নিলয় নীল (নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়) মারা গেলেন। এভাবে নিলয় নীলের সাথে পরিচিত হতে চাই নি। তাও পরিচয় হলো নিলয়ের রক্তাক্ত নিস্পন্দ শরীর ও রক্তে ভেসে যাওয়া বসার ঘরের ছবির সাথে। নিলয়ের স্ত্রী ও স্ত্রীর বোনকে বারান্দায় আটকে রেখে ধীরে ধীরে তাকে জবাই করেছে চারজন খুনী। তারা ভাড়া বাসা দেখার ছুতো করে বাসায় ঢুকেছিল। তার খুনের বর্ণনা ও ছবি দেখে অনেক বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনা নিয়ে লেখা গল্পের কথা মনে পড়েছিল। কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না, শুধু সে গল্পটাই শেয়ার করেছিলাম…
এসব ইনফরমেশন আসলে অর্থহীন, কারণ নিলয় নীল বেঁচে নেই। সুখ, দুঃখ, উল্লাস, দীর্ঘশ্বাসের ঊর্ধ্বে চলে গেছেন তিনি। এখন আমরা যা বলছি, তাতে তার কিছুই আসে যায় না।
তাহলে এখনের কথাগুলো কাদের জন্য? কথাগুলো আমরা যারা বেঁচে আছি জীবন্মৃত লাশের মতো তাদের জন্য।
আমাদের সামনে ও পেছনে নিকষ কালো অন্ধকার। একটি লজ্জাজনক নপুংশক দাস-স্বভাবের জাতি কীভাবে ধীরে ধীরে অন্ধকারের অতলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তার উদাহরণ দেখছি নিজেদের মাঝে। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন [১], যেখানে তিনি ঢাকা শহরকে মৃতপ্রায় ও মরণোন্মুখ শহর বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিস্তারিত আলাপে জানিয়েছেন কীভাবে সড়ক যোগাযোগ ও উন্নয়নের নামে ধীরে ধীরে এই শহরকে মেরে ফেলা হচ্ছে গত ষাট-সত্তর বছর ধরে। পড়তে পড়তে মনে হলো, ঢাকার সঙ্গে আমরাও মারা যাচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশ মারা যাচ্ছে। বাঙালিরা মারা যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ ও তাদের চ্যালা-চামুণ্ডার দল যতোই উচ্চকণ্ঠে জিডিপি আর উন্নয়নের বুলি আওড়ান, ততোই এই বিষয়ে আরো নিঃসংশয় হই। হবুচন্দ্র রাজার দেশে গবুচন্দ্র মন্ত্রী ও সভাসদগণ এভাবেই উচ্চকিত প্রশংসা করতেন রাজা মহাশয়ের। রাজা যা বলেন, সবই ঠিক। রাজা যা করেন, সবই নির্ভুল।…
কে জানতো, ছোটবেলার সেসব রূপকথার গল্প এমন সত্যি হয়ে ধরা দিবে?
ভলতেয়ারের নামে একটি বহুল প্রচলিত কিন্তু ভুল উক্তি আছে বাক-স্বাধীনতা নিয়ে, “I do not agree with what you have to say, but I’ll defend to the death your right to say it.” আজকে উক্তিটির সত্যতা যাচাই করতে গুগল করতে জানতে পারলাম এটি তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে আরেকজন লেখিকা লিখেছিলেন, সরাসরি ভলতেয়ারের উক্তি নয় এটি [২]। তবে আরেকটি উক্তি পেয়েছি খুঁজতে গিয়ে, যেটি ভলতেয়ার বলেছিলেন ১৭৬৩ সালে, তার “ট্রিটিজ অন টলারেশন” বইতে।
“The supposed right of intolerance is absurd and barbaric. It is the right of the tiger; nay, it is far worse, for tigers do but tear in order to have food, while we rend each other for paragraphs.”
আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলয় নীল। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরেই অধিকাংশ ফেসবুক ও ব্লগীয় আলাপে দেখেছি বাক-স্বাধীনতা নিয়ে একই তর্ক বারবার বারবার হচ্ছে। তর্কটি শুরু হয় তথাকথিত মুসলমান* কোন বাংলাদেশি ফেসবুকার বা ব্লগার যখন দাবি করেন উগ্র নাস্তিক ও উগ্র মৌলবাদী উভয়ই সমান ক্ষতিকর। কিংবা একটু বদলে বলেন এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে চাপাতির পাশাপাশি উগ্র নাস্তিকতা ও ধর্মকে কটাক্ষ করার দায়ও আছে।
যারা এগুলো বলছেন, তাদেরকে “তথাকথিত মুসলমান” বলেছি, কারণ খুঁজলে দেখা যাবে তারা কোন না কোন মানদণ্ডে ওসব মৌলবাদীর কাছে প্রকৃত মুমিন না হবার কারণে ধরা খেয়ে যাবেন। অথচ সেফসাইডে থাকার কারণে এখনও অবধি তারা ফেসবুক ও ব্লগে এটুকু লিখতে পারছেন। নাস্তিকদের কষে দোষারোপ করতে পারছেন। কিছুদিন পরে সকল নাস্তিক তকমাধারী ব্লগারকে মারা হলে মৌলবাদীরা যখন একে একে তাদেরকেও কোপ দিতে আসবে, তখন এমন হাজারও স্ট্যাটাস দেখিয়ে চাপাতিধারী মৌলবাদীদের থামানো যাবে না। একাত্তরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। গ্রামে পাকিস্তানি মিলিটারি আসছে শুনে দাড়ি-টুপি পরা সাচ্চা মুসলমান গ্রামের মাতব্বর এগিয়ে গিয়েছেন তাদের বরণ করতে। বলতে গিয়েছেন এই গ্রামে “মুক্তি” নাই, এই গ্রামে সবাই “পাকিস্তান” চায়। মিলিটারি কোন কথা বলার আগেই সোজা গুলি করে দিয়েছে। দেখা মাত্রই। সেই মাতব্বরের মুসলমানিত্ব তাকে বাঁচাতে পারে নি। এবারও এসব তথাকথিত ফেসবুক ও ব্লগবাসীদেরকেও বাঁচাবে না। মৌলবাদ ও সন্ত্রাস মুসলমানিত্ব দেখে না।
এবার এই অবস্থানকে আরো জোরদার করেছেন পুলিশের আইজি, এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী [৩]। তারাও একই সুরে বলেছেন নাস্তিকদের ব্লগারদের সাবধানে কথা বলতে হবে। সাড়ে পাঁচ মাসে তারা সকলে মিলে খুনীদের সাড়ে পাঁচটা গুপ্তকেশও বাঁকা করতে পারেন নি। বরং দেশে ও দেশের বাইরে নিজেদের পরিচিত করেছেন পশ্চাদপসর ও ধর্মীয় সন্ত্রাসের দেশ হিসেবে। আজকেই আমার বন্ধুলিস্টের এক নেপালি বন্ধু আইজিপি’র উক্তি সম্বলিত খবরটি [৪] শেয়ার করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ নিডস টু গেট দেয়ার শিট টুগেদার’। আমি নিশ্চিত আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যারাই বাংলাদেশের খবর রাখেন, তারাও এই বক্তব্য দেখে যারপরনাই বিরক্ত, হতাশ, ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। টুইটারে নজর রাখলেই তাদের এই প্রতিক্রিয়ার আমেজ টের পাওয়া যায়। আমরা কি বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশের সার্বিক চেহারা কেমন হয়ে যাচ্ছে সবার কাছে?
এতে অবশ্য উটের মতো বালুতে মাথা গুঁজে রাখা আপামর বাংলাদেশিদের কিছু যায় আসে না। তারা নিশ্চিন্তে আছেন, বাইরে কোন ঝড় হচ্ছে না। বালু থেকে তারা মাথা তোলেন না। কারণ মাথা তুললেই কাটা পড়তে পারে!
সরল চোখে দেখলে বাংলাদেশে ব্লগ ও ফেসবুক স্ট্যাটাস লেখার জন্য পাঁচজন মানুষকে মারা হয়েছে। রাষ্ট্র এইসব খুনের বিচার করছে না। দায়সারাভাবে ‘করছি, করবো’ বলে টালবাহানা করছে। পাঁচটি খুনের কোনটির পরেই কোন সরকারি বিবৃতি আসে নি কারো তরফ থেকে। এতোদিনে এসেছে, যেখানে খুনের শিকারকেই মুখ সামলে কথা বলতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এতেও ততোটা অবাক হই নি। রাজনীতিবিদদের কাছে আমি নীতি-নৈতিকতা আশা করি না। এই দেশ বহু আগেই স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, সুতরাং তাদের কোন নৈতিক দায়বদ্ধতা নেই।
আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে খুনের দর্শকদের মনে খুনের শিকার হওয়া মৃতদের প্রতি সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতার তীব্র অভাব দেখে। বুঝতে পারি কিছু মানুষ প্রাণ হারানোর ভয়ে কথা বলছেন না, মনে মনে সমর্থন করলেও নিশ্চুপ হয়ে আছেন লাইমলাইটে আসার ভয়ে। তাদেরকে নিয়েও অবাক হই নি। প্রত্যেকেরই বাস্তবতা ও পিছুটান আছে। সেজন্য তাদের নিষ্ক্রিয়তাকে মেনে না নিলেও বুঝতে পারি তারা কেন চুপ আছেন। কিন্তু অবাক হচ্ছি যারা চোখ বন্ধ করে খুনের শিকার হওয়া লেখক-ব্লগারদেরকেই দোষারোপ করছেন, তাদের দেখে। সরকার-প্রভুর সাথে সকল ‘হ্যাঁ’য়ে ‘হ্যাঁ’ বলতেই হবে? আপনাদের নিজের চিন্তা করার ক্ষমতা নেই?
