ছুটির দিনগুলোয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলাম। কোকসাই কোরিও কাইকান এর নীচতলার বড় হলঘরটিতে সপ্তাহান্তে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন থাকতো বিদেশী ছাত্র আর তাদের পরিবারের জন্যে। ইকেবানা, জাপানীজ কথ্য ভাষা শেখানো, ওরিগামী, নাচ, গান, জাপানীজ বিডিং( গয়না বানানো-এটি একটি দারুণ শিল্প, খুব ভালোবেসে শিখেছিলাম আমি),রান্না এসবের ওপর কোর্স হতো। অনেকসময় নাটকও হতো, তবে সেইসব নাটকে বিদেশীদের অভিনয় করার প্রশ্ন ওঠেনা এমনই কঠিন ফর্ম্যাল ভাষা ব্যবহৃত হতো।
এরকমই এক ইকেবানা ক্লাস এ আমার পাশে এনে নবাগ্তা তাসনিম কে বসিয়ে দেয়া হলো একদিন। কি, না তাদের ধারণা হয়েছে আমরা একই ধরণের সংস্কৃতি রিপ্রেজেন্ট করি, মনে হয় ভাষাও একই(হুম!)সুতরাং, আমি ওকে আগের ক্লাসগুলো বুঝিয়ে দিতে পারব। আমি ওকে বলি,” কোন ধারণা আছে তোমার কি করতে হবে তা নিয়ে?
-হা, পাতার মধ্যে মাঝে মাঝে ফুল গুঁজে দিতে হবে, কৃত্রিম শিল্প!
-কিছুটা, তবে আইডিয়াটা কিন্তু প্রকৃতি থেকে নেয়া। আমি বলি।
আমি ওকে ইকেবানার জ্যামিতিক বিষয়গুলো বোঝাবার চেষ্টা করি। ছেলেবেলায় ঠাকুমাকে দেখতাম পিতলের ঘটে আম পাতার পল্লব গুঁজে দিয়ে সঠিক ফুলটি খুঁজে বেড়াতেন, ফুলটির আকৃতি, রঙ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইকেবানায় ঠিক সেই ব্যাপারটি অন্যভাবে উপস্থাপিত হতে দেখে আমি বিস্মিত! আমি ওকে বলে ফেললাম পূজোর থালায় ফুল সাজাবার বিষয়টি।
-তুমি কি ইন্ডিয়া গিয়েছো কখনো?
-হ্যা, আমি পড়েছি ওখানে। কেন বলতো?
-তুমি তো হিন্দুদের অনেক বিষয় জানো, তাই।
-তোমার কথা বুঝলাম না আমি। আমি বলি; ভারতে তো শুধু হিন্দুরাই থাকে না, তোমাদের দেশের থেকে বেশী মুসলমানও থাকে।
– জানি, কিন্তু তারা কিভাবে সেখানে আছে সেটাই বড় কথা। শুনেছি,৭১ এর পরেও অনেক হিন্দু থেকে গেছে বাংলাদেশে; সত্য, তাই না?
-থাকবে না কেন?
-আমার ধারণা ছিল, তারা তাদের দেশে চলে গেছে।
আমি বিস্মিত হই না। আমার রাগ হওয়ার কথা ছিল, রাগ হয় না। এবার আমি ঠিক বুঝতে পারি যে, এর সাথে তর্ক করা উচিৎ হবে না আমার। এ -তো একজন পাকিস্তানী আমাকে বলছে হিন্দুদের তাদের দেশে চলে যাবার কথা, যখন যাদের আমি বন্ধু বলে জানি, তারা এমন কথা বলে-, আমার মধ্যে কি রকম অনুভূতি হয় অথবা দিনের পর দিন আমি সেইরকম অনুভূতি কত বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি তা তো আমি তাদের বা এই তাসনিমকে বোঝাতে পারব না ।অথবা বলা ভাল বোঝাতে যাব না। দেশ বলতে কি বোঝায়, দেশ একজন মানুষের কোথায় জুড়ে থাকে তা অন্যকে বোঝানো শক্ত। আমি সেই তর্কে যাই না। মনের মধ্যে প্রচুর বিতৃষ্ণা গেঁথে আমি তাসনিমের সাথে ফুল নিয়ে কথা বলি।
ফিরে যাওয়ার আগে আমরা সবাই নিজের নিজের বানানো ইকেবানা সাথে করে নিয়ে যাই। এই ধরণের বিনাখরচের স্কুলগুলো সাধারণতঃ চালায় অবসরপ্রাপ্ত জাপানীজ মহিলারা। তাদের একটি করুণ একাকী সময় থেকে বেড়িয়ে আসার একটি ভালো উপায়।একট আমি তাদের একজনকে ধরে বললাম,” তোমার কি করে ধারণা হলো আমি আর তাসনিম একই রকমের? আমাদের গায়ের রঙ দেখে নাকি?’
