বর্গপ্রাপ্তি, পরিত্রাণ, নির্বাণ বা মোক্ষলাভ ঘটিবে না। এ যেন বাজারের গোয়ালাদের ন্যায় সকলেই আপন আপন দধি মিষ্টি বলে।
বর্তমান যুগে পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মই আস্তিক। বিশেষত একেশ্বরবাদী। হিন্দু ধর্মও মূলত একেশ্বরবাদী। তাই যদি হয়, অর্থাৎ জগতের সকল লোকই যদি একেশ্বরবাদী হয়, তবে তাহাদের মধ্যে একটি ভ্রাতৃভাব থাকা উচিত। কিন্তু আছে কি? আছে যত রকম হিংসা, ঘৃণা, কলহ ও বিদ্বেষ। সম্প্রদায় বিশেষে ভুক্ত থাকিয়া মানুষ মানুষকে এত অধিক ঘৃণা করে যে, তদ্রূপ কোন ইতর প্রাণীতেও করে না। হিন্দুদের নিকট গোময় (গোবর) পবিত্র অথচ অহিন্দু মানুষ মাত্রেই অপবিত্র। পক্ষান্তরে মুসলমানদের নিকট কবুতরের বিষ্ঠাও পাক অথচ অমুসলমান মাত্রেই নাপাক। পুকুরে সাপ, ব্যাঙ মরিয়া পচিলেও উহার জল নষ্ট হয় না, কিন্তু বিধর্মী মানুষে ছঁুইলেও উহা হয় অপবিত্র। কেহ কেহ একথাও বলেন যে, অমুসলমানী পর্ব উপলক্ষে কলা, কচু, পাঠা বিক্রিও মহাপাপ। এমন কি মুসলমানের দোকান থাকিতে হিন্দুর দোকানে কোন কিছু ক্রয় করাও পাপ। এই কি মানুষের ধর্ম? না ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা?
মানবতার মাপকাঠিতে মানুষ একে অন্যের ভাই, ভালবাসার পাত্র, দয়ামায়ার যোগ্য, সুখ-দুঃখের ভাগী; এক কথায় একান্তই আপন। কিন্তু ধর্মে বানাইল পর।
স্বভাবত মানুষ সত্যকেই কামনা করে, মিথ্যাকে নয়। তাই আবহমানকাল হইতেই মানুষ “সত্যের সন্ধান” করিয়া আসিতেছে। দর্শন বিজ্ঞান, ভূগোল ইতিহাস, গণিত প্রভৃতি জ্ঞাননুশীলনের বিভিন্ন বিভাগ সর্বদাই চায় মিথ্যাকে পরিহার করিতে। তাই কোন দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক, কোন ঐতিহাসিক কিংবা নৈয়ায়িক সজ্ঞানে তাহাদের গ্রন্থে মিথ্যার সন্নিবেশ করেন না। বিশেষত তাঁহারা তাহাদের গ্রন্থের ভূমিকায় এমন প্রতিজ্ঞাও করেন না যে, তাহাদের গ্রন্থের কোথায়ও কোন ভুলভ্রান্তি নাই। অথবা থাকিলেও তাহা তাঁহারা সংশোধন করিবেন না। পক্ষান্তরে যদি কাহারো ভুলত্রুটি প্রমাণিত হয়, তবে তিনি তাহা অ্লানবদনে স্বীকার করেন এবং উহা সংশোধনের প্রয়াস পাইয়া থাকেন। এইরূপ পরবর্তী সমাজ পূর্ববর্তী সমাজের ভুলত্রুটি সংশোধন করিয়া নিয়া থাকে। এইরকম যুগে যুগে যখনই অতীত জ্ঞানের মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয় তখনই উহার সংশোধন হইয়া থাকে। এক যুগের বৈজ্ঞানিক সত্য আরেক যুগে মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া যায় এবং যখনই উহা প্রমাণিত হয়, তখনই বৈজ্ঞানিক সমাজ উহাকে জীর্ণবস্ত্রের ন্যায় পরিত্যাগ করেন ও প্রমাণিত নূতন সত্যকে সাদরে গ্রহণ করেন।
ধর্মজগতে কিন্তু ঐরূপ নিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। তৌরীত, জরুর, ইঞ্জিল, ফোরকান, বেদ-পুরান, জেন্দ-আভেস্তা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থসমূহের প্রত্যেকটি অপৌরুষেয় বা ঐশ্বরিক পুথি কি না, তাহা জানি না, কিন্তু ইহাদের প্রত্যেকটি গ্রন্থ এই কথাই বলিয়া থাকে যে, এই গ্রন্থই সত্য। যে বলিবে যে, ইহা মিথ্যা, সে নিজে মিথ্যাবাদী, অবিশ্বাসী, পাপী অর্থাৎ নরকী।
ধর্মশাস্ত্রসমূহের এইরূপ নির্দেশ হেতু কে যাইবে ধর্মাস্ত্রসমূহের বিরুদ্ধে কথা বলিয়া নরকী হইতে? আর বলিয়াই বা লাভ কি? অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থই গ্রন্থকারবিহীন অর্থাৎ ঐশ্বরিক বা অপৌরুষেয়, সুতরাং উহা সংশোধন করিবেন কে?
প্রাগৈতিহাসিককাল হইতে জগতে শত শত রাষ্ট্রের উত্থান হইয়াছে এবং পরস্পর কলহবিবাদের ফলে তাহাদের পতন ঘটিয়াছে। কিন্তু ধর্মে ধর্মে যতই কলহবিবাদ থাকুক না কেন জগতে যতগুলি ধর্মের আবির্ভাব ঘটিয়াছে তাহার একটিও আজ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয় নাই। ইহার প্রথম কারণ হইল এই যে, রাষ্ট্রের ন্যায় ধর্মসমূহের আয়ত্তে তোপ, কামান, ডিনামাইট বা এ্যাটম বোম নাই, যাহা দ্বারা একে অন্যের ধ্বংস সাধন করিতে পারে। ধর্মের হাতে আছে মাত্র দুইটি অস্ত্র – আশীর্বাদ ও অভিশাপ। এহেন অস্ত্রসমূহ ব্যক্তি বিশেষের উপর ক্রিয়াশীল কি না, জানি না, কিন্তু কোন সম্প্রদায় বা জাতির উপর একেবারেই অকেজো।
উহার দ্বিতীয় কারণ এই যে, প্রত্যেক ধর্মেই তাহার নির্দিষ্ট বিধি-বিধান সমূহের সত্যাসত্যের সমালোচনা একেবারেই বন্ধ। যেমন পাপ ও নরকের ভয়ে ভিতরের সমালোচনা বন্ধ, তেমন বাহিরের (ভিন্ন ধর্মের লোকদের) সমালোচনা চিরকালই বাতিল। কাজেই ধর্ম নির্বিঘ্নে আপন মনে দিন কাটাইতেছে। কিন্তু এইখানেই কি শেষ? না, বোবারও কল্পনা শক্তি আছে। মুখে কিছু বলিতে না পারিলেও সে বিশ্বের ঘটনাবলী সম্পর্কে চিন্তা করে, সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। বোবার সেই ভাব সমূহের অভিব্যক্তি ঘটে তাহার কার্যাবলীর মধ্য দিয়া।
ধর্মজগতে মানুষের স্বাধীন চিন্তা-ক্ষেত্র নিতান্তই অপরিসর। তাই বাঁধ-ভাঙ্গা জলস্রোতের ন্যায় সময় সময় মানুষের কল্পনা ধর্মের বাঁধ ভাঙ্গিয়া বিধি-নিষেধের গণ্ডির বাহিরে চলিয়া যায়। ধর্মশাস্ত্র যে সকল বিষয় ভাবিতে নিষেধ করিয়াছে, মানুষ তাহাও ভাবে এবং সমস্যার সমাধান না পাওয়ায় দুই এক-জন আনাড়ী লোক ধর্ম যাজকদের নিকটে গোপনে প্রশ্ন করে ইহা কেন? উহা কেন? সমস্যা যতই জটিল হউক না কেন, উহার সমাধান হয়ত জলের মত সোজা। যাজক জবাব দেন, “ঐ সকল গুপ্ততত্ত্ব সমূহের ভেদ সে (আল্লাহ) ছাড়া কেহই জানে না। ধরিয়া লও ওসকল তারই মহিমা,” ইত্যাদি।
ইংরাজীতে একটি কথা আছে যে, জ্ঞানই পূণ্য (Knowledge is virtue)। কিন্তু যে বিষয়ে কোন জ্ঞান জন্মিল না, সে বিষয়ে পুণ্য কোথায়? কোন বিষয় বা ঘটনা না দেখিয়াও বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু একেবারেই না বুঝিয়া বিশ্বাস করে কিরূপে? যাজক যখন দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, না দেখিয়া এমন কি না বুঝিয়াই ঐ সকল বিশ্বাস করিতে হইবে, তখন মনে বিশ্বাস না জন্মিলেও পাপের ভয়ে অথবা জাতীয়তা রক্ষার জন্য মুখে বলা হয় “আচ্ছা”। বর্তমানকালের অধিকাংশ লোকেরই ধর্মে বিশ্বাস এই জাতীয়।
