[মানব বিবর্তন বিষয়ক একটি বইয়ের ফসিল অংশটা লেখার পরিকল্পনা রয়েছে। এই লেখাটির মাধ্যমেই তার সূচনা ঘটছে। শুরুটা একটু গল্পের মত করা হয়েছে। তবে এর পর থেকে একেবারে অবজেক্টিভ জীবাশ্ম- প্রত্ন-নৃ বিজ্ঞান আলোচনা শুরু হবে হয়ত…]
অন্যদের মত অতো ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারে না শানিদার ৩। বয়স তো তার কম হয়নি। নিয়ানডার্থালদের জন্য ৪০ মানে শেষ বয়স।[১] বার্ধক্যের পাশাপাশি হাঁটুর সন্ধিতে তীব্র ব্যথা তাকে প্রায় কাবু করে ফেলেছে।[২] অথচ জীবনের প্রতিটা দিন এখনও তার কাছে প্রকৃতির উপহার মনে হয়। পরিবার-পরিজনের সেবা শুশ্রুষা আর আত্মীয়-স্বজনের উষ্ণ সহানুভূতি থাকতে তার পক্ষে জীবনকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। তার উপর সম্প্রতি সে শানিদার গুহার প্রেমে পড়ে গেছে।
আজ ঘুম ভাঙার পর পায়ের ব্যথাটা একটু কম মনে হচ্ছে। এমনিতে লাঠিতে ভর না দিয়ে হাঁটতে তার কষ্ট হয়। কিন্তু আজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভালই হাঁটতে পারছে। অনেকদিন পর তাই শানিদার ৩ তার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার তাড়া অনুভব করে। একটা দাঁত-খিলান হাতে নিয়ে হেঁটে যায় জাব নদীর দিকে। আজ সে জাবের জলে পবিত্র হয়ে শানিদার গুহার সামনে যাবে, তারপর গুহামুখটির দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে জাব অধ্যুষিত শানিদার উপত্যকাকে অবাক চোখে দেখবে।[৩] আশ্রয় ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এই গুহাকে উপত্যকার সব নিয়ানডার্থালই সম্মান করে। কিন্তু শানিদার ৩ এর সাথে গুহাটির সম্পর্ক যেন আরও গভীর।
তার মনে হতে থাকে যেন কতকাল পরে সকালের তুলতুলে আলোয় জাব নদীর ঠাণ্ডা হাওয়ার সংস্পর্শে এসেছে, শেষ কবে এসেছিল মনে পড়ে না। মুখ না ধুয়েই অপলক নেত্রে চেয়ে থাকে শানিদার গুহার কৃষ্ণ বিবরসম মুখটির দিকে। জাব তীরে তো সৌন্দর্য্যের কমতি নেই কোন, চারদিকে সারি সারি পাহাড়, সবগুলো চূড়া শুভ্র তুষারে ছাওয়া।[৪] অথচ এখান থেকে কেবল সেই কৃষ্ণ বিবরই তাকে টানছে। বরফ শীতল জলে মুখ ধোয়ার পর কোত্থেকে এক ঝাপ্টা শীতল বাতাস তার অন্তর জুড়িয়ে দিয়ে যায়। গুহামুখটির সান্নিধ্যলাভের আকাঙ্ক্ষা তার আরও বেড়ে যায়। জাব নদীর যে পারে তাদের বাস গুহাটিও সেই পারেই, তবে একেবারে কাছে নয়।[৫] সুবিধার জন্য একটা লাঠি হাতে হাঁটা শুরু করে শানিদার ৩। এতো দূর হেঁটে গিয়ে উঁচুতে উঠতে তার একটু কষ্ট হবে হয়তো, কিন্তু প্রাপ্তির তুলনায় সে নস্যি।
গুহার সামনে এসে অবশ্য তার আশাভঙ্গ হয়। এতোক্ষণ সে পৃথিবী থেকে অনেক দূরের কোন জগতে বিচরণ করছিল, গুহার সামনের জটলাটা দেখে পৃথিবীতে ফিরে আসতে এক মুহূর্তও দেরি হয় না। কি নিয়ে মত বিনিময় করছে তারা সেটাও বুঝতে বাকি থাকে না। একটি সুন্দর সকালের করুণ সমাপ্তি ঘটে অদ্ভুত দশর্ন কিছু মানুষের কথা ভেবে। এই মানুষেরা তাদেরই আশেপাশে থাকে, গড়নে তাদের চেয়ে খানিকটা লম্বা ও চিকন-চাকন। প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় এই অদ্ভুত দশর্ন মানুষের থেকে পিছিয়ে পড়ছে নিয়ানডার্থাল মানুষেরা। কারণ সংখ্যায় তারা অনেক বেশি, শক্তিতে সামনা সামনি কোন নিয়ানডার্থালের সাথে হয়তো তারা পেরে উঠবে না, কিন্তু কৌশলে এগিয়ে গেছে।[৬] প্রকৃতির সাথেও কি সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে সেই মানুষেরা, শানিদার ৩ ব্যাপারটাকে প্রকৃতির পক্ষপাতিত্ব ভেবে ক্ষুণ্ণ হয়।
প্রকৃতির হাতছানি ভুলে সহ-নিয়ানডার্থালদের সাথে মত বিনিময়ে বসে শানিদার ৩ ও। আলোচনার মূল বিষয় থাকে খাদ্যের যোগান। ফলমূল খেয়ে কারও পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব না। শানিদার ৩ অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল যে বিরুদ্ধ দলের মানুষেদের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই যে, ফলমূলেও তাদের খুব একটা অরুচি নেই। কিন্তু নিরামিষ খেয়ে দেখেছে সে, একেবারে অখাদ্য।[৭] শিকারের অভাবে এই বুড়ো বয়সে তাকে মাঝেমধ্যে ফলমূল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে হয় ঠিকই, কিন্তু জীবন তখন সত্যিকার অর্থেই বিস্বাদ ঠেকে। আজকের শলাপরামর্শের ফলাফল- আরেকটি শিকার অভিযান। ছেলেদের খানিকটা আপত্তি সত্ত্বেও শানিদার ৩ এবার শিকারী দলে নিজের জায়গা করে নেয়। খুব বেশি আপত্তি করে না কেউ, কারণ সংখ্যায় তারা এতোই কম যে আর একজন মানুষকেও বড় অবলম্বন হিসেবে দেখতে বাধ্য হয়, যদিও সে ঠিকমতো হাঁটতেই পারে না।
