সূর্য ওঠার প্রহরে আক্রান্ত হলাম আমরা।
গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিলাম তিনজনই, বিলাইছড়ির কাছাকাছি একটা নিরিবিলি গ্রামে। গত কয়েকদিনে খুব সামান্যই ঘুমোতে পেরেছি আমরা। একটু সুযোগ পেয়েই মড়ার মত ঘুমিয়েছিলাম সবাই। যে বুড়োর বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সে আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে এখানে কোন বিপদ নেই। তাছাড়া সে আমাদের জন্য সারারাত পাহারা দেবেও বলেছিল। কোন বিপদ আসার আগেই আমাদেরকে সতর্ক করবে বলেছিল। ফলে নিশ্চিন্ত মনেই ঘুমোতে গিয়েছিলাম আমরা।
দড়াম করে দরজা ভেঙ্গে সেনাবাহিনীর লোকেরা ঘরে ঢুকতেই নিমেষেই জেগে গেলাম সবাই। দীর্ঘদিন ধরে বিপদকে সঙ্গী করে চলতে অভ্যস্ত আমরা। স্নায়ুগুলো বিপদের জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকে সারাক্ষণ। কে যেন শক্তিশালী সার্চ লাইটের আলো ফেললো আমাদের উপর। তীব্র আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেল আমার। কিশোর আর জুনুকে দেখলাম পাহাড়ি চিতার ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো পাশে রাখা অস্ত্রের দিকে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে অনেক। অস্ত্র হাতে তুলতে না তুলতে একরাশ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলো দুজনেই। অস্ত্র হাতে নিতে গেলে কিশোর আর জুনুকে টপকে যেতে হবে আমাকে। আমি অসহায়ের মত দু’হাত উপরে তুলে দাঁড়িয়ে গেলাম। তীব্র আলোয় সবকিছুই আবছা দেখছি। চারিদিকে কিছু ছায়ামুর্তির অস্পষ্ট নড়াচড়া । যে কোনো মুহুর্তেই একঝাক গুলি এসে কিশোর আর জুনুর মত আমাকে ঝাঁঝরা করে দেবে হয়তো এক্ষুনি। মৃত্যুর কত কাছে এসে দাঁড়িয়েছি আমি। আচ্ছা, মৃত্যুর সময় কেমন লাগে মানুষের? কিশোর আর জুনু কি কিছু ভাবার সময় পেয়েছিল? চারপাশ থেকে কর্কশ আওয়াজ ভেসে আসছে। চারিদিকে ধাতব ঝংকার। এর মধ্যেই কেউ একজন আদেশের স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘খবরদার, কেউ গুলি করবে না। ও নিরস্ত্র’।
গলার স্বরটা আবছাভাবে পরিচিত মনে হলো আমার। আগে কোথাও শুনেছি। কোথায় শুনেছি, সেটা নিয়ে ভাবার সময় পেলাম না। ঘাড়ের উপর রাইফেলের বাট দিয়ে কেউ একজন সজোরে বাড়ি দিল। হাটুর উপরে ভা্রি বুটের লাথি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলাম আমি। আবারো ধমকে উঠলো সেই একই কণ্ঠস্বর। ‘কোন মারপিটও নয়’।
টেনে হিঁচড়ে আমাকে উঠোনে নিয়ে এলো সৈনিকেরা। সাতজনের একটা দল। ইস্পাত কঠিন চেহারা সকলেরই। সকালের নরম আলোতে কেন যেন আরো কঠিন দেখাচ্ছে সবাইকে। তরুণ একটা ছেলে দলনেতা। কাঁধে ক্যাপ্টেনের ব্যাজ। ওকে দেখেই বিস্ময়ে চমকে উঠি আমি। আরে, এতো সুমন। কবে ক্যাপ্টেন হয়ে গেছে। আমার বিস্ময় অবশ্য চোখের পলকে সামলে নেই আমি। সুমনের চেহারায় আমাকে চেনার কোন লক্ষণই দেখি না। সুমন কি আমাকে চিনেছে? নিশ্চয়ই চিনেছে। তা না হলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতো না আমাকে। আমার মতই হয়তো না চেনার ভান করছে। যুদ্ধ যে সব কিছুকেই পালটে দেয় তার নিজস্ব নিয়মে।
উপজাতীয় কোটায় আমি তখন ভর্তি হয়েছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদে। থাকতাম আশরাফুল হক হলে। কৃষি অর্থনীতির ছাত্র ছিল সুমন। আমি আর সুমন আরো চারজন ছাত্রের সাথে গাদাগাদি করে এক রুমে থাকতাম। দুর্দান্ত ফুটবলার ছিল সুমন। আমিও খুব একটা খারাপ খেলতাম না। সুমনের কারণেই আন্তঃ হল ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিলাম আমরা সেবার। ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে আইএসএসবিতে টিকে গিয়ে বিএমএর লং কোর্স করতে ভাটিয়ারির মিলিটারী একাডেমিতে চলে গেল সুমন। তারপর থেকেই আর কোন যোগাযোগ নেই ওর সাথে আমার। থাকার কথাও নয়। আমার পৃথিবী যে উলটে যেতে শুরু করেছে তখন।
সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ার সময়ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটা এলো। আবদুর রশীদ নামের এক বাঙালি নেতাকে অজ্ঞাত পরিচয় কেউ গুলি করে মেরে ফেলেছিল। তারই জের ধরে সেনাবাহিনী আর গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহায়তায় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে বাঙালি সেটলাররা নৃশংসভাবে রাতের আঁধারে হামলা চালিয়েছিল আমাদের গ্রামে। সমস্ত গ্রামটাকেই জ্বালিয়ে দিয়েছিল তারা সুতীব্র ঘৃণায়। আমার কিশোরী ছোট বোনটাকে ছিনিয়ে নিয়ে বিধবা মাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। ছোট বোনটার মানুষ নামক শকুনে খাওয়া রক্তাক্ত শরীর পড়ে ছিল পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে। খবর পেয়ে সাথে সাথেই লংগদুতে ছুটে গিয়েছিলাম আমি।
আগুনে পোড়া ঝলসানো মা আর ক্ষত বিক্ষত বোনটার সৎকার করে পোড়াবাড়ির দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আমি বহুক্ষণ। আপনার বলতে এই বিশাল পৃথিবীতে এখন আর কেউ রইলো না আমার।
ঘরের মধ্যে আটকে রেখে যখন আগুন দিয়েছিল মায়ের আমার কেমন লেগেছিল? খুব কী কষ্ট পেয়েছিল মা আমার? ব্যথায় কী চিৎকার করেছিল গলা ফাটিয়ে? আমাকে কী ডেকেছিল বাঁচানোর জন্য? কী ভেবেছিল তখন আমার গর্ভধারিনী? জীবন্ত রোষ্ট হতে হতে নিশ্চয়ই তার কিশোরী মেয়ের কল্যানের কথাই ভেবেছিলেন তিনি। মায়ের যে আমাদের দুজনকে ছাড়া আর কোন চিন্তা ছিল না কখনো। আমরা দু ভাইবোনই ছিলাম তার গোটা পৃথিবী। মায়ের কারণেই পাহাড়ের অস্থিরতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে ছিলাম আমি সযত্নে। পড়ালেখা শেষ করে কীভাবে মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাবো সেই চিন্তাতেই বিভোর ছিলাম আমি।
যে কাজটা এর আগে অনেক বলেও আমাকে দিয়ে করাতে পারেনি কেউ, সেই কাজটাই নির্দ্বিধায় করে ফেলি আমি। মা-বোনকে সৎকারের পরের দিনই শান্তি বাহিনীতে যোগ দেই আমি।
কিশোর আর জুনুর লাশকে বাশের সাথে ঝুলিয়ে দুই মাথা দুজন করে সৈনিক কাঁধে ঝুলিয়ে নেয়। আমার হাত পিছন দিকে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। গ্রাম থেকে মাইল খানেক দূরে জঙ্গলের হেঁটে যাই সবাই। আমাদের আক্রমণ করার আগে এখানেই আর্মির লোকজন তাদের ট্রাকটাকে লুকিয়ে রেখেছিল। ট্রাকের শব্দ পেয়ে আমরা যেন সতর্ক হতে না পারি সে কারণে। ট্রাকে করে পাহাড়ের উঁচু নীচু আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই মেরাংছড়ি আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছে যাই আমরা। একটা স্কুলকে আর্মি ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যে একবারো সুমন আমার সঙ্গে কথা বলার কোন চেষ্টা করে নাই। এমনকি একবার ফিরেও তাকায়নি আমার দিকে। ভাবলেশহীন মুখ করে রেখেছে। ক্যাম্পে নিয়ে একটা রুমে আটকে রাখা হলো আমাকে।
ঘন্টা দুয়েক পরে হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পেলাম। স্কুলের মাঠেই নামছে মনে হলো। বিকট শব্দ হচ্ছে। একটু পরেই থেমে গেল সে শব্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে দুইজন সৈনিক আসে আমার কক্ষে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাইরে নিয়ে যায় আমাকে। স্কুলের মাঠে জলপাই রঙ এর বিশাল হেলিকপ্টারটা অলস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। একটা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সুমন আর মুষ্টিযোদ্ধাদের মত সুঠামদেহী এক মেজর কথা বলছে। মেজরের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। উত্তেজিত ভাবভঙ্গি দুজনেরই। কিছু একটা নিয়ে দুজনেই তর্ক করছিল মনে হয়। আমাকে দেখেই থেমে গেল দুজনেই। এই মেজর সাহেবই তাহলে হেলিকপ্টারে করে এসেছেন। মেজরের বুকের ডানদিকে নেম ট্যাগ ঝুলানো। তানভীর নাম ভদ্রলোকের।
‘গাছের সাথে বাঁধো ব্যাটাকে’। আমাকে টেনে আনতে দেখেই জলদ গম্ভীর স্বরে হুকুম দেয় মেজর তানভীর।
শক্ত করে গাছের সাথে বেঁধে ফেলা হয় আমাকে।
‘একে কি ইন্টারোগেশন করেছো?’ সুমনকে জিজ্ঞেস করে মেজর।
‘না করিনি এখনো।‘
‘কেন করোনি?’ ধমকে উঠেন মেজর।
‘আমার সৈন্যরা ক্লান্ত ছিল। গতরাতে অনেক ধকল গেছে ওদের উপর দিয়ে। তাছাড়া আমিও ক্লান্ত ছিলাম’।
কটমট করে সুমনের দিকে তাকালো মেজর তানভীর। দায়িত্বে এতখানি অবহেলা মেনে নিতে পারছে না।
‘ঠিক আছে। আমার সৈন্যরা ক্লান্ত না। আমিও ক্লান্ত নই। আমরাই জেরা করছি’।
‘নাম কি?’ আমার দিকে ফিরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো মেজর।
‘কুসুম, কুসুম চাকমা’।
‘বাড়ী কোথায়?’