এই যে জ্ঞানের অগ্রগতির বাধা, মনের অদম্য স্পৃহায় আঘাত, আত্মার অতৃপ্তি, ইহাই প্রতিক্রিয়া মানুষের ধর্ম-কর্মে শৈথিল্য। এক কথায় মন যাহা চায়, ধর্মের কাছে তাহা পায় না। মানুষের মনের ক্ষুধা অতৃপ্তই থাকিয়া যায়। ক্ষুধার্ত বলদ যেমন রশি ছিঁড়িয়া অন্যের ক্ষেতের ফসলে উদর পূর্তি করে, মানুষের মনও তেমন ধর্ম-ক্ষেত্রের সীমা অতিক্রম করিয়া ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ছুটিয়া যায় দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে।
ধর্মের মূল ভিত্তি বিশ্বাস (ঈমান)। ধর্ম এই বিশ্বাসকেই আঁকড়াইয়া আছে। কিন্তু এই বিশ্বাস কি বা ইহা উৎপত্তির কারণ কি, ধর্ম তাহা অনুসন্ধান করে না। এই বিশ্বে যাহার উৎপত্তি ও বিনাশ আছে, নিশ্চয়ই তাহার উপাদান বা কারণ আছে। বিশ্বাস জন্মিবার যে কারণ সমূহ বর্তমান আছে, পণ্ডিতেরা তাহা অনুসন্ধান করিয়া দেখাইয়াছেন। বিশ্বাস উৎপত্তির কারণাবলী সূক্ষ্মরূপে আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে, মনোবিজ্ঞানের যে কোন পুস্তুকে উহা পাওয়া যাইবে। আমরা শুধু মোটামুটিরূপে উহার কিঞ্চিৎ আভাস দিব।
জ্ঞানের সহিত বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক। বরং বলা হইয়া থাকে যে, জ্ঞান মাত্রেই বিশ্বাস। তবে যে কোন বিশ্বাস জ্ঞান নহে। প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর যে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত, তাহাকেই জ্ঞান বলা হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে ইহাই খাঁটি বিশ্বাস। পক্ষান্তরে যে বিশ্বাস কল্পনা, অনুভূতি, ভাবানুসঙ্গ বা কামনার উপর প্রতিষ্ঠিত তাহা জ্ঞান নহে। তাহাকে অভিমত (Opinion) বলা হইয়া থাকে। চলতি কথায় ইহার নাম “অন্ধ-বিশ্বাস”। সচরাচর লোকে এই অন্ধ-বিশ্বাসকেই “বিশ্বাস” আখ্যা দিয়া থাকে। কিন্তু যাহা খাঁটি বিশ্বাস, তাহা সকল সময়ই বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা (Lesson Experience) প্রসূত, প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্টিত। যাহা প্রত্যক্ষ তাহা সর্বদাই বিশ্বাস্য। মানুষ যাহা কিছু প্রত্যক্ষ করে, তাহা তাহার চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যেই করে এবং যাহা কিছু প্রত্যক্ষ করে, তাহাই বিশ্বাস করে। আমি স্বচক্ষে যাহা দেখিয়াছি, স্বকর্ণে যাহা শুনিয়াছি, স্ব-হস্তে যাহা স্পর্শ করিয়াছি তাহাতে আমার সন্দেহের অবকাশ কোথায়? যাহা আমাদের প্রত্যক্ষীভূত, তাহাতেই আমাদের অটল বিশ্বাস।
সংসারে এমন বস্তুও আছে, যাহাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। অথচ সেই সকল বস্তুকে যে আমরা সন্দেহ করি এমনও নহে। অনেক অপ্রত্যক্ষীভূত জিনিস আছে, যাহা আমরা সন্দেহ করি এমনও নহে। অনেক অপ্রত্যক্ষীভূত জিনিস আছে, যাহা আমরা অনুমানের ভিত্তিতেই বিশ্বাস করি। এই যে মানুষের ‘প্রাণ শক্তি’, যার বলে মানুষ উঠা, বসা, চলাফেরা ইত্যাদি সংসারের নানাপ্রকার কাজকর্ম করিতেছে, তাহা কি আমরা প্রত্যক্ষ করিয়াছি? করি নাই। কারণ ‘প্রাণ’ মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নহে। প্রাণকে কোনরূপে প্রত্যক্ষ না করিলেও প্রাণের অস্তিত্বে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ প্রাণ যদিও ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাহিরে, তবুও ইহার কার্যকলাপ দৈহিক ঘটনারূপে আমরা প্রত্যক্ষ করিতেছি। “কার্য থাকিলে তাহার কারণ থাকিতে বাধ্য” এই স্বতঃসিদ্ধ যুক্তির বলে আমরা দৈহিক ঘটনাবলীর কারণরূপে প্রাণের অস্তিত্বকে অনুমান করিতেছি এবং বিশ্বাস করিতেছি যে প্রাণ আছে।
পূর্বেই বলিয়াছি যে, প্রত্যক্ষ ও অনুমান, এই দুইটির উপর খাঁটি বিশ্বাস বা জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। যে বিশ্বাসের মূলে প্রত্যক্ষ বা অনুমান নাই অর্থাৎ যে বিশ্বাসের মূলে জ্ঞানের অভাব, তাহা খাঁটি বিশ্বাস নহে, অন্ধ-বিশ্বাস। বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আমাদের সন্দেহ নাই। বিজ্ঞান যাহা বলে, তাহা আমরা অকুণ্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করি। কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। অধিকাংশ ধর্মীয় বিধি-বিধান প্রত্যক্ষ বা আনুমানসিদ্ধ নহে। এজন্য ধর্মের অনেক কথায় বা ব্যাখ্যায় সন্দেহ থাকিয়া যায়। দ্বিধাহীন চিত্তে ধর্মীয় সকল অনুশাসনকে আমরা সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারি না। তাই বিজ্ঞানের ন্যায় ধর্মের উপর সকল লোকের অটল বিশ্বাস হয় না। ধর্মকে সন্দেহাতীতরূপে পাইতে হইলে উহাকে অন্ধবিশ্বাসের উপর রাখিলে চলিবে না, উহাকে খাঁটি বিশ্বাস অর্থাৎ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে।
আজকাল যেখানে-সেখানে শোনা যাইতেছে যে, সংসারে নানাপ্রকার জিনিস-পত্রাদি হইতে “বরকত” উঠিয়া গিয়াছে। কারণ লোকের আর পূর্বের মত ঈমান অর্থাৎ বিশ্বাস নাই। পূর্বে লোকের ঈমান ছিল, ফলে তাহারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করিত। আর আজকাল মানুষের ঈমান নাই, তাই তাহাদের অভাব ঘোচে না। ঈমান নাই বলিয়াই ক্ষেতে আর সাবেক ফসল জন্মে না, ফলের গাছে ফল ধরে না, পুকুরে-নদীতে মাছ পড়ে না। ঈমান নাই বলিয়াই মানুষের উপর খোদার গজবরূপে কলেরা, বসন্ত, বন্যা-বাদল, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি নানা প্রকার বালা-মুছিবত নাজেল হয়। অথচ মানুষের হুঁশ হয় না। এইরূপ যে নানা প্রকার অভাব-অভিযোগের জন্য ঈমানের অভাবকেই দায়ী করা হয়, তাহা কতটুকু সত্য?
শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেই জানেন আর যাহারা জানেন না তাহারা অনুসন্ধান করিলেই জানিতে পারিবেন যে, আমাদের এই সোনার বাংলার চাষীগণ বিঘা প্রতি বার্ষিক যে পরিমাণ ধান্য জন্মাইতেছে তাহারা প্রায় সাত-আট গুণ পরিমাণ ধান্য জাপানের চাষীরা জন্মাইতেছে। হয়ত অনুসন্ধান করিলে ইহাও জানা যাইতে পারে যে, জাপানের এই চাষীরা অ-মুসলমান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, কাফের, যাহাদের ধর্মে ঈশ্বরের নামগন্ধও নাই। আমাদের মতে উহারা বে ঈমান বা অ-বিশ্বাসী। তবুও উহারা বৈজ্ঞানিক প্রদ্ধতি প্রয়োগে পূর্বের চেয়ে বেশী ফসল জন্মাইতেছে। আমাদের মতে উহারা বে-ঈমান হইলেও তাহাদের ক্ষেতের ফসল বাড়িয়াছে বৈ কমে নাই।
কিছুদিন পূর্বে রাশিয়া-প্রত্যাগত বাংলাদেশের জনৈক নামজাদা ডাক্তার সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলিয়াছিলেন যে, পূর্ব বাংলায় প্রতি বৎসর হাজার হাজার লোক কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারীর প্রকোপে প্রাণ হারায় এ কথা সেদেশের ডাক্তারেরা বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলেন না। কারণ তাহারা একথা ভাবিতেও পারিতেছিলেন না যে, বর্তমান যুগেও কোন দেশে কলেরা বা বসন্তে ভুগিয়া অগণিত মানুষ প্রাণ হারায়। তবে কি একমাত্র বাংলার অধিবাসীদেরই ঈমান নাই? আর একমাত্র ইহাদের উপরই কি খোদার গজব বর্ষিত হয়? রাশিয়ানরা অধিকাংশই সাম্যবাদী (Socialist)। তাঁহারা দেব-দেবী বা আল্লা-নবীর ধার ধারে না। তবুও যাবতীয় কাজে তাঁহারা বৈজ্ঞানিক প্রণালী প্রয়োগ করিয়াই সুখে-স্বচ্ছন্দে জীবন-যাপন করিতেছেন।
যাহারা ঈমানের অভাবকে নানাবিধ অভাব-অনটনের জন্য দায়ী করেন, তাঁহারা একটু ভাবিলেই দেখিতে পাইতেন যে, ধনী ও গরীবের আয়-ব্যয়ের ধাপগুলি কোন কালেই এক নহে। গরীব চায় শুধু ভাত ও কাপড়। কিন্তু ধনী চায় তৎসঙ্গে বিলাস-ব্যসন। মানুষ সাধারণত অনুকরণপ্রিয়! তাই ধনীর বিলাসিতা বহুল পরিমাণে ঢুকিয়াছে গরীবের ঘরে। যাহার পিতার সম্পত্তি ছিল পাঁচ ঘিা জমি এবং পরিবারে ছিল তিনজন লোক, তাহার সংসারের নানা প্রকার খরচ নির্বাহ করিয়াও হয়ত কিছু উদ্বৃত্ত থাকিত। আজও সে ঐ জমির আয় দ্বারা তিনজন লোকই প্রতিপালন করে, কিন্তু উদ্বৃত্ত যাহা কিছু থাকিত, তাহা ব্যয় করিতেছে সাবান, সুবাসিত তৈল, সিল্কের চাদর, ছাতা ও জুতায়। বিলাস ব্যসনে যে অতিরিক্ত খরচ সে করিতেছে, তাহার হিসাব রাখে না, ভাবে ‘বরকত’ গেল কোথায়? এ কথা সে ভাবিয়া দেখে না যে, অমিতব্যয়িতা এবং বিলাসিতাই তাহার অভাব-অনটনের কারণ। অযথা ঈমানের অভাবকে কারণ বলিয়া দায়ী করে।
প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বে যেখানে (অখণ্ড ভারতে) জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৯ কোটি, বৃদ্ধি পাইয়া আজ সেখানে জনসংখ্যা দাঁড়াইয়াছে প্রায় ৬৯ কোটি। এই যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ৩৯ কোটি মানুষ ইহারা খায় কি? লোক বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য বৃদ্ধি না হইলে খাদ্যখাদকের সমতা থাকিবে কিরূপে? লোক বৃদ্ধি যতই হোক জমি বৃদ্ধির উপায় নাই। কাজেই অনাবাদী জমি আবাদ, উপযুক্ত সার প্রয়োগ, উৎকৃষ্ট বীজ ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে চাষাবাদ ছাড়া বর্তমানে খাদ্য বৃদ্ধির উপায় নাই। অথচ আমাদের দেশে কয়জন চাষী এবিষয়ে সচেতন? আজও সরকারী বীজ ভাণ্ডারে ভাল বীজ বিকায় না। এমোনিয়া সালফেট ও বোনমিল বস্তা ছিঁড়িয়া পড়িয়া থাকে গুদামের মেঝেয়, রেড়ির খৈল পচিয়া থাকে গুদামে। পল্লী অঞ্চলে ইতস্তত ঝোপ-জঙ্গলের অভাব নাই, বসত বাড়ীর আনাচে-কানাচে জন্মিয়া থাকে ভাইট গাছ আর গুড়ি কচু। বেড় পুকুরে কচুরী পানা ঠাসা। বৃদ্ধি পাইয়াছে শুধু মশা, মাছি ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত আর ডাক্তার খরচ। এইত আমাদের অশিক্ষিত দেশের অবস্থা। বর্তমানের খাদ্যের অভাব ঘটিয়াছে তাহা সত্য। কিন্তু ইহা খাদ্যখাদকের সমতার অভাবেই ঘটিয়াছে, “বে-ঈমান” বা অবিশ্বাসের জন্য নয়।
ম্যালথুস (Malthus) তাঁর “পপুলেশন” নামক গ্রন্থে বলিয়াছেন যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অনুপাত আছে, যে অনুপাত জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। তবে দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসাধারণের আহার-বিহার এবং রীতি-নীতি তারতম্যে সামান্য ব্যতিক্রম ঘটিতে পারে।
আমাদের দেশের জন্ম-হার অত্যধিক, জনসংখ্যা অস্বাভাবিক রূপে বৃদ্ধি পাইতেছে শিশু, বিধবা ও বহুবিবাহে। যে ছেলের ২০ বৎসর বয়সে বিবাহ হওয়া উচিত, সে ছেলের ঐ বয়সে ছেলে-মেয়ে জন্মে দুই তিনটি। আবার তিন বৎসর বয়সে যে মেয়ের বিবাহ হয়, বারো-তেরো বৎসর বয়সে সে হয় মেয়ের মা। কথায় বলে “কচি ফলের বীজ ভাল না।” অপ্রাপ্ত বয়স্ক পিতা-মাতার সন্তান উৎপাদনে পিতা-মাতা ও শিশু উভয়ই হয় স্বাস্থ্যহীন। পিতার বয়স ত্রিশ হইলে চুল পাকে, পঁয়ত্রিশে দাঁত নড়ে, চল্লিশে হয় কঁুজো, হাঁপানি ও প্রবাহিকায় পঞ্চাশেই ভবলীলা সঙ্গে করে। এমতাবস্থায় বিধবা স্ত্রীর উপায় কি? কোন ছেলের ব্যথার ব্যারাম, কোন ছেলের জীর্ণজ্বর, ছোট মেয়েটি কোলে লয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা। এইরূপ স্বাস্থ্যহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হইয়া দেশের অভাব দৈনন্দিন বাড়িয়াই চলিয়াছে। আর ইহার সাথে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অলসতা ও কুসংস্কার প্রভৃতি ত আছেই। সুখের বিষয় এই যে, সরকারী নির্দেশে শিশু বিবাহটা বর্তমানে কমিয়াছে।
বহুবিবাহের প্রতিক্রিয়াও সমাজ জীবনে কম নহে। ইহা শুধু বংশবিস্তার করিয়াই ক্ষান্ত থাকে না। ইহার ফলে নানাপ্রকার পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। বৈমাত্রেয় সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির ফলে উহাদের মধ্যে ফরায়েজের অংশ লইয়া মানোমালিন্য, দাঙ্গা-হাঙ্গামা অবশেষে মামলা-মোকর্দ্দমা ও উকিল-মোক্তার, আমলা-পেস্কার ইত্যাদির হয় আয় বৃদ্ধি।
