আমার প্রথম চাকুরাস্থলে আমার বিভাগের একজন প্রাক্তন কর্মীর ফেলে রাখা ফাইলপত্র ঘাটতে গিয়ে এই লেখাটি পাই। লেখাটিতে সামান্য সমপাদনা করা হয়েছে।
ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি
ঈশ্বর, তুমি দেখেছো
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে যখন আমি আমার আগমনী বার্তা ঘোষনা করি উপস্থিত সকলের মুখ কালো হয়ে যায়। আমার জন্মানোর আনন্দে আলোড়িত হয়না কেউ।বরং বাড়িতে যেন হালকা এক পশলা শোক নেমে আসে। আজান দেবে বলে যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তার আর আজান দেয়া হয়না। এক সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্থির হয়ে বসে থাকে সে। কারন আমি মেয়ে।
আদরে-অনাদরে, শাসনে-শোষনে একটু একটু করে বড় হই। কচি কচি হাতে একটু একটু করে ঘর কন্নার কাজ শিখতে থাকি। পড়ালেখার পাশাপাশি। ভাইয়েরা দুদ্দাড় ছুটে বেড়ায় কৈশোরের ডাকে। আমার পায়ে শিকল জড়ানো, আমি মেয়ে।
বান্ধবীদের বাসায় বেড়ানো নিষেধ, গল্পের বই পড়া নিষেধ, টেলিফোন ধরা নিষেধ, কলিং বেল বেজে উঠলে দরজা খোলা নিষেধ, ছাদে উঠা নিষেধ, বারান্দায় দাঁড়ানো নিষেধ, পিকনিকে যাওয়া নিষেধ, জোড়ে হেসে উঠা নিষেধ। বাবা-মায়ের ভয় এতসব শাসনের ভেতরেও কোন কু খপ্পরে পড়ে খারাপ হয়ে যাই কিনা।
শাসনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা শৈশবের দিনগুলি। স্কুলের গন্ডি তবুও পেড়িয়ে যেতে পেরেছি।কলেজের রুটিন একটা নিজের কাছে, একটা মায়ের কাছে। আসা যাওয়ার সময়ের হিসাব কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেন তিনি। ভীষ্ম দৃষ্টিতে খুটিয়ে দেখেন ভেতর-বাহির। আশ্বস্ত হন, কোন অশুভ শক্তির ছায়া পড়েনি দেখে। আমি মেয়ে।
বিবাহিতা বান্ধবীদের সাথে মেশা যাবেনা। তাদের চোখে-মুখে বিস্ময় আর জিজ্ঞাসা, আমি নিরুত্তর। দেয়ার মত কোন কৈফিয়ত আমার কাছে নেই। বিয়ে হয়ে গেছে, এই দোষে তারা দুষ্ট। তাদের সাথে আমার মেশা নিষেধ। মিশরেই যদি বিবাহিত জীবনের খুঁটিনাটি গোচরে চলে আসে, যদি নষ্ট হয়ে যাই। আমি মেয়ে।
মায়ের বিশ্বাসভাজন হয়ে থাকি। তারপরও মায়ের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এরই মাঝে কলেজের পর্বটাও উৎরে যাই। চান্স পেয়ে যাই ইউনিভার্সিটিতে। ক্যাম্পাসে ঢুকতে পা কাঁপে। কি অদ্ভুত শিহরণে রোমাঞ্চিত হই! পৃথিবীটাকে খু-ব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। জীবনে কত কিছু হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে! আমার চোখে স্বপ্ন ভর করে। বাবা-মা’র চোখ তীক্ষ্ণতর হয়। আমি মেয়ে।
ছেলেদের এড়িয়ে চলি। বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর সব লুকিয়ে চলি। এরই মধ্যে আমাকে নিয়ে কত জনে পদ্য লেখে। ভয় পাই, পদ্যগুলোকে মনে হয় বিষদাঁত। কত যে সমঝে চলি! সাদা কালো স্বপ্নগুলোকে একদম গোপনে রেখে দিই। সিদ্ধান্তটা বারে বারে আউরাতে থাকি-’স্বামী ছাড়া আর কারো হাতেই এ স্বপ্ন রঙ্গীন হতে দেবোনা’। আমি যে মেয়ে!