তাকিতা সান হেসে বলেন,’ নাহ, তোমাদের বাংলাদেশের অনেককে তো ওর সাথে একই ভাষায় কথা বলতে দেখেছি! আমি ভাবলাম…’
-আমি মনে মনে ভাবি, ‘বটেই তো!’
ফিরে যাওয়ার পথে তাসনিম আবার আমাকে সিড়িতে ধরেঃ
-‘তোমার সাথে একদিন জমিয়ে গল্প করা যাবে…আমরা পা-কিস্তানে বলতে গেলে কিছুই জানিনা হিন্দুদের ব্যপারে, ওদের মধ্যেও নিশ্চয় ভালো মানুষ আছে…তাই না?’
(চলবে)
মনি তোমাকে যে জিজ্ঞেস করেনি, হিন্দুরা কামড় দেয় নাকি সেটাই ভাগ্যি। এধরনের কিছু জিজ্ঞেস করলেও কিছু করার থাকে না।
এখানেওতো অনেকে জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশ জুড়ে এতো পানি, প্লেন কোথায় ল্যান্ড করে পানিতে নাকি?
ক্যাথেরীনা কেয়া,
আপনার ব্যক্তিত্ব বক্তব্যে সত্যিই আমি অভিভূত! আপনার মতোই প্রায় সমপোলব্ধী আমারো। ঠিক এই বিবেচনায় আমরা আসলেই কিন্তু একটি আপাতঃ প্রতিষ্ঠিত বৃত্তের বাইরে, যাকে আপনি বলছেন আউটসাইডার। শুধু ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকেই নয়, বরং ব্যক্তি সাতন্ত্রে্য, চেহাড়ায় রং-এ, ভাষার ব্যবহারেও আমরা কখনো কখনো আউটসাইডার বা বৃত্ত বহির্ভূত হয়েপরি। সেখানে ব্যক্তির বোধ, চিন্তা এবং উপলব্ধি সর্ব্বপরি মনন-মানসের যে প্রতিবিম্ব, ভেতরের যে মানুষটি, তার পরিচয়টিই আসলে সেই সাতন্ত্রের প্রতীক। আর একারনেই আমি সমাজের সমষ্টির মাঝে একটি আলাদা অস্তিত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজে আমরা ঠিক যেনো আর দশটি মানুষের মতো আমার স্বাধীন অস্তিত্ব (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে) নিয়ে থাকতে পাড়ছিনা। ঐ আপনার টি, এস, সি-র মঞ্চের ঘটনাটির মতো। যেমন আপনি সহজেই ঐদিন উপলব্ধী করেছিলেন যে একি সমাজের বাসিন্দা হয়েও কোথায় যেনো মাঝখানে একটি দেয়াল আছে, আমিও পলে পলে সেই দেয়ালের আস্তিত্ব খুঁজে পাই। একটি উদাহরণ দেই, আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন এক সময় কতিপয় হিন্দু ছাত্ররা এলো এই আর্জি নিয়ে যে তারা ক্যাম্পাসে স্বরস্বতী পুজা করতে চায়। ক্যাম্পাসে কোন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান তখন অনুৎসাহিত করা হতো। আমি ওদের আনীত প্রস্তাব নাকচ করে দেই (প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে নয় আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধী থেকে)। পরবর্তিতে এক সভায় সহকর্মীরা আমাকে আমার সিদ্ধান্তের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত অভিন্ন্দন জানাচ্ছিলো! আমি টের পেয়েছিলাম সেই অভিন্ন্দনের বার্তাটি। তাদের উপলব্ধীটি ছিলো, তাদের