বাসের চালিয়াৎ হকার এবং কিছু উপলব্ধি
লেখকঃ আসিফ মহিউদ্দীন
সেদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম, একজন হকার উঠলো বাসে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে এদিক সেদিক তাকালো, তারপরে ব্যাগ খুলে শুরু করলো তার বক্তব্য। তিনি যে জিনিস বিক্রি করছেন তার নাম হচ্ছে “কি করিলে কি হইবে”- ধরনের কিছু একটা বই। এই বই পড়িলে আপনি জানতে পারবেন বাসা থেকে বের হবার সময় কালো বিড়াল হেটে গেলে কি হতে পারে, বা দুইটা শালিক পাখি দেখিলে কি হইতে পারে। হকারটা বেশ ভাল রকমের চালিয়াৎ ধরনের ছিল, কথার মারপ্যাচে পটু-অর্ধশিক্ষিত স্বল্পশিক্ষিতদের মুগ্ধকরার কলাকৌশল তার খুব ভালভাবে জানা এটা তার আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অল্পশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতদের ভেতরেও কিছু মানুষ থাকে যারা কিছুটা চিন্তা করতে সক্ষম, তারা সেই হকারটির সাথে তর্ক জুড়ে দিল।
আমি সাধারনত এই ধরনের আলোচনায় বিরক্ত বোধ করি, অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না, কিন্তু বেশ মজা নিয়ে সেদিন বিতর্কটা শুনতে লাগলাম।
বিতর্কের এক পর্যায়ে হকারটি দাবী করে বসলো এই পুস্তক নাকি কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্ভুল প্রমানিত, এবং আধুনিককালের বিজ্ঞানীরাও নাকি এক বাক্যে স্বীকার করেন এই পুস্তকের যথার্থতার কথা।
একজন জিজ্ঞেস করতেই তিনি নাম না জানা কোন এক বিজ্ঞানীর নাম বললেন, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করার পরেও দুঃখজনকভাবে আমি তার নাম শুনিনি। রেফারেন্স হিসেবে হকার ভদ্রলোক শেক্সপিয়রের নাটক থেকে উদৃতি দেয়া থেকে শুরু করে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব সব কিছুই ভাজাভাজা করলেন, এবং আমার আশেপাশের মানুষগুলোকে মোটামুটি বাধ্য করলেন বইটি কিনতে। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম কিছু বিস্মিত মানুষের মুখ, তারা হা করে মন্ত্রমুগ্ধের মত হকারটির বক্তব্য(=জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, প্রযুক্তি,ধর্ম সব কিছুর মিশেল) শুনছে।
আশ্চর্য হলেও সত্য যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এই ধরণের হকারের চতুরতায় মুগ্ধ হবে, তার দ্বারা প্রতারিত হবে, তাকে বিশাল মাপের পন্ডিত বলে ভুল করবে।
এখানে অনেকেই ক্ষতিকর কিছুই দেখতে পাবে না। হকার ভদ্রলোক তো মানুষের কোন ক্ষতি করছে না, সামান্য দশ টাকা দামের বই, এটা কিনে কেউ নিশ্চয়ই পথে বসবে না, বা নিঃস্ব হবে না। তাহলে এই ধরনের হকার কি সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর?
