[ রচনাটি পাহাড়ের ছোটকাগজ মাওরুম সংখ্যা ১৫,বর্ষ ৬, মে ২০০৯-এ প্রকাশিত হয়। বিষয়ের প্রাসঙ্গিতা বিচার করে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য রচনাটি পাঠানো হল। বিশেষ করে ইউপিডিএফ দলটিকে বুঝার জন্য রচনাটি পাঠককে সাহায্য করবে। সেই সাথে দলটির সাথে আমার বিচ্ছেদের কিছুটা কারণও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। আশা করছি শীগ্রই মুক্তমনা পাঠকদের জন্য পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে নতুন কিছু লিখতে পারবো। ]
সম্প্রতি পার্বত্য রাজনীতিতে একটা বিষয় খুব সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বেশ নড়ে-চড়েও বসেছেন। বিষয়টি খুব মজাদার বিধায় অনেক অনেক আলোচনার খোড়াকও যোগাচ্ছে। অনেকে আশাবাদী হয়েছেন, আবার অনেকে অতি উৎসাহে নানান স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন। ২০০৯’এর ২৬ জানুয়ারী পার্বত্য এলাকার চুক্তি বিরোধী বলে পরিচিত ইউপিডিএফ তাদের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উত্তর আলোচনা সভা থেকে নাটকীয়ভাবে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করে। রাঙামাটির পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে দলটির নেতৃবৃন্দ জনসংহতি সমিতির সাথে এক টেবিলে বসার বিষয়েও তাদের সম্মতির কথা জানিয়ে দেন। ইউপিডিএফ-এর এহেন আওয়াজে অনেকে আশার অলো দেখতে পেয়েছেন। কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছেন এবার বুঝি পাহাড়ে কিছু একটা হতে চলেছে।
দলটির এই শান্তিবাদী ঘোষণায় আপাত মনে হতে পারে ইউপিডিএফ বুঝি নতুন কিছু করতে যাচ্ছে। বাহ্যিকভাবে নতুন হলেও ইউপিডিএফ এর আগেও বেশ কয়েকবার ঘটা করে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। ২০০১ সালে দলটির প্রধান প্রসিত খীসা ৮ম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রাক্কালে জনসংহতি সমিতির সাথে আলাপ আলোচনার প্রচেষ্ঠা নেন। ২০০১’এর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রসিত খীসা জনসংহতির সমিতির কাছে অ-আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের প্রস্তাব পাঠাতে থাকেন। তৎকালীন শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ ( বর্তমানে প্রয়াত) উপেন্দ্রলাল চাকমার বাসভবনে খাগড়াছড়ি জেলার মাজন পাড়ায় জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য বৈঠকে কোন সমঝোতা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু ইউপিডিএফ বেশ কিছু নাটকীয় প্রস্তাব দেয়। দলটি হঠাৎ করে চুক্তির মধ্যে ভালো জিনিষ আবিষ্কার করে। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রসিত খীসা নির্বাচিত হলে সংসদে চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী দলটি আবারও চুক্তি বাতিলের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠে। তারও আগে ১৯৯৮-এ জনসংহতি সমিতি ও সরকারের মধ্যে আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে কিছুটা ভিন্নমতের সৃষ্টি হলে শরণার্থী কল্যান সমিতির সভাপতি উপেন্দ্রলাল চাকমা আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সরকারের সাথে গোপন দেন-দরবার চালান। এই গোপন দেন-দরবারে ইউপিডিএফ ও উপেন্দ্রলাল জনসংহতি সমিতিকে মোকাবিলা করার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য প্র“তিশ্র“তিবদ্ধ হন ( সেই সময় দলটির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে উপেনবাবুর সাথে বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল, বৈঠকসমূহে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান ইউপিডিএফ সাধারণ সম্পাদক রবিশংকর চাকমা)। এইছাড়াও ১৯৯৭সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর জনসংহতি সমিতি অস্ত্র সংবরণের প্রস্তুতির সময় শান্তিবাহিনী সদস্যদের অস্ত্র ত্যাগ না করার জন্য গোপন মিশন পরিচালনা করে। সেই রকম বেশ কিছু গোপন মিশন পরিচালনার দায়িত্ব আমার উপরও বর্তিয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই ইউপিডিএফ চুক্তিকে আপোষ চুক্তি আখ্যা দিয়ে চুক্তির কপিতে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবাদ জানায়। তারা চুক্তি বাতিলের দাবী জানায়। দলটি জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা করে।
জনসংহতি সমিতির সদস্যরা যখন অস্ত্র জমাদানের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাম্পে আসতে শুরু করে তখন ইউপিডিএফ তাদেরকে নানান কায়দায় লাঞ্ছনা ও উত্যক্ত করার প্রচেষ্টা চালায়। বিভিন্ন জায়গায় জনসংহতি সমিতির জন্য শ্মশান ও চিতা তৈরী করে রাখা হয়। জনসংহতি সমিতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পোষ্টার ও প্রচারপত্র বিলি করা হয়। ১৯৯৯সালে ইউপিডিএফ অতীতমুখী রাজনীতি পরিহারের ঘোষণা দিয়ে জুম্ম জনগণের প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার শহীদ দিবস ১০ নভেম্বর পালন না করার জন্য নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ প্রদান করে। ২০০১ সালে দলটি ৩ বিদেশীকে অপহরণ করে মোটা মুক্তিপণ আদায় করে। চারদলীয় সরকারের আমলে সম-অধিকার নামক সংগঠনটির গড ফাদার ওয়াদুদ ভূঁইঞার সাথে ইউপিডিএফ-এর সখ্যতা ও মিতালী ছিল ওপেন সিক্রেট। ২০০২ সালে চলটি রচনার লেখকসহ দলটির কিছু নেতা-কর্মী ভিন্নমত পোষণ করে দলত্যাগ করে। তার পরই ইউপিডিএফ ভিন্নমতালম্বীদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে (দৈনিক যুগান্তর, রবিাবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ ‘বিদ্রোহী গ্র“পকে নির্মূল করতে ইউপিডিএফের হিটলিস্ট’)। ভিন্ন মতালম্বীরা মাওরুম নামের একটি কাগজ বের করলে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম থেকে পত্রিকাটি ছিনতাই করে। মাওরুম পত্রিকার সাথে জড়িত থাকা ও লেখার অপরাধে তারা নিকোলাস ও জ্যোতিলাল চাকমাকে অপহরণের প্রচেষ্টা চালায়। চলতি রচনার লেখককে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০০৫সালে তাদের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটি জনসংহতি সমিতি সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং ্এপ্রিলের মধ্যে তাদের কাছে আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দেয়। আবার ২০০৮-এর বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের জন্য আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। অতঃপর জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময় হঠাৎ একটি বিশেষ সংস্থার বলবর্ধক বটিকা সেবন করে দলটি তেজী হয়ে উঠে। জনসংহতি সমিতির কথিত সংস্কারপন্থীদের সাথে নতুন আঁতাত গড়ে তুলে সন্তু লারমার বিরুদ্ধে জানপ্রাণ উজাড় করা সংগ্রামে নিজেদেরকে মনোনিবেশ করায়।
তারপর আবার দলটি ভোল পাল্টায় ২০০৯-এর জানুয়ারীতে। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে ইউপিডিএফ একেবারে সবাইকে তাক লাগিয়ে বাজিমাৎ করে ফেলে। একই সাথে তারা জনসংহতির সাথে আলোচনার জন্য দুয়ার খোলা বলেও জানান দিয়ে যায়। তবে দলটির কাছে কিছু বিনীত প্রশ্ন থেকে যায়। তা হচ্ছে যদি চুক্তি বাস্তবায়নে ইউপিডিএফ সহায়তা দিতে চায় তাহলে ১৯৯৭ সালে তাদের সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিলনা? এই প্রশ্নের কোন উত্তর কি দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করবে। আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, দীর্ঘ ১১ বছর চুক্তি বাতিলের দাবী জানিয়ে ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণের জাতীয় জীবনে যে অনৈক্যের বীজ বপণ করেছে তারই বা কি হবে? জাতীয় জীবন থেকে হারিয়ে যাওযা ১১টি বছর ইউপিডিএফ কিভাবে ফিরিয়ে দিবে? জনসংহতিকে ধ্বংস করার কথিত কর্মসূচী তারা পরিত্যাগ করেছে কিনা, দলটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপহরণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ভিন্ন মতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে ইউপিডিএফ কতটুকু সরে এসেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। সদ্য সমাপ্ত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে ইউপিডিএফ অংশগ্রহণ করে। দুটি নির্বাচনেই দলটির বিরুদ্ধে ভোটারদের জোর-জবরদস্তি করার অভিযোগ উঠে। তাদের সমর্থিত প্রার্থীদেরকে ভোট না দেয়ার অপরাধে অনেক জায়গায় ভোটাররা আর্থিক দণ্ড, এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হয। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইউপিডিএফ জোর করে তাদের বাক্সে ভোট প্রদানে বাধ্য করে। উপজেলা নির্বাচনে নানিয়াচর, বাঘাইছড়ি, লক্ষিছড়ি , মহালছড়ি ও পানছড়িতে তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যদের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া হয়। দিঘীনালা উপজেলার এক প্রার্থীকে ইউপিডিএফ জোর করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করলে, প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন দিঘীনালার নির্বাচন স্থগিত রাখে। সুতরাং দেখা যায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে এক চুল পরিমাণ সরে আসেনি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে ইউপিডিএফ-এর নাটকীয় ঘোষণার আড়ালে কিছু অংক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এর পিছনে গোপন কিছু থাকতে পারে। এবার তারা কোন মিশন নিয়ে নেমেছে, কার এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করছে সেটারও খোঁজ খবর রাখা দরকার। কারা এই কল-কাঠি নাড়াচ্ছে?
চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তুলে দলটি আসলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ করার পুরানো কর্মসূচীকে চালু রাখার একটা নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। হঠাৎ করে দলটির এই উল্টো যাত্রায় যারা বিভ্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে সতর্ক করার জন্য কিছু বিষয় নিয়ে বাহাস তোলা দরকার। সেগুলো হচ্ছে চুক্তির বিরোধীতা ও বাতিল করার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা অকালে প্রাণ হারিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছেন, অনেকে নিস্ব হয়েছেন, স্বজন হারানোর বেদনা, সন্তানহারা পিতা-মাতা কিংবা স্বামী হারা স্ত্রী, ভাই হারানো বোন, পিতৃহারা অবুঝ শিশু সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এই সব মানুষের দীর্ঘশ্বাস. আক্ষেপ, চোখের জল, বুক ভরা হাহাকারের দায়িত্বটা কার উপর বর্তাবে। কার অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য পার্বত্য জনপদে আত্মঘাতি সংঘাত, হানাহানি চালানো হয়েছে। ইউপিডিএফ নেতৃত্বকে সেই হিসেবটা দিতে হবে। খেমাররুজদের মত বিপ্লবের মন্ত্র জপে রক্তের হোলি উৎসবে যারা মেতে উঠেছে তাদের বিচার কি হবেনা? যদি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা সহযোগিতাই করবে তবে সে সময় কেন চুক্তিতে অগ্নিসংযোগ করা হলো, কেন চুক্তি বতিলের দাবী জানানো হলো, কেন সন্তু লারমাকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা করা হলো? জনসংহতি সমিতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তিাদের চিতা বানিয়ে অগ্নিসংযোগ করা, সর্বোপরি জনসংহতিকে ধ্বংস করতে না পরলে পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসন আদায় করা যাবেনা এই অদ্ভূত তত্ত্বের প্রয়োগ করতে কে ইউপিডিএফকে পরিচালিত করলো-এই উত্তরগুলো অবশ্যই খুঁজে পেতে হবে। আজ শান্তিবাদী সেজে চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তুললেই অতীত ক্ষমা করবে তা মনে করলে সেটাও বড় ধরনের বোকামী। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রায়ই বলে থাকেন জাতীয় দায়িত্ব পালন করা ছেলে খেলা নয়। কিন্তু পাহাড়ের চিরদুঃখী মানুষদের নিয়ে কারা ছেলে খেলা খেলল? ১১বছর আগে ইউপিডিএফ যদি চুক্তি বাতিলের চরমপন্থা গ্রহণ না করত তা হলে জুম্ম জনতাকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এত ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হতে হতো না। জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংস করে, কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে, সশস্ত্র সংগ্রামের অভিনয় করে, আত্মঘাতী সংঘর্ষে জুম্ম জনগণকে ডুবিয়ে মেরে এখন আবার ভোল পাল্টে শান্তিবাদী সাজা এরই নাম কি রাজনীতি? এই অপরাধ অমার্জনাযোগ্য।
৯ম জাতীয় সংসদে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ইউপিডিএফ (স্বতন্ত্র) হাতি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে। মজার বিষয় হচ্ছে রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীও হাতি মার্কা বরাদ্দ পায়। তবে ইউপিডিএফ প্রচারণা চালায় তারা হচ্ছে বন্য হাতি আর জনসংহতি সমিতি হচ্ছে পোষা হাতি। তাদের যুক্তি ধরে বলতে হয় পোষা হাতি জনপদে থাকবে সেটা স্বাভাবিক। গোলটা বাঁধে যখন বন্য হাতি পাল ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তখন তাদের তাণ্ডবলীলায় জনপদের যে ভয়াবহ ক্ষতি হয় তার দায়ভার কে নেবে? আপনারা যেহেতু বন্য হাতি তাই বনেই থাকুন। কিন্তু প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিয়ে জনজীবন ধ্বংস করার এই মহান (!) কাজে আপনাদেরকে কারা তাড়িয়ে নিযে আসে? জুম্ম জনগণ পিছনের সেই অশুভ শক্তির উৎস খুঁজে বের করতে চায়। কাজেই যদি শান্তিবাদী সাজতেই চান তা হলে বহুরূপীতা পরিহার করুন। রূপের ঝলক দেখিয়ে বিভ্রান্ত করবেন না। কারা আপনাদেরকে বহুরূপী সাজিয়ে রেখেছে? কি তাদের পরিচয়? সশস্ত্র সংগ্রামের অভিনয় করে যারা জীবন সংহার করছে,পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসনের ধুয়ো তুলে চুক্তি বাতিলের দাবী জানিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, সেই ষড়যন্ত্রের মূলহোতাদের ক্ষমা মিলবে কেমনে? আসুন তাদের মুখোশ উন্মোচন করি। গাধাকে সিংহের চামড়া পরিয়ে কিছুদিন হয়ত বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা যায়। কিন্তু ঢাক-ঢোল বাজালে গাধা ঠিকই ডাক দিয়ে নিজের পরিচয জানান দিয়ে যায়। এতদিন ইউপিডিএফ বিপ্লবের তোরজোড়, পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসনের বাগাড়াম্বর করলেও নিরেট সত্যটা উন্মোচিত হয়ে গেল। আসলে তারা হচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর তল্পিবাহক। তাদের নির্দেশেই দলটি চুক্তি বাতিলের দাবী জানায়, তাদের অঙ্গুলি হেলনে চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তোলে। আমরা শুধু দেখতে চাই প্রভূদের মনোরঞ্জনে দলটি আর কি কি বিষয় নিয়ে রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়। তারপরও তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ তারা যে সিংহরূপী গাধা সেজে জুম্ম জনগণকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছিল চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে সেই খোলসটা আর ধরে রাখতে পারলো না। আরেকটি বিষয় যদি ইউপিডিএফ খোলাসা করে তাহলে আমরা কিছুটা বিভ্রান্তির হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। সেটা হচ্ছে আর কি কি ভোল তারা পাল্টাবে, রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে তারা কোন নাটক কখন মঞ্চস্থ করবেন তার যদি একটা নির্দিষ্ট বর্ষপঞ্জিকা দলটি ঘোষণা করতো, তাহলে হয়রানির কবল তেকে পাহাড়ের নিপীড়িত মানুষেরা একটু রেহাই পেত।
জনাবা
মহিউদ্দীন
ফরিদ সাহেব আমাদেরকে আপনার সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। আপনাকে নতুন করে চেনার আর দরকার নেই। ভালো থাকুন।
@অমিত হিল ও @দীপায়ন খীসা
বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে লেখক নয়, লেখাকে সমালোচনা করুন । কিন্তু অমিত হিল ও দীপায়ন খীসা সমালোচনা করতে লাগলেন লেখককে । এবার বলুন লেখকের কোন বক্তব্যটি আপনাদের কাছে উগ্র মৌলবাদ ও ডানপন্থী বলে মনে হয়েছে এবং মৌলবাদ ও ডানপন্থীর সংজ্ঞা কি?
