তুমি,
ভাবছো মুখে যা বলা যেতো তা’ চিঠিতে লিখছি কেনো? কারণ আমি চাই এই চিঠিটা তুমি সময় নিয়ে পড়ো। বারবার পড়ো।
তোমার সাথে আমার পরিচয় কত দিনেরই বা হবে? বছর দুয়েকের বেশী তো নয়। এর মাঝে জীবনের তুঙ্গতম আনন্দের সময়ে আমরা পরষ্পরের সান্নিধ্যে কাটিয়েছি। তোমার কাছেই নত হওয়া যায়,তোমাকেই বাঁধনহীন সব বলা যায়, তাই তোমার পরামর্শ চাইবার জন্যেই এই চিঠি লেখা।
পরশু বিকেলে আমাদের দুজনের জীবনেই বিশাল এক পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। এমন একটা পরিবর্তন এসেছিলো যেদিন দমকা হাওয়ার মত তুমি আমার জীবনে যুক্ত হয়েছিলে। আমিও তোমার ।
প্রথম দেখা রিহার্সাল রুমে,আমার পরিপাটি সাপ বেনীতে হাত রেখে উশকো খুশকো চুল আর রোগাটে মুখের তোমাকে দেখেছিলাম। আমার মোটা কাঁচের চশমার ভেতর দিয়ে দেখেছিলাম তোমার হাতে ধরা বই আজিজুল হকের ‘নকশালদের শেষ সুর্য্য’ আর সুনীলের ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’। এর পরের সময়টা মহা ঘোরের সময়,মহা মোহের সময়। মোহভঙ্গের আশা করিনি আমরা কিন্তু আশংকায় ভুগেছি পরিচয়ের পরদিন থেকেই। যদিও জানি এ মোহ ভাঙ্গার নয়।
বোধহয় বেশ খানিক বাড়াবাড়িও করে ফেলেছিলাম সম্পর্কটা নিয়ে। তুমি আমার এক ব্যাচ নীচে পড়তে। এমনটা হয় না তাই না? অসম প্রেম! সমপ্রেম কি আমাদের তা’ জানা ছিলো না। শুধু জানতাম একই চিন্তার, একই কল্পনার মানুষ আমরা। আমরা গাঢ়তম বন্ধুত্বে জড়িয়ে ফেলেছিলাম পরস্পরকে।
তোমার কোন প্রিয় শিক্ষক বললেন জয়দেবপুরে পাতা ঝড়েছে ভীষণ, তাপ মাত্রা বেড়ে যাবে। ওমনি তুমি আর আমি ছুটলাম দেখবো বলে, খালি পায়ে ঝড়া পাতায় হাঁটবো বলে। এমন করে ছুটেছি শীতের পাখী দেখতে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝিলের ধারে। কার্তিক সন্ধ্যের ঠান্ডায় নিঃশ্চুপ ঝিলে ওদের ভাসতে দেখেছি। একসাথে উপভোগের মাত্রাটা যেনো বেশীই ছিলো। তুমি বলতে এই কেমিষ্ট্রি ঠেকাবে কি করে? মনে মনে বলতাম, ‘ঠেকাচ্ছে কে?’
