[পর্ব-১৫]
এইযে নতূন দেশে তিনি আগমন করলেন তারপর থেকেই শুরু হল তার সংগ্রামময় জীবন।একদেশ থেকে শেকড় উপড়ে অন্য দেশে এসে বসবাস,এ যেনো অস্বিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।
রাজ্য বদলায়,রং বদলায় কতো কিছু বদলে যায়।মানুষের মন বদলায়না। একে একে ছয়টি সন্তানসহ কতো দিন,কতক্ষণ,কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পার করেছেন সেই সাদামাটা মানুষটি। ভেবেছিলেন শান্তি আসবে। আবার রক্তারক্তি বন্ধ হবে।
সেদিন কী ভেবেছিলেন এমন দূর্যোগের ঘণঘটা নেমে আসবে আবার তাঁর জীবনে?প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে? ভেবেছিলেন এইবার বুঝি দেশ ভাগে আবার অশান্তি দূর হবে, মানুষ সূখী হবে।
তখন তো ভেবেছিলেন হিটলার,ফ্যাসিজম সব শেষ।এবার আসবে স্বস্তি সূখ।
তখন ভাবেননি যে একই দেশের মানুষ হয়ে যারা ভাই ভাই বলে দাবী করেছিল,তারাই একদিন অস্ত্র ধরবে বাঙ্গালিদের বুকে।
এই পূব অঞ্চলে পা রাখার সময় ভুলেও ভাবেননি একদিন ইতিহাসের চাকা আবার ঘুরবে।
এই স্বাধীনতার পরে আর এক স্বাধীনতার জন্য মানুষ মর্মান্তিক হা-হা কার করবে।
কিন্তু তাই হলো।মানুষ যা ভাবে মানুষ যা সর্বান্তকরণে চায় তা হয় না। সে সব কথা থাক।
আজ এই পড়ন্ত বেলায় সেই নিরীহ মানুষ যিনি আমার বাবা তার স্বপ্নের কথা থাক।আরো পরে হয়তো আসবে আরো কথা।
এমন ভাবেই ৭১ দিন গুলো চলতে লাগলো।শুনা গিয়েছে কত সাধারণ বা হিন্দু পরিবার জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। দেশ ছেড়ে অগনিত মানুষ সর্বশান্ত হয়ে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছে। নদী পথে দেশের বাড়ি যাবার সময় গান বোটের পাল্লায় পড়ে গুলি খেয়ে মরেছে,কেউ বা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে।
এর অনেক আগেই মুক্তিবাহিনী শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে।
দেখতে দেখতে শীত এসে গেল। আমাদের সংসারে প্রতিদিনই একটা না একটা খুঁটি-নাটি ঘটনার মধ্য দিয়ে দিনগুলো পার করছি সবাই।
অনেক পরিবর্তন হতে লাগলো শহরে।হঠাৎ হঠাৎ আকাশে প্লেনের আনাগোনা বেড়ে গেলো।
মা,বাবার চিন্তিত মুখ আরো চিন্তায় ছেয়ে গেল। চারদিক খালি হতে শুরু করল।
একদিন জানতে পারলাম পাশের বাড়ির সবাই দেশে চলে গিয়েছে।দু’ইভাই রয়ে গিয়েছে কেবল।এক অদ্ভুত কথা শুনলাম সবাই গোপণে।আমাদের পাশের বাড়িতেই কাজ করতো ঠিকে ঝি। তা সেও পাশের বাড়ি কাজ করতো সে নিজ কানে বলাবলি করতে শুনেছে পাড়া ফাঁকা হলেই ভালো।এই সুযোগে ভালো রকম লুটপাট করা যাবে।
কী আশ্চর্যের ব্যপার! এমন দেশের অবস্থায় এমন মানূষও থাকে যারা লুটপাটের কথা ভাবতে পারছে? শুনে সবাই শিউরে উঠল।
ঢাকা শহর পুরো থমথমে হয়ে গেল।দোকান পাট বেশির ভাগই বন্ধ থাকে।একটা ভিখারিও পাওয়া যায়না। মহিলারা সব বোরকা পরে চলাচল করে।শোনা যায় তাও কমে গিয়েছে।
ঠিক ডিসেম্বরের প্রথম দিকে থেকে শুরু হলো পুরোপুরি ঢাকা ছাড়ার পালা। এর মাঝে আমরা কোথায় যাব, আমাদের ঠিকানা কই? আমাদের বাবা তো নিজ দেশ ছেড়ে এই দেশে এসেছিলেন আশ্রয় আর চাকরি নিয়ে। মা,বাবা দু’জনায় সিদ্ধান্ত নিলেন যা আছে কপালে এই বাড়িতেই থাকবেন। সবার মাঝেই এক হিমশীতল মৃত্যুর বসবাস হতে লাগল।
যেদিন ডাঃ ফজলে রাব্বী সহ আরো আমাদের পাড়ায় বুদ্ধিজীবী ধরে নিয়ে গেল মিলিটারি,সাথে পাশের বাড়ির ছেলে দু’টিকেও নিয়ে গেল। যারা লুট-পাট করবে ঠিক করেছিল তারাও বুদ্ধিজীবী হয়ে গেলো কী করে ?
