আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌত্রিশ বছর এগে এক অভাবনীয় নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল ঢাকা শহরের এক অভিজাত আবাসিক পাড়ায় যেখানে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সপরিবারে বাস করতেন। গভীর রাতের নীরবতাকে লঙ্ঘন করে বন্দুকের অগ্নি বর্ষনে রক্তের এক বন্যা বইয়ে এক ডজন নীচু স্তরের সামরিক অফিসার দেশের গণতান্ত্রিক ভোটে যিনি কর্নধার হয়েছিলেন মাত্র বছর কয়েক আগে, তাকে সপরিবারে হত্যা করে দেশে গণতন্ত্রের বদলে সামরিক আইন এনে দেশের ভাবমূর্তি বদলে দিল তারা।
১৯৭১ সনে আমরা পাকিস্তানের নাগপাশ হতে চলে এলাম এই জন্যে যে বাংগালীরা উর্দী পরা লোকদের দ্বারা শাসিত হতে আর চায় না। ১৯৫৮ সনের অক্টোবর মাস থেকে চালু করে ১৯৭১ সন পর্যন্ত এক নাগাড়ে ক্যান্টনমেন্টের জেনারেলদের দ্বারা আমরা শাসিত হয়েছি। বলতে গেলে এক রকম ঘেন্নাই ধরে গিয়েছিল আমাদের সামরিক আইনের উপর। আমি নিজে ১৯৬৯ সনের ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে যখন ইয়াহিয়া খান ক্যু করে আইউব খানকে সরিয়ে গদীতে আসে, তখন আমি ঢাকা থেকে মার্কিন মুল্লুকে চলে আসি এই জন্যে যে দেশের বাতাসে আর যেন অক্সিজেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না । ১৯৭৫ সনে সেই আবার একই অবস্থা! আমেরিকায় বসে তখন মনে হচ্ছিল যে দেশটিকে কেন আমরা স্বাধীন বানিয়েছিলাম? সামরিক আইনের প্রতি এত মোহ কেন বাঙ্গালীদের? এর সদোত্তর তখন খুঁজে পাইনি। তবে পরে বেশ অনুধাবন করতে পেরেছিলাম যে একাত্তুরে পাকিস্তান দু’টুকরো হবার পর দেশে এমন শ্রেণীর লোকজন ছিল যারা সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবকে ঘৃণার চোখে দেখতো এই জন্যে যে উনার কারণেই জিন্নাহ সাহেবের “প্রাণের পাকিস্তান” ভেঙ্গে দুটুকরো হয়ে গেল তাদের চোখের সামনে। তাছাড়াও ২৪ বছরে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সন পর্যন্ত, পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডায় আমাদের অনেকের মাঝে ভারত বিদ্বেষীতা মাত্রাধিক বেড়ে যায়। আর ১৯৭১ সনের পর অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের মুখে শুনতাম যে মুজিব নাকি দেশটাকে ভারত-রাশিয়ার কাছে বিকে দিয়েছে!
বাংলাদেশে বলতে গেলে এক রকমের “কানে ফুস্ফুসানো কেম্পেইন্” বা কানাঘুষা যাকে ইংরেজীতে বলে “হুইস্পারিং কেম্পেইন্” তা চালানো হয়েছিল ১৯৭২ সন থেকে নিয়ে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত। শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারবর্গের নামে কুৎসা রচনা এটি যেন একটা ‘কটেজ ইন্ডাস্ট্রী’ এর মতই হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই সময়ে। এখন ভাল মতই উপলব্ধি করতে পারছি যে দেশের পঞ্চম বাহিনীরা তখন আদাজল খেয়ে উঠেপড়ে লেগেছিল শেখ সাহেবকে গদীচ্যুত করতে। ১৬ই আগষ্টে নাকি শেখ সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে গিয়ে নিজেকে চীর জীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করবেন আর এটিও ছিল কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট ও ঢাকার সুশীল সমাজের “হুইস্পারিং কেম্পেইন্” এর এক অন্যতম বিষয় বস্তু। দেশ থেকে নাকি গণতন্ত্র চীরতরে বিদায় নেবে। একনায়কত্ব আবার ফিরে আসবে, ইত্যাদী, ইত্যাদী, ছিল কেম্পেইন্ এর ধূপ-ধুনা। শেখ মুজিব ছিলেন পার্লামেন্টারীয়ান যিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন পুরোপুরি। তাঁর পক্ষে এ’রকম একটা অগণতান্ত্রিক পদ্বতি বেছে নেয়া যার দ্বারা তিনি নিজেকে চীর জীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করবেন এটা ভাবা দুঃষ্কর। তাছাড়া সরকারী গেজেটে এ’রকম কোন কিছু লেখা বা এর আভাস পর্যন্ত দেয়া হয় নি। আসল কথা হচ্ছে যে, যারা তাঁকে পছন্দ করতো না তারাই জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাঁর নামে আজেবাজে ও উড়োকথা বলে ঢাকার রাজনৈতিক পরিবেশকে বিষাক্তময় করতে সক্ষম হয়েছিল। এই রকম একটা জঘন্য পরিবেশে ১৫ই আগষ্টে ট্যাঙ্ক নিয়ে বেরিয়ে আসে কুর্মীটোলার দামাল ছেলেরা। আর কোন কথা নেই। ধানমন্ডীর জলাশয়ের সামনে শেখ সাহেবের বাড়ীর সামনে এসে চালালো বন্দুকের গুলি বিরামহীন ভাবে। উড়িয়ে দিল শেখ পরিবারকে এই ধারিত্রী হতে। এই রক্তগরম ছেলেরা কিছুতেই অনুধাবন করতে পারেনি সেই রাত্তিরে যে এই অবৈধ ও পৈশাচিক অপারেশনের জন্য আগামীতে তাদেরকে সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
এই হত্যাযজ্ঞের ‘গড-ফাদার’ যিনি বা যারা ছিলেন তারা কি জুনিয়র অফিসারদের এই বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “কুছ পরোয়া নেই, কাজটি ভালয় ভালয় সেরে ফেল, তোমাদের বাঁচানোর দায়-দায়িত্ব – সেটিতো আমাদের”। এই এত বছর পর ঢাকার খবরের কাগজে সেদিন পড়লাম যে যিনি শেষ অবধি ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি নাকি খুনী জুনিয়র অফিসারদের কোন কোন পরিবারকে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিদেশে পালতেন। তিনি নাকি এদের কয়েকজনকে লিবিয়ায় পাঠানোর জন্য তদবিরও করেছেন পাকিস্তানের প্রধান। আর ‘ইন্ডেম্নিটি’ আইনের এর কথা নাইবা তুললাম! এতশত কর্মকান্ডের পরও কি বুঝা মুশকিল এই হত্যাযজ্ঞের হোতা কে বা কারা ছিলেন?
