শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না যেন! স্বগতোক্তি বলে নির্ধারিত করলেও, প্রত্যুক্তির আশা নিয়েই যে নারীবাদের মতো বিতর্কমূলক একটা বিষয় নিয়ে জনসাধারণ্যে ব্লগ লিখছি, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? অতএব, ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্য্যন্ত যদি পড়েই ফেলেন, আপনার দ্বিমত/ভিন্নমত/অন্যমত নির্দ্বিধায় জানিয়ে যাবেন – আমার ‘বহুমত’এর ঝুড়িটিতে সেটিকে সানন্দে পুরে দেবো।
শুরুটা হয়েছিলো একার পোস্ট থেকে। তারপর আসলো আরেকটি পোস্ট, আকাশ মালিকের। একার পোস্টে মূলত পুরুষকে নারীর প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও একা বলছেন – নারীর শত্রু শুধু পুরুষ নয়, নারীর শত্রু এমনকি নারীও হতে পারেন বা হন, কিন্তু একথাটার মধ্যে যে বিশ্বাস বা সিদ্ধান্তটা খুব জোরালোভাবে উপস্থিত সেটা হলো – নারীর শত্রু হিসেবে প্রাথমিকভাবে পুরুষকে ধরা হলেও, তারাই একমাত্র নন। অথবা, অন্যভাবে বলতে গেলে – নারীর শত্রু কিন্তু নারীও হয়, যদিও এতদিন আমরা শুধু পুরুষকেই দায়ী করে এসেছি। এই পোস্টটিতে নানারকম মন্তব্য টন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আকাশ মালিক তাঁর অভিমত ব্যক্ত করলেন এই বলে যে, আমরা নারীর প্রকৃত শত্রুকে সনাক্ত করতে পারছি না – সেটি বা সেগুলো হচ্ছে অর্থ এবং ক্ষমতা, এবং আরো একটু বিস্তারিত করলে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকারের অভাব।
এবং, ঠিক এ জায়গাটাতে এসেই আমি বুঝতে পারলাম, এবার আমাকে কিছু একটা লিখতেই হবে। আর কোন কারণে নয়, অন্য কাউকে আমার যুক্তি দিয়ে প্রভাবিত করতেও নয়, বরং আমার নিজের চিন্তাক্ষেত্রেই যে নারীবাদ ব্যাপারটাই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, সেটা একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই আমাকে আমার এখনকার ধারণাগুলোকে নথিবদ্ধ করে ফেলতে হবে। যুক্তি ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একথাটা যে কি ভীষণভাবে সত্যি, তা যাঁরা এসব বিষয়ের বিভিন্ন শাখায় গবেষণা করেন তাঁরা আরও মর্মান্তিকভাবে টের পান। নারীবাদ সম্বন্ধে আমার যা বিশ্বাস, যা সিদ্ধান্ত বা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয়েছে, তা ‘আমার’ যুক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এবং, সেসব যুক্তি কোনভাবেই পরম বা চূড়ান্ত নয়, বরং একটা চলমান প্রক্রিয়ার অংশ, যে প্রক্রিয়ায় আমার আগেকার অনেক যুক্তি বাতিল হয়ে এখনকার অনেকগুলোকে জায়গা করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে বলে মনে করি। অতএব, এই পোস্ট।
একার পোস্টে আমি পুরুষ নয় বরং ‘পুরুষতন্ত্র’কে নারীর প্রধান প্রতিপক্ষ বলে উল্লেখ করেছিলাম। আকাশ মালিকের মতে – অর্থ এবং ক্ষমতা (বা তার অভাব) হলো আসল অপরাধী। ওদিকে, একা তাঁর একাধিক মন্তব্যে বলেছেন – অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসলেই যে বিরাট কোন নারীমুক্তি ঘটে যাবে এমনটি আশা করার কোন কারণ নেই, বরং ধর্মকে উৎপাটিত করতে পারলেই মোটামুটি অর্ধেক কম্ম সাবাড়। অনেকের মন্তব্যে দেখলাম সমাজে সুশিক্ষার হার বাড়লে এসব সামাজিক বৈষম্য এমনিতেই লোপ পাবে বলে ধারণা। অভি তার মন্তব্যে নারী পুরুষের জেনেটিক বৈষম্যকে যে সমাজবিজ্ঞানের ধুঁয়ো তুলে ব্যাখ্যা (বা অস্বীকার) করা যাবে না সেটা বলেছে। মোট কথা – ধর্ম, অর্থনীতি, বিবর্তন, শিক্ষাব্যবস্থা, নারীদের জন্য কোটা-নীতি, পূঁজিবাদ ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় এসেছে।
প্রথমেই বলে রাখি – নারীর ‘নারী’ত্ব নিয়ে আমার কোন সন্দেহও নেই, আপত্তিও নেই। নারী এবং পুরুষ শারীরিকভাবে এবং কিছুক্ষেত্রে চরিত্রগতভাবে আলাদা। ঠিক যেমন জাতি বা বর্ণের ওপর ভিত্তি করে আলাদা করলে দেখা যাবে পুরুষদের মধ্যেও শারীরিক এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য রয়েছে। তো? তার মানে তো এই নয় যে, সেই পার্থক্যকে ন্যায্যতা হিসেবে দাঁড় করিয়ে বৈষম্যকে যৌক্তিকতা দিতে হবে! সমাজে ধর্ম, অর্থনীতি কি বিজ্ঞান এসব যখন প্রসারিত হচ্ছিলো, নারীদের যে সেসব নীতি নির্ধারণ বা জ্ঞানচর্চার প্রক্রিয়ায় কোন প্রবেশাধিকারই ছিল না, সেটা তো আমার চাইতে যে কোন ইতিহাস-জ্ঞানী ব্যক্তি আরও ভালোভাবেই বলতে পারবেন। ধর্মের উৎপত্তি যদি পুরুষেরই কারণে হয়ে থাকে, অর্থনীতি বা শিক্ষানীতি বা যে কোন নীতি যদি পুরুষদ্বারাই প্রণীত হয়ে থাকে – তাহলে এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে এগুলো পুরুষের স্বার্থরক্ষা করতেই সাহায্য করবে? অর্থ এবং ক্ষমতা বহুক্ষেত্রেই আলাদা উৎস থেকে আগত হলেও, এর একটি যে অপরটির আগমনে সহায়তা করে, সে কথাটাও তো নতুন নয়। যদি বা ধরেও নেই যে, অর্থ থাকলেও ক্ষমতা থাকে না বহু নারীর, তাহলে আমার প্রশ্ন হবে – কেন অর্থ থাকলেও ক্ষমতা থাকে না বহু নারীর? এখানে সামাজিক নিয়মের কথা বলবেন তো? আমিও তো তাইই বলছি এতোক্ষণ ধরে!
এই যে ‘সামাজিক নিয়ম’, যে বিশাল umbrella termটি আসলে অনেকগুলো নিয়ামকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তার মধ্যে ধর্ম থেকে শুরু করে, শিক্ষানীতি, অর্থনীতি (পূঁজিবাদ তো অবশ্যই), কর্মনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি নীতি পার হয়ে একেবারে এমনকি নারীর কোট খুলে নিয়ে পুরুষের শিষ্টাচার প্রদর্শনের যে চল, এ সবকিছুই পড়ে এবং এ সবকিছুই কিন্তু প্রকারান্তরে পুরুষ’তন্ত্র’কে নির্দেশিত করে। পুরুষতন্ত্র তো একটি গালি নয়, সর্বরোগহর ঔষধের মতো যে কোন সমস্যাতেই অভিযোগ করার জন্য নারীবাদের একটি বুলি নয়, এটি একটি কাঠামো। চিন্তার ক্ষেত্রেও, প্রয়োগের ক্ষেত্রেও। অর্থ কিংবা ক্ষমতা, কীভাবে পাওয়া সম্ভব যদি এই কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ না করা হয়? ধর্ম কিংবা সুশিক্ষা/সচেতনতার অভাব, কেনই বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে না, যদি এই কাঠামোটিকে বজায় রাখার ইচ্ছে পোষণ করা হয়?
নারীবাদে এখন women এর বদলে gender এর ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ যে করা হয় তার কারণ শুধুমাত্র ‘নারী’ এবং ‘পুরুষ’ ছাড়াও অন্যান্য লৈঙ্গিক পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয়াই নয়, gender relations এখন অত্যন্ত আলোচিত এবং দরকারি একটি বিষয়। নারী আর পুরুষকে প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দাঁড় করানোর চাইতে নারী এবং পুরুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক পার্থক্যকে স্বীকার করে নিয়ে, নারী এবং পুরুষের মিথষ্ক্রিয়ার ধরন এবং উৎস বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়। ঠিক যে কারণে শুধু লৈঙ্গিক পরিচয়কেই শেষ কথা হিসেবে ধরে নেয়া হয় না, আর্থ-সামাজিক শ্রেণী বা classও এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গূণণীয়ক। যে নারী তার একই শ্রেণীর পুরুষের চাইতে ক্ষমতার স্পেকট্রামে নিচে অবস্থান করে, সে-ই তার চাইতে নিম্ন আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর একজন পুরুষের চাইতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে, যে কোন সময়ে।
এই পোস্ট পড়ে যদি আপনার আমাকে প্রশ্ন করবার ইচ্ছে হয়, পুরুষের বদলে নাহয় পুরুষতন্ত্রকেই দোষারোপ করা হলো, এবার তাহলে সমাধানটা ঠিক কী হবে? আমার উত্তর হবে – ‘সমাধান’ বলতে যা বোঝায় তা আমার জানা নেই। আমি মনে করি এটা একটা প্রসেস, একটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেক কিছু বদলেছে, আরও বদলাবে, চেষ্টাটুকু জারি থাকলে। আর সেই চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে এটুকু বলতে পারি যে, ধর্মই বলুন, কিংবা অর্থনৈতিক নির্ভরতা, অথবা শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য – এগুলোর কোনটিকেই আলাদাভাবে বা এককভাবে দায়ী না করে, প্রত্যেকটাকে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে দেখে, সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্ষেত্রবিশেষে, এবং প্রয়োজনভেদে ‘আলাদাভাবে’ বদলটা আনতে হবে। অর্থাৎ, চিন্তার ক্ষেত্র হোক একীভূত আর প্রয়োগের ক্ষেত্র হোক পৃথক। এটুকুই বক্তব্য।
সিরিয়াস পোস্টে ঢুইকাও যদি চেয়ার থেকে হাসতে হাসতে পইড়া যাইতে হয় সেটা কী আমার দুষ? :hahahee: :hahahee:
একটা লেখার কথা মনে পড়লো, ঢুঁ দিতে পারেন-
@রায়হান আবীর,
হাসতে হাসতে পড়ে তো যাবেনই, আমি দেখসি আমার জন্য কারুরই বিন্দুমাত্র মায়াদয়া নাই, কারণটা কী?? 😥
লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ, ভালো লাগলো লেখাটা!
