ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-২
আমাদের মূল আলোচনা বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা হলেও কিছুটা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও যেতে হবে বিশ্লেষনের প্রয়োযনে, কারন এই প্রবনতা বা সমস্যা যেটাই বলা হোক সেটার প্রকৃত কারন বুঝতে গেলে বিচ্ছিন্ন ভাবে বাংলাদেশ আলোচনা করা যথেষ্ট নয়। মূল সমস্যাটা যেহেতু ইসলাম ভিত্তিক তাই আলোচনা সেদিকেই সীমিত থাকছে।
পাকিস্তানের উদাহরন দিয়ে প্রথম পর্ব লেখা শুরু করেছিলাম (সেখানে সূত্র আছে), তাদের জন্য বস্তুত করুনা ছাড়া আর আমার তেমন কোন অনুভূতি হয় না। সৌদী সরকারসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু রাষ্ট্র ও নানান সংগঠন আমাদের দেশসহ বিশ্বময় অনেক দেশেই ইসলাম প্রচারে বহু অর্থ ব্যায় করে, এর আওতা শুধু নির্দোষ ধর্মপ্রচারেই সীমিত থাকে না। জংগী জেহাদি শিক্ষা বিস্তারের কড়া অভিযোগও অনেক সময় আসে। আরব দেশের ধর্মভিত্তিক আজগুবি কালাকানুন, বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে সমালোচনা বা ব্যাংগ বিদ্রুপ মিডিয়াতে প্রকাশ হলে ইসলাম প্রিয় ব্যাক্তিরা আরব দেশ মানেই ইসলাম না জাতীয় কথাবার্তা বললেও এটা এড়াবার উপায় নেই যে নবীজির জন্মভূমি হবার কারনেই হোক কি সাম্প্রতিক কালের পেট্রোডলারের গুনেই হোক, ইসলামী জগতে আরব দেশের বিশিষ্ট অবস্থান আছে, ধর্মীয় বিষয়ে তাদের অনুকরনের ধারা বিরাজমান আছে। তাই আরব দেশের নিজেদের সিলেবাসে কি আছে সেটা দেখা দরকার। আমাদের দেশেও আরব দেশের প্রভাবেই ধর্মশিক্ষার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষয় সমূহ জোর দেবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মাধ্যমিকে ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক থেকে আবশ্যিক করার দূর্বুদ্ধি ছিল এরশাদের, সে নিজে ছিল আরব সরকারের অতি পেয়ারার লোক, তেমনি ছিল তার ধর্মমন্ত্রী রাজাকার সর্দার মাওলানা মান্নান। যদিও মূল কারন অর্থাৎ ধর্মীয় মৌলিক বিশ্বাসের প্রভাব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
সৌদী আরবের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ছাপানো ধর্মশিক্ষাতেও অপ্রত্যাশিত তেমন কিছু নেই। সেই ধর্মের নামে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো, হিংসাত্মক জেহাদি শিক্ষায় ছেলেপুলেকে উদ্ধুদ্ধ করার পুরনো গল্প। এই লিঙ্কে
তাদের দেশের বেশ কিছু নমুনা পাওয়া যাবে। ৯১১ এর ঘটনা না ঘটলে হয়ত বহিঃবিশ্ব এসব নিয়ে মাথা ঘাটাতো না, শখ করে কেউ বিষের থলি নিজের উদরে পুরতে থাকলে কার অত দায় পড়ে সে বিষের থলি ধরে টানাটানি করার? মুশকিল হল মার্কিনীরা ৯১১ এর ঘটনায় প্রবল নাড়া খায় এবং কি কারনে বিশেষ কিছু দেশের লোকে গনহারে হেট ক্রাইমে লিপ্ত হতে পারে তা নিয়ে নানান এনালাইসিস করে। এর ফলে বন্ধু প্রতীম সৌদী সরকারকে অনুরোধ করে এসব ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো অংশ ধর্মশিক্ষা থেকে বাদ দিতে। আরব সরকার নিজেরাও মূল অভিযোগ স্বীকার করে, কারন ঘৃনা বিদ্বেষের মাত্রা এতই প্রকাশ্য এবং প্রবল ছিল যে অস্বীকারের কোন উপায় ছিল না। আরব দেশে এই ঘৃনাবাদ বপনের কাজটি শুরু হয় তাদের প্রথম শ্রেনী থেকেই, সেখানে সরাসরি শেখানো হয় যাবতীয় অবিশ্বাসীদের ঘৃনা করার, তাদের মধ্যে শুধু খৃষ্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক, নাস্তিকই নয়, এমনকি সুফি, শিয়া ও ওয়াহাবী ছাড়া অন্য তরিকার সুন্নী মুসলমানদের ঘৃনা করারও শিক্ষা দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে চলে ধর্মশিক্ষার নামে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃনা বিদ্বেষের বীজ বপন ও চাষাবাদের কাজ; ……বিধর্মীরা সকলে এক যোগে ইসলাম ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে (আমাদের বইতেও একই তত্ত্বই আছে), তাদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ, এমনকি সম্ভাষন জানানোও নিষিদ্ধ……অবশেষে তাদের দ্বাদশ শ্রেনীতে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলাম কায়েম করা যে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব এ চুড়ান্ত জেহাদি শিক্ষা দেওয়া হয়। সোজা কথায় একদিকে মুসলমান (তাও আবার ওয়াহাবি ধারার সুন্নী মুসলমান), অপরদিকে বাদবাকি বিধর্মী; বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদ করে ইসলাম কায়েম করার মধ্য দিয়েই জগতের যাবতীয় অন্যায় অনাচার বিলুপ্ত হবে এই হল সরল সমীকরন।
সৌদী সরকার সংশোধনের ওয়াদা করে এবং ২০০৫ সালের মার্চ মাসে দাবী করে যে তারা সফল ভাবে সব হেটফুল অংশ সরিয়ে ফেলেছে। মুশকিল হল কার্যত দেখা যায় যে তেমন কিছুই আসলে পরিবর্তন করেনি। মার্কিনীরা সম্ভবত সমস্যার মূল বা এ সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা ছিল না বলেই আশা করতে পেরেছিল যে আরব সরকার রাতারাতি শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসা এসব ঘৃনা বিদ্বেষের বীজ দূর করে ফেলতে পারবে। নিজের দেশের সিলেবাসে পড়ায় তো পড়ায়, আমাদের তেমন কিছু করার নেই, সেসব পাঠ করে তাদের ভবিষ্যত নাগরিকরা অপর সম্প্রদায় বিশেষ করে পশ্চীমকে ঘৃনা করার শিক্ষা পাবে, কেউ কেউ এর ভিত্তিতে বিশ্বরাজনীতির নানান হিসেবে জেহাদি বোমাবাজ হবে। এটুকুতেও সমস্যার শেষ নয়। আরব সমমনা হাবিবিরা এত অল্পে সন্তুষ্ট নন, ওনারা নিজ সিলেবাস সংশোধন করা তো দূরের কথা, উদ্যোগী হয়েছেন এসব ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো (অনেকের কাছে অবশ্য ঈমানী বিদ্যা) বিদ্যা কিভাবে আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডের মত বিধর্মী দেশে রফতানী করা যায় সে প্রকল্পে। তেলের পয়সার গুনে ও পশ্চীমের খোলা জানালার সুযোগ নিয়ে প্রাথমিক কাজ অনেক আগেই শুরু করেছিলেন, বহু বছর ধরেই ওনাদের অর্থায়নে পশ্চীমের নানান দেশে গড় উঠেছে নানান ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সিলেবাস বই পুস্তব আরব সরকার পাঠান, এমনকি কিছু শিক্ষকও ওনারাই পাঠান।
আগে এসব নিয়ে পশ্চীমে কেউ তেমন গা করত না, ৯১১ এর পর থেকে মিডিয়া এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে, যেমন ২০০২ সালের আমেরিকার একটি খবর এটি। আমেরিকায় ২০০৮ সালে উত্তর ভার্জিনিয়ায় সৌদী সরকারের সরাসরি পরিচালনায় পরিচালিত ISA (Islamic Saudi Academy) স্কুলের বইতেও বেশ কিছু পরধর্ম ও জাতি বিদ্বেষের উপাদান পাওয়া যায়। এ বিদ্যালয়ের দুয়েকজন শিক্ষক আল কায়েদার সাথে সংযুক্তির কারনে অতীতে জেলও খেটেছেন। ISA স্কুলের বক্তব্যও সৌদী সরকারের মতই, তারা বারংবার প্রতিশ্রুতি দেয় সংশোধনের, তেমন কিছু আদতে করে না।
যুক্তরাজ্যেও একই অভিযোগ মাঝে মাঝেই ওঠে সৌদী সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের ব্যাপারে। সেখানে বিধর্মীরা শূকর ও বানরের বংশধর, চিরকাল দোজখে পুড়বে এ জাতীয় অমূল্য ঈমানী শিক্ষার পাশাপাশি চুরির কোরানিক শাস্তি হিসেবে হাত পা কোন যায়গা থেকে কতখানি কর্তন করতে হবে, সমকামিদের হত্যা করতে হবে সেসব শিক্ষাও বাচ্চাদের সচিত্র দেওয়া হয়, যা সরাসরি সেদেশের প্রচলিত আইনী ব্যাবস্থার বিরোধী। এসব স্কুল ওয়ালাদের অজুহাতও ধর্মগ্রন্থের বানীর মতই চিরন্তন; তাদের পাঠক্রমে সমস্যাপূর্ন কিছুই নেই, আপত্তিকর বিষয় সমূহ ‘আউট অফ কন্টেক্সট’।
ব্রিটেনে এ জাতীয় কিছু স্কুলের ওপর (শুধু মাত্র সৌদী নিয়ন্ত্রিত নয়) রিপোর্টিং হয়েছে। এর জবাবেও কিছু চাতূরীর আশ্রয় নেবার আলামত আছে। একই মসজিদ কমিটি যারা স্কুল চালায় তারা ফতোয়া হিসেবে বিধর্মী বিদ্বেষী বার্তা প্রচার করে (যেমন সংগীত হল ইসলাম ধ্বংসের জন্য বিধর্মীদের চক্রান্ত), যদিও জিজ্ঞাসা করা হলে স্কুলের সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করে। ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড এখানেও লক্ষনীয়, কট্টর মোল্লা রিয়াদ উল হকের (এমন বহু কট্টর ধর্মগুরুউ পশ্চীমের উদার ধর্মীয় নীতির ছত্রছায়ায় বহাল তবিয়তে আছে, গত লেখায় ব্রিটেনের আরেকজন সেলিব্রিটি মোল্লার তত্ত্ব বলেছিলাম) ভাষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বলে দাবী করা, আবার তাকেই ‘ইন্সপায়রিং স্পীকার’ বলে স্কুলে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের সৌদী দূতাবাসও নিজেদের সরকারের ছাপানো বই এর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবী করে। এসবের ফলে নুতন জেনারেশনে তৈরী হবে ভয়াবহ বিভাজনের যার ফল কারো জন্যই ভাল হবে না। অন্য ধর্মের কট্টর লোকেরাও বসে থাকবে না, তারা এসবের সুযোগ নেবে, যেমন একটি ইভানজেলিক্যাল স্কুলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দেওয়ার আলামত পাওয়া গেছে।
কানাডার টরন্টোতে সম্প্রতি এক বড় মাদ্রাসার পাঠক্রমে ইহুদী বিদ্বেষ মূলক শিক্ষার ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে, মাদ্রাসার পারমিট সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অবশ্য ক্ষমা চেয়েছে, তাদের ওয়েব থেকে এ অংশ সরিয়ে ফেলেছে। এ পাঠক্রম ইরান সরকারের পাঠানো বলে অভিযোগ আছে যাতে অবাক হবার মত তেমন কিছু নেই। গত বছরও অটোয়া স্কুল বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত ফার্সী ভাষা শিক্ষার পাঠক্রমে ব্যাবহৃত ইরানী বইতে ইহুদীদের বানরের সাথে তূলনা করা হয়েছে অভিযোগ ওঠার পর স্কুল বোর্ড নীরবে সরিয়ে ফেলে।
বলাই বাহুল্য যে পশ্চীমা দেশগুলিতে ইসলাম ধর্ম শিক্ষার নামে প্রায়ই সমজাতীয় অভিযোগ অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই ওঠে (ওপরে প্যানারোমা ভিডিওতে আছে), কখনো বা সতর্কীকরন করা সত্ত্বেও আপত্তিকর অংশের প্রচার চালানো বন্ধ না করলে স্বাভাবিক কারনেই প্রতিষ্ঠান বন্ধই করে দেওয়া হয়। আমি সেসবের তালিকা যোগ করে অযথা লম্বা করছি না। সরকারী পর্যায় থেকে সরাসরি আসা ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো কারিকুলাম মোটেও হালকা ভাবে নেওয়া যায় না। বেসরকারী পর্যায়ে তাও হয়ত বলা যায় যে ‘অশিক্ষিত’ দুয়েকজন মোল্লা আলেম ‘ভুল’ ইসলাম শেখাচ্ছে। সনাতন মুসলমান মানস যেহেতু বিধর্মী বিশ্বাসের প্রতি ধর্মগতভাবেই শ্রদ্ধাশীল থাকার বদলে ধর্মীয় সূত্রে বিপরীত শিক্ষাই পায় তাই তাদের কাছে সম্ভবত এসব ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো শিক্ষায় আপত্তিকর কিছু লাগে না। অভিযোগটা কিছুটা গুরুতর শোনালেও সত্যতা অস্বীকার করা যায় না, নইলে আমাদের দেশের কথাই চিন্তা করেন, বহাল তবিয়তে কিভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্তত ১৬ বছর ধরে বিনা প্রতিবাদে সরাসরি অপর ধর্ম বিশ্বাস ও বিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃনা বিদ্বেষের পাঠাদান দেওয়া হচ্ছে (প্রথম পর্ব দ্রষ্টব্য)? যেসব মুসলমান বিবেকের তাড়নায় এসব পছন্দ করেন না তারাও সামাজিক নানান চাপের ভয়ে মুখ বুঁজে সয়ে যান, সর্বোপরি ধর্মবিদ্বেষী হিসেবে আল্লাহর লানতের ভয় তো থেকেই যায় কারন সামান্য অগ্রসর হলে দেখা যায় যে এসবের মূল সূত্র হিসেবে সরাসরি হাদীস কোরানই ব্যাবহার করা হচ্ছে (যেমন সৌদী পাঠক্রম, আমাদের দেশের পাঠক্রম)। ধর্মের নামে যাইই শিক্ষা দেওয়া হোক তার সরাসরি প্রতিবাদ অন্তত আমাদের মত সংস্কৃতিতে খুব সহজ নয়। পশ্চীমেও বসবাসকারি মুসলমান মনন এই ট্রেন্ডের বাইরে খুব একটা নয়।
কথা হল আমাদের বা আরব সংস্কৃতিতে যা স্বাভাবিক তা পশ্চীমের লোকে কেন সহজ ভাবে নেবে? তাদের দেশে যদি শেখানো হয় যে তারা বানর শূকরজাত, কিংবা তাদের মত অমুসলমানেরা অনন্তকাল দোজখে পুড়বে, অমূক জাতি মহাষড়যন্ত্রকারী, তমূকের ধর্মগ্রন্থ বাতিল, কেউ চির অভিশপ্ত জাতি তবে তারা এসব মহতী শিক্ষা শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতার ছত্রছায়ায় চলতে দেবে? শুধু যে কিছু বিদ্যালয়ের কোর্সে এসব শিক্ষা দেওয়া হয় তা কিন্তু নয়, মসজিদের খোতবায় নানান ধরনের ধর্মীয় সমাবেশেও এজাতীয় লেকচার কম বেশী খুবই সাধারন। আমি নিজেও একাধিক মসজিদে এ জাতীয় কথাবার্তা শুনেছি। সরাসরি জাতি বা ধর্ম বিদ্বেষ ছড়ালে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে অনেকে বিশেষ করে ৯১১ এর পর থেকে সতর্ক হয়েছেন। এসব আপাতত আলোচনার বাইরে থাক।
বাংলাদেশে কেউ ইহুদী শিক্ষালয় বা হিন্দু টোল খুলে বসে সেখানে যদি পড়ায় যে মুসলমানরা শূকর হনুমান থেকে বিবর্তিত সবচেয়ে কুচক্রী জাতি, বোধ বুদ্ধিহীন চতুষ্পদ প্রানী, তারা অন্ততকাল দোজখে রোষ্ট হবে, মুসলমানদের সাথে আমাদের আজীবন যুদ্ধ করে যেতে হবে তবে বাংলাদেশী মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কোন ভাষায় হবে? ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে হাসিমুখে মেনে নিবে নাকি ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার কঠোর অভিযোগ করবে? এসব শিক্ষা ডিফেন্ড করে যদি কেউ চেঁচায় যে পাকিস্তানে মুসলমানেরা বিধর্মীদের নির্যাতন করছে, ইরান থেকে বিধর্মীদের অত্যাচার করে তাড়িয়েছে তাই এসব শিক্ষার দরকার আছে তবে সে যুক্তি কেমন শোনাবে? স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের জাতিগত ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো বিদ্যা শুধু ধর্মানুভূতির ব্যাপারেই নয়, আধুনিক সভ্য সমাজের মৌলিক নীতিমালা পরিপন্থী। নিজেদের ধর্মীয় জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ এবং অপরকে নিকৃষ্ট ঘোষনা করার সাথে হিটলারের নাজিবাদের তত্ত্বীয় পার্থক্য কতটা?
আমি গত পর্বে ইসলামী জগতে ব্যাপক সমাদৃত ইবনে কাথিরের তাফসির কিংবা মারেফুল কোরান থেকে অতি সামান্য কিছু অংশ মাত্র কোট করেছি। কি পরিমান জাতি বিদ্বেষী ধ্যান ধারনা, নির্দেশনা এসব জনপ্রিয় ঈমানী কিতাবের অজস্র যায়গায় আছে তার তালিকা নির্ধারন করতে গেলে বহু সময় লাগবে। এসবের একটি মাত্র লাইনের জন্যও নিঃসন্দেহে এসব ঈমানী পুস্তক পশ্চীমা দেশে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হতে পারে, আমাদের মত দেশে নাহয় জাতি বিদ্বেষী ধ্যান ধারনার প্রচার নিষিদ্ধ করাও অনেকের ধর্মানুভূতিতে লেগে যাবে। পশ্চীমা দেশে এখনো ধর্মশিক্ষালয়ের হেটফুল লেসনের লেজ সেভাবে খোঁজ করা শুরু হয়নি, এখনো মনে হয় তাদের ধারনা যে কিছু লোকে রাজনৈতিক বা নিতান্তই ব্যাক্তিগত ভুল ধারনার বশতঃ এসব ছড়াচ্ছে যাদের সাথে মূলধারার ইসলামের তেমন সম্পর্ক নাই, ধর্মীয় বিধিবিধান যেহেতু চুড়ান্তভাবে ইন্টারপ্রেটেশনের ওপরই নির্ভর করে, আক্ষরিকভাবে নয়। তবে রোগ আরো ব্যাপক মাত্রায় ছড়ালে নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে আরো গভীরে খোঁজ করা হবে। অজস্র হেটফুল অংশ বিশিষ্ট এসব তাফসির জাতীয় কেতাব নিষিদ্ধ করার কথা উঠবে। তখন এক শ্রেনীর ইসলাম প্রেমী দাবীদারদের গতবাধা কথাও শোনা যাবে; সবই ইসলাম ধ্বংসের চক্রান্ত…পশ্চীমে প্রতিদিন হাজার হাজার কাফের নাছারার ইসলাম গ্রহন তারা সহ্য করতে পারছে না……।
আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলিতে ঠিক কি বিষয়ে কি শিক্ষা দেওয়া হয় তা বিদেশে বসে আমার পক্ষে বার করা সম্ভব নয়। সাধারন স্কুলের ধর্ম বইতেই যেই নমুনা দেখেছি তাতে কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে, বিশেষ করে সরকারী নিয়ন্ত্রনহীন কওমী মাদ্রাসাগুলিতে কি পাঠ দেওয়া হচ্ছে তা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়, এ নিয়ে সামনের পর্বে হয়ত কিছুটা আলোকপাত করব। এখানে সেখানে বিচ্ছিন্ন ভাবে শুনেছি যে মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এসব তাফসির, নানান বড় বড় আলেম বুজুর্গের তত্ত্ব খুবই গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়, কোরান, হাদীস, নানান তাফসির এসবের ভিত্তিতে নানান প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় ইসলামী আইন বা ফিকাহ শাস্ত্র। কাজেই এসব নানান হেটফুল ব্যাখ্যা সমন্বনিত তাফসির নির্বিষ, কেবল ইতিহাসের অংশ এভাবেও চিন্তা করার উপায় নেই।
ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্র কেমন হতে পারে তার দুটি নমুনা দেখা যেতে পারে। অবশ্যই আমি দাবী করছি না যে ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্র মানেই এই্সব জিনিসে পরিপূর্ন হতেই হবে। ব্যাক্তি বিশেষে কট্টর নিয়ম কানুন অবশ্যই ভ্যারি করতে পারে। আমেরিকা ইউরোপে বসা ফিকাহবিদরা নিশ্চয়ই আরবের ফিকাহবিদদের মত লিখবে না, এইটুকু জ্ঞান অন্তত ওনাদের আছে আশা করা যায়। যা গুরুত্বপূর্ন বোঝার তা হল যে কট্টর, প্রাচীনপন্থী, জাতি বিদ্বেষী ধ্যান ধারনা সমূহ কেবল ইতিহাসের পাতাতেই স্রেফ রেকর্ড আকারে সীমাবদ্ধ নেই, সেসবের ভিত্তিতে ইসলামী আইন আকারে রীতিমত কোডিফাই করে সাড়ম্বরে ও প্রকাশ্যে প্রচারনা চলছে।
প্রথম বাংলা বইটির নাম “কুরান ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকাহ”। দ্বিতীয় খন্ডের জিহাদ অধ্যায় দেখুন (পৃষ্ঠা ৭৮৫-৭৮৬)। কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ; “ইসলামে যুদ্ধের উদ্দেশ্য হল কুফরি ও শিরকের অপসারন করা…যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছে নাই তার সংগে যুদ্ধ দাওয়াতের পরেই হবে…আল্লাহ তায়া’লা বনি আদমকে একমাত্র তারই এবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র যারা বিরোধীতা করে এবং কুফরির উপরেই অটল থাকে তাকেই হত্যা করা জায়েজ।“ কি নিদারুন সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ন কানুন না? যারা কুফরি করে অর্থাৎ এক আল্লাহ বা ইসলামে বিশ্বাসী নয় তাদের আগে ইসলাম গ্রহনের দাওয়াত দিতে হবে, সে দাওয়াত তারা প্রত্যাখান করলেই ব্যাস, তাদেরকে ইসলামী আইনানুসারে হত্যা করা ঈমান্দার ভাইদের জন্য জায়েয। এই ধ্যান ধারনা (তাও আবার আইনী আকারে) প্রচারকে জাতিগত বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের সরাসরি ইন্ধন বলা যাবে না কোন যুক্তিতে? কেবল মাত্র লাদেন বা শায়খ রহমান গোছের কেউ এক হাতে এসব খোদাই আইন আর আরেক হাতে বোমা বন্দুক নিয়ে তেড়ে এলে তবেই সন্ত্রাসের দলিল বলা যাবে, তার আগে নয়? এই অমূল্য কিতাবটি কোরানের আলো ও ইসলাম হাউজ নামের অন্তত দুটি অথেন্টিক ইসলামী সাইট বিনামূল্যে বিতরন করে অশেষ নেকি হাসিল করছে। আজকাল নাকি ইসলাম বিদ্বেষীরা বেশ কিছু ভূয়া সাইট বানিয়ে (ইসরাইল ভিত্তিক) ইসলামের নামে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে, এই দুটি সাইট অন্তত ভূয়া তালিকায় আছে বলে এখনো জানা যায়নি। কোরানের আলো সাইটে ইবনে কাথিরের সম্পুর্ন বংগানুবাদও আছে।
দ্বিতীয় ফিকাহ শাস্ত্রের বইটির নাম A Summary of Islamic Jurisprudence I ; লেখক ড: সালিহ আল ফাওজান। আগের বাংলা বইটির লেখকের তেমন পরিচিত খুঁজে পাইনি। উইকি ঘেঁটে এই ভদ্রলোক সম্পর্কে যা জেনেছি তাতে তাঁর ইসলামী জ্ঞানে সংশয় প্রকাশের কিছু আমি অন্তত পাইনি। আরবের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়া আইনে পড়াশুনার পর উনি মাষ্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে, ইসলামী জ্ঞান জগতের প্রেষ্টিজিয়াস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত আলেমদের অধীনে উনি পড়শুনা করেছেন। ইসলামী জ্ঞানের স্বীকৃতি স্বরূপ আরব দেশের সর্বোচ্ছ শরিয়া গবেষনা, ফতোয়া কমিটির উনি একজন স্থায়ী সদস্য। ইসলামী জ্ঞান বিষয়ক মাষ্টার্স, ডক্টরেট ডিগ্রী উনি সুপারভাইজ করেন, রেডিওতে প্রশ্নোত্তরের জবাব দেন। ফিকাহ শাস্ত্রে এমন সুগভীর তত্ত্বীয় জ্ঞান বাঘা বাঘা ডিজিটাল আলেম বা আমাদের ব্লগ মুফতিদেরও আছে কিনা সন্দেহ। এই বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী আইনবিদ জিহাদের গুরুত্ব বোঝাতে একে ইসলামের ষষ্ঠ খুটি হিসেবে বর্ননা করেছেন। উনি এ বই এর ৪৭৪/৪৭৫ পাতায় ইসলামে জিহাদের কিছু ‘noble objectives’ বর্ননা করেছেন। প্রথম noble objectiveই হল “To rid people of the worship of taghuts (false objectives of worship) and idols, and to lead them to worship Allah, Alone, associating no partner with Him সাথে অকাট্য রেফারেন্স হিসেবে কোরানের এক আয়াত (সুরা আনফালঃ৩৯) কোট করেছেনঃ “And fight them until there is no fitnah and [until] the religion [i.e. worship], all of it, is for Allah…”। এরপর আরেক noble objective হল “To humiliate the disbelievers take revenge on them, and weaken their power, for Allah, Exalted be He, Says (সুরা তওবার ১৪-১৫ আয়াত রেফারেন্স) (“Fight them; Allah will punish them by your hands and will disgrace them and give you victory….। এই বইটির নাম গুগল সার্চ দিয়ে দেখুন কত সাইটে এর রমরমা প্রচারনা চলছে, আমাদের বাংলা ইসলাম হাউজও আছে। এসব খোদাই আইন সম্পর্কে কি বলা যেতে পারে?
