যুক্তরাষ্ট্রের বুশ সরকার ক্যানাডার ওপর বড়ই রুষ্ট। নানা কারণে। সব কারণের বড় কারণ হল, ইরাকের হামলায় যোগ দেয়নি। সম্প্রতি মিসাইল ডিফেন্স প্রকল্পে যোগ না দেওয়াতে সারা ওয়াশিংটন রেগে আগুন। বুশ সাহেব মনে মনে ফুঁসছেন। কন্ডিবিবি ভীষণ গোসা, ক্যানাডাসফর বাতেল করেছেন। তদুপরি, গাঁজাসেবন বৈধ করার আয়োজন চলছে। আরো বিরক্তির কারণ ঘটিয়েছে সমলিঙ্গের বিয়ের ব্যাপারটা। বুশ এবং তাঁর চেলাপেলারা যেখানে শ্বেতভবনকে বাইবেলপাঠের মক্তব বানানোর উপক্রম সেখানে পল মার্টিনের মত একটি বেতমিজ লোক পার্লামেন্টের আইন দিয়ে চালু করতে চাইছে এক লিঙ্গের বিবাহ। ঔদ্ধত্য কাকে বলে! যুক্ত্ররাষ্ট্রের নিকটতম প্রতিবেশী হয়ে থাকাটাই ভাগ্য, সেখানে অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ বালকের মত ব্যবহার ওয়াশিংটন সহ্য করবে কেন।
সমলিঙ্গের বিবাহ আর ঐচ্ছিক গর্ভপাত, দুটোই বড় স্পর্শকাতর বিষয়। ব্যক্তিমানুষ ও সমাজমানুষের ইহজাগতিক ও পরজাগতিক বোধগুলো এ দুটি জায়গাতে এসে ভীষন ধাক্কা খায়। গর্ভপাতের প্রশ্নে নারীবাদী ও ভ্রুণবাদীদের দ্বন্দ্ব তো যুগ যুগ ধরে চলছে- এর মীমাংসা কোনদিন হবে বলে মনে হয়না। স্বৈরতান্ত্রিক ধর্মীয় রাষ্ট্রগুলোর কথা বলছিনা আমি, বলছি পশ্চিম বিশ্বেরই কথা যেখানে ধর্মালয়ে রাষ্ট্রের স্থান নেই, রাষ্ট্রালয়ে নেই ধর্মের। অথচ এখানেও, আগাগোড়া উদারপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ মানুষও যেন এ দুটি প্রশ্নে এসে কেমন থতমত খেয়ে যায়–কোনদিকে যাবে সে। সবচেয়ে অস্বস্তিকর হল সমলিঙ্গের প্রসঙ্গটা। ছেলে-ছেলে আর মেয়ে-মেয়েতে বিয়ে হয় কি করে? ছি, ভাবতেই তো ঘিন লাগে। ছেলে-ছেলে নাহয় মানা যায়, যন্ত্রপাতি তাদের আছে মোটামুটি, কিন্তু মেয়ে-মেয়ের কারবারটা ঘটে কেমন করে। মুসলমানদের জন্য এ হল কবিরা গুনাহ, আল্লাতালা হয়ত দোযখের সবচেয়ে গরম কামরাটাই রেখে দিয়েছেন ওদের জন্য। খ্রীষ্টানদেরও একই খবর–বাইবেলে পরিস্কার লেখা আছে, বড় বড় অক্ষরে, পাপ, মহাপাপ। ক্যানাডা-আমেরিকার এংলিকান চার্চ যে কোন্ বুদ্ধিতে সমকামীদের বিয়ে করাতে রাজী হয়ে গেল তা কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না। ক্যাথলিক চার্চ অবশ্য তাদের সনাতন আদর্শে অটল–মানা মানে মানা। বাইবেল বলেছে পাপ, সুতরাং পাপ, এবং যে পাপ করে বা পাপকে প্রশ্রয় দেয় সেও পাপী। ক্যানাডার ক্যাথলিক চার্চ ইদানিং প্রধানমন্ত্রী পল মার্টিনকে মুর্তাদ ঘোষণা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। অবশ্য ‘মুর্তাদ‘ শব্দটার স্বত্বাধিকার কেবল মুসলমান মৌলভিদেরই। তবে ক্যাথলিকদের ‘এক্সকমুনিকেটার‘ এর অর্থও তো বলতে গেলে একই। তফাত এই যে মুসলমান ‘মুরতাদ’দের গর্দান যাওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা, ক্যাথলিক মুর্তাদদের সে ভয়টা নেই।
প্রকাশ্য আলোচনায় সমলিঙ্গের বিষয়টা খানিক ন্যক্কারজনক তাতে সন্দেহ নেই। অনেক রুচিসম্পন্ন ব্যক্তির মনেই এতে বিবমিষার ভাব সৃষ্টি হয়। প্রাচ্য সংস্কৃতিতে সাধারণত নারীপুরুষের সমাবেশে সমলিঙ্গের প্রসঙ্গ তোলা হয় না, ওটা যৌনতার চেয়েও লজ্জাকর বস্তু, ওটা চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখার জিনিস, ভদ্রসমাজে উচ্চারণের যোগ্য নয়। অথচ ভেবে দেখুন একবার, বিষয়টি কিন্তু নতুন নয়, সৃষ্টির আদি থেকেই এর অস্তিত্ব। পাপ যদি হয়েও থাকে তাহলে মানুষের আদিমতম পাপেরই অন্যতম এই সমলিঙ্গের সর্ম্পক। অন্তত তোরা-বাইবেলের যুগে সমকামী মানুষ যে সমাজে প্রচুর ছিল তার প্রমাণ তো বাইবেলেই –নইলে এত জোর দিয়ে একে পাপ বলা হবে কেন। সেযুগে মানুষের জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত, বিজ্ঞান তো সদ্যজাত শিশুমাত্র, সুতরাং সমাজ জীবনের অগ্রগতির প্রধান সহায়ক ছিল মহাপুরুষদের মুখে শোনা দৈববানী। প্রশ্ন নয়, সংশয় নয়, তদন্ত নয়, শুধু অটল, অনড়, অন্ধ বিশ্বাস। ঈশ্বর বলেছেন পাপ, সুতরাং পাপ। সেটা যে বিশ্বাস করতে চায় না সে দ্বিগুন পাপী। এভাবেই যুগ যুগ ধরে বলবত্ থেকেছে বিশ্বাসের বজ্রমুষ্টি। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা মানুষকে নিয়ে গেছে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে, জ্ঞান ছুটছে সর্বজ্ঞানের সন্ধানে আকাশ থেকে মহাকাশে। কিন্তু সনাতন বিশ্বাসের সঙ্গে নবার্জিত জ্ঞানের সমন্বয় কি ঘটেছে সব সময়? ঘটেনি, এবং হয়ত ঘটবেওনা কোনদিন। একদিকে বিশ্বাস খুঁজবে তার নিরাপদ অন্ধকারের আশ্রয়কে, অপরদিকে বিজ্ঞান তাকে ভাসিয়ে,নেবে এক অজানা থেকে আরেক অজানায়। আজকে প্রতিটি আধুনিক মানুষের হাতে তারশুন্য দূরালাপনের যন্ত্র, তাত্ক্ষণিক আলোকচিত্র প্রস্তুতের জন্যে রয়েছে ডিজিট্যাল ক্যামেরা, দূরের মানুষের সঙ্গে স্থাপিত হয়েছে প্রাত্যহিক যোগাযোগ, বিশ্বের সমস্ত জ্ঞান তথ্য সংবাদ আবালবৃধ্ববনিতার আঙ্গুলের ছোঁয়াতে এনে দিয়েছে আন্তর্জাল। কিন্তু পুরাতন বিশ্বাসের ভিত্তি এখনো অনড়। আধুনিক বিজ্ঞান সমলিঙ্গের অনেক রহস্যেরই মুখোশ খুলে দিয়েছে, অনেক অজানা তথ্যই আজকে জ্ঞানের আঙ্গিনায় চলে এসেছে, তবুও মানুষের দ্বিধার শেষ নেই, দ্বন্দ্বের শেষ নেই। তবুও মানুষ জানতে রাজী নয়, শুনতে রাজী নয় বিজ্ঞান কি বলতে চায় সমলিঙ্গ সম্বন্ধে।