নারীবাদ হচ্ছে কুকুরের লেজ-যতই টান সোজা হবে না। তাই নারীবাদ নিয়ে আলোচনা আর করি না।
@বিপ্লব পাল,
দারুণ কাজ করেন! আকাশ মালিকের নাকি একা’র, কার পোস্টে যেন দেখলাম আপনি একটা অ-আলোচনা করেছেন। আহা, আমিও যদি আপনাকে অনুকরণ করতে পারতাম …… ইসসস, পারবো কি আর ……… আমি আবার কুকুর খুব পছন্দ করি কিনা …… 🙂
@স্নিগ্ধা,
তাহলে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাদের কুকুর থাকার কারনে গত ক’বছর শুধু “কুকুর ওনলি” মেহমান এলাউড 🙂 ।
নারীবাদ ফাদ বাদ দিয়ে কুকুর বিষয়ক আলোচনা করা যাবে।
@বিপ্লব,
আপত্তিকর লাগলো মন্তব্যটা। নারীবাদ নিয়ে আলোচনা করবা না ভালো কথা। সেই স্বাধীনতা তোমার আছে। কিন্তু নারীবাদের আলোচনাকে কুকুরের লেজের সাথে তুলনা করার মানেটা বুঝলাম না।
আলোচনা চলুক। নারীমুক্তির রাস্তা যে সমাজব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে পারে সেটা আগে তেমনভাবে ভাবিনি।
আসলে ধর্ম নারীমুক্তির অন্তরায়- এই কথাটা শুধু সৌদি আরবের মত বিশেষ কিছু দেশের জন্য সত্য। যেসব দেশে ধর্মের প্রভাব অপেক্ষাকৃত দুর্বল, সেসব দেশে পুরুষতন্ত্র ভিন্ন মুখোশ পড়ে কাজ করে।
@পৃথিবী,
তাই কি? 🙂 অর্থনীতি বলুন, রাষ্ট্রীয় আইন বলুন, কিংবা নারীমুক্তি বলুন – একটা সমাজব্যবস্থা মানেই এই ব্যাপারগুলোর বিভিন্ন পারমুটেশন কম্বিনেশন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সমাজের সকলের জন্য সুযোগ-সুবিধার সমান অধিকারের পথে যে ৪টি বাধাকে প্রধান ধরা হয় তাহলো (১)অর্থনৈতিক, (২)জাতিগত, (৩) র্ধমীয় ও(৪) লিঙ্গীয়
২,৩,৪ নং সমস্যায়ও ১মটি কমন থাকছে, কাজেই ১মটি এই ৪টির মধ্যে ও প্রধান। এবং সব ক্ষেত্রেই মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা বা জ্ঞানের অভাব।
আমার এমন ধারণার জন্য যে কটি বই আমি পড়েছি তার নাম করতে গেলে প্রথমে রবীন্দ্র নাথের ১।রাশিয়ার চিঠি ২। মার্কসীয় বীক্ষায় নারী মুক্তি – রূপা আইচ, ৩।নারীমুক্তি -প্রবীর ঘোষ, ৪।Women’s movement and communist party -CPI (ML) ৫। নারী-পুরুষ সম্পর্ক -আনু মুহাম্মদ ৬। দেহোপজীবিনীদের জীবন ও জীবিকা -রূপা অইচ ৭।করুনা চাকমা লিখিত একটি প্রবন্ধ -নারী পুরুষ সম্পর্ক একটি পর্যালোচনা এবং সব শেষে আমার জীবনে স্ত্রী ও মেয়েদের জীবন নিয়ে অভিজ্ঞতা আর আশপাশে যা আমার পর্যক্ষেনের আওতায় এসেছে।
তবে এই মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষাটা যে আমরা উৎপাদন উপকরণগুলি ব্যক্তি মালিকানায় রেখে মুনাফা মুখী উৎপাদন ব্যবস্থায় করতে পারব না তা বোধ করি বলা বাহুল্য।
যা হউক এধরনের সিরিয়াস আলোচনা চালিয়ে গেলে ভাল এবং চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ বন্যাকে ও স্পষ্ট করে বলার জন্য ।
@আব্দুল হক,
আপনার উল্লিখিতি চারটি কারণের মধ্যে আপনি অর্থনৈতিক বাধাকে প্রথম ও প্রধান বলছেন। ওপরে বন্যাকে দেয়া আমার প্রতিমন্তব্য পড়ে দেখলে এ ব্যাপারে আমার অবস্থান জানা যাবে। আর, আপনি যখন বলেন
তখন আমি একটু দ্বন্দ্বে পড়ি এই ভেবে যে, এখানে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠা বা ‘শিক্ষা’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, ‘শিক্ষা’ এবং ‘জ্ঞান’ যে সবার জন্য উন্মুক্ত বা একসেসিবল না সেই সমস্যাটার কী হবে …… এসব নিয়ে।
মানুষ হয়ে ওঠার জন্য শিক্ষা, জ্ঞান, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা স্বাবলম্বন দরকার – বুঝলাম। কিন্তু, আপনি (এবং খুব সম্ভবত সাইফুল ইসলামও) ‘শিক্ষা’ বলতে যা বোঝাচ্ছেন সেটা যে শেষ পর্য্যন্ত ঐ বিভিন্ন ইন্টারলিঙ্কড বিষয়ের সাথে জড়িত তার কী হবে? একটা সময়ে ধরুন সমকামিতা নিয়ে, অথবা নিরাপদ যৌনতা নিয়ে, অথবা বিয়ে ভার্সাস লিভ টুগেদার নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনাই হতো না, কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অন্তর্গত করা তো দূরের কথা। এই সব ব্যাপারগুলো মিডিয়া বা কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের আওতায় এসেছে তো সমাজে সচেতনতা একটা পর্যায়ে আসার পর। এবং সমাজে সেই পর্যায়ের সচেতনতা এসেছে এগুলো নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন, আলোচনা ইত্যাদি শুরু হওয়ার পর। আর, এই আন্দোলনের মধ্যে তো অর্থনৈতিক কারণ থেকে শুরু করে, আইন, মানবাধিকার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশের ওপর চাপ কমানো – সবই যুক্তি হিসেবে আসে। যে ‘শিক্ষা’ আমাদের এ সব কিছু নিয়ে সচেতন হতে সাহায্য করবে, সেই শিক্ষার প্রসার সমাজের ওপর নির্ভরশীল নয় কি? তাহলে তো আমি যে বিশাল ব্যাপ্তিময় ‘সামাজিক নিয়ম’এর কথা বলছি, আপনিও প্রকারান্তরে বা অন্য টার্ম ব্যবহার করে ওই একই কথাই বলছেন?
নাকি আমি বুঝতে ভুল করছি?