‘লংগদু’।
‘ট্রেনিং নিয়েছো কোথায়? ইণ্ডিয়ায়?’
কথা বলি না আমি।
‘চুপ করে আছিস কেন শুওরের বাচ্চা। কি বলছি শুনিস নাই’। তুই তোকারিতে নেমে এসেছে মেজর সাহেব এখন।
‘দেশেই ট্রেনিং নিয়েছি। ইণ্ডিয়াতে যাইনি’।
ঘুষিটা এতো দ্রুত গতিতে এলো যে মুখটা সরাবার সময় পেলাম না আমি। নাকের হাড় ভাঙ্গার শব্দ হলো। গলগল করে রক্ত আমার মুখ বেয়ে বুকে এসে পড়লো।
‘মিথ্যাবাদী লোকজন আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। এটা হলো মিথ্যা বলার শাস্তি’।
‘তোদের নেতা সন্তু লারমা এখন কোথায়?’
‘জানি না’। মৃদু স্বরে বলি আমি।
‘বলিস কি? জানিস না? নেতার কথায় সাধারণ মানুষজনকে মারিস আর নেতার খবরই রাখিস না’।
সন্তু লারমার খবর সত্যিই জানি না আমি। এমনকি কোনদিন চোখেও দেখিনি তাকে। শান্তি বাহিনীতে আমরা ছোট ছোট ইউনিট হিসাবে কাজ করি। কোন একটা ইউনিট ধরা পড়লেও পুরো অর্গানাইজেশনের কোন ক্ষতি হয় না। কিছু না জানার কারণে হাজার অত্যাচারেও অন্যদের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারে না তারা। আর্মির লোকেরাও তা জানে। তারপরও খামোখাই অত্যাচার চালায় বন্দীদের উপর।
‘সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। কীভাবে কথা বলাতে হয় জানি আমি।‘
মেজর কাছে দাঁড়ানো একজন সৈন্যকে ঈশারা দিলেন। দেড় হাত লম্বা কাঠের একটা ব্যাটন এনে দিল সে মেজরের হাতে। ব্যাটনটা দিয়ে আমার দুই হাটুতে নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করলেন তিনি। তীব্র বেদনায় অমানুষিক চিৎকার বেরিয়ে এলো আমার মুখ দিয়ে। পশুর মত আমাকে পেটাতে পেটাতে এক সময় হয়রান হয়ে গেলেন তিনি। ব্যাটনটা তুলে দিলেন সৈন্যটার হাতে। পূর্ণ শক্তিতে সৈন্যটাও আমার হাটুতে পেটাতে শুরু করলো। তীব্র যন্ত্রণায় কখন যে জ্ঞান হারিয়েছি নিজেই জানি না। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম আমার সারা শরীর ভেজা। গায়ে পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরিয়েছে আমার। দু হাটু ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। কোন চেতনাই নেই আর সেখানে। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে আমাকে এরা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সুমন দাঁড়িয়ে আছে এখনো সেই একি জায়গায়। চেহারা আগের মতই ভাবলেশহীন। কয়েকমন ওজন মনে হচ্ছে মাথটাকে আমার। ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। নিজের অজান্তেই বুকের কাছে চলে এলো সেটা।
চুলের মুঠি ধরে আমার মাথাটা উঁচু করে ধরলেন মেজর। ‘সন্তু লারমা কোথায়?’ আবারো জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
‘জানি না, আমি জানি না’। জড়ানো গলায় উত্তর দেই আমি।
আমার গালে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরেন তিনি। কেন যেন কোন ব্যথাই লাগছে না এখন আর আমার। শুধু ঘুম পাচ্ছে। গভীর ঘুম। ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে চামড়া পোড়ার গন্ধ পাই আমি। মায়ের চামড়া পোড়া গন্ধ আসছে কোথা থেকে?
