প্রাক্ কথন
‘জাতীয়-মুক্তি’ সমাসবদ্ধ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক। জাতীয়-মুক্তি বলতে আমি বুঝাতে চাই, আর্থ-সামাজিক মুক্তির সাথে যুগপৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি-যা একটি জাতিকে কেবল অর্থনৈতিক মুক্তি দেয় না, মুক্ত করে সকল প্রকার পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণা-মূল্যবোধ থেকে। বস্তুত: এমন একটি সমাজের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা –বক্ষে ধারণ করেই আমরা আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। একটি স্রোতহীন মৃত নদী কিংবা বদ্ধ জলাশয়ে যেমন অসংখ্য শেওলা-আগাছা জন্ম নেয়, ঠিক তেমনি একটি পশ্চাৎপদ সমাজে মানুষের মধ্যে নানা প্রকার অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ধর্ম কিংবা বর্ণ ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডুকতা, পরমত অসহিষ্ণুতা, পরিণামে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ইত্যাদি জন্ম নিতে থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে সুদীর্ঘ দিনের দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতার ফলে আমাদের সমাজও অপসংস্কৃতির ঐ সকল রোগে আক্রান্ত । কেবল অর্থনৈতিক মুক্তি সমাজকে এ সব অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। তার জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক মুক্তি। তাই প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তি হল যুগপৎ অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি।
জাতীয়-মুক্তি অর্জনে বিজ্ঞানের অপরিহার্যতা
বর্তমান যুগকে বলা হচ্ছে The Era of Science & Technological Revolution (STR) অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপ্লবের যুগ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আজকের বিশ্বে সে দেশ বা জাতি তত উন্নত, যে দেশ বা জাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যত উন্নত। আমরা জানি, বিজ্ঞান হল একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান, যার প্রায়োগিক দিক হল প্রযুক্তি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠেছে আধুনিক প্রযুক্তি। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন কি রাষ্ট্রীয়, কি সামাজিক বা পারিবারিক, এমন কি ব্যক্তি জীবনের দিকেও ত্কাাই, তাহলে দেখতে পাব আমাদের জীবন কিভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে, যার সাহায্য ছাড়া আমরা একটি দিনও অতিবাহিত করতে পারব না।
বলাবাহুল্য, জাতীয়-মুক্তির লক্ষ্যে আমরা প্রথমত: যে আর্থ-সামাজিক মুক্তির কথা বলেছিলাম, সে আর্থ-সামাজিক মুক্তি অর্জন করতে হলে আমাদের সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে সর্বাগ্রে। সম্পদ সৃষ্টি করা যায় উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাই একটি আর্থ-সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি হল তার বস্তুগত উৎপাদন। বস্তুগত উৎপাদন ব্যতিরেকে কোন সমাজ-সভ্যতা টিকে থাকতে পারবে না। জাতিগতভাবে আমরা গরীব যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। একটি সমাজে সম্পদ সৃষ্টি হয় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এমনকি ভূগর্ভে কিংবা ভূ-পৃষ্টে বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে হলেও একটি উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। উৎপাদন অপর্যাপ্ত বলেই আমাদের সম্পদও অপর্যাপ্ত। তাই অপরিহার্র্য