@স্নিগ্ধা,
প্রিয় স্নিগ্ধা,
‘ধর্মই বলুন, কিংবা অর্থনৈতিক নির্ভরতা, অথবা শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য – এগুলোর কোনটিকেই আলাদাভাবে বা এককভাবে দায়ী না করে, প্রত্যেকটাকে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে দেখে, সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্ষেত্রবিশেষে, এবং প্রয়োজনভেদে ‘আলাদাভাবে’ বদলটা আনতে হবে। অর্থাৎ, চিন্তার ক্ষেত্র হোক একীভূত আর প্রয়োগের ক্ষেত্র হোক পৃথক’।
ধন্যবাদটা যখন বন্যাকেও বলেছি তখন নিশ্চয়ই মূল লেখককে সহই বুঝায়। কারণ আপনার লেখা পড়ার পরইতো অন্য মন্তব্যগুলিও পড়েছি। আর আমি তো আপনার লেখার বিরোধিতা কিছু করিনি। অপনার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেই আমি কিছু যোগ করে আমার অবস্থান (বুঝতে পারার) আমার মত স্পষ্ট করতে চেয়েছি মাত্র।
অর্থনৈতিক বৈষম্য/ বিরোধ প্রথম এবং প্রাধান্যে এনেছি এ কারণে যে সবগুলি সমস্যার সমাধান একই সঙ্গে করা যাবেনা বলে মনে করে প্রথমে সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বৈপ্লবিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যেতে হবে। যেমনটি রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর উল্লেখ করেছিলেন। লেনিন তার জন শিক্ষা গ্রন্থেও একই কথা বলেছেন। অথবা মার্কস এঙ্গেলস রচিত বিখ্যাত কমিউনিষ্ট পার্টির ইশতেহারে বলেছিলেন যে কোনটা মুনাফা আর কোনটা অতি মুনাফা (বর্তমানে যা লুটপাট)সেই ফারাক খোঁজার আমাদের প্রয়োজন নেই কারণ আমরা বেচা কেনার ব্যবস্থাটাই উচ্ছেদ করতে চাই।
এখন আমার মনে হচ্ছে ঐ যে (সামাজিক) মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষার কথা বলে ছিলাম তাতে ‘সামাজিক’ শব্দটা বসালেই বুঝতে সুবিধে হতো, কিভাবে যেন এটা বাদ পড়ে গেছে। আমি আমার জনশিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কর্পোরেট মুনাফা শিকারীদের দৌরাত্ম্য চলছে –এর বিপরীতে বিজ্ঞানভিত্তিক জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী শিরোনামের একটা প্রবন্ধে বলে ছিলাম যে ‘মুনাফার এই লোভ মানুষকে সত্য বলা থেকে বিরত রাখে ও মিথ্যা বলতে উৎসাহিত করে। আর এই মিথ্যা বলা একের প্রতি অপরের অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা তৈরী করে। অবিশ্বাস, আস্থাহীনতায় ভালবাসার সম্পর্ক তৈরী হয়না, স্থায়ী হয়না, টিকে না, টিকতে পারে না। বরঞ্চ বিপরীতটা হয়, মিথ্যা অবিশ্বাসের আর অবিশ্বাস ঘৃণার সৃষ্টি করে। ঘৃণা এক সময় হিংস্রতায় পর্যবসিত হয়। মুনাফার এই লোভ মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলিকে নষ্ট করে দেয়, সত্য-বিশ্বাস-ভালবাসা-সুন্দর-ন্যায়-সাম্য তখন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। মানুষ তখন অনিশ্চয়তা, ভয়, দুশ্চিন্তা ও আতংকের মধ্যে দূর্বিষহ জীবন যাপন করে; যা আজকের দিনে আমরা করছি’।
আমি মনে করি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির মধ্যেও যা মৌলিক তা হলো প্রাণ/ জীবন বাঁচাতে পেটের ক্ষুধার নিবৃত্তি ও বংশ রক্ষার তাগিদে যৌন ক্ষুধার নিবৃত্তি। এখানেও দেখুন ক্রমানুসার আছে, কোন ক্ষুধাটা আগে? তারপর আসে ভালভাবে, সুন্দরভাবে, ভালবাসার মধ্যে বাঁচার চেষ্টা। এখানেই শিক্ষাটাকে (প্রচলিত সার্টিফিকেট লাভের শিক্ষা নয়) কমন বলছি এজন্যে যে সমাজের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রথম পর্বে রূপান্তর প্রক্রিয়ার নিয়ম কানুন শিক্ষাও দ্বিতীয় পর্বের সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠার জন শিক্ষা।
আমি জানি এবং মানি যে দায়িত্ব জ্ঞানহীণ স্বাধীনতা মাঝি ছাড়া নৌকার মতোই গন্তব্য বিহীণ শুধুই ডেউয়ের তালে তালে নেচে বেড়ানো।
ধন্যবাদ আপনাকে, ভাল থাকবেন, শুভেচ্ছা্ ।
আগের আলাপগুলো দেখতে পারছি না সময়ের অভাবে, তাই আপাতত ক্ষুদ্রভাবে কিছু যোগ করি। আপনার লেখার সবচেয়ে বেশী যে অংশটুকু পছন্দ হয়েছে তা হল নারী পুরুষের মিথষ্ক্রিয়ার ব্যাপারটি। একটি সংসারের ক্ষেত্রেই যদি তাকাই- যে পরিবারে বাবাই সব, সেটিকে আমি যেমন আদর্শ হিসেবে দেখি না আবার তেমনি দেখি না যে পরিবারে মা-ই সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক। আদর্শ হিসেবে দেখি বাব-মার পরস্পরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং যে কোন সমস্যার সমাধান হিসেবে দু’জনে একমত হওয়া।
আমার গণতন্ত্রের লেখায় কিছু প্রশ্ন এসেছিল আপনার মনে আছে কিনা। আমি নিজেও যেমন চিন্তা করছি এবং পড়ছি এই বিষয়ে। মেজরিটির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে মাইনরিটিকে শাসন করাই কি উত্তম নাকি উত্তম দু’য়ের একমত হয়ে কিছু করা। আবার দু’য়ের একমত কি আসলেই সম্ভব নাকি এটি একটি ইউটোপিয় ধারণা। পরবর্তী লেখায় এগুলোর উপর কিছু আলোচনা।
ভাল থাকুন।
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য! গণতন্ত্র নিয়ে পরের পর্বটা লিখে ফেলুন, আমিও অপেক্ষায় আছি 🙂
স্নিগ্ধা,
ভেবেছিলাম একভাবে মন্তব্য করবো কিন্তু এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে মন্তব্য না করে তোকে কিছু প্রশ্ন করি। তোর সাথে কথা বলে, এবং তার সাথে বেশ কয়েকদিন ধরে এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছি বলেই মনে হচ্ছে বিষয়টা নিয়ে আরও গভীরে গিয়ে ভাবা উচিত। এ নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই যে কোন ‘একটা’ বিষয়ের সমধান করলেই এই সমস্যাটার সমাধান হয়ে যাবে না। তুই যেহেতু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই বিষয়টার একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দিকের সাথে জড়িত, তোর কথাটাই সর্বাগ্রে শোনা উচিত 🙂 । এতে দু’টো কাজ হবে, ‘জ্ঞান আহরণ’ বলে কি যেন একটা ব্যাপার আছে সেটাও হয়তো হল, এবং তোকে আরও খাটানোও হল, তোর যে অনেক লিখতে ভালো লাগে সেটা তো আমি জানিই। একসাথে এরকম ‘আপার হ্যান্ড’ খুব কমই পাওয়া যায়……
১) রাহাত খানকে তুই ইতোমধ্যেই পরিষ্কার করেছিস যে, একেক সমাজে একেকটা ইস্যু বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। আমাদের মত দেশগুলোতে তোর কাছে কোনটা সবচেয়ে বড় ইস্যু বলে মনে হয়? আমি এখনও মনে করি যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন একটা খুব বড় একটা বিষয়।হ্যা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শিক্ষা বা প্রায়োগিক বিদ্যা দরকার ওয়ার্ক ফোর্সে ঢোকার জন্য, সেটার নিশ্চয়তা দিতে হলে প্রাথমিকভাবে একটা বেসিক সামাজিক চেতনার পরিবর্তন দরকার। কিন্তু ধর, একভাবে বলা যায়, আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই সেটা আছে বলা যায়। কিংবা আরেকভাবে বলা যায়, এর জন্য প্রাথমিক যে ধাক্কাটা লাগে সেটা খুব বড় কিছু না। সামন্ততন্ত্র থেকে পুঁজিবাদের উত্তরণের পরে আমরা আংশিকভাবে হলেও এটাকে মেনে নিয়েছি। বেশীর ভাগ উন্নত পুঁজিবাদী দেশে বিংশ শতাব্দীর প্রথমে সেটা দেখা গেছে। কিন্তু একটা মেয়ের সমাজে যতই শিক্ষা বা ধর্মীয় স্বাধীনতা (আমাদের দেশেই অনেক মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তশ্রেণীর পরিবারেই এটা থাকে) থাকুক না কেন সে যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন না হয় তাহলে এই পুঁজিবাদী সমাজে তার অপশান বা চয়েস থাকে না। ইচ্ছা করলেই সে একটা নিপীড়ণমূলক দাম্পত্য সম্পর্ক বা সামাজিক অবিচার থেকে বের হয়ে আসতে বা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে না। আমরা উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতেও দেখেছি, মেয়েরা যত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে ততই তারা নিজের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে পেরেছে এক এক করে, (এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী সমাজের সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে কিছু বললাম না, সেটা আরেক আলোচনা) এবং শিক্ষা, ধর্মীয় অত্যাচার বা সামাজিক নির্যাতন নিয়ে আন্দোলন করার শক্তি বা সাহস পেয়েছে। সেটাও একটা ‘চলমান প্রক্রিয়া’ । আমি গত একশ’ বছরে বিভিন্ন সমাজে নারী মুক্তির অগ্রগতির কথা চিন্তা করলাম, মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীণতার বেসিক নিশ্চয়তা ছাড়া একটা দেশেও নারী অধিকার এগিয়েছে বলে মনে হল না। আমি কি ভুল বিশ্লেষণ করলাম?
২) এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশই তো আর বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারে না। কিন্তু আমাদের মত দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক চেহারাটার উন্নতি না ঘটলে কি আসলেই বিচ্ছিন্নভাবে শুধু নারী মুক্তি সম্ভব? আমাদের দেশে একটা রিক্সাওয়ালা কিন্তু ভীষণভাবে নির্যাতিত, যদিও সে আবার বাসায় গিয়ে বৌ পেটায়, এই প্রসংগটা তুইও তোর লেখায় সংক্ষেপে হলেও এনেছিস। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শ্রেণী বৈষম্যের এই চরম অবস্থা থেকে মুক্তিটাও ( আংশিক মুক্তিই না হয় আশা করলাম) কি নারী অধিকারের সাথে যুক্ত নয়, আমাদের এই বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে কি বিচ্ছিন্নভাবে শুধু নারীমুক্তি সম্ভব? এ বিষয় দু’টো কতটা একে অপরের উপর নির্ভরশীল, এ সম্পর্কে তোর বক্তব্য কি?