আমি মনে করি এই ধরনের হকার সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত, তারা বাস করে একধরনের প্রাচীন অন্ধকার যুগে। এই সময়ে পাশ্চাত্য যখন ম্যাটার ট্রান্সপোর্টেশনের উপরে উচ্চতর গবেষনা হচ্ছে, কৃত্রিম প্রান আবিষ্কার নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ অগ্রগতি হচ্ছে, তখন আমার দেশের মানুষ এই সব ঠগবাজীর শিকার হচ্ছে। এই ধরনের হকারদের চালিয়াতির কারনে মানুষ আরও বেশি অন্ধবিশ্বাসের শিকার হচ্ছে, আধুনিক সভ্যতা থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, বিশ্বাস নির্ভর সমাজ গঠনে এই ধরনের মানুষেরা প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখছে।
আধুনিক সমাজে মানুষ এক ধরণের দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে বাস করে, তারা সভ্যতার অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খায়, আধুনিক রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থার সাথে নিজেদেরকে কিছুতেই মেলাতে পারে না। তাদের পিছনে ফেলে আসা এতদিনের বিশ্বাস, এতবছরের প্রথাসমুহ তাদের পা আকড়ে ধরে, তাদের পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়।
আধুনিক সমাজ মোটামুটি ধরনের জ্ঞাননির্ভর, যুক্তিনির্ভর, অবিশ্বাসী সমাজ। সকল ধরনের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা অবস্থান নেয়। আজকে আমাদের দেশ ভন্ড পীরে জর্জরিত, কবিরাজী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় আমাদের অবস্থা শোচনীয়। এর কারন হিসেবে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রধানত দায়ী, আমাদের অর্থনীতি শক্ত মেরুদন্ডের উপরে দাড়িয়ে থাকলে এই ধরনের হকার, ভন্ডপীর, হোমিওপ্যাথী, কবিরাজী চিকিৎসা অগুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠতো, নিজেদের অবস্থান হারাতো। কিন্তু যখন এইসকল বিশ্বাস আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান দ্বারা সত্যায়িত হবার দাবী নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ায়, আমরা একধরনের দ্বিধাদ্বন্দের ভেতরে চলে যাই। আধুনিক মানের চিকিৎসা ব্যায়বহুল হবার কারনেই হোক বা এই ধরনের সস্তা চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়েই হোক, আমরা অল্প খরচে চিকিৎসা লাভের জন্য বিশ্বাসীতে পরিনত হই। আমরা আমাদের শিক্ষা, জ্ঞান সব ঝেড়ে ফেলে এই ধরনের হকারের জ্ঞানের(!) কাছে আত্মসমর্পন করি।
আমাদের দেশের হাজারো সমস্যা, আমাদের সমাজ এখনও মধ্যযুগে পরে আছে। আমরা আমাদের রাজনীতিবিদদের বারবার বিশ্বাস করি, তাদের চটকদার বক্তব্য মুগ্ধ হয়ে বারবার তাদেরই ভোট দেই, তাদের পুরনো কর্মকান্ড বেমালুম ভুলে বসে থাকি। এই হকারের বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে কেউ যদি তার বইটি কেনেন, কিনে নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তিনি কখনও এই হকারটিকে খুঁজতে বের হবেন না। পরবর্তিতে এই হকার আবার আপনার বাসে উঠলে আপনি হয়ত আবারও এর কথায় মুগ্ধ হবেন, আবারও তার বই কিনে প্রতারিত হবেন। বিশ্বাস নির্ভর সমাজের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। তারা বারবার বিশ্বাস করে, এবং প্রতারিত হয়, আবারও বিশ্বাস করে, আবারও প্রতারিত হয়, আবারও বিশ্বাস করে, এবং আবারও প্রতারিত হয়।
