সম্রাট অশোকের(৩০৪-২৩২ খ্রি:পূ:) নাম আমাদের সবারই কমবেশি জানা। ভারতের ইতিহাসে দুজন রাজাকে গ্রেট উপাধি দেয়া হয়েছে তাদের একজন হলেন অশোক দ্যা গ্রেট আরেকজন আকবর দ্যা গ্রেট। মজার ব্যাপার হল হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে একজন হিন্দু রাজাও এই উপাধি লাভ করেননি। অশোক প্রথম জীবনে বৈদিক ধর্মের অনুসারী হলেও পরে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন আর আকবর মুসলিম(আসলে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী কারণ তিনি পরে নিজেই দ্বীন এ এলাহী ধর্ম প্রবর্তন করেন যাতে সব ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটান যা ইসলামে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ)।
যাই হোক, অশোকের কথা বলতে গেলেই অনিবার্যভাবে চলে আসে তার ধর্মানুরাগ,মানবতাবাদী,সাম্যবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্থার কথা। এগুলো নিয়ে আসলেই দ্বিমত করার কোন অবকাশ নেই। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনেন। জায়গায় জায়গায় তিনি স্থাপন করেন হাসপাতাল, বিদ্যালয়, কুয়া, অতিথিশালা ইত্যাদি। বুদ্ধের অহিংস নীতি অনুসরণ করে রাজ্যে নিষিদ্ধ করেন জীবহত্যা। তার রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় তিনি স্তম্ভ নির্মাণ করেন যাতে খোদাই করা ছিল গৌতম বুদ্ধ ও তার নিজের অনেক বানী। এরকম একটি শিলালিপিতে আমরা দেখি অশোক বলছেন “সব মানুষ আমার সন্তান। আমি তাদের পিতার মত। প্রত্যেক পিতা যেমন তার সন্তানের মঙ্গল ও খুশি চান তেমন আমিও চাই জগতের প্রত্যেকটি মানুষ যেন সবসময় আনন্দে থাকে।”এই বাণী থেকেই প্রজাদের প্রতি তার মনোভাব বোঝা যায়। এছাড়া মূলত অশোকের অবদানেই বৌদ্ধধর্ম বৈশ্বিকভাবে পরিচিতি পায়। তার সাম্রাজ্যে তো বটেই তিনি তখনকার দিনের প্রায় প্রত্যেকটি বিখ্যাত সাম্রাজ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিতদের পাঠান। এখানে লক্ষণীয় যে তিনি কিন্তু কোথাও রক্তপাত করে ধর্মপ্রচার করেননি। বুদ্ধের আদর্শ অনুযায়ী জ্ঞান ও অহিংসার মাধ্যমে ধর্মপ্রচার করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এরকম অশোক সম্পর্কে হাজারটা ভাল কথা বলা যায় ও তা বলাও হয়েছে। কিন্তু সাধারণত যা হয় মহৎ ব্যাক্তিদের অন্ধকার দিকগুলি ঢেকে রাখা হয়। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তারা একসময় সর্বপাপশূন্য অতিমানব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন ও তাদের বিন্দুমাত্র সমালোচনাও সহ্য করা হয় না। অশোকও তার ব্যাতিক্রম নন। যে অশোক সমস্ত মানুষকে সন্তানের মত ভালবাসতেন, প্রতিটি জীবের জন্য করুণা অনুভব করতেন তিনিই ছিলেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ধর্মান্ধ ও পরমতঅসহিষ্ণু। এরকম একটি ঘটনা তুলে ধরার জন্যই আমার এই পোস্ট।
ঘটনাটির উল্লেখ পাওয়া যায় দিব্যাবদান[1] গ্রন্থে। দিব্যাবদান শব্দটির অর্থ “ঐশী কাহিনী”। এই গ্রন্থে মোট ৩৮টি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে যার একটি হল অশোকাবদান। এই গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত। অশোকাবদান অংশটি অশোকের জীবনী নিয়েই লেখা এবং লেখকও বৌদ্ধ। অশোকাবদানের সম্পাদক সুজিতকুমার মুখোপাধ্যায় ঘটনাটিকে তুলে ধরেন এভাবে”এসময় এমন একটি ঘটনা ঘটে যাতে রাজা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নির্গ্রন্থের (জৈন ধর্মগুরু মহাবীর) একজন অনুসারী একটি ছবি আঁকে যাতে দেখা যায় বুদ্ধ মহাবীরের চরণে পতিত হয়ে প্রণাম করছেন। অশোক তখন পুণ্ড্রবর্ধনের সমস্ত আজীবিক ধর্মাবলম্বীকে হত্যার নির্দেশ দেন। এক দিনে প্রায় আঠারো হাজার আজীবিক মারা যায়।
এধরণেরই আরেকটি ঘটনা ঘটে পাটালিপুত্র নগরীতে। এক্ষেত্রে যে লোক ওই ছবি এঁকেছিল তাকে সপরিবারে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ঘোষণা করা হয় যে রাজাকে একজন নির্গ্রন্থের মাথা এনে দিতে পারবে তাকে একটি স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কার দেয়া হবে। এর ফলে হাজার হাজার নির্গ্রন্থ প্রাণ হারায়।(সুজিতকুমার মুখোপাধ্যায়:অশোকাবদান,সাহিত্য অ্যাকাডেমি,দিল্লী,১৯৬৩,পৃষ্ঠা ৩৭। মুখোপাধ্যায় ফুটনোটে বলেন যে গ্রন্থলেখক নির্গ্রন্থ সম্প্রদায়কে আজীবিকদের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন যারা জৈনদের মতই একটি সংসারত্যাগী গোত্র। নির্গ্রন্থ অর্থ বন্ধন বা বন্দীদশা থেকে মুক্ত অর্থাৎ জৈন।) এখানে আরও বলা আছে যে অশোক এই ঘোষণা শুধু তখনই প্রত্যাহার করেন যখন ভিটাশোক নামে অশোকের একজন প্রিয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ভুল বোঝাবুঝির কারণে মারা যান। কিন্তু মজার ব্যাপার হল সুজিত বাবু নিজেই কাহিনীর সত্যতা অস্বীকার করে বলেছেন যে অশোকের অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে এই ঘটনা খাপ খায় না এবং ভারতের অন্য কোন বৌদ্ধ রাজার বিরুদ্ধেও এধরণের অভিযোগ পাওয়া যায় না। তিনি এ ঘটনাটিকে নিছক বানানো কাহিনী বলে মত দিয়েছেন।