রাজা রাম মোহন রায় রচিত একটি গান শুনে দেখুন!
কী স্বদেশে, কী বিদেশে?
গানটির রচনাকাল আনুমানিক ১৮৩১ খৃষ্টাব্দ হতে ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দ কোনো এক সময়ে। রাজা রাম মোহন রায় ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর দু’বছর আগে ১৮৩১ সনে। তিনি ইংল্যান্ডের বৃস্টল শহরে সন্নিকটবর্তী এক গ্রামে মেনিঞ্জাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃস্টলের দক্ষিনে ‘আমোস ভেল সিমেটারী’তে তার দেহ সমাহিত করা হয়। উত্তর বৃস্টলের স্টেপল্টন নামে যে গ্রামে তিনি থাকতেন সেখানকার এক রাস্তার নাম বদলিয়ে ‘রাজা রামমোহন ওয়ে’ করা হয়েছে তাঁর সম্মানার্থে ।
এই গানের কথাগুলো শুনলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে গানটি খুব সম্ভবতঃ বিদেশে বসে লিখা। গানটির সুর শুনা মাত্র বুঝলাম যে গানটি ‘বাগেশ্রী’ রাগে বাঁধা। সে’সময়ে মোটামুটি সব গানই রাগের উপর ভিত্তি করে বাঁধা হতো। এই গানটির সুর আর নজরুল রচিত ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার’ আর ‘ছল ছল আঁখিতে মোর নাম ডেকো না’ এই দুটো গানের সুরের অদ্ভুত মিল আছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে নজরুলের এই গান দু’টিও বাগেশ্রী রাগে বাঁধা। বাগেশ্রী রাগের সিগ্নেচার মার্ক্স হচ্ছে- “নি সা গা মা ধা নি সা সা নি ধা মা পা মা গা রে সা”। রাগটি কাফি ঠাটের অন্তর্গত এবং রাত দুপুর থেকে নিয়ে রাত তিনটা পর্যন্ত এই রাগটি গাওয়া হয়। কী স্বদেশে, কী বিদেশে গানটি আনুমানিক ১৭৫-১৮০ বছর আগে রচিত। তবে সেই তুলনায় গানটি আধুনিক পর্যায়ে পড়ে। রাজা রাম মোহন রায় ছিলেন প্রকৃত এক মুক্ত-মনা ও মর্ডানিস্ট । সে’জন্য আমি মনে করি আমাদের এই ফোরামে তাঁর গান থাকা আবশ্যক। ১৮২০-৩০ সনে তিনি ব্রাহ্মণবাদ থেকে সরে এসে ব্রহ্ম ধর্মে চালু করলেন। এই গানে সেই নিরাকার বিধাতার আভাস তিনি দিয়েছেন।
রাজা রাম মোহন রায়ের সময়ে “বিশ্বায়ন” বাদের প্রচলন ছিল না। তবে গানটির কথা শুনে বেশ বুঝা যায় যে, তিনি বিশ্বায়নে বিশ্বাস করতেন।
পাঠকরা যাতে এই গানটি নিজ কান দিয়ে শুনতে পান, সে’জন্যে গানটি এম্পি৩ কোডে দেয়া হয়েছে।
“কী স্বদেশে, কী বিদেশে ?” রাজা রাম মোহন রচিত একটি গান কী স্বদেশে কী বিদেশে, যথায় তথায় থাকি, কী স্বদেশে কী বিদেশে। যথায় তথায় থাকি। তোমারো রচনা মুখে, তোমাকে দেখিয়া থাকি। কী স্বদেশে কী বিদেশে, যথায় তথায় থাকি । কী স্বদেশে কী বিদেশে। দেশ ভেদে কাল ভেদে রচনায় অসীমা। প্রতিক্ষণে সাক্ষ্য দেয় তোমারো মহিমা, তোমারো প্রভাব দেখি, না থাকি একাকী। তোমারো প্রভাব দেখি, না থাকি একাকী । কী স্বদেশে কী বিদেশে, যথায় তথায় থাকি। কী স্বদেশে কী বিদেশে।।
|
ড. জাফর উল্লাহ আমেরিকার নিউ অরলিন্সে বসবাসরত গবেষক এবং লেখক
না এটিকে বিরল সংগ্রহ বলে আখ্যায়িত করবো না। ১০-১২ বছর আগে কোলকাতা থেকে বাংলা শতবর্ষের পুরানো গান শীর্ষক একটি সিডি বের হয়। গানগুলো আনুমানিক ১৯৬০ দশকে রেকর্ড করা হয়। পরে সেগুলো সিডি আকারে বের করা হয়। আমি ২০০৩ বা ২০০৪ সনে লস এঞ্জেলেস এর নিকটবর্তী ইন্ডিয়ান মার্কেট থেকে এই সিডিটি জোগাড় করে ছিলাম। যেহেতু সিডি খানা বহুল প্রচারিত নয়, সেই কারণে এই সিডি থেকে কেবল রাজা রামমোহনের রচিত ও সুর দেয়া এই গানটি ব্লগে ছেড়ে দিয়েছি। কে এই গানটি গেয়েছেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারবো না তবে খুঁজে দেখতে হবে। ২০০৫ সনে কাট্রিনার জলোচ্ছ্বাসে অনেক সিডির সাথে এই সিডির কাভার ধ্বংস হয়েছে। তবে কপাল ভালো যে সিডিটা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
Ami ovivuto. Ai ganti suny stop hoay silam katokhon janina আমি অভিভূত। ডঃ জাফর উল্লাহ সাহেবকে ধন্যবাদ । কে গেয়েছেন এই গান টি?। এটা একটা বিরল সংগ্রহ! Mahabub
এমন একটা অদ্ভুত সুনদর গান উপহার দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জাফর সাহেবকে। কে গেয়েছেন এই গান টি?। এটা একটা বিরল সংগ্রহ!
