বিশ্বাসের ভাইরাস নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে। নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখে প্রায় ৫০ জন ফিদাইন জঙ্গী সবমিলিয়ে তাজ হোটেল সহ মুম্বাইয়ের ৫ টা বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক আক্রমন করে আখচার গোলাগুলি করে নিমেষ মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ঘটনাবহুল ছিলো দিনটি। আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ প্রবন্ধটি ছিলো সেই ভয়াবহ দিনের ফলশ্রুতি। এর পর গঙ্গা যমুনার উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, কিন্তু ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’-এর প্রাসঙ্গিকতা ক্ষূন্ন হয়নি একবিন্দুও। আমার আজকের লেখাটি আগের চিন্তারই আরো পরিবর্ধন বলা যেতে পারে। সে হিসেবে এটি বিশ্বাসের ভাইরাসের ২য় পর্ব।
আসলে বিশ্বাসের ব্যাপারটি নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই চিন্তা করছি। বিশ্বাস কখনো একা একা পথ চলে না, বগলদাবা করে বয়ে নিয়ে বেড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে। তাই বিশ্বাসের কথা বলতে গেলে পাশাপাশি অবধারিতভাবে ধর্মের কথাও এসে পড়ে। বিশ্বাস এবং ধর্ম অনেকসময়ই খুব পরিপূরক, আমাদের সমাজে তো বটেই, পাশ্চাত্যেও। আর এ নিয়ে বহু খ্যাতনামা দার্শনিকই চিন্তাভাবনা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। স্পিনোজা থেকে ভলতেয়ার, ফুয়েরবাক থেকে মার্ক্স পর্যন্ত অনেকেই ভেবেছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মডেলও তুলে ধরা হয়েছে অনেক। বাংলা ভাষায়ও খুব বেশি না হলেও বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে। আরজ আলী মাতুব্বর লিখেছেন, লিখেছেন হুমায়ূন আজাদ, লিখেছেন আহমদ শরীফ, লিখেছেন প্রবীর ঘোষ কিংবা ভবাণীপ্রসাদ সাহু। প্রাচ্য এবং প্রতীচ্যের দার্শনিকেরা বিভিন্নভাবে ধর্মবিশ্বাস এবং সমাজে এর প্রভাবকে বিশ্লেষণ করলেও রিচার্ড ডকিন্সের ‘ভাইরাসেস অব দ্য মাইণ্ড’ রচনাটির আগে জৈববৈজ্ঞানিকভাবে ধর্মের মডেলকে বোঝা যায়নি[1]। এই প্রবন্ধ থেকে অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায় যে,ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রীতি নীতিগুলো অনেকটা ফ্লু-ভাইরাসের মতোই সংক্রমিত করে। সেজন্যই ধর্মের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ বহুকিছুই করে ফেলে, যা সুস্থ মস্তিস্কে কল্পনাও করা যায় না। বিখ্যাত বিজ্ঞানের দার্শনিক ডেনিয়েল ডেনেট ডকিন্সের এই ধারণাকেই আরো সম্প্রসারিত করে একটি বই লিখেছেন সম্প্রতি ‘ব্রেকিং দ্য স্পেল’ শিরোনামে[2]। ডেরেল রে সম্প্রতি লিখেছেন ‘গড ভাইরাস[3]’। রিচার্ড ব্রডি লিখেছেন ‘ভাইরাস অব দ্য মাইণ্ড'[4] প্রভৃতি। ডকিন্স নিজেও ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারগুলোকে মিম তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন, এবং ‘সেলফিশ জিন’[5] এবং সাম্প্রতিক ‘গড ডিলুশন’[6] বইয়ে তার সে সমস্ত ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে।
আমি আমার বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছি যে, মানবমনে প্রোথিত বিশ্বাসগুলো আসলে অনেকটাই ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইটের মতো কাজ করে। এদের আক্রমণে মস্তিস্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার বহু উদাহরণ আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। যেমন,
-নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক ফিতাকৃমি সদৃশ প্যারাসাইট ঘাস ফড়িং-এর মস্তিস্ককে সংক্রমিত করে ফেললে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, যার ফলশ্রুতিতে নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্মের প্রজননে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিজের প্রজননগত সুবিধা পেতে নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম বেচারা ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে[7]।
-জলাতংক রোগের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। পাগলা কুকুর কামড়ালে আর উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে জলাতংক রোগের জীবাণু মস্তিস্ক অধিকার করে ফেলে। ফলে আক্রান্ত মস্তিস্কের আচরণও পাগলা কুকুরের মতোই হয়ে উঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি অপরকেও কামড়াতে যায়। অর্থাৎ, ভাইরাসের সংক্রমণে মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
– ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইটের সংক্রমণের ফলে পিঁপড়া কেবল ঘাস বা পাথরের গা বেয়ে উঠা নামা করে। কারণ এই প্যারাসাইটগুলো বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোন গরু বা ছাগল একে ঘাসের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট টা নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে[8]।
নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম যেমনি ভাবে ঘাস ফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে, ঠিক তেমনি ধর্মের বিভিন্ন বাণী এবং জিহাদী শিক্ষা মানব সমাজে অনেকসময়ই ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইটের মত সংক্রমণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী করে তুলে। ফলে আক্রান্ত সন্ত্রাসী মনন বিমান নিয়ে আছড়ে পড়ে টুইন টাওয়ারের উপর, কখনো বা সিনেমা হলে, কখনোবা রমনার বটমূলে। নাইন ইলেভেনের বিমান হামলায় উনিশ জন ভাইরাস আক্রান্ত মনন ‘ঈশ্বরের কাজ করছি ‘ এই প্যারাসাইটিক ধারণা মাথায় নিয়ে হত্যা করেছিলো প্রায় তিন হাজার জন সাধারণ মানুষকে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর অধ্যাপক ব্রুস লিংকন, তার বই “হলি টেররসঃ থিংকিং এবাউট রিলিজিয়ন আফটার সেপ্টেম্বর ইলেভেন” বইয়ে বিষয়টির উপর আলোকপাত করে বলেন, “ধর্মই, মুহাম্মদ আত্তা সহ আঠারোজনকে প্ররোচিত করেছিল এই বলে যে, সংগঠিত বিশাল হত্যাযজ্ঞ শুধুমাত্র তাদের কর্তব্য নয়, বরং স্বর্গ থেকে আগত পবিত্র দায়িত্ব”[9]। হিন্দু মৌলবাবাদীরাও একসময় ভারতে রামজন্মভূমি অতিকথনের ভাইরাস বুকে লালন করে ধ্বংস করেছে শতাব্দী প্রাচীন বাবড়ি মসজিদ। এধরণের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাস থেকে হাজির করা যাবে, ভাইরাস আক্রান্ত মনন কিভাবে কারণ হয়েছিল সভ্যতা ধ্বংসের।
চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম নামে এক প্যারাসাইটের সংক্রমণে ঘাস ফড়িং পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে (বামে), ঠিক একইভাবে বিশ্বাসের ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত আলকায়দার ১৯ জন সন্ত্রাসী যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো টুইন টাওয়ারের উপর ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর (ডানে)। বিশ্বাসের ভাইরাসের বাস্তব উদাহরণ।
১১ই সেপ্টেম্বরের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পরে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স ফ্রি এনকোয়েরি পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘ Design for a Faith-Based Missile‘ নামে। তিনি সেই প্রবন্ধে আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের বিশ্বাস নির্ভর (ভাইরাসাক্রান্ত) বোমা হিসেবে অভিহিত করে লেখেন –
There is no doubt that the afterlife-obsessed suicidal brain really is a weapon of immense power and danger. It is comparable to a smart missile, and its guidance system is in many respects superior to the most sophisticated electronic brain that money can buy. Yet to a cynical government, organization, or priesthood, it is very very cheap.
ভাইরাস আক্রান্ত মনন : ইতিহাসে এবং সভ্যতায়
ভাইরাস আক্রান্ত বিধ্বংসি মননের উদাহরণ কেবল ৯-১১ এর ঘটনাই নয়, এর উদাহরণ রয়েছে বহু। ভাইরাস আক্রান্ত মননের চরম উদাহরণগুলো হাজির করলে বোঝা যাবে কিভাবে ধরণের মানসিকতাগুলো সমাজকে পঙ্গু করে দেয়, কিংবা কিভাবে সমাজের প্রগতিকে থামিয়ে দেয়। এর অজস্র উদাহরণ সাড়া পৃথিবী জুড়ে পাওয়া যাবে। কিছু প্রাচীণ সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন কোন নতুন প্রাসাদ কিংবা ইমারত তৈরি করা হত, তার আগে সেই জায়গায় শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত – এই ধারণা থেকে যে, এটি প্রাসদের ভিত্তি মজবুত করবে। অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্যজন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত। আফ্রিকার বহু জাতিতে হত্যার রীতি চালু আছে মৃত-পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য। ভারতে সতীদাহের নামে হাজার হাজার মহিলাদের হত্যা করার কথা তো সবারই জানা। এগুলো সবই মানুষ করেছে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে। এধরনের ‘ধর্মীয় হত্যা’ সম্বন্ধে আরো বিস্তৃতভাবে জানবার জন্য ডেভিড নিগেলের ‘Human Sacrifice: In History And Today’ বইটি পড়া যেতে পারে[10]। এগুলো সবই সমাজে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামক প্যারাসাইটের চাষ ছাড়া আর কিছু নয়। ইতিহাসের পরতে পরতে অজস্র উদাহরণ লুকিয়ে আছে – কিভাবে বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো আনবিক বোমার মতই মরণাস্ত্র হিসেবে কাজ করে লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। ধর্মযুদ্ধগুলোই তো এর বাস্তব প্রমাণ। কিছু নমুনা দেখা যাক[11] –
* ইতিহাসের প্রথম ক্রুসেড সংগঠিত হয়েছিলো ১০৯৫ সালে। সে সময় ‘Deus Vult’ (ঈশ্বরের ইচ্ছা) ধ্বনি দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে জার্মানীর রাইন ভ্যালিতে হত্যা করা হয় এবং বাস্তুচ্যুত করা হয়। জেরুজালেমের প্রায় প্রতিটি অধিবাসীকে হত্যা করা হয় শহর ‘পবিত্র’ করার নামে।
* দ্বিতীয় ক্রুসেড পরিচালনার সময় সেন্ট বার্নার্ড ফতোয়া দেন, ‘প্যাগানদের হত্যার মাধ্যমেই খ্রীষ্টানদের গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব’।
* প্রাচীন আরবে ‘জামালের যুদ্ধে’ প্রায় দশ হাজার মুসলিম নিহত হয়েছিল, তাদের আপন জ্ঞাতিভাই- মুসলিমদের দ্বারাই। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মুহম্মদ নিজেও বনি কুরাইজার ৭০০ বন্দিকে একসাথে হত্যা করেছিলেন বলে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।
* বাইবেল থেকে (নাম্ব্বারস ৩১ : ১৬-১৮) জানা যায়, মুসা প্রায় এক লক্ষ লোক এবং আটষট্টি হাজার অসহায় রমনীকে হত্যা করেছিলেন।
* রামায়নে রাম তার তথাকথিত ‘রাম রাজ্যে’ শম্বুককে হত্যা করেছিলেন বেদ পাঠ করার অপরাধে।
* প্রাচীন মায়া সভ্যতায় নরবলি প্রথা প্রচলিত ছিলো। অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মাথা কেটে ফেলে, হৃৎপিন্ড উপরে ফেলে, অন্ধকুপে ঠেলে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হত। ১৪৪৭ সালে গ্রেট পিরামিড অব টেনোখটিটলান তৈরির সময় চার দিনে প্রায় ৮০,৪০০ বন্দিকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিলো। শুধু মায়া সভ্যতাতে নয় – সারা পৃথিবীতেই এ ধরনের উদাহরণ আছে। পেরুতে প্রি-ইনকা উপজাতিরা ‘হাউজ অব দ্য মুন’ মন্দিরে শিশুদের হত্যা করতো। তিব্বতে বন শাহমানেরা ধর্মীয় রীতির কারনে মানুষ হত্যা করতো। বোর্নিওতে বাড়ির ইমারত বানানোর আগে প্রথম গাঁথুনিটা এক কুমারীর দেহ দিয়ে প্রবেশ করানো হত – ‘ভুমিদেবতা’কে তুষ্ট করার খাতিরে।