প্রতিপক্ষ একটি সম্প্রদায়ের কর্মদ্দ্যোমকে আমি প্রতিহত করেছিলাম। আর আমার উপলব্ধীটি ছিলো, আফিমের নেশা থেকে ছেলেগুলোকে বিরত রাখা। দেখুন ক্যাথেরীনা, এখানেই কিন্তু ব্যক্তি মানসে বোধের পার্থক্য রয়েছে, সহকর্মীরা কেউ শিক্ষায় সম্মানে আমার পেছনে নয় বরং সামনে তথাপি সেখানেই তৈরী হয়েছিলো একটি অদৃশ্য দেয়াল। আর স্বভাবতঃই আমি সেই দেয়ালের বাইরে। কাজেই আপনার উপলব্ধীর সাথে আমি একমত এবং ঠিক যে আমরা যারা এখানে মুক্তমনে লিখি আমরা আউটসাইডার! আর স্নিগ্ধাকে বলবো মেইনস্ট্রীমে থেকেও আমরা আমাদের সাতন্ত্রের দেয়ালে পৃথক এবং বৃত্তের বাইরে, নয়কি? ক্রমাগত কুঠারাঘাতে সেই বৃত্তটাকে ভেঙ্গে দেয়াই আমাদের ব্রত হোক।
সে এক বহুদিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক পাকিস্তানি, আর ছিল এক ভারতীয়, আরো ছিল এক বাংলাদেশি। আপনার মতোই দেশটি ছিল জাপান। পাকিস্তানি ও ভারতীয় দুজনেই ছিল বাংগালির বন্ধু। সেযুগে কিয়োতোতে আর কোন দেশি ছিল না বলে নিজ দেশে বঞ্ছনার শিকার সেই মোহাজের পাকিস্তানি মুসলমান ও নাস্তিকের কাছাকাছি বাংগালির মাঝে যোগাযোগ হতে দেরি হয় না। পরে ভারতীয় হিন্দু এসে যোগ দেয়ায় এই ত্রয়ীর বন্ধুত্ব জোরদার হোল। তিনজনেই বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের তিন শাখার ছাত্র-গবেষক ছিলেন। নিজে সুরাপান না করলেও বাকি দুজনের সাথে পাবে গিয়ে বসতে পাকির আপত্তি ছিল না। তবে পাকি ও ভারতীয়ের প্রথম সাক্ষাতের পর, দ্বিতীয় জনে বাংগালির কাছে মন্তব্য করেছিলেন, ‘পাকিস্তানিরা তো লোক ভাল হয় না, ও মোহাজের বলেই ভিন্ন প্রকৃতির’। একই ভাবে পাকির মন্তব্য ছিল, ‘ভারতীয়দের মধ্যে এমন ভাল লোক আছে, ইনাকে না দেখলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না’। বলা বাহুল্য, এর আগে এদের দুজনেরই অপরের দেশের কারো সাথে ঘরোয়া পরিবেশে মেশার সুযোগ হয় নাই। ভৌগলিক সীমানার অসামান্য ক্ষমতায় বাংগালি অবাক হয়েছিল! এর প্রায় তিন যুগ পরে আপনার লেখা থেকে বুঝতে পারলাম রাজনৈতিক ও সামাজিক বেড়ার কারণে ও ইদানিং তালেবানি প্রভাবে পাকিদের মানসিকতায় এখনো কোন পরিবর্তন আসে নাই। এখন হয়তো আপনিই ভরষা।
@কেয়া – আপনার কথা বোধহয় কিছুটা বুঝতে পারছি তবে আমি ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখি। আমরা ‘আউটসাইডার’ কেন হতে যাবো? নিজেকে ‘আউটসাইডার’ মনে করতে আমি রাজি হই না একারণে যে তাহলে ব্যাপারটা কোন একটা মেইনস্ট্রীম, ইনসাইড সার্কেল কে স্বীকার করে নিয়ে সেটার প্রেক্ষিতে নিজেকে বিচার করছি – এরকম দাঁড়ায়।
