নেদারল্যান্ডে আসার পরপরই একটা ডাচ ফ্যামিলির বাসায় গিয়েছিলাম। পরিবারের ছেলেটি ১০/১১ বছরের নাম উইলিয়াম। প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। সোফায় বসতেই ঝটপট কথা শুরু করল আমার সাথে। ওর মা ইনেকার সাথে আমার আগেই পরিচয় এক জ়ন্মদিনের উতসবে। কথা প্রসঙ্গে ছেলেটি বলল তুমি বাংলাদেশের? আমি স্কুলে একটা প্রজেক্ট করেছি বাংলাদেশের ওপর! শুনে অবাক হলাম! আমরা প্রজেক্ট করেছি পড়াশুনার শেষ পর্যায়ে যদিও মাতৃভাষায় নয়। আমি তখনও ডাচ ভাষা আয়ত্ত করতে পারিনি। কথাবার্তা চলছিল ইংরেজিতে যেটা ওর মাতৃভাষা নয়।
এভাবে এদের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে জেনেছি অনেক পরে। আমার ছেলে লিওন প্রাইমারী স্কুলে শিখেছে প্যানকেক ভাজা। ডিম, আটা, দুধ, স্যাম্বাল(একধরনের পাকামরিচবাটা)দিয়ে ফ্রাইপ্যানে একটু তেল দিয়ে রুটির মত ভাজে।
বাংলাদেশের বাচ্চাদের পরীক্ষার সময় মুখস্থ করে বই গেলানো হয়। এখানে সে বালাই নেই। ক্লাশে পড়ানো, ক্লাশেই পড়া নেয়া, পরীক্ষা ও নম্বর দেয়া। বছরশেষে একটা পরীক্ষা নেয়। সেখানে বছরের সব নম্বর যোগ হয়। প্রাইমারী স্কুলে বাচ্চাদের বাংলাদেশের মত এতো বইও নেই। টিচার মুল বই থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় ফটোকপি করে বাচ্চাদের দেন বাচ্চারা শুধু ঐ টুকুই শেখে। এছাড়া পড়ার বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন গল্পের বই ও ম্যাগাজিনও পড়তে দেয় স্কুলে।
আরও পরে কলেজে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি শিক্ষক বইয়ের বিভিন্ন প্রশ্নউত্তর ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচনা লিখতে দিলে ওরা শুধু বইয়ের ওপর নির্ভর না করে কম্পুটারে ঐ বিষয়ের ওপর যত তথ্য আছে সব খুঁজে বের করে তারপর ঐ বিষয়ে লিখে টিচারকে জমা দেয়। সব ছাত্রছাত্রিরাই টাইপে পারদর্শী। সব কাজ ছাপিয়েই শিক্ষকের কাছে জমা দেয়।
একবার দেখি আমার কর্মক্ষেএ মিডিয়াটেকে ছাএ,ছাত্রিরা সব গাছেরপাতা হাতে করে এনেছে, বললাম এসব দিয়ে কি হবে? ওরা বলল সিলভিয়া (অংকের টিচার, এরা টিচারদের নাম ধরে ডাকে) দিয়েছে। এসব ফটোকপি করে দোর্ঘ্য, প্রস্থ মেপে জ্যামিতির সমাধান বের করতে। এদের শিক্ষাব্যাবস্থায় পারতপক্ষে মুখস্থবিদ্যাকে অনুতসাহিত করা হয় বলা চলে। সবকিছু বই থেকে নিয়ে ব্যাবহারিকভাবে প্রয়োগই এদের শিক্ষাব্যবস্থার নীতি। শিক্ষাব্যবস্থা বহুমাত্রিক, কোথাও একঘেঁয়েমি নেই। ছেলেমেয়েরা শেখার আনন্দেই শেখে, শিখতে হবে বলে শেখেনা। ছেলেমেয়েদের মনস্তত্ত অনুযায়ী এদের স্কুল, কলেজে শেখানো হয়।
এবার দেশে গিয়েছিলাম। আমার এক বান্ধবী এসেছিল দেখা করতে। কলেজে পড়ায়, বলল জানো বইগুলো পড়াতে পড়াতে একদম মুখস্থ হয়ে গেছে। এর বাইরে কিছু করবার নেই। তার অবকাশও নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরির্বতন আনতে হলে শিক্ষকদের তার সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন কর্মশালা ও ট্রেনিং দিয়ে যাতে তারা এসব ছাএছাত্রিদের শেখাতে পারেন। দেশে অনেকে শিক্ষার ওপর বিভিন্ন উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে যান, তারা বিভিন্ন কর্মশালা ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দেশের শিক্ষকদের শেখাতে পারেন এবং যারা শিখলেন তারা মাঠপরযায়ের অন্য শিক্ষকদের শেখাতে পারেন।
শুধু কম্পিউটার কিনে ক্লাশে রাখলেই হবেনা, তাকে কাজে লাগাতে হবে এবং সব শিক্ষকদের কম্পিউটার ব্যাবহারে ও প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহে পারদর্শী করতে হবে, যাতে তারা তা ছাএছাত্রিদের ভালোভাবে শেখাতে পারেন।