মনে আছে একবার রথের মেলা দেখবো বলে লোকাল বাসে গাদাগাদি করে পৌঁছে গেছি ধামরাইয়ে। বাসের ছাদে মাছের ঝাঁকা থেকে ঝাপটায় ঝাপটায় মাছের জল এসে গা ভিজিয়েছে। সারা গায়ে মাছের আশঁটে গন্ধ। তবু সে কি আনন্দ।
মাছের কথায় মনে হলো, একবার সোয়ারী ঘাটে এক হাঁটু জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখেছি আর ফাটা কাপে চা খেয়েছি। তুমি অভিমান করেছিলে তোমার কাপের হাতলও নাকি ভাঙ্গা ছিলো। বড় কসরত করে ধরেছিলে কাপটা। তোমার অভিমানের নাগাল পেতাম না, তবে জানতাম কীভাবে একটা দুটো মিষ্টি কথায় তোমার অভিমান ভেসে যায় নিমিষেই।
ভাষা ইনস্টিটিউটের কাছে গুরুদুয়ারায় তুমি আর আমি চত্বরে বসে গানের সুরে মেতে উঠতাম । ধর্মের বাইরে শান্তি খোঁজার জন্যে আমাদের কি আমুদে প্রয়াস ছিলো। আমরা দুজনেই প্রকৃতিকে ভালবাসি বলেই হয়তো আশ্বিনের ছলছল মেঘের দুপুরে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা না বলে পাশাপাশি বসে কাটিয়ে দিয়েছি। শিউলি ফোঁটা সকালে বিরান মাঠে বিধবার সিঁথির মতো মলিন পথ ধরে হেঁটে গেছি কত না সময়। বেলে জোৎস্নায় যখন বাতাসে হাস্নুহেনা ফুলের মাতলামো, আমরা তখন ২০ এর রাতে শহীদ মিনারের সামনে আলপনা আঁকা দেখেছি। প্রতিটা ক্ষণ আমরা ভালো লাগায় ভেসেছি, প্রতিটা পল আমার মনে আছে, জানি তোমারও।আর এও জানি থাকবেও অনন্ত কাল।
তোমার সাথে মতপার্থক্য যে হতো না তা নয়। সত্যজিত রায়ের ‘পিকু’ দেখে তুমি রায় দিয়েছিলে অপর্না সেনের পরকীয়ার যুক্তি আছে। আমি বলেছিলাম হয়তো। তবে পরকীয়ার কারণে সন্তানকে অবহেলার কোন যুক্তি নেই। তর্ক হয়নি, তবে দুজনে দুজনের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম।
আজ তোমাকে লেখার উদ্দেশ্য একটাই। আগামী পরশু আমাদের নতুন জীবন, যৌথ জীবনের শুরু। আচ্ছা,আর দশ জনের মত আমরাও কি বলতে পারি আমাদের প্রেমের সফল পরিণতি হতে চলেছে?
জানো তো পরশুর পর থেকে যে তুমি আমার প্রথম পাওয়া ২৭ পাতার প্রেম নিবেদনের চিঠির কথা শুনে হাসতে সেই তুমিই বিরক্ত হবে এই আলোচনায়। যে আমি পরকীয়াকে সমর্থন করিনি সে আমিই এর পক্ষে কথা বলবো। যে তুমি বলতে, আমায় আগলে রেখো, বহন করো, সে তুমিই বলবে আমি প্রেমের অত্যাচার করি। দম নিতে পারছো না আমার খবরদারিতে।
যে আমি তোমার উশকো খুশকো চুল দেখে বন্য ঘোড়া পোষ মানানোর, বশ করার আনন্দ পেতাম। সে আমিই বলবো, দেখতে ঘোড়া গাড়ীওয়ালা মনে হচ্ছে। প্রফেশনাল লুক দরকার জীবনে উপরে উঠতে গেলে।
তোমার বিসিএস পরীক্ষার সময়ে টিফিন ক্যারিয়ারে করে দুটো বাটিতে খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। তোমার তাতে সেকি আনন্দ। আর সেই তুমিই টেবিলে তিন ধরনের রান্নার কম দেখলে কপাল কুঁচকে থাকবে।