যুদ্ধ পরবর্তি কালে এদের দুই’ভাইএর যে বেঁচে ফিরে এসেছিল তার সাক্ষাতকার নেয়া হয় টেলিভিশনে। কত অবাক কান্ডই না ঘটে পৃথিবীতে।
আমাদের দুঃসময় চরমে।
বাবা বস্তা বস্তা চাল,ডাল,কেরোসিন তেল।দেয়াশলাই শুকনা জিনিস সংগ্রহ করে জমা করলেন। কী জানি এমন যুদ্ধ কতো দিন না চলে।
বি,বি,সি চরমপত্র নিয়ে হুমড়ি খেয়ে আছে সবাই।আজ কোন শহর দখল করল মুক্তিবাহিণী এগুলো শুনাই মূল কাজ যেন।মাঝে মাঝেই বিবিসি শোনা যাচ্ছিল না। মেজাজ খারাপ হয়ে যেত সবার।
স্বাধীণ বাংলা বেতারে গান বাজে,
“ মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো
বলে যুদ্ধ করি”
সবার চোখ অশ্রু সজল হয়ে ওঠে।
ভারতীয় মিত্রবাহিনী ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে, আকাশ যুদ্ধ শুরু। কী ভয়য়ঙ্কর! সাইরেন বাজলে মা ছোটদের বারান্দা থেকে টেনে কানে তুলো দিয়ে খাটের তলায়,টেবিলের নিচে লুকিয়ে রাখেন।
আকাশে মিগ প্লেন ওড়ে,কখন বোমা পড়ে বাড়ি উড়িয়ে দেয় কে জানে।
বাড়ি ঘরের দরজা,জানালা বন্ধ করে একটা অবরুদ্ধ শহরে মৃত্যুর দিন গুনতে লাগল সবাই।
পুরো পাড়ায় যেনো একটা কুকুরও নাই, হীম শীতল।
প্রায় আগরবাতির গন্ধ নাকে আসে। লাশের পাশে মনে হয় কেউ জ্বালায় কে জানে। আমরাইতো মনে হয় জ্যান্ত লাশ হয়ে আছি। মনে হচ্ছে পাশেই আগর বাতি জ্বেলে দিয়েছে। আজও আমি আগরবাতির গন্ধ সহ্য করতে পারিনা।
যতো যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়েছিল মিলিটারি সবাই ক্যাম্পে বন্দী। নগ্ন শরিরে রাখে, প্রয়োজন শেষে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে(সব পরবর্তিতে জানি)।
আমাদের পরিবার নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছে পুরোপুরি।
ঠিক ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা শহর মুক্ত হল। পাকিস্তান সেনা বাহিণী আত্ম-সমার্পণ করলো ভারতীয় মিত্র বাহিণীর কাছে।
দলে দলে মানুষ জয় বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নামল।
আমরা বাড়ির মানুষেরা অবাক বিস্ময়ে সবাই সবাইকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।
আমরা বেঁচে আছি। কী বিস্ময়কর ব্যপার! স্বাধীণ দেশ দেখছি। একী স্বপ্ন না সত্য? প্রতিদিন মিলিটারির ভয়ে কুকুরের মত পালিয়ে বেড়াতে হবেনা।
কী কান্ড? বেঁচে গেলাম কী করে?