এদেরদেশে ছাএছাত্রিরা শুধু লেখাপড়াই করেনা এদের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুকরনযোগ্য। টিচাররা এতে গুরুত্তপুরনো দায়িত্ত পালন করেন। যেমন ক্যান্সারের জন্য, মরনোত্তর বিভিন্ন অর্গান হাসপাতালে জমা দেয়ার জন্য, আফ্রিকার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের জন্য, সুনামির জন্য এরা স্কুল ছুটির পর দলবেধে পাড়ায় পাড়ায় যেয়ে বাড়ি বাড়ি চাঁদা উঠায়। এতে বাবামায়েরাও সহযোগিতা করেন।
স্কুলের পর কম্যুনিটি সেন্টারে ছেলেমেয়েরা খেলাধূলা করে সেখানেও এসব কার্যক্রমে অংশ নেয়া হয়। এসবের ওপর টিভিতে অনুষ্ঠান দেখানো হয় এবং ছেলে, মেয়েরা কে কত অভিনব উপায়ে চাঁদা উঠিয়েছে তা অনেক কৌতুক মিশিয়ে দেখানো হয়, যাতে তারা উতসাহ পেয়ে ভবিষ্যতেও এসব কর্মকান্ডে অংশ নেয়।
এছাড়া প্রাইমারী ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও ছাএ,ছাত্রিদের বিভিন্ন মিউজিয়াম, দর্শনীয়স্থান, কলকারখানা, ক্যাম্পিং ও বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমনে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদের দেশের মুলধারার শিক্ষাব্যাবস্থার সাথে রয়েছে মন্টিসরি শিক্ষাব্যাবস্থার যাতে ছাএছাত্রিরা নিজের মেধা ও শেখার ক্ষমতা অনুযায়ী লেখাপড়া করে। এই শিক্ষাব্যাবস্থা নার্সারী থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যয় পর্যন্ত। এতে প্রত্যেক ছাএছাত্রিরা নিজস্ব মেধা অনুযায়ী আপন ইচ্ছায় আপন ছন্দে শেখার আগ্রহেই শুধু শেখে। তাদের ওপর কোনোধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়না। সব কিছুই তারা শেখে শিক্ষকদের ব্যাক্তিগত তত্তাবধায়নে। এই শিক্ষাব্যাবস্থায় তারা মনে করে প্রতেক শিশুই অনুপম!
মনে পড়ে যখন রংপুর সরকারী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে পড়তাম তখনকার কথা, আমাদের ড্রয়ংস্যার ইসমাইলহোসেন একবার এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিরাট বিরাট শক্ত কাগজ দিয়ে বড় বড় পদ্ম ফুল তৈরি করেছিলেন, সেই পদ্ম ফুলের ভেতর থেকে বেড়িয়ে দুই বোন নেচেছিল শুকনো পাতার নুপূর পায়ে……। অপূর্ব মুগ্ধতায় সেই দৃশ্য দেখেছি। আজ এতদিন পরে এতদেশ ঘুরে সব সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় জিনিস দেখেও মনে হয় ইসমাইল স্যারের সেই পদ্মের কাছে ওরা হার মেনেছে! আমাদের শিক্ষকদের হতে হবে সৃষ্টিশীল এবং ছাএছাত্রিদের কাছেও তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সৃষ্টিশীলতার আনন্দের মাধ্যমে সবকিছুই শেখা হবে সহজ!
এখানে সব ছাএছাত্রিদের আপ্রেন্টিসশিপ (শিক্ষানবিশি) করতে হয় ব্যাচেলর বা মাস্টারস লেভেলে অন্তত দশমাস শিক্ষাসম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠানে। যাতে কর্মজীবনে তাদের নিজসস কর্ম সম্পর্কিত সব ধরনের অভিজ্ঞতা থাকে। তাতে করে চাকরী পেতে কোনো অসুবিধা হয়না।
একজন ডাক্তের, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা যদি শহরে মানুষ হয়ে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে একজন শিক্ষক পারবেননা কেন? গ্রামেই তো দেশের সিংহভাগ ছাএছাত্রিদের বাস, সংখ্যাগরিস্ঠ প্রজন্মকে অবহেলা করে একটা জাতি কোনোভাবেই এগুতে পারেনা। অবশ্য সেজন্য শিক্ষকতার পেশাকে অর্থকরীভাবে আকর্ষনীয় করতে হবে সরকারকে। যাতে মেধাবী ছাএছাত্রিরা ভবিষ্যতে এই পেশায় আসেন। একটা দেশের ভবিষ্যত গড়ার কারিগরদের অবহেলা করার কোন অবকাশ নেই। আসলে তাদের প্রাধান্য দেয়া উচিত সবার আগে। একজন ভাল শিক্ষকই একজন ভাল ছাত্রের জন্ম দিতে পারেন!
