। পর্ব-১ । পর্ব-২ ।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই লেখা কম্পিউটারবোদ্ধাদের জন্য নহে।
উমম… বয়স তখন কত হবে আমার, ৭-৮ বছর হবে হয়তো। আমাদের বাড়িতে কী কারণে যেন অনেক ইট আনা হয়েছিল। সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল উঠোনের পাশে। ইটগুলো কী কাজে লেগেছিল তা মনে না থাকলেও, ওগুলো যে আমার খেলার উপকরণ হয়ে গিয়েছিল তা বেশ মনে আছে। ঘর বানাতাম ইট দিয়ে। তিন-চার তলা বাড়িও বানাতাম। এসব দেখে বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনেরা বলতো, “দেখো, ছেলেটা কেমন বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে।” তখন ওদের কাছে, এবং অবশ্যই আমার কাছেও, ইঞ্জিনিয়ার মানেই “সিভিল” ইঞ্জিনিয়ার। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা অন্য কোন ইঞ্জিনিয়ারিং আছে বলে ধারণাই ছিলনা। যাই হোক, বাড়ি বানানো শেষে মনে হলো, বাড়ির সামনে নিজের নামটাও লিখে দেই। তখনই আবিষ্কার করলাম – ইট না ভেঙ্গে ইংরেজি H কিংবা I লিখা সহজ হলেও, যেসব অক্ষরে বাঁক আছে (যেমনঃ ইংরেজি S) সেগুলো লিখা সহজ না।
S কে বাঁক ছাড়া লেখা সম্ভব হলেও ‘অ’, ‘ঈ’ কিংবা ‘শ’ এর মত বাংলা অক্ষরগুলোকে ইট দিয়ে লিখা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। জায়গাও লাগে প্রচুর। এত জায়গা দেয়াতো আর সম্ভব না, অতএব, নামের প্রথম অক্ষর (ইংরেজিতে) লিখেই ক্ষান্ত হয়েছিলাম।
বয়স হলে আবিষ্কার করলাম- কম্পিউটারের মনিটরে অক্ষর দেখানো ইট দিয়ে অক্ষর লেখার মতোই। কেবল জায়গামতো ইটগুলো বসাতে হবে। মনিটরকে ইটের পরিবর্তে টাইল্স্ বসানো মেঝের মতো চিন্তা করা যেতে পারে, যে টাইল্স্গুলোকে আর ভাঙ্গা যায় না।
চলুন মেঝের উপর ‘অ’ লিখি।
এবার, যেসব টাইল্সের উপর দিয়ে লেখাটা গেছে, সেসব জায়গায় কালো রংয়ের টাইল্স্ ব্যবহার করি।
লেখাটা মসৃণ হয়নি, তাই না? এছাড়া টাইলসগুলো বড় হওয়ায় বেশি জায়গা নিচ্ছে, আর বাঁকগুলোও ভালভাবে বুঝা যাচ্ছে না, কেমন যেন চার-কোণা টাইপ হয়ে গেছে, তাই না? চলুন এবার ছোট আকারের টাইল্স্ ব্যবহার করি, আগের টাইল্স্গুলোর চার ভাগের এক ভাগ। যথারীতি যেসব টাইল্সের উপর দিয়ে লেখাটা গেছে, সেসব জায়গায় কালো রংয়ের টাইল্স্ ব্যবহার করি।
এবারে মসৃণতা বেড়েছে না? তবে পুরোপুরি হয়নি, তাই না? সিড়ির মতো অমসৃণতা রয়ে গেছে এখনো (নিচে তীর দিয়ে চিহ্নিত)। আবার গোল চিহ্নিত জায়গাটার বাঁকটা কেমন সোজা হয়ে গেছে না? অথচ মূল লেখায় কেমন আকাবাঁকা, তাই না?
আসলে, টাইল্সের আকার আরো কমালে (মোট সংখ্যা আরো বাড়ালে) মসৃণতা আরো বাড়বে (নিচের ছবি দেখুন)। তবে কখনোই পুরোপুরি হবে না, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশেও একই অভিযোগগুলো রয়ে যাবে। তবে এগুলো যদি খুব-খুব-খুব ক্ষুদ্র হয়, তাহলে আমাদের খালি চোখ সেগুলো ধরতে পারবে না। মনে হবে যেন – খুবই মসৃণ! এখানেই কম্পিউটারের চালাকি।
এই যে ছোট ছোট টাইল্সগুলো (দেখতে ছোট আয়তক্ষেত্রের মতো), যেগুলো আর ভাঙ্গা যায় না, যেগুলোর কেবল একটাই রঙ হতে পারে, টেকনিক্যাল ভাষায় একে বলে এক পিক্সেল বা pixel [উইকি]। উপরে ‘অ’ লিখার জন্য যে টাইল্স্ বোর্ড ব্যবহার করেছি, সেখানে খানে ৬০ টা পিক্সেল আছে যেগুলো ৪০ টা সারি ও ৪০ টা কলামে সাজানো। তাহলে এর ডিসপ্লে রেজোলিউশন (Resolution [উইকি]) হলো ৪০x৪০ (পড়া হয় – চল্লিশ বাই চল্লিশ)। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে, কোন একটা অক্ষর লিখতে কিংবা একটা ছবি আঁকতে যত বেশি পিক্সেল ব্যবহার করা হবে, তত বেশি নিখুঁতভাবে অক্ষরটি লেখা যাবে কিংবা ছবিটি আঁকা যাবে, প্রতিটা পিক্সেল তত বেশি নিখুঁতভাবে রঙ করা যাবে, সেই ছবি তত বেশি বাস্তবের কাছাকাছি হবে।
প্রসঙ্গতঃ কম্পিউটারের মনিটরের ক্ষেত্রে ৮০০x৬০০, ১০২৪x৭৬৮ কিংবা ১২৮০x৭২০ এ ধরনের রেজোলিউশন দেখেছেন কি ডিসপ্লে সেটিংস এ?
