লেখক: দেবাশিস ভট্টাচার্য
শেলি ও বারটরানড রাসেল – প্রেম, নাস্তিকতা, বিদ্রোহঃ
দুই মুক্ত মনার গল্প
“ But liberty, when men act in bodies, is power”
Edmund Burke, Reflections on the Revolution in France
রোমান্টিক কবিদের মধ্যে নাস্তিক বলে খ্যাত একমাত্র পার্সি শেলি ( ১৭৯২- ১৮২২ ) । ১৮১১ সালে বন্ধু টমাস জেফারসন হগের সঙ্গে একত্রে তিনি “নাস্তিকতার প্রয়োজনিয়তা” ( The Necessity of Atheism) নামক ক্ষুদ্র প্রবন্ধে ঈশ্বর নেই বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হৈ চৈ ফেলে দেন। উনিশ বছরের কিশোর, বি এ প্রথম বর্ষের ছাত্র, বৃদ্ধ পণ্ডিত ডীন অধ্যাপক পাদ্রীদের দুর্গে সেই তাঁর প্রথম তোপ দাগা। এই সেই রচনা যার ফলে শেলি অক্সফোর্ড থেকে বহিষ্কৃত হলেন, বাবা ও অনেক শুভানুধ্যায়ীর অনুরোধেও ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন না। প্রথাগত শিক্ষাজগত থেকে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসন গ্রহণ করলেন। এই অসম যুদ্ধে হগ ছাড়া আর যে দুজন মৃত দার্শনিকের প্ররোচনা ও মুচকি হাস্য ছিল তাঁরা হলেন জন লক (১৬৩২- ১৭০৪ ) ও ডেভিড হিউম ( ১৭১১-১৭৭৬ )। পাঁচ বছর পর ফ্রান্সের দুই পার্বত্য হোটেলের রেজিস্টারে তিনি নিজেকে গণতন্ত্রবাদী মানবহিতৈষী ও নাস্তিক বলে স্বাক্ষর করেন। তার ফলও বহিষ্কার না হলেও গুরুতর হয়েছিল। নাস্তিক সংজ্ঞাটি তখন সমাজে উচ্চারণের যোগ্য ছিল না।
নাস্তিকতার রথে চড়ে কোথায় যাত্রা করেছিলেন শেলি? ম ব্লা ( Mont Blanc), ১৮১৬র জুলাই আগস্টে লিখিত, কবিতাটি তার একটি দিকনির্দেশ করে।
The everlasting universe of things
Flows through the mind, and rolls its rapid waves,
Now dark—now glittering—now reflecting gloom—
Now lending splendour, where from secret springs
The source of human thought its tribute brings
Of waters—with a sound but half its own,
Such as a feeble brook will oft assume,
In the wild woods, among the mountains lone,
Where waterfalls around it leap for ever,
Where woods and winds contend, and a vast river
Over its rocks ceaselessly bursts and raves.
…….
Mont Blanc yet gleams on high:—the power is there,
The still and solemn power of many sights,
And many sounds, and much of life and death.
In the calm darkness of the moonless nights,
In the lone glare of day, the snows descend
Upon that Mountain; none beholds them there,
Nor when the flakes burn in the sinking sun,
Or the star-beams dart through them. Winds contend
Silently there, and heap the snow with breath
Rapid and strong, but silently! Its home
The voiceless lightning in these solitudes
Keeps innocently, and like vapour broods
Over the snow. The secret Strength of things
Which governs thought, and to the infinite dome
Of Heaven is as a law, inhabits thee!
And what were thou, and earth, and stars, and sea,
If to the human mind’s imaginings
Silence and solitude were vacancy?
এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাক নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি, Fredric Jamesonএর লেখা গ্রন্থ The Political Unconscious: Narrative as a socially symbolic act থেকে নেয়া।
“ History is therefore an experience of necessity, and it is this alone which can forestall its thematisation or reification as a mere object of representation or as one master code among many others. Necessity is not…a type of content, but rather the inexorable form of events,…the formal effects of what Althusser, following Spinoza calls an “ absent cause.” Conceived in this sense, History is what hurts, it is what refuses desire and sets inexorable limits to individual as well as collective praxis..This history can be apprehended only through its effects…This is indeed the ultimate sense in which History as ground and as untransdendable horizon needs no particular theoretical justification: we may be sure that its alienating necessities will not forget us, however much we might prefer to ignore them.”
উদ্ধৃতিটি কোনও পূর্বতন পুঁথি বা সূত্রের দিকে ইঙ্গিত করে না। শেলির নিজস্ব বোধ সম্পর্কে আমাদের চিন্তায় প্রবুদ্ধ করে। যে বোধ বিশুদ্ধ কবির। বা কবি দার্শনিকের। প্রকৃতি যাতে তার ইন্ধন যোগায়। অনুসন্ধান ও অভিজ্ঞতা এ দুই নিয়ে মনের রান্নাঘরে পাক হতে থাকে।
শেলি কি জোনাথান ইসরায়েল বর্ণিত মৌলিক আলোকপ্রাপ্তি বা radical enlightenment এর পথিক ছিলেন? স্পিনোজা যার প্রথম বার্তাবহ? অর্থাৎ তিনি কি বস্তুবাদী যুক্তিপরায়নতায় বিশ্বাসী ছিলেন, materialist rationalism এ ? ১৮১৫-১৬ তে তাঁর কাব্য নিছক বস্তুবাদী কোনমতেই বলা যাবে না। বরং গডউইন ও ভলতেয়ারকে নিয়ে তিনি যেন রূপের পথে যাত্রা করেছেন। আছে কি নেই এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে তিনি তিনশ ষাট ডিগ্রি ঘুরে এমন এক অবস্থানে পৌঁছে গেছেন যা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কল্পলোক বলা যেতে পারে। না কোনও জীবনদেবতার হাত ধরে নয়, সুদ্ধ প্রকৃতির লীলাও নয়, আরও এক গুঢ়তর সত্ত্বা যা তাঁর অভ্যন্তরে প্রণোদনা হয়ে কাজ করেছে যার জন্য তিনি একই সঙ্গে বিস্ময় বালক ও যুক্তিপথের পথিক হিসেবে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেই বোধ তাঁকে আলো দেখিয়েছে। একে কি পরাবাস্তব বলব? জানি না, কিন্তু এটুকু জানি যে এই বোধই রেনেসাঁর মূল, এই বোধ আধ্যাত্মিক অতীন্দ্রিয়বাদ নয়, এক ক্রম বিবর্তনশীল চেতনার সৃষ্টি করে। চেতনার বিপ্লব থেকে আসে মুক্তির ইচ্ছা ও প্রয়াস। গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ অন্ধ বধির মূক প্রাণীদের উপর কেমন করে অবতরণ করবে? শেলি তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। Promtheus Unbound কবিতায় এই চেতনার আভাস মুক্তির পিপাসায় স্বাধীনতার যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। মুখবন্ধে কবি কি বলেছেন শোনা যাক
“ The imagery which I have employed will be found, in many instances, to have been the operations of the human mind, or from those external actions by which they are expressed.”