নেদারল্যান্ড
০৫/১১/২০০৭
লেখিকা বলেছেন তিনি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। গত মাসের একটা ঘটনার চিত্র এখানে তুলে ধরতে চাই। আমি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ঘটনাস্থল রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষ (এক সময়ে টিফিন আপা’র বসার যে জায়গাটা ছিল সেটাই এখন রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষ। মানে লাইব্রেরীর সামনের বারান্দাটা)।
————————————-
শনিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জের একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, লাইব্রেরিয়ান এবং তিন জন এমএলএসএস পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা, সিনিয়র সাংবাদিকদের সামনে জাতীয় সংসদের এক জন মাননীয় সদস্য, রংপুর-০২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সাংসদ আনিছুল ইসলাম মণ্ডল (যিনি ঐ স্কুল কমিটির সভাপতি) এবং এক জন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা, রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস খালেদা আক্তার’র
কথোপকথন :
সাংসদ : “আপনি আমাকে এই ফোনে কল দিয়েছিলেন”? (প্রধান শিক্ষিকাকে নিজের হাতে ধরা ফোন দেখিয়ে দিয়ে)
প্রধান শিক্ষিকা : ‘দিয়েছি’
সাংসদ : ‘আপনি বলেছেন প্রতিটি নিয়োগে আমরা একটা অনারিয়াম পাই’? (এই পর্যায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিছু বলতে গেলে সাংসদ আনিছ মণ্ডল বলেন, “পুলিশ ঘুষ খায়, এমপি ঘুষ খায়, আর এনারা ঘুষ খাননা অনারিয়াম পান”)
প্রধান শিক্ষিকা : ‘জি বলেছি’।
সাংসদ : ‘আপনি কি আমাকে বলেছেন, গতবারের নিয়োগে আমি অনারিয়াম কম পেয়েছি’ ?
প্রধান শিক্ষিকা : ‘যা সত্য তাই বলেছি’।
সাংসদ : ‘আজকের পাঁচ পদে নিয়োগের জন্য কি আপনি আমার কাছে প্রতিটি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লক্ষ টাকা দাবী করেছেন’?
প্রধান শিক্ষিকা : ‘জি!! না না না না না আমি এমন কোন কথা বলিনি’!
সাংসদ : ‘জনৈক একজন সিনিয়র সাংবাদিককে (মাহাবুব রহমান হাবু, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, যুগান্তরের রংপুর অফিস প্রধান) উদ্দেশ্য করে, “আপনারা সবই শুনলেন। আমার কিছু বলার নেই। এই মহিলা আমার কাছে প্রতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে দাবী করেছেন! জাতীয় সংসদের একজন সদস্যর কাছে”।
প্রধান শিক্ষিকা : ‘না না, আমি এমন কথা কখনই বলিনি। আমাকে সবাই মিলে অপমান করার জন্য এসব করা হচ্ছে’। এসব বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর নিজ অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস খালেদা আক্তার।
ছবিতে সাংসদ আনিছ মণ্ডল (চেয়ারে বসা সাদা পাঞ্জাবী)। এই প্রধান শিক্ষিকা বরবার অভিভাবক ও সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করার তার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন একজন। তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
———————–
আপনার লেখা ভালো লাগলো। সাথে অন্যদের মন্তব্য। যদিও কোন দিক নির্দেশনা পেলাম না। আর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন কথাও আসলো না। সেই বিশেষায়িত শিক্ষার কি প্রয়োজনীয়তা আছে তা আমার জানা নেই। মাদ্রাসা থেকে এইচ.এস.সি সমমান পরীক্ষা পাশ করে যদি তাঁদের মধ্যে ৭৫ ভাগ বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পরে তাহলে তো সাধারণ বা চলমান শিক্ষা ব্যবস্থাতেই সেটা হতে পারে। এই বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা কেন? ঐ লাইনে পরে কে কি হতে পেরেছেন? আমি এখনও তেমন কোন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের দেখা পাইনি যিনি মাদ্রায় শিক্ষা ব্যবস্থায় সরবোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত (মাস্টার্স সমমান)।
ইংলিশ মিডিয়াম নিয়ে কি বলার আছে? এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে ইংরেজী জানাটা এই সময়ে খুব দরকারী। কিন্তু তাই বলে বাংলা শিখবে না তারা? আমার ভাস্তি ইংলিশ মিডিয়ামে গ্রেড সিক্সে পড়ে। তাকে যদি বলি ৬৯ বলতে সে উনসত্তুর বলতে পারবে না ঠিক মতো কিন্তু সিক্সটি নাইন বলতে তার সমস্যা হয়না। সে যে বাংলায় এতোই কাঁচা আমার নিজেরই লজ্জা লাগে। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে কেন আমাদেরকে কষ্ট করে প্রতিটি পরীক্ষার আগে “মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা” এই রচনা পড়াতে বাধ্য করানো হতো?
