ধর্ম ও নৈতিকতা
বাদল চৌধুরী
ঈশ্বর ভাবনার প্রচলনটি যদি শুরু না হত তাহলে কি মানুষ সভ্যতার আলো দেখত না ? বিবর্তনের শুরুর দিকে যে অবস্থা ছিল সেখানেই কি থাকতে হত মানুষকে ? মানুষের যে চিন্তা জগতের বিস্তৃতি বিশেষ করে ভাল/মন্দের ধারনা উৎপত্তির জন্য কি ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল ? অথবা ভাল এবং মন্দের পার্থক্যের জন্য যে মাপকাটি – নৈতিকতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বোধ ঊদয় কি ঈশ্বর কতৃর্ক প্রদত্ত ? প্রশ্ন বোধক চিহ্নগুলো উঠিয়ে দিয়ে অনেকেই এ সমস্ত ব্যাপারগুলোকে দাবী করে বসে । দাবী করার একমাত্র যুক্তি হিসাবে তারা তথাকতিত ঐশ্বরিক কিতাবের রেফারেন্স উপস্থাপন করেন । আবার কিছু গোষ্টি তো রীতিমত ধর্ম গ্রন্থে বিজ্ঞান খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর । সচরাচর ধর্ম বিশ্বসীরা বিবর্তনবাদের মত বৈজ্ঞানিক মতবাদ্গুলোকে এড়িয়ে চলে । যেসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার/তথ্যগুলো ধর্মের বিপক্ষে যায়, সেগুলোকে হয় ধর্মের ফর্মুলা হতে প্রাপ্ত বলে দাবী করে অথবা পশ্চিমাদের সূক্ষ ষড়যন্ত্র বলে প্রচারনা চালায় । শুধু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নয়, প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দার্শনিক তথ্য উপাত্ত এবং নৈতিকতার মত মানুষের চারিত্রিক ঐশ্বর্য্যকেও ধর্মের সৃষ্টি বা ধর্মের দান বলে দাবী করে এবং গর্ববোধ করে । সভ্যতা/অসভ্যতা, ভাল-মন্দ, পাপ-পূণ্য এসব শব্দগুলো উচ্চারনের সাথে সাথে আমাদের সমাজে সাধারনতঃ এই বিশেষণগুলোকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোনে বিচার করার চেষ্টা করা হয় । ধর্মকে ভাল-মন্দ বিচারের মাপকাটি বলে বিবেচনা করা হয় । বিশেষ করে যে ঘটনাগুলো আদালত পর্যন্ত গড়ায়না, সে ঘটনাগুলো সমাধা করার জন্য হোক বা মন্তব্যের জন্যই হোক আশ্রয় নেয়া হয় ধর্মের । তাহলে নৈতিকতা আর ধর্ম কি এক জিনিষ ? অর্থাৎ নৈতিক জীবনযাপনই কি ধর্মীয় জীবনযাপন ? সভাবতই নৈতিকতা ও ধর্ম নিয়ে বলতে গেলে নীতিবিজ্ঞান এবং ধর্ম গ্রন্থের কথা উঠে আসবে ।
নীতিবিজ্ঞানের আলোচ্চ বিষয় হচ্ছে মানুষের আচরণকে নিয়ে । মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ না করে কৃত আচরণের মূল্য নির্ধারণ করা । কি করতে হবে কি করা যাবে না, এধরনের বাধ্যবাধকতা নয় বরং উচিত অনুচিত নিয়েই নীতিবিজ্ঞান (Ethics) আলোচনা করে । অন্যদিকে ধর্ম গ্রন্থের বিভিন্ন প্রলোভন, হুমকি, অহংকার, অলীক কল্পনা ইত্যাদি বাদ দিলে ধর্ম মানুষের (ধার্মীকদের) আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আচরণের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে । অর্থাৎ ধর্ম গ্রন্থই বলে দেয় তাদের আচার-আচরণ কি রকম হবে । সুতরাং নীতিবিজ্ঞান এবং ধর্ম গ্রন্থ তাদের আলোচ্চ বিষয় ও প্রয়োগের ভীন্নতার কারনে দুইটি সম্পূর্ণরূপে আলাদা ।