উঁহু, আউটসাইডার বলে কেউ নেই – কামূর নায়ক ছাড়া 🙂
@কেয়া,
(স্নিগ্ধার কথা মত) কামূর নায়ক ছাড়া এখানে আর কেউ আউটসাইডার আছে কিনা জানা নেই, তবে লগইন না করে মন্তব্য করতে থাকলে আউটসাইডারই থেকে যাওয়া হবে এইটা বলে দেয়া যায়। 🙂
কেয়া,
‘আমার পাকিস্তানী প্রতিবেশী’তে দেয়া আপনার লিংকটি পড়ে অভিভূত। কারণ, আমার ‘সংখ্যালঘুর মানচিত্র’ লেখার জন্যে আপনার লেখার ইস্যুগুলোও নোটে আছে, তবে উদাহরণগুলো ভিন্ন।যদিও ‘এ হতশ্রী সময়ে’ পড়া কেন বা কীভাবে আগে miss করেছিলাম বুঝলাম না যাহোক, ।মনে হয় —
চির সুখীজন
ব্যথিত বেদ্ন বুঝিতে কি পারে
আমার আপনার অনুভূতির যে সম অবস্থান।
@গীতা দি,
আমি কিন্তু ব্যাথিত হই না। উপভোগ করি। দেখুন দেশে আমার নাম এবং ধর্ম এর কারণে আমি আলাদা। এদেশে ধর্মের এবং নামের কারণে কাছাকাছি হলেও চেহারা আর গাত্র বর্নের কারণে আমি পৃথক। আমার একজন শিক্ষক বলতেন তুমি যে ঘরে বাস কর তার অনেক গুলো জানালা। তাই এক একটা জানালা খুলে একেক রূপ দেখতে পারো। একেক ধরনের মানুষ দেখতে পারো।
এই “আউট সাইডার” হওয়াটাকে আমি পলে পলে উপভোগ করার চেষ্টা করি।
@ক্যাথেরীনা,
দারুণ এটিচিউড (‘এ’ র পরে যফলা দেয়া যাচ্ছে না 🙁 ) ! আপনার শিক্ষকের উপমাটিও ভালো লাগলো, খুব!
একটা একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি – আপনি নিজে কি নিজেকে “আউটসাইডার” মনে করেন?
@স্নিগ্ধা,
আউটসাইডার ভাবি, তবে চেহারা, ধর্ম, গায়ের রঙ এ নয়- চিন্তায়-দৃষ্টিকোণে আউটসাইডার। চায়ের কাপের বাইরেই কিন্তু হাতলটা থাকে। সে আমি বা হাতেই ধরি আর ডান হাতেই ধরি না কেন। আমি কাপটা ধরলেও যা, আপনি ধরলেও তা।
সেদিক দিয়ে বোধ করি আমি আপনি যারা মুক্তমনা জাতীয় পরিবেশে লিখছি বা পড়ছি তারা সবাই আউটসাইডার।
মজা পাচ্ছি মণিকার লেখাটা যতই পড়ছি। চলতে থাকুক …
এরকম মানুষ বাংলাদেশেও ভরা, বিশেষ করে জামায়াতিদের মধ্যে। আমার চাচা-ফুপুরা কট্টর জামায়াতি হওয়ায় ওদের এসব সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার সাথে আমাকে জোড় করেই মানিয়ে চলতে হয়।
১) আমি ঢাকার সেন্ট যোসেফ স্কুলে পড়ি। একদিন রিকশায় করে ফুপাতো ভাইয়ের সাথে স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ করেই ভাই বলে বসল, “দেখিস, চা্র্চের ভেতরে ঢুকে পড়িস না”।
২) আমার মেঝ চাচি তার ছোট ছেলেকে ভর্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছেন। একদিন আম্মা গিয়ে তাকে বলে আসলেন সেন্ট যোসেফে ভর্তি করানোর জন্য চেষ্টা করতে। তিনি বললেন, “সেন্ট যোসেফে বলে বাচ্চাদের হাতে জোড় করে বাইবেল ধরিয়ে দিয়ে খ্রীষ্টান গান গাওয়ানো হয়?”
