আধুনিক চিন্তাধারায় ডারউইনের প্রভাব
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশের সাথে বিভিন্ন প্রজাতির অভিযোজনের ধারণাকে পূর্ণাঙ্গ বিবর্তন তত্ত্ব হিসাবে রূপ দেন ডারউইন। সেই তত্ত্বে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনে অধিকতর সুবিধাজনক গুণগুলো বংশাণুক্রমে ছড়িয়ে যেতে থাকে পরবর্তী বংশধরসমূহের মধ্যে। ডারউইনের তত্ত্বকে জন্মের পরে শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক নীরিক্ষার মধ্য দিয়েই যেতে হয়নি, ধর্মীয় সমালোচনাকেও সইতে হয়েছে তীব্রভাবে। তবে সেই তত্ত্ব ছিল দীর্ঘ পথের সুত্রপাত মাত্র। বিবর্তনবাদবাদ তত্ত্বের ফলশ্রুতিতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য গবেষণা প্রশ্নের যা আজকের যুগের বিজ্ঞানীদেরকেও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
বিবর্তনের ধারণা কিন্তু অনেক সুপ্রাচীন। এমনকি সক্রেটিসের আগেও কীভাবে যোগ্যতম টিকে থাকে সে বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছে। অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দী জীবন কীভাবে উদ্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ডারউইনের বিবর্তনবাদই প্রথম ঊনবিংশ শতাব্দী এবং তার পরেও বৈজ্ঞানিক শক্তপক্ত পরীক্ষাতেও টিকে গেছে। আজকের যুগে বিজ্ঞানীরা উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা, কম্পিউটার, ডিএনএ স্যাম্পলিং টুল নিয়ে দিনকে দিন ডারউইনের তত্ত্বকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ডারউইনের তত্ত্বের ভৌত বিজ্ঞানসমূহের সাথে গাঢ় এবং কার্যকর সম্পৃক্ততা কারণেই এই বছর তার জন্ম দ্বিশতবার্শিকী এবং তার মাস্টারপিস কর্ম অরিজিন অফ দ্য স্পিসিসের দেড়শত বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে বিশাল ঘটা করে।
ডারউইনের তত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের একটি মৌল ভিত্তি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স, আপেক্ষিকতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির সাথে সগর্বেই দাঁড়িয়ে আছে। কোপার্নিকাস যেমন পৃথিবীকে বিশ্বজগতের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ডারউইনের বিশ্বজগতও প্রাকৃতিক জগতের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছে মানুষকে। মানুষ আর সৃষ্টির সেরা জীব নয় এখন, নয় কোন সৃষ্টিকর্তার বাছাই করা পেয়ারের বান্দা। বরং লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্য আরো হাজারো প্রজাতির মত জন্ম নিয়েছে মানুষ নামের প্রজাতিটি।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ধারণা বোঝা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন শুধু কিছু বিতর্কিত প্রস্তাবনাগুলোকে সংযুক্ত করা। একই প্রজাতির মধ্যেও প্রাণীসত্তা পরস্পর থেকে ভিন্ন। এবং সময়ে সময়ে নতুন ধরনের প্রাণীসত্তা উদ্ভব হয়। কিছু ভিন্নতা পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। টিকে থাকার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে প্রাণীসত্তার বিকাশ হয় কোন নির্দিষ্ট স্থানে। এর ফলে ডারউইনের ভাষায় তৈরি হয় টিকে থাকা ভয়ংকর সংগ্রাম। এই সংগ্রামে দুর্বলটি বিনাশ হয়ে যায়। সক্ষমটি টিকে থাকে। টিকে থাকাগুলো তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ছড়িয়ে দেয় তাদের সন্তানসন্ততিদের মধ্যে। দীর্ঘ সময় পরে, এই বৈশিষ্ট্যগুলোই একসময় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটায়।
