আমাদের বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুরাঃ পাপমোচনের সময় এখনই
(আকার আকৃতিতে এই লেখাটি নীল তিমির মতই দীর্ঘকায়। কারো যদি অসীম ধৈর্য্য এবং অফুরন্ত অলস সময় থাকে তাহলেই শুধুমাত্র এই দীর্ঘপথে পা বাড়াবেন বলে আশা করছি। না থাকলে আগে ভাগে সরে পড়াটাই হবে উত্তম কাজ।
পাঠকদের ধৈর্য্য এবং অলস সময়ের উপর অযাচিত চাপ না ফেলে একাধিক পর্বে ভাগ করে দিতে পারতাম ইচ্ছে করলেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিরতির বিঘ্নতায় পাঠকদের লেখাটির সাথে আবেগগত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল প্রবল। যেটা কোনভাবেই কাম্য নয় আমার কাছে। সে কারণেই অসীম সাহসের সাথে অনেক সংশয়কে পাশ কাটিয়ে এক পর্বেই পোস্ট করলাম লেখাটি।
এই লেখাটির জন্য বীণা ডি’কস্টার লিখিত বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুদের উপর প্রবন্ধসমূহের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছি আমি। অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো বাংলাদেশের সন্তান এই গুণী, মেধাবী এবং পন্ডিত ব্যক্তিটির প্রতি। সেই সাথে অন্য যাদের লেখা থেকে তথ্য ব্যবহার করেছি তাদের প্রতিও আমার সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।
একজনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কারণে লিখিত এই প্রবন্ধটি। বাহুল্য বিধায় তার নামটি উহ্য রাখা হলো। অন্তরালের সেই বিশেষ একজনের উদ্দেশ্যেই নিবেদিত আমার এই লেখাটি।)
লজ্জায় মুখ ঢেকে আছেন একজন বীরাঙ্গনা। আসলেতো লজ্জিত হওয়ার কথা আমাদের। ছবিঃ নাইব উদ্দীন আহমেদ।
২০০২ সালে মন্ট্রিয়লবাসী ক্যানাডিয়ান পরিচালক রেমন্ডে প্রভেনচার যুদ্ধ শিশুদের নিয়ে ‘War Babies’ নামে একটি ডকুমেনটারি তৈরি করেন। সেই ডকুমেন্টারিতে তিনি ওয়াটারলু, ওন্টারিওতে বসবাসকারী এক ক্যানাডিয়ান যুবক রায়ানের পিছু নেন। এই যুবক তার অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতকে ছুঁয়ে দেখার জন্য যাত্রা করেছিল বহু বহু বছর আগে তার জন্ম হওয়া এক অজানা দেশের উদ্দেশ্যে।
বাবা মায়ের গভীর ভালবাসায় জন্ম নেয়ার সৌভাগ্য রায়ানের হয়নি। প্রেমবিহীন নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় ভালবাসাহীন পৃথিবীতে অনিচ্ছুক এবং অবাঞ্চিত আগমণ তার। রায়ান একজন যুদ্ধ শিশু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের করুণতম পরিণতি সে। একাত্তর সালে পাকিস্তানী এক সৈনিকের অজ্ঞাত কোন বাঙালী রমণীকে বর্বরভাবে ধর্ষণের ফলশ্রুতিতে তার জন্ম। বাহাত্তর সালে বাংলাদেশ থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিল এক ক্যানাডিয়ান দম্পতি। সেখানেই তার বেড়ে উঠা। অতঃপর পরিণত বয়সে নিজের জন্মকালীন সময়কে অনুধাবন করা এবং মাকে খুঁজে পাবার সুতীব্র আকুতি থেকে রায়ানের বাংলাদেশ যাত্রা শুরু ।
তার নিজের লেখা এক কবিতায় রায়ান তার নিজের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘আমার নাম রায়ান বাদল। আমার দুইজন মা। একজন আমাকে ডাকে রায়ান বলে। আরেকজন আমাকে ডাকতো বাদল বলে। রায়ান বলে যিনি আমাকে ডাকেন, তাকে আমি আমার সারা জীবন ধরে চিনি। কিন্তু যিনি আমাকে বাদল বলে ডাকতেন তাকে আমি কখনো দেখিনি। তিনি আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন বাংলাদেশে। সেই জন্মের তিন সপ্তাহ পরে আবার আমি জন্মেছিলাম আমার রায়ান নামে ডাকা ক্যানাডিয়ান মায়ের কোলে। বাদল নামে ডাকা আমার জন্মদাত্রী মাকে ১৯৭১ সালে ধর্ষণ করেছিল পাকিস্তানী এক সৈন্য। আমি একজন যুদ্ধ শিশু’।
অনেকদিন আগের ঘটনা। তাই নাম ধাম সব ভুলে গিয়েছি আমি। অষ্টাদশী এক তরুণী যুদ্ধ শিশু বুক ভরা আশা নিয়ে ক্যানাডা থেকে বাংলাদেশে গিয়েছিল তার হারিয়ে যাওয়া মায়ের খোঁজে। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মায়ের হদিস পায়নি সেই তরুণী। না দেখা সেই মাকে খোঁজার হৃদয় বিদারক যন্ত্রণা থেকে মর্মস্পর্শী একটি কবিতা লিখেছিল সে। যা ছাপা হয়েছিল ইংরেজী দৈনিক অবজার্ভারে।
এরও বছর দুয়েক আগে হবে হয়তো ঘটনাটা। কোন এক সাময়িকীর চিঠিপত্র কলামে ছাপা হয়েছিল এক কিশোর যুদ্ধ শিশুর চিঠি। বাংলাদেশের কোন এক মাদ্রাসার ছাত্র ছিল সে। সেখানে তাকে নিত্যদিন ‘জাউরা’, ‘পাকিস্তানীর পুত’সহ নানাবিধ টিটকারী শুনতে হতো সহপাঠীদের কাছ থেকে। সেই কিশোর যুদ্ধ শিশু করুণ আর্তিতে জানতে চেয়েছিল, এই দেশে কি তার কোনই অধিকার নেই। সে কি পাকিস্তানী কোন লম্পট ধর্ষক সৈনিকের ঘৃণ্য সন্তান, নাকি এই দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা এক নির্যাতিতা মায়ের গর্বিত সন্তান? কোন পরিচয়টা তার আসল পরিচয়?
বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ায়ন ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকতায় নিয়োজিত ডঃ বীনা ডি’কস্টা বিভিন্ন এডোপশন এজেন্সী, বাংলা ওয়েবসাইট এবং সংবাদপত্রে আবেদন জানিয়েছিলেন যুদ্ধ শিশুদের সাথে কথা বলার জন্য। খুব অল্প কয়েকজনই তাদের জীবন কাহিনী জনসম্মুখে প্রকাশ করতে আগ্রহী ছিল। বীনা ডি’কস্টাকে লেখা ই-মেইলে এক যুদ্ধ শিশু লিখেছিল,
‘আমার দত্তক বাবা ছিল মহা বদমাশ এক লোক। সারাক্ষণই আমাকে অপমান করার চেষ্টা করতো সে…..আমি বছর চারেক আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম……..আমি সবসময়ই ভাবি যে আমি কেন এই ক্যানাডিয়ায়ান দম্পত্তির কাছে দত্তক হয়েছিলাম, যারা আমাকে দত্তক নেয়ার তিনমাসের মধ্যেই তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল…….আমার শৈশব ছিল বিভীষিকাময়। আমার যখন খুব প্রয়োজন ছিল তখন আমার নিজের দেশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার দিক থেকে। আর সে কারণেই আমি বাংলাদেশকে ঘৃণা করি। আমি মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে কাঁদি, কারণ আমার কোন শিকড় নেই। একারণেই আমি চেষ্টা করছি যেখানে আমি জন্মেছি সেই দেশ সম্পর্কে কিছুটা জানতে’।
সদ্য প্রয়াত খ্যাতিমান লেখক মুহাম্মদ জুবায়ের কোন এক যুদ্ধ শিশুকে নিয়ে করা হোম ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তার নিজের ব্লগে লিখেছিলেন একটি হৃদয়স্পর্শী প্রবন্ধ। প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘একটি ভিডিওঃ ব্যক্তিগত বিজয়ের গল্প’। এই প্রবন্ধে তিনি একজন যুদ্ধ শিশুর তার মায়ের সাথে সাক্ষাতের বর্ণনা তুলে ধরেছেন এভাবে।
ভিডিওর শুরুতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্ত বাড়ির একটি টেবিলে, ডাইনিং টেবিল বলে ধারণা হয়, দুটি চেয়ারে বসে আছে দু‘জন নারী। একজন বয়স্ক, চেহারায়, পোশাকে গ্রামীণ মানুষের ছাপ। কথা বলে বগুড়া শহর বা তৎসংলগ্ন অঞ্চলের ভাষায়। এই মুহূর্তে তার বয়স অনুমান করা যায় না, ধারণা করা যাবে ভিডিও দেখার পরে আনুষঙ্গিক কাহিনীটি জানা হলে। অন্যজন বয়সে তরুণী, মাথাভর্তি কোঁকড়া চুলগুলিই প্রথমে চোখে পড়ে। রং-চেহারায় পুরোপুরি বাঙালি ছাপ থাকলেও কথা বলে মার্কিনি ধাঁচের ইংরেজিতে। তার পরণের পোশাকটি অবশ্য কোনো তথ্য জানায় না, সূত্রও পাওয়া যায় না। আজকাল বাংলাদেশে শহরের অনেক মেয়েও এ ধরনের পোশাক পরে।
দুই নারী পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে। একজন মহিলা দোভাষী, যাঁকে ক্যামেরায় দেখানো হচ্ছে না, একজনের কথা সাবলীলভাবে অনুবাদ করে জানাচ্ছেন অন্যজনকে। এই কথোপকথন থেকে অবিলম্বে জানা যায়, ইংরেজি-বলা তরুণীটি ওই বয়স্কার কন্যা।
