প্রবাহিত অন্ধকার
হাসানআল আব্দুল্লাহ
প্রবাহিত অন্ধকারে বুক ঢেকে যায়
শীতার্ত সময় এসে চেপে ধরে গলা
মহাবিশ্ব অকারণে দড়ি বেধে পায়
বন্ধ করে দিতে চায় এই পথ চলা
দলিত ঘড়ির কাঁটা আমাদের হাত
মাথাগুলো থেঁতলানো পচা জবা ফুল
মিসাইল তাক করা ভয়ার্ত বরাত
চারিদিকে হাহাকার মহা হুলস্থূল
পৃথিবীর নাম ধরে কয়জন লোক
বিকৃত ভাষায় ডেকে গেলো কিছু কাল
অথচ তাদের ঘরে হলো রাজ ভোগ
আর সব মানুষেরা পথের কাঙাল
মহাকাশে একবিন্দু ক্ষুদ্র ধূলি কণা
আপেক্ষিকতার মাপে তার থেকে ছোটো
ভাসমান এই গ্রহ যেনো আবর্জনা
অন্ধকার কেড়ে নিলো তার দুই ঠোঁটও।
উডহেভেন, নিউইয়র্ক
@হাসানআল আব্দুল্লাহ এবং অভিজিৎ দা,
আমার মন্তব্যে সাড়া দিয়ে আমার কৌতুহলকে আরও বাড়িয়ে দেবার জন্য আপনাদেরকে কৃতজ্ঞচিত্তে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভালো থেকেন।
@মুহাইমীন,
ধন্যবাদ। সময় হলে ‘নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ’ (অনন্যা, ২০০৬) পড়ে দেখতে পারেন। ৪র্থ ও ৫ম সর্গ মহাবিশ্ব ও এর খুটিনাটি নিয়ে রচিত।
ধন্যবাদ মুহাইমীন ভাই আপনার মন্তব্যের জন্যে। আপনি যে পঙক্তি দ্বয়ের কথা তুলেছেন, তা অবশ্য এসেছে বিগক্রাঞ্চ-এর কথা চিন্তা করে। স্টিফেন হকিং-এর মতে, বিগব্যাঙ দিয়ে শুরু হওয়া আমাদের মহাবিশ্ব এক সময় শেষ হয়ে যাবে, পৌঁছে যাবে আরেকটি অদ্বৈতবিন্দুতে (সিঙ্গুলারিটি), সে কথাই চিন্তায় এনে একটু রসিকতা করে মহাবিশ্বের পায়ে দড়ি বেধে দিলাম। (যদিও হকিং এই মুহূর্তে তাঁর ওই ধারণা থেকে অনেকটা সরে এসে বলছেন মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলে আসছিলো এবং অনন্তকাল ধরে চলবে। শুরু বা শেষের চিন্তা অনেকটাই তাঁর বিষয় থেকে সরে গেছে। সেটা অবশ্য অন্য কথা।) তবে পায়ে দাড়ি বাধার ব্যাপারটা হয়তো একেবারে রসিকতা নয়, সম্ভবত স্ট্রিং থিয়রি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। সেটা আমি আমাদের বিজ্ঞানী, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ নামের একটি অসামান্য গ্রন্থের লেখক অভিজিৎ রায়ের উপর ছেড়ে দিলাম। অভিজিৎ, আমি যা বলছি তার কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?