এই সহজ সরল ধারণাকে ডারউইন প্রথম খেয়াল করেননি বা ধারণাগুলোকে একত্রিত করেননি। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৯০ সালে গ্রীক দার্শনিক এমপেডোকলস (Empedocles) বলেছিলেন যে, কেন প্রাণীরা তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ায় তা প্রাকৃতিক নির্বাচন হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে। টিকে থাকার সংগ্রাম তত্ত্ব পাওয়া যায় ৭৭৬ সালে বসরায় জন্ম নেওয়া মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক আল-জাহিজের লেখা থেকে। এই ধারণা আবার ভেসে উঠে সপ্তদশ শতাব্দীতে দার্শনিক টমাস হবস এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ডারউইনের দাদা চার্লস ডারউইনের মাধ্যমে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিবর্তনের ধারণা ডালপালা মেলতে শুরু করে। মোটামুটি সবাই এই ধারণায় বিশ্বাস করা শুরু করে যে প্রজাতি পরিবর্তনশীল। উদ্যানতত্ত্ববিদেরা তাদের সংকর প্রজাতির মাধ্যমে তা এর মধ্যেই দেখিছিলেন। কিন্তু যে জিনিষটা কেউ জানতো না তা হচ্ছে কিভাবে এই পরিবর্তনটা ঘটে। আর এখানেই ডারউইনের সমস্ত কৃতিত্ব।
ডারউইন তার তত্তওগুলোকে রূপ দেওয়া শুরু করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকের শেষের দিকে। কিন্তু সেগুলোকে প্রকাশ করতে তিনি বিশ বছর অপেক্ষা করেন। তাও হয়তো করতেন না, যদি না রাসেল ওয়ালেস নামে তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকতো। ওয়ালেসকে টেক্কা দেবার জন্যেই ওই সময় তড়িঘড়ি করে তিনি তার তত্ত্ব প্রকাশ করেন।
ডারউইনের তত্ত্বের সূচনা ছিল একেবারে কচ্ছপ গতিতে। লাইয়েল পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ধারণাকে জীবজগতে প্রয়োগ করেছিলেন তিনি। এক প্রজাতি থেকেই আরেক প্রজাতির উদ্ভব। জীববিজ্ঞানের রূপান্তরকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন সেই সময়কার অনেক বিবর্তনবাদী চিন্তাবিদরাই। কিন্তু তখন এই রূপান্তরকে ধারণা করা হতো উর্ধমুখী রূপান্তর হিসাবে। উর্ধ্বমুখী রূপান্তর হচ্ছে এরকম যে, প্রত্যেকটা প্রজাতির উদ্ভিদ বা প্রাণীই উৎপত্তি হয়েছে প্রাণহীন জড় পদার্থ থেকে এবং উদ্ভবের পর থেকেই সেগুলো অপ্রতিরোধ্যভাবে অধিক জটিল এবং নিখুঁত প্রজাতি হওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
ডারউইন এই সরলরৈখিক বিকাশকে প্রত্যাখান করেন এবং বলেন যে, প্রজাতির বিকাশ সরলরৈখিক নয় বরং শাখাবহুল। যেখানে কিছু প্রজাতি একই পূর্বপুরুষ থেকে জন্ম নিয়ে ভিন্ন পথে যাত্রা করে। এই ধারণা বিদ্যমান ধারণার পুরোপুরি বিপরীত ধরনের। প্রচলিত ধারণায় মনে করা হতো যে, নতুন একটি প্রজাতি তার পূর্বপুরুষ থেকে কতখানি আলাদা হতে পারে তার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে।
একই পূর্বপুরুষ থেকে শাখাময় বংশধারার বিবর্তন তুলনামূলকভাবে খুব কম সময়ে গৃহীত হয়ে যায়, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটি অত সহজ ছিল না। সাধারণ লোকতো দূরের কথা, এমনকি বৈজ্ঞানিক সমাজেও তা গৃহীত হয়নি শুরুতেই। না হওয়ার কারণটাও বোধগম্য। ডারউইন নিজেই উত্তরাধিকারের মেকানিজমকে ব্যাখ্যা করতে পারেন নাই। এক ধরনের কাল্পনিক ‘gemmules’ এর কথা বলেছেন যা টিস্যু থেকে উৎপত্তি হয়ে সেক্স অর্গানে যায় এবং সেখানে অনুরূপ তৈরি হবার পরে সেগুলো পরবর্তী প্রজন্মসমূহে স্থানান্তরিত হয়। বিংশ শতাব্দীর তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে এসে প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া শুরু করে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনকে জেনেটিকসের পথিকৃত গ্রেগর মেণ্ডেলের তত্ত্বের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। অরিজিন অব স্পিসিসের জন্মের একশ’ বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব তার অবস্থান নিশ্চিত করে ফেলে।