৩) ধর সৌদি আরবের মত দেশগুলোতে এখনও পুরোপুরিই সামন্ততান্ত্রিক ব্যাবস্থা চালু আছে। পরশুদিন সিএনবিসি তে সৌদী নারীদের উপর একটা অনুষ্ঠান দেখার পর থেকেই এটা নিয়ে ভাবছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশের মত দেশে ধর্মটাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে না করলেও, সৌদিতে মেয়েদের অধিকারের প্রশ্নে ধর্ম (ধর্ম এবং সমাজ আমার কাছে খুব ঘনিষ্টভাবে যুক্ত একটা ব্যাপার মনে হয়) হয়ত একটা বেশ বড়সড় সমস্যাই। কিন্তু সেখানকার ছেলেরা নিজের থেকেই এই পরিবর্তন করবে কেন? সেখানকার মেয়েরা সব দিক দিয়ে এতই আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা যে ওরা যে আন্দোলন করবে নিজেদের আধিকারের জন্য সেটাও সম্ভব বলে মনে হয় না। তাহলে এইরকম দেশগুলোতে পরিবর্তন আসবে কিভাবে? আজকের বিশ্বায়নের যুগের আন্তর্জাতিক চাপ কি এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে? কিন্তু উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলো যতক্ষন সৌদি আরবের এস্টাব্লিশমেন্টের কাছ তেলের সুবিধা পেতে থাকবে ততদিন তো তারা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করবে না।
৪) বৈজ্ঞানিক গবেষনাও আমার মতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। নিউরোসাইন্স, এভুলশানারী বায়োলজী বা এধরণের অন্যান্য শাখাগুলো ছেলে এবং মেয়ের পার্থক্যগুলো কি কি এবং কেন এই পার্থক্যগুলো ঘটে বা মেয়ে-মেয়ে, ছেলে-ছেলে বা ছেলে-মেয়ের মধ্যে সামাজিক এবংঅর্থতনৈতিক প্রতিযোগীতা ছাড়াও যে রিপ্রডাক্টিভ প্রতিযোগীতা চলে, এই ধরণের বিষয়গুলোর সঠিক ব্যখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার একটা চিত্র তুলে ধরতে পারে। পার্থক্য মানেই যে বৈষম্য নয় (স্বীকার করছি, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খুব যান্ত্রিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করা হয় বিভিন্ন বিষয়ে) সেটা তুলে ধরতে বিজ্ঞান বড় একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু তোর কি বক্তব্য এ প্রসঙ্গে? সমাজবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে কি এগুলোকে জায়গা দেওয়া হয়, নাকি সমাজবিজ্ঞান পিউর বিজ্ঞান থেকে দূরে থাকে? প্রায়ই দেখি এসব বিভিন্ন টাচি বিষয়ে বিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়।
এখন লিখতে গিয়ে বুঝলাম, আরও অনেক প্রশ্ন কিলবিল করছে মাথায়। কিন্তু আর বেশী লিখলে চাকরিটা নিশ্চিত যাবে। আমেরিকার চাকরির বাজারের যে অবস্থা এখন আর যাই করি চাকরিটা খোয়ানো যাবে না। তুই নারী মুক্তি নিয়ে যে ‘আতেলীয়’ ব্যাখ্যাই দিস না কেন, আমি আপাতত অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ‘বিশাল’ সুফল থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারবো না। আমি যাই, এবার তুই গালি দিতে দিতে আমার উত্তরগুলো দে, বিস্তারিতভাবে সঠিক বিশ্লেষণসহ ( ফাঁকি না দিয়ে) উত্তর দিবি।
@বন্যা আহমেদ,
দ্যাখ সভ্য সমাজে বাস করার কিছু সমস্যা আছে! এই যেমন ধর, তুই যে একটা @#%!, বা তুই কত বড় *%ঁ& … এসব বলতে গেলে তো তখন মডারেটররা সব তেড়ে আসবে! যাক গা – তার চেয়ে বরং তোর কোটি কোটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টাই করি ……… 🙁
১) ভুল বিশ্লেষণ করার প্রশ্নই আসে না – অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া নারীমুক্তি যে জায়গায় আসছে সেটা সম্ভব হতো না তো অবশ্যই। ফোনে কিন্তু তুই বলসিলি যে এটা আসলে অন্যান্যগুলাও চলে আসবে, মানে এটাই আসলে ড্রাইভিং ফোর্স। আর আমার মত তখনও বা এখনও – অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এককভাবে এটার ক্ষমতা ততটাই বেশি কিনা আমি জানি না (মনে করি না, আসলে) যে এটাই সাফিসিয়েন্ট কনডিশন হয়ে অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলাকে বদলায় দিবে।
তুই বললি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া একটা মেয়ে চাইলেও একটা নিপীড়নমূলক দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারে না, বা কোন সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। ঠিক, কিন্তু এটার মধ্যেও কথা আছে। আমাদের দেশেই মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত অসংখ্য পরিবারে এমন অনেক অসুখী/নিপীড়নমূলক দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে আছে – মেয়েটা ভালো চাকরি করা সত্ত্বেও – ডিভোর্স করলে ‘মানুষ কী বলবে’ এই অস্বস্তির কারণে। একইভাবে পশ্চিমা দেশগুলাতে যেহেতু ডিভোর্স সমাজে অনেক বেশি ‘প্রচলিত’ তাই এ ব্যাপারে মেয়েদের মানসিক বাধা কম এবং সহজে এরকম সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারতেসে।
ঠিক, যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসলে/থাকলে একটা মেয়ের জন্য ডিভোর্সও যে একটা অপশন, এটা ভাবাই অনেকক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা সময় ছিলো যখন এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয়তো সবচাইতে জরুরি ছিলো। কিন্তু, বহু বছর ধরে যেহেতু নারীমুক্তির আন্দোলন প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে মূলত অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকেই মেইন টার্গেট ধরে আগাইসে, এটা অনেক সময়ই দেশ/সমাজ/কালচার ভেদে যে আরও কিছু সমস্যা থাকে সে ব্যাপারটাকে আমল দেয় নাই। এখন যেহেতু আমরা এমন একটা সময়ে বাস করি যখন একসাথে অর্থনৈতিক (পূঁজিবাদের প্রসারে সাহায্য করতে) কারণে দ্রুতগতির বিশ্বায়ন হচ্ছে, রাজনৈতিক কিছু কারণে ধর্ম ব্যাপারটা খুব জোরালোভাবে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণেও ঢুকে পড়সে, এবং একইসাথে বিশ্বায়নকে অস্বীকার করে লোকাল সংস্কৃতিকে রক্ষা করার আন্দোলন চলতেসে – অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলা মেজর প্রসেস পৃথিবীব্যাপী কাজ করতেসে – এই সময় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমার মতে যথেষ্ট না বা এতোটা ভারবাহী না যে ওইটাকে প্রধান টার্গেট করলে অন্যান্য সমস্যাগুলা অনেকটা সহজেই সল্ভড হয়ে যাবে। তুই যদি ম্যাক্রো লেভেলে বা একটা দেশের নারী বিষয়ক নীতি কী হবে সেভাবে একটা বড় ফ্রেমওয়ার্কে দেখিস – হ্যাঁ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না। কিন্তু, আমরা তো এটাও জানি যে ওরকম কাগজে কলমে সুন্দর সুন্দর নীতি আমাদের দেশেই অনেক আছে। তাতে খুব কি কিছু বদলায়/বদলাইসে? যদি না ওই নীতি মাইক্রোলেভেলে বা মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও প্রতিফলিত হতে পারে? যে কারণে আমি বিশ্বাস করি যে কোন ‘একটা’ ইস্যু ধরে লাভ নাই, পরিপূরক অনেকগুলা বিষয় ধরে বদলানোর চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের দেশের ক্ষেত্রে যদি বলিস, আমি মনে করি দারিদ্র্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। মেয়েদের ঘরের বাইরে এসে কাজ করাতে যে আপত্তি, সেটা বহু ক্ষেত্রেই কম্পিটিশন ফর লিমিটেড রিসোর্সেস এর কারণে। আবার ঠিক ঐ কারণেই, অর্থাৎ দারিদ্র্যের কারণেই কিন্তু গ্রামে বহু স্বামী বউদের গ্রামীণ বা অন্যান্য এন জি ওতে কাজ করতে ‘দেয়’, যাতে করে পরিবারে টাকা আসে। কিন্তু, আবারও বলি – দারিদ্র্য আমার মতে আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলেও, মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসলেই যে বিরাট বদল আসবে তা আমি মনে করি না। আমাদের দেশে এসিড ছোড়া বা বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আইন তো আছে, প্রয়োগ হয় কতখানি? এটা আবার রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, দূর্নীতি এবং একাউন্টিবিলিটির অভাব।
২) এটার উত্তর পাইসিস আশা করি?