আমি নিজেকে পূর্ণ সংস্কারমুক্ত বিদগ্ধ মানুষ বলে ভাবতে ভালবাসি। কিন্তু আমি জানি যে অতখানি উচ্চতায় আরোহণ করবার মত চারিত্রিক ও চিত্তশক্তি আমি এখনো অর্জন করতে পারিনি। সমকামী মানুষদের প্রতি আমার এখনো একটা ছুঁতমার্গীয় প্রবণতা আছে। শাস্ত্রমত পাপ হোক বা না হোক সমকাম এখনো আমার রুচিতে বাধে। এককালে আমি ভাবতাম সমকামী মানুষ নিশ্চয়ই বিকারগ্রস্ত মানুষ–রুচি এবং চরিত্রের বিপুল বিকৃতি না ঘটলে মানুষ এতে আকৃষ্ট হতে পারেনা। অর্থাত আমার চিন্তাধারা আর দশটা মানুষ থেকে আলাদা ছিল না। তারপর একটু লেখাপড়া শিখে জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর খানিক উদারতা এল মনে–মেনে নিলাম যে এটা হয়ত মনের বিকার নয়, কেবলি অসুস্থতা। হয়ত এর সঙ্গে চরিত্রের কোন সম্পর্কই নেই, শুধু মানসিক ভারসাম্যের স্খলন থেকেই এর উত্পত্তি। কিন্তু তখন নাতুন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়। অসুস্থতাই যদি হয় তাহলে তার চিকিত্সা থাকতে হবে। চিকিত্সা যদি আবিস্কার না হয়ে থাকে তাহলে কেও না কেও তার গবেষণা চালিইয়ে যাচ্ছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সে খবরও তো পাওয়া যাচ্ছেনা কারও কাছ থেকে। তাহলে? তাহলে কি বাইবেলের কথাই ঠিক? পাপ? চরিত্রের পতন?
আমাদের দেশের অনেকের ধারণা, সমকাম সমস্যাটি প্রধানত পাশ্চিমের সমস্যা। পাশ্চিমের মুক্ত সমাজ, অবাধ যৌন স্বাধীনতা, চরম স্বেচ্ছাচারিতা, এসবের কারণেই নানা যৌনবিকৃতির উদ্ভব যার অন্যতম হল সমকাম। এটা ঠিক যে আমাদের সমাজ মুক্ত নয়, শুধু যৌন নয় আরো অনেকরকম স্বাধীনতারই অভাব সেখানে, এবং স্বেচ্ছাচারিতা কেবল রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষেই সম্ভব, কিন্তু আমি মানতে রাজী নই যে তার ফলে সেখানে কোন যৌনবিকৃতি নেই। বরং আমি বিশ্বাস করি যে বিধিনিষেধ যত বাড়ে বিকৃতির সম্ভাবনাও বাড়ে ঠিক ততখানি। সমকামের সমস্যা আমাদের দেশে পশ্চিমের তুলনায় কম তো নয়ই, বরং জরিপ করলে হয়ত দেখা যাবে খানিক বেশি। আমার নিজের বাল্যজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তার কিঞ্চিত্ আভাষ পাওয়া যায়। ছোটবেলায়, দশ-এগারো বছর বয়ষে আমি বেশ কয়েকবার সমকামী শিকারিদের কবলে পড়েছিলাম। তার মধ্যে দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম। আমাদের গ্রামের সমবয়ষী বন্ধুরা আমাকে সাবধান করে দিত যাতে আলেম-ফাজেল মাদ্রাসার ধারেকাছে না যাই। এটা মসজিদের দোষ নয়, মাদ্রাসারও দোষ নয়, দোষ সেই ক্ষুধিত যুবকগুলোর–এর মূলে হল জৈবপ্রকৃতির সঙ্গে সমাজব্যবস্থার মৌলিক বিরোধ। ক্যানাডা-আমেরিকার ক্যাথলিক ছাত্রাবাসগুলুতে হালে যে ব্যাপক কেলেংকারির কাহিনী রাষ্ট্র হল চারদিকে তার মূলেও সেই একই বাস্তবতা–প্রকৃতিকে অমান্য করতে চেষ্টা করলে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেই। না, সমকাম পশ্চিমের সমস্যা নয়, পূবেরও নয়, এটা মানবসমস্যা। প্রশ্ন হলঃ এটা কি সমস্যা, না, সহজাত স্বভাব? বিকৃতি না প্রকৃতি? এর জবাব খুঁজতে হলে ধর্মগ্রন্থে নয়, বিজ্ঞানে যেতে হবে।
যেহেতু মানুষ জীবজগতেরই সদস্য (সবচেয়ে উন্নত সদস্য তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু মূলত মানুষ একটি জীব), তাই মানুষের জৈবপ্রকৃতির রহস্য খুঁজতে সমগ্র জীবজগতের দ্বারস্থ হওয়া মোটেও অযৌক্তিক হবে না। অন্তত সেটাই হবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে ডক্টর আলেকজাণ্ডার লাবুবিন নামক এক যশস্বী প্রবীন বিজ্ঞানী ফ্রান্সের পতঙ্গবিজ্ঞান সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনের বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে পতঙ্গজগতের এক অত্যাশ্চর্য ঘটনার বর্ণনা করলেন—মেলোলন্থা ভাল্গারিস নামক এক ক্ষুদ্র পতঙ্গের যৌনমিলনের বর্ণনা। সাধারণ মিলন হলে সম্মেলনে ঘোষণা করার মত কিছুই ছিলনা, কিন্তু সাধারণ মিলন ছিলনা ওটা। মিলনাবদ্ধ পতঙ্গদ্বয়ের দুজনই ছিল পুরুষ! জীববিজ্ঞানের গবেষণাতে এই প্রথম পরিলক্ষিত সমলিঙ্গের মিলনদৃশ্য। মজার ব্যাপার এই যে, ঠিক একই