সখি, ভালবাসা কারে কয়?
১
মুক্তমনায় আমরা প্রতি বছর ডারউইন দিবস পালন করি। সেই বিশেষ দিনটিতে চার্লস ডারউইন এবং তার যুগান্তকারী বিবর্তন তত্ত্বকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার চেষ্টা করা হয়। এরকম ঘটা করে স্মরণ করার নিঃসন্দেহে একটা বড় কারণ আছে। আসলে পৃথিবীতে খুব কম বৈজ্ঞানিক ধারণাই কিন্তু জনসাধারণের মানসপটে স্থায়ীভাবে বিপ্লব ঘটাতে পেরেছে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব এমনি বিপ্লবী তত্ত্ব, তেমনি জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ডারউইন আর রাসেল ওয়ালেস প্রস্তাবিত বিবর্তনতত্ত্ব। দার্শনিক ডেনিয়েল ডেনেট তার একটি বইয়ে বলেছিলেন[1],
‘আমাকে যদি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধারণাটির জন্য কাউকে পুরষ্কৃত করতে বলা হয়, আমি নিউটন, আইনস্টাইনদের কথা মনে রেখেও নির্দ্বিধায় ডারউইনকেই বেছে নেব।’
কাজেই এমন যুগান্তকারী একটি তত্ত্ব, তার সঠিক উদযাপন না হলে কি চলে! বলা বাহুল্য, মুক্তমনাই প্রথম বারের মতো ডারউইন দিবসকে বাঙ্গালী পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার দায়িত্বটুকু কাঁধে তুলে নিয়েছিলো ২০০৬ সালে। আন্তর্জালের বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা সে বছর ডারউইন দিবস পালন করে প্রথমবারের মতো। এর পর থেকে প্রতি বছরই পালন করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আকারে পালন করেছিলাম আমরা ২০০৯ সালে। কারণ ঐ বছরটাই ছিলো ডারউইনের জন্মের দ্বিশতবার্ষিকী আর সেই সাথে তার জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ‘প্রজাতির উদ্ভব’ বা ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’-এর প্রকাশেরও দেড়শত বছর। এখন তো বাংলাদেশে বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ, যুক্তিবাদী কাউন্সিল সহ বহু সংগঠনই ঘটা করে ডারউইন দিবস পালন করে, সারা দিন ব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠান কিংবা র্যালির আয়োজন করে। বলা নিষ্প্রয়োজন, আমাদের জন্য ডারউইন দিবস ডারউইনের দীর্ঘ শশ্রুমন্ডিত মুখচ্ছবির কোন স্তব ছিলো না, বরং তাঁর যুগান্তকারী আবিস্কারের যথাযথ স্বীকৃতি, তাঁর বৈজ্ঞানিক অবদানের প্রতি নির্মোহ আর বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ডারউইন দিবস পালন করা হয় প্রতি বছর ১২ই ফেব্রুয়ারী। বাংলাদেশের প্রায় কেউই এই বিশেষ দিনটির সাথে পরিচিত না হলেও এর দু দিন পরের ১৪ই ফেব্রুয়ারী তারিখটির সাথে প্রায় সবাই পরিচিত। সেই যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে – বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এই ভালবাসা দিবস কী, কিংবা কাহাকে বলে তা নিয়ে বোধ হয় বিশদ না বললেও চলবে। কারণ এ ব্যাপারটি কারোরই এখন অজানা কিছু নয়। কিন্তু যেটি অজানা তা হল, এই ভালবাসা দিবসের উদযাপিত ভালবাসার সাথে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা! আমার আজকের এই লেখাটি সেই ঘনিষ্ট প্রেমময় সম্পর্কেরই নিঃশঙ্ক উন্মোচন।
গত বছর ২০১০ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী আমাদের মুক্তমনা সদস্য অপার্থিব একটি চমৎকার প্রবন্ধ লেখেছিলেন ‘ভালবাসা ও বিবর্তন’ শিরোনামে[2]। দুই দিবসের তাৎপর্যকে বিনি সুতার মালায় তিনি গাঁথলেন এক অনুপম ছন্দে। তিনি তার প্রবন্ধ শুরুই করলেন এই বলে –
‘রসকষহীন ডারউইন দিবসের পর আসে রসে ভরপুর ভালবাসা দিবস প্রেমিকদের ডারউইন দিবসের কঠিন শীতল শিক্ষা থেকে রেহাই দিয়ে ভালবাসার মিষ্টি আমেজের ছোঁয়া নিয়ে। দুটো দিবসের প্রায় একই সময় পালন করাটা হয়ত এক যোগসূত্রহীন কাকতালীয় ব্যাপার। ডারউইনের জন্মদিন আর রোমান পাদ্রী সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদিবসের মধ্যে কি যোগসূত্রই বা থাকতে পারে। কিন্তু ডারউইনের তত্ত্ব তথা বিবর্তনের সঙ্গে সত্যই ভালবাসার এক গভীর যোগসূত্র আছে, যা মোটেই কাকতালীয় নয়। ডারউইনের “প্রজাতির উৎস (Origin of Species)’’ আর “মানুষের উৎপত্তি (The Descent of man)’’ বই দুটি প্রকাশিত হবার পর থেকে আজ অবধি ডারউইনের সেই মূল তত্ত্বকে ভিত্তি করে ও নূতন সাক্ষ্য প্রমাণ আর পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান এর দ্বারা সেই তত্ত্বকে পরিশীলিত ও সংশোধিত করে মানব প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টায় জীববিজ্ঞানীরা অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। ‘প্রেম কি?’, ‘মানব নৈতিকতার উৎস কি?’ এ ধরণের সনাতন প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে আসছে সামাজিক-জীববিজ্ঞানী আর বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার বদৌলতে, বিশেষ করে বিংশ শতকের শেষ দুই দশকে প্রখ্যাত গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে। তাঁদের গবেষণা মানব অনূভুতির সকল দিকেরই কারণ হিসেবে আমাদের বৈবর্তনিক ইতিহাসের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। অন্য সব অনূভুতির মত প্রেমানূভুতির মূলও বিবর্তনে নিহিত’।
অপার্থিব ভুল কিছু বলেননি। বিবর্তনের কল্যাণে প্রেম ভালোবাসার অন্তিম রহস্যগুলোর অনেক কিছুই এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। তবে কিছু কথা আছে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা প্রেম শব্দটিকে কেবল আধো আধো প্লেটোনিক কিংবা স্বর্গীয় পরিমণ্ডলে আবদ্ধ না থেকে এটাকে অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেন। ফস্টি নস্টি কিংবা টক ঝাল মিস্টি ভালবাসার অনুভুতির বাইরে আছে পারষ্পরিক মনোদৈহিক আকর্ষণ। পাশাপাশি থাকে রাগ, অভিমান, ঈর্ষা । এর সাথে থাকে সঙ্গী নির্বাচনের কৌশল, আনন্দ, ভয়, ঘৃণা, বিচ্ছেদ এমনকি যৌনমিলনের উদগ্র আকাংক্ষাও।
শুরু করা যাক সেই চিরপুরাতন অথচ সদা নতুন প্রশ্নটি দিয়ে। প্রেম কি? শেক্সপিয়র তার একটি নাটিকায় তার সৃষ্ট চরিত্রের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়েছিলেন, “what ’tis to love?”[3]। আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তার একটি বিখ্যাত গানে একই ধরণের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন –
সখি, ভাবনা কাহারে বলে।
সখি, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী – ‘ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা’
সখি, ভালোবাসা কারে কয়!
সেকি কেবলি যাতনাময়।
সেকি কেবলই চোখের জল?
সেকি কেবলই দুখের শ্বাস? …
গানটি শোনা যাক শ্রাবনী সেনের কণ্ঠে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=emvIYPWbqDk
ভালবাসা নিয়ে ইংরেজীতেও অনেক ধরনের গান আছে। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় গানটি হচ্ছে – I’ll Never Fall in Love Again। গানের কথাগুলো এরকমের –
What do you get when you fall in love?
A guy with a pin to burst your bubble
That’s what you get for all your trouble
I’ll never fall in love again
I’ll never fall in love again
What do you get when you kiss a girl
You get enough germs to catch pneumonia
After you do, she’ll never phone you
I’ll never fall in love again
I’ll never fall in love again
এই মজাদার গানটি আমরা শুনবো Gail Blanco’র কন্ঠে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=vUHx6UE_U1w
কিন্তু কবিগুরু যখন ‘সখি ভালবাসা কাহারে বলে?’ বলে গানে গানে প্রশ্ন করেছিলেন কিংবা শেক্সপিয়র তার নাটকে সংলাপ দিয়েছিলেন, “what ’tis to love?” বলে, তখন কি তারা একবারের জন্যও ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর এই প্রশ্নের কি উত্তর অপেক্ষা করছে তাঁদের মৃত্যুর অনেক বছর পরে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে? বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সহ বিবর্তনের বিভিন্ন শাখা থেকে পাওয়া প্রান্তিক জ্ঞানের বদৌলতে প্রেমের এক সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কিন্তু দেয়া সম্ভব।
কিছুদিন আগেও আমরা ঢালাও ভাবে আমরা বলে দিতাম ভালবাসার কোন সংজ্ঞা নেই, বিজ্ঞান ভালবাসার কোন ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম ইত্যাদি। সেই দিন আর নেই। বিজ্ঞান এখন চোরের মত সিঁদ কেটে ঢুকে পড়েছে ভালবাসার গোপন কুঠুরিতে। চলুন আমরাও সে কুঠুরিতে পা রাখি…
২
কুদ্দুছ ‘লবে’ পড়িয়াছে। তাহার মন উড়ু উড়ু। পড়ালেখায় মন নেই। বই খুললেই কেবল সিমির মুখ ভেসে উঠে। আনমনে গাইতে থাকে আগুনের গান –
ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে মন বসে না
বই খুললেই দেখি তার মুখখানা
অস্থির মন আর বাধা মানে না।
একা পথে চললেই পাশে চলে সে
নিবিড় হয়ে সে বলে সে মোরে
ভালবাসি ভালবাসি ..।
ক্যামন যেন ঘোরের মধ্যে থাকে কুদ্দুস সর্বক্ষণ। একটা পাখি দেখলে মনে হয় – ইস পাখির মত ডানা মেলে যদি সিমির সাথে উড়ে বেড়ানো যেতো। একটা গোলাপ ফুল দেখলেই মনে হয় – আহা যদি সিমির হাতে তুলে দেয়া যেত! রাস্তার পাশে চটপটির গাড়ি দেখলে মনে হয় – আহা সিমির সাথে মিলে ফুচকা খাওয়া যেত!
না সিমির সাথে ফুচকা খাওয়া আর কুদ্দুসের হয়ে উঠে না। কারণ সিমি রাস্তার আজে বাজে জিনিস খায় না। সিমি মহা বড়লোকের মেয়ে। বসুন্ধরার আলীশান ফ্ল্যাটে থাকে। পাজেরো জিপে করে ভার্সিটিতে আসে। ড্রাইভার সাহেব দরজা খুলে দেয়, আর সিমি আলতো পায়ে গাড়ি থেকে নেমে সটান হাটা দেয় ক্লাসের দিকে। স্টিফেনি মেয়র কিংবা লিসি হ্যারিসনের ইংরেজী উপন্যাসের বই বগলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ‘হাবি জাবি পোলাপাইনরে’ পাত্তাই দেয় না সিমি। মোটের উপর সিমি জানেই না তার জন্য কোন এক মজনু দিওয়ানা!
আর ওদিকে তো মজনু কুদ্দুসের অবস্থা আসলেই কেরোসিন। সারক্ষণই ঘোরের মধ্যে থাকে। মনে মনে আকাশ কুসুম কল্পনা। ভাবে কোনদিন হয়তো চলতে গিয়ে কিংবা সিড়ি ভেঙ্গে নামতে গিয়ে সিমি উষ্ঠা খেয়ে পড়বে, স্টেফানি মেয়ারের বইগুলো বগল থেকে ছিটকে পড়ে যাবে, আর ঠিক সেসময়ই বীর পুরুষের মতো রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটবে নায়করাজ কুদ্দুসের। পড়ে যাওয়া বইগুলো কুড়িয়ে নিয়ে সিমির হাতে তুলে দিবে, সিমি প্রথম বারের মতো অবাক নয়নে তাকাবে কুদ্দুসের দিকে, সে দৃষ্টিতে থাকবে আধো কৃতজ্ঞতা, আধো প্রেম, আর আধো রহস্যের ছোয়া…
নিশা লাগিলো রে,
বাঁকা দু’ নয়নে নিশা লাআগিলো রে … (8)
httpv://www.youtube.com/watch?v=z6AJy7qb3gE
কিন্তু সাতমন ঘিও পুড়ে না, আর সিমিও উষ্ঠা খায় না। আর কুদ্দুসের প্রেমের শিকেও ছিঁড়ে না। কিন্তু ছিঁড়ে না ছিঁড়ে না বলেও শেষ পর্যন্ত ছিঁড়লো একদিন। ক্যামনে? ক্যামনে আর, এমনে –
চোখ থাকলেই চোখাচোখি হবে।
হল!