বিবরণের সুবিধার জন্যে এদের একটি করে কাল্পনিক নাম দেওয়া যাক। আমরা বয়স্কাকে আমিনা এবং তরুণীকে সামিনা নামে চিনবো। তিরিশ বছর পরে, সামিনার জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর, এই তাদের প্রথম সাক্ষাত। ভিডিওতে ধরা ছবিতে দেখা যায়, একজন আরেকজনকে ক্রমাগত স্পর্শ করে, অনুভব করার চেষ্টা করে। পরস্পরের অজানা অসম ভাষায় হৃদয়ের যে আর্দ্রতা-ভালোবাসার পূর্ণ প্রকাশ ঘটতে পারে না, স্পর্শে তা সঞ্চারিত হতে থাকে। বস্তুত, প্রথমবারের সাক্ষাতে আজীবনের বিচ্ছেদ ও অদেখার তৃষ্ণা আর কিছুতেই মেটে না বলে বোধ হয়।
একসময় সামিনা ক্রমাগত চোখের পানি মুছতে থাকলে তার মা বলে ওঠে, ‘ওঙ্কা কর্যা চোখ মুছপার থাকলে চোখ বিষ করবি রে মা…‘। অনূদিত হয়ে কথাটি মেয়ের কাছে পৌঁছুলে কান্নাচোখেই হেসে ফেলে সে, ‘আমার চোখ সত্যিই ব্যথা করছে, মা‘। মায়ের মাথায়, কপালে, চুলে, গালে হাত বুলিয়ে মেয়ে একবার হাসে, একবার কেঁদে ওঠে, ‘এতোদিন পর সত্যি তোমার দেখা পেলাম, মা গো! এই দিনের জন্যে আমি অপেক্ষা করেছি আমার সারাটা জীবন ধরে!‘ মেয়ের তুলনায় মায়ের আবেগ খানিকটা নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও তার চোখও ভিজে ওঠে।
সামিনাকে শিশুকালেই রেডক্রসের লোকেরা যুদ্ধ শিশু হিসাবে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকায়। সেখানে তাকে দত্তক নিয়েছিল আমেরিকান এক পরিবার। বড় হওয়ার পর সে জেনেছে যে সে আসলে একজন যুদ্ধ শিশু। আর তখন থেকেই তার শুরু হয় মাতৃপরিচয় উদঘাটনের অনুসন্ধান। অক্লান্ত পরিশ্রমে অনেক বছরের চেষ্টার পর মায়ের নাম ঠিকানা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সে। বার বার খবর পাঠানোর পরেও তার জন্মদাত্রী মা আমিনা রাজী হয়নি মেয়ের সাথে দেখা করার। এমনকি স্বীকারও করেনি পুরো বিষয়টিকে। নাছোড়বান্দা সামিনা শেষমেষ এসে হাজির হয় বাংলাদেশে মাকে এক নজর দেখবার জন্য। তিরিশ বছর পর মুখোমুখি হয় সে তার জন্মদাত্রী মায়ের ।
সামিনার মত মাকে ছুঁয়ে দেখার, মায়ের চোখে চোখ রাখার, মায়ের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য বেশিরভাগ যুদ্ধ শিশুরই হয়নি। তাদের বীরাঙ্গনা মায়েরা যেমন হারিয়ে গেছে আমাদের সমাজের অতল অন্ধকারে, যুদ্ধ শিশুরাও তেমনি হারিয়ে গেছে এই বিশাল পৃথিবীর সুবিশাল ব্যপ্তিতে। কেউ মনে রাখেনি তাদের কথা। অগণিত দুর্ভাগা মা আর তাদের হতভাগ্য সন্তানদের কথা মনে রাখার সময়ই বা কোথায় আমাদের।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বাঙালি রমণীরা। ঠিক কতজন যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। বীণা ডি’কস্টা তার “Bangladesh’s erase past’ প্রবন্ধে জানাচ্ছেন যে, সরকারী হিসাব অনুযায়ী একাত্তরে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল দুই লক্ষ নারীকে। একটি ইটালিয়ান মেডিক্যাল সার্ভেতে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা বলা হয়েছে চল্লিশ হাজার। লন্ডন ভিত্তিক International Planned Parenthood Federation (IPPF) এই সংখ্যাকে বলেছে দুই লাখ। অন্যদিকে যুদ্ধ শিশুদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সমাজকর্মী ডঃ জিওফ্রে ডেভিসের মতে এই সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। সুজান ব্রাউনমিলারও ধর্ষিতার সংখ্যা চার লাখ বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এনবিসি টেলিভিশনের করা ধর্ষিতা নারীদের উপর একটি ভিডিও রিপোর্ট নিচে তুলে দিলাম।
পাকিস্তান আর্মি যে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি মহিলা এবং মেয়েদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০২ সালের মার্চ মাসের বাইশ তারিখে ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেল থেকে। যেখানে গণধর্ষণের বিষয়ে ইয়াহিয়া খানের মন্তব্যকে কোট করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালে সরাসরি বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পাকিস্তান আর্মিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যশোরে ছোট্ট একদল সাংবাদিকের সাথে কথা বলার সময় তিনি এয়ারপোর্টের কাছে জড়ো হওয়া একদল বাঙালির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেন যে, ‘আগে এদেরকে মুসলমান বানাও’। এই উক্তির তাৎপর্য সীমাহীন। এর অর্থ হচ্ছে যে, উচ্চ পর্যায়ের সামরিক অফিসারদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। এই ধারণার সাথে আরো দুটো স্টেরিওটাইপ ধারণাও যুক্ত ছিল। বাঙালিরা দেশপ্রেমিক পাকিস্তানী নয় এবং তারা হিন্দু ভারতের সাথে অনেক বেশি ঘনিষ্ট।
ইয়াহিয়া খানের এই উক্তিতে উৎসাহিত হয়ে পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদেরকে মুসলমান বানানোর সুযোগ লুফে নেয়। আর এর জন্য সহজ রাস্তা ছিল বাঙালি মেয়েদেরকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তাদেরকে দিয়ে সাচ্চা মুসলমান বাচ্চা পয়দা করানো। পাকিস্তানী সৈন্য এবং তার এদেশীয় দোসররা শুধু যত্রতত্র ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি। জোর করে মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ধর্ষণ ক্যাম্পে। দিনের পর দিন আটকে রেখে হররোজ ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের। পালাতে যাতে না পারে সেজন্য শাড়ী খুলে নগ্ন করে রাখা হতো তাদেরকে। সিলিং এ ঝুলে আত্মহত্যা যাতে করতে না পারে তার জন্য চুল কেটে রাখা হতো তাদের। ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণীর কি করুণ দশা হয়েছিল তা জানতে পারবেন নিচের ভিডিও থেকে।
পাকিস্তান আর্মির দোসর রাজাকার এবং আলবদরেরা জনগণকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে সন্ত্রস্ত করে দেশছাড়া করে তাদের সম্পত্তি এবং জমিজমা দখলের জন্য ধর্ষণকে বেছে নিয়েছিল।
প্রথম আলো ব্লগে আইরিন সুলতানা তার প্রবন্ধ ১৯৭১: বীরাঙ্গনা অধ্যায় এ সুজান ব্রাউনমিলারের গ্রন্থ Against Our Will: Men, Women and Rape থেকে অনুবাদ করেছেন এভাবেঃ
Brownmiller লিখেছিলেন, একাত্তরের ধর্ষণ নিছক সৌন্দর্যবোধে প্রলুব্ধ হওয়া কোন ঘটনা ছিলনা আদতে; আট বছরের বালিকা থেকে শুরু করে পঁচাত্তর বছরের নানী-দাদীর বয়সী বৃদ্ধাও স্বীকার হয়েছিল এই লোলুপতার। পাকসেনারা ঘটনাস্থলেই তাদের পৈচাশিকতা দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ; প্রতি একশ জনের মধ্যে অন্তত দশ জনকে তাদের ক্যাম্প বা ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হতো সৈন্যদের জন্য। রাতে চলতো আরেক দফা নারকীয়তা । কেউ কেউ হয়ত আশিবারেও বেশী সংখ্যক ধর্ষিত হয়েছে ! এই পাশবিক নির্যাতনে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, আর কতজনকে মেরে ফেলা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা হয়ত কল্পনাও করা যাবে না । (Brownmiller, p. 83)
পাকিস্তান আর্মির উচ্চ পদস্থ অফিসাররা যে ব্যাপকহারে ধর্ষণের ব্যাপারে জানতেন এবং তাদের যে এ ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন সম্মতিও ছিল তাতে সেটা বোঝা যায় নিয়াজীর এক মন্তব্য থেকে। নিয়াজী একাত্তরে সংগঠিত র্ধষণের ঘটনা স্বীকার করার সাথে সাথে একটি অসংলগ্ন উক্তি করেছিলেন – আপনি এরূপ আশা করতে পারেন না যে, সৈন্যরা থাকবে, যুদ্ধ করবে এবং মুত্যু বরণ করবে পূর্ব পাকিস্তানে আর শারীরবৃত্তীয় চাহিদা নিবৃত্ত করতে যাবে ঝিলামে !
