সেদিন তোমাদের বাড়ির হুলো বেড়ালটার সাথে কথা হচ্ছিল
পার্কের বেঞ্চিতে একসাথে বসেছিলাম আমরা
কথায় কথায় বলল,
তোমার সাংসারিক অবস্হা নাকি খুব একটা ভাল যাচ্ছে না
স্বামীর ব্যাবসা মন্দা
ক্রমশই আরও খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে
আগের সেই জমকালো বিলাসিতা আর নেই
এই নিয়ে বেড়ালটা খুব আফসোস করছিল
আগে নাকি ওর জন্য আলাদা মাছ কেনা হত
তারপরে নাকি খাবারের উচ্ছিষ্ট দেয়া শুরু হল
আর এখনকার অবস্হাতো বুঝতেই পারছি
খাবারের খোজে পার্কে
কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না
বেঞ্চি থেকে উঠতে উঠতে ভাবলাম
ব্যাটা অকৃতজ্ঞ মিথ্যুক।

পার্কের মাঠে হাটতে হাটতে আরো একটু সামনে এগোলাম
হঠাত একটা কাকের সাথে পরিচয়
এ কথায় সে কথায় কাকটা বলল,
তোমাদের গাড়িটা নাকি চুরি হয়ে গেছে
যার জন্য তোমাকে নাকি এখন
রিকসা চড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে
ভাবলাম ও নিশ্চই নতুন ফ্যাশন, তারপরও
সেতো একরকম ভালোই হল
ঐ যন্ত্তদানবটার ধূসর কিংবা কালো কাচের মধ্যো দিয়ে
এই কালো মানুষটাকে হয়ত চোথেই পড়ত না চলতি পথে,
এখন সে চিন্তা সেই, এমনকি
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে একটা ডাকও দিতে পারো আমায়
মম্দার দিনে এই বা কম কি।
সে যাক, কাকটার কা কা রবে ক্রমশ বিরক্ত হচ্ছিলাম
তাই বিদায় নিয়ে সম্মুখে পা বাড়ালাম।

বাসায় এসে তোমার প্রিয় ইজি চেয়ারটাতে বসলাম
তোমার কথা আমি রেখেছি জানো,
এই চেয়ারটাতে আমি ছাড়া আর কাউকে বসতে দিই নি।
বোধকরি ক্ষণকালের জন্য একটু তন্দ্রা মত এসেছিলাম, হঠাত
কিচির মিচির শব্দে চমকে তাকালাম, দেখি
একটা ছোট্ট চড়ুই।
চেয়ারের হাতলটাতে এসে দাড়িয়েছে,
সম্ভ্রান্ত ভঙ্গিতে হাটছে আর
তোমার সাংসারিক দূর্দশার কথা বলছে
কি জানো, কিছুটা বেদনা মিশ্রিত বিরুক্তি নিয়েই
চড়ুইটাকে বিদায় জানাতে হল।

ক্ষনকাল পরে আকাশ চিড়ে বৃষ্টি নামল, অসময়ে বৃষ্টি
মনে পড়ে এরকম বৃষ্টিতে তুমি আমি অনেক ভিজেছি একসময়
ভাবনায় ছেদ পড়ল একটা প্রজাপতিকে দেখে
বৃষ্টিতে বিদ্ধস্ত একটি প্রজাপতি
ভেতরে ঢুকে চেয়ারটার হাতলে ডানা মেলে বসল
আর তখনই আমি এই অসময়ে বৃষ্টির কারন বুঝতে পারলাম
বুঝতে পারছিলাম কেন আজ প্রকৃতি এতো বিবর্ণ ছিল
পাখিরা কেন এত উদ্বিগ্ন ছিল।
আমি ভেজা প্রজাপতিটার গায়ে তোমার
চোখের পানি দেখতে পাচ্ছিলাম
স্পষ্ট।
ঐ চোখের পানি আমার যে বড় চেনা
ঐ চোখের এক ফোটা পানি মহাসমুদ্রে
রাখলেও যে আমি তা সেচে উদ্ধার করতে পারব
কেননা,
তোমার চোখের জল যে সেখানে এক বিন্দু তরল
নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করবে। সেই আমি কি তা
ভুল করতে পারি ?