লেখকের বক্তব্যের কোনটি অসত্য ।
@দীপায়ন খীসা
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের যে অংশটি ব্লগিং এ আসে তাদের অধিকাংশই ডান বা বাম রাজনীতির সাথে জড়িত নয় । কিন্তু তারা সমাজ জ্ঞানের অংশ । আমার লেখা তাদের জন্য । কয়েক দিন আগে আমাকে দেয়া অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমদের গালাগালি উপভোগ করেছেন এবং আপনি নিজেও আমাকে খোঁচা দিয়েছেন । আপনারা সকলেই কিন্তু শিক্ষিত লোক ।
অভিজিতেরা জ্ঞানী মানুষ, ডানের সাথে সম্পৃক্ত নয়, কিন্তু বাম রাজনীতিও বুঝে না । তারা যে কোন বিষয় বা ঘটনাকে দেখে বিচ্ছিন্ন ভাবে, যা যুক্তি সম্মত নয় । ধর্ম বা কোরান যে সমাজ, সভ্যতা ও ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়, তা তাদের জ্ঞানের দুয়ারে আঘাত হানতে পাড়ছে না । তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাও যে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়, তা ডান ও বামের মাঝখানে অবস্থানরত শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে বুঝাবার জন্য আমার এই লেখা ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
দু:খিত, একটু দেরীতে বলছি।
এই পোস্টে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক ইতিহাস সর্ম্পকে আপনি ধারাবাহিকভাবে যে সব অসত্য ভাষণ দিয়েই চলেছেন, তা হচ্ছে:
৬। সংবিধান অনুযায়ী বেশ কিছু ক্ষমতা স্থানীয় সরকারকে (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ান পরিষদ) দেয়া হয়েছে । কিন্তু স্থানীয় গোষ্ঠি স্বার্থে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না । মেহনতি সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ভুমির উপর নির্ভরশীল । তাই ভুমি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন সংষ্কার অতিব জরুরী । কিন্তু স্থানীয় গোষ্ঠি স্বার্থে ভুমি সংষ্কার সম্ভব হচ্ছে না । ফলে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে । মানুষের এই ক্ষোভকে পুজি করে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কিছু স্বার্থান্বেষী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে ।
মান্যবর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের বিশ্লেষক, আপনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সর্ম্পকে যে সীমাহীন মনগড়া ইতিহাস ও তৎসংলগ্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছেন, তাতে আপনার সঙ্গে যুক্তি-তর্কে আলাপ-চারিতাই বৃথা। সবমিলিয়ে মূলা বিশ্লেষণের বিষয়টি আবারো সামনে এসে যাচ্ছে; অর্থাৎ মূলাটির বাইরে লাল (বিপ্লবী), কিন্তু ভেতরটা সাদা (প্রতিক্রিয়াশীল)। অনেক ধন্যবাদ। (N)
পুনশ্চ: ওপরের ছয় নম্বর পয়েন্টটি উদ্ধৃত চিহ্নের ভেতর হবে।
—
(W)
@বিপ্লব রহমান,
স্বার্থান্বেষী মধ্যবিত্ত, যারা নৃতাত্ত্বিক, সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি নিরপেক্ষ ভাবে নিশ্লেষণে এবং সমন্বিত করতে অক্ষম তাদের কাজ থেকে লাল-সাদার সনদপত্র নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । তবে জেনে রাখুন সংবিধানের পঞ্ছদশ সংশোধনিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি নৃ-জাতিগুলোকে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হিসাবে সংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ।
ভাল থাকুন । এবিষয় আপনাদের সাথে আর কোন আলোচনা করতে ইচ্ছুক নই ।
আমার জানা মতে সাওতাল, গাড়ো, হাজং প্রভৃতি ট্রাইবগুলো হলো বাংলাদেশের আদিবাসী । ভারতে বসবাসরত এই ট্রাইবগুলোকে তারা Scheduled Caste হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে । বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীলেরা আদিবাসী এই ট্রাইবগুলির সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবী করে, যা এখন পর্যন্ত পুড়ন হয়নি ।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছি । “গণপ্রজাতন্ত্র” শব্দের অর্থ হলো সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা । রাষ্ট্র হলো মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান । প্রতিষ্ঠানের কোন ধর্ম থাকে না । তাই রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথকীকরণের অঙ্গিকার নিয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল । ধর্মীয় ভিত্তিতে জাতি নির্ধারণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়া, আলোচ্য ভুখন্ডে বসবাসরত সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ বাঙ্গালি জাতির অন্তর্ভূক্ত বিধায় বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদ সামনে এসে যায়, যার অর্থ এই নয় যে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতি সত্তাগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হবে না । ক্ষুদ্র জাতি সত্তা গুলো তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে ।
বাংলাদেশীরা জাতিয় তিনটি সমস্যা সমাধানে সংগ্রামরত, যথাঃ (১) সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ; (২) রাষ্ট্র থেকে ধর্ম পৃথকীকরণ; (৩) আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি । কিন্তু কোন কোন পাহাড়ী মধ্যবিত্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্বায়ত্তশাসন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দাবী উত্থাপন করে চলছেন ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের সংজ্ঞা হলো স্বাধীনতা বা স্বশাসন অথবা নিজের আইন নিজে তৈয়ার করা । তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের অর্থ দাঁড়ায় অঞ্চলটিকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা । আরকান বাসীরা (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি) ষষ্ঠদশ শতাব্দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে বসবাস করত মোঘল সম্রাটকে খাজনা দিতে আরম্ভ করে । দেখা যাচ্ছে যে ঐতিহাসিক ভাবে পার্বিত্য চট্টগ্রাম হলো বাংলাদেশের অবিচ্ছদ অংশ । তাই কোন বাংলাদেশী নিজ ভুখন্ড বিচ্ছিন্ন হতে দিতে পারে না ।
সংবিধান অনুযায়ী বেশ কিছু ক্ষমতা স্থানীয় সরকারকে (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ান পরিষদ) দেয়া হয়েছে । কিন্তু স্থানীয় গোষ্ঠি স্বার্থে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না । মেহনতি সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ভুমির উপর নির্ভরশীল । তাই ভুমি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন সংষ্কার অতিব জরুরী । কিন্তু স্থানীয় গোষ্ঠি স্বার্থে ভুমি সংষ্কার সম্ভব হচ্ছে না । ফলে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে । মানুষের এই ক্ষোভকে পুজি করে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কিছু স্বার্থান্বেষী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে ।
প্রিয়
মহিউদ্দীন
আপনি অযথা কিছু বিষয় আলোচনা করছেন।এটা আপনার ডানপন্থার বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে যায়। আর ডানপন্থীদের সাথে কোন আলোচনা মানে সময় ক্ষয়। আপনি আর না আমি খুশী হবো।
@আ হা মহিউদ্দীন সাহেব, আপনার স্বার্থ এবং কথাবার্তার ধরণ অনেক আগে বুঝতে পেরেছি । এভাবে প্রগতিশীলতার মানে হয় না । আপনার মন্তব্যগুলো পড়লে বুঝা যায় আপনি উগ্র মৌলবাদকে বুকে জড়িয়ে প্রগতিশীলতার দাবী তুলছেন । এভাবে হয় না । এভাবে প্রগতিশীল হওয়া যায় না । সর্বোচ্চ মৌলবাদ এবং সর্বনিম্ন ফ্যাসিবাদ । দুটিই ভয়ংকর এবং বিপদজনক ।
এই মহিউদ্দীন সাহেব ছদ্মবেশধারী বাম। আসল রূপ হলো, তিনি হচ্ছেন ডান। পরিচয় গোপন রাখা কঠিন।
@অমিত হিল,
ইয়ে, ওনার সঙ্গে আর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী বিশ্লেষণ জনিত জ্ঞানতত্ত্ব চর্চা হবে না? 😕
খুব ভাল দীপায়ন দা। যারা ভুল স্বীকার করতে পারেন, তারা মহান। সময় এসেছে ভণ্ড রাজনীতির মুখোশ খোলার। আপনার লেখনি অব্যহত থাকুক। যারা পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়, তারা পেছনের লোক। একলা চল রে।
ব্যক্তি কুৎসা, অহঙ্কারবোধ এবং পরস্পর দোষারোপ পরিহার করে দীপায়ন খীসা ও অডঙ চাকমা ও সমরেশ চাকমার লেখা থেকে প্রাপ্ত আদর্শ ও দল দু’টির কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে আসরাফের প্রস্তাব অনুযায়ী দল দু’টির আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা যেতে পাড়ে ।
বিগত শতাব্দির ষাট দশকে স্নায়ু যুদ্ধকালীন সময় পৃথিবীর ৮০টি বাম দল কর্তৃক অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিকে বাম দলগুলির মধ্যে দু’টি ধারা বিশ্ব রাজনীতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠে, যার একটি হলো গণতান্ত্রিক উপায় এবং দ্বিতীয়টি হলো সশস্ত্র আন্দোলন করে ক্ষমতায় গিয়ে চলমান শ্রেনী সংগ্রামকে বেগবান করা । উপমহাদেশে দ্বিতীয় ধারার বাম রাজনীতির দল ছুট অংশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের “জন সংহতি সমিতি”, যারা স্থানীয় অভাব-অভিযোগ ব্যবহার করে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তোলে ।