পেটের উপর হাটুর গুঁতো খেয়ে চেতনা ফেরে আমার। চোখ মেলে তাকাই। রক্ত চক্ষু নিয়ে পৈশাচিক উন্মত্ততায় গালিগালাজ করে চলেছে মেজর তানভীর তখনো।
‘শালা, নাক বোঁচা বেজন্মা কোথাকার। ভেবেছিস ইণ্ডিয়ার সাহায্য নিয়ে স্বাধীন হয়ে যাবি তোরা। স্বাধীন হওয়া ছুটাচ্ছি তোদের। স্বাধীনতা তোদের পাছার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দেবো’।
‘স্বাধীনতা না, আমরা স্বায়ত্বশাসন চাইছি’। দুর্বল স্বরে মেজরের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করি আমি।
ঠাস করে গালে প্রচণ্ড থাবড়া কষায় মেজর তানভীর। গালের ভিতরটা কেটে যায় আমার। ‘বান্দীর বাচ্চা, জ্ঞান দিতে আসিস। আমার কাছে দু’টোই এক জিনিষ’।
আমার মাকে নিয়ে প্রচণ্ড কুৎসিত একটা গালি দেয় সে। আর সহ্য হয় না আমার। তীব্র ঘৃণায় মুখের মধ্যে জমে থাকা থুথু আর রক্ত ছুড়ে দেই ওর গালে।
গালে থুথু পড়তেই কয়েক সেকেণ্ডের জন্য হতভম্ভ হয়ে যায় মেজর তানভীর। তারপরই প্রচণ্ড রাগে আগুনের মত জ্বলে উঠে তার চোখ দুটো। চোখ মুখ বিকৃত হয়ে গেছে ক্রোধে। দুই পা পিছিয়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করে সে। আমার বুকের দিকে তাক করে আঙুলের চাপ বাড়াতে থাকে। পরিষ্কার খুনের নেশা দেখতে পাই আমি তার চোখে।
ঠিক তখনই পিস্তলের সেফটি ক্লাচ অফ করার মৃদু একটা শব্দ ভেসে আসে। মেজরের দিকে অস্ত্র বাগিয়ে ধরেছে সুমন।
‘ওকে গুলি করলে আপনাকেও মরতে হবে স্যার’। হিমশীতল কন্ঠে সুমন বলে।
অবাক বিস্ময়ে সুমনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে মেজর।
‘ও নিরস্ত্র, যুদ্ধবন্দী। ওকে হত্যা করার অধিকার আপনার নেই’। সুমনের গলার স্বর এখনো শান্ত।
‘নিরস্ত্র? যুদ্ধবন্দী? এই বদমায়েশগুলো একেকটা সন্ত্রাসী। যুদ্ধবন্দীতো দূরের কথা বন্দীর মর্যাদাও এরা পাবে না। কুকুরের মত গুলি করে মারতে হবে এগুলোকে। পুরো এলাকাটাতে অশান্তি বানিয়ে রেখেছে এরা’।
‘আপনি ওদেরকে যা খুশি ভাবতে পারেন। আমার কাছে ও বন্দী এবং নিরস্ত্র। ওকে গুলি করেছেনতো আপনাকেও মরতে হবে’।
‘তুমি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছ যে, আমি তোমার উপরের পোস্টে আছি’। রাগী গলায় চেঁচিয়ে উঠেন মেজর তানভীর।
‘ভুলি নাই, স্যার। কিন্তু এটা আমার ক্যাম্প, আপনার নয়। আমিই এখানকার ইনচার্জ। এখানে আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’।
সুমনের গলার স্বরে এমন একটা কিছু ছিল যে মেজর অস্ত্র নামিয়ে নেয়। হিংস্র চোখে তাকিয়ে থাকে সুমনের দিকে।
‘এর ফল তোমাকে পেতে হবে ক্যাপ্টেন। ফিরে গিয়েই অফিসিয়ালি অভিযোগ করবো আমি। তোমার যাতে কোর্ট মার্শাল হয় তার সব ব্যবস্থাই করবো আমি’। সাপের মত হিসহিস করে বলে সে।
‘বেজন্মাটাকে আমার সাথে চিটাগং নিয়ে যাচ্ছি আমি। অর্ডার সাথেই আছে আমার। কাজেই বোকার মত বাধা দিতে যেওনা। ওখানে নিয়ে গেলে ওরাই ওকে পরপারে পাঠিয়ে দেবে। আমাকে কিছু করতে হবে না’। ঠা ঠা করে বিকৃত হাসি দেয় মেজর।
বাঁধন খুলে দেয়া হয় আমার। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই আমি। পায়ে ভর করে দাঁড়ানোর অবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে ওরা আমার। দু’জন সৈনিক দুপাশ থেকে আমাকে ধরে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে হেলিকপ্টারে তোলে। হেলিকপ্টারে উঠার আগে আমি শেষবারের মত সুমনের দিকে তাকাই। কঠিন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। চোয়ালে হাড়্গুলো উঁচু হয়ে আছে। কোথায় যেন সূক্ষ্ণ একটু পরিবর্তন হয়েছে সুমনের। চোখ দুটো কি একটু কুঁচকে আছে ওর? সুমনের জন্য বুকের মধ্যে গভীর ভালবাসা অনুভব করি আমি।
‘ভাল থাকিস দোস্ত, খুব ভাল থাকিস’। মনে মনে বলি।
আমাদের নিয়ে বিশাল ফড়িঙটা উড়াল দেয় আকাশে। বাতাস কেটে চট্টগ্রামের দিকে ছুটে চলেছে দ্রুতগতিতে। হাত বাধা অবস্থায় কপ্টারের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে আমাকে। আমার ডানদিকে বসে আছে মেজর তানভীর। পিছনের দিকে সৈন্যরা।