*প্রাচীন ভারতে দ্রাবিড়রা গ্রামের ঈশ্বরের নামে মানুষ উৎসর্গ করতো। কালিভক্তরা প্রতি শুক্রবারে শিশুবলি দিত।
* তৃতীয় ক্রুসেডে রিচার্ডের আদেশে তিন হাজার বন্দিকে – যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী এবং শিশু – জবাই করে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় ক্রুসেডের সময় সেন্ট বার্ণাড ফতোয়া দিয়েছিলেন – ‘প্যাগানদের হত্যার মাধ্যমেই খ্রীষ্টানদের মাহাত্ম্য সূচিত হবে। আর যীশুখ্রীষ্ট নিজেও এতে মহিমান্বিত হবেন’।
* ইসমাইলী শিয়া মুসলিমদের একটি অংশ এক সময় লুকিয়ে ছাপিয়ে বিধর্মী প্রতিপক্ষদের হত্যা করতো। এগারো থেকে তের শতক পর্যন্ত আধুনিক ইরান, ইরাক এবং সিরিয়ায় বহু নেতা তাদের হাতে প্রাণ হারায়। শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের আরেক দস্যুদল মোঙ্গলদের হাতে তাদের উচ্ছেদ ঘটে – কিন্তু তাদের বিভৎস কীর্তি আজও অম্লান।
* কথিত আছে, এগারো শতকের শুরুর দিকে ইহুদীরা খ্রীষ্টান শিশুদের ধরে নিয়ে যেত, তারপর উৎসর্গ করে তাদের রক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতো। এই ‘রক্তের মহাকাব্য’ রচিত হয়েছে এমনি ধরণের শত সহস্র অমানবিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে।
* ১২০৯ সালে পোপ তৃতীয় ইনসেন্ট উত্তর ফ্রান্সের আলবীজেনসীয় খ্রিষ্টানদের উপর আক্ষরিক অর্থেই ক্রুসেড চালিয়েছিলেন। শহর দখল করার পর যখন সৈন্যরা উর্ধ্বতনদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিলো কিভাবে বন্দিদের মধ্যে থেকে বিশ্বাসী এবং অধার্মিকদের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে। পোপ তখন আদেশ দিয়েছিলেন – ‘সবাইকে হত্যা কর।’ পোপের আদেশে প্রায় বিশ হাজার বন্দিকে চোখ বন্ধ করে ঘোড়ার পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ছ্যাচরাতে ছ্যাচরাতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।
* মুসলিমদের পবিত্র যুদ্ধ ‘জিহাদ’ উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে স্পেন পর্যন্ত রক্তাক্ত করে তোলে। তারপর এই জিহাদের মড়ক প্রবেশ করে ভারতে – আর তারপর চলে যায় বলকান (ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ান, অর্থডক্স সার্ব এবং মুসলিম বসনিয়ান এবং কসোভা) থেকে অস্ট্রিয়া পর্যন্ত।
* বার শতকের দিকে ইনকারা পেরুতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যে সাম্রাজ্যের পুরোধা ছিলেন একদল পুরোহিত। তারা ঈশ্বর কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ২০০ শিশুকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।
* ১২১৫ সালের দিকে চতুর্থ ল্যাটেরিয়ান কাউন্সিল ঘোষণা করে তাদের বিস্কুটগুলো (host wafer) নাকি অলৌকিকভাবে যীশুর দেহে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এর পর একটি গুজব রটিয়ে দেয়া হয় যে, ইহুদীরা নাকি সে সব পবিত্র বিস্কুট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এই গুজবের উপর ভিত্তি করে ১২৪৩ সালের দিকে অসংখ্য ইহুদীদের জার্মানীতে হত্যা করা হয়। একটি রিপোর্টে দেখা যায় ছয় মাসে ১৪৬ জন ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছিলো। এই ‘পবিত্র হত্যাযজ্ঞ’ চলতে থাকে প্রায় ১৮ শতক পর্যন্ত।
* বার শতকের দিকে সাড়া ইউরোপ জুড়ে আলবেজেনসীয় ধর্মদ্রোহীদের খুঁজে খুঁজে হত্যার রীতি চালু হয়। ধর্মদ্রোহীদের কখনো পুড়িয়ে, কখনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে কখনো বা শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট এই সমস্ত হত্যায় প্রত্যক্ষ ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। কথিত আছে ধর্মবিচরণ সভার সংবীক্ষক (Inquisitor) রবার্ট লী বোর্জে এক সপ্তাহে ১৮৩ জন ধর্মদ্রোহীকে হত্যার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
* বহু লোক সে সময় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ধর্মত্যাগ করেন, কিন্তু সে সমস্ত ধর্মত্যাগীদের পুরোনো ধর্মের অবমাননার অজুহাতে হত্যার আদেশ দেয়া হয়। স্পেনে প্রায় ২০০০ ধর্মত্যাগীদের পুড়িয়ে মারা হয়। কেউ কেউ ধর্মত্যাগ না করলেও ধর্মের অবমাননার অজুহাতে পোড়ানো হয়। জিওর্দানো ব্রুনোর মত দার্শনিককে বাইবেল-বিরোধী কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব সমর্থন করার অপরাধে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় সে সময়।
* ইতিহাস খ্যাত ‘ব্ল্যাক ডেথ’ যখন সাড়া ইউরোপে ১৩৪৮- ১৩৪৯ এ ছড়িয়ে পড়েছিলো, গুজব ছড়ানো হয়েছিল এই বলে যে, ইহুদীরা কুয়ার জল কিছু মিশিয়ে বিষাক্ত করে দেয়ায় এমনটি ঘটছে। বহু ইহুদীকে এ সময় সন্দেহের বশে জবাই করে হত্যা করা হয়। জার্মানীতে পোড়ানো দেহগুলোকে স্তুপ করে মদের বড় বড় বাক্সে ভরে ফেলা হয় এবং রাইন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। উত্তর জার্মানীতে ইহুদীদের ছোট্ট কুঠুরীতে গাদাগাদি করে রাখা হয় যেন তারা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়, কখনোবা তাদের পিঠে চাবুক কষা হয়। থারিঞ্জিয়ার যুবরাজ জনসমক্ষে ঘোষণা করেন যে, তিনি তার ইহুদী ভৃত্যকে ঈশ্বরের নামে হত্যা করেছেন; অন্যদেরকেও তিনি একই কাজে উৎসাহিত করেন।
* তের শতকে এজটেক সভ্যতা যখন বিস্তার লাভ করেছিলো, নরবলি প্রথার বিভৎসতার তখন স্বর্ণযুগ। প্রতি বছর প্রায় বিশ হাজার লোককে ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করা হত। তাদের সূর্যদেবের নাকি দৈনিক ‘পুষ্টি’র জন্য মানব রক্তের খুব দরকার পড়তো। বন্দিদের কখনো শিরোচ্ছেদ করা হত, এমনকি কোন কোন অনুষ্ঠানে তাদের দেহ টুকরো টুকরো করে ভক্ষণ করা হত। কখনোবা পুড়িয়ে মারা হত, কিংবা উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়া হত। বর্নিত আছে, তাদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এক অক্ষতযোনী কুমারীকে দিয়ে ২৪ ঘন্টা ধরে নাচানো হয়, তারপর তার গায়ের চামড়া তুলে ফেলে ফেলে পুরোহিত তা পরিধান করেন, তারপর আরো ২৪ ঘন্টা ধরে নাচতে থাকেন। রাজা আহুইতজোলের রাজাভিষেকে আশি হাজার বন্দিকে শিরোচ্ছেদ করে ঈশ্বরকে তুষ্ট করা হয়।
* ১৪০০ সালের দিকে ধর্মদ্রোহীদের থেকে চার্চের দৃষ্টি চলে যায় উইচক্রাফটের দিকে। চার্চের নির্দেশে হাজার হাজার রমনীকে ‘ডাইনী’ সাব্যস্ত করে পুড়িয়ে মারা শুরু হয়। এই ডাইনী পোড়ানো র রীতি এক ডজনেরও বেশি দেশে একেবারে গণহিস্টেরিয়ায় রূপ নেয়। সে সময় কতজনকে এরকম ডাইনী বানিয়ে পোড়ানো হয়েছে? সংখ্যাটা এক লক্ষ থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ ছড়িয়ে যেতে পারে। ঠগ বাছতে গা উজাড়ের মতই ডাইনী বাছতে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়া হয়েছে। সতের শতকের প্রথমার্ধে অ্যালজাস (Alsace) নামের ফরাসি প্রদেশে ৫০০০ ডাইনীকে হত্যা করা হয়, ব্যাম্বার্গের ব্যাভারিয়ান নগরীতে ৯০০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। ডাইনী পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ধর্মীয় উন্মত্ততা সে সময় অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দেয়।
* সংখ্যালঘু প্রোটেস্টেন্ট হুগেনটস ১৫০০ সালের দিকে ফ্রান্সের ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের দ্বারা নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়। ১৫৭২ সালে সেন্ট বার্থোলোমিও দিবসে ক্যাথেরিন দ্য মেদিসিস গোপনে তাদের ক্যাথলিক সৈন্য হুগেনটসের বসতিতে প্রেরণ করে আক্ষরিক অর্থেই তাদের কচুকাটা করে। প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে এই হত্যা যজ্ঞ চলতে থাকে আর এতে প্রাণ হারায় অন্ততঃ দশ হাজার হুগেনটস। হুগেনটসদের উপর সংখ্যাগুরু খ্রীষ্টানদের আক্রোস পরবর্তী দুই শতক ধরে অব্যাহত থাকে। ১৫৬৫ সালের দিকে একটি ঘটনায় হুগেনটসের একটি দল ফ্লোরিডা পালিয়ে যাবার সময় স্প্যানিস বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে – তাদের এলাকার সবাইকে ধরে ধরে হত্যা করা হয়।
* আবার ওদিকে পনর শতকে ভারতে কালিভক্ত কাপালিকের দল মা কালীকে তুষ্ট করতে গিয়ে অন্যদের শ্বাসরোধ আর জবাই করে হত্যা করত। এই কুৎসিৎ রীতির বলি হয়ে প্রাণ হারায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। এখনও কিছু মন্দিরে বলি দেওয়ার রীতি চালু আছে – তবে আধুনিক রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের গ্যাড়াকলে পড়ে ব্রাহ্মণ-পুরোহিতরা আর আগের মত মানুষকে বলি দিতে পারে না – সেই ঝাল ঝাড়া হয় নিরীহ পাঠার উপর দিয়ে। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েই আধুনিক যুগে এ ভাবে রক্তলোলুপ মা কালিকে তুষ্ট রাখা হয়।
* ১৫৮৩ সালে ভিয়েনায় ১৬ বছরের একটা মেয়ের পেট ব্যাথা শুরু হলে যীশুভক্তের দল তার উপর আট সপ্তাহ ধরে এক্সরসিজম বা ওঝাগিরি শুরু করে। এই যীশুভক্ত পাদ্রীর দল ঘোষণা করেন যে, তারা মেয়েটির দেহ থেকে ১২,৬৫২ টা শয়তান তাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। পাদ্রীর দল ঘোষণা করে যে, মেয়েটির দাদী কাঁচের জারে মাছির অবয়বে শয়তান পুষতেন। সেই শয়তানের কারনেই মেয়েটার পেটে ব্যাথা হত। দাদীকে ধরে নির্যাতন করতে করতে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় যে দাদী আসলে ডাইনী, শয়তানের সাথে নিয়মিত ‘সেক্স’ করেন তিনি। অতঃপর দাদীকে ডাইনী হিসেবে সাব্যস্ত করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। এটি তিন শতক ধরে ডাইনী পোড়ানোর নামে যে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে পোড়ানো হয়েছিল, তার সামান্য একটি নমুনামাত্র।
* এনাব্যাপ্টিস্টরা এক সময় ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টেন্ট অথোরিটিদের দ্বারা স্রেফ কচুকাটা হয়েছিলেন। জার্মানির মুন্সটারে এনাব্যাপ্টিস্টরা এক সময় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর ‘নতুন জিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করে ফেলে । ওদিকে আবার পাদ্রী মোল্লারা এনাব্যাপ্টিস্টদের বিরুদ্ধে সসস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে এবং শহরেরে পতনের পর এনাব্যাপ্টিস্ট নেতাদের হত্যা করে চার্চের চূড়ায় লটকে রাখা হয়।
* প্রটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাকথলিকদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ১৬১৮ সালে শুরু হয়ে ত্রিশ বছর যাবৎ চলে। এ সময় পুরো মধ্য ইউরোপ পরিণত হয়েছিল বধ্য ভূমিতে। জাম্ম্রানীর জনসংখ্যা ১৮ মিলিয়ন থেকে ৪ মিলিয়নে নেমে আসে। আরেকটি হিসেব মতে, জনসংখ্যার প্রায় ত্রিশ ভাগ (এবং পুরুষদের পঞ্চাশ ভাগ) এ সময় নিহত হয়েছিলো।
* ইসলামের জিহাদের নামে গত বার শতক ধরে সাড়া পৃথিবীতে মিলিয়নের ওপর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথম বছরগুলোতে মুসলিম বাহিনী খুব দ্রুতগতিতে পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম মরোক্ক পর্যন্ত আগ্রাসন চালায়। শুধু বিবর্মীদেরি হত্যা করেনি, নিজেদের মধ্যেও কোন্দল করে নানা দল উপদল তৈরি করেছিল। কারিজিরা যুদ্ধ শুরু করেছিলো সুন্নিদের বিরুদ্ধে। আজারিকিরা অন্য স্কল ‘পাপীদের’ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো। ১৮০৪ সালে উসমান দান ফোডিও, সুদানের পবিত্র সত্ত্বা, গোবির সুলতানের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ শুরু করে। ১৮৫০ সালে আরেক সুদানীয় সুফি উমর-আল হজ্জ প্যাগান আফ্রিকান গোত্রের উপরে নৃশংস বর্বরতা চালায় – গনহত্যা এবং শিরোচ্ছেদ করে ৩০০ জন বন্দির উপর। ১৯৮০ সালে তৃতীয় সুদানীয় ‘হলি ম্যান’ মুহাম্মদ আহমেদ জিহাদ চালিয়ে ১০,০০০ মিশরীয় লোকজন হত্যা করে।