বিগত শতাব্দির নব্বই দশকে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটলে সশস্ত্র আন্দোলনকারী “জন সংহতি সমিতি” এর সাথে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে এবং পরবর্তিতে তদকালীন মধ্য-বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী আওয়ামি লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয় । শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ী মধ্যবিত্তের সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ ঘটে, যেমনটি ঘটেছিল ১৯৭২ সালে বাঙ্গালি মধ্যবিত্তের মধ্যে । ফলে সুযোগ-সুবিধার জন্য লালায়িত মধ্যবিত্তরা পরস্পর পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয় । তাই রাজনীতির বিধি অনুযায়ী সৃষ্টি হয় বিএনপির এবং পাহাড়ী রাজনীতিতে “জন সংহতি সমিতি” ভেঙ্গে “ইউপিডিএফ” এর । এটাই হলো আমার দৃষ্টিতে বিএনপি ও ইউপিডিএফ এর রাজনৈতিক জন্ম ইতিহাস ।
গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলে আদর্শের পরিবর্তন বা মতপার্থক্য একটি সাধারণ ব্যাপার । কিন্তু সশস্ত্র আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলে আদর্শের পরিবর্তন বা মতপার্থক্য খুবই কঠিন ব্যাপার । কারন জীবনের উপর হামলা আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয় । ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটিকে অন্য এমন একটি সশস্ত্র দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়, যার আদর্শ ও মতের সাথে ব্যক্তিটির মিল থাকে । এটাই ঘটে চলছে পাহাড়ী আঞ্ছলিক দল দুটির মধ্যে ।
আর একটি বিষয় আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাজ করছে, তা হলো বাঙ্গালি জাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা ও আদি বাসীর সংজ্ঞা নির্ণয় ।
নৃতাত্ত্বিক ভাবে বাঙ্গালিরা হলো শংকর জাতি, যার রক্তে প্রবাহিত হচ্ছে ইন্ডো-এরিয়ান, মঙ্গোলো-দ্রাবিডিয়ান, এস্ট্রো-এশিয়াটিক, দ্রাবিদিয়ান, আসামিজ, সিংহলিজ, তিব্বতো-বার্ম্যান, মুন্ডা রক্ত-ধারা ।
আদি বাসী (Aborigine) বলতে বুঝায় সংশ্লিষ্ট ভূখন্ডের মূল আধিবাসী । ক্ষুদ্র জাতি সত্তা বলতে বুঝায় সংশ্লিষ্ট ভূখন্ডে বসবাসরত অন্য কোন জাতির মানুষের চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ দ্বারা গঠিত জাতি ।
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি জাতিগুলি যে বাঙ্গালি নয়, সে ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নাই । কিন্তু এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এরা “আদি বাসী” না “ক্ষুদ্র জাতি সত্তা” । নৃতাত্ত্বিক ভাবে এরা তিব্বতো-বার্ম্যান (এই ধারার রক্ত বাঙ্গালি জাতির মধ্যে প্রবহমান) যাদের রক্তের মধ্যে হিমালয় পাদদেশের বিভিন্ন রক্ত প্রবাহিত । ঐতিহাসিক ভাবে এরা আরকান বাসী ষষ্ঠদশ শতাব্দিতে এরা বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভারতের মিজরাম, অরুণাচল ও ত্রিপুরায় বসবাস আরম্ভ করে । তাই দেখা যাচ্ছে যে এরা আদি বাসী নয়, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, যা শান্তি চুক্তিতে বর্ণিত হয়েছে । কিন্তু শান্তি চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইউপিডিএফ এ ব্যাপারে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে পাহাড়ীদেরকে বিভ্রান্ত করছে । ইউপিডিএফ পক্ষাবলম্বনকারী কোন কোন ব্লগার আবার অপ-প্রচার করছে যে কোর্ট শান্তি চুক্তি বাতিল করেছে ।
ক্ষুদ্র জাতি সত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতিও পঞ্ছদশ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । জিয়া ও এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্র ধর্ম সংযোজন, যা ৭২সালের সংবধানের ধর্ম নিরাপেক্ষতার সাথে সংঘর্ষিক, বাতিল না করে অন্য ধর্মের কথা উল্লেখ করে পঞ্ছদশ সংশোধনীতে অন্তর্ভূক্ত করার ফলে বাম দল এই অংশটুকুর বিরোধীতা করে । অন্য দিকে ডানপন্থী দলগুলি ক্ষুদ্র জাতি স্ততার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ৭২এর চেতনা বাতিল, জিয়া ও এরশাদ কর্তৃক প্রবর্তিত রাষ্ট্র ধর্ম অক্ষুন্ন রাখা এবং কোর্ট কর্তৃক বাতিলকৃত তত্তাবধায়ক সরকার রাখা, অর্থ্যাৎ পঞ্ছদশ সংশোধনী বাতিল করা বিএনপি-জামাতের কাম্য । এরই সাথে যোগ দিয়েছে ইউপিডিএফ । তাই রাজনৈতিক পরিভাষায় বলা হয় উগ্রবাম ডান রাজনীতির সহায়ক শক্তি ।
প্রিয়
মহিউদ্দীন সাহেব
আপনাকে ধন্যবাদ।
চরম ডান আর চরম বাম পরস্পরের বন্ধু হয়ে যান। পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে ইউপিডিএফ এবং বিএনপি-জামাত পরিচালিত সম-অধিকার আন্দোলন দুই পক্ষই চুক্তি বাতিলের দাবীতে একমত।
@আ হা মহিউদ্দীন,
@আ হা মহিউদ্দীন,
মাফ করবেন। আপনার তাবৎ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী জ্ঞানত্বাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তথা গুঢ় শ্রেণীগত রাজনৈতিক ব্যাখ্যা মারাত্নক অসার ও মনগড়াই শুধু নয়, এটি একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সীমাহীন ইতিহাস বিকৃতিও বটে। (W)
আপনি বলছেন:
জনসংহতি সমিতি কোন ‘বাম রাজনীতির দল ছুট অংশ’? জনসংহতি ‘স্থানীয় অভাব-অভিযোগ ব্যবহার করে’ পাহাড়ে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল– এই তথ্য আপনি কোথায় পেলেন? নাকি জনসংহতি সমিতির সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তি বাহিনী গঠনের নেপথ্যে রয়েছে পাহাড়ি আদিবাসীদের একটি সুদীর্ঘ নির্যাতন-নিপীড়নের ইতিহাস?
না জানলে অনুগ্রহ করে জেনে নিন:
[লিংক]
এবং আরো পড়ুন:
[লিংক]
আপনি বলছেন:
প্রচণ্ড রকমের অসত্ব ভাষণ। এমন লারমার জীবদ্দশাতেই ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের সঙ্গে সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর শান্তি সংলাপের সূচনা ঘটে। এম্এন লারমার মৃত্যুর পর এরশাদ সরকারের শেষভাগে খাগড়াছড়ির দুর্গম দুদুকছড়িতে সেনা বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শান্তিবাহিনীর একাধিক বৈঠক্ও হয়। এরই ধারবাহিকতায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শান্তি সংলাপের পর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি।
[লিংক, দ্রষ্টব্য চিঠি চার]
আপনি বলছেন:
ডাহা বিভ্রান্তিকর তথ্য। আপনি জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ-এর রাজনৈতিক ইতিহাস সর্ম্পকে শুধু অজ্ঞতার পরিচয়ই দিচ্ছেন না, এমন কী দীপায়ন খীসার এই লেখাটিতে নিজস্ব অভিজ্ঞতারভিত্তিতে ইউপিডিএফ-এর একজন দলছুট নেতার জবানবন্দিতে দলটির জন্মকথার যে ইতিকথা তুলে ধরা হয়েছে, তা-ও বুঝতে অক্ষম।
অনুগ্রহ করে নীচের ছবিটি দেখুন। ইতিহাস কী বলছে?…
[img]http://www.updfcht.org/resistance2.html[/img]
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মাস দুয়েক পর ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে শান্তিবাহিনীর অস্ত্র জমাদান অনুষ্ঠানের সময় তোলা এই ছবি। শান্তিচুক্তি বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল ইউমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ)স্টেডিয়ামে কালো পতাকা উঁচিয়ে, ব্যানার দেখিয়ে চুক্তির বিরোধীতা করছে, তখন তারা প্রসিত-সঞ্চয় গ্রুপ নামে পাহাড়ে পরিচিতি পায়, পরে ইউপিডিএফ।
অর্থাৎ আপনার ভাষ্যমতে,’শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ী মধ্যবিত্তের সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ ঘটার’ ফলে ইউপিডিএফ এর জন্ম নয় এবং মোটেও আপনি যে মনগড়া ব্যাখা দাঁড় করান– ‘সুযোগ-সুবিধার জন্য লালায়িত মধ্যবিত্তরা পরস্পর পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়’ — তেমনটিও নয়। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ার ভেতরেই প্রথমে প্রসিত-সঞ্চয় গ্রুপটির যাত্রা, ‘পাহাড়ী মধ্যবিত্তের সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ’ ছাড়াই চুক্তির দু মাসের মাথায় চুক্তি বিরোধী অংশটির আত্নপ্রকাশ এবং একবছরের মধ্যে ইউপিডিএফ-এর জন্ম।
আপনি বলছেন:
একদম নয়। কেতবী জ্ঞানবাদী এই বিবৃতি এবং কথিত ‘বিধি’র বাইরে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, জনসংহতি ভেঙে কখনোই ইউপিডিএফ তৈরি হয়নি। বরং জনসংহতি সমিতির তৎকালীন গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর গোপন রাজনীতির সহযোগি হিসেবে পাহাড়ের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ইউমেন্স ফেডারেশন এবং পাহাড়ি গণ পরিষদের চুক্তি বিরোধী অংশটি মিলে গঠিত হয় ইউপিডিএফ। অনুগ্রহ করে আরো পড়ুন:
[লিংক]
আ হা মহিউদ্দীন, অজ্ঞতায় লজ্জার কিছু নেই, কিন্তু মারাত্নক গরলভেল নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে মনগড়া দ্বন্দ্ববাদের নিত্য-নতুন পাঠ ও তৎসংলগ্ন বিশ্লেষণ চরম বিপদজনক বৈকি। একেই বোধহয় আপনাদের রাজনৈতিক পরিভাষায় ‘লাল মূলা’ বলেছে– যার বাইরেরটা লাল, ভেতরটা সাদা। (N)
পুনশ্চ:
১। কোনো কারণে ওপরের মন্তব্যের ঘরে ছবিটি আসছে না। এখান থেকে আলোচ্য ছবিটি দেখা যেতে পারে। [লিংক]
২। @ আ হা মহিউদ্দীন, বোধগম্য কারণেই আদিবাসী, ক্ষুদ্রজাতিস্বত্তা, ট্রাইব– ইত্যাদি বিষয়ে আপনার তাবৎ নৃ-ত্বাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এই অধমের কোনো আগ্রহ নেই বলে সে সম্পর্কে প্রতিমন্তব্য নেই। 😛
মহিউদ্দীন সাহেব দয়া করে বিপ্লব রহমানের উত্তরে লিখবেন কি?