কিছুক্ষণ পরেই ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের দুই সৈনিকের দিকে তাকালেন মেজর।
‘কী করতে হবে জানোতো তোমরা। দেরি করার আর দরকার নেই।‘
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে তারা। নিঃশব্দ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মুখ। সিট থেকে উঠে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় তারা। হ্যাচকা টানে আমাকে নিয়ে আসে হেলিকপ্টারের দরজার কাছে। ঠেলা দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয় দরজা। আমার পিছনে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে মেজর তানভীর। কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না আমার। তবে, কোন বিকার ঘটে না আমার। কোন ভীতিও স্পর্শ করে না আমাকে। ভয় ভীতির অনেক উর্ধ্বে চলে গিয়েছি আমি এখন।
খোলা দরজা দিয়ে বাইরে তাকাই আমি। অনেক নীচে পাহাড়ের বুক চিরে সাপের মত আঁকাবাকা হয়ে শুয়ে আছে চেংগি নদী। তার পাশেই পাহাড়ী উপতক্যায় নানান জাতের গাছ-গাছালিগুলো গভীর মমতায় কাধে কাধ মিশিয়ে বন্ধুর মত দাঁড়িয়ে আছে। কারো সাথে কারো কোন ঝগড়াঝাটি নেই, নেই কোন বিবাদ, নেই কোন বিসম্বাদ। শুধু মানুষগুলোই আলাদা। কেন যেন মিলে মিশে একসাথে থাকতে পারে না কিছুতেই।
পিঠে প্রচণ্ড একটা লাথি খেয়ে আমি ছিটকে পড়লাম অসীম শূন্যতায়। পাখির পালকের মত হালকা হয়ে গেছে শরীরটা আমার। নীচে চোখ গেলো। নীল পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় সূর্যের আলো পড়ে লাল আভা তৈরি হয়েছে। তার পাশেই স্নেহময়ী সবুজ বনভূমি। পরম আদরে আমাকে তার কোলে তুলে নেবার জন্যই মনে হয় দ্রুতগতি আমার দিকে এগিয়ে আসছে সেই সবুজ জমিন। ভারী চোখ মেলে আকাশের দিকে তাকালাম আমি। নীল আকাশে পাল তোলা সাদা সাদা মেঘের ভেলা ভেসে চলেছে এলোমেলো। কী আশ্চর্য! ওই ভেলাতেই দেখি আমার মমতাময়ী মা সজল চোখে দাঁড়িয়ে আছে। গভীর ভালবাসায় দু’হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমার দিকে।
ছটফট করে উঠি আমি। মায়ের বুকের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে আমার। আকুল স্বরে বিড়বিড় করে উঠি আমি, ‘মা, মাগো, একটুখানি অপেক্ষা করো। আমি আসছি’।
যার হাত এমন লেখা বের হয়, তার হাত যেন থেমে না যায়।
এমন দয়ার্দ্র মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মাঝি দা। 🙂
ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ অসাধারণ লিখনির জন্য। আপনার কথাগুলো কাল্পনিক হতে পারে কিন্তু অবান্তর কিংবা মনগড়ানো মিথ্যা নয়। আমি একজন পাহাড়ের মানুষ হিসেবে এগুলোর সত্যটা সততার সহীত একাত্ততা পোষন করতে পারি। আমাদেরকে সংখ্যাগুরু জনগণদের এই নিয়ে সচেনতা বৃদ্ধি করাতে হবে। জাতিবেদ -অন্ধভাবে বিশ্বাসকে শিখড় থেকে উপড়ে তুলে দিতে হবে।
[…] লিখেছিলেন একটি দুর্দান্ত ছোটগল্প – নীল পাহাড়ের চূড়ায়। বাংলা সাহিত্যে আমার পড়া অন্যতম […]
না অতি সাধারন গল্প।
উপজাতীয় জনগোষ্ঠীসমূহের ওপর এখনো অত্যাচার চলছে। সরকার (আওয়ামী লীগ, বিএনপি নির্বিশেষে) এবং বাংলাদেশের “দেশপ্রেমিক” সেনাবাহিনীর নীতিই হচ্ছে – দেশ শাসনের স্বার্থে এদেরকে দাবিয়ে রাখতে হবে। উপজাতীয়দের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চলছে বাংলাদেশের জনগন মনে হয় না এ সম্পর্কে খুব একটা অবহিত। ফরিদের এই গল্পটা আমাদের পাঠকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে অবদান রাখবে আশা করছি।
ফরিদের গল্প বলার ক্ষমতা অসাধারণ, শব্দ দিয়ে দক্ষতার সাথে বাস্তব চিত্র আঁকতে পারেন। ফরিদকে অভিনন্দন।