১৯৭৫ সনের পর হতে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক আবস্থার আমূল পরিবর্তন দেখা দেয়। কোথায় গেল স্যাকুলারিজম দেশের শাসনতন্ত্র বা ‘কন্স্টিটুশন’ হতে। যেই আদর্শের ভিত্ততে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হয়ে গেল, সেটিকে দেয়া হোল নির্বাসন! এর ফেলে দেশে গত ত্রিশ বছরে গড়ে উঠলো ধর্ম-উন্মাদনা। হাজারো রকমের ফান্ডামেন্টালিস্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলো প্রতিটি জেলায় জেলায়। বগুড়া-রাজশাহীতে বাংলাভাইদের দৌরাত্বে কত সাধারণ লোকরা যে প্রাণ খুইয়েছে তার হিসেব কে রেখেছে? দেশে ধর্মীয় কারণে সহিংশতা ক্রমেই বেড়ে চলেছিল রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায়। শেষ অবধি বিদেশী সরকার বিশেষত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার চাপে ২০০৭-২০০৮ সনে তত্ত্বাবোধক সরকার বাধ্য হয়েছে বাংলাভাই ও তার উস্তাদসহ কিছু গ্রুপ মেম্বারকে শূলে দিতে।
১৯৯৬ সন থেকে চালু করে ২০০১ সন পর্যন্ত শেখ হাসিনা প্রাণপন চেষ্টা করেছেন তাঁর পরিবারের খুনীদের বিচার করতে, তবে সম্পূর্ণ না হলেও আংশিকভাবে জয়ী হয়েছেন তিনি। তাঁর একান্ত চেষ্টায় সেই কুখ্যাত ‘ইন্ডেম্নিটি বিল’ খানা ওবৈধ ঘোষনা করা হোল পার্লামেন্টে। দেশে অবস্থানরত খুনীদের কাউকে কাউকে ধরা হোল, ফাটকে গেল তারা, আর বাকীরা দেশ থেকে উধাও হোল। বিচার শুরু হোল কোর্টে দেশের বিধান মত। তবে হাইকোর্টের কিছু কিছু বিচারপতি নাকি রায় দিতে বিব্রত বোধ করেন। এদের গড়িমশিতে খুনীদের বিচার আর হয়ে উঠলো না ২০০৮ সন পর্যন্ত।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পাপের ভান্ডার পুরো হয়েছিল ২০০৬ সনের শেষের দিকে। দেশের আপামর জনসাধারণ সেটি অনুধাবন করতে বেশ পেরেছিল। সে সময় সরকারী দল যে সব অবৈধ প্রক্রিয়া দ্বারা ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করেছিল তা ধূলীসৎ হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক বা ‘কেয়ারটেকার’ সরকার প্রায় বছর দুয়েক রাজত্ত্ব করে পরিশেষে একটা স্বচ্ছ ‘ইলেকশন’ এর বাস্তবায়ন করেছিল ডিসেম্বর ২০০৮ সনে। দেশবাসী পাপগ্রস্থ সেই দলটিকে ভোট দ্বারা পরাজিত করে শেখ হাসিনার দল ও তাঁর জোটকে জয়ী করে বিপুল সংখক ভোট দিয়ে। গত একবছরে হাসিনা সরকার শেখ মুজিব মার্ডার কেসটি আবার পেছনের ঠান্ডা চুলা থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে সামনের গরম চুলাতে দিয়ে দেয়। ফলে আইনের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে রায় বেরুলো যে মার্ডার কেসের আসামীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক। এরপর সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলো এই রায়ের বিরুদ্ধে। সেটিতেও কাজ হলো না। ১৯ই নভেম্বর সুপ্রীম কোর্ট হাই কোর্টের রায়কে সমর্থন করলো। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা এখন দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভীক্ষা চাইবে। সেটি না পেলে এক এক করে সবাইকে ফাঁসীমঞ্চে উঠতে হবে ২০০৯ ডিসেম্বর বা জানুয়ারী ২০১০ সনের কোনো এক নির্ধারিত দিনে।
খুনীদের সমর্থন করে একমাত্র ঢাকার ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘হলিডে’ তে সাদেক খান সম্পাদকীয় লিখেছেন এই বলে যে, জুনিয়র অফিসাররা ক্যুঁদেতা করেছিল জোরকরে ক্ষমতা বদল করার জন্য দেশের বৃহত্তর স্বার্থে। তাই এদের বিচার সিভিল কোর্টে না হওয়াই উচিত। সাদেক খান কী ভাবে দিব্যি ভূলে গেলেন যে ১৫ই আগষ্ট কেবল ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিহন হোন নি, তার সাথে নিহত হয়েছেন সে বাড়িতে উপস্থিত পরিবারবর্গ ও ঢাকায় আরো অনেক আত্মীয়স্বজন। শেখ পরিবারের ছোট ছোট শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি বন্দুকের গুলি থেকে। সাদেক খান কী ‘আলহাইজমার’ বা স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত?