এখানেই শেষ হতে পারতো –
না, প্রেম হয়ে গেল!
তা কুদ্দুস-সিমির প্রেম ক্যামনে হল, আর তারপর আর কী কী হল আমরা আর সেখানে এখন না যাই। আমরা বরং চিন্তা করি – কুদ্দুসের এই সদা ঘোর লাগা অবস্থার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? এ নিয়ে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার এবং স্নায়ুচিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ জন প্রেমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের উপর এক গবেষণা চালান[4]। তাদের গবেষণার ধরণটি ছিলো এরকমের। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সামনে তাদের ভালবাসার মানুষটির ছবি রাখা হল, এবং তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করা হলো। দেখা গেলো, এ সময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে, আর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটছে। অবশ্য কারো দেহে ডোপামিন বেশি পাওয়া গেলেই যে সে প্রেমে পড়েছে তা নাও হতে পারে। আসলে নন-রোমান্টিক অন্যান্য কারণেও কিন্তু ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে। যেমন, গাঁজা কিংবা কোকেইন সেবন করলে। সেজন্যই আমরা অনেক সময়ই দেখি ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণও অনেকটা কোকেইনসেবী ঘোরলাগা অবস্থার মতোই টালমাটাল হয় অনেক সময়ই।
তবে ভালবাসার এই রসায়নে কেবল ডোপামিনই নয় সেই সাথে জড়িত থাকে অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিন সহ নানা ধরণের বিতিকিচ্ছিরি নামের কিছু হরমোন। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই হরমোনগুলো নাকি ‘ভালবাসা টিয়ে রাখতে’ মানে প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধন দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা এও বলেন কেউ মনোগামী হবে না বহুগামী হবে – তা অনেকটাই কিন্তু নির্ভর করছে এই হরমোনগুলোর তারতম্যের উপর। দেখা গেছে রিসেপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রেসিন হরমোনের আধিক্য থাকলে তা পুরুষের একগামী মনোবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানীরা প্রেইরি ভোলস আর মোন্টেইন ভোলস নামক দুই ধরণের ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছেন, একগামিতা এবং বহুগামিতার মত ব্যাপারগুলো অনেকাংশেই হরমোনের ক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভরশীল। এমনকি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে ভেসোপ্রেসিনের প্রবাহকে আটকে দিয়ে একগামী ইদুঁরকে বহুগামী, কিংবা অতিরিক্ত ভেসোপ্রেসিন প্রবেশ করিয়ে বহুগামী ইঁদুরকে একগামী করে ফেলতে সমর্থ হয়েছেন। তবে ইঁদুরের ক্ষেত্রে যেটা সত্য তার পুরোটুকু মানুষের ক্ষেত্রে সত্য কিনা তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। অন্ততঃ আমার মনেই হয় এরশাদসাহেবের মতো বিশ্বপ্রেমী বহুগামী লুলপুরুষদের লোলুপতাকে মনে হয় না কেবল ইঁদুরের মতো হরমোন চিকিৎসার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কিন্তু কথা হচ্ছে তীব্র প্রেমের সময়গুলোতে কেন দ্বিগবিদ্বিগশুন্য নেশার ঘোর লাগা ভাবের উদয় হয়, কেন বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই লোপ পায়? কেনই বা ভয়ভীতি উবে যায় রাতারাতি? এ সময় বন্ধুদের পরামর্শও মাথায় ঢোকে না। যদি কেউ কুদ্দুসকে বলতো ‘ঐ ব্যাটা কুদ্দুস – সিমির পিছে অযথা ঘুইরা লাভ নাই, ওর জগৎ আর তোর জগৎ আলাদা…’ কুদ্দুসের মাথার দেওয়াল সেই তথ্য পৌঁছুবেই না। কিন্তু কেউ যদি আবার উলটো বলে যে, ‘সিমি আজকে তোর সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলো …’ সাথে সাথেই কুদ্দুসের মনে হবে এ যেন ‘মক্কা বিজয়’! আসলে তীব্রপ্রেমের সময়গুলোতে কেন মানুষজনের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পায় তার একটা ভাল ব্যাখ্যা আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। আমাদের মস্তিস্কে অ্যামাগডালা বলে একটি বাদাম আকৃতির প্রত্যঙ্গ আছে। সেটা এবং মস্তিস্কের কর্টেক্সের কিছু এলাকা আমাদের ভয় ভীতি নিয়ন্ত্রণ করে, অকস্ম্যাৎ বিপজ্জনক পরিস্থিতি আসলে আমাদের আগাম সতর্ক করে দিতে পারে। দেখা গেছে প্রেমের রোমাঞ্চকর এবং উত্তাল সময়গুলোতে মস্তিকের এ এলাকাগুলোর কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভয় ভীতি কিংবা ‘ক্রিটিকালি’ চিন্তাকরার ব্যাপার স্যাপারগুলো পুরোপুরি লোপ পায় তখন। দুর্মুখেরা বলে, বেশি পরিমানে গাঁজাভাঙ খেলেও নাকি ঠিক এমনটিই হয়।
৩
কিন্তু কথা হচ্ছে কুদ্দুসের এই কোকেইন মার্কা প্রেমানুভূতির মূল উৎস বা কারণ কি? উত্তরটা কিন্তু খুব সোজা। ঘুরে ফিরে সেই একই ব্যাপার, যা বিবর্তনের একেবারে গোড়ার কথা – বংশাণু রক্ষার তাগিদ বা নিজের জিনকে টিকিয়ে রাখার অবচেতন প্রয়াস। আসলে প্রতিলিপি, পরিব্যক্তি এবং প্রকারণের সমন্বয়ে গঠিত প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটা বিবর্তন শুধু প্রেমানুভূতিই নয়, বস্তুত এটি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কামনা, বাসনা, প্রণয়, আকাঙ্ক্ষা সহ মানুষের সবধরণের অনুভূতি ও আচরণেরই জন্ম দেয়।
আসলে বংশাণু রক্ষার জন্য যে কোন প্রাণী অন্ততঃ প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়, আর সঠিক যৌনসঙ্গি নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের বংশানু পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে চায়। সঠিক সঙ্গি নির্বাচন করাটা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিই প্রধাণতঃ প্রণয়াকাংখার পেছনে মূল উপলক্ষ্য হিসেবে কাজ করে। ডারউইন নিজেও ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক চিন্তা করেছিলেন এবং সেজন্যই তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural selection) পাশাপাশি যৌনতার নির্বাচন (sexual selection)কেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার বিবর্তন তত্ত্বে। না দিয়ে তো উপায় ছিলো না। ডারউইন লক্ষ্য করেছিলেন যে, প্রানী জগতে বেশ কিছু বৈশিষ্ট পাওয়া যাচ্ছে যা কেবল প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারণ এ বৈশিষ্টগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে টিকে থাকার কথা নয়। এগুলো টিকে আছে, কারণ এই বৈশিষ্টগুলো বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গির দ্বারা বংশপরম্পরায় দিনের পর দিন আদৃত হয়েছে। একটি ক্লাসিক উদাহরণ হচ্ছে পুরুষ ময়ুরের দীর্ঘ পেখম থাকার উদাহরণ। এমন নয় যে দীর্ঘ পেখম পুরুষ ময়ুরকে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে কোন বাড়তি উপযোগিতা দিয়েছিলো। বরং দীর্ঘ পেখমটি ময়ূরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহতই করার কথা। এবং করেছেও। তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাহায্যে ময়ুরের দীর্ঘ পেখমকে ব্যাখ্যা করা যায় না। ময়ুরের দীর্ঘ পেখম টিকে আছে মূলতঃ নারী ময়ূর বা ময়ূরীর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে। লম্বা পেখমকে ভাল বংশাণুর নির্দেশক হিসেবে ময়ূরীরা দেখত। কাজেই দীর্ঘ পেখমের ঢেউ তোলা সুশ্রী ময়ূরেরা যৌনসঙ্গি হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছিলো, কারণ বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গিদের কাছে তারা ছিলো একেকজন ‘ব্রাড পিট’ কিংবা টম ক্রুজ! তারাই শেষপর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিলো ময়ূরীদের যৌনাকর্ষণের ভিত্তিতে।
এই ‘মেটিং সিলেকশনের’ মায়াবী খেলা চলে কম বেশী সব প্রাণীর মধ্যেই। স্তন্যপায়ী প্রানীর প্রায় সব প্রজাতিতেই দেখা যায় পুরুষেরা সাধারণত অনেক বড় এবং বলশালী হয়, সেই সাথে তাদের মধ্যে দেখা যায় অনেক আকর্ষনীয় বৈশিষ্টের সমাহার (যেমন, উজ্জ্বল রঙ, শিং, কেশর, দ্রুতগামিতা, ক্ষিপ্রতা, নৃত্য এবং সঙ্গিতে পারদর্শিতা ইত্যাদি)। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। বড় চুল রাখা, দামী সানগ্লাস, কেতাদুরস্ত কাপড় পরা থেকে শুরু করে দামী গাড়ি, বাড়ি, শিক্ষা, বাকচাতুর্য, প্রতিভা, নাচ, গান, বুদ্ধিমত্তা সবকিছুই মানুষ কাজে লাগায় বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণের কাজে। মানব সমাজের নারীপুরুষের বহু বৈশিষ্ট এবং অভিব্যক্তিই মোটাদাগে সম্ভবতঃ যৌনতার নির্বাচনের ফল বলে মনে করেন অনেক গবেষকই। আমি এ নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে বেশ কিছু লেখা আগে লিখেছি (যেমন দেখুন এখানে কিংবা এখানে); সংশপ্তক কিছুদিন আগে মেটিং সিলেকশনে পুরুষের নাচের গুরুত্ব তুলে ধরে একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘পুরুষের নৃত্য এবং নারী’ শিরোনামে। এগুলো সবই মানব সমাজে যৌনতার নির্বাচনের গুরুত্বকে সুচারুভাবে তুলে ধরে। অপার্থিব তার ‘ভালবাসা ও বিবর্তন’ (পূর্বোক্ত) লেখায় লীন মার্গুলিস ও ডরিয়ান সেগানের “Mystery Dance: On the Evolution of Human Sexuality” বই থেকে একটি চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন –
“প্রযুক্তি কিংবা সভ্যতা আমাদেরকে আমাদের পশুত্ব থেকে খুব দূরে সরাতে পারেনি, বরং তা আরও জোরাল ভাবে সেটা অধিষ্ঠিত করেছে। সৌখীন চশমা, স্কন্ধালঙ্কার ইত্যাদি যেন অনেকটা ময়ূরের পুচ্ছের মতই।”
যৌনতার নির্বাচন আমাদের মানসপটে কাজ করে বলেই কারো সুন্দর চেহারা কিংবা মনোহারী ব্যক্তিত্ব দেখলে আমরা সবাই মনের অজান্তেই আন্দোলিত হয়ে উঠি। বঙ্কিমচন্দ্র যে একসময় বলেছিলেন, ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’ – ব্যাপারটা কিন্তু মিথ্যে নয় একেবারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা সংস্কৃতিভেদে সবাই বিপরীত লিঙ্গের যে বৈশিষ্ট্যগুলোকে ‘আকর্ষনীয়’ বলে মনে করে সেগুলো হল – পরিস্কার চামড়া এবং প্রতিসাম্যময় মুখ, স্বচ্ছ চোখ, সুন্দর এবং সুগঠিত দাঁত, সতেজ এবং সুকেশী চুল এবং ‘গড়পরতা’ চেহারা।
পরিস্কার চামড়া, স্বচ্ছ চোখ, সুন্দর এবং সুগঠিত দাঁত, সতেজ চুল কেন পছন্দনীয় তা বোঝা কঠিন কিছু নয়। এগুলো তারুন্য, সুস্বাস্থ্য এবং সর্বোপরি প্রজনন ক্ষমতার বাহ্যিক প্রকাশ ছিলো আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের কাছে। একই ব্যাপার খাটে প্রতিসাম্যময় মুখের ক্ষেত্রেও। এ ধরণের সুগঠিত চেহারা বিপরীত লিঙ্গের কাছে প্রমাণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো যে তার পছন্দনীয় মানুষটি অপুষ্টির শিকার নয়, কিংবা জীবানু কিংবা পরজীবীদের আবাসস্থল নয়। অর্থাৎ এ বৈশিষ্টগুলো ছিলো সঠিক যৌনসঙ্গি নির্বাচনের একধরণের সফল মার্কার তাদের চোখে।
চেহারার গড়পরতা ব্যাপারটা সাদা দৃষ্টিতে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। কেন গড়পরতা চেহারাকে ‘আকর্ষনীয়’ বলে মনে হবে? এটা মনে হয় কারণ, ‘গড়পরতা চেহারা’ একটা বিশেষ ব্যাপারকে সামনে তুলে ধরে। সেটা হচ্ছে ‘জেনেটিক ডাইভার্সিটি’ বা বংশানুগত বৈচিত্র। এই বৈচিত্র বজায় থাকা মানে বাহক অধিকতর রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং প্রতিকূল পরিবেশে সহজে অভিযোজিত হবার ক্ষমতা সম্পন্ন বলে ধরে নেয়া হয়। আসলে আমরা যে গড়পরতা চেহারাকে ‘সুন্দর’ বলে রায় দেই, তা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন একটি ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে। নির্বিচারে ১০ টি চেহারা নিয়ে ফটোশপ কিংবা কোন প্রফেশনাল সফটওয়্যারে চেহারাগুলো মিশ্রিত (blend) করে উপস্থাপন করলে মিশ্রিত চেহারাটিকে অধিকতর আকর্ষনীয় বলে মনে হয়। নীচের ছবিটি লক্ষ্য করুন। প্রথম দুটো ছবিকে মিশ্রিত করে তৃতীয় ছবিটি তৈরি করা হয়ছে। মনঃস্তাত্বিক জরিপে অধিকাংশ লোকই তৃতীয় ছবিটিকে অন্য দুটো ছবির চেয়ে অধিকতর আকর্ষনীয় বলে রায় দেয়!