বছর ইংলিশ প্রণালীর অপর পারে চার্লস ডারঊইন নামক আরেক জী্ববিজ্ঞানী বিবর্তনতত্ব ও প্রাকৃতিক নির্বাচন শিরোনামে এক যুগান্তকারী তত্ব আবিস্কার করে তুমুল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে দিলেন বৈজ্ঞানিকমহলে। আপাতদৃষ্টিতে এ দুই আবিস্কারের মধ্যে বিরোধ থাকা দূরে থাক সম্পর্কও নেই খুব একটা, কিন্তু সমস্যা দাঁড়ালো যখন বারো বছর পর ডারঊইনের দ্বিতীয় তত্ব বের হল, যাকে বিশেষজ্ঞমহলে যৌননির্বাচনের বিশেষ তত্ব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সমস্যা এই যে, এই তত্ব অনুযায়ী সমকামের উদাহরণ কেবল মানুষকূলেই পাওয়া সম্ভব, কারণ এটা প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, সাংস্কৃতিক, সুতরাং মানবপ্রকৃতিরই একটা বিরল অপেরণমাত্র। তাহলে মেলোলন্থাযুগলের মিলনদৃশ্যের ব্যাখ্যা কি?
নব্বুই দশকের গোড়ার দিকে পল ভেসি নামক এক স্নাতকোত্তর ছাত্র মন্ট্রেয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন প্রানীবিদ্যায় পি এইচ ডি করার জন্যে। তাঁর ইচ্ছে ছিল ওরাঙ্গুটানের ওপর কাজ করা। কিন্তু মন্ট্রিয়লে সে সুযোগ ছিল না বলে খানিকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই জাপানী মাকাকদের ( ছোটলেজবিশিষ্ট এক শ্রেনীর বানর) যৌনজীবন নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পশুশালার মাকাকপাড়ায় ঢুকতেই একটা অদ্ভুত দৃশ্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করল–বেশ কটি মেয়ে-মাকাক একসাথে বসে নিজেদের মধ্যে চুটিয়ে প্রেমালাপ করছে, আর অদূরে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে গুটিকয় পুরুষ মাকাক। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে ভদ্রলোক আরো কদিন পশুশালায় গিয়ে ওদের আচার আচরণ লক্ষ্য করলেন খুব মনোযোগ দিয়ে। দেখলেন সেই একই ব্যাপার। পুরুষ মাকাকদের প্রতি মেয়েগুলুর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, নিজেদের গা ঘষাঘষি করেই তারা সন্তুষ্ট। ভেসিসাহেব বুঝতে পারলেন যে বেশ বড়রকমের একটা প্রাকৃতিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হলেন তিনি। একদিকে প্রানীবিজ্ঞানের বিশাল প্রাচীরপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গুরুদেব ডারউইন যাঁর অকাট্য তত্বানুসারে প্রানীজগতের যৌনাচারের একমাত্র লক্ষ্য হল প্রজনন, সুতরাং প্রাকৃতিক প্রয়োজনেই যে-কোন যৌন কর্ম নারী-পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আরেকদিকে তাঁর স্বচক্ষে দেখা এই নগ্ন বাস্তবতা যাকে পশুজগতের সমকামিতা ছাড়া আর কোন ভাষাতেই ব্যাখ্যা করা যায় না। কোন্টা সত্য–ডারউইনের তত্ব না চাক্ষুশ প্রমাণ? প্রতিষ্ঠিত ‘সত্য’ যে ত্রুটিহীন না’ও হতে পারে সেটা প্রমাণ করার আশায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে উত্তেজিত পল ভেসি সিদ্ধান্ত নিলেন যে প্রানীজগতের, বিশেষত জাপানী মাকাকের যৌনাচার নিয়েই তিনি পি এইচ ডি করবেন। কিন্তু বাধ সাধলেন তাঁর অবেক্ষনী অধ্যাপক। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?চার্লস ডারউইনকে চ্যালেঞ্জ করা কি চাট্টিখানি কথা? না, তুমি যা দেখেছ তা নিশ্চয়ই কোন নিয়ম নয়, নিয়মের ব্যতিক্রম মাত্র। ব্যতিক্রমের ওপর ভরসা করে কখনো কোন বৈজ্ঞানিক তত্ব দাঁড় করানো যায় না। এই বলে তিনে ভেসিকে ঠাণ্ডা করে দিলেন। কিন্তু পল ভেসি সহজে ঠাণ্ডা হবার পাত্র নন। ডারউইন বলেছেন বলেই তাকে চিরসত্য হিসেবে মেনে নিতে হবে সে-মন্ত্র তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপ করে তিনি এটুকু বুঝতে পারলেন যে তাঁকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে। প্রথমত ডারউইন, দ্বিতীয়ত ধর্মবিশ্বাস, তৃতীয়ত সামাজিক সংস্কার। তিনি অবশ্য আগেই জানতেন যে প্রানীবিদ্যার গবেষণাতে ঝুঁকি আছে। এখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে সংস্কারের প্রায়ই ঠোকাঠুকি লাগে। বিশেষ করে ‘সমকামের’ মত একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্য করতে গেলে নানাদিক থেকে ‘জাত গেল’ ‘মান গেল’ রব উঠে আসা খুবই স্বাভাবিক। এসব জেনেও ভেসি দমে গেলেন না।বরং আরো উদ্যম উদ্দীপনা নিয়ে গেলেন প্রানীজগতের সমকামপ্রবণতার গবেষণায়। তাঁর সংকল্পে সহায়তা যোগালো আরেকটি ঘটনা–অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপের পরের দিন মাকাকপাড়ায় গিয়ে তিনি দেখলেন পাঁচজোড়া পশু গভীর সঙ্গমে লিপ্ত–কেলি নয়, পূর্ণ সঙ্গম। এবং পাঁচটি যুগলের একটি ছাড়া বাকি চারটি মেয়ে-মেয়েতে। তারপর কোন সন্দেহের অবকাশ রইল না তাঁর মনে। সৌভাগ্যবশত তাঁর অধ্যাপকও আস্তে আস্তে তাঁর গবেষণার ফলাফলে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন।