স্বপ্ন পুরণ হল। আসলে কী সব স্বপ্ন পুরণ হয় মানুষের? অনেক স্বপ্নই ফানুসের মত উড়ে যায়। এমন কত শত স্বপ্ন,কতো আশা ,আকাঙ্ক্ষা কতো ভালবাসার আশায় বেঁচে থাকা মানুষের জীবন।
এমন স্বপ্ন তো কতো দেখেছিলাম একসময় সেই ২৭১ নং লালবাগের বাড়িতে বসে। কোথায় সেই কুল গাছটার তলায়,যেখানে মা ঝাড়ু দিয়ে পাতা জমা করে রাখতেন জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য। আর কতো স্বপ্নের জাল বুনে যেতেন হয়তো।
তেজপাতা গাছটা কি আজও তিরতির করে কাঁপে বাতাসে?
বাইরে থেকে তো অনেক কিছু বদলে যায়। ভেতরে কী বদলায়?
আজ স্বাধীণ দেশে ঘুরছি। আসলে কী আমরা সত্যিকারের স্বাধীণতা পেয়েছি? যারা রাজাকার,আলবদর ছিল, দেশ স্বাধীণতার পরে তারাও তো মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পেয়েছে।
এখন সবার মধ্যে অস্থিরতা দেখি।সবাই কিসের পেছনে যেনো ছুটে চলেছে। সবার অনেক টাকার দরকার,আমাদের ও টাকার দরকার। এমনই হয় হয়তো। তাই এমন ভাবেই আমাদেরও টাকার দরকার বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই একদিন বড় ভাই ইংজিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি নিল।
স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমাল।
তখনও হয়তো জানতোনা তাকেও একদিন টাকার জন্যই বিদেশে বসবাস করতে হবে। ভেবেছিল বাবার সংসারে একটু যদি স্বাচ্ছন্দ দিতে পারে।
জানতো না ঐ দেশে মনিকা নামের এক সুন্দর মেয়েকে ভালোবাসবে।আর যেদিন ভালোবাসার কথা বলতে যাবে ঐ দিনটাই হবে মনিকার সাথে তার শেষ দেখা।
ভুলেও ভাবেনি মনিকা তাকেও ছেড়ে অনেক অনেক দূরে লন্ডনবাসী হবে।মনিকার চোখেও যে টাকার স্বপ্ন।সুখ স্বাচ্ছন্দের স্বপ্ন।মনিকা ভয় পেয়েছিল এই বিদেশি যুবক কী তাকে নিঃশ্চিত জীবন দিতে পারবে?
একবুক নিরাশা নিয়ে বিদেশের মাটিতে কেঁদেছিল এক অবোধ যুবক। ভালোবাসা কী বিচিত্র রুপ!
মনে আছে এই তো নীল শার্ট পরে বড়ভাই চলে গেল। এয়ারপোর্ট তখন ছিল তেজগাঁ। সেদিনের কথা আজো ,মনে আছে।আবার দেশে অশান্তি।আবার মিটিং,মিছিল।আবার ঐ দিন কি কারণে হরতাল ছিল।
আমরা সবাই হাঁটতে হাঁটতে এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম বড় ভাইকে প্লেনে তুলে দিতে।
চলে গেল আমাদের একাকী করে বড়ভাই টাকার সন্ধানে। হয়তো ভেবেছে ডিগ্রি শেষ করে ভালো চাকরি নিয়ে আমাদের পরিবারকে আরও উন্নত করে দেবে।
কে জানতো যে বাবা একদিন সবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শোকে কাতর হয়ে নিঃশব্দে চলে যাবেন এই পৃথিবী ছেড়ে?