ভাবে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের বিদ্যমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় । আবার উৎপাদন প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে উৎপাদিকা শক্তি। আধুনিক বা উত্তর-আধুনিক যুগে উৎপাদিকা শক্তির যে বিকাশ, তার যোল আনা কৃতিত্ব বিজ্ঞান তথা প্রযুক্তির। সে বস্ত্র উৎপাদন হতে শুরু করে কয়লা-তেল-গ্যাস উৎপাদন, যাই করি না কেন, প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া তা করা সম্ভব নয়। সে প্রযু্িক্ত আমরা নিজেরা তৈরী করতে না পারলে উন্নত বিদেশ থেকে আমদানী করে নিয়ে আসতে হয়। তাই বিদেশ থেকে আমদানীকৃত প্রযুক্তিতে বস্ত্র তৈরী করে আমাদের বস্ত্র-কন্যারা-তাদের সকল জীবনী শক্তি নি:শেষ করে দিয়ে¬-যেমন আজ উন্নত বিশ্বের মানুষের ইজ্জত-আব্র“ রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ফি বৎসর উপার্জন করে জাতিকে বেআব্র“ হওয়া থেকে রক্ষা করে চলেছেন। একমাত্র প্রযুক্তির সাহায্যেই আমাদের দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকেরাই সমুদ্রের অথৈ জল কিংবা ধরণীর সুগভীর তল থেকে গ্যাস-তেল-কয়লা আবিস্কার করে জাতির ভবিষ্যতকে সমুজ্জল করার চেষ্টা করছেন। তাই নিজেরা তৈরী করি কিংবা বিদেশ থেকে আমদানী করি, প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু বিদেশীরা তাদের বেনিয়া স্বার্থের কারণে কখনো আমাদের তাদের উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি দেয় না, অনন্যোপায় হয়ে অনেক সময় তাদের পরিত্যাজ্য প্রযুক্তি আমাদের কিনতে হয় অনেক বেশি মূল্য দিয়ে। তাই আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরীর উদ্যোগ কেন আমরা গ্রহণ করব না। আমাদের দেশের ছেলেরাইতো উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে নতুন নতুন আবিস্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু যেমন সর্বপ্রথম উদ্ভিদের প্রাণ আবিস্কার করেছিলেন, অতি সম্প্রতি আমাদের আর এক বাঙালি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম পাটের ‘জিনম’ আবিস্কার করে বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। তৎপূর্বে এ বিজ্ঞানী রাবার এর জিনমও আবিস্কার করেছিলেন। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রচেষ্টা নিলে বাঙালিরা পারে। প্রয়োজন বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা। অবশ্যই এ সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব সমাজ তথা রাষ্ট্রেকেই নিতে হবে।
এ গেল বিত্তের উৎপাদনে প্রযুক্তির ভূমিকা। কিন্তু আমাদের চিত্তের মুক্তি না ঘটলে জাতীয়-মুক্তি তো সম্পূর্ণ হবে না। চিত্তের মুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা কী। আড়াই শ’ বছরে বৃটিশ ও দু’যুগের পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করলেও ঔপনিবেশিক আমলের অনেক চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা থেকে জাতিগত ভাবে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারি নি। তদুপরি দীর্ঘ দিনের দারিদ্র ও পশ্চাৎপদতার ফলে নানারূপ অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে আমাদের সমাজ। দরিদ্র বলে আমাদের সমাজ শিক্ষায়ও অনেক পশ্চাৎপদ। শ্ক্ষিার এ পশ্চাৎপদতার কারণে নানারূপ অপবিশ্বাস, কূপমডুকতা, পরমত অসষ্ণিুতা, পরিণামে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির জন্ম ও বিকাশের জন্য আমাদের সমাজের মানসভূমি নিদারুণভাবে উর্Ÿর হয়ে আছে। এ অবস্থার গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে অপরিহার্য আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির লড়াই।
সামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তি
সামাজিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির প্রশ্নটি বস্তুত: চেতনাগত। সামাজিক সত্ত্বার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সামাজিক চেতনা। সামাজিক সত্ত্বা হল একটি সমাজের সামগ্রিক পরিবেশ ও আবহ, যার মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশও অন্তর্ভূক্ত। ব্যক্তি মানুষের চেতনার সমন্বিত রূপ হল সামাজিক চেতনা, যদিও ব্যক্তি চেতনা সব সময় সামাজিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। আবার ব্যক্তি চেতনার প্রাথমিক ভিত হল তার পারিবারিক চেতনা ও পরিবেশ। একটি শিশুর জন্মের প্রাক্কালে যেমন তার আত্মজেরা শিশুর উপযোগী বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র তৈরী করে রাখে, ঠিক তেমনি তার জন্মের পূর্বে তার পরিবারে তার জন্য বিশ্বাস-চেতনা-মূল্যবোধের একটি অদৃশ্য অবয়ব তৈরী হয়ে থাকে; জন্মের পর তৈরী পোশাকের মত ধীরে ধীরে নবজাতক শিশুও সে অবয়বে প্রবেশ করে, এর মধ্যে বেড়ে ওঠে। অত:পর কালক্রমে এ শিশু যখন আরো বেড়ে ওঠে এবং পরিবারের গণ্ডী পেরিয়ে সামাজিক আঙ্গিনায় প্রবেশ করে, তখন সমাজের মানুষের সম্মিলিত আচার-আচরণ তার উপর প্রভাব ফেলতে থাকে। পারিবারিক চেতনার অদৃশ্য অবয়বের মত সমাজের চিন্তা চেতনা মূল্যবোধও ক্রমান্বয়ে তার মধ্যে সংক্রমিত হতে থাকে। সাধারণত: পূর্বনির্ধারিত চিন্তা-চেতনা-মূল্যবোধের মধ্যেই সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। এর ব্যতিক্রম যারা, অর্থাৎ যারা বিদ্যমান গতানুগতিক ধারণার বিরোধীতা করে, তারা কখনো বিদ্রোহী, কখনো সমাজদ্রোহী কিংবা কখনো বিপ্লবী, নিদেন পক্ষে সমাজ-সংস্কারক হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে।
আমরা যদি একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলতে চাই, তাহলে প্রথমত: পারিবারিক এবং দ্বিতীয়ত: সামাজিক পরিবেশ তথা সামাজিক সত্ত্বা আমাদের পাল্টাতে হবে। সে ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে।
প্রথমত: পরিবার থেকে অশিক্ষার অন্ধকার দূরীভূত করতে হবে, অত:পর সমাজ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে সকল প্রকার অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার ও কূপমণ্ডুকতা। তার জন্য কি সকলকে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে হবে? না, তা সম্ভব নয় এবং তার প্রয়োজনও নেই।
এ সংকট থেকে উত্তরণে আমাদের প্রয়োজন চিন্তার মুক্তি। চিন্তার মুক্তির অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে যুক্তিবাদ। কোন রাজনৈতিক আন্দোলন দিয়ে একটি দরিদ্র, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠীকে যুক্তিবাদী করা যাবে নাÑতার চিন্তার বন্দীত্ব ও বুদ্ধির আড়ষ্টতা ঘুচানো যাবে না। তার জন্য আমাদের লড়াই বা আন্দোলনের ক্ষেত্র হতে হবে আমাদের মানসভূমি এবং সেখানে লড়াই বা আন্দোলনের কৌশল ও হাতিয়ার হবে ভিন্নÑমনস্তাত্ত্বিক। অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুক্তি, অপদর্শনের বিরুদ্ধে সঠিক দর্শন, কুসংস্কার, বুজরুকি ও নিয়তিবাদের বিরুদ্ধে কার্য-কারণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাই হবে এ মনস্তাত্ত্বিক লড়াই এর কৌশল ও হাতিয়ার। আমাদের বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পরিবেশের বেনিফিশিয়ারী বর্তমান