তবে পাকিস্তান আর্মির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্বীকার করলেও সম্প্রতিকালে একজন বাঙালি গবেষক ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক বাঙালি রমণী ধর্ষণকে বিপুলভাবে অতিরঞ্জন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি হচ্ছেন হার্ভার্ড থেকে ডিগ্রিধারী ডঃ শর্মিলা বসু। তিনি তার Anatomy of Violence: Analysis of Civil War in East Pakistan in 1971 প্রবন্ধে এই উদ্ভট তথ্য প্রকাশ করেন। তার গবেষণা কর্ম ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং অনেকেই তার গবেষণার পদ্ধতিকে অগভীর, ত্রুটিপূর্ণ এবং পক্ষপাতময় বলে পালটা আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেননি। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন শর্মিলা বসুর গবেষণার সমালোচনা করে দৈনিক সমকালে একটি প্রবন্ধ লেখেন বাঙালি রমণীর পাকিস্তান সৈন্য প্রীতি নামে। নয়নিকা মুখার্জীও ওই প্রবন্ধকে সমালোচনা করে প্রবন্ধ লিখেছেন Skewing the history of rape in 1971 A prescription for reconciliation? নামে। এর বাংলা অনুবাদ করেছেন তানভীর, যা প্রকাশিত হয়েছে মুক্তমনাতেই।
কতজন ধর্ষিতা নারী গর্ভবতী হয়েছিলেন এবং কতজন শিশু জন্মগ্রহন করেছিল তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। সামাজিক অপবাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেক মা-ই সেই সময় করেছিলেন আত্মহত্যা। অসংখ্য গর্ভবতী মহিলা চলে গিয়েছিলেন ভারতে বা অন্য কোথাও গোপনে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য। অনেক শিশু জন্মেছিল ঘরে দাইয়ের হাতে যার কোন রেকর্ড নেই। দুঃখজনক হচ্ছে যে, নির্ভরযোগ্য এবং ত্রুটিহীন কোন পরিসংখ্যানই নেই আমাদের হাতে। ফলে, যুদ্ধ শিশুর সংখ্যা কত ছিল তার জন্য আমাদেরকে নির্ভর করতে হয় মুলত অনুমান এবং ধারণার উপর। সামান্য কিছু দলিলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সরকারী এবং বেসরকারী সংগঠনের কাছে। কিছু কিছু আছে বিদেশী মিশন এবং মিশনারী সংস্থাগুলোর কাছে।
সরকারী এক হিসাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা বলা হয়েছে তিন লাখ। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানের পদ্ধতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ডঃ ডেভিসের মতে প্রায় দুই লক্ষ রমণী গর্ভবতী হয়েছিলেন। কিন্তু এই সংখ্যা সম্পূর্ণ অনুমানের ভিত্তিতে করা, কোন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত নয়। সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ তার ‘সেইসব বীরাঙ্গনা ও তাদের না – পাক শরীর’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেনঃ
ধর্ষণের পরও বেঁচে থাকা নারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন গর্ভধারন করেছিলেন বলে জানা যায় (ব্রাউনমিলার, ১৯৭৫ : ৮৪)। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস কমিটির পুরোধা এমএ হাসান দাবি করেন, ‘এ ধরনের নারীর সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৮৮ হাজার ২ শ’। ’৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ধর্ষিত নারী এবং আরো ১ লাখ ৩১ হাজার হিন্দু নারী স্রেফ গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তারা বিলীন হয়ে গিয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে।’ এদের মধ্যে ৫ হাজার জনের গর্ভপাত সরকারিভাবে ঘটানো হয়েছিল বলে জানান আন্তর্জাতিক প্লানড ফাদারহুড প্রতিষ্ঠানের ড. জিওফ্রে ডেভিস। যুদ্ধের পরপরই তিনি এসব মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে আসেন। ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তার কাজের ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৎকালীন দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল। তার মতে, সরকার উদ্যোগ নেওয়ার আগেই ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার নারীর ভ্রুণ স্থানীয় দাই, ক্লিনিকসহ যার পরিবার যেভাবে পেরেছে সেভাবে ‘নষ্ট‘ করেছে।
ডঃ এম এ হাসানের তার প্রবন্ধ ‘The Rape of 1971: The Dark Phase of History’ তে বলেন যে, সারা দেশের গর্ভপাত কেন্দ্র এবং হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দশ শতাংশের চেয়েও কম সংখ্যক ধর্ষিতা সেগুলোতে ভর্তি হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরেই গর্ভপাতগুলো ঘটানো হয়েছে এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে তা গোপন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যে সমস্ত মহিলারা সেপ্টেম্বরের পরে গর্ভবতী হয়েছেন বা ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে যাদের গর্ভাবস্থা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে তারা কেউই গর্ভপাত কেন্দ্র বা হাসপাতালে যায়নি।
বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে ধর্ষিতা মহিলাদের গর্ভপাতের জন্য ঢাকায় পৌছায় ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অষ্ট্রেলিয়ান ডাক্তাররা। তারা বাংলাদেশে পৌঁছার পরেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বেশ কিছু গর্ভপাত কেন্দ্র।। এই গর্ভপাতকেন্দ্রলো সেবাসদন নামে পরিচিত। সেখানে তারা বাংলাদেশি ডাক্তারদের সহযোগিতায় গর্ভপাত করানো শুরু করেন। সেই সময়কার সংবাদপত্রের ভাষ্য এবং বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ যেমন বিচারপতি কে, এম, সোবহান, মিশনারিজ অব চ্যারিটির সুপারভাইজর মার্গারেট মেরি, ডঃ জিওফ্রে ডেভিসের সাক্ষাতকার থেকে জানা যায় যে ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে দুই হাজার তিন শত গর্ভপাত করানো হয়েছে।
সারাদেশব্যাপী গড়ে তোলা বাইশটি সেবাসদনে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ শিশু জন্ম নিতো। ক্যানাডিয়ান ইউনিসেফ কমিটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর যুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। রেডক্রস প্রতিনিধি এবং ইউনিসেফের লোকজনের সংগে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অটোয়ার মূল অফিসে জানান যে, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া যুদ্ধ শিশুর সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার। সুজান ব্রাউনমিলারের মতে সন্তান জন্ম দিয়েছিল এমন বীরাঙ্গনার সংখ্যা পঁচিশ হাজার।
বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় সেই সময় এই শিশুরা সমাজে তৈরি করে ভয়াবহ সংকট এবং সমস্যা। কেউ কেউ এই শিশুদেরকে বলে ‘অবাঞ্চিত সন্তান’, কেউ বলে ‘অবৈধ সন্তান’, কেউ বলে ‘শত্রু শিশু’ আবার কেউ বা নিদারুণ ঘৃণায় উচ্চারণ করে ‘জারজ সন্তান’ বলে। ফলে, এই সংকট থেকে কী করে মুক্তি পাওয়া যায় সেটাই হয়ে উঠে সেই সময়কার আশু চিন্তার বিষয়। সেই চিন্তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়কেও ছুঁয়েছিল। শেখ মুজিব ধর্ষিতা নারীদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত এবং তাদেরকে নিজের মেয়ে হিসাবে উল্লেখ করলেও সেই মেয়েদের সন্তানদের ব্যাপারে তার কোন আগ্রহই ছিল না। তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দেন যে, পাকিস্তানীদের রক্ত শরীরে আছে এমন কোন শিশুকেই বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। যুদ্ধ শিশুদের বিষয়ে নীলিমা ইব্রাহিম তার সংগে দেখা করতে গেলেও তিনি একথাই বলেন। এ বিষয়ে ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেনঃ
‘যুদ্ধশিশু’ এবং তাদের মাদের একটা সুব্যববস্থা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম অনেক খেটেছিলেন। এদের ভাগ্যে কী হবে, তা জানতে তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে বলেন, ‘না আপা। আপনি দয়া করে পিতৃপরিচয়হীন শিশুদের বাইরে (বিদেশে) পাঠিয়ে দেন। তাদের সম্মনের সঙ্গে মানুষের মতো বড় হতে দিতে হবে। তাছাড়া আমি এসব নষ্ট রক্ত দেশে রাখতে চাই না’। (ইব্রাহিম, ১৯৯৮ : ১৮)। এটি কেবল রাষ্ট্রের স্থপতি এক মহানায়কের সংকট নয়, এটা ছিল জাতীয় সংকট। গোটা জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, গ্লানি জমছিল।