সে সব কথা থাক। আরো পরে হবে। আজ কেবল স্বাধীনতার কথা বলি।
[ফানুস ২ খণ্ড ৭১ দিনলিপি সমাপ্ত]
ভালো লাগছে একটু সুস্থ এই খবর পেয়ে। কোন চিন্তা নাই, অবশ্যই ভালো হয়ে যাবেন। না হলে আমাদের অতো সুন্দর কবিতা উপহার দিবে কে? 🙂
একাত্তরের স্মৃতি মানেই কষ্টের স্মৃতি, দু:খবোধের স্মৃতি, দুর্ভোগের স্মৃতি। এসব স্মৃতি জড়িয়ে থাকে পারিবারিক জীবনের সাথে।
আপনার শারিরীক অসুস্থতা-ই আপনাকে বাধা দিচ্ছে আপনার লেখাকে। তারপরও আপনার যে মনোবল রয়েছে, সেজন্য আশা পাই। এত কষ্টের মধ্যেও লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানানোটা কর্তব্যই মনে করছি।
কিছু কিছু অসুস্থতা রয়েছে যেগুলো বয়সের সাথে সাথে শরীরে বাসা বাধে। নিয়ন্ত্রিত জীবন, উপযুক্ত শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে সেগুলোকে কন্ট্রোলে রাখতে হয়। অনেক সময় শুধু ঔষধে কাজ হয় না। সে সাথে প্রয়োজন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন।
আপনার এই কষ্ট সেই ভালোমত উপলব্ধি করতে পারে যার এমন ব্যাথা রয়েছে। প্রার্থনা বা দোয়া যদি কাজে লাগতো তাহলে সত্যিই আমি দোয়া করতাম। কিন্তু ওগুলোতে আমার আস্থা নাই। তবুও মনে-প্রাণে-আত্মায় কামনা করি আপনার সুস্থতা। একদিন দেখা যাবে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন, অলৌকিকভাবে।
@মাহফুজ,
আপনি বেশ কিছুদিন ছিলেন না,আপনার অনুরোধে আমি একটা কবিতা পোষ্ট করেছিলাম,পড়েছেন কিনা জানিনা। আমি আগের চাইতে কিছুটা ভালো আছি, তবে আবার বড়ো আকারে লেখার মতন মন আর শরির তৈ্রি হয়নি।হলে আশা করি আবার শুরু করব। সবার উৎসাহ আর প্রেরণা ই আমার বাকী লেখার পাথেয় হয়ে থাকবে।
আপনার অসুস্থতার কথা শুনে খারাপ লাগছে। কামনা করি খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এ ধরনের লেখা আরো লিখুন।
take care
@মোজাফফর হোসেন,
আপনি কী “ফানুস”সব পর্ব গুলো পড়েছেন? আগ্রহ থাকলে পড়ে নিতে পারেন। ১ খন্ড পড়তে পারেন ,২খন্ডে “৭১ দিনলিপি বেশি প্রাধাণ্য পেয়েছে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। মনে হয় আমার লেখা এই প্রথম পড়লেন। আমার সুস্থতা কামনা করার জন্য আমি কৃ্তজ্ঞ।
বিভিন্ন ব্যস্ততার মন্তবত করতে দেরী হল।
আপনার আশু সুস্থতা কামনা করি। ফিরে এসে এরকম অসামান্য সিরিজ আরো লিখুন এই কামনা করি।
@অভিজিৎ,
আপনাকে ধন্যবাদ, অন্ততঃ আমার অসুখের কথা শুনে কিছু বললেন। আবার সুস্থ হয়ে উঠলে লিখব।
তবে,কবিতা দিতে পারি।
খুব ভাল লাগল। মনে হল সদ্য স্বাধীন দেশের দূঃখময় দিনগুলির ছবি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিস্তারিত লিখতে পারলেন না।
আশা করি ভাল হয়ে উঠবেন।
তেজগাঁও এয়ারপোর্টের কথাও অনেকদিন পর মনে পড়ল। আজকাল সেই এয়ারপোর্ট দেখলে কেমন জানি অবাক লাগে, একসময় এই অতি ক্ষুদ্র এয়ারপোর্ট দিয়েই ছিল বহিঃবিশ্বের সাথে দেশের একমাত্র বিমান সংযোগ। ছোটবেলায় বেশ কবারই গেছি।
@আদিল মাহমুদ,
আপনাকে ধন্যবাদ কেননা আপনি শুরু থেকে ফানুসের সাথে আছেন। আর খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন আমাকে উৎসাহিত করেছেন বার বার। এই কারণে আমি আরো কৃ্তজ্ঞ আপনার কাছে।
তেজ গা দিয়ে গেলে সত্যই আজো মনে পড়ে সে দিনের কথা,কত কথা কত স্মৃতি।
আমার জন্য দোয়া করবেন।
আফরোজার অসুস্থতার সংবাদে আমি মর্মাহত।
তবে আমি আশা দিব যে আজকাল চিকিতসা বিজ্ঞান খুব উন্নত। হয়ত আফরোজার এই অসুখের একটা সমাধান শীঘ্রই পাওয়া যাবে।