@বিপ্লব রহমান,
আমার এই আলোচনা আপনার নিম্ন বর্ণিত দু’টি মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে।
(১)আ হা মহিউদ্দীন, অজ্ঞতায় লজ্জার কিছু নেই, কিন্তু মারাত্নক গরলভেল নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে মনগড়া দ্বন্দ্ববাদের নিত্য-নতুন পাঠ ও তৎসংলগ্ন বিশ্লেষণ চরম বিপদজনক বৈকি। একেই বোধহয় আপনাদের রাজনৈতিক পরিভাষায় মূলা’ বলেছে– যার বাইরেরটা লাল, ভেতরটা সাদা।
(২)আ হা মহিউদ্দীন, বোধগম্য কারণেই আদিবাসী, ক্ষুদ্রজাতিস্বত্তা, ট্রাইব– ইত্যাদি বিষয়ে আপনার তাবৎ নৃ-ত্বাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এই অধমের কোনো আগ্রহ নেই বলে সে সম্পর্কে প্রতিমন্তব্য নেই।
প্রথম মন্তব্যে আপনি পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ক্থা বলেছেন, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন । উক্ত সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তান হলো ইসলামিক রিপাবলিক, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমসংখ্যক (জনসংখ্যা ভিত্তিক নয়) সদস্য নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট গঠিত হবে, মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখবে না, জাতিয়তা ছিল মুসলমান । কিন্তু পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ জাতি ছিল বাঙ্গালি । তাই তারা ঐ সংবিধানের বিরোধীতা করে । তাই বাঙ্গালিদের গণতান্ত্রিক আন্দোআন দমন করার লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারী করে উক্ত সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন । ফলে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তদকালীন পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে, যার সাথে সামিল হয় তদকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল জাতি সত্ত্বার মানুষ ।
ট্রাইব থেকে ট্রাইব্যাল শব্দটির উতপত্তি, যার অর্থ হলো আধুনিক সভ্যতায় পৌছাতে পাড়েনি এমন মানুষ । বৃটিশেরা আফগানিস্তানের পাঠানদেরকে বিভক্ত করে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নামের এক ট্রাইব্যাল অঞ্চল গঠন করেছিল । স্থানীয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠিকে পক্ষে রাখার লক্ষ্যে বৃটিশেরা সীমন্ত প্রদেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ট্রাইব্যাল অঞ্চল ঘোষণা করেছিল । আইয়ুব খান বৃটিশ নীতি অনুসরণ করে নিজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ট্রাইবাল অঞ্চল ঘোষণা করে এবং ভারতকে জব্দ করার লক্ষ্যে উত্তর পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবারহ আরম্ভ করে । এই প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পর্যান্ত চলে আসছিল । দশ ট্রাক অস্ত্র চালান ধরা পড়ায় সব কিছু প্রকাশ হয়ে যায় ।
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সম্পর্কে বিজ্ঞ দাবীদার বিপ্লব রহমান কলোনীয়াল চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারেননি বিধায় ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামকে ট্রাইব্যাল অঞ্চল (অসভ্য মানুষের আবাস ভূমি) ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন এবং একটি ছবি দেখিয়ে আমাকে ইতিহাস শিক্ষাতে চেষ্টা করলেন । এমনকি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে আস্থা রাখার জন্য আমাকে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করলেন না ।
সমসাময়িক কলোনীয়ল ইতিহাস অনুযায়ী বাংলার শেষ নবাব সিরাজঊদ্দৌলা ছিলেন দুশ্চরিত্র, নিষ্ঠুর ও লম্পট ব্যক্তি । কিন্তু আধুনিক ইতিহাস সিরাজউদ্দৌলাকে স্বাধীনচেতা নবাব এবং মীর জাফরকে বিস্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করেছে । কেন করেছে তার কারন জানতে হলে সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত বাংলাদেশের ইতিহাস (১৭০৪-১৯৭১) এর পৃষ্ঠা নং ১০৩-১০৭ পড়ুন ।
বিশ্ব ব্রম্মান্ডের কোন কিছুই ঐশ্বরিক বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় । সব কিছুই পরস্পরর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল । কিন্তু বিপ্লব রহমানের মত মানুষেরা সব কিছু বিশ্লেষণ করেন বিচ্ছিন্ন ভাবে । তাই তাদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে স্পর্শকাতর ও বিপদজনক বলে মনে হয় । কোন ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে যারা বিশ্লেষণ করেন, তারা পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর ক্ষীয়মান বিদ্রোহের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র আন্দোলনের সম্পর্ক স্থাপন করতে ব্যর্থ হন । তাই পাহাড়ী অঞ্চলকে তাদের কাছে বিপদজনক বলে মনে হয় ।
মুসলিম জাতিয়তাবাদের বিপরীতে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদ, ধর্ম নিরাপেক্ষতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও গণতন্ত্রের দাবীতে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এবং ১৯৬৯ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে তার পতন ঘটে । জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহন করে জনসংখ্যার ভিত্তিতে গণ-পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন দেয়ার অঙ্গিকার করেন । ফলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তিতে গণ-পরিষদের সভা ডাকতে অনীহা প্রকাশ করে জেনারেল ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ তদকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল ধর্ম ও জাতি সত্ত্বার উপর গণ-হত্যা পরিচালনা করেন । ফলে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যায় এবং ১৬ই ডিসেম্বার ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয় । স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ধর্ম নিরাপেক্ষতা, বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে সন্নিবেশিত করে বাহত্তুরের সংবিধান রচিত হয় । এই সংবিধানের আওতায় ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি হিসাবে মানবিন্দ্র নারায়ন লারমা স্বাধীনতা উত্তর প্রথম সংসদের সাংসদ নির্বাচিত হন ।
মানবিন্দ্র লারমা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রস্তাব মধ্য-বাম নীতিতে আস্থাবান বঙ্গবন্ধু সমীপে এমন একটি সময় উপস্থাপন করেন, যখন বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লুটপাট নিয়ন্ত্রনে ব্যস্ত, নিজ দলের ডানপন্থীদের চাপে কোণঠাসা এবং নিজ দলের উগ্রবাম (জাসদ) এর বিরুদ্ধে সংগ্রামরত । ফলে লারমার প্রস্তাব প্রত্যাখান হয়, যার অর্থ দাঁড়ায় ভুল সময় এবং অসুবিধাজনক পরিস্থিতির কারনে লারমার প্রস্তাব অগ্রহ্য হয় ।