চিত্রঃ যখন একাধিক আসল চেহারাকে মিশ্রিত করে গড়পরতা চেহারাতে পরিণত করা হয়, সেটি অধিকাংশ মানুষের চোখে আকর্ষনীয় হয়ে উঠে।
তবে যৌনতার নির্বাচন শুধু অভিন্ন মানব প্রকৃতি গঠন করেছে ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। বহুক্ষেত্রেই এটি পার্থক্য সূচিত করেছে নারী পুরুষের পছন্দ অপছন্দে। অভিন্ন কিছু বৈশিষ্টের পাশাপাশি যৌনতার নির্বাচন আবার কাজ করেছে নারী-পুরুষের পার্থক্যসূচক মানস জগৎ তৈরিতেও – পলে পলে একটু একটু করে। আসলে সত্যি বলতে কি যৌনতার নির্বাচনকে পুঁজি করে পুরুষ যেমন গড়েছে নারীকে, তেমনি নারীও গড়েছে পুরুষের মানসপটকে। এক লৈঙ্গিক বৈশিষ্টগুলোর আবেদন তৈরি করেছে আরেক লিঙ্গের চাহিদা। তৈরি এবং ত্বরান্বিত হয়েছে বিভিন্ন লিংগ-ভিত্তিক নানা পছন্দ অপছন্দ। পুরুষ দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছে বলে স্বভাবে হয়ে উঠেছে অনেক সহিংস। আবার নারীরাও একটা সময় পুরুষদের এই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে, কারণ এ ধরণের পুরুষেরা নিজ নিজ ট্রাইবকে রক্ষা করতে পারত বহিঃশত্রুর হাত থেকে। এ ধরণের সমর দক্ষ পুরুষেরা ছিলো সবার হার্টথ্রব – এরা দিয়েছিলো নিজের এবং পরিবারের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা। এ ধরণের সাহসী পুরুষেরা নিজেদের জিন ছড়াতে পেরেছে অনেক সহজে, আমার মত কাপুরুষদের তুলনায়! ফলে নারীরাও চেয়েছে তার সঙ্গিটি কাপুরুষ না হয়ে সাহসী হোক, হোক বীরপুরুষ! এই ধরণের চাহিদার প্রভাব এখনো সমাজে দৃশ্যমান। ডেট করতে যাওয়ার সময় কোন নারীই চায় না তার সঙ্গি পুরুষটি উচ্চতায় তার চেয়ে খাটো হোক। সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে এ যেন এক অলিখিত নিয়ম, শুধু আমেরিকায় নয়, সব দেশেই! বাংলাদেশে বিয়ে করতে গেলে পাত্রের উচ্চতা বউয়ের উচ্চতার চেয়ে কম দেখা গেলেই আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে গাই-গুই শুরু হয়ে যায় মুহূর্তেই। খাটো স্বামীকে বিয়ে করতে হলে স্ত্রীরও মনোকষ্টের সীমা থাকেনা। হাই হিল জুতো আর তার পরা হয়ে ওঠে না। আসলে দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় প্রভাব মানসপটে রাজত্ব করার কারণেই এটি ঘটে। লম্বা চওড়া জামাই সবার আদরনীয়, কারণ একটা সময় লম্বা চওড়া স্বাস্থ্যবান এই সব পূর্বপুরুষেরা রক্ষা করতে পেরেছিলো স্বীয় গোত্রকে, রক্ষা করেছিলো উত্তরপুরুষের জিনকে – অন্যদের তুলনায় অনেকে ভালভাবে। সেই আদিম মানসপট আধুনিক মেয়েদের মনে রাজত্ব করে তাদের অজান্তেই!
আবার পুরুষদের মানসজগতেও নারীদেহের কিছু বৈশিষ্ট নিয়ে উদ্গ্র আগ্রহ দেখা যায় সম্ভবতঃ বিবর্তনীয় তথা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে মানসপট তৈরি হবার কারণেই। যে কোন দেশের সাহিত্যের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে – নারীর পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীন ক’টিদেশ নিয়ে যুগের পর যুগ কাব্য করেছে পুরুষ – সকল সংস্কৃতিতেই। কারণ নারীদেহের এই বৈশিষ্টগুলোই সকল পুরুষের কাছে মহার্ঘ্য বস্তু। কিন্তু কেন? কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, আদিম সমাজে পুরুষদের কাছে বৃহৎ স্তন এবং নিতম্বের মেয়েরা অধিকতর আদৃত ছিলো প্রাকৃতিক কারণেই। বিপদ সঙ্কুল জঙ্গুলে পরিবশে মেয়েদের বাচ্চা কোলে নিয়ে পুরুষদের সাথে ঘুরতে হত, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাইয়ে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে হত এলাকায় খাদ্যস্বল্পতা দেখা দিলে। অতি আধুনিক কালের কৃষিবিপ্লবের কথা বাদ দিলে মানুষকে আসলেই শতকরা নব্বই ভাগ সময় যুদ্ধ করতে হয়েছে খাদ্যস্বল্পতার বিরুদ্ধে। যে নারী দীর্ঘদিন খাদ্যস্বল্পতার প্রকোপ এড়িয়ে বুকের দুধ খাইয়ে বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে, তারা টিকে গেছে অনেক বেশি হারে। কাজেই কোন নারীর বৃহৎ স্তন পুরুষদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে ভবিষ্যত-প্রজন্মের জন্য ‘অফুরন্ত খ্যাদ্যের ভান্ডার’ হিসবে। এ এক অদ্ভুত বিভ্রম যেন। এই বিভ্রম দীর্ঘদিন ধরে পুরুষকে করে তুলেছে পৃত্থুল স্তনের প্রতি আকর্ষিত। তারা লালায়িত হয়েছে, লুব্ধ হয়েছে – এ ধরণের দৈহিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে জৈবিক তাড়নায়। ঠিক একই ভাবে, বহিঃশত্রু যখন আক্রমণ করেছে তখন যে নারী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাঁচতে পেরেছে, তাদের জিন রক্ষা পেয়ছে অনেক সহজে। এই পরিস্থিতির সাথে তাল মিলাতে গিয়ে নারীর কোমড় হয়েছে ক্ষীণ, আর নিতম্ব হয়েছে সুদৃঢ়। আর এ বৈশিষ্টগুলো পুরুষদের কাছে হয়ে উঠেছে অনেক বেশি আদরনীয়।
নারীর সুদৃঢ় নিতম্বের প্রতি পুরুষদের আগ্রহের অবশ্য আরো একটি বড় কারণ আছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বিগত পাঁচ মিলিয়ন বছরে মানুষের মস্তিস্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে অবিশ্বস্য দ্রুততায়। ফলে এটি বাচ্চার জন্মের সময় তৈরি করেছে জন্মসংক্রান্ত জটিলতার। এই কিছুদিন আগেও সাড়া পৃথিবীতেই বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাওয়া মায়েদের সংখ্যা ছিলো খুবই উদ্বেগজনকভাবে বেশি। আজকের দিনের সিসেক অপারেশন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এই জটিলতা থেকে নারীকে অনেকটাই মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু আদিম সমাজে তো আর সিসেকশন বলে কিছু ছিলো না। ধারণা করা হয়, সভ্যতার উষালগ্নে ক্ষীণ নিতম্ববিশিষ্ট নারীদের মৃত্যু অনেক বেশি হয়েছে বড় মাথাওয়ালা বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে। টিকে থাকতে পেরেছে সুডোল এবং সুদৃঢ় নিতম্ব-বিশিষ্ট মেয়েরাই। কারণ তারা অধিক হারে জন্ম দিতে পেরেছে স্বাস্থ্যবান শিশুর। ফলে দীর্ঘদিনের এই নির্বাচনীয় চাপ তৈরি করেছে নারী দেহের সুদৃঢ় নিতম্বের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক উদগ্র কামনা!
চিত্রঃ অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহ তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত মটামুটি ০.৭ এর মধ্যে থাকলে তা তৈরি করে মেয়েদের ‘classic hourglass figure’, এবং এটি পুরুষদের মনে তৈরী করে আদি অকৃত্রিম যৌনবাসনা।
পুরুষের চোখে নারীর দেহগত সৌন্দর্যের ব্যাপারটাকে এতদিন পুরোপুরি ‘সাংস্কৃতিক’ ব্যাপার বলে মনে করা হলেও আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়(অস্টিন শহরে) এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহ তার গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন যে, সংস্কৃতি নির্বিশেষে নারীর কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত ০.৬ থেকে ০.৮ মধ্যে থাকলে সার্বজনীনভাবে আকর্ষণীয় বলে মনে করে পুরুষেরা। অধ্যাপক সিংহের মতে মোটামুটি কোমর : নিতম্ব = ০.৭ – এই অনুপাতই তৈরী করে মেয়েদের ‘classic hourglass figure’, যা পুরুষদের মনে তৈরী করেছে আদি অকৃত্রিম যৌনবাসনা । সংস্কৃতি নির্বিশেষে এই উপাত্তের পেছনে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবী করা হয়[5]। সম্প্রতি পোলিশ একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, সুডোল স্তন, সরু কোমড় এবং হৃষ্ট নিতম্ব মেয়েদের সর্বচ্চ উর্বরতা প্রকাশ করে, যার পরিমাপ পাওয়া গেছে দুটো প্রধান যৌনোদ্দীপক হরমোনের (17-β-estradiol & progesterone) আধিক্য বিশ্লেষণ করে[6]। পুরুষের মনে প্রথিত হওয়া কোমর/নিতম্বের এই যৌনোদ্দীপক অনুপাত আসলে তারুন্য, গর্ভধারণক্ষমতা(Fertility) এবং সাধারণভাবে সুসাস্থ্যের প্রতীক। কাজেই এটিও পুরুষের কাছে প্রতিভাত হয় এক ধরণের ‘ফিটনেস মার্কার’ হিসেবে। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ভিক্টর জন্সটন তাঁর ‘Why We Feel? The Science of Emotions’ বইয়ে বলেন যে মেয়েদের কোমর ও নিতম্বের অনুপাত ০.৭ হলে এন্ড্রোজেন ও এস্ট্রোজেন হর্মোনের যে অনুপাত গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে অনুকুল সেই অনুপাতকে প্রকাশ করে। এরকম আরেকটি নিদর্শক হল সুডৌল ওষ্ঠ। সেজন্যই গড়পরতা পুরুষেরা এঞ্জেলিনা জোলি কিংবা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের পুরুষ্ট ওষ্ঠ ছবিতে দেখে লালায়িত হয়ে ওঠে। কাজেই দেখা যাচ্ছে সৌন্দর্য্যের উপলব্ধি কোন বিমূর্ত ব্যাপার নয়। এর সাথে যৌন আকর্ষণ এবং সর্বোপরি গর্ভধারণক্ষমতার একটা গভীর সম্পর্ক আছে, আর আছে আমাদের দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় পথপরিক্রমার সুস্পষ্ট ছাপ।
সবাইকে ভ্যালেন্টাইন্স ডের শভেচ্ছা এবং সেই সাথে মহীনের ঘোরাগুলি থেকে আমার একটি প্রিয় গান – “ভালবাসা মানে“:
ভালোবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি
ভালোবাসা মানে এলোচুল মাতোয়ারা
ভালোবাসা মানে সময় থামার আগে
ভালোবাসা মানে তোমার শুরু আমার সারাভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারি
ভালোবাসা মানে গোপন গোপন খেলা
ভালোবাসা মানে কান্নাভেজা চোখে
ভালোবাসা মানে নীল খামেদের মেলাভালোবাসা মানে দূরভাষ নিশ্চুপে
শুনে ফেলে অনুভূতির হাসি
ভালোবাসা নান্দনিক যাতায়াতে
ভালোবাসা মানে চৌরাসিয়ার বাঁশিভালোবাসা মানে আগাম চলার সুর
ভালোবাসা মানে অবিরাম চলাবসা
ভালোবাসা মানে আঁখিপল্লব ছুঁয়ে
চিনতে শেখা শেষ কাব্যের ভাষা …
httpv://www.youtube.com/watch?v=wHRSB7hHexQ
(পাঠকদের পছন্দ হলে সিরিজটা চলতেও পারে…)
[২য় পর্ব]
তথ্যসূত্র
[1] Daniel C. Dennett, Darwin’s Dangerous Idea: Evolution and the Meanings of Life, Simon & Schuster, 1996, p 21.
