[ রচনাটি পাহাড়ের ছোটকাগজ মাওরুম সংখ্যা ১৫,বর্ষ ৬, মে ২০০৯-এ প্রকাশিত হয়। বিষয়ের প্রাসঙ্গিতা বিচার করে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য রচনাটি পাঠানো হল। বিশেষ করে ইউপিডিএফ দলটিকে বুঝার জন্য রচনাটি পাঠককে সাহায্য করবে। সেই সাথে দলটির সাথে আমার বিচ্ছেদের কিছুটা কারণও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। আশা করছি শীগ্রই মুক্তমনা পাঠকদের জন্য পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে নতুন কিছু লিখতে পারবো। ]

সম্প্রতি পার্বত্য রাজনীতিতে একটা বিষয় খুব সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বেশ নড়ে-চড়েও বসেছেন। বিষয়টি খুব মজাদার বিধায় অনেক অনেক আলোচনার খোড়াকও যোগাচ্ছে। অনেকে আশাবাদী হয়েছেন, আবার অনেকে অতি উৎসাহে নানান স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন। ২০০৯’এর ২৬ জানুয়ারী পার্বত্য এলাকার চুক্তি বিরোধী বলে পরিচিত ইউপিডিএফ তাদের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উত্তর আলোচনা সভা থেকে নাটকীয়ভাবে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে  তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করে। রাঙামাটির পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে দলটির নেতৃবৃন্দ জনসংহতি সমিতির সাথে এক টেবিলে বসার বিষয়েও তাদের সম্মতির কথা জানিয়ে দেন। ইউপিডিএফ-এর এহেন আওয়াজে অনেকে আশার অলো দেখতে পেয়েছেন। কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছেন এবার বুঝি পাহাড়ে কিছু একটা হতে চলেছে।

দলটির এই শান্তিবাদী ঘোষণায় আপাত মনে হতে পারে ইউপিডিএফ বুঝি নতুন কিছু করতে যাচ্ছে। বাহ্যিকভাবে নতুন হলেও ইউপিডিএফ এর আগেও বেশ কয়েকবার ঘটা করে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। ২০০১ সালে দলটির প্রধান প্রসিত খীসা ৮ম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রাক্কালে জনসংহতি সমিতির সাথে আলাপ আলোচনার প্রচেষ্ঠা নেন। ২০০১’এর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রসিত খীসা জনসংহতির সমিতির কাছে অ-আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের প্রস্তাব পাঠাতে থাকেন। তৎকালীন শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ ( বর্তমানে প্রয়াত) উপেন্দ্রলাল চাকমার বাসভবনে খাগড়াছড়ি জেলার মাজন পাড়ায় জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য বৈঠকে কোন সমঝোতা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু ইউপিডিএফ বেশ কিছু নাটকীয় প্রস্তাব দেয়। দলটি হঠাৎ করে চুক্তির মধ্যে ভালো জিনিষ আবিষ্কার করে। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রসিত খীসা নির্বাচিত হলে সংসদে চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী দলটি আবারও চুক্তি বাতিলের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠে। তারও আগে ১৯৯৮-এ জনসংহতি সমিতি ও সরকারের মধ্যে আঞ্চলিক পরিষদের  দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে কিছুটা ভিন্নমতের সৃষ্টি হলে শরণার্থী কল্যান সমিতির সভাপতি উপেন্দ্রলাল চাকমা আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সরকারের সাথে গোপন দেন-দরবার চালান। এই গোপন দেন-দরবারে ইউপিডিএফ ও উপেন্দ্রলাল জনসংহতি সমিতিকে মোকাবিলা করার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য  প্র“তিশ্র“তিবদ্ধ হন ( সেই সময় দলটির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে উপেনবাবুর সাথে বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল, বৈঠকসমূহে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান ইউপিডিএফ সাধারণ সম্পাদক রবিশংকর চাকমা)। এইছাড়াও ১৯৯৭সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পর জনসংহতি সমিতি অস্ত্র সংবরণের প্রস্তুতির সময় শান্তিবাহিনী সদস্যদের অস্ত্র ত্যাগ না করার জন্য গোপন মিশন পরিচালনা করে।  সেই রকম বেশ কিছু গোপন মিশন পরিচালনার দায়িত্ব আমার উপরও বর্তিয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই ইউপিডিএফ চুক্তিকে আপোষ চুক্তি আখ্যা দিয়ে চুক্তির কপিতে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবাদ জানায়। তারা চুক্তি বাতিলের দাবী জানায়। দলটি জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা করে।

