[আলোচিত বিষয়ঃ স্কুলশিক্ষক, চলচ্চিত্র নায়ক, চোর]

(উৎসর্গঃ মুহাইমীন’কে- উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি সমাজের মন্দ শিক্ষকদের নিয়ে ছড়া লেখার আইডিয়াটা তার দেয়া)


দশটার পিরিয়ডে যাই সাড়ে দশে
গলাখানা ছাফ করি ক্ষণে কেশে কেশে।
চশমার কাঁচ দুটি সদা থাকে ঘোলা
ফ্রেমখানা পিছলায়, বসা নাকে ঢিলা।
ব্ল্যাকবোর্ডে কে বা লেখে? হয়নাতো মর্জি
চকের গুঁড়োয় আমার বাড়ে যে এলার্জি।
হাঁটাহাঁটি ডাক্তারে করেছে বারণ
পড়াই চেয়ারে বসে, সেটাই কারন।
সত্যি কথাটি শুধু জানি মনে আমি
লেখালেখি ব্ল্যাকবোর্ডে বড় আলসেমি।
চেয়ারেতে বসে বই পড়িয়ে শোনাই
ফাঁকে ফাঁকে সুযোগে একটু ঝিমাই।
মন চেলে ছাত্রের নাম ধরে হাঁকি
পড়া দিতে বলে আমি ঘুমে নাক ডাকি।
ঘন্টা পড়লে উঠে ভাঙ্গি আড়মোড়া
বইখানা হাতে আর সাথে বেতজোড়া।
ক্লাস থেকে বেরুতে যে হয়নাকো ‘লেইট’
একটু পরেই আছে কিনা ‘প্রাইভেট’।
স্কুলে পড়াই আমি- শুধু যে তা নামে
পড়াই এমনে যেন, লাগেনা তা কামে।
চাও যদি পাশ হবে, নম্বর বেশী
চলে আসো প্রাইভেটে, পড় খুশী খুশী।
না হলে পরীক্ষাতে চোখে ছানাবড়া
দেখবে প্রশ্ন হাতে নিয়ে তা কি কড়া!
ফেল হলে দুইহাতে কষে পিঠমোড়া
পিটিয়ে করবো সোজা আগা-ছে-গোড়া।
এমনই চালাচ্ছি তো- কাল কাল ধরে
একই সাথে বাড়ীঘর তুলছি যে গড়ে।
একদা গড়তে জাতি নিয়েছিলাম ব্রত
পদতলে মাড়িয়েছি- আদর্শ যত।
নিভিয়ে শিক্ষার আলো, বনে ভক্ষক
ধ্বংসী বিদ্যাপিঠ আমি, স্কুলশিক্ষক।


জন্মেছি কচুয়ায়, জেলা চাঁদপুর
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা আমি সেতো বহুদূর।
আই.এ, বি.এ টেনেটুনে কোনোমতে পাশ
গাঁয়ের সবাই বলে তাতেই সাবাশ।
চুলে আমায় রাহুল কাটে মানায় ভাল
গা’র রঙ দুধে-গুড়ে, নয়কো কালো।
ছ’ফূট লম্বা আমি, দোহারা গড়ন
তার সাথে মানিয়ে যে হাঁটার চলন।
মামুজানে সিনেমাতে ‘এক্সট্রা’ যোগান
মেয়ে সাপ্লাই দিতে এফডিসি যান।
আমি তার সাথে থাকি, ফরমাশ খাটি
চা’র কাপ হাতে নিয়ে পিছু পিছু হাঁটি।
একবার সুযোগ এলো দিতে অডিশন
এক লাফে পেয়ে আমি যাই প্রমোশন।
কতজনে সিনেমায় নিতে আসে চান্স
হিরো আমি বনে যাই- যাই বাইচান্স।
নামখানা পাল্টাই, রেখেছিল দাদাজান
‘রমিজউদ্দিন’ বদলিয়ে- হলাম ‘রমিজ খান’।
অভিনয় খুব সোজা- ‘লিপ্‌’ নাড়ানাড়ি
ক্লোজ্‌ শটে নায়িকার সাথে জড়াজড়ি।
জাগামত ভিলেনের সাথে মারামারি
ছকেবাঁধা হাউ-খাঁউ, সবটাতো পারি।
গাড়ী-বাড়ী সবই হলো, রাতে চাই মেয়ে
প্রযোজক শালা শোয়- নায়িকারে নিয়ে।
স্যুট-বুট পরি আমি, মডার্ণ- আল্ট্রা।
ভাগ্যে আমার রাতে জোটে ‘এক্সট্রা’।
পর্দায় গান গাই, তবু নইতো গায়ক
আমি এক লম্পট, চলচ্চিত্রের নায়ক।


দিনখানা গোটাটাই থেকেছি উপোষ
তার উপর বউ ছিল বেজায় নাখোশ।
মেয়েটা যে ভূখা ছিল আজ সারাদিন
ঘরেতে রান্না নেই পুরো দুইদিন।
কাম্‌লা’র কাজ করি একটা সিজন
ঘরে ঘরে যখন ওঠে ফসলী ফলন।
বাকিটা বসেই থাকি, বিড়ি দিই টান
স্বভাবে দোষটা আছে- আছে হাতটান।
কাজ পেলে কাজ করি খাঁটিয়ে গতর
অন্যথা সিঁধ কাটি- কাটি রাতভর।
তুমি খাও ভরপেট ছেলেমেয়ে নিয়ে
খিঁদেপেটে সোনা মোর যায়যে ঘুমিয়ে।
বাবা হয়ে চোখেতে তা সইতে না পারি
সুযোগটি পেলে তাই পকেট যে মারি।
কতবার ধরা পড়ি, কপালটা পোড়া
পিটিয়ে তক্তা বানায়, বেঁধে পিঠমোড়া।
পাথরেরও প্রাণ আছে, আছে মায়া-দয়া
পাবলিকে মারে যেন আমি চারপায়া।
কষে মারে নিঃশেষে, ধড়ে রেখে জান
তবু আমি বেঁচে থাকি- ‘কই মাছের প্রাণ’।
ছাড়া পেলে ফের শুরু, কি আছে উপায়?
খাবার যোগানো চাই- আমি নিরুপায়।
ঘুম থাকি দিনে, জাগি- রাত থেকে ভোর
বাড়ী বাড়ী চুরি করি, আমি এক চোর।

আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ এপ্রিল, ২০১০