ঈশ্বর

বহুকাল ধরে বহু ঈশ্বরের জন্ম দেখেছি আমি
মানুষের গাঢ় বিচ্ছিন্নতায়
বহু ঈশ্বরের মৃত্যুও দেখেছি সমানে

আমি এখন সূর্যের ভাষা, চাঁদের ভাষা
রাতের সমস্ত নক্ষত্রের ভাষা বুঝতে পারি।
সময় সামান্য বলে আবদারের অসমাপ্ত থলি নিয়ে
আমার অতীত-বর্তমান নিয়ে যখন রোমের রাস্তায় হাঁটি
রাজার চেয়ে সম্মানে বড়, আর
খেটে খাওয়া শ্রমিক, কৃষকের চেয়ে ছোট মনে হয়
আলো ও অন্ধকারে ঘুমন্ত ঈশ্বরকে

কে ছিল ঈশ্বর? ছিল কি কেউ?
নিজেকে কষ্ট দেওয়ার আগে
নিজেকে নষ্ট করার আগে বোঝেনি মানুষ।
শ্মশানের দীর্ঘ শূন্যতায় শুয়ে
কবরের দীর্ঘ অপেক্ষায় শুয়ে
এখন হাঁপিয়ে ওঠা যোগ-বিয়োগগুলো বোঝে
আমার জন্মের পরে যেমন এসেছিল
আমার মৃত্যুর পরে তেমনই নিশ্চিহ্ন ঈশ্বর।

*
*
*

আমি মরুভূমির মেয়ে

বয়স ছয়। মুখে গোলাপি আভা, গায়ে পাকা গমের মতো রঙ,
রোদ্দুর-পোড়া চামড়ায় চিকচিক করে বালির ঘ্রাণ।
সেই বয়সে যেমন হয়, ঠিক তেমনই আর কি!
জ্বলন্ত জিভের দিকে চেয়ে থাকে আমার মেয়েবেলা।
হাতে একের পর এক খেলনা নিয়ে মেতে উঠি, আর
একের পর এক খেলার অভাব এসে হাজির হয় উঠোনে।

খেলতে খেলতে আমার মেয়েবেলার শরীরে জমে ঘাম।
আগের রাতে সেই ঘাম-শরীর স্বপ্নে দেখেছিল বাবার বন্ধু।
সে এক আশ্চর্য স্বপ্ন!
মরুভূমির এক মহান ঈশ্বর আদেশ দিয়েছেন বিয়ের।
কারোর কিছু বলার ছিল না, কারোর কিছু করার ছিল না!
তাই স্বপ্নের কথায় বাবার বন্ধুর সঙ্গে বিয়ে হল,
বুকে তার একাধিক বউ, একাধিক যৌনদাসী;
সম্ভ্রান্ত অতিথিরা এটা সেটা বোঝায়, আর হাতের মুঠোয়
আমার গৃহপালিত ইচ্ছেগুলো চোখের সামনে ভাঙতে থাকে।

এইভাবে দিন ঘোরে, মাস ঘোরে, মৃত্যুময় বছর ঘোরে,
এইভাবে মনের ধ্বংসস্তূপে তিনটে বসন্ত ঘুরে যায়।
অভ্যাসবশত আমার অনিচ্ছাকে অসম্মান করে
টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় গোপন বিছানায়,
ন’বছরের বালিকা শরীরে তখন পঞ্চাশ পেরোনো যুবক।
ঈশ্বর দেখলেন, আকাশে উপভোগ করলেন যন্ত্রণা!
সেই মুহূর্তে নিজেকে হাঙর মাছের খাদ্য মনে হল,
বড় বেশি অচল মনে হল আমার। তারপর থেকে
যে রাস্তায় সকলে হাঁটে, ফুল ফুটলে সে রাস্তায় হাঁটিনি কখনো।