হ্যা, মানবিকতাকে ধবংস করা প্রশিক্ষণ বন্ধ করা হোক। নইলে অচিরেই একটি বড় আন্দোলন তৈরি করা হবে এই ‘পাথর’ তৈরি করার নীতির বিরুদ্ধে। এভাবে প্ল্রশিক্ষণের নামে অত্যাচার সহ্য করলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় হবে। আসলে যারা সেনাবাহিনীতে যায় তাদের অধিকাংশই ভাল সুযোগ-সুবিধার,সম্মান,সামাজিক মর্যাদার লোভে যায়। এই লোভ করার ফলে তাদের ভিতরকার বিবেক লোপ পায়, ফলে প্রশিক্ষনের নামে তাদেরকে যে অমানবিক পশু করে তোলা হয় তা তারা নিজেরাও টের পায় না। আমরা যদি শুরুতেই লোভকে পরিত্যাগ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের মধ্যে বিশুদ্ধ চিন্তাশক্তি, জ্ঞান, বিবেক জন্মাত। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, যত দোষ্ আমাদের ভেতরকার অশুভ শক্তির আর এই অশুভ শক্তিকে বৃদ্ধিকারী আমাদের সমাজ ব্যবস্থার। আবার আমাদের প্রত্যেকে তার ভেতরকার পথনির্দেশক – ‘অন্তরের আর্তি‘ বিবেককে অগ্রাহ্য করে সমাজের ভয়ে আমাদের অশুভ শক্তিকে লালন করার ফলেই কিন্তু সমাজ কল্যানের দিকে এগুচ্ছে না, যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেছে। সেই আদি কাল থেকে যেমন সমাজ অশান্তিময় ছিল, আজও সেমন রয়ে গেছে। তাই আমাদের সবার আগে আমাদের নিজেদের ভেতর শুভ অশুভ শক্তির অস্তিত্ব টের পেতে হবে এবং শুভ শক্তির আনুগত্য করতে হবে। আমরা নিজেরা যদি ভাল না হই আর অপরকে সৎ পথের নির্দেশ দেবার আর্তি ভেতর থেকে অনুভব না করতে পারি তবে কিন্তু কখোনোই আমরা জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ তৈরী করতে পারব না। শুধু নিজে ভাল থাকলে তা হবে ভন্ডামী আর অমানুষের লক্ষণ।
নইলে আমরাও সেই লোভে পড়ে আবার সেনাবাহিনীতে অশুভ শক্তির চাকুরি করতে যাব আর এই সিদ্ধান্ত নেবার সাথে সাথেই আমাদের বিবেকের অপমৃত্যু হবে। সুতরাং সবাই লোভ থেকে সাবধান।
আমার কিছু কাছের আত্বীয় জলপাই গ্রুপের হওয়া সত্তেও জলপাই বাহিনীর প্রতি ঘৃণা লাদেন বাহিনীর মতই।পৃথিবীর সমস্ত জলপাইওলাদের প্রতি একরাশ থুথু দিলাম যারা পোষাকের মধ্যে ঢুকে কুত্তা হয়ে যায় অথবা তাদের কুত্তা হিসেবে তৈরী করা হয়। এ বাহিনীর মানুষকে কুত্তা বানানোর নীতি বন্ধ হোক।
লেখাটি ভাল লেগেছে।ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ।
@হেলাল,
কিছু করার নাই ভাইয়া।সুস্থ মানবিকতা বোধ নিয়ে বোধ হয় কাউকে গুলি করা বা গুলি চালানো কস্টকর। তাই সব দেশের সেনাবাহিনীই মোটামুটি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়,বা তাদের সেরকম বানানো হয়।
নাহলে যে আসল উদ্দেশ্যই পুরন হবে না।
পড়ে মনটা ভার হয়ে গেল। ফরিদ ভাইয়ের গল্পটা করূণ বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। আদিবাসীরা আমাদের দেশের সবজায়গায়ই নির্যাতিত। মহা সমারোহে ওদেরকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমার এবিষয়ে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে।
অনেক আদিবাসী আবার জায়গা-জমি সংক্রান্ত আইনের প্যাচ বুঝে না এবং বংশপরস্পরায় পাওয়া জায়গা জমির কাগজ পত্র করার কথা তারা কখনো ভাবেনি বা প্রয়োজন হয় নি। এ সহজ সরল নির্ভেজাল পরিশ্রমী মানুষগুলোকে তাই অতি সহজেই উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে।
আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া জাতি। নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা জীবন বাজি রেখে অস্ত্র ধরেছিলাম। আমাদের দেশে এরকম হওয়ার কথা তো ছিলনা।
মুশকিল হল আমাদের দেশে একটি অলিখিত কালচার আছে যাতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেকোন কিছু বলাকেই অত্যন্ত কঠোর চোখে দেখা হয়। রাজনীতিবিদ, আমলা, এমনকি প্রধান বিচারপতিরও সমালোচনা করা যায় কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার? ঊহু, তাহলেই তা হবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র…ভারতের দালালী।
আমি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নই, তবে গনতন্ত্রের যেকোন সরকারী কর্মচারীর মত তাদের কারকর্মও হতে হবে স্বচ্ছ এবং অবশ্যই জবাবদিহিমূলক।