আমরা এখনও বাম হাতিদের ডানহাতি বানাবার চেষ্টা করি, আমরা বিশ্বাস করি এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল। আমাদের সামাজিক প্রতিবন্ধীদের আমরা হেয় করি, তাদের উচ্ছেদ করি, আমাদের বিশ্বাস এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল। আমরা সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করি, আমাদের ধারণা এটাই আমাদের জন্য ভাল। আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে নারীনির্যাতন করি, তাদের অধিনস্ত রাখি, আমরা বিশ্বাস করি এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল। আমরা সমকামীদের কোন ধরনের সামাজিক মর্যাদা দিতে চাই না, আমরা বিশ্বাস করি এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল। আমরা মানসিক রোগিদের জ্বিনভুতের আছর বলে সন্দেহ করে ভুল চিকিৎসা করি, আমরা বিশ্বাস করি এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল। আমরা আরও অনেক কিছুই করি, এবং আমরা বিশ্বাস করি এটাই আমাদের সমাজের জন্য ভাল।
আমরা এই বিশ্বাস নির্ভর সমাজকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে চাই এই আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায়। আমরা বিজ্ঞান এবং বর্তমান সভ্যতা দ্বারা সত্যায়িত করি আমাদের বিশ্বাসকে, এবং তা করে আমরা আরও বেশি করে আমাদের বিশ্বাসকে আকড়ে ধরতে চাই। এর প্রধান কারন অর্থনৈতিক হলেই আমাদের দায় কিন্তু আমরা এড়াতে পারবো না।
এককালে(বর্তমান সময়ও অনেক অনুন্নত এলাকায় হয়) আমাদের দেশে ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপক প্রসার ছিল। ধর্ম এবং বিশ্বাস একটি প্রডাক্ট, প্রচারেই এর প্রসার। আমাদের দেশের তরুণদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ সারাবছরই হতে থাকে। মফস্বল বা গ্রামের অর্ধশিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত তরুণ ঢাকায় বা প্রধান শহরগুলোর হাই লিভিং কস্টে হিমসিম খায়, তারা তখন সন্ধান পায় একধরনের ওয়াজকারীর, যে কিনা আখিরাত এবং দুনিয়ার সকল সমস্যা তাদের যন্য সহজ করে দেয়। হলে সিট থেকে শুরু করে রেটিনা কোচিং সেন্টারে খাটুনি দিয়ে কিছু অর্থোপার্জনের সুবিধা, বা কোন বাস পরিবহন অফিসে পার্টটাইম চাকুরি, ইত্যাদি তাদের প্রয়োজন। তাদের কাছে যখন শিবির বা হিজবুত তাহরীর নামক সংগঠন আসে, এসে ইসলামের বিজ্ঞাপন শুরু করে, দুনিয়া এবং আখিরাতে অশেষ ফায়দা হাসিলের গল্প শোনায়, তখন আসলে সেই সকল অর্ধশিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত তরুণের কিছু করার থাকে না। ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা বা সেগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কোন তরুণই তাদের এতবছরের বিশ্বাস হারাতে চায় না। তার উপরে তাদের হাতছানি দেয় সোনালী ভবিষ্যত, ইসলামী ব্যাংকে একটা চাকরীর সুযোগ বা যে কোন পরিবহন কোম্পানী গুলোতে একটা চাকরী তাদের জন্য কম কথা নয়।