শেলির রোম্যান্টিক মুক্তিকামনা ও বিস্ময় দর্শন – যা রেনেসাঁ বা রোম্যান্টিক যুগের প্রধান লক্ষণ বলে খ্যাত – এমন এক উত্তরসূরির সন্ধান পেল যিনি শেলির উজানে ভেসে যাওয়া সত্ত্বার তুলনায় বিপরীত বলা যেতে পারে। গণিতশাস্ত্র যুক্তিবাদ আপোষহীন বস্তুবাদী বারটানড রাসেলের ( ১৮৭২-১৯৭০) সঙ্গে শেলির মিল বোধহয় সামান্য দুএকটি জায়গায়। সেটি হল দুজনেই প্রাচীন অভিজাত হুইগ পরিবারের সন্তান। এবং দুজনেই বাল্যে ধর্মের গোঁড়ামির দ্বারা নিগৃহীত। আবার অন্যভাবে দেখলে এরা দুজনেই সারাজীবন প্রেমতাড়িত মানুষ। রাসেলের পিতা মাতা তো মুক্তচিন্তক ( freethinker) ছিলেনই, বিবাহ মানতেন না, প্রথাগত জীবনে অবিশ্বাসী ছিলেন, শেলি নিজের জীবনে বিবাহ অগ্রাহ্য করে কাটিয়ে দিলেন, তাঁর নাস্তিকতার অন্যতম কারণ ছিল ধর্মের বিচারে প্রেমকে দ্বিতীয় ও বিবাহকে মুখ্য স্থান দেয়া।
ফরাসি ও আমেরিকান বিপ্লবের সমান্তরাল রোম্যান্টিক কবিতার আন্দোলনকে রাসেল স্বাভাবিক কারণেই পছন্দ করতেন। প্রথমা স্ত্রী Alys Pearsall Smith এর আত্মীয়া Helen Flexner কে লেখা একটি চিঠিতে রাসেল লিখছেন
Romanticism, it seems to me, is the creed of passion, the belief that the good consists in overmastering emotion, of whatever kind, the stronger the better. Hence it is led to dwell specially upon the strongest emotions – love, hatred, rage, jealousy..with one exception: no Romanticist praises fear…the reason is that the romanticist loves emotion as an assertion of personality, of individual force, while fear expresses the antithesis to this, the slavery of the individual to the world…The worship of passion has, I confess, a great instinctive attraction for me, but to my reason, utterly abbhorent.
রাসেলের এই দ্বিবিধ ও দ্বিধাযুক্ত দৃষ্টি তাঁর A History of Western Philosophy গ্রন্থের কয়েক লাইনে আরও স্পষ্ট হবে।
I t is not the psychology of the romantics that is at fault: it is their standard of values. They admire strong passions, of no matter what kind, and whatever maybe their social consequences. Romantic love, especially when unfortunate, is strong enough to win their approval, but most of the strongest passions are destructive – hate and resentment and jealousy, remorse and despair, outraged pride and the fury of the unjustly oppressed, martial ardour and contempt for slaves and cowards. Hence the type of man encouraged by romanticism…is violent and anti social, an anarchic rebel or a conquering tyrant.
ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম শেলি পাঠ করেন। তাঁর পালিকা দিদিমা শেলির উপর হাড়ে চটা ছিলেন। শেলির উপর তাঁর বক্তব্য The importance of Shelleyর একটি উদ্ধৃতি
And then one day I came upon Shelley, whose very name was unknown to me. I took out from a shelf the Golden Treasury volume of selections from Shelley and opened it at Alastor, Or the Spirit of Solitude. I read on and on entranced. Here, I felt, was a kindred spirit, gifted as I never hoped to be with the power of finding words as beautiful as his thoughts.
পঞ্চাশ বছর পরে Ottoline Morrell কে লেখা একটি চিঠিতে
Shelley was a wonderful discovery. I remember the moment now…it utterly carried me away and I couldn’t understand how grown up people, who admired Shakespeare and Milton, could fail to care about Shelley. I got a passionate personal love of him – more than for anyone I knew….It is one of the things that make me love Shelley that I have something which I feel about nature.
আত্মজীবনীর একটি উক্তি
I spent all my spare time reading him, and learning him by heart. Knowing no one to whom I could speak of what I thought or felt, I used to reflect how wonderful it would be to know Shelley and to wonder whether I should ever meet any human being with whom I should feel so much in sympathy.
মনের আশ্চর্য রসায়নে রাসেল চুম্বকের মত আকর্ষিত হলেন শেলির দিকে। পরবর্তী কালে ক্লান্তি বা প্রেম উভয় ক্ষেত্রে তিনি শেলি আবৃত্তি করে শান্তি পেয়েছেন। শেলির Epipsychidion যেন তাঁরই অনুভূতি অভিজ্ঞতার পুনারাবৃত্তি ।
I never was attached to that great sect
Whose doctrine is that each one should select
Out of the crowd, a mistress or a friend.