অসাধারন!! বাস্তবতার সাথে মানবিক অনুভূতিগুলোর কি সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে এখানে। উপজাতি হোক আর সাধারন-জাতিই হোক মানুষে হিসেবে সবাই যে সমান, প্রত্যেকের যে একই মানবিক অনুভূতি-অধিকার আছে এ গল্প আমাদের আবারো তা মনে করিয়ে দেয়। আমরা সাধারন জাতিগোষ্ঠীরা উপজাতিয়দের যে মানুষ হিসেবে মনে করি না তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এ গল্প স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিজাতীয়দের প্রতি ঘৃনার প্রকাশ না ঘটিয়ে ন্যায় বিচার করতে পারলে আমরা প্রকৃত মনুষত্যের দিকে ধাবিত হব। আমাদের প্রত্যেকে তার অন্তরের শুভ- অশুভ শক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে শুভ শক্তির চর্চার মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে দমন করে প্রকৃত মনুষ্যত্বের দিকে ধাবিত হব এটাই আমার কাম্য। ঘৃনা আসলে অন্তরের অশুভ শক্তিরই অংশ, তাই যে কোন ঘৃনাকে দমন করে তার বিপরীতে আমরা যদি প্রত্যেকে ভালবাসাকে তার অন্তরে লালন করি তাহলে কিন্তু এত জটিলতারও সৃষ্টি হয় না আর সমাজে অশান্তিও বিরাজ করে না। তাই আমাদের প্রত্যেককে ঘৃনার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং অপরকেও এব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। আসুন সকলে মিলে আমরা সমাজ গড়ি, সকলকে শুধু ভালবাসলেই হবে না আর মানুষগুলোও যেন সকলকে ভালোবাসে সেই ব্যাপারে আমাদেরকে অন্যজনকে সহযোগিতা করতে হবে। শুধু নিজে সৎ থেকে সমাজকে ভাল করা যাবে না।
লেখককে অন্তর থেকে শুভেচ্ছা।
@মুহাইমীন,
আপনি যে ইমেইল একাউণ্টটি মন্তব্য করতে ব্যবহার করছেন, সেই একাউন্টে ব্লগের লগ-ইন ইনফরমেশন পাঠানো হয়েছে। একটু চেক করে দেখুন ইমেইল পেয়েছেন কিনা এবং সব ঠিক ঠাক আছে কিনা।
@মুক্তমনা এডমিন,
পেয়েছি, সব ঠিক আছে। ব্লগ সদস্য করার জন্য মুক্তমনা পরিবারের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
তা হলে অনুগ্রহ করে লগ-ইন করে মন্তব্য করবেন। লগইন অবস্থায় মন্তব্য করলে মন্তব্য সরাসরি ব্লগে প্রকাশিত হয়ে যায়। নাইলে মডারেটর কখন সেটা এপ্রুভ করবেন, তার জন্য বসে থাকতে হবে।
আপনাকেও মুক্তমনায় লেখার জন্য এবং আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।
গল্পটা ভাল। একই ঘটনা নিয়ে একটা ভাল হিন্দি সিনেমা আছে কাশ্মীরের ওপর। নামটা ভুলে গেলাম-পরে দেব।
@বিপ্লব পাল,
আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডোর কথা শুনেছি বর্তমানে আটলান্টায় আছে যার কাজ ছিল কাশ্মীরি স্বাধীনতাবাদীদের ধরে এনে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মারা।
তার ভাষ্যমতে কয়েকবছর এই কাজ করার পর তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হবার মত হওয়ায় সে পালিয়ে আমেরিকা চলে আসে।
@আদিল মাহমুদ,
সিনেমাটা সেই ঘটনা নিয়েই ছিল।
এটা বেশ বিতর্কিত ও সেন্সিটিবগ ইস্যু, অনেকেই অন্ধ দেশপ্রেমবশতঃ এ ধরনের গল্প বিশ্বাস করবেন না, নানারকম উত্তপ্ত কথাবার্তা বলবেন। তবে কল্পনা চাকমা, আলফ্রেড সোরেন এ জাতীয় কিছু ঘটনা পত্রিকায় আসলেও আরো বেশ কিছু যে ঘটেছে বা এখনো ঘটে চলেছে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারন আছে।
কিছুদিন আগে আগন্তুক দেশপ্রেম আর সত্য কথনের সমস্যা বিষয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন।
আমার দেশের সেনবাহিনী নিজ দেশ তো অনেক দুরের কথা, এমনকি পরদেশে গিয়েও এ ধরনের কিছু করে তা আমি কেন চাইব? কোন সংখ্যালঘূ জনগোষ্ঠী যেন কোন কারনে বৈরী না হয়ে ওঠে তা আমাদেরই দেখতে হবে। সেটাই সমস্যার মূল সমাধান।
ভাইয়ারে আর কোন নাম পাইলেন না?? শেষ পর্যন্ত আমার নামের বারোটা বাজাইলেন। আমাকে আপ্নার পছন্দ হয় নাই তা সরাসরি কইলেই তো পারতেন। :-((
গল্পটা খুব ভালো। আমি সাধারনত কোন সাহিত্যধর্মী লেখা কম্পিউটারের স্ক্রীনে পড়তে ভালোবাসি না। কারন আমার চোখে তা যথেস্ট পীড়া দায়ক।তবে আপনারটা কস্ট করে পড়লাম আর ভালোও লাগলো।
আসলে সেনাবাহিনীর বুদ্ধি এমনিতেই হাঁটুতে থাকে :-))
তাদের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
ভাইয়া গল্পের নায়ক কে মাসুদ রানার মত বাঁচিয়ে তুলে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়া যায় না? অন্তত মা বোনের প্রতিশোধ নিতে দেন।
@তানভী,
আপনার নামতো তানভী, তানভীর না। আপনি অভিযোগ করেন কেন?