জন্ম বৃদ্ধির সাথে সাথে মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুতেও নিস্তার নাই, ইহাতেও খরচ আছে। প্রথমত জানাজা, কাফন ইত্যাদি খরচ ত আছেই তদুপরি মোর্দাকে গোর-আজাব হইতে রক্ষা করিতে, পোলছিরাত পার করিতে, বেহেস্ত সহজলভ্য করিতে প্রতি বৎসর রমজান মাসে মৌলুদ শরীফ, কোরান শরীফ খতম ইত্যাদি না-ই হোক, অন্ততপক্ষে কয়েকজন মোল্লা-মৌলবী ডাকিয়া তশবিহ্ পড়াইয়া কিছুটা ডা’ল-চা’ল খরচ না করিলেই চলে না। মানুষের অভাব বৃদ্ধির কারণাবলীর প্রতি চক্ষু মুদিয়া থাকিয়া উগ্রবিশ্বাসীরা ঈমানের অভাবকেই অভাব-অনটনের কারণ বলিয়া সাব্যস্ত করিতেছে।
“এখন আর মানুষের মনে পূর্বের ন্যায় ঈমান নাই”, এ কথা বলিয়া যাঁহারা রোদন, করেন, তাঁহারা একটু ভাবিয়া দেখিতে পারেন যে, বিশ্বাস গেল কোথায়? বিজ্ঞান মতে পদার্থের ধ্বংস নাই, আছে শুধু পরিবর্তন। দেখা যায় তদ্রূপ মানব মনের বিশ্বাসেরও লয় নাই, আছে শুধু পরিবর্তন। পূর্বে লোকে নানা প্রকার উপকথা, রূপকথায়ও বিশ্বাস করিত। কিন্তু এখন আর তাহা করে না। নানা প্রকার ভূতের গল্প, জ্বীন-পরীর কাহিনী, নানা প্রকার তন্ত্র-মন্ত্র অধিকাংশ শিক্ষিত লোকেই আজকাল আর বিশ্বাস করেন না। তবে যে উহা সমাজে একেবারেই অচল, তাহা নহে। “রূপকথা” লোকে রূপকথা বলিয়াই গ্রহণ করিতেছে, “সত্য” বলিয়া মনে করিতেছেন না। এক সময় উপন্যাসকে লোকে ইতিহাস মনে করিত। কিন্তু এখন আর তাহা করে না, ম্যাজিকের আশ্চর্য খেলাগুলি সকলেই আগ্রহের সহিত দেখে, কিন্তু তাহা সত্য বলিয়া কেহ বিশ্বাস করে না। তাই বলিয়া ধরাপৃষ্ঠ হইতে বিশ্বাস মুছিয়া যায় নাই। যেমন কতক বিষয় হইতে বিশ্বাস উঠিয়া গিয়াছে, তেমন কতক বিষয়ে বিশ্বাস মুছিয়া যায় নাই। যেমন কতক বিষয় হইতে বিশ্বাস উঠিয়া গিয়াছে, তেমন কতক বিষয়ে বিশ্বাস জন্মাইয়াছে, বিশ্বাসযোগ্য “বস্তু” বা “বিষয়” এর পরিবর্তন হইয়াছে মাত্র।
বলা হয় যে, আল্লাহ তা’লার অসাধ্য কোন কাজ নাই। বিশেষ বিশ্বাসী ভক্তদের অনুরোধে তিনি অসম্ভবকেও সম্ভব করেন। হযরত সোলায়মান নবী নাকি সিংহাসনে বসিয়া সপরিষদ শূন্যে ভ্রমণ করিতেন। তাই বলিয়া “আল্লাহ তা’লা ইচ্ছা করিলে জায়নামাজ শুদ্ধ আমাকেও নিমিষের মধ্যে মক্কায় পৌঁছাইতে পারেন” এইরূপ বিশ্বাস কোন কোন পীর ছাহেবের আছে কি? থাকিলে একবারও তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন কি? না দেখিয়াই বা উড়ো জাহাজে চড়িবার কারণ কি? উড়োজাহাজে চড়িবার বিপদ আছে, ভাড়া আছে আর সময়ও লাগে যথেষ্ট। তবুও উহার উপর জন্মিয়াছে বিশ্বাস।
অতীতে কোন কোন বোজর্গান হাটিয়াই নদী পার হইতে পারিতেন। যেহেতু তাঁহাদের বিশ্বাস ছিল যে, নদী পার করাইবেন আল্লাহতা’লা, নৌকা বা জলাযানের প্রয়োজন নাই। আর বর্তমানে খোদার উপর বিশ্বাস নাই, নদী পার হইতে সাহায্য লইতে হয় নৌকার।
সুফীগণ নাকি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৃথিবীর কোথায় কি ঘটিতেছে, তাহা জানিতে ও দেখিতে পাইতেন। এখন কয়টি লোকে উহা বিশ্বাস করে? বর্তমানে বিশ্বাস জন্মিয়াছে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও এবং টেলিভিশনে।
শাহছাহেবদের “কালাম”-এর তাবিজে কৃমি পড়ে না, কৃমি পড়ে স্যান্টোনাইন কুইনাইন সেবনে। মানত সিন্নিতে জ্বর ফেরে না, জ্বর ফেরাইতে সেবন করিতে হয় কুইনাইন। লোকে বিশ্বাস করিবে কোনটি? নানাবিধ রোগারোগ্যের জন্য পীরের দরগাহ হইতে হাসপাতালকেই লোকে বিশ্বাস করে বেশী। গর্ভিনীর সন্তান প্রসব যখন অস্বাভাবিক হইয়া পড়ে, তখন পানি পড়ার চেয়ে লোকে বেবী ক্লিনিকের (Baby Clinic) উপর ভরসা রাখে বেশী।
আজ মহাসমুদ্রের বুকে লোক যাতায়াত করে কোন বিশ্বাসে? সমুদ্রের গভীর জলের নীচে লোকে সাবমেরিন চালায় কোন বিশ্বাসে? মহাকাশ পাড়ি দেয় লোকে কোন বিশ্বাসে? যন্ত্রে বিশ্বাস আছে বলিয়াই মানুষ যন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করিতেছে। দ্রব্যগুণে বিশ্বাস আছে বলিয়াই লোকে কলেরা-বসন্তের সময় দোয়া-কালামের পরিবর্তে ইনজেকশন ও টীকা লইতেছে।
পূর্বেই বলিয়াছি যে, বিশ্বাস ধরাপৃষ্ঠ হইতে অবলুপ্ত হয় নাই, শুধু বিশ্বাসযোগ্য বিষয় বস্তুর পরিবর্তন হইয়াছে মাত্র। চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রেই বুঝিতে পারিবেন যে, যেখানে যে বিষয়ে মানুষের জ্ঞান জন্মিতেছে সেইখানেই বিশ্বাস (ঈমান) দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর হইতেছে আর যেখানে যে বিষয়েতে জ্ঞান জন্মে নাই, জ্ঞান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সে বিষয় হইতে ক্রমশ বিশ্বাস লোপ পাইতেছে। অর্থাৎ সন্দেহ জাগিতেছে। যে কথায় বা যে বিষয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রমাণ নাই, যে বিষয় কার্য কারণ সম্পর্ক নাই বা যাহা বিবেক বিরোধী, বর্তমানে শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রেই সে সকল ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারেন না।
ধর্মজগতে এমন কতগুলি বিধি-নিষেধ, আচার-অনুষ্ঠান ও ঘটনাবলীর বিবরণ পাওয়া যায়, যাহার যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যা সাধারণের বোধগম্য নহে। তাই সততই মনে কতগুলি প্রশ্ন উদয় হয় এবং সেই প্রশ্নগুলির সমাধানের অভাবে ধর্মের বিধি-বিধানের উপর লোকের সন্দেহ ও অবিশ্বাস জন্মে। ফলে ধর্মের বিধি-বিধানের উপর লোকের শৈথিল্য ঘটে। ধর্মযাজকদের অধিকাংশের নিকটই সেই সকল প্রশ্নাবলীর সদুত্তর পাওয়া যায় না। অনেক সময় উত্তর দেওয়া দূরে থাক শুধু প্রশ্ন করার জন্য উল্টা কাফেরী ফতুয়া দিতেও তাহাদের দেরী হয় না। অথচ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি তাহাদের মতানুযায়ী পালন না করিলে তাহার উপর তাহারা সাধ্যমত দল বাঁধিয়া অত্যাচার করিতেও ইতস্তত করে না। ধর্মের নাম করিয়া ধর্ম বিরোধী কাজ করিতেও উহাদের বাধে না। পবিত্র কোরান যে বলিতেছে “লা ইক্রাহা ফিদ্দীন,” অর্থাৎ ধর্মে জবরদস্তি নাই, সেদিকে উহারা ভ্রূক্ষেপ করে না। অধিকন্ত সরকারী আইন বাঁচাইয়া যতদূর ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়, তাহা করিতেও ত্রুটি করে না। উপরন্ত রাজশক্তিকে হস্তগত করিয়া ধর্মের নামে অধর্মকে চালাইবার আকাশ-কুসুমও উহারা রচনা করিতেছে।