অবদমিত ইচ্ছেগুলো উকিঁঝুকিঁ মারে। ইচ্ছে করে চুল খুলে রিক্সায় হুড ফেলে কল্পনার রাজকুমারকে নিয়ে শহরময় ঘুরি। ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজি, দোতলা বাসের জানালার ধারে বসি, নদীতে নৌকা ভাসাই, মধুমিতায় টাইটানিক দেখি। ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম অথবা থাইস্যুপে ইচ্ছে করে সন্ধ্যেটা পার করি। চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা বাড়ি-কয়েকটি ঘর, গোছানো-পরিপাটি। খুব শান্তি-খুব শান্তির যেন মশৃন এক শীতল পাটি। এটা আমার ঘর-ভাবতেই ভালো লাগে। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পাই। ভাবনাদের লাগাম টেনে ধরি। আমি কোর ভুল করতে চাইনা। আমি শরীরে-মনে একনিষ্ঠ থাকতে চাই। যিনি স্বামী হবেন সেই একজনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই। আমি মেয়ে।
দিন যায়, মাস যায়। অভিভাবকদের তৎপরতায় একটা সময় সেজেগুঁজে নিজের খুঁতগুলো যথাসম্ভব ঢেকে ঘরভর্তি লোকজনের সামনে দাঁড়াই। তারা আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। আমার অহমবোধ রক্তাক্ত হয়। তাদের চাওয়া-পাওয়ার সাথে বনিবনা হয়না। কাজেই তারা চরে যায়। আমি সহ্য করি। অপমানে কাঁদি। দাদী সান্তনা দেয়। বলে, ধৈর্য্য ধর, মাটির মত হও। হ্যাঁ, আমাকে মাটির মত সর্বংসহা হতে হবে। আমি যে মেয়ে।
অবশেষে বিয়ের ফাঁড়া কাটে। অভিভাবকদের পছন্দে মালা দিতে হয় এক বয়সী পুরুষের গলায়। তার যৌতুকের চাহিদা নেই। দরকার একজন সুশিক্ষিতা, সুনিপুনা সংসারী মেয়ে। ভাবীরা ভরসা দেয়। ঠোট টিপে বলে, বয়স্ক পুরুষেরা বর হিসেবে ভালো হয়। তারা হয় বৌ পাগল। দেখবি, তোকে যত্নে রাখবে। দেখতে দেখতে বিয়ে হয়ে যায়। শরু হয় স্বপ্ন ভঙ্গ।
নতুন জীবন, নতুন মানুষজন। মানুষ-ঘর-দুয়ার, দরজা-জানালা, বাথরুম-টয়লেট, হাঁড়ি-পাতিল, দা-বটি-চুলা সব অপরিচিত। আমার পা কাটে, হাত পুড়ে, চোখ জ্বালা করে। চোখের সাথে সাথে বুক জ্বলে, ভাগ্য জ্বলে। জ্বলে পুড়ে খাক হয়। আমি অবাক হয়ে ভাবি-এ আমি কোথায় এসে পড়লাম। এরই স্বপ্ন এতদিন ধরে বুকভরে পুষে এসেছি! আমার সহপাঠী বান্ধবীরা কোথায় আর আমি কোথায়? এযে অশিক্ষা আর কুসংস্কারে ভরা একেবারেই অন্য এক জগত! এখানে বেশভূষা, কথাবার্তা, আচাা-আচরণ সবকিছুতেই একবিংশ শতাব্দীর বিবেচনায় চরম বৈপরীত্য। এতখানি অসামঞ্জস্য কিভাবে মেনে নেব?
সকাল নেই, দুপুর নেই, রাত নেই দরে দলে লোকজন আসে আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কেউ কথা বলেনা।
আমি মনে মনে প্রস্তুত হত থাকি এই টিনের ঘর, মাটির চুলা, টিউবওয়েল, আঠারোজন মানুষ ইত্যাদির সাথে এডজাস্ট করতে। হিংসে হয় স্বামীকে। একই বিয়ে দুজনের অথচ তাকে কেবল আমার সাথেই এডজাস্ট করতে হচ্ছে!