আধুনিক চিন্তাধারায় ডারউইনের প্রভাব
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বজগত সম্পর্কে আমাদের ধারণা উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কে দায়ী সে বিষয়ে কোন ঐক্যমতে আসা যায় না। কেউ কেউ বলেন কার্ল মার্ক্সের কথা, কেউ বা বলেন সিগমণ্ড ফ্রয়েডের কথা। আবার কেউ বা বলেন আইনস্টাইনের কথা।
কিন্তু জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গেলে এই সংশয় আর থাকে না বিন্দুমাত্র। গত দেড়শ’ বছরে অনেক জীব–বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রস্তাবিত হয়েছে যেগুলো মানুষ যেভাবে সত্যকে দেখতো তার সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ধারণাগুলোকে মেনে নেওয়ার জন্য একটা আদর্শিক বিপ্লবের প্রয়োজন ছিল। চার্লস ডারউইনের মত এমন গড়পড়তা মানুষের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এমন সুতীব্রভাবে পরিবর্তন আর কেউ করতে পারেনি।
ডারউইনের অবদান এমন বিপুল এবং ব্যাপক যে, তিনটি প্রধান ভাগে তার অবদানকে ভাগ করা যেতে পারে। সেগুলো হচ্ছে; বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান, বিজ্ঞানের দর্শন এবং আধুনিক চিন্তাধারা।
ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি
ডারউইন প্রাণ বিজ্ঞানের নতুন একটি শাখার জন্ম দেন। তা হচ্ছে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে তার চারটি অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হচ্ছে প্রজাতির পরিবর্তনীয়তা, বা যাকে বলা যেতে পারে বিবর্তনের আধুনিক ধারণা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে শাখাময় বিবর্তনের ধারণা। এর অর্থ হচ্ছে এই পৃথিবীর সকল প্রাণীরই আদি উৎস এক। ১৮৫৯ সালের আগ পর্যন্ত জ্যা ব্যাপ্টিস্ট ল্যামার্কসহ সকল বিবর্তনীয় প্রস্তাবই সরলরৈখিক বিবর্তনকে সমর্থন দিয়েছে। ডারউইন আরো যোগ করেছিলেন যে বিবর্তন অবশ্যই ক্রমিক (gradual)। এতে বড় ধরনের কোন বিঘ্ন বা অধারাবাহিকতা নেই। সবশেষে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বিবর্তনের উপায় (mechanism) হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন।
এই চারটি অন্তর্জ্ঞানই ডারউইনকে বিজ্ঞানের দর্শনের নতুন শাখা জীববিজ্ঞানের দর্শন তৈরিতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। যদিও পূর্ণ বিকশিত হতে এই দর্শনের একশ’ বছর লেগে গেছে। তবে মূল ধারণা গড়ে উঠেছে ডারউইনের কনসেপ্ট থেকেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ডারউইন বিজ্ঞানে ঐতিহাসিকতার প্রবর্তন করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের বিপরীতে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ঐতিহাসিক বিজ্ঞান। বিবর্তনবাদীরা ইতোমধ্যেই ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনা এবং প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার জন্য সূত্র বা পরীক্ষণ যথাযথ কৌশল নয়। তার বদলে কোন একটি নির্দিষ্ট সিনারিওর পরীক্ষামূলক পুনর্নির্মাণ সহযোগে ঐতিহাসিক বর্ণনা তৈরি করা হয় সেই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য।
উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবী থেকে হঠাৎ করে ডাইনোসরের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পিছনে তিনটি ব্যাখ্যা প্রস্তাব করা হয়েছিল। মহামারী, জলবায়ুর হঠাৎ করে ব্যাপক পরিবর্তন এবং উল্কাপিণ্ডের প্রভাব, যাকে আলভারেজ তত্ত্ব (Alvarez theory) বলা হয়। প্রথম দুটো বর্ণনাই শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেওয়া হয় এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি না থাকায়। সব জানা তথ্য সমূহই আলভারেজ তত্ত্বকে সায় দেয়। ঐতিহাসিক বর্ণনার পরীক্ষণ যা বলতে চায় তা হচ্ছে, বিজ্ঞান এবং মানবিকের মধ্যে যে সুদূরপ্রসারী ব্যবধান ছিল তা আসলে অবিদ্যমান। এর মেথডোলজি এবং পরিবর্তন ঘটানো সম্ভবকারী সময় ফ্যাক্টরকে গ্রহণ করার ফলে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান এদের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসাবে কাজ করে।
ডারউইন এবং ওয়ালেসের প্রাকৃতিক নির্বাচন আবিষ্কার ছিল বড় ধরনের দার্শনিক অগ্রযাত্রা। দর্শনের ইতিহাসে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূলনীতিগুলো এর আগে দুই হাজার বছর ধরে অজানা ছিল। প্রাকৃতিক নির্বাচনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে অভিযোজিত পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে। এর ধরন খুবই সহজ সরল। অনুন্নত প্রজাতিসমূহকে লুপ্ত করে দেয়াই এর পদ্ধতি। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অনুন্নত প্রজাতিকে লুপ্ত করে দেয়ার ধারণাকে ডারউইনের সমসাময়িক দার্শনিক হার্বার্ট স্পেনসার ‘যোগ্যতম টিকে থাকবে’ এই বিখ্যাত বাক্যের মাধ্যমে বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে এই উক্তি দীর্ঘদিন চক্রাকার যুক্তি হিসাবে হাসি ঠাট্টার শিকার হয়েছে। ‘যোগ্যতম কে? যারা টিকে থাকে’। বাস্তবে, খুব সতর্কভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে কেন কিছু বিশেষ পরিবেশে কিছু কিছু প্রজাতি টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে এটি ঐশ্বরিক চুড়ান্ত কারণকে অপ্রয়োজনীয় করে ফেলেছে। কোন কিছুই আর পূর্ব নির্ধারিত নয় এখন। এমনকি, নির্বাচনের উদ্দেশ্যও পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পালটে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক নির্বাচন ঠিকঠাকভাবে কাজ করার জন্য বৈচিত্র্যময় প্রজাতিসমূহের সমাহার প্রয়োজন। বৈচিত্র্যের গুরুত্ত্বের কারণে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে দ্বিস্তর বিশিষ্ট প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাপক বৈচিত্র্যের সমাহারের পরেই আসে অনুন্নত প্রজাতির বিলুপ্তি। পরের ধাপটি সুনির্দিষ্ট। প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গ্রহণ করার মাধ্যমে ডারউইন দৈবতা না প্রয়োজনের কারণে পরিবর্তন হয় সে বিষয়ে দার্শনিকদের মধ্যে কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসা বিতর্ককে সমাধান করতে সক্ষম হন। প্রজাতির পরিবর্তন দু’টো কারণেই হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায় হচ্ছে এলোপাতাড়িভাবে (Randomly) এবং দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে প্রয়োজনের তাগিদে।
ডারউইনীয় চিন্তা-ভাবনা
একবিশ শতাব্দীর একজন মানুষ ভিক্টোরিয়ান যুগের কোন মানুষের চেয়ে ভিন্নভাবে পৃথিবীকে দেখে থাকে। এই দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে টেকনোলজির অবিশ্বাস্য ব্যাপক পরিবর্তনের ভুমিকা অনেকখানিই । কিন্তু চিন্তাধারার এই ব্যাপক পরিবর্তনের পিছনে যে ডারউইনের ধারণাসমূহের বিশাল ভূমিকা রয়েছে তাকে স্বীকার করা হয়নি তেমন করে।
১৮৫০ সালে সকল প্রথিতযশা বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা ছিলেন খ্রীষ্টান লোক। যে পৃথিবীতে তারা বসবাস করতেন তা সৃষ্ট হয়েছে ঈশ্বর কর্তৃক। প্রাকৃতিক ধর্মতাত্তত্বিকেরা মনে করতেন যে, ঈশ্বর তার বিচক্ষণ সূত্রসমূহের মাধ্যমে সকল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর একে অপরের সাথে এবং পরিবেশের সাথে নিখুঁত অভিযোজনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ডারউইনের প্রস্তাবিত মৌলিক সূত্রসমুহীরকম বিদ্যমান ধারণার সাথে একেবারে বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে।