শানিদার ৩ আবারও জীবন সংগ্রামে টিকে যাওয়ার আশায় বুক বাঁধে। নিজের বেঁচে যাওয়াটা মুখ্য নয় তার কাছে, তাদের এই ছোট্ট শিকারী-সংগ্রাহক দলটা অনেকদিন টিকে থাকুক- এটাই তার প্রত্যাশা। কেন জানি মনে হয় সে নিজে নিঃশেষ হয়ে গেলেও এই ছোট্ট দলটির মাঝে তার জীবনের সবটুকু মায়া টিকে থাকবে, এই চিরন্তন মায়ার মূল্য দিতে শিখেছে সে- কিছুটা হলেও। ভবিষ্যৎ নিয়ানডার্থালরা যে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে শিকার অভিযানে যাবে সেই পূর্বপুরুষদের মাঝে সেও থাকবে। তবে তার এই ইতিবাচকতায় খানিকটা বিষাদের আভা ছড়িয়ে দিয়ে যায় ঐ আকাশ শাসনকারী শকুনগুলো।[৮] নিশ্চল ডানায় ভর করে আকাশে চরে বেড়ানো শকুনের চেয়ে ভীতিকর যেন আর কিছু নেই। তাদের মত শকুনও যে হন্যে হয়ে শিকার খুঁজে বেড়ায় এই বোধ আসেনি শানিদার ৩ এর। আর যাই হোক সে ঐ মূর্তিমান পিশাচের খাদ্য হতে চায় না।
কিছুক্ষনের মধ্যেই অস্ত্র হাতে প্রস্তুত হয়ে যায় জনা দশেক নিয়ানডার্থালের ছোট্ট শিকারী-সংগ্রাহক দলটি। নিজের ছেলের হাত থেকে ভারী বর্ষাটি তুলে নেয় শানিদার ৩। এই অস্ত্র হাতে শক্তপোক্ত নিয়ানডার্থালদের সর্বশক্তিমান মনে হয়। এই শীতের মাঝেও ক্ষীপ্র হয়ে উঠতে পারে তারা, বর্ষা হাতে শিকারের কয়েক হাতের মধ্যে একবার যেতে পারলেই হল। বর্ষার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শিকারের আর্তনাদ নিয়ানডার্থাল মানবের অহংকারের প্রতীক হয়ে ওঠে, আর মৃতদেহটি হয়ে ওঠে তার বিজয়মাল্য।[৯]
ভারী অস্ত্র হাতে সবাই রওনা হয়, গন্তব্য খানিকটা ঘন অরণ্য। আজ তাদের হাতে শিকার হতে পারে কোন বুনো ঘোড়া বা বুনো শূকর (বরাহ)।[১০] লোকালয় ছেড়ে তারা এমন এক জায়গায় পৌঁছায় যেখান থেকে শানিদার গুহা দেখা যায় না, তবে আকাশে এখনও শকুন আর ঈগলের দেখা মেলে। একটা উঁচু টিলা থেকে দূরে উঁকি দিয়ে এক পাল বরাহ দেখতে পায় তারা। শানিদার ৩ এর মাথায় তখনই চিন্তাটা খেলে যায়, তাদের যদি এমন কোন অস্ত্র থাকতো যা অনেক দূরে নিক্ষেপ করা যায়! তাদের চেয়ে খানিকটা লম্বা আর চিকন-চাকন মানুষগুলোর এমন অস্ত্র আছে, দেখতে বর্ষার মত হলেও সে অস্ত্র অনেক হালকা যা সহজেই নিক্ষেপ করা যায়, যা দিয়ে দূর থেকেও বধ করে ফেলা যায় ছোটখাট শিকার।[১১] তারপরও নিরাশার কিছু নেই, কারণ ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত শিকার পদ্ধতিতে নিয়ানডার্থালরা খুব অভ্যস্ত। তাছাড়া কয়েক হাত দূর থেকে বর্ষা দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে বিশালকায় জন্তুকেও কুপোকাত করা যায়, সাথে নিজের বীরত্বটাও ঝালিয়ে নেয়া যায়।
বরাহকূলের গতিপ্রকৃতি আন্দাজ করে গাছগাছালি ও ঝোপঝাড়ের আড়ালে অবস্থান নেয় নিয়ানডার্থাল শিকারীরা। শিকারের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয় না, আশেপাশে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী শিকারীরও দেখা মেলে না। শানিদার ৩ প্রকৃতির সুবিচার দেখে মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে। নিজের পা খানিকটা ভাল হওয়া থেকে শুরু করে এখনকার এই অনুকূলতা- সবকিছু ভেবে প্রকৃতিকে ক্ষমা করে দেয়ার চিন্তা করতে থাকে সে। এরই মধ্যে শিকারের চূড়ান্ত মুহূর্ত এসে যায়। বুনো ঘোড়ার চেয়ে বরাহ শিকার অনেক সোজা হওয়ার কথা, কিন্তু পাল বেঁধে ছুটতে থাকলে সহজে বধ করা যায় না এদের। এবার তাদের ছোটার বেগও খুব বেশি ছিল না। খুব সহজেই চারটে বরাহ ধরা পড়ে তাদের হাতে। চার গ্রুপে ভাগ হয়ে আক্রমণ করেছিল তারা, একটা গ্রুপে শানিদার ৩ ও ছিল। বিশাল বর্ষাটি যখন বরাহের দেহ ভেদ করে যাচ্ছিল তখন যৌবনের সেই তেজ আরেকবার অনুভব করেছিল সে। আজকের দিনটা তার জন্য সত্যিই বড় অদ্ভুত। বহুদিন পর একটি মাত্র দিনে এতো অনুভূতির ভার সহ্য করতে পারাটাই আজব লাগে তার কাছে।
