ফসিলবিদ্যার মত অত্যন্ত প্রাচীন শাখাটিকে এভু ডেভু কিভাবে নতুন আঙ্গিকে রাঙ্গিয়ে তুলছে তা বোঝার জন্য প্রথমে একটা মাছের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। নগন্য এক মাছ নিয়ে গল্প বলতে যাচ্ছি শুনে পাঠকেরা নাক সিঁটকাবেন না যেন। এই মাছ কিন্তু যে সে মাছ নয়, সাড়ে ৩৭ কোটি বছর আগে মাটিতে হেটে বেড়ানো মাছ! হ্যা, ঠিকই পড়েছেন, এই সেই বিখ্যাত টিকট্যালিক যার বৈশিষ্ট্যগুলো মাছের পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসার সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণের’ সাক্ষ্য বহন করে। বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাসে সে যুগটা এক বিশেষ যুগ, মানব প্রজাতির বিবর্তনের ইতিহাসেও কিন্তু এর গুরুত্ব কম নয়। কারণ মাছ থেকেই বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় উদ্ভব ঘটেছে মাটির বুকে হেটে চলে ফিরে বেড়ানো সকল চতুষ্পদী বা দ্বিপদী প্রাণীর। লুসি কিংবা আর্ডির ফসিল যেমন আমাদের অতীতের পূর্বপুরুষদের প্রাইমেট জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তেমনি টিকট্যালিকের ফসিল আমাদেরকে নিয়ে যায় সুদূর অতীতের সেই সময়টাতে যখন আমাদের পূর্বপুরুষেরা পানিতে বিচরণ করতো। এই ফসিলগুলো যেন এক একটা টাইম বোমা, আমাদের কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের স্ন্যাপসট ধারণ করে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে।
চলুন এক কাজ করি, প্রথমে টিকট্যলিকের একটা সাক্ষাৎকার নেই। হ্যা, ঠিকই ধরেছেন, টিকট্যলিকের ফসিল কেন, কোন মাছেরই কথা বলার কথা নয়। সাক্ষাৎকারটা নিতান্তই কাল্পনিক, যদি সে কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো এভাবেই সে নিজের পরিচয় দিত :
প্রশ্নঃ আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, টিকট্যালিক নামটা কেমন লাগছে?
আমার নাম টিকট্যালিক, ২০০৪ সালে যার ফসিল আবিষ্কার করে আপনাদের মানুষ প্রজাতিটি ভীষণভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। নাহ, এই টিকট্যালিক নামটা আমার নিজের নাম নয়, আপনাদেরই দেওয়া নাম। অদ্ভুত এই নামটা শুনে প্রথমে বেশ বিরক্ত হলেও, পরে ভাবলাম, থাক না, কী আছে? উত্তর আমেরিকার এক সময়ের নীপিড়িত আদিবাসীদের ভাষা থেকে নামটা নেওয়া হয়েছে[৭], সেই শ্রদ্ধাবোধ থেকেই শেষ পর্যন্ত নামটা মেনে নিলাম। আমার জন্ম এবং মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৩৭ কোটি বছর আগে, সে সময় পানিতে বিভিন্ন রকমের ভয়ঙ্কর সব জলজ প্রানীর জয় জয়াকার থাকলেও মাটিতে কিন্তু কিছু স্থলজ উদ্ভিদ আর পতংগ ছাড়া আর কোন জীবের বসবাস ছিল না। শুনলাম পানির সেই ভয়ানক দৈত্যদের বেশিরভাগেরই কোন অস্তিত্ব নেই, অথচ কি ভয়ংকর এক সময় ছিল তখন! আমার দৈর্ঘ্য মাত্র ৭ ফুটের মত, এখন আমাকে বেশ বড় মনে হলেও সে সময় কিন্তু আমি বেশ ছোট খাটোই ছিলাম। আমার মত পানির কিছু মাছ তখন ডাঙ্গায় বিচরণ করতে সক্ষম হয়েছিল বলেই হয়তো বেঁচে গিয়েছিল। না হলে সেই ষোল ফুটি, বিশ ফুটি ভয়ানক এবং হিংস্র মাছগুলোর খাদ্য হওয়া ছাড়া মনে হয় আমাদের আর কোন গতি থাকতো না।
প্রশ্নঃ আপনাকে অনেকেই মধ্যবর্তী ফসিল বলছে, আপনি এ সম্পর্কে কি বলবেন?
এই একটা ব্যাপার নিয়ে আমার মনটা বেশ খারাপ হয়ে আছে। মধ্যবর্তী ফসিল আবার কি কথা? মধ্যবর্তী প্রাণী বলে কি কিছু আছে না থাকার কথা? এই কথাটি খুবই বিভ্রান্তিকর। ধরুন আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পরে আপনাদের প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে অন্য আরেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটলো। তার অর্থ কি এই যে, আজকের মানুষ প্রজাতিটি, অর্থাৎ, আপনারা আসলে আপনাদের পূর্বপুরুষ (মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীর সাধারণ পূর্বপুরুষ)কোন নরবানর আর সেই নতুন প্রজাতির একটি মধ্যবর্তী রূপ? আপনারা কি নিজেদের মধ্যবর্তী কোন প্রাণী বলে ভাবতে পারেন? তাহলে তো সেই আদিম এক কোষী সাধারণ পূর্বপুরুষ ছাড়া বাকী সবাই কারও না কারও মধ্যবর্তী রূপ! সাড়ে সাইত্রিশ কোটি বছর আগে আমার প্রজাতিটি, আপনাদের মতই, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রজাতি ছিল। আমাদের হাজার বছর আগে বা পরে বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কোন প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছিল বা ঘটবে তা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথাই ছিল না। মিসিং লিঙ্ক কথাটাও একটু বিভ্রান্তকর। এ পর্যন্ত তো আপনারা মাছ আর চারপায়ী প্রাণীর মাঝামাঝি বিভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আরও অনেক প্রাণী আবিষ্কার করেছেন, ভবিষ্যতে হয়তো আরও হবে, তাই বলে তো তারা কেউই মধ্যবর্তী ফসিল বা মিসিং লিঙ্ক হয়ে যাচ্ছে না।
ছবিঃ আমরা এখন য আধুনিক মাছ দেখি তাদের বেশীরভাগই ছড়ানো পাখা বিশিষ্ট মাছের উত্তরসূরী যাদের রে ফিনড মাছ বলে অভিহিত করা হয়। কোলাকান্থ, লাংফিশ, টিকট্যালিক এরা উভচর এবং মাছের মধ্যবর্তী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে (সৌজন্য এখানে)
প্রশ্নঃ’ একদিকে পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষই এখনও বিবর্তনে বিশ্বাস করে না, আবার অন্যদিকে আমরা এখনও আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসটা সম্পূর্ণভাবে জানি না। ভূতাত্ব্বিক সময়ের হিসেবে আপনার ফসিলের বয়স তো নিতান্তই কম নয়, এ ব্যাপারটাতে আপনার অভিমত জানতে ইচ্ছে করছে।
ভূতাত্ত্বিক সময়ের বিচারে ৩৭ কোটি বছর হয়তো তেমন কিছু না, আমার মত ফসিলে পরিণত হয়ে ভুত্বকের গভীরে চ্যাপ্টা হয়ে থাকার জন্যও হয়তো ৩৭ কোটি তেমন বেশী সময় নয়, কিন্তু এই পৃথিবীর যে কোন প্রাণীর জন্য কোটি কোটি বছরের পরিধি কল্পনা করাও কিন্তু একটা দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। সেদিনের পৃথিবীতে বসে আপনাদের মত মানুষ নামক একটা প্রজাতি যে পৃথিবীর বুকে কখনও ঘুরে বেড়াবে সেটা কল্পনা করা শুধু দুঃসাধ্য নয় একরকম অসম্ভবই ছিল। কিন্তু তার চেয়েও বেশী দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল কল্পনা করা যে, পৃথিবীর বুকে একদিন এমন এক প্রজাতির উদ্ভব ঘটবে যার বুদ্ধিমত্তা এমন এক পর্যায়ে যাবে যে সে তা দিয়ে নিজের অস্তিত্ব, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষৎ সম্পর্কে এত কিছু ভাবতে সক্ষম হবে! আপনারা যে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে এতখানি সচেতন তার ফলাফল হিসেবেই মানুষ মনে হয় এইসব সৃষ্টিতত্ত্ব বানিয়েছে – সময় তো লাগবেই সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে, ! আপনাদের প্রজাতির জ্ঞান যত বাড়বে ততই আপনারা এক সময়ের অলৌকিক কল্পণাপ্রসূত সব ব্যখ্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হবেন।
আপনাদের প্রজাতিটির অস্তিত্ব তো আসলে খুব বেশী দিনের নয়, মাত্র দেড়-দুই লাখ বছরের ব্যাপার, আর আপনাদের এই তথাকথিত সভ্যতা তো আরও অল্পদিনের, মাত্র কয়েক হাজার বছরের। এত অধৈর্য হওয়ার কি আছে? আপনাদের বিজ্ঞান আজকে যে গতিতে যাচ্ছে, কয়েক দশকের মধ্যেই হয়তো আপনারা অতীতের সব কিছুই জেনে যাবেন। এব্যাপারে আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইলো।
টিকট্যলিকের সাক্ষাৎকারটা না হয় কাল্পনিক, কিন্তু তার ফসিলের আবিষ্কারক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ফসিলবিদ ডঃ নীল সুবিনের বক্তব্য জানার জন্য তো আর আমাদের কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার কোন দরকার নেই। তিনি তার লেখা ‘ইয়োর ইনার ফিস’ বইটিতে, বিভিন্ন পত্রিকার সাথে সাক্ষাতকারে এবং বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখায় তার বক্তব্যগুলো তুলে ধরেছেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে।