ফানুস এত তাড়াতাড়ী, এত আকস্মিক ভাবে শেষ হয়ে গেল জেনে মনটা আরো ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। এই সুন্দর ধারাবাহিক রচনাটা পড়লে ৭১-এর কত স্মৃতিই না মনে পড়ে যায়। ফানুস শেষ হবার সাথে মন হচ্ছে যেন সেইসব স্মৃতিগুলোও যেন মরে যাবে।
তবে গীতা দাসের মত আমিও অনু্রোধ করব আফরোজার কণ্যা যদি তার মাকে সাহায্য করে তবে আমরা পাঠকেরা অত্যান্ত কৃতজ্ঞ থাকব।
@আবুল কাশেম,
হাঁ, চিকিৎসা বিজ্ঞান ভালো হয়েছে কিন্তু আমার অসুখ শুনেছি একবারে ভালো হয়ে যাবো তেমন না।
এটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী অসুখ। দোয়া করবেন ভালো অন্ততঃ কলম ধরতে পারি,আর টাইপ করতে পারি। এই টুকু টাইপ করতে আমার কি পরিমান কষ্ট হয়েছে কল্পনা করিনি আগে। বসে থাকা এক অসম্ভব ব্যপার যেনো।
লেখা প্রসঙ্গে,
আসলে আমি কেনো জানিনা মনে হল আমার একটা কী বাকী রয়ে গিয়েছে। অসুখ আসলে মানুষের মনকেও দুর্বল করে ফেলে। আমার আরো কিছু লেখার আছে,যদি আমি আবার উঠে দাঁড়ায়।আবার হাতে কলম ধরতে পারি,আবার সেই চিন্তা চেতনাকে জাগাতে পারি,কথা দিচ্ছি ফানুস ৩ খন্ড শুরু করব।
প্রিয় পাঠক,
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি। আমার একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে শেষ করতে পারলাম না
ফানুস ২ খন্ড৭১ দিনলিপি। আমি এমন এক অসুস্থতায় ভুগছি। যার কোনো সমাধান আপাততঃ নেই। আমার কমপিউটারে বসতে ভিষণ কষ্ট। আমার ব্যাক সাইডে স্পন্ডালাটিস হয়েছে। কবে কি ভাবে ভালো হাবো জানিনা। আমার দ্বারা যতটা সম্ভব এই মুহুর্তে তাই লিখে শেষ করলাম। ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন।
@আফরোজা আলম,
আপনার অসুস্থ্যতার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। বুঝাই যায় তাড়াহুড়া করে শেষ করেছেন।
তবে আপনার মেয়েকে বললে সে লিখে সাহায্য করতে পারত তার মূল্যবান সময় মাকে দিয়ে।
যাহোক, শীঘ্রই ভাল হয়ে উঠুন এ প্রত্যাশা করি।
@গীতা দাস,
আমার মেয়ে বাংলা টাইপ জানেনা,আবার যা জানে তা দিয়ে আমি শান্তি পাবোনা।সব চাইতে বড় কথা
ওর সেমিস্টার ফাইনাল ক’দিন পরে।
আসলে ঠিক বলেছেন তাড়া হুড়োই যেনো হয়ে গেলো, আমি লিখে শান্তি পেলাম না। আমার যেন আরো কিছু বলার ছিল। আরো কিছু লেখার ছিলো। তবু,লিখলাম এই কারণে যে আমার অসুখ কবে ভালো হবে জানিনা। বা আদৌ ভালো হবো কীনা জানিনা।তাই একটা কর্তব্যবোধ আমাকে যেনো তাড়া করে ফিরছিল,শেষ করতে হবে।
মানুষের জন্ম মৃত্যুর কী বা বিশ্বাস ! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার জন্য ভেবেছেন।
@আফরোজা আলম,
কামনা করছি রোগ থেকে সেরে উঠুন আবার লিখতে শুরু করুন!
ভাল থাকুন!
@লাইজু নাহার,
আপনার কামনা যেনো পূরণ হয়। কি আর বলি,ক’মাস ধরে ভুগছি।
@আফরোজা আলম,
অনেক কথা যে বলার ছিল, তা তো বলা হলোনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনার বলিষ্ঠ হাতের কোন লেখায় সেই না বলা কথা গুলো নিয়ে আপনি আমাদের মাঝে শীঘ্রই ফিরে আসবেন। কামনা করি আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন।
@আকাশ মালিক,
অনেক কিছু বলার ছিল।কেনো জানিনা মনোবল হারিয়ে ফেলেছি প্রায় এক মাস যাবত অসুখে ভুগে।
যদি আবার ভালো হয়ে উঠি,যদি আবার ফিরে হাতে কাগজ কলম ধরতে পারি বলবো ,লিখবো।
কোথায় যেনো একটা কালো মেঘ যেনো আমাকে ছেয়ে ফেলেছে। জানিনা কবে লিখতে পারব, আমার জন্য
দোয়া করবেন।