চারটের মধ্যে তিনটি বরাহকে শেষ পর্যন্ত বধ করতে সক্ষম হয় তারা। কিছুক্ষণ চলে বিজয়োল্লাস, তাদের উল্লাসের তোড়ে অদূরে মিলিয়ে যেতে থাকা বরাহ পালের গর্জন বড় অস্ফূট ঠেকে! উল্লাস শেষে আবার ধাতস্থ হয় সবাই। গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই এখনও বাকি আছে- এই বরাহ তিনটা নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। শুরু হয় তাদের ফিরতি যাত্রা। এবার শকুনগুলোর দিকে তাকিয়ে করুণার হাসি হাসে শানিদার ৩। শিকারে আসার আগে যে নির্লিপ্ত বিষাদ ছিল তার মাঝে সেটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে, পূর্বপুরুষদেরও বোধহয় ভুলে গেছে এই মুহূর্তে। তার এই জীবনমুখী অনুভূতিগুলো জানতেও পারল না যে তাদেরই অপেক্ষায় সামনের কোন এক বা একগুচ্ছ ঝোপের আড়ালে ওৎ পেতে আছে তৎকালীন আধুনিক মানুষ তথা আমাদের পূর্বপুরুষদের একটি দল।
ওৎ পেতে থাকার কোন পূর্ব পরিকল্পনা দৈহিকভাবে আধুনিক মানুষদের ছিল না। আসল ঘটনা হচ্ছে, নিয়ানডার্থালদের তাড়া খেয়ে হন্যে হয়ে ছুটে চলা বরাহের পালে সুবিধা মতো হামলে পড়তে পারেনি আমাদের পূর্বপুরুষেরা। এ নিয়ে তারা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ, কারণ এতো জন মিলে প্রক্ষেপণযোগ্য বর্ষা দিয়েও ৬ টার বেশি বরাহ শিকার করতে না পারাটা তাদের জন্য খুব দুঃখের বিষয়। এ নিয়ে তারা হাপিত্যেশ করছিল। যাদের জন্য তাদের স্বাভাবিক শিকার অভিযানে ছন্দপতন ঘটল তাদেরকে শায়েস্তা করার চিন্তা হয়ত কারো কারো মনে উঁকি দিচ্ছিল, তবে তাদেরকে খুঁজে বের করার কষ্টটা কেউই করতে চাচ্ছিল না। সে কষ্ট আর তাদের করতেও হবে না অবশ্য, শানিদার ৩ এর দল একটু পরে এই পথ দিয়েই যাবে, আনন্দের আতিশয্যে সদা-সতর্ক থাকার বিষয়টা মনেই থাকবে না তাদের, প্রকৃতির ভুলেই মুখোমুখি হয়ে যাবে মানুষের দুটো প্রজাতি- নিয়ানডার্থাল এবং হোমো স্যাপিয়েন্স।
এভাবেই আশ্চর্য রকম সূক্ষ্ণ অনুভূতি সম্পন্ন আমাদের এই নিয়ানডার্থাল চরিত্রের জীবন প্রদীপ নিভে আসার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। শানিদার ৩ ছাড়া তার দলের আর কাওকেই মৃত্যুর মত শূন্যতা এসে গ্রাস করে না। ভয়ানক আহত হওয়ার পর শানিদার ৩ এর জন্য বেঁচে থাকতে চাওয়াটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির কোন এক অখ্যাত সদস্যের হাত থেকে ছুটে আসা তীক্ষ্ণ বর্ষাটি তার বাম পাঁজরে বিঁধেছিল।[১২] বর্ষা সে টান দিয়ে বের করে এনেছে ঠিকই, কিন্তু ভেতরটা তার চুরমার হয়ে গেছে। শরীরের ভার বয়ে বেড়ানো আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব হয়ে গেছে, সতীর্থদের কাঁধে ভর করে সে ফিরে এসেছে তার প্রিয় ঘরটিতে।
তাকে কেন্দ্র করে জড়ো হয়ে গেছে অনেকে। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে সবকিছু কেমন অন্যরকম লাগছে- নীল নয়, সবকিছু যেন শূন্য, চারিদিকে কেবল শূন্যতা, যেখানে শূন্যতা নেই সেখানে শকুন। এই মানসিক শূন্যতা আর কোন নিয়ানডার্থাল মৃত্যুর সময় টের পেয়েছিল কিনা আমরা জানি না। অনেক নিয়ানডার্থাল হয়তো মৃত্যুর আগে তার পুরো জীবনটাকে স্মরণ করে যেতো, কিন্তু শানিদার ৩ কেবল আজকের দিনটাকে স্মরণ করতে চাচ্ছে। আজ ছিল তার অনুভূতির দিন, জীবনের সব তীব্র অনুভূতিগুলোকেই সে ছুঁয়ে গেছে আজ, মৃত্যুই যেহেতু সবচেয়ে তীব্র অনুভূতি সেহেতু সেটাও আজকের দিনে ঘটলে খারাপ হতো না।
এমন চিন্তা থেকেই সে আবার শানিদার গুহায় ফিরে যাওয়ার তীব্র তাড়া অনুভব করে। শ্বেত-শূন্যতায় কালো ছোপ হিসেবে জেগে থাকা শকুনগুলো তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে মনে হয়। সতীর্থরাই তাকে বয়ে নিয়ে যায় শানিদার গুহায়। জীবনের শেষ কয়েকটা দিন সে এখানেই কাটায়। তাদের শিকার করা বরাহ তিনটির মধ্যে দুটো তারা ঘরে আনতে পেরেছিল, সে দুটোও এক সময় শেষ হয়ে আসে। জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিনগুলোতে শানিদার ৩ এর খাদ্য হয় সেই নিরামিষ- ফলমূল আর লতাপাতা। সুখের কথা হচ্ছে এবার সেটা তার কাছে খুব বেশি বিস্বাদ লাগে না।
জীবনের শেষ দিনে কাকতাল বা পূর্বানুমান যেভাবেই হোক শানিদার ৩ একবার গুহার বাইরে এসেছিল, অন্যদের সহায়তায়। তার শরীরের সকল জৈবিক ক্রিয়া বন্ধ হয়েছিল মুক্ত বাতাসেই। পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন শূন্যতায় মিশে গিয়েছিল জাব নদীর দিকে তাকিয়েই। সতীর্থরা শানিদার ৩ কে সম্মানের সাথে শানিদার গুহার ভেতরেই সমাধিস্থ করেছিল। এমন শেষকৃত্য কজন নিয়ানডার্থালের ভাগ্যেই বা জোটে।[১৩] শকুনের খাদ্য হতে হয় নি তাকে, শকুনেরা এই প্যালিওলিথিক ট্র্যাজেডি কেবল দেখেই গেছে, তাতে ভাগ বসাতে পারেনি।
