এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়া- শেষ পর্ব
[আলোচিত বিষয়ঃ আবারও রাজাকার, সামরিক অফিসার, মাস্তান, রাজনীতিবিদ]
১
চেহারাটা নিরীহ, ছাঁটা গোঁফ-দাড়ি
টুপী-মুপীর খুব একটা ধার না যে ধারী;
পাঞ্জাবী, জোব্বা এ্যাভয়েড করি
প্যান্ট-শার্টই বরাবর আমি যে পরি।
বিলকুল নই আমি টিপিক্যাল হুজুর
দুনিয়ার লাইনে ওঠা বহুদূর;
প্রশাসন, ব্যাংক কিম্বা সচিবালয়
কোন্ পেশা বাকি আছে? যেথা আমি নাই!
নামাজটি কম পড়ি, রোজাতে দুর্বল
ঈমানের বেলায় কিন্তু বেজায় সবল।
কখনও ‘ভোকাল’ আমি, কখনও চুপচাপ
শিখিনি শিথিল হতে, করিনাকো মাফ।
জাতীয়তাবাদী আমি কভু কিন্তু নই
‘ব্লেন্ড’ হওয়ার সুবিধা, ফায়দাটি লই।
পাই যদি সুযোগ আমি করতে যে ‘কিক’–
তবে প্রথমেই বিএনপি, পরে আওয়ামীলীগ।
চোখ বুজে ফলো করি দলের কমান্ড
‘ফুল্ফিল্’ করি যত ওনাদের ডিমান্ড।
চাইনা ব্যাখ্যা আমি- কি ভুল, কি ঠিক
দোহাইটা ধর্মের, যা বলে সঠিক।
কে বলে একাত্তরে করেছিটা ভুল?
কোন্ শালা দিতে বলে আমাকে মাশুল?
ক্ষমতায় কোনোভাবে যদি যেতে পারি
ঘরে ঘরে আটকাবো আগে দুই নারী।
ইসলামী জোশে দেব জিহাদী ভাষন
তার সাথে কায়েম হবে জামাতী শাষন।
হাত-পা’র রগ কেটে কবচিবো জান
মডেলটি সামনেতে আছে তালিবান।
জমিনে দাঁড়াবো আমি, করে ছারখার
কাফের, মুনাফেক যত মেরে একাকার।
ভয় তুমি কেন পাও? করো হাহাকার?
চোখ বুজে বিশ্বাসো; আছি, আমি ‘রাজাকার’।
২
বিয়ে-শাদীর মার্কেটে ভালই চাহিদা
‘আর্লি এষ্ট্যাব্লিশ্মেন্ট’ তাতে বাড়তি সুবিধা।
অন্যরা ভার্সিটির সেশন জ্যামে
ডিগ্রীটা আমি পাই চিকনে-চামে।
বন্ধুরা পড়ে-লেখে, যেতে হবে দূর
দু’বছরে ট্রেনিং শেষ, কিযে তা মধুর!
পাশ করে সবে যখন চাকরি খোঁজে
অফিসার তখন আমি চোখটি বুজে।
চাকরির বাজারে আগুন জ্বালা
পাত্রী আমার তখন খোঁজার পালা।
বেতনটি কম নয়, সাথে বাড়তি রেশন
টাকা পাই লাখে-লাখ, গেলে ইউ.এন. মিশন।
পোশাকেতে ফিটফাট, ব্যস্ত ভাবখানা
কাজটি যে কি করি, নিজেই জানিনা।
তুচ্ছ সবাইকে ভাবি, করিনা মূল্যজ্ঞান
স্বগোত্রীয় ছাড়া কাউকে দিইনা সন্মান।
মেয়েদের পেছনে যে ঘুরি বারংবার
গোপনে চালাই সাথে- ‘ভাবী কালচার’।
উঁচু মাথা, সোজা হাঁটি- বুট পায়ে মাটিতে
নিন্দুকেরা বলে আমার ব্রেইন নাকি হাঁটুতে।
করতে কি পরিচয় পেরেছি জাহির?
অফিসার আমি এক- সামরিক বাহিনীর।
৩
বস্তির এপাশটা আমারই দখলে
ওপাশটা কানকাটা শুকুরের কবলে।
নীলক্ষেতের আধাআধি আমার আওতা
সাধ্যি কি কারো আছে দেয় ভাওতা?