ডঃ সুবিন বিবর্তনের মৌলিক ধারণাটির উপর ভিত্তি করেই দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে তার অনুসন্ধান চালিয়ে গেছেন। ডারউইনের দেওয়া বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী সব জীবই কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত – মানুষ এসেছে বানর জাতীর স্তন্যপায়ী প্রাইমেটদের থেকে, পাখীর বিবর্তন ঘটেছে ডাইনোসর থেকে, সরীসৃপেরা এসেছে উভচর প্রানী থেকে আবার উভচর প্রানীর উৎপত্তি ঘটেছে মাছ থেকে……। অর্থাৎ, এভাবে পৃথিবীর সকল জীবের মেলবন্ধনের ধারাবাহিতায় পিছাতে থাকলে আমরা একসময় পৌঁছে যাবো সেই আদি এককোষী সাধারণ পূর্বপুরুষে। ডারউইনের প্রস্তাবিত বহু গুরুত্বপূর্ণ অনুকল্পের মধ্যে এটিই বোধ হয় সবচেয়ে রোমাঞ্চকর! আজ দেড় শ’ বছরে আবিষ্কৃত কোটি কোটি ফসিল রেকর্ড এবং জেনেটিক্সের আলোয় আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পেয়েছি যে ডারউইনের দেওয়া অনুকল্পটি আসলে সঠিক ছিল। সকল জীবে যে বিবর্তন ঘটছে এবং বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এক প্রজাতি থেকে যে আরেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটে চলেছে এটা আর কোন অনুকল্প নয়, সার্বজনীনভাবে গৃহীত একটি বৈজ্ঞানিক সত্য বা ফ্যাক্ট। আর এর উপর ভিত্তি করেই নীল সুবিন তার গবেষণার তাত্ত্বিক ভিত্তিটি তৈরি করেন –
ডারউইন যদি সঠিক হয়ে থাকেন, বিবর্তনতত্ত্ব যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে কোন এক সময় পানির মাছ থেকেই ডাঙ্গার প্রাণীদের রূপান্তর ঘটতে শুরু করেছিল। আমরা যদি অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে কখনও না কখনও এমন কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাবো যাদের মধ্যে মাছ এবং উভচরের মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান ছিল। কোন না কোন এক সময় মাছের পাখনা থেকে উভচর প্রাণীর পায়ের বিবর্তন ঘটেছিল। বিবর্তন যেহেতু সাধারণত ধীর গতিতে ঘটে নির্দিষ্ট একটা সময় জুড়ে এমন কিছু মাছের ফসিল অবশ্যই পাওয়া যাবে যাদের মধ্যে পাখনা এবং পায়ের মধ্যবর্তী গঠন দেখা যাচ্ছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট সময় এবং জায়গাটা কখন এবং কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? ফসিল রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সাড়ে ৩৬ কোটি বছর আগে পায়ের উদ্ভব ঘটে গেছে। তাহলে নিশ্চয়ই তার ঠিক আগের কয়েক লক্ষ বা কোটি বছরে এই রূপান্তর ঘটে থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে দু’টিঃ
১) ঠিক কখন এই রূপান্তর ঘটতে শুরু করে? আর
২) এই রূপান্তর ঘটলো কিভাবে?
টিকট্যলিকের ফসিল আবিষ্কারের মাধ্যমে তারা প্রথম প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন। ফসিলবিদেরা আজকে প্রায় দেড় শ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে এভাবেই বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ প্রমাণ করে আসছেন।
অভিযানের শুরুতে অনেক বিচার বিশ্লেষণের পরে প্রফেসর সুবিন এবং তার দল সিধান্ত নেন যে, তারা কানাডার উত্তর মেরু অঞ্চলে এলস্মিয়ার দ্বীপে অনুসন্ধান শুরু করবেন। অনেকটা যেন খড়ের গাঁদার মধ্যে সুই খুঁজে বের করার মতই ব্যাপারটা। আজ পর্যন্ত কোটি কোটি ফসিল আবিষ্কার হলেও কাজটা কিন্তু খুব সোজা নয়, ফসিলবিদেরা বছরের পর বছর ধরে নিজেদের জীবন বাজি রেখে এধরণের আবিষ্কারগুলো করেন। নীল সুবিনের দলও কিন্তু এর ব্যাতিক্রম নন। একসময় আমাজন নদীর অববাহিকার মত চির সবুজ থাকেলেও আজকে এই জায়গাটি গাছপালাহীন অসহনীয়রকম ঠান্ডা মেরু অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। হাজার মাইলের মধ্যে কোন মানববসতি নেই কিন্তু হিংস্র ভালুকের দেখা মিলতে পারে যে কোন সময়। ছয় বছর ধরে তিন তিনটা ব্যর্থ এবং ব্যয়বহুল অভিযানের পর তারা একরকম আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপরও শেষ বারের মত সেখানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ২০০৪ সালে। আর সেখানেই তারা সন্ধান পান টিকট্যালিকের [৬]!
ছবিঃ টিকট্যালিকের ফসিল এবং কল্পিত পূর্ণ দেহের ছবি (সৌজন্য এখানে)।
সাড়ে সাইত্রিশ কোটি বছরের পুরোনো ভূতাত্বিক স্তরে ফ্ল্যাট মাথা বিশিষ্ট এক মাছের ফসিলের অংশ বিশেষ দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন যে বছরের পর বছর ধরে তারা যা খুঁজছেন শেষ পর্যন্ত তারই সন্ধান পাওয়া গেছে! পানির মাছ এবং ডাঙ্গায় উঠে আসা প্রথম প্রাণীদের মধ্যে কতগুলো বড় পার্থক্য আছে – মাছের মাথা কোন্ বা মোচাকৃতি বিশিষ্ট যার দু’পাশে চোখ থাকে, আঁশ আছে, পাখনা আছে, কিন্তু তাদের কোন গলা নেই; আর ডাঙ্গার আদি প্রাণীদের মাথা ছিল ফ্ল্যাট, চোখ দু’টি ছিল উপরে আর সেই সাথে ছিল গলা, এবং আঙ্গুল, কব্জি এবং গোড়ালীসমৃদ্ধ হাত ও পায়ের অস্তিত্ব। কিন্তু এই টিকট্যালিকের মধ্যে যেন এই দু’দলের প্রাণীদের সব বৈশিষ্ট্যই মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে!
মাছের মত এর যেমন আশ আছে, পাখনা বা ডানা আছে, তেমনি আবার আদি-ডাঙ্গার প্রাণীর মত আছে ফ্ল্যাট মাথা, দুপাশে চোখ। মাছের কোন গলা নেই তাদের ঘাড়ের হাড় মাছের খুলির সাথে যুক্ত থাকে , কিন্তু টিকট্যালিকের ফসিলে পরিষ্কারভাবে গলার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। নীল সুবিনের গবেষণা দল যখন টিকট্যালিকের পাখার ভিতরের গঠনের দু’পাশের দিকে নজর দিলেন তখন শুরু হল আরও বিস্মিত হওয়ার পালা। পাখনার জালের মধ্যে মাছের পাখনার ভিতরের হাড় নয় বরং পরিষ্কারভাবে আমাদের হাতের মত হাড়ের গড়ন দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, বাইরে থেকে দেখতে মাছের পাখনার জালের মত হলে কি হবে, টিকট্যালিকের পাখনা আংশিক হাত আর আংশিক পাখনার রূপ ধারণ করেছে। তার মধ্যে ইতোমধ্যেই হাতের কব্জির এবং কনুই এরও অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। এতদিন ধারণা করা হতো পানি থেকে মাটিতে পরিপূর্ণ অভিযোজনের পরেই শুধুমাত্র কব্জির মত এত জটিল গঠনের বিবর্তন ঘটেছিল [4]। সেই ধারণাকেও ভুল প্রমাণ করে দিল টিকট্যালিক। অর্থাৎ, নিজের শরীরের উপর ভর দিয়ে ডাঙ্গায় মাথা উঁচু করে বুকডন দেওয়ার মত ক্ষমতাও ছিল তার।
ছবিঃ টিকট্যালিকের পাখার ভিতরে মাছের পাখার জাল নয় বরং চতুষ্পদী প্রাণীর হাড়ের গঠন দেখানো হয়েছে [4]।
ডারউইনের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে করা অনুকল্প থেকে আবারও ভূত্বকের সঠিক স্তরে, সঠিক সময়ের পরিধিতে, দুই রকমের প্রজাতির মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাণীর ফসিল পাওয়া গেল। ফসিলবিদেরা বহুদিন ধরেই এভাবেই প্রাণের বিবর্তনের অগুন্তি সাক্ষী দিয়ে আসছেন।
আমাদের প্রথম প্রশ্নটার উত্তর তো পাওয়া গেল টিকট্যালিকের আবিষ্কারের মাধ্যমে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নটার উত্তর কিভাবে দেওয়া হবে? বিবর্তনের ধারায় কখন কোন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে তা না হয় জানলাম, কিন্তু এক প্রজাতি থেকে আরেক তৈরির জন্য, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যে বড় বড় রূপান্তরগুলোর প্রয়োজন হয় সেগুলো ঘটছে কিভাবে? গ্যালাপেগাস দ্বীপের ফিঙ্গেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ঠোঁটের আকৃতির বিবর্তন ঘটা এক কথা কিন্তু পা-হীন পাখনাওয়ালা পানিতে সাঁতড়ে বেড়ানো মাছ থেকে চার পা বিশিষ্ট ডাঙ্গায় হেটে চলে বেড়ানো জীবের বিবর্তন ঘটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!