এই ওয়াজ মাহফিল গুলো একসময় খুব ভাল মাত্রায় ছিল। উন্নত এলাকা গুলো এই ধরনের অত্যাচার থেকে কিছুটা মুক্ত হতে পারলেও অনুন্নত এলাকাগুলোতে এই ওয়াজ মাহফিলের অত্যাচার ভয়াবহ। নিত্যনতুন ইসলামের হকারেরা এই সব ওয়াজ মাহফিলের মধ্যমনি, তারা তাদের প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন জোরেসোরেই করতে থাকে। ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখলে রং ফর্সা হবে, হারপিক ব্যবহার করলে বাথরুমের সকল ময়লা পরিষ্কার হবে-তেমনি ইসলাম গ্রহন করিলে মনের ময়লা দুর হবে, আত্মা শক্তিশালী হইবে এরকম অজস্র বিজ্ঞাপনে একসময় আমাদের এলাকা সয়লাব হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে এই হকারেরা রাস্তা ছেড়ে আমাদের বেডরুমে ঢুকে পরেছে। টিভি খুললেই এখন একজন বিখ্যাত ইসলামের হকারের দেখা পাওয়া যায়, তিনি গুলিস্তানের টাউট হকারের থেকে গুণেমানে খুব বেশি উন্নতমানের না হলেই প্রচার যন্ত্রের(বিজ্ঞানের,প্রযুক্তির) কল্যাণে তিনি এখন আমাদের বেডরুম পর্যন্ত ঢুকে পরেছেন। এবং আমাদের কাছে ইসলাম বিক্রি করে চলেছেন।
গুলিস্তানের টাউট হকার আপাত দৃষ্টিতে হয়তো আমাদের কোন ক্ষতি করছে না, কিন্তু এধরনের হকার আমাদের পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আমাদের অন্ধকার সময়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, একধরনের মুক-বধির সমাজ সৃষ্টি করতে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। যেখানে আধুনিক জ্ঞান সমাজ সমস্ত পুরনো প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, সমস্ত পুরনো ভ্রান্ত বিশ্বাসকে যাচাই করে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে, সেখানে এই ধরনের টাউট বাটপারেরা আধুনিক সভ্যতা আর বিজ্ঞানের কিছু ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভ্রান্তবিশ্বাসকে নতুনরুপে তুলে ধরছে।
এই ইসলামী বিজ্ঞাপনের মুল ভোক্তা হচ্ছে পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠী। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠি সব থেকে পিছিয়ে পরা এবং নির্যাতিত(অন্য কারও দ্বারা নয়, খোদ মুসলিমদের দ্বারাই)। পৃথিবীর বেশিরভাগ মুসলিম বাস করেন আফ্রিকা আর এশিয়া মহাদেশে। দুর্নীতি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে মুসলিমরা সর্বশীর্ষে অবস্থান করছে, শিক্ষায় তারা সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। পৃথিবীর ৯০ ভাগ দরিদ্র মুসলিম মোটামুটি আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান থেকে বহুদুরে বাস করে। তাদের কাছে এই ধরনের চালিয়াৎ ইসলামের হকাররা যে দেবতুল্য হবেন এতে আসলে আশ্চর্যের কিছু নাই। আমাদের ঢাকা শহরের গুলিস্তানের মোড়ে গেলেই এই বক্তব্যের সত্যতা ধরা পরবে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর অশিক্ষা যেসকল সমাজে মোটাদাগে বিদ্যমান, সে সমাজে এই ধরনের টাউট আধুনিক নবীর মর্যাদা পাবেই। এটা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়,একটা জনগোষ্ঠীর ক্রমবিবর্তনের ধারার একটা রুপ, যেটা যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে। আমরা যারা আম ছাপোষা মধ্যবিত্ত শ্রেনী, তারা এগুলো দেখেও না দেখার ভান করি, কেউ কিনছে কিনুক, প্রতারিত হচ্ছে হোক, আমার কি? উচ্চবিত্ত শ্রেনীর জন্য রয়েছে পাশ্চাত্যের হাতছানি, তাদের এগুলো নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে, কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি, তারা সবসময়ই উভয় সঙ্কটের মধ্যে পরে হিমশিম খাচ্ছি। না রাখতে পারছি ধর্ম, না পারছি প্রগতিশীল হতে। মধ্যবিত্ত শ্রেনী সব সময়ই সন্দেহজনক, কিন্তু যেকোন বিপ্লব বিদ্রোহে কিন্তু এই মধ্যবিত্তরাই গুতুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠে।