বহু বছর পর ঘণ অন্ধকারের এক অমানিশা বাংলাদেশ থেকে চীর বিদায় নিতে যাচ্ছে। দিগন্তে দেখা যাচ্ছে এক নয়া সূর্য্য। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগষ্টে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছিল সেটির পুনারাবৃত্তি আর যেন না ঘটে। দিনকাল অবশ্য পাল্টে গেছে। আজকাল হচ্ছে ‘আন্তরজাল’ বা ইন্টারনেটের যুগ, ওয়াই-ফাইয়ের যুগ, আর সেল-ফোনের যুগ। এইসব বিজ্ঞানের অবদান সমাজকে সমৃদ্ধশালী করেছে আর তার সাথে দেশকে নিয়ে গেছে ‘ইনফরমেশন’ যুগে। আমি সর্বান্তকরনে বিশ্বাস করি যে এখন থেকে বাংলাদেশ ঠিক রাস্তায় চলবে। সামরিক বাহিনী থাকবে কেন্টমেন্টে আর পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রাধাণমন্ত্রীর দ্বারা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে এই মাফিক সামরিক বাহিনী পরিচালিত হয়। গণতন্ত্রের জয় হোক চীরকাল বাংলাদেশে সেই কামনাই করি ।
————-
ডঃ জাফর উল্লাহ্ একজন বৈজ্ঞানিক ও কলাম লেখক, লিখেন নিউওর্লিয়ান্স থেকে; ঢাকার বিভিন্ন ইংরেজী পত্রিকায় তিনি নিয়মিত উপ-সম্পাদকীয় লিখেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ইরতিশাদ সাহেবকে। আমার সাথে সাথে অনেক বঙ-সন্তান এই চতুর্থ সংশোধনী সন্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবে তার মতামত থেকে।
তবে কিছু কিছু আওয়ামী মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে শুনেছি যে সিরাজ শিকদার ও কর্নেল তাহেরের দলগুলো যে ভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে অগ্রসর হচ্ছিল, তাতে দেশে সোভিয়েট স্টাইলে এক পার্টি সৃষ্টি করা ছাড়া না কি উপায় ছিল না শেখ মুজিবের। তবে গণ উত্থানের মাধ্যমে শেখ সাহেবের পরাজয় হলে সেটা দেশের জন্য অনেক পরিমাণ ভাল হতো। রাতের অন্ধকারে কাপুরূষদের মত এসে সপরিবারে শেখ মুজিবুকে হত্যা করাটা কোনোমতেই ঠিক কাজ হয় নি।
রঞ্জন সাহেব,
আমি এ’কথা জোর দিয়ে বলিনি যে, মুজিব হত্যার বিচার হলেই বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আছে তার সব বিহিত হয়ে যাবে। এখন এই মুহূর্তে দেশে “রুল অফ লো” ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক হত্যা কান্ডগুলোর বিচার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ক্যান্টনমেন্ট হতে আগত জিয়া আর এরসাদ সাহেবরা এই বিচারে কোন রকমের আগ্রহই প্রাকাশ করেন নি। খালেদা জিয়া তো নয়ই।
আর হাসিনার লেবাস বদলানোর কথা কি আর বলবো? তবে ১৯৭৫ সনের পর ইসলাম যে ভাবে দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উটেছে, সেই ক্ষেত্রে হাসিনার বারবার মক্কা-মদীনা যাওয়া, হাফ্-হিজাব পরা এই সব ‘গিমিক্’ ভোট সংগ্রহের ব্যাপারে যে অশেষ সহায়তা করে সেটি হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডরা ভাল মতেই হৃদয়ঙ্গম করেছেন। রাজনীতির মঞ্চে প্রাগম্যাটিক হয়া খুবই দরকার। এই এত বছর পর দেশটিকে হঠাৎ করে ইসলামিক সাইড থেকে স্যাকুলার সাইডে নিয়ে যাওয়া নিতান্তই অবাস্তব। আওয়ামী লীগ যদি এখন স্যাকুলারিজমের ধূয়া তুলে নির্বাচনএর মাঠে নামে তবে এত সিট যে গুলো তারা এবার পেয়েছে পার্লামেন্টে সেগুলো তারা পাবে না। গ্রাজুয়ালিজম নীতি মেনে আস্তে ধীরে দেশবাসীকে ইসলামীক দিক হতে স্যাকুলার দিকে নিয়ে যেতে হবে। ১৯৫০-১৯৬০ সনে ছাত্রাবস্থায় আমি স্বচোক্ষে দেখেছি শহরের লোকরা অনেক সংস্কারমুক্ত ও উদার ছিল। সৌদি আরব কাড়ি কাড়ি দিনার ঢেলে সুন্নি প্রধান দেশগুলোতে ফান্ডামেন্টালিজম এর অনুপ্রবেশ করতে অশেষ সহায়তা করে। এই ব্যাপারে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদ্রাসা সৌদি ব্রান্ড অফ ইসলাম আমাদের উপ-মহাদেশে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়। আমরা মুক্তমনা রাইটার্সরা গত ১০ বছরে এইসব ব্যাপারে অনেক প্রবন্ধ লিখেছি। আপনি এইসব লেখার কিছু পড়ে দেখেছেন কী?
আর একটি কথা লিখছি – ১৯৭৩-৭৪ সনে যে ভাবে পাকিস্তানিরা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বাংলাদেশকে অনেক এশিয়ান দেশ থেকে দূরে রেখেছিল তখন সেটির পরিপেক্ষিতে শেখ মুজিব OIC তে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এটি ছিল তাঁর এক রাজনৈতিক চাল।
Ranjan,
আপনার একাউন্টে লগ ইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। দয়া করে যাচাই করে দেখুন সব কিছু ঠিক আছে কিনা।
আমার নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান কোথায় পাব ? কেউ কি দয়া করে জানাবেন ? কেউ বলছেন এটা লেখা আছে, কেউ বলছেন নাই। এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
মুক্তমনার মডারেটরের কাছে জানতে চাচ্ছি, বাংলাদেশের সংবিধানের ই-বই করা যায় কিনা ?