এই মানব সমাজে আসমানি কিতাবের মত নৈতিকতা কিন্তু হঠাৎ করে আমদানি না বা ওহির মাধ্যমে নাজেলকৃত না । মানব জাতির সুদীর্ঘ অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাব ধর্ম এবং নৈতিকতা এক জিনিষ নয় । তাদের উৎপত্তিও ভিন্নভাবে । মানুষের ইতিহাস যা স্বীকার করে তা হচ্ছে মানুষ তার অস্তিত্তের লড়ায়ে, তার সভ্যতার দূর্গম যাত্রাপথে গ্রহণকৃত বিভিন্ন পদেক্ষেপের একটি গুরুত্তপূর্ণ দিক তার নীতিবোধ। মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ আয়ত্ত করে নিয়েছে এই চারিত্রিক ঐশ্বর্য্য, নৈতিকতাকে । মানব মস্তিকে সেরিব্রেল কর্টেক্সের বিবর্তনের ফলে এই বুদ্ধিমত্তার বিকাশ । সন্তান লালন-পালন, শিকারের মাধ্যমে পাওয়া খাদ্য পরস্পরের মধ্যে ভাগ করে খাওয়া, বিপদ আপদে এগিয়ে আসা ইত্যাদি নীতিবোধগুলো মানব ইতিহাসের শিশু কালেই পরিলক্ষিত হয়। এমনকি পশু-পাখির মধ্যেও অভ্যাসজাত ক্রীয়াগুলো বিরাজিত । ঠিক কোন সময় মানুষের মধ্যে নৈতিকতার উদয় হয়েছিল তা বলা কঠিন । তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় ধর্মানুভূতির অনেক আগেই মানুষের মধ্যে নীতিবোধের উদয় হয়েছিল ।
আমরা জানি ধর্ম বিশ্বাসের উদ্ভব হয়েছে আর এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে। শিকারে বেরুবার পূর্বে প্রাচীন মানুষ প্রথমে পশুর ছবি এঁকে আগে সেই ছবিকে হত্যা করত। এই পদ্ধতিতে তারা চাইতো পশুদের উপর সম্মোহন প্রভাব বিস্তার করতে এবং মনে করতো যে, এর ফলে তারা ভাল শিকার পাবে । প্রত্নতত্ত্ববিদদের দ্বারা আবিষ্কৃত প্রাচীন মানষের আঁকা বিভিন্ন ছবি থেকে বৈজ্ঞানিকেরা এ ধরনের সুস্পষ্ট ধারণা পেতে সক্ষম হন । আবার আমাদের মতো তারাও ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখত । স্বপ্ন দেখতো এমন সব লোকজন যারা তাদের কাছ থেকে দূরে কোথ থাকে, কিংবা এমন কি হয়ত বা মারাও গেছে । এর কারণ জানা না থাকায় স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছিল তারা এইভাবে- দেহের ভিতরে আছে আত্মা, ঘুমের সময়ে দেহ থেকে সেই আত্মা বেরিয়ে গিয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়, অন্য লোকজনদের আত্মার সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে । আর মৃত্যু হয় তখন, যখন এই আত্মা দেহ ছেড়ে চলে যায় । তারা মনে করতো এই আত্মা দুই ধরনের হয় । ভাল এবং মন্দ । মন্দ আত্মার প্রভাবে রোগ ব্যাধি হত বলে তাদের ধারণা ছিল । আদিতে মানুষ মরে গেলে পশু-পাখির খাবার হিসেবে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখলেও এর বহু পরে তারা মৃত মানুষকে কবর দেয়া শুরু করল । সমাধি পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে মৃত মানুষের সাথে তারা বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য দিয়ে দিত । তাদের ধারণা ছিল, জীবিতদের যা যা খাবার প্রয়োজন মৃত মানুষের আত্মারও একই জিনিষের প্রয়োজন হবে । এই প্রক্রিয়া এখনো কোন কোন দেশে প্রচলন আছে । মূলত এই ধরনের অলীক বিশ্বাস থেকে ইশ্বর ভাবনার পত্তন হয় । আদি মানুষের এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ধর্মপ্রবর্তকগন