৩) আরেকদিন আমার ফুপাতো বোনের হবু জামাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল। আমার ইস্কুলের নাম শুনে তিনি বললেন, “ওটা ইহুদিদের স্কুল না?”।
আপাতঃদৃষ্টিতে এগুলোকে খুব তুচছ মনে হতে পারে, তবে চিন্তাভাবনা কিরকম সংকী্র্ন হলে এরকম মন্তব্য করা যায় তা কল্পনা করা আসলেই মুশকিল।
@পৃথিবী,
মজা লাগলো অভিজ্ঞতাগুলো পড়ে। আমারো এই ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা আছে। অবশ্য সেগুলো মিশ্র এবং হাস্যকর ধরনের।
পড়তাম নটরডেম কলেজে। ঘরে আব্বা সবসময় গজগজ করতো যে খ্রীষ্টান নাসারাদের কলেজে পড়েই আমার অধঃপতন হচ্ছে। দিন দিন খ্রীষ্টান হয়ে যাচ্ছি আমি। ওদের কাজই নাকি লোকজনকে ধরে ধরে খ্রীষ্টান বানানো। অবশ্য সেই সময় আমার কথাবার্তাও অনেকখানি দায়ী ছিল এই গজগজ করার পিছনে। আবার সেই একই লোক বাইরের মানুষের কাছে বিরাট ভাব নিতো ছেলে নটরডেমে পড়ে বলে।
ভিনদেশি ফিরিঙ্গিদেরকে বাপ (ফাদার) বলে ডাকতে হয় সেটাতেও মহা বিরক্ত ছিলেন তিনি। প্রায়শই দেখতাম তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন এই বলে যে, বিধর্মী লোকজনরে বাপ বলে ডাকতে হবে এটা আবার কী রকম অদ্ভুত নিয়ম।
@পৃথিবী,
শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার হবে না। কিন্তু আমার কেন যেন সবসময়েই মনে হয়েছে এরকম মনোভাব পোষনের জন্যে শুধু ওই মানুষগুলো দায়ী নয়। এর পেছেনে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। নইলে শুধু শুধু একজন অচেনা মানুষকে ষ্টেরিওটাইপ করবে কেন অন্য একজন মানুষ! আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
@মণিকা রশিদ, আমি সিন্ধু প্রদেশে বসাবস করি এবং পাকিস্তানের হিনদুরা এখানেই বসাবস করে। তারা সিন্ধু প্রদেশের জনসংখ্যার 7%। তারা বেশ উচ্চ শিক্ষিত যেমন Chief Justice Rana Bhagwan Das এবং সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে কারন তিনি মোশাররাফের বিরোধীতা করেন, সিন্ধু প্রদেশে প্রচুর Judge and Lawyers রা হচ্ছেন হিনদু।পাকিস্তানের TOP Designer Mr. Deepak Perwani এবং পাকিস্তানের TOP Bowler Mr. Danish Kaneria ও হিন্দু। পাকিস্তানের হিন্দু অধুষিত জিলা Mitthi তে মুসলিমরদের মাইকে আজান দেওয়া নিষেধ। বাংলাদেশে কিন্তু হিন্দু মোট জনসংখ্যার 28% ( পাকিস্তানে 1% ), বাংলাদেশে একজনও হিন্দু CHIEF JUSTICE হতে পারেন নাই। Tausif from Karachi
@tausif,
ব্যতিক্রম তো থাকবেই, তবে দুই একটি ব্যতিক্রম কিন্তু কোনো বিষয়ের সার্বিক অবস্থাকে পরিবর্তিত করে না। আর বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা সম্পর্কিত আপনার তথ্যে ভুল রয়েছে-একটু দেখে নিলে ভালো হয়। গুগল করতে পারেন বোধকরি।
যোগ করছি, অনেক সিন্ধি পাকিস্তানীদের আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে দেখেছি, সাধূবাদ জানিয়েছি তৎক্ষণাৎ!