ধর্মরাজ্য সম্বন্ধে চিন্তা করিলে সাধারণত মনে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয়, আমরা এখন তাহার কতগুলি প্রশ্ন বিবৃত করিব এবং প্রশ্নগুলি কেন হইতেছে, তার হেতু স্বরূপ যথাযোগ্য বাখ্যা প্রশ্নের সহিত সন্নিবেশিত করিব।
[…] সন্ধান ভূমিকা মূলকথা প্রথম প্রস্তাব দ্বিতীয় প্রস্তাব […]
[…] সন্ধান ভূমিকা মূলকথা প্রথম প্রস্তাব দ্বিতীয় প্রস্তাব […]
আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানার জন্য রণদীপম বসুর বিশ্লেষণধর্মী লেখা সর্বগ্রাসী অপ-‘বাদ’ বনাম একজন আরজ আলী মাতুব্বর এবং… পড়তে পারেন।
আরজ আলি মাতুব্বরের সত্যের সন্ধান বইটি প্রথম খন্ড আগে পড়েছিলাম। কিছু কিছু সমালোচনা আমার খুব ভাল লেগেছে। আসলে আরজ আলি মাতুব্বর ছিল ইসলামি আন্দোলনের আসল নেতা, আজকের ইসলামি আন্দোলনের নেতার সাথে তার অনেক পারাক। যে ব্যক্তি আরজ আলি মাতুব্বরকে জানবে সে আসল ইসলাম ধর্মকে জানবে। তার বই পড়ে এই ধারণা টুকু জন্মছে আমার।
ধন্যবাদ ভাই আনেক উপকৃত হইলাম চালিয়ে যান প্লিজ :clap2: :yes: :rose2:
ধন্যবাদ ভাই আনেক উপকৃত হইলাম চালিয়ে যান প্লিজ :clap2: :yes: :rose2:
কপিরাইটের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু আমারও করার ইচ্ছে নেই। সত্যের সন্ধানের মত প্রয়োজনীয় বাংলায় লিখিত একটি বই copyright-এর সমস্যার কারণে online-এ থাকবে না এটা ভাবতেও কুশ্রী লাগে।
@নিশাচর,
আমারও খারাপ লাগছে। আমার নিজের দূর্বলতার কারণেই বাদ দিয়েছি। আমার তো সাহসের ঘাটতি রয়েছে। আশা করি আপনি আমার মত ভীরু প্রকৃতির হবেন না।
আপনি তো শুরু করেছেন। চালিয়ে যান তো, যা হবার হবে। ঐ নিয়ে মানসিক টেনশন না করাই ভালো। মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ কিছু না বলছেন, ততক্ষণ চালিয়ে যান। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সমস্যা দেখিয়ে নিষেধ করছে না। তাছাড়া এটা নিয়ে তো আর ব্যবসাও করছেন না। অন-লাইন ভার্সন কপি রাইটের আওতায় পড়ছে না বলেই আমার ধারণা। জ্ঞান ধরে রাখার বিষয় নয়, এটাকে ছড়িয়ে দেয়ায় মহত্বের লক্ষণ। আপনি তো সেই কাজেই রত রয়েছেন।
আপনার পরিশ্রম সার্থক হোক।
আরজ আলী মাতুব্বরের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কপিরাইট বিষয়ে লেখা রয়েছে:
এই বইয়ের কোনো অংশ প্রকাশক বা আর মঞ্জিল ট্রাস্ট এর লিখিত অনুমতি ছাড়া পুনর্মুদ্রণ বা কোনো মাধ্যমে রূপান্তর করা যাবে না। আলোকচিত্র, ফটোকপি, রেকর্ডিং ইত্যাদিও এই আইনানুগ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে।
উপরোক্ত কথা দ্বারা অন লাইন ভার্সন- ওগুলোর আওতায় পড়ে কিনা বুঝা যাচ্ছে না। আমি নিজেও হুমায়ুন আজাদের ‘আমার অবিশ্বাস’ বইটি দিতে চেয়েছিলাম মুক্তমনায়। কিন্তু কপি রাইটের ব্যাপারে সন্দিহান থাকায় আপাতত বাদ দিয়েছি। বিপ্লব রহমান এ ব্যাপারে মুক্তমনার নীতিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দেন- “৬.৩। যেসব লেখার এখনও কপিরাইট আছে সেগুলো স্বত্বাধিকারীর অনুমতি সাপেক্ষেই কেবল মুক্তমনায় প্রকাশ করা যাবে।”
বিপ্লব রহমান আরো একট সুন্দর পরামর্শ দেন- “লেখকস্বত্ত্ব বিষয়টির বাইরেও হুমায়ুন আজাদের লেখার সঙ্গে আপনার নিজস্ব বিশ্লেষণ ও বক্তব্য থাকলে আরো ভালো হতো।”
অন্যদিকে-
আল্লাচালাইনা তার নিজের লেখার বিষয়ে বলেন- “এই লেখাটির কোন স্বত্বাধীকার দাবি করছি না। যে কেউ একে নিজের সৃষ্টকর্ম হিসেবে দাবি করতে পারেন।”
আমার নিকট আল্লাচালাইনার চিন্তাধারাটি ভালো লাগে।
অবশ্য ব্যবসায়িক দিকে বিবেচনা করলে তা হবে অন্য কথা। বিপ্লব পাল সব সময়ই পাইরেসীর বিপক্ষে দাড়ান। এসব ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাবের কথাই ব্যক্ত করেন।
অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। :rose:
আপনার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, যদিও জানি না কপিরাইট এর ঝামেলা হবে কিনা।
@স্বাধীন,
একটা নিয়ম আছে শুনেছি যে লেখকের মৃত্যুর কত বছর পর যেন তার লেখার উপরে আর কারো কপিরাইট থাকেনা। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই। সামুতে দেখেছি এক ব্লগার এভাবে আরজ আলির বইয়ের অনেক অধ্যায় অনলাইনে তুলে দিয়েছেন।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এ রকম একটি নিয়ম আছে বলে আমিও শুনেছি, যদিও নিশ্চিত নই। যা হোক, আমার সেটা নিয়ে বেশি মাথা ব্যাথাও নেই 😀 । এটা মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার 😀 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আসলেই উন্নত দর্শন সব পাঠকের জন্য কার্যকর নয়। আরজ আলী মাতুব্বরের লৌকিক সহজবোধ্য সত্য দর্শন ধরণীর প্রান্তরে প্রান্তরে পৌঁছে যাক এটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য।
শ্রমসাধ্য ব্যাপার; কপিরাইটের কোন সমস্যা থাকলে আগে ভাগে বলা ভাল।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
‘শুদ্ধস্বর’ এর প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদুর রশিদ টুটুল ভাই জানাচ্ছেন, কোনো লেখক মারা যাওয়ার ৬০ বছর পর তার লেখা সর্বসাধারণের পুনঃপ্রকাশের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়; অর্থাৎ তখন এটি আর কপিরাইট আইনের আওতায় পড়বে না। [লিংক]
অনেক ধন্যবাদ।
@নিশাচর, আপনি কি পুরো বইটাই টাইপ করে তুলে দিবেন? এই বইটি আমার কাছে নেই, অনলাইনে পেলে ভালোই হয়। কিন্তু এভাবে পুরোটা অনলাইনে তুলে দিলে কপিরাইটের কোন সমস্যা হবে না?
