প্রেক্ষাপট: বাদুরিয়ার দাঙ্গা
(১) বাঙালীর ধর্ম বনাম হিন্দু-মুসলমান
********************************
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করুন-ইত্যাদি উপাদেয় উপদেশ ভাল-কিন্ত কথাটির মধ্যেই রয়ে গেছে-স্ববিরোধিতার বীজ। পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায় থাকতে পারে-এটারই যদি বৈধতা থাকে, সাম্প্রদায়িক বৈরিতাও বৈধতা পায়। কারন প্রথম প্রশ্নই উঠবে, বাঙালীদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান দুটো আলাদা সম্প্রদায় কেন? এদের খাওয়া দাওয়া ভাষা কবি নগর শহর-সব এক। তাহলে বাঙালীদের হিন্দু মুসলমানে ভাগ করাটা বৈধ হয় কি যুক্তিতে?
যুক্তি খুব সরল। অধিকাংশ বাঙালী, তার বাঙালী পরিচিতির চেয়েও, তার নিজেদের ধর্মীয় পরিচিতিতে বেশী গুরুত্ব দেয়। অধিকাংশ বাঙালীর নিজের অস্তিত্বে যতনা বাঙালীয়ানা, তার থেকেও বেশী তারা নিজেদের মুসলমান বা হিন্দু ভাবে। বাঙালীর যে নিজস্ব আধ্যাত্মিক চিন্তা আছে- যা সহজিয়া, আউল বাউল হয়ে লালন রবীন্দ্রনাথে পূর্নতা পেয়েছে -সেই মাটির ধর্ম সম্মন্ধেই অধিকাংশ বাঙালী বিস্মৃত।
বাঙালীর শুধু ভাষা না-তার নিজস্ব ধর্ম আছে-যা হিন্দুত্ব বা ইসলামের থেকে আলাদা-এটাইত অধিকাংশ বাঙালী জানে না!!
যে বাঙালীর রবীন্দ্রনাথ লালন আছে- সে কেন আরব সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদে ( ইসলাম ) বুঁদ হয়ে থাকে? বা ইসলামের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য কেনই বা তাকে উত্তর ভারতের গোবলয়ের গোচনা সেবন করতে হয়?
আমরা রবীন্দ্রনজরুল বলে অনেক লম্ফ ঝম্ফ দিই বটে-কিন্ত বাস্তবে যখন দেখা যায় এক দুষ্টু বালকের সামান্য ফেসবুক পোষ্টের জন্য বাদুরিয়ার মুসলমানরা দম দেওয়া কলের পুতুলের মতন দাঙ্গা করতে পঙ্গপালের মতন দোকান পাট বাড়ি ঘরদোর ধ্বংস করছে-তখন এটা পরিস্কার, রবীন্দ্রনাথ , নজরুল বা এমন কি লালন –শুধুই শিক্ষিত বাঙালীর ড্রইংরুমে। বাঙালী এলিট লিব্যারাল এবং সাধারন মানুষ-দুই ভিন্ন বাংলার বাসিন্দা।
দেগঙ্গা থেকে বাদুরিয়া-বাংলার যে বলকানাইজেশন চলছে, তা ঠেকাতে মমতা ব্যার্নার্জির সামনে একটাই পথ। বাঙালী সংস্কৃতি দিয়েই হিন্দু মুসলমান বলে যে পৃথক আইডেন্টিটি তৈরী করা হয়েছে, সেটাকে আগে ফিকে করতে হবে। উনি সেটা করেন নি। মুসলমান ভোট ব্যঙ্কে ধরে রাখার জন্য, বাঙালী মুসলমানকে মুসলমান করে রেখেছে সব পার্টিই- কংগ্রেস, সিপিএম, তৃনমূল , বিজেপি।
শরৎচন্দ্রের সেই বাঙালী বনাম মুসলমানের ফুটবল খেলার মতন আজো সমান কনফিউশন-এরা বাঙালী না মুসলমান!! লালন, নজরুল-কেউ সেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ঘোচাতে পারেন নি। কারন সরকারি টাকায় মাদ্রাসা, আলেম, হুজুরদের পোষা হচ্ছে-লালন সাঁইকে পৌছে দেওয়া হচ্ছে না। আলেম হুজুররা নিজেদের ধর্ম ব্যবসা টেকাতে-একজন মুসলমানের মুসলমান পরিচিতিই পোক্ত করবে-ফলে বাদুরিয়াতে যখন এই সব ধর্মোন্মাদরা পঙ্গপালের মতন লাঠি নিয়ে তাড়া করে- সেটা প্রশাসনের নীতির ভুল। কারন আলেমদের টাকা না দিয়ে যদি গ্রামে গ্রামে লালন সাই এর শিষ্যদের, বাউল কালচার ছড়িয়ে দেওয়া যেত- তাহলে বাংলা মুখরিত হত, বাঙালীর চিন্তনে!
‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান
জাতি গোত্র নাহি রবে।।
সরকার থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। ফলে মুসলমানকে আরো বেশী মুসলমান বানানো হয়েছে-আর তার প্রতিক্রিয়াতে হিন্দুরা আরো বেশী হিন্দু হচ্ছে।
মধ্যে খান থেকে বাঙালীদের স্পেসটা আরো আরো অনেক ছোট হচ্ছে। অথচ এরা নাকি বাংলার মসনদে।
যে জাতি নিজের সংস্কৃতি, নিজের ঐতিহ্যশালী লোকায়িত সহজিয়া ধর্মকে চেনে না-তাদের মাটির দখল আরব আর উত্তর ভারতের দালালদের দখলে যাবে-সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্ত এখনো সময় আছে। সংস্কৃতি প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী-গ্রামে গ্রামে বাংলার সহজিয়া ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিন। ছড়িয়ে দিন রবীন্দ্রনাথ নজরুলের জীবন দর্শন। যাতে সবাই নিজেদের বাঙালী ভাবতে শেখে আগে। তাদের মুসলমান বা হিন্দু পরিচিতি যেন গৌন হয়। তার বদলে উনি যদি দুধ কলা দিয়ে “ইসলামিক পরিচিতির” বিষ ছড়ানো কালসাপদের পোষেন মাসোহারা দিয়ে, তার ফল হবে বাউরিয়া-এবং সম্ভবত উনিও ক্ষমতা হারাবেন।
কেউ হিন্দু মুসলমান হয়ে জণ্মায় না। রাজনীতি, রাষ্ট্র, সমাজ তাকে হিন্দু মুসলমান বানায়। আমার বক্তব্য একটাই- সরকারি খরচে কেন তাহলে তাকে বাঙালী বানানোর চেষ্টা হচ্ছে না ?
(২) ধর্ম একটি ব্যক্তিগত যাত্রা- রিলিজিওন ইজ আ পারসোনাল জার্নি:
ধন্যবাদ আনিস খানকে। কালকেই লিখেছিলাম বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে জল ঢালতে বাঙালী পরিচয় বা বাঙালী আইডেন্টিটি সামনে আনা জরুরী। এটা দেখে ভাল লাগল, তার মতন একজন শিল্পদ্যোগী, বাঙালী আইডেন্টিটি সামনে আনার দ্বায়িত্ব নিজের পরিসরে পালন করছেন। ঘরে বাইরের নিখিলেশের কথা মনে এল।
হিন্দু বা মুসলমান কোন পরিচয় হতে পারে না। প্রাচীন ভারত, গ্রীস, রোম-কোথাও ধর্মীয় পরিচিতি বলে কিছু ছিল না। মানুষের ধর্মাচরন ছিল, আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা ছিল। সবটাই ব্যক্তিগত।
মুসলমানরা যখন ভারতে প্রথম আসে-তারা ভারতীয়দের জিজ্ঞাসা করত তোমাদের ধর্ম কি? আসলেই ত কোন ধর্ম ছিল না ভারতে-প্রত্যেকের নিজস্ব উপাসনা, নিজের মতন করে সত্যকে খোঁজা। এটাই ভারতীয় দর্শনের শাস্বত বানী। উত্তর না পেয়ে, মুসলমানরা বললো-ওকে-তাহলে এটা হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। কারন পার্শী শব্দে হিন্দু মানে সিন্দুনদের ওপারে যারা থাকে। হিন্দু শব্দটা কোন হিন্দু গ্রন্থে নেই-কারন ওই শব্দটা মুসলমানদের দান। মুসলমানদের দেওয়া সেই হিন্দু আইডেন্টিটি নিয়ে-আজ তাদের সাথেই লড়াই!