অসময়ে চুল উঠে যাচ্ছে বলে আমায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিলে ডঃ আজমের জোনাকীর তেল আনতে। সে তুমি মেঝেতে চুল পড়ে থাকতে দেখলে বা খাবারে চুল পেলে বলবে, মাথায় একটা কাপড় বেঁধে রান্না ঘরে ঢুকতে পারো না? তোমার অভিমান ভাঙ্গাবার কোন তাগিদ কিন্তু আমি আর বোধ করবো না,তা আমি জানি।
মাটির গয়না,তামার গয়না আমার খুব প্রিয়। গাওছিয়ার বারান্দা থেকে একজোড়া পায়েল কিনে দিয়েছিলে মনে আছে?যতদিন রঙ চটে যায়নি, ততদিন আমি ছমছম করে হেঁটেছি তোমার সামনে ওগুলো পরে। কিন্তু এখন বলি এর পর অমন কম দামী কিছু ঘরে ঢুকলেই লংকা কান্ড বাঁধাবো।।
ভাবছো প্রেম বা মোহ থাকলে এগুলো কি ঘটবে? হ্যাঁ,ঘটবে। কারন, যৌথ জীবনের দাবীই অন্যরকম । পেয়ে যাবার পর পাবার আকুতি কমে যাবে এটাই নিয়ম।তোমার আমার কালক্ষেপণ হয়েছিল অবসরে। যখন নিত্য দিন নিত্য বেলা সঙ্গে থাকা হবে তখন কিন্তু এতো আবেগ কাজ করবে না। এটাই স্বাভাবিক। তাইই বলি পরশু আমরা কি নতুন জীবনে প্রবেশ করে বাকী জীবন কপাল চাপড়াবো ভুল সিদ্ধান্তের জন্যে। নাকি কষ্ট সুখের সংসার করবো নাকি অন্য কোথাও সংসার পেতে লুকিয়ে লুকিয়ে স্মৃতির জানালা খুলে না পাবার কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলবো? বালিয়াড়ী তীরে দীর্ঘ তৃষ্ণাকাতর কাল ক্ষেপণ করবো?
আর এ সমাজে তো একা থাকাও সম্ভব নয়, দুজনেই আমরা প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হবো। বিয়ে করেননি কেনো? শারীরিক সমস্যা? নাকি অন্য কিছু?
সত্যিই বলোতো আমাদের কি করা উচিত? কেননা বিরহেও যেমন কষ্ট তেমনি মিলনেও কষ্ট। কোনটা তুলনামুলক কম কষ্টের? আচ্ছা কষ্টের পরিমাপ কি তোমার জানা আছে?
আমরা কোন কষ্টটাটা বেছে নেবো বন্ধু?
ইতি,
আমি
এতো সুন্দর লেখাটা বড্ড দেরি হয়ে গেলো পড়তে। আমি বেশি সুন্দর আর গুছিয়ে বলতে পারছিনা। অদ্ভূত মাদকতায় ছেয়ে গেল মন। আরো লেখার আশায়।
আপনার লেখাটি খুব খুটিয়ে পড়েছি। আপনার কাব্যময়তা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। …আপনার গদ্য পড়তে পড়তে বুদ্ধদেবের ‘তুমি কেমন আছ’ গল্পের কথা খুব মনে পড়লো…গদ্যে কবিতার আন্তহীন আবেগ বা কবিতার বিধ্বংসি গীতলতার ভক্ত অন্তত আমি নই; কারণ এতে, আমার ধারণা, গদ্যকারের গদ্যশক্তির সম্ভাবনা তিরোহিত হয়। তবু আপনার লেখাটি আমার ভাল লেগেছে এই কারনে যে বিদ্যমান পরিসরে এই আবেগ এই কাব্যময়তার একটা আনিবার্যতা তো স্পষ্টতই টের পাওয়া যাচ্ছিলো…তাছাড়া এই আনুভুতিগুলি নিরেট গদ্যশৈলীতে ধারণ করাও ছিলো বেশ ঝুকিপুর্ন।