প্রথমতঃ ডারউইনবাদ সকল অলৌকিক প্রপঞ্চ এবং কার্যকারণকে বাতিল করে দেয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের তত্ত্ব প্রাণীজগতের অভিযোজন এবং বৈচিত্র্যতাকে একেবারে বস্তবাদী উপায়ে ব্যাখ্যা করেছে। এতে আর ঈশ্বর নামক কোন সৃষ্টিকর্তা বা ডিজাইনারের কোন প্রয়োজন নেই। ডারউইন নির্দেশ করেন যে, বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থে সৃষ্টির যে বর্ণনা দেওয়া আছে তা প্রাকৃতিক জগতের সাথে সম্পূর্ণ বিরোধপূর্ণ। প্রাকৃতিক ধর্মতাত্ত্বিকদের মুগ্ধাবিষ্ট ‘বিস্ময়কর ডিজাইনের’ সকল দিককেই প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। বিজ্ঞান থেকে ঈশ্বরকে আলাদা করে ফেলার ফলে সকল প্রাকৃতিক প্রপঞ্চের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। এর ফলে বৈজ্ঞানিক জগতে অত্যন্ত শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আত্মিক বিপ্লবের সৃষ্টি হয় যার প্রভাব এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে।
দ্বিতীয়তঃ ডারউইন টাইপোলজিকে খণ্ডন করেছেন। পীথাগোরাস এবং প্লেটোর সময় থেকেই প্রাণী জগতের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে ঐক্য এবং সুস্থিতিতার উপর জোর দেওয়া হতো। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বলা হয়, টাইপোলজি বা অপরিহার্যবাদ (Essentialism)। যে বৈচিত্র্য আছে প্রাণী জগতে এবং উদ্ভিদ জগতে তা খুবই সামান্য কিছু প্রাকৃতিক ধরনের এবং এই ধরনগুলোই এক একটি শ্রেণী গঠন করে। একই শ্রেণীর সদস্যদেরকে হুবহু অনুরূপ এবং ধ্রুব এবং তারা অন্য শ্রেণীর সদস্যদের থেকে প্রচণ্ডভাবে আলাদা বলে মনে করা হতো।
ডারউইন এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাতিল করে দেন এবং সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ধারণা প্রবর্তন করেন। মানুষসহ সকল জীবিত প্রাণী বা উদ্ভিদের সকল গ্রুপের সদস্যা যার যার মতো আলাদা। ছয় বিলিয়ন লোকের মধ্যে এমন কোন দুইজন লোককেই পাওয়া যাবে না যারা হুবহু অনুরূপ।
তৃতীয়তঃ ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব সকল ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপকেই অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে। গ্রীকদের সময় থেকেই সার্বজনীন একটা বিশ্বাস ছিল যে, ঐশ্বরিক শক্তি সবকিছুকেই অধিকতর নিখুঁততার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরিস্টটল এরকম একটি কারণ হিসাবে ‘চুড়ান্ত কারণের’ কথা উল্লেখ করেছেন। কান্টও (Kant) নিউটোনিয়ান পদার্থবিদ্যার সূত্র দিয়ে জীববৈজ্ঞানিক প্রপঞ্চকে ব্যাখ্যা করার অসফল চেষ্টা করেছিলেন। ১৮৫৯ সালের পরেও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে ঐশ্বরিক ব্যাখ্যা জনপ্রিয় ছিল। ডারউইনবাদ এসে এই সমস্ত ধ্যান ধারণাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেয়।
চতুর্থতঃ ডারউইন ডিটারমিনিজমকেও বিদায় করে দেন। লাপ্লাস ( Laplace) মনে করতেন যে, বর্তমান বিশ্বজগত এবং এর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকলে অসীম ভবিষ্যত সম্পর্কেও ভবিষ্যতবাণী করা সম্ভব। এর বিপরীতে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জুড়ে এলোপাতাড়িময়তা এবং দৈবতাকে গ্রহণ করেছেন। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় দৈবের কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে সেটা অনেক পদার্থবিদের কাছেই অগ্রহণযোগ্য ছিল। আইনস্টাইন ‘ঈশ্বর পাশা খেলে না’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে দৈবের প্রতি তার অনীহাকে প্রকাশ করে গেছেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রথম ধাপ, বৈচিত্র্যতার সৃষ্টি পুরোপুরি দৈবের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ, প্রকৃত নির্বাচন সম্পূর্ণ সুনির্দিষ্ট।