[2] প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার তার “বাংলা দেশের ইতিহাস(প্রাচীন যুগ) গ্রন্থেও এই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন কিন্তু তিনিও পরে মন্তব্য করেছেন যে “এই গল্পটির মূলে কতটা সত্য আছে বলা কঠিন”(সপ্তম সংস্করণ,পৃষ্ঠা ২০৮ )। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় ঐতিহাসিকরা অশোকের এই ঘটনাটিকে স্বীকৃতি দিতে এত অনীহ কেন? এর কারণ কি ভারতে বৌদ্ধধর্মের প্রতি কোন অন্ধ আবেগ বা সহানুভূতি?সুজিতবাবু যে যুক্তিতে ঘটনাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা খুব একটা শক্তিশালী নয়। অশোকের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথে এই ঘটনার মিল পাওয়া যায় না বলে তা একা একাই ভুল প্রমাণিত হয়ে যায় না। অশোকের বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শনের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। সেই বুদ্ধকে কোনভাবে খাটো করে দেখানো হলে তাতে তার উত্তেজিত হয়ে এমনকি বুদ্ধের শিক্ষার বিপরীতে গিয়েও নিষ্ঠুর পন্থা গ্রহণ করাটা অযৌক্তিক নয়।
মহৎ ব্যাক্তিদের এরকম ঘটনা ইতিহাসে এটাই একমাত্র নয়। ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার “The missionary position:Mother Teresa in theory and practice” গ্রন্থে দেখিয়েছেন মাদার তেরেসা কিভাবে গর্ভপাতের বিপক্ষে সর্বাবস্থায় অনড় অবস্থানে ছিলেন ও কিভাবে দারিদ্র্য নির্মূলের পরিবর্তে দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মিশনারী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। প্রবীর ঘোষ তার “অলৌকিক নয় লৌকিক” সিরিজের ৩য় খণ্ডে দেখিয়েছেন কিভাবে জীবে প্রেম করা বিবেকানন্দ বরাহনগর মঠে পশুবলির প্রচলন করেছিলেন। দেখিয়েছেন দয়ার অবতার বিবেকানন্দের দরিদ্র সেবার ক্ষেত্রে পাক্কা হিসাব। সুতরাং কারো ভাল দিক দেখেই তার অন্ধকার দিকটিকে অস্বীকার করা যায় না। ভাল মন্দ মিলিয়েই মানুষ। আরেকটি ব্যাপার হল দিব্যাবদান গ্রন্থটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের লেখা যারা সারা জীবন অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর যে তারা অশোকের এই ঘটনাটি পুরোপুরি বানিয়ে লিখবেন। অশোকাবদান অংশটি অশোকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং পৃথিবীতে বৌদ্ধধর্মকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তার অবদানকে বার বার স্মরণ করেছে। এমনকি এই গ্রন্থে এমনও দাবী করা হয়েছে যে স্বয়ং বুদ্ধ নাকি অশোকের জন্ম সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যা বর্ণনা করা হয়েছে “ধূলার উপহার” নামক গল্পে। ঠিক এখানেই এমন একটি বেখাপ্পা ঘটনা কেন তারা শুধুশুধু লিখবেন সেটা বোধগম্য নয়। ঘটনাটিতে অতিরঞ্জন থাকা বিচিত্র নয় এবং থাকাই স্বাভাবিক। একদিনে আঠারো হাজার নির্গ্রন্থকে হত্যার ব্যাপারটি অতিরঞ্জন হিসেবেই নেয়া যায়। কিন্তু প্রবাদ আছে “যা রটে তার কিছু তো বটে”। স্বাভাবিক যুক্তিবোধ বলে যে কোন ব্যাক্তি সম্পর্কে তার শত্রুশিবির থেকে কোন খারাপ কথা শুনলে খুব শক্ত প্রমাণ ছাড়া তাতে বিশ্বাস না করাই উত্তম কিন্তু তার বন্ধুশিবির থেকেই যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাহলে সেটাকে ফেলে দেয়া যায় না। এখানে দাবী করা হচ্ছে না যে ঘটনাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য বা কোন প্রমাণিত ঐতিহাসিক ঘটনা কিন্তু ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে এরকম কিছু হয়ে থাকতে পারে এবং ইতিহাসের পাতায় অশোকের সম্পর্কে শুধু মহান কথাই লেখা নেই বরং অনেক বিতর্কিত অধ্যায়ও উঠে এসেছে সেই ধর্মের সাধকদের লেখায়ই যে ধর্মের উন্নতির জন্য তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাই পরিশেষে বলা যায় উল্লেখিত ঘটনার কিছু অংশও যদি সত্য হয় তাহলে বলতেই হবে অশোক এক্ষেত্রে সরে গিয়েছিলেন বুদ্ধের শিক্ষা থেকে যাতে বলা ছিল –
“অহিংসা পরম ধর্ম”
“জীবহত্যা মহাপাপ”
“জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক”
[1] http://en.wikipedia.org/wiki/Divyavadana
[2]http://koenraadelst.voiceofdharma.com/articles/ayodhya/pushyamitra.html
অনেকেই বলছেন অশোক চান্ডাশোক থে এত তারাতারি কিভাবে নিষ্পাপ হয়ে গেল . . .