দেশের কিছু অঞ্চলের মাদ্রাসায় ধর্মশিক্ষার আড়ালে যে জংগীবাদি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এ অভিযোগ ‘৯০ দশকের গোড়ার দিক থেকেই শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুনরা করে আসছেন, প্রতিক্রিয়াও অপ্রত্যাশীত ছিল না, ‘সবই ইসলাম বিদ্বেষীদের চক্রান্ত’। ২০০২ সালে চরম প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলির জোট ক্ষমতায় আসার পর ফার ঈষ্টার্ন ইকোনমিক রিভিউতে “বাংলাদেশঃ এ কোকুন অফ টেরর” নামের এক কলাম ছাপা হয়, প্রতিক্রিয়াও চরম দেখা যায়। পত্রিকা ও কলামিষ্ট বার্টিল লিন্টনারের ১৪ গোষ্ঠি উদ্ধার করে দেশের তৌহিদী জনতা, কারন দেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা, মামলাও হয়। এরপর এসব আশংকা সত্য প্রমান করে হরকতুল জিহাদ জাতীয় দলের আবির্ভাব, একের পর এক জেহাদী বোমা হামলা, বাংলা বাহিনীর উত্থানে পুরো দেশে থরহরিকম্প, বোমার শব্দের চেয়েও আরো জোরে রব ওঠা ইসলাম শান্তির ধর্ম…। যাই হোক, হুজি, বাংলা বাহিনী অন্তত একটি উপকার করে গেছে বলতে হয়। তাদের কল্যানে অন্তত মসজিদ মাদ্রাসায় যে নির্দোষ ধর্মশিক্ষার আড়ালেও জংগীবাদি কার্যক্রম হতে পারে সেটা অবশেষে লোকের চেতনায় কিছুটা হলেও প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। সেটাও মনে হয় সম্ভব হয়েছে এটা আবিষ্কার করার পর যে জেহাদী বোমায় কেবল কাফের নাছারাই মারা পড়ে না, নিরীহ মুসলমানকেও জেহাদের আগুন ছাড়ে না। কিছু মাদ্রাসায় রেইড হয়, বেশ কিছু জেহাদী বই পুস্তক, অডিও ভিডিও ধরা আটক করা হয়। পরিসংখ্যানগত হিসেবে জেহাদী কার্যক্রমে লিপ্ত মাদ্রাসার সংখ্যা নগন্য, এটা পূঁজি করে ইসলাম প্রিয় দাবীদাররা মাদ্রাসা বা ইসলামী শিক্ষার সাথে সন্ত্রাসের সম্পর্ক হতে পারে না বলে জোর গলায় দাবী করেন।
আমি জানি না আমাদের দেশে জেহাদী মাল মশলা বলে যা আটক করা হয় সেগুলির ষ্ট্যান্ডার্ড কি, মানে ঠিক কি ধরনের উপকরন থাকলে সেগুলিকে বে-আইনী কিংবা ক্ষতিকর শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ আটক করেন? পত্রপত্রিকায় কিছু ছবি দেখেছি ‘জাগো মুসলমান’ জাতীয় টাইটেলের চাঁদ তারা ব্যাকগ্রাউন্ডে মেশিনগান হাতে লাদেনের ছবি জাতীয় কিছু বই পুস্তক, টেপ, ভিডিও। শুধু জিহাদ কিংবা জিহাদী শব্দ পেলেই নিশ্চয়ই একশন নেওয়া হয় না, কারন পবিত্র কোরান শরীফেও জিহাদকে অশেষ গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু আয়াত আছে, যার ব্যাখ্যা হয়তবা আক্রমনাত্মক জেহাদ নাও হতে পারে। কোরান শরীফ নিশ্চয়ই বাজেয়াপ্ত করা হয় না, যদিও সরকারের এসব ধরপাকড়ের পর কিছু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় দেখেছি যে ‘তাহলে সরকার কোরান শরীফও নিষিদ্ধ করুক’! সরকারের আসলেই উচিত বুদ্ধিবৃত্তিক জেহাদী উপকরন বলতে ঠিক কি বোঝায় সেটার গাইড লাইন নির্ধারন করা। এটা নিশ্চিত যে আমাদের বা পশ্চীমা সরকারগুলিও এখনো ইবনে কাথির কিংবা মারেফুল কোরান জাতীয় বইপুস্তক ‘জেহাদী’ শ্রেনী বিবেচনা করছে না যেখানে আমাদের সরকার নিজেই মারেফুল কোরানের প্রকাশক বলা চলে। চরম জাতি বিদ্বেষী তত্ত্ব প্রচারকারী ইবনে কাথিরের তাফসির, মারেফুল কোরান, ওপরের দুই ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্র (এমন কত আছে কে জানে) জাতীয় বই পুস্তক নিষিদ্ধ, নিদেনপক্ষে সংশোধিত করার দাবী করা যাবে না কোন যুক্তিতে? জাত তুলে সরাসরি গালিগালাজ, বোধ বুদ্ধিহীন চতুষ্পদ প্রানীর সাথে তূলনা, খোদাই নিয়মের নামে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বিধর্মী জাতির ওপর হামলার ইন্ধন, হেয় করার নির্দেশনা, এমনকি সম্পূর্ন বিনা উষ্কানিতে হত্যার নিয়ামাবলী সম্বলিত বই পুস্তক নিষিদ্ধ/সংশোধনের দাবী অনেকের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানবে তাই? এই ধরনের ধর্মানুভূতির গর্বিত অধিকারীরা হিটলারের সমতূল্য নাকি মানসিক প্রতিবন্ধী তা আলোচনার মত সময় আমার আপাতত নেই।
অনুভূতি ফুতি বাদ দিলেও আইনী দিক থেকেও এসব প্রচারনা বে-আইনী মনে করার যুক্তিসংগত কারন আছে। বাংলাদেশ আরব দেশ নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮/২৯ নং ধারানুযায়ী ধর্মীয় ও যে কোন ধরনের জাতিগত বিভাজন, পক্ষপাতিত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে, পেনাল কোডের ২৯৫-২৯৮ ধারা অনুযায়ী এসব শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই নয়, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো জাতিসঙ্ঘের universal declaration of human rights (UDHR) এর চেতনা বিরোধী, বাংলাদেশ সেই ’৭৯ সালেই জাতিসংঘের Racial Discrimination Elimination সনদও স্বাক্ষর করেছে। এই কমিটিকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের তাদের অবদানের নিয়মিত রিপোর্ট পাঠায়। এসব সনদের আওতায় যে কোন ধরনের জাতিগত বিদ্বেষমূলক নীতি, বিভাজন করা যায় না। একদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলে জোর গলায় দাবী করা, আরেক দিকে বিধর্মীদের প্রতি চরম বিদ্বেষমূলক উষ্কানিমূলক উপকরন পাঠ্য পুস্তকে পাঠ দেওয়া, সরকারী উদ্যোগে ছাপানোর মধ্যে বড় ধরনের হিপোক্রেসী আছে। আরব দেশ অন্তত নীতিতে পরিষ্কার, তারা যেহেতু ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদে কড়াভাবে বিশ্বাস করে (তাদের ভাষায় জাতিসঙ্ঘ নীতি ইসলাম সম্মত নয়) সেহেতু তারা জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেনি। তারা এবং সমমনা ওআইসি ভুক্ত দেশগুলি শরিয়া ভিত্তিক Cairo Declaration on Human Rights in Islam (CDHRI) স্বাক্ষর করেছে।
আজকাল দেখি অনেকেই মুক্তমনা, আমার ব্লগ, সচলায়তন, সামু এ জাতীয় কিছু ব্লগ ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ প্রচারনার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষনার দাবী করছেন। ভাল কথা, দেশের আইন ভংগ করা হলে নিষিদ্ধ হতেই পারে। কথা হল যে সে একই বিচারে যেসব সাইট জাতি বিদ্বেষী, এমনকি বিনা উষ্কানিতে অপর জাতির নিরীহ মানুষ হত্যার বিধান প্রচার করার পুস্তক পুস্তিকা প্রকাশ করতে পারে তাদের কেন নিষিদ্ধ করা হবে না? ওয়েব সাইট বাদ দেই, সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামি ফাউন্ডেশন নিজেই কি জাতি বিদ্বেষী প্রচারনা প্রকাশ করে আসছে না? তাদের বিচার কে করবে? নাকি ষ্ট্যান্ডার্ডটা এখানেও যথারীতি ডবল? ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম, এবং অমুসলমানদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে প্রচার করা যাবে কিন্তু ইসলাম বিষয়ক ন্যূনতম সমালোচনাও সহ্য করা হবে না? মুক্তমনা, আমু, সামু এসব ব্লগে কেউ কাউকে জাতিগতভাবে শত্রু ঘোষনা কিংবা হত্যা করা জায়েয জাতীয় ঘোষনা দিয়েছে বলে এখনো শুনিনি।
আশা করি সমস্যাটার স্বরুপ মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে। ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার কুশিক্ষা কেবল আমাদের দেশেরই ধর্মশিক্ষা বইতে একেবারে অনাহুতের মত উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। এ রোগ হয়ত গ্লোবাল না হলেও আন্তর্জাতিক বলাটা মোটেও ভুল হবে না, আর হঠাত করে দুয়েকজন অশিক্ষিত মোল্লা আলেম নিজ থেকে এসব বার করেছে এভাবেও ব্যাখ্যা করার কোন উপায় নেই। অন্যান্য আরো কিছু মুসলমান প্রধান দেশেও এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক শিক্ষার আলামত আছে। এসব শিক্ষার মূল হিসেবে সরাসরি কোরান হাদীস ছাড়াও শত শত, হাজার বছর ধরে ব্যাবহৃত নানান সহি ধর্মীয় সূত্রই ব্যাবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, সময় ও স্থান দুই হিসেবেই এসবের প্রচার কোনভাবেই ব্যাতিক্রম বলা যায় না। সামনের পর্বে এসব সাম্প্রদায়িক শিক্ষার সামগ্রিক কুফল কেমন তা আলোচনা করব।
ইসলাম প্রচারে বহু অর্থ ব্যায় করে, অর্থ ব্যয় না করলে কোন ধমর্ই টিকতো না। লালন-পালন না করলে বহুপ্রাণীর মত ধমর্ো হারিয়ে যেত কালের গর্ভে।
মাধ্যমিকে ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক থেকে আবশ্যিক করার দূর্বুদ্ধি ছিল এরশাদের, এরশাদের দূর্বুদ্ধি ‘ বলে প্রকারান্ত রে তাকে নিরীহ বলে ফেললেন। সে জেনে-বুঝে করেছে। তার আমলে তার পীর-প্রীতি পত্রিকার পাতায় বড় বড় হরফে স্থান পেত। কিন্তু সে আদেৌ ধমর্বিশ্বাস করে কিনা তার কাযর্কলাপ তা বলে না। গদি থেকে নামার পর তার পীর-প্রীতি আর নেই।
সৌদী আরবের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ছাপানো ধর্মশিক্ষাতেও অপ্রত্যাশিত তেমন কিছু নেই। সেই ধর্মের নামে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো, হিংসাত্মক জেহাদি শিক্ষায় ছেলেপুলেকে উদ্ধুদ্ধ করার পুরনো গল্প। এই লিঙ্কে
তাদের দেশের বেশ কিছু নমুনা পাওয়া যাবে। সৌদী আরবের শিক্ষা নিয়ে এখানে একটু বিশ্লেষণ করলে আমার মত অলস পাঠকদের জন্য খুবই ভাল হতো।তাহলে পাঠকরা খুবই উপকৃত হতো।
এর ফলে বন্ধু প্রতীম সৌদী সরকারকে অনুরোধ করে এসব ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো অংশ ধর্মশিক্ষা থেকে বাদ দিতে। কে,কখন,কোন মাধ্যমে অনুরোধ করে ,
তারা সফল ভাবে সব হেটফুল অংশ সরিয়ে ফেলেছে। হেটফুল বাংলায় বললে ভাল হয়।
যুক্তরাজ্যেও একই অভিযোগ মাঝে মাঝেই ওঠে সৌদী সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের ব্যাপারে। সেদেশের সরকার কি করে ?
একটি ইভানজেলিক্যাল স্কুলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দেওয়ার আলামত পাওয়া গেছে।স্কুলটি কোথায় ?
কানাডার টরন্টোতে সম্প্রতি এক বড় মাদ্রাসার পাঠক্রমে ইহুদী বিদ্বেষ মূলক শিক্ষার ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে, মাদ্রাসার পারমিট সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অবশ্য ক্ষমা চেয়েছে, তাদের ওয়েব থেকে এ অংশ সরিয়ে ফেলেছে। ওয়েব থেকে সরিয়ে ফেললেো মাথা থেকে তো সরে নি।
আমি নিজেও একাধিক মসজিদে এ জাতীয় কথাবার্তা শুনেছি। আপনার তো অেেনক ধৈর্য মসজিদে যান !
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮/২৯ নং ধারানুযায়ী ধর্মীয় ও যে কোন ধরনের জাতিগত বিভাজন, পক্ষপাতিত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে, পেনাল কোডের ২৯৫-২৯৮ ধারা অনুযায়ী এসব শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ সূত্র মানলে প্রতিদিন সরকারকেই কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। সরকার মানেই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড । লেখাটির মধ্যে বেশ যুক্তি রয়েছে।
@িশল্পভবন,
– লেখা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে যায়। তাই বিস্তারিত দেইনি, সূত্র দিয়েছি লেখায়। তাতে সৌদী আরবের সরকারী সিলেবাসে কি আছে তা সরাসরি বই থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু ধর্ম শিক্ষায়তেই নয়, এভাবে বিশ্রী সাম্প্রদায়িকতা গনিতের মত বিষয়েও ঢোকানো হয়েছে সেখানে।
http://www.freedomhouse.org/sites/default/files/CurriculumOfIntolerance.pdf
Students are being taught that Christians and Jews and other Muslims are “enemies” of the true believer, and to befriend and show respect only to other true believers, such as the Wahhabis. These Saudi state textbooks propound a belief that Christians and Jews and other unbelievers have united in a war against Islam that will ultimately end in the complete destruction of such infidels.
এমন শিক্ষা অবশ্য আমাদের ধর্ম শিক্ষা বইতেও দেওয়া হচ্ছে।
Regarding Christians, Jews, polytheists (including Muslims who are not followers of Wahhabism) and other infidels, the books:
• Command Muslims to “hate” Christians, Jews, polytheists and other “unbelievers,” including non-Wahhabi Muslims, though, incongruously, not to treat them “unjustly.”15
• Teach that the Crusades never ended, and identify the American Universities in Beirut and in Cairo, other Western and Christian social service providers, media outlets, centers for academic studies of Orientalism, and campaigns for women’s rights as part of the modern phase of the Crusades.16
• Teach that “the Jews and the Christians are enemies of the [Muslim] believers”17 and that “the clash”18 between the two realms “continues until the Day of Resurrection.”19
• Instruct students not to “greet,”20 “imitate,”21 show loyalty to,22 be courteous to23 or “respect”24 non-believers.
• Define jihad to include “wrestling with the infidels by calling them to the faith and battling against them,”25 and assert that the spread of Islam through jihad is a [religious] “obligation.”26 [the word qital, translated here as “battle,” is derived from the verb qatala, “to kill,” and is virtually never used metaphorically.]
Regarding Anti-Semitism, they:
• Instruct that “the struggle between Muslims and Jews”27 will continue “until the hour [of judgment]”28 and that “Muslims will triumph because they are right” and “he who is right is always victorious.”
“The clash between this [Muslim] community (umma) and the Jews and Christians has endured, and it will continue as long as God wills. In this hadith, Muhammad gives us an example of the battle between the Muslims and the Jews.”94
• “Narrated by Abu Hurayrah: The Prophet said, The hour [of judgment] will not come until the Muslims fight the Jews and kill them. [It will not come] until the Jew hides behind rocks and trees. [It will not come] until the rocks or the trees say, ‘O Muslim! O servant of God! There is a Jew behind me. Come and kill him.’ Except for the gharqad, which is a tree of the Jews.”95
• “It is part of God’s wisdom that the struggle between the Muslim and the Jews should continue until the hour [of judgment].”96
• “The good news for Muslims is that God will help them against the Jews in the end, which is one of the signs of the hour [of judgment].”97
• “Muslims will triumph because they are right. He who is right is always victorious, even if most people are against him.”98
• “God will help Muslims if their intentions are sincere, if they are united, if they adhere to the law of their Lord, if they obey His judgments, and if they are patient and enduring.”99
• “The Jews and Christians are enemies of the believers, and they cannot approve of Muslims.”100
• “This hadith showed one of the qualities of the Jews. It is: [fill in the blank.]”101
• “Help your classmates to give some examples of how our Muslim brothers suffer in Palestine and to propose some ways for you to ease their sufferings.”102
– মার্কিন সরকারী তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল সৌদী সরকারকে। হেটফুলের বাংলা বিদ্বেষমূলক, বাংলাতেই আসলে লেখা উচিত ছিল।
– এখানেই মজা। এসব দেশে ধর্ম বিষয়ে এত উদার, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত সহানুভূতিশীল। আমাদের দেশ সহ বেশ কিছু মুসলমান দেশে হিজবুত তাহরির নিষিদ্ধ, অথচ যুক্তরাজ্যে এরা সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী।
– খুব সম্ভব ব্রিটেনেই। এই ভিডিওতে ২মিঃ৪২সেঃ থেকে দেখুন।
– এখন আর যাই না। এক সময় নিয়মিতই প্রায় যেতাম, সিজনে সিজনে বহু চমতকার সব ফতোয়া শুনতে হত। যেমন এখন ক্রীসমাস আসছে, এখন শুরু হবে ক্রীসমান পালন হারাম, মেরি ক্রিসমাস গ্রিট করা যাবে না তাহলে শিরকী গুনাহ হয়ে যাবে এসব।
– আসলেই তাই। কোন বিবেকবান আইনজীবি হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিলে সরকার মহা বিপদে পড়ে যাবে। মুশকিল হল নিজের মাথার ওপর ঝুকি নেবার মত আইনজীবি মনে হয় না পাওয়া যাবে বলে।
পৃথিবীতে যেই মানুষটি সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছে তার নাম হল হিটলার।সে কোন ধর্মের অনুসারী ছিল এবং কোন মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করছে??……
@তাওসিফ,
আপনার প্রশ্নের মাজেজা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
এখানে ইতিহাসের নৃসংশতম মানব হত্যার নায়ক কে কিংবা একমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষায় হিটলারসম প্রোডাক্ট বার হয় এমন কোন আর্গুমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে তো মনে হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
১ম ও ২য় পর্বের মতই দারুণ। যুক্তি ও তথ্য নির্ভর। সাথেই আছি। পরবর্তী পর্বের উপেক্ষায়। (F)
@গোলাপ,
ধন্যবাদ, আশা করি সহসাই পরের পর্ব দেব।
লেখাটি খুবই পরিশীলিত ভাষায় রচিত। এই ধরণের বিশ্লেষণমূলক লেখা পড়তে ভাল লাগে। ঠিক যুক্তিনিষ্ঠ ভঙ্গিতে যেভাবে মূল বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা গ্রহণ করার সামর্থ অফলঅইনের পাঠকদের আছে বলে মনে করি। তাই আগামী বইমেলায় মুক্তমনা থেকে প্রকাশিতব্য প্রবন্ধের বইটিতে এই রচনাটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করছি। আমি কথা দিচ্ছি মানুষ এই লেখাটি পড়বে, আলোচনা করবে, সহনশীলতার সাথে গ্রহণ করবে।
ধন্যবাদ লেখককে
@নাজমুল,
– কথাগুলি অন্তর ছুঁয়ে গেল। এটাই প্রত্যাশা, সবাইকে সব গ্রহন করতে হবে কিংবা সমস্যা একদিনে কেটে যাবে তা নয়। তবে অন্তত পড়ে যেন সহনশীলতার সাথে নিরপেক্ষ ও যৌক্তিকভাবে ভাবেন সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
নানান মতের ধর্ম, এমনকি পরস্পর বিরোধী ধরনের ধর্মও এখনো সভ্য প্রায় সব দেশেই বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের জন্য সকলেই একটি খুব সরল নীতি পালন করে, সেটা হল যার যার ধর্ম তার তার, কেউ নিজ ধর্মের মহাত্ম্য প্রচারের লক্ষ্যে অপরের বদনাম গাইবো না।
গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর লেখা ।
অথচ কেউ কেউ এই বিষয়টি দেখতে পায় না। তারা জঙ্গি তৈরিতে এই বিষয়গুলোর প্রভাব আমূল অস্বীকার করতে চান। তাদের কথা, আম্রিকাই সব নস্টের মূল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আম্রিকা যে নস্টামি করে বা গোল পাকায়, তাতে এক বর্ণও মিথ্যে নেই। কিন্তু শুধু সেই কারণেই জঙ্গি তৈরি হয় না। শিক্ষাব্যবস্থাও যে জঙ্গিবাদ উথানের পেছনে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, আপনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাই দেখিয়ে দিলেন, আদিল ভাই!
সময়োপযোগী মহাগুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! (F)
@কাজি মামুন,
অনেকে আসলে এই জাতীয় ব্যাপারগুলি সরাসরি আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের সাথে যুক্ত করে পুরো আলোচনাই নষ্ট করেন।
এটা ভাল করে বুঝতে হবে যে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ জিহাদী বোমাবাজিতে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও আমি যা নিয়ে লিখেছি (ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো) তার সাথে সম্পর্ক নেই। আমেরিকার বিরুদ্ধে জেহাদী বোমাবাজি বলা যায় এই সাম্প্রদায়িক শিক্ষার চরম প্রয়োগ, তবে অবশ্যই সূত্র নয়। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ নাজিল হবার আগে কি ইসলাম ওয়ালারা এ জাতীয় ঘৃনা বিদ্বেষের শিক্ষা দিতেন না? ইবনে কাথির যখন তাফসির লেখেন, ইমাম শাফি শরিয়া আইন বানান,গাজ্জালী দর্শন লেখেন তখন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ কোথায় ছিল? আমেরিকাও তো ছিল না, ইহুদীরা ছিল তাড়া খাওয়া যাযাবর জাতি। বাংলাদেশের ধর্মশিক্ষা বই লেখা হয়েছে ‘৯৬ সালে, ৯১১, ইরাক আফগানিস্তান দখলেরও বহু আগে। আর আমেরিকা/ইসরাইলের সাথে ‘মুশরিক’দের সম্পর্ক কি?
আজ আমেরিকা/ইসরাইল ধ্বংস হয়ে গেলে কি সমগ্র মুসলিম বিশ্ব শিক্ষা ব্যাবস্থা বদল করে ফেলবে? হেটফুল শিক্ষায় তো আমেরিকার নাম দেখা যায় না, দেখা যায় খ্রীষ্টান, ইহুদী, মুশরিক এসবের যার উল্লেখ ধর্মীয় মূল সূত্রে আছে।
আর জেহাদী বোমা মুসলমান দেশগুলিতেও ফাটে তারই বা ব্যাখ্যা কি? যেসব মুসলমান দেশেই প্রকাশ্য রাজনীতি আছে তার সবগুলি দেশেই জামাত, হিতা জাতীয় চরমপন্থী দল আছে যাদের মূল লক্ষ্য হল সহি ইসলামী সমাজ কায়েম করবে। এরা সে সহি ইসলাম কায়েম করতে বাকি মুসলমানদেরও নির্বিচারে কতল করতে দ্বিধা করবে না। এগুলি সব আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ তৈরী করেছে?
যুগ যুগ ধরে ধর্মের নামে এমন কুশিক্ষা কখনো তৈরী করেছে ‘৭১ এর রাজাকার, তালেবানী সৈনিক, জেহাদী বোমাবাজ। এসব কিছুর মূলেই আছে ধর্মীয় শিক্ষার দর্শন।
@আদিল মাহমুদ,
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক! নিরপরাধ মানুষ খুন করে বেহেস্তে যেতে চায়। এ যেন আঁধারের কাছে আলোর হার মানা, ধর্মের কাছে বিজ্ঞানের পরাজয়। পদার্থবিজ্ঞান থেকে এই মুসলমান যুবক শিখলোটা কী?