@হাসানআল আব্দুল্লাহ,
“দলিত ঘড়ির কাঁটা আমাদের হাত
মাথাগুলো থেঁতলানো পচা জবা ফুল”
এক কথায় চমৎকার,এমন কবিতা অনেকদিন পর মুক্ত-মনায় পাওয়া গেল।
ভালো থাকুন।
@মামুন,
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। ভালো থাকুন।
@হাসানআল আব্দুল্লাহ এবং মুহাইমীন,
আসলে, সিঙ্গুলারিটির যে ব্যাপারটা (যেটা ধর্মবাদীদের কাছে সব সময়ই খুব আকর্ষনীয় বস্তু, কারণ এর মাধ্যমে নাকি বোঝা যায় যে, মহাবিশ্বের শুরু আছে, আর সেই সাথে নাকি প্রমাণিত হয় ঈশ্বরও আছেন) একময় হকিং এবং পেনরোজ গবেষণা করে ১৯৭০ সালে বের করেছিলেন, বলেছিলেন মহাবিশ্ব শুরু হয়েছে এক অদ্বৈত বিন্দু দিয়ে, সেটা আর হকিং এখন সত্য বলে মনে করেন না। তিনি তার ‘ইউনিভার্স ইন নাটশেল’ বইটায় পরিস্কার করেই তিনি বলেন –
‘It is perhaps ironic that, having changed my mind, I am now trying to convince other physicists that there was in fact no singularity at the beginning of the universe – as we shall see later, it can disappear once quantum effects are taken into account’
অর্থাৎ সিঙ্গুলারিটি আবিস্কারের বিশ/ত্রিশ বছর পর হকিং ঘোষণা দিয়েই বলছেন – সিঙ্গুলারিটির ধারণা (যেটা নিয়ে ধর্মবাদীরা বিস্তর লাফালাফি করেছেন, এবং এখনো করে চলেছেন) হয়ত ঠিক নয়।
আর একটা জিনিসও এ প্রসঙ্গে যোগ করা দরকার। বিগ ব্যাং আর বিগ ক্রাঞ্চের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। বিগ ব্যাং-এর ধারণা বিজ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, এবং এই তত্ত্বের পক্ষে কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন’ সহ অনেক প্রমাণই পাওয়া গেছে। কিন্তু বিগ ক্রাঞ্চের ধারনা অনেক সম্ভাবনার ভীরে একটি হাইপোথিসিস মাত্র। মহাবিশ্বের প্রসারণ সত্যই একসময় থেমে গিয়ে সংকুচিত হতে হতে সিঙ্গুলারিটিতে ফিরে যাবে কিনা – এটাতে কেউ নিশ্চিত নয়। এটা নির্ভর করেছে মহাবিশ্বের সন্ধি বা ক্রান্তি ঘনত্বের (ওমেগা) উপর। ওমেগার মান ১ এর কম হলে মহাবিশ্ব হবে সদা প্রসারিত, আর মহাবিশ্ব হবে উন্মুক্ত। কিন্তু ওমাগার মান ১ এর চেয়ে বেশি হলে মহাবিশ্ব হবে বদ্ধ বা সংবৃত। এক মাত্র সেক্ষেত্রেই বিগ ক্রাঞ্চ হবার সম্ভাবনা থাকছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ক্রান্তি ঘনত্বের যে হিসেব পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে মহাবিশ্বের ক্রান্তি ঘনত্ব অনেক কম। কিন্তু শেষ কথা বলার সময় আসেনি। কারন বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আমাদের চেনা জানা পদার্থের বাইরেও এক ধরণের রহস্যময় পদার্থ মহাবিশ্বে আছে, যাকে তারা ‘ডার্ক ম্যাটার’ বা গুপ্ত পদার্থ বলে অভিহিত করেন। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন মহাবিশ্বের নব্বইভাগেরও বেশি জায়গা জুড়ে আসলে ছড়িয়ে আছে এই গুপ্ত পদার্থ। এই গুপ্ত পদার্থকে হিসেবে আনলে ক্রান্তি ঘনত্ব-এর মান অনেক বেড়ে যাবে।
এর মধ্যে ১৯৯৮ সালে সুপারনোভা বিস্ফোরণ (Type Ia supernovae ) নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছেন যে, মহাবিশ্বের প্রসারণ আসলে কমছে না, বরং ক্রমাগত বাড়ছে। এই ব্যাপারটা চলতে থাকলে মহাবিশ্বের কপালে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ বলে কিছু নেই, আছে বিগ রিপ কিংবা ‘মহাচ্ছেদন’। আমি আমার বই আলো হাতে চলিয়াছে আধাঁরের যাত্রীর (অঙ্কুর, ২০০৫/২০০৬ পরিবর্ধিত সংস্করণ) পঞ্চম অধ্যায়ে মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে এ ধরণের বিভিন্ন সম্ভাবনার বিস্তৃতভাবে লিখেছি। ইন্টারনেট ভার্সনটিতেও চ্যাপ্টারটির অংশবিশেষ দেখা যেতে পারে এখানে)। তবে মূল বইয়ে অনেক ডিটেল আকারে পাওয়া যাবে।
আর হ্যা – হাসানের কবিতাটা অপুর্ব। এটা কি নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ- এর?
@অভিজিৎ,
আপনার এই মূল্যবান আলোচনার জন্যে ধন্যবাদ। কবিতাটি আপনার ও অন্যান্যদের ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। না, এই কবিতাটি ‘নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ’ গ্রন্থের নয়। নতুন কবিতা। তবে বিষয় একই। আপনাদের উৎসাহ আমার চলার পথকে প্রসারিত করবে।
কথাটা বুঝলাম না। সুন্দর কবিতার জন্য ধন্যবাদ। কবিতায় এসময়ের ভাবনা ফুটে উঠেছে।