আজকের আধুনিক বিবর্তনবিদ্যার জনক হিসেবে ডারউইনের নামই বলা হলেও তিনি কিন্তু প্রথম বিবর্তনের ধারণাটি প্রবর্তন করেননি। তার আগে অনেকেই বিবর্তনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের কথাগুলো ঘাটে পানি পায়নি। বিবর্তনবিদ্যায় কয়েকটি মৌলিক অনুকল্প হাজির করেছিলেন ডারউইন, যা তার আগে আর কেউ পরিষ্কারভাবে বলতে পারেননি। তার দেয়া তত্ত্বকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক প্যারাডাইম শিফট হিসেবেই গন্য করা হয়ে থাকে। আমরা জানি যে তিনিই প্রথম বিবর্তন কিভাবে ঘটতে পারে তার ব্যখ্যা দিয়েছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। শুধু তাইই নয়, তিনি জীবের মধ্যে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর কথা বলেই ক্ষান্ত দেননি। তার সাথে সাথে আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন অলৌকিকতার ছোঁয়া ছাড়া নিতান্ত প্রাকৃতিক উপায়ে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভবের সেই ‘মহা বিতর্কিত’ ধারণাটিও।
ফসিল রেকর্ডগুলো খুব পরিষ্কারভাবে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভবের সাক্ষী দিচ্ছে সেটা ঠিক, আবার জীবের জেনেটিক রেকর্ড থেকেও যে নতুন নতুন প্রজাতি তৈরির সুষ্পষ্ট নিদর্শনা পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়েও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু এত বড় বড় রূপান্তরগুলো ঘটার পিছনে ঠিক কোন পদ্ধতি কাজ করছে বা করেছে তা বলতে না পারলে তো বিবর্তনবাদের গোড়ায় পৌঁছানো যাচ্ছে না, গল্পের অর্ধেকটাই যেন বাদ পড়ে যাচ্ছে! দেড়’ শ বছর আগে ডারউইন যখন বিবর্তনের ধারণাটি প্রস্তাব করেন তখন বিজ্ঞানীদের জিন বা বংশগতি সম্পর্কেই কোন জ্ঞানই ছিল না। আর সেখানে, নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভবের জন্য যে ‘বিশাল’ জৈবিক বা বংশগতিক রূপান্তর বা ট্র্যান্সফরমেশনের দরকার হয় তা নিয়ে ধারণা থাকার প্রশ্নটাই তো এখানে অবান্তর।
কিন্তু অন্যান্য অনেক বিষয়ের মত এই দুর্বোধ্য বিষয়টা নিয়েও ডারউইন এবং টি এইচ হাক্সলি তাদের মতামত দিতে পিছপা হননি। তারা তখনই সন্দেহ করেছিলেন যে, ভ্রূণতত্ত্বের ভিতরেই এর উত্তর লুকিয়ে থাকতে থাকতে পারে এর উত্তর। ডারউইন তার ‘অরিজিন অফ স্পিশিজ’ (১৮৫৯) এবং ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান’ (১৮৭১) বইএ এবং হাক্সলি তার ‘এভিডেন্স আ্যজ টু ম্যান’স প্লেস ইন নেচার’ (১৮৬৩) বইতে বিবর্তনের অকাট্য সাক্ষী হিসেবে ভ্রূণতত্ত্বকে হাজির করেছিলেন [১]। সেই সাথে এও বলেছিলেন যে মানুষকে বিবর্তনের ধারায় বাকি জীবকুলের সাথে একই কাতারে দাঁড় করাতে হলে ভ্রূণতত্ত্বরই দ্বারস্থ হতে হবে[১]। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আরও অনেক অনুকল্পের মতই তাদের এই অনুকল্পও আজ সঠিক বলে প্রমাণিত হতে চলেছে!
কিন্তু অনুমান করা সহজ হলেও জীববিজ্ঞানকে এখানে আসতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহুদিন। ভ্রূণতত্ত্বের পুরো ব্যাপারটাই এতদিন আমাদের সামনে যেন সমস্যার এক মহা-দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। টেলিস্কোপের আবিষ্কার যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লবের সূচনা করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে গত কয়েক দশক ধরে ক্লোনিং, জিন লেভেলে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার অগ্রগতির ফলেই আম্রা এভু ডেভুর মত একটা বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পেরেছি। অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ভ্রূণের মধ্যে কোন গঠন তৈরি হওয়ার অনেক আগেই তার রাসায়নিক পরিবর্তনগুলোকে চিহ্নিত করতে পারার উপায়গুলো আমাদের সামনে ভ্রূণতত্ত্বের বদ্ধ দুয়ারটাকে খুলে দিতে সাহায্য করেছে।
আমাদের জিনোমের মাত্র শতকরা ১.৫ ভাগ ডিএনএ প্রোটিন সংকেতাবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত, অর্থাৎ মাত্র দেড়ভাগ ডিএনএ জিন হিসেবে কাজ করে। তাহলে আমাদের জিনোমের বাকি সাড়ে ৯৮ ভাগের মধ্যে কি আছে? এতদিন বিজ্ঞানীরা এর সবটাকেই জাংক বা বাতিল ডিএনে বলে ধরে নিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে প্রায় ৩ ভাগ ডিএনএ আসলে নিয়ন্ত্রক জিন বা রেগুলেটরী জিন হিসেবে কাজ করে। এই জিনগুলোই ভ্রূণাবস্থায় কোন জিন কোথায় এবং কখন কোন অংগ গঠন করবে তার জন্য প্রয়োজনীয় সংকেত পাঠায়। দু’টি প্রজাতির মধ্যে জিনের সংখ্যা কত, তা দিয়েই শুধু তাদের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো নির্ধারণ করা যাবে না, তাদের বিভিন্ন অংগ, প্রত্যংগ এবং গঠনের পিছনে এই নিয়ন্ত্রক জিনের সুইচগুলোর কি ভূমিকা রেখেছে তাও দেখতে হবে। অর্থাৎ, বিবর্তনের নতুন নতুন প্রজাতির উৎপত্তি এবং বিকাশকে বুঝতে হলে শুধু কয়টি জিন দিয়ে তার জিনোম তৈরি হয়েছে তা জানলেই হচ্ছে না, বরং এই জিনগুলো কোথায় কখন কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং কোন নিয়ন্ত্রক জিন এর পিছনে ভূমিকা রেখেছে তাও বুঝতে হবে।[১]।
কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, টিকট্যালিকের মত পুরনো ফসিল থেকে তো আর ডিএনএ খুঁজে পাবার কোন আশা নেই, তাই ঠিক কোন জিনের মিউটেশনের ফলে আসলে এই বিবর্তন ঘটেছিল তা বলাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে বসে গবেষণা করার ফলে ডঃ সুবিনের হাতে এমন কিছু অস্ত্র আছে যা ডারউইনের সময় তো দুরের কথা কয়েক দশক আগেও যা বিজ্ঞানীদের কল্পনার বাইরে ছিল। তাই, এবার ডঃ সুবিন এবং তার দল ফসিল থেকে তাদের দৃষ্টি ফেরালেন হাই-টেক আনবিক ডিএনএর গবেষণায়। অনেক কিছু বিবেচনা করে, তারা প্যাডেল মাছ (Polyodon spathula) নামে অত্যন্ত প্রাচীন এক মাছের ডিম নিয়ে কাজ শুরু করলেন। একে তো প্যাডেল মাছের ডিম বেশ সহজলভ্য অন্যদিকে তারা এবং টিকট্যালিক একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। পার্থক্যটা হচ্ছে প্যাডেল মাছ এখনও বেঁচে বর্তে আছে আর টিকট্যালিক বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই কবে! একই শ্রেণীর হওয়ায় ধরে নেওয়া যায় যে, তাদের জিনের গঠনও একই রকম ছিল। তারা তাদের কাজ কেন্দ্রীভূত করলেন ‘হক্স জিন’ নামে এক দল জিনের উপর।
এভু ডেভুর জগতে এই হক্স জিনে খুবই ‘নামী দামী’ এক নিয়ন্ত্রক জিন। অনেকে রসিকতা করে এদেরকে ‘জিন সম্প্রদায়ের’ মধ্যে ‘অভিজাতবর্গ’ বলেও অভিহিত করে থাকেন! প্রাণীর দেহের বিভিন্ন অংশের গঠনে এর ভূমিকা শুনলেই বুঝবেন এই ডাকটা কোন অত্যুক্তি নয়। এরা ভ্রূণ থেকে যে কোন প্রাণীর দেহ এবং আকার গঠনের প্রক্রিয়ায় ‘কম্যান্ডার ইন চীফ’এর ভূমিকা পালন করে । এদের অঙ্গুলীহেলনে ভ্রূণের মধ্যকার বিভিন্ন রকমের জিন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরাই নির্দেশ দেয় দেহের ডান বাম কিভাবে গঠিত হবে, কোন দিকতা ভিতর যাবে কোনটা বাইরের, হাত কোথায় যাবে, পা কোথায় যাবে, চোখের অবস্থান কোথায় হবে, পাকস্থলী, হৃৎপিন্ড কোথায় তৈরি হবে… । গত ৬০ কোটি বছর ধরে এই হক্স জিনের গঠনে বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটেনি, সামান্য কৃমি থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত সবার দেহ গঠনে এরা মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে [৬]।
কি পেলেন ডঃ সুবিন তার হক্স জিনের গবেষণা থেকে? তার এই গবেষণা থেকে যা বেড়িয়ে এল, তার মোদ্দা কথা মোটামুটি এরকম : প্যডেল মাছের মধ্যেই একই হক্স জিনের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে যা আমাদের এবং আরও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয়, যে হক্স জিনগুলো আমাদের হাত এবং পায়ের গঠনের জন্য দায়ী ঠিক সেই একই জিনগুলোই কাজ করে চলেছে প্যাডেল মাছের মত অতি প্রাচীন এক মাছের পাখনা তৈরির কাজে। এমনকি যে জিনগুলো পাখনার উপরের বড় হাড়টা তৈরিতে কাজ করছে ঠিক সেটিই কাজ করছে আমাদের হাতের উপরের বড় হাড়টি তৈরির পিছনে। এর পরের যে জিনটি কাজ করছে পাখনার পরবর্তী হাড়গুলোর গঠনে সেগুলোই দায়ী আমাদের হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত বিস্তৃত দু’টি হাড় তৈরির পিছনে। একই কাহিনী দেখা যাচ্ছে আমাদের হাতের এবং পায়ের আঙ্গুলের হাড় এবং প্যডেল মাছের পাখনার শেষের ছোট ছোট হাড়গুলো তৈরির ক্ষেত্রেও [৬]। এবং এই সাদৃশ্যটা শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়, পৃথিবীর যাবতীয় চারপেয়ে এবং দুপেয়ে জীবের হাত এবং পা তৈরির ক্ষেত্রেই এই একই জিনগুলো কাজ করে চলেছে!