এটি একটি কাল্পনিক গল্প, তারপরও…..।
এই গল্পের প্রতিটি নাম, প্রতিটি ঘটনার পিছনে কোন না কোন কারণ নিহিত আছে। এলোমেলোভাবে যা মনে এলো সেরকম করে নামকরণ করা হয়নি চরিত্রগুলোর, ঘটনাগুলোরও বিন্যাস করা হয়নি সেভাবে।
গল্পের মেজর চরিত্রের নাম তানভীর কেন হলো সেটা জানতে হলে এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন।
কুসুম চাকমা নামটিও আমি নিয়েছি আমার পরিচিত একটা চাকমা ছেলের নাম থেকে।
লংগদুর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। আবদুর রশীদ নামের একজন স্থানীয় বাঙালি নেতা অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর হাতে খুন হন। শান্তিবাহিনী তাকে হত্যা করেছে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে লে এর বদলা নিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং বাঙালি সেটলাররা হামলা চালায় পাহাড়ী গ্রামে। অসংখ্য বাড়ী পুড়িয়ে দেয়া হয়। বৌদ্ধ মন্দিরও রেহাই পায়নি। চল্লিশজন পাহাড়ীকে হত্যা করা হয় সেইদিন। এদের কারো লাশই হস্তান্তর করা হয়নি তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে।
হেলিকপ্টার থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দেবার ঘটনাটাও কল্পনা থেকে আসেনি। প্রমাণ দিতে পারবো না এই যা সমস্যা।
@ফরিদ,
থ্যঙ্কু ভাইয়া।
হ্যা আমার নামে আমার বাবা মা কেন জানি একটা ‘র’ দেননি।
যদিও কাউকে বললে সবাই ‘র’ একটা জোর করে লাগিয়ে দেয়!!
তবুও ওটা আমার নাম না জেনে ভালো লাগলো :-))
আমি ফরিদ ভাইয়ের ছোট গল্পের ভক্ত অনেক দিন ধরেই। এই গল্পটিও দারুনভাবেই এক ফরিদীয় ঝলক। লেখাটি হৃদয়স্পর্শী কিন্তু এর প্রেক্ষাপট ঐতিহাসিক সত্য। যে কায়দায় আমাদের সেনাবাহিনী পাহাড়ি জনগনের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছিলো, যেভাবে তাদের সংস্কৃতিকে ধংস করে দিয়েছে, তা কেবল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কথাই কেবল মনে করিয়ে দিতে পারে। লেখাটি আমার অনেক আগের একটি নিজের লেখার কথা মনে করিয়ে দিলো –
যুক্তির আলোয় দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশপ্রেম।
মর্মান্তিক, তবে ঐতিহাসিক সত্য। জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিজেদের ‘নীল পাহাড়ের চূড়ায়’ স্ব-শাসনের জন্যে সংগ্রাম ও তাদের প্রতি নির্যাতনের কাহিণী বাস্তব সত্য। এ বাস্তবতাকে ফরিদ অত্যন্ত সুকৌশলে গল্পে রূপ দিয়েছে। পার্বত্য এলাকার বহু কুসুমদের পরিবার আজ নিশিহ্ন ।
পার্বত্য সমস্যা নিয়ে সংবাদ পত্রের খবর যে সব পাঠকের মনকে সংবেদনশীল করে ফরিদের এ গল্প তাদের ছাড়া আরও পাঠককের মনকে ভেজাবে।
ধন্যবাদ ফরিদকে মানবিকতাবোধকে সমুজ্জ্বল এ গল্পটির জন্যে