বড়দিনের পাওয়া এক অমুল্য উপহার। অতলান্ত সমুদ্রের তলদেশ থেকে যেন তুলে আনা মনিমানিক্য। ডুবুরিকে অশেষ ধন্যবাদ।
ডঃ জাফর উল্লাহ কে ধন্যবাদ ।
লেখাটি পড়ে মনে হলো আমরা প্রগতির পথে তো এগুচ্ছি । তবে সময় অনুপাতে তা স্লথ । সে জন্যে দরকার আধুনিক মনষ্কো শিক্খক সমাজ । আঠারো শতকে আমাদের প্রগতির চাকা ছিলো দারুণ সচল । আর এই গান তো আমাদের সহস্র বছরের সমাজ বিবর্তণের মাইল ফলক স্বরূপ । এই স্বযত্ন সংগ্রহ এবং তা নিবেদনের জন্যে ডঃ জাফর উল্লাহকে আবারো ধন্যবাদ ।
আমি অভিভূত। অভিভূত এত বছর আগের একটি গান নিজের কানে শুনতে পেয়ে, বিশেষ করে যে গান দেশপ্রেমের আবেগে সমুজ্জ্বল এবং অবশ্যই রাম মোহন রায়ের লেখা বলে। জাফর উল্লাহ সাহেবকে ধন্যবাদ শুধু গানটির জন্য নয়, এর সাথে ব্যাকগ্রাঊন্ডের তথ্য দেয়ার জন্যও। ধন্যবাদ মুক্তমনাকেও। রাম মোহন রায় আমর নমস্য, তবে ব্রাহ্ম ধর্মের জন্য নয়, সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য।
amar mone hoy ekhon somoy aesheche ghoshona debar, mukto-mona sudhu nashtik der jonno aushtik der jonno noy. ekhane mukto mon bolte bujhano hoyche sudhu mukto vabe god ke oshikar kora.
নন্দিনী,
আমি গানের বিরোধিতা করছি না-সুফীগুরুদের গান ত আজ হলিউডে সফল মিউজিক ভিডীও-সৌন্দর্য্য আর সুর না থাকলে জীবনে থাকলটা কি? আমি একটু মজা করছিলাম আর কি–
জাফর ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রাজা রামমোহন রায়ের গানটি মুক্তমনায় শেয়ার করার জন্য। ব্রক্ষসঙ্গীতের সূচনাই হয়েছিল রাজা রামমোহন রায়ের হাতে। ১৮২৮ সালে রামমোহন আরো কয়েকজনের বেশ কিছু গান নিয়ে একটি ব্রক্ষসঙ্গীত সংকলনও প্রকাশ হয়েছিল। সেই সব গান যে কোথায় কোন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেল কে জানে?
বাংলার নবজাগরণের দিকপালদের মধ্যে অনেকেই গান রচণা করে গেছেন। যেমন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল, শিবনাথ শাস্ত্রী, অতুলপ্রসাদ সেন, রজণীকান্ত সেন, ডি, এল, রায়, উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী। এদের গান এখন আর কেউ মনে হয় না গায় বা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় সহজে।
আপনি যদি মাঝে মাঝে এগুলো নিয়ে লেখেন বা কিছু গান আপলোড করেন তাহলে খুবই ভাল হয়।
বিপ্লব, গান কে গান হিসেবেই না হয় দেখি ? 🙂
আর রাজা রামমোহন এর সময়টাকেও তো খেয়ালে রাখতে হবে…।
একি মুক্তমোনায় ঈশ্বর মহাত্ম্যের মুক্ত প্রচার! প্রবীর বাবু বোধ হয় বলেছিলেন মুর্তির ঈশ্বর ভাঙা সহজ, কিন্তু এই এবস্ট্রাক্ত মনোথেসিস্ট ঈশ্বর আরো মারাত্মক।
তবে রামমোহন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অনেক লড়াই করেছেন-মানুষ হিসাবে সংস্কার মুক্ত ছিলেন। আধুনিক শিক্ষার জন্যে তার অবদান সবার ওপরেই থাকবে। হিন্দু, খ্রিষ্ঠান এবং ইসলামের কুসংস্কারের বিরোধিতা করেছেন।
তবে সুফীধর্ম শিখে সেটাকে ব্রাহ্ম ধর্ম বলে চালিয়েছেন। আদতে ব্রাহ্ম এবং সুফীতে কোন পার্থক্য নেই। ব্রাহ্মদের অনেক রিফাইন্ড সুফী বলা যেতে পারে।