আরজ আলী মাতুব্বরের কথা শুনেছি শুধু এই প্রথম লেখা পড়লাম। অনেক কষ্টকর আর প্রশংসনী্য কাজ হাতে নিয়েছেন। শুভ কামনা রইল। এই লেখাটিতে সাধারণ যুক্তিতে বেশ সুন্দর বিশ্লেশন দেখলাম। বিশেষ করে আমাদের দেশের দারিদ্রতার কারণ হিসাবে ঈমানহীনতার মত হাস্যকর অভিযোগের বিশ্লেষণটা ভাল লেগেছে।
খুবই সত্যি কথা।
একাজ করলে এখনকার প্রচলিত কোন ধর্মই টিকবেনা।
সুন্দর একটা বিষয় তুলেছেন। চালিয়ে যান এই রকম লেখার প্রয়োজন আছে। 😎
আরজ আলি মাতুব্বরের সত্যের সন্ধানে বইটা পড়েছিলাম, মোটেই ভাল লাগেনি। ধর্মীয় গ্রন্থের সমালোচনার ক্ষেত্রে তথ্যসূত্রের অনুপস্থিতিগুলো খুবই দৃষ্টিকটু। দার্শনিক যুক্তিগুলোও খুব একটা উপাদেয় মনে হয়নি। তবে একদম অজপাড়াগায়ে বাস করা একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে এভাবে চিন্তা করতে পারাটাও মিরাকলের কাছাকাছিই।
@পৃথিবী,
:yes:
@পৃথিবী,
‘সত্যের সন্ধানে’ বইটিতে সাধারণ মানুষের ধর্মচিন্তা ও যুক্তিবোধ প্রাধান্য পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বইটিকে দেখাও জরুরি। :rose:
@পৃথিবী,
আরজ আলি মাতুব্বরের লেখা ও দর্শন নিয়ে এমন মন্তব্য সম্ভবত এই প্রথম শুনলাম। আরো একজন লেখক আরজ আলির লেখালেখির যোগ্যতা, লেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তার একটি লেখায়, তা বহু আগে পড়েছিলাম এখন বইয়ের নামটা মনে পড়ছেনা।
@পৃথিবী,
দ্বিমত প্রকাশ করছি। আরজ আলীর মাতুবব্বের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছিল সেসব প্রশ্ন অনেকেরই মনে জাগে, কিন্তু সে গুলো নিয়ে চিন্তা করতে ভয় পায় বেশিরভাগই। নিজেও অনেকদিন এই সব চিন্তা থেকে বিরত থেকেছে, কখন কোন বিপদ ডেকে আনি এই ভয়ে 🙁 । তিনি যেভাবে প্রশ্নগুলো নিয়ে ভেবেছেন এবং যেভাবে যুক্তি দিয়েছেন সেটা সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য শুধু যথেষ্ট নয়, আমি বলবো সেটা অনেক উন্নত দর্শন। অবশ্যই এটা ভুল চিন্তা যে আরজ আলীর কাছে ডকিন্স অথবা ডেনেটের মত যুক্তিবাদী, তথ্যসমৃদ্ধ লেখার প্রত্যাশা করা। ডকিন্স রা হচ্ছে একাডেমিসিয়ান এবং এ কারণেই আরজ আলীর দর্শন লোকজ দর্শন। সেখানে দু’টোর তুলনায় যাওয়াই বোকামী। লোক সঙ্গীত এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের তুলনা করা যায় না। সক্রেটিস এবং হেগেলের দর্শনে তুলনা করা যায় না। একেকেটি একেকে সময়কে রিপ্রেজেন্ট করে।
এখনকার সকল শিক্ষিত মানুষেরা যে এই স্বশিক্ষিত মানুষের ধারেকাছেও চিন্তা করতে পারে না, সেটা তো আরো বড় মিরাকল হওয়া উচিত, তাই নয় কি? এভাবে আসলে চিন্তা করাটাই ভুল আমার মতে। তাহলে তো বলতে হয়, গ্রীক যুগে বসে প্লেটো, এরিস্টটলদের পলিটিক্স নিয়ে যেসব লেখা আছে সেগুলোও এক রকম মিরাকল। এরিস্টটলের পলিটিক্স পড়লে মনে হয় এত যুগ আগে কিভাবে একজন মানুষ রাষ্ট্রনীতির প্রায় সবকিছুওই সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছিল? মুহাম্মদের কোরানও তো একারণেই মিরাকল। তার মত স্বশিক্ষিত মানুষ কিভাবে কোরান লিখে? এ কারণেই মুসলিমরা বিশ্বাস করে সেটা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।
তাই আরজ আলীর মত লোকেরা মিরাকল নয়। আমাদের গাঁও, গেরামে এরকম অনেক মানুষই আছে, যাদের লেখা বই হয়ে আসে না। মাহফুজ সাহেবের লেখা মোকছেদ আলী, এরকমই একজন। ঊনাদের স্বশিক্ষাকে মিরাকল বলাটা তাই উনাদের জন্য অপমানসূচক বলে মনে করি।
@পৃথিবী,
আমি আরজ আলীর প্রথম পার্ট শেষ করেছি মাত্র ২ মাস আগে। আসলেই ওনার বইতে রেফারেন্স নেই, যেমনটা ব্লগের তার্কিকদের দেখা যায় অমুক আয়াত তমুক হাদিস নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ন হতে।
উনি সরল মনে নিজের যুক্তিবোধের কাছে যা প্রশ্ন সাপেক্ষ মনে হয়েছে তাই চিন্তা করেছেন। কূটতর্কে অবতীর্ন হবার মানসে মনে হয় লেখেননি। ওনার লেখায় আমি খুব সাধাসিধা সরল কথন পেয়েছি, তাই ভাল লেগেছে।
আর উনি যে আমলে যে পরিবেশে নিজের জ্ঞান থেকে এসব প্রশ্ন ভেবেছেন তা এখনকার বেশীরভাগ অতি আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত লোকেও ভাবে না।
@আদিল মাহমুদ,
:yes:
@আদিল মাহমুদ,
উনি সরল মনে নিজের যুক্তিবোধের কাছে যা প্রশ্ন সাপেক্ষ মনে হয়েছে তাই চিন্তা করেছেন। কূটতর্কে অবতীর্ন হবার মানসে মনে হয় লেখেননি। ওনার লেখায় আমি খুব সাধাসিধা সরল কথন পেয়েছি, তাই ভাল লেগেছে।
:yes:
@পৃথিবী,
আর এজন্যেই বুঝি আপনি নিজের সম্পর্কে বলেন- I’m not conceited (on second thought, slightly), I just don’t really know myself.
তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেছেন। অসাধারণ মানুষও যেমন সাধারণ হয়ে যায়, আবার খুব সাধারণ মানুষও অসাধারণ হয়ে ওঠে।
রণদীপম বসু বলেন- “…তবে তাঁকে বুঝার সাথে সাথে আমাদের নিজেদের জীবন জগৎ ও চলমান অন্ধত্বের স্বনির্মিত দার্শনিক জটিলতা কুটিলতাগুলো বুঝতে হলে তাঁর রচনাবলীর গভীর পাঠ আমাদের জন্য আবশ্যক ও জরুরি বলেই মনে হয়। চোখ থাকলেই যে চক্ষুষ্মান হওয়া যায় না, আরো কিছু থাকতে হয়, সেটাই আরজ আলী মাতুব্বর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। সক্রেটিসের মতোই সেই কঠিন প্রশ্ন-করার উপায় আবারো বাৎলে দিলেন- ‘কেন?’