শেখ মুজিবের এই বক্তব্যই হয়তো যুদ্ধ শিশুদেরকে দত্তকের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে তখন বাংলাদেশি কোন শিশুকে ভিনদেশে দত্তক দেওয়ার বিধান ছিল না, যদিও বাংলাদেশি পিতামাতা দত্তক সন্তান নিতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত অনুরোধে জেনেভা ভিত্তিক International Social Service (ISS/AB) এর ইউএস ব্রাঞ্চ সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে যুদ্ধ শিশুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। সরকারী দু’টি সংগঠন Central-Organization for Women এবং Rehabilitation and Family Planning Association কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে থাকে ISS এর পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পুরো পর্যায় জুড়ে।
বিদেশী নাগরিকরা যাতে সহজেই যুদ্ধ শিশুদের দত্তক নিতে পারেন সে জন্য ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপিত হয় The Bangladesh Abandoned Children (Special Provisions) Order। বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধ শিশুদের দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে সর্বপ্রথম যে দেশগুলো আগ্রহ দেখায় তাদের মধ্যে ক্যানাডা অন্যতম। মাদার তেরেসা এবং তার সহকর্মীদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের শ্রম এবং সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় দু’টো ক্যানাডিয়ান সংগঠন দত্তক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল মন্ট্রিয়ল ভিত্তিক অলাভজনক আন্তঃদেশীয় দত্তক প্রতিষ্ঠান Families for Children. এবং অন্যটি ছিল একদল উৎসাহি ক্যানাডিয়ানের গড়া টরন্টো ভিত্তিক অলাভজনক দত্তক প্রতিষ্ঠান Kuan-Yin Foundation। ক্যানাডা ছাড়াও আর যে সব দেশ এগিয়ে এসেছিল যুদ্ধ শিশুদের দত্তক নিতে তার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইডেন এবং অষ্ট্রেলিয়া। এছাড়াও আরো অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাও এগিয়ে এসেছিল সেই সময়। যুদ্ধ শিশুদের প্রথম ব্যাচ ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে ক্যানাডায় পৌঁছলে তা মিডিয়ার ব্যাপক মনযোগ আকর্ষণ করে।
আর এভাবেই রাষ্ট্র এবং সমাজের ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় আমাদের সন্তানেরাই মাতৃদুগ্ধ পান করার বয়সে মাতৃকোল ছেড়ে চলে যেতে থাকে অজানা দেশে, অচেনা মানুষজনের কাছে। এই চরম অমানবিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত সবল কোন মানবিক শক্তি তখন ছিল না। মজার বিষয় হচ্ছে যে, নীলিমা ইব্রাহিম এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, মোল্লারাই বরং শুরুর দিকে এই দত্তক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। মোল্লাদের বিরোধিতার মূল কারণ ছিল যে, এই সমস্ত মুসলমান সন্তানদেরকে খ্রীস্টান দেশসমূহে পাঠানো হচ্ছে।
গীতা দাস তার মুক্তমনায় প্রকাশিত ‘তখন ও এখন’ ধারাবাহিকের ২৪তম পর্বে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক নির্যাতিতা তার কিশোরী মাসী প্রমিলার করুন পরিণতির কথা বর্ণনা করেছেন। সেই লেখায় আমি একটি দীর্ঘ মন্তব্য করেছিলাম। প্রাসঙ্গিক বিধায় সেই মন্তব্যটি এখানে তুলে দিচ্ছি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের করুণতম অধ্যায়ের নাম হচ্ছে বীরাঙ্গনা নারী। যুদ্ধে সকল পক্ষেরই শত্রুর পাশাপাশি কোথাও না কোথাও মিত্রও থাকে। কিন্তু এইসব অসহায় নারীদের মিত্রপক্ষ বলে কিছু ছিল না। সকলেই ছিল তাদের শত্রুপক্ষ, তা সে শত্রুই হোক কিম্বা মিত্র নামধারীরাই হোক। যুদ্ধের সময় নয়মাস তাদেরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, আল বদর, আল শামস, রাজাকার আর বিহারীদের কাছে শারীরিকভাবে ধর্ষিত হতে হয়েছে। আর যুদ্ধের সময় বা পরে যারা তাদের মিত্র হওয়ার কথা ছিল, পরম স্নেহে বা ভালবাসায় বুকে টেনে নেবার কথা ছিল, সেই বাপ-চাচা, ভাই বেরাদারেরাই তাদেরকে ধর্ষণ করেছে মানসিকভাবে, আরো করুণভাবে, আরো কদর্যরূপে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বীরাঙ্গনাদেরকে তাচ্ছিল্য করে এর কাছাকাছি উচ্চারণের চরম অবমাননাকর একটা নামেও ডেকেছে অনেকে। আমি একে বলি সামাজিক ধর্ষণ। সামাজিক এই ধর্ষণ শারীরিক ধর্ষণের চেয়ে কম কিছু ছিল না বীরাঙ্গনাদের জন্য।
আমাদেরই কারণে যে পঙ্কিলে তাদেরকে পতিত হতে হয়েছিল অনিচ্ছুকভাবে, মমতা মাখানো হাত দিয়ে তাদের গা থেকে সেই পঙ্কিল সাফসুতরো করার বদলে নিদারুণ স্বার্থপরতা এবং হিংস্রতার সাথে আমরা তাদেরকে ঠেলে দিয়েছিলাম আরো গভীর পঙ্কিলের মাঝে। পাছে না আবার গায়ে কাদা লেগে অশুদ্ধ হয় আমাদের এই বিশুদ্ধ সমাজ। অনিচ্ছাকৃত যে গর্ভাবস্থা তারা পেয়েছিলেন শত্রুর কাছ থেকে, সমাজের রক্তচক্ষু এবং ঘৃণার কারণে তা লুকানোটাই ছিল সেই সময় সবচেয়ে বেশি জরুরী কাজ। সমাজকে বিশুদ্ধ রাখতে তাদের কেউ কেউ গর্ভনাশ করেছেন নীরবে, কেউ কেউ আবার নিজের জীবননাশ করেছেন সংগোপনে। আর যারা তা পারেননি, তারা লোক চক্ষুর অন্তরালে সন্তান জন্ম দিয়ে চলে গেছেন অজানার পথে। জন্ম মুহুর্তেই চিরতরে ছিন্ন হয়ে গেছে মা আর তার সন্তানের নাড়ীর টান। দেবশিশুর মত সেই সব যুদ্ধ শিশুরাও এখন কে কোথায় তার কিছুই জানি না আমরা। এর দায়ভার কার? আমাদের এই সমাজের নয় কি?
আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের জন্য, গণহত্যা চালানোর জন্য আমরা পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা দাবী করি। আমরা নিজেরাই কি আমাদের সেইসব বীরাঙ্গনা এবং তাদের সদ্যজাত সন্তানদের উপর যে চরম অবিচার করেছি, যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছি কখনো? চাইনি। চাইনি বলেই যে চাওয়া যাবে না এমন কোন কথা নেই। এখন সময় এসেছে সেই সব বীর নারীদের এবং তাদের প্রসূত যুদ্ধ শিশুদের কাছে জাতিগতভাবেই আমাদের করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এই বিজয় দিবসে সেই অঙ্গীকারটুকুই বা আমরা করি না কেন?
দেশ স্বাধীনের পরেই পরিবারের সম্মানের কথা ভেবেই নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলেছিল বীরাঙ্গনা নারীরা। এই নিষ্ঠুর সমাজের কাছে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না তাদের। নিয়তির কাছে সপে দিয়েছিল তারা নিজেদেরকে। যে দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদেরকে একাত্তরে তার যাতনা ভুলে থাকা রীতিমত অসাধ্য ছিল তাদের জন্য। কিন্তু নিজের সমাজও তাদেরকে গ্রহণ করেনি সহজভাবে। বীরাঙ্গনা নামের উপাধি তাদের সম্মানের চেয়ে অসম্মান হয়ে এসেছিল বেশি। কোন কিছুর প্রত্যাশাই তারা আর করেনি আমাদের কাছ থেকে। তারপরও কি কোন এক দূর্বল মুহুর্তে মনের গহীন কোনে কোন আশা ঝিলিক দিয়ে উঠেনি তাদের মনে। আশা কি জাগেনি যে, যে দেশের জন্য তারা এতো অপমান আর যন্ত্রণা সয়েছেন সেই দেশের কেউ একজন সামান্য একটু সম্মান দেখাবে তাদের। সামান্য একটু মমতা দিয়ে জানতে চাইবে তাদের সুখ দুঃখের কাহিনী। নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি গ্রন্থে বীরাঙ্গনা রীনা তার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন এভাবেঃ
একটি মুহূর্তের আকাঙ্খা মৃত্যু মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে যাবে। এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তোমার কন্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।
যে যুদ্ধ শিশুদেরকে আমরা আমাদের সমাজের শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য বিতাড়িত করেছিলাম দেশ থেকে তারা কিন্তু বাংলাদেশেরই সন্তান। শুধু সন্তানই নয়, এই দেশের রক্তাক্ত জন্ম প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশও তারা। চোখ বন্ধ করে যতই আমরা তা অস্বীকার করি না কেন, বিবেক নামক কোন কিছুর যদি সামান্যতম অস্তিত্ব আমাদের থেকে থাকে, তবে সেখানে ঠিকই কিছুটা হলে রক্তক্ষরণ হওয়ার কথা। যদি কোনদিন ওই সমস্ত যুদ্ধ শিশুরা করুণ গলায় জিজ্ঞেস করে, বলো, কি আমাদের অন্যায় ছিল, যার জন্য তোমরা আমাদেরকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছো জন্ম মুহুর্তেই। বঞ্চিত করেছো আমাদেরকে মাতৃস্নেহ থেকে সারা জীবনের জন্য। এমনকি অপরিসীম ঘৃণায় দেশ থেকেও বিতাড়িত করেছো চিরতরে। আমরা কিছু বোঝার আগেই। আর সে কারণে আজ আমাদের কোন শিকড় নেই। নেই কোন মমতা মাখানো হাত দুঃসময়ে বুকে টেনে নেয়ার জন্য। নেই কোন জন্মভূমি যাকে আমরা ভালবাসতে পারি প্রাণ ভরে। আমাদের জীবনকে এরকম দুঃসহ, ছন্নছাড়া আর লণ্ডভণ্ড করে দেবার অধিকার তোমাদেরকে কে দিয়েছিল? আমাদের জন্মগত অধিকারকে কেন তোমরা কেড়ে নিয়েছিলে নিষ্ঠুরভাবে?