৩) রাফিদা – তুই আগে জিজ্ঞেস করে দেখ তো – সৌদী আরবের মেয়েরা কি কোন বদল চায়? যদি না চায়, আমি মনে করি আমাদের চোখে যত খারাপই লাগুক না কেন, লেট দেম বী। আর যদি সোউদী মেয়েরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠে থাকে, তারাই একসময় আস্তে আস্তে আন্দোলন শুরু করবে। হয়তো অনেক, অনেক সময় লাগবে এই চাওয়াটা একটা সলিড ফর্ম নিতে, তারপর প্রথমে ভিতরে ভিতরে মেয়েদের মধ্যে এটা ছড়ায় দিতে, এবং আরও বহু বছর হয়তো লেগে যাবে সামান্য একটু বদল আনতে – কিন্তু হবে একসময়।
আমার আবারও প্রশ্ন হচ্ছে, এই চাওয়াটা কি তৈরী হইসে? তাঁদের সমাজে যে এরকম চাওয়াটা সম্ভব বা উচিত, এভাবে ভাবতে যদি সৌদী মেয়েরা এখন এই মুহূর্তে তৈরী না থাকেন, তুই আমি বলার কে? তেলের অর্থনীতি বা বিশ্ব রাজনীতি যদি বা বাদও দেই, সৌদী আরব তো একটা আলাদা রাষ্ট্র, এখানে বাইরের বিশ্বের কতটুকু এক্তিয়ার থাকা উচিত? বাইরের বিশ্ব যদি আজকে আমাদের দেশে এসে বলে, “তোমাদের এই শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে থাকাটা বাড়ির বউটার উপর অনেক চাপ ফেলে, এই সামাজিক কাস্টমটা বদলানো দরকার” – আমরা শুনবো? চাপ যে পড়ে অনেক সেটা তো খুবই সত্যি, কিন্তু তাই বলে বাইরের কেউ ইম্পোজ করলে সেটা কেউ মেনে নিবে না। আমি জানি এটা একটা খুব সিম্পলিস্টিক উদাহরণ হয়ে গেলো, সৌদী মেয়েদের সমস্যা এর চাইতে অনেক গুরুতর। কিন্তু, আমার বক্তব্য হচ্ছে বাইরের বিশ্বের চাপায় দেয়াটা একটা খুব স্লীপারি স্লোপ। বিশেষ করে এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে, কারণ সেক্ষেত্রে পুরা জিনিষটা ব্যাকফায়ার করার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। ধর, একটা ‘এন্টি ওয়েস্টার্ন ইম্পজিশন’ সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলো, বা এটাকে পশ্চিমা ইম্পেরিয়ালিজমএর একটা উদাহরণ হিসাবে মনে করে সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গেলো। হতে তো পারে? এরকম তো হইসে অনেক দেশে। এখনকার এই ঢালাও ইসলামাইজেশনও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এন্টাই ওয়েস্টার্ন সোশ্যাল মুভমেন্টের যৌক্তিকতার উপর ভর করে আসছে।
৪) বিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান মুখামুখি যুযুধান হয়ে দাঁড়ায় পড়ে কেন জানিস? এই বিজ্ঞানীর গুষ্টি, মানে তোরা, “নারী আর পুরুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, পার্থক্য আছে” বলে লাফালাফি করে রক্ষণশীল অংশটাকে জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন চালায় যাওয়ার জাস্টিফিকেশন হাতে তুলে দিস! মেয়েদের ব্রেইন ছোট, অতএব বুদ্ধি কম, অতএব লিমিটেড রিসোর্স ধ্বংস না করে ঘরে গিয়ে বাচ্চা পালুক – এরকম কথা বলতে দিস!! বিজ্ঞানের যে এ কথাটাও বলা দরকার যে – difference does not justify inequality, they are just different in different aspects, and that’s all” – এটা ভুলে যায়। যে সোশ্যাল রিপ্রোডাকশন অফ লেবার নিয়ে কালকে ফোনে এতো কথা বললাম, সেটা তো কোনভাবেই ‘বিজ্ঞান’এর আওতায় পড়ে না। কিন্তু, আবার পড়ে না কি?
মুক্তমনায় আশা করি এটাই আমার শেষ পোস্ট!!!!!! পোস্ট লিখে যদি পোস্টের চাইতে বড় মন্তব্য লিখতে হয়, তাইলে তার চাইতে বাসায় বসে বাচ্চা পালা অনেক, অনেক, অনেক ভালো!!! :-X
@স্নিগ্ধা,
স্নিগ্ধা, এ করলেন কী? এই কথাটা বলার জন্যে সবগুলো মন্তব্য আজ কয়েকটি রাত ধরে নীরবে শুধু দেখছি, পরে বলবো বলে। নারীর দৈহিক গঠনের পার্থক্যকে, নারীর শারীরিক দুর্বলতা, বলতে আমি রাজী নই এই কারণে যে, তাতে ধর্মবাদী পুরুষতন্ত্রের ধারণাকেই সমর্থন দেয়া হয়। গুরুদেব বহু আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন- হাওয়া আদমের বুকের দুর্বল বক্র হাড়ের তৈরী। তা’কে আস্তে করে কোমল হাতে নাড়াচারা করো, পাছে না সে ভেঙ্গে যায়, কারণ বিছানায় তোমাদের তার প্রয়োজন হবে। কি জঘন্য, অমানবিক, অসভ্য কথা।
‘নারী নারীর শত্রু’ বলা থেকে শুরু করে এখন আলোচনা কমিউনিটি ডিভোল্যাপমেন্ট বা সমাজ উন্নয়নের দিকে মোড় নিচ্ছে। কিছুকিছু মন্তব্যে এই উন্নয়নের ধারা বা প্রক্রীয়াও ব্যক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আসার পর অবশ্যই অন্যান্য বিষয়াদীও এসে যুক্ত হয়। দেশ ও এলাকা ভিত্তিক সামজিক প্রথা, ধর্মীয় প্রথা, আর্থিক স্বাধীনতা, শিক্ষা ব্যবস্থা, পারিবারিক ট্রেডিশন ইত্যাদি এক এক করে প্রায়োরিটি বিবেচনায় নিয়ে এগুতে হয়। Neglected Society বা Destitute Community র অবহেলিত, বঞ্ছিত পর্দানশীল নারী সমাজে গিয়ে যদি বলা হয়, নারী মুক্তির প্রধান অন্তরায় তোমাদের পর্দা, তাহলে ব্যাকফায়ার তো হবেই। কোন একজন সমাজ বিজ্ঞানী কোথায় যেন বলেছিলেন,- ক্ষুধার্ত অনাহারী লোকের মুখে ভাত তুলে দেয়ার সময় বলতে নেই, তোমার আল্লাহ তো তোমাকে ভাত খাওয়াতে পারলো না। সেই ভাত তার পেটে হজম হবেনা।
তা তো হতে পারেনা। আপনার লেখা পোস্ট ও মন্তব্যগুলো আমার ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটিতে সমাজ বিজ্ঞানের ক্লাসের একজন শিক্ষয়িত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমার নিজেকে অর্থাৎ নিজের ভেতরের মানুষটাকে চেনার জন্যে যেমন বন্যার প্রয়োজন আছে, তেমনি আমার চার পাশের জগত ও সমাজকে চেনার জন্যে আপনার প্রয়োজন আছে। আপনারা উভয়ে যখন ঝগড়া করেন, তখন ঝগড়ার বিষয়বস্তু যদি সমাজ বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান হয়, তা’তে আমাদেরকে শরীক করতে ভুলবেন না।
@আকাশ মালিক,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! আমার আর রাফিদার ঝগড়া দেখার জন্য বেশি অপেক্ষাও করতে হবে না, এই কাজ আমরা করে আসতেসি হাজার হাজার বছর ধরে ……!
@স্নিগ্ধা,
এ বিষয় নিয়ে এটাই শেষ মন্তব্য। আমার লেখাটি যেহেতু নারী হয়ে লিখেছিলাম তাই সে দৃষ্টিকোণ থেকেই কিছু কথার শেষ উত্তর দিয়ে যাই।
আমি শিক্ষা সংস্কৃতির কী বুঝি? আমাকে আপনি উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ কি দিয়েছেন?
এই মানসিকতার জন্যে আমি নারী দায়ী নয়। আমি এই মানসিকতা নিয়ে জন্ম নেই নাই। যে দোষী তাকে শায়েস্তা করুন। আর না হয় এ অপবাদ দেয়ার আগে আমার দাবী মেনে নিন।
এতে আমার কোন সুখানুভুতি নেই। আমি একজন শিক্ষিত কর্মজীবী নারী হতে চাই। আমাকে আমার উপযুক্ত শিক্ষা, ট্রেইনিং ও কাজের পরিবেশ, সুযোগ, সুবিধা দিয়ে দিন।
আহারে দেনমোহর! তালাকপ্রাপ্ত মেয়েরা দেনমোহর দিয়ে কত দালান বিল্ডিং যে তুললো, তা কি আর বলতে হয়। তালাকের পরে বাপের বাড়ির সম্পত্তি, স্বামীর বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে কতোই না সুখে আছি। আমার ওসবের দরকার নাই, সরকারকে বলুন আইন করে স্বামীর সম্পত্তির অর্ধেক আমাকে দিয়ে দিক। আর হ্যাঁ দশমাস গর্ভে ধারণ করা আমার পেটের সন্তানদের কথাটাও সরকারকে শুনিয়ে রাখবেন। গু-মুত তো আমিই সাফ করেছি, ওদের কথা বলার ভাষাও শিখিয়েছি আমি।
কারণটা কি আবিষ্কার করতে পেরেছেন? মুহাম্মদের হাদীসে লিখা আছে জানি, তবে জৈব বিবর্তনীয় জেনেটিক কোন লিঙ্ক পেলে একটু ব্যাখ্য করবেন।
আমি বুঝায়ে দেই। বিজ্ঞাপন দিয়ে কেন বলবো স্বামী ” বেকার ছেলে হইলেও চলিবেক”? আমার তো মস্তিষ্ক বিকৃতি এখনও ঘটেনি। আমিও বেকার স্বামীও বেকার, ঘোড়া আর ঘাসে পিরীতি? আচ্ছা বলুন বেকার ঐ মেয়েটির হাত পায়ের গড়-গঠন, রূপ-রঙ, চেহারা-ছবিটা দেখতে কেমন? আপনি যে একই সাথে রূপবতী একটা দাসী পেয়ে গেলেন, তাতে কোনই স্বার্থ নেই? উচ্চশিক্ষিত অফিস কর্মচারী নারী দিয়ে কি দাসীর কাজ করানো যাবে?