দেখলাম নতুন পরিবেশে খাপ খাইয় নেয়াটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। এরচে’ ভালো নিজের ভেতর একটা পরিবর্তন আনা। আমার ২৪ বৎসরের লালিত স্বপ্ন-সাধ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ব্যাক্তিত্বে দরকার আমুল পরিবর্তন। এযে একটা বিরাট কষ্টসাধ্য ব্যাপার অথচ এব্যাপারে কেউ কোনভাবেই আমাকে সাহায্য করছেনা। এমনকি আমার স্বামীও না। তাকে পাওয়াই যায়না। সেই ভোরে বের হয়ে যায়, আর ফেরে রাত করে। ক্লান্ত-শ্রান্ত একজন মানুষ এসব তার খেয়াল করার সুযোগ কোথায়?
বিয়ের পর স্বামী দুরের মানুষ হয়েই রইল। আমার স্বপ্নের সাথে তার ছিটেফোটাও মিল নেই। সে অফিসে যাবার সময় কিংবা অফিস থেকে ফিরে আমাকে খোঁজেনাঁ। আমার কাছে বিশেষ বকছু দাবী করেনা। সারাদিনে-রাতে যৌথ পরিবার আর অফিসের আলাপ ছাড়া কোন কিছুই বলেনা। প্রথমে ভাবতাম নতুন বলে সংকোচ বা লজ্জা তাই হয়তো। কিন্তু দিনের পর দিন চলে যায় কোন পরিবর্তন আসেনা।ামি প্রতিদিন তার লুঙ্গি, সাবান, তোয়ালে, হাতমুখ ধোয়ার পানি সবই হাতের কাছে রাখি যাতে তার কোন অসুবিধা না হয়। সংসারের কাজগুলো আগেভাগেই শেষ করি যাতে সে এলে তার সাথে গল্প করতে পারি বা বেড়াতে যেতে পারি। নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সুগন্ধি মেখে নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখি। কিন্তু আমার পুজা দেয়া হয়না। আমার নির্ঘুম রাত কাটে আর আমার স্বামী ঘুমে চুড়।
সপ্তাহে দু একদিন যদিও সঙ্গ দেয় তবু মনে হয় যেন দায়সারা গোছের। সেটুকু না দিলেও চলতো। ধরে নিতাম স্বামী-স্ত্রী হয়েও আমাদের মধ্যে ভাই-বোনের মত পবিত্র সম্পর্ক। আমি শরীরে-মনে নিদারুন অতৃপ্তি পুষে রাখি। তবে যে সবাই বলতো-স্বামী সোহাগী হব!
হে ঈশ্বর, সে কি এতটাই নির্বোধ যে আমার সংস্কৃতি, আমার বয়স-সাধ-আহ্লাদ কোন কিছুই বুঝবেনা?
ইচ্ছে হয় জীবন বদল করি।
আমার লাজ, আমার সজ্জা, আমার হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বিষন্নতা কোন কিছুই কি তাকে স্পর্শ করেনা? এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে একটিবারও সে বলল না আমার কোন কিছু তার ভালো লাগে কিনা। কোন দিন সে আমার আচরে মুখ মুছলোনা। কোনদিন সে শখ করে একটু মুখে তুলে খাইয়ে দিলোনা। ইচ্ছে করে আলিঙ্গনে বাঁধলোনা, বললোনা-তোমাকে ভালোবাসি।
মাঝে মাঝে ভাবি আমি কি তার জীবনে অবাঞ্ছিত? কিন্তু সেতো আমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করেছে।
আমার রোমান্টিক মনের সাথে আমার স্বামীর কোন কিছুরই মিল নেই। মানিয়ে চলার দায় কি কেবল আমার একার? আমি মেয়ে বলে?