এর কি কোন জবাব আছে আমাদের কাছে?
জানি কোন জবাব নেই আমাদের। যে অন্যায় এবং অবিচার আমরা করেছি সাইত্রিশ বছর আগে তার প্রায়শ্চিত্ত এবং পাপমোচনের সময় এসে গেছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির এখন উচিত তার তাড়িয়ে দেওয়া, হারিয়ে যাওয়া হতভাগ্য যুদ্ধ শিশুদের কাছে নতজানু হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। পূর্ণ মর্যাদায় তাদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা। গভীর ভালবাসা দিয়ে বলা, তোমরা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই আপনজন। এই দেশ তোমাদেরই দেশ। কারো চেয়ে এক বিন্দু কম অধিকার নয় তোমাদের এই মাটিতে।
আসুন, বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মিছিলে সমবেত হই আমরা সবাই। অতীতের পাপমোচনের দায়ভার যে আমাদের সকলেরই।
মায়ামি, ফ্লোরিডা।
ফরিদ আহমেদ, মুক্তমনার মডারেটর, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে‘ গ্রন্থের লেখক।
অনেক দেরীতে বলছি।
শেখ মুজিব সরকারের ঐতিহাসিক ভুলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভুল ছিলো– ১৯৭১ এর ধর্ষিত নারীদের “বীরঙ্গনা”র তকমা এঁটে তাদের ইতিহাসের আড়ালে ঠেলে দেওয়া। অথচ আসলে উচিত ছিলো, সব নির্যাতীত/আত্নত্যাগী নারীদের “মুক্তিযোদ্ধা” খেতাব দিয়ে স্বসন্মানে পুনর্বাসন করা। তা না হওয়ায় আত্নত্যাগী নারীরা সামাজিক লজ্জার অংশ হিসেবে বিস্মৃত হতে হতে এখন প্রায় হারিয়েই গেছে।
লেখকের লেখায় এ বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে দেখে বেশ অবাকই হলাম।
________
আপডেট:
এই লেখাটি অনলাইনপত্র গুরুচন্ডালি ডটকম-এ “১৯৭১ :: মুক্তিযুদ্ধের কথা ” শীর্ষক সংকলনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
Bangladesher ekjon nagorik hoye khoma chacci amader shei dhorshita ma-der kase.khoma chacci amader shei sob vai-bonder kase jader amra shudhu shadhinota thekei bonchito korini,jonmo thekei opoman koreci,anek k abar jonmo neoar agei opomane opomane mere feleci.sobar kase hat jor kore khomachachi. . . . . .shei sathe tader kase ashirbad prarthona korci, jeno notun projonmo tader sopner bangladesh gorte pare. (Y)
মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে…
কাউকে দিওনা দোষ পিতার দোষে
…………
এ দেশ স্বাধীন হল দীর্ঘ নয় মাসে…
স্বাধীন মনের মানুষ হতে পারলো কি অবশেষে?
লেখা পরে তো মনে হচ্ছে…সেদিন খুব বেশি দূরে নয়
ওহে প্রকৃতি … যেন তাই হয় যেন তাই হয় !!
:yes:
:guli:
কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। লেখাটা খুব ভালো, তথ্যবহুল, প্রয়োজনীয় ইত্যাদি ইত্যাদি – কিন্তু, পড়ার পর ……
পুর্বে প্রকাশিত এ লেখাটিকে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সামনে আনা হলো।
মুক্তমনার পক্ষ থেকে ব্লগের সকল সদস্যদের জানানো হচ্ছে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসই নয় এর সাথে যুক্ত হয়েছে, যুদ্ধ শিশু সর্ম্পকে নুতন করে জানবার। এজন্য লেখককে ধন্যবাদ। সমাজের অবহেলিত শিশু সর্ম্পকেও এখন আমাদের দায়িত্ব এসেছে । তাদেরকে সঠিক উপায়ে লালন পালনের । আমার মনে হয় সব ধর্মীয় উৎসবে পথশিশুদের শামিল করতে আমরা কি যুদ্ধ শিশুদের মত লিখতে পারি না?
খুবই তথ্ ভি ত্তিক লেখা । ধন্যবাদ । আ রো গ বে ষণাধমী লেখা চাই।
ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ। এই ধরণের লেখা পড়লে বুকের ভিতরে যে আগুনটা জ্বলে উঠে, তাতে প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহাটা আরও বেড়ে ওঠে। মন খারাপ হয়না, রাগী হয়ে ওঠে।
চিৎকার করে উঠি:
রাজাকার, আলবদর, তোদের ক্ষমা নেই। পাকিস্তান, তোর ক্ষমা নেই। শাস্তি পেতেই হবে।
আমাদের বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুরাঃ পাপমোচনের সময় এখনই, হ্যাঁ ফরিদ, এখনই সময়।
পাপমোচন করতে হবে — শাপমোচন করতে হবে। নিজেদের শুদ্ধ করতে হবে। ‘সামাজিক ধর্ষনের শিকার” বীরাঙ্গনা মাকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে হবে। বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা পেলেও বীরাঙ্গনারা কিন্তু সামাজিকভাবে পরাধীনই থেকে গেছেন।
একজন মা হিসেবে অনুভব করি—বীরাঙ্গনা মায়েদের এখনও অনেক বিনিদ্র রাত কাটে তাদের সন্তানদের কথা ভেবে। যে তুলতুলে শিশুটিকে তুলে দিয়েছিল বিদেশিদের কাছে সে এখন কেমন হয়েছে দেখতে! কেমন আছে? — একথা এখনও তাদের কাঁদায় ও ভাবায় বৈ কি!
জাপানে Women’s Active Museum (WAM) দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। যুদ্ধের সময় জাপানী আর্মি কর্তৃক অন্য দেশে ধর্ষনের শিকার নারীদের testimonies ছবি সহ সংগৃহীত। জাপানী কিছু নাগরিক জাপানী আর্মিদের ও সরকারের পাপ স্খলনের জন্যে কাজ করছে।
আমাদের দেশের একজন বীরাঙ্গনা WAM পরিদর্শনে গিয়ে নিজের ছবিসহ testimony দিয়ে এসেছেন — যা একটা কাঁচে বাঁধাই করে রাখা আছে পাকিস্তানী আর্মিদের অপকর্মের সাক্ষী হিসেবে। দেখে আমার গর্ব হয়েছিল। সাথে সাথে লজ্জাও লেগেছিল এই ভেবে যে — আমাদের দেশে এ ধরণের কোন উদ্যোগ নেই। আগ্রহী পাঠক http://www.wam-peace.org/english/ ওয়েভ পাতাটি পড়তে পারেন।
যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য সংসদে আইন পাশ হয়েছে। এটি আইনের দিক।
যুদ্ধশিশু ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার কী হবে ?
ফরিদ আহমেদ যে ইস্যুটি আজ তুললেন চলুন দেশে বিদেশে খোঁজ খবর করি যুদ্ধ শিশুদের ও বীরাঙ্গনাদের। বাস্তবিক কারণেই হয়তো প্রত্যেক মা আর সন্তানের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু দলীয় পরিচয় তো অবশ্যই সম্ভব।
তাদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কী কিছু করতে পারে?
অথবা আমি —আমরা—। এ বিষয়ে উদ্যোগী কেউ বা কোন দল এগিয়ে আসবেন কী!
এই টপিকে কোন লেখা পড়লে এতো রাগ লাগে সবকিছুর উপর, রাগের মাত্রা দেইখা নিজেই ভয় পাইয়া যাই। এমন লজ্জার এক ইতিহাসের সাথে জড়িত আমরা। পাকিস্তানী আর রাজাকারদের সাথে বন্দুকের যুদ্ধে জিতলেও যুদ্ধের এই নিরিহ ভিকটিমদের সাথে আমাদের আচরন, আমাদের ৈনতিক ও সামাজিক পরাজয়ের উদাহরন হয়ে আছে। এমন সমাজে/দেশে থাকি আমরা যেখানে আজো ধর্ষনকারীর সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দিয়ে সামাজিক ভাবে ধর্ষনকারী্কেই উৎসাহিত করা হয়।
এই লজ্জা কোথায় রাখি।
Excellent and timely!