আপনার সমুহ আবেগের সৌন্দর্য ছাড়াও লেখাটি আবারও শপেনহাওয়ারের সেই অমোঘ সংশয় ও সিদ্ধান্ত , প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবাহের প্রাসঙ্গিকতা/ অসারতা, রসিলিনির সেই জগদ্বিখ্যাত চলচ্চিত্র A voyage to Italy র দাম্পত্য জীবনের কিছু শূন্যতাবোধের আখ্যান… ইত্যাকার নানাবিধ ভাবনা আমাকে বিমূঢ় করে রেখেছে। সার্ত্রে-বুভেয়ারের বহু চর্চিত সম্পর্ক অটুট থাকার পেছনে বোধকরি কাজ করেছিলো গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে এক নতুন বলয়কে আবিষ্কার করার আব্যাহত প্রচেষ্টা, যেখানে ব্যাক্তি তার নিজস্ব সীমাহীন স্বাধিনতাসহ সয়ম্ভু; সে কিছুতেই সম্পর্কের দাসে পরিনত হয় না যা ধীরে ধীরে এমনকি তার আপন সত্তাকে ও গ্রাস করতে উদ্যত হয়; এর তোড়ে মুগ্ধতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মিথষ্ক্রিয়া/ভাব বিনিময়ের যাবতীয় উপাদান অসারতায় রুপ নেয়… খুব অনায়াসে কিছু প্রসঙ্গের অবতারনা আপনি করেছেন যা আমাকে খুব ভাবিয়ে গেছে..আলোচনার এক ফাকে সত্যজিতের পিকুতে পরকীয়ার প্রাসংগিকতা নিয়ে দুজ়নের যে আপাত বিরোধ; আবার তা-ই বিবাহ পরবর্তি জ়ীবনে মুখ্য হয়ে উঠার যে আশংকার ইঙ্গিত আপনি রেখেছেন, এর প্রধান কারন ই হল (আমি মনে করি), সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক কিছু অনাধুনিক নীতি-নিষ্টার (ethics) নিগড়ে মানুষের বিস্ময়কর স্বাধীনতারবোধকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায়; সম্পর্ক কেন একঘেয়ে হয়ে ঊঠছে, এই অবধারিত প্রশ্নকে এড়িয়ে বরং ব্যাক্তিকে কিছু হিত/অহিত বোধের দাসে পরিনত করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন হয়… আনন্দের জন্যে বেচে থাকার ইচ্ছাকে (heddonism) স্টু্যার্ট মিল ব্যখ্যা করেছিলেন মানুষের প্রবৃত্তিগত বৈশিষ্ট হিসাবে…বার্গম্যানের silence চলচ্চিত্রে এই বিষয় আশয়গুলির আরও গভির আরও মর্মান্তিক ব্যাখ্যা দেখতে পাই… এখানে পত্রলেখিকার অবলোকন বেশ নৈর্ব্যাক্তিক যা আমাকে বেশ স্পর্শ করেছে, যেন পত্রলেখিকা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের সিমাবদ্ধতার কথা আচ করতে পেরেই নিজের মাঝে গতানুগতিক একঘেয়ে বন্ধনে হাপিয়ে উঠা, পিকুর সেই অনিবার্য গৃহবধুকেই দেখতে পাচ্ছেন, অথবা সেই সম্ভাবনাও কিন্তু নস্যাত করা হয়নি যে পত্রপ্রেরকও একই কারনে এক সময় হয়ে ঊঠতে পারেন এক গৃহত্যাগি পরকীয়া প্রেমিক… আমার ব্যাক্তি জীবনে এই বিষয়গুলি এখোন খুব নাড়িয়ে যাচ্ছে বলে আপনার লেখায় আমি মাঝে মাঝে আমার নিজেকে আবিষ্কার করে খুব অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম… বাংলা টাইপে অভ্যস্ত নই বলে সব কথা গুছিয়ে বলতে পারিনি, আর নানাবিধ বিষয় খুব কুরে খাচ্ছিল; কিন্তু এসবের অবতারনা করতে এখন খুব ক্লান্তি লাগছে।…কী যে হিজিবিজি লিখেছি, শীত আর শীত রাত্রি তা জানে! আজ এখানেই, রাত্রি গভির হয়ে উঠেছে, এখন দূর বরফ পাহাড়ের অপার হতে মোসার্ট আমার উদ্দেশে একেকটা ভুজংগ তীর ছুড়ে দিচ্ছেন… আমি এই তীরগুলির ক্ষত বুকে নিয়ে বিছানায় ঘুমুতে যাব; লেখাটি পড়ানোর জন্যে অনেক ধন্যবাদ!!!