And all the rest, though fair and wise, commend
To cold oblivion, though it is in the code
Of modern morals and the beaten roads
Which those poor slaves with weary footsteps tread
Who travel to their home among the dead
By the broad highway of the world and so
With one chained friend, perhaps a jealous foe
The dreariest and longest journey go
True love in this differs in gold and clay
That to divide is not to take way.
বুঝতে অসুবিধে হয় না প্রেম সম্পর্কে স্বাধীন বন্ধনহীন তৃষ্ণায় পাপবোধহীন মুক্ত মনে তাঁরা সহযাত্রী ছিলেন। কিন্তু যেখানে শেলির সেই উজানে ভেসে যাওয়া জীবন – যা, কি আশ্চর্য, তাঁর শেষ জলযাত্রায় প্রায় অলৌকিক অবসানের উদ্দেশে মহা যাত্রা হয়ে উঠল – সেই স্রোতে মহা পণ্ডিত কূট তার্কিক নিজস্ব পরিমণ্ডলে চির উন্নতিশীল রাসেল কি ভাবে ভেসে যান শেলির কবিতা পড়ে?
Drive my dead thoughts over the universe
Like withered leaves to quicken a new birth
And, by the incantation of this verse
Scatter, as from an unextinguished hearth
Ashes and sparks, my words among mankind!
The trumpet of a prophecy!
প্রেম ও শেলি পুনরায় ফিরে আসে লেডি অটোলিনকে লিখিত পত্রে
But nobody writes about love in a way that really satisfies me except Shelley. It is generally too physical – and too little in relation to the outside world. I don’t feel love a refuge from the world but a light to illumine the world.
রাসেল Epipsychidion কবিতায় তাঁর নিজের প্রেমের আদর্শটিকে প্রত্যক্ষ করলেন, শেলি যেখানে তাঁর প্রেমের দূতী হিসেবে এমন একটি অপার্থিব নারীকে মুরত করে তুলতে চেয়েছেছেন যার মধ্যে দান্তের ভিটা নুয়ভা ও বিয়াত্রিচে উভয়েই প্রচ্ছন্ন আছে।
কিন্তু আমার প্রশ্ন, রাসেল কি শেলিকে অথবা শেলি কি তাঁর মানসপ্রতিমাকে চিনতে পেরেছিলেন? উপনিষদের শিক্ষায় শিক্ষিত, ব্রাহ্ম কবি রবীন্দ্রনাথ নাস্তিক ছিলেন না। বহুবার প্রেমও করেন নি বিভিন্ন নারীর সঙ্গে। কবিতা বা শিল্পে শারীরিক ও রূপক আলাদা হয়েই থাকে। রবীন্দ্রনাথ কি আশ্চর্যভাবে শেলির Epipsychidion বা Alastor র নির্যাসটুকু ছেঁকে আনেন নি তাঁর নিম্নোক্ত পংক্তিতে ?
আমারে যে ডাক দেবে এ জীবনে তারে বারম্বার ফিরেছি ডাকিয়া
সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার থাকিয়া থাকিয়া
দীপখানি তুলে ধরে মুখে চেয়ে ক্ষণকাল থামি চিনেছে আমারে
তারই সেই চাওয়া সেই চেনার আলোক দিয়ে আমি চিনি আপনারে।
হায় শেলিকে শুধু রাসেল নয় রবীন্দ্রনাথও যদি কাছে পেতেন! রূপকের কথায় ফিরে আসি। রূপক বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর নির্মিত হয় কিন্তু সেটি বাস্তবের অন্যতর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে উপস্থিত হয়। রূপকের আলোয় পুরানো অভিজ্ঞতা নূতন তাৎপর্য পায়। শেলি বা যে কোনও কবির কবিতা তাই বহুলাংশে রূপকধর্মী, রূপকনির্ভর। Epipsychidionএর নায়িকা কি এমিলি যাকে নিয়ে কবি নিরুদ্দেশ যাত্রায় যেতে চান, না কি সে এক চির আকাঙ্ক্ষা যা আমৃত্যু আমাদের মধুর পীড়া দেয়? রাসেল এই কবিতা পড়ে তাঁর শুষ্ক গণিতের মধ্যে এক রসধারা আবিষ্কার করেন। তাঁর যৌবনের কল্পনায় আমরা প্রেমের এক অনন্যমনা বিশ্বস্ত আদর্শ পাই যা ক্রমে সম্পূর্ণ অন্য বহুমাত্রিক বহুধা বিস্তৃত রূপে ছড়িয়ে পড়ে, রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাঁর সান্ত্বনা ছিল শেলির এই কথাগুলি
We shall become the same, we shall be one
Spirit within two frames, oh wherefore two?