ফরিদ সাহেবের সমীক্ষাটির যথার্থ মূল্যায়ন করার ভাষা আমার নাই। গুনীজনরা এর মূল্যায়ন করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন সন্দেহ নাই। আমি এই লেখাটির শুধু প্রথম ছবিটি নিয়ে কিছু কথা না বলে থাকতে পারছিনা। ছবিটি নাইব ভাইয়ের কাছ থেকে নেয়া, তথ্যটি ফরিদ সাহেব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন । (যতদুর মনে পড়ে ‘নায়েব’ নামে ‘নাইব’ ভাইয়ের সদাহাস্য একজন সহ কর্মী ছিলেন। তিনি নিজের নাম ‘নাইব’ উদ্দীন আহমেদ লিখতেন।)
১৯৭১ সালে নাইব ভাই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচুর ছবি দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। জীবনের ঝুকি নিয়ে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানেও গিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্র বিদেশী সাংবাদিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিদেশী পত্রিকায় যত ছবি বেরিয়েছে তার এক বিরাট অংশ তাঁর।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের নীচ তলায় তিনি ‘হে স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক ফটো প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেখানে তিনি প্রতিটি ছবির প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। ফরিদ সাহেব যে ছবিটি এখানে ব্যবহার করেছেন নাইব ভাই তার প্রেক্ষাপটটি এভাবে বর্ননা করেছেনঃ
পাক সেনারা ময়মনসিংহ শহরে ঢোকার সংবাদ পেয়ে নাইব ভাইরা হালুয়াঘাটের দিকে চলে যান। পথিমধ্যে একগ্রামের বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তির বাড়ীতে রাত কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পুকুর ও নিজস্ব মসজিদ নিয়ে পাকা বাড়ী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বুঝতে পেরে লোকটি নাইব ভাইদের প্রতি কটুক্তি প্রকাশ করেন এবং থাকতে দেন না।
এর কিছুদিন পরে কিছু পাক সেনা ঐ গ্রামে আসে। সংবাদ পেয়েই লোকটি তার তিন ছেলে সহ গ্রামে ঢোকার পথে আগে ভাগেই অপেক্ষা করেন। আনন্দে আত্মহারা ব্যক্তিটি পাকসেনাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এই সাফল্য গ্রামবাসীদের জানানো এবং অতিথিদেরকে খুশী করার জন্য অসময়ে নিজের মসজিদে ঢুকে গলা ফাটিয়ে আজান দেন। অতিথিরা নিশ্চয় খুশী হন। গৃহস্বামী খাশী জবাই করেন। ভিতর বাড়ী থেকে নানাবিধ ব্যঞ্জন আসতে থাকে। অতিথিরা আহার করেন আর ভিতর বাড়ীতে কান পেতে চাপা গলার কথা শুনেন। কখনও বা নরম হাতের খানিকটা দেখেও ফেলেন। খাওয়া শেষে অতিথিরা বিশ্রাম করেন আর আ্তিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। গৃহস্বামী আনন্দে উদ্বেলিত হন। অতিথিরা এবারে গাত্রোত্থান করে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে পড়েন। তিন ছেলের তিন বৌ আর তার নিজের স্ত্রী। অতিথিরা আতিথিয়তার বাকী পর্ব পালাক্রমে সম্পন্ন করেন। তারপর বিদায়ের বিসন্নতা। প্রচুর ভোজন এবং ভোজনান্তে বাড়তি ফূর্তির ভারে অতিথিরা তখন ক্লান্ত। নিজেদের বোঝাগুলো বাপ-বেটাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বলেন, “চল হালুয়াঘাটের দিকে।“
দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর নাইব ভাই আবারও ক্যামেরা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে বেড়িয়ে পড়েন। এক সময় তার সেই গৃহস্বামীটির কথা মনে পড়ে। বাড়ী নিথর-নিঃস্তব্দ। মসজিদে বিরাট তালা। গৃহস্বামী কথা বলেন না, নড়েন না, চড়েন না। শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থাকেন। নাইব ভাই সবার সাথে কথা বলতে চান। কেউ কিছুই বলেন না।
এই ছবিটি ওখানকার।
এই অসাধারন লেখাটির জন্য ফরিদ সাহেবকে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নাইব ভাইএর অসামান্য অবদানের জন্য আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
@নৃপেন্দ্র নাথ সরকার,
নাইব সাহেবের তোলা ছবিটির পটভূমি বিস্তারিত বর্ণনা করা এবং উনার নামের বানানটি সঠিকভাবে বলে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নৃপেন্দ্রদা। এই নামটি ভুল করা অন্তত আমার জন্যে ঠিক হয়নি কিছুতেই।
নামের বানানটি শুদ্ধ করে দিলাম।
অসাধারন এই লেখাটি সবার ব্লগেই রাখা উচিত্ তবে মূল লেখকের নাম উল্লেখ করে(যদি ফরিদ সাহেব অনুমতি দেন এবং অভিজিত সাহেব মাইন্ড না করেন।)।
আর যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীর পাশাপাশি যুদ্ধ শিশুদের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব দেয়ার দাবীটিও করা উচিত। এই লেখাটি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করবে এবং এমনকি পিচাশ রাজাকারদেরও।
যুদ্ধ মানবতার দুষমন আর এতে সবচাইতে বেশী আগাতপ্রাপ্ত হয় নারীরা ও শিশুরা।যা আজকে আমরা ইরাক,ফেলেস্তিন,কাশ্মীর,রুয়ান্ডা স হ আরো অনেক দেশে দেখি।
৩৮ বছর কেন ১৩৮ বছর পর হলেও আমাদের গর্বিত বাংগালী জাতি তার যুদ্ধ-জয়ের পর সকল পরাজয় ও গ্লানির হিসাব এক এক করে ৭১এর পরাজিত শ্এ্ু, যুদ্ধাপরাধী জামাতে-ই ইসলামীর কাছ থেকে সব হিসাব একদিন বুজে নিবে এতে কোনো সনে্দহ নেই। এবং আরো বেশী করে হিসাব বুজে নেবে যারা ঐ নেকড়ে হায়েনার বাচচাদের কে গত ৩৮ বছর সকল সহযোগিতা করে একেবারে রাষ্টীয় ক্ষমতায় বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সাথে সাথে আমাদের সকল ধর্যিতা মা-বোনদের সহ সকল মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধ শিশুদের বাংগালী জাতির শ্রেষ্ট্ মানব-সন্তান হিসাবে আমাদের স্মৃতিতে চিরজাগরুক করে রাখবে ।
ফরিদ আহমেদ অনেক কষ্ট করে ৭১এর সকল বসতুনিষ্ট তথ্য ও ছবি আমাদের চোখের সমানে উপস্হাপিত করে সকল বাংগালীদের আরেকবার বিবেকের অনন্ত কষ্ট-যন্তনায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর থেকে কি আমাদের কারো মুক্তি আছে ????????
ভালো থাকবেন।
মামুন,
সষ্টকহোলম।
ফরিদ,
ভাল কাজের প্রশংসা নাকি বার বার করা যায়, আমিও বলছি আপনি ভাল লিখেছেন।
ভাল থাকুন,
লুনা
In 1971, the raping of Bengali women by the Islamic soldiers of Pakistan was fully endorsed by many Imams, Pirs, Maulanas, and Maulovis. If my memory serves me correct, even the then Imam of Baitul Mukarram inferred that the act was Islamically correct.
We find the correctness of this Islamic rape in the Qur’an and hadis. Bengali women were ‘Ganimatter Maal’, war booty, or the war captives, and as per the Qur’an, and hadis the Pakistani Islamic soldiers were fully entitled to enjoy these ‘maals’. Muhammad had personally sanctioned such raping.
I remember, many Pakistani generals proudly said those Pakistani Jawans will change the racial composition of Bengalis by forcibly impregnating Bengali women with pure Islamic seeds. In fact, about eight years ago I wrote a satire (Election Nighmares) depicting this disposition of the Pakistan army.
Amazingly, none of our Islamic brothers, the OIC, ummah, had ever condemned such act. None of the Islamic countries had adopted a single produce (a child ) of this Islamic rape. Even the Bangladeshi government wanted to get rid of these ‘pure Muslims’ bred by our Islamic brothers. Yet, we pride ourselves to be a part of ummah. It was only the infidels who showed compassion and mercy by adopting many of these innocent victims of Islamic rape.
What a shame.
Just imagine if the situation was reversed, that is, if the Bangldesh army Jawans had Pakistani women as ‘Ganimatter maal’. What Pakistan would have done?
You are a very good writer. You took the courage to expose the dark side of the Islamic ummah, including the Bengali Islamic ummah.
মিস নাসরিন,
রাগ করার কিছু নেই। আমরা ধরে নিচ্ছি ভুলটি আপনার অনিচ্ছাকৃত। এমনিতে প্রগিতিশীল মানুষের সংখ্যা বংগদেশে হাতে গোনা। আপনি আবার রাগ করে মুক্তমনা ব্লগ ছেড়ে দিবেন, সেটা তো ভারী দুঃখের কথা। যেমনটি অভিজিৎ বলেছে, আমাদের কথায় আপনি কষ্ট পেলে আমরা দুঃখিত। থাকুন আমাদের সাথে।
‘আমি লিখাটা সবাইকে পড়াতে চেয়েছি….. অন্য কিছু না’- নাসরিন।
লিখাটা মুক্তমনা ব্লগে “ফরিদ” নামে একজন ব্লগার লিখেছেন, সেখান থেকে আমি আমার ও আপনাদের সবার জন্য সংগ্রহ করে রাখছি…
– নাসরিন।
‘এইসব ভন্ডামি ছেড়ে দিন’ – Aditto
‘ভুল হয়েছে আমার আমি কেন এই বলগে আসলাম……….
really sorry for everything…………..’ – নাসরিন।
বিষয়টা কি এভাবে এতটুকু গড়ানোর কোন প্রয়োজন ছিল?
@Akash Malik,
মুল লেখায় নাসরিন কিন্তু ফরিদ ভাইয়ের নাম দেননি। অনেক নীচে মন্তব্যের ঘরে গিয়ে বলেছেন,
… এটা আমি মনে করি যথেষ্ট ছিলো না। আমার ভুল হতে পারে। কিন্তু যে লেখকেরা এত কষ্ট করে তথ্য যোগাড় করে এমন গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখছেন, তাদের দিকটাও তো আমাদের ভাবা উচিৎ, না?