এই মানুষগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে কি কোন অপরাধ করেছিল? এরা তো আপনার মতোই সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকেরই সাধারণ জীবন ছিল, ঘর ছিল, সংসার ছিল, চাকরি-বাকরি, থালা-বাসন ছিল আপনার মতোই। একটাই শুধু পার্থক্য, তারা ইন্টারনেটে লেখালেখি করতেন। তাও আপনার গায়ে পড়ে লেখাগুলো দিয়ে আসেন নাই। মোটামুটি নিভৃতেই লিখেছেন। আমি ২০০৮ সাল থেকে বাংলা কমিউনিটি ব্লগে অসংখ্য ব্লগ পড়েছি, নিজেও কিছু কিছু লিখেছি। কিন্তু একমাত্র অভিজিৎ রায় ছাড়া কারো লেখাই সেভাবে আমি আগে পড়ি নি। তারা কেউই যশখ্যাতির দেওয়ানা ছিলেন না, যে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে এটেনশন চাইবেন। তারপরেও তাদের প্রতি আপনার কেন এই বিদ্বেষ? আপনার চারপাশেই কত জঘন্য অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে! প্রতিদিন আপনার সাথে কত মানুষ কত অন্যায় করে! সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন, লাথি-গুঁতো খেয়েও নীরবে সয়ে যান। অথচ এই নৃশংস খুনের শিকার মানুষগুলোর প্রতি এতো আক্রোশ কেন? এরা আপনার কোন ক্ষতিটা করেছে, ভাই?
আপনার মনের একান্ত আশা, এসব হুজ্জোতকারী নাস্তিক ব্লগাররা খুন হতে থাকলে চুপ করবে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই আশা সম্ভবত পূরণ হবে না। হয়তো আরও বহুদিন পার হবে এভাবে চাপাতির তলে। হয়তো রক্তে ভেসে যাবে আরো বহু বসার ঘর, খুলি মগজ চশমা পড়ে থাকবে মৃতপ্রায় ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে। তারপরেও দেখবেন কোন এক নিভৃত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে সেই একই কথাগুলো আবারও উচ্চারিত হচ্ছে মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। আপনি সেগুলোর অচলায়তন ভাঙতে চান না। বেশ! আপনার সে অধিকার আছে। আবার আপনার মতোই দশটা-পাঁচটা অফিস করা অনেকেই রাতে ঘরে ফিরে ইন্টারনেটে লিখবে। ঠুক ঠুক করে সেই অচলায়তনর দেয়ালে আঘাত করে যাবে। সে অধিকারও তার আছে। আপনার রাষ্ট্র, আপনার সমাজ, আপনার ধর্ম তাকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারবে না।
[১] http://istishon.com/node/12952
[২] Beatrice Evelyn Hall, The Friends of Voltaire, 1906
[৩] http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1009668.bdnews
[৪] http://www.patheos.com/blogs/friendlyatheist/2015/08/10/bangladeshi-police-tell-atheist-bloggers-to-stop-criticizing-religion-if-they-want-to-avoid-being-killed/
যেভাবে শিশু হত্যার হিড়িক লেগেছে তার কাছে নাস্তিক হত্যা ক’দিন বাদে তুচ্ছ হয়ে যাবে। এদিকে চাপাতি দিয়ে কোপ দিবে ঐদিকে চোখে বেহেস্তের ক্যাটারিনা কাইফ ভেসে উঠবে
একটা চমৎকার লেখা লিখেছেন। খুব ভাল লাগলো লেখাটি পড়ে। এমনটা যে হবে তা কিন্তু আমাদের গুণীজনেরা অনেকেই প্রেডিকশন করে গেছেন। আর আমরাও বিগত দশ বছর যাবত ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ আর ভন্ড সুশীলদের বারবার হাজারবার শুনিয়ে আসছি —‘তোমাকে বধিবে যে, মাদ্রাসায় বাড়িছে সে’। এ জন্যে কত গালমন্দ, তিরষ্কার অপমান সইতে হয়েছে আপন ও পরজনদের কাছ থেকে। কতবার বলেছি- জলে নেমে কূমীরের সাথে পিরিতি ভাল না।