@মণিকা রশিদ, Google করলাম বাংলাদেশের মোট জনসনখার ১৩% হচ্ছেন হিন্দুরা কিনতু সে হারে তাদের representation দেখা জায় না। যেরকম আমরা দেখতে পাই ভারতে মুসলিম বা শিখদএর দ্বারা যেমন Bolloywood এ প্রায় মুসলিমের আধিপত্য, IT businessman Mr. Azeem Premji এর স্থান Bill Gates এর পরেই ইত্যাদি। বাংলা ভাষাকে রাশ্ঠ্র ভাষা করার প্রথম আহবায়ক ছিলেন Dhirendranath Datta যিনি Jinnah এর সামনেই জোরালো বক্তব্য রাখেন করাচিতে বাংলাকে রাশ্ঠ্র ভাষা করার জন্য পরে তাকে জীবন ও দিতে হয়ছিল। প্রতি বছর ২১ এ february তে সালাম , বরকত ও রফিক ( যাদের একমাত্র অবদান পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া ) এর কথা স্মরণ করা হলেও Dhirendranath Datta এর ভুমিকার কোন উল্লেখ থাকে না ভাষা আন্দোলনের সাথে, কারন তিনি ছিলেন হিন্দু।
@tausif,
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কখন ধর্মের কারণে অন্যদের আগাতে দেয়নি এটা ভুল তথ্য মনে হয়েছে আমার কাছে, আপনি যেসব সেক্টরের কথা বলছেন বাংলাদেশে সেসব সেক্টর এ কয়জন খ্যাতিমান মুস্লিম রয়েছেন? আমাদের এখানে সরকারী চাকুরিতে বিধর্মীদের কোটা সুবিধা আছে কিনা আমার জানা নাই, তারপরও অনেক উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তার সন্তানেরা আমার বন্ধু, বাংলাদেশের জাতীয় টিমেও তাপস বৈশ্য সহ অনেক খেলোয়ার খেলেছেন, দুটি রাজনৈতিক দলেই বড় বড় নেতা সহ বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন অমুসলিম। কেউ খুব বড় পর্যায় পৌছাতে কাউকে ধর্মের কারনে বাধা দেয়া হয়েছে এমন নজীর দেখিনি, তবে এটা আমার ধারনা বাংলাদেশের মানুষ এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে কাউকে গ্রহন করবে এমন মানসিকতা আছে, আমার ধারনা যেসব দেশের উদাহরণ দিলেন, তারাও মুল খমতায় অন্য ধর্মের কাউকে বসাতে রাজী নয়, পুতুল পদে কাউকে পেতে পারেন।
@tausif,
(উদাহরণ স্বরূপ ভারতের ক্ষেত্রে আপনি বলিউড বা আই-টি বিজনেস এর যে তুলনাটি টেনেছেন আমি মনে হয় তাকে সঠিক তুলনা বলবনা। এই দুটি ক্ষেত্রেই মেধাবী লোকজন উঠে এসেছেন ব্যবসার খাতিরে, রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাব এইসব ক্ষেত্রে স্বভাবতঃই কম) যাই হোক রাষ্ট্রচালিত প্রশাসনযন্ত্রের কর্মকান্ডের সাথে এদের কর্মকান্ডের তেমন তুলনা চলে না।
হ্যা, আপনার অভিযোগ একেবারে মিথ্যে আমি বলতে পারিনা, তবে সেটি আমাদের পচা রাজনীতির কারণে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো পাকিস্তানের সাধারণ মানুষদের মত চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে না। পার্থক্যটি এখানেই।
@মণিকা রশিদ,
আপনার উপরের বকতব্য সঠিক হতে ও পারে আবার না ও কারণ আমি বা আপনি এ ব্যপারে কোন in depth research করি নাই। তবে আমি আপনাকে করাচি থেকে বসে বলতে পারে যে এখানে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কোন অসতিত্ব নাই। চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাব এখানে বিরাজমান শিয়া সুন্নি, পাঠান – মোহাজির , পান্জাবি – বেলুচি , পান্জাবি – সিন্ধি ইত্যাদির মাঝে। অনকে সিন্ধিরা