@আকাশ মালিক,
অনেকে যেমন আশা করেন যে শিক্ষিতের হার বেড়ে গেলেই ধর্ম সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা মিটে যাবে সেটা কতটা ভুল তার প্রমান এসব উদাহরন।
@আদিল ভাই, আমদের জাতীয় শিক্ষালয়গুলোতে ধর্ম শিক্ষার পাঠ্যসূচীতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের যে উপাদানগুলো রয়েছে তা আপনি যেভাবে সবিস্তারে তুলে ধরছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বিষয়টি এভাবে তুলে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু উদ্বিগ্ন হবেন অথবা আদৌ উদ্বিগ্ন হবেন কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু অনেক ব্লগারই যে সচেতন হবেন এটাই আমাদের বর্তমান লাভ। এই চেতনার সাথে আমি কিছু আমার ভাবনা যোগ করতে চাই যেগুলো ‘এখন আমদের করণীয় কি’ এই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত।
জাতীয় সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি যে শিশুদের কোমল মনে বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে দেবে এব্যাপারে এ দেশের প্রগতিশীল সমাজ সব সময় সচেতন ছিলেন। এছাড়া এটা যে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক এটাও সবাই জানেন। একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা নীতির জন্য আমাদের দেশের ছাত্র সমাজ বহু পূর্ব থেকেই আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। তাদের দাবী ছিল স্কুল লেভেলে যে ঐচ্ছিক ধর্ম শিক্ষার প্রচলন ছিল তা বিলোপ করা। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম এবারের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে এস,এস,সি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে! এবং এটা নিয়ে কোন মহলেই উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সংঘটিত হয়নি। আমরা সবাই যেন কুশিক্ষার আগ্রাসনের সামনে মাথা নত করে দিয়েছি! যে কোন ধর্মীয় শিক্ষা যে কম বেশী সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়াবে এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই, আশ্চর্য হল এ নিয়ে সুধী/ছাত্র/প্রগতিশীল মহলের বিস্ময়কর নীরবতা! এতো গেল একটা দিক। এখন বিষয়টি আর একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক।
আমাদের দেশে প্রগতিশীল আন্দোলনের ইতিহাস অনেক পুরানো। সেই সুবাদে আমাদের দেশে নাস্তিকদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা নাস্তিকতাকে কখনই প্রচারে অথবা সামনে আনেন না। অনেকেই সামাজিক ভাবে গোপনীয়তা বজায় রেখে চলেন। এজন্য তাদের মধ্যে অনেকে সমাজে মানসিক ভাবে সর্বদা এলিয়েনেটেড বোধ করেন। অন্যান্য সংখ্যালঘু মতই তারাও সংখ্যালঘু। তাই রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম করা হল তখনই তাদের মনে হল তারা যেন নিজ দেশে প্রবাসী। স্কুল শিক্ষায় যখন ধর্মশিক্ষা বাধ্যতা মূলক করা হল তখন তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোন বিকল্প রইলো না। মুক্ত-মনায় অনেক নাস্তিক ব্লগার রয়েছেন, তাদের নিশ্চয়ই এই সমস্যায় পরতে হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে স্কুল পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেয়ার আন্দোলনে জাতীয়ভাবে আমাদের সম্পৃক্ত হতে হবে, এই কর্তব্য তো রয়েছেই। কিন্তু আমরা যারা নাস্তিক রয়েছি, অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কি আমাদের কিছু করার নেই? আমরা কি আমাদের নাস্তিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য ধর্ম শিক্ষার বদলে কোন বিজ্ঞান বা সমাজ বিজ্ঞান বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কোন দাবী বা আইনি লড়াই করতে পারি না? আমরা যারা নাস্তিক রয়েছি তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা কি অত্যন্ত একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পারি না যেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা দেয়া হবে? নিদেনপক্ষে আমাদের শিশুদের জন্য কি একটি পাঠচক্র খুলতে পারি না যেখানে মুক্তমনা শিক্ষকেরা বিজ্ঞানের আলোচনা করবেন। যেখানে মুক্তমনা শিশুরা দেখতে পাবে যে সমাজে তারা একা নয়। তারা আর এলিয়েনেটেড বোধ করবে না।
আপনার এই মূল্যবান লেখাটির আলোকে আমি আমার ভাবনাটি সকলের সাথে শেয়ার করলাম। কিছু করার থাকলে আসুন না কিছু করি!
@বুনোগান,
বেশ কিছু ভাল পয়েন্ট তুলেছেন যা ভবিষ্যতের পর্ব লিখতে আমাকে চিন্তার খোরাক জাগাবে।
– আমিও এটা ভালই বুঝি। আমাদের দেশে সামগ্রিকভাবেই স্বাধীনতা বা গনতান্ত্রিক চেতনা বলতে যা বোঝায় তা চরম ভাবে অনুপস্থিত, গনতন্ত্র কায়েম হয়েছে বলে যে আত্মপ্রসাদের ঢেকুর আমরা তুলি তা কেবল ভোট দিয়ে শোষক শ্রেনী পরিবর্তনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। সে জন্যই পাবলিক ওপিনিয়নের গুরুত্ব দেওয়া নীতি নির্ধারকদের চেতনায় নেই। যে পর্যন্ত না ভাংচুর, হরতাল ব্যাপক গোলযোগ পর্যায়ে না যায় সে পর্যন্ত গনমতের গুরুত্ব শুধু লেখালেখি করে গায়ের ঝাল মেটানোর মাঝে সীমিত। আর ব্লগের লেখা মূল জনসংখ্যার অনুপাতে হিসেব করলে শূন্যের সামিলই বলা যায়।
আরো ধর্ম বিষয়ক লেখা হলে সংগত কারনেই ফলাফল হবে আরো করুন। ধর্ম নিয়ে এমন অবসেশন শত শত বছর ধরে প্রচলিত আছে যে ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন কিছু শুধু চালু করে দিলে সেটা যতই আপত্তিকর কিছু হোল তার লোকে নীরবে সয়ে যায়। এমনকি সেটা ধর্ম বিরোধী হলেও। অনলাইনেই বহু বাংলা ইংরেজী ধর্ম বিষয় বই পুস্তক আছে যেগুলিতে অনেক অংশ আছে যা কোন ভাবেই ইসলাম সম্মত না। সেগুলি নিয়েও কেউ উচ্চবাচ্য করে না। কারন হল সেই অবসেশন। নীতি নির্ধারকরাও এ মানসিকতার বাইরের কেউ নয়। ধর্মশিক্ষা বই এ এসব কুশিক্ষা নিঃসন্দেহে বহু অভিভাবকই দেখেছেন যারা মুসলমান হলেও মন মানসিকতায় কোন ভাবেই সাম্প্রদায়িক নন, দেখেও নীরবে হজম করে গেছেন। এসব নিয়ে কথা বলে ইসলাম বিদ্বেষী সিল কে শখ করে গায়ে মাখতে যায়? তার চাইতে নীরবে হজম করা ভাল, বড়জোর সন্তানকে বলে যে এসব গুরুত্ব দিতে নেই। আমার নিজের কিছু পরিবারে এমনই ঘটেছে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি। বাড়ির হুজুর এসব চরম সাম্প্রদায়িক শিক্ষা দিয়ে গেছে, বাবা মা হুজুরের সাথে তর্ক করতে যাবে কোন সাহসে, নীরবে বাচ্চাকে শিখিয়েছে হুজুরের এসব কথায় কান না দিতে।
দেশে এরপরও যে প্রতিবাদ করার মত দুয়েকজন নেই তা নয়। জাফর ইকবালের সন্তানরা এই সিলেবাসেই দেশে পড়েছে, তিনি নিজেও শিক্ষা নীতির সাথে জড়িত। উনি নিঃসন্দেহে এসব দেখেছেন, তবুও সরাসরি এসব কোট করে প্রতিবাদ করার মত হিম্মত মনে হয় ওনারও হয়নি। যদিও উনি ওনার সন্তানদের স্কুলে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক শিক্ষা দেওয়া হয় বলে কিছু জেনারেলাইজড অভিযোগ করেছেন, যার সুর অনেকটা দুয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলে মনে হয়। রীতিমত বই আকারে বার করলে দুয়েকজন শিক্ষকের ওপর দায় চাপানোর কথা আসে কি করে।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড বলে আমরা গলা ফাটাই। সেই শিক্ষার নামে কুশিক্ষা দিয়ে কচিমনকে জন্ম থেকেই পঙ্গু করা চোখ বুজে কিভাবে সওয়া যেতে পারে আমি বুঝি না। বিএনপি আওয়ামী লীগ বা লোডশেডিং জাতীয় সমস্যা থেকেও এ সমস্যা আরো গভীর।
– এখানে আমার ভাবনা কিছুটা ভিন্ন। নাস্তিকতা কোন ধর্ম নয় এটা নাস্তিকরাই বলেন, আসলেই তাই, নাস্তিকতা ধর্মের বই নামক কিছু নেই, থাকতে পারে না। কাজেই যার অস্তিত্ব নেই তার প্রচারের তেমন প্রশ্ন আসে না। ঈশ্বর বা তেমন কোন ঐশ্বী শক্তির বিশ্বাসহীনতা হল নাস্তিকতা।
এটা বরং বলা যায় যে একজন নাস্তিক যেন তার বিশ্বাসহীনতার কারনে সমাজে এলিয়েনেটেড না হন সেই চেতনা গড়ে তোলা। এর জন্য নাস্তিকতার প্রচার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। মানুষ যখন বুঝতে পারবে যে ঈশ্বর বিশ্বাস অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃনা বা ভালবাসা যায় না তখনই সেটা সম্ভব। এর জন্য যে ধর্মকে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে এমন নয়, পশ্চীমে ধর্ম বহাল তবিয়তেই আছে। তবে সেখানে এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃনা করা যায় না বা খাতির করাও যায় না। এটা সম্ভব তখনই যখন ধর্মের অবসেশনের জগত থেকে লোকে বের হতে পারবে তখন।
বিজ্ঞান শিক্ষার কথা যে বলেছেন তা কিন্তু আমাদের দেশেও হচ্ছে। ধর্মশিক্ষার কোর্স আবশ্যিক হলেও তার পরিমান কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্স থেকে অনেক কম। মুশকিল হল যে ধর্মশিক্ষার কোর্সের পরিমান কম হলেও তার কুফল সুদুরপ্রসারী। বিজ্ঞান শিক্ষার যে মূল চেতনা অর্থাৎ যুক্তিবাদ, ধর্মশিক্ষা তার বিপরীত চেতনা অর্থাৎ অন্ধবিশ্বাস গড়ে তোলে। ধর্মশিক্ষার সংস্কারের মূল এতই গভীরে যে একে রাতারাতি বাদ দেবার চিন্তা করা যায় না। তবে এর প্রয়োগ একাডেমিক থেকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ততই মংগল। অন্তত ঐচ্ছিক করা উচিত। আমাদের সময় মাধ্যমিকে ধর্মশিক্ষা ঐচ্ছিক ছিল। মনে পড়ে যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একজন বাদে কেউ ইসলামিয়াত নেয়নি, তাও সে উচ্চতর গনিত নিয়ে কদিন পরে রণে ভংগে দিয়েছিল। আর নিয়েছিল সব কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা কারন তাদের আর অন্য অপশন ছিল না।
ঐচ্ছিক করা হলে যার দরকার মনে হয় সে পড়বে, এবং এমন কোন কন্টেন্ট ধর্ম বিশ্বাসের দোহাই পেড়ে রাখা যাবে না যা অপরের বিশ্বাস কিংবা বিধর্মীদের প্রতি ঘৃনা বিদ্বেষ তৈরী করতে পারে। আইনগত ভাবেও এসব জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো সংবিধানের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। এভাবেই হয়ত সব পক্ষের সমঝোতায় অবস্থার উন্নতি হলেও হতে পারে। ধর্ম শেখালে শেখান, যাদের দরকার মনে হয় শিখুক, চাপাচাপির দরকার কি? আর শেখালে তার মাঝে মানবাধিকারের পরিপন্থী শিক্ষা দেবারই বা অর্থ কি?
@আদিল মাহমুদ
আপনার এই নমনীয়তার সাথে আমি ঠিক একমত নই। কারণ জাতীয় কারিকুলামে এমন কোন শিক্ষা প্রমোট করা ঠিক নয় যা বস্তুগত ভাবে প্রমাণিত নয়।
আমাদের দেশে জাতীয় পাঠ্যতালিকায় মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই (সেই ধর্মের ভিতর যত ভাল উপাদানই থাকুক না কেন) স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হয়ে গেল! কোন ধর্মের পুস্তকে কত মাত্রায় বিদ্বেষ রয়েছে সেটা বড় কথা নয়, ধর্মশিক্ষা নিজেই অবৈজ্ঞানিক ও সাম্প্রদায়িক। তাই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই অবৈজ্ঞানিক শিক্ষা অনুমোদন করা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। তবে বিভিন্ন ধর্মের পরিচিতি থাকবে সমাজ বিজ্ঞান পুস্তকে, যা সকল ধর্মের ছাত্র একই শ্রেণীকক্ষে বসে পড়তে পারবে। সেই সমাজ বিজ্ঞানে সমাজ ব্যবস্থা যে অচলায়তন কিছু নয় বরং গতিশীল, এই শিক্ষা থাকা ভীষণ জরুরী। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল দুর্বলতা হল সমন্বিত শিক্ষার অভাব। আমরা গণিত শাস্ত্রের সাথে পদার্থ বিজ্ঞানের সমন্বয় জানিনা, পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে রসায়নের, রসায়নের সাথে জীব বিজ্ঞানের, তার সাথে মনোবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থ বিজ্ঞানের সমন্বয় জানি না। ফলে জীবন দর্শনের পরিচ্ছন্নতা আমাদের নাগরিকদের মধ্যে নেই। দ্বিত্ব জীবন দর্শনের ধূমজাল আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে! আমাদের মনোজগতকে এখনো বিভিন্ন দৈত্য দানব শাসিয়ে যাচ্ছে। এক দৈত্য আবার বলছে অন্য দৈত্যদের নৈবদ্য না দিতে! আমাদের চিকিৎসকরা আত্মায় বিশ্বাস করে কিভাবে হৃৎপিণ্ডের অপারেশন করছে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
তাই বলে সমাজে ধর্ম থাকবে না সেটা আমি বলছি না। তবে সেই ধর্ম থাকবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোন ধর্মের লালন পালন সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। ধর্ম পুস্তক থেকে চরম বিদ্বেষপূর্ণ অংশগুলো বাদ দিয়ে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মশিক্ষা থাকতে পারে এই মতবাদ সেই সমন্বয় হীন শিক্ষার ফসল এবং এতে ধুম্রচ্ছন্ন জীবন দর্শনের প্রতিফলন রয়েছে। দর্শনের এই অপরিচ্ছন্নতার জন্যই সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ থেকে বুদ্ধিজীবী সবাই বলে থাকে ধর্মের কোন দোষ নেই, ধর্মকে ব্যবহার করেই নাকি সকল অপকর্ম করা হয়! সুতরাং যাকে ব্যবহার করে অপকর্ম করা যায় সেই শিক্ষা জাতীয় কারিকুলাম থেকে দূরে রাখাই বাঞ্ছনীয়।
আর নাস্তিকতার ব্যাপারে আমার বক্তব্য হল, যে পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে, সে পর্যন্ত ধর্মে অবিশ্বাসীদের ছেলেমেয়েরা কি বিষয় গ্রহণ করবে? সে ক্ষেত্রে আমি বলেছিলাম যে তাদের যেন ধর্ম বাদ দিয়ে অন্য যে কোন বিশেষ বিষয় নির্বাচন করার স্বাধীনতা থাকে। আমি এখানে নাস্তিকতার প্রচার বলতে তাদের ধর্মীয় বইয়ের প্রচারের কথা বলিনি!
আমি এখানে সমাজে নাস্তিকদের বিচ্ছিন্নতাবোধ বলতে সমাজে তাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের কথা বলতে চাইছি। অন্য কেউ ঘৃণা করলো কি ভালবাসল তার উপর সমাজে তাদের অবস্থান নির্ভর করছে না। বর্তমানে তারা নিজেরাই সমাজে তাদের অবস্থান, পরিচয়, অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। এখানেও অস্বচ্ছ জীবন দর্শন নিয়ে বাঁচার মধ্যে আমাদের কোন বিকার নেই। আমরা বিশ্বাস করি এক, কাজ করি আর এক। আমরা যখনি ঈশ্বরকে ত্যাগ করব তখনি ঈশ্বর পুত্ররা আমাদের ত্যাগ করবে, এই ভয়ে আমরা সমাজে নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখি। এতে যে আমরা সমাজের সাথে, পরিবারের সাথে, নিজের জীবন দর্শনের সাথে প্রতারণা করছি এই সামান্য মৌলিক বোধটুকুও আমাদের নেই! গরু খাওয়া মুসলমানের মতো আমরা তাই নাস্তিক মুসলমান বা নাস্তিক হিন্দু বা নাস্তিক খৃস্টান! যাক, এই বিষয়টি আপনার নিবন্ধের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়, তাই এখানে আর আলোচনা বাড়ালাম না। নাস্তিকতার প্রশ্ন আমি টেনেছিলাম এজন্য যে জাতীয় শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষা নিয়ে আমরা নাস্তিকরা কি করব সেই প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে।
@বুনোগান,
ধর্ম নিয়ে আমাদের সমাজে অবসেশনের মাত্রা এতই বেশী যে রাতারাতি কোন পদক্ষেও নিলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা প্রবল।
ধর্ম যেহেতু প্রমানিত কিছু নয় তাই রাষ্ট্র থেকে এর পৃষ্ঠপোষকতার বিরোধীতা করছেন।
ঈশ্বর,দেবদেবী, কিংবা প্রথাগত যে কোন ধর্মই যুক্তিবাদের দৃষ্টিতে প্রমানিত কোন সত্য নয় দুনিয়ার সকলেই জানে। আমাদের দেশের কথা বাদ দেন, সেক্যুলার ভারত কি পশ্চীমা দেশগুলিতেও কিন্তু ধর্মের অবস্থান রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় বা শিক্ষা ব্যাবস্থায় না থাকলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই বহু টাকা পয়সা খরচ করেই স্পনসর করা হয়। সেক্যুলার ব্যাবস্থা গড়েও কিন্তু রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা কম বেশী এরাও সকলেই বজায় রেখেছে। দুনিয়ার কোন আদালত কিন্তু ঈশ্বর যেহেতু অপ্রমানিত তাই ধর্ম নিষিদ্ধ করা হোক এমন যুক্তি শুনবে না, কারন ধর্মের গন্ডি আদালত গ্রাহ্য যুক্তিতর্কের বাইরে। এভাবেই সভ্যতার আরো বেশ কিছুদিন যাবে।
আমাদের দেশে তার মাত্রা আরো বেশী হবে সেটাই স্বাভাবিক। রাতারাতি করার কিছু নেই। ধর্ম বিষয় ঐচ্ছিক করে দিলেই ল্যাঠা চুকে। দেখা যাবে তেমন কেউই ধর্ম শিক্ষা নিচ্ছে না আমাদের সময় যেমন দেখা যেত। যার দরকার মনে হয় সে নেবে।
– অবশ্যই তাই। আপনার মত একজন ধার্মিকও কিন্তু তেমনি দাবী করতে পারে যে তার বিশ্বাসী সন্তানকে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হোক। কাজেই উভয় দিকেই সমতা আনতে পারে ঐচ্ছিক করে দেওয়া। এরপর আবেগ, অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে এমন সব বিষয় ধর্ম বই থেকে তুলে দেওয়া যা বর্তমান যুগের মানবাধিকারের সরাসরি পরিপন্থী; যেমন অপরকে ঘৃনা করার পাঠদান।
কাজেই আপাতত সহজ সমাধান হল ঐচ্ছিক করে দেওয়া। আমাদের দেশের সংবিধানে এমন কোন আইন নেই যে সকলকে অবশ্যই কোন না কোন ধর্মের ফলোয়ার হতেই হবে। এর সাথে ধর্মশিক্ষাকে আবশ্যিক করা সরাসরি সাঙ্ঘর্ষিক। যে কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয় তা্র ওপর বলপূর্বক ধর্মশিক্ষা চাপানো সংবিধান পরিপন্থী। ঐচ্ছিক করা হলে বাস্তব জীবনের প্রয়োজনেই ধর্মশিক্ষার কোর্সগুলির প্রতি আগ্রহ দিনে দিনে কমে আসবে। নেপালের মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে এমনকি মাদ্রাসা ছাত্ররাও আধুনিক শিক্ষার কোর্সই বেশী নিতে চায়।
সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্সে বিভিন্ন প্রধান ধর্মের সাধারন পরিচিতি থাকা অবশ্যই দরকার। থাইল্যান্ডের সিলেবাসে এমন আছে।
– আমি এটাকে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস বলব না। আমাদের সমাজ নাস্তিকদের সাধারনভাবে সহজভাবে গ্রহন করে না, আইনী কারনে হয়ত সহ্য করে তবে তাদের প্রতি সহজ স্বাভাবিক দৃষ্টি পোষন করে না। অফিস আদালতেও কেউ আমি নাস্তিক পরিচয় দিয়ে বেড়ালে তাকে হয়ত ধরে পেটাবে না তবে তার সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার সম্ভাবনা অতি প্রবল। আমি নাস্তিক হয়ে গেছি এমন ঘোষনা দিলে যে ঈদের নামাজ ছাড়া সারা বছর মসজিদ যায় না সেও বাঁকা চোখে তাকাবে। আর নাস্তিকতার পক্ষে যুক্তিতর্ক নিয়মিত দিয়ে বেড়ালে জীবন সংশয় হওয়াও খুব একটা বিচিত্র নয়। কাজেই এখানে নাস্তিক পরিচয়ের কারনে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা স্বাভাবিক। উপযুক্ত কারনে নিরাপত্তাহীনতা ঠিক আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। ধর্ম নিয়ে অবেসেশনের জগত থেকে মুক্তি পাওয়া ছাড়া এর সহজ সমাধান নেই।
ধর্ম পূর্নাংগ জীবন বিধান যা ছাড়া আর কোন বিধান নেই হতে পারে না এমন বদ্ধমূল ধারনার কবল থেকে দর্শনগত মুক্তি ছাড়া সহজ সমাধান নেই। এই ধারনা যতদিন মানসপটে থাকবে ততদিনই যারা এই নিজ ধর্মে বিশ্বাসী নয় তাদের মনে হবে পাপিষ্ঠ, তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হেয় করার প্রবনতা থেকেই যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
অবিশ্বাসের প্রশ্ন কেন আসছে? কারণ বিশ্বাস আছে বলেই অবিশ্বাস করার প্রশ্ন আসছে। কারণ আমার ধারনা মতে, বাংলাদেশের বেশীর ভাগ লোক নাস্তিক হওয়ার আগে আস্তিক ছিল, সেটা হতে পারে পারিবারিক কারনে, সামজিক কারণে অথবা ধর্মীয় কারণে…… তো একজন মানুষ যখন তার ব্যক্তিগত কোণ থেকে বুঝতে শিখেছে GOD বলে কিছু নাই, এর অস্তিত্ব কাল্পিক । ঠিক যখন কোন আস্তিক এসে বলে তুই কেন নাস্তিক(যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না)? ঠিক তখনই সেই নাস্তিকের ব্যক্তিগত কোণ থেকে উত্তর টা আস্তিকের সামনে জাহির করতে হয়। সে উত্তরটা বিশ্বাস করুক আর নায়ই করুক, উত্তর কিন্তু দিতেই হয়।
নাস্তিকতা আসলেই কোন ধর্ম নয়, এইটা হচ্ছে বাস্তববাদিতা, যেখানে কোন উল্টা পাল্টা শক্তির উত্থান হওয়ার উপায় নেই। আমাদের দেশের আস্তিকের মধ্যে কাল্পিক শক্তি আর বাস্তবতা দুটোই বিদ্যমান, কিন্তু তারা বাস্তবাতার চেয়েই আবাস্তবকেই প্রধান্য বেশি দিয়ে থাকে।
ভাল থাকবেন।
@(নির্জলা নির্লজ্জ),
– এতে কোন দোষ নেই। কেউ নিজে কেন আস্তিক, কিংবা নাস্তিকদের নিজ ধর্মে আহবান জানানোর অধিকার আছে দাবী করলে তার এটাও মেনে নিতে হবে যে অন্য কেউ কেন নাস্তিক সেটাও তার প্রচার করার অধিকার আছে।
এই বিতর্কের কোন শেষ নেই এবং আমার কাছে অর্থহীন। কে আস্তিক কে নাস্তিক এতে আমার কিছু যায় আসে না, সমাজকে, জগতকে কে কি দিলেন সেটাই বড় কথা।
এই অর্থহীন বিতর্ক এড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল যার যার ধর্মবিশ্বাস তার তার ব্যাক্তিগত পরিমন্ডলে সীমাবদ্ধ রাখা। সেটাতেও রাজী না হলে ফেয়ারনেসের স্বার্থে সবাইকেই কথা বলার সমাধিকার দেওয়া।
অসাধারণ বিশ্লেষণ আর সময়োপযোগী এই পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ, আদিল ভাই। প্রথম থেকেই পড়ছি। উপরে মানিক ভাইয়ের সাথে একমত সিরিজটা শেষ হলে এটিকে ইবুক আকারে প্রকাশ করা দরকার। আপনি তথ্যসুত্রসহ বিষয়টি নিয়ে অনেক গভীর আলোচনা করেছেন।
কিন্তু যারা আমাদের শিক্ষানীতি বানান তারা আর ক্রমশ সাম্প্রদায়িক হতে সাম্প্রদায়িকতর হতে যাওয়া আমাদের শিশুদের অভিবাবকেরা এই তথ্যগুলো গ্রহণ করবেন তো? রাষ্ট্রের প্রধানদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই ‘শান্তির ধর্ম’ আর ‘সহি ইসলাম’ নয় বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন কিন্তু ধর্মের নামে যে কোন অন্যায় প্রতিরোধে বা কোন সংস্কারে কারও কোন দায় নেই। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি সহসা পরিস্থিতি পরিবর্তনেরও কোন আশা দেখিনা। মানুষের মাঝে ধর্মান্ধতা ক্রমেই বাড়ছে। আর তাতে ইন্দন যোগাচেছ জাকির নায়েক থেকে শুরু করে দেশীয় টিভির মোল্লারা। যারা ধর্মান্ধতাকে সহজেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচেছন।