* ১৮০১ সালে রোমানিয়ার পাদ্রীরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে ১২৮ জন ইহুদীকে হত্যা করে।
* ভারতে ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সালের মধ্যে ৮১৩৫ নারীকে সতীদাহের নামে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় (প্রতিবছর হত্যা করা হয় গড়পরতা ৫০৭ থেকে ৫৬৭ জনকে)।
* ১৮৪৪ সালে পার্শিয়ায় বাহাই ধর্মপ্রচার শুরু হলে কট্টরপন্থি ইসলামিস্টরা এদের উপর চড়াও হয়। বাহাই ধর্মের প্রবর্তককে বন্দি এবং শেষপর্যন্ত হত্যা করা হয়। দুই বছরের মধ্যে সেখানকার মৌলবাদী সরকার ২০,০০০ বাহাইকে হত্যা করে। তেহেরানের রাস্তাঘাট আক্ষরিক অর্থেই রক্তের বন্যায় ভেসে যায়।
* বার্মায় ১৮৫০ সাল পর্যন্ত মানুষকে বলি দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। যখন রাজধানী মান্দালায় সরিয়ে নেয়া হয়, তখন নগর রক্ষা করার জন্য ৫৬ জন ‘নিষ্কলুষ’ লোককে প্রাচীরের নীচে পুতে ফেলা হয়। রাজ জ্যোতিষীরা ফতোয়া দেয় যে নগর বাঁচাতে হলে আরো ৫০০ জন নারী, পুরুষ এবং শিশুকে বলি দিতে হবে। সেই ফতোয়া অনুযায়ী বলি দেয়া শুরু হয় এবং ১০০ জনকে বলি দেয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপে সেই বলিপ্রথা রদ করা হয়।
* ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে এনফিল্ড রাইফেলের কার্ট্রিজ, যেটাতে শুয়োর আর গরুর চর্বি লাগানো ছিলো বলে গুজব রটানো হয়, তাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা শুরু হয় এবং নির্বিচারে বহু লোককে হত্যা করা হয়।
* ১৯০০ সালে তুর্কী মুসলিমেরা খ্রীষ্টান আর্মেনিয়ানদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।
* ১৯২০ সালে ক্রিস্টেরো যুদ্ধে ৯০ হাজার মেক্সিকান মৃত্যুবরণ করে।
* ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় প্রায় ১ মিলিয়ন লোক মারা যায়। এমনকি ‘মহাত্মা’ গান্ধীও দাঙ্গা রোধ করতে সফল হননি, এবং তাকেও অঘোরে হিন্দু ফ্যানাটিক নথুরাম গডসের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
* ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে খ্রীস্টান,এনিমিস্ট এবং মুসলিমদের মধ্যে পারষ্পরিক দ্বন্দ্বে ৫০০,০০০ লোক মারা যায়।
* ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্বপাকিস্তানের বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা চালায়, নয় মাসে তারা প্রায় ৩ মিলিয়ন লোককে হত্যা করে, ধর্ষণ করে ২ লক্ষ নারীকে। যদিও এই যুদ্ধের পেছনে মদদ ছিলো রাজোনৈতিক, তারপরেও ধর্মীয় ব্যাপারটিও উপেক্ষনীয় নয়। পশ্চিমপাকিস্তানীদের বরাবরই অভিযোগ ছিলো যে, পূর্ব পকাস্তানীরা ‘ভাল মুসলমান’ নয়, এবং তারা ভারতের দালাল।
* ১৯৭৮ সালে গায়ানার জোন্সটাউনে রেভারেণ্ড জিম জোন্স সেখানে ভ্রমণরত কংগ্রেসম্যান এবং তিনজন সাংবাদিককে হত্যার পর ৯০০ জনকে নিয়ে আত্মহত্যা করে, যা সারা পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে দেয়।
* ইসলামী আইন মোতাবেক চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কেটে ফেলার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। সুদানে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে প্রায় ৬৬ জনকে ধরে প্রকাশ্যে হাত কেটে ফেলা হয়। মডারেট মুসলিম নেতা মোহাম্মদ তাহাকে ফাঁসিতে লটকে মেরা ফেলা হয় -কারণ তিনি হাত কেটে ফেলার মত বর্বরতার প্রতিবাদ করেছিলেন।
* সৌদি আরবে ১৯৭৭ সালে কিশোরী প্রিন্সেস এবং তার প্রেমিককে ‘ব্যাভিচারের’ অপরাধে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানে ১৯৮৭ সালে এক কাঠুরিয়ার মেয়েকে ‘জেনা’ করার অপরাধে পাথর ছুড়ে হত্যার ফতোয়া দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে আরব আমীরাতে একটি বাড়ির গৃহভৃত্য এবং দাসীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার ফতোয়া দেয়া হয়, অবৈধ মেলামেশার অপরাধে।
* নাইজেরিয়ায় ১৯৮২ সালে মাল্লাম মারোয়ার ফ্যানাটিক অনুসারীরা প্রতিপক্ষের শতাধিক লোকজনকে ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করে, আর তাদের রক্তপান করে।
* ১৯৮৩ সালে উত্তর আয়ারল্যাণ্ডে ক্যাথোলিক সন্ত্রাসীরা প্রোটেস্টেন্ট চার্চে ঢুকে গোলাগুলি করে প্রোটেস্টেন্ট অনুসারীদের হত্যা করে। দাঙ্গায় প্রায় ২৬০০ লোক মারা যায়।
* হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ভারতে নিত্য নৈমন্তিক ব্যাপার। ১৯৮৩ সালে আসামে এরকম একটি দাঙ্গায় ৩,০০০ জন মানুষ মারা যায়। ১৯৮৪ সালে এক হিন্দু নেতার ছবিতে কোন এক মুসলিম জুতার মালা পরিয়ে দিলে এ নিয়ে পুনরায় দাঙ্গা শুরু হয়, সেই দাঙ্গায় ২১৬ জন মারা যায়, ৭৫৬ জন আহত হয়, আর ১৩,০০০ উদ্বাস্তু হয়। কারাবন্দী হয় ৪১০০ জন।
* লেবাননে ১৯৭৫ সালের পর থেকে সুইসাইড বোম্বিং সহ নানা সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় ১৩০,০০০ জন লোক মারা গেছে।
* ইরানের মৌলবাদী শিয়া সরকার ঘোষণা করে যে সমস্ত বাহাই ধর্মান্তরিত না হবে, তাদের হত্যা করা হবে। ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে প্রায় ২০০ জন ‘গোঁয়ার’ বাহাইকে হত্য করা হয়, প্রায় ৪০,০০০ বাহাই দেশ ছেড়ে পালায়।
* শ্রীলঙ্কা বিগত শতকের আশি আর নব্বইয়ের দশকে বৌদ্ধ সিংহলী আর হিন্দু তামিলদের লড়াইয়ে আক্ষরিক অর্থেই নরকে পরিণত হয়।
* ১৯৮৩ সালে জেরুজালেমের ধর্মীয় নেতা মুফতি শেখ সাদ ই-দীন এল আলামী ফতোয়া দেন এই বলে যে, কেউ যদি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আজাদকে হত্যা করতে পারে, তবে তার বেহেস্ত নিশ্চিত।
* ভারতে আশির দশকে শিখ জনগোষ্ঠি নিজেদের জন্য পাঞ্জাব এলাকায় আলাদা ধর্মীয় রাজ্য ‘খালিস্তান’ (Land of the Pure) তৈরির পায়তারা করে আর এর নেতৃত্ব দেয় শিখ চরমপন্থি নেতা জারনাইন ভিন্দ্রানওয়ালা, যিনি তার অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন যে, প্রতিপক্ষকে ‘নরকে পাঠানো’ তাদের পবিত্র দায়িত্ব। চোরাগোপ্তাভাবে পুরো আশির দশক জুড়েই বহু হিন্দুকে হত্যা করা হয়।
* ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হলে সাড়া ভারত জুড়ে শিখদের উপর বীভৎস তাণ্ডবলীলা চালানো হয়।তিন দিনের মধ্যে ৫০০০ শিখকে হত্যা করা হয়। শিখদের বাসা থেকে উঠিয়ে, বাস থেকে নামিয়ে, দকান থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়, কখনো জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়।
* ১৯৮৯ সালে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ নামের উপন্যাস লেখার দায়ে সালমান রুশদিকে ফতোয়া দেয়া হয় ইরাণের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেনীর পক্ষ থেকে। বইটি না পড়েই মুসলিম বিশ্বে রাতারাতি শুরু হয় জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডব। ইসলামকে অবমাননা করে লেখার দায়ে এর আগেও মনসুর আল হাল্লাজ, আলী দাস্তি, আজিজ নেসিন, উইলিয়াম নেগার্ড, নাগিব মাহফুজ,তসলিমা নাসরিণ,ইউনুস শায়িখ, রবার্ট হুসেইন, হুমায়ুন আজাদ, আয়ান আরসি আলী সহ অনেকেই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ বা হয়েছেন পলাতক।
* ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর রামজন্মভূমি মিথকে কেন্দ্র করে হিন্দু উগ্রপন্থিরা শত বছরের পুরোন বাবড়ি মসজিদ ধ্বংস করে। এর ফলশ্রুতিতে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, এর প্রভাব পড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও।
* ১৯৯৭ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়ায় স্বর্গের দ্বার (Heaven’s Gate) নামে এক ‘ইউএফও’ ধর্মীয় সংগঠনের ৩৯ জন সদস্য একযোগে আত্মহত্যা করে, জীবনের ‘পরবর্তী’ স্তরে যাবার লক্ষ্যে।
* বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিলো শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমশঃ হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫% , ১৯৭৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, এবং ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হিন্দুদের শতকরা হার কমে ৮ ভগের নীচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়।
* ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারের উপর আল কায়দা আত্মঘাতী বিমান হামলা চালায়, এই হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বসে পড়ে, মারা যায় ৩০০০ আমেরিকান নাগরিক।
* ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, উদ্বাস্তু হয় প্রায় ১৫০,০০০ মানুষ । নারী নির্যাতন প্রকট আকার ধারণ করে। বহু মুসলিম কিশোরী এবং নারীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
* ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বেছে বেছে হিন্দুবাড়ীগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়। পূর্ণিমা রানীর মত বহু কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার প্রথম ৯২ দিনের মধ্যে ২২৮টি ধর্ষণের ঘটনা, এবং পরবর্তী তিনমাসে প্রায় ১০০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ ছিলো হিন্দু কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।
* বিএনপি জামাত কোয়ালিয়েশন সরকারের সময় বাংলা ভাই এর নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতার (জ়ে এম. জ়ে) উত্থান ঘটে। তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একটি ঘটনায় একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে গাছের সাথে উলটো করে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে মিথ্যা প্রচারনা চালানো হয়।
* ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রথাভাঙ্গা লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা চালায় মৌলবাদী জ়েএম.বি। চাপাতি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলা হয় তার দেহ, যা পরে তাকে প্রলম্বিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
* ২০০৪ সালের ২রা নভেম্বর চিত্র পরিচালক থিও ভ্যান গগকে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি এবং ছুরিকাহত করে হত্যা করে মুসলিম সন্ত্রাসী মোহাম্মদ বোয়েরি। সাবমিশন নামের দশ মিনিটের একটি ‘ইসলাম বিরোধী’ চলচিত্র বানানোর দায়ে তাকে নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই ছবির সাথে জড়িত থাকার কারণে নারীবাদী লেখিকা আয়ান হারসি আলীকেও মৃত্যু পরোয়ানা দেয়া হয়।
* বাংলাদেশে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সামান্য ‘মোহাম্মদ বিড়াল’ নিয়ে কৌতুকের জের হিসেবে ২১ বছর বয়সী কার্টুনিস্ট আরিফকে জেলে ঢোকানো হয়, বায়তুল মোকারমের খতিবের কাছে গিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনার নাটক প্রদর্শিত হয়।
ইত্যাদি। বলা নিষ্প্রয়োজন, উপরের লিস্টিটি কেবল বিগত শতকের কতিপয় বিশ্বাসের ভাইরাস সংক্রান্ত সহিংসতা আর নিপীড়ণের আলোকচ্ছটামাত্র, সিন্ধুর বুকে বিন্দুসম। ধর্মীয় সহিংসতার পুরো ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে গেলে তা নিঃসন্দেহে মহাভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে।