আত্মা এবং ইশ্বর ভাবনার সাথে রঙ মিশিয়ে ধর্ম বিশ্বাসকে মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে দেয় । যার যার সুবিধা মত ঈশ্বরের নিকট হতে প্রয়োজন মোতাবেক বানি আমদানী করে সরল মানুষের মগজ ধোলাই করে আসছে সেই আদিকাল থেকে। তারাই তাদের অলীক বিশ্বাসকে স্থান দিয়েছে নৈতিকতা, সভ্যতা, মানবতা সবকিছুর ঊপরে । এমন অনেক বিষয় আছে যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নৈতিক হলেও নিরেপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে অনৈতিক । তাদের নৈতিকতা আর একজন নাস্তিকের নৈতিকতা উদ্দেশ্যের বিচারে এক হতে পারেনা । এপ্রেক্ষিতে ফলাফল যাই হোক না কেন, উদ্দেশ্যের বিচারে বিবেচনা করলে দেখা যায়, ধর্ম যে নৈতিকতার কথা বলে, নীতিবিজ্ঞান কিন্তু সে নৈতিকতাকে স্বীকার করেনা । ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে সকল ভাল কাজ করতে হয় ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য বা স্বর্গ লাভের আশায় । খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় শাস্তির ভয়ে । এখানে কিন্তু উদ্দেশ্য বিনিময় । আর নীতি বিজ্ঞান যে নৈতিকতার কথা বলে, তা হচ্ছে, কোন কিছুর আশায় বা বিনিময় এর জন্য ভাল কাজ করলে হবেনা, ভাল কাজ করতে হবে তার অপরিহার্য্য কর্তব্য মনে করে । সপ্রনোদিত ইচ্ছার প্রকাশই নৈতিকতার বিবেচ্চ বিষয় । বাধ্য বাধকতার কোন স্থান নীতি শাস্ত্রে নেই । আধুনিক নীতিবিজ্ঞান মানুষের উদ্দেশ্যের উপর কর্মের মূল্য নির্ধারণ করলেও ধর্ম তা নির্ধারণ করে ঐশ্বরিক বানির উপর ।
ধর্ম বিশ্বস আসলে একটি অন্ধ বিশ্বাস। এজন্য আধুনিক পৃথিবীতে বসবাস করেও, ধর্ম বিশ্বাসের কারনে বহু জাতি আজও অন্ধরারে
ভাল লাগল লেখাটি,
আমি নিজে ছোট বেলায় দেখেছি , যে ব্রাহ্মন বাড়িতে মুরগির মাংস কেউ খেত না। কারণ জিজ্ঞেস করাতে কেউ এর সঠিক কারণ বলতে পারে নি। পরবর্তী কালে আমরা যথেষ্ট ই খেয়েছি মুরগির মাংস, তাতে আমাদের কিছুই হয় নি। তাই এই ব্যাপার আমার কাছে এক কুসংস্কার ছাড়া কিছুই মনে হয় নি, এবং ৯ টি সুতোর তেইরি পইতে কেন পরতে হয় কেউ এর জবাব আমায় দিতে পারে নি , তাই পরা ছেড়ে দিলাম , কোনো ক্ষতি হয় নি আমার তাতে। সূর্য , চন্দ্র ইত্যাদিকে সবাই এক সময় ভাবত সূর্য দেবতা, চন্দ্র দেবতা । বিজ্ঞানের কল্যাণে আজকে সবাই জানি যে সূর্য এক নক্ষত্র এবং চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। আশা করি যুক্তি বাদের পথ ধরে পরবর্তী কালে সবাই এই ধর্ম নামের আফিমের নেশা থেকে বেরিয়ে আসবে।
মন্তব্য…hi
ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে সকলের আগে তাদের মুনডচ্ছেদ হওয়া দরকার। ধর্ম একটি ব্যেক্তিগত বিস্বাশ যা কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া অমানবিকতা। যারা এটা করে তারা মানবজাতির শত্রু। এই ব্লগের লেখকদের আমি বৈপ্লবিক অভিনন্দন জানাচ্ছি
চমৎকার একটি লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ না দিয়ে থাকা যায় না। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই লেখককে। :yes: :rose2:
ধর্মের নৈতিকতার সাথে মানবিক নৈতিকতার তুলনা করলে ধরা পড়ে যে ধর্মীয় নৈতিকতার মূলে নৈতিকতা নেই, রয়েছে স্বেচ্ছাচারী নির্দেশ, আর মানবিক নৈতিকতার ভিত্তি হচ্ছে কল্যাণ।
সব ধর্মের নৈতিকতার ভিত্তি ভয় আর লালসা। ভয় আর লালসা দূষিত করে সব ধরনের নৈতিকতাকে। ধর্মীয় নৈতিকতা থেকে মানবিক নৈতিকতা অনেক উন্নত।
নৈতিকতার সীমা হওয়া উচিত সংকীর্ণ: আমার কোনো কাজ যেনো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে- এতটুকু; কিন্তু ব্যাধিগ্রস্ত নীতিপ্রণেতারা এর সীমা বাড়িয়ে মানুষের জীবনের সবকিছুকে ঘিরে ফেলেছে। ধর্মীয় নৈতিকতার লক্ষ্য স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া। ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণকারী নৈতিকতাকে কখনও নৈতিকতা বলা যাবে না। স্বাধীনতা হরণ করাটাই অনৈতিক।
লেখকের প্রতি অনুরোধ: দাঁড়ি-কমা-জিজ্ঞাসা চিহ্ন, এগুলোর আগে স্পেস না দেয়া জন্য।
স্বাগতম বাদল চৌধুরী।
সুন্দর লেখা। চালিয়ে যান। :yes:
ইশ্বর বিশ্বাসরে পেছন েসবচয়েে বড় কারণ হল আদিম মানুষরে জানার ইচ্ছা এবং ভয়। তারা দাবানল দেখত, বিদুৎ চমক দেখত, হি!স্র পশুর আক্রমন দেখত । আর ভাবত এইসব কি? নিশ্চই এর পছেনে কোন কিছুর হাত আছ।ে সেই থেকে ই ইশ্বর নামরে কাল্পনকি বস্তুটরি সুচনা। পরবর্তী সময় সভ্যতার সুচনায় এক শ্রেণীর স্বার্থানেস্বী শ্রেণী এই বিশ্বাসক ে তাদরে স্বার্থ ব্যবহার শুরু করল। মানুষক েবোকা বানয়ি েকি ভাব েশোষণ করা যায়। সইে তথা কথতি পুরোহতি শ্রেণী আজো বিদ্ধমান। পটেে ভাত পড়ুক আর না পড়ুক রাম রাম , আল্লা আল্লা কর েসাধারণ মানুষ দনি যাপন করল েহল। সইে নীত িবজায় রখেছে আধুনকি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন নীতরি নতোরা। ভারত কােটী কােটী বদিশেী টাকা দয়ি েটিকয়ি েরাখা হয়ছেে নানা ধর্মীয় সংস্থাক।ে কনে সইে বদিশেী টাকা আসছ ে? কারণ পরবৃর্তী প্রজন্ম যাত েসইে ধর্মীয় অন্ধকার থেক েবেরয়ি েনা আসত েআর শােষণরে রাস্তা কাটা হীন থাক।ে আম িব্যক্তগিত ভাব েদেখেছ ি এই ধর্মীয় সংস্থাগুল িযুবক এবং শিশুদরে এমনভাব েমগজ ধোলাই দিচ্ছ েযে তারা দশে বা সমাজরে কথা চিন্তা না কর েকৃষ্ণপ্রাপ্তরি কথা চন্তিা কর েঅদের আসল লক্ষ্য কৃষ্ণক েপাঅয়া। আর অদরে অহঙ্কারের সহতি বলতে শুনছ িসাদা চামড়ার সাহবেরা হিন্দুমন্ত্র পড়ছনে আর তিলক কাটছনে গলায় তুলসীর মালা পরছনে । তার আসল কারণ আমরা জান ি। আমরা দেখছ িসইে আরব দুনয়িার সভ্যতার কলঙ্ক কুসংস্কার আর ধর্মীয় নতোদরে মানুষরে উপর অত্যাচার।আমরা দখেছী সইে পাথর ছুঁড়া হত্যা, সামান্য রোজা ভাঙার অপরাধ েহত্যা, মানুষরে হাত, পা কেট েদেঅয়া । এটাই হল ধর্মীয় নৈতকিতা। বাংলাদশেরে গ্রামাঞ্চল ও তার হাত থকেে বাঁচত েপার েন।ি আমাদরে মানব ধর্ম মানবকিতা তা সহ্য করত েপার েনা। বাদল বাবু আপনার লেখা দারুণ হয়ছে েকন্তিু শুধু মুক্তমনা ব্লক েলখিল েহব েনা। সাধারণ মানুষরে কাছ েপৌঁছ েদিত েহব।ে