এখানেই আমাদের গল্পের পরিসমাপ্তি। গল্পের কাহিনীটা আজ থেকে ৫০,০০০ বছর আগের।[১৪] সে সময় সুদূর ইরাকের শানিদার গুহায় ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডি চিত্রায়নের জন্য অবিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে এবার আমরা সেই বর্ণনাকারীর হাত থেকে মুক্তি পাব। ফিরে আসব আজকের পৃথিবীতে। এই পৃথিবীতে টাইম মেশিন নেই, আর থাকলেও তাতে চড়ে অতীতে যাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। কিন্তু অতীত আবিষ্কারের একটি উপায় আমাদের আছে যা টাইম মেশিনের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এর নাম ফসিল, বাংলায় যাকে অনেক সময় জীবাশ্ম বলা হয়।
শানিদার ৩ এর মৃত্যুর পর ৫০,০০০ বছর গত হয়েছে। তার কোন স্বপ্নই পূরণ হয়নি- নিয়ানডার্থালরা টিকে থাকতে পারেনি, শানিদার গুহার শকুনেরা বিলুপ্ত হয়নি, দৈহিকভাবে আধুনিক মানুষের প্রতি প্রকৃতির পক্ষপাতিত্ব কমেনি বরং দিনকে দিন বেড়েছে। কিন্তু যে স্বপ্ন সে কোন দিন দেখেনি সেটাই বাস্তব করে ছেড়েছে প্রকৃতি, ফসিল হিসেবে তাকে ধরে রেখেছে এই দীর্ঘ সময় ধরে, আগলে রেখেছে নিজের বুকে। অবশেষে ১৯৬০ সালে তার সম্ভাব্য হত্যাকারীদের এক উত্তরসূরীই তাকে, আরও ঠিক করে বললে তার ফসিলকে, ধরার বুক থেকে উঠিয়ে এনেছে। রালফ সোলেকি-র নেতৃত্বে প্রত্নবিজ্ঞানীরা শানিদার গুহা থেকে উদ্ধার করেছেন ১০ জন নিয়ানডার্থালের ফসিল যাদের একজন আমাদের শানিদার ৩। শানিদার-রোয়ান্দুজ প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের সময়ই সবগুলো ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে।[১৫] যে অভিযান সফল না হলে আমাদের এতো সাধের আধা-সত্য আধা-কাল্পনিক গল্পটি ফাঁদা হতো না সেই অভিযানের কথাই বলব এবার।
তথ্যসূত্র:
১। DD Thompson and Erik Trinkaus, “Age determination of the Shanidar 3 Neanderthal”, Science 1 May 1981:
Vol. 212. no. 4494, pp. 575 – 577
২। Erik Trinkaus, “The Shanidar 3 Neandertal”, American Journal of Physical Anthropology, Volume 57, Issue 1, pp. 37 – 60
৩। Ralph S. Solecki, Rose L. Solecki, Anagnostis P. Agelarakis, “The Proto-Neolithic Cemetery in Shanidar Cave”, 2004
৪। দ্রষ্টব্য ৩
৫। Ralph S. Solecki, “Shanidar: The First Flower People”, Knopf, New York (1971)
৬। Kate Wong, “The Twilighting Neandertals”, August 2009, Scientific American
৭। “Shanidar III – A Neandertal who ate his veggies… Or at least chewed them”, 28 April, 2008, Anthropology.net
৮। Steven Mithen, “After the ice: a global human history, 20,000-5000 BC”, Chapter 44 – “Vultures of the Zagros”, 2003
৯। Ralph S. Solecki, Rose L. Solecki, “The Pointed Tools from the Mousterian Occupations of Shanidar Cave, Northern Iraq”, Chapter 4 of the book “The Paleolithic prehistory of the Zagros-Taurus” by Deborah Olszewski, Harold Lewis Dibble, 1993
১০।
১১। Steven E. Churchill, Robert G. Franciscusc, Hilary A. McKean-Perazaa, Julie A. Daniela, and Brittany R. Warrena, “Shanidar 3 Neandertal rib puncture wound and paleolithic weaponry”, May 2009
১২। E. Trinkaus, “Hard Times Among the Neanderthals”, Natural History, vol. 87, December 1978, p. 143
১৩। দ্রষ্টব্য ৩
১৪। Jane Bosveld, “Did We Mate With Neanderthals, or Did We Murder Them?”, November 2009, Discover Magazine
১৫। দ্রষ্টব্য ৩
[চলবে…]
লেখাটা খুবই ভাল হয়েছে। নিল সুবিনের “ইয়োর ইনার ফিশ” গ্রন্থটাও এরকম গল্প বলার স্টাইলে লিখিত, বইয়ের শিরোনাম না জানলে হয়ত ওটাকে কোন ভ্রমণকাহিনী মনে হত।
নিয়ানডারটাল আর মানুষের মধ্যে বলে কিছুটা অন্তঃর্প্রজনন ঘটেছিল, এই সুযোগে গল্পে কি কিছু রোমান্টিক মসলা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়?