উপরের ছবিতে মাছের পাখনা ( বা পাশের কলামে টিকট্যালিকসহ বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রাণীর পাখনার গঠন, মাঝের কলামে প্যাডেল মাছ এবং মানুষ সহ এখনও টিকে থাকা বিভিন্ন প্রাণীর পাখনা এবং হাত পায়ের গঠন) এবং অন্যান্য প্রাণীর পাখনা, ডানা বা হাতের গঠনে হক্স জিনের এক্সপ্রেশান দেখানো হয়েছে। বিবর্তনীয় জীবিবিজ্ঞানের জগতে এখনকার তিন মহারথী ডঃ শন ক্যরাল, ক্লিফ ট্যাবিন এবং নীল সুবিন ২০০৯ সালে বৈজ্ঞানিক জারনাল নেচার এ Deep homology and the origins of evolutionary novelty নামের প্রবন্ধে তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন (Nature 457, 818-823(12 February 2009)।
তাহলে মাছের পাখনা থেকে চারপায়ী জীবের হাতপায়ের বিবর্তন ঘটতে কোন বিশেষ এক নতুন জিনের বিবর্তনের দরকার পড়েনি? প্রাণীজগত বিবর্তনের নাটকের এত বড় একটা অধ্যায় পার হয়ে এসেছে ‘মহা-নাটকীয়’ কোন ঘটনা ঘটা ছাড়াই? এত বিশাল একটা রূপান্তর ঘটে গেছে কোন অভিনব জিনের উদয় হওয়া ছাড়াই? বিশাল কোন উল্লম্ফনের প্রয়োজন হয়নি বিবর্তনীয় ইতিহাসে?………. না হয়নি।
তাহলে এর অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে? আর কিছুই না, হাত পা তৈরির জন্য যে জিনের প্রয়োজন তা ইতোমধ্যেই সেই প্রাচীন মাছের জিনোমেই ছিল। যে জিন মাছের পাখনা তৈরিতেও ভূমিকা রেখে এসেছে সেই একই জিন থেকেই আজকের গরু, ঘোড়া, মানুষ, পাখীর মধ্যে হাত পা র উদ্ভব হয়েছে। এর জন্য কোন নতুন জিনের আবির্ভাবের দরকার পড়েনি, সেই প্রাচীন নিয়ন্ত্রক জিনগুলোর উপর ঘটা কিছু মিউটেশনের ফলেই ঘটে গিয়েছিল প্রাণীজগতের এত বড় রূপান্তর। কোথায় কখন কিভাবে এই জিনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে, ভ্রূণাবস্থায় কোন জিন কখন ‘অন বা অফ’ হবে শুধু সেটুকুর উপর ঘটা মিউটেশন এর কারণেই এরকম একটা বড় রূপান্তর ঘটে যাওয়া সম্ভব। হঠাৎ করেই যেন, বিবর্তনীয় বিকাশমান জীববিদ্যা বা এভু ডেভুর অগ্রগতির মধ্যে দিয়েই, দেড় শ’ বছরের এক বিশাল ধাঁধার জট খুলে যেতে শুরু করেছে। ডারউইন যে মহানাটকের সূচনা করে গিয়েছিলেন আমাদের চোখের সামনেই যেন ঘটে চলছে তার বিভিন্ন অঙ্কের ক্রমিক উন্মোচন।
শুনতে খারাপ শুনালেও আজ বলতেই হয় যে ডারউইন তার আবিষ্কৃত বিবর্তন তত্ত্বের বেশীর ভাগটাই জানতেন না। একবিংশ শতাব্দীতে বসে আমরা যা জানি তার ৯৯% ও তিনি জানতেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা যেতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সিস্কো আয়ালাকে বিবর্তন সম্পর্কে ডারউইনের জ্ঞানের পরিধি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, এটা তো খুবই সোজা প্রশ্ন। আমরা যা জানি ডারউইন তার ৯৯% ই জানতেন না। তবে তিনি যে ১% জানতেন সেটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ!!!
চলবে …
তথ্যসূত্র:
1) Carroll S, 2005, Endless forms so beautiful. W.W. Norton & Company.
2) http://discovermagazine.com/2009/mar/19-dna-agrees-with-all-the-other-science-darwin-was-right
3) যুক্তি, সংখ্যা ৩, জানুয়ারি ২০১০, শন ক্যারলের সাথে সাক্ষাকারঃ ডি এন এ এবং অন্যান্য বিজ্ঞান প্রমাণ করছে যে ডারউইন সঠিক ছিল।
4) Shubin N, 2008, 2009,Your Inner Fish. Vintage Books.