আমিতো এখানে একটা পিক্সেলকে কেবল ছোট আকারের আয়তক্ষেত্র দিয়ে এঁকেছি, তবে একে অন্য ভাবেও আঁকা যায় কিন্তু। নিচের ছবিটাই দেখুন না, একই ধরণের পিক্সেলগুলো আয়তক্ষেত্র, লাইন এবং মসৃণ ফিল্টার ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে।
আমার তো কম্পিউটারে লেখালেখি কিংবা আঁকিবুকির ক্ষেত্রে পিক্সেলের কথা মনে পড়ে; ভাবি- কী অবাক কান্ড! অমসৃণ ছবিকেও আমরা কত মসৃণ দেখি! কম্পিউটার কী কৌশলেই না আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যায়!! আপনার?
দারুণ একটা পোস্ট। এত সাবলীল লেখা! আমি ছবি পাগল মানুষ তাই পোস্টের সাথে নিজেকে খুব গভীর ভাবে রিলেট করতে পারলাম।
এক কথায় অসাধারণ!কম্পিউটারের পিক্সেলের এর চেয়ে সহজবোধ্য ব্যাখ্যা আর হতে পারে না! বাস্তব হল, কম্পিউটারের এই চালাকি এতদিন শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞানীদেরই আয়ত্তাধীন ছিল; সাধারণ ‘ইউজার’রা শুধুই অবাক হয়ে ম্যাজিক দেখত! আপনি সেই প্রথা ভাঙলেন!
আপনি যেভাবে সহজ করে আমাদের কম্পিউটারের রহস্য রহস্য-গল্পের মতোই জানিয়ে যাচ্ছেন, তা অভিজিত-দা’র বিজ্ঞান ও বিপ্লব-দা’র দর্শন বিষয়ক অতীব সহজ পাঠের কথা মনে করিয়ে দেয়। আপনি এমন আরো পর্ব লিখুন এবং আগামী বইমেলায় বই আকারে এই লেখাগুলো আমাদের উপহার দিন!
@কাজি মামুন,
কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছাড়া বাকিরা এসব ছোট-খাট চালাকিগুলো বুঝতে পারলে সেটাই হবে আমার লেখার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তাদের জন্যই তো আমার এই লেখা! দেখেছেন নিশ্চয়ই, শুরুতেই সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছি –
কষ্ট করে লেখাটা পড়েছেন বলে কৃতজ্ঞ। 🙂
আরে আরে, এট্টুক বললে হবে? আমাদের মনিটরে তিনটে রঙ কেমন করে সাজানো থাকে, আর লেখাটাকে সুন্দরতর করার জন্য সেগুলোকেও যে ধরে ধরে বদলানো হয়, সেটা বলবেন না? 😛
তবে পিক্সেলের ছোট্ট ইন্ট্রো হিসাবে লেখাটা ভাল হয়েছে। 🙂
@কৌস্তুভ,
হে হে 😀 আমি নিজের পেটের সাইজ ছোট, বেশি খেলে বদহজম হয়ে যায়! 😛 অন্যদেরকে তাই সেই ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। একেতো টেকনিক্যাল ব্যাপার, লোকজন এমনিতেই এসব লেখা পছন্দ করে না, তার উপর অতি যত্নশীল(!) মায়ের মতো “আরেকটু খাও বাবু, আরেকটু” করলে পরে তো আরে খেতেই চাইবে না!
কৌস্তুভ, আপনার এমন দিক-নির্দেশনামূলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আচ্ছা, আপনি নিজেই লিখে ফেলুন না রঙের রঙিন দুনিয়া নিয়ে…
পিক্সেল এর বিষয়টি অনেক দিন পরে পরিস্কার হল। বিশ্লেষনটি খুব সুন্দর।
ধন্যবাদান্তে,
আঃ হাকিম চাকলাদার
নিউ ইয়র্ক
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আমার লেখা সার্থক হলো। 🙂
চমৎকার
(F)
@সৈকত চৌধুরী, ধন্যবাদ 🙂
খুব ভাল লাগল।এ ভাবে বুঝালে অনেক কিছু সহজ হয়ে যেত । (Y)
@শাকিলা শবনম, মন্তব্যে উৎসাহিত হলুম। 🙂
সহজ কথা যায় না বলা সহজে…কিন্তু কঠিন কথা???
অবলীলায় বলে দিলেন সহজে!!! ভালো লাগলো।
@লাট্টু গোপাল, ভালো লাগলো জেনে আমারও ভালো লাগলো। ব্যাপারটা কিন্তু আসলেই সহজ, তাই না? 🙂
ভালো লাগলো,খুব সুন্দর করে লিখেছেন (F) । স্কুল-কলেজের কম্পিউটার বইতে পিক্সেল,মেমরি সেল এধরণের সহজ ব্যবহার যেরকম কাঠখোট্রা ভাষায় লেখা হয় দেখলে লেখকের মাথায় বাড়ি মারতে ইচ্ছা করে :-Y :-Y ।
রামগড়ুড়ের ছানা, ফুলের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
বি,সি,এস, এর লিখিত পরীক্ষার জন্য কম্পিউটার বিষয়ে জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে এ অধমের কাছে জনা-কয়েক এসেছিলেন। উনাদের সিলেবাস আর গাইড বইয়ে তার চেয়েও কঠিনতর উত্তর দেখে মনে হয়েছিল – আমি বুঝি কম্পিউটারের ‘ক’ ও পারি না! 🙁