One spirit in twin hearts, which grows and grew
Till like two meteors of expanding flame,
Those spheres instinct with it become the same,
Touch, mingle, are transfigured; ever still
Burning, yet ever consumable.
আলিসের সঙ্গে প্রথম বিবাহের আগে এই কবিতা রাসেলকে এইরকম একটা মানসিক ছবি দেখায়। অবশ্যই ছবিটি অস্কার ওয়াইল্ডের পিকচার অফ ডোরিয়ান গ্রের ছবির মত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পালটে যায় কিন্তু কোথাও তাঁর চেতনার অভ্যন্তরে এক গভীর অনুভূতির আলো জ্বালিয়ে দিয়ে যেতে ভোলে না। নাস্তিক হয়েও রাসেল যাকে mystic illumination আখ্যা দিয়েছেন। বহুদিন পর ১৯০১ সালে কেম্ব্রিজে তীব্র হৃদরোগে আক্রান্ত মিসেস হোয়াইটহেডের রোগশয্যার পাশে তাঁর এক আশ্চর্য অনুভূতি হয়েছিল যার সঙ্গে শেলির একটা গভীর স্তরে সম্পর্ক ছিল। রাসেলের কথায় শোনা যাক
She seemed cut off from everyone and everything by walls of agony, and the sense of the solitude of each human soul suddenly overwhelmed me…Suddenly the ground seemed to give way beneath me, and I found myself in quite another region. Within five minutes I went through some such reflections as the following: the loneliness of the human soul is unendurable, nothing can penetrate it except the highest intensity of the sort of love that religious teachers have preached; whatever does not spring from this motive is harmful, or at best useless…At the end of those five minutes, I had become a completely different person. For a time a sort of mystic illumination possed me.
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর অন্তরঙ্গ বান্ধবী কলেট ( Lady Constance Malleson) তাঁর লেখা After Ten Years গ্রন্থে লেখেন
One day we were out walking in rough, tempestuous weather and he sat down on top of a heathery bank with his hair all wild in the wind and reeled off beginning to end Shelley’s Ode to the West Wind. It was the first time in my life I had heard it. It suited B.R. – “tameless, and swift and proud.”
শেলির পংক্তি
A heavy weight of hours has chained and bowed
One too like thee: tameless and swift and proud.
কুড়ি ও তিরিশের দশকে কবি সাহিত্যিকরা শেলির ভুলই ধরতে ব্যাস্ত ছিলেন। টি এস এলিয়ট আই এ রিচারডস এফ আর লিভিস কেউই শেলির পক্ষে সওয়াল করেন নি। বারটানড রাসেল তখন মধ্য যৌবনে ও কীর্তির মধ্য গগনে। তাঁর চারপাশের সেরা বুদ্ধিজীবীরা মত দিচ্ছেন শেলির বিপক্ষে, তাঁরা বলছেন শেলি আত্মকরুণা সর্বস্ব তাঁর ভাষা অবয়বহীন ও অস্পষ্ট তিনি কোনও দিক দিয়েই আধুনিক পাঠককুলকে পথ দেখাতে অপারগ। রাসেল তাঁর বন্ধু দার্শনিক হোয়াইটহেডের সঙ্গে শেলির উচ্চ প্রশংসা করেছেন। Whitehead তাঁর Science and the Modern World গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন ( যাতে রাসেলের পূর্ণ সহমত ছিল)
Shelley’s attitude to science was at the opposite pole to that of Wordworth. He loved it and was never tired of expressing in poetry the thoughts which it suggests. It symbolizes to him joy and peace, and illumination. What the hills were to the youth of Wordsworth a chemical laboratory was to Shelley. It is unfortunate that Shelley’s literary critics have, in this respect, so little of Shelley in their mentality. They tend to treat as a casual oddity of Shelley’s nature, which was in fact part of the main structure of his mind, permeating his poetry through and through. If Shelley had been born a hundred years later, the twentieth century would have seen a Newton among chemists.