@আতিক রাঢ়ী,
এখানে পাবেন
http://www.pmo.gov.bd/constitution/part1.htm
ইরতিশাদ ও রঞ্জনের মন্তব্যের প্রতিউত্তর
প্রথম ইরতিশাদ সাহেবকে বলছি। আপনার মন্তব্য পড়ার পর আমি একজন বঙ্গ সন্তান যিনি বাংলাদেশের সংবিধান সন্বন্ধে ভাল বুঝেন তাঁকে ফোনে সংযোগ করি আর প্রশ্ন করি – শেখ মুজিব কি ১৯৭২ সনের সংবিধান ১৯৭৫ জানুয়ারীতে বদলিয়ে নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট পদে বহাল করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? আর যদি করে থাকেন তা কি বিধানসভায় (পার্লিয়ামেন্টে) ভোট দ্বারা পাশ করা হয়েছিল কী? আর ১৯৭৫ সনের শাসনতন্ত্রে সেটির কী উল্লেখ আছে? ভদ্রলোক বললেন, “এটি পুরো বানোয়াট কথা”। তিনি আরো বলেন যে, যারা শেখ মুজিবের বাকসাল আইডিয়াটা সর্বান্তকরণে মেনে নিতে পারেন নি তারা এই মিথ্যা প্রচারটি চালু করেন। ভদ্রলকের সাথে ফোনে আলাপ করার পর আমি এই ব্যাপারে এক ‘মিনি-গবেষনা’ করি। আমার ধারনা শেখ সাহেব যদি নিজেকে আমরণ প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখার জন্য সংবিধান আংশিকভাবে বদলান তাহলে কোথাও বা কোথেও এটির উল্লেখ থাকবে। আন্তরজালে (ইন্তারনেটে) জানুয়ারী ১৯৭৫ সনের সংবিধান পরিবর্তনের কথা অনেক অনেক জায়গায় লিখা আছে। বাংলাপেডিয়া তাদের ওয়েবসাইডে একটি পেজে ১৯৭৫ জানুয়ারীতে সংবিধান সংশোধনের সারমর্ম উল্লেখ করেছে। সেখানেও শেখ সাহেবের আমরণ প্রেসিডেন্ট থাকার কথাটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই। বাংলাপেডিয়ায় এই ব্যাপারে লিখা আছে –
Fourth Amendment Act The Constitution (Fourth Amendment) Act 1975 was passed on 25 January 1975. Major changes were brought into the constitution by this amendment. The presidential form of government was introduced in place of the parliamentary system; a one-party system in place of a multi-party system was introduced; the powers of the jatiya sangsad were curtailed; the Judiciary lost much of its independence; the supreme court was deprived of its jurisdiction over the protection and enforcement of fundamental rights. This Act (i) amended articles 11, 66, 67, 72, 74, 76, 80, 88, 95, 98, 109, 116, 117, 119, 122, 123, 141A, 147 and 148 of the constitution; (ii) substituted Articles 44, 70, 102, 115 and 124 of the constitution; (iii) amended part III of the constitution out of existence; (iv) altered the Third and Fourth Schedule; (v) extended the term of the first Jatiya Sangsad; (vi) made special provisions relating to the office of the president and its incumbent; (vii) inserted a new part, ie part VIA in the constitution and (viii) inserted articles 73A and 116A in the constitution.
[Source: http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/C_0336.HTM%5D
ইরতিশাদ সাহেব যদি সংশোধনের পুরো বিবরণটি এই ব্লগে পেশ করেন তাহলে বাধিত হবো।
এখন রঞ্জন সাহেবের মন্তব্যের জবাব দেব অতি সংক্ষিপ্ত আকারে। যে দেশের বুনিয়াদ বা foundation এর ঠিক নেই, সেই দেশের ভবিষৎ ঝরঝরে। ঠিক সেটিই হয়েছিল বাংলাদেশে ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের পর। এক নদীর পরিমাণ রক্ত বইয়ে (metaphorically speaking, of course!) ১৯৭১ সনে বাংলাদেশ স্থাপিত যখন হয় তখন ৪টি preamble এর অন্যতম স্যাকুলারিজম এটি শাসনতন্ত্রে জুড়ে দেয়া হয়। সামরিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে সংবিধানে হাত দিয়ে প্রথম ধাক্কায় স্যাকুলারিজম কে কুপোকাত করে। সংবিধানের শুরুতেই “বিছমিল্লাহ হিররাহমানুর রহিম” বাক্যটি তারা জুড়ে দিয়ে এটিই প্রমাণ করে যে এটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশতো নয়ই বরং এটি একটি মুসলিম দেশ। এতে বাংলাদেশের বুনিয়াদে একটি বড় ফাটল ধরে। দুই সামরিক অধিকর্তা আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লাগেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অনুকরণে “বাংলাস্তান’ তৈরী করতে। এই ডিরেলমেন্ট এর কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৭৬ থেকে ২০০০ সন এই ১৪ বছরে তাদের পাঠ্যপুস্তকে দেশ স্বাধীন কী ভাবে হয়েছে, কে স্বাধীনতার প্রথম ঘষোনা দিয়েছে এসবের ভূল তথ্য পেয়ে একটি কনফুসড্ জেনারেশন হিসাবে পরিণত হয়েছে। আমি এই ব্যাপারে আশাবাদী যে, মুজিব হত্যার বিচারের পর বাংলাদেশের ইতিহাস ঠিক যেমনটি করে লিখা দরকার –নির্ভেজাল তথ্য দিয়ে – ঠিক তেমনটি করে লিখা হবে। আমি এটিও আশা করি যেন সংবিধানে স্যাকুলারিজম এর এলিমেন্টটি আবার উল্লেখ করা হয়। এই বিছমিল্লাহ কথাটি লিখতে গিয়ে বাংলাদেশে মুল্লা উমরের অনুকরনে বাংলাভাইদের আগমন ঘটে ছিল পাঁচ ছয় বছর আগে। আবারো বলছি যদি বর্তমান সরকার সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা আবার এনে বসাতে পারেন আর আইন শৃঙ্খলা বজায় রেখে আর সেই সাথে দুর্নীতি দমনে সক্রিয় হয়ে দেশ চালান, তাহলে দেশটিকে “বাংলাস্তান” না বানিয়ে পুরোপুরি বাংলাদেশ বানাতে তারা সক্ষম হবে।
@এ.এইচ. জাফর উল্লাহ,
আপনার ইচ্ছা বা চাওয়া টাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু একটু খেয়াল করুন, পাকিস্তানী মৌলবাদী চেতনার বিরুদ্ধে “নারায়ে তকদবির আল্লাহু আকবর” এর বিপরীতে “জয় বাংলা”, “তোমার নেতা আমার নেতা বিশ্বনবী মুস্তফা” এর বিপরীতে “তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব”, “তোমার আমার ঠিকানা মক্ক আর মদিনা” এর বিপরীতে “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা” শ্লোগানের মধ্যদিয়েই বাঙালী জাতির উম্মেষের ধরন বুঝা যায়। তাই গণ আকাঙ্খাকে ধারন করেই সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত হয়েছিল যা নিঃসন্দেহে একটি প্রগতিশীল উপাদান। কিন্তু ভেবে দেখুন একটি ধর্মনিরপক্ষ দেশ হয়ে ১৯৭২ সালে OIC-তে যোগদেওয়া কিসের লক্ষন? সেকথা বাদ দিলেও বর্তমানের যে আওয়ামীলীগ সেটা কি ধর্মনিরপক্ষ চেতনায় বিশ্বাসী? তারাও তো তাদের গঠনতন্ত্রের মথায় “আল্লাহু আকবর” বসিয়েছে। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রেও তারা মৌলবাদের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় নেমেছে। শেখ হাসিনার মোনাজাত রত পোষ্টার, নির্বাচনের আগে মাথায় পট্টি বাধা এগুলো কি ধর্মনিরপেক্ষতার লক্ষন? তাছাড়া “লা ইলাহা ইল্লালাহ্, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ্” এটা কোন চেতনার মধ্যে পরে? এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আওয়ামীলীগ কোন ভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা ধারন করে না। তবে মুজিব হত্যা সহ সকল রাজনৈতিক হত্যা কান্ডের বিচার হওয়া অবশ্যই দরকার।