@পৃথিবী, “এই সুযোগে গল্পে কি কিছু রোমান্টিক মসলা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়?” 🙂
@অভিজিত দাদা ।
আপনার ঘাড় থেকে বোঝা কমেনি। 🙂 আমরা আপনার লেখা পড়বার জন্য উন্মুখ ।
লেখক কে ধন্যাবাদ এমন লেখা দেবার জন্যে । 🙂
বাহ, শুরুটা চমতকার হয়েছে। গল্পচ্ছলে লেখাটা পড়তে ভালোই লেগেছে। মানব বিবর্তন নিয়ে বাংলায় পূর্ণাঙ্গ একটা বইএর শুরু এই লেখাটা – ভাবতেই ভালো লাগছে। আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি বাকীটার জন্য।
বর্শা হবে মনে হয়, বর্ষা নয়।
অসাধারণ!
আসলে এরকম লেখা পড়ার জন্যেই মুক্তমনায় আসা।
আমার আবার মাথায় সমস্যা আছে। কঠিন কথা বুইতে পারি না। এই যে আপনার লেখা কত সহজে বুয়েচি। এরকম গল্পের মাধ্যমে নানান জিনিস তুলে ধরলেই বোধহয় বিজ্ঞান আরো লোকপ্রিয় করে তোলা যায়।
আর, অনেকের-করা অভিযোগটা আবারো করলাম: গল্পে আপনার অনুপ্রবেশ ভাল লাগে নি।
ধন্যবাদ দিয়ে শিক্ষানবিশ-কে আর ছোট করতে চাই না। এমনিতেই বোধহয় আমার চাইতে বয়েসে ছোট হবেন। 😥
অ.ট.: বনফুলের এরকম একটা উপন্যাস আছে, আদি মানবদের নিয়ে, নামটা মনে নেই। চালান গাড়ি….
শিক্ষানবিস,
ভালো। বিজ্ঞান পড়লাম না গল্প পড়লাম তাই ভাবতেসি।
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান এরকম ধারায় বিবর্তনীয় সাহিত্য হলে কেমন হয়?
এরকম কিছু সত্যি আছে নাকি?
@বকলম, আছে ভাই আছে।literary darwinism বলে একে।সাহিত্য সমালোচনার একটা বিশেষ পদ্ধতি। যোগাযোগ উপন্যাসের ডারউইনিয় ব্যাখ্যা পড়েছিলাম মানবমন পত্রিকায়। আমি নিজেই বলে থাকি, রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী ও ফটিক চরিত্র টির ডারউইনীয় পরিণতি ঘটেছে, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারায় তাদের মৃত্যু তরান্বিত হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কেউ না মানলে নাই। 😀
@পথিক,
খাঁটি কথা বলেছেন। শুধু সাহিত্যে কেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি এখন ডারুইন এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। আমি দেখতে পাচ্ছি, লেখক হিসাবে আমার তো কিছু হলনা। এখনই যদি র্যান্ডম মিউটেশনের দ্বারা হঠাত করে আঙ্গুলের কিছু উন্নতি হয় তাহলে হয়ত লিখতে পারব। তা না হলে পরিবেশের সাথে খাপ না খাওয়ানোর ফলে আমার লেখক সত্তার ডারুইনীয় পরিনতি হবে।
আল্লা কেন যে ডারুইন কে দুনিয়াতে আনলেন। :-Y
@বকলম, ভাই ডারুইন ই তাইলে শেষ পয়গম্বর! 😀 😉
শিক্ষানবিস, লেখাগুলোতে কি কিছু ভালো ছবি দেওয়া যায়? তাহলে বই বের করার সময় আলাদা কষ্ট করতে হবে না আবার ব্লগে পড়তে এবং দেখতেও ভালো লাগবে। ছবি দেওয়ার সময়, ঠিকমত নাম আর কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে সেটার রেফারেন্স দিয়ে দিলে আরও ভালো হয়।
বুনো বরাহ ও বুনো আলু — দুটোই খুব সুস্বাদু। তাই কল্পগল্পটিও ভাল লাগলো। চলুক। :yes:
—
অ/ট: বাংলাদেশ: আশায় নতুন বসতি — লেখাটির একটি নতুন ও সংক্ষিপ্তরূপ কী ‘মুক্তমনা’য় দেওয়া যায়?