@শুভ,
অনেক শুভেচ্ছা লেখাটা মনযোগ দিয়ে পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
আসলে লেখার সময় মাদ্রাসার কথা মাথায় ছিলনা।
শুধু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা চিন্তা করেছি।
আর শিক্ষাটা যেন বিশ্বমানের হয়, যাতে সম্পদহীন বাংলাদেশের প্রজন্ম সারা পৃথিবীতে মেধার জোরে
স্থান করে নিতে পারে।
আরব দেশ গুলিতে অবর্ননীয় কুলী, মুটেগারী করতে না হয় পরবর্তী প্রজন্মকে!
দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে কত রথী মহারথীরা আছেন দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য!
আর দিলেও তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছবে কি?
আর স্কুলের কথা জেনে কষ্ট লাগল, আরও লেগেছিল যখন বেহায়া এরশাদের সুপারিশে শাহানা আপা প্রধান শিক্ষয়ত্রী হয়েছিলেন!
স্কুলের হোষ্টেলেও আমি ছিলাম(আব্বা বদলী হওয়াতে) যখন এতিমন, আমিতন আপারা প্রধান আর সহকারী প্রধান ছিলেন! প্রশাসনই ছিল অন্যরকম!
3 idiot মুভি টা দেখেছেন কেউ? এডুকেশন সিষ্টেমের ঘুনে ধরা দৈন্য দশা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার খুব পছন্দের মুভি।
মনে হল অনেক দিন পরে একটা লেখা পড়ে কষ্ট পেলাম।
কি শিখছি কি শেখাচ্ছি আমরা নিজেরাই জানি না।
তা হলে পরিবর্তনটা করবো কি করে?
ধন্যবাদ।
সৃজনশীলতার বিকাশে একটা বড় বাধা মনে হয় মনে রাখা দরকার। আমাদের বিশাল জনসংখ্যার চাপে প্রতিযোগিতা এত ভয়াবহ যে মানুষ শুদু শর্টকাট খুজে। এটাই স্বাভাবিক।
নৈতিক সততার প্রশ্নও এখানে অনেক সময় এসে যায়। আমাদের সময় পাবলিক পরীক্ষাগুলির সময় নকলের মহা উতসব পড়ে যেত। মফস্বলের দিকে তো নকল সরবরাহকারীদের সাথে পুলিশের রীতিমত দাংগা হাংগামা বেধে যেত। নকল করতে দেবার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিলও বের হত। প্রশ্ন আউট করা, পরীক্ষার পর খাতার পেছনে ধাওয়া করা, বোর্ড অফিসের কেরামতি করে নম্বর বাড়ানো এসব আমার নিকট আত্মীয়দেরঅ অনেককেই করতে দেখেছি। এতে কেউ তেমন কিছু মনেও করত না। অনেকটা স্বীকৃত কালচার ছিল।
@আদিল মাহমুদ,
ঘুরে-ফিরে আমাদের সকল সমস্যার মূল একটাই, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। প্রতিযোগিতা শুধু ভয়াবহ কঠিন না, ভয়াবহ অসুস্থও। চিন্তা করা যায় হাজার-লক্ষ ছেলেমেয়ে মুখস্থ করার প্রতিযোগীতা করছে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হ্যা, যতই উপার বাতলাই না কেন একটা পর্যায়ে গিয়ে এই জ্বলন্ত বাস্তব সমস্যার কাছে আমাদের হার মানতেই হয়।
তবে সে পর্যায়ে যাবার আগেই যতটুকু আমাদের আয়ত্বে আছে ততটুকুই আমরা করছি না। এটাই দূঃখের।
ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে দেখলাম শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে মহিলাদের উপর প্রায় সবার সামনে একদল লোকে এসে যা করে গেছে। এরপর যা ভেবেছিলাম তাই। বিভিন্ন ব্লগে রব উঠেছে সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থাই এর জন্য দায়ী।
মানসিকতার পরিনবর্তন ঘটানোও খুবই দরকার।
তবে আশার কথা হল এই বছর থেকে সরকার সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করছে, এখন আর প্রশ্ন “কমন” পড়ার কোন ব্যাপার নেই। মুখস্থ করে বড়জোড় তিন মার্ক পাওয়া যায়। বাংলা-বিজ্ঞান-সমাজ প্রভৃতি বিষয়গুলো এখন থেকে পোলাপানকে বুঝে পড়তে হবে। এই পদ্ধতি রুট লেভেলে ভালই কিন্তু শিক্ষকেরা যদি নব উদ্যমে নোট ব্যবসা শুরু করেন তাহলে তো আর কিছু করার থাকে না।