আর পাঠ্য পুস্তকে সঠিক ইতিহাস আওয়ামীলীগও কখনও তুলে ধরবে না। কারন তারা প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে না।
@Ranjan,
দেশের এখন যে অবস্থা তাতে কারোই আর পুরো ধর্মনিরপেক্ষ থাকার উপায় নেই। যেখানে কোন দল প্রচারনা চালায় ভোট দিলে পাল্লায় খুশী হবে আল্লাহয় সেখানে আর অন্য উপায় আছে? বিশেষ করে একটা বড় অংশের মানুষে যেখানে এ জাতীয় কথাবার্তা শুনতে পছন্দ করে? সংবিধান ব্যাবচ্ছেদ করে বিসমিল্লাহ লাগানো বা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা এসব কাজে কি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারন খুশী হয়েছে নাকি বিরক্ত হয়েছে তা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।
কাজেই ৭২ এর আওয়ামী লীগকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না।
@আদিল মাহমুদ,
জনগনের আকাংখার অবশ্যই মূল্য আছে। কিন্তু রাজনীতি জনগনের মধ্যে আকাংখা তৈরী করে। বর্তমানে জনগনের যে চিন্তার কাঠামো তা একদিন তৈরী হয়নি। গত ৩৮ বছরে চলমান শোষণমূলক লুটপাটের রাজনীতির কারনে এ অবস্থার তৈরী হয়েছে যা এসবের বিরুদ্ধে সচেতন গণ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া শুধুমাত্র কারও হত্যার বিচার করা বা কাউকে ফাঁসিতে ঝুলালেই পরিবর্তন আসবে না, যেমনটি জনাব এ.এইচ. জাফর উল্লাহ মনেকরেন।
@আদিল মাহমুদ,
বিসমিল্লাহ লাগানো বা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা এসব কাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারন জনসাধারনের কোনো মাথাব্যথা নাই। তারা চায় ভাত/কাপড় ইত্যাদির নিশ্চয়তা।
চতুর্থ সংশোধনীর মূল দলিলটা আমি ইন্টারনেটে খুঁজে পেলাম না। ডঃ জাফরউল্লাহর বাংলাপিডিয়ার রেফারেন্সটা ছাড়া শুধু এই লিঙ্কটা ইন্টারনেটে পেলাম।
http://priyo.com/blog/salimc/26008.html
পুরোটাই তুলে দিচ্ছি –
১. সংসদীয় সরকার পদ্ধতিকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে পর্যবসিত করেছে। ২. প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দিয়েছে সংসদ সদস্য না হলেও যে কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ করার। ৩. এতে প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিবুর রহমান) রাতা-রাতি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এই সংশোধনী অনুযায়ী ধরে নিতে হবে যে ঐদিন তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ৪. সংশোধনী অনুযায়ী ধরে নিতে হবে যে সংসদে যেসব সদস্য তখন সংসদে ছিলেন তারা সেদিনই জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন ও তারা তারপর ৫ বছর মেয়াদে থাকবেন। ৫. প্রেসিডেন্ট পদে থাকার কোনো মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি। এই সংশোধনী বলে তিনি যতকাল ইচ্ছা ততোকাল প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে পারবেন। ৬. সংশোধনীর আওতায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার কার্যপদ্ধতি রাখা হলেও ঐ পদ্ধতিকে এতই কঠিন করা হয় যে অভিশংসন প্রায় অসম্ভব। ৭. যেমন, প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করার প্রস্তাবের জন্য সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতির প্রয়োজন হবে আর অভিশংসিত করতে হলে সংসদের তিন-চতুর্থাংশের ভোটের প্রয়োজন হবে। ৮. প্রেসিডেন্টকে নিরঙ্কুশ ভেটো দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়, অর্থাৎ সংসদে পাস করা কোনো বিলে যদি প্রেসিডেন্ট সম্মতি প্রদান না করেন তাহলে সে বিল কখনও আইনে পরিণত হবে না। আর সংসদ ঐ বিলটি পুনর্বিবেচনা করতে পারবে না। ৯. এই সংশোধনীর আওতায় একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ সৃষ্টি করা হয়। ১০. ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগদানের ক্ষমতা দেয়া হয় প্রেসিডেন্টকে। ১১. মন্ত্রী পরিষদকে প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ করা হয়। ১২. মৌলিক অধিকার বলবৎ করার ব্যাপারে বিচার শাখার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তার পরিবর্তে সংসদকে কর্তৃত্ব দেয়া হয় একটি সাংবিধানিক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য যা মৌলিক অধিকারগুলো বলবৎ করবে। ১৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। ১৪. কেবল মাত্র প্রেসিডেন্টই সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের নিয়োগ করার একমাত্র কর্তৃপক্ষ হয়ে ওঠেন। ১৫. প্রেসিডেন্ট বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করার ও তাদের স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণ করার ক্ষমতার অধিকারী হন। ১৭. বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে এক দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। ১৮. সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে দেয়া হয় ও তার স্থলে মাত্র একটি রাজনৈতিক দল (বাকশাল) দেশে থাকবে বলে নির্ধারণ করা হয়। ১৯. সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক করণ করে তাদের ও নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য করার ব্যবস্থা করা হয়। ২০. এই সংশোধনী বলে নতুন দল বাকশালের অনুমোদন ছাড়া কেউ প্রেসিডেন্ট বা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না এবং নতুন দলে যোগ না দিলে বর্তমান সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ হারাতে হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। ২১. আবাদী জমি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সমষ্টি করণের লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২২. মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। ২৩. সংবাদপত্রে স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। ২৪. জেলার সংখ্যা ৬১টিতে উন্নীত করা হয়। ২৫. প্রতিটি জেলার মুখ্য প্রশাসন হবে একজন গভর্নর ও গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয় প্রেসিডেন্টকে আর ২৬. সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০-এ উন্নীত করা হয়।
ওপরে উল্লেখিত চতুর্থ সংশোধনীর ৫ নম্বর বৈশিষ্ট্যটা লক্ষ্য করুন, “তিনি যতকাল ইচ্ছা ততকাল প্রেসিডেন্ট পদের বহাল থাকতে পারবেন”। এর মানে কি?