বিশ্বাস এবং লো- আইকিউ
বহুদিন ধরেই এ ব্যাপারটা প্রচলিত যে, অবিশ্বাসীরা সাধারণতঃ বিশ্বাসীদের চেয়ে অধিকতর বুদ্ধিদীপ্ত এবং ‘স্মার্ট’ হয়ে থাকে। বাংলা ব্লগগুলোতে কেউ বিশ্বাসের সাফাই গাওয়া ‘তালগাছ মার্কা’ নিম্নমানের প্রবন্ধ লিখলে অবধারিত ভাবে ‘ছাগু’ খেতাব প্রাপ্ত হন, এবং তাকে ‘কাঁঠাল পাতা’ চিবানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এগুলো আমরা চোখের সামনেই দেখি। কিন্তু সেটার স্বপক্ষে কোন কারণ বা ব্যাখ্যা ছিলো না। সম্প্রতি বিভিন্ন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের চালান কিছু জরিপে চাঞ্চল্যকর কিছু ফলাফল এবং ব্যাখ্যা উঠে এসেছে। লণ্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী সাতোসি কানাজাওয়ার চালানো সাম্প্রতিক গবেষণা (Social Psychology Quarterly, Vol. 73, No. 1, 33–57 ) থেকে জানা গেছে নাস্তিক (Atheist) এবং উদারপন্থিরা (liberal) সাধারণতঃ ধার্মিক (theist) এবং রক্ষণশীলদের (conservative) চেয়ে অনেকবেশী বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে। সোশাল সাইকোলজি কোয়ার্টারলি জার্নালে ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘Why Liberals and Atheists Are More Intelligent’ শীর্ষক গবেষনাপত্রে অধ্যাপক কানাজাওয়া দেখিয়েছেন যে, ধার্মিক হিসেবে দাবীদার ব্যক্তিদের চেয়ে নাস্তিকদের আইকিউ গড়পরতা অন্ততঃ ৬ পয়েন্ট বেশি থাকে, আর রক্ষণশীল গ্রুপের চেয়ে উদারপন্থি বা প্রগতিশীল গ্রুপের আইকিউ বেশি থাকে অন্ততঃ ১২ পয়েন্ট[12]।
চিত্রঃ ধার্মিকতার প্রকোপ যত বাড়ে পাল্লা দিয়ে কমে আইকিউ। যেমন চরম নাস্তিকদের গড়পরতা আইকিউ পাওয়া গেছে ১০৩.০৯। আর চরম ধার্মিকদের আইকিউ ৯৭.১৪। কাজেই নাস্তিক হিসেবে দাবীদার ব্যক্তিদের চেয়ে আস্তিকদের আইকিউ গড়পরতা অন্ততঃ ৬ পয়েন্ট কম থাকে।
চিত্রঃ রক্ষণশীল গ্রুপের চেয়ে উদারপন্থি বা প্রগতিশীল গ্রুপের আইকিউ অন্ততঃ ১২ পয়েন্ট বেশি থাকে।
ব্যাপারটি অধ্যাপক কানাজাওয়া বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করেছেন তার প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এবং ব্লগে [13],[14]। তিনি তার ব্যাখ্যা বলেছেন, বিশ্বাস ব্যাপারটা একসময় টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় সড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিলো, সে জন্য যে কোন সংস্কৃতিতেই ধর্ম এবং বিশ্বাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, এবং যে কোন সমাজেই ধার্মিকদের সংখ্যাও নাস্তিকদের চেয়ে সাধারণতঃ বেশি (যদিও নাস্তিকদের সংখ্যা আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান)। আর আদিম ট্রাইবগুলোতে খুঁজলে দেখা যাবে সেখানে যাদু টোনা থেকে শুরু করে নরবলি, কুমারী নিধন সহ হাজারো অপবিশ্বাসের সমাহার। সে দিক থেকে চিন্তা করলে নাস্তিকতা, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমস্কতা, লিবারেলিজম প্রভৃতি উপাদানগুলো বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে মানব সমাজের জন্য অপেক্ষাকৃত নতুন সংযোজন (evolutionarily novel phenomenon)। এবং যাদের মস্তিস্ক এই নতুন নতুন পরিবর্তনগুলো ধারণ করার জন্য বেশী নমনীয়, তারাই বুদ্ধিদীপ্ত হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। সেজন্যই নাস্তিকেরা যে কোন সমাজেই আস্তিকদের থেকে বেশি স্মার্ট হিসেবে আবির্ভুত হয়, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ‘সাভানা অনুকল্প’ অনুযায়ী এটা ঘটে বলে গবেষনাপত্রে দাবী করা হয়েছে। সেজন্যই একজন বিশ্বাসী সারা প্যালিন কিংবা অধুনা ‘উইচ’ হিসেবে খ্যাত ক্রিস্টিন ওডেনেলের চেয়ে বৌদ্ধিক মননে একজন রিচার্ড ডকিন্স কিংবা একজন বিল মার অনেক এগিয়ে থাকেন আজকের দুনিয়ায়।
চিত্রঃ একজন প্রথাগত রক্ষণশীল বিশ্বাসীর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকেন একজন সচেতন লিবারাল নাস্তিক – বৌদ্ধিক মনন, যুক্তি, বাস্তবতা এবং স্মার্টনেসে।
লেখাটা লিখতে গিয়ে একটা মজার বিষয় মনে পড়লো। আমেরিকার প্রচন্ড রক্ষণশীল ফক্স চ্যানেলের নিউজ হোস্ট শন হ্যানিটি আর বিল ও রাইলি প্রতিদিনই মার্কিন জনগণকে মনে করিয়ে দেন যে কিভাবে ‘লিবারেল মিডিয়া’ সবকিছু অধিকার করে মগজ ধোলাই করছে! কথাটা যে খুব বেশি মিথ্যা তা অবশ্য নয়। হলিউড সিনেমা থেকে শুরু করে (ফক্স বাদে) প্রায় প্রতিটি নিউজ চ্যানেলই মোটামোটি লিবারেলদের দখলে বলা যায়। পাশাপাশি শো বিজনেস, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, এক্টিভিজম থেকে শুরু করে একাডেমিয়াও মোটামুটি লিবারেলরাই রাজত্ব করছে। আসলে এর কারণ খুব সহজ। মিডিয়া লিবারেলদের হাতে চলে যাচ্ছে কারণ তারা রক্ষণশীলদের চেয়ে তারা বেশি বুদ্ধিমান, চৌকষ, বুদ্ধিদীপ্ত এবং অধিকতর বেশি উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। বাংলাদেশেও কবি সাহিত্যিক সহ যারা শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির সাথে জড়িত থাকেন তাদের মধ্যে উদারপন্থি লোকের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে, এবং তাদের মধ্যেই অবিশ্বাসী মুরতাদদের সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়।
অবিশ্বাসীরা স্মার্ট শুধু নয়, গবেষণায় দেখা গেছে নৈতিক দিক দিয়েও অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। নাস্তিক এবং প্রগতিশীল পরিবারে শিশু নির্যাতন কম হয়, তারা নারী নির্যাতন কম করে থাকে, তাদের পরিবারে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কম, তারা একগামী সম্পর্কে আস্থাশীল থাকে, তারা পরিবেশ সচেতন থাকে ধার্মিকদের চেয়ে ঢের বেশি। সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সচেতনতাও বিশ্বাসীদের তুলনায় নাস্তিকদের মধ্যে অনেক বেশি[15]। এর কারণ, অবিশ্বাসীরা সাধারণতঃ বৈজ্ঞানিক যুক্তি, মানবতা এবং বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন, কোন অন্ধবিশ্বাসের বলে নয়।
বিশ্বাস ও দারিদ্র্য
বিশ্বাস শুধু মানসিক ভাবেই ব্যক্তিকে পঙ্গু এবং ভাইরাস আক্রান্ত করে ফেলে না, পাশাপাশি এর সার্বিক প্রভাব পড়ে একটি দেশের অর্থনীতিতেও। সাম্প্রতিক বহু গবেষণায়ই বেরিয়ে এসেছে যে দারিদ্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত (অগাস্ট, ২০১০) গ্যালোপ জরিপ থেকে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে হতদরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব সর্বাধিক[16]। আপনার বিশ্বাস প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় কোন প্রভাব ফেলে কিনা, এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে যে জরিপ চালানো হয়, তাতে দেখা যায় পৃথিবীর সর্বাধিক দারিদ্রকিষ্ট দেশগুলো থেকেই ‘হ্যা বাচক’ উত্তর উঠে এসেছে। আর তালিকাতে প্রথমেই আছে বাংলাদেশের নাম।
চিত্র: গ্যালোপ জরিপ থেকে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে হতদরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেই ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব সর্বাধিক
সম্প্রতি উপরের এই গ্যালোপ জরিপের উপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক একটি সম্পাদকীয় প্রাকশিত হয়েছে[17]। কলামিস্ট চার্লস ব্লো সম্পাদকীয়টিতে বলেন,
একশতটি দেশের মধ্যে ২০০৯ সালে গ্যালোপ জরিপ চালানো হয়েছে এবং দেখা গেছে দারিদ্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসের একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে। ধনী দেশগুলো কম ধর্মপ্রবণ, আর দরিদ্র দেশগুলোতেই ধর্মান্মোদনা বেশি দৃশ্যমান’।
নিউইয়র্ক টাইমসের উক্ত প্রবন্ধটিতে চমৎকার একটি গ্রাফও সংযুক্ত হয়েছে, যেটি নিজেই দারিদ্র্যের সাথে ধর্মবিশ্বাসের সম্বন্ধকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট –
চিত্রঃ গ্যালোপ জরিপের উপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিশ্লেষণমূলক একটি সম্পাদকীয় প্রাকশিত হয়েছিলো। গ্রাফটি সেই প্রবন্ধ হতে সংগৃহিত।
উপরে গ্রাফের গড়পরতা পয়েন্টগুলোর ট্রেণ্ড বিশ্লেষণে আনা যেতে পারে। যদি কেউ কোন দেশের ধর্মীয় প্রভাব এবং পার ক্যাপিটা গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের প্লট একটি বক্ররেখার মাধ্যমে তুলে ধরেন তবে রেখচিত্রটি দাঁড়াবে অনেকটা এরকম –
চিত্রঃ দেশের ধর্মীয় প্রভাব বনাম পার ক্যাপিটা জিডিপির প্লট করলে দেখা যায় প্রায় সব দেশের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্মীয় প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক প্রাচুর্য কমছে।
এই গ্রাফটি নিয়ে আমরা মুক্তমনা ব্লগে আগেও অনেক আলোচনা করেছিলাম। এটি অধ্যাপক ভিক্টর স্টেঙ্গরের ‘নিউ এথিজম’ বইয়ে আছে। ইন্টারনেটেও অনেক সাইটে গ্রাফটি পাওয়া যাবে[18]।
গ্রাফটি লক্ষ্য করলেই পাঠকেরা দেখবেন যে, আমেরিকা এবং কুয়েতের মত দু’ একটি দেশ ছাড়া বাকী সব কমবেশী দেশই এই গ্রাফের কোরিলেশন সর্মথন করে। আমেরিকা অন্যতম স্বচ্ছল দেশ (গড়পরতা জিডিপি $৪৬,০০০) হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের প্রভাব বেশি। ধনসম্পদে শীর্ষস্থানীয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির ধর্মীয় প্রভাবের পরিমাপ দারিদ্রক্লিষ্ট মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা কিংবা চিলির সারিতে রয়ে গেছে। কেন এই ব্যতিক্রম তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। একটি কারণ তো অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী চেতনার বিকাশ। একটি দেশ যখন ক্ষমতার শীর্ষে উঠে যায়, সামরিকভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠে, তখন আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলো হারাতে থাকে। গ্রীক এবং রোমান সভ্যতার শেষদিকেও একই ব্যাপার ঘটেছিলো। এর বাইরে, আরেকটি বড় কারণ, আমেরিকার পুঁজিবাদ ধর্ম জিনিসটাকেও আভ্যন্তরীণভাবে ‘ব্যবসা’র পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। এখানে চার্চকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়, তা আসলে ধর্মীয় পরিবৃত্তির বাইরে গিয়েও সাধারন জনগনকে আকৃষ্ট করে। সধারাণ বসন্ত উৎসব (ফল ফেস্টিভাল) থেকে শুরু করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ক্লাসিকাল পিয়ানো বাজনার বেশিরভাগই এখানে চার্চকেন্দ্রিক। এই ‘আমেরিকান এনোমালি’ আর অস্বাভাবিক উপায়ে অর্জিত তেল চুকচুকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কথা বাদ দিলে ধর্ম এবং দারিদ্র্যের একটা স্পষ্ট সম্পর্কই পাওয়া যায়। নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশ এবং এ সংক্রান্ত প্রযুক্তির উত্থানের ফলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তেলের দাম পড়ে গেলে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও এভাবে ব্যতিক্রম হিসেবে থাকবে না বলাই বাহুল্য। এই দু একটি এনোমালি তথা ‘অস্বাভাবিকতা’ বাদ দিলে গ্রাফ থেকে ধর্ম এবং দারিদ্র্যের একটা স্পষ্ট সম্পর্কই কিন্তু পাওয়া যায়। গ্রাফ দেখলে যে কেউ বুঝবে – যে দেশে ধর্মীয় প্রভাব যত বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য, আর ধর্মীয় প্রভাব যেখানে কম মানুষের স্বচ্ছলতাও বেশী। ব্যাপার কী?