আমি মনে করি দেশের শহর ও গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার মানের মাঝে যে ব্যাপক ফারাক আছে তা কমিয়ে আনতে না পারলে সব প্রকার ইতিবাচক পরিবর্তনই মাঠে মারা যাবে, তা সরকারের যতই সদিচ্ছা থাকুক। গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে আগে সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত।
@পৃথিবী,
সৃজনশীল পদ্ধতিতে থিয়োরিটিক্যালি ভালো কিন্তু practically এটা ভালো কাজ করছে না। এখনও শিক্ষার্থীরা সব মুখস্থ করছে, আমি এ কিছু প্রশ্নপত্র দেখেছি, সেগুলোয় উপরের প্যাসেজের সাথে নিচের প্রশ্নের খুব কমই মিল পাওয়া যায়। শিক্ষকরাও কষ্ট করে প্রশ্ন তৈরি করতে চায়না, তারা গাইড বই থেকে প্রশ্ন করে, ছেলে-মেয়েদের ব্যপক হারে সৃজনশীল-গাইড পড়ার দেখেই অবস্থার ভয়াবহতা বোঝা যায়। আমাদের শিক্ষকদের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে কোনো ভাল পদ্ধতিও কার্যকর হবেনা। আজকাল অনেক ভালো স্কুলেও গণিতের উপপাদ্য মুখস্থ করতে উৎসাহিত করা হয়, ভয়াবহ ব্যাপার।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো!! (কেন? আমাদের স্কুলের এক স্যার বলতেন, “কানা মামার পকেট মারলে মামা দেখবে না!!তাই কানা মামাই ভালো!”) সৃজনশীল ব্যবস্থাটা দিয়েও সেই অবস্থাই হচ্ছে। উপরে সৃজনশীল দেখায়ে ভিতরে পকেট ঠিকই মেরে দিচ্ছে!
তবে এটুকু ভরসা যে এটা দুষ্ট গরু না, যে গোয়াল শুন্য করে রাখতে হবে। তাই কানা মামার চোখে ভবিষ্যতে কর্নিয়া রিপ্লেস করে দেয়া অসম্ভব হবে না। খালি আরেকটু যত্নবান হতে হবে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আপনি মনে হয় স্ট্যানডার্ড প্রশ্নগুলো দেখেননি। আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা বোর্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ায় আমরা স্ট্যানডার্ড প্রশ্নগুলো দেখেছি। প্রাক-নির্বাচনী ও নি্র্বাচনী পরীক্ষায় বাংলা ও ধর্মের প্রশ্ন বোর্ড থেকে করা হয়েছিল। “বঙ্গবাণী” কবিতাটি থেকে একটা প্রশ্নের দৃশ্যকল্পে এফ.এম রেডিওর ভাষা নিয়ে একটা গল্প দেওয়া হয়েছিল। প্রমথ চৌধুরীর “বই পড়া” প্রবন্ধ সম্পর্কিত একটা প্রশ্নে আরজ আলী মাতুব্বরের কাহিনী দেওয়া হয়েছিল(আমাদের স্কুলের প্রশ্ন)। প্রশ্ন ঠিক মত করতে পারলে এই পদ্ধতি বেশ ভাল। শুধু একটু সময় দরকার।
এ ধরণের লেখা যখন পড়ি তখন ভিতরে ভিতরে এক অদম্য ক্রোধ জন্ম নেয়। কেন আমার দেশটা এমন? কি অপরাধে আমরা এমন জীবন-যাপন করছি? নতুন প্রজন্মকে কি দিচ্ছে এই দেশ? এদেশের ক্ষমতাবান মানুষদের নির্বুদ্ধিতা আমাদের সৃজনশীলতাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে, আমাদের করে দিচ্ছে অথর্ব। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের বলতেও শোনা যায় আজকালকার ছেলেমেয়েরা অপদার্থ, তারা সত্যিকার কোনো ভাল কাজ করতে পারেনা, দেশকে ভালবাসেনা। কিন্তু কারা আজ আমাদের অপদার্থ হতে বাধ্য করছে? কেন আমাদের চিন্তা করার শক্তি জন্মের পরেই নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে? উত্তর দেবার কেও আছে কি? কেন আমরা দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব? আমাদের আলো-হাওয়া দিয়ে বড় করছে তাই? এ দেশ আমাদের সৃষ্টিশীলতাকে ধ্বংশ করে আমাদের অপদার্থে পরিণত করছে সেটা নিয়ে কেও ভাবে কি?
এ নিয়ে একটি ব্লগ লেখার ইচ্ছা থাকল
@রামগড়ুড়ের ছানা,
দোষ আপনাদেরনা, দোষ আমদের অদূরদর্শী শাসকদের!