শাসকগোষ্ঠীতো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঘাপটি মেরে থাকা বেনিয়ার দল, বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি যাদের সুযোগ করে দিচ্ছে বারংবার ক্ষমতায় যাওয়ার, শোষণ করার, আমজনগণকে ধোঁকা দিয়ে তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করার, তারাও বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ অক্ষুণœ রাখার পক্ষে। আমাদের যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা, তাতে আমাদের অনেকেই শুধু আক্রান্ত নয়, বরং তাকে আমরা লালন করছি জ্ঞাতসারে-অজ্ঞাতসারে, হীন রাজনৈতিক স্বার্থে-ভোটের রাজনীতির কারণে। রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়াও আমাদের অনেকের এ অবস্থানের আরেকটি কারণ হলো, অজ্ঞতাপ্রসূত চিন্তার অস্বচ্ছতা ও বুদ্ধির আড়ষ্টতা। অতএব, এ সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা শুরু হতে হবে সচেতন, প্রগতিশীল নাগরিকদের উদ্যোগে। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষহীন সচেতন নাগরিক সমাজ এ আন্দোলনের সূচনা করতে পারে-যার আশু লক্ষ্য হতে পারে নিন্মরূপ-
আমাদের সচেতন ও প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন বেসরকারী ক্লাব, সংগঠন, সমিতি, পাঠচক্র গড়ে তুলে আমজনগণকে বিজ্ঞানভিত্তিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারেন। বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে। এ প্রচার-প্রচারণা চালানো যায় বিজ্ঞান মেলা, বিজ্ঞান-বক্তৃতামালা, কনসার্ট, গ্রামে গ্রামে জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত-কবিগান, পথনাটক-প্রহসন এর মাধ্যমে, আলোচনা-সেমিনার, মতবিনিময়, গ্রামের উঠতি তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বিষয় ভিত্তিক পাঠচক্র আয়োজন করে। সে সকল পাঠচক্রে মানুষদের, বিশেষভাবে গ্রামের মানুষদের প্রাথমিক ভাবে সচেতন করা যেতে পারে কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, সাধু-সন্ত, ভিক্ষু-মোহন্ত, তান্ত্রিক-হুজুরদের তাবিজ-মাদুলী, পানি-পড়া, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার অসারতা তুলে ধরে। তাদের তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতার বুজরুকি ফাঁস করে দিয়ে। আলোচনা-মতবিনিময়- পাঠচক্রের মাধ্যমে আমাদের আর্থ-সামাজিক পশ্চাদপদতার মূল কারণ জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে অদৃষ্ট বা নিয়তি নয়, বিদ্যমান শোষণমূলক সমাজব্যবস্থা ও শাসকগোষ্ঠীর নিরন্তর শোষণ ও ব্যর্থতাই আমাদের দারিদ্রের মূল কারণ। এ পশ্চাদপদতা থেকে কোন অলৌকিক ক্ষমতাবলে মুক্তি পাওয়া যাবেনা, মুক্তি পেতে হলে আমাদের বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।
* একটি বিজ্ঞান মেলায় প্রদত্ত বক্তৃতার সার-সংক্ষেপ থেকে
আমার মনে হয় বাংলাদেশে ষাট, সত্তরের দশকে
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য
কাজ করেছেন এমন অনেকেই ছিলেন!
যাদের গৌরবময় পদচারনায় মুক্তিযুদ্ধের মত
এমন একটা বিরাট সফলতা বাঙালিদের
মুক্তি এনে দিয়েছিল!
আজকের বাংলাদেশে এমন মডেল প্রায়ই নেই বললেই চলে!
বুদ্ধিজীবিরা সবাই এখন মাখনভরা কেকের টুকরা পেতে মগ্ন!
বাঙলাদেশের সুশীলসমাজ রাজনীতির লেজুরবৃত্তি করেন!
তাই সাধারন নাগরিক সমাজকেই মাঠে নামতে হবে!
তা নিজেদের তাগিদেই!
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
