ক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বে (জুন পর্যন্ত) মাত্র ২৫-৩০জন বাঙালী অফিসার সক্রিয় যোগদান করেন যদিও কর্মরত প্রায় ১৫০ জন বাঙালী অফিসারের যুদ্ধে যোগ দেয়ার সুযোগ ছিল । অফিসারদের তুলনায় সাধারণ সৈন্যদের মধ্যেই সংগ্রামী চেতনা বেশি পরিলক্ষিত হয় । এই চেতনা ও দূরদৃষ্টির অভাবেই বহু বাঙ্গালী অফিসার অসহায়ভাবে বন্দী ও পরবর্তীকালে নিহত হন ।
যথার্থ চেতনা , দূরদৃষ্টি ও প্রত্যুতপন্নমতিত্ত্বের গুনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া সুচনা লগ্নের অন্যতম হিরো ছিলেন চট্রগ্রামে অবস্থিত ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমান । জিয়ার যুদ্ধে যোগদানের কাহিনী জানা যাবে তার ’একটি জাতির জন্ম ’ (’৭২ সালে রচিত , ’৭৪ সালে বিচিত্রায় প্রকাশিত ) নিবন্ধ থেকে । জিয়া প্রথমে ছিলেন ১ নং সেক্টরের অধিনায়ক , পরে নিয়মিত ব্রিগেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক হন । ( মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্স নিয়ে আলাদা লিখব ) । বর্তমান নিবন্ধে তৎকালীন সরকার বা সিইনসি কর্তৃক জিয়ার বিরুদ্ধে নেয়া তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরা হবে ।
১ নং সেক্টর থেকে ক্লোজড ও নির্বাসনঃ
১০ মে ’৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনীর চিফ অব ষ্টাফ লে. কর্ণেল রব স্বাক্ষরিত মুক্তিবাহিনীর প্রথম পোষ্টিং অর্ডার অনুসারে (সংযুক্ত দলিল দ্রষ্টব্য) মেজর মীর শওকতকে জিয়ার নিকট হতে সেক্টর , ৮ম বেঙ্গল ও অন্যান্য ট্রুপসের কমান্ড গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়া হয় এবং জিয়াকে পরবর্তী দায়িত্ব বুঝে নিতে চিফ অব ষ্টাফের নিকট রিপোর্ট করতে বলা হয় । পরে সিইনসি’র মৌখিক নির্দেশে জিয়া মেঘালয়ের তেলঢালায় অবস্থান করেন । জিয়ার সহযোদ্ধা মেজর শাফায়াত জামিল ও উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খানের অভিন্ন মত হলঃ
‘চক্রান্ত করে নিতান্ত জুনিয়র অফিসার ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামকে এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক মেজর জিয়াকে কিছুদিনের জন্যে হলেও গাড়ো পাহাড়ের তেলঢালায় নির্বাসিত করা হয় । ’ ( রেফারেন্সঃ কর্ণেল শাফায়াত জামিল , একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর , ২০০০ সাহিত্য প্রকাশ , ঢাকা পৃ৮৮ ; উইং কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান , একাত্তরে উত্তর রনাঙ্গন , বর্ণতরু ঢাকা , ২০০৫ পৃ৫৯ )
কি সেই চক্রান্ত ? কেন এই চক্রান্ত ?
জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি
আশির দশকে এগার নম্বর সেক্টরের একজন কোম্পানি কমান্ডার আমাকে জানান তিনি জিয়ার বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত একটা ওয়ারেন্ট হাতে পেয়েছিলেন । আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি । ১৯৯১ সালে বি এন পির সংসদ সদস্য ও জিয়ার ঘনিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা উইং কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান যখন জিয়াকে গ্রেফতারের নির্দেশ সম্পর্কিত তথ্য জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন তখন তথ্যটি উড়িয়ে দেবার অবকাশ কোথায় ? (রেফারেন্স , সংসদের কার্যবিবরনী ; নাজিমুদ্দিন মানিক , একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের দিনিগুলি ; খন্দকার মাজহারুল করিম , ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি , আজকের কাগজ , ১২ অক্টোবর ১৯৯৮ )
কেন এই গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করা হয় ?
জিয়াকে তার ফোর্সসহ সিলেটে মুভ করার নির্দেশ:
উত্তর রনাঙ্গনের কামালপুর -বক্সিগঞ্জ অক্ষ থেকেই ঢাকা অভিযান সম্ভব-এই ধারণায় জিয়া , তাহের ও মিত্রবাহিনী একমত ছিলেন । সুবাদে কামালপুর শক্ত ঘাটিতে একাধিকবার আক্রমন পরিচালনা করা হয় ।মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর এই পরিকল্পনার কথা সম্যক অবহিত থাকা সত্ত্বেও জিয়াকে দ্রুত সিলেটের ৫ নং সেক্টরে মুভ করার হুকুম দেয়া হয় অক্টোবরের ৮ তারিখে । ১০ তারখি জিয়া, শাফায়াত প্রমুখ সিলেটের পথে রওনা হন ।
অথচ ৫ নং সেক্টরে জিয়ার সম সিনিয়রিটির মেজর মীর শওকত দায়িত্বরত ছিল । মিত্রবাহিনীও তার সাথে ছিল । তথাপি জিয়াকে তার ফোর্সসহ বদলীর উদ্যোগকে একটি রুটিন কাজ বলা যায় কি ? ( রেফারেন্স, কর্ণেল শাফায়াত জামিল ,প্রাগুক্ত ; উইং কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান , প্রাগুক্ত )
কেন এই ব্যবস্থা নেয়া হয় ?