তারা জনগণকে শাসন ও শোষণ করেছে যুগ যুগ ধরে!
জনগণের মঙ্গল ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে কাজ করেনি।
প্রচলিত নিয়মের ভূল ধরিয়ে দিতে হবে, অবিরাম লেখালেখি করতে হবে।
লেগে থাকতে হবে যা বিশশাস করেন তা নিয়ে।
আপনার সপ্নের জন্য কাজ করুন, দেখবেন ফলে গেছে একদিন!
সবাইকে ধন্যবাদ!
রবীন্দ্রনাথ সেই কবেই বলে গেছিলেন যে আমাদের পড়াশুনার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। আজ়ো পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি।
বিদেশে আসার পর বুঝতে পেরেছি যে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা আসলেই কি মারাত্মক রকমের পশ্চাতপদ। মনে হয় ব্রিটিশ মাছি মারা কেরানী বানাবার যেই ব্যাবস্থা করে গেছিল তার কোন উন্নয়নের দরকার কেই মনে করেননি। এই ব্যাবস্থায় হয়ত অফিসার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সবই বানানো যায়, যায় না শুধু সৃজনশীলতা গুনসম্মত মানুষ যারা এগিয়ে নিতে পারেন সমাজকে বহুগুন।
আমাদের দেশে সৃজনশীলতার কোন দাম দেওয়া হয় না। ছেলেবেলা থেকেই শেখানো হয় ফার্ষ্ট সেকেন্ড হতে হবে, ভাল ছাত্র হওয়া মানে যে ফার্ষ্ট সেকেন্ড হওয়া বোঝায় না এই ধারনাই আমাদের কারো নেই। মেট্রিকের ইলেক্টীভ ম্যাথের জটিল জটিল বীজগনিতের অংক কি অপরিসীম মেধার অপচয় করে মুখস্ত করতে দেখেছি। জোর সালের প্রশ্ন একরকম, বেজোড় সালের প্রশ্ন আরেক। ৩ টা রচনা পড়লে ১ টা কমন। পরীক্ষার আগে শুধু সাজেশনের জন্য স্যারদের কাছে পড়া এরকম কত কি। এই পরিস্থিতি এমনকি বুয়েটে এসেও দেখেছি তেমন পরিবর্ৎন হয় না। বুয়েটেও প্রথম শ্রেনী পাবার জন্য তেমন পড়াশুনা বা সৃজনশীলতার কোনই দরকার হয় না। যেকোন সাধারন মানের ছাত্রই কিছু নোট (চোথা) আগের কবছরের প্রশ্ন ঘাটাঘাটি করে সারা বছর ক্লাস না করেই তা পেতে পারে। পড়াশুনার সাথেও বাস্তব জগতের যোগ অতি সামান্য। বিদেশে দেখেছি শিক্ষকেরা হয়ত চলতি কোন বাস্তব গবেষনার ডাটা থেকে প্রবলেম সলভ করানো শুরু করেছেন।
বিদেশে দেখেছি বাচ্চাদের কিভাবে সৃজনশীলতার বিকাশ ছেলেবেলা থেকে করা হয়। বছরের বাচ্চাকে হয়ত ডাইনোসরের পুতুল দিয়ে দেওয়া হল; ক্লাসের সবাই এক রাত নিয়ে পরের দিন নিয়ে আসবে। ক্লাসে সবার সামনে খোলা মনে বলবে তার কি মনে হয়। নামতা বা গরুর রচণা মুখস্ত করার কোন বালাই নেই। এতে তার যেমন সৃজনশীলতার বিকাশ হয় তেমনি প্রেজেন্টেশন স্কীল হয়। আমাদের এই আরেকটা ব্যাপারের গুরুত্ত্ব একেবারেই দেওয়া হয় না। প্রেজেন্টেশন স্কীল বা কথা বলা যে কত দরকারী একটা আর্ট এটা আমাদের কোনদিন বুঝতে দেওয়া হয়নি। ওদের শেখানো হয় যা সত্য মনে হয় নির্ভ্যে বলবে, আমাদের সেখানো হয় অনেক হিসেব করে কথা বলবে। ময় মুরুব্বীর সামনে অনেক সত্য কথাও বলতে নেই, বেয়াদবী হয়। আমার মনে হয় এতে আমাদের মনো বিকাশ অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হয়।
দেশে এখন গেলে উন্নাসিকের মত শোনালেও মনে হয় মানুষ কি বেসিক ভদ্রতা সভ্যতা জানে না? খামোখা চেচিয়ে কথা বলে কেন? কারন ছাড়া দূর্ব্যাবহার করারই বা মানে কি? দোষ তাদের নয়, এগুলির প্রয়োযনীয়তা তেমন করে শেখানো হয়নি।
আর স্কুলের বেশীরভাগ শিক্ষক শিক্ষিকা যে গরু ছাগলের মত যেভাবে পেটাতেন তা মনে হলে এখনো আতংকে ভুগি। ক্লাসে কতদিন এমন ঘটনা ঘটেছে সকাল থেকে সারাদিন এমনকি দিনের পর দিন সারাদিন ক্লাসে সবার সামনে নীল ডাউন হয়ে আছি। অপরাধ হয়ত ক্লাসে বাদরামী। তবে সে অবস্থাও উপভোগ করেছি, কারন দলে সমমনা বেশ কজন। ওখানেও চলছে নুতন মাত্রায় শয়তানী, সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শাস্তির মেয়াদও। মুরগা পদ্বুতি মনে হয় অনেকেই জানেন না। হাটু ভাজ করে নীচু হয়ে হাটুর তল দিয়ে হাত বের করে কান ধরে আধা বসা আধা দাড়ানোর মাঝামাঝি একটা অবস্থান। সেই অবস্থায় আবার বেতের বাড়ি। এখন বুঝতে পারি আসলে দরিদ্র শিক্ষক শিক্ষিকারা তাদের হতাশা মনে হয় এভাবেই ছেলেপিলেদের ওপর দিয়ে ঝাড়তেন।