[2] অপার্থিব, ভালবাসা ও বিবর্তন, ২৯ মাঘ ১৪১৬ (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১০)
[3] William Shakespeare (1564–1616), Dialogue between Phebe and Silvius, in As You Like It, act 5, sc. 2, l. 83-98.
[4] Helen Fisher, What is Love?, On Air, BBC International Magazine 98:12-15
[5] Singh, D. (2002) Female Mate Value at a Glance: Relationship of Waist-to-Hip Ratio to Health, Fecundity, and Attractiveness. Neuroendocrinology Letters. Special Issue, 23, 81-91.
[6] Jasienska, G., Ziomkiewicz, A., Ellison, P.T., Lipson, S.F., Thune, I. (2004)“Large breasts and narrow waists indicate high reproductive potential in women.” Proceedings of the Royal Society of London “B”, 271: 1213-1217
সখি, ভালবাসা কারে কয়? < পর্ব -১ । পর্ব -২ পরের পর্ব … >
মন্তব্য…দাদা
অসাধারণ বলেছেন আপনি
ভালোবাসা বিজ্ঞান সবই একাকার
ধর্মের মত প্রেমও মানুষের অন্ধ বিশ্বাস, বাস্তব জীবনে প্রেম ভালবাসা বস্তুটি আসলে আপেক্ষিক, নিজের চাহিদা পুরন করাই প্রেম ভালবাসার উদ্দেস্য, যদিও ব্যতিক্রম রয়েছে যেমন- সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালবাসা, কিন্তু তার পরও এই ভালবাসা অকৃত্তিম নয়, নয় নিস্বার্থ । কুদ্দুসের অন্ধ বিশ্বাস হল অকৃত্তিম ভালবাসায়, সে যা চায় তাহল সমাজের অন্ধ বিশ্বাস সমৃদ্ধ ভালবাসা যা কিনা ধর্মের ইশ্বরের মতই অদৃশ্য, তাকে দেখা যায়না শুধু বিশ্বাসে মেলে বলেই মনে করে অন্ধ প্রেমিক সমাজ। লেখাটা ভাল হয়েছে। অন্ধ প্রেমিকদের অরো শক্ত ব্যবচ্ছেদ অবশ্যক।
আসলে নন-রোমান্টিক অন্যান্য কারণেও কিন্তু ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে। যেমন, গাঁজা কিংবা কোকেইন সেবন করলে। সেজন্যই আমরা অনেক সময়ই দেখি ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণও অনেকটা কোকেইনসেবী ঘোরলাগা অবস্থার মতোই টালমাটাল হয় অনেক সময়ই। ১।গাঁজা কিংবা কোকেইন ছাড়া আর কোনো মাদকে hoi? ২।কিরকম ঘোরলাগা টালমাটাল?একটু বুঝিএ বলুন।
আজকে দৈনিক সমকাল খুলে দেখলাম খুব ছোট করে লেখাটার কিছু অংশ ছাপিয়েছে। ব্লগের পাল্লায় পড়ে পেপার টেপারগুলো নিয়মিত দেখা হয় না। হয়তো কয়েকদিন আগেই ছাপিয়েছে, লেখাটা পেলাম এখানে, কালস্রোত বিভাগে।
দারুন । আসলে বির্বতনের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে প্রজাতি সংরক্ষন ব্যাতীত মানব জীবনের কোনো মহান উদ্দেশ্য নেই, এই বিষয়টা মেনে নেয়া ধার্মিকদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক । লেখা চলুক ।
@লিটন,
ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যটা আগে চোখে পরে নাই। দ্বিতীয় পর্ব আসছে সামনে 🙂
@অভিজিতদা,
দুঃখিত। আসলে এটা আমার বুঝতে ভুল হয়েছে।
পরিষ্কার চামড়া আকর্ষনীয়!!! কন কি? এটা মেয়েদের চামড়া নাকি পুরুষের চামড়া কইলেন? আমি কাইল্লা হইয়াওতো বউ পাইছি ফরসা। তাও চার বছর প্রেম কইরা। আরও যে যোগ্যতার কথা কইলেন সেগুলোতেও আমি ফেল মারার কথা। তাইলে কেমনে কি? আমি তো জানতাম অনেক মেয়েরা সেক্সের জন্য কাউলাদের পছন্দ করে।
😕
:-s
@হেলাল,
আমার লেখাটা দেখি রেসিজমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা ! বিটিভিতে সারাদিন ফেয়ার এন্ড লাভলির এড দেখে দেখে মনে হয় মাথাটা গ্যাছে 🙂
আমি কিন্তু পরিস্কার চামড়া বলতে সাদা চামড়া কিংবা ফর্সা চামড়া কোনটাই বুঝাইনি, আমি বুঝিয়েছি Unblemished skin! শুধু সাদা নয়, কালো বাদামী সব চামড়াই আনব্লেমিশড হতে পারে কিন্তু! এই আনব্লেমিশড স্কিন একটা ‘ফিটনেস মার্কার’ ছিলো আমাদের আদি পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে সংগী নির্বাচনে বলে ধারনা করা হয়, কারণ এ ধরণের চামড়া সুস্থতার প্রতীক হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিলো তাদের কাছে।
@অভিজিৎ,
দুঃখিত। আমিও পরিষ্কার চামড়া বলতে সাদা চামড়া মনে করেছিলাম।
কিছু বানান বিভ্রাট চোখে পড়ল।
বহু সংগথোনই-বহু সংগঠনই
বিষদ-বিশদ
পেখমীকটি-পেখমটি
তামনি-তেমনি
দির্ঘকাল-দীর্ঘকাল
তাদের টিকে গেছে-তারা টিকে গেছে
মেডিটেশনের ফলেও কি ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়তে পারে?
একটি একগামী ইঁদুর একদিন যেই ইঁদুরনীর(ইঁদুরের স্ত্রীলিঙ্গ কি হবে?) সাথে সঙ্গম করবে, পরের দিন সেই ইঁদুরনীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্য ইঁদুরনী আনলে তাকে কি পৃথক করতে পারবে? পারলে কিভাবে পৃথক করবে?
@রনবীর সরকার,
বানান/টাইপো গুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এবার আমি যতটুকু জানি তার ভিত্তিতে আপনার প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়া যাক।
বলা মুশকিল। মেডিটেশনের ফলে অনেক কিছুর দাবীই করা হয়ে বটে, কিন্তু সত্যিই কতটুকু কি বাড়ানো কমানো যায় তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে কিছু বৈজ্ঞানিক স্টাডিতে মেডিটেশনের সাথে ডোপামিন নিঃসরণের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার দাবী করা হয়েছে যদিও ( যেমন, দেখুন এখানে)।
প্রকৃতিতে এ ব্যাপারগুলোর একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় গন্ধের মাধ্যমে। এক ধরণের হরমোন আছে ফারমোন (Pheromone) নামে এর মাধ্যমে প্রানী জগতে ‘মেট সিলেকশন’ এবং প্রজননকে ত্বরান্বিত করে বলে ধারনা করা হয়। গন্ধের উপর নির্ভর করে অনেক প্রানীই লিংগ চিহ্নিতকরণ, সামাজিক পদমর্যাদা, অঞ্চল, প্রজননগত অবস্থান সহ অনেক কিছু নির্ণয় করতে পারে। ইঁদুরের উপর হিল্ডা ব্রুসের একটি গবেষণা থেকে পাওয়া গেছে যে, সঙ্গমের পর যদি কোন ইঁদুর অপরচিত কোন ইঁদুরের গন্ধের খোঁজ পায়, তাহলে নাকি তার জরায়ুতে ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত না হয়ে ঝরে পড়ে। কিন্তু পরিচিত বয়া পছন্দের সঙ্গির গন্ধ গর্ভধারণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
@অভিজিৎ,
৯০ এর দশকে ভাবা হতো যে, ডোপামিনের সম্পর্ক সূখ কিংবা আবেগের সাথে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ডোপামিন সংশ্লিষ্ট রেসেপটর জীন DRD4 নিয়ে অনেকগুলো গবেষনা হওয়ার পর দেখা গেছে যে এর সম্পর্ক আসলে “অভিনবত্ব বা নতুনত্ব সন্ধানের” সাথে যুক্ত। এর ফলে দেখা যায় কেউ , ভাববাদী দার্শনিক হয়ে লম্বা চুল রাখে, উদারপন্হী হয় , কেউ হুকাস পুকাস শুরু করে , নিউ এজ যোগ ব্যায়াম, নতুন নেশা বা নতুন নারী/পুরুষের দিকে ধাবিত হয় ইত্যাদি।
বিবাহিতদের তাই ডোপামিন নিয়ে বেশী নাড়া চাড়া করা বিপজ্জনকও বটে। :))
@অভিজিৎ,
পরিস্কার চামড়া আকর্ষনীয় মনে করার বিবর্তনীয় ব্যাখা কি?