আজব একটা ঘটনা পেলাম।
শামসুল হুদা চৌধুরীর “একাত্তরের রনাঙ্গন” বইটা থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উপর তথ্য খুঁজতে গিয়ে সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলীর সাক্ষাৎকার পড়লাম। ওখান থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি।
আজব ব্যপার! এই সাক্ষাৎকারেই আগের আরো অনেক প্রশ্নের অনেক কঠোর ও সোজাসাপ্টা সত্য উত্তর দিলেও তিনি এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
অবশ্য মীর শওকত আলীকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি চালু আছে (যেমন তিনি নাকি জিয়া ক্ষমতায় যাবার পর স্বাধীনতা ঘোষনার ড্রাম তত্ত্ব চালু করেছিলেন!!!! সে আরেক লম্বা কাহিনী!!)
তবে এই বই প্রকাশিত হয় ১৯৮২ তে, সম্ভবত জিয়ার মৃত্যুর পরে (আমার জিয়ার মৃত্যুর সাল মনে নেই)। যদি জিয়ার মৃত্যুর আগে হয় তবে না হয় জিয়ার কাছ থেকে ভয়ের আশংকা ছিল, কিন্তু যদি তার মৃত্যুর পরেই হয় তবে মীর শওকত আলী কেন এড়িয়ে গেলেন?
@তানভী,
মীর শওকতের এই সাক্ষাতকার নেওয়া হয় ৮১ সালের সেপ্টেম্বর কি অক্টোবরে, যদিও বই বের হয় ৮২ সালে।
মীর শওকত তখন কায়রো না লন্ডনে বাংলাদেশ এম্বাসাডর। জিয়া না থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায়। আরো বড় কথা ওসমানী তখনো বেচে, যিনি আর্মির সবারই গড ফাদার। সংগত কারনেই তিনি রেখে ঢেকে কথা বলেছেন। তবে স্বাধীনতার ঘোষনা প্রসংগে যা বলেছেন তা বিএনপির সবাই পড়া দরকার।
ড্রাম তত্ত্ব ও সত্য। এই তত্ত্ব তিনি দেন ৯১ সালে বিএনপির মন্ত্রী হয়ে। মন্ত্রীত্ত্বের গরমে অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও মনে হয় নৈতিক স্খলন হয়েছিল। তবে তার নৈতিকতা নিয়ে আরো প্রশ্ন আছে, কর্ণেল তাহের যুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর এডজুন্ট্যান্ট মাষ্টার হবার পর মীর শওকতের নামে দূর্ণীতির অভিযোগ করেছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে তাহেরের ফাসীর দেখভাল করেন। ফাসীর দিনও তিনি ঢাকা জেলে গিয়ে ফাসী কাঠ পরীক্ষা করে দেখেন যা কোনমতেই তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি তো ম্যাসকারেনহাসের “লিগেসি অব ব্লাডে” পড়েছি যে ১৯৭৫ এর ঘটনার সময় থেকে এবং এর পরেও ওসমানী প্রায় অবাঞ্চিততে পরিনত হন। তার কথাও কেউ কেয়ার করত না।
@তানভী,
মাস্কারেনহাসের অনেক কথা নিয়ে বিতর্ক আছে। ফারুক সোজা বলেছে যে মাঙ্কারেনহাস ইতিহাস লেখিনি, থ্রীলার লিখেছে।
১৫ ই আগষ্টের দিন থেকে ওসমানী খুনী মেজরদের সাথে তাদের গড ফাদারের মতই ছিলেন তারা দেশে থাকা পর্যন্ত। মোশতাকের শপথ, জিয়ায় ক্ষমতায় আরোহন, এর প্রতিটা পদক্ষেপেই তিনি ছিলেন সক্রিয়। জিয়া ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকে তিনি সাইড লাইনে যেতে বাধ্য হন।
তিনি কখনোই ক্ষমতায় ছিলেন না, কিন্তু সবার কাছেই ছিলেন অনেকটা অভিভাবকের মত।
আসলে কার কথা যে সত্য কারটা মিথ্যা তা জানা খুবই মুশকিল। অনেকে আছেন রাজনৈতিক কারনে বিকৃত করে বলেন, আবার অনেকে আছেন ভুল তথ্যও অজ্ঞাতসারে দেন।
হুয়ামূন আহমেদ তার “জ়োছসনা জননীর গল্প” উপন্যাসের ভূমিকায় এস সম্পর্কে কিছু লিখেছেন। একই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন লোকের বর্ননায় কিভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
মানিক ভাই, পড়তে যাইয়া উষ্ঠা খাইয়া পইড়া গেলাম। এমন মজার লেখায় অল্পতেই হার্ডব্রেক কইরা থামাইয়া দিবেন ভাবিনাই। দ্রুত ছাড়ুন পরের পর্ব।
এই শেষটা কেন অসম্পূর্ন রেখে দিলেন?
সোয়াত জাহাজ নিয়ে নাকি কি গন্ডগোছিল? জিয়া নাকি কি সমস্যা করেছিলেন? আমি এটা সম্পর্কে এত ভাল ভাবে কিছু জানিনা। তবে রফিকুল ইসলামের(১নং সেক্টর কমান্ডার) লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বইতে মনে হয় কিছু আছে। তবে সেটা নিয়েও শাহরিয়ার কবির অন্য আরেক বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যে জিয়া বেচে থাকতে কেন এই অভিযোগ তোলা হয় নি(বইটা জিয়ার মৃত্যুর পর লেখা। তাই অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব হয় নি।)
যাই হোক, আমি এই ব্যাপারে পুরোই অন্ধকারে , তাই আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত লেখা আশা করছি।
এভাবে হিন্দি সিরিয়ালের মত ক্লাইমেক্স রেখে লেখা শেষ করবেন না!!!