দয়ার সাগর হয়ে গেল . . .
আমি শুধু এটুকু বলব যে ভোর হওয়ার আগে অন্ধকার অনেক গভীর হয় 🙂
খুব ভাল লেখা। তথ্য পরিবেশনের স্টাইল খুব ভালো লাগলো।
আকবরকে মুরতাদ বলার কোন মানেই নেই ইসলাম জন্মেছেই সবগুলা ধর্মের কম্পাইলেশন হিসাবে তো আকবরের আর কি দোষ।এই ফালতু ধর্মটাকে আরো উন্নত রুপ দেয়ার চেষ্টা কোন কাজেই আসে নি।
@ডেথনাইট,
আপনার এই মন্তব্য ভালো লাগল। এই বিষয়ে মনে হয় সম্রাট অশোক আর সম্রাট আকবর এই দুইজনে পার্থক্য নাই। আকবর “দ্বীন-ঈ- ইলাহী প্রচার করতে গিয়ে ব্যর্থ আর অশোক নিজেই বৌদ্ধ ধর্মে রুপান্তরিত হন।
ইতিহাস পড়েছি। ইতিহাস এক প্রিয় বিষয় ছিল ছোট বেলায়। অনেক দিন পর এমন এক লেখা পড়ে
বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ লেখক’কে –
@আফরোজা আলম,সত্য বলতে কি ইসলাম নাকি সকল সময়ের সকলের ধর্ম কিন্তু তা না হওয়ায় মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উমর ইজমা ও কিয়াস নামক ধান্ধাবাজীর জন্ম দেয়।আরো ২০০ বছর পর শরীয়া তথা মাজহাবের জন্ম হয়।এখনতো কুরআনকে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে নিজেকে সকল কালের ও সকলের এই ভ্রান্তি বজায় রাখতে হচ্ছে হা হা।আর অশোকের বৌদ্ধধর্মের প্রতি অতি উৎসাহ পরবর্তী বংশধরদের এই ধর্মের প্রতি বিরুপতার অন্য কারণ।দশরথ ছাড়া কেউই বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন নি।আর পুষ্যামিত্রতো বৌদ্ধদের উপর খুবই অত্যাচার করেছিলেন।
অশোক মহাযান বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।বৌদ্ধ ধর্মের বিবর্তনে অশোকের অবদানও খুব কম ছিল না।বৌদ্ধদের জীবনচর্যা বিষয়ে পরিবর্তিত দৃষ্টভঙ্গির পিছনে তার প্রেরণা ছিল।তাছাড়া দূর-দূরান্তরে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করে তিনি এই ধর্মের মৌলিক পরিবর্তন প্রায় অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিলেন।বুদ্ধের যে বাণী ভারতের অন্চল বিশেষের মুষ্টিমেয় মানুষের আকাঙ্খা চরিতার্থ করতে পেরেছিল তা দূরবর্তী বৃহৎ এবং বিভিন্ন জনসমষ্টির আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেনি।তাই তার পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে দাড়িয়েছিল।এইভাবে বৌদ্ধধর্ম প্রায় একটি নতুন ধর্মে রুপান্তরিত হয়েছিল।হীনযানের আত্মপরতা হেরে যায় মহাযানের পরার্থীতার কাছে তথা বুদ্ধ হেরে যান অশোকের কাছে।লিঙ্গবৈষম্যবাদী ও পরিবারকে অবহেলাকারী বুদ্ধর ভুজুংভাজং অশোকের হাতে পরিবর্তিত হয়ে অনুন্নত সভ্যতায় ব্যাপক প্রভাব ফেললেও উন্নত সভ্যতার ও কনফুসিয়াসের জীবন দর্শন অনুসরণকারী চীনে তা মুখ থুবড়ে পরে।
@ডেথনাইট,
অশোক যেহেতু হিন্দু থেকে বৌদ্ধ হয়েছিলেন তাই তার আদি ধর্মের অনেক কিছুকেই অস্বীকার করতে পারেন নি। এজন্য বুদ্ধের মূল শিক্ষায় ঈশ্বর, আত্মা এগুলো না থাকলেও অশোক তার মতবাদে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করে নেন এবং মহাযান মতবাদের বিকাশে সহায়তা করেন। এবং হ্যাঁ আপনার সাথে আমি সহমত যে দূরদেশে বৌদ্ধধর্মের প্রচার করায় অনেক নতুন কিছু এই দর্শনে যুক্ত হয়। তবে চীনে বৌদ্ধধর্ম খুব একটা মুখ থুবড়ে পড়েনি বরং কনফুসিয়াসের মতবাদের সাথে মিলিয়ে নতুন রূপ গ্রহণ করে। জাপানেও প্রাচীন শিনতো ধর্মের অনেক কিছু বৌদ্ধধর্মে ঢুকে পড়ে এবং আজও দেখা যায় অনেক জাপানী একই সাথে একাধিক ধর্ম পালন করে। কারো বিয়ের রীতিনীতি হয়ত পালিত হল শিনতো কায়দায় আবার মৃত্যুর রীতিনীতি বৌদ্ধ কায়দায়। এটা এক দিক দিয়ে ভালই খারাপ না। এতে সময়ের সাথে সাথে ধর্মে বৈচিত্র্য আসে, সহজে সংস্কার করা যায়। মানুষও ধর্মের ব্যাপারে উদার ধারণা পোষণ করতে শেখে। বর্তমানে কিন্তু চীন বা জাপানে নাস্তিকের সংখ্যা প্রচুর। ধর্ম কর্ম নিয়ে ওখানে কেউই খুব একটা ভাবে না। যাই হোক, মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