‘সমকাম’ গবেষণা শুরু করার সময় অনভিজ্ঞ ভেসি বা তাঁর অধ্যাপকের জানা ছিল না যে প্রানীজগতের(বিশেষ করে স্তন্যপায়ী প্রানী) সমকামী আচরণ গত একশ’ বছর ধরেই লক্ষ্য করে আসছিলেন জীববিজ্ঞানীরা। ডলফিন থেকে শুরু করে জিরাফ, শিম্পাঞ্জী, ওয়ালরাস ইত্যাদি বহুবিধ প্রানীতে সমকামিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে ইংলাণ্ড্যের হুটেকার নামক এক ভদ্রলোক ‘দ্য জুওলজিস্ট’ পত্রিকায় প্রকাশ করলেন দুটি সমলিঙ্গ রাজহংশীর এক অদ্ভুত সহবাসী আচরণের সংবাদ। ১৮৯২ সালে ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরভিং রস স্থানীয় চিড়িয়াখানার দুটি পুরুষ হস্তীর অকথ্যরকম যৌন আচরণের খবর প্রকাশ করে সাথে সাথে একটি মন্তব্য জুড়ে দিলেন যে পাপপূন্য, শিষ্টাচার ব্যভিচার, এগুলু শুধু মানবসমাজেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রানীজগতেও বিস্তৃত। শিম্পাঞ্জীদের সমলিঙ্গিয় যৌনাচারের ওপর প্রথম প্রামাণ্য তথ্য প্রকাশ করেছিলেন ওল্ফ্গ্যাং কোলার ১৯২৫তে প্রকাশিত তাঁর ‘দ্য মেন্টালিটি অফ এইপ্স্’ গ্রন্থে। ক্যানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানী হেব সাহেবের গবেষণা থেকে ডলফিনের নাম যুক্ত হল সমকামীর দলে, ১৯৪৮ সালে। তাঁর মতে, ডলফিনের সমকাম প্রবণতা এতই লক্ষনীয় যে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তিনি অন্যান্য প্রানীর তুলনায় ডলফিনকেই মানুষের নিকটতম প্রতিবেশী বলে গণ্য করেন। অর্থাত্ সমকামের দৃষ্টান্ত মানবকূলে যে অনুপাতে দেখা যায় ডলফিনসমাজেও তা প্রায় একই অনুপাতে উপস্থিত।
১৯৭৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত প্রানীবিজ্ঞানী ভ্যালেরিয়াস গাইস্ট একটি বই প্রকাশ করলেন Mountain Sheep and Man in the Northern Wilds যাতে উনি D-Ram ও S-Ram দুরকম পুরুষ মেষের সমকামী আচরণের বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। তাদের আচরণে যৌনতার নির্ভুল স্বাক্ষর থাকলেও নিজের সামাজিক সংস্কার থেকে কিছুতেই মুক্ত হতে পারছিলেন না বলে খোলাখুলি ‘সমকামিতা’ না বলে ‘যৌন আগ্রাসন’ জাতীয় প্রলেপ দিয়ে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছিলেন প্রথমে। ঐ সময়ে ‘সমকাম’ শব্দটাই ছিল একটা দূষিত শব্দ। উচ্চারণ করতেই সাহস পেত না কেউ। গাইস্ট সাহেবের বৈজ্ঞানিক সততা অবশ্য এতই উঁচু মাপের যে দুবছর নিজের বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর মাছকে শাক দিয়ে ঢাকবার চেষ্টা না করে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন যা সত্য –আগ্রাসন ফাগ্রাসন কিছু না, ওটা আসলেই পুরুষ মেষের সমকামিতা। শেষে ব্রুস বেগোমিল তাঁর ১৯৯৯ তে প্রকাশিত তথ্যবহুল গ্রন্থ Biological Exuberance এ বিজ্ঞানজগতকে জানিয়ে দিলেন যে বৈজ্ঞানিক বিবেক আর সামাজিক সংস্কারের যে দ্বন্দের কথা উল্লেখ করেছিলেন ভ্যালেরিয়াস গাইস্ট সেই দ্বন্দের অনেক সাথীই ছিল অতীতে। বিজ্ঞান যখন লোকাচারের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তখন দ্বন্দ্ব ও সংঘাত অনিবার্য্, কারণ বিজ্ঞানী নিজেও একজন সামাজিক জীব।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা কিভাবে ‘সমকাম’ বিষয়টিকে পাশ কাটাবার চেষ্টা করেছেন যুগে যুগে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ ইতিহাসে। পক্ষিবিজ্ঞানী বার্গার ও বিয়ার ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লাফিং গালদের যৌনরীতি সম্বন্ধে লিখলেনঃ “ যে পাখীর অবস্থান উপরে, অন্তত দুবার, সে হল পুংজাতীয়, আর যার অবস্থান তার নিচে সে অবশ্যই স্ত্রীপক্ষি”। অর্থাত্ পক্ষিজগতে সমকামের স্থান নেই, অথচ সত্য হল এই যে লাফিং গালদের শতকরা দশ থেকে পনেরো ভাগই সমকামী। নামকরা প্রানীবিজ্ঞানী এক জায়গায় লিখেছেন “ অনেক প্রানীবিশারদই আমার কাছে স্বীকার করেছেন যে তাঁদের স্তন্যপায়ী জীবসংক্রান্ত গবেষণাতে সমকামী আচরণের বহু উদাহরণ আছে, কিন্তু তাঁরা সে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক পাছে না পাঠক ধারণা করে নেয় যে তাঁরা নিজেরাই সমকামী, বা তাঁরা গবেষণার ফলাফল সঠিকভাবে বুঝতে পারছেন না”।আর যদি কেউ সাহস করে লেখা ছাপিয়ে দেন সেটা এমন সুন্দর করে মলাটে ঢেকে স্থাপন করেন যাতে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে ভেতরে কি আছে। যেমন শিম্পাঞ্জীদের সমকামী স্বভাবকে ডিউয়াল নাম দিয়েছিলেন “পুনরাশ্বাস” মূলক আচরণ। ডলফিনের সমকামপ্রবণতাকে বলা হয় “ অভিবাদনী ভঙ্গিমা”। আরেক বহুলব্যবহৃত বুলি হল “ আধিপত্য সংগ্রাম”। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কায়দাটি সমকামতাত্বিকদের আয়ত্ত করতে হয়েছে অনেকটা আত্নরক্ষার খাতিরে, কিছুটা নিজেদের সংস্কারের সাথে বোঝাপড়া করার চেষ্টায়।