পদার্থবিদ এবং দার্শনিকদের প্রাথমিক বাধা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় আকস্মিক ঘটনার এবং দৈবের ভূমিকা সার্বজনীনভাবে গৃহীত। অনেক জীববিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা জীববিজ্ঞানে সার্বজনীন সূত্রের অবস্থানকে অস্বীকার করেন।
পঞ্চমতঃ ডারউইন বলেন যে সৃষ্টিজগতে মানুষ কোন বিশেষ সৃষ্টি না। আর এর মাধ্যমে তিনি নতুন ধরনের মানবকেন্দ্রিকতা তৈরি করেন। তার সমসাময়িক লোকদের ডারউইনের মতবাদের যে অংশটা মানতে কষ্ট হয়েছিল তা হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীর মত মানুষের ক্ষেত্রেও একই পূর্বপুরুষের ধারণা ব্যাখ্যা করা। ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকদের মতে, মানুষ ছিল সৃষ্টিজগতের অন্য প্রাণীর থেকে আলাদা এবং শ্রেষ্ঠতর। এরিস্টটল, ডেকার্টে এবং কান্ট অনেক কিছুতেই একমত না হলেও এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত ছিলেন। কিন্তু জীববিজ্ঞানী টমাস হাক্সলি (Thomas Huxley) এবং আর্নস্ট হ্যাকেল (Ernst Haeckel) ব্যাপক তুলনামূলক পরীক্ষণের মাধ্যমে দেখান যে, মানুষ এবং এপের পূর্বপুরুষ একই। তাদের এই ধারণা পরবর্তীতে আর কখনোই বিজ্ঞানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। একই পূর্বপুরুষের তত্ত্ব মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগের ফলে প্রাণীজগতে মানুষের আগের যে বিশেষ মর্যাদা ছিল তা নড়ে গেছে সন্দেহাতীতিভাবেই।
যদিও এর মানে এই নয় যে, এর ফলে মানবকেন্দ্রিকতা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। মানুষের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, এর উৎপত্তি একই পূর্বপুরুষ থেকে হওয়া সত্ত্বেও সকল প্রাণীর মধ্যে এর বৈশিষ্ট্য অনন্য। যে কোন প্রাণীর চেয়ে মানুষের বুদ্ধিমত্তা অনেক অনেক বেশি। মানুষই একমাত্র প্রাণী যার ব্যাকরণ এবং বাক্যরীতি সহযোগে ভাষা আছে। ডারউইনের মতে একমাত্র মানুষই প্রকৃত নৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। উচ্চ বুদ্ধিমত্তা, ভাষা এবং দীর্ঘকাল সন্তানের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা সমৃদ্ধ সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। ভাল হোক বা মন্দ হোক এর মাধ্যমেই মানুষ গোটা পৃথিবীতে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে বিস্তার করেছে।
ষষ্ঠতঃ ডারউইন নৈতিকতার একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রদান করেছেন। সবসময়ই প্রশ্ন তোলা হয় যে, বিবর্তন কি মানুষের নৈতিকতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে কিনা। অনেকেরই ধারণা যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন যদি কোন ব্যক্তির শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং প্রজননের সাফল্যকে বৃদ্ধি করার আত্মকেন্দ্রিক আচরণকে পুরস্কৃত করে থাকে তবে সেই ধরনের আত্মকেন্দ্রিক আচরণ কোন নৈতিকতা সৃষ্টি করতে পারে কিনা? হার্বার্ট স্পেনসার কর্তৃক বিকশিত সোস্যাল ডারউইনিজম অনুযায়ী নৈতিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা অচল।