কাহিনী জেনে ভাল লাগলো। (F)
@প্রতিফলন,
ভাল লাগার জন্য শুভেচ্ছা নেবেন। (F) (F)
অশোকের ইতিহাস টা জানতাম না। জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
এটা ইসলামের ইতিহাসে এভাবে ব্যাখ্যা করে যে,আকবর এত উদার পন্থি ছিলেন যে তিনি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংগে একত্রে মিলেমিসে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার জন্য সবধর্মের মিশ্রনে “দীনে এলাহী”ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বস্তুতঃ সত্যিই তো এটা ইসলাম বিরোধী হয়।
প্রতিটি আলোকোজ্জ্বল বর্তমানের পেছনে একটি অন্ধকার অতীত লুকায়িত থাকে। অশোকও এর ব্যতিক্রম নন। যার জীবনে কোন আঁধার অতীত একেবারেই নেই , সেখানে আলোও নেই। সেখানে আছে কেবল শুষ্কতা, শুন্যতা আর ধূসর গোধুলী।
@সংশপ্তক,
হ্যাঁ ভাই। আমিও এটাই বলতে চেয়েছি। ভাল মন্দ মিলিয়েই মানুষ। জগতে অবিমিশ্র ভাল বা অবিমিশ্র মন্দ পাওয়া সম্ভব নয়। কারো ভাল দিকটিকে যেমন স্বাগত জানাতে হবে তেমন মন্দ দিকটিরও সমালোচনা করতে হবে। এভাবেই নিজেদের সংশোধন করে আমরা প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবো। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
@আলোকের অভিযাত্রী,
ছোটবেলায় ইতিহাসে পড়েছিলাম অশোক সিংহাসন লাভের জন্য তার ৯৯ ভাইকে হত্যা করেছি্লেন। পরে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে অহিংস হয়েছিলেন। তার অহিংসতার কারণ ফরিদ আহমেহ তার মন্তব্যে ইংগিত দিয়েছেন। হিংস অহিংস সব ক্ষেত্রেই অশোকের আচরণ ছিল বারাবাড়ি।
@গীতা দাস,
দিদি অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার আগে বহু কুকর্ম করেছেন। তার পরিচিতিই ছিল চণ্ডাশোক নামে। যুদ্ধ বিগ্রহ, হত্যা, নির্যাতন এমনকি নিজের কিছু স্ত্রীদের পর্যন্ত পুড়িয়ে এবং কূপে বন্দী করে অকথ্য নির্যাতন করে মেরেছিলেন। সিংহাসনের জন্য তার ও তার সৎ ভাইদের মধ্যে মারামারি, রেষারেষি লেগেই থাকতো। কিন্তু এগুলো বহুল চর্চিত ঘটনা। বেশিরভাগ লোকই পড়াশোনা না করলেও শাহরুখ খানের “অশোক” ফিল্মের অবদানে এসব কমবেশি জানে। কিন্তু তারা মনে করে যে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পরই অশোক একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে গিয়েছিলেন। জীবনে আর হিংসার পথে পা বাড়াননি। এই মিথটাকে ভেঙে দেওয়াই ছিল আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য। তাই আমি অশোকের শুধু সেসব নিষ্ঠুরতাকে তুলে ধরেছি যেগুলো তার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পরের ঘটনা। অশোকের সমগ্র জীবনের কুকর্মের বিবরণ দিতে গেলে এক লেখায় কুলতো না। যাই হোক, মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
অশোককে নিয়ে লেখা ভালো লাগল। (Y)
@নিটোল,
আপনার মন্তব্যও ভাল লাগলো। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর কতটা হিংসা ত্যাগ করেছিলেন, এটি ইতিহাসের বহুচর্চিত বিতর্ক।