পড়ে মনটা ভরে গেলো।
@সৈকত চৌধুরী,
মন্তব্যের জন্যে সবিনয় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ম্যাম গীতা দাসের মতো আমারও ভাল লাগলো ‘শিউলি ফোঁটা সকালে বিরান মাঠে বিধবার সিঁথির মতো মলিন পথ ধরে হেঁটে গেছি কত না সময়।’ – এই উপমাটি। চমতকার একটি লেখা পড়লাম ……
অপু, লেখাটা পড়ার জন্যে আর মন্তব্যের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কেয়া,
কি নিটোল,নিপুন হূদয়ের আকুল-অনুভূতিমূলক আমাদের নশ্বর জীবনের চাওয়া-পাওয়ার লেনদেন, প্রেম-বিরহের সোনাঝরা ঝরঝর সরল কাব্যময় প্রেমের লেখা আমাদের উপহার দিলেন।
যাকে চাই যতক্ষন না তাকে পাবো ততক্ষন না পাওয়ার অনুভূতির দোলাচলে মানবজীবনের এক অনন্ত দূর্বার আকর্ষন সে-ই মানুষটির প্রতি ক্ষরস্রোতা প্লাবনের মতো বয়ে চলে যার নাম “প্রেম” , আর যখনই এই প্রেম প্রেম খেলার পরিনতির শেষে প্রিয় মানুষটিকে যদি পেয়ে যাই তাইলে হয় মিলন বা সেক্স। ছোট কথায় যাকে বলে , “না পাইলে প্রেম,পাইলে কাম”।
এই প্রেম ও কামের খেলা খেলতে খেলতে একটা সময়ের পর একগেঁয়েমির কারনে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকারা,নর-নারীরা দুজন দুজনের প্রতি যে এক অনন্ত দূর্বার আকর্ষন ছিল তার ভাটার টান আমাদের জীবনে নিয়ে আসে।তখন শুধু বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে থাকা (তৃতীয় বিশ্বে )অথবা একা একা জীবন-যাপন করা (উন্নত বিশ্বে ) অথবা নতুনের সন্ধানে আবারো পথ চলা ———————শেষতঃ একদিন মহাকালের গর্ভে বিলীন হওয়া।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
প্রেমের ক্ষেত্রে যৌনতার ভূমিকাকে অস্বীকার করছি না আমি। প্রেমেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। কিন্তু এই অংশে পৌঁছানোর অগের অংশকে যেভাবে আপনি ‘খেলা খেলা’ হিসাবে বর্ণনা করলেন তার সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে আমার। আপনার মত আমি প্রেম আর সেই প্রেমজাত কামের মধ্যে আলাদা কোন সীমারেখাও টানতে চাই না। না পাওয়া পর্যন্ত প্রেম আর পেলেই কাম এই সীমারেখা টানার মধ্য দিয়ে নারী পুরুষের প্রেমকে আসলে খাটো করা হয়। প্রেমের মূল উদ্দেশ্যই তখন দাঁড়িয়ে যায় আপনার ভাষায় মিলন বা সেক্স। অথচ আমরা জানি প্রেমের ক্ষেত্রে দুজন মানুষের মানসিক টিউনিংটা ভীষণভাবে জরুরী। প্রেমে শুধু শারীরিক আকর্ষন না, আরো বহু কিছুই নির্ধারক হিসাবে কাজ করে। নাহলে যৌবন অতিক্রান্ত হবার পরে নারী পুরুষের আর প্রেম থাকার কথা নয়। অথচ আমরা দেখি শুধু তৃতীয় বিশ্বেই নয়, উন্নত বিশ্বেও অনেক বুড়োবুড়িই শুধুমাত্র প্রেমের কারণেই একসাথে থেকে যায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মেয়েদের শারীরিক শ্রীর চেয়েও বুদ্ধিমত্তা বা অন্যান্য গুণাবলীর প্রতি আকর্ষণ অনেক বেশি।
@ফরিদ আহমেদ,
বিপদে ফেললেন দেখছি ।তবে মানব জীবনের ক্ষেত্রে প্রেম-ভালোবাসা ও কামের যে ব্যাখ্যা বা ধারনা আপনি দিয়েছেন তার সাথে একমত হয়েও আমি বলব আসলে চুড়ান্ত অর্থে “না পাওয়া কে প্রেম এবং পেলে কামের” বিষয়টিই দাঁড়ায়।জৈবিকতার আগুন বা দাহ আমাদের শরীরে আছে বলেই তো এতো আকুতি,সে-ই আকুতির ভাব-বিলাস,মনের লেনদেন আমরা এক একজন এক একভাবে রোমান্টিকতা প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করি। একজন কে আমার ভালো লাগে , কেন লাগে ? সেটার ব্যাখ্যা তো ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক সর্বোপরি সাংস্কৃতিক মান অনুযায়ী দেশ,কাল ও পাত্রভেদে ভালোলাগার,ভালোবাসার,প্রেম ও কামের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন দিবে।প্রেম-কামের যে ধারনা আমাদের দেশে বিরাজমান তা কিন্তু প্রাচ্যত্যে ঠিক তার উল্টো।যেহেতু এ অনুভূতিগুলি আপেক্ষিক তাই সময় ও প্রযুক্তির তারতম্যের ধারাবাহিকতার কারনে মানব জীবনের অনুভূতিগুলোও মনে হয় পাল্টায়।
দেখি কেয়ার এ ব্যাপারে কি মন্তব্য আসে !!