আমি যখন প্রথম আলো ব্লগ দেখেছিলাম তখন তিনি মাত্র ২ টা পর্ব লিখেছিলেন। মন্তব্যের ঘরে “ফরিদ” নামে একজন ব্লগার ছাড়া আর কোন রেফারেন্স তিনি কিন্তু দেননি। যদিও শেষ পর্ব ওখানে দেওয়ার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ফরিদ আহমেদের প্রতি। আসলে নাসরিনের মূল লেখাটা যেহেতু পুরোটাই ফরিদ আহমেদের এই লেখার উপর ভিত্তি করে লেখা, সেহেতু উনার কথাই বলা উচিৎ ছিলো মূল লেখার প্রথমেই। নাসরিন (হয়ত অনিচ্ছাকৃতই) ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন। নাসরিনকে অপমান করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো না, উদ্দেশ্য ছিলো আমরা যারা লেখালিখি করি তাদের মধ্যে আরেকটু সচেতনতা আর দায়িত্ববোধ তৈরি করা। আমার ভুল হলে আমি অবশ্যই ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আদিত্য যেভাবে নাসরিনকে আক্রমণ করেছেন, তার সাথে আমি একমত নই। আদিত্যকে আমি তার মন্তব্য প্রত্যাহার করার অনুরোধ করছি।
ফরিদ ভাই,
প্রথম কিছু অংশ পড়েছি। পুরাটা শেষ করার ইচ্ছা আছে। খুব উঁচা গলায় বলা উচিৎ, লেখাটা অসাধারণ।
অভিজিৎকে ধন্যবাদ মিস নাসরিন সমীপে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলি পেশ করার জন্য।
-জাহেদ
@জাহেদ আহমদ, খুব খারাপ লাগছে, আপনারা আমাকে ভুল বুঝছেন…..
খুব খারাপ লাগছে….
অভিজিৎ আমাকে না যেনেই ডুবালো…
ভুল হয়েছে আমার আমি কেন এই বলগে আসলাম……….
really sorry for everything…………..
@nasrin,
আমি না জেনে ডুবাইনি নাসরিন। আপনি আপনার লেখায় কোথাও মুল লেখকের নাম উল্লেখ করেননি। আপনি ফরিদের কথা বলেছেন ‘মন্তব্য’-এর ঘরে। তাও অনেক নিচের দিকেক।
আমি শুধু বলেছি, মুল লেখায় ফরিদ সাহেবের নাম উল্লেখ করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত না। আপনি এই ব্লগে আরো আসুন তাই চাই। কিন্তু আমরা সবাই একটু সচেতন হই। এইটুকুই প্রত্যাশা।
আপনার লেখাটি যুগোপযুগী হয়েছে।আমার গ্রাম ভূয়াপূরে আমার খালা সহ ৫ জনকে স্হানীয় দাইয়ের মাধ্যমে এবরসান করানো হয়।আপনি মালেকা বেগমের লিখায় আরও বিষদ জানতে পারবেন।৭১ সালে প্রায় ৩৫০০০০ নারী ধর্ষনের স্বীকার হয়।
Many thanks to Farid for writing such an insightful, incisive and engaging article.
I vividly remember those horrendous days. I clearly remember many Pakistani Jawans gloating in pride that they had infused pure Islamic blood inside Bengali women who would give birth to true Muslims.
Imagine what those hapless Bengali women would have faced had there been Sharia Laws in Pakistan/Bangladesh. Those sisters, mothers, wives, lovers of ours would have been stoned to death for getting pregnant out of wedlock.
Please note that many Islamists of today’s Bangladesh were the suppliers of those women to their Pakistani Islamic brothers. Those Bengali women were halal for the Pakistani men.
No wonder, even today very few Pakistani has ever condemned the Islamic rape of our women.
মুক্তিযুদ্ধ মনে আছে তবে ঝাপ্সা ভাবে। কেন যুদ্ধ কার সাথে যুদ্ধ বুঝতাম না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ে পড়েছি, চলচিত্রে, ডকুমেন্টারীতে দেখেছি, আহত,ব্যথিত হয়েছি কিন্তু ফরিদ ভাইয়ের এই লেখা পড়ার আগে এমন হৃদয়ভাঙ্গা অনুভুতি কখনো হয়নি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। কেন আমরা ৩৮টি বছরেও ঐ শিশুদের জন্যে কিছু করতে পারলামনা, দেশের বিবেক আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল, রাজনিতিবিদগন কি পারবেন নিজেকে এ প্রশ্ন করতে? আমরা এ কেমন স্বার্থপর অকৃতজ্ঞ জাতি?
সাহসী ও মানবিক লেখক কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একাত্তরে কিশোরী ছিলুম। দিনখন মাস তারিখ ঠিক মনে নেই। মনে আছে শুধু স্বৃতি গুলো। যা এখন ও তাড়া করে । তাড়া খেতে খেতে দেশ ছেড়ে এখন বিদেশে। একাত্তরের কিশোরী এখন প্রাপ্ত বয়স্কা। যুদ্ধ ও বিজয়ের হিসেব বোঝে। এই বিজয় কার বা কাদের হয়েছে, তা এখন জলের মত পরিস্কার। ভারত পাকিস্তানের সীমান্তে গোলাগুলী, বাবার হাত ধরে রাতের অন্ধকারে ছুটেছি, আশ্রয় নিয়েছি গ্রামের মুসলিম প্রতিবেশির বাড়ীতে। ৭১ রে স্ব পরিবার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েও তাড়া থেকে নিস্তার পাইনি। যুদ্ধে পালাবার সময় রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে গেলাম। সভ্রান্ত হিন্দু ঘরের তিনটি কিশোরী মেয়ে লুটের মুখে বাতাসা। শহীদ পরিবার আজ ভারতে শরনার্থী। যে পরিবারের এক ফোটা রক্ত ওই বিজয়ী পতাকাতে লেগে আছে। নেই শুধু দেশ প্রেমের নাগরিক স্বীকৃতি। যুদ্ধ শিশুর স্বীকৃতি ও বীরঙ্গনার সামাজিক স্বীকৃতী তো বহু দুরের চিন্তা।
এই সব ইতিহাস এখন শুধু পরিহাস।
@Ekattorer kisori soinik,
এ কমেন্টের জবাব দেয়াই আমাদের জন্য ধৃষ্টতা। গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আপনার ত্যাগ এবং দেশপ্রেমের প্রতি। আপনার চোখ যে এ লেখায় গেছে তাতেই আমরা সম্মানিত বোধ করছি।
থাকুন আমাদের সাথে।
অভিজিৎ
@Ekattorer kisori soinik,
আমার এই লেখার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আপনার করা মন্তব্য। আপনি যে এই লেখাটি পড়েছেন এবং কষ্ট করে মন্তব্য করছেন সে জন্য আপনার প্রতি রইলো আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা।
যে আত্মত্যাগ আপনারা করেছেন আমাদেরকে একটি দেশ দেওয়ার জন্য তার কথা আমরা কখনোই ভুলবো না। ভুলতে পারবো না আসলে কখনোই।
আমি এবং আমার মত আরো লাখো মানুষের সশ্রদ্ধ প্রণতি রইলো আপনার প্রতি।
সব ইতিহাসই পরিহাস হয়ে যায়নি এখনো।
@ফরিদ, হ্যা ফরিদ সাহেব, সব ইতিহাস পরিহাস হয়না। আপনাদের সংখ্যা নেহাত কম বলেই ইতিহাস আজ পরিহাস বলে আখ্যায়িত করছি। আসে পাসে যখন আপনাদের দেখি কিছুক্ষনের জন্য হলেও ভালবাসতে ইচ্ছা করে আমার প্রান প্রিয় দেশটাকে। ছুতে ইচ্ছে করে একাত্তরের চঞ্চলা কিশোরীকে। ইচ্ছে করে আবার ভয়হীন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করি । অবুঝ কিশোরী তখন যা করতে পারিনি। আপনাদের জয়যাত্রায় আমি আছি। যেমন ছিলাম আগে। বিশেষ অঙ্গহীন বাংলাদেশের রোগ মুক্ত ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
@Ekattorer kisori soinik,
দিদিভাই, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা তোমাকে…
@suman, ধন্যবাদ ভাই সুমনকে।
@Ekattorer kisori soinik, মাসী, আপনাকে হৃদয়ের গভীরতম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে গর্ব বোধ করি। আজ করছি, যেভাবেই হোক, যত দূর থেকেই হোক, আপনাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারছি বলে।
আমরা আরেকটা নতুন প্রজন্ম, যে প্রজন্ম অনেক কিছুই বদলে দিতে চাই। আসলেই চাই। যদি কোনদিন সমাজে সেই অবস্থান এবং সুযোগ অর্জন করতে পারি, তাহলে আপনাদের সসম্মানে আপনাদের, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনতে চাই। সবার সামনে গর্ব করে আপনাদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই।
thank you mr. farid.