আচ্ছা দেহের জৈবীক পার্থক্যকে আমার শারীরিক দুর্বলতা বলে প্রচার করে আপনি কী সুখ পান বলুন তো। আপনার মাঝে কি কোন দুর্বলতা নেই? আমি বায়োলজিক্যাল সাইনস থেকেই আপনার ভেতরে প্রচুর দুর্বলতা প্রমাণ করে দিতে পারবো ইনশাল্লাহ। কিন্তু আমি কোনদিন আপনাকে দুর্বল বলেছি? এ পার্থক্য তো আপনিও জানেন আমিও জানি। আমাদের হরমোন জনিত পার্থক্যটা সমাজ জীবনে না টেনে, চিকিৎসা শাস্ত্রের বিজ্ঞানের গবেষণাগারে রেখে আসতে পারেন না।
আমি আর আপনার চরণ দাসী হতে চাইনা, আমি আপনাকে বন্ধুরূপে পেতে চাই।
আপনারা আরো হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকুন এই কামনা করি।
@স্নিগ্ধা,
চার বছর ধরে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। দিনের পর দিন সেই গর্তে ধোঁয়া ঢুকিয়ে লেজ বের করা হয়েছে সবে। এত সহজে সেই লেজ ছেড়ে দেবো ভেবেছেন বুঝি? ওটাকে শক্ত করে ধরেই পুরো শরীরকে গর্ত থেকে টেনে বের করা হবে এবার।
ফাঁকিবাজি পোস্ট দিলে তার মন্তব্য এরকম বড়ই হয়। বড় করে পোস্ট লিখেন তখন দেখবেন আর মন্তব্য বড় করে না দিলেও চলবে।
সাধারণত বেশিরভাগ বাঙালি নারীদের লেখা নারীবাদী লেখাসমূহ পড়লেই কী কারণে যেন বিরক্তিতে গা জ্বলে যায় আমার (পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আদর্শ প্রতিভূ বলেই হয়তো)। এই লেখাটি পড়ে সেই অনুভূতিটুকু কেন যেন হলো না আমার (কড়া ডোজের না বলেই বোধহয়)।
@ফরিদ ভাই, আপনার মন্তব্য দেখে আমার আর অভির ঠিক বিপরীত দুইটা কথা মনে পড়লো ( যেটা বেশীরভাগ সময়েই ঘটে)। আমি খুব সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলাম, ফরিদ ভাই কিভাবে লেজটা ধরে রাখবে সেটা জানা দরকার। আর অভি বললো ফরিদ ভাইরে কও লেজটায় আগুন লাগায় দিতে।
স্নিগ্ধা, তোর সাথে অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে জানি, কিন্তু লেজের ঠিক কি সম্পর্ক সারাদিন ভেবেও কিন্তু বের করতে পারলাম না। তোর স্বভাব মানে লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠা তোর স্বভাবের মধ্যে কোথাও না কোথাও শিওর লেজের কোন টাচ আছে। না হলে একজন বলে গর্তের মধ্যে থাকা কারও লেজ, আরেকজন বলে কুত্তার লেজ…… :-/
@বন্যা আহমেদ,
অভির কী ধারণা যে আমি রাবণ? :-/
@ফরিদ আহমেদ,
আরে ল্যাঞ্জায় আগুন লাগায় দিলে সুবিধা অনেক। আপনের কষ্ট করে আর গর্তে ধোঁয়া ঢুকিয়ে দেবার জন্য বসে থাকতে হবে না। নিজের ধোঁয়ায় নিজেই বের হয়ে আসবে। 🙂
@ফরিদ ভাই,
আপনার আগের মন্তব্য পড়ে সন্দেহ হইসিলো আমি শিয়াল কিংবা সাপ, রাফিদাকে দেয়া আপনার উত্তর পড়ে বুঝলাম আমি হনুমান 🙁
আপনি প্লিজ মনস্থির করেন, বিজ্ঞানী বন্যা বর্ণিত ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ আগায় (কিংবা পিছায়) আমি আলটিমেটলি কোন প্রজাতিতে এসে পৌঁছাইসি, নাইলে আপনাকে মুক্তমনায় …… না, মানে বিবর্তন সম্পর্কে জানাটা আমাদের সব্বার জন্যই জরুরি কিনা ……
@স্নিগ্ধা,
ভাইরে, (এটা আবার সেক্সিস্ট সম্বোধন হলো কি না কে জানে?)
আমি নারীবাদে বিশ্বাস নাও করতে পারি, উন্নত প্রজাতি হিসেবে মেয়েদের স্বাধীনতায় বাগড়াও দিতে পারি হয়তো মাঝে মাঝে, কিন্তু নারীর স্বাধীন চিন্তায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা এখনো অর্জন করি নাই। আল্লাহপাক সেই ক্ষমতা আমাকে এখনো দেয় নাই। 🙁 আপনার মনে কী কী সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে বা রাফিদাকে দেওয়া আমার উত্তর পড়ে নিজ বুদ্ধিতে আপনি কী বুঝে ফেলছেন সেটাতো আমি বলতে পারবো না।
আমারে হুমকি দিয়ে লাভ নেই ভাইজান। আমি বিজ্ঞানের ব-ও বুঝি না। কাজেই আপনি মনুষ্য প্রজাতি, নাকি লম্বা লেঙুরবিশিষ্ট কোন প্রাণী সেটা আমার পক্ষে বলাটা একটু দুঃসাধ্যই। বিবর্তনের উল্টোস্রোতে নাও ভাসিয়ে আপনি কোন প্রজাতির বন্দরে নোঙর ফেলেছেন, আমার মনে হয় বন্যা বিবর্তনিয়াই সেটা সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে। এই বিষয়ে সে কী যেন একটা বললোও দেখলাম গতকাল এক মন্তব্যে। তার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে আপনি নাকি কী একটা তুলে পালাবেন টালাবেন বলে সে ভেবেছিল। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
আপনাকে আবার কখন হুমকি দিলাম?! 😕 কি মুশকিল! আমি তো একজন অ-বিজ্ঞানীর করুণ অভিজ্ঞতা থেকে আপনার সম্ভাব্য হেনস্থা এড়ানোর জন্য বরং সৎপরামর্শ দিলাম! নাহ্ কারুর উপকার করার চাইতে যে হাঁ করে ঘুমায় থাকা অনেক ভালো, সেটা আবারও টের পেলাম 🙁
আর, ফরিদ ভাই – নিজ বুদ্ধিতে কী বুঝলাম, বুঝলেন না তো? আচ্ছা, ঠিকাসে – এবার আপনি আপনার বুদ্ধিতে কী আসছিলো যার জন্য আপনি নিজেকে রাবণের সাথে তুলনা করসিলেন, সেটা যদি একটু খোলাসা করতেন ……?
@স্নিগ্ধা,
আরে!! রাবণের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবো কেন? আমার কী দশটা মাথা আছে নাকি? আমি শুধু বন্যারে জিগাইলাম যে অভি কী আমারে রাবণ ঠাউরাইছে নাকি? এইতো। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
বুঝছি, বুঝছি – এখন তো পিসলাবেনই 🙁
সেটাই, কথা নাই বার্তা নাই, লেজে আগুন দাওয়ার প্রসঙ্গে রাবণের কথা তো আসতেই পারে! আর, আমি কিনা এর মধ্যেও প্যাঁচ দেখি! হায়, আমি, হায় ……
@স্নিগ্ধা,
প্যাচ দেখসিস দেখে হায় হায় কইরা মাতম করিস ক্যান? তোর কি নিজের জাতের প্রতি সামান্য কোন শ্রদ্ধা বা দায়িত্ব নাই? এত্তগুলান বছর ধরে একাডেমিয়ায় সমাজবিজ্ঞান নিয়া পড়ার পর এইটা কি বললি? ওই যে সমাজবিজ্ঞান ১০১ এর বইটা খুলে দেখ, আমি তো দেখতেসি সমাজবিজ্ঞানীদের প্রথম তিনটা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ‘প্যাচ লাগানো’টা দুই নম্বরে আছে…
@স্নিগ্ধা, তোর ৪ নম্বর পয়েন্টার শুধু উত্তর দিচ্ছি। কারণ আমার মনে হয় বাকিগুলোতে আমরা মোটামুটিভাবে একমত। একটা উপকার হল আমার, অর্থনৈতিক মুক্তি আর দারিদ্রটা মিলে গেছিল, তোকে প্রশ্ন করার সময়ই আলাদা করতে শুরু করেছিলাম, এখন বাকিটাও পরিষ্কার হল। তোর মত সমাজবিজ্ঞানীদের :guru: সাথে কথা বললে যে ‘মোক্ষলাভ’ হবে সেটা কি আমি আগেই জানতাম না?