তারা বিশ্বাস করে, তারা প্রবলভাবে বিশ্বাসী। তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসে আঘাত করা হলে তারা নিজেদের নির্যাতিত মনে করেন। কিন্তু তাদের আজকের অবস্থার জন্য তাদের বিশ্বাস কতমাত্রায় দায়ী, তাদের কুপমন্ডুকতা, তাদের অজ্ঞানতা কত ভয়াবহ, এটা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলে তারা আধুনিক সমাজকে নিজেদের শত্রু মনে করেন। “ইহুদী নাসারাদের মিথ্যা প্রপাগান্ডা” নাম দিয়ে একধরনের বোকার স্বর্গে বাস করে মানসিক তৃপ্তি পান, এবং শোষিত হতে হতে তলানীতে এসে ঠেকলেও শুধুমাত্র পাশ্চাত্যকে দোষ দিয়ে কিছুক্ষণ গালাগাল করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেন।
এই সকল হকারদের আলোচনায় একদিন হলেও যান, তাদের “সান্ডার তেল” বিষয়ক আলোচনায় গিয়ে তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করে দেখুন, তারা কিভাবে ফুঁসে ওঠে। তাদের দোকানের আশেপাশেই তাদের নিজেদের পোষা কিছু লোকজন ঘোরাফেরা করেন, তারা আপনাকে সেখানেই পিটিয়ে তক্তা করে দেবে নতুবা অপদস্থ করবে।
একই ভাবে আধুনিক ডিজিটাল টাউটদেরও ভক্তের অভাব নাই। তাদের পোষা কিছু “শান্তি” নামধারী টিভি চ্যানেল তাদের হয়ে কাজ করে, অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষের মগজধোলাই চলতে থাকে পুরোদমে। তাদের বক্তব্য সন্দেহ প্রকাশ করবেন, আপনাকে অপদস্ত হতে হবে। তাদের বয়কট করবেন, তাদের বিতাড়িত করবেন, তারা তখন মানবতার দোহাই দেবে, বাকস্বাধীনতার ধারকবাহক বনে যাবে রাতারাতি।
অথচ তারা কাজ করেন বাকস্বাধীনতার বিপক্ষে, প্রশ্নের বিপক্ষে, সন্দেহের বিপক্ষে, জ্ঞানের বিপক্ষে।
এইসকল টাউট বিশ্বাসের হকারেরা আমাদের বাংলাদেশেও হানা দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসে কোন সময়ই খুব বেশি সাম্প্রদায়িক ছিল তার প্রমান নাই। কিন্তু আজকাল যেকোন ব্লগে ঢুকলেই সাম্প্রদায়িক পোস্ট দেখি, যৌক্তিক দর্শন ভিত্তিক বা সমালোচনামূলক আলোচনায় বিশ্বাসীদের বিষবাষ্প দেখি, তৌহীদি আস্ফালন দেখি।
এসব দেখে ভাবি, আমরা কি আসলেই এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
লেখাটা ভালো তবে আমার কাছে মনে হয়েছে সমস্যার উৎসে যাওয়া হয়নি। অবশ্য সেটা যদি লেখকের উদ্দেশ্য না থাকে তবে আলাদা কথা। কিন্তু আমার মনে হয় এই ধরনের লেখায় সমাজের যে সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে সেই সব সমস্যার রুট কজটা কি সেগুলো দেখানো না হলে লেখাটির মান নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা যায়(আমি আবারও বলছি উৎসের কারন নিয়ে লেখা যদি লেখকের উদ্দেশ্য না হয় তাহলে আমার এই মন্তব্য ধর্তব্যের মধ্যে না নিলেই ভালো)।
আমি আমার কথা বলি তাহলে নিরপেক্ষ দৃষ্টকোন থেকে দেখা হবে বলেই বিশ্বাস করি। আমাকে যদি এখন কেউ লক্ষ টাকা দিয়েও বলে ঐসব ব্যবসা করতে আমি করব না। আমি নিশ্চিত এই ব্লগের অন্য কেউই করবে না। প্রশ্ন হল কেন করবে না? উত্তরটা আমি ব্লগারদের কাছ থেকেই আশা করছি।
পেটে ভাত থাকলে অনেক দর্শনই কপচানো যায়, কিন্তু না থাকলে?