বাংলাপিডিয়ার বর্ণনাও খুবই অসম্পূর্ণ। যেমন, (vi) made special provisions relating to the office of the president and its incumbent; বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যা নাই।
চতুর্থ সংশোধনীতে আসলেই “আজীবন” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা আমি নিশ্চিত নই। আমার মন্তব্যে এই ধারণা দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। যদিও মন্তব্যটা পড়লে সেরকম মনে হতে পারে, তাই আমি দুঃখিত। ডঃ জাফরউল্লাহর মূল পোস্ট পড়ে আমার মনে হয় নি যে তাঁর লেখার ফোকাস ‘আজীবন’ শব্দটার ওপরে। এটা আমার ভুল, ওনার নয়। আমার মনে হয়েছিল, শেখ মুজিব যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছেন, একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন, একদলীয় শাসনব্যাবস্থা চালু করেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করেছেন, এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যাবস্থা করেছেন, এসব নিয়ে ওনার (ডঃ জাফরউল্লার) খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা ছিল না, ওই সময়ের ঢের আগে দেশ ছেড়েছেন তাই। সেই ধারণা থেকেই আমি আমার মন্তব্যটা লিখেছিলাম। কারণ গণতন্ত্র সত্যিই বিদায় নিয়েছিল, একনায়কত্ব সত্যিই ফিরে এসেছিল, শেখ মুজিব সত্যি সত্যিই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। ‘আজীবন’ শব্দটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও বাকশাল যে একটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা ছিল এ নিয়ে এখন এমন কি আওয়ামী লীগও খুব একটা দ্বিমত করে না।
তারপরেও দুজন প্রথিতযশা লেখকের বই থেকে আমার ধারণা হয়েছে যে, ‘আজীবন’ শব্দটা ব্যবহৃত হ’য়ে থাকুক বা না থাকুক, কার্যত শেখ মুজিবর রহমান সব ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভুত করে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনভাবে করেছেন, যাতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে কোন গণতান্ত্রিক উপায়েই সরানো আর সম্ভব ছিল না। নিজে আর বেশি কথা না বলে আমি উপরোক্ত বই দুটো থেকে একটু দীর্ঘ হলেও উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
প্রথমে হায়দার আকবর খান রনোর “শতাব্দী পেরিয়ে” (তরফদার প্রকাশনী, ২০০৫) থেকে (পৃষ্টা ৩৩৩-৩৩৪),
“১৯৭৫ এর জানুয়ারি মাসে সংসদে কুখ্যাত চতুর্থ সংশোধনী পাশ হল মাত্র দশ মিনিটে। এটাই বাকশাল ব্যবস্থা। এই চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন রাষ্ট্রপতি এবং ডিক্টেটরে পরিণত হলেন। বাকশাল ব্যবস্থাটি ছিল নিম্নরূপঃ
“১। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান আজীবন রাষ্ট্রপতি থাকবেন’ এবং তিনিই সকল ক্ষমতার মালিক ও উৎস। অনেকটা রাজতন্ত্রের মতো।
“২। দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকবে, যার সভাপতি হবেন স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান। কেন্দ্রীয় কমিটি, অন্যান্য সংস্থা এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় পদে কে বা কারা থাকবেন, তা তিনিই ঠিক করে দেবেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হবে। পরে তিনি এই শাসক দলের নাম দেন বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ, সংক্ষেপে বাকশাল।
“৩। শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুব এই ধরনের সকল গণসংগঠন বেআইনি হবে। একটি মাত্র কৃষক, শ্রমিক (ট্রেড ইউনিয়ন), ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন থাকবে, যার নাম, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় পদে কে বা কারা থাকবেন, তাও শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক করে দেবেন।
“৪। দেশে মাত্র চারটি সরকারি পরিচালনাধীন সংবাদপত্র থাকবে, বাকি সকল পত্রিকা বা সাময়িকীর প্রকাশ নিষিদ্ধ হবে। ১৬ জুন এই আদেশ জারী হয়। বহুদিন পর্যন্ত সাংবাদিকরা এই দিনটি কালো দিবস হিসেবে পালন করতেন।