জনসংহতি সমিতির সদস্যরা যখন অস্ত্র জমাদানের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাম্পে আসতে শুরু করে তখন ইউপিডিএফ তাদেরকে নানান কায়দায় লাঞ্ছনা ও উত্যক্ত করার প্রচেষ্টা চালায়। বিভিন্ন জায়গায় জনসংহতি সমিতির জন্য শ্মশান ও চিতা তৈরী করে রাখা হয়। জনসংহতি সমিতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পোষ্টার ও প্রচারপত্র বিলি করা হয়। ১৯৯৯সালে ইউপিডিএফ অতীতমুখী রাজনীতি পরিহারের ঘোষণা দিয়ে জুম্ম জনগণের প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার শহীদ দিবস ১০ নভেম্বর পালন না করার জন্য নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ প্রদান করে। ২০০১ সালে দলটি ৩ বিদেশীকে অপহরণ করে মোটা মুক্তিপণ আদায় করে। চারদলীয় সরকারের আমলে সম-অধিকার নামক সংগঠনটির গড ফাদার ওয়াদুদ ভূঁইঞার সাথে ইউপিডিএফ-এর সখ্যতা ও মিতালী ছিল ওপেন সিক্রেট। ২০০২ সালে চলটি রচনার লেখকসহ দলটির কিছু নেতা-কর্মী ভিন্নমত পোষণ করে দলত্যাগ করে। তার পরই ইউপিডিএফ ভিন্নমতালম্বীদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে  (দৈনিক   যুগান্তর, রবিাবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ ‘বিদ্রোহী গ্র“পকে নির্মূল করতে ইউপিডিএফের হিটলিস্ট’)। ভিন্ন মতালম্বীরা মাওরুম নামের একটি কাগজ বের করলে  ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম থেকে পত্রিকাটি ছিনতাই করে। মাওরুম পত্রিকার সাথে জড়িত থাকা ও লেখার অপরাধে তারা নিকোলাস ও জ্যোতিলাল চাকমাকে অপহরণের প্রচেষ্টা চালায়। চলতি রচনার লেখককে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০০৫সালে তাদের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটি জনসংহতি সমিতি সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে এবং ্এপ্রিলের মধ্যে তাদের কাছে আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দেয়। আবার ২০০৮-এর বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের জন্য আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। অতঃপর জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময় হঠাৎ একটি বিশেষ সংস্থার বলবর্ধক বটিকা সেবন করে দলটি তেজী হয়ে উঠে। জনসংহতি সমিতির কথিত সংস্কারপন্থীদের সাথে নতুন আঁতাত গড়ে তুলে সন্তু লারমার বিরুদ্ধে জানপ্রাণ উজাড় করা সংগ্রামে নিজেদেরকে মনোনিবেশ করায়।

তারপর আবার দলটি ভোল পাল্টায় ২০০৯-এর জানুয়ারীতে। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে ইউপিডিএফ একেবারে সবাইকে তাক লাগিয়ে বাজিমাৎ করে ফেলে। একই সাথে তারা জনসংহতির সাথে আলোচনার জন্য দুয়ার খোলা বলেও জানান দিয়ে যায়। তবে দলটির কাছে কিছু বিনীত প্রশ্ন থেকে যায়। তা হচ্ছে যদি চুক্তি বাস্তবায়নে ইউপিডিএফ সহায়তা দিতে চায় তাহলে ১৯৯৭ সালে তাদের সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিলনা? এই প্রশ্নের কোন উত্তর কি দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করবে। আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, দীর্ঘ ১১ বছর চুক্তি বাতিলের দাবী জানিয়ে ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণের জাতীয় জীবনে যে অনৈক্যের বীজ বপণ করেছে তারই বা  কি হবে? জাতীয় জীবন থেকে হারিয়ে যাওযা ১১টি বছর ইউপিডিএফ কিভাবে ফিরিয়ে দিবে? জনসংহতিকে ধ্বংস করার কথিত কর্মসূচী তারা পরিত্যাগ করেছে কিনা, দলটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপহরণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ভিন্ন মতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান  এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে ইউপিডিএফ কতটুকু সরে এসেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। সদ্য সমাপ্ত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে ইউপিডিএফ অংশগ্রহণ করে। দুটি নির্বাচনেই দলটির বিরুদ্ধে ভোটারদের জোর-জবরদস্তি করার অভিযোগ উঠে। তাদের সমর্থিত প্রার্থীদেরকে ভোট না দেয়ার অপরাধে অনেক জায়গায় ভোটাররা আর্থিক দণ্ড, এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হয। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইউপিডিএফ জোর করে তাদের বাক্সে ভোট প্রদানে বাধ্য করে। উপজেলা নির্বাচনে নানিয়াচর, বাঘাইছড়ি, লক্ষিছড়ি , মহালছড়ি ও পানছড়িতে তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যদের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া হয়। দিঘীনালা উপজেলার এক প্রার্থীকে ইউপিডিএফ জোর করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করলে, প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন দিঘীনালার নির্বাচন স্থগিত রাখে। সুতরাং দেখা যায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে এক চুল পরিমাণ সরে আসেনি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে ইউপিডিএফ-এর নাটকীয় ঘোষণার আড়ালে কিছু অংক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এর পিছনে গোপন কিছু থাকতে পারে। এবার তারা কোন মিশন নিয়ে নেমেছে, কার এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করছে সেটারও খোঁজ খবর রাখা দরকার। কারা এই কল-কাঠি নাড়াচ্ছে?

চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তুলে দলটি আসলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ করার পুরানো কর্মসূচীকে চালু রাখার একটা নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। হঠাৎ করে দলটির এই উল্টো যাত্রায় যারা বিভ্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে সতর্ক করার জন্য কিছু বিষয় নিয়ে বাহাস তোলা দরকার। সেগুলো হচ্ছে চুক্তির বিরোধীতা ও বাতিল করার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা অকালে প্রাণ হারিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছেন, অনেকে নিস্ব হয়েছেন, স্বজন হারানোর বেদনা, সন্তানহারা পিতা-মাতা কিংবা স্বামী হারা স্ত্রী, ভাই হারানো বোন, পিতৃহারা অবুঝ শিশু সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এই সব মানুষের দীর্ঘশ্বাস. আক্ষেপ, চোখের জল, বুক ভরা হাহাকারের দায়িত্বটা কার উপর বর্তাবে। কার অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য পার্বত্য জনপদে আত্মঘাতি সংঘাত, হানাহানি চালানো হয়েছে। ইউপিডিএফ নেতৃত্বকে সেই হিসেবটা দিতে হবে।  খেমাররুজদের মত বিপ্লবের মন্ত্র জপে রক্তের হোলি উৎসবে যারা মেতে উঠেছে তাদের বিচার কি হবেনা? যদি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা সহযোগিতাই করবে তবে সে সময় কেন চুক্তিতে অগ্নিসংযোগ করা হলো, কেন চুক্তি বতিলের দাবী জানানো হলো, কেন সন্তু লারমাকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা করা হলো? জনসংহতি সমিতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তিাদের চিতা বানিয়ে অগ্নিসংযোগ করা, সর্বোপরি জনসংহতিকে ধ্বংস করতে না পরলে পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসন আদায় করা যাবেনা এই অদ্ভূত তত্ত্বের প্রয়োগ করতে কে ইউপিডিএফকে পরিচালিত করলো-এই উত্তরগুলো অবশ্যই খুঁজে পেতে হবে। আজ শান্তিবাদী সেজে চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তুললেই অতীত ক্ষমা করবে তা মনে করলে সেটাও বড় ধরনের বোকামী। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রায়ই বলে থাকেন জাতীয় দায়িত্ব পালন করা ছেলে খেলা নয়। কিন্তু পাহাড়ের চিরদুঃখী মানুষদের নিয়ে কারা ছেলে খেলা খেলল? ১১বছর আগে ইউপিডিএফ যদি চুক্তি বাতিলের চরমপন্থা গ্রহণ না করত তা হলে জুম্ম জনতাকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এত ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হতে হতো না। জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংস করে, কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে, সশস্ত্র সংগ্রামের অভিনয় করে, আত্মঘাতী সংঘর্ষে জুম্ম জনগণকে ডুবিয়ে মেরে এখন আবার ভোল পাল্টে শান্তিবাদী সাজা এরই নাম কি রাজনীতি? এই অপরাধ অমার্জনাযোগ্য।

৯ম জাতীয় সংসদে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ইউপিডিএফ (স্বতন্ত্র) হাতি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে। মজার বিষয় হচ্ছে রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীও হাতি মার্কা বরাদ্দ পায়। তবে ইউপিডিএফ প্রচারণা চালায় তারা হচ্ছে বন্য  হাতি  আর জনসংহতি সমিতি হচ্ছে পোষা হাতি। তাদের যুক্তি ধরে বলতে হয় পোষা হাতি জনপদে থাকবে সেটা স্বাভাবিক। গোলটা বাঁধে যখন বন্য হাতি পাল ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তখন তাদের তাণ্ডবলীলায় জনপদের যে ভয়াবহ ক্ষতি হয় তার দায়ভার কে নেবে? আপনারা যেহেতু বন্য হাতি তাই বনেই থাকুন। কিন্তু প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিয়ে জনজীবন ধ্বংস করার এই মহান (!) কাজে আপনাদেরকে কারা তাড়িয়ে নিযে আসে? জুম্ম জনগণ পিছনের সেই অশুভ শক্তির উৎস খুঁজে বের করতে চায়। কাজেই যদি শান্তিবাদী সাজতেই চান তা হলে বহুরূপীতা পরিহার করুন। রূপের ঝলক দেখিয়ে বিভ্রান্ত করবেন না। কারা আপনাদেরকে বহুরূপী সাজিয়ে রেখেছে? কি তাদের পরিচয়? সশস্ত্র সংগ্রামের অভিনয় করে যারা জীবন সংহার করছে,পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসনের ধুয়ো তুলে চুক্তি বাতিলের দাবী জানিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, সেই ষড়যন্ত্রের মূলহোতাদের ক্ষমা মিলবে কেমনে? আসুন তাদের মুখোশ উন্মোচন করি। গাধাকে সিংহের চামড়া পরিয়ে কিছুদিন হয়ত বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা যায়। কিন্তু ঢাক-ঢোল বাজালে গাধা ঠিকই ডাক দিয়ে নিজের পরিচয জানান দিয়ে যায়। এতদিন ইউপিডিএফ বিপ্লবের তোরজোড়, পূর্ণ-স্বায়ত্বশাসনের বাগাড়াম্বর করলেও নিরেট সত্যটা উন্মোচিত হয়ে গেল। আসলে তারা হচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর তল্পিবাহক। তাদের নির্দেশেই দলটি চুক্তি বাতিলের দাবী জানায়, তাদের অঙ্গুলি হেলনে চুক্তি বাস্তবায়নের আওয়াজ তোলে। আমরা শুধু দেখতে চাই প্রভূদের মনোরঞ্জনে দলটি আর কি কি বিষয় নিয়ে রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়। তারপরও তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ তারা যে সিংহরূপী গাধা সেজে জুম্ম জনগণকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছিল চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে সেই খোলসটা আর ধরে রাখতে পারলো না। আরেকটি বিষয় যদি ইউপিডিএফ খোলাসা করে তাহলে আমরা কিছুটা বিভ্রান্তির হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। সেটা হচ্ছে আর কি কি ভোল তারা পাল্টাবে, রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে তারা কোন নাটক কখন মঞ্চস্থ করবেন তার যদি একটা নির্দিষ্ট বর্ষপঞ্জিকা দলটি ঘোষণা করতো, তাহলে হয়রানির কবল তেকে পাহাড়ের নিপীড়িত মানুষেরা একটু রেহাই  পেত।