এবং মৃত্যুর আগে তাঁর চুরাশি বছর বয়সে আরেকটি যে অসাধারণ কাজ করে গেলেন তিনি, তাঁর ভাষ্যেই শুনি- ‘… মৃত্যুর পরে আমার চক্ষুদ্বয় চক্ষুব্যাংকে এবং মরদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে দান করেছি। উদ্দেশ্য – মানবকল্যাণ।’”
@পৃথিবী,
সবার আগে সত্যি করে বলেন আপনি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনা পড়েছেন কিনা? আবারও বলছি, সত্যি করে বলেন আপনি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনা পড়েছেন কিনা??
আপনার কাছে কোন পাবলিকের দর্শনের যুক্তিগুলো খুব সুস্বাদু মনে হয়েছে একটু জানতে ইচ্ছে করছে। ধর্ম গ্রন্থের এভিডেন্স দিবে আলী সিনা। আরজ আলী মাতুব্বর নয়। আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শনের যুক্তিগুলো যার কাছে সুস্বাদু লাগেনি সে যে দর্শনের স্বাদ জানে না সে কথা আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
আপনার কাছে হুমায়ুন আজাদের যুক্তি ভালো লাগে? আহমেদ শরীফের? নিদেন পক্ষে প্রবীর ঘোষের? তাদের থেকে আরজ আলী মাতুব্বরের দার্শনিক যুক্তি আপনার কাছে কোন দিক থেকে পানসে মনে হয়েছে জানাবেন আশা করছি। উইকিপিডিয়া, বিজ্ঞানের বই থেকে কোট করে বিশাল লেখা লিখে বাহবা পাওয়া যায়, কিন্তু বৌদ্ধিক জ্ঞান থেকে যায় নিম্নপর্যায়ে।
পৃথিবী নামক ব্যক্তিত্বের আগমনে মুক্ত-মনার সকলের বিস্ময়ে বাক লুপ্ত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। না হলে এই তৃতীয় শ্রেনীর বক্তব্যের দুর্গন্ধে কেউ কেন নাক কুঁচকে উঠছে না তাই ভাবছি।
আমার এই বক্তব্যে কারো গাত্রদাহ হলে আমি আগেই ক্ষমা চাই। আমি ভাই বিজ্ঞানের বই কম পড়েছি। কিন্তু জ্ঞানীর মুল্য দিতে শিখেছি। আমি যদি আজকে কয়েকটা আব জাব চটি বই পুস্তিকা পড়ে রবীন্দ্রনাথ কিংবা জীবনানন্দ দাশের সমালোচনার যোগ্য হয়ে যাই আর তাতে করে যদি কারো চোখ টাটায় তাহলে কি কিছু অযৌক্তিক হয়? হয় না বলেই বোধ করি।
পৃথিবী সাহেব যেহেতু কথা সরাসরি বলেছেন তাই আমিও সরাসরিই বলেছি। আমার কথায় তার গাত্রদাহ হবে না বলেই ধরে নিচ্ছি।
ধন্যবাদ।
পৃথিবী আপনি যা বলেছেন বুঝে বলেছেনতো? এরকম নিম্নশ্নেণীর immatured বক্তব্য আপনার কাছে আশা করা যায় না। মানছি আরজ আলির সব যুক্তি সমান শক্তিশালী নয়,আপনি সেগুলো আলাদা করে উল্লেখ করে সমালোচনা করতে পারতেন। সমালোচনা করারও কিছু নিয়ম আছে, এভাবে সরলীকরণ করলে আপনার মতামতকে অন্যরা শ্রদ্ধা করবে সেটা কখনোই আশা করতে পারবেননা।
@সাইফুল ইসলাম, আপনি এত ক্ষেপলেন কেন বুঝলাম না। আমার ভাল লাগে নাই, এটা প্রকাশ করা কি দোষের? একজন ধার্মিক হিসেবে যদি আমি আরজ আলীর মাতুব্বরের বই পড়তাম, মোটেই আমি কনভিনসড হতাম না। বই কে লিখেছে সেটা নিয়ে আমার আগ্রহ নাই, বইয়ের বক্তব্যই আমার কাছে মুখ্য। আমি বই পড়েছি কিনা সেটা নিয়ে আপনার প্রশ্নটা রিটোরিক্যাল মনে হল, মনে হচ্ছে আপনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন আমি বইটি না পড়েই তার সমালোচনা করে বিদ্বান সাজতে চাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়েই থাকুন।
@পৃথিবী,
আমি ক্ষেপেছি কথা সত্য। তবে ধার্মিকদের মত ক্ষেপিনি যে আপনাকে আমার মত আরজ আলী মাতুব্বরের লেখা ভালো লাগতেই হবে এটা মানিয়ে ছাড়ব।
আরজ আলী মাতুব্বর আমার আপনার মত যদুমধু লেখক নন যে তাকে আবজাব পাবলিকেরা না বুঝেই সমালোচনা করবে। আপনার কথাতে ক্ষেপেছি আপনি অবিশ্বাসী লোক বলেই। সদালাপী ফুয়াদ যদি এই কথা বলত তাহলে ক্ষেপার প্রশ্নই উঠত না।
আরজ আলী মাতুব্বর যে দার্শনিক প্রশ্নগুলো তুলেছিলেন সেগুলো খুবই বেসিক লেভেল থেকে শুরু করে অত্যন্ত উচু পর্যায়ের। একজন নিধার্মিককে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো জেনেই অবিশ্বাসের পর্যায়ে আসতে হবে। সেখানে আপনার কাছে যদি এই প্রশ্নগুলো ভালো না লেগে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনি অবিশ্বাসী, আল্লাহ মালুম।
সত্যি বলছি আমি আসলে তাই বিশ্বাস করতে চাচ্ছি। কারন এই শ্রেনীর লেখা যদি একজন অবিশ্বাসীর ভালো না লাগে তাহলে হতাশ ছাড়া আর কিই বা হতে পারি বলুন??