পুরো একমত,কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শত্রু রা পাল্টা ত্রু -করে আবারো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে যার জের আমরা গত ৩৯ বছর ধুঁকে ধুঁকে,মরে মরে টের পাচ্ছি।জানে আলমের মূল কথাই ঠিক,শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হলে যেমন জীবনের মুক্তি হয় না যার প্রমান সৌদি আরব সহ অন্যান্য আরব দেশগুলির চেহারা দেখলে আমরা তা বুঝতে পারি,তেমনি সাংস্কৃতিক মুক্তি না হলেও জীবনের কোন মুক্তি আসে না, যেমন তুরস্ক।
তাই ওই দুটি শব্দের বিশালতা মানবজীবনের জন্য অতীব গুরত্বশীল বিষয়।আর এই গুরত্বশীল কাজের গুরু দায়িত্ব পালনের মালিক হলেন একটি দেশের জনগনের নেতারা ও জনগন।জনগন যদি বিজ্ঞানভিত্তিক স্যেকুলার প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও জ্ঞানের সহিত জীবনের সংস্পৃশ্য ঘটাতে পারে তাহলে সে দেশের মানুষের জীবনের উন্নতি ঘটবেই যার প্রমান আমরা নরডিক দেশগুলিতে দেখতে পাই।আসলেই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি না হলে আমাদের মানব জীবনের প্রকৃতঅর্থেই কোথাও কোনো মুক্তি নেই বলে আমি মনে করি।
জানে আলমকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি অতীব গুরুত্বপূ্র্ন লেখা আমাদের উপহার দিয়েছেন।আপনার কাছ থেকে আরো নতুন নতুন লেখা পাওয়ার আশা করছি।
ভালো থাকুন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন
ধন্যবাদ।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আপনা মন্তবেরজন্য ধন্যবাদ।
“যুগপৎ অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাংস্কৃতিক মুক্তির’ আদলে প্রতিষ্ঠিত সেরকম একটি জাতির কেস স্টাডি মডেল হিসেবে লেখক এখানে উল্লেখ করতে পারতেন । যে কোন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবতার নিরিখেই নির্ধারিত হতে হবে , যদি সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ।
জানে আলম,
আপনার প্রবন্ধটি পড়ে আশান্বিত সাথে আপনার রাজনৈতিক পরিচয়টি জেনে। রাজনৈতিকভাবেই বিশ্বাস করতে হবে যে
তাছাড়া
ঐ বিশ্বাস-চেতনা-মূল্যবোধের অদৃশ্য অবয়ব কিন্তু কালক্রমে কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে।সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্যদেরকে একযোগে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
সুশীল সমাজ সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের অনেকেই ভিড়ে যায় বা গেছে রাজনৈতিক ছাতার নীচে।বিজ্ঞান মনষ্ক, যুক্তিবাদী জাতীয় ব্যক্তিত্ব খুবই কম আমাদের দেশে। আর ধর্ম যেহেতু সংস্কৃতিরই অংশ তাই এদেশে সাংস্কৃতিক মুক্তি সময় সাপেক্ষ তো বটেই।তবে শুরু হয়েছে।
ন@গীতা দাস,
মন্তব্যের জন্য আপানাকে অফুরন্ত ধন্যবাদ।
একটা গল্প মনে পড়ল- জানিনা লেখার সাথে মিলবে কিনা, তাও বলিঃ
১৯৯৯ সালের দিকে সম্ভবত- আমেরিকাতে তখন কম্পিউটারের উপর খুব জোড় দেয়া হল, সামান্য কোন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ জানলেই ভাল কোন কম্পানিতে নিয়ে নিচ্ছিল, পরে তারাই ভাল করে গড়ে নিজেদের কম্পানিতেই ভাল বেতনে রাখা শুরু করল। তখন মানুষ হুলস্থুল লেগে গেল কম্পিউটার শিখার, কোর্স করা নিয়ে। আমেরিকা, কানাডায় খুলে গেল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি কম্পানি থেকেও খুলা শুরু হল। ভাল ছেলে মেয়ে পেলেই নিয়ে নিচ্ছে। কম্পিউটারের জোয়াড়। সেই জোয়াড় আমাদের দেশে এসে আজো কতটা বন্যা বইতে পেরেছে জানিনা। কিন্তু সেখানে জোয়াড় হয়েছে, বৃষ্টিপাতও শেষ, এখন শুধু তারা বেশিরভাগ ফসল তুলছে আর খাচ্ছে।