আশঙ্কার কথা হচেছ, পশ্চিমা দেশে এখন মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমেই বাড়ছে, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মুসলিমদের কাফের/পশ্চিমা বিদ্বেষ। মৌলবাদীদের কথা বাদই দিলাম, যারা নিজেদের মোডারেট বলে দাবী করেন, তারাও শুধু সব অস্বীকার করেই যাচেছন। পশ্চিমারা মানবাধিকার রক্ষার নামে দুনিয়ার সব হেইট প্রিচারদের নিজেদের দেশে জায়গা দিয়ে, আর নিয়ন্ত্রনহীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়ে, পশ্চিমা আলো বাতাসে বেড়ে উঠা যে একধরণের নিজেদের ইতিহাসজ্ঞানবিহীন, শিকরহীন এক ধর্মান্ধ প্রজন্ম এখানে সৃষ্টি করেছে তাদের কার্যকলাপের প্রতিদান পৃথিবীর সব বিবেকবান মানুষকে একদিন ভালভাবেই দিতে হবে।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…। ধন্যবাদ।
@ভীরুমন,
খুবই ভাল বলেছেন, বলা যায় আমার গোটা সিরিজের চমতকার সারমর্ম।
পূর্ন ধর্মীয় আদর্শে জীবন চালানো লেকচার যারাই দেন তারা সকলেই কম বেশী দ্বি-চারিতা বা আত্মপ্রতারনা বা ভন্ডামি যাইই বলা হোক কম বেশী পালন করেন। উপায় নেই। এটা যখন গন আকারে চলে তখন সেটার কুফল দেখা যেতে বাধ্য। যারা সমাজ বা দেশ চালান তারা এসব কুফল থেকে অনেকটা নিরাপদ বলে জেনে শুনে ভন্ডামি করে ভোট ব্যাংক বাড়ানোতে কোন সমস্যা দেখে না।
ধর্মের নামে অশিক্ষা কুশিক্ষার কুফল যে ভোগ করতে হয় সবচেয়ে বেশী নিজেদের এটাও বোঝার মত মগজ কারো নেই, বলার মত পরিবেশও নেই। সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামী এসবের কুফল যে কেবল অন্য সম্প্রদায়কে ভোগ করতে হয় তা নয়, নিজেদেরও মূল্য দিতে হয়। একদিকে শেখানো হয় ইসলামেই চরম মুক্তি, সকল সমাধান ইসলাম দিয়ে হবে, সমাজ আইন সবই চালাতে হবে ইসলামী উপায়ে। আরেক দিকে বাস্তব জীবন চলে ইসলামী নয়, ধর্মনিরপেক্ষ চলমান সংস্কারের মাধ্যমে। এই কনফ্লিক্ট ইসলামী কালাকানুনে বিশ্বাসীদের করে তোলে কম বেশী নিজ সমাজের ওপরেই বীতশ্রদ্ধ। তারা পড়ে আসে শুধু অমুসলমানরাই নয়, যারা সহি ইসলাম কায়েম করতে দেয় না তারাও ইসলামের শত্রু। ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা যত বাড়বে তাই হুজি, হিতা এ জাতীয় দলের জনপ্রিয়তা বাড়বে। এর আলামত দেখাও যাচ্ছে। এরা আরেকটু শক্তিশালী হলে জেএমবির মত সরাসরি সঙ্ঘাতে নেমে যাবে, টার্গেট শুধু অমুসলমানরাই হবে না। দেশ তালেবানি কায়দায় দখল করার দিন হয়ত দেরী আছে তবে পাকিস্তানের কাছাকাছি নিয়ে যাবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতায় ভোগা রোগের ইন্ধন জোটাতে আছে জাকির নায়েক জাতীয় ভন্ড কিংবা ভেঁড়ার চামড়া গায়ের নেকড়েরা। এদের সরাসরি মিথ্যাচার, সন্ত্রাসী বক্তব্য ধরালেও মোমিন বান্দাদের বোধদয় হয় না, উলটো এদের ডিফেন্ড করে আমাদেরই দিকে তেড়ে আসে। তবে যেমন বলেছি যে উন্নাসিকতার আগুন নিজেদেরও ছাড়বে না তার আরেক প্রমান হল প্রাচীন যুগের বড় বড় আলেম ইমাম থেকে আজকের জাকির মিয়া কেহই নিজেদেরই আলেম ওলামাগনের গালিগালাজ থেকে রেহাই পায়নি। সকলের দাবী সেইই আসল ইসলাম জানে, বাকিরা ভূয়া/ভন্ড; ধর্মজগতের এও আরেক মজা। এক আলেম আরেক আলেমকে ঘোষনা করে ভন্ড, এক দল আরেক দলকে অমুসলমান ঘোষনা করে চালায় অত্যাচার নির্যাতন, এমনকি মসজিদে ঈদের জামাতেও বোমা মেরে মানুষ মারতে দ্বিধা করে না; সবই হল শান্তির ধর্ম কায়েম করে মানব মুক্তি ঘটানো।
এসবের মূল কারন হল চরম অস্পষ্ট, অনেক সময় পরস্পর বিরোধী সব ধর্মীয় সূত্র যেগুলি ইন্টারপ্রেট করে দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানোর ব্যাপারে একমত হওয়া বাস্তবিকভাবে অসম্ভব, এবং যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা ধর্মের ব্যাপারে কোন আপোষ করা যাবে না জাতের চরমপন্থী মনোভাব। সাম্প্রদায়িকতার কথাই দেখেন; বহু আলেম মোল্লা যুগ ধরে ধরে ফতোয়া দিয়ে চলেছে, এমনকি আমাদের মত মডারেট দেশেও শিক্ষা দিয়ে চলেছে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার, কিন্তু অনেক আধুনিক আলেম (এরা মূলত সরাসরি এসব শিক্ষা দেওয়ার কুফল বোঝেন কিংবা আইনগত কারনে)ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এসব আবার অস্বীকার করবে।
আপনাদের সাথে একটা বিষয় শেয়ার করি—–
আমাকে অফিসের কাজে প্রতিদিন ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ” এ যেতে হয়… (কক্সবাজার শাখা) গেলে দেখি উনাদের বুয়া হিজাব ছাড়া পেট – হাত- পা প্রভৃতি অনাবৃত রেখে ব্যাংক এর বিবিধ অফিসার এর সাথে গল্পগুজব করে!!!!!!! :lotpot:
এটি কি শরিয়ত মোতাবেক মাইর???? নাকি হুর এর প্রি-ইনসাট??????? :-Y
পুনশ্চ। “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ” কোন অমুসলমান/কাফের/ভিন্নমতের কেহ চাকরীর যোগ্য নয় বলে আসছি। (U)
@স্ফুলিঙ্গ,
– ইসলামী ব্যাংকের কথা জানি না। তবে ইসলামের সামান্য ভেতরে প্রবেশ করলে এবং সেগুলি মান্য করলে জগতটা মুসলমান এবং অমুসলমান এই মোটা দাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর প্রভাব ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক যে কোন ক্ষেত্রেই এড়ানো যায় না। শরিয়া আইন গাইন এসব ঘাটলে বহু রেফারেন্স পাবেন অমুসলমানদের কোন বড় পদ দেওয়া যাবে না, আদালতে মুসলমানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হবে না এই রকম নানান ফতোয়া।
@আদিল মাহমুদ,
“ইসলামের সামান্য ভেতরে প্রবেশ করলে এবং সেগুলি মান্য করলে জগতটা মুসলমান এবং অমুসলমান এই মোটা দাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।”
তাহলে তো কোরান সামগ্রিক জীবন বিধান বিষয়টি অনুপ্ররণামূলক নয় বরঞ্চ অনুশোচনামূলক এই সত্য কথা গোপন করার অপরাধে কোরান দাগী এবং অভ্যাসগত অপরাধী।
ধন্যবাদ আপনাকে। (Y)
@স্ফুলিঙ্গ,
আমি এ প্রসংগে যা বলেছি তাতে কোন ভুল নেই। যেমন সৌদী আরবের আদালতে অমুসলমানের স্বাক্ষ্য অগ্রাহ্য করা হতে পারে (একদমই স্বাক্ষ্য দিতে পারবে না তা নয়)। অমুসলমানের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না কেবল ভাল ব্যাবহার করা যাবে এই রকম বহু নির্দেশনা বহু সূত্রে আছে।
প্রতিবেশীকে সাহায্য করা, এমনকি দরিদ্রদের দান করার সময়েও কে মুসলমান কে অমুসলমান এটা মাথায় রাখতে হবে।
“অনুপ্ররণামূলক নয় বরঞ্চ অনুশোচনামূলক”? এখন এই ধরনের জীবন বিধান কেমন তার মূল্যায়ন যার যার ব্যাক্তিগত। সত্য হলে বিধানগুলি, মূল্যায়ন হতে পারে আপেক্ষিক। খুবই স্বাভাবিক যে যারা নিজ ধর্মের কোনই ত্রুটি কোনমতে দেখবেন না তারা এসবের মাঝেও কোন সাম্প্রদায়িকতা বা সমস্যা পাবেন না।
হিজুতে ধরা পোলাপানকে কেমনে ফিরায় আনা যায় এই ব্যাপারে কারো কোনো আইডিয়া আছে নাকি? এতদিন এসব নিয়ে খালি পড়সি, এবার গ্রামে গিয়ে দেখলাম কাছের এক আত্মীয়ের ছেলে হিজবুত তাওহীদে ঢুকে গেসে, সারাদিন দাজ্জাল আর ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বলে বেড়ায় আর মানুষের তাড়া খায়। ওর মাথাতো গেছেই আরো বাচ্চাকাচ্চার মাথা নষ্ট করতেসে। ওর হিজবুত তাওহীদ দলের লোকজন বুঝাইসে তারা হলো ঈমাম গাজ্জালীর দলের লোক, গাজ্জালী সাহেব নাকি বাংলাদেশে উত্তরায় কই যেনো থাকে। যেই ছেলে কিছুদিন আগেও মুখ তুলে কথা বলতে লজ্জা পাইতো সে এখন বাপ-চাচার সাথে তর্ক করে, মডারেট মুসলিমরাও তাদের শত্রু কারণ তারা নামায রোজা করলেও ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে মাথা ঘামায়না। রোবটের মতো সেই ছেলে হিজবুতের সব কথা মুখস্থ বলে যায়, কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারেনা, শুধু তোতা পাখির মতো কয়েকটা কথা বারবার বলে। কথা শুনেই বোঝা যায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য খুনখারাপি করতেও বাধবেনা কিন্তু বেআইনি কিছু করার আগে পুলিশেও ধরানো যাচ্ছেনা, স্টিং অপারেশন করা গেলে কাজ হইতো!!! একে কিভাবে সুস্থ করা যায় সেটা নিয়ে পরিবারের সবার মাথা খারাপ হচ্ছে, কারো কোনো পরামর্শ আছে এই ব্যাপারে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
অবাক হবার তেমন কিছু নেই। বাংলাদেশে দিনে দিনেই হিজু জাতীয় দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে, ওপরে সংশপ্তকে কারন বলেছি। এটা পুরোপুরি পরস্পর বিরোধী দুই ধরনের শিক্ষা ব্যাবস্থা সমান্তরালে চালাবার ফল। এক শিক্ষা শেখায় ১৪০০ বছর আগের কায়েম হওয়া ধর্মীয় রীতিনীতি পুরোপুরি কায়েম না করলে ইহকাল পরকাল কোথাও মুক্তি নেই, আরেক ধরনের শিক্ষা ব্যাবস্থা সরাসরি না হলেও দর্শনগত ভাবে শেখায় যে সেসব প্রাচীনপন্থী কালাকানুন অনেক কিছুই পালন করা যায় না। ফলে মনের ভেতর জন্মে এক ধরনের সঙ্ঘাত, যারা ধর্মীয় নিয়ম কানুন সরাসরি মানতে চায় না তাদের মনে হয় শত্রু, সে এমনকি মুসলমান হলেও কিছু যায় আসে না।
এসব দল নিষিদ্ধ ফিসিদ্ধ করা সাময়িক ভাবে কিছু স্বস্থি দিতে পারে তবে তেমন লাভ হবে না। এককালের নিষিদ্ধ দেশ থেকে খেদানো মিশরের ব্রাদারহুড এখন নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছে।
এ রোগের নিরাময় মনে হয় না আছে বলে, সর্বদাই প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, এখানে বেটার নয়, ওনলি অপশন।
ইরানে একাদশ শ্রেনিতে খোমেনির এখটা জ্বালাময়ী বক্তব্য পড়ানো হয়। কিভাবে শত্রু খতম করতে হবে এবং ইসলামের জন্য শহীদ হতে হবে। পড়লে আমারই জিহাদ করতে মন চায়। 🙂
সুত্র: Chasing a Mirage: The tragic illusion of an Islamic State By Tarek Fatah. page 58-59.
@হোরাস,
যতদুর এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি তাতে মনে হয়েছে যে ইরানের শিক্ষা ব্যাবস্থায় জেহাদী ধ্যান ধারনা আরবের থেকেও বেশী।
জরুরী এই সিরিজ চলুক । প্রথম থেকেই সাথে আছি আদিল ভাই যদিও কমেন্ট করিনি আগে।
আর হ্যা , সিরিজ শেষ হলে এটিকে ইবুক আকারে প্রকাশ করুন ।
@মানিক ভাই,
অনেকদিন পর দেখা হল। আছেন কেমন? নিয়মিত আসেন না কেন?
মুসলিম সংখ্যাগড়িষ্ঠ রাষ্ট্রে ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা (এবং রাষ্ট্র) ব্যবস্হা চালু করা এক রকমের ‘মিশন ইম্পসিবল’ বটে ! অধুনা ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ তুরস্কে যেভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা ভেঙ্গে পড়ছে এবং অটোমান ইসলামের পূণর্জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে করে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ কমই। ইন্দোনেশীয়া এবং তুরস্ককে এ সময় মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতিরূপ ভাবা হতো। সমকামীতা পর্যন্ত আইনত বৈধ এ দুটি মুসলিম রাষ্ট্রে। কিন্তু আর কতদিন এরকম থাকবে তা আর নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। মিশরে , লিবিয়ায় এবং তিউনিসিয়ায় ধর্ম নিরপেক্ষ শাসনের অবসান ঘটেছে সম্প্রতি এবং তা পশ্চিমের মদদেই্। সিরিয়ার বর্তমান ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্হা এখন অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, যে কোন সময় এর মৃত্যু হতে পারে।
আমরা কি দেখছি ? একদিকে মৌলবাদের সমালোচনা করা হয় এবং অন্যদিকে ধর্ম নিরপেক্ষ মুসলিম সরকারের পতন ঘটিয়ে মৌলবাদীদের ক্ষমতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আফঘানিস্তান এবং ইরাকের উদাহরন আমাদের সামনেই আছে। যে ইরাকে এবং আফঘানিস্তানে এক সময় শিক্ষা এবং বিজ্ঞান নারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল , সেখানে এখন তাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাই হানুজ দুরস্ত। অতএব, মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে কাঁঠালের আমসত্বই বলা শ্রেয়।
@সংশপ্তক,
– খুবই সত্য কথা। যাদের ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা আছে তাদেরই জানার কথা যে ইসলাম ধর্ম পূর্ন ভাবে বিশ্বাস করে (শুধু বিশ্বাস নয়, পূর্নাংগ ও একমাত্র জীবন বিধান)ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র/শিক্ষা সম্ভব নয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলে সে রাষ্ট্র ইসলামী কালাকানুন কায়েম করবে কিভাবে? ইসলামী কালাকানুন কায়েম না হলে ইসলাম পূর্নাংগ জীবন বিধান কিভাবে হল? বংগবন্ধুও এ সত্য দ্রুতই বুঝেছিলেন বলেই আমার ধারনা, তাই উনি শুরু থেকেই দ্রুত ধর্মনিরপেক্ষ কনসেপ্ট থেকে পিছু হটছিলেন।
আমার ব্যাক্তিগত ধারনা বাংলাদেশের ইসলামী করনের হার কম হবার অন্যতম কারন ‘৭১ সালে বদর রাজাকার এসব দলে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং দেশের মোল্লা আলেম শ্রেনীর অংশগ্রহন। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে লোকে এদের ধর্মগুরু হিশেবে মেনে নিলেও রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসাতে কিংবা তাদের বুদ্ধি পরামর্শে দেশ চালাবার ভরসা করে না। ‘৭১ সালে যদি এই গোত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকত তবে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে ইসলামাইজেশন অনেক দ্রুত হত, পাকিস্তানের মতই হত দেশের অবস্থা।
আরব অঞ্চল বাদে মুসলমান প্রধান প্রায় সব কটি দেশই জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত, সীমিত সম্পদের কারনে ইনব্যালেন্স ভয়াবহ। ফলে সেক্যুলার কি ধর্মওয়ালা কারো হাতেই যাদুর কাঠি নেই সমাধান করার। মুসলমান মানসে জন্ম থেকেই ইসলামী ইউটোপিয়ার স্বপ্ন গাড়া হয়। যারা ইসলামী লাইনে পড়াশুনা করে,খলিফা উমরের সুশাসনের ইতিহাস পড়ে তাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে ইসলামী শাসন কায়েম হলেই সব সমস্যার সমাধান। ভিটামিন হিশেবে কাজ করে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থার নানান ত্রুটি, শাসকদের দূর্নীতি অনাচার (যেমন মিশর/তিউনেশিয়া)। ফলে এক সময় এসব দেশের লোকে আবারো ধর্মীয় ব্যাবস্থার মাঝে উত্তরনের আশা করবে সেটা স্বাভাবিক। মিশর থেকে এক সময় ব্রাদারহুডকে মেরে কেটে খেদিয়ে আরব দেশে তাড়ানো হয়েছিল। আজ তারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা কি যাদু আনবে তা সময়েই দেখা যাবে। বাংলাদেশেও জামাত জাতের ধর্মভিত্তিক দল খালেদা/হাসিনা এরা কাটার পর ক্ষমতায় আসা এই সূত্রে খুবই সম্ভব, জামাতের ভোট ব্যাংক ৫% দেখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলার তেমন কারন নেই। এসব দেশে ইসলামী ব্যাবস্থাও সফল না হলেও কিন্তু ধর্মওয়ালাদের কাছে সমস্যা হবে না। কারন তাদের যুক্তিবোধ সব সময়ই শেয়াল আর কুমীরের গল্পের মত, জয় সর্বদাই তাদের। ইসলামী ব্যাবস্থা, শরিয়া আইন ফাইনের পরীক্ষিত কুফল দেখালে সাফ বলে দেবে যে এই ইসলাম আসল ইসলাম নয়, ব্যাস সমাধান হয়ে গেল।
ধর্ম নিয়ে আদিখ্যেতা যত হবে, শিক্ষার ভেতর যত ভরা হবে জামাত হুজি টাইপের জনপ্রিয়তাও ততই বাড়বে। কারন ছেলেরা একদিকে বিদ্যালয়ে শিখবে একমাত্র ইসলামী ব্যাবস্থাই শ্রেষ্ঠ যা ছাড়া মানব জাতির মুক্তি নেই, ইসলামী ব্যাবস্থার অভাবেই দেশের এই ছ্যারাব্যাড়া অবস্থা। আরেকদিকে দেখবে যে ধর্মনিরপেক্ষ ধারার দলগুলি ইসলামী শাসন কায়েম করতে রাজী নয়। ফলে তাদের বিবেক দিনে দিনে যেসব দল দেশে ইসলাম কায়েম করতে চায় তাদের দিকেই ঝুঁকবে। ‘৭১ এর চেতনা খুব বেশীদিন এটা রোধ করতে পারবে বলে মনে হয় না। এর আলামত কিন্তু দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য সাইটে দেখুন সরাসরি পাক পক্ষ সমর্থন করা, জামাতি ধরনের লোকজনকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনেই বিরাট সম্মান দিচ্ছে কারন তিনি বিরাট আলেম, ইসলামী পূণঃজাগরনের কথা শোনান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইসলামী চেতনার কাছে এভাবেই এক সময় সরাসরি পরাজিত হবে। এই স্যাম্পল ইকুয়েশন শুধু ব্লগের ভাবলে ভুল হবে।
আগুন নিয়ে খেলার ফল কতটা দিতে হয় সময়ই বলতে পারবে।
আরব বসন্তে পশ্চীমের ভূমিকা থাকলেও তা নির্নায়ক নয় বলেই আমার মনে হয়। মিশর, তিউনেশিয়া, লিবিয়া এসব দেশের জনগন না চাইলে শুধু আমেরিকা ব্রিটেনের বাবার ক্ষমতা ছিল না কিছু করার।
..
আদিল মাহমুদ,
সিরিজটা অসাধারন হয়ে উঠেছে! আমি আমার দেশ নিয়ে ভাবি বা ভাববো। সেখানে বাচ্চাদের হাতে কোন ধর্মীয় পুস্তক দেওয়া উচিৎ হবেনা, কারণ এই কাল্পনীক, বিতর্কিত এবং হীনতা শিশুমনকে আচ্ছন্ন করুক আমি তা ভাবতে পারিনা। বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় আসা সব গুলো ধর্মই কিভাবে শিশুতোষ চেতনা গুলোকে পেছনে টেনেছে তা বেশ উপলব্ধি করা যায় আপনার বিশ্লেষন থেকে। কোন সন্দেহ নেই যে সিরিজটি অচীরেই সব ক’টি ধর্মের অসারতা দেখিয়ে দিয়ে এদের গোড়ায় আঘাত করতে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে সিরিজটার পরিপ্রেক্ষিতে যে আলোচনাটা দাড়াচ্ছে! আমি একে আমার বোধ আর বিশ্বমানবতার পক্ষে একটি আন্দোলন হিসেবে দেখতে চাই।
@কেশব অধিকারী,
অনেক ধন্যবাদ।
আমি আসলে ধর্মশিক্ষার সামগ্রিক কুফল গোছের কিছুও লেখার চিন্তা করিনি, শুধুমাত্র আমাদের দেশের ধর্মশিক্ষার বিশেষ একদিক, সাম্প্রদায়িকতা হাইলাইট করতে চেয়েছি। সামগ্রিক কুফল লেখার মত বিদ্যা বা সময় আমার আপাতত নেই। এখনো এসবের কুফল কিন্তু সেভাবে বর্ননা করিনি, সামনের পর্বে করব।
সাম্প্রদায়িকতার সরাসরি পাঠ ছাড়াও এসব ঈমানী বিদ্যা প্রাপ্তবয়ষ্কদের মনেও জন্ম দিচ্ছে ও জিইয়ে রাখছে সীমাহীন যুক্তিহীন কুসংস্কারের। যেমন মারেফুল কোরান তাফসির বইতে একটি চ্যাপ্টার আছে “জ্বীনের সাথে বিবাহ” যাতে মহিলা মুসলমান জ্বীনের সাথে মুসলমান মানবের বিবাহ সিদ্ধ হবে কিনা তা নিয়ে বড় বড় আলেম ওলামার বিশ্লেষন আছে। যে যুগে লোকে চাঁদ মংগল গ্রহে বসতি করার চিন্তা করছে সে যুগে আমাদের সরকার গাঁটের পয়সা খরচ করে কুসংস্কার, কুশিক্ষা বিস্তারে ব্যাস্ত আছে ভাবা যায়।
@আদিল মাহমুদ,
যথার্থ বলেছেন। চিন্তা করা যায় এসব? তারা ব্যস্ত জ্বীন পরীদের সাথে বিয়ে বা দোজখের উত্তাপ মাপার গবেষণায়। আরও একটা বিষয় কাজ করে মুসলিম মানসে তা হলো – তারা দোজখের আগুনের ভয়ে থাকে সারক্ষন যা তাদের মাথায় সেই কচি বয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আমি কয়েকজন এক্স মুসলিমের সাথে আলাপ করে দেখেছি- তারা বলেছে, যতদিন তারা ইসলাম পালন করত এই দোজখের ভয়ই মূলত: তাদেরকে ইসলামে রেখেছিল। অত:পর সেই ভয় যখন তারা কাটাতে পেরেছিল তখন বুঝতে পেরেছিল যে ইসলাম আসলেই একটা বোগাস কিচ্ছা কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। এ ছাড়া মোহাম্মদের ব্যক্তি চরিত্র সম্পর্কে যখন জানতে পেরেছিল তখন তারা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিল ইসলাম পুরোপুরি বোগাস।
@ভবঘুরে,
জ্বীন পরী কেউ ধর্মবিশ্বাসের খাতিরে ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করলে কারো কিছু বলার নেই। কে হস্তিদেবতা, কে হাতুড়ী দেবতা, জ্বীন পরী বিশ্বাস করে তাতে কার কি এসে যায়?
মুশকিল হয় এসবের প্রভাব বাস্তব জীবনে টেনে আনলে। আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানে ডাক্তার জাকির নায়েককে একবার শুনেছি কঠিন মানসিক রোগের জন্য জ্বীন নামানো উপযুক্ত মোল্লার সন্ধান করে তার সাহায্য নিতে।
প্রীয় পাঠক বর্গ,
আজ সকাল ৭:৩০ এর বাংলা বিবিসি খবরে শুনে দেখতে পারেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় সেখানকার পুলিস “হামছি” নামে একটি গ্রুপের ১১ জন তরুন সন্ত্রাসী কে আটক করেছে। এরা সেখানকার আমেরিকান দূতাবাসে আক্রমনের পরিকল্পনা করেছিল। তাদের নিকট থেকে বিপুল অস্ত্র সস্ত্র ও উদ্ধার করা হয়েছে।
এরা অন্য কোন ধর্মালম্বী ছিলনা। এরা ছিল একমাত্র সত্য ইসলাম ধর্মের মুসলিম তরুনেরা।
এদেরকেও “নাফিছের” মতই ধর্ম গুরুরা মা-বাপের কোল শুন্য করে কোরানের নির্দেশ দেখিয়ে অমুসলিমদের ধংস করার লক্ষে আত্যঘাতিতে পরিণত করে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এরা সরল বিশ্বাষী তাই আল্লাহর বানীর নাম দিয়ে কিছু বল্লেই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়।
এরকম আরো লক্ষ লক্ষ নাফিছ ও হামছিরা লাইনের পিছনে রয়ে গিয়েছে।
তারা আগামী কালই আসতেছে। এরা এই সুন্দর পৃথিবীকে ধর্মের নামে ধংস করে দিতে পারে।
এদেরকে ঠেকানোর একমাত্র পথ এবং মা বাপের কোল আর খালি হতে বাধা দেওয়ার একমাত্র উপায় এই পবিত্র কোরানের আসল সত্য রুপটা এদের সামনে উন্মোচন করে দেওয়া।
উদাহরন স্বরুপ পবিত্র কোরানের প্রকৃত সত্য রুপের একটা পবিত্র আয়াত নীচের বানীতে পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। তা হল-
৯৬:২ ছুরা আলাক-
সবাইকে জেনে রাখতে হবে মানুষ কখনোই জমাট রক্ত বা রক্তপিন্ড হতে সৃষ্টি হয়না,কখনোই হওয়ার সম্ভাবনাও নাই, হতে পারেনা,এমনকি EMBRYO বা ভ্রুনটি UTERUS বা জরায়ুর মধ্যে থাকার মেয়াদ কালে (প্রায় ৯ মাস ১০ দিনে) এর মধ্যে একটি মুহুর্তের জনও জমাট রক্ত এমনকি স্বাভাবিক রক্ত পিন্ড আকারেও পরিনত হয়না। হওয়ার সম্ভাবনাও নাই।
কোন কারণ বসতঃ যদি রক্ত জরায়ূর মধ্যে ঢুকে পড়ে ,(যেমন ঝাকির কারনে যদি PLACENYA বা ফুল এর রক্তের শিরা যায়) তাহলে সময়মত উপযুক্ত চিকিৎসা না পাইলে, ভ্রুণটি ক্ষরিতজমাট রক্ত সহ একটি রক্তের বলের মত আকারে গর্ভপাত হয়ে বেরিয়ে আসে।
এটার অর্থ এই নয় যে ঐ রক্তের বলটিই মানব আকারে জন্ম নিতে চলেছিল।
কোন চিকিৎসা বিদেরও ক্ষমতা নাই আমার উপরোক্ত মন্তব্য খন্ডন করার। সন্দেহ হলে জিজ্ঞসা করে দেখতে পারেন।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ভাইজান আমার নিবন্ধে এক লোক একটা সাইট দিয়ে ওপেন চ্যলেঞ্জ দিয়েছে। তার সাইটে দেখলাম কোরানকে নিজের মন মত অনুবাদ করে সেটাকে বিজ্ঞানের বই বানিয়ে ফেলেছে। আপনি তো ভাল আরবী জানেন, আপনি কি দয়া করে উক্ত সাইটের আয়াতগুলোর সঠিক অনুবাদ গুলো করে দেবেন ?