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
দূর ছাই, আমি তো মনে করি, না পাওয়াও প্রেম/ পাওয়াও প্রেম, বিরহেও প্রেম/ মিলনেও প্রেম, যৌবনেও প্রেম-/ বার্ধক্যেও প্রেম, সুখেও প্রেম/ দুঃখেও প্রেম। প্রেম সদা বিরাজমান, জীবন্ত, চলমান, সার্বক্ষণিক। আর কাম! বাতাস পাইলে ফুলে, না পাইলে ফুটা বেলুন।
কোথায় যেন পড়েছিলাম- কামের আনন্দ থাকে মাত্র অল্পক্ষন/ প্রেমের আনন্দ থাকে সমস্ত জীবন।
নাকি প্রেম জিনিষটাই আমি বুঝিনা, আল্লায়ই জানে।
কেয়া,
ছোটরা তো কিছু বলতে লজ্জা পেল।ওরা কি গানটি শুনে নি ?
‘তোমাকে পাওয়ার আগে জ্বলে জ্বলে ভাবতাম মিলনেই প্রেম হবে সত্য
তোমাকে পাওয়ার পরে জ্বলে জ্বলে বুঝলাম বিরহেই প্রেম ছিল সত্য।’
এবার আমার অনুভূতি —–
বিধবার সিঁথির মতো মলিন পথ চমৎকার উপমা।
শেষ হয়ে হইল না শেষ — ছোটগল্পের আঙ্গিক ধরে রেখেছে।
সর্বোপরি,নায়িকার এ দোলাচল কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সকলকেই দোলায়।
বিধবার সিঁথির মতো মলিন পথ – উপমাটা আমার কাছেও দারুণ লাগলো। এ দোলাচল মনে হয় সার্বজনীন, কিন্তু কেয়ার লেখা একান্তই কেয়াসুলভ – সুন্দর, সাবলীল, ভাবনা-জাগানিয়া।
@ডঃ ইরতিশাদ,
উপমাটা ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ হোল। সঙ্গে সঙ্গে ভাবছি এর কিন্তু একটা ধর্মীয় পটভুমি আছে। ব্যাখা আছে। সামাজিক আঙ্গিক আছে। সধবার রক্তিম সিথিঁর প্রচলনটা নিয়েও বিতর্ক আছে, আদো এটি গৌরবের কিনা? আমরা সে বিতর্ক করি মাঝে মাঝে কিন্তু বিধবাদের সঙ্গে যে পরিতাজ্যের মত ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে কথা বলি কম। বিধবাদের যেন মলিনতাই মানায় অথবা সমাজ তাদের কাছ থেকে মলিনতাই আশা করে। অবশ্য আদিতে যেমন হত, এখন যেমন হচ্ছে তেমন যুগে যুগে সতত হবে এটা মানি না, আমার বিশ্বাস সমাজ পাল্টেছে আরো পাল্টাবে।
@গীতা দি,
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। দোলাচল! সুন্দর শব্দ ব্যবহার করলেন তো! কত না মিষ্টি শব্দ – না বলতে বলতে, না লিখতে লিখতে হারাতে বসেছে, তাই ভাবি। কৃতজ্ঞতা আবারো।
ভাল লাগল।
বিরহে কষ্ট আছে জানি, জানিনা মিলনেও আছে কি না। বিরহের কষ্ট আমি পেয়েছি, তাই আফসোস থেকে যায়, মিলনের কষ্ট পাইনি বলে।
ভাল লাগাটা আবারও জানিয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ।
গল্পটা পড়ে আনন্দ পেলাম।
@মিঠুন, চেষ্টা করলে আফসোস থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বৈকি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