5) http://www.nytimes.com/2007/06/26/science/26devo.html
6) http://www.pbs.org/wgbh/nova/beta/evolution/darwin-never-knew.html এই ভিডিওটা এখান থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে ( ধন্যবাদ পথিক কে ডাউনলোড এর এই উপায়টা খুঁজে বের করার জন্য)
veoh2://veoh.com/?cmd=DA782A7C-3538-4dd9-B28B-90F927E31BF1
7) ইনুয়িটরা (Nunavut) কানাডার উত্তর মেরুতে নুনাভেট টেরিটরী অফ আর্কটিক এ বসবাসকারী আদি আমেরিকান গোষ্ঠী। তাদের এই এলাকাতেই টিকট্যালিকের ফসিলের সন্ধান পান ডঃ সুবিন এবং তার গবেষণা দল। ইনুয়িট গোষ্ঠীর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই ডঃ সুবিন নুনাভেট কাউন্সিল অফ এল্ডারস দের কাছে তাদের সদ্য আবিষ্কৃত ফসিলটির জন্য নাম চেয়ে পাঠান। ডঃ সুবিন তার ‘ইয়োর ইনার ফিস’ বইটিতে মজা করে বলেছেন যে, যে কমিটির নাম ছিল Inuit Qaujimajatuquangit Katimajiit তারা সে ফসিলের জন্য কি নাম ধরণের দুর্বোধ্য নাম প্রস্তাব করবেন কে জানে। তাদের কাউন্সিল দু’টি নাম পাঠান, Siksagiaq এবং Tiktalik। নামটির সহজবোধ্যতা এবং অর্থের (large fresh water fish) কথা বিবেচনা করে তারা টিকট্যালিক নামটি রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
ধন্যবাদ দিগন্ত, ঠিক করে দিলাম মূল পোষ্টে।
শুনতে খারাপ শুনালেও আজ বলতেই হয় যে ডারউইন তার আবিষ্কৃত বিবর্তন তত্ত্বের বেশীর ভাগটাই জানতেন না। আমরা আজকে যা জানি তার ৯৯% ও জানতেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা যেতে পারে।
এইখানে ভাষার প্রয়োগটা একটু কেমন লাগল – আমার ধারণা বাক্যটা হত “আমরা আজকে যা জানি তার ১% ও জানতেন কিনা …”
উপস্থাপনা চমৎকার হয়েছে, বিশেষত টিকট্যলিকের সাক্ষাতকারের আইডিয়াটা।
লেখাটা ভালো লাগছে। ছোট এবং তথ্যবহুল। আর সাক্ষাৎকারের আইডিয়া তো জোশ। তবে লেখার শুরুতে বোধহয় কনফিডেন্স পাচ্ছিলেন না, অপ্রোয়জনীয় লাইন লিখে ফেলেছেন কয়েকটা।
পুরাই জাফরুল্লাহ শারাফাতের কমেণ্টারি 😀 ।
মধ্যবর্তী ফসিল
আমাদের হারুন ইয়াহইয়াদের মতে, মধ্যবর্তী ফসিল মানে হলোঃ আমরা এইপ থেকে আসছি। সুতরাং আমাদের আর এইপদের মধ্যবর্তী ফসিল হবে, অর্ধেক এইপ বাকী অর্ধেক মানুষ কিংবা ভাইস ভার্সা। অদ্ভুত এদের চিন্তাধারা। তবে এদের দোষ দিয়েও লাভ কী। বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে ডারউইন থেকে শুরু করে সব জীববিজ্ঞানীরা কয়েকটা কনফিউজিং শব্দ ব্যবহার করে বিবর্তন বিজ্ঞান বিতর্কিত করে দিয়েছেন। সবডিরে পিডান দরকার।
আরও মজার ব্যপার হলো, ধরেন বিজ্ঞানীরা দুই প্রজাতির মধ্যবর্তী প্রজাতির (মিসিং লিংক) এর সন্ধান পেয়ে এক লাইনে তিনটা প্রজাতি রেখে সৃষ্টিবাদীদের ডাক দিলো। তখন সৃষ্টিবাদীরা মুখ বাকা করে বলবে, আগে ছিলো একটা মিসিং লিংক, এখন হইলো দুইটা।
আসলেই? টিকটাকিল বেশি আশা কইরা লাইছে, ওরেও পিডান দরকার।
লেখার বাকি অংশ নিয়ে বলার কিছু নাই। অভিজাত জিনের কথা প্রথম শুনছিলাম আপনার কাছ থেকেই। এখন আরেকবার ঝালাই দিলাম।
বিবর্তনের ওপরে আর একটা সুন্দর সিরিজ উপহার দেয়ার জন্য বন্যাকে ধন্যবাদ। উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে। টিকট্যালিক মহাশয়ের সাথে কথোপকথন খুবই উপভোগ্য হয়েছে। এমন রসকষহীন একটা বিষয় নিয়ে এতো প্রাঞ্জল লেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক কিছু জানতে পারলাম, বিশেষ করে হক্স জিনের ব্যাপারটা।
মিউটেশন যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার এটা অনেকেরই বুঝতে অসুবিধা হয়। কারণ, বলা হয় – মিউটেশন হচ্ছে ‘রেপ্লিকেশনের’ (নকল) ভুল। মিউটেশন র্যান্ডম হলেও ভুল নয় মোটেও। ভুল না বলে বোধহয় ‘ডিভিয়েশন’ বা বিচ্যুতি বলা উচিত।
টিকট্যালিকের আবিষ্কার প্রসঙ্গে ওপরে অভিষেক খানের মন্তব্যের সাথে একমত। ঠিক ওখানেই, ওই বয়সের এবং ওই ধরনের একটা ফসিল পাওয়া যেতে পারে – এই অনুমানের ভিত্তিতে খোঁড়াখুড়ি করে ডঃ সুবিন ও তাঁর সহযোগীরা টিকট্যালিকের সন্ধান পান। বিবর্তন যে বাস্তব, এটাই তো তার একটা বিরাট প্রমাণ।
ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই। আমি তো অনেক কষ্টে এভু ডেভুর আরেকটা পর্ব লিখলাম, এবার আপনার পালা, জেরী কোয়েনের পরের পর্বটা নামায় দেন।
আপনার সব লেখার মতই এটাও খুবই সহজ এবং সাবললীল। আমি আপনার লেখার মুগ্ধ পাঠক অনেক আগে থেকেই। ভাল লাগাটুকু জানিয়ে গেলাম। আশা করি খুব সুন্দর একটা সিরিজ পেতে যাচ্ছি আপনার কাছ থেকে।
@হোরাস,
আসলেন অবশেষে!
@আদিল মাহমুদ, হ্যা, চলে আসলাম। আপনি বলার পর থেকে মাথায় ঘুরছিলো কথাটা। তবে বন্যাদি এবং অভিজিৎদার লেখা নিয়মিত পরতে এবং মাঝে মাঝে (কমেন্টে) জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নেয়ার জন্য। 😀
@হোরাস,
আসার জন্য ধন্যবাদ। পোলাপাইনদের গালাগালি খুনসুটির জগত ছেড়ে একটু আধটু অন্য জগতেও ঘোড়াঘুরি করেন, সবারই তাতে মংগল। পারলে “কাকু” কেও নিয়া আসেন :laugh: ।
@আদিল মাহমুদ, আপনি কাকু ডাকেন নাকি! বয়সে অনেক পিচ্চি হলেও আমি ডাকি মাস্টার সাব।
@আদিল মাহমুদ,
চেনা চেনা লাগে— তবু অচেনা————-থাক,
হোরাসের সেই ছবিটা দেখছিনা যে। 😕 :-/
@আকাশ মালিক, আমি অথিতি হিসাবে কমেন্ট করছি। তাই ছবি নাই। কিন্তু আপনাকে আমি কোথায়, কি নামে চিনি সেটা কিভাবে জানা যাবে? পরিচয় যে আছে সেতো বোঝাই যাচ্ছে। :-/
তবে আমি কিন্তু আকাশ মালিকের লেখার সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। :rose2:
@হোরাস,
শুধু ‘মুগ্ধ পাঠক’ হয়ে থাকলে হবে না, আমাদের সাইটের জন্য নিয়মিত লিখবেন এবং মন্তব্য করবেন, এই প্রত্যাশা করি। ইন্টারনেটে আপনার কিছু লেখা আমি পড়েছি। আপনি চমৎকার লেখেন। আমরাও আপনার লেখার ‘মুগ্ধ পাঠক’ হতে চাই এখানে। 🙂
@অভিজিৎ, অনেক ধন্যবাদ। :rose2:
@হোরাস,
আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। :rose2: :rose2:
এখানে আপনার লেখা শীঘ্রই পড়তে পারব আশা করি।
বন্যা আহমেদ,
চমৎকার একটি প্রবন্ধ। বিবর্তনবাদের জন্য একটি দিক নির্দেশনা মূলক আবিষ্কারের বিবরন এখানে বর্নিত। তবে জেনেটিক বিজ্ঞানীরা বলেন- যদি কোন ফসিল পাওয়া না-ও যেত তাহলে শুধুমাত্র জেনেটিক বিজ্ঞান দ্বারাই বিবর্তনবাদ প্রমান করা সম্ভব হতো। যেমন- মানুষ ও শিম্পাঞ্জীদের জিনের সাদৃশ্য হলো প্রায় ৯৭%। তার মানে তাদের পূর্ব পুরুষ এক। এভাবেই দেখা যায়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রানীর জেনেটিক সাদৃশ্য কম বেশী একই রকম। তো এ থেকে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, যাবতীয় জীবের উৎপত্তি একটি নির্দিষ্ট এককোষী জীব থেকেই। জেনেটিক বিজ্ঞানের উন্নতি যত ঘটতে থাকবে, বিবর্তনবাদ তত বেশী সত্য প্রমানিত হতে থাকবে। আর ততই মানুষের মনের জল্পনা কল্পনা প্রসূত জীব জগত সৃষ্টির ঐশী মতবাদ জগত থেকে অপসৃয়মান হতে থাকবে।
@ভবঘুরে,