হা হা হা হা, এক্কেরে ক্লাসিক, এক্কেরে আসল সমাজবিজ্ঞানীর মত কথা বললি (আর বলবিই না বা কেন? 🙂 )। এই স্টেরিওটাইপিংটা এতটাই ভুল এবং পুরনো যে এটা নিয়ে কথা বলতেও টায়ার্ড লাগে, কিন্তু তাও বলি, ঘুমাইতে ঘুমাইতেই বলি…
আসলে বিজ্ঞানীরা এভাবে কখনোই বলে না ( দুইএকজন যে যান্ত্রিকভাবে কিছু কথা বলে বসে না তা নয়)। কেউ যদি বিজ্ঞানীদের কথা ভুলভাবে ব্যবহার করে ইচ্ছা করে তাহলে কার কি করার আছে! আমি এমন কোন নিউরো সাইকোলজিষ্ট বা নিউরোলজিষ্ট জানি না (তুই জানলে ঠিকানাটা আমারে পাঠাস) যে বলবে, ‘ওহহহহ, ছেলেদের ব্রেইন বড় তাই ছেলেরা এটা করতে পারে, মেয়েদের ব্রেইন ছোট তাই তাদের বুদ্ধি কম, দেখোনা… স্নিগ্ধা বা বন্যাকে দেখে বুঝতেসো না………’।‘ এই পার্থক্যটাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে না দেখা বা অনেকের মত বলা যে, যে তিনি
এটা ‘বলতে’ রাজি নন, অজ্ঞতারই সামিল। এটা তো বাস্তবতা, রক্ষণশীল অংশ এটা নতুন করে বলছে না, বিজ্ঞান ‘বলছে’ বলে বলছে না, তারা কয়েক হাজার বছর এসব ধরে বলে আসছে। বরং আমার মতে এতদিন সমাজবিজ্ঞানীরা শুধু নৈতিকতা বা ‘ফিলিং’ থেকে যে সব কথা বলে এসেছিল বিজ্ঞান আজকে তাদের হাতে সেগুলোকে ডিফেন্ড করার বা সত্য বলে প্রমাণ করার অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা যখন বলে ছেলেদের মস্তিষ্ক বড় কিন্তু মেয়েদের মস্তিষ্কের ঘনত্ব বেশী (দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বিজ্ঞান ছাড়া আর কেউ এই তথ্যগুলো আবিষ্কার করতে পারবে না) এবং মেয়েদের ব্রেইনের একটা নির্দিষ্ট অংশের বিশেষ গঠনের জন্য তারা যোগাযোগ এবং ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজে বেশী ভালো করার যোগ্যতা রাখে এবং অন্যদিকে ছেলেদের মস্তিষ্ক গণিত বা প্রোগ্রামিং এ ভালো কাজ করে, তখন ‘নিকৃষ্ট’ বিজ্ঞানীর দল সমাজবিজ্ঞানীদের কাজই সোজা করে দেয়। প্রাসঙ্গিকভাবে একটা উদাহরণ দেই, অভির সমকামিতা বইটা তে এই পার্থক্যগুলো বলার পর জোর দেওয়ার জন্য আলাদা করে ‘নোট’ দেওয়া হয়েছিল যে পার্থক্যগুলো বৈষম্য মিন করে না। আজকে এই জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞান সঠিক তথ্যটা না দিলে রক্ষণশীলদের দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল তথ্যগুলোই আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়বে একতরফাভাবে এবং শুধু তারই জয়জয়কার চলবে। পার্থক্য যখন আছেই তখন সেটা সম্পর্কে যত ভালোভাবে জানা যাবে ততই ভুলগুলো শুধরাবে। ( অফ দ্য রেকর্ড, আমার কাছে মনে হয়, বাইলজিকাল সাইন্সের সাথে সমাজবিজ্ঞানের এই বিরোধটা বেশ সুস্থ একটা ব্যাপার, এর ফলে দুই পক্ষই সচেতন থাকতে বাধ্য হয়, দুই পক্ষের চরম অবস্থানে থাকা মানুষগুলো তাদের ভাবনাগুলোকে একবারের জায়গায় বারবার ভাবতে বাধ্য হয়। যদিও এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে, দা কুড়াল নিয়ে মারামারি করতে তোরাই বেশী আগায় আসিস, কিন্তু যা আবারও সবাইকে মাফ করে দিলাম ……))
যাইগা ঘুমাই, ঘুমের মধ্যে আবোল তাবোল বক্লাম, বুইজ্ঝা নিস কি বলতে চাই। কি যে আনন্দ লাগে যে তুই আমার ফান্দে পা দিয়া এত্ত বড় একটা উত্তর লিখলি, আমি কিন্তু আসলেই ভাবসিলাম তুই ‘ দিলাম না উত্তর, কি করবি?’ জাতীয় একটা কিছু বলে লেজ তুলে ভেগে যাবি।
@বন্যা আহমেদ, আপনার এবং স্নিগ্ধার খুনসুটিগুলো বেশ মজার।
আমার অজ্ঞতার জন্য একটা ব্যাপারে আমি ক্লিয়ার হতে চাচ্ছি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন “ছেলেদের মস্তিষ্ক বড় কিন্তু মেয়েদের মস্তিষ্কের ঘনত্ব বেশী”, ঠিক আছে, সেটা বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে মাপতে পারেন, কিন্ত
এখানে একটি ব্রেইন ‘যোগাযোগ এবং ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কাজে ভালো’ আর অন্য একটি ব্রেইন ‘গণিত বা প্রোগ্রামিং এ ভালো’, ব্রেইনের এইসব কার্য্যকলাপের মান নির্ধারনের প্রক্রিয়াটা কি? কোন রেফারেন্স যদি আপনার জানা থাকে জানালে বাধিত হবো।
@ব্রাইট স্মাইল্,
কিছু রেফারেন্স আমি দিয়েছিলাম আমার মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা ই-বইয়ে। আমার সমকামিতা বইটিতেও এর কিছু উল্লেখ করেছি। আপনি দেখে নিতে পারেন। কয়েকটি পয়েন্ট উদ্ধৃত করি –
আমি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে গড়পরতা নারী-পুরুষের ব্রেনের কথাই বলেছি – ইভলুশনারী সাইকোলজি বলে যে, ছেলেরা অন এভারেজ স্পেসিফিক বা স্পেশাল কাজের ক্ষেত্রে (সাধারণতঃ) বেশি দক্ষ হয়, মেয়েরা সামগ্রিকভাবে মাল্টিটাস্কিং-এ। আবারও বলছি – গড়পরতা। নিঃসন্দেহে এক্সেপশন খুঁজলে অনেকই পাওয়া যাবে। এখানে কিছু আলোচনা পাবেন এ নিয়ে।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ।
ছেলেদের মস্তিস্কেও কি এই ধরনের কিছু এলাকা থাকে যেটা তাদেরকে বিজ্ঞান ও গনিতে ভালো হওয়ার জন্য ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়?
@বন্যা আহমেদ,
হা হতোস্মি – এই হলো গিয়ে তোর স্টেরিওটাইপিং এ টায়ার্ড হয়ে যাওয়ার নমুনা?! রাফিদা রে, তুই কথা দে তুই কোনদিন তাজা তন্দুরস্ত হবি না, প্লিজ কথা দে!
শোন, “সমাজবিজ্ঞানী”, “গুরু”, “মোক্ষলাভ” – এসব বলে যতই কটুকাটব্য করিস না কেন – এটা হচ্ছে ঠিক যখন লোকজন ‘ওহ, ফেমিনিস্ট!’ বা ‘যতসব ফেমিনিজমের বুলি’ বলে তখন আমাদের যেমন লাগে, সেসব মুদ্রার অপর পিঠ। তবে এটা ঠিক যে ‘বিজ্ঞানী’দের দলে তুই না থাকলে আমি আরও মিষ্টি করে, পলিটিক্যালি কারেক্টলি বলতাম। সেটা ঠিক।
‘বিজ্ঞান’ শব্দটা ভীষণ আকর্ষণীয়। এটা খুব সহজে মানুষের বিশ্বাসকে আকৃষ্ট করে। কোন কিছুকে যখন আমরা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা প্রমাণসহ উপস্থিত করি, তখন খুব সহজেই সেটা আমাদের কগনিটিভ প্রেমিজে জায়গা পায়। এমন না যে কেউ সেটাতে দ্বিমত পোষণ করে না, বা যে কোন ব্যাপারে সব বিজ্ঞানীই একমত হন, কিন্তু যারা বিজ্ঞান নিয়ে স্পেসিফিক্যালি চর্চা করেন না বা যারা আমার মতো ন্যাচারাল সায়েন্সের বাইরের সাধারণ মানুষ – তাদের কাছে ‘বৈজ্ঞানিক’ তত্ত্বের একটা ওজন বা মূল্য আছে। তুই যেমন বললি কেউ যদি বিজ্ঞানীদের কথা ভুলভাবে ব্যবহার করে তাইলে সেখানে তাদের কেন দায় থাকবে – তাদের দায় নাই আমিও মানি – কিন্তু, আমার মতে কথাটা আরেকটু ‘সম্পূর্ণ’ভাবে বললে সেটাকে দরকারমতো শেইপ দেয়াটা আরেকটু কষ্টকর হয়। কোন নিউরোলজিস্ট বা নিউরোসাইন্টিস্টদের চিনতে হবে কেন, এই মুক্তমনার পাতায়ই না বিবর্তনের দোহাই দিয়ে বলা হলো যে ‘হিংসা’ ছাড়া নারীর নির্মাণই সম্পূর্ণ হয় না?! তখন আরেকজন (অভি) এসে বিবর্তনের/বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়েই সেটার অসারতা দেখায় দিলো – কিন্তু, আমার কথাটা হচ্ছে যেহেতু ‘বিজ্ঞান’ শব্দটার বিশ্বাসযোগ্যতা সাধারণ্যে বেশি – আমার মতে এই ফিল্ডের লোকজনের সেই বিষয়ে সচেতন থাকাটা জরুরি।
যতদিন পর্যন্ত সমাজে গণিত কিংবা প্রোগ্রামিংএ ব্যুৎপত্তি অর্জনকে ভাষাবিশারদ হওয়ার চাইতে বেটার কিছু বা সম্মানজনক মনে করা হবে, ততদিন ছেলে আর মেয়েদের ব্রেইনের এই বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যকে মেয়েদের বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে না? আমি তো কোথাও এটা বলি নাই বা কোন সমাজবিজ্ঞানীও বলে নাই (তুই ঠিকানা জানলে আমাকে পাঠায় দিস) যে বিজ্ঞানীরা সব এক্সপেরিমেন্ট বা রিসার্চের ফলাফল গোপন রাখুক যাতে কোন রক্ষণশীল কেউ সেটা কোনভাবে ব্যবহার করতে না পারে!! আমার বক্তব্য হচ্ছে – যেহেতু বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই গবেষণা অনেকদূর আগাইসে, এবং ইতোমধ্যেই বহু এধরনের বিতর্ক হয়ে গেসে, এখন কোন কথা বলার সময় সেটার সম্ভাব্য রিপারকাশন মাথায় রেখে কথাটা ফ্রেইম করা উচিত – এটুকুই।
সেটা যদি নাইই হতো, তাহলে তুই যেমন উল্লেখ করলি, অভিকেও নিশ্চয়ই তার বইতে আলাদা করে নোট দিয়ে সেটা বিশেষভাবে উল্লেখ করে দিতে হতো না?!