রোম সম্রাট কনস্টানটাইন প্রথম খ্রীষ্টান ধর্মের জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতিকে কাজে লাগান উত্তরের উপজাতিগুলোকে রোমান সাম্রাজ্যের বশবর্তী করতে। খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদের সেই মডেলটাই আরো উন্নতাকারে নিয়ে আসে সপ্তম শতাব্দির আরবের বাসিন্দারা। খৃষ্টান এবং মুসলমান -এই দুই পরিচিতির যুদ্ধ আরো তীব্র হয় তিনটে ক্রশেডের মধ্যে দিয়ে। যেহেতু গত এক হাজার বছর এই দুটো ধর্মই গোটা পৃথিবী দখল করতে চেয়েছে -রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতিতে ধর্মীয় পরিচয় আস্তে আস্তে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়েছে। ইউরোপে রেনেসাস এবং শিল্প বিপ্লবের ফলে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে হঠানো গেছে ঠিকই-কিন্ত ৫৬ টা মুসলমান দেশ এবং ভারতে ধর্ম আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছে রাজনীতিকে।
বাঙালী একটা লোকের পরিচিতি বা আইডেন্টি হতে পারে-কিন্তু হিন্দু বা মুসলমান কি করে একটা লোকের পরিচিতি হয় -তা আমার বোধগম্য না। সেটা রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া কিছু না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলা খাবার খাই-তাই আমরা বাঙালী। আমি মন্দিরে যাই-তাই হিন্দু-বা মসজিদে যাই, ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলি, তাই মুসলিম-এগুলো অবোধের নির্বোধ বুদ্ধি। বা জোর করে ব্রেইন ওয়াশ করে শিশু বয়স থেকে শেখানো হয় ধর্ম গ্রন্থের মাধ্যমে, রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। হ্যা-এই ব্রেইন ওয়াশ বন্ধ না হলে, এই যে কোটি কোটি ধর্মান্ধ তৈরী হচ্ছে, তাদের সামাল দিতে পারবে না কোন পুলিশ, কোন মিলিটারি।
কেন হিন্দু, মুসলমান পরিচিতিটা ফেক? ইল্যুউশন?
কারন আমি যে বাঙালী পোস্ত খাই, ইলিশ খাই-সেটা সত্য। খাবারের অস্তিত্ব আছে। হিন্দু-মুসলমানরা যেসব জিনিস মানে ধর্মের নামে-তার সবটাই রূপকথা। অতীতের রাজনীতির কারনে সাজানো রূপকথা। এইসব গল্পে বিশ্বাস করে পরিচিতি? এর মানে স্পাইডারম্যানের গল্পে বিশ্বাস করে স্পাইডারম্যান ফ্যান ক্লাবের সদস্য হয়ে ঘোষনা করা- ওটাই আমার পরিচয়! এইসব গাঁজাখুরি গল্প যদি মানুষের পরিচিতির ভিত্তি হয়, একবিংশ শতাব্দিতে, তাহলে গোড়ায় গলদ। সরি, কোন মিলিটারি, কোন বিজেপি আপনাদের বাঁচাতে পারবে না। আরেকবার দেশভাগের মতন দাঙ্গা বাঁধবে। কারন যে পরিচিতির ভিত্তিটাই মানুষের মাথায় টুপি পড়িয়ে, ছোটবেলা থেকে ব্রেইন ওয়াশ করিয়ে তৈরী হয়েছে-তার মিথ্যাচার, মিথটাকে টিকিয়ে রাখতে দাঙ্গা বাধাবেই। আজ না হলে কাল। কাঠকয়লার আগুন-ধিকি ধিকি করে জ্বলে। খড় পরলেই ঘরবাড়ি ব্যাবসা জ্বালিয়ে সাফ করে দেবে।
ধর্ম বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা বা নিজের সন্ধান সবার মধ্যেই ওই সুরসুড়ি আছে। নাস্তিকের ও আছে। আমার ও আছে। আমার বিশ্বাস সততায়, বুদ্ধিতে পরিশ্রমে। ওইটুকুতে বিশ্বাস করেই, বাকী জীবনটা কাটানো সম্ভব। উপনিষদ পড়তে আমার ভাল লাগে-কিন্ত তার জন্যে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচিতি দেব কেন? কারন ইমানুয়েল কান্টের ক্রিটিক অব পিউর রিজন, আমার একই রকম ভাল লাগে। এটাত নিজের জানার জন্য ব্যক্তিগত যাত্রা। প্রতিটা মানুষের ধর্ম, সে হিন্দুই হৌক বা মুসলমান হোক, তার ব্যক্তিগত যাত্রা- পারসোনাল জার্নি। সেই জন্যেই ১৬০০ কোটি মুসলমানের ১৬০০ কোটি ইসলাম। কোন দুজন মুসলমান পাবেন না-যার ইসলাম হুবহু এক। কোন দুজন হিন্দু পাবেন না-যাদের হিন্দু ধর্ম হুবহু এক। কারন ধর্ম একটা ব্যক্তিগত জার্নি-তা কখনোই পরিচিতি বা আইডেন্টিটি হতে পারে না।