আমি দেখেছি একটা সোনার চেইন চুরির জন্যে একটা কিশোর বয়সী ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করতে। আপনার লেখা অনুযায়ী কিন্তু সেটা ঠিক আছে। তাই না? ভুল হলে শুধরে দেবেন আশা করি।
দেখেছি চুরি করতে চেষ্টা করার জন্য শিক্ষিত(!) ভন্ডগুলোর পিচাশ রুপ। অথচ এই শুয়োর গুলোই অফিসে ঘুস খায়, কাজের মেয়ের পেটে যিশুদের জন্ম দেয়, আবার এরাই মানবতার নামে ঢাউস আকারের বই লেখে।
আপনার কথা মত এই ঠগ, বাটপারগুলোকে চোদ্দ শিকের আড়ালে দিয়ে দেয়া হল বেশ কিছু দিনের জন্য। তারপর সে বেরও হল।
নিট ফলাফল কত? বিরাট গোল্লা। তাই না??
তাহলে এই সমস্যার সমাধান কি?
আমার কাছে মনে হয় এই ঠগ গুলোর কির্তী কলাপ নিয়ে লেখার চেয়ে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখাটাই ফলপ্রসু হবে। নাহলে এইসব লেখা দিয়ে শুধু বাহবা ভিন্ন কিছুই লাভ হবে না।
ধন্যবাদ লেখকে।
@সাইফুল ইসলাম, আপনার অনেকগুলো কথা ঠিক ধরতে পারি নি।
আমার কথা অনুসারে এটা ঠিক আছে কিভাবে বুঝি নি।
তাদেরকে চোদ্দ শিকের ভেতরেও নিতে বলিনি। খালি কিছু ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা বলেছি। আর সমস্যার সমাধান আমি লিখি নি, ভার্চুয়ালী সমাধান লিখে জগৎ/সমাজ পাল্টানো যায় না, সমাজ পাল্টানোর কোন অলৌকিক চটি বইও আমার নাই, এমন কোন লেখাও লিখতে পারবো না যাতে সব পাল্টে যাবে, দুঃখিত। আমার কিছু চিন্তার কথাই এখানে বলেছি শুধু, খুব বেশি কিছু নয়।
কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে, চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই লক্ষ্যে।
সামনে আরও কিছু লেখার চেষ্টা করবো, সেখানে হয়ত সমস্যার গভীরে যাবার চেষ্টা করবো।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
সেই অপেক্ষাতেই রইলাম।
আমার হয়ত বুঝতে ভুল হয়েছে, সমস্যা নাই। ভুল হতেই পারে। আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু। 🙂
আবার জিগস? 😉
—
মুক্তমনায় স্বাগতম। :rose:
@বিপ্লব রহমান, অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব দা।
আসিফ মহিউদ্দীন কে মুক্ত-মনায় স্বাগতম। :rose: তিনি বেশ ভাল লেখেন। আশা করব এখানে নিয়মিত লেখবেন।
@সৈকত চৌধুরী, অনেক ধন্যবাদ। নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো। অনলাইনে মুক্তমনা আমাদের দেশে একটা অবস্থানে পৌছেছে। অফলাইনে বা সভা-সেমিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ে যদি মুক্তমনার কোন পরিকল্পনা থাকে, আমাকে সেখানে অবশ্যই রাখার জন্য অনুরোধ করবো।
@আসিফ মহিউদ্দীন,
আপনার সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছি মনে হয়। কিছুদিন আগে আল্লামা শয়তান একটা আড্ডায় আসতে বলেছিলেন টি এস সি তে। সময়ের অভাবে সেদিন যেতে পারিনি। মুক্তমনা এরকম কিছু করবে বলে মনে হয়না। আমি একটু ভীতু টাইপ তো… 😀
@আনাস, ভয়ের দিন শেষ, এখন আর পিছিয়ে থাকলে হবে না। আমি মুক্তমনা বা অনলাইনে প্রচারের চাইতে অফলাইনে প্রচারে বেশি আগ্রহী। খুব ইচ্ছা ছিল, টিভি মিডিয়াতে যদি একটা বিতর্কের আয়োজন করা যেত।
আড্ডায় আসবেন আশা করছি, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার।
সমাজের সমস্যাগুলো নিয়ে লেখকের লেখাটি চমৎকার। :yes:
@ব্রাইট স্মাইল্, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
আমাদের দেশের কথা আর কি বলব?