“৫। পার্লামেন্ট নির্বাচনে কেউ প্রতিদ্বন্দিতা করতে চাইলে, তাকে শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে।
“৬। সেদিনের যে পার্লামেন্ট ছিল তার মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হল এবং যে সব সংসদ সদস্য বাকশালে যোগদানে অস্বীকৃতি জানাবেন, তাদের সদস্যপদ বাতিল হবে”।
দ্বিতীয়টা হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?” (আগামী প্রকাশনী, ২০০৪) থেকে (পৃষ্টা ৬৩), তাঁর স্বভাবসুলভ ভাষায় –
“আদি, দূর্গত, করুণ, নিহত সংবিধানে ছিলো দু বারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না, থাকতে পারবেন না। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান নকল ক’রে রচিত হয়েছিলো এটি। রচনার সময় তাঁদের হয়তো মনে ছিলো না জর্জ ওয়াশিংটনের কথা।
“চতুর্থ সংশোধনীতে তা লোপ করা হয়, বিধান করা হয় তিনি, অর্থাৎ মুজিব, যতোবার ইচ্ছে ততোবার, আজীবন, রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবেন। মুজিব তাই চেয়েছিলেন? নিশ্চই চেয়েছিলেন। মুজিব বেঁচে আছেন, অথচ অন্য কেউ বাঙলাদেশ চালাচ্ছে, এটা মুজিব ও তাঁর পুজোরীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না। কিন্তু এটা ছিল নিয়তির নির্মম পরিহাস।
“রাষ্ট্রপতিকে অমর ও প্রভু ক’রে রাখতে হবে – এই ছিলো চতুর্থ সংশোধনীর পবিত্র উদ্দেশ্য। একটি কথা তারা লেখে নি যে রাষ্ট্রপতি চিরকাল জীবিত থাকবেন, ম’রে গেলেও তাঁকে জীবিত গণ্য করতে হবে”।
হুমায়ুন আজাদ এর পরে ব্যাখ্যা দেন চতুর্থ সংশোধনীতে কিভাবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারন বা অভিসংশন করার প্রক্রিয়াকে চরম দুরূহ (অসম্ভবই বলা উচিত) করে তোলা হয় (পৃষ্টা ৬৩-৬৪)।
“বিধাতার বিরুদ্ধে কেউ অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে না। বলা যেতো রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা একধরনের রাস্ট্রদ্রোহিতা; কার এতো সাহস যে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিধাতার বিরুদ্ধে?
“এটা অসুন্দর দেখাতো হয়তো। যারা চতুর্থ সংশোধনী এনেছিলো, তাদেরো সৌন্দর্যবোধ ছিলো! তাই বলা হয় সংবিধান লংঘন (সেটি তখন কোথায় যে তাকে লংঘন করবেন?), মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে; তবে একটা গগনচুম্বী ‘কিন্তু’ জুড়ে দেয়া হয়।
“বলা হয় অপসারণের প্রস্তাব আনতে হ’লেই লাগবে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা, আর তা গৃহীত করার জন্যে লাগবে তিন-চতুর্থাংশ গরিষ্ঠতা। অর্থাৎ যদি ১০০ জন সদস্য থাকে, তাহলে প্রস্তাব আনতেই লাগবে ৬৭ জন, আর গৃহীত করানোর জন্যে লাগবে ৭৬ জন। যা এক অসম্ভব ব্যাপার; এর চেয়ে সূর্যকে একদিনের জন্যে উঠতে না দেয়াও সহজ।
“রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠেন সংবিধানের থেকেও পবিত্র। কেননা সংবিধান, একটা তুচ্ছ জিনিশ, সংশোধন করতে লাগে ২/৩ গরিষ্ঠতা, আর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে লাগে ৩/৪ গরিষ্ঠতা। রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠেন সংবিধানের প্রভু; তিনি অনেক ওপরে সংবিধানের; সাত আশমানের ওপর বিরাজ করেন তিনি।
“মুজিব হয়ে ওঠেন প্রভু, সংবিধান হয় তাঁর পদতলের পাপোশ”।
ডঃ জাফরউল্লাহর মতো আমিও মনে করি না চতুর্থ সংশোধনী বা বাকশালের প্রতিষ্ঠা বা আজীবন রাষ্ট্রপতি হওয়া কোনটার কারণেই শেখ মুজিবের সপরিবারে নৃশংস ভাবে নিহত হওয়াকে মেনে নেওয়া যায়। যায় না। আমিও মেনে নিচ্ছিনা।
হুমায়ুন আজাদ ঐ বইয়েরই ৬৭ পৃষ্টায় লিখেছেন –
“ মুজিবের হত্যাকান্ড পৃথবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও অভাবিত হত্যাকান্ডগুলোর একটি। সবচেয়ে বিশাল ও ভারি যে-লাশটি বাঙলাদেশ নিজের বুকের কবরে বয়ে চলছে, সেটি মুজিবের লাশ”।
একটা নিদারুণ সত্য উচ্চারণ!