তবে আজকাল শুনি বেশীরভাগ কিন্টারগার্ডেন টাইপ স্কুলে অনেকটা বিদেশের কায়দায় শিক্ষা দেওয়া হয়। কতটা কাজ হয় জানি না। হয়ত এক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
ওদের পদ্ধতি ভাল, তবে ভাষার মাধ্যম ইংরেজি। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে তুলনামুলকভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতেই পাঠদান করা হয়, কিন্তু পোলাপান বাংলায় খুবই দুর্বল।
@পৃথিবী,
হ্যা, জানি। আমাদের সময়েও তাই ছিল। যারা ইংরেজী মিডীয়ামে পড়ত তাদের মোটামুটি অন্য গ্রহের প্রানী বলে মনে হত। তাদের বাংলাতেও এক্সেন্ট আসত। আর লিখিত বাংলার তো কথাই নেই। আমার এক জুনিয়র রুমমেট ছিল। সে দেশে সারা জীবন ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ে হাইস্কুলে এসে আমেরিকায় ভর্তি হয়। তার একবার “আশের” মাংস খাবার শখ হয়েছিল। মজা করতে তাকে প্রায়ই আমরা বাংলা বই ধরিয়ে দ্রুত পঠনের পরীক্ষা নিতাম। তবে এখন তার অবস্থা অনেক ভাল।
তবে এখন মনে হয় ইংরেজী মিডিয়ামগুলি এদিক থেকে কিছুটা হলো উন্নতি করেছে। আর আগেকার দিনে ইংরেজী মিডীয়ামে পড়াটা ছিল শুধুমাত্র ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন সবার ছেলেমেয়েই দেখি অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত ইংরেজী মিডীয়ামেই পড়ছে। তাদের কথাবার্তায় মনে হয় আগেকার মত বাংলা প্রতি অবজ্ঞা ভাবটা এখন কিছু হলেও কমেছে।
@আদিল মাহমুদ,
নারে ভাই। আমি এখন পর্যন্ত অনেক ইংরেজি মিডিয়ামের পোলাপান দেখলাম, হাতে গোণা কয়েকজন বাদে সবাই ফালতু ভাবের উপর চলে, পৃথিবীকে এরা রঙিন কাচের ভিতর দিয়ে দেখে। যারা ইংরেজী মিডিয়ামের ছাত্রদের পড়ায় তারাও এদের সম্পর্কে একই কথা বলে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আসলে এদের দোষ কি খুব দেওয়া যায়? আমাদের প্রতিযোগিতা এত ভয়াবহ যে সবাই চায় নিজের ছেলেপিলেকে অন্যের থেকে এগিয়ে রাখতে। এরা ইংরেজী ভালবেসে যে এমন হয় তা মনে হয় না। ইংরেজী মিডিয়ামে পড়লে চাকরির বাজার ভাল হতে পারে, বিদেশে যাওয়া সহজ হতে পারে এমন ধারনা থেকেই মনে হয় মানুষ পড়ায়।
তবে এসব বিদ্যালয়ের দোষ হল এরা সামগ্রিকভাবেই ছেলেমেয়েকে নিজ দেশ, দেশের ভাষা, কালচার সম্পর্কে হয়ত অনিচ্ছাকৃতভাবেই খারাপ ধারনার বীজ বপন করে দেয়।
এদের দোষ আমি কখনোই দেই না। দোষ আমাদের সিস্টেমের, আমাদের সমাজ ব্যবস্থার, দোষ আমাদের মিডিয়ার যারা আমাদের বোঝায় আড্ডা-গান-গার্লফ্রেন্ড এসবই হলো জীবন
আমাদের বাসার পাশে একজন কলেজের ম্যাডাম থাকেন। উনি ‘পলিটিকেল সায়েন্স’ এর উপর মাষ্টার্স করেছেন। তিনি একদিন আমার কাছে এসে বললেন, “তোমার কাছে কি কোনো ভালো রচনা শিক্ষার বই আছে, আমি ছাত্রীদের নারী-শিক্ষার উপর একটা রচনা শেখাতে চাচ্ছি”। আমি অতি অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।
আপনার সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
আমাদের দেশে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছেননা।
যারাইবা আসছেন তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যা করা দরকার করছেননা।
সেজন্যই হয়ত ছেলেমেয়েরা ভুরি ভুরি গোল্ডেন জিপিও পেলেও পড়াশুনার মান বাড়েনি।
আপনাকেও ধন্যবাদ!