এর সব থেকে বড় কারন, সম্রাট অশোক, সেনা বাহিনী ছাঁটাই করেন নি- আমৃত্যু বিশাল সেনাবাহিনী বহন করেছেন। হয়ত সময়টাই এমন ছিল-আত্মরক্ষার জন্যে এসবের দরকার ছিল।
আকবরকে মুসলিম বলা, ইসলামের ও অপমান, আকবরকেও অপমান করা। আকবর বুঝেছিলেন সব ধর্মেই সমান আধ্যাত্মিক সত্য-তাই দিন ই ইলাহীর প্রচলন চেয়েছিলেন। তৎকালীন উলেমারা তাকে মুরতাদ ঘোষনা দিয়েই রেখেছিল।
@বিপ্লব পাল,
যদিও মিডিয়ার প্রচারের কল্যাণে সাধারণ মানুষ এই বিতর্ক সম্পর্কে একদমই ওয়াকিবহাল নয়। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পর থেকেই তার জীবনকে সর্বপাপশূন্য হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু স্বাভাবিক যুক্তিবোধসম্পন্ন মানুষই বুঝতে পারবে যে অশোকের মত হিংস্র, নিষ্ঠুর মানুষ রাতারাতি বদলে যেতে পারে না। দস্যুদের রাতারাতি ঋষি হয়ে ওঠার কাহিনী পুরাণে পাওয়া যায় ইতিহাসে নয়। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
এই উদ্যোগটা খুব ভাল। মহামানব খ্যাত ব্যক্তিরাও যে অনেক রকম নিষ্ঠুরতা করেছেন তা তুলে ধরলে ধর্ম এবং সেইসাথে ধর্মগুরুদের ডিমিস্টিফিকেশন খুব ভালভাবে হবে।
এই ঘটনা পুরোপুরি সত্য না হলেও কিছুটা সত্য সেটা ভাবতে খুব একটা কষ্ট হয় না। কারণ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের আগে অশোকের ভয়ানক নিষ্ঠুরতার অনেক কাহিনী জানা আছে। বুদ্ধের দর্শনে উৎসাহিত হয়ে সে একেবারে উল্টে যাবে সেটা ভাবা কষ্টকর বৈকি।
যেমন, কলিঙ্গের যুদ্ধে যাওয়ার আগের একটি ঘটনা: অশোকের ঘরে অনেক নারী ছিল। এদেরই কেউ কেউ অশোকের গায়ের ত্বক সম্পর্কে কটুক্তি করেছিল, ব্যঙ্গ করে বলেছিল মহারাজ হলে কি হবে তার ত্বক অসুন্দর। এই খোঁটায় রাগান্বিত হয়ে অশোক তার শহরের এক জায়গায় একটি বিশাল কূপ নির্মাণ করে তার নাম দিয়েছিলেন ভূনরক বা পৃথিবীর নরক। তার সম্পর্কে যারা ব্যঙ্গোক্তি করতো তাদের তিনি এই জলহীন কূপে রেখে অমানবিক নির্যাতন করতেন, মূলত তার স্ত্রীদেরকে। এটা অবশ্যই তার বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের আগের কাহিনী। কিন্তু এতে তার ক্রোধের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায় সা সময় সময় উস্কে উঠতেই পারে।
@শিক্ষানবিস,
এটাই মূল পয়েন্ট। ধর্মের মূল কাজ হল মিস্টিফিকেশন আর ব্রেইনওয়াশ। ধর্ম আর ধর্মগুরুদের অন্ধকার দিকগুলি উঠে আসলে এই সমস্যাগুলো কেটে যাবে। সাধারণ পাঠক বুঝতে পারবে কেউই কোন নবী,রাসুল,অবতার বা মানবীয় গুণাবলীর ঊর্ধ্বে ছিলেন না। সবাই ছিলেন ভাল মন্দ মেশানো মানুষ। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
প্রতিটি ক্ষমতাবান লোকই মনে হয় ক্ষমতা অর্জনের প্রারম্ভে কিছু আদর্শের বানী অন্তরে পোষন করে পথ চলা আরম্ভ করেন। দেখা যায় যে প্রথম দিকে তাদের সততা থাকলেও সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষমতার পুর্ন স্বাদ পেয়ে যাওয়ার পর আজীবন ক্ষমতা বহাল রাখার সাথে সাংঘর্ষিক যে কোন বাধা-বিপত্তিকে সমুলে উৎপাটন করার জন্য সেই আদর্শ থেকে সরে আসতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। আর তখনই চলে ক্ষমতার অপব্যবহার। হত্যা, লুন্ঠন, অত্যাচার, অবিচার কোন কিছুতেই তাদের আর কার্পন্য করতে দেখা যায়না।
@ব্রাইট স্মাইল্,
সঠিক বলেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্মের রাজনীতিকরণ ও সামরিকীকরণ না ঘটে ততক্ষণ সেটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরই সবার আসল চেহারা প্রকাশ পায়। ধর্মের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে ধর্মে যত বেশি রাজনীতিকরণ ও সামরিকীকরণ ঘটেছে সেই ধর্ম তত বেশি ভয়ঙ্কর ও সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