আরেকটা চমৎকার বিষয়ের অবতারণা করলেন এখানে। হ্যা রিচার্ড ডকিন্স তার আ্যন্সেষ্টরস টেল বইতেও এই কথাটা লিখেছিলেন, আমি আমার বিবর্তনের পথ ধরে বইতেও এটা উল্লেখ করেছি। কিন্তু আপনি বিবর্তনের যত বিস্তারিত ডিটেইলস এ ঢুকতে শুরু করবেন, ততই দেখতে পাবেন যে, কথাটা বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সঠিক হলেও খুটিঁনাটি ব্যাপারগুলোর জন্য সম্পূর্ণভাবে বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক নয়। জেনেটিক বিজ্ঞান দিয়ে বিবর্তনবাদ প্রমাণ করা সম্ভব, কিন্তু ঠিক কোন সময়টায় কোন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটেছে তা জানতে হলে এখনও ফসিলবিদ্যার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। যেমন ধরুন, এই মানুষের আর শিম্পাঞ্জির মধ্যে ৯৮% এর মত সাদৃশ্য, আমরা মিউটেশনের বিভিন্ন মার্কার থেকে দেখতে পাচ্ছি জিনের কোথায় কোথায় পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এ থেকে আমরা আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ ঠিক কেমন বৈশিষ্ট্যের ছিল তা একদম হলফ করে বলতে পারছি না। এতদিন যেমন ধারণা করা হতো যে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের শিম্পাঞ্জির সাথেই বেশী মিল ছিল। কিন্তু আর্ডির ফসিল আবিষ্কারের পর দেখা যাচ্ছে যে, আসলে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো শিম্পাঞ্জির মত নয় বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বানরের মতই ছিল। আর্ডি নিয়ে একটা সিরিজ লিখতে শুরু করেছিলাম গত বছরের শেষের দিকে, যদিও শেষ করা হয়নি।
এই টিকট্যালিকের গল্পেও আমি এটাই দেখাতে চেয়েছি যে, ফসিল্বিদ্যা এবং বংশগতিক বিদ্যা দু’টোরই এখনও প্রয়োজন আছে।
@বন্যা আহমেদ,
বন্যা আহমেদ
আমাদের প্রথমেই উপলব্ধি করতে হবে যে , জীববিজ্ঞান বা বিবর্তনবাদী বিজ্ঞান পদার্থ বিদ্যা বা রসায়ন বিদ্যার মত বিজ্ঞান নয় যে সব কিছু একেবারে গানিতিকভাবে প্রমান করে দিতে পারেন। অনেকে এই বিষয়টি একেবারেই বোঝে না , এমনকি তার মধ্যে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তিও আছে। তারা বলে- বিজ্ঞানীরা আজ একটা কথা বলছে তো পরদিন অন্য একটা কথা বলছে। তাদের এ ধরনের কথা বলার একটাই কারন তারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। বিবর্তনবাদ তো প্রথমে শুরুই হয়েছিল স্রেফ কিছু দ্বীপের জীব জন্তুর পর্যবেক্ষনের ওপর ভিত্তি করে। এর পর যত দিন গড়িয়েছে ততই পর্যবেক্ষন ও ফসিল প্রাপ্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ও সেই সাথে ডারউইনের অনেক ধারনা বাতিল বলে পরিত্যক্ত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে কি বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমান হয়ে গেছে নাকি? না তা হয়নি তার কারন , বিবর্তনবাদ একটা তত্ত্ব যা মূলত দিক নির্দেশনা মূলক। অর্থাৎ একটা দিক নির্দেশ করা হয়েছে এর মাধ্যমে যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে বিজ্ঞানের নানা শাখার অগ্রগতির মাধ্যমে একে ক্রমশঃ যথার্থ তত্ত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারই অন্যতম একটা উদাহরন হলো- জেনেটিক প্রযুক্তি। জেনেটিক প্রযুক্তি কিন্তু একটা খুব নবীন প্রযুক্তি যা বলতে গেলে এখনও তার শৈশবই পার করে নি। সুতরাং মানুষ কোন পর্যায়ে এসে বানর বা ঐ জাতীয় প্রানী থেকে পৃথক হয়ে আলাদা একটা স্বতন্ত্র প্রজাতিতে রূপান্তরিত হলো সে সম্বন্ধে কিভাবে এত সহসা উপসংহারে পৌছনো যাবে? জেনেটিক প্রযুক্তির যত উন্নতি হতে থাকবে, যত বেশী আমরা বিভিন্ন জিনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারব ততই বিবর্তনবাদ একটা পূর্ন তত্ত্বের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রাপ্ত ফসিল অবশ্যই সে তত্বের জন্য একটা বিরাট বাস্তব প্রমান হিসাবে পরিগনিত হবে। তাতে করে হয়ত বর্তমানে প্রচলিত কিছু ধ্যান ধারনাও বাতিল বলে গন্য হয়ে যাবে। সবে তো শুরু মাত্র।
@ভবঘুরে,
হা হা হা হা – সে জন্যই তো ভাই পদার্থবিদ্যার সূত্র নিয়ে বই না লিখে বিবর্তনবিদ্যা নিয়ে লিখছি। আপনার ‘বিবর্তন কাহাকে বলে’ শুনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও কনফিউসড হয়ে গেছিলাম
আপনার এই মন্তব্যটা আগে ঠিকমত খেয়াল করিনি। এখন আবার পড়ে আবারও কনফিউজড হলাম। আপনি কি ভেবেছিলেন যে এটা টিকট্যালিকের ফসিল আবিষ্কার নিয়ে লেখা? আসলে কিন্তু লেখাটা এভু ডেভু নিয়ে, যেটা ভ্রূণতত্ত্বের মত একটা অতীব কঠিন বিষয়ের উপর জেনেটিক্সের সর্বাধুনিক এবং কাটিং এজ প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। এর পরের অধ্যায়ে গত দুই এক দশকের বিশেষ আবিষ্কার নিয়ন্ত্রক জিন এবং জেনেটিক সুইচগুলো নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।
জেনেটিক্স এবং বিবর্তনবাদ নিয়ে আপনি যা বলছেন তা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, তবে এটুকুই বলতে চেয়েছিলাম যে জেনেটিক্স এখনও সে পর্যায়ে যায়নি যা দিয়ে আমরা বিবর্তনের খুঁটিনাটি বিষয় আবিষ্কার করে ফেলতে পারি।
এর মানে কী?
এর মানে কি এই বোঝাবে যে, মানুষ বানর থেকে উদ্ভূত? 🙁 😕
এ কী হলো? 🙁
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আসলে পলিটিকালি কারেক্টভাবে বললে বানর না বলে আমাদের আদি সাধারণপূর্বপুরুষ বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত ছিলো। কিন্তু সাধারণপূর্বপুরুষ নাম দেই আর যাই দেই – তারা যে আসলে বানর সদৃশ জীবই ছিলো তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ প্রসঙ্গে জীবাশ্মবিদ জর্জ গোল্ড সিম্পসনের একটি উক্তি স্মরণযোগ্য –
কৈফিয়তদাতারা খুব জোরালোভাবে বলে থাকেন যে, কোন জীবিত এপ থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি। এটি প্রায় নির্বোধের মত কথা। এর অর্থ এই যে, মানুষ কোন প্রকার বানর বা এপ থেকে উদ্ভুত হয়নি, বরং একটি কমন পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়েছে। ব্যাপারটা ভুল নয়। কিন্তু তারপরেও বাস্তবতা হল – কেউ যদি আজ সেই ‘কমন পূর্বপুরুষ’কে দেখতে পেত তাহলে (দৈহিক এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট বিচার করে) অবশ্যই তাকে এপ বা বানর নামেই অভিহিত করতো। … তথ্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত কোন অনুসন্ধানীর পক্ষে অন্য কিছু বলা অসততা না হলেও ভীরুতার লক্ষণ।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীরা প্রায় ছয় মিলিয়ন বছর আগে তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ কোন এক নরবানর জাতীয় প্রাইমেট থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। কথাটা বানর না বলে নরবানর বা বনমানুষ বলা উচিত। মূল লেখায় বানরের বদলে নরবানর করে দিলাম। তবে
আর্ডির ফসিলের আবিষ্কার বলছে যে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের সাথে আজকের শিম্পাঞ্জী, গরিলাদের যত না মিল তার চেয়ে বোধ হয় বেশী মিল ছিল বানরদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সাথে।
মিসিং লিঙ্ক আর ট্রাঞ্জিশনাল প্রজাতির ব্যাপারটা মাথার উপর দিয়ে গেলো। Why Evolution Is True বইটাতে ট্রাঞ্জিশনাল প্রজাতির ব্যাপারে লেখা হয়েছে–
“A “transitional species” is not equivalent to “an ancestral species”; it is simply a species showing a mixture of traits from organisms that lived both before and after it…Further, transitional forms don’t have to be on the direct line of descent from an ancestor to a living descendant—they could be evolutionary cousins that went extinct.”
এতে বিভ্রান্তিকর কি আছে বুঝলাম না। এ ব্যাপারে একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করছি।
টিকটালিক আবিষ্কারের ভবিষ্যৎবাণীটিই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কৌতূহলোদ্দীপক লেগেছিল। ৩৬৫ থেকে ৩৮৫ মিলিয়ন বছর আগেকার সময়ের মধ্যেই এমন একটা প্রাণীর ফসিল পাওয়া যাবে বলে যে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল, ৩৭৫ মিলিয়ন বছর বয়সের টিকটালিকের ফসিল তার সঙ্গে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল! বিবর্তনতত্ত্বের সঠিকতা প্রমাণের জন্য এর চেয়ে বেশি আর কী সাক্ষ্যপ্রমাণের দরকার আছে?