সাধারণত বিজ্ঞানের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকে একটাই–ধর্মীয় সংস্কার। যেমন ডারউইনের বিবর্তনতত্বকে সৃষ্টিবাদীরা এখনো মেনে নিতে পারেনি। আমেরিকার গুটিকয়েক অঙ্গরাজ্যে বিবর্তনতত্ব এখনো শিখতে দেওয়া হয়না স্কুলকলেজে। পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘোরে, উল্টোটা নয়, সেটা বলতে গিয়ে তো এক বিজ্ঞানীকে জীবনই দিতে হল। কিন্তু জীবজগতের সমকামতত্বের শত্রু দুদিকে–একদিকে ধর্ম, আরেকদিকে ডারউইনের যৌনবিষয়ক বিশেষতত্ব। সত্যিকারের বিজ্ঞানমনস্ক গবেষকরা ধর্মীয় সংস্কারকে কাটিয়ে উঠতে পারেন সাধারণত, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সংস্কারকে কাটিয়ে ওঠা তত সহজ নয়। এযুগের বিজ্ঞানীদের কাছে ডারউইনবাদ অনেকটা দৈববানীর মতই পবিত্র এবং প্রশ্নাতীত। পুরো একটা সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়ে গেছে সেই বিশ্বাসকে ভিত্তি করে। ডারউইন বলেছেন, সমকাম মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রানীতে নেই, এবং মানুষের মধ্যে যেটুকু আছে সেটুকু নৈতিক এবং চারিত্রিক বিকারগ্রস্তুতা ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং ওটাই বেদবাক্য, অকাট্য সত্য। এর বাইরে কোন সত্য হতে পারে না। সেই সংস্কৃতিতে লালিত হওয়া প্রজন্মের পক্ষে বিকল্প কোন তত্ব, যা ধর্মগ্রন্থকেও অমান্য করে, তা গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন।
মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি ছাত্র পল ভেসি ভাল করেই পরিচিত ছিলেন এই সংস্কৃতির সঙ্গে। তিনি জানতেন যে আঁটগাঁট বেঁধে থিসিস লিখতে না পারলে বাইরের পরীক্ষক দূরের কথা নিজের অধ্যাপকও গ্রহণ করবেন না। একে তো তিনি নিমরাজী, তার ওপরে যদি উঁচুমানের গবেষণা না হয় তাহলে তো পত্রপাঠ বিদায় করে দেবেন। তাই এমন যুক্তিতর্ক দিয়ে তাঁর সমকামতত্ব দাঁড় করালেন যাতে কারো কোন দাঁত বসাবার উপায় না থাকে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত নিবন্ধ ‘ Homosexual Behavior in Primates: A Review of Evidence and Theory’ পড়ে তাঁর অধ্যাপক এত মুগ্ধ হলেন যে এর পর থেকে অত্যন্ত উত্সাহের সঙ্গেই ছাত্রকে সর্বপ্রকারের সহায়তা ও সমর্থন দিতে শুরু করলেন। ভেসির গবেষণা থেকে তাঁর মনেও দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে প্রানীজগতের সমকামিতা কোনও সাময়িক অপেরণ নয়, বরং একটি দীর্ঘসূত্রীয় নৈসর্গিক ঘটনা–এটাকে অস্বীকার করা মানে বাস্তবকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকা। সমকামীদের সংখ্যা বেশী নয়, তুলনামূলকভাবে তারা বিরল, কিন্তু তাদের উপস্থিতি অস্বাভাবিক হলেও অপ্রাকৃতিক নয়। প্রকৃতির মাঝেই নিহিত আছে সমকামের অংকুর, ভেসির গবেষণা থেকে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে নির্ভুলভাবে। তা থেকে ছাত্র-শিষ্য দুজনের মনেই সন্দেহ জাগতে শুরু করে যে এর মূলে হয়ত কোন গূঢ় জেনেটিক কারণ আছে, যদিও তখন পর্য্যন্ত কোন তথ্যুপ্রমাণ পাওয়া যায়নি সে-সন্দেহকে প্রতিপন্ন করার। তবে ২০০৫ সালের ২৯ শে জানুয়ারীর পত্রিকার খবরে জানা গেল যে শিকাগোর এক জেনোম গবেষক আবিস্কার করেছেন একগুচ্ছ ‘জিন’ ( একটি নয়, একগুচ্ছ) যা নির্ধারণ করে একটি পুরুষের যৌনপ্রবৃত্তি, অর্থাত্ সমকামী কিনা। এটি যদি অন্য গবেষকদের পরীক্ষা দ্বারা সত্য প্রমানিত হয়, এবং আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যে তা হবে, তাহলে এর যে কতখানি গুরুত্ব তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রথমত এতে প্রমাণ হবে যে বাইবেলের ‘পাপের’ বিধানটি ন্যায়সঙ্গত নয়, কারণ সমকামের স্বভাবটি কেউ নিজে বাছাই করে নেয় না, প্রকৃতিই তার জন্যে বাছাই করে রাখে। দ্বিতীয়ত এতে প্রমাণ হবে যে বাইবেল বা যে-কোন ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান সম্পূর্ণ জ্ঞান নয়, সুতরাং তাদের দেবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অযৌক্তিক হবে না। তৃতীয়ত ডারউইনসাহেবের বিবর্তনতত্বে কোন ফাঁকফোকর না থাকলেও তাঁর যৌনাচার বিষয়ক বিশেষ তত্বটি পুনর্বিচারের যোগ্য হয়ে উঠেছে। সবশেষে বলতে হয় যে সমকাম ব্যাপারটি নিয়ে সমাজের যে ‘দেখিনা শুনিনা বলিনা’র চিরাচরিত সংস্কৃতি সেটাকেও নতুন আলোকে পরীক্ষা করার সময় এসেছে। সমকামী হলেই তাকে শূলে চড়াতে হবে, বা সমাজচ্যুত করতে হবে সেই অমানুষিক আদিম মানসিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।