এই কূমীর চাষে সব চেয়ে মারাত্বক ভুমিকা পালন করেছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া তথাকথিত মডারেট মুসলমানরা। এর সাথে যোগ দিয়েছে মাথা মোটা বামরা। সুটকি খেয়ে পেটে ব্যথা হলেও এর জন্যে দায়ী করে আমেরিকাকে। ধর্মের নামে (মূলত ইসলামের নামে) যত খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অন্যায় অত্যচার নিপীড়ন, নির্যাতন্ পাথর মারা গলা কাটা, বউ তালাক দেয়া, ভুতে ধরা, যাদু করা, বাণ মারা, সব আমেরিকার ষড়যন্ত্র। মুসলমান কোন অন্যায় করতেই পারেনা, বিশেষ করে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র শিক্ষক, হুজুর তালেবানরা। সুতরাং মনের সুখে চাষাবাদ করো টুপি আর হিজাবের, গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তৈরী করো মাদ্রাসা আর মসজিদ। রাজনীতিবিদরা দৌড়ায় মক্কায় আর মাজারে, শিক্ষিতরা দোয়া ভিক্ষে চায় শর্ষীণা আর সাফীর কাছে। ফলাফল হয়েছে এই, ব্যাঙ্গাচির মত বেড়েছে কূমীরের ছানা। ৫৬ হাজার বর্গ মাইল রক্তাক্ত করে দিয়ে তারা তাদের শক্তি দেখালো তবু সুশীলদের চক্ষু খুলেনা। শাপলা চত্বরে তাদের সংখ্যা দেখে এবার সুশীলরা অবাক, এমনটা যে হবে জানতাম না তো। ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বঘোষীত নাস্তিক পর্যন্ত বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা সমাজ সমস্ত জাতি। নজরুন বলতেন- যে হাত বাঘে খেছে তাকে কেটে ফেলাই উত্তম। পঁচে যাওয়া হাত একদিন মগজও পঁচিয়ে দিবে। রক্তক্ষয়ী বিপ্লব ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণের সহজ সল্প কোন পথ নেই। বিশ্বাসের ভাইরাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শহিদ হওয়া আমদের তরুণদের রক্ত বৃথা যাবেনা। আমাদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। রক্ত ছাড়া বিপ্লব সাধন হয় না এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
আমরা আজ চতুর্দিক থেকে শত্রুবেষ্টিত। আমরা সংখ্যায় কম, কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যারা দেশে আছেন তারা তো বটেই বিদেশে থেকেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনা্র অতি নিকটের সাধু-সন্তমূখী, নীরব শান্ত চেহারার লোকটাই হঠাৎ করে আপনার ঘাড়ে কোপ বসিয়ে দিতে পারে। অনন্ত আর নীলয়ের মোবাইল লাপটপ জীহাদীরা নিয়ে গেছে। যাদের নাম ঠিকানা ওদের মোবাইলে ছিল আপনাদেরকে কী করতে হবে তা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেন। আসু সঠিক পদক্ষেপ নিন। স্বনামে যারা লিখেন তাদেরকে তো অবশ্যই বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মনভাঙ্গার কিছু নেই, অন্যান্য দেশ ও জাতির মধ্যে আলোর পথের এই যাত্রীদের ঠিক এই পরিস্থিতির মোকাবেলা হতে হয়েছে। আমরাও পারবো। সত্যের কাছে মিথ্যের, আলোর কাছে আঁধারের পরাজয় অনিবার্য।
সবথেকে বিপজ্জনক প্রবণতাটি আরেকরকম। বিবিসি-বাংলা তে প্রকাশিত এই হত্যাকাণ্ডের পোস্টটিতে যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যে ঘাতকদের শুধু সমর্থন করেছেন, তাই-ই নয়, তাদের (ঘাতকদের) নিরাপত্তা প্রার্থনা করে আল্লাহ্-র কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই সরকারী কলেগের ছাত্র, ইঙ্গিনীয়ার (অন্ততঃ ফেবু প্রোফাইলে) ইত্যাদি পেশার মানুষজনও রয়েছেন। কাজেই শুধুমাত্র শিক্ষার অভাব বলে এই প্রবণতাটিকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। বাংলার কোমল জমিতে জন্মে ইনারা মরু অঞ্চলের আই এস কর্তাদের মত মানসিকতা বহন করে চলেছেন! খুব সম্ভবতঃ বড়সড় সামাজিক সংস্কার বাংলাদেশে আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো সেই সামাজিক সংস্কার কি আদৌ বাংলাদেশের মানুষ জরুরি মনে করছে কি না। মনে করলে সেটা কীভাবে আনা যায় তার রূপরেখা নিয়ে তারা ভাবছে কি না।