বাবা-মায়ের কঠিন শাসনের মধ্যে ভালো মেয়ে হয়ে রবড়ে উঠা এই আমার এটাই কি প্রাপ্য? মনের অশান্তি লুকাতে আমি গল্প-উপন্যাস পড়ি। কিন্তু আমার স্বামী সেসব পছন্দ করেননা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী থাকা সত্বেও একই কারনে আমি চাকরি করতে পারছিনা। আমি শিক্ষিত বলে শশুরবাড়ীর সবাই আমার সাথে দুরত্ব রেখে চলে। আমি একাকীত্ব বোধ করি।
ওদেরকে আমার মতো করা সম্ভব নয়। তারচে’ ভালো আমি নিজেই ওদের মত হয়ে যাই, তা-ও পারছিনা। মাসে দুই মাসে একঘন্টার জন্যও আমার স্বামী আমাকে কোথাও বেড়াতে নেয়না। বাবার বাড়ি যেতে নিরুৎসাহিত করে। বিয়ের পর যেন আমার দ্বীপান্তর ঘটেছে।আমি নিঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্ন।
ঈশ্বর, এতসব গোপন কথাবাবর বাড়ির কাউকে বলা যায়না। শশু বাড়ির কাউকেও বলা যায়না। তোমাকে বলতে লজ্জা নেই। এসবই তোমারই দান। তুমি নির্ধারিত করে দিয়েছ বলেই না ঘটেছে।
ঈশ্বর, আমার সেই পুরণ না হওয়া সাদা-মাটা স্বপ্নগুলো কি এখন তোমার কাছে? ওদের সাথে আমার মাঝে-মধ্যে কল্পনায় দেখা হয়। নির্ঘুম রাতগুলোতে ওরা আমার কাছে আসে। ওরা কেমন মলিন বিবর্ন হয়ে গেছে! মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলোর দুচোখে দেখি জল। হায় স্বপ্নেরা, তোমাদের আর রঙ্গিন করা হলোনা। জীবনতো ফুরিয়ে গেল। আর কবে?
সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে এই ভয়ে আমি আমার বিবাহিত জীবনের গন্ডি থেকে বের হতেও পারছিনা। অথচ আমি মুক্তি চাই।আমি বাবার বাড়িতেও যেতে চাইনা, শশুর বাড়িতেও না। অন্য কোথাও অন্য কোনখানে আমাকে নিয়ে যাও ঈশ্বর। হে সর্বশক্তিমান, আমাকে এবার একটু দয়া কর।
ঈশ্বর, আমার একটি কন্যা সন্তানের খুব শখ। কিন্তু তার জীবনও যদি একই ছকে বাঁধা হয়! মেয়ে মাত্রেই জীবন-যাপনের ফর্মুলা যদি এক হয়! ভয় হয়। মেয়ে হয়ে জন্মে এক জীবনে বেঁচে থাকতে থাকতে হয়রান হয়ে গেছি। ঈশ্বর, এবার তোমার কোলে ঠাঁই দাও। না হলে মহাপাপ হবে জেনেও আমাকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হবে। তবে তার আগে কথা দাও, অন্ত একযুগ পৃথিবী থেকে স্ত্রী প্রজাতি থাকবেনা।প্রর্কতি আর পুরুষেরা বুঝবে স্ত্রী জাতির মর্ম। তারপর তুমি আবার নাহয় তাদের ফিরিয়ে এনো। হে ঈশ্বর দয়া করো। মাত্র একটি যুগের জন্য বিলোপ করো-ঈশ্বর দয়া করো।
ঈশ্বর চিঠিটি পাবেন। সুক্ষ্ণভাবে নিরীক্ষণ করষে বোঝা যেতো তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ।ঈশ্বর মনুষ্যজাতিকে নিয়ে হতাশায় আছেন।যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন মানুষ তার সে উদ্দেশ্য মোটেও পুরণ করছেনা। তিনি নরকের দ্বার রক্ষককে ডাকলেন এবং সেখারে আর একজনের বন্দোবস্ত করতে বললেন। যদিও আত্মহত্যা মহাপাপ।
আমার যা বলার ছিল মাহফুজ ভাই বলে দিয়েছেন। আমি নিজেকে মেয়েমানুষ নয় মানুষ ভাবতে ভালবাসি এবং ভাল মানুষ হবার প্রাণপণ চেষ্টা করি। এ জগতে কেউ কারো নয়। আমাকে উদ্ধার করতে কারো ঠেকা পড়েনি। খোলা পৃথিবীতে নিজের স্বাধীন অবস্থান ামাকেই তৈরি করে নিতে হবে।