কিন্তু দুজন বাঙালী পাবেন -আনিশ খান এবং আশীষ রায়-যারা সর্ষে ইলিশ খেয়ে ঢেঁকুর তুলবে। গাইবে- আমি বাংলায় গান গাই। কারন ইলিশ এবং গান-দুটোই বাস্তব।
বাঙালী একটা লোকের পরিচিতি বা আইডেন্টি হতে পারে-কিন্তু হিন্দু বা মুসলমান কি করে একটা লোকের পরিচিতি হয় -তা আমার বোধগম্য না।বিপ্লব দা আপনার সাথে আমি একমত ৷অনেক বাঙালী কথাবার্তায় পরিচয় দেয় ‘আমি মুসলিম ,মসুলমান আমার জাত‘৷ মসুলমান কি জাত হতে পারে? আসলে ধর্ম আমাদেরকে অনেক সাম্প্রদায়িক করেছে ৷এখন ধর্মের কারণে অনেক কাটাকাটি, মারামারি হচ্ছে ৷এ বছরের মে মাসে দৈনিক জনকন্ঠের প্রতিনিধি ফিরোজ মান্নান গৌতম বুদ্ধকে সন্ত্রাসী বলে সরাসরি আখ্যায়িত করেছেন,আরও বলেছেন বৌদ্ধদের মন্দিরগুলো নাকি সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণের কেন্দ্র ৷ভাগ্যিস বুদ্ধিস্টরা নিরীহ স্বভারের বলে তারা অন্য কিছু করে নি, তারপরেও মানববন্ধন করেছে ৷মুসলিমদের ধর্মে একটু আঘাত করলেই রামুর বৌদ্ধবিহারের বুদ্ধমূর্তিগুলো ভেঙে দেয়,হিন্দুদের মন্দিরে ভাংচুর করে ৷এগুলো কি রকম ধর্ম ?
অামি ধর্ম পরিচয়ে বড় হতে চায় না আমি জাতির পরিচয়ে বড় হতে চায় ৷
ধন্যবাদ বিপ্লব দা কষ্ট করে সুন্দরভাবে লেখার জন্যে ৷
প্রথমত:
লেখকের মন্তব্য:
বাস্তব হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ বা লালন- বাঙালীর- এটা রবীন্দ্রনাথও কখনো বলেন নি লালনও নয়- তারা উভয়েই মানুষের জয়গান গেয়েছেন। সুতরাং তারা বাংলা ভাষায় কথা বলতেন বা লিখতেন বলে -বাঙালীত্ব নিয়ে মাতোয়ারা ছিলেন- এ সংকীর্নতা আমরা তাদের মধ্যে খুঁজে পাই না। রবীন্দ্রনাথ ধর্ম সম্পর্কে নিরাসক্ত ছিলেন তাও নয়- ব্রাম্ম ধর্ম দর্শন বিস্তারে তার ভুমিকার কথাও আমরা কম-বেশী জানি।
লেখক লালনের একটি গানের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করেছেন:
লেখক সম্ভবত এই লাইনগুলো ভালোমত না পড়ে মন্তব্য করেছেন। খেয়াল করুন: ‘হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান জাতি গোত্র’ এখানে যেমন তিনি ধর্মীয় পরিচিতি ‘হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান’ প্রসঙ্গে বলেছেন তেমনই ভাষাগত বা নৃতান্তি¡ক ‘জাতি গোত্র’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও বলেছেন- তিনি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সাথে ‘বাঙালী’ ‘পাঞ্জাবী’, বিহারী -হিন্দি -জাতি¯ত্তার বা গোত্রীয় পরিচিতি বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব-এর উর্ধে উঠে মনুষত্বের জয়গান গেয়েছেন। লেখক যখন সেই লালন-রবীন্দ্রনাথকে ধর্ম বনাম জাতিগত দ্বন্দ্বে টেনে এনে বাঙালী সম্প্রদায়গত স্বার্থের অংশে পরিণত করেন তখন এই দুই মানবতাবাদী পুরুষকে অপমান করা হয়।
দ্বিতীয়ত
লেখকের মন্তব্য :