বাংলায় বিবর্তনবিরোধী সাহিত্যের সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান সংগ্রহশালায় এ নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই একটি লেখা জমা পড়ে যাওয়ার আশংকা করছি। হয়ত লেখার হেডিং হবে– “বিবর্তনবাদীদের আরেকটি ভুল!” 😀
@অভিষেক খান,
জাতি মনে করে বিবর্তনবাদ সত্য হলে Pakicetus আর আধুনিক তিমির এমন একটা “মিসিং লিংক”থাকবে যে অর্ধেক Pakicetus আর অর্ধেক তিমি। এইটাই হইল গিয়া “মিসিং লিংক” নিয়ে বিভ্রান্তি।
@পৃথিবী, বেশ কিছুদিন আগে হ্যাকেলের ভ্রূণতত্ত্বের ব্যাপারে জানতে এই সাইটটাতে ঢু মেরেছিলাম। ক্রিয়েশনিস্টরা দাবি করে আর্কিওপ্টেরিক্সের পালক নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি- এই ব্যাপারে জানতে সাইটটির এই লেখাটিতেও একটু চোখ বুলিয়েছিলাম। নিবন্ধের শুরুতেই দেখি লেখা —
ভেবেছিলাম “মিসিং লিঙ্ক” বলে বোধহয় জীববিজ্ঞানে স্বীকৃত কোন টার্ম চালু নেই। এরপরও অনেক বিবর্তনবিষয়ক লেখায় দেখলাম “মিসিং লিঙ্ক” ঠিকই ব্যবহৃত হচ্ছে। Why Evolution Is True বইটি পড়ে ব্যাপারটা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছিল, কিন্তু আজকের এই লেখা দেখে সবকিছু আবার তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলাম। “মিসিং লিঙ্ক” বলতে যে জাতি এধরনের আজগুবি প্রাণীকে বোঝে, তা আগে জানা ছিল না। ধন্যবাদ ব্যাখ্যার জন্য। 🙂
@অভিষেক খান,
এই একটা সুবিধা মুক্তমনায় বিজ্ঞানের নিয়ে লেখার। কোথাও ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই, কেউ না কেউ সেটা ধরবেই 🙂 ।
আমি আসলে এই মিসিং লিঙ্কের বিষয়টা নিয়ে আরেকটু লিখতে গিয়েও বাদ দিয়ে দিয়েছি এই ভেবে যে লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা হলো অনেকটা এরকমঃ
‘মিসিং লিঙ্ক’ কথাটা জনপ্রিয় বিজ্ঞানের সাহিত্যে অনেকে ব্যবহার করেন, বিজ্ঞানীরা একে খুব একটা পছন্দ করেন না। কারণ এটা বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে – এতে মনে হতে পারে যে মাছ আর উভচরের মধ্যে একটাই লিঙ্ক ছিল, যা হচ্ছে এই টিকট্যালিক। পৃথিবী যেমন বলেছে, যে অনেকে এই ‘মিসিং লিঙ্ক’ কথাটা থেকে মনে করে যে, কোথাও একটা অর্ধেক মাছ আর অর্ধেক উভচরের ছবি থাকবে! আসলে তো ব্যাপারটা তা না, মাছ আর উভচরের মধ্যবর্তী বিভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গাদি গাদি ফসিল পাওয়া গেছে। টিকট্যালিকের ফসিলের আবিষ্কার এখানে উল্লেখযোগ্য একারণে যে এতদিন যে সব মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফসিল পাওয়া গেছিল তাদের হয় পাখনা ছিল না হয় পা ছিল। পাখনা আর পায়ের এরকম মধ্যবর্তী অবস্থা আগে কোন ফসিলে দেখা যায়নি।
আমার বিবর্তনের পথ ধরে বই এর অষ্টম অধ্যায়ে মাছ এবং উভচরের মাঝামাঝি বিভিন্ন্রকমের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনেকগুলো ফসিল এবং প্রাণীর একটা ছবি দিয়েছিলাম। আসলে ওই বইতে আমিও ‘মিসিং লিঙ্ক’ শব্দটা ব্যাবহার করেছিলাম, ভাবছি এর পরের সংস্করণে বদলে দিব সেইটা।
এখানে ‘why evolution is true’ সাইট এই ছবিটাও দেখতে পারেনঃ
http://whyevolutionistrue.files.wordpress.com/2009/03/fish.jpg
একইভাবে মধ্যবর্তী ফসিল কথাটাও বিভ্রান্তিকর। আসলে ‘মধ্যবর্তী ফসিল’ না বলে ‘দুই প্রজাতির মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ ফসিল বলাটাই আমার কাছে ঠিক মনে হয়।
মিসিং লিংক নিয়ে বিভ্রান্তি দূরীকরণের জন্য আমার মনে হয় একটা শিশুর বেড়ে ওঠাটা একটি ভাল উপমা। একটা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু আর একজন মৃত্যুশয্যায় শায়িত বৃদ্ধের মাঝখানের “মিসিং লিংক” হল এমন একটি মানুষ যে একই সাথে শিশু ও একজন মুমূর্ষ বৃদ্ধ। এমন মানুষ পাওয়া কি আদৌ সম্ভব? একটা পাঁচ বছরের শিশু ও ছয় বছরের শিশুর মধ্যে যেমন কোন শারীরিক-মানসিক পার্থক্য পাওয়া কষ্টসাধ্য, তেমনি একটা ষোল বছরের কিশোর ও সতেরো বছরের কিশোরের মাঝে পার্থক্য খোজা অসম্ভব না হলেও দুস্কর। অথচ একটা অবলা শিশুই তিরিশ বছর ধরে আমাদের অজান্তে একজন সুঠাম দেহের মানুষ হয়ে উঠতে পারে এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই আমরা হঠাৎ করে লক্ষ্য করি সুঠাম দেহের মানুষটার চুল পাকা শুরু করেছে, চামড়ায় ভাঁজ পড়া শুরু হয়েছে। মানুষের বেড়ে ওঠার সাথে জৈববিবর্তনের অন্যতম একটা পার্থক্য হল মানুষের বেড়ে ওঠাটা আমরা আমাদের জীবনকালেই লক্ষ্য করতে পারি কিন্তু বড় ধরণের জৈববিবর্তন আমাদের জীবনকালে পর্যবেক্ষণ করা কোনমতেই সম্ভব নয়(যদিও ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবের সময় কোন এক প্রজাতির পতঙ্গের গায়ের রঙের বলে খুব দ্রুত বিবর্তন ঘটেছিল)।
নীল সুবিনের বই পড়ার জন্য এখন চুলকানি শুরু হয়া গেছে। যখনই কোন নতুন বইয়ের নাম দেখি, খালি পড়তে ইচ্ছে করে। এখন ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় একটা সুবিধা অবশ্য হয়েছে- পুরনো বইগুলো পড়া হচ্ছে। আমার আবার শুচিবায়ু আছে, একটা বই শেষ না করে আরেকটা বই ধরতে ইচ্ছে করে না।
আমার বিবর্তনের জ্ঞান প্রায় শুন্যের কোঠায়। অনেক শোরগোল শুনে অরিজিন অফ স্পেসিস কিনলাম আজ প্রায় তিন বছর আগে। কয়েক পাতা পড়ার পর রেখে দিলাম পরে পড়ব বলে। এরপর আর বইটা খোলা হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, ডারঊনের তত্ত্ব হয়তো তেমন শক্ত নয়, কিন্তু ওনার লেখার স্টাইল মোটেই সোজা নয়।
বলতে হয় বন্যার লেখা পড়ার পরই আমার কাছে বিবর্তনবাদ ইন্টারেস্টিং লাগলো।
@আবুল কাশেম, আপনি হুদাহুদাই অরিজিন অফ স্পিশিজ পড়তে গেছেন কেন? ডকিন্সের ‘গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ’ বা জেরি কোয়েনের ‘হোয়াই এভ্যুলেশন ইজ ট্রু’ -এরকম একটা ‘অত্যাধুনিক’ বই পড়ে ফেলেন, দেখবেন সব পরিষ্কার হয়ে যেব, পড়তেও মজা পাবেন।
@বন্যা আহমেদ,
‘গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ’ কিনেছি সপ্তাহ দুয়েক আগে। আশা করি এটা শেষ করতে তিন চার মাস লাগবে। এর মাঝে ডকিন্স সাহেব হয়তো আরো একটা বই লিখে ফেলবেন।
লেখা সুন্দর হয়েছে। যা বুঝলাম তা এক কথায় ‘হক্স জিন’ গুলি মাছের মধ্যেও আছে আবার স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যেও আছে, যার জন্য পাকনা কিংবা হাত-পা জন্য দায়ী।
মানে প্রকৃতিতে তার বিবর্তন বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় ফাক থাকতে হবে। আগেই যদি অন্য প্রজাতির প্রানী ঐ ফাক দখল করে থাকে তাহলে তার সুযোগ নেই। নাকি তবুও থেকে যায়?