চমৎকার লেখা।
নির্মোহ এবং সংশয়ী দৃষ্টি : মুক্তমনের আলোয় ক্যাটাগরিটি যে ধীরে ধীরে বলিষ্ঠ হয়ে উঠছে সেটা দেখেই খুব ভাল লাগছে।
(Y) হিচেন্স মারা যাওয়ার পর বইটা আবার পড়লাম। দারিদ্রকে তেরেসা নির্মূল করতে চাননি, বরং মনে করতেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এ নিয়ে তেরেসার উক্তিই ছিলো এরকমের – “The suffering of the poor is something very beautiful and the world is being very much helped by the nobility of this example of misery and suffering,”। অবশ্যই এই দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার তিনি ডোনেশন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আবার স্বৈরাচারী সরকার (যেমন হাইতির দ্যুভেলিয়ার) মহাদুর্নীতিবাজ, কালোবাজারিরাও (যেমন চার্লস কিটিং) ছিলো। একবার যখন এক মানুষ ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলো, তেরেসা বললেন, “You are suffering, that means Jesus is kissing you!”
শুধু এই একটি নয়, বিবেকানন্দের আরো বহু স্ববিরোধিতা আছে। এ নিয়ে আগে কিছু মন্তব্য করেছিলাম বিভিন্ন ভাবে। তবে বিস্তৃতভাবে এ নিয়ে সামনে লেখার ইচ্ছে আছে। আপনার লেখাটি দিয়ে অনুপ্রাণিত হলাম। 🙂
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিদা। আপনাদের এই ছোট ছোট কমপ্লিমেন্টগুলোই আমাদের মত নতুনদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
“কি যাতনা বিষে
বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।”
হিচেন্সের বইটা অসাধারণ হয়েছে। আমি মাত্র কয়েকদিন আগে নামালাম। যতটুকু পড়েছি কঠিন লেগেছে। উনি এমনভাবে তথ্য,প্রমাণ,সাক্ষ্য সাজিয়েছেন যে অনেক মানুষই মাদার তেরেসা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে।
লিখুন তবে। আমিও দেখি হিচেন্সের বইটা শেষ করে মাদার তেরেসার কোন অজানা অধ্যায় তুলে ধরতে পারি কিনা! :-s এভাবেই একে একে উন্মোচিত হোক সবার মুখোশ। মহতদের ভাল দিকটার পাশাপাশি অন্ধকার দিকগুলিও উঠে আসুক সবার সামনে।
লেখাটা পড়ে আলোকিত হলাম। মহান অশোকের অজানা দিক পাঠকদের সামনে তুলে ধরার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
অথচ অনেক মুসলিমকেই এখনও আকবর বাদশাহকে নিয়ে গদগদ থাকতে দেখা যায়! তারা আকবর সম্রাটের আমলে মুসলিম রাজ্যবিস্তারের কথা বলতে গিয়ে গর্বে ফেটে পড়ে!
কিন্তু দেখুন আমাদের বাংলাদেশের চিত্রটা: আম্লিগ সরকার বলবে, ”ছাত্রলীগ আমার সন্তানের মত। ….তার যেন সবসময় আনন্দে থাকে”। বিনপি সরকারে ক্ষেত্রে উপরের উক্তির ”ছাত্রলীগ” শব্দটিকে ”ছাত্রদল” করে দিলেই যথেষ্ট হবে।
এখানে নির্গ্রন্থ বলতে মহাবীরকে বুঝিয়েছেন; কিন্তু অন্যত্র বন্ধনহীন জৈন সম্প্রদায়কে বোঝান হয়েছে। আসলে কি দুটো অর্থই ব্যবহার করা হয়?
কিন্তু তাহলে তারা কেন অশোকের এই খারাপ কাজটি নিয়ে লিখলেন, যা কিনা বুদ্ধের নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী? বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তো অশোকের গৌরব গাঁথাই তুলে ধরার কথা ছিল! নাকি তারা এতটাই মহৎ ছিলেন যে, সত্যের অপলাপ করতে চাননি, এমনকি তা যদি তাদের বীরের বিরুদ্ধেও যায়?
পরিশেষে, লেখাটি সম্পর্কে একটা কথা না বললেই নয়; তা হল, লেখাটিতে কিছু প্যারা থাকলে ভাল হত!