@ভবঘুরে,
হ্যাঁ আমি দেখতেছি। এখনি আপনার ছাইটে যাচ্ছি।
@ভবঘুরে,
এই সাইটের যে পরিচালক তার নাম কি রাসেল খান? নিচের এই লিংকটাঃ
http://www.irc.net23.net/
ভাই এই লোকটা জোকার নায়েকের দারুণ ভক্ত। এই মহা জ্ঞানী atheist bangladesh এ গিয়ে সকলকে ভাল বিনোদন দিয়েছে।
ভাল থাকবেন।
@(নির্জলা নির্লজ্জ)
আপনি ঠিক ধরেছেন হ্যা, সেই সাইট। লোকটা একটা জব্বর মজার মনে হচ্ছে। ওপেন চ্যলেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আমি তাকে কোরানের একটা আয়াত দিয়ে তার অর্থ করতে বলেছি, এখনও উত্তর পাই নি , জানিনা উধাও হয়ে গেল কি না। ,
@ভবঘুরে,
আমিও আপনার সেই লেখাটা দেখেছি। নিচের লেখাটাই তো।
আসলে উনি জোকার নায়েকের কথা গুলি কপি পেস্ট করছেন। তাই উত্তর দিতে পারেন না।
আমি উনাকে আপানদের একটা সমস্যা তুলে ধরেছিলাম… ২:২৯ আর ৭৯:২৭,২৮,২৯,৩০
এই দুইটা সুরা বিপরীত কেন?
উনি বল্লেন আল্লাহ পৃথিবি আর আকাশকে পৃথক করেছেন।
তখন আমি বললাম তার মানে আল্লাহ পৃথিবি আর আকাশকে শুধু পৃথক করছে, কিন্তু তিনি এই গুলা সৃষ্টি করেন নি।
উনি কিছুটা বিরক্ত হইল।তার পর আমি আর মন্তব্য দেই নি, তারপর অন্যান্য পাবলিকরা তার সাথে মজা নিল।
ভাল থাকবেন।
@ভবঘুরে,
এসবে সময় নষ্ট করার কি আছে? ওনার চ্যালেঞ্জ দেবার আগে বানান ঠিক করা দরকার। চ্যালেঞ্জের পয়েন্ট কি সেটা তো আগে বুঝতে হবে। “পিতিবিম্বিত আলো” কি জিনিস কে জানে। আমি একটু বিজ্ঞান বিষয়ক চ্যালেঞ্জ দেখেছিলাম, পুরোই জাকির নায়েকের কোরানে বিজ্ঞান মনে হয়েছে। ফেরাউনের লাশ উদ্ধার পড়েও ব্যাপক মজা পেয়েছি।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
মায়ানমারের নুতন খবর দেখেছেন? রোহিংগা মুসলমানদের ওপর নুতন করে অত্যাচার শুরু হয়েছে।
এর সাথে ইন্দোনেশিয়ার খবর কি রিলেট করা যায়? অনেকের মতে কিন্তু যাবে।
আমার মতে যায় না। বড়জোর আংশিক সম্পর্ক টানা যায়। তবে মূল কারন হিশেবে রিলেট করা যায় না। বাংলাদেশের জেএমবি, হুজি, পাকিস্তানের লস্করে তাইয়েবা, কিংবা আল কায়েদা কেবল পশ্চীমা সাম্রাজ্যবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা হয় না।
আপাত চোখে মনে হয় যে এসব দলের উত্থান, বোমাবাজি ৭০ দশকের আগে ছিল না, ইংগ-মার্কিন-ইসরাইলী সাম্রাজ্যবাদের কারনেই এরা পথে নেমেছে। পথে নামার অনুঘটক সাম্রাজ্যবাদ হতে পারে। তবে মৌলিক শিক্ষার উপকরন সেখানে নয়, তাদের ধর্মশিক্ষার ভেতরেই আছে। সেটা সব সময়ই ছিল, কেবল বিকশিত হতে পারেনি সঠিক পরিবেশ, পরিস্থিতি,অনুঘটকের অভাবে।
বাংলাদেশেও ধর্ম নিয়ে আদিখ্যেতা যত বাড়বে, হুজি টাইপের দলের জনপ্রিয়তা ও দৌরাত্ম্যও ততই বাড়বে। এর আলামতও ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের মত আমাদের সেনাবাহিনীর ভেতরেও মৌলবাদীদের অবস্থান এখন আর অনুমানের বিষয় নয়, ঘোষিত ব্যাপার। এরা ক্যু পর্যন্ত সংঘটনের ক্ষমতা রাখে। শুধু দমন পীড়নের উপায় না ভেবে সৃষ্টির হচ্ছে কেন সেই কারন ভাবা দরকার। নইলে পাকিস্তানে পরিনত হতে খুব বেশী দেরী নেই।
বেশ গঠনমূলক লেখা। আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল। বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু এভাবে একে একে সাজাতে পারিনি। কিছুদিন আগে কোথায় যেন শুনেছিলাম যে পাকিস্তানের এক ছেলে নাকি সুইডেনের আদালতে কোরান নিষিদ্ধ করার জন্য মামলা করেছিল। পরের খবর আর কিছু জানিনা। ভারতেও নাকি একবার কোরান নিষিদ্ধ করার জন্য মামলা হয়েছিল। সত্যি নাকি?
@আলপনা,
আসলে এ ধরনের অপ্রীতিকর বিষয় আমাদের চোখের সামনেই আছে, যুগ যুগ ধরে প্র্যাক্টিস চলে আসছে। আমরা জন্মগতভাবে এসবে অভ্যস্ত বলে সেভাবে চিন্তা করি না। তবে চিন্তা করা দরকার। দৈনন্দিন প্রয়োজনের ডাল ভাত পানি বিদ্যুৎ এসব মৌলিক সমস্যা হলেও এ ধরনের সমস্যার ব্যাপকতাও কম নয়।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
(Y)
সময় ও স্থানে যা প্রচার করা হয় তা সেখানকার মানুষ তা গ্রহন করে চর্চা করলে ওই প্রচারকৃত পণ্যের দোষ দেবেন কি করে বলুন। মানুষ চেয়েছে তাই বিদেশী ওই ধর্মপন্য শেকড় গেড়েছে গভীর থেকে গভীরে। আমাদের সংস্কৃতিকে দূষিত করেছে মহা উল্লাসে, প্রায় নির্বিঘ্নে। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা ওতে সামান্যতম হলেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছি। আমাদের সংস্কৃতিতে আপন যা আছে সেগুলোর ব্যাবহার আর চর্চা বাড়ালে কিছুটা হলেও হয়ত উপশম মিলবে।
আমার মনে হয় বেশীরভাগ মানুষের কাছে ধর্মচর্চা ডাল ভাতের মত। তবে এটার চর্বিত চর্বণ মৌলবাদীদের উত্তরাধিকার। আমার ধারনা ব্যাতক্রমী ঘটনা না ঘটলে সাধারণ কৌতূহলী হয় না।
আমরা মুক্ত লেখা বা আলোচনা করছি । সাধ্যমত চেষ্টা চলছে নিজকে নিয়ে কৌতূহল আর খুব সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে, আগ্রহ যোগাতে। এসব তথ্য গতির দ্রুততা আর সহজলভ্যতার কারনে অনেকের খুব কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সহজেই। আলোধরারা আলো ছড়াবে; আশা তো করতেই পারি। অন্যদিকে আবার অনেক অনেক বেশী কজনা, কুম্ভকর্ণেদের কাছে মুক্তির শব্দ কিংবা আলো পৌঁছুচ্ছে না এখনি।
নতুনদের থেকে অনেক ভালো ভবিষ্যৎ আশা করছি। আমাদের চেষ্টা তো করতেই হবে। প্রাথমিক ভাবে সংশয় আর যুক্তিবাদীদের কাজ আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। ধর্মীয় অন্ধতায় যখন ব্যাতিক্রমী ঘটনা ঘটে, সংশয় আর যুক্তি খোঁজায় সাধারণ মানুষ হয়ত একটুক্ষনের জন্য মনোযোগ দেয়। সেই সময়টা মনে হয় যুক্তিবাদীদের জন্য খুব ভালো সময়।
আপনার লেখাটাতে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে (C)
@কাজী রহমান,
– হতাশ হবার কিছু নেই, কিংবা খুব আশাবাদী হবারও কিছু নেই। হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা অন্ধবিশ্বাসের দেওয়াল একবারে ভেংগে পড়বে না কিংবা কখনোই ভাংগবে না। তবে উপযুক্ত আঘাত লাগলে ধীরে ধীরে দূর্বল হতে বাধ্য যে লেভেলে অন্ধবিশ্বাসের ক্ষতিকর দিকগুলির প্রভাব কমে আসবে।
– এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের কথা জানিনা, তবে বাংলাদেশর মুসলমানদের সাথে ইসলামের অনেক পার্থক্য আছে, এটা জানি। এই বাস্তবতা কিভাবে নির্মিত, তা নিয়ে আলাদা একটা লেখা হ’তে পারে।
ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা ও তার কানুন সমূহ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে অনেকগুলো শক্তি-সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ক্রিয়াশীল, সাথে রয়েছে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা।
এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ( যাদের না আছে সংগঠন, না প্রতিষ্ঠান ) আমরা কতটুকু এগুতে পারি, এ বাস্তবতা মাথায় রাখলে, লেখকের লেখা-র উদ্দেশ্য বুঝতে সুবিধা হবে। চরম বা হঠকারীতা আরো আরো বিচ্ছিন্নতার বাতাবরণ তৈরী করবে।
চোখের সামনে দেখা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম দাবি – জাগতিক শিক্ষা-ক্রম কোন সরকারই বাস্তবায়িত করেনি অথচ আন্দোলনের সুফলটুকু ঠিকই ঘরে তুলে নিয়েছে।
তাই বলে আন্দোলন তো থেমে যায়নি, গেলেও তা সাময়িক ( দেশে নেই, তাই এ অজ্ঞতা) কিন্ত গঠনমূলক লেখা ও আলোচনাও তো সেই আন্দোলনেরই অংশ এবং সেই আপাত অদৃশ্য শক্তিসমূহকে প্রাণিত করবে, সন্দেহ নেই।
লেখককে অভিনন্দন!
@স্বপন মাঝি,
– খুবই সত্য কথা। ব্লগে লেখা লিখে হাজার বছর ধরে চলে আসা কালচার বদল করা যাবে এমন আশা করা যায় না। তবে গঠনমূলক আলোচনায় একজনেরও যদি উপকার হয় সেটাও অনেক।
@আদিল মাহমুদ,
ই-বার্তা পাঠিয়েছি, অনুগ্রহ করে চোখ বুলিয়ে, জানাবেন কি?
@স্বপন মাঝি,
রিপ্লাই দিয়েছি, ধন্যবাদ।
এটি ইন্দোনেশিয়ার। মুসলিম দেশগুলো ধীরে ধীরে চিড়িয়াখানায় পরিণত হচ্ছে
httpv://www.youtube.com/watch?v=EkveK3nYU7E
আরো দেখেন, শান্তি কায়েমের ইসলামী তরিকা
@সৈকত চৌধুরী,
অবাক হবার কিছু নেই। এককালে ব্রিটিশ আমলে আমাদের দাদার বাবারে একইভাবে ইংরেজী শিক্ষার বিরোধীতা করেছে ধর্মের দোহাই পেড়ে, ওনাদের শ্রেষ্ঠ দ্বীনি ব্যাবস্থা থাকতে আবার নাছারা ইংরেজী কোন দূঃখে পড়তে যাবেন? ফলাফল হয়েছে আজকের ভারতের সাথে পাকিস্তান বাংলাদেশের তূলনা। অবশ্যই এর দ্বায় নিজেদের নয়, দায় হল ইংরেজ+হিন্দু ষড়যন্ত্র।
পশ্চীমা সমাজের উদারতার সুযোগ এরা বহু বছর ধরেই নিচ্ছে, পশ্চীমারা মনে হয় না এসব উন্মাদদের ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে পাগলামি করতে দেবার কুফল কত সুদুর প্রসারী হতে পারে।
আপনার এ সিরিজটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রথম পর্ব পড়েই এর সম্পুরক হিসেবে ডঃ আলি সিনহার ‘কোরান কেন সংস্কার সম্ভব নয়’ লেখাটার অনুবাদ করে একটা লেখা দিতে চেয়েছিলাম। ঠিক এই সময়েই নব যুগ ফোরামে একজন সে কাজটা করে ফেলেছেন দেখে আর নিজে লিখলাম না। এই যে গতকাল মহানন্দে বাকশক্তিহীন, নিরীহ, অসহায় প্রাণীদের হত্যা করে পশুহত্যা দিবস সারা মুসলিম দুনিয়া জুড়ে পালন করা হলো, তা বৌদ্ধ ধর্ম ছাড়া অন্যান্য প্রায় সকল ধর্মেও ছিল যদিও এমন ব্যাপক উম্মাদনা ছিলনা। কোরবাণী আবু বকর, ওমরের আমলে তো ছিলই না এমন কি মুহাম্মদের আমলেও এ রকম ছিলনা। আজ যে কোরবাণী প্রথা শুরু হয়েছে তা মোটেই ইসলাম সম্মত নয়।
Abraham and Isaac (Genesis 22) বাইবেলে বর্ণীত কাহিনি ভুল ভাবে নকল করে কোরানে ঢুকানো হলো। ইব্রাহিমের সপ্নকে ইহুদি খৃষ্টানরা মিথ মেনে নিলো, হিন্দুরা বেদের পশু বলি, সতীদাহ বাদ দিল, মুসলমানরা কেন পারেনা এর উত্তরটা বোধ করি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
যাক, পরে আরো আলোচনা হবে, আপাতত ই-মেইলটা চেক করুন।
@আকাশ মালিক,
তাজ হাশিমী, আলী সিনা ওনাদের লেখার সাথে আমার পরিচয় নেই। আমার ব্লগ জগতে পদার্পনের আগেই ওনারা মনে হয় বিদায় নিয়েছেন, পুরানো লেখায় ওনাদের নাম দেখি। পড়ে দেখব সময় করে।
কোরবানী বিষয়ক বিতর্ক এড়ানোই ভাল। এসব নিয়ে আমরা কেন আপত্তি করি সেটা বোঝার মত ম্যাচিউরিটি এখনো অনেকের হয়নি।
এদের যুক্তির লেভেল হল আপনি গরু খান না? ?? আমি গরু ছাগল খাদ্যের প্রয়োজনে খাই, তাই বলে নেহায়েত খেলাচ্ছলে পশু হত্যা (যেমন পশ্চীমে বহু যায়গায় করা হয়) কিংবা কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের নামে পশু হত্যা হলে অবশ্যই তার প্রতিবাদ করি। কোরবানীর যদি মাংস খাওয়া ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে তবে মাংস খাওয়া যুক্তি অবশ্যই মানা যায়। এটা এদের কে বোঝাতে পারবে?
জগতে যেভাবে জনসংখ্যার চাপে কৃত্রিম খাদ্য যায়গা করে নিচ্ছে তাতে একদিন ফ্যাক্টরিতেই মাংস উৎপাদন হবে। তখন মাংস খাওয়া যুক্তি কোন চূলোয় যাবে?
যে বিপুল জোশে নামাজ, হিজাব, হজ্জ্ব, কোরবানী এসব রিচ্যূয়াল পালন করা হয় তার কানাকড়ি সত চরিত্রের মানুষ উতপাদনে ব্যায় করা হলে হয়ত লাখে লাখে মোমিন মুসলমানকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ জীবন পদ্ধুতির ব্যাবস্থা ছেড়ে কোরানের সরাসরি নির্দেশ অমান্য করে কাফের নাছারার দেশে ঠাই গাঁড়তে হত না। আবার রিচ্যূয়ালিষ্টিক ধর্ম শুনলে ওনারা রাগ করেন।
@আদিল মাহমুদ,উপরে আলী সীনা’র লেখার একটা অংশ ”
“খ্রীষ্টান ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে অনেক সাদৃশ্য আছে। উভয় ধর্মই এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, উভয় ধর্মেই মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যখানে নবী রয়েছে, উভয় ধর্মই মুক্তির পথ সন্ধানী, এবং উভয় ধর্মেই নরক, স্বর্গ ও পরজীবন ইত্যাদি আছে। তবে মর্মগতভাবে ধর্ম দু’টো পরস্পর থেকে শুধু ভিন্নই নয়, বরং পরস্পর-বিরোধী। মোহাম্মদ ও তার অনুসারীরা যেভাবে দাবী করেছেন বা করেন যে ইসলাম খ্রীষ্টধর্মেরই ধারাবাহিকতা মাত্র, সে দাবী মোটেই সত্য নয় বরং ইসলামের সারমর্ম খ্রীষ্টধর্ম বিরোধী। খ্রীষ্টধর্ম মানুষের স্বাধীনতার প্রবক্তা, ইসলাম মানুষের দাসত্বের প্রবক্তা। খ্রীষ্টধর্মের মাঝে মুক্তির বাণী নিহিত, ইসলামের দাবী আত্মসমর্পণ।”
আপনি একটা ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখবেন যে মুক্তচিন্তার নামে ইসলাম বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেবেন না। এখানে অনেকেই আছেন যাদের কথায় কথায় বেড়িয়ে আসে যে তারা আসলে বলতে চান যে বাকী সব ধর্ম ভুলত্রুটি থাকলেও সেগুলো নির্বিষ ঢোড়া সাপ, কেবম ইসলামই হলো কালকেউটে।
ধর্মগ্রন্থকে অভ্রান্ত-অপরিবর্তনীয় মনে করার মতো লোক অন্য ধর্মে অভাব নেই। কয়েকসপ্তাহ আগে আমেরিকার আরকানসাসে রাজ্য নির্বাচনের একজন পলিটিশিয়ান এর ভাষ্যে
Republican Candidate In Arkansas Says Parents Should Seek Death Penalty Against ‘Rebellious Children’
By Judd Legum on Oct 8, 2012 at 6:50 pm
” Here’s the key passage from Fuqua’s 2012 book, “God’s Law: The Only Political Solution“:
The maintenance of civil order in society rests on the foundation of family discipline. Therefore, a child who disrespects his parents must be permanently removed from society in a way that gives an example to all other children of the importance of respect for parents. The death penalty for rebellious children is not something to be taken lightly. The guidelines for administering the death penalty to rebellious children are given in Deut 21:18-21:”
http://thinkprogress.org/election/2012/10/08/974321/republican-candidate-in-arkansas-says-parents-should-seek-death-penalty-for-rebellious-children/?mobile=nc
এখনো বিশ্বের খৃষ্টজগৎ এর মধ্যে এমন লোকের অভাব নেই যারা মনে করে বাইবেলের প্রতিটি লাইন অক্ষরে অক্ষরে সত্যি এবং ইশ্বরের প্রতিটি আদেশ অবশ্য পালনীয়। কিন্তু আসল কথা হলো পশ্চিমের অধিকাংশ লোক মেনে নিয়েছে যে অক্ষরে অক্ষরে ধর্মপালন অসম্ভব একটা ব্যাপার। তারা মেনে নিয়েছে যে বিজ্ঞান আর মানবতাবাদের সাথে লড়াই করে জেতা ধর্মের পক্ষে সম্ভব নয়। মুসলিম জগৎ এর এক বিপুল অংশ এই সত্য মনে মনে জানে, কিন্তু এটা স্বীকার করে নেয়ার মতো সাহস এখনো পায়নি। এটা তো স্পষ্টই যে সামাজিক, সাংষ্কৃতিক বিবর্তনে বিশ্বের মুসলিম সমাজ গুলো অন্য সমাজদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিলো। তাদের খুব দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এইসময়ে তাদের ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ। কিন্তু সেই সাথে তাদের ধর্মটাই খারাপ, বাকী সব ঠিক আছে, এই বাণী প্রচার করলে উল্টা ফল হবে। কারন ইসলাম অনেকের কাছে পালনীয় ধর্ম না হলেও আত্মপরিচয়ের একটা অংশ।
@সফিক,
বিষয়টা যে আসলেই তাই, আপনার কি তা মনে হয় না ? না হলে হিন্দু বৌদ্ধ ইহুদি খৃষ্টান এদের মধ্যে কয়জন লাদেন, বাংলা ভাই, আব্দুর রহমান বা নাফিস সৃষ্টি হচ্ছে ? তামিল টাইগাররা আত্মঘাতী হামলা করত স্বাধীনতার নামে, কিন্তু এই সব লোকজন এরা যাদেরকে আত্মঘাতী হামলায় নিযুক্ত করেছে কি কারনে করেছে ? সারা দুনিয়াতে ওদের মত কাল কেউটে সাপ হাজার হাজার নয় ,লক্ষ লক্ষ তৈরী আছে ,খালি সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এই একবিংশ শতা্ব্দীতে বসে যদি কেউ বেহেস্তে হুর পরীর লোভে আত্মঘাতি হামলা বা অন্য কোন সন্ত্রাসী হামলা করার পায়তারা করে , আপনি তাদেরকে কি সুস্থ মানুষ বলবেন ? তাছাড়া আলোচ্য নিবন্ধে দেখানো হয়েছে সারা দুনিয়াতে ইসলাম ধর্মের নামে স্কুল কলেজে কি পড়ানো হয়। অত্যন্ত ছোট বয়েস থেকেই তারা হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়ীক। এখন যারা উদারমনা এরা তো মনে হয় বহু কষ্টে এসব সাম্প্রদায়ীকতার আবহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে স্বাধীন ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারছে। সেটাও সম্ভব হয়েছে উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশে থাকার কারনে। এখন খুব আকর্ষণীয় একটা ঘটনা দেখা যাচ্ছে। তা হলো- একদল মানুষ সত্যিকার অর্থে ইসলামকে বাতিল করার সাহস সঞ্চার করতে পারছে , ঠিক অন্যদিকে ভয়ংকর মৌলবাদী চরিত্রের হয়ে উঠছে আগের চাইতে অনেক বেশী সংখ্যায়। অর্থাৎ কেউ কেউ এটাকে বাতিল করলেও একটা বিরাট অংশই এটাকে প্রান পনে আকড়ে ধরছে। এর ফল কি হবে ভবিষ্যতে ? আমার তো আশংকা হয় এক মহা হত্যা যজ্ঞ শুরু হবে কোন এক সময়। আমি সেই আশংকাতেই থাকি সারাক্ষন । কখন না জানি সেই মহা হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। আর বলা বাহুল্য ধর্মের নামে হত্যাযজ্ঞের সেটাই হবে সর্বশেষ ঘটনা এ দুনিয়াতে।
@ভবঘুরে, না আমার তা মনে হয় না। মৌলবাদ আর ভায়োলেন্স এর সাথে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মৌলিকভাবে জড়িত। আজকে বিশ্বের মুসলিমদের বিপুল অংশ বেঠিকভাবে হলেও মনে করে মুসলিম সমাজ চারিদিক থেকে আক্রান্ত। পলিটিক্যাল-অর্থনৈতিক ক্ষমতার অভাবে মৌলবাদ আর সন্ত্রাস উৎসাহিত হয়। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে ইউরোপে ধর্মীয় মৌলবাদের কারনে একের পর এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিলো, গনহত্যায় দেশের পর দেশ খালি হয়ে গেছিলো, ইহুদী-বিরুদ্ধমতালম্বী দের সমূলে দেশ ছাড়া করা হয়েছিলো। সেই সময়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে মধ্যপ্রাচ্য অনেক তুলনামূলক শান্তি ছিলো। বিভিন্ন ধর্মের লোকজন সমতা না হলেও সহাবস্থান করতো কোনো ঝামেলা ছাড়াই। সেই সময়ে যদি কোনো এলিয়েন মানব সভ্যতাকে পর্যবেক্ষন করতো তবে তার হয়তো মনে হতো খ্রীষ্টধর্মের মতো অসহিষ্ণু-হিংস্র ধর্ম আর নেই। আর তার এটাও মনে হতে পারতো ইসলাম স্টেবিলিটি, সহাবস্থানের সহায়ক। উনবিংশ শতাব্দী আর বিংশ শতাব্দীতে যখন ব্রিটিশ শাসিত ভারতে হিন্দুরা রাজনোৈতিক ক্ষমতার অভাব বোধ করছিলো তখন তারা সন্ত্রাসবাদ বেছে নিতে দ্বিধা করে নি। ভারতে মুক্তিসংগ্রামী যারা সন্ত্রাসবাদ বেছে নিয়েছিলো তারা অনেকেই ছিলো চরম হিন্দু জাতীয়তাবাদী। তাদের চিন্তা-দর্শনে মুসলিম এবং অন্যধর্মলম্বীদের অবস্থান ছিলো মানুষের অনেক নীচে। অখন্ড বৈদিক হিন্দু ভারতবর্ষের সাথে বিশ্বইসলামী খেলাফতের স্বপ্ন দেখা লোকদের পার্থক্য করতে আমি রাজী নই।
@সফিক/ভবঘুরে,
এই আক্রান্ত ভাবাটা খুব ইন্টারেষ্টিং পয়েন্ট হতে পারে, এটা নিয়ে সামনের বারে আশা করি কিছুটা লিখব।
আমি মনে করি যে জগতে সাম্রাজ্যবাদ ইতিহাসের আদি থেকেই ছিল, আছে, এবং থাকবে। সহসা যাবে না। কেউ না কেউ আক্রান্ত, নিপীড়িত হবেই। সেটাকে অপ্রসাংগিকভাবে ভিন্ন ভাবে ইন্টারপ্রেট করে এক তরফা জাতি ধরে ঘৃনা বিদ্বেষ ছড়ানো উচিত নয় বলেই আমি মনে করি।
@সফিক,
খ্রীষ্টধর্মের অসহিষ্ণুতা নয়, খ্রীষ্টানদের অসহিষ্ণুতা। দুটো এক নয়। খ্রীষ্টধর্মের মূল কথা হল যীশুর বাণী (নতুন টেস্টামেন্ট)। যীশুর বাণীতে কোন অসহিষ্ণুতা নেই। নতুন টেস্টামেন্টেও অসহিষ্ণুতা নেই।
খ্রীষ্টানদের অসহিষ্ণুতা -> অতীতে ছিল, যীশু বা ইঞ্জিলের দ্বারা সমর্থিত নয়।
মুসলীমদের অসহিষ্ণুতা -> সর্বদা বিদ্যমান, মুহম্মদ ও কুরান দ্বারা সমর্থিত।
বিরাট পার্থক্য।
দখলদার বৃটিশদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র সংগ্রামকে (সুর্য সেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোস…?) আপনি “রাজনৈতিক ক্ষমতার অভাব বোধ” দ্বারা তাড়িত “হিন্দু” সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করলে ১৯৭১ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের “মুসলীম” সন্ত্রাসবাদ বলা যাবে না কেন?