@ফুয়াদ,
না এমন কোন নিয়ম নেই। বিবর্তনের অন্যতম প্রধাণ কারণ জিনের মধ্যে মিউটেশন। এই মিউটেশন র্যন্ডমলি ঘটে। এর ফলে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে সেগুলো যদি প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় টিকে যায় তাহলে সেগুলোই টিকে থাকবে, আর যদি টিকতে না পারে তাহলে হারিয়ে যাবে। এখানে দু’টো জিনিস,
১) মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তনের প্রশ্ন আসছে। যেমন ধরুন, সেই সময় যদি টিকট্যালিকের মতো মাছগুলোর মধ্যে ডাঙ্গায় উঠে আসার জন্য প্রয়োজনীয় মিউটেশনগুলো না ঘটতো তাহলে যতই জায়গা ফাঁকা থাকুক না কেন, আর যতই সম্ভাবনা থাকুক না কেন মাটিতে চতুষ্পদী প্রাণীর বিবর্তন ঘটতো না। মিউটেশন বা বিবর্তন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটে না, র্যান্ডম ভাবে ঘটে এবং তারপর জীবেরা তার বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে।
২) মিউটেশনের ফলে প্রাপ্ত নতুন বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে যে কোন জীব প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় টিকে থাকার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। এই প্রাকৃতিক নির্বাচন কিন্তু র্যান্ডম নয়, এ সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করে। এখন ধরুন কোন একটা ফাঁকের কারণে যদি কোন জীব বাড়তি সুবিধা ( যেমন এক্ষেত্রে বিশাল উন্মুক্ত ডাঙ্গা, যেখানে খাদ্যের কোন অভাব নেই, টিকে থাকার জন্য তেমন কোন প্রতিযোগীতা নেই) পেয়ে থাকে তাহলে সে টিকে যেতে পারে। আর যতই ফাঁক থাকুক না কেন তার বৈশিষ্ট্যগুলো যদি নতুন পরিবেশে টিকে থাকার উপযোগী না হয় ( যেমন ধরুন এক্ষেত্রে শুধু পায়ের বিবর্তন ঘটলেই তো হচ্ছে না, মাটিতে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ফুসফুস এবং অন্যান্য কিছু পরিবর্তনও প্রয়োজন হয়েছে) তাহলে তারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটা নিশ্চিত যে এত বড় একটা পরিবর্তন ঘটার সময় কিছু প্রাণী প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় টিকে গেলেও, বেশীরভাগ প্রাণীই টিকে থাকতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
বিবর্তন নিয়ে একটা খুব বেসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বন্যা আপু,
দারুণ একটা পর্ব দিলেন। এই বিষয়টা নিয়ে কিছুদিন ধরে একটা বই পড়ছি।সেটা হল নীল সুবিনের ইনার ফিশ(আপনিই সাজেস্ট করেছিলেন)। বইটা দারুণ। ডকিন্স পড়ে যারা আমার মত ডিকশনারিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাদের জন্য এই বইটা দারুণ। দারুণ সহজ ভাষায় স্বচ্ছন্দ ভংগিমায় এই বইটা লেখা। পড়লে মনে হয় ডিক্টেক্টিভ উপন্যাস পড়ছি। আসলেই ব্যাপার টা তাই, ফসিল খোঁজার আর তার মধ্যে থেকে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করার মধ্য দারুণ আনন্দ আছে। (ই-বইটা লাগলে যে কেউ মেইল দিয়েন)। কিভাবে ফসিল হান্ট করা হয় এবং নীল সুবিন কত কাঠখড় পুড়িয়ে এই ফসিল পেলেন সেসব নিয়ে আমিও লেখার কথা ভাবছি এই বইটা পড়ার সময়।আপনি যেহেতু লিখবেন তাহলে আমার কষ্টটা বেঁচে যাচ্ছে। 😀
এই তরিকা কেবল আমেরিকার জন্য প্রযোজ্য।What Darwin never knew দেশি ভাইদের জন্য লিগালি ইউটিউবে কিছুটা আছে। আর টরেন্টে আর ফাইলশেয়ারিং সাইটেও আছে। আমি ডকুটা ডাউনলোড করে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি। বিবর্তনের কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।নোভার সাইটে পুরা ডকুটার ট্রান্সক্রিপ্ট আছে,পড়ে দেখতে পারেন। দেশের মুক্তমনা সদস্যদের কারো ডকুটা দরকার হলে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। এই ডকুটা না দেখলে বিবর্তনের অসামান্য আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যটা বুঝতে আরো অনেকদিন লাগত।(যারা বন্যা আপাকে লেখা দিতে অনবরত তাড়া দেন, তাদের ডকুটা দেখে একটা রিভিউ লিখতে অনুরোধ করছি!)।অত্যন্ত জটিল ও টেকনিক্যাল বিষয়টা যেভাবে আপনি সবার সামনে স্বচ্ছন্দ ভাষায় তুলে ধরছেন সেটা সত্যিই অসাধারণ।
আর নতুন বই থেকে পড়া একটা প্রাসংগিক ঘটনা শেয়ার করি।অক্লান্ত পরিশ্রমের নীল সুবিন যখন এই ফসিল আবিষ্কার করলেন তখন তিনি রীতিমত সেলিব্রেটিতে পরিণত হলেন। তার সন্তানের নার্সারি স্কুলে উনাকে টিক্টালিক সম্পর্কে বলতে আমন্ত্রণ জানাল।’ইন্টারমিডিয়েট ফসিল’ হিসেবে টিক্টালিকের ব্যাপারটা এতই স্পষ্ট ছিল যে চার-পাঁচ বছরের বাচ্চারাও সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
(নেইল সুবিনের Your Inner fish বইটা থেকে উদ্ধৃত)
পরের পর্ব গুলো পড়বার আশায় রইলাম।
@পথিক,
প্রথমে ইংরেজি বইটা আর পারলে একটা সহজ বাংলা ডিকশেনারী সফটঅয়্যারের ডাউনলোড লিংক পাঠায়া দেন। গুগল ডিকশেনারী দিয়া কাজ করার ঝামেলা বেশি।
@পথিক, হ অতি শীঘ্র একটা ডাউনলোড লিংক ছাড়েন!
@পৃথিবী,
দিব নাকি? বইটি আছে আমার কাছে। যাদের প্রয়োজন জানান। ই-মেইল ঠিকানা দিতে হবে কিন্তু। :rose:
@সৈকত চৌধুরী,
অবশ্যই দিবেন!! যদিও আগের একটাও এখনো পড়া শুরু করতে পারি নাই!! 😛 তাতে কি!! পাঠায়া দিবেন। আমার কালেকশনে এখনো বেশ অনেকগুলো না পড়া বাংলা বই রয়ে গেছে। এই কারনে কষ্ট করে ইংরেজি ধরতে ইচ্ছা করে না!! যখন আমার বাংলার ভান্ডার ফুরাবে অথবা যখন হাতের কাছে আর কোন হার্ডবাইন্ডিং থাকবে না, তখন এগুলা কষ্ট করে হলেও হজম করব!! 😀
@সৈকত চৌধুরী, দিয়ে দেন, আমার ইমেইল ঠিকানা তো মনে হয় আপনার কাছে আছে।
@পৃথিবী ও তানভী,
এই লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নেন। আর ডকুটা লাগলে আওয়াজ দিয়েন,
অফ টপিকঃআমার বিবিসি এর দি হিউম্যান বডি ডকুটা ব্যাপক প্রয়োজন। কেউ শেয়ারে রাজি থাকলে তার সাথে দেখা করে নিয়ে আসব। পৃথিবী আপনার কাছে কি ডাউনলোড করা আছে? একটু জানাবেন প্লিজ।
@পথিক, আমার কাছে ছিল, তবে হার্ডডিস্কে জায়গা করার জন্য ডিলেট করে দিতে বাধ্য হয়েছি। আপনি কি স্মাইল অথবা বিডিকমের লাইন ব্যবহার করেন? করলে ল্যান স্পীডে ডাউনলোড করার একটা লিংক দিতে পারতাম।
@পৃথিবী, ধন্যবাদ।আমার এক বন্ধুর স্মাইল আছে। লিঙ্কটা দিলে উপকৃত হব খুব।
@পথিক,
BBC The Human Body
সাথে বোনাস আরও কয়েকটা তথ্যচিত্র দিচ্ছি,
The Genius of Charles Darwin
Discovering Ardipethicas ramidus
আপনার বন্ধু যেহেতু স্মাইল ব্যবহার করেন তাই তিনি হয়ত ইতিমধ্যেই এই টরেন্ট সাইটের কথা জেনে গিয়েছেন। সাইট থেকে ডাউনলোড করার জন্য অবশ্যই আগে নিবন্ধন করতে হবে। অতিরিক্ত লোডের কারণে ট্র্যাকার মাঝে মাঝে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে টরেন্ট ক্লায়েন্টের ট্র্যাকার সারণীতে মাঝখানে ফাঁক রেখে নিচের দু’টো ট্র্যাকার যোগ করতে বলবেন, তাহলে ট্র্যাকার নিস্ক্রিয় থাকলেও উচ্চ গতিতে ডাউনলোড হতে থাকবে,
ব্রোঞ্জ প্যাকেজ ব্যবহার করলে সর্বনিম্ম ২০০ কিলোবাইট পার সেকেন্ড পাওয়ার কথা। খুব শীঘ্রই বিল মারের “রিলিজুলাস” তথ্যচিত্রটি আপলোড করব, নজর রাইখেন।
@পথিক, ইয়োর ইনার ফিশ থেকে আমি আর তেমন কিছু মনে হয় লিখবো না, তোমাকেই লিখতে হবে ওইটা 🙂
তুমি বইটা পড়ে মজা পাবে ভেবেই তোমাকে ওইটা পড়তে বলেছিলাম। হ্যা ঠিকই বলেছো, খুবই সোজা ভাষায় লেখা বইটা। শন ক্যরল এর এভু ডেভুর বইগুলাও দারুণ, এত কঠিন একটা বিষয় এতো সহজ করে কেমন করে যে লেখে এরা! বাংলায়ও যদি এরকম অনেক লেখক থাকতো বিজ্ঞানের কঠিণ বিষয়গুলা নিয়ে লেখার জন্য! তাড়াতাড়ি লেখা শুরু করো তোমরা পরবর্তী জেনারেশনের জন্য।