কাঁটাবন পার হলে পিচ্চি কামাল
পুরোটা সে একা নেয় ওঠে যত ‘মাল’।
আমি পাই সিকি ভাগ, জগলুর ‘বলাকা’
গালকাটা সুমইন্যা খায় পুরোটা ‘মল্লিকা’।
ভাগ করা আছে সবই, যার যার এলাকা
বুঝাপড়া মজবুত, ব্যবস্থা সব পাকা।
যার যার এরিয়াতে চলে চাঁদাবাজী
আপোষে শেয়ার করি, সেভাবেই রাজী।
পুলিশকে ভয় নেই, ভাগ নিয়ে সরে
ঝামেলা করলে বেশী, ধরি যে ওপরে।
লাইনটা ঠিকঠাক আছে বহুদূর
ফোন এলে ছেড়ে দেয় করে সুড়সুড়।
থানা-জেল-হাজতে যাই আর আসি
‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলতে বড় ভালবাসি।
এলাকার ত্রাস আমি, করোনা বিভ্রাট
মাস্তান আমি এক, মুকুটহীন সম্রাট।
৪
টাকা-কড়ি ঢের আছে, যা নেই- তা ‘নীতি’
সোৎসাহে ফুলটাইম করি রাজনীতি।
এলাকায় আছে নাম, লোকজনে চেনে
সালিশ-ফালিশে সবাই কথাখানা মানে।
বিপদে-আপদে শোনাই কথা মমতার
মনেতে লুকোনো আছে, লোভ ক্ষমতার।
সদস্য হয়ে দলে ঢুকি সুঁচ হয়ে
এর কথা ওকে দিই সদাই লাগিয়ে।
দলাদলি, কোন্দলে সুযোগ আসে খাঁসা
আমাকেই ‘চুজ্’ করে- হাইকমান্ডের মিমাংসা।
দল করি ফাও নয়, লক্ষ্য ঠিক অতি
সাধারন সম্পাদক কিম্বা সহ-সভাপতি।
পেয়ে যাই পদখানা খাঁটিয়ে যে ব্রেইন
টার্গেট এর পরে- উপজেলা চেয়ারম্যান।
সিঁড়ি বাই তরতর- একে একে পদ
সহজেই পৌঁছে যাই- স্বপ্নের সংসদ।
এরই নাম উত্থান- কারো হার, কারো জিত
উঠে আসি সফল আমি- এক ‘রাজনীতিবিদ’।
[বিশেষ নোটঃ আমার রচিত এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়াগুলোয় আলোচিত পেশাজীবীদের মেইন্ষ্ট্রিম মন্দ মানুষগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই শুধু চিত্রিত হয়েছে। একইসাথে একথা অবশ্যই অনস্বীকার্য যে সৎ, নীতিবান এবং ভাল মানুষ সব পেশাতেই রয়েছেন। (মাস্তানী এবং রাজাকারি কোনো পেশা নয়)]
আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ এপ্রিল, ২০১০
টাকা-কড়ি ঢের আছে, যা নেই- তা ‘নীতি’
সোৎসাহে ফুলটাইম করি রাজনীতি।
__________________________
চমতকার দুটো লাইন
কম্প্লিমেন্টস্ এবং উৎসাহজনক মন্তব্যের জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ। আমি কোনো ছড়াকার নই। তবুও সমাজের বিভিন্ন বিষয়গুলোকে ছড়ার মাধ্যমে আমার মত করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পারিবারিক ও পেশাগত কারনে লেখালেখির জন্যে বলতে গেলে একদমই সময় পাইনে। প্রবন্ধ লিখতে গেলে অনেক সময় দেয়া লাগে। সেই তুলনায় ছড়ার মাধ্যমে অনেক বক্তব্যকে খুব অল্পের মধ্যেই ফুঁটিয়ে তোলা যায়। অনেকটা সে কারনেই আমার এ ছড়া লেখার সূচনা। ভেবেছিলাম এ পর্বেই শেষ করে দেবো। কিন্তু আপনাদের উৎসাহে অদূর ভবিষ্যতে আরো কিছু কিছু বিষয়ে ছড়া লিখবো বলে আশা করছি। সবাইকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার ছড়াগুলো খুব শানিত। মনে হচ্ছে যেন সত্যিকার বাংলাদেশ দেখছি।
খুব সুন্দর করে একদম আমার মনের কথাগুলো বলেছেন। আমিও এরকম কিছু একটা করার ধান্ধায় ছিলাম আপনি আমার পথটি আরও সহজ করে দিলেন , ভবিষ্যতে আমিও এ নিয়ে লিখ।
ধন্যবাদ।
আপনাকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। :rose2: :rose2: :rose2:
খুবই ভাল লাগল, চারটি লেখাই। হাল্কা চালে অনেক গভীর কথা – বলা সহজ নয়।
আপনি এমন ভাবে সত্য কথা তুলে ধরেছে ,যা মনকে ভরিয়ে দিল। আরো লিখুন ।