এই যে লেখক এখানে বাঙালীত্বের বড়াই করছেন- এটিই সাম্প্রদায়িকতা- এটি লেখক ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে যেয়ে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার ওপর জোর দিচ্ছেন। এ সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ আমরা ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভালোভাবেই দেখছি। কিছু মানুষের স্বাভাবিক কূপ্রবৃত্তি হচ্ছে, মানুষের মধ্যে ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত, বর্ণগত বা গোত্রগত- যাই হোক না কেন – যেখানে যেমন সুবিধা- সে মত সেটিকে উস্কে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করা। এটি ধর্মের, জাতির বা গোত্রের ক্রটি নয় -এটি মানুষের পশুত্বের সমস্যা এবং এই মানুষ নামধারী পশুরা সেটি যে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির মাধ্যমেই করে থাকে সেটি সর্বজনবিদিত। একারণেই ইসলাম ধর্মে তো বটেই অন্যধর্মগুলোতেই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। যে ধর্মের নির্দেশ মানে না সে তো অবশ্যয়ই ধর্মবিরোধী। সুতরাং আমাদেরকে ধর্মের বিরোধী কোন ব্যক্তির কর্মকান্ডের জন্য ধর্মের সমালোচনা- হাস্যকর।
তৃতীয়তঃ
লেখকের মন্তব্য :
উপরোক্ত বক্তব্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে লেখকের অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি যদি একটু ‘পালা’ সম্রাজ্যের অবসান এবং ‘সেনা’ সম্্রাজ্যের বিস্তারের ইতিহাস একটু দেখে নেন- তবে নিশ্চয়ই বাংলায় ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু‘ ধর্মের প্রভাব সম্পর্কে একটু ধারণা পাবেন- সেই সাথে আমরাও মূর্খতা থেকে হয়তো নিস্তার পেতে পারি।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মুল্যবোধের ভিত্তিতে ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব- সে দ্বন্দ্ব সর্বযুগে মবমময় ছিল, আছে এবং থাকবে- এবং সেটি চিরন্তন দ্বন্দ্ব। সেটিতে অবশ্যয় প্রতিটি বিবেকবান মানুষ সার্বজনীন মুল্যবোধের ভিত্তিতে ভালোর পক্ষে থাকবেন সেটি স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সকল ধরণের সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ বিবেকবানদের অপছন্দ। তবে তুলনামুলক বিশেলষণ করলে লজিক্যাল হচ্ছে: ‘সৎ জাতি, গোত্র বা নৃতাত্বিক সাম্প্রদায়িকতা’র থেকে ‘সৎ-ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা’ উদার। কারণ আপনি যখন জাতিগত সাম্প্রদায়িক যেমন ‘বাঙালীত্ব তত্ত্ব’-এর কথা বলবেন তখন আপনি মাত্র ২৮ কোটি মানুষের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি হিন্দু ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হলে, ১০০ কোটি মানুষের, মুসলিম সাম্প্রদায়িক হলে দেড়’শ কোটি মানুষের এবং খ্রীষ্টান সাম্প্র্রদায়িক হলে দু’শ কোটি মানুষের স্বার্থকে অন্যদের উপরে স্থান দিচ্ছেন। সুতরাং যে সাম্প্রদায়িকতা শুধু ২৮ কোটি লোকের স্বার্থ নিয়ে ভাবে তার থেকে যে ১০০ কোটি মানুষের স্বার্থ নিয়ে ভাবে সে নিশ্চয়ই উত্তম!
তবে যিনি সকল সাম্প্রদায়িকতার উর্ধে উঠতে পারেন তিনি আসলে বিশ্বের সাড়ে সাত’শ কোটি মানুষের স্বার্থ নিয়ে ভাবেন। তিনিই সব থেকে উত্তম।
শক্তিশালী সব যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আশা করছি লেখক আপনার যুক্তিগুলো নিয়ে উত্তর দেবে।
আপনি বলেছেন:
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মানুষগুলোকে মানুষ নামধারী পশু বলে ছেড়ে দিলেন, এটা কেমন হল বলুন তো। ওরাও মানুষ। ধর্মান্ধ বটে, কিন্তু মানুষও অবশ্যই। কি বলেন 🙂
চমৎকার।
মুক্তমনা’য় আপনার লেখা দেখতে পেলে ভাল লাগতো।
ভাল বলছেন
এই সহজ সত্যটা এই ধর্মান্ধ মানুষগুলোর মস্তিষ্কে যখন প্রবেশ করবে, মনুষ্যজন্ম সার্থক হবে।
কিন্তু মানুষ যদি বাঙালি পরিচয়ের আগে ধর্ম পরিচয়টাই আগে বেছে নেয় সেক্ষেত্রে কি করার আছে?