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ উত্তর দেয়ার জন্য। আরো প্রশ্ন করার অনুমতি যেহেতু দিলেন তাহলে আরো একটু জালাতন করি।
এখনও পর্যন্ত এমন কোন হরমোন কি পাওয়া গেছে যার মাধ্যমে সমস্যা ছাড়াই মানুষের ভালবাসা কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।
আসলে সুন্দরী মেয়ে দেখলে মাঝেমাঝে দুর্বল হয়ে যা্ইতো তাই হরমোন থেরাপির মাধ্যমে একটু কমাতে চাইছিলাম আরকি।
@হেলাল,
আমার অতি প্রিয় একজন সহব্লগার হিসেবে আপনার করা এই চমৎকার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দেয়াটা আমি আমার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ হিসেবে মনে করছি। এর উত্তর শীঘ্রই একটা পূর্নাঙ্গ লেখা হিসেবে মুক্তমনায় পড়তে পাবেন বলে আপনাকে প্রতিশ্রতি দিলাম। আর আমার প্রতিশ্রুতি যে ‘ভরাডুবি কথাচিত্রের’ প্রযোজনা ও পরিবেশনায় তাদের পরবর্তী ‘আংশিক রঙ্গীন’ ছবি ‘লাপাত্তা’ হয়ে দাড়াবে না , এ বিশ্বাসটা অন্তত রাখতে পারেন। অপেক্ষা করুন । সে এক অদ্ভুত সাসপেন্স , নির্মম ট্রাজেডী (@)
@সংশপ্তক,
এটা হলে তো খুবই ভাল হয়। আমি শুনেছি কোম্পানি গুলো নাকি ইদানিং কৃত্রিম উপায়ে প্রেমের আবেশ ছড়ানোর বেশ কিছু ওষুধ (প্লেজার পিল) নিয়ে কাজ করছে। একটার কথা আমি জানি (সায়েন্টিফিক আমেরিকানে দেখলাম) পেপটাইডজাত ঔষধ – Bremelanotide। কিন্তু সেটা আবার নাকি ব্লাড প্রেশার বাড়ায় দেয়। সেজন্য আমেরিকার ফুড এণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাড়পত্র পায় নি।
আপনি যেহেতু এই লাইনের এগুলো নিয়ে আমাদের কিছু জ্ঞান দেন, জনগনের উপকার হবে :))
আমি বি বি সি র একটা ডকুমেন্টারী-সায়েন্স অব এট্রাকশন দেখে এই একই বিষয় নিয়ে লিখব ভাবছিলাম-অভিজিত লিখে দিয়ে ভালোই করেছে। শুধু মেয়েরা ছেলেদের কি দেখে আকৃষ্ট হয়-সেই কাহিনী আরো ডিটেলেসে লিখতে হবে। কারন সেটা মহাভারত সমান। বিষয় বস্তুও বিচিত্র। রূপ থেকে ছেলেদের দেহের গন্ধ-সব কিছুই তাতে আছে।
ফরিদ ভাই এবং যারা, ভারতীয় “নারী” নিয়ে পুলকিত-তাদের জানাই- ভারতীয় নারীকে ভারতীয় এবং আমেরিকানরা সমান ভাবেই পছন্দ করে এবং আমেরিকান নারী ভারতীয় বা আমেরিকান পুরুষ কেওই পছন্দ করে না। সুতরাং সাংস্কৃতিক পছন্দের যে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় মেয়েদের পছন্দ করার ব্যাপারে তা খাটে না-বরং তা বিবর্তনীয় গবেষণাকে সমর্থনই করে।
তবে সোশ্যাল ফাক্টর ও আছে-সেটা মূলত “সোশ্যাল ইউটিলিটি” নির্ভর। যেমন সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার অভাবে হিন্দু-মুসলমান প্রেম অতটা হয় না-যতটা হওয়া উচিত। শুধু ওপর মহলে এই ধরনের প্রেম হয়, যেখান অসধর্ম বিবাহ সামাজিক ভাবে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য। একজন হিন্দুর পক্ষে একজন ্মুসলমান বা আমেরিকানকে বিয়ে করা প্রায় সমান সমস্যা। সুতরাং সমধর্মী জিনের কারনে, ভারতীয় পুরুষ ভারতীয় নারী পছন্দ করে-তা ঠিক না। এমন কোন গবেষণা চোখে পড়ে নি। এটা মূলত সোশ্যাল ইউটিলিটির ফল।
ভারতে খুব ব্যাস্ত থাকায় এই চত্তরে আসতে পারছি না বেশ কিছু দিন। বা আসলেও লেখার সময় নেই। তবে এই লেখাটা নিয়ে কিছু মন্তব্য করলাম, কারন এই একই টপিকে আমি লিখব ভাবছিলাম।
সার্ভার বেশ শ্লো।
@ অভিজিতদা,
ভালবাসার হরমোন গুলো কি কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার অর্থাৎ এই হরমোন ( যেমন- ডুপামিন) কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা বা প্রাকৃতিক ভাবে অন্য জীবিত বা মৃত মানুষ হতে সংগ্রহ করা এবং প্রয়োগ করার গবেষণা হচ্ছে কোথাও ?
@হেলাল,
ভালবাসার হরমোন গুলো চিহ্নিত ও কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার গবেষণা ভালোভাবেই হচ্ছে। তবে ডোপামিনকে অনেক আগেই তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কারন কৃত্রিমভাবে ডোপামিন রিসপটরকে একবারের বেশী নিয়ন্ত্রণ করা যায় না , এর পর কৃত্রিমপন্হা আর কাজ করে না , মস্তিষ্ক চালাকীটা ধরে ফেলে । এব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে নিঃসঙ্কোচে প্রশ্ন করতে পারেন।
অভিজিৎ দা, আপনি তো দেখি নতুন সিনেমা বানাইতেছেন। এক্কেবারে সম্পূর্ণ রঙ্গিন। 😀 :))
:-[ এইটা আপনার জন্য, ১৪ই ফেব্রুযারী, ২০১১ এর উপহার। 😀
@নীল রোদ্দুর,
আপনে গাইল দিলেন না প্রশংসা করলেন বুঝতাছি না। বন্যার ধারণা গাইল দিছেন সম্পূর্ণ রঙ্গিন সিনেমার কথা বইলা, তবে আমি কালোভুতরে কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই নিলাম। ফুল অপেক্ষা কালোভুত উত্তম!
@অভিজিৎ,
আপনার লেখা পড়ি আর ভাবি, ভাবি আর পড়ি। জবাব দেবার জন্য নিজে উপযুক্ত কিনা নিজেকেই প্রশ্ন করি। বড্ড ভালো বড্ড মনোরম করে সহজ ভাবে বলবার অসাধারণ ক্ষমতা আছে আপনার লেখনীতে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে এলো। গতকাল মেলায় গিয়েছিলাম। আমরা যথারীতি” শুদ্ধস্বর” স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে কজনা গীতা’দি সহ গল্প করছি দেখলাম সৈয়দ শামসুল হকের সাথে ভোরের কাগজের সাংবাদিক মনে হয় তার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। আমিও বই কিনলাম কটা শামসুল হকের।কবিতার বই।
এক পর্যায়ে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করছেন শামসুল হক’কে
– এখন আর তেমন উল্লেখযোগ্য বই বের হয় না কেন?
আমার মেজাজটা কেন জানিনা খারাপ হয়ে গেল। টুটুল ভাইয়ের কাছ থেকে আপনার আর রায়হানের বইটা নিয়ে দেখালাম।
– এই বইটা কী উল্লেখযোগ্য বইয়ের মাঝে পড়েনা?
তিনি একটু থতমত খেলেন। বা বিব্রত হলেন বলেই মনে হল। আমি আবার বললাম,
– সাধারণ কিছু মানুষ’কেও জিজ্ঞেস করবেন কিছু। তাহলে মনে হয় একটা নিরপেক্ষ জবাব পাবেন।
জানিনা আমার এই কথায় সাংবাদিক ভদ্রলোক মনে মনে রেগে গেলেন কিনা। নিশ্চয় ভাবছিলেন এমন রুক্ষ ভাবে কেন বললাম। বলেছি এই কারনে যে, এই সব সাংবাদিক সাধারন মানুষের মনের কথা জানতে চায়না। এইটা খুব বেদনাদায়ক।
যাক কোথা থেকে কী বলে ফেললাম। আপনি লিখে যান , আমরা পড়ব। যতোটাই বুঝি পড়ে যাবো।
অনেক ধন্যবাদ।
দেবেন্দ্র সিংহের গবেষণার সাথে একেবারেই একমত হতে পারলাম না। আমি এখনও মনে করি যে, পুরুষের চোখে নারীর সৌন্দর্যের বিষয়টা পুরোপুরি সাংস্কৃতিক, মোটেও সার্বজনীন কিছু নয়। সুদীর্ঘ উরুর নীল নয়না স্বর্ণকেশী বা কালো চুলের আগুন ঝরানো ভরাট ল্যাটিনো সৌন্দর্য চারপাশে অফুরন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার পরেও, ওই শ্যামলা রঙের শাড়ী পরা বাঙালি রমণী দেখলেই এখনও কেন যেন চেতনাতে নেশার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। হলিউডের চোয়ালভাঙা কংকালসার নায়িকাদের সৌন্দর্যে বিন্দুমাত্রও আকর্ষিত হই না আমি। তা সে পুরুষ্ট ঠোঁটের এঞ্জেলিনা জোলিই হোক, আর ঐশরিয়া রাই-ই হোক। এর বিপরীতে সেই খালার বয়সী হেমামালিনী, ববিতা বা অলিভিয়ার তরুণী বয়সের চলমান কিংবা স্থির, যে কোনো চিত্র দেখলেও ডোপামিন আর হরমোনের প্রভাবে মাথার মধ্যে দুষ্টু দুষ্টু চিন্তার হাজারো মেলা বসে।
হলিউডের এই চোয়ালভাঙা রোগ সংক্রমিত হয়েছে বলিউডেও। এখনকার বলিউডি নায়িকাদের ছবি দেখলে মনে হয় যে ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত কোনো অঞ্চল থেকে তুলে আনা হয়েছে হাড্ডিসর্বস্ব এইসব নায়িকাদের। কারিণা কাপুরকে দেখলে একসময় অল্প বিস্তর দুষ্টু চিন্তা মাথায় জাগতো (ভাল মানুষতো, তাই বেশি দুষ্টু চিন্তা আসতো না)। এখন তার চোয়ালের গর্তে বসে যাওয়া গাল, কোটরাগত চোখ আর কাঠির মত শরীর দেখলে কবর থেকে উঠে আসা ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা বইয়ের রক্তচোষা ভাম্পায়ার বলে মনে হয়। দুষ্টু চিন্তা বাদ দিয়ে বিবমিষা তাড়াতেই অবস্থা কাহিল হয়ে যায় তখন। এই যুগে মধুবালা জন্মালে নায়িকা হওয়া তাঁর হত না কিছুতেই। প্রযোজক, পরিচালকরা ঘাড় ধরে হয়তো বের করে দিত না তাঁকে, তবে নায়িকার বদলে নায়িকার মা হবার প্রস্তাব যে দিত, এটা সুনিশ্চিত।
পূর্ব আফ্রিকার কিছু কিছু দেশের কিছু কিছু ট্রাইবের মধ্যে মেয়েরা যত মোটা ততবেশি সুন্দরী বলে বিবেচিত হয়। এই সমস্ত ট্রাইবের বিবাহযোগ্যা মেয়েদেরকে মোটাতাজাকরণের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা হয়। সেখানে বিশেষ তত্ত্বাবধানে নিত্যদিন ভালো ভা্লো খেয়ে আর শুয়ে বসে থেকে কোরবানির গরুর মত মোটাতাজা হয়ে বের আসতে হয় তাদের বিয়ের বাজারে। যে মেয়ে যত বেশি মোটা, সেই মেয়ে তত বেশি সুন্দরী, তার বরভাগ্য তত ভাল হবে, এটাই সেই সমস্ত সমাজের নিয়ম।
মৌরিতানিয়ার সাদা চামড়ার মুর আরবদেরতো গ্রামে গ্রামে মেয়েদের স্থূলাঙ্গী করার জন্য ফ্যাট ফার্মও রয়েছে। দক্ষ কোনো মহিলা পরিচালিকার তত্ত্বাবধানে এক সাথে দশ বারোজন মেয়েকে মোটাতাজাকরণ করা হয় সেখানে অল্প বয়েস থেকেই। সকাল থেকে শুরু করে সামান্য বিরতি দিয়ে সারাদিন ধরে খাওয়ার উপরে রাখা হয় মেয়েগুলোকে। যতদিন না ওজন ৬০ থেকে ১০০ কিলোগ্রামের মধ্যে পৌঁছায়। সাথে চর্বির বেশ কয়েকটা আস্তরও তৈরি করতে হয় তাদেরকে শরীরে। উন্নত বিশ্বের হস্তিগামিনী মহিলা, যারা সঙ্গী জোটানোর আশা ছেড়ে দিয়ে নিদারুণ হতাশায় জীবনযাপন করছে তারা এই সমস্ত দেশে হিজরত করলে বিশ্বসুন্দরীর মর্যাদা পাবে এ কথা বলে দেওয়া যায় বিনা দ্বিধায়।