ব্যাপার তো সাদা চোখেই বোঝা যাবার কথা। যে সমস্ত দেশ যত দারিদ্রক্লিষ্ট, সে সব দেশেই ধর্ম নিয়ে বেশি নাচানাচি হয়, আর শাসকেরাও সে সব দেশে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সেজন্যই দারিদ্র্যক্লিষ্ট তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্ম খুব বড় একটা নিয়মক হয়ে কাজ করে সবসময়েই। কিংবা ব্যাপারটা উল্টোভাবেও দেখা যেতে পারে – ধর্মকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়া, কিংবা লম্ফ ঝম্ফ করা, কিংবা জাগতিক বিষয় আশয়ের চেয়ে ধর্মকে মাত্রাতিরিক্ত বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণেই সে সমস্ত দেশগুলো প্রযুক্তি, জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে, এবং সর্বোপরি দরিদ্র। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকার মোল্লাদের তোয়াজে রাখতে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছিলো। যে দেশ জাগতিক বিষয় আশয়ের চেয়ে ঠুনকো বিশ্বাস নিয়েই মত্ত থাকে, সে দেশ অর্থ বৈভব জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত হয়ে যাবে – এটা কি আশা করা যায়? ধর্মের রশি আমাদের পেছনে টেনে রেখেছে অনেকটাই।বিশ্বাসের ভাইরাসের এর চেয়ে বড় কুফল আর কী হতে পারে!
বিশ্বাসে মিলায় দারিদ্র্য, আর অবিশ্বাসে বহুদূর!
তথ্যসূত্র
[1] Richard Dawkins, Viruses of the Mind, available online: http://cscs.umich.edu/~crshalizi/Dawkins/viruses-of-the-mind.html
[2] Daniel C. Dennett, Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon, Penguin, 2007
[3] Darrel W. Ray, The God Virus: How religion infects our lives and culture, IPC Press, 2009
[4] Richard Brodie, Virus of the Mind: The New Science of the Meme, Hay House; Reprint edition, 2009
[5] Richard Dawkins, The Selfish Gene, Oxford University Press, 1976
[6] Richard Dawkins, The God Delusion, Houghton Mifflin Harcourt, 2006
[7] Shaoni Bhattacharya, Parasites brainwash grasshoppers into death dive, New Scientists, August 2005
[8] Daniel C. Dennett, Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon, Penguin , 2007
[9] Bruce Lincoln, Holy Terrors: Thinking about Religion after September 11, University Of Chicago Press; 1 edition, 2003
[10] Nigel Davies, Human Sacrifice–In History and Today, William Morrow & Co; 1981
[11] বেশ কিছু উদাহরণ নেয়া হয়েছে Holy Horrors: An Illustrated History of Religious Murder and Madness, James A. Haught, Prometheus Books, 1990 থেকে, সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং মুক্তমনা সাইট থেকে।
[12] Satoshi Kanazawa, Why Liberals And Atheists Are More Intelligent, Social Psychology Quarterly, Vol. 73, No. 1, 33–57
[13] Satoshi Kanazawa, Why Liberals Are More Intelligent Than Conservatives, Psychology Today, March 21, 2010
[14] Satoshi Kanazawa, Why Atheists Are More Intelligent than the Religious, Psychology Today, April 11, 2010
[15] আমেরিকায় বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে নাস্তিকদের চাইতে পুনরুজ্জীবিত খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশী (Barna Research Group, 1999 study দ্রঃ); এও দেখা গিয়েছে যে, যে পরিবারের পরিবেশ ধর্মীয়গতভাবে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল সে সমস্ত পরিবারেই বরং শিশুদের উপর পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের দ্বারা বেশী যৌণ নিপীড়ন হয় । ১৯৩৪ সালে আব্রাহাম ফ্রান্সব্লাউ তার গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন ধার্মিকতা এবং সততার মধ্যে বরং বৈরী সম্পর্কই বিদ্যমান। ১৯৫০ সালে মুরে রসের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, ধার্মিকদের তুলনায় নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীরাই বরং সমাজ এবং মানুষের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন, তাদের উন্নয়নের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ১৯৮৮ সালে ভারতের জেলখানায় দাগী আসামীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপের যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল অবাক করার মত। দেখা গিয়েছে, আসামীদের শতকরা ১০০ জনই ঈশ্বর এবং কোন না কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী । আমেরিকায়ও এরকম একটি জরিপ চালানো হয়েছিল ৫ ই মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে। সে জরিপে দেখা গেছে যে আমেরিকার জনসাধারণের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ (৮-১০%) ধর্মহীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কম (মাত্র ০.২১%), সে তুলনায় ধার্মিকদের মধ্যে শতকরা হিসেবে অপরাধপ্রবণতা অনেক বেশী । এ সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে মাইকেল শারমারের The Science of Good and Evil: Why People Cheat, Gossip, Care, Share, and Follow the Golden Rule (Times Books; 1st edition (February 2, 2004) গ্রন্থে।
[16] Religiosity Highest in World’s Poorest Nations, Gallup’s global reports, August 31, 2010।
[17] Charles M. Blow, Religious Outlier, The Newyork Times, Published: September 3, 2010 [18] World Publics Welcome Global Trade — But Not Immigration, Summary of Findings, http://pewglobal.org/2007/10/04/world-publics-welcome-global-trade-but-not-immigration/
বি.দ্রঃ লেখাটির কিছু অংশে রায়হান আবীরের গুরুত্বপুর্ণ কিছু ইনপুট আছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানিদের মধ্যে শতকরা কতভাগ নাস্তিক ? (যদি কোন সূত্র থাকে তবে ভাল হয়)
৫০ জন নয়। আমার জানা মতে ১০ জন জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল মুম্বাইয়ে। যার ৯ জনকে মেরে ফেলা হয়েছিল।। আজমল কাসভ নামের এক জঙ্গিই শুধু জীবিত আটক হয়েছিল।
লেখার অন্যান্য অংশ সম্বন্ধে আমার যা বলার পূর্বের মন্তব্যগুলোতেই সবাই বলে দিয়েছেন। বিশ্বাসের ভাইরাসের ১ম লেখাটিও খুব ভাল লেগেছিল। যেসকল অঞ্চলে মুক্তচিন্তা ও সহনশীলতাকে প্রাধান্য দেয়া হয় সেসব অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলনামূলক গোঁড়া ও রক্ষণশীল অঞ্চলের থেকে উন্নত হয় একথা আমি আমার সহপাঠিদের বোঝানোর চেষ্টা সবসময়ই করি, যদিও কোন ইতিবাচক ফলের আশা করি না। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি সবচেয়ে কম সেখানে অপরাধের হারও অনেক কম। সুইডেনে মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সফরে নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রটোকলের কোন প্রয়োজন হয় না। ফিনল্যান্ডে শতকরা ৬১ ভাগ নাগরিকের লাইসেন্স করা বন্দুক আছে। যে হার সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। অথচ এই দেশেই বন্দুকের গুলির শব্দ সবচেয়ে কম শোনা যায়।
ধার্মিকদের ধর্মীয় সহনশীলতার যে তালিকা আপনি দিয়েছেন সেটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। রামায়নের ঘটনাটা বাস্তব না হলেও সেটার প্রয়োজন আছে। যেটা আমি উপরে উল্লেখ করেছি।
বিশ্বজুড়ে জিহাদিদের পবিত্র কাজকর্মের পরিসংখ্যান রাখে আমার অন্যতম পছন্দের এই শান্তির ধর্ম সাইটটি। এখানে পাঠকরা আরও তথ্য পেতে পারেন।
বিশ্বাসের ভাইরাস কি জিনিস তা বিভিন্ন বাংলা ব্লগে ধর্ম বিষয়ক আলাপ আলোচনা পড়লেই বোঝা যায়,এত জ্ঞানগর্ভ লেখা পড়ার প্রয়োযন হয় না 🙂 ।
ঘাস ফড়িং এর আত্মহত্যার যে উদাহরন দিলেন তাদের ক্ষেত্রে তো মনে হয় যে এই ভাইরাস আক্ষরিক অর্থেই ভাইরাস। মানুষের ক্ষেত্রে তো তা না, বলা যায় মানসিক ভাইরাস।
– এই ফলাফল তোখুবই গুরুত্বপূর্ন। এই বিষয়ের উপর আরো গবেষনা দরকার। আর অন্য কোন গবেষনালব্ধ ফল আছে? নাকি আবার উলটো দিকেও এই রকম গবেষনার ফল পাওয়া যাবে?
দারিদ্রের কারনে মানুষ ধার্মিক হয়, নাকি ধার্মিক হবার কারনে দরিদ্র হয়? কুয়েতের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলি ব্যাতিক্রমের তালিকায় আসেনি কেন?
ইশ্বর বা কোনরকম ধর্মীয় বিশ্বাস যাদের নেই তাদের হাতেও অনেক ভয়াবহ ম্যাসাকার হয়। এদের ব্যাপারে ব্যাখ্যা কি?