@কাজি মামুন,
ঠিক করে দেয়া হল।
@মুক্তমনা এডমিন,
ধন্যবাদ। প্রথম লেখা তো তাই ছোট ছোট ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি পাঠকদের।
@কাজি মামুন,
হ্যাঁ ভাই। নির্গ্রন্থ অর্থাৎ মহাবীরের অনুসারীদেরও নির্গ্রন্থই বলা হয়। কারণ তারা মহাবীরের আদর্শ অনুসরণ করে তার মত বন্ধনহীন তথা বন্দীদশা থেকে মুক্ত হতে চায়।
সম্ভবত তাই। এছাড়া আর কোন অপশন তো নেই। ঘটনাটি পুরোপুরিভাবে বানানো হলে তারা কখনই লিখতেন না কারণ এই ঘটনা এক মুহূর্তেই অশোককে হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত করবে তাদের নিজেদের কাছেই কারণ এটা বুদ্ধের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী। সত্যের অপলাপ হবে ভেবেই হয়ত তারা ঘটনাটি গোপন করেননি। অথবা এমনও হতে পারে ততদিনে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বুদ্ধের শিক্ষা বেমালুম ভুলে গিয়ে রীতিমত মোল্লা পুরুত পাদ্রী হয়ে উঠেছে। তাই এ ঘটনাটিকে তারা অশোকের বৌদ্ধধর্মের প্রতি চরম আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবেই দেখেছে। মনে মনে খুশি হয়েছে অবিশ্বাসীদের কঠোর পরিণতি দেখে।
আপনার এই লেখাটা পড়ে কেন জানি আজ নিজেকে একটু অন্যরকম লাগছে, নির্মিতব্য অনেকটা ঘোষণা দিয়ে (এখন ভাবছি আজকে যেগুলোতে লাড্ডু মেরে আসছি, ওগুলো দিয়ে একটা কিছু লিখে ফেলব কিনা!) একটা ফাটাফাটি লেখা দিলেন আর আপনিও ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে লেখকের খাতায় নাম তুলেছেন। তাই মনে কেন জানি একটা সুখ সুখ ভাব ভর করছে এ সবের পিছেনে কি আমার কোন শুভ চক্রান্তের হাত আছে? 🙂
এবার মুল প্রসঙ্গে আসি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের আগে অশোক কিন্তু চন্ডাশোক ছিলেন। যুদ্ধে নিজের ভাইদের পর্যন্ত হত্যা করেছেন। তাই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর তিনি যে রাতারাতি নিজের রাগ দ্বেষ সব ত্যাগ করতে পেরেছিলেন তা কিন্তু ভাবা উচিত নয় বরং একথা বলা সঙ্গত বৌদ্ধ ধর্মের সংস্পর্শে তিনি নিজেকে বহুলাংশে শুদ্ধ করে নিয়েছিলেন।বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি নিজের কণ্যা সংঘমিত্রাকে ভিক্ষুনি ধর্মে দীক্ষা দিয়ে শ্রীলংকায় উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন।
অশোক কিন্তু চাইলেই বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারে তাঁর সময়ে ভারত বর্ষ থেকে অন্যান্য সব ধর্মকেই বিলুপ্ত করতে পারতেন। ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করতে দমন, হত্যা, নিপীড়ন চালাতে পারতেন। ইতিহাসে এ রকম বহু নজির আমরা দেখেছি। কিন্তু তিনি সে পথে যান নি। তাই এই সব বিবেচনায় হয়তো ঐতিহাসিকরা কিছুটা দ্বিধান্বিত। এমনো হতে পারে এ হত্যা কান্ডের পিছনে দীর্ঘদিন লালিত হয়ে আসা আরো গভীর কোন কারণ ছিল।
@রাজেশ তালুকদার,
অশোকের সৎ ভাইয়ের কুপরামর্শে অশোকের বাবা অশোককে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। উজ্জয়ন নগরীতে বিদ্রোহ দেখা দিলে নির্বাসন থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয় আশোককে। দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্রোহ দমনের। যুদ্ধে আহত হন তিনি। তাঁকে সেবা প্রদান করে বৌদ্ধ সন্যাসী এবং সন্যাসীনিরা। এখানেই তিনি প্রথম বুদ্ধের দর্শন সম্পর্কে জানতে পারেন। শুধু তাই নয় তাঁকে সেবা প্রদানকারী দেবী নামের এক অপরূপ সুন্দরী বৌদ্ধ নারীকে বিয়ে করেন। এই দেবীর গর্ভেই জন্ম নেয় অশোকের দুই সন্তান মহিন্দ্র এবং সংঘমিত্র। মায়ের মত এরা দুজনেই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর দেবী তাঁর দুই সন্তানসহ অশোককে পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভাইপো বা বোনপোকে পাঠিয়েছিলেন অশোক। অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পিছনে এটাও একটা কারণ। মহিন্দ্র এবং সংঘমিত্র যুদ্ধ এবং রক্তপাতকে ঘৃণা করতেন। তাঁরা নিজেরাই বৌদ্ধ আশ্রমে ভর্তি হবার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। অনীচ্ছাতে এতে রাজি হয়েছিলেন অশোক। এই দুজনই পরে শ্রীলংকায় যান, এবং সেখানে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার ঘটান।