লেখা ভাল হইছে। চালানোর জন্য লোকজন যেহেতু ভোট দিতাছে, কাজেই চলুক। তবে দ্বিতীয় পর্ব যেন আগামি ভ্যালেন্টাইন দিবসের আগে আসে সেই বিষয়টা মাথায় রাইখো। চালাকি কইরা আবার কইয়ো না যে, পরের পর্ব দিমু আগামী ভ্যালেন্টাইন’স দিবসে।
@ফরিদ ভাই, আমারো আপনার মতই মনে হয়। প্রেম-ভালোবাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলো সার্বজনীন নয়। কুদ্দুসের ক্ষেত্রে যে তত্ত্ব খাটে তা যদি মাইকেলের ক্ষেত্রে কাজ না করে – তাহলে বিজ্ঞানের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা কমে যায় না? তাই প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমি রিচার্ড ফাইনম্যানের অনুসারী- প্রেম-ভালোবাসা বিজ্ঞান নয়। কারণ বিজ্ঞান দিয়ে এটার খন্ডিত ব্যাখ্যা হয়তো দেয়া যায়- কিন্তু প্রেম-ভালোবাসার পুনরুৎপাদন করা যায় না।
@প্রদীপ দেব, এটা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে সব ধরণের রোমান্টিক আবেগকে বিনির্মাণ করলে যৌনতা পাওয়া যাবে(বলাই বাহুল্য, ইতিহাসে ও সাহিত্যে স্বতঃস্ফূর্ত প্লেটনিক প্রেমের কোন নজির নেই)। যৌনতা যেহেতু একটা প্রাকৃতিক অবভাস, তাই প্রেমের ব্যাপারটাও আজ হোক কাল হোক, বৈজ্ঞানিক স্ক্রুটিনির শিকার হতে বাধ্য।
আসলে মানুষের সার্বিক আচরণে প্রকৃতি আর সংস্কৃতির ইনডিভিডুয়াল ভূমিকা কতটুকু সেটাই হল প্রশ্ন। মানুষের আচরণের উপর এই দু’টোর প্রভাবের কোন নির্দিষ্ট অনুপাত বের না করা গেলেও একটা জেনারাইলজড এস্টিমেট কিন্তু ঠিকই প্রদান করা যায়। পৃথিবীতে এমন কোন সমাজ নেই যেখানে মানুষ সম্ভাব্য যৌনসংগীকে আকর্ষণ করার জন্য একটু হলেও সৌন্দর্য্য চর্চা করে না, এমন কোন সংস্কৃতি নেই যেখানে নারীর যৌনাংগ পুরুষের যৌনলালসার বিষয় হয় না। এই “হিউম্যান ইউনিভারসালগুলোর”(স্টিভেন পিংকারের ভাষায়) উপর কেবল জীববিজ্ঞানই আলোকপাত করতে পারে।
@ফরিদ আহমেদ, 😀 😀
কোথায় যেন পড়েছিলাম মানুষ নিজ “race”-এর প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি।
@ফরিদ আহমেদ,
নাকি বেল পাকলে কাকের কী?! :-s
@ফরিদ আহমেদ,
দেখি আপনার রসালো মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু রসদ যোগানো যায় কিনা।
আমার মনে হয় সাংস্কৃতিক বলি, ডাইভারশন বলি এর বাইরেও আকর্ষণের একটা সার্বজনীন রূপ কিন্তু আছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন সংস্কৃতি ব্যাপারটা জৈবিক নিয়মেই বিবর্তনের উপজাত হিসেবে তৈরি হয়েছে, সেজন্য সাংস্কৃতিক ভিন্নতা নয়, সাংস্কৃতিক মিলগুলোই আসলে মূখ্য। খেয়াল করলেই দেখবেন, সব সংস্কৃতিতেই অযাচিত গর্ভধারণের ঝুট ঝামেলা পোহাতে হয় মূলতঃ মেয়েদেরই, সেজন্য কোন সংস্কৃতিতেই অভিভাবকেরা ছেলেদের সতীত্ব নিয়ে পেরেশান করেন না, যতটুকু করে থাকেন মেয়েদের সতীত্বের ব্যাপারে (একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, মেয়েদের সতীত্ব নিয়ে রক্ষনশীল সমাজে গড়ে উঠেছে নানা ট্যাবুও)। কোন সংস্কৃতিতেই গড়পরতা ছেলেরা তন্বি তরুণী বাদ দিয়ে বিগতযৌবনা নারীর প্রতি বেশী যৌন আকর্ষণবোধ করে না, কিংবা কোন সংস্কৃতিতেই কেউ প্রতিসম চেহারা ফেলে অপ্রতিসম চেহারাকে সুন্দর বলে মনে করে না। কোন সংস্কৃতিতেই কর্মঠ পুরুষ বাদ দিয়ে অলস, কর্মবিমুখ, ফাঁকিবাজ, অথর্ব পুরুষের প্রতি মেয়েরা বেশি লালায়িত হয় না। এগুলো আমরা কম বেশী সবাই জানি। আমরা আরো জানি, মেয়েরা সাহারণতঃ তাদের চেয়ে বেঁটে ছেলে সঙ্গি হিসেবে পছন্দ করে না, সেটা আপনি আম্রিকা, ক্যানাডাতেই থাকেন আর বাংলাদেশেই থাকেন। এ ছাড়া ম্যাটেরিয়াল স্ত্যাটাস এবং রিসোর্সের বিষয়েও পছন্দ অপছন্দের বেশ কিছু সারবজনীন রূপ পাওয়া গেছে মানব সমাজে।
তবে কিছু জায়গায় পার্থক্য যে পাওয়া যায়নি তা হয়। একটি ব্যাপার আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন – মেয়েদের মোটা চিকন হবার ব্যাপারটা। আপনি ঠিকই বলেছেন। পশ্চিমে যে ভাবে ‘হাড্ডিসার’ (আপনার কথা মতো) নায়িকার জয়জয়কার, আমাদের দেশগুলাতে তা নেই, অন্ততঃ ছিলো না কিছুদিন আগেও। ববিতা, অলিভিয়ারা যে ফিগার নিয়ে দেদারসে আপনাদের মতো ‘ভরাট শরীরাকাংক্ষি’ দের হৃদয় মন জয় করছে, তা নিঃসন্দেহে সাংস্কৃতিক ভিন্নতার বাস্তব প্রমাণ।
তবে আমার একটা হাইপোথিসিস আছে এ নিয়ে 🙂 । যে সমস্ত দেশে অভাব অনটন লেগেই আছে, আর খাদ্যস্বল্পতা লাগাম ছাড়া – সেসমস্ত দেশের স্বপ্ন কন্যা নায়িকাদেরও ফিগারও হয় মাশাহাল্ললাহ -হিস্তিনীমনোহারিনীরূপিনী। হুমায়ুন আজাদের মতে আপনাদের মত ভরাট শরীরের জন্য বুভুক্ষু মানুষেরা নাকি সিনেমা হলে যায় নায়িকাদের দেখতে নয়, তাদের খাদ্যস্বল্পতার বিপরীতে লালায়িত স্বপনকে জাগ্রত করার জন্য। মনে হয় মোটা তাজা মেয়েই আপনাদের চোখে হয়ে দাঁড়ায় খাদ্যহীন রাজ্যে আপনার স্বপ্নকন্যার প্রকৃষ্ট ‘ফিটনেস মার্কার’। কী আর করবেন! 🙂
আপনার বলা ভরাট শরীর নিয়ে আরর কথা না বাড়াই। 🙂 তবে আপনার সব ছেড়ে কেন শাড়ী পরা বাঙ্গালী রমনীই বেশি ভাল লাগে তার একটা জৈবিক ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে মনে হয়। রৌরব এর মধ্যেই একটু ইঙ্গিত দিয়েছেন অবশ্য। মানুষ সাধারণতঃ একই ‘রেস’ এর মানুষকে একটু বেশি করে ভাল লাগায়, কারণ তাদের মধ্যে জন্মগত কিছু ‘রেসিজম’ এর ছোয়া থেকেই যায়! কিন্তু কেন?
ঠিক আমরা যে কারণে সন্তান কিংবা পিতামাতা এবং পরিবারের মঙ্গলের জন্য জৈবিক তাড়না অনুভব করি, ঠিক একই কারণে স্বজাতিমোহেও উদ্বুদ্ধ হই। ‘স্বজাতি’ ব্যাপারটা আর কিছুই নয় আমাদের ‘এক্সটেন্ডেড জেনোটাইপের’ দ্বারা নির্ধারিত ‘এক্সটেন্ডেড পরিবার’ (extended family)। বিবর্তনের মূল কাজই হচ্ছে যত বেশি সংখ্যক প্রতিলিপি তৈরি করা আর ‘নিজস্ব’ জিনপুলকে রক্ষা করে চলা। কাজেই বিবর্তনে আমাদের সেই সমস্ত প্রচেষ্টাই ‘অধিক হারে’ উপযোগিতা পাবে, যেটি সদৃশ কিংবা কিংবা সমরূপ জিনকে রক্ষা করে চলবে। জোসেফ এম হুইটমেয়ার নামের এক বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষনা করছিলেন বহুদিন ধরেই। তিনি বলেন, গানিতিকভাবে এটি দেখানো যায় যে, একটি জিন সেই দিকেই ঝুঁকে পড়বে কিংবা টিকে থাকার উপযোগিতা দেখাবে যেখানে এটার বাহক, বা তার সন্তান সন্ততি কিংবা নাতিপুতির সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জিনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা থাকবে (Whitmeyer Joseph M. 1997. “Endogamy as a Basis for Ethnic Behavior.” Sociological Theory 15 2: 162-178.)। হুইটমেয়ারের যুক্তি হল, এথনিক গ্রুপগুলো আসলে পরষ্পরের সম্পর্কিত ‘বর্ধিত পরিবার’ (extended family) বই কিছু নয়, কারণ তাদের দূরবর্তী সদস্যদের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্কের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
ঠিক এই কারণেই সম্ভবতঃ বাংগালী আমেরিকায় পাড়ি দিয়েও বাঙ্গালি কমিউণিটি খুঁজে ফিরি, অফিসেও দেখা যায় ইন্ডিয়ানরা একসাথে নিজেরা লাঞ্চে যায়, চৈনিকেরাও তাদের স্বজাতি খুঁজে ফেরে। ব্যাপারটি আর কিছুই নয়, ‘বর্ধিত পরিবার’হিসেবে বিবেচনা করে জিনপুল রক্ষার প্রচেষ্টা। আর আপনার শাড়ী পরা বংগালি রমনী পছন্দের মূল কারণও ঠিক ঐখানে!
সিরিজটা অবশ্যই চলবে…
আমার একটা প্রশ্ন আছে, আচ্ছা ঠিক কখন থেকে নারী পুরুষের শরীরের গঠন এমন আলাদা হতে শুরু করেছিল? প্রথম থেকেই? একই প্রশ্ন অন্য প্রাণীদের লিঙ্গভেদে শারীরিক গঠনে পার্থক্য নিয়েও…এমন জোড়ায় জোড়ায় একই প্রাণী কিভাবে কেন সৃষ্টি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা কি দেয়া যায়?
@লীনা রহমান,
জীবজগতে সেক্সের উদ্ভব প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর থেকে ২ বিলিয়ন বছর আগে সূচিত হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। নারী পুরুষে পার্থক্যসূচক ব্যাপারগুলো তৈরি হয়েছিলো তখন থেকেই। সেক্সের উদ্ভবের পেছনে কারণ কি তা নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে রেডকুইন হাইপোথিসিস এ ক্ষেত্রে অগ্রগন্য – যা বলে জনপুঞ্জে ডাইভারসিটি বাড়িয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি সহায়তা করেছিলো।
সবকিছু যে জোরায় জোরায় হয়েছে তা কিন্তু নয়। প্রানীজগতের একেবারে গোড়ার দিকে কিছু পর্ব হল – প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা। এই সমস্ত প্রাণিদের বেশিরভাগই উভলিঙ্গ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite) , কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষজননাঙ্গের সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোন শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’। এরা এদের উভলিঙ্গত্ব নিয়েই স্বাভাবিক বংশবিস্তারে সক্ষম । আমার ‘সমকামিতা‘ বইয়ে প্রকৃতি থেকে অনেক উভকামিতা, উভলিঙ্গত্ব এবং রূপান্তরকামিতার উদাহরণ হাজির করেছিলাম। পড়ে দেখতে পারেন।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য এবং সিরিজটা চালানোর পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ!