ক্যানাডার বর্তমান বিতর্কটি অবশ্য সমকামের ভালোমন্দ নিয়ে নয়, সমকামীরা আইনসঙ্গতভাবে পরস্পরকে বিয়ে করার অধিকার চায়, সেটা নিয়ে। এর বিরোধীদের যুক্তি হল যে এতে করে নরনারীর বিবাহ নামক সনাতন প্রথাটিই আমূল বদলে যায়। এর বিপক্ষ যুক্তি হল যে এটা ঠিক বিয়ের প্রশ্ন নয়, প্রজননভিত্তিক মিলনের প্রশ্ন নয়, এটা মানবাধিকারের প্রশ্ন, এটা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন। ব্যক্তিগতভাবে আমি দ্বিতীয় যুক্তিটিরই সমর্থক। আমি নিজে হয়ত সাজগোজ করে চার্চে গিয়ে দুটি চুম্বনরত পুরুষ বা নারীর দৃশ্য দেখতে পছন্দ করব না, কিন্তু তাদের যে সে অধিকারটা আছে সেটা মেনে নিতে দ্বিধা করব না বিন্দুমাত্র। একটি মুক্ত উদার সমাজের ধারাই তাই। যেমুহুর্তে সমাজ মেনে নেয় যে ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ সমান অধিকারসম্পন্ন সে মুহুর্তে আমাদের প্রত্যেকেরই নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় সেই অধিকার, সেই স্বাধীনতার পূর্ণ মর্যাদা রক্ষা করা। আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয় যে আমি আমি নিজেও একজন সংখ্যালঘু। এবং সামগ্রিকভাবে ভাবতে গেলে পৃথিবীর সব মানুষই কোন-না-কোনভাবে সংখ্যালঘু। কিন্তু আধুনিক সভ্য সুশীল সমাজ হল যা সব সংখ্যালঘুকেই সমান অধিকার দেয়, এবং তা রক্ষা করার জন্যে প্রানান্ত প্রচেষ্টা চালায়।
তথ্যসূত্রঃ আন্তর্জাল ও ২০০৩, ২০শে জুলাইতে ‘অটোয়া সিটিজেন’এ প্রকাশিত আলেক্স ব্রেট রচিত নিবন্ধ।
অটোয়া,
৬ই মার্চ, ২০০৫
মুক্তিসন,৩৩
ধন্যবাদ, আভিজিত। আশা করি আমরা পরস্পরকে ‘পহলে আপ’ ‘পহলে আপ’ করতে করতে কাবুলিওয়ালাদের মত মুষ্ঠিযুদ্ধের পর্যায়ে উপনীত হবনা। তবে একটা অভিযোগ আছে আমার। তুমি আমার ‘বিনয়’এর প্রশংসা করলে, সত্যবাদিতার প্রশংসা করলে না। তুমি যেটাকে বিনয় বলছ, আমার কাছে সেটাই সত্যবাদিতা। এবয়সে আর কিছু না হোক নিজের বিদ্যার দৌড়টা যে বুঝতে পারছি তার জন্যেও কি কোন স্তুতিবাক্য আশা করতে পারিনা? লোকে মনে করে আমার নিজের বিষয়ে আমি এক মহা বিশেষজ্ঞ। এক সময় আমিও তাই ভাবতাম। এখন বুঝি, আসলে আমি হলাম আমার বিষয়ে বিশেষভাবে অজ্ঞ। না, এটা বিনয় নয়, খাঁটি সত্য।
ভালো থেকো। মীজান ভাই।
অভিজিত রায়,
এখনে দেখতে পাচ্ছি, লেখা “মুক্তমনা ব্লগ সদস্যরা কমেন্ট করার আগে লগইন করে নিন।”
“মুক্তমনা ব্লগ সদস্য” কারা? যারা মুক্তমনা ইয়াহু গ্রুপ এর সদস্য, তারা? তা না হলে নতুন করে সদস্য হতে হলে কি করতে হবে? মুক্তমনা ব্লগের সদস্য হলে সুবিধাটা কি?
কমেন্ট করার ফিল্ড এ অনেকের নাম এর পাশে ছবি দেখতে পাচ্ছি। কিভাবে ছবি লাগাতে হয় বলবেন কি?
@Talat,
হ্যা মূলতঃ ইয়াহু গ্রপের সসস্যদের থেকেই ব্লগের জন্য সদস্য নিবন্ধিত করা হচ্ছে। যারা মোটামুটি ব্লগে এক্টিভ্লি লিখছেন, কমেন্ট করেছেন, তাদের থেকেই সসস্য নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিষয়টা সময় সাপেক্ষ। আপনি নির্দ্বিধায় লিখতে থাকুন। অচীরেই ব্লগের সদস্য হয়ে যাবেন।
ব্লগের সদস্য হলে আপাততঃ বিশেষ কোন সুবিধাটা নেই, তবে আপনার লেখা এবং কমেন্টগুলো একসাথে খুঁজে পাওয়া যাবে। আর ছবি লাগানোর ব্যাপারটাও আছে ওর মধ্যেই।
আমি কয়েকদিনের মধ্যে এ নিয়ে হয়ত একটা নোটিশ দেব।
পাঠকদের কাছে অসংখ্য ধন্যবাদ যারা আমার এই লেখাটির ওপর মন্তব্য করেছেন। মুক্তমনাই বোধ হয় পৃথিবীর একমাত্র খোলা জানালা যেখানে মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারে তার নিজের ভাষায়। এই বিষয়টির ওপর আমার জ্ঞান খুব সীমিত, আভিজিতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য, তবুও লিখলাম কারণ যতটুকু জানি ততটুকুই অন্যের সঙ্গে বলাবলি করা, আমি মনে করি, আমাদের সবারই নৈতিক দায়িত্ব। প্রকৃতিতে সমকামী না হয়েও ব্যবহারে হতে পারে কিনা সে প্রশ্নের তাথ্যিক উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে সাধারণ বুদ্ধিতে আমি বুঝি যে মরুভূমির পিপাসাকাতর পথিক যদি প্রানরক্ষার জন্যে নিজের মূত্রপান করতে বাধ্য হয় তাহলে তার এই অস্বাভাবিক আচরণ সেই মরুভূমির পরিপ্রেক্ষিতেই বুঝতে হবে। যৌনবঞ্চনাও একপ্রকার অনাহার বা তৃষ্ণাকাতরতা যার তৃপ্তিপ্রয়াস মানুষকে যে-কোন বাঁকা পথে ধাবিত করতে পারে। প্প্রকৃতিবিরোধী যে কোন কাজের একটা অবশ্যম্ভাবী পরিণতি আছে, একট না একটা মাশুল আমাদের দিতেই হয়। পাদ্রীদের অশুভ আচরণ আর আমাদের হুজুরদের অনাহুত আগ্রাসন সেই মাশুলেরই বহিপ্রকাশ। অন্তত আমার মতে।