গল্পটা খুব ভাল হয়েছে। যদি কিছু মনে না করেন, লেখাটা আরেকবার দেখে নিলে ভাল হয়। কিছু বানান ভুলের কারণে এত দারুন লেখাটি যথোপযুক্তভাবে ফুঁটে উঠতে পারছেনা। সেগুলো ঠিক করে দিলে খুব ভাল হবে। 🙂 আরো লেখা চাই আপনার কাছ থেকে। আপনার লেখার ধরণ খুব ভাল। :yes:
লেখাটা আমার ভালো লেগেছে। একেবারে মনের অন্তঃস্থল থেকে যেন উৎসরিত। এ পঁচা সমাজে নারীদের বিদ্রোহ করা ছাড়া অত্ম-উন্নয়নের কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
এ কোন ঈশ্বরের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে নারী মুক্তির জন্যে? পুরুষের সৃষ্টি ঈশ্বরই তো এ-রকম হাজার হাজার বাধার প্রাচীর তৈরি করে দিয়েছে শাস্ত্রের মধ্যে। শত-লক্ষ-কোটি আবেদন করলেও ঈশ্বর মুক্তি দেবে না নারীকে। কারণ ঈশ্বর পুরুষোত্তম। বাধা থেকে মুক্তি পেতে নারী যদি আত্মহননের পথ বেছেও নেয়, এর পরিণাম তো শেষতক নরক।
ঈশ্বরের উপর নির্ভর নয়, ঈশ্বরের প্রতি আবেদন নয়; দরকার নারীর ভেতরের সত্ত্বাকে জাগিয়ে বিদ্রোহ করা। জেগে উঠুন, হুঙ্কার ছাড়ুন আর বলুন- আমি মানুষ।
কাজলের লেখাটি আমার খুব ভাল লেগেছে। এটা বাংলাদেশের মেয়েদের নিত্য ঘটনা। তাই বলি ঈশ্বরের কোন শক্তি নেই, ঈশ্বর বোবা, ঈশ্বর অন্ধ, ঈশ্বর বধির, এই ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি লিখে কোন লাভ নেই, নিজেকে শক্ত করে জ্ঞান রূপ অসি দিয়ে অন্যায়কে হত্যা কারার মধ্য আনন্দ।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।লেখক’কে অনেক ধন্যবাদ,এমন সুন্দর লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
তবুও এই ঈশ্বরের কাছেই মানুষ খোলা চিঠি লেখে :-Y
এখন কিন্তু অবস্থা অনেক চেঞ্জ হয়েছে। বিশেষ করে সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে মেয়েদের অবস্থানে পরিবরতন এসেছে। একক পরিবার বাড়ছে, শাশুড়ি বৌ সম্পর্ক’এ অনেক ক্ষেত্রে মা-মেয়ের সম্পরকের মতো হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুর মতো। মেয়েদের চাকরির করবার অনুমুতি দেবার দিকেও বেশিরভাগ পরিবার নমনীয় হচ্ছে। পরিবর্তন আসছে…
কাজল,
বাংলাদেশের সাধারণ মেয়েদের জীবনের গতানুগতিক ঘটনারই প্রতিফলন আপনার প্রাক্তন কর্মীর ফেলে রাখা ফাইলপত্র ঘাটতে গিয়ে পাওয়া এই লেখাটি । এভাবেই বেড়ে উঠা, নৈমিত্তিক জীবন অতিবাহিত করা, চালচিত্র এরকমই পাবেন।
ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি না লিখে নারীদের নিজেকেই লিখতে হবে। বোধ জাগাতে হবে নিজের ভেতর।
লেখাটির গতি আছে। পড়তে ভাল লাগে। একটি বিষয়কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নেওয়ার সামর্থ্য টের পাওয়া গেল। অভিনন্দন কাজল। শুরুটা ফুটফুটে হল।
@কুলদা রায়, লেখাটি নিশ্চয় শুধু ভালোলাগা এবং লেখিকার যে লেখালেখি করার সামর্থ আছে সেটা দেখানোর জন্য লেখিকা লেখেননি !