সেই যে রবার্ট ফ্রস্টের মন কাড়া কবিতা ” The Road Not Taken” এর কথা ভাবুন তো। যে পথই নেয়া হোক না কেন – অন্যটার প্রতি ক্ষেদ বোধ হয় রয়েই যায়।
Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;
Then took the other, as just as fair
And having perhaps the better claim,
Because it was grassy and wanted wear;
Though as for that, the passing there
Had worn them really about the same,
And both that morning equally lay
In leaves no step had trodden black
Oh, I kept the first for another day!
Yet knowing how way leads on to way,
I doubted if I should ever come back.
I shall be telling this with a sigh
Somewhere ages and ages hence:
two roads diverged in a wood, and I —
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.
Copyright © 1962, 1967, 1970
by Leslie Frost Ballantine.
লেখাটা পড়েছেন বলে আনন্দিত হলাম।
@মিঠুন,
কি জানেন, আপনার মন্তব্য পড়তে গিয়ে একটা কথাই বার বার মনে হচ্ছিল যে আমরা আমাদের বোধ বা আবেগগুলোকে মনে হয় বেশিরভাগ সময় ভাষায় প্রকাশ করি না, বা করতে চাই না। এর কিন্তু প্রয়োজন আছে। আমরা যত সহজে বিরহের কথা, কষ্টের কথা বলি তত সহজে কিন্তু আবার আনন্দের কথা বলি না। জানি আমাদের সামাজিক শিক্ষণ বা সামাজীকিকরণ ওভাবে হয়েছে। কিন্তু dialogue – free flow of meaning between two or more বা কথোপকথন না থাকলে কিন্তু একধরনের পাথর কষ্ট চেপে বসে। silence বা নীরবতা কিন্তু মারাত্মক জিনিষ। এটা বাড়তে থাকলে আমরা বোধের উপর প্রলেপ মাখাই, অবজ্ঞা করি বা নির্দিষ্ট সেই বোধটা থেকে পিছু হটে যাই। এতে করে ভেতরে অসন্তোষ দাঁনা বেধে যা সৃষ্টি করে তা কিন্তু আশে পাশের মানুষের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা হয় অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি, মানুষকে একই ছাঁচে ফেলে বিচার করি অথবা নির্দিষ্ট সেই বোধের বিষয়টা আসলেই আঘাত করি বা করতে উদ্যত হই।
এ জন্যেই বলছি কোন কষ্ট থাকলে সে বিষয়ে কথা বলে, লিখে বা অন্য কোন ভাবে তা’ থেকে মুক্তির প্রয়োজন।
আমার কাজের একটা অংশ কাউন্সেলিং বলেই হয়ত কথাগুলো লিখলাম।
আমার লেখাটা পড়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
লেখাটা সুন্দর। কিন্তু এইটা নিয়ে মন্তব্য করার মত বয়স হয় নাই!! আমি এখনো ছুডো!! তাই বড়দের উপর ছেড়ে দিলাম, তাহারা জ্ঞানগর্ভ সমালোচনা করিবেন!
:rose2: 😀
আমারও একই কথা 😀
@রামগড়ুড়ের ছানা,
লেখাটা পড়েছেন-তাতেই আমি আনন্দিত।
@তানভী,
ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি লেখাটা পড়ার জন্যে।