শুভ নববর্ষ মুক্তমনার মুক্তসাথীদের। মীজান রহমান।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মীজান রহমানের কাছ থেকে এই ধরণের মন্তব্য আমাকে সত্যই লজ্জায় ফেলে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি, আমি ডঃ মীজান রহমানের লেখার ভক্ত শুধু নই, তার প্রজ্ঞা, মেধা এবং বিশেষ করে একাডেমিয়ার অংগণে তার সাফল্য রীতিমত ঈর্ষনীয়। বাংলাদেশের খুব কম ব্যক্তিরাই বিদেশে তার মত সাফল্য পেয়েছেন, গনিতের এমিরিটাস অধ্যাপক হিসেবে বিদেশের নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে যেতে পেরেছেন। কিন্তু সবকিছুর উপরে উনার যে জিনিসটা আমার পছন্দের তা হল তার বিনয়। তার থেকে সত্যিই শেখার আছে আমাদের অনেক কিছু।
খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। এ নিয়ে আমি আমার সমকামিতা বিষয়ক সিরিজে কিছুটা আলোকপাত করেছিলাম। সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা সমকামিতাকে মোটা দাগে দুই ধরনের ক্ষেত্রে বিভক্ত করেন। এক – জন্মগত সমাকামিতামূলক প্রবৃত্তি, দুই – আচরণ বা পরিবেশগত প্রবৃত্তি। যাদের সমকামী যৌনপ্রবৃত্তি জন্মগত, তাদের যৌন-প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না, তা সে থেরাপি দিয়েই হোক, ঔষধ দিয়েই হোক। দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। এ ধরনের অসংখ্য ডকুমেন্টেড কেস আছে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা জানিয়ে রাখি, ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association (বহু চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন) বিজ্ঞান্সম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। সকল আধুনিক চিকিৎসকই আজ এ বিষয়ে একমত।
জন্মগত সমকামিরা ‘বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড’ হলেও আচরণগত সমকামিরা তা নয়। এরা আসলে বিষমকামী। এরা কোন ব্যক্তিকে বিষমলিঙ্গের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সাথে যৌন-সংসর্গে লিপ্ত হয়। যেমন, জেলখানায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা বন্দীরা যৌনসঙ্গীর অভাবে সমলিঙ্গের কয়েদীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেত পারে। কিন্তু, জেলখানা থেকে বেরিয়ে এলেই দেখা যায়, এদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজের ছেলেপিলেদের সম্পর্কেও এ ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে। হেলাল যে সমকামি হুজুরের উদাহরণ দিয়েছে, তা এই দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বলে আমার ধারনা। বিপরীত লিংগের প্রাপ্যতার অভাবেও মানুষ সমকামি হতে পারে। তবে বিপরীত লিংগের প্রাপ্যতার অভাবে কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক হুজুরের আচরণ দিয়ে পুরো সমকামিতা বিষয়টিকে বিকৃতি বা ঘৃন্য মনে করা ঠিক হবে না। হুজুরের উদাহরণ যেমন আছে, তার চেয়েও বেশি আছে বাসে রিকশায়, বাসায় কিংবা অফিস আদালতে বিপরীত লিংগের দ্বারা নারীদেহের উপর পুরুষদের যৌনআগ্রাসন, সেক্সুয়াল হ্যরাসমেন্ট, ধর্ষণ ইত্যাদি। আমরা কিন্তু সেজন্য পুরো বিষমকামকে দায়ী করি না, করি কি? আমি মনে করি আমাদের মত দেশগুলোতে সমকামিরা যদি সামাজিক পরিস্থিতির কারনে লুকিয়ে ছাপিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য না হত, তা হলে পরিস্থিতি অনেকক্ষেত্রেই ভিন্ন রকম হতে পারত।
মিজান সাহেব কে অসংখ্য ধণ্যবাদ এমন একটি ষ্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে চমতকার একটা লেখা উপহার দেবার জন্য। অভিজিত তার এ বিষয়ে লেখা সিরিজ কেন বন্ধ করেছিলেন জানি না, তার লেখাগুলি বই আকারে প্রকাশ পেলে আমার মত বহুজন তাদের জন্মগত অজ্ঞতা থেকে রেহাই পেতেন।
এ জাতীয় লেখা থেকে আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা; সমকামিতা যে কোনরকম যৌনবিকৃতি নয় এ ভুল ধারনা থেকে রেহাই পাওয়া। ৯০ ভাগ মানুষই মনে হয় এ ভুল করে থাকেন। তাদের দোষও দেওয়া যায় না।
হেলাল সাহেবের শেষ প্রশ্নটি খুব ইন্টারেষ্টিং, আমার মনেও কখনো কখনো এসেছে। কে কি বলেন শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।
সমকামিদের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাই। তবে মীজান ভাইয়ের মত বেশ কয়েকবার না হলেও দুইবার আমি সমকামি হুজুরের পাল্লায় পড়েছিলাম যা আমার শিশু মনে বিরূপ প্রতিক্রীযা সৃস্টি হয়েছিল এবং এখনও মনে হলে গেন্না লাগে।
অভিজিত এবং মীজান ভাইযের কাছে প্রশ্ন বিপরীত লিংগের প্রাপ্যতার অভাবেও কি মানুষ সমকামি হতে পারে? তা না হলে মোল্লা ও পাদ্রীদের মধ্যে সমকামিতা এত বেশী কেন?