@ফরিদ আহমেদ,
কাহিনী তো দেখি বেশীরভাগই শাহরুখ খানের “অশোক” ফিল্মের সাথে মিলে যাচ্ছে। আমি তো ভেবেছিলাম ওখানে গল্প বানানো হয়েছে। তবে এটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো বলতেই হবে শুধু কলিঙ্গ যুদ্ধই মূল কারণ ছিল না। সুন্দরী নারীর প্রভাবও ছিল অশোকের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পেছনে। 🙂
@আলোকের অভিযাত্রী,
হিন্দি ছবি দেখি না। কাজেই বলতে পারছি না, ওখানে কী দেখানো হয়েছে।
অশোকের কাহিনি আসলে কাহিনিই। একে কতটুকু ইতিহাস বলা যায় সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার। অশোকের উপর এ পর্যন্ত যত তথ্য এসেছে তা এসেছে মূলতঃ বৌদ্ধ উৎস থেকে। বিশেষ করে বলতে গেলে, খৃস্টিয় দ্বিতীয় শতকে সংস্কৃতে লেখা অশোকাভাদানা (বাংলায় কী বলবো, অশোকবদন?) আর শ্রীলংকায় প্রাপ্ত পালি ভাষায় লেখা দীপাবংশ এবং মহাবংশ নামের বৌদ্ধ গ্রন্থ থেকে। এর বাইরে আছে অশোকের স্থাপিত শীলালিপিসমূহ। বৌদ্ধ উৎসসমূহে অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পরে অপাপবিদ্ধ মহাপুরুষে পরিণত হয়েছেন, এটা দেখানোটাই স্বাভাবিক। এতে করে তাঁদের ধর্মটাকে মহান প্রমাণ করা যায়। আর শীলালিপিতে উৎকীর্ণ মহৎ বাণীসমূহের আমার কাছে কোনো দাম নেই। খুঁজলে হিটলার, স্ট্যালিন, চেঙ্গিস খানেরও মহৎ বাণী পাওয়া যাবে অনেক। আমাদের এরশাদেরও অনেক মহৎ বাণী একসময় শুনেছি রেডিও এবং টেলিভিশনে।
যে লোক প্রবল পৈশাচিকতায় তাঁর সকল ভাইকে হত্যা করে কুপে নিক্ষেপ করতে পারে, রঙ্গ করে সামান্য একটু ত্বকের সমালোচনা করায় স্ত্রীকে হত্যা করতে পারে, বাকি স্ত্রীরা যাতে আর কোনো ধরনের সমালোচনা করতে সাহস না পায়, সেজন্য তাঁদের জন্য হত্যাকুপ তৈরি করতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইকে আশ্রয় দেবার অপরাধে অসম শক্তির কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করে লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করতে পারে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে সেই রাজ্যকে, সেই লোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে রাতারাতি অহিংস নীতি নেবে, দয়ার সাগর হয়ে যাবে, হৃদয়ে ভালোবাসার জোয়ার কুলকুল করে প্রবাহিত হবে, এই গাঁজাখুরি গল্প অন্য যে কেউ বিশ্বাস করতে পারে, আমি অন্তত করি না।
বৌদ্ধরা আর কিছু পারুক না পারুক, তাঁদের ধর্ম যে অহিংসায় পরিপূর্ণ একটা জীবনদর্শন, এই আকর্ষণীয় মিথটা তৈরি করে দিয়েছে। ফলে, সারাবিশ্বে এই ধর্মের বিষয়ে কোমল ধারণা পোষণকারী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। সে কারণেই নির্ধার্মিক অনেক ব্যক্তির কাছেও, ধর্মগুলো সব গার্বেজ, এই ধারণার একমাত্র ব্যতিক্রম হয়ে যায় বৌদ্ধধর্ম।
@ফরিদ আহমেদ,
কঠিন সত্য কথা।
@রাজেশ তালুকদার,
কিছুটা তো আছেই। আপনার লেখায় আমার নাম দেখি এক চিপায়। তাই মনে হল লেখক হিসেবে বউনিটা করেই ফেলি। আগামী বছর হয়ত আমার নাম প্রথম দিকেই পাবো। :)) নিরাশ করবেন না আশা করি। 🙂
@আলোকের অভিযাত্রী
২৬১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমন করেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বিচলিত হয়ে তিনি না কি যুদ্ধ ত্যাগ করেন এবং বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? পৃথিবীর প্রার্থনারত হাতগুলো আর কত প্রতারনা করবে! ভালো লাগর লেখাটা। ধন্যবাদ।
@আহমেদ সায়েম,
অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এটা মোটামুটি ঐতিহাসিক সত্য। তবে নিচে ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে এর পেছনে তার সুন্দরী বৌদ্ধ স্ত্রীর প্রভাবও ছিল। জানেনই তো প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে থাকে একজন নারী আর সে যদি সুন্দরী হয় তবে তো কথাই নেই। আর ভাই আমরা যদি আরও কয়েকটা দশক ধর্মের মুখোশ খুলে দেয়ার কাজে ব্যাবহার করি তাহলে প্রার্থনার হাতগুলো আশা করি মিথ্যাচার বন্ধ করতে বাধ্য হবে। ধর্ম সম্পূর্ণ বিতাড়িত হয়ত হবে না তবে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত বিশ্বাস হিসেবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। শুভেচ্ছা নেবেন। (F) (F)