পশ্চীমের দুটো অতি উন্নত দেশে বাস করেও তো দেখছি যে এই রোগ এখানেও ভাল মাত্রায়ই আছে।
হস্তরেখা পাঠ করে মানুষের ভাগ্য গননা কোন বিজ্ঞান সমর্থন করে? অথচ আমেরিকা কানাডায় প্রতিতা শহরে হাজার হাজার হস্তরেখাবিদ আছেন। প্রকাশ্য দিনের আলোয় জাঁকের সাথে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন (সোজা বাংলায় লোকের আবেগ ব্যাবহার করে ঠকিয়ে যাচ্ছেন)। তারাও জোর গলায় দাবী করেন যে জোত্যিষবিজ্ঞান সম্পূর্ন বৈজ্ঞানিক। এসব দেশের সরকার কেন এদের ব্যাপারে উদাসীন? এখানে তো ধর্মেরও কোন ব্যাপার নেই।
তবে যাই বলেন, শিয়ালের তেল, ষান্ডার তেল, জোঁকের তেল এসবের লেকচার শুনতে বেজায় মজা 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ,
বাক-স্বাধীনতা?
@রৌরব,
বাক স্বাধীনতার নামে বিজ্ঞানের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনের আলোয় লোক ঠকাবে? এটা তো এমন নয় যে ধর্মীয় বিশ্বাসের মত কিছু যে যতক্ষন না অন্য কারো সমস্যার কারন হবে ততক্ষন কারো কিছু বলার নেই।
@আদিল মাহমুদ, সাম্প্রতিক এই ডিজিটাল হকারকে বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করায় তিনি নাকি বাক স্বাধীনতা এবং গনতন্ত্রের দোহাই দিচ্ছেন। কি হাস্যকর!
@আসিফ মহিউদ্দীন,
তা যা বলেছেন, ডিজিটাল সাহেবের কার্যকলাপের কোন রকম সমালোচনা বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ পরিনতি এই অভিজ্ঞতা আমার হাড়ে হাড়ে হয়েছে।
দেখতে পারেন এখানে, ও এখানে।
আমার ষাটোর্ধ্ব খালা কিছুদিন আগে বেড়াতে এসেছেন আমেরিকায়। কথা হচ্ছিল ফোনে। তিনি বেশ কিছু গত বাঁধা উপদেশ দিচ্ছিলেন, সবসময়ই একই উপদেশ দেন। আমিও যথারীতি শুনি, ভক্তিভরে জ্বী জ্বী করি। এইবার শুধু একই উপদেশ দিলেন ডাঃ জাকির নায়েকের রেফারেন্স ধরে ধরে। মা এর সেবা কেন করা দরকার তার ৩ টি জাকিরিয় যুক্তি দর্শাতে গিয়ে অবশ্য দূর্ভাগ্যবশতঃ আর মনে করতে পারেননি।
@আদিল মাহমুদ,
আমি একবার শিয়ালের তেল কিনেছিলাম এক শিশি দশ টাকায় কি কারনে জানি ভুলে গেছি। তবে পরে তা আর ব্যবহার করার সাহস হয়নি। আসলে হকারের কথার মাধুরীতে মোহিত হয়ে শিয়ালের তেল কিনেছিলাম। কিন্তু কেনার পর বুঝতে পারলাম ঠকে গেলাম। তবে ষান্ডার তেল, শিয়ালের তেল, জোকের তেল এগুলো কিন্তু বানানো খুব সোজা আপনারাও বানাতে পারেন ঘরে। সস্তা দরের কোন ভোজ্য তেলের মধ্যে ওসব জীবদেহের কিছু অংশ নিয়ে খানিকখন জাল দিন, মনে রাখবেন তেলটা পরিমানে বেশী হতে হবে, মানে ডুবো তেলে জাল দিতে হবে। এর পর তেল থেকে ভাজা হাড় মাংশ গুলো তুলে ফেলে দিয়ে ছোট ছোট শিশিতে ভরে ফেলুন। অতপর হাট বা বাজারে গিয়ে কোথাও বসে পড়ুন, ব্যস আর চিন্তা নেই।
@ভবঘুরে,
আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। যা মনে হচ্ছে আপনার এ বিষয়ে ফার্ষ্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। তবে আমার এখনো আর্থিক অবস্থা অতটা শোচনীয় হয়নি যে বিকল্প হিসেবে এসব চিন্তা করছি 🙂 । তাছাড়া শেয়াল জোঁক এসব ধরতে যাবে কে? শেয়াল ধরে বন্যপ্রানী আইনে জেলে যাব নাকি?