আওয়ামি লীগের ডানপন্থীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে এবং উগ্রবাম জাসদের ভুল রাজনীতির কারণে পাকিস্তানের আই-এস-আই এর এজেন্ট জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে জাসদ নেতা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তানে পরিণত করেন । ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনীতিতে পরিত্যাক্ত নেতাদেরকে নিয়ে জিয়া বিএনপি গঠন করেন এবং অর্থের বিনিময় রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেন । বর্ণিত এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ১৯৭৭ সালে মানবিন্দ্র লারমা সশস্ত্র আন্দোলন আরম্ভ করেন ।
জিয়া নিহত হলে ঘোলাটে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের আই-এস-আই এর আর এক এজেন্ট জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন । ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন । এই দুই জেনারেল বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করেনা । তাই হাই কোর্ট তাদের সকল কার্যকলাপকে বেআইনি ঘোষণা করেছে । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্মানহানি ঘটে বিধায় বৈদেশিক চুক্তিগুলোকে দায়মুক্ত রেখেছে । অতএব জন সঙ্ঘতি সমিতি যদি এরশাদের সাথে শান্তির জন্য আলোচনা করে থেকে, তাও বেআইনি ঘোষিত হয়েছে । তাই ১৯৭৫ এর পর জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে গঠিত সরকারই হলো একমাত্র বৈধ সরকার । তাই খালেদা সরকারের সাথে জন সঙ্ঘতি সমিতির শান্তি আলোচনা হলো প্রথম বৈধ আলোচনা ।
বিপ্লব রহমান, আপনার প্রদর্শিত ছবিতে অসভ্য ট্রাইবের কোন লোক খোঁজ করে পাইনি, পেয়েছি বাঙ্গালিদের মত সভ্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা প্রভৃতি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সভ্য মানুষ । জন সঙ্ঘতি সমিতি ও ইউপিডিএফ এর কার্যবলির যে অংশটি আপনি বা দীপায়ন খীসা প্রত্যক্ষ করেছেন, তা ইতিহাসের উপাদান, ইতিহাস নয় । এই উপাদানগুলির সাথে বহু বিষয় সংযোজিত ও বিয়োজিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি হয় । যেমনটি ঘটেছিল লম্ফট হিসাবে পরিচিত সিরাজউদ্দৌলার ক্ষেত্রে । তাই মনে হয় আপনাদের ইতিহাস জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে ।
এবার আসা যাক আপনার দ্বিতীয় মন্তব্যে । একটা জাতির বৈশিষ্ট ও চরিত্র নির্ভর করে নৃতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় । আর্য্য কর্তৃক বর্ণিত নিষাদ ও ম্লেচ্ছ মানুষগুলো কোন প্রক্রিয়ায় আজকের সুসভ্য বাঙ্গালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা জাতিতে রূপান্তরিত হলো তা জানার জন্য প্রয়োজন নৃতাত্ত্বিক তত্ত্বের উপর জ্ঞান রাখা । ইতিহাস একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল । কিন্তু আপনারা ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করেন বিচ্ছিন্ন ভাবে । তাই আপনাদের ইতিহাস বিশ্লেষণ হয় ভুল ।
আ হা মহিউদ্দীন
আপনি কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে বার বার টেনে আনছেন।আশা করছি প্রসঙ্গের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন।
@দীপায়ন খীসা,
কোন বিষয়গুলি অপ্রাসঙ্গিক তা উল্লেখ না করায় কোন মন্তব্য করতে পাড়লাম না ।
আ হা মহিউদ্দীন,
এই বিষয়ে বিপ্লব রহমানের দৃষ্টি আশা করছি।
মানুষ যখন আদর্শ হারা হয়ে যান আত্মহত্যার পথ বেশে নিতে দ্বিধাগ্রস্থ হন না । ধর্মমৌলবাদীদের পক্ষে মুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া অসম্ভব । কাককে ময়ূরের পেখম পড়িয়ে দিলে কাক যেমন কাকই থেকে যাই; ঠিক তেমনি আদর্শ বিচ্যুত লোকদের বেলায় ও যতই মানবতার কথা মুখে ফুর পড়ুক -আদর্শের নাগাল তারা আর পান না । আদর্শের মাঝে ব্যবসায়িক এবং বিজ্ঞাপনকেন্দ্রীক আলোচনা -সমালোচনা অনুপস্থিত । আদর্শবাদীরা কখনো নিজের সুনামের জন্য ভালো কাজ করেন না । আদর্শবাদীরা কখনো নিজেকে অতি ভালো বানাতে চেষ্টা করেন না ।
“অর্ধেক সত্য কথা এক গুরুতর মিথ্যা কথার চেয়ে ও বিপদজনক”
দীপায়ন বাবুর, লেখাতে সত্য কথা নেই আমি তা বলছি না । কিন্তু কিছু সত্য মেশিয়ে সে ভয়ংকর মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন । সরবতের সাথে যেভাবে বিষ মেশানো হয় ঠিক সেভাবে দীপায়ন বাবু ও মধুর কথার মাঝে বিষ মেশাচ্ছেন । যেমন সে নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করছেন বটে কিন্তু দোষের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজী নন । ইউপিডিএফ গঠন করা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে দীপায়ন খিসা কি সেই অপরাধের উর্ধ্বে গেলেন ?
স্বায়ত্বশাসন দাবী যদি ভুল কিংবা অপরাধ হয় তাহলে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে কি সেই অপরাধে দোষী করা যাবে ? স্বায়ত্বশাসনের দাবী প্রথমে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা করেছিলেন, সন্তু লারমা সেই দাবী থেকে সরে এসে আঞ্চলিক শাসন নিয়ে চুক্তি করেন । সন্তু লারমার মতে আঞ্চলিক শাসনই স্বায়ত্বশাসন; তাই ইউপিডিএফ সেই জায়গায় পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন বসিয়ে অধিকার আন্দোলনের ডাক দেই । পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন বলতে পৃথক রাষ্ট্র নই; এক প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা । যে শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে একমাত্র সম্ভব হবে পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা সমাধান ।
চুক্তির ১ যুগের পর পাহড়ে কি উন্নতি হয়েছে ? চুক্তিতে “উপজাতি” হিসেবে উল্লেখ ছিল । চুক্তিটি বাস্তবায়নের নিদির্ষ্ট কোন সময় বাঁধা ছিল না । চুক্তিতে, সমতল ভুমি থেকে আসা উদ্ভাস্তু বাঙালীদের সম্পর্কে কোন কথা বলা হয়নি । চুক্তিতে চাকমাদের একচেটিয়া অধিকার দেয়া হয় । চুক্তিতে, জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না । শেখ হাসিনা যেভাবে সংসদের অনুমোদন ছাড়া চুক্তি করেছে ঠিক সেভাবে সন্তু লারমা ও চোরের মতো কারোকে না জানিয়ে চুক্তি করেছে । সেজন্য গত দুই বছর আগে চুক্তিকে অবৈধ হিসেবে উচ্চ আদালত রুল জারি করে । দীপায়ন বাবুর মতে, বুঝা যাচ্ছে চুক্তিকে সমালোচনা করা যাবে না (যদিও নিজে শুধু সমালোচনা করে ক্ষান্ত হননি) । আজ সেই দীপায়ন বাবু, আজ যেন উলু বনে মুক্তা ছিটাচ্ছেন ! আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভন্ধামি নিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে । দীপায়ন বাবু সেই বাইরে যাননি ।
তিনি ইউপিডিএফের গণ মানব বন্ধনকে অন্যদিকে মোড় গড়াতে মাঠে নেমেছেন । ফেসবুকে CHT BD-গ্রুপে চোখ রাখলে আপনারা বুঝতে পারবেন এবং কি, তার মূল্যবান অকথ্য মন্তব্যগুলো আপনাদের ভালো ও লাগতে পারে । আরেকটা ব্যাপার হল, ইউপিডিএফ যেদিন গণমানব বন্ধন করেন সেদিন দীপায়ন খীসার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোর্কি চাকমা‘র বোরখা পার্টিরা দুই নীরিহ পাহাড়ীকে গুলিবিদ্ধ করেছিল; মানব বন্ধনে না যেতে তাদেরকে শুধু হুমকি নয় মেরে ফেলতে চেয়েছিল সেই সেনা সমর্থিত বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীরা । নিজের বন্ধুর অপকর্মকে ডেকে রাখতে দীপায়ন বাবু এখন মাঠে নেমেছেন ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত: বিভিন্ন স্থানে বাধা, লক্ষ্মীছড়িতে বোরখাদের গুলিতে ৩ জন আহতঃ http://chtnewsbangla.blogspot.com/2011/07/blog-post_12.html
সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ছাত্র ধর্মঘট পালিতঃ
http://chtnewsbangla.blogspot.com/2011/07/blog-post_14.html#more
বরং দীপায়ন বাবু, নিজেই একই অঙ্গে বহুরুপ ধারণ করেছেন ।
প্রিয় সমরেশ বাবু
আপনার মত ইউপিডিএফ প্রেমিক আসলে দলটিকে সমৃদ্ধ করছে। আপনার দলটি নিজেরাই চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। আর আপনি আবার চুক্তির গালমন্দ করছেন। এই না হলে, কিভাবে ইউপিডিএফ প্রেমিক হবেন। আপনাদের নিয়ে কি যে করি—
@সমরেশ চাকমা,
ময়ুর-কাক, আদর্শহীন, ধর্মীয় মৌলবাদ, ভন্ড, অপরাধী — ইত্যাদি নানান কিসিমের ব্যক্তিগত আক্রমণের বর্শাবানের বাইরে এই পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ইউপিডিএফ-এর দেড় দশক আগের কথিত পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন-ত্বত্ত্বের একটি বাস্পাচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
অনুগ্রহকরে সমরেশ চাকমা কী জানাবেন, এই এক প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার পূর্ণস্বায়ত্বশাসন -এর কথা ইউপিডিএফ কোথায়, কবে, কতটুটু বলেছে? নাকি এসবই তার একান্ত মস্তিস্কপ্রসূত? 😛
* টাইপো: কতটুটু > কতটুকু।
প্রিয়
বিপ্লব রহমান,
আপনাকে ধন্যবাদ। সত্য ভাষণ সবাই সহ্য করতে পারেনা। এটা সমরেশ বাবু আরেকবার প্রমাণ করলেন।
(F)
পাহাড়িদের সম্পর্কে আমার নিজের জানাও খুব অল্প।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ পাহাড়িদের সমস্যা নিয়ে কোন খুঁজ খবর রাখেনা। রাষ্ট্র যে ভাবে প্রচার চালায় তাতে করে পাহাড়িদের শত্রু হিসেবেই দেখা হয়। তাই আমার মতে পাহাড়িদের অন্তঃকোন্দল সেই সব সুযোগ সন্ধানিদের ফায়দা লুটার সুযোগ এনে দেবে।
ব্যাপারটা এমন: এখনো পাহাড়ে কোন সংঘাত ঘটলে অন্য সকল ব্লগে পাহাড়িদের নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। সেই সমালোচনা কারীরা নিরপেক্ষ ভাবে সমস্যাটাকে দেখেনা। বেশির ভাগই দেখে পাহাড়িদের শত্রু হিসেবে।
তাই আমি চাইবো ব্যক্তিগত, ব্যপার গুলো বাদে আদর্শের ব্যপার গুলো নিয়েই ব্লগে আলাপ করা যেতে পারে।
(Y)
প্রিয় দীপায়নবাবু
লেখার জন্যে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরো সাধুবাদ জানাই এজন্যে যে, অন্তত আপনি জেএসএস-এর পক্ষ থেকে অস্ত্র বাদ দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে ইউপিডিএফ-এর লড়াই করতে এসেছেন। এই বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই অব্যাহত থাকুক সেটা কামনা করবো।
অনেক মন্তব্য করার ছিলো। হাতে সময় নেই বলে তা করতে পারছি না। তারপরেও দু’একটা কথা বলতে হয়। আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা ইউপিডিএফ-এর বিরুদ্ধে হলেও নিজের অতীত কৃত কর্মের স্বীকারোক্তিও বটে। আপনি লিখেছেন,
দেখেন, আপনিও তখন ইউপিডিএফ-এর die-hard নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও নেতা ছিলেন। নিজেই স্বীকার করে নিলেন, শান্তিবাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে গোপন মিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদি সেই সময়ে আপনার বা ইউপিডিএফ-এর কথায় প্ররোচিত হয়ে শান্তিবাহিনীর কোন গ্রুপ সন্তু লারমার নেতৃত্ব অস্বীকার করতো এবং অস্ত্র জমাদানে বিরত থাকতো তাহলে তার পরিণতি কী হতে পারতো? কেবল ইউপিডিএফ চুক্তিতে অগ্নি সংযোগ করেনি, কেবল ইউপিডিএফ সন্তু লারমাকে বেঈমান
ঘোষণা করেনি। আপনিও সে অপকর্ম করেছিলেন। আপনার অতীতের এ অপকর্মের জন্যে আপনার দু:খ প্রকাশ করা উচিত । জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
আরো লিখেছেন,
ভালো করে দেখুন, ভালো সাজতে গিয়ে কী লিখেছেন। ইউপিডিএফ-এর ছেলেখেলা – সেই খেলার উদ্বোধকদের মধ্যে আপনিও একজন। ১১ বছর আগে অর্থাৎ ছেলেখেলা উদ্বোধনের আগে অন্তত আপনি যদি চরমপন্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, তাহলে এত বড় ক্ষয়-ক্ষতি হতো না। আপনি নিজেই স্বীকার করলেন সেই সময়ে ইউপিডিএফ যে অপরাধ করেছিলেন সেটা অমার্জনাযোগ্য। সেই অমার্জনাযোগ্য অপরাধে আপনিও অপরাধী। এখন আপনিই বলেন, জেএসএস-এ যোগদান করেছেন বলে আপনার সেই অপরাধের কী মার্জনা হয়ে গেছে? কে মার্জনা করবে আপনার সেই অপরাধের?
সেই সময়ের অমার্জনাযোগ্য অপরাধের কুপ্রভাব এখনো শেষ হয়ে যায়নি। যে অপরাধের ভাগীদার আপনিও ছিলেন, সেই অপরাধের জন্যে আপনি কী জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন না?
জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আপনার অতীত কর্মের জন্যে প্রায়শ্চিত্ত করুন – এই আহবান আপনার কাছে রইল।
অডংবাবু
আমি আগেই বলেছি মুক্তমনাতে আমি নাম পরিচয়হীন লোকের সাথে রাজনৈতিক আলোচনা করতে রাজী নই। আরো বলেছিলাম অডংবাবু পেছন থেকে ল্যাং মারার বিদ্যাটা আরো বেশী কাজে লাগাতে পারবেন।
@দীপায়ন খীসা,
দীপায়ন বাবু
নামটি আসল কি ছদ্ম সেটা কিন্তু বড় বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে প্রশ্নের যৌক্তিকতা। প্রশ্নটি যদি যৌক্তিক হয়, তবে তার জবাব দেওয়া উচিত। আমার কাছে প্রশ্নটি বেশ যৌক্তিক মনে হয়েছে। আপনি নিজে যেহেতু ইউপিডিএফ এর সাথে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন তাই ইউপিডিএফ এর যে কোন সমালোচনায় আপনি নিজেও ভাগীদার। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? আশা করি যৌক্তিক জবাব দিবেন। মুক্তমনায় লেখার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের পাশাপাশি আমরাও চাই যে পাহাড়ের সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক। আপনার মুক্তমনায় লেখালেখি করছেন বলে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারছি। সেই সাথে আশা করি সবাই ব্যক্তিগত আক্রমন এড়িয়ে সুস্থ আলোচনা করবেন।
@স্বাধীন,
মাফ করবেন। যদিও কথাটি দীপায়ন খীসাকে বলা, তবু একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে এর সঙ্গে প্র চ ণ্ড দ্বি ম ত পোষণ করছি।
কে বলছেন এবং কি বলছেন — দুইই কখনো কখনো সমান গুরুত্ব বহন করে, বিশেষ করে জটিল পার্বত্য রাজনীতিতে তো বটেই।
যারা নিজ নাম পরিচয়ে লেখেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে যৌক্তিক কারণেই তাদের অনেক দ্বায়িত্বশীল হতে হয়। অন্যদিকে, যারা ছদ্মনামে লেখেন, তাদের ছদ্মনামটির আড়ালে অনেক কিছুই লাগামহীনভাবে লেখা সম্ভব, এর দায়-দায়িত্ব ছদ্মনামটির, এর নেপথ্যের প্রকৃত জনটির নন; — এ কথার মানে আবার এই নয় যে, ছদ্মনামের লেখক মাত্রই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন। সবমিলিয়ে প্রকৃত নাম ও ছদ্মনাম– এই দুই নামের লেখকের সুবিধাগত ও অবস্থানগত পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন হতে বাধ্য।