দা কুড়াল দিয়ে আমরা মারামারি না করলে, তোর আর আজকে এখানে এসে বিবর্তন নিয়ে মারামারি করা হতো না 🙂
স্নিগ্ধার লেখাটি ছোট হলেও বিশ্লেষণ খুবই ভাল হয়েছে। বিশেষতঃ এই লাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ –
আসলে এই ব্যাপারগুলো অনেক ‘প্রগতিশীল’ বলে কথিত লোকজনও বুঝতে চান না। নারী এবং পুরুষে যে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি জৈববৈজ্ঞানিক বিবর্তনীয় পটভূমিকায় পার্থক্য আছে – সেটাই অনেক নারীবাদীদের অস্বীকার করতে দেখেছি (জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে আমি এখানে হাল্কাভাবে লিখেছিলাম) । তাদের অনেকে ভাবেন, পার্থক্য মানলেই বুঝি সাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। এই ব্লগে আমি এমনো দেখেছি – গড়পরতা পুরুষের শক্তি যে নারীর চেয়ে বেশি সেটা মানতেও অনেকের অনীহা। আসলে রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে সমানাধিকার দেয়া আর জৈবিক পার্থক্যকে অস্বীকার করা এক কথা নয়। পার্থক্য মেনে নিয়েও সমানাধিকারের জন্য লড়াই করা যায়। গণতান্ত্রিক বিশ্বে চাকুরি ক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষায়তনে ধর্মবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি থেকে মুক্তির চেষ্টা, কিংবা যারা পিছিয়ে পড়া তাদের জন্য কোটা কিংবা বাড়তি কিছু অধিকার দেয়া, পঙ্গু কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধিদের জন্য একটু বেশি সুযোগ করে দেয়া – এগুলো দৃষ্টান্ত আমরা চারপাশেই দেখেছি। এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন পার্থক্য মেনে নিয়েই, পার্থক্য উঠিয়ে দিয়ে নয়। স্টিভেন পিঙ্কার যেমন ব্ল্যাঙ্ক স্লেট বইয়ে বলেছেন – ‘Commitment to political equality is not an imperical claim that people are clones’ । আসলে একার পোস্টে সম্যের কথা বলতে গিয়ে ঠিক এই কথাগুলোই বলতে চেয়েছিলাম – বোধ হয় ঠিকমতো বোঝাতে পারি নি।
তবে রাহাত খানের মন্তব্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হল। আমেরিকাতে বসবাসরত কোন নারীর সমস্যা আর বাংলাদেশের গ্রামে বাস করা একজন নারীর সমস্যা বহু ক্ষেত্রেই আলাদা হবে। কাজেই কনটেক্সট অনুযায়ী সমস্যা চিহ্নিত করা খুব জরুরি। আসলে থার্ড ওয়ার্ল্ড ফেমিনিজম, সোশালিস্ট/মার্ক্সিস্ট ফেমিনিজম, লিবারাল ফেমিনিজম, ব্ল্যাক ফেমিনিজম … প্রভৃতি ভাগ তৈরি হয়েছে বোধ হয় সে কারণেই। ইসলামী দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি শরিয়া আইনের বিরুদ্ধে মেয়েদের যুদ্ধ করতে হয়, অতীতে ভারতে মেয়েদের সতীদাহের বিরুদ্ধে কিংবা মহারাস্ট্রে মাতাল স্বামী এবং ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে মেয়েদের যুঝতে হয়েছে, বিহারে আবার মেয়েদের যুদ্ধ করতে হয়েছে সামাজিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সবই নারীবাদী আন্দোলনকে দিয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাত্রা।
স্নিগ্ধাকে ধন্যবাদ মুক্তমনায় লেখা শুরু করার জন্য। ফরিদভাইয়ের অপেক্ষার শেষ হতে দেখে আমি খুশি 🙂
@অভিজিৎদাদা,
“ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে মেয়েদের যুঝতে হয়েছে
:yes:
বাংলাদেশে এই যুদ্ধ (অস্ত্র যুদ্ধ নয় ) কবে হবে ?
@অভিজিৎ,
সেটাই! লেখাটা ছোট হলেও ভালো – এটা বলার জন্য ধন্যবাদ 🙂 তবে, এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা আমিও বলে রাখি। তুমি চিনো কিনা জানি না – মুক্তমনা সদস্য বন্যা আহমেদ – লেখাটা পোস্ট করেই তেনাকে ফোন করে বললাম, “যদিও কিছু ফাঁকফোকর আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে লেখাটা এর চেয়ে বড় করা আমার পক্ষে সম্ভব না “, এর উত্তরে মিষ্টভাষী তিনি বললেন, “এর চাইতে বড় করতে হবে কেন, তোকে কি কেউ word count দিয়ে দিসিলো?!”
এর পর নিশ্চয়ই আমার আর কোন দায় থাকে না??!! 😀
আচ্ছা যে সব পুরুষরা নারীমুক্তির কথা বলে, নারীর সমান অধিকারের কথা বলে তারা আসলে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলে? সেই দৃষ্টিভঙ্গি আসল কোথা থেকে?
একটাই উত্তর, সুশিক্ষা।
যারা আসলে নারীদের উন্নয়নের পথ বন্ধ করে রেখেছে তারা কি কেউ প্রকৃত শিক্ষিত ছিল? বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করলেই কি শিক্ষিত হওয়া যায়?
নারীদের যে মুক্তি দরকার তার পুরুষতন্ত্র নামক একটা বন্দিশালা থেকে এই উপলব্ধিটা তার আসল কোথা থেকে? এক জন পুরুষ কখন অনুভব করে যে তাকে যে পরিমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা নারীকে দেয়া হচ্ছে না, এটা অন্যায়?
একটাই উত্তর, সুশিক্ষা।
মানুষ যখন সুশিক্ষিত হবে তখন কাউকে বোঝাতে হবে না, সে এমনিতেই অন্যজনকে তার প্রাপ্য অধিকার দেবে।
আবারও বলছি, সুশিক্ষা ছাড়া নারীমুক্তি অসম্ভব কল্পনা।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার আগে একটা ব্যাপারে একটু নিশ্চিত হয়ে নিতে চাচ্ছিলাম – ‘সু’শিক্ষা বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?
ডিগ্রী ইত্যাদিকে যে সুশিক্ষার মাপকাঠি হিসেবে ধরছেন না, সেটা তো পরিষ্কার। কিন্তু, ঠিক কোন জিনিষগুলোকে/কোন গুণাবলীকে গোণায় ধরছেন, সেটা কি একটু বিশদে বলবেন?
স্নিগ্ধা,
ধন্যবাদ আপনাকে নারীবাদ বা নারী অধিকার প্রশ্নে একটা সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরার জন্য। আপনার সাথে সহমত জ্ঞাপন করে বলছি যে আপনি যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন তার সবগুলোকেই এ্যড্রেস না করলে সমস্যাটার সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে, নির্দিষ্ট সময়ের বলয়ে নারীদের সমাধিকার নিশ্চিত করতে হলে একটার চেয়ে আরেকটা ইস্যু বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে দিতে পারে। এর জন্য, ‘ওয়ান সাইজ ফিটস ইট অল’ বা ‘ওভার অল’ সমাধান বলে কিছু নেই। সবগুলো ইস্যুকে একসাথে করে বস্তায় বন্দী করে ফেললে সমস্যাটাকে শুধু তত্ত্বীয়ভাবে আঘাত করার সমস্যা থেকে যেতে পারে। আমি বলছি না যে আপনি এই কথাটা বলেছেন, আমিও আপনার মতই নিজের ভাবনাগুলোকে লেখার চেষ্টা করছি। আমার মতে সব ফ্রন্টেই যেমন কাজের প্রয়োজন আছে, ঠিক তেমনভাবেই কোন সমাজে কোন সমস্যাটাকে আগে বা জোরেসোরে আঘাত করা দরকার সেটাও সমাজবিজ্ঞানীদের চিন্তা করে বের করা দরকার ( অবশ্য আমাদের মত দেশগুলোতে কেউ সেটা করবে তা চিন্তা করাও বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়) ।
আজকের এই পুঁজিবাদী পৃথিবীতে দারিদ্রতার মতই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাও একটা অন্যতম বৃহত্তম সমস্যা। এটা যে এত সহজে বা যে কোন ‘একটা সমস্যা’র সমাধানের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যাবে না তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, একেকজন একেভাবে ভাববেন, একেকভাবে এ নিয়ে কাজ করবেন আর সম্মিলিতভাবে সেখান থেকেই আমরা এগিয়ে যাবো।
বিঃ দ্রঃ আমার কম্পিউটার খুব গন্ডোগল করছে, দু’বার রিবুট করে গেল মন্তব্যটা লিখতে লিখতেই। তাড়াতাড়ি যা লিখেছি দিয়ে দিচ্ছি, কিছু বানান ভুল থেকে যেতে পারে।
@রাহাত খান,
আমিও বোধহয় ঠিক একথাটাই বলেছি, বা অন্ততঃ বলার চেষ্টা করেছি। সমস্যাগুলো বা কারণগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত – কিন্তু, কোন একটা বিশেষ সমাজে/পরিপ্রেক্ষিতে এক (একাধিক) কারণ গুরুত্বের দিক থেকে অন্যগুলোর তুলনায় অগ্রাধিকার পাবে।
কিছু তাত্ত্বিক নারীবাদি Third World Feminism বলে যে কনসেপ্টটি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদেরও মত হলো ফেমিনিজম নামের কোন একটা অল-এনকমপ্যাসিং ধারণা দিয়ে সব সমাজের সব মেয়েদের সমস্যা এমনকি বোঝাটাও কষ্টকর, সেই সমস্যা দূর করা তো আরও দূরস্থান। আমেরিকাতে বসবাসরত কোন নারীর সমস্যা আর বাংলাদেশের গ্রামে বাস করা একজন নারীর সমস্যা বহু ক্ষেত্রেই আলাদা হবে। কাজেই কনটেক্সট অনুযায়ী সমস্যা চিহ্নিত করা খুব জরুরি।
আর একটা কথা আমি আমার পোস্টে লিখতে ভুলে গেছিলাম, পরে আলস্যবশত আর সম্পাদনাও করা হয় নি – অনেকেই পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের অবস্থানকে নারীবাদের একটা সূচক ধরে নেন। অনেক সময় শুনি – আমেরিকাতে মেয়েরা এতো ‘এগিয়ে’ থাকার পরও তো এতো রেইপ হয়, পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বৈষম্য হয়, ইত্যদি ইত্যাদি…। এসব দেশে মেয়েরা শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা অন্যান্য আরও কিছু অধিকারের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু তাদের সেই অবস্থানই শেষ কথা নয় বা অভীষ্ট লক্ষ্য নয়। এখনও অনেক কিছুই বাকি আছে।