@অভিজিৎ, আমি জোড়ায় জোড়ায় কথাটা বলে বিশেষভাবে মানুষের কথা জানতে চেয়েছিলাম। আপনার সমকামিতা বইটায় উভকামিতা, উভলিঙ্গত্ব, রূপান্তরকামিতার অংশটুকু পড়েছি। সেটা নিয়ে ছিলনা আমার প্রশ্নটা। আপনি বলেছেন
এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে চাই। কোন সহজবোধ্য লেখার লিঙ্ক দিতে পারেন?? দুর্বোধ্য হলেও দিয়েন, দেখি চেষ্টা করে, বুঝি কিনা 🙂
@লীনা রহমান,
মানুষেরটা তো আলাদা কিছু নয়। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে সেক্সের উদ্ভবের সাথে সাথেই নারী পুরুষে বিভাজন হয়ে যায়, আর সেই ধারা চলতে থাকে পরবর্তী প্রজাতিগুলোতে এবং প্রানী জগতে মাছ, উভচর, সরিসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রজাতিগুলোর মধ্যে। মানুষের মধ্যে আলাদা করে পুনর্বার বিভাজন ঘটার প্রয়োজন পড়েনি।
এ বিষয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে ম্যাট রিডলীর রেড কুইন বইটা। এ ছাড়া উইকি থেকেও দেখতে পারেন।
আর আমাদের বিবর্তন আর্কাইভে ‘বিবর্তন যৌনতা বা সেক্সের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না‘ এই ভ্রান্ত ধারণার উত্তরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করে হয়েছে। এটা দিয়ে শুরু করতে পারেন।
@কা. রহমান,
গু, মুত টয়লেটে ফ্লাসের( বিচারের) অপেক্ষায় আছি। তারপর ভালবাসাবাসি চলিবে নির্ভয়ে।
ভালবাসা দিবসে হাতের কাছে আপনাকে একটা লাল ফুইল (F) । না নিলে আরেকজনকে পাস কইরা দিয়েন।
@হেলাল,
নিলাম। পাসা পাসির দরকার নাই।অন্তত দূর্গন্ধ এড়াতে তো কাজে লাগুক। :))
সিরিজটা চলবে কি চলবেনা তা নিয়ে চলুন দেশের কয়েকজন সেরা রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃত ব্যক্তিত্বের মতামত নিয়ে আসি।
হু মু এরশাদ: আমি ক্ষ্যামতায় আসলে অভিজিতের এ লেহাটাকে জাতীয় লেখায় পরিনত করমু এবং লেহার পুরস্কার স্বরুপ তাকে বাসস্থানের জইন্য একটাকায় হাদিয়ায় সংসদ ভবন লিজ দিয়া দিমু।
আ মু বাই: ভালোবাসারে আমি ভাল পাই। অভিজিতরে এ লেখার পুরস্কার স্বরুপ আমার পাহাড়ের একটা বাংলো এবং আমার নতুন একজন নায়িকা দিতে মন্চায়।
জয়বাবা হাজারী: আমি সংসদে থাকলে অভিজিতকে ভালবাসার মিনিস্টার করার প্রস্তাব করতাম।
মুত নিজামী: না উওযুবিল্লাহ মিন জালেক। তারে দেশ থাইক্কা বাইর করা আমার নেক্স্ট নির্বাচনী ওয়াদা।
গু আজম: আসলে তার এ লেহার কারণ হল তার মন উচাটন হইছে। তার দরকার একজন কচি বউ। আমাদের নবীজি ফুরুসদের জইন্য কচি বউ মাসালা দিয়া গেছে যাতে সারাদিন তাদের সাথে ফুইরতি কইরা এ সব হাবিজাবি লিখবার সময় না পায়।
–প্রতিবেদক: হুজুর এ লেখা মুক্তমনায় দিলে বন্যাপু আমারে ঝারু পেটা করার সমুহ সম্ভাবনা আছে।
গু আজম: না লায়েক, জানস না মাইয়া লোকের কথার গুরুত্ব দিতে নাই।
পাঠক দেখা যাচ্ছে, চলবে জয় যুক্ত হয়েছে। সুৎরাং লেখা চলুক।
@হেলাল,
গোলাম আজামের সংক্ষিপ্ত এই গু আজম নামটা হেব্বি পছন্দ হয়ছে। এইটাও চলুক। 🙂
মুক্তমনার বর্তমান ব্যানার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা আছে একটা। হলদে রঙের হোমো হাবিলিস টাইপের ব্যক্তিটি উল্টো দিকে হেঁটে চলেছে কেন?
@রৌরব, এই প্রশ্নটা কেউ না কেউ করবে বলেই আশা করেছিলাম। যাক করলেনই যখন… প্রশ্নটার দুরকম উত্তর আছে, পুরোপুরি নির্ভর করছে কখন আমি কীরকম মুডে আছি তার উপর। আর অভিজিতের বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার এই মনোরম পোষ্টে এসে উত্তরটা দিতে বাধ্য করালেন দেখে মুডটা ভালো থাকার কোনই কারণ নেই। খারাপ মুডের সহজাত এবং সৎ উত্তরটা হল ‘জানি না’ 😀 এই ছবিটা darwinday.org থেকে নেওয়া, ওরা জানে, ওদেরকে জিজ্ঞেস করেন :)) ।
আর এখন যদি আমি ভালো মুডে থাকতাম তাহলে এরকম কিছু একটা বলতাম মনে হয়… সামনে পিছনে আগে পিছে উলটো সোজা আঁকাবাকা সবভাবেই বিবর্তন ঘটতে পারে। আসলে তো এর কোন উলটো বা সোজাও নেই। স্ক্রিনের বাঁ দিকে তাকিয়ে আছে মানেই উলটো কেন? বিবর্তনের গতির তো কোন সামনে পিছনে নেই। চারদিকের পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়ে বংশবৃদ্ধি করে বংশাণু সঞ্চালন করতে পারলেই টিকে থাকবেন না হলে হাপিশ হয়ে যেতে হবে।
@বন্যা আহমেদ,
আমার কিন্তু মন্দ মুডের জবাবটাই ভাল লাগছে 😉
এই মুহূর্তে আবার দেখছি হোমো হাবিলিস নেই।
প্রেম যখন এতই রাসায়নিক, তাহলে পুজিবাদি উৎপাদকেরা কবে নাগাদ প্রয়োজনীয় হরমোনগুলো একসাথে করে প্রেম ট্যাবলেট মার্কেটে ছাড়বে বলে মনে করেন? এই ঔষধ কি ঈশ্বরধর্ম ট্যাবলেটের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারবে?
আপনার বৈজ্ঞানিক ভালবসার লেখাটা শচিন কত্তার গানের মত তুলনাহীন। (D)
:-s 😀
সে আর বলতে!
সিরিজ না চললে আমাদের সংগ্রাম চলবে।
আমি কিন্তু প্রেমের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা এখানে পেলাম না। আমার পাঠে পেলাম:
১. প্রেমের রাসায়ণিক ভিত্তি, অর্থাৎ কি কি হর্মোন বা মস্তিষ্কের কোন অংশের কার্যপ্রণালী প্রেমভাব জাগিয়ে তোলে
২. যেসব বৈশিষ্ট্যের প্রতি মানুষ যৌন আকর্ষণ বোধ করে, এবং ফলশ্রুতিতে (হয়ত) প্রেমে পড়ে (যদিও দুটি এক জিনিস নয়), তার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা
কিন্তু একটা সূত্র নেই। প্রেমের যে বিশেষ মানসিক অনুভূতি ও তজ্জনিত আচরণ, তার বিবর্তনীয় উৎপত্তি কেন হল? এই আচরণ ছাড়াও তো যৌন নির্বাচনের পুরো ব্যাপারটি conceivable।
যৌন নির্বাচনের ব্যাপারে একটা প্রশ্ন। মানুষের যৌন নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ দেখলাম, সেগুলিকে “যৌক্তিক” বলা চলে। অর্থাৎ এসব বৈশিষ্ট্য নির্বাচন আসলেই জীন-পুল রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।
কিন্তু ময়ুরের ক্ষেত্রে তো তা নয়। এটা কেন? ময়ুরীরা এই “ভুল” সৌন্দর্য্যবোধ লাভ করল কেন, কেন এই ভুল সৌন্দর্য্যবোধ নির্বাচিত হল?
@রৌরব, আমিও পড়তে পড়তে এগুলোই ভাবছিলাম…
@লীনা রহমান,
তাই বুঝি? এর ব্যাখ্যা পাবেন এখানে :)) :))
@রৌরব,
কিছু চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। কিছু টুকিটাকি আলোচনা করা যাক।
আসলে এলেখায় ‘প্রেমের বিবর্তনীয়’ ব্যাখ্যা বলে আলাদা কিছু এখানে খোঁজার চেষ্টা করা হয়নি। রাসায়নিক ভিত্তির পাশাপাশি, সৌন্দর্যের ধারণা, মেটিং চয়েস, ফার্টিলিটি ফ্যাকটর থেকে শুরু করে প্যায়ার বন্ডিং সহ অনেক কিছুই এসেছে। সব কিছু মিলিয়েই প্রেম। আসলে প্রেম ব্যাপারটা জটিল, এর পেছনে কেবল ‘ওয়ান টু ওয়ান’ সম্পর্ক খুঁজে কারণ বের করা যাবে না, অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়।
আবারও বলছি, পুরো ব্যাপারটিকে কেবল ‘ওয়ান টু ওয়ান’ ছকে ফেলে সমাধান করা বোধ হয় যাবে না। প্রেমের যে বিশেষ মানসিক অনুভূতির উদ্ভব এবং এর বিবর্তন কেন হল এর কোন সহজ উত্তর নেই। তবে যে ব্যাপারগুলো বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন তার মধ্যে ‘হিউম্যান পেয়ার বন্ডিং’ অন্যতম একটি কারণ। আপন বোধ হয় জানেন যে, স্তন্যপায়ী প্রানীরদের বিভিন্ন প্রজাতিতে পুরুষেরা সধারণতঃ বহুগামী হয়, আর মেয়েরা পার্টনার নির্বাচনে ব্যাপারে অধিকতর খুঁতখুঁতে। এই ধারাবাহিকতা মানব সমাজেও কিছুটা আছে। এখানেও ছেলেদের বহুগামীত্ব মেয়েদের চেয়ে বেশি (এর ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিকভাবে দেয়া সম্ভব । জৈববৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করলে স্পার্ম সহজলভ্য, তাই কম দামী, আর সে তুলনায় ডিম্বানু অনেক মূল্যবান। ‘স্পার্ম অনেক সহজলভ্য’ বলেই সাধারণভাবে পুরুষদের একটা সহজাত প্রবণতা থাকে বহু সংখ্যক জায়গায় তার প্রতিলিপি ছড়ানোর। একজন পুরুষ তার সারা জীবনে অসংখ্য নারীর গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে পারে, অপরদিকে একজন নারী বছরে জন্ম দিতে পারে কেবল একটি সন্তানেরই)। তবে মানব সমাজে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট উদ্ভুত হয়েছে যা স্তন্যপায়ী এমনকি অন্য প্রাইমেটদের মধ্যেও কম। একটি হচ্ছে মানব সমাজে খুব দীর্ঘস্থায়ী এবং স্টেবল যুগল বন্ধনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এবং এটির চর্চা মিলিয়ন বছর ধরেই চলছে। এর একটা বড় কারণ, অন্য স্তন্যপায়ী জীবের তুলনায় মানব শিশু খুব দুর্বলভাবে জন্ম নেয়। এর বেঁচে থাকার জন্য অভিভাবকের (বাবা এবং মায়ের উভয়েরই) নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হয়, একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত। অর্থাৎ ‘প্যায়ার বণ্ডিং’ এবং ‘প্যারেন্টাল কেয়ার’ খুব মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে মানব শিশুর বেঁচে থাকা তথা মানব বিবর্তনে। আমার মনে হয় ‘প্রেম’ এর ব্যাপারটা ঠিক এই জায়গাতেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। প্রেমের কারণেই মানব সমাজে একগামী দীর্গস্থায়ী বন্ধন তৈরি হয়েছে, যা প্রকারন্তরে শিশুকে দিয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা এবং পরিচর্্যা পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং আস্বাদন। আমার মনে হয় এটি প্রেম থাকার একমাত্র না হলেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। এর বাইরে আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, এবং আছে যদিও।
যৌনতার নির্বাচন আসলে প্রাকৃতিক নির্বাচন থেকে একটু আলাদা। এটি বেঁচে থাকায় বাড়তি উপাদান যোগ করে না, এটি বৈশিষ্ট হিসেবে থেকে যায় কেবল বিপরীত লিঙ্গের পছন্দ এবং অভিপ্রায়কে মূল্য দিয়ে। তারপরো, ময়ূরের যে পেখম বেঁচে থাকায় কোন সহায়তা দিচ্ছে না, সেটা কেন বিপরীত লিঙ্গের অর্থাৎ ময়ূরীর কাছে কাছে সৌন্দর্য হিসেবে প্রতিভাত হবে – এই প্রশ্ন করা যেতেই পারে। এর কারণ হল, যে ময়ূরের দীর্ঘ পেখম আছে, সে ময়ূর জেনেটিকভাবে অধিকতর ‘ফিট’ বলে ময়ূরীর কাছে প্রতিভাত হয়, কারণ, দীর্ঘ পেখম তৈরি এবং এবং এর অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে টিকে থাকায় কিছু বাড়তি শক্তি ব্যবহার করতে হয়। যারা এটা করতে পারে, ময়ূরীর কাছে তারাই ‘সুন্দর’! ইসরাইলী বিজ্ঞানী জাহাবির একটি প্রিন্সিপাল আছে – Handicap principle – এটা পড়ে দেখতে পারেন, এর ব্যাখ্যার জন্য।
তবে মোটা দাগে যৌনতার নির্বাচন কোন বাড়তি সুবিধা দেয়া না বেঁচে থাকায়। এগুলো কেবলই গয়নাগাটির মতো ‘অর্নামেন্টাল’ প্রোডাক্ট। ময়ূরের পেখমের মত মানব সমাজেও অনেক বৈশিষ্ট আছে যেগুলো অর্নামেন্টাল বা অলঙ্কারিক। কবিতা লেখা, গান করা থেকে শুরু করে গল্প বলা, গসিপ করা, ভাস্কর্য বানানো – প্রভৃতি হাজারো বৈশিষ্ট মানব সমাজে অলঙ্কারিক – এগুলো বেঁচে থাকায় কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেনি, কিন্তু এগুলো টিকে গেছে যৌন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে।
@অভিজিৎ,
Handicap principle এর ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
আবার যদি তরুন হতে পারতাম তবে অভিজিতের এই রচনাটি বগলে দাবা করে মেয়েদের সাথে ডেটিং করতাম।
ম্যানেজমেন্ট থিয়`রী পড়ার সময় জান`তে পারলাম যে খাদ্যের ক্ষুধার পর যৌন ক্ষুধা হচ্ছে সবচাইতে তাড়নাময়। এটা কেন থিওরী হল বুঝলাম না। কারণ আমরা সবাই জানতাম মনে মনে যে খাবার খাওয়ার পর আমরা কি চাইতাম। আরও একজনের থিওরীতে পড়লাম নারী পুরুষ উভয়েই প্রতি দশ মিনিট অন্তর যৌন সঙ্গমের চিন্তা করে।
এই বিশ্বের সব কর্মকাণ্ড হচ্ছে যৌন তাড়নার প্রতিফল। পুরুষ চায় কেমন করে মেয়েদের মন জয় করবে–আর মেয়েদের লক্ষ্য হচ্ছে কেমন করে এক বা একাধিক সুপুরষের যৌন মিলন ঘটিয়ে প্রজন্ম রক্ষা করা অথবা যৌনসুখ উপভোগ করা।
এটাই কি প্রকৃতির নিয়ম নয়?