“অনেকেই”? উদাহরণ দিন অন্তত দুটি যারা একই সাথে “চরম” “হিন্দু জাতীয়তাবাদী” “সন্ত্রাসী” মুক্তিসংগ্রামী” ।
হিন্দুরা কি গোটা পৃথিবীর উপর হিন্দু ধর্ম চাপিয়ে দিতে চায়? হিন্দু তো জন্মসূত্রে হতে হয়। হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তকরণের জন্য প্রচারের ধারণাই নেই । আর বিশ্বইসলামী খেলাফতের স্বপ্নই তো হল জোর করে গোটা পৃথিবীর মানুষের উপরই ইসলাম চাপিয়ে দেয়া। দুটো আপনার চোখে সমান দেখালেও পার্থক্যটা দিবাবৎ পরিস্কার।
@যাযাবর,ওল্ড টেস্টামেন্ট এর কথাই যীশুর কথা,
Jesus believed that the Old Testament was divinely inspired, the veritable Word of God. He said, ‘The Scripture cannot be broken’ (John 10:35). He referred to Scripture as ‘the commandment of God’ (Matthew 15:3) and as the ‘Word of God’ (Matthew 15:6). He also indicated that it was indestructible: ‘Until Heaven and earth pass away, not the smallest letter or stroke shall pass away from the law, until all is accomplished’ (Matthew 5:18).
আপনার ভারতের মুক্তিসংগ্রামী আর হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে তেমন পড়াশোনা আছে বলে মনে হয় না। থাকলে মাত্র ২ টা নাম চাইতেন না। সেই সময়ে যারা সন্ত্রাসবাদ বেছে নিয়েছিলো তাদের অধিকাংশই (বলতে গেলে সবাই) ছিলো হিন্দু জাতীয়তাবাদী। আর তাদের আদর্শগুরু রা যেমন বাল গঙ্গাধর তিলক, সাভারকর, অরবিন্দ, গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ার এই মহাপুরুষদের জীবন-দর্শন নিয়ে একটু পড়াশোনা করে তবে “চরম” “হিন্দু জাতীয়তাবাদী” “সন্ত্রাসী” মুক্তিসংগ্রামী” এসব হিসেব চাইতে এসেন।
@সফিক,
যীশু পুরানো টেস্টামেন্টের রেফেরেন্স দিচ্ছিলেন তাঁর ইহুদী বিরোধীদের তাঁকে ঢিল ছোঁড়া থেকে নিবৃত্ত করার জন্য। ঐ রেফারেন্সগুলি তাঁর মূল বাণী নয়। যীশুর মূল বাণী ছিল ইশ্বরের প্রেম, এক ইশ্বরের বিশ্বাস, প্রতিবেশিদের এমনকি শত্রুদের ভালবাসার বাণী এগুলি। তার এক গালে আঘাত খেলে অন্য গাল এগিয়ে দেয়া এটা তো চোখের বদলে চোখের আইনের পরিপন্থী। কাজেই তিনি পুরানো টেস্টামেন্টে বিশ্বাসী এটাও বলা যায় না।
সন্ত্রাসবাদের খুবই সুবিধাজনক সংজ্ঞা দিয়েছেন আপনি। আপনার সংজ্ঞায় সাধীনতার জন্য যারা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত তারাই সন্ত্রাসী। তাহলে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী ছিল, তাই না? ইসলামের সন্ত্রাসীরা অন্যধর্মের নিরীহ লোকদের টার্গেট করে। উপরের আপনার উদাহরণের সবাই বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামে সশস্ত্র ভূমিকা সমর্থন করেছিলেন। এটাকে কি সন্ত্রাসবাদ বলা যায়?
@যাযাবর/সফিক,
বেশ ভাল আলোচনা হচ্ছিল দেখি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হিন্দু মৌলবাদের প্রভাব ছিল এটা অস্বীকার করা যায় না সীমিত জ্ঞানে যতটা জানি। তবে মৌলবাদ ইসলামী মৌলবাদের সাথে কতটা তূলনা করা যায় আমি নিশ্চিত নই। সফিক এ বিষয়ে সময় করে পুরো লেখা দিলে ভাল হয়। সফিকের মনে হয় অন্তত তথ্যগত ভাল জ্ঞান আছে।
আমি অল্প যেটকু জানি তা হল কংগ্রেসের শুরু থেকেই মুসলমান সমাজ মোটামুটি কংগ্রেস এড়িয়ে গেছে তাদের দীর্ঘকালের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে। সে অর্থে কংগ্রেস শুরু থেকেই চাই আর না চাই হিন্দু ডমিনেটেড দলে পরিনত হয়ে গেছে। এরপর আন্দোলনের কৌশল নিয়ে কংগ্রেসের ভেতর বিভাজন হয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাল গংগাধর তিলক জাতীয় লোকজন সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেন। তাদের মতে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই এর উদ্দীপনা আসতে হবে হিন্দু ধর্ম থেকে এমন কনসেপ্ট ছিল।
তবে এর মাত্রা মৌলবাদ হিসেবে কতটা ভূমিকা রেখেছিল তা আমি নিশ্চিত নই। যতটা মনে হয়েছে এই হিন্দু ন্যাশনালিজম তাদের সনাতন ধর্মকে আন্দোলনের দর্শন হিশেবে ব্যাবহার করতে চেয়েছিল, অবশ্যই এতে হিন্দু ধর্মকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় তবে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও কোন বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন বলে মনে হয় না। কিংবা খৃষ্ট ধর্ম কিংবা অন্যান্য ধর্মকে বাতিল ঘোষনা করে কেবল হিন্দু ধর্মই একমাত্র ধর্ম এভাবে কোন তত্ত্ব তারা প্রচার করতেন কিনা জানি না। আবার তাদের মধ্যে যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন তাদের তত্ত্ব শুনেও মনে হয়েছে যে সাধারনভাবে তারা হিন্দু ধর্ম বলতে বিবেকানন্দের মত সব ধর্মের স্বীকৃতি বিশ্বাস করতেন। শ্রী অরবিন্দ, গান্ধী এমনই বিশ্বাস করতেন। গান্ধী রামরাজ্যের কথা বললেও সেটাতে সব ধর্মের সমস্বীকৃতি থাকবে সেটাও বলতেন, তিনি রামরাজ্য বলতে সেটাই বুঝতেন, কেবল হিন্দুভূমি নয়।
নেতাজী সুভাশ বোস হিন্দু ধর্মে উজ্জীবিত ছিলেন, সব প্রেরনা বেদ গীতা থেকে পেতেন বলে জানি। তিনিও র্যাডিকেল হিন্দুইজম বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু প্রচার করেছেন বলে জানি না। যদিও হিন্দু ধর্ম প্রীতির ফলে বাম ধারার লোকদের সাথে তার বিভাজন হচ্ছিল।
সন্ত্রাসবাদ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন অনুশীলন সমিতি বেদ গীতা চর্চার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিশেবে গড়ে উঠেছিল, তবে পরে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে নেমে পড়ে। এর বিরুদ্ধে হিন্দু মৌলবাদের অভিযোগ আমি বিচ্ছিন্নভাবে এখানে সেখানে পড়েছি, তবে পূর্নাংগ চিত্র পাইনি। ইউনিভার্সেল হিন্দুইজমে বিশ্বাসী অরবিন্দ এরই নেতা ছিলেন, তিনি বিশ্রামে সরে যাবার পর এর কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়ে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে সাভাকারকে মনে হয়েছে মৌলবাদী বলা যেতে পারে। সনাতন ধর্মের ইউনিভার্সেল এক্সেপটিবিলিটি ভেঙ্গে হিন্দুতভার আইডিয়া ইনিই রাজনীতিতে আনেন। এ আইডিয়া আব্রাহামিক ধর্মগুলিকে সমস্বীকৃতি দেয় না। মজার ব্যাপার হল উনি নিজেকে নাস্তিকও দাবী করতেন। রামরাজ্য বিষয়ে গান্ধীজির সাথে এনার বিরাট মতপার্থক্য ছিল।
যাইই হোক, আমার তেমন বিস্তারিত ধারনা নেই ভেতরের ব্যাপার স্যাপারে মানতেই হচ্ছে। তবে সাদা চোখে ইসলামী মৌলবাদের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী হিন্দু ন্যাশলাজিমের পার্থক্য আমি যেভাবে দেখি তা বলা যেতে পারে।
এসব হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা প্রধানত আন্দোলনের দর্শন হিশেবে হিন্দুইজম ব্যাবহার করতে চেয়েছে, তবে তারা ঢালাওভাবে খ্রীষ্ট ধর্মের সব লোকের বিরুদ্ধে বিশ্বময় জেহাদ করা হিন্দুইজমের কর্তব্য এভাবে প্রচার চালায়নি। অন্যান্য সব ধর্মকে অস্বীকার করে তাদের হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে কেবল হিন্দু ধর্মকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং রাষ্ট্রীয় নানান আইন কানুন করে অন্যান্য ধর্ম চর্চা সীমিত করে দেবেন বা সেসব ধর্মাবলম্বিদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে রাখবেন এমন তত্ত্ব প্রচার করেছেন বলে মনে হয় না। অন্যান্য ধর্মের ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে আল্লাহর নামে যেসব মুসলমান মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাদের নিশ্চয়ই মৌলবাদী বলা যায় না,আমি অন্তত এভাবে বুঝি।
শুধু আক্রান্ত মনে করার কারনে ইসলাম ভিত্তিক নানান ধর্মশিক্ষা বইতে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা ঢুকেছে এটা কিন্তু বিরাট ভুল। আক্রান্ত মনোভাবের কারনে জেহাদী বোমা হয়ত ব্যাখ্যা করা যেতে পারে তবে সাম্প্রদায়িকতার প্রচার নয়। ইবনে কাথির, ইমাম শাফি/গাজ্জালীদের যুগে মুসলমানরা ছিল চালকের ভূমিকায়। ইসরাঈল মুসলমান ভাইদের পেটাচ্ছে, আমেরিকা তার গডাদার; তাই বাংলাদেশের ধর্ম বইতে বিধর্মীদের ঘৃনা করার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এমন ধারনা নিশ্চয়ই তেমন যৌক্তিক নয়। প্যালেষ্টাইন অঞ্চলের বই পুস্তকে ইহুদী বিদ্বেষী কথাবার্তা আছে, তাদের জন্য সেটা যৌক্তিক হতে পারে, যদিও সমর্থনীয় নয়।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এ সিরিজটি আপনার লেখা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজ হয়ে উঠছে। এই সিরিজটি কয় পর্বে শেষ করবেন বলে ভাবছেন?
উপরে সফিক যে পয়েন্টগুলো উত্থাপন করেছেন সেগুলোর সবগুলোর সাথে একমত না হলেও আলি সিনা বিষয়ে তার উপলব্ধির সাথে একমত। আলি সিনার ব্যাপারে আমিও একসময় উৎসাহিত হয়েছিলাম, বিশেষত ৯/১১ এর বিয়োগান্তক ঘটনার পর উনি যেভাবে কোরান হাদিসের ব্যবচ্ছেদ করে লেখালিখি শুরু করেছিলেন, সেরকম স্পষ্ট কোন লেখা নেটে তখন ছিল না, বিশেষত এক্স-মুসলিম দের পক্ষ থেকে।
কিন্তু যত দিন গেছে আমি উনার সম্বন্ধে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। উনার মূল সঞ্জীবনী শক্তি হল ‘এন্টি-ইসলাম’, কোন ধরণের মানবতা নয়। কোন সন্ত্রাসের পেছনে মুসলিম বা ইসলামের গন্ধ পেলেই হল, উদাত্ত ভঙ্গিতে নাঙ্গা-তলোয়ার হাতে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন, অথচ মুসলিমরা কোথাও নিপীড়িত হলে, সেটা প্যালেস্টাইনই হোক, কিংবা কাশ্মীরেই হোক, কিংবা হোক বসনিয়ার গনহত্যা – আলি সিনার কলম কখনো চলেনি, বরং অন্য অনেক রিপাবলিকান নাটসদের মত আলি দাঁড়িয়েছেন অত্যাচারিতের পক্ষে। অজস্র উদাহরণ আমি তার লেখা থেকে হাজির করতে পারি।
এমনকি এই আলি সিনা কোন প্রকৃত যুক্তিবাদীও নন। আমার মনে আছে ‘র্যাশনালিস্ট ডে’ উপলক্ষে আমরা লেখা আহবান করেছিলাম মুক্তমনার পক্ষ থেকে বছর কয়েক আছে। আলি সিনাও লেখা দিলেন। তার লেখায় না ছিল যুক্তিবাদিতা, না ছিল বিজ্ঞান। বরং তার জীবনে বিভিন্ন আধিভৌতিক ঘটনা কায়দা করে জায়েজ করার অভিসন্ধি। তিনি বাটপার সাইকিক Van praagh এর পক্ষে ওকালতি শুরু করেছিলেন, স্পিরিচুয়াল র্যাশনালিজমের নামে ভুজুং ভাজুং প্রিচ করা শুরু করেছিলেন। ‘বল লাইটনিং’ সহ একগাদা ঘটনা এনে অলৌকিকতার অস্তিত্ব জাহির করার চেষ্টা করেছিলেন। জেমস র্যাণ্ডি (বিখ্যাত যাদুকর, এবং প্যারানরমাল ক্লেইমের ইনভেস্টিগেটর), ব্রেন্ট মিকার, অপার্থিব সহ অনেকেই আলির যুক্তি খণ্ডন করেছিলেন তখন। সেই ডিবেটগুলো রাখা আছে এখানে–
Debate on rationalism between Ali Sina, James Randi, Brent Meeker and Aparthib Zaman
আলি সিনা এক উগ্র নিওকন। ওবামা গত আমেরিকান ইলেকশনের জয়লাভ করার পর ওবামাকে ‘মুসলিম’ এবং ‘নারসাসিস্ট’ ‘প্রমাণ’ করার জন্য আর্টিকেলের পর আর্টিকেল লেখা শুরু করলেন (দেখেন এখানে)। —
শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান নাটস ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মত সিনারও ধারনা ছিল ওবামার কোন ‘বার্থ সার্টিফিকেট নেই’। ওবামাকে ফ্রড, জালিয়াত ‘প্রমাণ’ করে বহু আর্টিকেল লিখেছিলেন। কারণ উনার ধারণাই ছিল ওবামা কেনিয়ায় জন্মেছিলেন। তাই কেউ ওবামার সার্টিফিকেট দেখেনি। এমনকি ওবামা জন্মের সময় পেপারে সন্তান জন্মের ঘোষণা সংক্রান্ত পেপার কাটিং, যে হাসপাতালে জন্মেছিলেন ওবামা সেখানকার ডাক্তারের ভাষ্যও সিনার কাছে গ্রহণযোগ্য ছল না। এমনি একটি আলি সিনার ঐতিহাসিক লেখা (The Audacity of Fraud) –
আরেকটি লেখা (Obama and the Birth of Mobocracy in America)-
ডোনাল্ড ট্রাম্প- আলি সিনা টাইপের নাটকেসের জন্য একসময় বাধ্য হয়ে ওবামা তার অরিজিনাল ‘লং ফর্ম’ বার্থ সার্টিফিকেট পাবলিশ করে দিলেন। তাতেও এই আলি সিনাদের বোধদয় ঘটেছে বলে মনে হয় না। ইটস এ গন কেস। ইনি যাবতীয় রাইটউইং প্রোপাগান্ডাকে সত্য বলে মনে করেন, আর সেটাকে পরিবেশন করেন ‘এন্টি-ইসলামের’ সুস্বাদু মোড়কে। ‘নবযুগ’ সাইট সম্বন্ধে আমার ধারণা নেই, তবে আলি সিনাকে যেভাবে প্রমোট করা হয় তার হিংসাত্মক, অন্ধকার এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিকগুলো উহ্য রেখে, তাতে এই টাইপের লোকজনের পদচারণা বেশি দেখলে অবাক হব না।
@অভিজিৎ,
মাশাল্লাহ! আলি সিনা সাহেব সম্পর্কে এত তত্ত্ব কথা তো জানা ছিল না। এ ধরনের লোকের জন্যই যুক্তিবাদী আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সাধারন ধার্মিকরা যুক্তিবাদীদের ওপর আস্থা হারায়।
এ লেখা আসলে সিরিজ করাএ ইচ্ছে ছিল না, ভেবেছিলাম এক পার্টেই শুধু আমাদের দেশের ধর্ম বই ধরেই শেষ করে দেব। পরে মনে হল যে ওভাবে লিখলে অনেকেই সমস্যার মূলটা ঠিক কোথায়, ব্যাপকতা কেমন, কুফলের মাত্রা কেমন, সম্ভাব্য সমাধান কি হতে পারে এসব সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পেতে পারেন। বিশেষ করে ধর্ম সংক্রান্ত যে কোন সমালোচনার গত বাধা জবাব “কিছু অশিক্ষিত মোল্লা আলেমের কথা শুনে ইসলাম জানা যায় না” জাতীয় ব্যাখ্যা দিয়ে এ সমস্যা ব্যাখ্যা করা যায় না সেটা ভাল করে বোঝানো প্রয়োজন।
তাই সিরিজাকারে চালাতে হচ্ছে, আশা করি আর ২ পর্বেই শেষ করে দেব। আমি সব সময়ই ধর্মের নানান তত্ত্বীয় ব্যাবচ্ছেন, নবী রসূলের জীবনি ধরে টানাটানি করার চেয়ে ব্যাবহারিক দিকে এর প্রভাব আলোচনায় আগ্রহী বেশী। তত্ত্বীয় ব্যাবচ্ছেদেরও দরকার আছে, তবে ব্যাবহারিক দিক চোখে আংগুল দিয়ে না দেখালে ধর্মের ক্ষতিকর দিকগুলি বোঝা যাবে না।
@সফিক,
একটা ব্যপার বেশ লক্ষ্যনীয়। অনেকেই দেখি একজন ব্যক্তিগত ভাল শান্তিপ্রিয় মুসলমানের সাথে ইসলামকে গুলিয়ে ফেলেন। একজন শান্তি প্রিয় মুসলমান যে ইসলাম অনুসরন করে , সেটা আসল ইসলাম নয়। তারপরেও যদি সেটাকে ভাল ইসলাম বলা হয় তাহলে বলতে হবে সেটা হলো মোহাম্মদের মক্কায় প্রচারিত ইসলাম। অত:পর মোহাম্মদ মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভিন্ন ধর্মী জিহাদি ইসলাম প্রচার করেছিলেন। নাসিক মানসুক ফর্মূলা অনুযায়ী মদিনায় প্রচারিত জিহাদী ইসলাম দ্বারা তার মক্কার শান্তিময় ইসলাম বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং একজন শান্তিপ্রিয় মুসলমান মোহাম্মদের বাতিল ইসলাম অনুসরন করছে যা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে তারা মূলত: মুসলমানই নয়। সুতরাং তাত্ত্বিকভাবে যারা মুসলমানই নয় , তাদেরকে দিয়ে যদি ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় তা হবে ডাহা মিথ্যা প্রচারনা। মুসলমানরা বুঝে বা না বুঝে এভাবেই ডাহা মিথ্যা প্রচার করে চলেছে। তাহলে প্রকৃত মুসলমান কারা? প্রকৃত মুসলমান হলো তারা যারা মদিনার ইসলাম অনুসরণ করে। অর্থাৎ জিহাদি মনোভাব নিয়ে আজীবন অমুসলিমদের সাথে লড়াই করে যাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অথবা যারা ইসলামের ক্ষতি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যাবে। যেহেতু বর্তমানে সকল মুসলমানরা একমত যে আমেরিকা ও ইসরাইল এরা সর্বদাই ইসলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাই এদের বা এদের দেশি বিদেশি বন্ধু বা সমর্থকদের বিরুদ্ধে জিহাদ বা যুদ্ধ করা ( তা সে যে কোন ভাবেই হোক) প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। এ কাজটা ভাল করে কারা করছে? ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, তালেবান, আল কায়েদা, বাংলা ভাই , আব্দুর রহমান , হালের নাফিস এরা, আর এরাই প্রকৃত সাচ্চা মুসলমান। কারন এরা ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থানে থেকে লড়াই করেছে বা করছে। সুতরাং কোন মুসলমান রাজ্যে যদি কোন অমুসলিম জিজিয়া কর ( কোরান , ৯:২৯) প্রদান করত: দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মত বাস না করে , সেটাকে ইসলামের মাহাত্ম হিসাবে বর্ণনা করা যায় না ,বলা যাবে যে উক্ত ইসলামি শাসকরা সাচ্চা মুসলমান ছিল না। আর কি অদ্ভুত ব্যপার দু একজন মুসলমান শাসকের অমুসলমানি আচরণকে বর্তমানে ইসলামের মাহাত্ম হিসাবে দেখানোর কি অদ্ভুত ও উদ্ভট প্রয়াস। মুগল আমলে যদি দেখা যায় , দেখা যাবে মদ্যপ ও নারী লিপ্সু সম্রাটরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন হিন্দুরা ভাল ছিল, কারন তারা ইসলামের ধার তেমন একটা ধারত না, যেমন সম্রাট আকবর। যখনই মৌলবাদি চরিত্রের সম্রাট ক্ষমতায় এসেছে তখনই হিন্দুদের ওপর অত্যাচার , নির্যাতন , হত্যা , জোর করে ইসলামীকরন এসবের মাত্রা বেড়ে গেছে , যেমন আলমগীরেরর শাসন আমল। এখন সম্রাট আকবরের মত মদ্যপ ও নারী লিপ্সু সম্রাটকে যদি কেউ সাচ্চা মুসলমান বানিয়ে তার শাসন আমলকে ইসলামী শাসনের বা ইসলামের উজ্জ্বল নমুনা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে, তার মস্তিষ্ক ঠিক আছে কি না সে ব্যপারে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ আছে। আসলে যারা এ অপচেষ্টা করে তারা ভালই এসমস্ত জানে , তবে সাধারন মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মানুষকে ধাপ্পা দিতে চায় । তথা মিথ্যাচার করতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো – কেমন ধর্ম এই ইসলাম যাকে টিকে থাকতে ক্রমাগত মিথ্যাচারের ওপর নির্ভর করতে হয়?