যারা G.M. SYED এর অনুসারি তারা Muhammad bin qasim এর সিন্ধু আক্রমন এর দিন কে কাল দিবস হিসেবে পালন করে , হিন্দু রাজা দাহির কে তাদের হিরো আখ্যায়িত করে। এই তো গত মাসে করাচিতে কতিপয় হিন্দু যুবকরা ক্রিকেট খেলা নিয়ে কয়েকজন মুসলিম যুবকদের শুট করল , কথায় কোন গন্ডগোল দেখলাম না, এখানকার লোকেরা এটা কে একটা Police case হিসাবেই নিয়েছে। লিনক টা হচ্ছে http://www.dawn.com/wps/wcm/connect/dawn-content-library/dawn/the-newspaper/local/karachi-youth-killed-in-brawl-over-nisthar-park-cricket-pitch-619
পৃথিবী/ফরিদকে কেয়া,
আপনাদের আলোচনা পড়ে অস্বস্তি বোধ করলাম, কেন করলাম বলছি। আপনারা যেভাবে দেখেছেন বুঝেছেন আমিও ঠিক সেভাবেই দেখেছি কিন্তু দেখেছি অন্য পিঠ থেকে। এই তো সেদিন একজন বানানের বীর বাহাদুর আমাকে বললেন ” জন্যে” শব্দ টা হিন্দুরা ব্যাবহার করেন আর “জন্য” শব্দটা মুসলমানরা। “ওনাকে” শব্দটা হিন্দুদের “উনাকে” শব্দটা মুসলমানদের। বোধ করি রসিকতা করেই বললেন। আমি সারা জীবন “জন্যে” বলে আর লিখে এসেছি। বলেছি “ওনাকে”। কথাটা শুনেই আমার তখন মনে হলো আমার ক্যাথেরীনা পরিচয়ে আমার কি বলা উচিত। নাকি কিছুই বলাই উচিত নয়।
মুক্তমনায় যুক্ততার গোড়ার দিকে একটা মামুলী লেখার প্রয়াশ নিয়েছিলাম, তাতে এ বিষয়ে লিখেছিলাম। সময় সুযোগ পেলে পড়বেন।
http://blog.mukto-mona.com/?p=485
@কেয়া,
আমরা মোচলমানেরা জল খাই না, পানি খাই। 🙂
হিন্দুর বাংলা ভাষা আর মুসলমানের বাংলা ভাষা নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কোনদিন সময় পাই আর আগ্রহটা মরে না গিয়ে থাকে তবে লিখবো কিছু একটা।
@ফরিদ আহমেদ,
সেটাই বলছিলাম এই হিন্দু আর মুসলমানের বাংলার মাঝে ” ক্যাথেরীনার” ঠাঁইটা কোথায় ?
যাহোক, আপনার হিন্দুর আর মুসলমানের বাংলা বিষয়ে লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
@কেয়া,
ঠাঁই নিজেকেই করে নিতে হয়। মমতার হাতটুকু বাড়িয়ে কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ থাকেই।
কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষের কারণে নিজভূমে নিজেকে অবাঞ্চিত ভাবাটাই পলায়নী আত্মহত্যার সামিল।
@ফরিদ আহমেদ,
না, আমি হিন্দুর বাংলা বা মুসলমানের বাংলায় বিশ্বাস করি না। তাই আপনার পরামর্শ অনুযায়ী ঠাঁই নেবার চেষ্টা করবো না কোনটাতেই।
আবারো ভুল করলেন- এখানে কেউ মমতা দেখাবে আর কেউ মমতা প্রাপ্ত হবে – এই কনসেপ্টটাই ভুল। এটা মিটসেফে তুলে রাখা কোন খাবার নয় যে তালা চাবি মেরে বসে আছেন মমতাধর কোন ব্যক্তি আর তালা খুলে দিলেই ক্যাথেরীনা বা ক্যাথেরীনা জাতীয় কেউ সেই খাবার হামলে পরে গলধঃকরণ করবে।
আর পলায়নী আত্মহননের কথা বলছেন? সাম্প্রদায়িকতাই নয় আরো কত কারণেইতো মানুষ দেশে বিদেশে পলায়নী আত্মহত্যায় মেতেছেন। নিজের গন্ডি কমাতে কমাতে অক্ষিগোলকের চেয়েও কমিয়ে এনেছেন। তাই কিছুই চোখে পড়ে না তাদের।
আমিতো মনে করি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মত মূল্যবোধের দিক দিয়েও সংখ্যালঘু আপনি বা আপনার মত অনেকেই। সেই হিসেবে আপনিও ‘আউটসাইডার’। তাই, আপনিও ‘ঠাঁই’ নিয়েছেন মুক্তমনায়।