গাণিতিক যুক্তিবাদী রাসেলের শেলির প্রতি অনুরাগের এটিও তাহলে অন্যতম মহৎ কারণ। তবে একথাও ঠিক যে রাসেলের মুখ্য কর্ম কাণ্ডে কবিতা বা শিল্প বড় ভূমিকায় ছিল না। তিনি দার্শনিক সমাজ চিন্তক ঐতিহাসিকও বটে, কল্প কাহিনী লিখেছেন কিন্তু তাঁর ওজন সামান্য, গণিত ও পাশ্চাত্য দর্শনের উচ্চ শিখর ছিল তাঁর কর্ম ভূমি। সেখানে শেলি কেন, কিকরে? কারণ তিনি বিচার ও মেধাকে মুক্ত রেখেছিলেন, মানবিক আবেগ পূর্ণ মাত্রায় চর্চা করেছেন, শেলিরই মত রাজনীতি থেকে বহু আলোক বর্ষ দূরে থেকেও যুদ্ধ বিরোধিতা ও মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে অনড় থেকেছেন লড়াই করে গেছেন।
তবে কি রাসেলের তার্কিক বস্তুবাদে কোনও সমস্যা ছিল? কোথাও একটা অবসরের, অপরিমিত বিশ্রামের, প্রেমের খোঁজ ছিল যা একমাত্র একজন কবি নাস্তিক মেধাপরায়ণ হয়েও পারেন সৃষ্টি করতে ? এমন এক স্বর্গ যেখানে মুক্ত বাতায়ন প্রান্তে এসে দাঁড়ালে নিজেকে খানিকক্ষণের জন্যে হলেও খুঁজে পাওয়া যায়? কবিকে যে অধিকার বা mandate দেয়া হয় কোনও দার্শনিক তার নাগাল পান না। তাই নাস্তিক শেলি প্রেমের হিরণ্য প্রতিমা নির্মাণ করে নিজস্ব এক ধর্ম রচনা করেন। তার মধ্যে শুধু স্ত্রী পুরুষ নয় সমগ্র মানবজাতির অমলিন প্রেমের কল্পনা আছে। তিরিশ বছরে পা দিয়েই যে যুবকটি পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয় তার মুক্তি কামনা শুধু পরবর্তী কাল না তার নিজের ব্যক্তিগত জীবনটিকেও দগ্ধ করে ফেলেছিল। শেলির মৃতদেহ যখন সমুদ্র থেকে ফিরে আসে তাঁর দেবদূতের মত অপরূপ মুখটি চেনা যায় নি, হিংস্র মাছেরা খুবলে প্রায় সবটা তুলে নিয়েছিল। আমার এই ঘটনাটিকে নিছক বাস্তব বলে মেনে নিতে অসুবিধা হয়। আমি মনে করি, এটা একটা রূপক ও আভাস। বিপ্লবী যোদ্ধার জীবন দানের কাহিনী। জীবনানন্দের বুড়ি থুত্থুড়ি পেঁচা বা গলিত স্থবির ব্যাঙের মত বাঁচার জন্য উন্মুখ মাছেরা শেলিদের মুখশ্রী বিকৃত করে দেয়। তখন তাকে নতুন করে মনের তুলিতে এঁকে চিনে নিতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি একই সঙ্গে যুক্তিবাদী সমাজ বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। মানুষের মনের অনাবিষ্কৃত রহস্যে এর জারণ। বৃদ্ধ নিরীশ্বরবাদী দুর্জয় পণ্ডিত বারটরানড রাসেল শেষ পর্যন্ত এই অকালমৃত যুবাটির মধ্যে নিজের ছায়া দেখতে পেতেন, এই জটিল রহস্যের সমাধান কে করতে পারে।