আপনি শেয়ালের তেল কিনেছিলেন কবে???
আশা করি এসব তেল কি রোগে ব্যাবহার হয় তা জানেন 😀 । বাত ছাড়াও আরো বেশ কিছু রোগের নাকি মহৌষধ যা এখানে বলছি না। আমাদের সময় আগে বাসে বাসে উপকারীতার লিফলেট দেওয়া হত, কিছু এখনো মনে করে নিজের মত হাসি।
@ভবঘুরে,
হা হা হা। আসুন মুক্তমনায় অনলাইনে শিয়ালের তেল বেচা শুরু করি। দারুণ হবে। :laugh:
মুক্তমনায় স্বাগতম! লিখতে থাকুন। আশা করি ভাল কাটবে আপনার সময় এখানে।
@অভিজিৎ, অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ দা। চেষ্টা করবো মুক্তমনায় নিয়মিত হতে।
বাংলাদেশের বর্তমান করুণ বাস্তবতার এক সঠিক চিত্রায়ন । আরেকটা ব্যাপার যোগ করতে চাই। ওয়ায মাহফিল শহরে কমেছে কি না জানিনা তবে জুম্মার খুতবার দাপট সব জায়গাতেই এবং বেড়েও চলেছে। রাস্তা ঘাট বন্ধ তো হয়েই, তারপর মাইকে খুৎবাকরের গলা ফাটা চিৎকার । অভিজাত এলাকাতেও এগুলি ঘটছে। ভেড়ারা পালের মত অর্ধ শিক্ষিত থেক উচ্চশিক্ষিত, অফিসের বড় কর্তা সবাই ছুটে যায় মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ার আর খুৎবার বাণী গিলবার জন্য। এইসব খুৎবার খতিবেরা যা খুশি তাই বলে যায়। মেরাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, পশ্চিমা দুনিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, নারীরা কেমন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি সবই বলে যায় আর তার সঙ্গে যোগ করে “বলুন আমিন” আর তোতা পাখীর মত মসজিদে আসা সর্বস্তরের লোক ভকিতভরে “আমিন” বলতে থাকে। যেখানে ইসলাম নামের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার কোটি কোটি জনগণ, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী সবাই গিলছেন, সেখানে এই সব ছোট খাট হকার ত চুনা পুটি। কত হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে ইসলামী আচারের জন্য, হজ্জ, নামাজ, ইজতেমা ইত্যাদি। শুক্রবার ছুটির জন্য ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার লোকসান। এগুলিই সত্যকার ক্ষতিকারক। হকার অনেক আগেও ছিল, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে, অবিভক্ত ভারতেও। কিন্তু সমাজে এত সার্বিক ভাবে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষতি তারা করে নি কখনো, যতটা অয়াহাবী ইসলাম করছে।
@যাযাবর,
একটা খাঁটি কথা বললেন।
@যাযাবর, এই হকাররা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগুচ্ছে। নিত্যনতুন ঠকবাজী দিয়ে জনগনকে ধোঁকা দিচ্ছে। কিন্তু সাধারন মানুষ এগুচ্ছে না, তারা পিছাচ্ছে।
বানান ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।