@পৃথিবী,
সক্রেটিস রেফারেন্স দিয়ে লিখতেন তা জানতাম না তো!!!! :-/
আরজ আলির রেফারেন্স নেই কথাটা সত্য। কিন্তু আসল কথা হল যে একজন আরজ আলি বা একজন সক্রেটিসের কাজ কিন্তু রেফারেন্স দিয়ে ডিকশনারী বা এনসাইক্লোপিডিয়া বানানো না। মানুষকে প্রশ্ন করতে শেখানোর মধ্যেই তাদের সার্থকতা।
আমিও বলি যে আরজ আলির কিছু প্রশ্নে দুর্বলতা আছে। কিন্তু সেগুলো সাগরের সাথে পুকুরের তুলনা ছাড়া কিছুই না।
অতি সাধারন কিছু প্রশ্নকে অসাধারন ভাবে তুলে ধরার মধ্যেই আরজ আলির সার্থকতা। তিনি প্রশ্ন করেছেন এবং নিজে সরাসরি উত্তর দেন নি, তিনি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন ঈশ্বরবাদীদের থেকে। আর সবচেয়ে বড় ব্যপার এই যে প্রশ্নগুলো সব ধর্মের জন্যই এত কমন লেভেলের প্রশ্ন যে, তাতে রেফারেন্স নেই এই ত্রুটি ধরাটাই ভূল।
বিশ্বাসের খুঁটি ভাংবার জন্য প্রথমে একটা ভয়াবহ ধাক্কার প্রয়োজন হয়। রেফারেন্স ভিত্তিক দর্শন অথবা আধুনিক বিজ্ঞান কোনটাই কিন্তু এত সহজে এই ধাক্কা দিতে পারে না, যতটা সহজে পারে এই অতি সাধারন প্রশ্ন গুলো। ধর্মের ব্যপারেও যে প্রশ্ন তোলা যায় আরজ আলির সরল প্রশ্ন গুলো এই বোধটাই জাগিয়ে তুলে।
যা হোক, সব কিছু সবার ভালো লাগবে এমনটা ভাবা উচিত নয়। তবে তোমার মত করেই আমি তোমাকে বলতে চাই, আরজ আলির কোন যুক্তিটা কেন ভালো লাগেনি রেফারেন্স সহ অথবা রেফারেন্স ছাড়াই আমাদের জন্য ব্যখ্যা কর।
@তানভী,
আদিল মাহমুদের প্রীয় ভাগিনা তানভী, বহুদিন পরে আপনাকে দেখিয়া প্রফুল্লিত হইয়াছি। দেখিলাম আসিয়াই বাতিনি ক্ষমতাবলে আমার মনের কথাগুলো জানিয়া লইয়া ব্লগে প্রকাশ করিয়াছেন।
যথার্থ বলিয়াছেন। :yes: তারপরেও দুইটা কথা না বলিয়া পারিতেছিনা। আরজ আলির প্রশ্নগুলো সমাজে এতোই প্রচলিত ও সকলের জানা শুনা সাধারণ প্রশ্ন ছিল যে, কেউ কোনদিনই তথ্য-রেফারেন্স চাহিবার প্রয়োজন বোধ করেন নাই, কিন্তু অবাক কান্ড হইল কেউ তাহার প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিতে পারেন নাই।
বিজ্ঞানের কাছে ধর্মবাদীগণ ধরা খাইয়া কোরানে বিজ্ঞান খুঁজিয়া চিৎকার করেন, আর আরজ আলির কাছে ধরা খাইয়া তাহাদের জবান বন্ধ হইয়া যায়। এখানেই আরজ আলির বিশেষত্ব। আরজ আলি, যে সকল প্রশ্ন করিয়াছেন তাহা যে কোরান হইতেই করিয়াছেন, ধর্মবাদীগণ তাহা জানেন বিশ্বাস করেন সুতরাং রেফারেন্সের কথা তুলিয়া তাহারা নিজের জন্যে লজ্বা খুঁড়িয়া আনিবেন কেন? আরজ আলি কিরামান কাতিবিন ফেরেস্তার প্রমাণ চান নাই, প্রশ্ন করিয়াছেন তাহাদের ওজন কতো? তিনি নূহের প্লাবনের বৈজ্ঞানিক বা ঐতিহাসিক প্রমান চান নাই, প্রশ্ন করিয়াছেন সেই নৌকার এক জোড়া যাত্রী কেঁচো, কেনান শহর হইতে বাংলাদেশে কতদিনে আসিয়াছিল আর সারা পৃথিবী জুড়িয়া তাহাদের বংশ বিস্তার কতদিনে কী ভাবে করিল?
আরজ আলি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব এক আসাধারণ দার্শনিক।
@আকাশ মালিক,
বহুদিন পরে ব্লগে আসিতে পারিয়া আমিও ধন্য বোধ করিতেছি। এমনই এক খাইশটা মার্কা বিষয়ে পড়াশোনা করিতেছি যে তাহার শিক্ষকগণ মারা যাইবার আগ পর্যন্ত ছাত্রকে দম ফেলিতে দিতে রাজি নহে। তাহাদের বক্তব্য হইল এই যে,” নিশ্বাস ত্যাগ করিতে হইলে একেবারে শেষ নিশ্বাস ত্যগ করিয়াই তারপর যাও!!! শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করিবার আগ পর্যন্ত কাজ জমা না দিয়া অন্য কোন দিকে চাহিতে পারিবা না!!!”
তাই ব্লগে আসা হয় না। আর মাঝে মধ্যে আসিলেও ব্লগের গতি প্রকৃতি না বুঝিয়া হুট হাট মন্তব্য করিয়া বিপদে পড়ার ভয়ে আর মন্তব্য করা হইয়া উঠে না। 🙁
যাহাই হউক, আমি মনে করি আমাদের এই ছোট ভাইটিরে (পৃথিবী) যথেষ্ট পরিমান কথা শুনানো হইয়া গিয়াছে, তাই তাহার এই মন্তব্য নিয়া আর কোন মন্তব্য না করাই যুক্তি যুক্ত মনে হইতেছে। মানুষের চিন্তা ভাবনার পার্থক্য থাকিবে, ভূলও হইবে এইটাই স্বাভাবিক।
এটা নিয়ে আর কথা লম্বা না করাই উচিত।
@পৃথিবী,
আপনার মন্তব্যটার মধ্যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রবনতা স্পষ্ট। এটা দুঃখজনক।
দেখুন কোন তথ্যসূত্রই যুক্তির বা বিতর্কের বাইরে না। অমুক গ্রন্থে বলা আছে বললেই শেষ কথা বলা হয়ে যায় না। অনুবাদের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। যাকে কোট করা হয় তার ব্যাক্তিগত বিশ্বাস – অবিশ্বাসের খোঁজ নেয়া হয়। আসলে বিজ্ঞানের আলোচনায় রেফারেন্সের গুরুত্ত্ব আর দর্শনের ক্ষেত্রে তা সমান না। যে কোন কারো লেখা একজনের ভাল নাও লাগতে পারে। যেমন আব্দুল করিম বা লালনের গান কারো কাছে ভাল নাও লাগতে পারে, কিন্তু সেটাই তাকে তুচ্ছজ্ঞাণ করার জন্য যথেষ্ট না। আমার ভাল লাগে না এ পর্যন্ত বলে, আমাদের থামা উচিৎ। কারন অন্যদের যেহেতু ভাল লাগে এবং এই অন্যদের কাতারে অনের বুদ্ধিমান লোকজনও আছে, ফলে তাদেরকেও একপ্রকার তুচ্ছই করা হয়।
ওবামার ভাষণ শুনে একদল সাদা মানুষ যদি বলে, দেখ- কি অবাক কান্ড, সেদিনের কালো আফ্রিকান আমাদের মত কথা বলার চেষ্টা করছে !!!!!!!!!!!
আপনার মন্তব্যটিকে আমার তেমনই মনে হল।
আপনি আবার আমার কাছে ঐসব সাদা মানুষদের রেফারেন্স চেয়ে বসবেন না যেন। 🙂
আপনি পুরো ৩ খন্ড টাইপ করে দেবেন? এ তো বিশাল কাজ হাতে নিচ্ছেন। শুভেচ্ছা।
এখানে কি কপি রাইটের কোন ব্যাপার আছে? না থাকলে স্ক্যান করে দেওয়াটা অনেক সহজ হত নয় কি?
@আদিল মাহমুদ,
বাংলা OCR সফটওয়ার (ইউনিকোড কম্পাটিব্ল) থাকলে স্ক্যান করলেই চলত। কিন্তু যেহেতু আমার জানা মতে নেই তাই নিশাচর যদি কষ্ট করে টাইপ করতে মনস্থির করেই থাকেন তাহলে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে তা গ্রহণ করব। ইউনিকোড বাংলায় কপি থাকাটার অনেক বাড়তি সুবিধা আছে।
এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
“সত্যের সন্ধান” প্রথম খন্ডের অংশ। এই অংশে আরজ আলী মাতুব্বরের নিজের আঁকা প্রচ্ছদ আছে, ভূমিকাও আছে। যেহেতু মাতুব্বর সাহেবের নিজের আঁকা প্রচ্ছদ, স্ক্যান করে শুরুতে দিলে কেমন হত। এত এত যেহেতু টাইপ করছেনই ভূমিকাটা ও চিন্তা করলে কেমন। আপনাকে আমি কোন চাপ দিচ্ছিনা। বিরাট একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। আর একটু যদি করতে পারেন এই আর কি!
ধন্যবাদ। :yes: :rose2:
@নৃপেন্দ্র সরকার,
শীঘ্রই দিব। এই পোস্টটি নীড়পাতা থেকে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা।
@নিশাচর,
এই বই পড়া আছে।তবে আপনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কেননা হাতের কাছে অনেকেই বই পান না।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপাতত এখানে পড়তে পারেন।
@নিশাচর,
অনেক ধন্যবাদ।
@নিশাচর,
আগেই পড়া ছিল, আবারো পড়ছি। চমৎকার উদ্যোগ। চলুক। :yes:
একটা ভুল চোখে পড়ল:
ভ্রাতৃভার->ভ্রাতৃভাব
চলুক।