গোল্ডেন জিপিএ? জিপিএ ৫? আমরা যারা কিছুদিন আগে ssc, hsc শেষ করেছি তারা ভাল করেই জানি এগুলো পাওয়া জলের মত সোজা। একটু কৌশল করে বইয়ের কিছু নির্দিষ্ট অংশ পড়লে, নির্দিষ্ট কিছু অংক করলেই ৫ পাওয়া যায়। এ দেশে আজ সত্যিকারের ভালো ছাত্রের মূল্যায়ন নেই, যে লেখাপড়া করে সেও ৫, যে সারা বছর ফাকি দিয়ে পরীক্ষার আগে পড়ে সেও ৫, সবাই একসাথে ৩২দন্ত বিকশিত করে পেপারে ছবি ছাপায়। মহা ফাকিবাজ ছেলেটা যখন পরিশ্রমী ছেলেটার মত ৫ পায় আর দাত কেলায় তখন পরিশ্রমী ছেলেটার মনের কি অবস্থা দাড়ায় তা অনেকেই কল্পনা করতে পারেনা।
@সৈকত চৌধুরী,
একদিন আমার কাছে বিএ পাস একজন ভদ্রলোক আসলেন কাউন্সিলের হোম ডিপার্টমেন্টের একটি এপলিকেশন ফরম নিয়ে। তিনি বাংলাদেশী কম্যুনিটি সেন্টারের কো-অর্ডিনেইটর, এবং পার্ট- টাইম ইন্টারপ্রিটর। কাউন্সিল ফরমটির বাংলা অনুবাদ চায়। ফরম তিনি অনুবাদ করে নিয়ে এসেছেন, আমাকে শুধু এক নজর দেখে দিতে হবে। তিনি Seating Room এর বাংলা করেছেন- বশার গর। Hope এর বাংলা লিখেছেন আসা
এদের মত মানুষ যদি বাংলাদেশের মন্ত্রনালয়ে, সচিবালয়ে থাকে তাহলে এ দেশের ভবিষ্যত আর কি হবে?
আমাদের দেশের প্রাইমারী শিক্ষকদের যে বেতন দেয়া হয় তাতে খালি সারা মাসের খাওয়া খরচ চালানোও অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পরে। তার সাথে আরো আছে সারা বছর লেগে থাকা আজেবাজে সরকারি কাজ (ভোটার তালিকা, আদম শুমারী, হন্য তন্য আরো অনেক কিছু। কে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করে আর কে করে না সেইটাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইমারি টিচারদের দেখে আসতে হয়)। তাহলে সৃজনশীলতার সুযোগ কই? হাই স্কুলের শিক্ষকদের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও তা যথেষ্ট নাহ, তাই তাদের প্রাইভেট পড়াতে হয়।
শিক্ষকদের আর কি দোষ বলেন!!
@তানভী,
আমার মনে হয় আমাদের অযথা জেটবিমান,মিগফাইটার না কিনে আমাদের
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো দরকার।
যা হবে আমাদের বিশাল মানবসম্পদের উন্নয়ন!
আসলে সরকারী কাজ সরকারী কর্মচারীদেরই কাজ।
যতদিন বাংলাদেশ সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা দেবেনা, ততদিন এ অবস্থার পরিবর্তন হবেনা।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
“আমার মনে হয় আমাদের অযথা জেটবিমান,মিগফাইটার না কিনে আমাদের
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো দরকার।”
– এই অতি সাধারন কথা কেন লোকের মাথায় ঢোকে না এই রহস্য আমি কিছুইতেই বুঝি না। যে দেশের লোকের একবেলা খেতে পায় না ঠিকমত তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিরক্ষার নামে শ্বেতহস্তি পোষার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে কে জানে।
বিশাল জনসংখ্যা আমাদের জন্য এক ভয়াবহ সমস্যা। সেই সমস্যা বহুগুনে বৃদ্বি পায় তাদের শিক্ষা দীক্ষা ঠিকমত না নেওয়া গেলে।