নাসিক মানসুক কি জিনিস জানার জন্য একটা ইসলামী সাইটে খোজ নেয়া যেতে পারে – নাসিক – মানসুক
@সফিক,
আলি সিনা সাহেবের লেখা বা চিন্তাধারার সাথে আমি পরিচিত নই। খ্রীষ্টধর্ম মানুষের মুক্তির প্রবক্তা আর ইসলাম দাসত্বের প্রবক্তা ঠিক কি অর্থে উনি দাবী করলেন পরিষ্কার নয়। আমি যতটা জানি খৃষ্ট ধর্মও দাস প্রথা ভালই সমর্থন করে। সে দাস প্রথা ইসলামের তূলনায় কতটা ভাল বা খারাপ এখন বলতে পারি না। যে ধর্ম দাস প্রথার স্বীকৃতি দেয় তাকে কিভাবে মানব মুক্তির প্রবক্তা দাবী করা যেতে পারে তা চিন্তা করতে হবে।
However, you may purchase male or female slaves from among the foreigners who live among you. You may also purchase the children of such resident foreigners, including those who have been born in your land. You may treat them as your property, passing them on to your children as a permanent inheritance. You may treat your slaves like this, but the people of Israel, your relatives, must never be treated this way. (Leviticus 25:44-46 NLT)
When a man sells his daughter as a slave, she will not be freed at the end of six years as the men are. If she does not please the man who bought her, he may allow her to be bought back again. But he is not allowed to sell her to foreigners, since he is the one who broke the contract with her. And if the slave girl’s owner arranges for her to marry his son, he may no longer treat her as a slave girl, but he must treat her as his daughter. If he himself marries her and then takes another wife, he may not reduce her food or clothing or fail to sleep with her as his wife. If he fails in any of these three ways, she may leave as a free woman without making any payment (Exodus 21:7-11 NLT)
ইসলাম অন্তত নিজের মেয়েকে বিক্রি করার পরামর্শ কোথাওঁ দিয়েছে বলে আমি এখনো দেখিনি। ধর্মের নামে কেউ এসবের সাফাই গাইলে সে যে ধর্মই হোক তার বিচার বুদ্ধি বা যৌক্তিকতাবোধ, কিংবা স্বার্থচিন্তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে।
ইসলাম বিদ্বেষ ঠিক কাকে বলে আমি নিশ্চিত নই। আমি এখানে যা লিখছি তাতে নিঃসন্দেহে আমাকে বাংলাদেশের অনেক উদারমনা লোকেও মহা ইসলাম বিদ্বেষী বলে রায় দেবে। আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি হাদীস কোরান না টেনে ব্যাখ্যা করতে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে করতেই হয় কারন মূল সূত্র (বাংলাদেশ/আরবের ধর্ম বই, ইবনে কাথির, মারেফুল কোরান, ফিকাহ শাশ্ত্র) তারা কোরান হাদীসের সুনির্দিষ্ট আয়াত টেনেই জাতি বিদ্বেষী তত্ত্ব প্রচার করে আসছে।
আমার এখানে ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের তুলনা করার কোন ইচ্ছে নেই, সে সামর্থ্যও আমার নেই। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মগুলি সম্পর্কে আমি একেবারেই কিছু জানি না। এখানে সে প্রশ্ন আসলে অবান্তর। অন্যান্য ধর্ম নিয়ে সেসব ধর্মের লোকদের ইসলামের মত সমস্যা হচ্ছে না এর কৃতিত্ব নিঃসন্দেহ সেসব ধর্মের নয়, ধর্মাবলম্বিদের।
আমিও একমত যে কেবল ইসলামই খারাপ আর অন্যান্য সব ধর্ম ঠিক আছে এমন ধরনের প্রচারনা হীতে বিপরীত ফল আনবে, আনতে বাধ্য। তবে তাই বলে পলিটিক্যাল কারেক্টনেস নীতি অবলম্বন করতে হবে সেটাতেও আমি বিশ্বাসী নই। আমি কথা বলছি বাংলাদেশের ধর্ম বই নিয়ে, আমাকে কোন দূঃখে নিরপেক্ষতা দেখাতে বাইবেল বা বেদ ধরে অবান্তরভাবে টানাটানি করতে হবে? হ্যা, কানাডায় বা বাংলাদেশে বাইবেল বেদ ওয়ালারা একই আলামত শুরু করলে তখন অবশ্যই টানাটানি করব।
পশ্চীমেও কট্টর পাদ্রী আছে, জাকির নায়েকই শুধু নয়, এসব পাদ্রীদেরও কারো কারো ভিসা পশ্চীমারাই একই কায়দায় ডিনাই করে। রিপাবলিকান দল আমাদের মুসলিম লীগ বা বিএনপির আধুনিক সংস্করন বলেই আমার মনে হয়, এ দল পর পর ৩ টার্ম ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকার খবর ছিল।
– সার কথা এখানেই। মুসলিম সমাজের ইউনিক বিশিষ্টতা এখানেই ভালভাবে ফুটিয়েছেন। আজকে যদি আমেরিকান সরকার বাইবেল শিক্ষা সে দেশের স্কুলে ঢোকায় তবে দুয়েক বছরে না হলেও সামনের কোনদিনে বাইবেলের অপাচ্য অংশও দেখা যাবে ধীরে ধীরে ঢোকানো হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরা এখনো অনেকটা পৈত্রিক পরিচয়ের সূত্রেই ধর্ম আঁকড়ে ধরা মনোভাব ত্যাগ করতে না পারলেও এসব যে শিক্ষা ব্যাবস্থায় ঢোকানো নিজেদের ক্ষতি ছাড়া ভাল কিছু চুড়ান্তভাবে করবে না সেটা ভালই বোঝে। রাজনীতিবিদরা কট্টর লোকজনের ভোট কাড়তে কিছু হুংকার দেবেই।
দ্রুত পরিবর্তন যে মুসলমান সমাজের সকলে খুব সহজভাবে নিতে পারছে তা কিন্তু নয়। আমার আশংকা এই দ্রুত পরিবর্তনের হাওয়া দুই দিকে পোলারাইজেশন করবে দ্রুত মাত্রায়। ধর্ম ওয়ালারা কথায় কথায় ষড়যন্ত্র এজন্যই এত বেশী পরিমানে পায়, কারন তারা দ্রুত উপলব্ধি করছে যে তাদের অন্ধবিশ্বাসের দিন থ্রেটেন্ড। কল্পিত ষড়যন্ত্র তখনই পাওয়া যায় যখন তথ্য, যুক্তি প্রমান দিয়ে কিছু প্রমান করা যায় না তখন। নীচে ভবঘুরের শেষ আশংকা কিন্তু খুব অমূলক আমারো মনে হয় না।
ইংল্যান্ডের প্যানারোমা ভিডিও দেখতে পারেন, লেখায় আছে। ইংল্যান্ডে ইসলামিষ্টদের অবস্থান আমেরিকার থেকে শক্ত। সেখানে তাদের বিদ্যালয়ের মূল শিক্ষার দর্শন হল মুসলমানদের আলাদা জাতি হিশেবে গড়ে তোলা, পশ্চীমের রীতিনীতি যাইই ইসলাম বিরোধী সেগুলি অমান্য করার সবক দেওয়া। এভাবে যে জেনারেশন বড় হবে তারা সুইসাইড বম্বার না হলেও নিজেকে মনে করবে সমাজের থেকে বাইরের কোন সুপিরিয়র এন্টিটি, অন্যদের মনে হবে হেদায়েত করে পথে আনা মানবতার স্বার্থেই তার দায়িত্ব। সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা কিন্তু ভালই আছে। পশ্চীমে হিন্দু, ইসকন, বৌদ্ধ এইসব সম্প্রদায়ের লোকে কিন্তু তাদের পরের জেনারেশনকে এভাবে সঙ্ঘাতের শিক্ষা দেয় বলে এখনো এভাবে খবর পাইনি। এর কারন কিন্তু শুধু ইরাক আফগান আক্রমন বা আমেরিকা ব্রিটেনের ইসরাইল নীতি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। পরের পর্বে আশা করি এর কিছুটা আলোকপাত করব।
@আদিল মাহমুদ,আপনাকে সামান্যতম ইসলামবিদ্বেষী ভাবার কোনো কারন নেই। আমার মন্তব্যটা অন্যকারো উদ্দ্যেশ্য। পলিটিক্যাল কারেক্টনেস এর কোনো প্রয়োজন ও আমি দেখি না। কেউ যদি, মুসলিম হোক আর অমুসলিম, শুধুমাত্র ইসলাম এবং মুসলিম সমাজের সমালোচনা করে তবে সেটাতেও কোনো অসুবিধা নেই।
কিন্তু যেসব দোষে বাকী সব প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় বিশ্বাসই কমবেশী দুষ্ট, সেই সব দোষকে একতরফাভাবে ইসলামের উপর চাপিয়ে ইসলামকে ইউনিক ভাবে আলাদা করতে চাইলে অনেক আপত্তি আছে। বাইবেল, কোরান, হাদিস, বেদ, গীতা এসব কোনটাতেই অযৌক্তিক-আমানবিকতার অভাব নেই। এইসব অযৌক্তিক-আমানবিকতাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাওয়া গোষ্ঠী ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অভাব ছিলো না।
আপনাকে কখনই বলবো না যে ইসলামের সমস্যার কথা বলতে যেয়ে বাইবেল, বেদ কে রিজয়েন্ডার হিসেবে দেয়ার জন্যে। সেটার কোনো দরকার নেই। কিন্তু কেউ যদি বলে “আরো তো কত ধর্মালম্বী এই বিশ্বে আছে, তাদের কাহাকেও বেহেশতের লোভ দেখিয়ে এমনকি অতিরিক্ত টাকা লোভ দিয়েও তো এক জনকেও আত্মঘাতি বোমারু বানানো যাবেনা” , কিংবা কেউ যদি প্রচার করে “খ্রীষ্টধর্ম মানুষের স্বাধীনতার প্রবক্তা, ইসলাম মানুষের দাসত্বের প্রবক্তা। খ্রীষ্টধর্মের মাঝে মুক্তির বাণী নিহিত, ইসলামের দাবী আত্মসমর্পণ”,
তবে সেটাকে নীরবে মেনে নেয়াকে সমর্থন করবো না।
@সফিক,
খুবই একমত! ধর্মের নামে মানুষের উপর অত্যাচার অনেক হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আশি-নব্বুইএর দশকে উত্তরভারতে থাকাকালীন সময়ে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা স্বচক্ষে দেখেছি। একটি শিশু ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু না মুসলমান? তাকে জীবন্ত আগুনে ছুড়ে ঝলসানো কিসের ধর্ম? বলতে পারি, সেসময় এসব অমানবিক কর্মকান্ডে শুধুমাত্র মুসলমানদেরই মনোপলি ছিল না।
ইসলাম যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে নি, এতে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা হয়েছে, ইসলামে নারী অধিকার নেই, অন্য ধর্মে সহনশীল নয় ইত্যাদি, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত সত্য; অন্তত মুক্তমনার বেশীরভাগ পাঠকের কাছে। ইসলামকে কষে গাল দিন সমস্যা নেই, কিন্তু সেই সাথে এও ভাবুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই সমস্যার জড় উপড়ে ফেলতে কি করা দরকার। এদিক থেকে আদিল মাহমুদের এই লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। আসলে সমালোচনামূলক লেখার ধরন পক্ষপাতহীন হওয়া প্রয়োজন। লেখায় কোন একটি বিশেষ দিকে লেখকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রকাশ পেলে তা গ্রহনযোগ্যতা হারায়।
@সফিক,
মুসলিমদের এটা স্বীকার করে নেয়ার মতো সাহস না পাওয়ার কারণ “ইসলামই”। কারণ ইসলামে ইসলামের বিপক্ষে গেলেই (ইসলাম অক্ষরে অক্ষরে পালন করা সম্ভব না বলে প্রকাশ্যে স্বীকার করলে ইসলামের বিপক্ষে যাওয়াই হয়) মুর্তাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়। অন্য ধর্মে সেটা নেই।
সব ধর্মের খারাপ থাকলেও সব খারাপের মাত্রা সমান নয়। বরং ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের গুনগত এক বিরাট পার্থক্য আছে। ইসলামে অন্য ধর্মের প্রতি সহিংসতা কুরান হাদীস, ও মুহম্মদের জীবনী থেকেই লব্ধ। অন্য কোন ধর্মের মূল বাণিতে বা প্রচারকদের বাণীতে এরকম বিধর্মীদের প্রতি সহিংসতার আহবান নেই। সব ধর্মই সমান পচা এরকম কথা রাজনৈতিক শুদ্ধতা তাড়িত অসারবক্য, একধরনের ভন্ডামীই বটে।
আর তাছাড়া কেউই তো “ইসলাম ছাড়া অন্য সব ধর্ম সমালোচনার উর্ধে” এরকম কথা বলে নি।
যারা ইসলামকে আত্মপরিচয়ের একটা অংশ হিসেবে দেখে তারা মুসলীম জাতীয়তাবাদী। তারা অন্তত মুক্তমনের দাবীদার হতে পারে না। আর ইসলামের সমালোচনা করলে মুসলীম জাতীয়তাবাদীদের মনে আঘাত লাগবে এই বিবেচনায় ইসলামের খারাপ দিক তুলে ধরা যাবে না এরকম বলাটাও ইসলামের বেলাতেই দেখা যায়। অন্য কোন ধর্মে এরকম কথা শুনিনি কখনও। যারা ইসলামের সমালোচনা শুনলেই ক্ষিপ্ত হয়, সমালোচনার যথার্থতা বিচার না করেই, তারা ইসলামিস্টই, উদারমনা নয়।
@যাযাবর, আপনি হলেন সেই ক্লাসিক ইসলামবিদ্বেষী যার জন্যেই আমি এইকথাগুলো আদিল মাহমুদকে বলেছিলাম। ” মুর্তাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়। অন্য ধর্মে সেটা নেই।”, : ‘ অন্য কোন ধর্মের মূল বাণিতে বা প্রচারকদের বাণীতে এরকম বিধর্মীদের প্রতি সহিংসতার আহবান নেই।”
দিনরাত তো থাকেন কেবল কোরান হাদিস পড়ে ফুটো খোজার তালে, আর কোনো ধর্ম নিয়ে সামান্য জানাশোনা আছে বলে কোনো লক্ষন চোখে পড়ে না।
@সফিক,
আপনার কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ এক মত। তবে রাস্তায় বের হলে বন্ধুদের মুখে শুনতাম তরা মূর্তি পুজা কেন করিস, এগুলা তো ভোগাস আরো অনেক কিছু… তরা তো বেহেস্তে যেতে পারবি না, তরা সারা জীবন দোযক এর আগুনে পুরে মরবি। আবার কিছু বন্ধু চারাল ফারাল বলে গালিও দিত, সুনতে যে কি পরিমাণ ভাল লাগত তা বলে বুঝাতে পারব না। :-X
ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় অনেক আ-কথা কুকথা সুনতে হত এই ধর্ম নিয়ে, আর বলত তোর ধর্ম ভোগাস। এমনকি, একদিন এক স্যার ক্লাসে বলে উঠল তোমরা মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এই গুলার সামনে যাবে না কারণ এই গুলার সামনে শয়তান থাকে, সুনে মন খুসিতে আত্ম-হারা হয়ে গিয়েছিল। কিছু বন্ধুদের উল্টা পাল্টা কথার কারনে তাদের সামনে কথা বলতে সাহস পেতাম না। আরো অনেক সমস্যা… কিন্তু এখন আর কোন সমস্যা হয় না কারন কিছু দিন আগে পড়াশুনা শেষ করেছি আর ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয় না। এখন বেসির ভাগ সময় ফেসবুকে আর মুক্তমনায় কাটাই।
আমার কথা গুলি যাযাবরের সাথে মেলাবেন না, উপরের কথা গুলা আমার ব্যাক্তিগত।
ভাল থাকবেন। (F)
@যাযাবর,
এইটা কেমন কথা। এই যে আছে। ইহুদী খ্রিষ্টান তৌরাতের লেবীয় (Levitics) 24:16 পড়ুন:
প্রভূর নামে যদি কেহ নিন্দা করে; তাহার প্রাণদণ্ড হইবে; গোটা জনমণ্ডলী তাহাকে পাথর ছুঁড়িয়া মারিবে; বিদেশী কিংবা স্বদেশী যেই হোক; যদি সে এই নামের নিন্দা করে; তাহার প্রাণদণ্ড হইবে।
:))
@কাজী রহমান,
কয়েকটা ব্যাপার লক্ষ্য করার আছে এ প্রসঙ্গে। আমি বর্তমান নিয়ে আমার মন্তব্য করেছিলাম। আর আমার লক্ষ্য ছিল ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের পার্থক্যটা তুলে ধরা। আপনি অতীতে চলে গেছেন। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে নিজ ধর্মের সমালোচনা করার জন্য প্রাণ নাশের হুমকি পেতে হয় এ যুগে? Levitics 24:16 ব্লাস্ফেমীর জন্য শাস্তির কথা বলছে। ব্লাস্ফেমী মানে ইশ্বরের নিন্দা করা, অর্থাৎ ইশ্বরে বিশ্বাস করা। যার অস্তিত্বে বিশ্বাস না করে তো ইশ্বারের নিন্দা করা যায় না। ইসলামে শুধু ব্লাস্ফেমী নয়, ইসলামের সামান্যতম সমালোচনা করার জন্যই প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয়। এবং এটা আগে যতটা, এখনো ততটা। কারণ এটা ইসলামের মূল শিক্ষার একটা অংশ। ইসলামে কুরাণকে আল্লাহর নিজের কথা বলে বিশ্বাস করা আবশ্যকীয় এবং মুহম্মদএর কথাকেও। পুরানো টেস্টা মেন্ট একটা ইতিহাস বই বলা চলে। এটা বিভিন্ন কাহিনীর সঙ্কলন বলা যায়। পুরোটা কুরাণের মত নাজেল হয় নি ফেরেশতার মাধ্যমে। মানুষের দ্বারাই এর সঙ্কলন। এটা মুহম্মদের মত কোন প্রেরিত পুরুষ ইশ্বরের বাণী বলে প্রচার করেনি। এর পুরোটা ইশ্বরের কথা বলে বিশ্বাস করে পালন করাটা খ্রীষ্টান বা ইহুদী ধর্মের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে আবশ্যকীয় শর্ত নয়, যেমনটি কুরাণের বেলায়। খুব কম খ্রীষ্টান আর ইহুদীই আজ এগুলিকে আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করে। আর পুরানো টেস্টামেন্টে কুরাণের মত কাফেরদের হত্যা কর, জিহাদ কর, বিশ্বে ইসলাম কায়েম করার মত নির্দেশ নেই। আরেকটা কথা হল তাওরাৎ ইহুদীবাদের একচেটিয়া নয়। এটা ইহুদী/মুস্লীমদের কমন অংশ। কুরাণেই বলা আছে তাওরাৎ আল্লাহরই কিতাব। কাজেই তাওরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামের সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না। যেটা শুধু ইহুদী ধর্মেই আছে,এরকম উদাহরণ বেশী প্রাসঙ্গিক হবে তুলনার জন্য। বাস্তব সত্য এটাই যে অন্য যে কোন ধর্মে আজ ধর্মের প্রকাশ্য নিন্দা বা সমালোচনা করা যায় প্রাণ নাশের ঝুকি না নিয়ে। ইসলামের বেলায় এটা এখনও বলা যায়না। এটা একটা বিরাট পার্থক্য। কাজেই সব সমান নয়। এটাই আমার মূল কথা।
@যাযাবর,ক্লাসিক পিছলানো,
একবার বলেন, ” অন্য কোন ধর্মের মূল বাণিতে বা প্রচারকদের বাণীতে এরকম বিধর্মীদের প্রতি সহিংসতার আহবান নেই।”
আবার বলেন ” আমি বর্তমান নিয়ে আমার মন্তব্য করেছিলাম।”
আপনাদের মেন্টাল মেকানিজম টা সত্যিই দর্শনীয়।
@সফিক,
এখনো বলছি অন্য ধর্মের “মূল বাণিতে বা প্রচারকদের বাণীতে” এরকম বিধর্মীদের(অন্য ধর্মাবলম্বীদের) প্রতি সহিংসতার আহবান নেই। ইসলামের (কুরাণ/হাদিস) মূল বাণী হল কাফেরদের বিরুদ্ধ জিহাদ ও ইসলাম কায়েম। Levitcus 16:24 অন্য ধর্মের বিরুদ্ধ সহিংসতার আহবান নেই, ব্লাস্ফমী (নিজের বা অন্য ধর্মের) বিরুদ্ধে সহিংসতার আহবান আছে। ব্লাস্ফেমী (ইশ্বরের নিন্দা কয়জন করে?)। এজন্যই বর্তমানের কথা বলেছি, কারণ Levitcus 16:24 এর বর্তমান কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই।
@যাযাবর,আমি বার বার বলছি একটু পড়াশোনা করুন। ইন্টারনেট তো আছেই। খামোকা বার বার নিজের অজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরাটা ঠিক নয়,
http://www.religioustolerance.org/intol_bibl3.htm
General religious intolerance in the Hebrew Scriptures (Old Testament):
Instruction to murder persons of other faiths:
Any person who performs religious rituals to other than Jehovah was to be executed.
Exodus 22:20 “He that sacrificeth unto any god, save unto the LORD only, he shall be utterly destroyed.”
A call to God to destroy persons of other faiths:
Psalms 79:6: “Pour out thy wrath upon the heathen that have not known thee, and upon the kingdoms that have not called upon thy name.”
Instruction to murder religious leaders of other faiths: Religious prophets or soothsayers of other faiths are to be ignored and exterminated.
Deuteronomy 13:1-5 “If there arise among you a prophet, or a dreamer of dreams, and giveth thee a sign or a wonder, And the sign or the wonder come to pass, whereof he spake unto thee, saying, Let us go after other gods, which thou hast not known, and let us serve them…And that prophet, or that dreamer of dreams, shall be put to death…So shalt thou put the evil away from the midst of thee.”
@সফিক,
মূল বাণী? ইহুদীদের মূল বাণী ওল্ড টেস্টামেন্টের টেন কম্যান্ডমেন্ট, ওগুলি নয়। যদিও বর্তমান যুগের ইহুদীদের অধিকাংশের কাছে ওল্ড টেস্টামেন্টের টেন কম্যান্ডমেন্টও অবসোলীট হয়ে গেছে।
@যাযাবর,নিজে বলেছেন “মূল বাণিতে বা প্রচারকদের বাণী”, এখন বলছেন খালি ” মূল বাণী”। তাও নাকি শুধু টেন কমান্ডমেন্ট! আপনার কথা সাবসেট হতে হতে কোথায় যায় সেটাই দেখছি। আমিও আপনার মতো করে বলছি মুসলমানদের কাছে মূল বাণী হজ, যাকাত, সালাত, রোজা, শাহাদা। জিহাদ-ফিহাদ মূল নয়।
দেখলেন তো, ইসলাম কেমন শান্তিপূর্ন নিরীহ ধর্ম!
@কাজী রহমান,
আপনাদের আলোচনা দেখে কিছু কথা বলার তাগিদ অনুভব করলাম। কেউ কেউ এমন একটি স্ট্যান্ড নেওয়ার চেষ্টা করছেন যে সহিংসতা বধ হয় কেবল ইসলামেই আছে, সহিংস বাণী কেবল কোরানেই আছে, অন্য ধর্মগ্রন্থগুলো এগুলো থেকে মুক্ত। আমি তা মনে করি না। এটা বলা যায় অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহিংসার তাণ্ডব কমে এসেছে, এবং সেটার কারণ বহুবিধ। কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থে কোথাও হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, হানাহানি নেই এ কথা ঠিক নয়।
আমি এ নিয়ে আগে কিছুটা লিখেছিলাম। আমার অবিশ্বাসের দর্শন গ্রন্থেও এ নিয়ে কিছুটা আলোচনা আছে। ওল্ড টেস্টামেন্ট কোরানের চেয়েও ভায়োলেন্ট সেটা অনেক বিশেষজ্ঞই স্বীকার করেন। হত্যা, খুন ধর্ষণ, গণহত্যা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, প্লেগ, ভূমিকম্প সবকিছু দিয়েই ঈশ্বরের পক্ষ থেকে বান্দাদের শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। আসলে বাইবেল যদি পড়েন, দেখবেন – পুরো বাইবেলটিতেই ঈশ্বরের নামে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিছু উদাহরণ তো দেওয়া যেতেই পারে। যুদ্ধজয়ের পর অগণিত যুদ্ধবন্দিকে কব্জা করার পর মুসা নির্দেশ দিয়েছিলেন ঈশ্বরের আদেশ হিশেবে সমস্ত বন্দী পুরুষকে মেরে ফেলতে :
এখন তোমরা এই সব ছেলেদের এবং যারা কুমারী নয় এমন সব স্ত্রী লোকদের মেরে ফেল; কিন্তু যারা কুমারী তাদের তোমরা নিজেদের জন্য বাঁচিয়ে রাখ’ (গণনা পুস্তক, ৩১: ১৭-১৮)।
একটি হিসেবে দেখা যায়, মুসার নির্দেশে প্রায় ১০০,০০০ জন তরুণ এবং প্রায় ৬৮,০০০ অসহায় নারীকে হত্যা করা হয়েছিল । এছাড়াও নিষ্ঠুর, আক্রমণাত্মক এবং অরাজক বিভিন্ন ভার্সসমূহের বিবরণ পাওয়া যায় যিশাইয় (২১: ৯), ১ বংশাবলী (২০:৩), গণনা পুস্তক (২৫: ৩-৪), বিচারকর্তৃগন (৮: ৭), গণনা পুস্তক (১৬: ৩২-৩৫), দ্বিতীয় বিবরণ (১২: ২৯-৩০), ২ বংশাবলী (১৪:৯, ১৪:১২), দ্বিতীয় বিবরণ (১১: ৪-৫), ১ শমূয়েল (৬:১৯), ডয়টারনোমি (১৩:৫-৬, ১৩:৮-৯, ১৩:১৫), ১ শমূয়েল (১৫:২-৩), ২ শমূয়েল (১২:৩১), যিশাইয় (১৩: ১৫-১৬), আদিপুস্তক (৯: ৫-৬) প্রভৃতি নানা জায়গায়।
বিশ্বাসী খ্রিষ্টানরা সাধারণত: বাইবেলে বর্ণিত এই ধরনের নিষ্ঠুরতা এবং অরাজগতাকে প্রত্যাখ্যান করে বলার চেষ্টা করেন, এগুলো সব বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ) অধীন, যীশু খ্রিষ্টের আগমনের সাথে সাথেই আগের সমস্ত অরাজগতা নির্মূল হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি সত্য নয়। বাইবেলের নতুন নিয়মে যীশু খুব পরিষ্কার করেই বলেছেন যে তিনি পূর্বতন ধর্মপ্রবর্তকদের নিয়মানুযায়ীই চালিত হবেন :
এ কথা মনে কোর না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি’ (মথি, ৫: ১৭)।
খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা যেভাবে যীশুকে শান্তি এবং প্রেমের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন, সত্যিকারের যীশু ঠিক কতটুকু প্রেমময় এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যীশু খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন যে:
‘আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোর না। আমি শান্তি দিতে আসি নাই, এসেছি তলোয়ারের আইন প্রতিষ্ঠা করতে। আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করাতে; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি’ (মথি, ১০: ৩৪-৩৫)।
ইংরেজীতে –
Do not think that I came to bring peace on Earth; I did not come to bring peace, but a sword. For I came to set a man against his father, and a daughter against her mother, and a daughter-in-law against her mother-in-law; and a man’s enemies will be the members of his household. He who loves father or mother more than Me is not worthy of Me; and he who loves son or daughter more than Me is not worthy of Me. And he who does not take his cross and follow Me is not worthy of Me. He who has found his life will lose it, and he who has lost his life for My sake will find it. (Matthew 10:34–39 NASB)
যীশুর এরকম আরো কিছু ‘সুমহান’ শান্তির বাণী-
* (Luke 12:51,52) – “Do you suppose that I came to grant peace on earth? I tell you, no, but rather division;for from now on five members in one household will be divided, three against two, and two against three…”
* (Luke 22:36) – “And He said to them, “But now, let him who has a purse take it along, likewise also a bag, and let him who has no sword sell his robe and buy one.”