আর দীপায়ন খীসার বক্তব্যে–
সম্ভবত লেখকের ব্যক্তিগত অভিরুচি বা স্বাচ্ছন্দর প্রশ্ন জড়িতও থাকতে পারে। এটিও একই মাত্রার গুরুত্ব বহন করে। 🙂
এ ক ম ত। যে কোনো মাত্রায় ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা, আক্রমণ, বা ব্যক্তিচর্চা একদম উচিত নয়।
অথচ দেখুন, পার্বত্য সমস্যা প্রসঙ্গে ইদানিং সদ্য সদস্যপ্রাপ্ত মাত্রই কেউ কেউ ব্যক্তি আক্রমণ করে চলেছেন [নমুনা], পার্বত্য সমস্যা নিয়ে লিখতে গিয়ে সীমাহীন বিভ্রান্তি ও ব্যক্তি কুৎসায় মত্ত হয়েছেন [নমুনা], আবার এইসব উস্কানীমূলক ইটকেলের জবাব দিতে গিয়ে পাটকেল লেখায় হুটহাট করে নতুন পাঠকরাও বেমাক্কা ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা বা আক্রমণ বা দুই করে চলেছেন [নমুনা]। ব্যক্তি বিদ্বেষ, তীযর্ক মন্তব্য-প্রতি মন্তব্যও আছে [নমুনা]।
(W)
ওপরে কোনো যুক্তিপ্রমাণ ছাড়াই জনৈক দেবাংশুর হাস্যকর হাওয়াই মন্তব্যটি [নং-২] লক্ষ্যনীয়; অথচ যে কেউ পাহাড়ে দীপায়ন খীসা সর্ম্পকে খোঁজ নিলে সহজেই তার চারিত্রিক দৃঢ় অবস্থানের কথা জানতে পারবেন, তার রাজনৈতিক সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু চারিত্রিক সমালোচনা অবান্তরও বটে। 😛
মুক্তমনার মতো একটি সিরিয়াস ব্লগে এই অসুস্থ্য চর্চার অবসান হোক। এমন কি, এতে আমার দায়ভার থাকলে, সে দায়ও আমি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি, কিন্তু এই সব ব্যক্তি চর্চা, ব্যক্তি কুৎসা রটনা, ব্যক্তিগত আক্রমণ কোনো মতেই কাম্য নয়।
অনেক ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
আপনার সাথে দ্বিমত খুব বেশি নেই তাই সেই প্রসঙ্গে আর গেলাম না। ভিন্ন একটি প্রশ্ন করছি, অডঙ চাকমা নামটিকে কেনই বা ছদ্ম নাম হিসবে ধরছেন? এটি উনার আসল নামও তো হতে পারে। এটি কি এ জন্যে যে উনাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন না তাই? আমি নিজেও তো ব্যক্তিগত ভাবে বিপ্লব রহমানকে, কিংবা অভিজিৎকে কিংবা মুক্তমনার অনেককেই চিনি না। আপনাদের নামটাই যে ছদ্ম নাম নয় সেটাই বা কিভাবে নিশ্চিত হই। যেমন আদিল মাহমুদ ভাই। আমার কাছে ছদ্ম নাম/ আসল নামের চেয়েও বড় পরিচয় এক জনের লেখা এবং কমেন্ট। কারো লেখা আর কমেন্টই বলে সেই ব্যক্তির মানসিকতা কেমন। এ কারণেই আপনার প্রচন্ড দ্বিমত থাকলেও আবারো বলি যে নামটি আসল কি ছদ্ম সেটা বড় বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে প্রশ্নের যৌক্তিকতা।। কেউ ছদ্ম নামে ব্যক্তিগত আক্রমন করেলেও যেমন সেটা মেনে নিতে পারি না আবার সেটা আসল নামে করলেও হালাল হয়ে যায় না। যদি অডঙ বাবু ছদ্ম নামের সুবিধে নিয়ে ব্যক্তি আক্রমন করেন তাহলে অবশ্যই আমার আপত্তি থাকবে।
@স্বাধীন,
সেটি আপনার ব্যক্তিগত অভিরুচি; এর বিরুদ্ধ মতটিও ব্যক্তিগত রুচির পরিচায়ক।
ছদ্মনাম/ আসল নামের মধ্যে সুবিধা-অসুবিধার বৈপরিত্যের অবস্থান প্রভৃতি ওপরের মন্তব্যে ব্যাখা করেছি। কাজেই সেটির পুনরাবৃত্তি নিস্প্রয়োজন।
পুনর্বার এ ক ম ত। (Y)
প্রিয়
স্বাধীন সাহেব
পাহাড়ের রাজনীতি বিষয়টি বেশ জটিল। অনেক পক্ষ এটা নিয়ে খেলছে।আপনি খেয়াল করবেন অডংবাবু বেশ কিছু বিষয়ে উস্কানী দিতে চান। ইউপিডিএফ নিয়ে বলতে হয় পাহাড়ের জন জীবনকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যে টুকু আমার দায় রয়েছে সে টুকু আমি অপরাধী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমার অংশগ্রহণ যদি নাও থাকতো তারপরও দলটি সৃষ্টি হতো। কিন্তু অডংবাবু তখন কি নিরোর বাঁশী বাজাচ্ছিলেন? অডংবাবুর নামটা যদি স্বনাম হতো কিংবা তার দাবি অনুসারে ডাক নাম হতো তা হলেও তার পরিচয় খুঁজে পেতাম। অডংবাবুকে পাঠ করা বা জবাব দেয়াটা আসলে বেশ ঝুঁকিময়। কারণ তিনি নিজে কিছু একটা বলতে চান, আবার এড়িয়েও যান।পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে অনেক পক্ষ খেলার মাঠে আছে। এটা মাথায় রেখে আমি সচেতনভাবে অডংবাবুকে পাঠ করছি।
অনেক ধন্যবাদ। চলুক। Dipayanda, Truth is very bitter. Salute!
Swrobindu,
ধন্যবাদ সাথে থাকুন।
আমরা জেগে আছি, জেগে থাকবো।
পাহাড়ী দুই আঞ্ছলিক দলের রাজনৈতিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য এবং দল দু’টির স্বার্থের মধ্যে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা ঊচিত । ব্যক্তি কুৎসা প্রচার কারও কাম্য হওয়া উচিত নয় । তাই সকলের কাছে অনুরোধ লিখিত বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করুন । লেখকের ব্যক্তিগত কুৎসা প্রচার থেকে বিরত থাকুন ।
খুব সাহসের সঙ্গে আত্ন-সমালোচনাসহ ইউপিডিএফ-এর নেপথ্য গুঢ়কথা প্রকাশ করার জন্য দীপায়ন খীসাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
প্রায় দেড় দশক ধরে ইউপিডিএফ-কথিত ও বহু ব্যবহার দুষ্ট পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশন টি কি বস্তু, কেউ কী জানেন? :-s
@বিপ্লব রহমান,
আরো অনেক কথা জমা আছে।
@দীপায়ন খীসা,
চলুক। (Y)
ইউপিডিএফ-এ থাকাকালীন দীপায়ন খীসার নৈতিক স্খলন ঘটে। এসময় তিনি নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। যার কারণে ইউপিডিএফ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
@দেবাংশু,
:hahahee: :hahahee: :hahahee:
@দেবাংশ
দেবাংশুবাবুর দেখি অনেক জ্ঞান॥ আপনি এত তথ্য নিয়ে কিভাবে ঘূমান। আরো কিছু প্রকাশ করলে ক্ষতি কি? আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন—-
@দীপায়ন খীসা
লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে আঞ্ছলিক পাহাড়ী দল দু’টির মধ্যে বাম আদর্শিক উপাদান যেমন বিদ্যমান, তেমনি বিএনপি ও আওয়ামি লীগের মত রেষারেষি এবং গোষ্ঠি ও ব্যক্তি স্বার্থও বিদ্যমান । নেতাদের আদর্শিক দ্বন্দ্বকে কোন কোন পাহাড়ী ইগো হিসাবে দেখছেন । তারা ইগোর আবসান চান, কিন্তু বিড়ালের গলায় কে ঘন্টা বাধবেন তা বলতে পাড়ছেন না ।
তবে বাম প্রগতিশীল রাজনীতিতে ইগোর কোন স্থান নেই । সেখানে আছে আদর্শিক দ্বন্দ্ব ও বাস্তব ভিত্তিক শ্রেনী স্বার্থের ব্যাখ্যা । তাই আঞ্ছলিক দল দু’টির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও গোষ্ঠি এবং ব্যক্তি স্বার্থের অবসান রাজনৈতিক ভাবেই হতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনি পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে কতটুকু জেনে বা কতটুকু না জেনে পাণ্ডিত্য ফলাচ্ছেন, হে, জনাবা। তবে আধাআধি জেনে নিজেকে বেশী জানান দেয়াটা বুদ্ধিমতীর লক্ষণ নয়। খারাপ বলেছি কি জনাবা—
@দীপায়ন খীসা,
ব্যক্তি কুৎসা মূলক মন্তব্যগুলো কিন্তু বৈপলবিক রাজনৈতিক কর্মী দাবীদারের মূখে সাজে না ।যুক্তিতে ব্যর্থ লোকেরাই ব্যক্তি কুৎসায় জড়িত হয় । তাই ব্যক্তি কুৎসা প্রচারে বিরত থেকে সমস্যাটির সমাধানে আপনার চিন্তা-ভাবনা জানালে, আমরা আপনার সাথে আলোচনায় অংশ নিতে পারি ।