দারুন লাগল। অবশ্য আমাদের মত নবীশদের জন্য অনেককিছুই মাথার কিছুটা উপর দিয়ে গেল। তবে ইংরেজী কোটেশনগুলোর বাংলা করে দিলে যে আরো অসাধারণ হত কোনোই সন্দেহ নেই।
আর ব্লগের মরা কটালের সময় এলেন এটাও কিছুটা আক্ষেপ তৈরি করল মনে।
আপনাদের ভাল লাগছে জেনে আনন্দিত হলাম, হ্যাঁ অনুবাদ দিলে ভাল হত, পরের বার ভুল শুধরে নেব।
আপনার প্রকাশভঙ্গী বেশ লেগেছে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায়। শেলির Necessity of atheism এর বাংলা অনুবাদ হয়েছে কি?
ধন্যবাদ সৈকতবাবু। আমার চোখে পড়ে নি, কোনও অনুবাদ। করলে মন্দ হয় না 🙂 ।
চমৎকার। আপনার লেখা নিয়ে অনেকেই ভালো ভালো কথা বলবে তাই কিন্তু আমি একটু মিশিয়েই বলি।
বেশ একটা হৃষ্টপুষ্ট লেখা পড়তে পেলাম অনেক দিন পর। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। বিভিন্ন নাম ঘটনার পাশে সময়রেখা দিয়ে অতিরিক্ত খাটুনি থেকে বাঁচিয়েছেন বলে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অবশ্য আবার শোধ’ও তুলে নিয়েছেন উক্তি উদ্ধৃতিগুলো বেশ একটু ওজনদার করে। ওইগুলো অতোটা ভারী না হলেই ভালো হোত মনে হয়। তবু বেশ ভিন্নতার স্বাদ পেয়েছি পড়ে, এইটা কিন্তু অনেক।
এইখানে শেলী আর রাসেলের যথাক্রমে মৃত্যু জন্মের দূরত্ব’ই পঞ্চাশ বছর, নয় কি? বিভ্রান্ত হবার মত কিছু কি লিখলেন?
দান্তের ‘ভিটা নুয়ভা’ বা বিয়াত্রিচ’কে আপনি জেনেছেন সময় ব্যয় করে; আপনি ওদের জানেন; বুঝলাম। আর কিঞ্চিৎ কাল যদি আমাদের মত নবিস পাঠকদের বুঝবার জন্য ব্যয় করতেন ভায়া; বড্ড কৃতজ্ঞ হতাম, আপনার মাধ্যমেই দান্তে, ভিটা নুয়ভা বা বিয়াত্রিচ’কে জেনে নিতাম। আলসে পাঠক, বুঝলেন তো?
এই যে রাসেলের অনুভূতি ও ভাব পরিচয় সরল করে দিলেন আমাদের মত আম পাঠকের কাছে; এজন্য কিন্তু বিশেষ ধন্যবাদ পেলেন 🙂
এইবার একটু জানতে চাই যে কিট্স্ কিন্তু একেবারেই এলোনা আপনার লেখায়। এর কি বিশেষ কোন কারণ আছে?
বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কাজী সাহেব। ভুল ত্রুটি কিছু হয়েছে ঠিকই, আরও ব্যাখ্যা বা খোলসা করে লিখলে সবার ভাল লাগত। কিটস নিয়ে অন্য রচনায় লেখা যাবে, সে অর্থে আর কোনও সমসাময়িক রোম্যান্টিক কবিকেই তো আনি নি। আসলে গল্পটা এই দুই ব্যক্তির উপর ফোকাস করা। 🙂
ধন্যবাদ অরনিশা জাহান স্বর্ণা, আপনি সম্ভবত বলছেন আরও শিক্ষার প্রয়োজন। আসলে যে সমাজে আমরা বাস করি তাকে পরিবর্তিত করতে হলে শিক্ষা তো চাইই, তাছাড়া পরিবর্তনটা ভিতর থেকে আনা চাই বহির্বিশ্ব থেকে আসবে না।
এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
আপনার লেখাটি ইন্টারেস্টিং। খুবই উঁচু মানের। তবে অনুবাদ ও ব্যাখাছাড়া ইংরেজী উদ্ধৃতির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আমাদের মত পাঠকদের জন্য একটু দুর্বোধ্য হচ্ছে। যেমন ফ্রেডেরিক জেমেসনের উক্তি: History is therefore an experience of necessity, and it is this alone which can forestall its thematisation or reification as a mere object of representation or as one master code among many others. এর মানে কী এটা বুঝতে গিয়েই আমি আটকে গিয়েছি। এর পরে আর এগোতে পারি নি। আমার মনে হয় আমাদের মত দর্শন বা ইতিহাসের বিভিন্ন ক্যাটাগরি সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ পাঠকদের কথা মনে রেখে আপনি যদি ইংরেজী উদ্ধৃতিগুলোর ব্যাখ্যা করে দিতেন তাহলে ভাল হত। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ দীপেনবাবু আপনার কথা খুবই যুক্তিসংগত। ভবিষ্যৎ লেখার সময় মনে রাখব। আপনি সুপাঠক বুঝতেই পারছি। কিন্তু বিনয় করলেও আপনার কথার সঙ্গে আমি একমত, অনুবাদ সঙ্গে দেয়া উচিত ছিল। আমি রচনাটি অনুবাদ সহ ( কবিতার অংশ ছেড়ে) আবার সাজাতে পারি।
পাঠকরা আপনাদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন। ভিন্ন মত পোষণ করলে তাও বলবেন। চিন্তা শুরু হয় একজন থেকে কিন্তু অনেকে না হলে তা সম্পূর্ণ হয় না।
খুব ইন্টারেস্টিং লেখা। দুই যুগের দুজন মানুষ তবু মানসিকতায় কি গভীর মিল। হয়তো সেলি দেড়শ বছর পড়ে জন্মালে নিউটন না, রাসেলই হতেন!
ধন্যবাদ ঈশ্বরী সঙ্গে থাকো।
লেখাটি পড়ে ভীষণ ভাল লাগল। উদ্ধৃতিগুলির অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দিলে আরও সুবিধে হত ঠিকই। শেলি আর রাসেল দুজনের প্রকৃতি একেবারে আলাদা। কিন্তু সেটা বাইরে থেকে। ভিতরে ভিতরে একটা গভীর ঐক্য ছিল। সেটা রচনাটিতে ধরা পড়েছে।
ধন্যবাদ, আপনি খুব ঠিক কথা বলেছেন, ওটাই প্রবন্ধের মূল বক্তব্য।
লেখাটি খুব সুপাঠ্য। যদিও দীর্ঘ উদ্ধৃতিতে পূর্ণ। বিষয়টা কঠিন মানে দুটি মানুষের জটিল মনস্তত্ব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি। আরও কিছু ব্যক্তিগত কাহিনী থাকলে বোধহয় মন্দ হত না।
ধন্যবাদ আপনার পরামর্শ পরের লেখার জন্য মনে রাখব।
শেষ হয়ে হইল না শেষ। এত ভাল লেখা, কাহিনীটি আরও দীর্ঘায়িত করলে উপকৃত হতাম, ভালও লাগত। যেটুকু পেলাম তাও কম না।
ধন্যবাদ দামিনী, হ্যাঁ ঠিকই তো, আরও লেখা তো যেতই এ বিষয়ে।