ব্যভিচার করার জন্য শুধু ব্যভিচারিণী নন, তার শিশুসন্তানদের হত্যা করতেও কার্পণ্য বোধ করেন না যীশু :
‘সেইজন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করে তারা যদি ব্যভিচার থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব। তার ছেলেমেয়েদেরও আমি মেরে ফেলব ‘(প্রকাশিত বাক্য, ২: ২২-২৩)।
কাজেই, শত্রুদের ভালবাসার, এক গালে আঘাত খেলে অন্য গাল এগিয়ে দেয়ার মত বানীগুলো যীশুর বানী হিসেবে উদ্ধৃত করলে অনেকটা ‘চেরি পিকিং’ এর মত শোনাবে, অনেকে যেটা করছেন। মুসলিমরা যেমন খালি ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার…’ টাইপের সহিষ্ণু ভার্সগুলো কথায় কথায় উল্লেখ করে পুরো কোরানকে সুফি টাইপের কিছু বলে জাহির করার চেষ্টা করেন, ঠিক তেমনি যীশুর ক্ষেত্রেও করেন কিছু কিছু এপোলজিস্টেরা। যে যীশু প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আমি শান্তি দিতে আসি নাই, এসেছি তলোয়ারের আইন প্রতিষ্ঠা করতে’, বলেছেন ‘আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করাতে; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে’ তাকে কিভাবে শান্তির দূত বলা যায় তা আমার বোধগম্য নয়। অবশ্য এখন অনেকে নানাবিধ ত্যানা প্যাচাবেন, এ তলোয়ার সে তলোয়ার নয়, তলোয়ার এখানে মেটাফর বা রূপক ইত্যাদি। কিন্তু এটা যে রূপক সেটা তো যীশু এসে কারো কানে কানে বলে যায় নাই, ঠিক যেমন জুলকার্নাইনের পঙ্কিল জলাশয়ে সূর্য ডোবাও যে রূপক সেটাও কেউ কানে কানে বলেনি। ভার্সগুলো যেমন ভাবে আছে, তেমন ভাবেই তো পড়তে হবে।
অতীতে রক্তাক্ত ক্রুসেডের উদাহরণ, ডাইনী পোড়ানোর উদাহরণগুলোই তো এর প্রমাণ যে বাইবেল কত শান্তিময়। ১৪০০ সালের দিকে প্রায় ২০ লক্ষ ডাইনীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আর ডাইনী পোড়ানোর ফতোয়া খুব ভালভাবেই বাইবেল সিদ্ধ –
“Thou shalt not suffer a witch to live. Whoever lieth with a beast shall surely be put to death. He that sacrificeth unto any god, save to the LORD only, he shall be utterly destroyed.” (Exodus 22:18-20)
মৌলবাদী খ্রিষ্টানরা ডাইনী পোড়ানো বাদ দিলেও মনে হচ্ছে অ্যাবরশন ক্লিনিকগুলোর উপর রাগ যায়নি এখনো। ১৯৯৩ থেকে আজ পর্যন্ত ‘আর্মি অব গড’ সহ অন্যান্য গর্ভপাত বিরোধী খ্রিস্টান মৌলবাদীরা আট জন ডাক্তারকে হত্যা করেছে। এই তো সেদিনও (২০০৯ সালে) নৃশংসতার সর্বশেষ নিদর্শন হিসেবে খ্রিস্টান মৌলবাদী স্কট রোডার কর্তৃক ডঃ জর্জ ট্রিলারকে হত্যার ব্যাপারটি মিডিয়ায় তুমুল আলোচিত হয়। ন্যাশনাল এবরশন ফেডারেশনের সরবরাহকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭৭ সালের পর থেকে আমেরিকা এবং ক্যানাডায় গর্ভপাতের সাথে জড়িত চিকিৎসকদের মধ্যে ১৭ জনকে হত্যার প্রচেষ্টা চলানো হয়, ৩৮৩ জনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়, ১৫৩ জনের উপর চড়াও হওয়ার এবং ৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এগুলো সবই বাইবেলের সুমহান শান্তির বাণীকে স্মরণ করিয়ে দেয় কিন্তু!
যাক, আজকে আপনাদের আলোচনার পর আবারো বাইবেল পড়তে গিয়ে আরেকটা সুমধুর শান্তির বাণী পেলাম যীশুর-
Whoever is not with me is against me ” (Matthew 12:30)
বানীটা দেখে কেন যেন যুদ্ধংদেহী বুশের কথা মনে পড়ে গেল – “you’re either with us, or against us” নো ওয়াণ্ডার ফ্যানাটিক রিপাবলিকানেরা যীশুর বাণীর এতো ভক্ত!
@অভিজিৎ,
এক্কেবারে মোখতাসার। রেফারেন্সগুলো যত্ন করে তুলে রাখবার মত।
বুলস আই এগেইন (D)
সব বড় বড় ধর্মই নিজেকে সঠিক দাবী করে অন্য সবাইকে ঘ্যাচাং করে দেবার কথা বলেছে। সুবিধাবাদী ক্ষ্মমতালিপ্সু রক্তচোষা প্রতারক দলগুলোই নিজেদের সুবিধার্থে নানা ধর্মের জন্ম ও প্রয়োগ করেছে। বার বার সত্য বিকৃতি ঘটিয়েছে। তথ্য গতির এই সময়ে নতুন প্রজন্মের বেশীরভাগ মানুষের এই সব ভণ্ডামির কথা জানতে আর খুব একটা সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
@অভিজিৎ,
সাধারন ভাবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও হিংসা, বিধর্মীদের ঢালাও ঘৃনা বিদ্বেষের উপাদান আছে জানি। মুক্তমনারই পুরানো কিছু লেখাতে এসবের কিছু রেফারেন্স আছে। এটা সবারই মানা উচিত।
এখনো কোন ধর্মে বেশী কোন ধর্মে কম এই বিতর্কের এখানে কোন দরকার নেই।
আমার লেখায় কোরানের সাথে বাইবেল, বেদ গীতার কোন তূলনার প্রয়োজন আমি দেখি না। আমার পয়েন্ট কোরানে হিংসা দ্ব্বেষের কথা আছে তাই ধর্মশিক্ষা বইতে এসব শেখানো হচ্ছে এবং অন্যান্য ধর্মে তেমন হিংসাত্মক কিছু নেই তারা শেখাচ্ছে না ঠিক এমন নয়।
কোন ধর্মের লোকে কে কি শেখাচ্ছে না শেখাচ্ছে তা ধর্মগ্রন্থের তেমন কৃতিত্ব/দোষ নয়, কৃতিত্ব বা দোষ সে ধর্মের ধর্মগুরুদের। কারন ধর্ম মানে বিশাল ব্যাপার, সেখান থেকে বেছে বেছেই কিছু অংশ ধর্মাবলম্বিরা জানে, মানে। এই বাছাবাছির প্রশ্নটাই গুরুতর, ধর্মের সাথে কোন রকম আপোষ করা যাবে না এমন মনোভাব যারাই নেবে তাদের থেকেই সমস্যা হবে সবচেয়ে বেশী, সহজ সত্য। সোজা কথায় ধর্ম শেখাতে হলেই বেছে বেছে ভাল অংশগুলিই শেখাক না, জেনেশুনে কেন সাম্প্রদায়িকতা, বিধর্মী ঘৃনা এসব শেখাতে হবে? এটা সদিচ্ছা থাকলেই করা যেত।
@আদিল মাহমুদ,
হাঃ হাঃ ডিফেন্সিভ হইয়া গেলেন কেন, আমার মন্তব্যের টার্গেট আপনি আছিলেন না। কাজী রহমান সাবে মনে হয় বুঝছে, আমি কেন এইগুলা লিখছি। ইসলামে সহিংসতা বেশি, সেটা নিয়ে বেশি লিখতেই হবে, কিংবা শিশুদের মনে হিংসার বীজ যেভাবে বপন করা হচ্ছে ইসলামের জিহাদের নামে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে, সেগুলো নিয়ে লিখতেই হবে, যেটা আপনি করছেন। কিন্তু অন্য ধর্মের বানীতে হিংসা বিদ্বেষ ঘৃণা এগুলো কিছু নেই – এটা বলা ফ্যাকচুয়ালি কারেক্ট নয় – এইটুকুই আমার বক্তব্য ছিল।
যা হোক, নীচে মানিক যেমন বলেছেন – আপনার পুরো সিরিজটি শেষ হলে পাঠিয়ে দিয়েন, ইবুক হিসেবে রাখতেই হবে এটা। আপনার লেখার গুরুত্বের কথা আবার না হয় নাই বললাম।
@অভিজিৎ,
নাহ, এত জলদি ডিফেন্স এ যাই নাই। অপ্রাসংগিক জিনিস নিয়ে কারোই টাইম নষ্ট করা উচিত না। এইখানের আলোচ্য না হলেও সব ধর্মেই হিংসা বিদ্বেষের কথা মানা হলেও কিন্তু অত্যন্ত লজিক্যালি মানতে হবে যে কোন ধর্মে নিশ্চয়ই এর মাত্রা অন্যগুলার থেকে বেশী। সব ধর্মে এক্কেবারে সমান এটা তো হতে পারে না, সেক্ষেত্রে অনুসিদ্ধান্ত টানতে হবে যে সব ধর্ম আসলেই গড বা তেমন কোন সত্ত্বার পাঠানো যা কেউ ম্যানিপুলেশন করে নাই। ভবিষ্যতে এই নিয়ে ভাল ক্যাঁচাল করা যাবে।
ই-বুক ফুকের কথা বলে ক্যান বেহুদা ভয় দেখান। এমনিতেই আপনেদের সাথে বাতচিত করার অপরাধেই আমার উপরে হুলিয়া আছে। দেশে সত্যের সেনানীরা পূর্নাংগ জীবন বিধান কায়েম করলে সকলের আগে ফাঁসবো আমি, আমারে মুরতাদ হিসাবে নাচতে নাচতে ফাঁসীতে ঝুলাবে। আপনে তো শরিফ মালাউন বংশের বইলা বাইচা যাবেন, ইসলাম বিদ্বেষী হিসাবে দোররা খাইলে বা জেল খাটলেও মুরতাদের মৃত্যুদন্ডের শাস্তি থেকে অন্তত বাইচা যাবেন। দরকার হয় ওনাদের সার্টিফিকেট দেখাইতে পারেন যে আপনে নাস্তিক ভান করলেও আসলে শিব সেনা সদস্য আছিলেন, পৈত্রিক ধর্ম আসলে ছাড়েন নাই। আমার তো তেমন কোন ব্যাক আপ নাই। সোজা ফাঁসী না হইলে সৌদী কায়দায় কতল।
@আকাশ মালিক,
দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, এইটা পৃথিবীর একটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে এই কোরবানি বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারন এতে ব্যাপক অর্থের খেলা চলে, ফলে বাংলাদেশের অনেক মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়।
তাছাড়া আমাদের দেশের অনেক গরীব মানুষ আছে যারা ঠিক মত তাদের দেহের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে না ফলে এই কোরবানির সুযোগে তারা তাদের দেহের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশের নিন্ম আয়ের লোকজন যাদের কোরাবানি দেয়ের সামর্থ্য নেই তারা এই সুযোগে স্বল্প দামে গরুর মাংস কিনতে পারে।
তবে হে, যেহেতু আমরা নিরীহ প্রানি কোরবানি করছি সেহেতু আমরা এই কোরবানি জন সন্মুখে আনন্দের সহিত না করে নির্জন কোন জায়গায় করতে পারি। যদিও ঢাকা শহরে খোলা জায়গার খুব অভাব। আর পরিবেশের কথা তো মাথায় রাখতেই হবে। তাছাড়া এই কোরবানি জন সন্মুখে না করার আরো একটা কারণ হল, যেহেতু গরু বিরাট দেহের প্রাণী তাই জবাই দেবার সময় এই প্রানির বাচার আকুতি মিনতি দেখেতে খুব খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে দেখা যায় দড়ি ছিঁড়ে দৌড় দেয়।
একটা মজার কথা বলি, নবি যখন তার প্রান প্রিয় পুত্রকে আল্লার উদ্দেশে জবাই দেয়া সুরু করে তখন সেটি দুম্বা হয়ে যায়, অথচ একটা বিষয় খেল করে দেখেছেন যদি এটা দুম্বা না হয়ে বাঘ হয়ে যেত তাহলে কি অবস্থা হত। এখন মানুষ গরু নিয়ে দৌড়ায়, “আর যদি বাঘ হত”, তাহলে বাঘ মানুষ নিয়ে দৌরাত। :lotpot:
ভাল থাকবেন। (F)
@(নির্জলা নির্লজ্জ),কোরবানী গরীবদের প্রোটিনের চাহিদা মেটায় এটা আরেকটা খড়কুটা আকড়ে ধরার চেষ্টা। মানুষের শরীর অতিরিক্ত প্রোটিন জমা রাখতে পারে না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Protein_(nutrient)
This process suggests that excess protein consumption results in protein oxidation and that the protein is excreted.[17] The body is unable to store excess protein.
অতিরিক্ত প্রোটিন সব প্রশ্রাব দিয়ে চলে যায়। সারা বছর প্রোটিন অভাবে থেকে বছরে একদুই দিন গবাগব মাংস খেয়ে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
পাঠ্য পুস্তক গুলীতে কোনই ত্রুটি করতেছেনা।
আল্লাহর পবিত্র কোরান হাদিছ অনুসারেই তো শিক্ষা দিচ্ছে।
মসজিদের ইমাম মওলানা সাহেবরা (এমনকি আমেরিকার রুটি রুজী ভোগ করেও)জুম্মার আরবী খুতবার মধ্যে তালেবান ও আল কায়েদাদের আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদে জয় লাভ করার প্রার্থনা করে, নিমক হারামী করার মত কাজ করেও কোন অপরাধ করতেছেন না।
কারণ তারাতো কোরান হাদিছের নির্দেশ পালন করতেছেন মাত্র।
পাকিস্তানে তালেবানরা মালালা ইউছুপ নামের ১২ বৎসরের তরুনী যে মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে আন্দোলনে নেমেছিল,
তার মস্তিস্কে গুলী করেও কোনই অপরাধ করেনাই।
বরং আল্লাহর সৈনিক এই তালেবানরা আরো হুমকী দিয়েছে, মালালা ইউসুপ বৃটেন হতে চিকিৎসা লয়ে ভাল হয়ে দেশে ফিরলেই পুনরায় তার মাথায় গুলী করা হবে।
যাবা কোথায়? কে রক্ষা করবে?
এটাও কোরান হাদিছের নির্দেশ অনুসারে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত।
নাফিছরা আমেরিকাকে ধংস করতে চায়। এরকম শত শত,হাজার হাজার,লক্ষ লক্ষ নাফিছরা এখনো লাইনের পিছনে রয়ে গেছে। আগামী কাল হতেই তারা আসতে আরম্ভ করতেছে। এক নাফিছকে আটকালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়না। কতক্ষন সরকার এভাবে কতজন নাফিছের উপর নজর দারী করতে পারে?
আমি আগে থেকেই বলে আসছি এদের উপর এখন থেকেই চাপের সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
অন্যথায় এরা এই মানব জাতির এই সুন্দর আবাস স্থল পৃথিবীকে ধংস করে দিতে সামান্যতম কুন্ঠা বোধও করিবেনা।
কিন্তু কে কার কথা শুনে?
অন্যথায় এই দানব জাতি পৃথিবীকে ধংস করে দিবে আর বলবে যে আমরা কোরান হাদিছের নির্দেশ যথাযথ ভাবেই পালন করেছি।
অতএব আজই এই কোরান হাদিছ কে যুক্তির মাধ্যমে খন্ডন করে দিতে পারলেই দানব রুপী এই মানবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তখন এদের শক্তির উৎস ধংস হয়ে যাবে।
তখন এরা দন্ত হীন অজগরের ন্যায় পড়ে থাকবে। আর কারো ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখবেনা।
এই ছাড়া দ্বিতীয় অন্য কোন পথ আছে বলে আমার মনে হয়না।
আপনারা চিন্তা ভাবনা করে দেখুন।
একটু গভীর ভাবে লক্ষ করে যদি দেখেন তাহলে সহজেই ধরতে পারবেন কোরান ও হাদিছ ই এ সবেরই মূল উৎস। কৈ আরো তো কত ধর্মালম্বী এই বিশ্বে আছে, তাদের কাহাকেও বেহেশতের লোভ দেখিয়ে এমনকি অতিরিক্ত টাকা লোভ দিয়েও তো এক জনকেও আত্মঘাতি বোমারু বানানো যাবেনা।
এরা আত্মঘাতি হতে চায় তার মূল কারণ কোরান হাদিছ ওয়াদা করতেছে যে তোমরা অমুছলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হয়ে গেলে ,তোমাদের হারানোর কিছুই নাই বরং তোমরা কখনোই মৃত হইবেনা বরং জীবিতাকারে সাথে সাথে বেহেশত বাসী হইবে। এখান থেকেই এদের সমস্ত উৎসাহটা আসতেছে।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
এ নিয়ে ভবঘুরেকে কিছু কথা বলেছি।
ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে বিধিবিধান কী তা চূড়ান্তভাবে নির্ভর করে ইন্টারপ্রেটেশনের ওপর। কোরান অসংখ্য হেটফুল ভার্স আছে যার ভিত্তিতে ইসলামী পন্ডিতরা যুগে যুগে বিধর্মীদের ঘৃনা করার শিক্ষা নিষ্ঠার সাথে দিয়ে আসছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
ইন্টারপ্রেটেশন যদি সম্পূর্ন ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে করা হত তাহলে সমস্যা ছিল না। ১৪০০ বছর আগের আরবে কে কাকে মেরেছে ধরেছে, কোথা থেকে অন্যায়ভাবে খেদিয়ে বার করেছে, তাদের মধ্যে কে কাকে নবী মানত, ঈশ্বরপুত্র মানত এসব ইতিহাসের পাতায় ইতিহাস হিসেবে থাকলে সমস্যা ছিল না। এসব থেকে সর্বযুগের শিক্ষা বার করার প্রবনতাই মারাত্মক, এখানেই যত অনর্থের মূল।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
একটা জব্বর লেখাই দিছেন। প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছেন। স্কুল লেভেলেই যেখানে বাচ্চা কাচ্চাদেরকে অমুসলিমদেরকে ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে, জেহাদের নামে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার আহবান করা হচ্ছে, কিছু বড় হওয়ার এরা বাংলা ভাই , আব্দুর রহমান বা নাফিস হয়ে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু ভাই আমার প্রশ্ন হলো- পাঠ্য পুস্তকে যে এ ধরনের ঘৃণা বিদ্বেষের কথা বার্তা লেখা আছে আর তা থাকার কারনে যদি এ সব বই কে বাদ দেয়ার কথা বলেন বা সংস্কার করতে বলেন, মূল যে কিতাবের( কোরান-হাদিস) ভিত্তিতে এসব স্কুল পাঠ্য বইয়ে এসব সংযোজন করা হলো , তার ব্যপারে আপনার কি অভিমত?
@ভবঘুরে,
এই প্রশ্নের ভয়ে আগে থেকেই ছিলাম। মূল অভিযোগ সত্য, কোরানে হেটফুল অংশ ভালই আছে, দুনিয়াময় বিভিন্ন সময়ের এত আলেম, এমনকি সরকারী পর্যায়ে থেকে নিযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচনাকারী সকলে ভুল ইসলাম জানে এভাবে ব্যাখ্যা করা খুবই হাস্যকর শোনাবে। ইসলাম আবির্ভূতই হয়েছিল অন্যান্য ধর্ম বাতিল, কোন ধর্ম দর্শনকে গ্রহনযোগ্য নয় এসব তত্ত্ব ভর করে, কোরান শুরু করা সূরা ফাতিহার মত আপত নির্দোষ সূরাতেও আছে ইহুদী/খৃষ্টানদের প্রতি অবজ্ঞার বানী। এরপর ইসলাম প্রতিষ্ঠায় চলেছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের সাথে বহু যুদ্ধ, রক্তারক্তি; তাই আল্লাহও অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের খাস দিলে অভিশাপ দিয়ে গেছেন, গালিগালাজ করে গেছেন। মুসলমানদের তাদের সম্পর্কে মাঝে মাঝে পরিস্থিতি অনুয়ায়ী দুয়েকটি ভাল কথা বললেও সামগ্রিকভাবে এমন ধারনা দিয়েছেন যাতে তাদের সম্পর্কে ভাল ধারনা না হয়। এতে তেমন অবাক হবার কিছু নেই।
আপনার জবাব একই ধারে খুবই সহজ এবং কঠিন। ধর্মীয় সূত্র; সে কোরান হাদীসই হোক তার সব অংশ যে সব যুগে গ্রহনযোগ্য এই আজগুবি মাথা থেকে দূর করা মূল সমাধান। সেটা যতদিন না করা হবে ততদিন সমাধান নেই। অন্যান্য ধর্মের লোকেরা এভাবেই সমস্যা মোটামুটি সমাধান করেছে, তাদের ধর্ম বইতেও হেটফুল ভার্স আছে (কম বেশী তা এই মুর্হুতে জানি না), আছে নানান অমানবিক হাস্যকর রীতিনীতি। মূল তফাত হল তারা সেসব আঁকড়ে ধরে একমাত্র অভ্রান্ত জীবন বিধান এইসব আজগুবি দাবী করা বহু আগে ছেড়েছে। তাদের যে সব ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছে তা নয়।
মূল কথা হল ইন্টারপ্রেটেশনের মধ্যে নির্ভর করে আপনি কিভাবে এসব হজম করাবেন। যেমন সুরা তওবার ভয়াবহ আয়াত (৯-৩০) কেবল ঐতিহাসিক একটি ঘটনা যার কোন ফল এই যুগে নেই এভাবে চিন্তা করলে আর সমস্যা থাকে না। ইসলামের এখানে মৌলিক সমস্যাই হল কোরানের সব আয়াত সব যুগের জন্য প্রযোজ্য এটা মনে প্রানে বিশ্বাস করা। এর জাল থেকে সরাসরি বার না হতে পারলে মহা মুশকিল। নিজেরা এসব সব যুগের পালনীয় বলে বিদ্যালয়ে শেখাবে আর চার্জ আসলে ‘কন্টেক্সট’ বুঝতে হবে এভাবে ডবল গেম হয়ত জাকির নায়েক জাতীয় ভক্ত সভায় কিছুদিন চালানো যাবে, তবে চুড়ান্তভাবে কাজে আসবে না।
আগে নিজেদের ঘর পরিষ্কার করতে হবে, মানসিকতা গড়তে হবে যে কোরান হোক আর নবী রসূলের হাদীস হোক তার বহু কিছুই পরিত্যাজ্য। হাস্যকর হল যে এটা সব দেশের মুসলমানই আসলে কাজে কর্মে পালন করে শুধু সরাসরি স্বীকার করতে প্রবল কুন্ঠাবোধ করে। সহি হাদীস কোট করলে তেড়ে আসে, এমনকি দাবী করে যে হাদীস মানেই পালনীয় সুন্নত নয়……এসবের কোন সীমা নেই।
@আদিল মাহমুদ,
কথায় বলে না কান টানলে মাথা আসে। তাই এ প্রশ্ন তো আসবেই। এটাই স্বত:সিদ্ধ।
তবে একটা কথা বেশ ভাল বলেছেন, সাধারন মুসলমানরা কিন্তু এসবের ধার ধারে না , মানেও না , কিন্তু তারা স্বীকার করে না কেন? স্বীকার করলেও কিন্তু সমস্যা অনেকাংশে কমে যেত ও একটা সমাধান বের হয়ে আসত।
@ভবঘুরে,
এখানেই হল ম্যাচিউরিটির প্রশ্ন। কান টানলে মাথা আসে এটা অন্য ধর্মের লোকেরা ভালই বুঝেছিল বহু বছর আগেই। তারা এটা ভালই টের পেয়েছিল যে আধুনিক যুগের শিক্ষা দীক্ষার আলোর সামনে শুধু দেব দেবতা গডের দোহাই পেড়ে যা ইচ্ছে পালন কর মান্য করতে হবে এভাবে বললে ক্রমশ উলটো ফলই হবে। তারা গোয়াড়ের মত ওসব আঁকড়ে ধরার দাবী নিয়ে বসে থাকলে তাদের যেসব লোকে আজকাল ধর্ম নেই নেই করেও আঁকড়ে আছে তারাও অফিশিয়ালীই সেসব ধর্মকে চিরতরে গুডবাই জানাতো।
ওনারা নিজেদের মনে করেন মহা চালাক। নানান ছল চাতূরি, ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের খেলা খেলে ধর্মের কদর্য দিক যে সারা জীবন চেপে রাখা যাবে না এটাও এখনো বুঝতে পারেননি। সকলে তো আর জাকির নায়েকের মজমার দর্শক নয় যে যা ইচ্ছে বলে বুঝ দেবে আর ঈমান রক্ষা পাবার আনন্দে হল কাঁপিয়ে হাততালি দেবে।
– এটাই গুরুতর প্রশ্ন। ধর্ম নিয়ে আমি লাগি মূলতঃ এ কারনেই। এটাই ম্যাচিউরিটির প্রশ্ন। স্বীকার না করার কারনে যে কিভাবে নানান যায়গায় নানান চেহারা দেখাতে হয় এর উদাহরন তো আগে দিয়েছি। আমি আপনি ইসলাম সাম্প্রদায়িকতা শেখালে লাফ দিয়ে উঠতে হবে ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচার বলে। কিন্তু নিজেদের খোঁয়াড়ে নিজেদের প্রিয় আলেমরা যখন একই পরামর্শ দেয় তখন রা করা যায় না। নাছারাদের অভিভাবক মানতে কোরানে মানা আছে এই ব্যাখ্যা শুনে যিনি হয়ত আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে মহা সুখে আছেন তিনি সাবাশি দেন, আল্লাহর বানীর অকাট্যতায় মুগ্ধ হন।
এদের কার সাধ্য কে কি বোঝাবে? হয় বিরাট ভন্ড, নয়ত একেবারে নির্বোধ, আর নয়ত স্রেফ আল্লাহ মানি কোরান মানি এসব তোতা পাখীর মত আউড়ে যায় পরকালের সোয়াবের আশায়।
এসবে যে চুড়ান্তভাবে ক্ষতি হচ্ছে নিজেদেরই সেটা কে কাকে বোঝায়। জেএমবি, হুজি এদের কাছে মডারেট মুসলমানরাও ইসলামের শত্রু, কারন এরা আল্লাহ রসূলের শরিয়া আইন মানা সমাজ গড়তে দিচ্ছে না। ধর্মগতভাবে এদের কিভাবে দোষ দেওয়া যাবে। কোরান হাদীস শতভাগ সত্য মানার দাবী মন থেকে করে থাকলে এদের কথাই তো ঠিক বলতে হবে। আজকাল হুজি জাতীয় দলে শুধু মাদ্রাসা টাইপের চেহারাই নয়, আধুনিক চেহারার লোকজনও দেখা যায়। কারন এরা ধর্মের চোখে যা শেখে বাস্তবে দেখে সেসব সমাজ মানছে না। তখন মনে হয় সমাজটাই ধর্মবিরোধী। এদের আবার নাম দেওয়া হয় মৌলবাদী। এমন কোন মুসলমান প্রধান দেশ মনে হয় নেই যেখানে প্রকাশ্য রাজনীতি আছে সেখানে মৌলবাদী বা চরমপন্থী দল নেই। এরা সংখ্যায় কম হলেও মূলত ধর্মজগতের লিদ এদেরই হাতে। এদের টিকিয়ে রাখে ধর্মের প্রতি মানুষের অন্ধভক্তি; কারন মৌলবাদী বলে গাল দিলেও সেই ধর্মের নানান রিচ্যূয়াল পালনের জন্য এদের কাছেই আসতে হয়।