অভিজিত এই প্রাকৃতিক নিয়মের সুন্দর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে খুব সাধারণ ভাষায়।
@আবুল কাশেম,
আমি তো শুনেছিলাম পুরুষেরা প্রতি ৬ সেকেণ্ডে একবার এই কাজ করে থাকে। পুরোপুরি বিশ্বাস্য মনে হয়েছিল ব্যাপারটিকে।
@রৌরব,
আপনি ঠিক লিখেছেন। আমার যতটুকু মনে আছে–ঐ যৌন গবেষক লিখেছিলেন যৌন সঙ্গমের চিন্তা প্রতিটি প্রাণীর সবচাইতে প্রধাণ চিন্তা থাকে—সকাল থেকে রাতে ঘুমানো পর্য্যন্ত। মানুষ তার ব্যতিক্রম নয়।
এই যৌন সঙ্গমের ইচ্ছা বা ফ্রিকুয়েনসি অনেক ব্যাপক। আপনি যা ্লিখেছেন ছয় সেকেণ্ড হতে পারে। তবে ঐ গবেষকের তথ্যটা ছিল গড়পড়তা। যেমন ধরুন, আমি মনে হয় প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর চিন্তা করি। বয়স বাড়লেও এই ফ্রিকুয়েন্সির তেমন বাড়তি দেখছি না।
এই ব্যাপারে আমার সাথে নবীজির বেশ মিল আছে। নবীজি রাস্তায় সুন্দরী, যৌনাবেদনময়ী নারী দেখলেই যৌন সঙ্গম করতে চাইতেন। এবং যয়নাবের কাছে চলে আসতেন তাড়া ড়ি কিছু করার জন্যে।
আমি নবীজির অনেক প্রশংসা করি এই জন্যে যে উনি নিজের যৌন ক্ষুধার ব্যাপারে খুব সৎ মনোভাব ব্যাক্ত করে গেছেন।
@অভিজিৎ রায়,
ভালবাসা,গান ও বিজ্ঞানের চমৎকার মিশ্রন।ভালবাসা দিবস উপলক্ষে যথার্থ
লেখাটি।পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
অভিজিতদা একটা প্রশ্ন, ভালবাসাই যদি যৌনতাই মুখ্য হয়, তাহলে আমরা সব মেয়ের প্রেমে পরিনা কেন ? যেখানে অন্য মেয়েকেও শারীরিক ভাবে কামনা করি।
@SHEIKH,
আমি কিন্তু আমার প্রবন্ধে বলেছি ‘সঠিক’ সঙ্গি নির্বাচনের গুরুত্বের কথা। সঠিক ব্যাপারটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকতা নির্ণয়ের জন্য সবার মাথাতেই কিছু না কিছু ক্যালকুলেশন চলে, থাকে শর্ট এবং লং টার্ম স্ট্র্যাটিজি সহ নানা টানাপোড়েন। এগুলোর ভিত্তিতেই অনেক সময় নির্ধারিত হয় শারিরীক কামনা কিংবা দীর্ঘস্থায়ীভাবে কারো সাথে থাকার বিষয়গুলো।
অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভবিষ্যতে অনেক কাজে দিবে। :)) :))
হেলেন ফিশার, লুসি ব্রাউনদের এই গবেষণার উপর ডিসকভারি চ্যানেলে একটা ডকুমেন্টারীতে দেখলাম- তারা দীর্ঘদিন ধরে সংসার করছেন এমন দম্পতিদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করেছেন। দেখা গেল, চোখের সামনে ভালবাসার মানুষটির ছবি উপস্থাপন করলে নতুন প্রেমে পড়া কোন ব্যক্তির মস্তিষ্কে যেভাবে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটে, দীর্ঘদিন ধরে সংসার করা জুটিদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।
আরেকটা পরীক্ষা তারা করেন বানজি ডাইভিং(শরীরে দড়ি বেঁধে উঁচু স্থান থেকে নিচে ঝাঁপ দেওয়া) করছে- এমন কয়েকজন তরুণীর উপর। ঐ তরুণীদেরকে একটি পুরুষের ফটোগ্রাফ দেখানো হয় এবং ছবিটিকে রেটিং দিতে বলা হয়।দেখা গেল, ডাইভ দেয়নি এমন তরুণীরা ছবিটিকে যে রেটিং দিচ্ছে, ডাইভ দেয়া তরুণীরা এর চেয়ে বেশি রেটিং দিচ্ছে।
অভিজিৎ দা, দারুণ দেখিয়েছেন বস! ভালোবাসা দিবসে এমন উপহার( আপনার লেখা) পাইতে বারবার মঞ্চায়! (Y)
পছন্দ হবে না মানে?! এমন লেখা কি পছন্দ না হয়ে পারে? যারা এই লেখা পছন্দ করবে না তাদের পছন্দ-অপছন্দের বিবেচনাবোধ নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়! তাদের জন্য রইল :ban:
এই লেখাটিই হতে পারে এবারের ভ্যালেন্টাইন্স ডের সেরা উপহার। (*)
অবশ্যই পছন্দ হবে। চলুক………..
অভিজিৎ,
দারুণ হয়েছে, :clap একেবারে নাচে-গানে ভরপুর! চলুক।
আচ্ছা, প্রেমের মরা জলে ডোবে না কেন? এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা কি? 😕
@ইরতিশাদ,
আসলে প্রেমের মরা তার সব প্রেম বিসর্জন দিয়ে ওজনে হাল্কা হয়ে যায়,যার ফলে তার আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে গিয়ে আর জলে ডুবতে চায় না!! :-X
@ইরতিশাদ ভাই,
প্রেমের মরা শুধু জলেই না, এমন কি মাটিতেও কবর দেওয়া যায় না। প্রেম হইল হারাম। এই কাম যারা করে তারা প্রেমিক/প্রেমিকার প্রেমে এতই দিওয়ানা হইয়া যায় যে নামাজ পড়তে পর্যন্ত খেয়াল থাকে না, মানে আল্লারে ভুইলা যায়। তারমানে সে আল্লার জায়গায় অন্যজনকে বসিয়ে তাকে ইবাদত করে। এই কুফরী কাজের প্রতিশোধ কত নির্মম হইতে পারে তা আমরা ফেরাউন(যদিও বলা নাই কত নম্বর)রে দেইখাই বুঝতে পাই। সুতরাং সময় থাকতে বাবারা সবধান। :)) 😀
আর এই কামে ইন্ধন দানকারী অভিজৎ রে যে আল্লায় কী করব হেইডা হেয়ই জানে। :))
@সাইফুল ইসলাম,
হাশরের ময়দানে শরিয়া মোতাবেক পাথর ছুড়িয়া ছুড়িয়া মারা হইবে।
@অভিজিৎ,
আর বুঝি কোন উপমা খুঁজে পেলেন না? বঙ্কিম বৃষ্টি ভেজা দাড়ি থেকে জল পড়ার উপমা দিলেন পেশাবের সাথে, আরেকজন মক্কার সাথে তুলনা করলেন বেশ্যালয়ের। সব চক্রান্ত, সব ষঢ়যন্ত্র। আচ্ছা আল্লায় এর বিচার করবো।
পুরুষের চোখে নারীর দেহগত সৌন্দর্যের ব্যাপারটাকে দেখাতে ইমানদার মানুষের ইমান নষ্ট হওয়ার, নামাজীর ওজু নষ্ট হওয়ার দুইটা ছবি দিলেন, আর নারীর চোখে পুরুষের দেহগত সৌন্দর্যের ছবি কই? পুরুষবাদী লেখার বিচারও আল্লায় একদিন করবো।
[img]http://www.istockphoto.com/file_thumbview_approve/1078707/2/istockphoto_1078707-muscle-man-4.jpg[/img]
ভালবাসার আরেক নাম নাকি বসন্ত। কোন এক সময় বসন্তের বাতাস লাগে গাছের, মাছের, পশুর, মানুষের গায়ে। বয়সের ঠিক কোন সময় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষ প্রেমের বা ভালবাসার আকর্ষণ টের পায়?
httpv://www.youtube.com/watch?v=4Bj7ilMi9RM&feature=player_embedded
প্রিয় অভিজিৎ,
তোমার লেখাটিতে মানবচিত্তের কোমলতম অনুভূতিগুলোর সঙ্গে কবিতা, গান, দর্শন আর বিজ্ঞান মিলে এক অনবদ্য আধুনিক রচনাতে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত তুমি ছাড়া আর কারো পক্ষেই সহজ হত না এত এত জ্ঞানের কথাকে প্রেমের ডালিতে করে এমন করে সাজিয়ে আনা। খুবই ভালো লাগল তোমার লেখাটি। মীজানভাই।
(Y)
:-Y
আমার এখনো লেখাটা পড়া হয় নাই। কিন্তু কমেন্টটা পড়তে গিয়ে দেখলাম শেষে এমন আছে । কিন্তু কেন??? এই লেখাটা কি পাঠক প্রিয় হওয়ার উদ্দেশ্যেই লেখা? এখানে কি লেখকের কোন মমতাবোধ বা আন্তরিকতা নাই?
আমার মতো যারা অনেক পড়ে মুক্তমনায় আসবে। আমি যেমন পুরনো লেখা গুলিও মাঝে মাঝে খুজে খুজে পড়ি। দুই বছর পর এই লেখাটাও তো কারো প্রিয় হতে পারে। জনপ্রিয়তা হওয়াই যদি একমাত্র হয়।
:guru: :guru:
দাদা বেশি পন্ডিতি করে ফেললাম নাতো???? :-s
অভিজিৎ দা, আবার জিগস? 😛
—
ভালবাসা দিবসে এই গানটি আপনার জন্য–
@বিপ্লব,
ধন্যবাদ। এলভিসের এই ‘লাভ মি টেন্ডার’ গানটা আমার সব সময়ই খুব পছন্দের। আমি এখনো ওল্ডিস গানের বিশাল ফ্যান।