থ্যাংকস।
ঐটা দেয়া যায় কিনা কে জানে! আসলে কপিরাইট নিয়ে কি না কি ঝামেলা ছিল। আসলে পুরো লেখাটার একটা পিডিএফ করার ইচ্ছা আছে। সেটা হয়ে গেলে ই-বুক হিসেবে রেখে দেয়া যাবে।
@শিক্ষানবিস,
১৯৭১ এর এমন অমূল্য দলিলের ভাবানুবাদ নিয়ে মুক্তমনায় ই-বুক! জলদি পোস্টান!! :rotfl:
@পথিক, প্রথম বলেই দেখছি ক্যাচ দিলাম। আমি আসলে অন্যান্য মন্তব্যের সূত্র ধরেই বলতে চেয়েছি, লেখাটি উপন্যাস করতে আমার মতে কি করা প্রয়োজন তা।
শিক্ষানবিস এর বই বের করার প্ল্যান আরো এক বছর আগেই শুদ্ধস্বর করে রেখেছে।
@আহমেদুর রশীদ টুটুল,
আমি মজা করলাম মাত্র।
তবে মজা করে একটা দারুণ খবর পেয়ে গেলাম।স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে আরো কিছু ভাল বই উপহার দিক শুদ্ধস্বর এটাই আমার প্রত্যাশা।অভিদার বইটা বের করে প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছেন আপনি।
@আহমেদুর রশীদ টুটুল,
ইয়ে…স্যার, ওই বই বাজারে পাওয়া যাবে তো? 😕
@বিপ্লব রহমান, ইয়েস স্যার। ইহা একখানা সহি পাবলিকেশন জোকস।
বই নিশ্চই হবে টুটুল ভাই, আমি আশাবাদী, যদিও কাজের ব্যাপারে একটু অলস। অলসতা টা যে কবে কাটবে!!!
গল্পের আইডিয়াটা অসাধারন।
ধন্যবাদ। আইডিয়ার বেশি কিছু অবশ্য আমাকে বানাতে হয় নি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকেই আইডিয়া বেরিয়ে এসেছে। পরের পর্বে ব্যাপারটা আরো বোঝা যাবে।
ভালো লাগলো। তবে উপন্যাসের জন্য ভাষা ও বর্ণনা আরো ঝরঝরে হওয়া চাই। চলুক।
@আহমেদুর রশীদ টুটুল, মুক্তমনায় স্বাগতম :rose2: ।নিয়মিত আসবেন এবং মন্তব্য করবেন প্লিজ।আপনি মানব বিবর্তনের লেখাকে উপন্যাস কইলেন!এইটা শুইনা শিক্ষানবিস ভাই বনবাসে যাইতে পারে! :laugh: 😀
শিক্ষানবিস ভাই, শুদ্ধস্বর থেইকা আগামী বই মেলায় আপনার উপন্যাস বের হওয়া পাকা। 🙂 লেখায় বিপ্লব দিলাম।অসাধারণ লিখেছেন।আপনাকে বাংলার ডকিন্স বলতে ইচ্ছা করছে।তবে রেফারেন্স দিলে এবং আপনার কমেন্ট গুলো আলাদা ভাবে দিলে সবাই আরো বেশি উপকৃত হবে মনে হয়।
@পথিক,
:lotpot:
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ টুটুল ভাই। হ্যা, ভবিষ্যতে আরো ঝরঝরে করার ইচ্ছা থাকবে, বিষয়টা যেহেতু একটু নিরস সেহেতু ভাষার রসই কেবল সেটাকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে।
@শিক্ষানবিস, ঠিক বলেছেন।শুধু নানা রকম ম্যানের নাম আর তাদের হাড্ডিগুড্ডির বর্ণনা দিলে সবাই বই বন্ধ কইরা মাথায় পানি দিতে যাইব! সুতরাং গল্পে গল্পে মানুষকে ধরে রাখতে হবে।একটা মজার(শেষটা দুঃখের) ঘটনা বলি,আমার এক দূর সম্পর্কের পিচ্চি কাজিন(টুতে পড়ে তখন) বাসায় বেড়াতে এসেছিল।ক্যাম্পাস থেকে আমি বাসায় আসার পর দেখি সে মহা উতসাহে ”বিবর্তনের পথ ধরে” পড়তেছে। আমি বললাম কিরে কি বুঝলি?সে বলে বইটা আমারে দিয়ে দাও এইখানে এবু-গোগোর গল্প আছে!আমি তারে কিছু তেই বুঝাতে পারি না যে পুরা বইটা পড়ে বোঝার বয়স তার হয় নাই।তবু সে ধৈর্য ধরে ত্রিশ পাতার মত পড়েছিল এবং ডারঊইন কে,তার বাড়ী কই,কেন লোকে তাকে দেখতে পারে না,জিরাফের ছবি দুইটা দুই রকম কেন এই সব নানা প্রশ্ন করছিল আমাকে।সাধ্যমত বললাম। তার মধ্যে যে জানার আগ্রহ তা আমাকে সত্যি অবাক করেছিল। যাই হোক পরে সে প্রশ্নগুলো তার বাবা কেও করিয়াছিল (কঠিন তাব্লীগী লোক!)। তার পর ব্যাপারটা অনেক দূর গড়াল। সুতরাং পাঠক ধরে রাখতে হলে গল্পের ছলে এবং যথাসম্ভব কম অ্যানাটমিক্যাল টার্ম ব্যবহার করে বইটা লিখতে হবে।আপনি গল্পের ফরম্যাটে লিখতে থাকায় আমার দারুণ ভাল লাগল।
এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম। মনে হলো যেন রাহুল সাংকৃত্যায়নের “ভোলগা থেকে গঙ্গা’ পড়ছি। অসাধারণ। মাঝে মাঝে একটু ছন্দপতন ঘটেছে, বিষয়টা খেয়াল করবেন। অনেক ধন্যবাদ।
আয় হায়, কিসের সাথে তুলনা দিলেন? লজ্জা পাচ্ছি রীতিমত…
ছন্দপতনের বিষয়টা আরো দেখব। উপরে অভিদার মন্তব্যের জবাবে বলছি দেখেন: এটা যেহেতু মূলত ব্লগের উদ্দেশ্যে না সেহেতু ভবিষ্যতে এই লেখায় অনেক পরিবর্তন আসতে পারে, পরিবর্তনটা যেন দিন দিন ভালর দিকে হয় সেটাই কাম্য আর কি! আরো স্পেসিফিক পরামর্শ দিয়েন পারলে… অপেক্ষায় থাকলাম, এমনিতে আমি নিজে তো রিভিশন দিচ্ছিই।
মানব বিবর্তন নিয়ে বই লেখা হবে ভেবে প্রথম যেই কথাটা ভাবছিলাম সেটা হলো, এটা এমন একটা বই হবে যেটা আমি জীবনেও পড়বো না। পরীক্ষায় আসবে- এই ভয় ছাড়া অন্য কোনও কারণে এই হাড্ডিগুড্ডি আলোচনা কারও পড়ার কথা না 😀
এই লেখাটাও পড়তাম কীনা সন্দেহ! একটু চোখ বুলানো শুরু করছি এবং আটকিয়ে গেলাম। অসাধারণ স্টার্টিং, মনে হচ্ছে পুরা বইটাই তেমন হবে। এবং সেইক্ষেত্রে তোর পরিশ্রম পুরাপুরি সফল। তবে মাঝে দুই লাইন দিয়ে নিজের গল্পে নিজে ইন্টারাপ্ট করার আইডিয়াটা খুবই ব্যাড মুভ ছিল। শীগ্রির বাদ দে।
লেখা চলুক।
@রায়হান ভাইজান,
আফনের লাফালাফি দেখে যে কি বলবো বুঝতাসিনা। যে কিনা ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ র মত বই পড়ে বিভিন্ন জায়গায় কোট করে আর বিবর্তন নিয়ে লম্বা লম্বা লিখে ফেলে সে নাকি আবার মানুষের বিবর্তনের বই পড়বে না! কাজে আর কথায় কোন মিল নাই ছেলেটার 🙂
@বন্যা আহমেদ, আপু কেমন আছেন? রায়হান ভাই এর সম্মান রক্ষা করুন প্লিজ! নইলে উনার বিবর্তনবাদী লেখার গ্রহণযোগ্যতা আইলার মুখে পড়বে! :laugh: :rotfl:
আমি আপনার সাথে একমত বন্যাপা। রায়হান সারাদিন নিউ এথিজম, বিবর্তন আর কসমোলজি র কঠিন কঠিন বই পড়ে, সেগুলা থেকে আবার দানবাকৃতির লেখা লেখে, দিনশেষে বলে মানব বিবর্তন পর্তারিনা। হইল কিছু এইটা?
প্রিয় বন্যা আহমেদ আপা, শিক্ষানবিস ও পথিক ভাই, আপনাদের কথা শুনে আর কী বলবো! নিজেকে অনেক বড়লোক মনে হচ্ছে 😀
এটা কি মানব বিবর্তনের সিরিজের প্রথম লেখা? লেখাটা পড়ে কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে পারিনি যে এটা বিজ্ঞানের লেখা! তারপর মনে হল কোথায় যেন দেখেছিলাম যে আপনি মানব বিবর্তনের উপর লেখা শুরু করবেন।
অভিজিতের সাথে একমত যে আপনার ব্যক্তিগত উক্তিগুলো উঠিয়ে দিলে পড়তে আরও ভালো লাগবে।
ঐ ব্যক্তিগত কথাগুলো উঠিয়ে দিয়েছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাহ, নিয়ান্ডার্থাল নিয়ে সুন্দর গল্প লিখেছ। আমার ঘার থেকে বোঝা কমলো। নিয়ান্ডার্থাল আর হোমসেপিয়েন্সদের যুদ্ধের ক্লাইমেক্সটা ভাল লেগেছে, তবে ওটাকে আরেকটু নাটকীয় করা যেত। বিশেষতঃ নিয়ান্ডার্থালদের অস্ত্রগুলো যে ভারী ভারী, আর হোমোস্যাপিয়েন্সদেরগুলো যে হালকা – এবং সেজন্য যে তারা বেশি সুবিধা পেয়েছিলো শিকারের সময়, এটা আরেকটু পরিস্কার করবে নাকি? আর তাদের একটা অংশ যে একেবারে নিয়ান্ডার্থালদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলত (Ramirez Rozziর থিওরীর কথা বলতেছি), সেটা আনবে না ? 🙂
একটা ব্যাপার – গল্পের মাঝে তোমার নিজের ব্যাখ্যাগুলো একটু খাপছারা লেগেছে (এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত অভিমত)। যেমন –
আশ্রয় ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এই গুহাকে উপত্যকার সব নিয়ানডার্টালই সম্মান করে। কিন্তু শানিদার ৩ এর সাথে গুহাটির সম্পর্ক অন্যরকম।