আজকে আমরা জানি যে, সামাজিক প্রজাতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যক্তি নয় বরং গোটা সামাজিক দলই নির্বাচনের লক্ষ্য হতে পারে। ডারউইন ১৮৭১ সালে এই যুক্তিটাই মানব প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন। একটি সামাজিক দলের অস্তিত্ব রক্ষা এবং সমৃদ্ধি সেই দলের সদস্যদের মধ্যে সুসমন্বিত সহযোগিতার উপর অনেকখানি নির্ভর করে। এই সহযোগিতা পরার্থবাদেরও (Altruism) উপর নির্ভর করে। এই পরার্থবাদ দলের টিকে থাকা এবং সমৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার সাথে সাথে দলের সদস্যদের যোগ্যতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
দল নির্বাচন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সামাজিক দলকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। অন্যান্য সামাজিক প্রাণীসমূহের মধ্যে ঐ ধরনের পরার্থবাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক দলের মধ্যে পরার্থবাদের আধিক্য এবং সুসমন্বিত সহযোগিতাকে নির্বাচন পক্ষপাত দেখায়। এর মধ্য দিয়েই যে কেউ বিবর্তন এবং নৈতিকতার সম্পর্ক দেখাতে পারে। সোস্যাল ডারউইনের পুরনো ধারণা প্রাণী, বিশেষ করে সামাজিক প্রাণীসমূহের উপর অসম্পূর্ণ ধারণা থেকে গড়ে উঠেছিল।
বিবর্তনের সমর্থন
ডারউইনের তত্ত্ব যতই বৈপ্লবিক হোক না কেন একে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে যেমন সমস্যা ছিল এখনো সেই রকমই সমস্যা রয়ে গেছে। ২০০৬ সালে পরিচালিত গ্যালুপ পরিচালিত এক জরীপে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১৪ শতাংশ লোক একমত যে, মানুষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে জন্মেছে। এই হার ১৯৮২ সালে ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। বিবর্তনকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দেশে দেশেও বিভেদ রয়েছে। বিবর্তনের প্রতি সবচেয়ে পক্ষপাত রয়েছে আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের। কোন দেশের লোকজনের ঈশ্বর বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনে বিশ্বাস বিপরীতমুখী সহসম্পর্কযুক্ত।
চিত্র ১: বিবর্তনের সমর্থন দেশে দেশে
তবে এখানে মজার একটা বিষয় রয়েছে। বিবর্তনের উপর গবেষক গ্রেগরী পল এবং পিটজার কলেজের সমাজবিজ্ঞানী ফিল জুকারম্যান যুক্তি দিয়েছেন যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করা দেশের লোকের টিকে থাকার সংগ্রামের মাত্রার সাথে বিপরীতমুখী সহ-সম্পর্কযুক্ত। যে সমস্ত দেশে খাদ্যের প্রাচুর্য রয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা সার্বজনীন এবং বসতবাটি সহজলভ্য সেখানে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস যে সমস্ত দেশে ওই বিষয়গুলো অনিশ্চিত তার চেয়ে কম।
তথ্যসূত্রঃ
http://www.sciam.com/article.cfm?id=darwins-living-legacy
http://www.biologie.uni-hamburg.de/b-online/e36_2/darwin_influence.htm
http://www.economist.com/daily/chartgallery/displaystory.cfm?story_id=13062613
http://www.economist.com/daily/chartgallery/PrinterFriendly.cfm?story_id=13062613
http://www.economist.com/science/displaystory.cfm?story_id=13059028
মায়ামি, ফ্লোরিডা।
ফরিদ আহমেদ, মুক্তমনার মডারেটর, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে‘ গ্রন্থের লেখক।
আসাধারণ লিখেছেন সত্যি মিথ্যে বাদেও এটা একটা একটা আসাধারণ লেখা
খুবই তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা। এবং ‘থট-প্রভোকিং’। দার্শনিক চিন্তাধারার ওপর বিবর্তন তত্ত্বের প্রভাব খুব সুন্দরভাবে ফরিদ এই আলোচনায় তুলে এনেছেন। ধর্ম, সৃষ্টিতত্ত্ব, আর ঈশ্বরে বিশ্বাস – এইসব দিয়ে যে আর নৈতিকতার মানদন্ড নির্ধারণ করা যাবে না তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ফরিদ।