ফরিদ ভাই, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বইয়ে পড়েছি গল্প শুনেছি। সেখানে অনেক বীরত্ব গাথা আছে, আছে কষ্টের বিভিষিকা। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে যুদ্ধের আরেকটা দিক দেখলাম। ভীষণ খারাপ লাগছে ঐ সব যুদ্ধশিশুদের কথা ভেবে যারা কোনোদিন নিজের মাকে মা বলে ডাকতে পারেনি, জানেনা মায়ের আদর কি, আর বাবাতো নেইই। তবে ওরা কেন শাস্তি পেল? দিন বদলেছে, বদলাতে হবে ঘুনে ধরা চিন্তা চেতনা। আমাদের আসলেই ক্ষমা চাওয়া উচিত, বিনা দোষে ওদের শাস্তি দেবার জন্যে। এমন লেখার জন্যে ধন্যবাদটা প্রাপ্য হয়ে গেলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
এ লেখাগুলোর জন্যই মুক্তমনা সাইট ব্যতিক্রমী। এ লেখাটারে স্টিকি কইরা দেয়া দরকার…।
আজ সারাদিনে ৩ বার পরলাম লিখাটা। আনেক ধন্যবাদ আপনাকে
@nasrin,
একটা কথা আমি বলব বলে ভাবছি। আপনি প্রথম আলো ব্লগে যুদ্ধ শিশু নিয়ে লিখছেন, এটা খুব আনন্দের কথা, কিন্তু ফরিদ ভাইয়ের মূল প্রবন্ধটা যে মুক্তমনা থেকে নেয়া, সেটা একটু উল্লেখ করা শোভন ছিলো না? আপনার লেখা সেখানে প্রকাশিত হয়েছে জানুয়ারীর ২৭ তারিখে, প্রবন্ধের অনেক কিছুই ফরিদ ভাইয়ের লেখা থেকে নেওয়া, এমনকি শিরোনামটার অর্ধেকটুকুও। আপনি লেখা থেকে নিয়েছেন, তাতে আমার কোনই আপত্তি নেই, কিন্তু একজন লেখন যখন এমনি একটি লেখা লিখেন, তাকে অনকে কষ্ট করে তথ্য যোগার করতে হয়। আমি ফরিদ ভাইয়ের ল্কেঝা দেখেই বুঝতে পেরেছি কী অপরিসীম কষ্ট করে তথ্য যোগাড় করে তাকে লিখতে হয়েছে। সেরকম একটি লেখার পর যখন কেউ নিজের নামে লেখাটা একটু রদ বদল করে পোস্ট করে দেয় সেটা সত্যই পীড়াদায়ক। ফরিদ ভাই হয়ত ভদ্রতা করে কিছু বলেননি, কিন্তু একন লেখকের কষ্টের মূল্যটা তো আপনি রাখবেন। আপনি নিজে লেখক বলেই এই ছোট্ট আবেদনটুকু করছি।
আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। গরুত্বপূর্ণ বিষয়টা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক আপনার বা ফরিদ ভাইয়ের মত আমিও চাই। কিন্তু নিজের বিবেক বিসর্জন দিয়ে নয়। আমি এই মন্তব্যটা একদমই করতে চাই নি; করতামও না যদি একটু ছোট্ট করে একটা রেফারেন্স দিতেন আপনার লেখায়। এটা কি খুব একটা বড় চাওয়া?
@অভিজিৎ,ধন্যবাদ, আপনি মনে হয় দেখেন নি আমি অনুমতি নিয়ে লেখাটা আমার বলগে প্রকাশ করেছি। কোন রকম বিকৃতি ছাড়া প্রকাশ করেছি। এবং সেখানে লিখা ছিল যে লেখাটা সংগ্রিহিত। আপনি কি করে বললেন যে আমি আমার নামে প্রকাশ করেছি?????????
আমি লিখাটা সবাইকে পড়াতে চেয়েছি….. অন্য কিছু না।
@nasrin,
সংগ্রহিত না বলে ফরিদ আহমেদের নামটা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো?
অনুমতি নিয়ে লেখা মানে কি লেখকের নাম উল্লেখ না করা?
এইসব ভন্ডামি ছেড়ে দিন।
আপনি কি পুরটা পরেছেন? লেখকের নাম আবশ্যই দেয়া আছে।
নিম`ম মন্তব্য করার আগে ভাবা দরকার ছিল।
আমিও অনুমতি চাইছি আমার ব্লগে প্রকাশের জন্য।লেখাটি খুবই তথ্য সমৃদ্ধ।সবারই পড়া উচিৎ
@morshed,
আমার কোন আপত্তি নেই। প্রকাশ করতে পারেন আপনার ব্লগে।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আমিকি আপনার লেখাটা আমার বলগে সংগ্রহ করতে পারি?
দয়া করে অনুমুতি দিন। এই লিখাটা সবার পরা উচিত….
@nasrin,
অবশই পারেন। আনন্দচিত্তেই সম্মতি দিচ্ছি। আমারও ইচ্ছে অধিক সংখ্যক লোকের কাছে আমার আবেদন্টুকু পৌঁছানো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আদিম কাল থেকে যুদ্ধের নামে পুরুষের বর্বরতার শিকার নারী-এটা সর্বত্র সত্য। মধ্যযুগের ইউরোপেও কোন গোষ্ঠি যুদ্ধে হেরে গেলে-মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন করা হত। ইসলামের ইতিহাস এবং ভারতের আর্য ইতিহাসেও দেখা যাবে মেয়েদের জ়োর করে ধর্ষন করে নিজেদের ধর্মে আনার চেষ্ঠা। আর সেই ইসলাম এবং হিন্দু ধর্ম নিয়ে একদল লোকের মাতামাতি দেখলে-আমার কিছু বানরের কলা চেবাতে চেবাতে ভেংচ্যানোর কথা মনে করে। হজরত মহম্মদের আল ইসলামের সৈন্যরাও যুদ্ধে জেতা মেয়েদের দাসী বানানোর জন্যে একই ধরনের নারকীয় কাজ করত। ঋকবেদে অনেক জায়গাতেই যুদ্ধের স্তোত্রগুলোই লেখা আছে -হে বস (ইন্দ্র)-এবার যেন দাশেদের আক্রমন করে ভাল দাশ কন্যা পাই! আর তার সাথে তার দেহে বেশ কিছু সোনার গহনা থাকলে আরো পোয়াবারো! এই হচ্ছে ঋকবেদ! এই হচ্ছে মহম্মদের ইসলামের স্বরূপ। এদের ফলোয়ার দের কাছ থেকে আর কি আশা করবেন? এরা বাংলাদেশে গুজরাতে মেয়েদের ধর্ষন করলে তাদের ধর্মের চোখে এমন কি অপরাধ করেছে? তাদের বসরাই কি খুব কম যেতেন এই কাজে?
এই সহজ সত্য কথা গুলো আজ স্বীকার করতেই হবে। নইলে এই ধরনের নারকীয় ঘটনা আরো ঘটবে।
শুধ ধর্ম কে দোষ দেওয়াও আবার বোকামো। কারন জার্মান সৈন্যরা ফ্রান্সে এবং রেড আর্মি জার্মানীতে গণ ধর্ষন করেছে। এরাত আবার নাস্তিক ছিলেন! আসলে সেই জন্যেই মূল প্রশ্নটা ধর্ম,অধর্ম নিয়ে নয়। মূল প্রশ্ন আমাদের সমাজ, আমাদের রাজনীতি, আমাদের রাষ্ট্র- আমাদের মানুষ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে কি না! এবং এই মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব না -যতদিন না পর্যন্ত আমাদের সমাযে নর নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। আমাকে ভারতের ঊইম্যান রাইট কমিশনের চেয়্যারম্যান গিরিজা ব্যাস, [যিনি আগে নারী এবং শিশু দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন] বলেছিলেন-এই সব আইন, এই সব বড় বড় বই-দর্শন-কিছুই নারীর ওপর পুরুষের অত্যাচার আটকাতে পারবে না। যতদিন না পর্যন্ত আমরা সেই সমাজ, সেই শিক্ষা গড়ে তুলতে পারি, যার মাধ্যমে পুরুষ বুঝতে শেখে নারীও তাদের মতন মানুষ-কোন “ওবজেক্ট” বা “সাবজেক্ট” নয়।
@Biplab Pal,
this is not good.
@babu,
I know truth hurts-but what you are up to? threatening me??
@Biplab Pal, ইসলাম কখনই কোন জাতির মেয়েদের কে জোর করে মুসলমান বানায় নি। কি ভারত কি ইরান আর কি তুরস্ক। ইতিহাস পড়ে কথা বলুন।
আমি একাত্তর দেখেছি। ফরিদের লেখায় আজ আবার আটত্রিশ বছর পরে নুতন করে দেখলাম। যুদ্ধশিশুদের যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের বয়সও আজ আটত্রিশ। অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। সময় দ্রুত যাচ্ছে চলে। এখনও যদি না পারি, কবে পারবো যুদ্ধশিশুদের এবং তাঁদের বীরাঙ্গনা মায়েদের উপযুক্ত সম্মান দিতে? তাঁদেরকে উপযুক্ত সম্মান দিতে না পারাটা কি আমাদেরই অসম্মান নয়?
তথ্যবহূল গবেষণাসমৃদ্ধ এই লেখাটার জন্য আমি ফরিদের কাছে কৃতজ্ঞ।
ভিডিও গুলো কি ঠিকমত লোড হয়েছে ফরিদ ভাই? আমার অফিস থেকে দেখতে পাচ্ছি না। না হলে লোড করে দিয়েন…। দৌড়ের উপ্রে আছি।
যাস্ট লেখাতায় চোখ বুলায়া গেলাম। বেশ ভাল হয়েছে …।
@অভিজিৎ,
ভিডিও লোড হয়েছে বলেইতো মনে হচ্ছে। আমিতো দেখতে পাচ্ছি।