লেখাটি ভাল লাগল, তার চেয়েও ভাল লাগল আপনার ইচ্ছা বা বিশ্বাসের কথা জেনে। আপনি চান বাংলাদেশ যেন ঠিক মতই চলে। আমরাও তাই চাই। কিন্তু ভয় হল আপনার লেখার নিচের অংশ টুকু পড়ে, ‘ডঃ জাফর উল্লাহ্ একজন বৈজ্ঞানিক ও কলাম লেখক, লিখেন নিউওর্লিয়ান্স থেকে; ঢাকার বিভিন্ন ইংরেজী পত্রিকায় তিনি নিয়মিত উপ-সম্পাদকীয় লিখেন।’ কারণ আপনি যদি সাধারণ মানুষের মত সমাজ বিশ্লেষণে না গিয়ে সোজা সাপ্টা, “আমি সর্বান্তকরনে বিশ্বাস করি যে এখন থেকে বাংলাদেশ ঠিক রাস্তায় চলবে। সামরিক বাহিনী থাকবে কেন্টমেন্টে আর পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রাধাণমন্ত্রীর দ্বারা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে এই মাফিক সামরিক বাহিনী পরিচালিত হয়।” এধরনের মন্তব্য করেন তাহলে আমরা একটু হতবাক হই আরকি। শেখ মুজিব সম্পর্কে অনেক সমালোচনা থাকলেও তার বা ১৫ আগষ্টের হত্যা কান্ডের বিচার অবশ্যই চাই। কি তা হলেই দেশ এখন থেকে সঠিক পথে চলবে বিষয়টি এমন নয়।
ইরতিশাদ সাহেব,
বাংলাদেশে যখন এইসব অঘটন ঘটে তখন আমি পোস্ট-ডক্টোরিয়াল ফেলোশিপ করছিলাম সুনি স্টোনিব্রুকে। অতএব, সংবিধান বদলিয়ে শেখ সাহেব যে নিজেকে চীর জীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট জারী করেছিলেন তা আমার আদৌ জানা ছিল না। ধন্যবাদ আমাকে শুধরিয়ে দিয়ে। সত্যি বলতে কি সামরিক আইন আমি মোটেই পছন্দ করি না। ১৯৬৯ সনে আয়ুব খাঁ কে সরিয়ে ইয়াহিয়া খাঁ যখন গদী দখল করে তখনই আমি বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য উঠেপড়ে লাগি কেননা দেশের বাতাসে তখন মনে হচ্ছিল যেন অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। আর সেই বছরই আমি সেপ্টম্বর মাসে আমেরিকায় চলে আসি গ্রাজুয়েট ডিগ্রি করার জন্য। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলে হয়তো এত কম বয়সে বিদেশে আসতাম না। দু’দুটো সামরিক সরকার (১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সন) এসে বাংলাদেশকে আনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে এবং দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। আবার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত শেখ সাহেব যে নবাবী স্টাইলে দেশ চালিয়েছিলেন সেটি ও আমার মনঃপূত হয়নি। তবে শেখ সাহেব ও তার পরিবারবর্গকে যে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ইতিহাসে তার নজির অত্যন্ত কম।
আবারো ধন্যবাদ ইরতিশাদ সাহেবকে আমাকে শেখ সাহেবের নির্লজ্জ এই ‘করোনেশন’ এর ব্যাপারে ‘এনলাইটেন’ করতে।
জাফর উল্লাহ্
ডঃ জাফরউল্লাহর লেখার আমিও একজন ভক্ত। বিশেষ করে তাঁর বিশ্লেষণমূলক ইংরেজী লেখাগুলো আমার ভালো লাগে, বাংলায়ও তিনি লিখতে শুরু করেছেন দেখে খুশি হলাম।
তাঁর এই লেখাটা পড়ে আমি একটু বিভ্রান্ত যদিও –
আমার জানা ছিল, বাংলাদেশের সংবিধানে পঁচাত্তরের জানুয়ারীতেই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ ম্নুজিবর রহমান আজীবন (বা আমরণ) রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষিত হন। একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। তাই ডঃ জাফরউল্লাহর উপরে উল্লেখিত বক্তব্যের “কেম্পেইন” আসলে কোন কেম্পেইন ছিল না, বাস্তবে রূপ নিয়েছিল। শেখ মুজিব পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন বলেই সবাই জানতো, তারপরেও তিনি সেই অবিশ্বাস্য কাজটি করেছিলেন।
১৬ই আগস্ট নয়, ১৫ই আগস্টেই (এখনও মনে আছে, সেই দিনটা শুক্রবার ছিল) শেখ মুজিবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার জন্য নয়, তা অনেক আগেই করা হয়ে গিয়েছিল। সেদিন উপাচার্যের (খুব সম্ভবত আব্দুল মতিন চৌধুরী) নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিকভাবে বাকশালে যোগদানের কথা ছিল।
জাফর সাহেবের লেখা খুব ভাল লাগে, তবে আমি যেহেতু আমি বাংলা লেখাই এখানে বেশী পড়ি তাই আশা করি উনি বাংলায় বেশি করে লিখুন।
এই খুনী চক্রের সমর্থক বিষয়ে আমার মতও মোটামুটিভাবে এক। আমাদের দেশের এক বড় অংশের মানুষই আমার ধারনা ৭১ এর মুসলিম পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য অনুশোচনায় ভোগে, যদিও তারা সরাসরি এটা প্রকাশ করতে পারে না। নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবীও করে। যদিও সময় সুযোগমত আসল চেহারা দেখায়। এদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্বে অংশ পর্যন্ত নিয়েছে।
৭১ এর তাদের এই মহা ট্র্যাজ়েডির জন্য এরা মুজিবকেই দায়ী করে এবং অসম্ভব এক ব্যক্তিবিদ্বেষে ভোগে। তাই দুধের শিশু বা প্রসূতি নারী হত্যা এগুলি তাদের মনে তেমন ছায়াপাত করে না। তাদের ভাষায় এগুলি বিপ্লবের অংশ।
এই একই মহল রাজাকারদের বিচারের দাবির বিরুদ্ধেও দেশে বিভক্তি হবে, ঐক্য নষ্ট হবে এ ধরনের খোড়া যুক্তি হাজির করে। যদিও মজার ব্যপার হল তারা মুখে মুখে দাবী করে যে তারাও রাজাকারদের ঘৃণা করে।
আমি সামগ্রিকভাবে বিনপি বা আওয়ামী লীগের তূলনা করছি না, তবে আওয়ামী ওয়ালাদের কোনদিন জিয়ার হত্যাকে দেশ বাচানোর বিপ্লব বা খুনীদের বিচার করা যাবে না এ ধরনের দাবী করতে শুনিনি।
অনেকদিন পর জাফর ভাইয়ের বাংলা লেখা পেলাম। আমি অবশ্য ওনার বাংলা এবং ইংরেজী দুইধরনের লেখারই ভক্ত। রাজনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, দর্শন সহ নানান বিষয়ে আকর্ষনীয় সব লেখা লিখতে অভ্যস্ত তিনি।
মুক্তমনায় যারা নতুন তাদেরকে বলছি, মুক্তমনার সূচনালগ্নে যে সমস্ত অসাধারণ মেধাবী লেখকেরা নিরলসভাবে লিখতেন জাফর ভাই তাদেরই একজন। ওনাদের লেখা পড়েই বলা চলে আমাদের লেখালেখির হাতেখড়ি। জাফর ভাইয়ের পুরনো কিছু লেখা এখানে পাবেন আপনারা।
আশা রইলো এখন থেকে জাফর ভাই নিয়মিত মুক্তমনার পাঠকদের চাহিদা মেটাবেন।