এই লাইনটার পরে তোমার নিজের ব্যাখ্যা – আমি একটু আগেই এটাকে প্রেম বলে চালিয়ে দিয়েছি, কিন্তু বিষয়টা মোটেই এত হালকা নয়।
কিংবা পরে –
তাদের অপেক্ষায় ওৎ পেতে আছে বলা ঠিক হয়নি- কিন্তু অনাবশ্যক ক্লাইমেক্সের লোভটা সামলাতে পারছিলাম না।
এ ধরণের লাইনগুলো মূল গল্পে না থেকে ফুটনোটে যেতে পারে। চিন্তা করে দেইখো।
আপনার মন্তব্য পছন্দ হইছে অভিদা। ঐ লাইনগুলো তাই উঠিয়ে দিলাম। ইচ্ছা করেই দিয়েছিলাম। আসলে একেবারে গল্পের মত করে ফেলতে ভয় পাচ্ছিলাম বলেই নিজে ইন্টারাপ্ট করেছিলাম একটু, গল্পের স্রোতে একটু বাঁধা দেয়ার জন্য। কাজে দেয় নাই। উঠিয়ে দিলাম। এমনিতেই ভাল লাগছে।
আর এই লেখায় ভবিষ্যতে আরো অনেক পরিবর্তন আসবে। আরও পরামর্শের অপেক্ষায় থাকলাম।
ক্যানিবালিজম আনতে পারলাম না কারণ, এই ঘটনায় যেহেতু কবর দেয়ার বিষয় আছে তাই শানিদার ৩ যে মানুষের হাতে ধরা পড়েনি এটা নিশ্চিত, তাই ক্যানিবালিজম আনা গেল না। তবে সেসব পরে বর্ণনা আকারে থাকবে। এর পরে শানিদার গুহার কাহিনী এবং তারও পরে নিয়নাডার্টালদের সব কাহিনী থাকবে।
অস্ত্রের ব্যাপারটা এখনও আগের মতই রেখেছি। আরেকটু দেখে তারপর ঠিক করব। সময় তো আছেই। ভবিষ্যতে আরও অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। এটা যেহেতু মূলত ব্লগের জন্য লেখা না সেহেতু যেকোন ধরণের পরিবর্তনের অবকাশ আছে, ব্লগটা মুখ্য না। ব্লগের মাধ্যমে ইন্টারেক্টিভ হওয়াই উদ্দেশ্য।
শিক্ষানবিস, তুমি যে বিবর্তন নিয়ে এরকম একটা মোটা দাগের গল্প ফেঁদে বসতে পারো তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। তুমি খামাখাই এই সিরিয়াস বিজ্ঞানের লেখা লিখে সময় নষ্ট করছো কেন সেটাই এখন প্রশ্ন। তোমার উচিত উপন্যাস লেখায় হাত দেওয়া ……… 🙂
কিছু ডিস্ক্লেইমার দিতে হবে, রীতিমত সাইন্স ফিকশানের মত শোনাচ্ছে! আশা করছি লেখার শেষে তা আসবে।
আচ্ছা, ‘নিয়ানডার্টাল’ না বলে ‘নিয়ানডার্থাল’ বলা উচিত না? তোমার কি মনে হয়?
রাফিদা 😀 আপা,
নিয়ানডার্টাল সঠিক উচ্চারণ হবার কথা। মূল জার্মান উচ্চারণ এভাবেই। আমি ঠিক সিউর না অবশ্য, মুহাম্মদ ভালো বলতে পারবে। তবে জম্মনদেশী হিমু ভাইও দেখলাম নিয়ানডার্টাল উচ্চারণ করে।
@রায়হান ভাইয়া, বাংলায় এখন পর্যন্ত সব বইএ আমি ‘নিয়ান্ডারথাল’ দেখেছি, সংসদ পরিভাষায়ও নিয়ান্ডারথালই দেখলাম। হ্যা, জার্মান এ ‘থ’ বলে কিছু নেই, তাই অরিজিনাল কথাটা ‘নিয়ানডার্টাল’ ছিল। কিন্তু ইংলিশ এ ব্যাপকভাবে ‘নিয়ান্ডারথাল’ ব্যবহৃত হয়, আখতারুজ্জামানও মনে হয় তার বইগুলোতে ‘নিয়ান্ডারথাল’ লিখেছেন। এই সিদ্ধান্তটা তাই এখন লেখকের উপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
গুগল করে টক অরিজিন থেকে একটা লেখা পাইছি:
– http://www.talkorigins.org/faqs/homs/spelling.html
আল্টিমেটলি ভয়ানক কনফিউজড। আরেকটা কাহিনী বন্যাপা, সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান অগাস্ট ২০০৯ সংখ্যা বানান পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেছে। নাম দিয়েছে Neandertal.. h উঠিয়ে দিয়েছে। অবশ্য আমি এই লেখায় আবার সব পরিবর্তন করে নিয়ানডার্থাল করে দিয়েছি। এভাবেই চলুক আপাতত।
জার্মান, আমেরিকান উচ্চারণ কেমন হয় জানিনা, তবে ইংল্যান্ডে
‘নিয়ানডার্থাল’ বলা হয়। আসলে এখানের উচ্চারণ শুনলে মনে হয় শব্দটিতে (R বা রেফ) উহ্য, (ড) এবং (থ) আছে কিন্তু এদের ডানে (আকার া ) বাদ দিয়ে
‘নিয়ানডথল’