আকাশ মালিকের যে সত্য বলা হয়নি গ্রন্থের পান্ডুলিপিটি পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই একটা বড় ধাক্কা  খেলাম।  তিনি তার পুরো বইটিতে সাহসিকতার সাথে যে কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন সেগুলো হয়ত আমার আপনার অনেকেরই মনের কথা। কিন্তু মনের কথা হলে কি হবে, সেই কথাগুলো সাহসিকতার সাথে উচ্চারণ করতে পারে কজন?  তিনি মানব জাতির বিবেক ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ারের যে উক্তিটি ব্যবহার করেছেন বোকার স্বর্গে পৃথিবীর প্রথম পুরোহিত বা মোল্লা ব্যক্তিটি হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ধূর্ত বাটপার, যার মোলাকাত হয়েছিলো প্রথম নির্বোধ ব্যক্তিটির সাথে। ধর্ম প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রারম্ভ আর তা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এর চেয়ে নির্জলা সত্য আর কি হতে পারে!  আমার প্রায়ই উচ্চস্বরে বলতে ইচ্ছে করে যত বড় ধর্ম প্রচারক, তত বড় ধর্ম -প্রতারক তিনি।  ডেভিড কপারফিল্ডের জাদুর চেয়েও যেন মোহনীয় ছিলো তাদের প্রতারণার কৌশল। প্রতারণার ফাঁদ পেতে যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বাসীদের হৃদয়ে গেড়ে আছেন একেকজন বিরিঞ্চিবাবা  হয়ে – কেউ বা সেজেছেন ‘ঈশ্বরের পুত্র’, কেউবা ‘ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ’, নবী, পয়গম্বর, কেউ বা সত্য সাঁই।  মনে পড়ছে আঠারো শতকে এক ‘অজ্ঞাত লেখক’ এক গ্রন্থ লিখেছিলেন ‘তিন ভন্ড’ (The Three Imposters) নামে, যা পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলো। ‘তিন ভন্ড’ গ্রন্থে দাবী করা হয়েছিলো বিশ্ব তিনজন ভন্ডচূরামনি দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। আর সেই তিন ভন্ড হচ্ছেন মুসা, যীশু আর মুহম্মদ।  কে যে বেশী বড় প্রতারক, কিংবা ভন্ডামীতে যে কে শ্রেষ্ঠ তা বলা অবশ্য কষ্টকর। ভন্ডামীতে কে বেশি সফলকাম, কিংবা কার স্থান উপরে তা নিশ্চয় বিচার সাপেক্ষ।  আকাশ মালিকের তালিকায় অবশ্য  ভন্ডচূড়াশিরোমনি হিসেবে এসেছে আরো একজনের নাম –  হিন্দুদের ভগবান মনু। ভন্ডামীর প্রতিযোগিতা সত্যই জমজমাট। সায়মন কাওয়েল আর  র‌্যান্ডি জ্যাকসনেরা এবার সত্যই বিপদে পড়বেন।

 

‘তিন ভন্ড’ গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে দুই জনকে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। একজন সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। অন্যজন মুসলিম দার্শনিক আবু রুশদ। সম্রাট ফ্রেডারিককে অভিহিত করা হয়ে থাকে ‘The first modern man’ হিসেবে, আর আবু রুশদকে বিশেষিত হয় ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক’ অভিধায়। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে  যে সত্য বলা হয়নি গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে যেন আকাশ মালিক বাংলাদেশের আবু রুশদ হতে চলেছেন। এ সত্যই অতিশয়োক্তি নয়। আমি নিঃসন্দেহ বাংলাভাষায় এ ধরণের বই আগে লেখা হয়নি। পুরো গ্রন্থটি তার পরিশ্রম, মেধা এবং অধ্যাবসায়ের এক উজ্জ্বল সাক্ষর। রসুনের মত খোলস ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে আকাশ মালিক যেন পাঠকদের সামনে তুলে এনেছেন শ্বেত শুভ্র সত্যের নির্যাস।  তার পরিশ্রমলব্ধ গবেষণায় পাওয়া সত্যের নির্যাস দেখে অনেক পাঠকই  চমকিত হবেন। আমিও হয়েছি।  বার বার পড়েছি তার পুরোপান্ডুলিপিটি।  চমক কাটতে চায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবিগুরুর বাণীতে খুঁজে পেয়েছি উত্তর –

 

‘সত্য যে কঠিন, সে কঠিনেরে ভালবাসিলাম

সে কখনো করেনা বঞ্চনা।’

 

আমার ধারণা  আকাশ মালিকের বইটি শেষ করে উঠবার পর  অনেকেরই আমার মত বোধ তৈরি হবে, এ আমি হলফ করে বলতে পারি।

 

আকাশ মালিক মুক্তমনায় অনেকদিন ধরেই লিখছেন। তিনি তার বইটি বাংলাদেশে প্রকাশ করার আগে ই-বুক হিসবে মুক্তমনায় প্রকাশ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তার বইটি ই-সংকলন হিসবে মুক্তমনায় রাখতে পেরে সত্যই আনন্দিত বোধ করছি।

 

 সম্পাদক, মুক্তমনা

মার্চ, ২০০৯

যে সত্য বলা হয়নি : আকাশ মালিক