সমকামিতার ব্যাপারে সব লেখাই গুরুত্বপূর্ন। যেসব প্রশ্ন ধর্ম সমূহের অস্তিত্ত্বকে চ্যালেজ্ঞ করছে
তার মধ্যে এটি একটি আসাধারন ব্যাতিক্রম। কারন এই প্রশ্নটি কেবল সৃষ্টিকর্তার প্রবর্তিত ধর্ম গুলোকেই চ্যালেজ্ঞ করে না বরং প্রকৃ্তির ধর্ম বলে আমরা যাকে যানি তাকেও চ্যালেজ্ঞ করে। চিন্তা জগতের নতুন মেরু করনে আমাদেরকে বাধ্য করছে এই প্রশ্ন। মিজান ভাই কে ধন্যবাদ অত্যন্ত শুখপাঠ্য ভাবে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। আর আভিজিৎদার কাছে আনুরোধ শুরুকরা সিরিজটা শেষ করার জন্য।
মিজান ভাই,
লেখাটা পড়ে মজা পেয়েছি, শিখলামও। এর আগে অবশ্য অভিজিতদার সিরিজটা পড়েছিলাম। কি আর বলবো, আপনার মত আমারও ভুল ধারণা ছিলো, ছিলো গা গুলানো ভাবটাও। দিনে দিনে ভুলটা ভাংলেও গা গুলানো ভাবটা থাকছেই। আমি আপনার সাথে ১০০ ভাগ একমত, ওরা ওদের অধিকার নিয়ে থাকুক, আমার কোনো ক্ষতিতো করেনি। আপনাকে ধন্যবাদ এমন সময়পোযোগী লেখার জন্যে।
প্রিয় মিজান ভাই, আপনার লেখা মানেই যে জ্ঞান ও তথৎবহুল সে কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।পুবের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম,পচ্শিমের সমকামিতা নিয়ে যা হাল-অবস্হা তা দেখলে রীতিমতো ভয় হয় এবং গা শিহরে উেঠ।গতকাল সুইডিস tv তে সমকামিতার উপর ইটালীর মানুষের মনোভাব ও সাংস্কৃতিক দৈনৎতা দেখার পর মনে প্রশ্ন জাগে এই কি সে-ই সভৎতা যেখানে জ্ঞানের ও গুনীজনের দেশ বলে বিখৎাত ছিল। এখনো মনে হয় যেন তারা সে-ই আদি প্রশ্নে ও আদি মনোভাব নিয়ে জীবন-যাপন করছে। ভাটিকানের রাজেেত্ব এখনো ধর্মের কি রমরমা ব্যবসা বিরাজমান। সেখানে পুবের কি অবস্হা তা তো আর বলার কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
আপনার ” দূযোর্গের পুর্বাভাস ” বই টি মনে করি সব বাংগালীর পড়া উচিত।
ভালো ও সুস্হ থাকবেন।
মামুন।
প্রিয় মিজান ভাই, আপনার লেখা মানেই যে জওান ও তথৎব হুল সে কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।পুবের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম,পচ্শিমের সমকামিতা নিয়ে যা হাল-অবস্হা তা দেখলে রীতিমতো ভয় হয় এবং গা শিহরে উেঠ।গতকাল সুইডিস tv তে সমকামিতার উপর ইটালীর মানুষের মনোভাব ও সাংস্কৃতিক দৈনৎতা দেখার পর মনে প্রশ্ন জাগে এই কি সে-ই সভৎতা যেখানে জঞনের ও গুনীজনের দেশ বলে বিখৎাত ছিল। এখনো মনে হয় যেন তারা সে-ই আদি প্রশ্নে ও আদি মনোভাব নিয়ে জীবন-যাপন করছে। ভাটিকানের রাজেেত্ব এখনো ধর্মের কি রমরমা ব্যবসা বিরাজমান। সেখানে পুবের কি অবস্হা তা তো আর বলার কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
আপনার ” দূযোর্গের পুর্বাভাস ” বই টি মনে করি সব বাংগালীর পড়া উচিত।
ভালো ও সুস্হ থাকবেন।
মামুন।
পুরোনো লেখা যদিও, কিন্তু খুবই সময়োপযোগী পোস্ট ডঃ মীজান রহমানের। সমকামিতা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় আমাদের সমাযে। স্পর্শকাতর না বলে আসলে ঘৃন্যই বলা উচিত। অনেকে এখনো মনে করেন এটা এক ধরনের বিকৃতি কিংবা মনোরোগ। পশ্চিমে বিগত কয়েক দশকে এ নিয়ে ধ্যান ধারনা অনেক পাল্টেছে। আর জীববিজ্ঞানে গবেষনার কথা যদি বলি, তাহলে প্রকৃতিতে সমকামিতার উদাহরণ আছে গন্ডায়। সে নিদর্শনগুলোর নমুনা জানতে চাইলে পাঠকেরা জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিলের লেখা ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। বইটিতে লেখক প্রায় ৫০০ টি প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন। এর মধ্যে ডলফিন, সিংহ, মাছ, বাঁদর, হাঁস, কাছিম সবকিছুই আছে। সমকামিতা প্রচুর আছে প্রাইমেট বর্গে। শিম্পাঞ্জীদের একটি প্রজাতি বনোবো শিম্পাঞ্জী (প্রচলিত নাম পিগমী শিম্পাঞ্জী)দের মধ্যে সমকামি প্রবণতা এতই বেশি যে, ব্যাগমিল বলেন, এই প্রজাতিটির ক্ষেত্রে ‘Homosexual activity is nearly as heterosexual activity …. ’। একেকটি গোত্রে এমনকি শতকরা ৩০ ভাগ সদস্য উভকামিতার সাথে যুক্ত থাকে। এরকম সমকামি এবং উভকামি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে গরিলা, ওরাং-ওটান, গিবন, সিয়ামাং, লঙ্গুর হনুমান, নীলগিরি লঙ্গুর, স্বর্ণ হনুমান, প্রবোসিক্স মাঙ্কি ইত্যাদি প্রাইমেটদের মধ্যেও।
আসলে সমকামিতার ব্যাপারটি যে অনেকাংশেই প্রাকৃতিক এ বিষয়ে গবেষকরা আজ মোটামুটি মোটামুটি নিঃসন্দেহ। মানুষের মস্তিস্কে হাইপোথ্যালমাস নামে একটি অংগ রয়েছে, যা মানুষের যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানী সিমন লিভে তার শরীরবৃত্তীয় গবেষণা থেকে ামাদের জানিয়েছেন এই হাইপোথ্যালমাসের interstitial nucleus of the anterior hypothalamus, বা সংক্ষেপে INAH3 অংশটি সমাকামিদের ক্ষেত্রে আকারে অনেক ভিন্ন হয় । আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ডিন হ্যামারের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে। ডিন হ্যামার তার গবেষণায় আমাদের ক্রোমোজমের যে অংশটি (Xq28) সমকামিতা ত্বরান্বিত করে তা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন । এছারাও আরো বিভিন্ন গবেষণায় মনস্তাত্বিক নানা অবস্থার সাথে পিটুইটরি, থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, থাইমাস, এড্রিনাল সহ বিভিন্ন গ্রন্থির সম্পর্ক আবিস্কৃত হয়।
আমি সমকামিতা নিয়ে একটি দীর্ঘ সিরিজ লিখতে শুরু করেছিলাম একসময়। চারটি পর্ব শেষ করার পর আর ধৈর্য্যে কুলালো না। তবে ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এ নিয়ে একটি বই লিখবার। আমার অসমাপ্ত সিরিজটা আছে এখানে –
সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা
উৎসাহী পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন…
@অভিজিৎ,আশা করি আপনার সমকামিতার উপর লেখাগুলো শেষ করে বই আকারে বের হলে বাংলা ভাষা-ভাষী লোকজনের অনেক অনেক উপকার হবে। সাথে সাথে বেশী উপকার হবে শিক্ষিত,সাধু ভদ্র মহাজনের যারা একাজে ওসতাদ তাদের পাপের কিছুটা হলেও পরকালের পুন্যের প্রাপ্তি হবে।
ভালো থাকুন।
মামুন।