এত হল সেই দেশের কাহিনী। বাংলাদেশে আজও কম্পিউটার কোর্সে ছেলে পেলে ঢুকছে, বের হচ্ছে, কিন্তু তখনও বাংলাদেশ সরকার বা জাতীয় পর্যায় কোন ভাল পজিশন করে দিতে পারেনি, আজও পারছে বলে তেমন মনে হয়না। ব্যক্তি উদ্দেগে কিছু কম্পিউটার এর কোম্পানি হচ্ছে তবে সামগ্রিক ভাবে এর কোন প্রভাব…। এত গেল এক বিষয়। আরও কতদিক আছে…
হতাশার দিকে না যাইঃ তবে আসলে এত বড় সংখ্যার জনগোষ্ঠিকে সামাল দিয়ে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আসলেই কঠিন, তার উপরে যারা এই দেশের হাল ধরেন…। যাইহোক, আমার মনে হয় প্রথমে দরকার এই দেশের মানুষকে জন্মনিয়ন্ত্রন সম্পর্কে সচেতন করা। খুবই জরুরী। যদিও ইহা আমার ধারনা। হয়ত সম্ভব নয়।
তবে এই জন সম্পদকে যদি বিভিন্ন দেশে, উন্নত দেশে পাঠানো যায়, তবে আসলেই অনেক দিক থেকে দেশের উন্নতি হতে পারে।
একটা দিক আমার মনে হয় বুঝা উচিতঃ
উন্নত দেশ গুলোতে সাধারনত কি ধরনের মানুষ এই দেশ থেকে যায়? বেশিরভাগ দেখবেন উচ্চশিক্ষিত, কারিগরি বিদ্যায় অত্যন্ত অভিজ্ঞ লোকজন। আর দেশে থাকে কারা? সাধারন। আর একদম গায়ে খাটা মানুষও যদিও যায়। সেটার হিসাব না নিয়ে আমি বলতে চাইঃ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এইসকল দেশে ঐ গায়ে খাটা মানুষ যদি সরকার, দেশের উন্নত জনগন পাঠাতে পারে, তবে দেশের উন্নতি হতে পারে। কেননা সকল শিক্ষিত লোকজন এই দেশের মানুষ- ঐ সকল উন্নত দেশে যেয়ে সত্যই ভাল কোন চাকরি করে না, ব্যবসা করে- যা এই দেশেও করতে পারত। একজন শিক্ষক কখনই কানাডায় এসে শিক্ষকতা করতে পারেনা। তাকে এইখানে আবার ডিগ্রী নিতে হয়। আর সেই ডিগ্রী নিতে যে শ্রম, সময় দিতে হয় তা দেখে তারা ২০০ গজ দূরে লাফায় সরে যায়। সুতরাং এই দেশ এক শিক্ষক হারায়। কানাডা বা এই জাতীয় দেশে এসেই তারা কোন ফ্যক্টরির কাজ, রেস্ট্রুরেন্ট এর কাজ এইসব করে। তাই ঐ সকল শিক্ষক, জ্ঞানী মানুষ না এসে গায়ে খাটতে পারবে এইরুপ বেকার মানুষদের পাঠালেই পারে।
কানাডা আমেরিকা কখন তাদের ভাল পোষ্টে কাজ দেয়ার জন্য কাউরে সাধারনত ইমিগ্রেশন দেয় বলে আমার মনে হয়না, যদিও যারা পায় তারা সংখ্যায় কম।
যাইহোক এই ধরনের কিছু ব্যপার আছে যা আমার মনে হয় করা দরকার।
বেশি বলে ফেললাম মনে হয়।
ধন্যবাদ
আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা বদলানো দরকার।
প্রহসন কথাটা আমার পছন্দ হল। সমাজ সংস্কারে উদ্যত অধিকাংশ লোকের রসবোধ হাঁটুর কাছে। এটার পরিবর্তন দরকার।
ps: উপরোক্ত মন্তব্য সুরা-প্রসুত। উপেক্ষা করবেন (না)।
প্রবন্ধটি শুরু হয়েছিল ভালই, কিন্ত তারপরে দেখলাম, লেখকের ও জানা নেই কিভাবে উৎপাদনকে বৃদ্ধি করা যায়। সেটাই কিন্ত ছিল আসল কাজ।
বিজ্ঞান প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে একমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে আমেরিকা। বাকীরা পারে নি-আমেরিকাকে অনুসরন করেছে মাত্র। সমস্যা হচ্ছে আমেরিকার সেই বিজনেস মডেলের বিরুদ্ধে বাম বাঙালীদের আবার তীব্র ক্ষোভ। ফলে কি বাংলাদেশে কি পশ্চিম বঙ্গে বাঙালীদের অবস্থা না ঘরকা , না ঘাটকা।
মুক্তমনাতে এই ধরনের আলোচনা আরো আসুক।
@বিপ্লব পাল,
আমার নিবন্ধটি পড়ার জন্য বিপ্লবপালকে ধন্যবাদ। তবে আমি নিশ্চিত তিনি উক্ত নিবন্ধের মর্ম উপলব্ধি করতে নিদারুনভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। উৎপাদনের প্রঋবদ্ধি আমার নিবন্ধের বিষয় ছিলনা। শুধু আমেরিকা প্রযুক্তি ব্যবছার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছে এ অদ্ভূত তথ্য বিপ্লব পাল কোথায় পেলেন জানিনা।প্রযুক্তি ছাড়া কি কোন প্রোডাক্শন ফোর্স হতে পারে ॥ আমিকার প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদন নিয়ে বাম বাঙালিদের আপত্তির তথ্যটিও উদ্ভট।