@আদিল মাহমুদ,
চমৎকার কিছু মন্তব্য করেছেন। উত্তর না দেয়াটাই শোভন হবে। চেষ্টা করছি ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু কুলায় দিতে। বিশেষত পরিসংখ্যান গুলো নিয়ে আলাদা ভাবে বলা দরকার।
নাস্তিকদের চেয়ে পুনরুজ্জীবিত খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয় – ব্যাপারটা আমাকেও অবাক করছে। কিন্তু আমি অন্ততঃ দুটো গবেষণার হদিস পেয়েছি যেটার ফলাফল একই দিকে ইঙ্গিত করছে। জর্জ বার্নার ১৯৯৬ এবং ১৯৯৯ সালের স্টাডি আছে এ নিয়ে, আমি তথ্যসূত্রে সেটি উল্লেখ করছি। অন্য গুলো খুব বেশি অবাক করেনি। রক্ষণশীল পরিবারেই যে শিশু নিপীড়ণ বেশি হয়, হনর কিলিং বেশি হয়, এমন কি যৌন নির্যাতনও – সেটি খুব বেশি অবাক হবার মট কিছু নয়। প্রতিদিনের পরিসংখ্যানেই এগুলো উঠে আসে। ১৯৩৪ সালে আব্রাহাম ফ্রান্সব্লাউ তার গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন ধার্মিকতা এবং সততার মধ্যে বরং বৈরী সম্পর্কই বিদ্যমান (Abraham Franzblau, “Religious Belief and Character Among Jewish Adolescents,” Teachers College Contribution to Education, no. 634 (1934)) । ১৯৫০ সালে মুরে রসের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, ধার্মিকদের তুলনায় নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীরাই বরং সমাজ এবং মানুষের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন, তাদের উন্নয়নের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন (Religious Beliefs of Youth: A Study and Analysis of the Structure and Function of the Religious Beliefs of Young Adults, Based on a Questionnaire Sample of 1,935 Youth and Intensive Interviews with 100 Young People (Association Press, 1950)ট্রাভিস হার্সির একটি স্টাডিতে দেখা গেছে রক্ষণশীল পরিবারের লোকেরাই অধিকতর অপরাধের সাথে যুক্ত থাকে ( Measuring Delinquency. Beverly Hills, CA: Sage. Hirschi, Travis,; Rodney Stark. Hirschi, Travis and Rodney Stark. 1969. “Hellfire and Delinquency”, 1981) । ।প্রবীর ঘোষের স্টাডি আছে আর অলৌকিক নয় লৌকিক বইয়ে ইত্যাদি।
এখন ঊঠতে হচ্ছে আপনার অন্য মন্তব্যগুলো নিয়ে আলোচনা করছি সামনে …
@আদিল মাহমুদ,
গবেষণালব্ধ কোন ফলাফল নয়, কোন তথ্য-উপাত্ত্ব থেকে নয়, নিছক আমার মনের ধারনা থেকে বলি- দারিদ্রের কারণে মানুষ ধার্মিক হয় কথাটা সত্য কিন্তু ধার্মিক হবার কারণে দরিদ্র হয়, কথাটার মাঝে ভেজাল আছে। কারণ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ধনবানদের ধর্মবিশ্বাস, ধর্মচর্চা, ধর্মানুভুতি দরিদ্রের মত নয়।
ধার্মিক মানেই যেমন দরিদ্র নয়, তেমনি দরিদ্র মানেই ধার্মিক নয়। নাস্তিক গরীব আর আস্তিক ধনী কি নেই? সুতরাং এভাবে দেখতে হলে পরিবেশ রাজনীতির সুবিধা প্রাপ্ত, সুবিধা বঞ্চিত এসব ব্যাপার বিবেচনায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে বোধ হয় তুলনামূলক ফলাফল নয় বরং সার্বিকভাবে মানুষের উপর বিশ্বাসের ফিজিক্যাল এফেক্ট তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত শুধু মুসলমানই হয়না সকল বিশ্বাসীই হয়। মুম্বের তাজমহল হোটেলে বোমা আর বাবরী মসজিদ ভাঙ্গায় একই ভাইরাসে আক্রান্তের প্রতিক্রীয়া।
এটা বোধ হয় আলাদা একটি বিষয়। তবু বলি এখানে পার্থিব ও অপার্থিব ইহলোক-পরলোকের লাভ-ক্ষতি, লোভ-ক্ষোভের ব্যাপার আছে।
আমার ধারণা ভুল হতে পারে , বিজ্ঞজন ভাল বলতে পারেন।
৫০ জন নয়। আমার জানা মতে ১০ জন জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল মু
চমতকার পোস্ট পড়ে পুলকিত হলাম, সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
অভিজিৎ দা, শুরুতে শুভেচ্ছা রইল। আমি ও মোটামুটি আপনার লেখাগুলিতে তথ্যবহুল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন খুইজা পাই। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন থেইকা গেলো, বৌদ্ধ ধর্মে ধর্ম বলিতে গতানুগতিক জনপ্রিয় ধর্মগুলোকে না বুঝাইয়া, অন্য ডেফিনেশন দাঁড় করাইয়া থাকে। তাহারা ধর্ম বলিতে, ” thing as it is” অথবা “the Law of Nature” বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন। তাই তাহারা বলিয়া থাকেন যে, “come and see” অর্থাৎ যদি বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জানিতে হইলে আইসা দেইখা যান, পরীক্ষা করিয়া দেইখা নেন। তারপর ও বলা হইয়া থাকে “one must have one own faith on the Buddha, Dhamma & Sangha” অর্থাৎ নির্বাণকে অনুধাবন করিতে হইলে শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস নিয়া কঠিন ভাইবা সমাধিষ্ঠ হইতো অইবো, নাইলে বৃথা সময় নষ্টমাত্র হইয়া যাইতে পারে। আপনাদের লেখাগুলিতে বেশি মাত্রাই মানুষের জৈবিক প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়া হইয়া থাকে। আমাদের জাইনা রাখা ভালো হইবে যে, মনোবিজ্ঞান নামে আরেকটা বিজ্ঞানের শাখা রহিয়াছে। বৌদ্ধরা বইলা থাকেন উনাদের বিশ্বাস কখনো ইসলাম, হিন্দু কিংবা খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসগুলির সাথে তুলনা কইরা চলে না। তাই তাহাদের মধ্যেপন্থা নীতিতে “সম্যক দৃষ্টি” নামে এক মনস্তাষ্তিক নীতিকে প্রাধান্য দেয়া হইয়াছে। আমি আপনার কাছে এই সম্পর্কিত কিছু তথ্য পাইতে মন্চায়। আপনার লেখা জাঝা। :yes:
@নয়নমুনি,
জাঝা আপনার মন্তব্যেও 🙂
অভিজিৎ দা,
আপনার লেখা এবং বিভিন্ন মতামতের জবাব বেশ ভালো লেগেছে………
আমার তথ্য সুত্রটা ঠিক মনে নেই…কিন্তু ঢাকা শহরের ভীক্ষুকদের উপর চালাণো এক জরীপে দেখা গেছে যে প্রায় ৮০-৮৫% ভীক্ষুক ঈশ্বর বিশ্বাস করেনা তবুও তারা ভীক্ষা পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কথা বলে এবং তারা বিবাহ বা এই জাতীয় আরো সামাজিক বিষয় গুলি মেনে চলেনা।।
এই জরিপের ফলা-ফল ২০০০-২০০৩ সালের মাঝে প্রকাশিত হয়েছিলো…
নিজের থিওরি প্রমাণের জন্য লুঙ্গি তুলে মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটতে থাকা Kanazawa একজন hack, তার একটি গবেষণা প্রবন্ধ এবং একটি popular প্রবন্ধ পড়ে আমার এই ধারণা জন্মেছে।
আমি শুধু একটা উদাহরণ দেব তার “গবেষণা” থেকে। উদারপন্থা বনাম রক্ষণশীলতার যে সংজ্ঞা তিনি খাড়া করেছেন, তা ভুল। তার উপর যে data-র ভিত্তিতে উপসংহার টেনে বেড়াচ্ছেন, তার সাথে তার ভুল সংজ্ঞার আবার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
(মার্কিন) উদারপন্থার Kanazawa সংজ্ঞা:
মোটেও না। উদারপন্থার দাবি এই welfare বিতরিত হতে হবে সরকারি আইনের মাধ্যমে। genuine concern উদারপন্থী-রক্ষণশীল সবারি থাকতে পারে। এই paradox জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন popular প্রবন্ধটিতে, কিন্তু যা লিখেছেন ওটা কোন জবাব না। গবেষণা প্রবন্ধটিতে libertarian liberalism-এর অস্তিত্ব স্বীকার করার আক্কেলটুকু দেখাতে পেরেছেন, কিন্তু libertarianism যে মার্কিন পরিভাষায় conservatism এর মধ্যে পড়ে, সেটাকে স্রেফ ignore করেছেন।
এ পর্যন্ত প্রচন্ড হতাশার হাত থেকে মুক্তির একটা উপায় দেখেছিলাম আমি। ভাবলাম, লেবেলটা বড় কথা নয়, কানাজাওয়া যাকে liberalism বলছেন, তার data-ও হয়ত সেই সংজ্ঞার উপরই নির্ভরশীল। হয়ত কানাজাওয়া লোককে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন LSE-এর সামনে পিকক থিয়েটারের পাশে দাঁড়িয়ে: আপনি কি এমন একজন লোক যার রয়েছে genuine concern for the we…, এবং আপনার আই, কিউ কত?
কিন্তু তা না কিন্তু। কানাজাওয়া যে মার্কিন ডাটা ব্যবহার করেছে সেখানে লোককে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তুমি উদারপন্থী বা রক্ষণশীল? অর্থাৎ উদারপন্থী বা রক্ষণশীল বলতে তারা যা বোঝে, কানাজাওয়ার কপোল-কল্পিত সংজ্ঞার সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। কি হাস্যকর।
কানাজাওয়া তার গবেষণা পত্রের শেষ দিকে এটা handle করার চেষ্টা করেছেন। সে জায়গাটা সবাইকে পড়বার আহ্বান জানাচ্ছি। নিজের থিসিস নিজেই প্রায় অপ্রমাণ করে ফেলে এটা-সেটা বলে সামাল দেয়ার নিদারুণ চেষ্টা।
@রৌরব,
career এগুনোর ইঁদুর দৌড়ে আজকাল যে কি হচ্ছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। গবেষণার আসল বিষয়ের চাইতে কে কয়টা গবেষনাপত্র প্রকাশ করেছে তা সিভিতে উল্লেখ করাটাই এখন বড় ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে। যার সিভিতে যত বেশী একটিভিটি ( এবং তত কম প্রকৃত রেজাল্ট !) বিজ্ঞানমূর্খ হিউম্যান রিসোর্স তত বেশী খুশী।
@সংশপ্তক,
বিজ্ঞানীর কাজ যদি বিজ্ঞানমূর্খ লোকে মূল্যায়ন করে, তাহলে এমন হবেই। এর মাঝেই বিজ্ঞানের প্রচেষ্টা চালু থাকে। সমস্যা হয়ে যায় মিডিয়া আর সাধারণ মানুষের। তারা অধিকাংশ সময়েই বিজ্ঞান না জেনে জানে চটকদার স্টান্টবাজির রূপকথা।
অভিজিৎ দা,
ব্যাপারটা কি এমন হতে পারে, যেহেতু বিশ্বাসী বেশীরভাগ মানুষই দারিদ্র কবলিত এবং স্বাভাবিকভাবেই জীবনের অত্যাবশকীয় উপাদানগুলো না পাওয়ার কারনে তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে নি। তারা পায়নি সঠিকভাবে চিন্তা করার অবকাশ, সঠিক লেখাপড়ার সুযোগ, যার জন্যে খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রচলিত কুসংস্কারে বিশ্বাসী থেকেছে। অন্য দিকে আমি বলবনা যে সব নাস্তিক বা উদারপন্থীরাই টাকা পয়সাওয়ালা, তবে মনে হয় বেশীরভাগই নুন্যতম সুযোগসুবিধা পেয়েছে। এখন যদি বিশ্বাসীদের সাথে অবিশ্বাসীদের তুলনা করা যায় তাহলে কিন্তু অবিশ্বাসীরাই এগিয়ে থাকবে।
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় আই কিউ দিয়ে আসলে বুদ্ধিমত্বার মাপকাঠি নির্নয় করা সম্পুর্নভাবে সম্ভব নয়। হতে পারে এর থেকে ভালো আর কোন উপায়ও আমাদের জানা নেই।
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথাই বললাম। ভুল হলে অবশ্যই মাথা পেতে নেব।
আর লেখার ব্যাপারে কি আর বলব, অভিজিতিয় ক্লাসিক। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখার জন্য ডেটাগুলো দেইনি। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেছি। নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আহমেদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ কিংবা আরজ আলী মাতুব্বরেরা মোটেই বড়লোক ছিলেন না। সেটা তো জানা কথাই। তারা সচেতনভাবেই নির্লোভ জীবন যাপন করেছেন। তবে, সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির উপর বিশ্বাসের প্রভাব নেতিবাচক সবসময়ই।
@অভিজিৎ,
‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নিয়ে এ মূহুর্তে প্রচুর গবেষনা চলছে। এটা দেখার চেষ্টা চলছে কিভাবে মানুষের জীনে একটা রাজনৈতিক বিশ্বাস বা ভাববাদী ধারনা বাসা বাঁধে , বিকাশ লাভ করে এবং তা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। এই গবেষণাগুলো মানুষের জীনকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে যেহেতু মানুষের অনেক আচরণে জীনের প্রভাব অন্যান্য প্রাণীদের মতই যথেষ্ট ক্রিয়াশীল বলে এপর্যন্ত গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে।
সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আবিষ্কারটা এসেছে UCSD এবং হাভার্ডের সাম্প্রতিক একটা যৌথ গবেষণা থেকে যেখানে ডোপামিন নির্ভর DRD4 জীনটাকে (ক্রোমোজোম 11p15.5) চিহ্নিত করা গেছে যার একটা বিশেষ ভ্যারিয়ান্ট উদারপন্থী মানষদের মাঝে দেখা যায়। তবে, এটার সাথে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্হায় সামাজিক পর্যায়ে উদারপন্থীদের সাথে নিয়মিত সংশ্রব থাকা জরুরী। আশা করা যায় যে , আগামীতে এ সম্পর্কে আরো তথ্য আমাদের হাতে আসবে।
‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নিয়ে লেখাটা মুক্তমনায় দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। পরিশেষে, ডারউনের একটা উক্তি এখানে তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারলামনা :
“It has often and confidently been asserted, that man’s origin can never be known: Ignorance more frequently begets confidence than does knowledge: it is those who know little, not those who know much, who so positively assert that this or that problem will never be solved by science.” –
The Descent of Man (1871)
@সংশপ্তক,
আপনার মন্তব্যও যথারীতি খুব চমৎকার লাগলো।
গবেষকদের নাম সহ পেপারটার একটা সম্পূর্ণ রেফারেন্স কি দেয়া যায়?
অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
নিশ্চয়ই। নীচে দিয়ে দিলাম :
Jaime E. Settle, Christopher T. Dawes, Nicholas A. Christakis, James H. Fowler. Friendships Moderate an Association between a Dopamine Gene Variant and Political Ideology. The Journal of Politics, 2010; 72 (04): 1189 DOI: 10.1017/S0022381610000617
@সংশপ্তক,
অসাধারণ উক্তি। ডিসেন্ট অব ম্যান বইটা শুরু করেছিলাম, অরিজিন অব স্পিসিজটা দ্বিতীয়বার পড়ে এটা ধরব।
@পৃথিবী,
ভালো সিদ্ধান্ত। অরিজিন অব স্পিসিজটা পড়ার পরেই ডিসেন্ট অব ম্যান পড়লে বিষয়টা অনেক সহজে পরিস্কার হয়। আর আমার ই-মেইল সিগনাচার, অফিসে এবং বাসায় ” Ignorance more frequently begets confidence than does knowledge” এই অংশখানি বিভিন্ন জায়গায় ঝোলানো আছে।
অভিজিৎ দা,
আপনার অন্যান্য লিখার মতই এ লিখাটিও খুব ভাল লেগেছে। ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ আক্রান্ত দল /সম্প্রদায়কৃত নিষ্ঠুরতার বহু উদাহরন আপনি উল্লেখ করেছেন। এর ‘virulence’ আগেও যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। উপযুক্ত পরিবেশ (culture media) পেলে তা আগের চেয়েও অধিক বিপদজক হতে পারে। ধর্মান্ধ মৌলবাদী গুষ্ঠি আনবিক অস্ত্র করায়ত্ত করলে পরিস্থিতি কতটা বিপদজনক হতে পারে তা চিন্তা করতেও ভয় হয়! ‘সাধারন ভাইরাস’ আক্রান্ত অসুস্থ মানুষ তার রোগের কারন ঐ ভাইরাসটির ‘বিষক্রিয়া’ সম্ভন্ধে পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং প্রতিকারের জন্য সে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়। পক্ষান্তরে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ আক্রান্ত মানুষ তার রোগের কারন ঐ ভাইরাসটিকে তার রোগের ‘প্রতিষেধক (cure)’ বলে জ্ঞান করে। যত বেশী সে আক্রান্ত হয়, তত বেশী বেশী সে তার ‘ভাইরাস’ টিকে আঁকড়ে ধরে তৃপ্তি বোধ করে। চিকিৎসাতো দূরের ব্যাপার, সেই ভাইরাসকে “ভাইরাস” বললেও সে তেড়ে আসে তার “স্পর্ষকাতর ধর্মনুভুতিতে” আঘাত হানার মারমুখি অভিযোগ নিয়ে। এমতা পরিস্থিতিতে মানুষের ‘ধর্মনুভুতিতে” আঘাত না দিয়ে এর প্রতিষেধক ‘anti-virus’ তৈরী করা যায়, অনেক মুক্তমনা পাঠকের এমনতর মতের সাথে আমি একমত নই।
শুধু ভারতেই ৮০ মিলিয়ন হিন্দু ও ১০ মিলিয়ন বৌদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। আফ্রিকাতে ১২০ মিলিয়ন Christians and animists কে জীবন দিতে হয়েছে। বলা হয়, গত ১৪০০ বছরে প্রায় ২৭০ মিলিয়্ন অমুসলীম ইসলামী জিহাদের বলী। জীহাদে নিহত মুসলীমের সংখ্যা (ইসলামী স্বর্গলোকে’ বাসিন্দারা ) এ অংকের বাহিরে।উৎসাহী পাঠকরা নীচের দুটো article দেখতে পারেনঃ
http://archive.frontpagemag.com/readArticle.aspx?ARTID=297
http://www.politicalislam.com/tears/pages/tears-of-jihad/
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@গোলাপ,
চমৎকার এই মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনারাই হতে পারেন এক একজন শক্তিশালী এন্টিভাইরাস।
@ অভিজিত, বিশ্বাসের ভাইরাস নামটা খুবই জব্বর লাগলো। এই টপিকের উপর বই বের করবেন নাকি? ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামেই বইটা বের করে ফেলেন।
বাম সাইডবারে “শীর্ষ আলোচনা” বিভাগকে ডাইনামিক করা হয়েছে, এখানে এখন থেকে শেষ ৭ দিন সর্বোচ্চ মন্তব্য করা হয়েছে এমন পোস্ট প্রদর্শিত হবে,আগে এটি ম্যানুয়ালি পরিবর্তন করা হতো।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
:yes: :rose2:
তোমারতো মিয়া সাহস কম না। আমি লিখি আমার প্রিয়দর্শিনী পেলিনকে নিয়ে প্রেমগাথা, আর তুমি তারে নিয়া কও আকথা কুকথা। :-X
heaven’s gate এর তথ্যটি যোগ করতে পারেন।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এটার খবর তো জানতাম না। কত কিসিমের ভাইরাস যে আছে… এইটা তো মনে হচ্ছে ইউএফও রিলিজিয়ন ভাইরাস! 😀
ডেনেটের কোন একটি ভিডিও দেখেছিলাম, যেখানে বিশ্বাসের এই “ভাইরাসীয়” গুণটি উনি গুণ-নিরপেক্ষভাবে বর্ণনা করেছিলেন। অর্থাৎ, এই পর্যায়ে ভাল বিশ্বাস আর মন্দ বিশ্বাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জিহাদী বিশ্বাস আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্বাস একই ভাবে ছড়ায় ইত্যাদি।
উদাহরণ গুলির কোন কোনটিতে সন্দেহের অবকাশ আছে যে ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণহীন বিশ্বাস নয়, রাজনৈতিক প্রয়োজন
হাশাশিনদের এসব খুন খারাবি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখবার জন্য, পরে বোধহয় ভাড়াও খেটেছে তারা।
এই বিখ্যাত ঘটনার কারণ ভূ-রাজনৈতিক।
@রৌরব,
হ্যা, ল্যাংসেট ফ্লুক প্যারাসাইট নিয়ে। আমি আমার লেখার প্রথম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম সেটা, সেজন্য এখানে আর দেইনি। ইউটিউব থেকে দেয়া যাক আবারো –
httpv://www.youtube.com/watch?v=KzGjEkp772s
অবশ্যই। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধই তো সেরকম। ত্রিশ লক্ষ লোকের মৃত্যু ধর্মীয় কারনে নয়, বরং রাজনৈতিক। কিন্তু তারপরেও ধর্মীয় ব্যাপারগুলো অস্বীকার করা যায় না। গলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদেরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নাপাক বাহিনীর সহায়তা করেছিল, কারণ তারা ভেবেছিলো ইসলাম বিপন্ন। পশ্চিম পাকিস্তানীরাও ভাবত বাঙ্গালীরা ‘প্রকৃত মুসলমান’ নয়। এভাবেই ধর্মীয় উপাদান অনেক সময়ই জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির সাথে। আমার দেয়া অনেক উদাহরনেই এরকম রাজনীতি-ধর্মের মিশ্রণ পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
“ভাইরাস আক্রান্ত মনন : ইতিহাসে এবং সভ্যতায়” এই অংশে যে উদাহরণগুলো যুক্ত করেছেন তার সাথে আরো বেশ কিছু উদাহরণ যুক্ত করা যেতে পারেঃ নাৎসিবাদ, ফ্যাসিজম, বর্ণবাদ, কমিউনিজম, সাম্রাজ্যবাদ এগুলোর উপর কিছু উদাহরণ ইতিহাস হতে যুক্ত করা যেতে পারে। না হলে এখন শুধু ধর্মের উপর ফোকাসটি বেশি হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু জেনেরাল বিশ্বাসের ভাইরাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তখন সব মতবাদ নিয়েই উদাহরণ আসা উচিৎ।
@স্বাধীন,
শুধু তাই না… আপনার মিম তত্ত্ব ঠিক হলে পুঁজিবাদ, গণতন্ত্র এগুলোও লিস্টে চলে আসবে। এগুলোও এক অর্থে ধারণাই, এবং অনেকের মতে ক্ষতিকরই।
তবে আমার টার্গেট আপাততঃ একটু সংকীর্ণ করে রেখেছি। সবকিছু নিয়ে লিখলে প্যাচ খেয়ে যাবে।
@অভিজিৎ,
দ্বিমত নেই। সব কিছুই ধারণা মাত্র। তবে প্যাচ খেলেও লিখতে হবে, বাদ দেওয়ার সূযোগ নেই। বরং বাদ দিলে লেখাটি নিরপেক্ষতা হারাবে। অনেকের কাছে একচক্ষু মনে হতে পারে 😀 ।
@স্বাধীন,
জোর করে ‘নিরপেক্ষ’ সাজার কোন কারণ নেই। পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়! আর তা ছাড়া আমার টার্গেট পরিস্কার। মামুলি জাম জ্বরের ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত নই, যতটা চিন্তিত এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে। 😀
[১] বিবর্তনের পথেই বিশ্বাসের ভাইরাসের জন্ম। এই ভাইরাল স্প্রেড না থাকলে সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন অতীতে সম্ভব হত বা। অতীতে রাষ্ট্র ঈশ্বরের নামে, রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি-এইভাবে চলত। কারন ঈশ্বর বা আল্লা হল একটা ভাইরাল মিম-যা শক্তিশালী সমাজ গঠনে সাহায্য করেছে-তাই সমাজ বিবর্তনে নির্বাচিত হয়েছে।
[২] বর্তমানে এই ভাইরাল মিমের প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে কি না-সেটা নিয়ে ভাবার দরকার আছে। যেসব প্রগ্রেসিভ আইডিয়া নিয়ে আমরা চলছি-যেমন সমকামীতার এক্সপেটান্স, সন্তানহীন থাকা-এগুলি যদি শক্তিশালী উত্তর সমাজের ( যেখানে সন্তানেরা শিক্ষাগত এবং রিপ্রোডাক্টিভ ভাবে অনেক বেশী ফিট) জন্ম না দেয়, এই ভাইরাল মিম আরো বেশী দিন টিকবে। কারন যেসব সমাজ বা ফ্যামিলি ভাইরাল মিমগুলোরতে আক্রান্ত তার আরো বেশী শক্তিশালি উত্তর সমাজের জন্ম দেবে। উন্নত চিন্তা অথচ উত্তর পুরুষ নেই-তাতে লাভ নেই। তাতে উন্নত মিম টিকবে না-মিম টেকে উত্তরপুরুষের মাধ্যমে।
[৩] ভাইরাল মিমকে খতম করতে গেলে সেই সব প্রগ্রেসিভ মিম দরকার যা শক্তিশালী আগামী প্রজন্মের জন্ম দেবে। নাস্তিক সমাজ যদি উন্নত সন্তানকুলের জন্ম [ উন্নত মানে আরো বেশী সিলেকশন ফিট] না দিতে পারে, একজন নাস্তিক বেশী বুদ্ধি ধরে না কম বুদ্ধি ধরে তাতে কিছু যায় আসে না। একটা লোক যদি কম বুদ্ধি ধরে তার সামাজিক দ্বায়িত্ব বেশী পালন করে, বিবর্তন শেষের টিকেই নির্বাচন করবে।
@বিপ্লব পাল,
সহমত। আমরা যতই অবিশ্বাসী হই না কেন আমাদের সমাজ ব্যবস্থা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। বিশ্বাসহীনতা তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে যখন সমাজ তা গ্রহন করবার জন্য প্রস্তুত থাকবে। রাতারাতি কোন ধারনা বা মতবাদের ভিত্তিতে সমাজ কাঠামো গড়ে উঠতে পারে না। সামাজিক বিবর্তনের ধারায় সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই সমাজ বিভিন্ন মতবাদ বা বিশ্বাস গ্রহন করে। যথার্থ মানসিক পরিপক্কতা ছাড়া নাস্তিকতার মতো ধারনাকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে ধরা হলে সমাজ কাঠামো টিকিয়ে রাখাটাই দায় হয়ে পড়বে।
@বিপ্লব পাল,
“এই ভাইরাল স্প্রেড না থাকলে সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন অতীতে সম্ভব হত না।”
আপনার এই কথাটি ঠিক নয়,অতীতে যারা ধর্মের জন্ম দিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে বা ক্ষমতা দখল করেছে ,তারা এটিকে তাদের অস্ত্র হিসেবেই ব্যাবহার করেছে…।তারা ক্ষমতা লিপ্সু ছিলো বলেই এমন করেছে আর সে যুগেও সংখ্যায় কম হলেও এমন অনেকেই ছিলেন, যেমন -দার্শনিকগন,যারা অন্যরকম রাষ্ট্র ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন…।
খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর পুর্বে কনফুসিয়াস এমন এক রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন যেখানে সাধারন মানুষ-জন কাব্য ,দর্শন,ব্যাবহারিক জ্ঞান ইত্যাদি শিক্ষার সুযোগ পাবে কিন্তু তিনি সফল হননি কারন ততকালীন অভিজাত শ্রেনীর লোক জন তাকে তা করতে দেননি…।কিন্তু তিনি যদি সফল হতেন তবে প্রাচীন চীনে ধর্ম ভিত্তিক যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তার চেয়ে শক্তি-শালী সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠিত হতো তাতো সহজেই অনুমেয়…।।
একটা খুব সুন্দর ও তথ্যবহুল লেখা। লেখার অনেক তথ্যই আমার আগে জানা ছিল না। পড়ে ভাল লাগল। তথ্যসূত্র ১১ হতে যা তুলে ধরা হয়েছে, তাতো ভয়াবহ। তবে এই তথ্যসূত্র কতটা নিরপেক্ষ তা প্রশ্নাতীত নয়। ( আমি মূল তথ্যসূত্র নিজে না পড়, শুধু এই লেখাটি পড়ে লিখছি) ইউরোপের নানা ঘটনা এখানে দারুন ভাবে সন তারিখ সহ এসেছে। ১২০০, ১৩০০, ১৪০০, ১৫০০, ১৫৭২, … এরা সব এসেছে। এই লেখায় এটাও এসেছে,
কিন্তু এর পরে তারা কিভাবে বিদায় হল তা উল্লেখ না করাটা তথ্যসূত্রের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একথা সত্য, ধর্মের নামে হত্যার এই ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। তাই বলে দীর্ঘকে ছোট করতে গিয়ে বৃ্হৎ কিছু বাদ দেয়ে অনেক ছোট উদাহরন রাখাটা সমিচিন নয়।
সঠিক কথা। আর স্বাধারন জনতা হচ্ছে তার বলি।
সাধুবাদ রইলো।
বরাবরের মত চমৎকার লেখা। যে কোন বিশ্বাসের ভাইরাসকে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সরাতে আমাদেরকে এ রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা নির্ভর লেখাই বেশি বেশি করে দিতে হবে। ভবঘুরে প্রশ্ন করেছেন এই ভাইরাসের এন্টিভাইরাস কি নেই? মুক্তমনা, প্রগতিশীলতা, উদারপন্থা, এগুলোই এই ভাইরাসের এন্টিভাইরাস। এগুলোকেই ছড়িয়ে দিতে হবে বেশি বেশি যেন বিশ্বাসের ভাইরাস আউট নাম্বার হয়ে যায়। অনেক দিন থেকেই আমি এবং আমার সাথে অন্যান্যরা এই কথাগুলো বলে আসছি যে মুক্তমনা সমাজ পাওয়ার জন্য ধর্মবিদ্বেষের প্রয়োজন পড়ে না। কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বা বিশ্বাসকে বার বার আঘাত করা হলে সেই বিশ্বাসীরা তাঁদের ভাইরাসকে আরো বেশি আঁকড়ে ধরবে। বিশ্বাসের ভাইরাস যে কোন বিশ্বাসেই হতে পারে। সেটা যেকোন ধর্ম হতে পারে, যে কোন মতবাদ হতে পারে (ফ্যসিজম, নাৎসিবাদ, সাম্যবাদ)। যে বাদই হোক না কেন সেটা যদি বৈজ্ঞানিক ছাঁকুনি পার না হতে চায় তবে সেটাকে ভাইরাস হিসেবে গন্য করা হবে।
অভিজিৎ’দা কে আবারো ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। এই সূযোগে একটি অনুরোধ রেখে যেতে চাই। মুক্তমনায় মানব বিবর্তন নিয়ে লেখার অভাব সম্প্রতিকালের লেখাগুলো দিয়ে পূরণ হচ্ছে। কিন্তু এখনো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লেখার অভাব রয়ে গিয়েছে। তা হচ্ছে মিম। এই বিশ্বাসের ভাইরাসের সাথে মিম জড়িয়ে। মিম কি, কিভাবে কাজ করে, এই পর্যন্ত কি কি গবেষণা হয়েছে এই বিষয়গুলো নিয়ে একটি লিটেরাচার রিভিউ থাকলে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য ভাল হতো। আশা করি সময় নিয়ে কয়েক পর্বে কিছু লেখা দিবেন। অগ্রীম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখলাম সে জন্য।
@স্বাধীন,
মিম নিয়ে আমি একটি লেখা দাঁড় করিয়েছি, তবে সেটি লিটেরাচার রিভিউর মতো হবে না, বরাবরের মত “ধরি মাছ না ছুঁই পানি” এর মত হবে। লিটেরাচার রিভিউটা আমি আপনার জন্য রেখে দিচ্ছি। তবে লেখাটি দেওয়ার আগে আমার মিম নিয়ে কয়েকটি পাঠ্যবই পড়তে হবে। লাইব্রেরীতে অর্ডার দিয়েছি। আজই পেয়ে যাবো। দেখি এই সপ্তাহে লেখাটি দিবো।
@স্বাধীন,
আপনার দুটো মন্তব্যই পড়লাম। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। হ্যা এই লেখায় মিম নিয়ে কিছু লিখিনি। মূলতঃ দুটো কারণে।
১) মিম নিয়ে আমার আগের লেখায় (বিশ্বাসের ভাইরাস -১) বলেছি।
২) ভাইরাস ব্যাপারটির সাথে সাধারণ পাঠকেরা পরিচিত, ‘মিম’ এর সাথে তেমনটি নয় এখনো (এমনকি ইংরেজীতেও) । আর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানের ভাইরাস অনেকসময়ই সমান্তরাল আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে অন্য অনেক কিছুর চেয়ে বেশি।
সে হিসেবে একটি জিজ্ঞাসা আছে – ভবিষ্যৎ বই কিংবা এ ধরণের প্রবন্ধের নাম হিসেবে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ কেমন? জানতে চাচ্ছি আপনার মতামত।
আরেকটা ব্যাপার। সুসান ব্ল্যাকমোরের ‘মিম মেশিন’ নামে চমৎকার একটা বই আছে। মিম নিয়ে লেখার আগে পড়ে নিতে পারেন ওটা।
আবারো মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
এই লেখা ঠিক আছে। তবে এই লেখা যদি বই হিসেবে চিন্তা করেন তবে মিম নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। নাম হিসেবে “বিশ্বাসের ভাইরাস” ঠিক আছে। তবে সে ক্ষেত্রে লেখায় আরো পরিষ্কার করতে হবে কেন সব মিমই ভাইরাস নয়, যেটি এই দু’লেখায় আসে নি। ঠিক এই প্রশ্নটি আগের কোন এক লেখায় জনৈক পাঠক মন্তব্য করেছিলেন। কেন গণতন্ত্র বা প্রগতিশীলতাকে ভাইরাস বলা হবে না, কিন্তু ধর্মকে বলা হবে যেখানে দু’টোর চরিত্রই হচ্ছে ছড়িয়ে যাওয়া। এই বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ একটি লেখাই হতে পারে।
এ কারণেই আমি বলবো মিম নিয়ে লেখা দেওয়ার জন্য। পাঠক পরিচিত না কারণ সেটা নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে না বলে। বিবর্তন নিয়েও মানুষের অনেক ধারণা কম ছিল, কিছু ক্ষেত্রে ভুল ধারণাও ছিল, অন্তত বাংলা ভাষাভাষিদের ক্ষেত্রে। আপনাদের লেখা সেটি কমিয়েছে নিঃসন্দেহে। এখন মিম নিয়েও লেখা হলে পাঠকের কাছে পরিচিতি হয়ে যাবে। আপনার এই প্রবন্ধ বা বইয়েই মিমের বিষয়গুলো সুন্দর ফিট করে যাবে।
খুবই বাস্তবধর্মী সুন্দর একটি লেখা। নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম প্যারাসাইটের এবং আলকায়দার ১৯ জন সন্ত্রাসীদের আক্রমনের তুলনামুলক চিত্রটি দারুন। :yes:
নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম ঘাস ফড়িং-এর মস্তিস্ককে সংক্রমিত করে, পাগলা কুকুর কামড়ালে জলাতংক রোগের জীবাণু দ্বারা মস্তিস্ক আক্রান্ত হয়, ল্যাংসেট ফ্লুক প্যারাসাইট পিঁপড়াকে সংক্রমিত করে ইত্যাদি উদাহরন জানা গেলো। কিন্তু বিশ্বাসের ভাইরাসের উৎপত্তি কোথা থেকে অর্থাৎ মানুষ ঠিক কি কারনে এই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। মানুষ কি এই ভাইরাস নিজেই নিজের মধ্যে সৃষ্টি করে নাকি এই ভাইরাস সৃষ্টিতে অন্য কোন প্যারাসাইটের ভুমিকা আছে সেটাও ভেবে দেখার মতো। এই বিশ্বাসতো আর কোন জীবানু নয়, এটাকে বলা যেতে পারে মনস্তাত্তিক ভাইরাস যা মানুষের ব্রেইনকে ফিজিক্যালি আক্রান্ত না করে মানষিকভাবে আক্রান্ত করে।
কম্পিউটারের ভাইরাস যেমন এক ধরনের ধংসাত্বক কোডস্ যা কমপিউটারের সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলে। তো এই কম্পিউটারের ভাইরাস কাউকে না কাউকে একটি উদ্দেশ্য মাথায় রেখে সৃষ্টি করতে হয়। তেমনি আমার মনে হয় এই বিশ্বাসের ভাইরাসও উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কাউকে সৃস্টি করতে হয়। ধর্মীয় বানীগুলোও এক ধরনের ধংসাত্বক কোডস্ যা মানুষের মাথায় খুব সহজে সংক্রমিত হয়ে ব্রেইনের স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকে নস্ট করে ফেলে এবং মানুষকে ধংসাত্বক কার্য্যকলাপ করতে ইন্ধন জোগায়।
কম্পিউটারে যেমন এন্টি-ভাইরাস ইন্সটল থাকলে ভাইরাস সংক্রমনের পরও কম্পিউটারের কোন ক্ষতি সাধিত হয়না তেমনি মানুষের ব্রেইনে আইকিউ হয়ত কোন সারটেইন লেভেলে থাকলে সেই ব্রেইন বিশ্বাসের ভাইরাসের আক্রমনকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে। এমনও হতে পারে মানুষের কিছু বিশেষ ক্যারেক্টারিস্টিকস্ অথবা জিন বিশ্বাসের এই ভাইরাসকে মানুষের মাথায় সংক্রমিত করতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
আর একটি কথা,
কিন্তু সায়েন্স, টেক্নোলোজী ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানটা কি হতে পারে?
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি ঠিকই বলেছেন নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম ঘাস ফড়িং-এর মস্তিস্ককে সংক্রমিত করে, পাগলা কুকুর কামড়ালে জলাতংক রোগের জীবাণু দ্বারা মস্তিস্ক আক্রান্ত হয়, ল্যাংসেট ফ্লুক প্যারাসাইট পিঁপড়াকে সংক্রমিত করে, ঠিক তেমনি হয়তো প্রথাগত বিশ্বাসগুলোও বিশ্বাসী মননকে আক্রান্ত করে ফেলে, তারা হয়ে উঠে এক্সট্রিম ধরণের মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী। সেজন্যই কখনো তারা টুইন টাওয়ারে হামলে পড়ে, কখনো বেগানা নারীদের পাথর মারে, আর কখনো, ডাইনি মনে করে পুড়ায়, মুরতাদদের হত্যার ফতোয়া দেয়, কিংবা সতীদাহে উৎসাহিত হয়। এগুলো সবই ভাইরাস আত্রান্ত মননের প্রতিফলন। তবে ফড়িং এর মধ্যে কি ঘটে জানা গেলেও, মস্তিস্কে ব্যাপারটা কিভাবে ঘটে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণা চলছে এখনো। এ ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হচ্ছে ডকিন্সের মিম তত্ত্ব যা স্বাধীন আলোচনায় এনেছে। মিম নামের পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স ১৯৭৬ সালে, তার বিখ্যাত বই ‘দ্য সেলফিশ জিন’-এ। পরে সুসান ব্ল্যাকমোর একে ‘মিম মেশিন’ নামে আরেকটি বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেন। জিন যেমন আমাদের শরীরবৃত্তিয় তথ্য বংশ পরম্পরায় বহন করে, ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক তথ্য বংশপরম্পরায় বহন করে নিয়ে যায় ‘মিম’। কাজেই ‘মিম’ হচ্ছে আমাদের ‘সাংষ্কৃতিক তথ্যের একক’, যা ক্রমিক অনুকরণ বা প্রতিলিপির মধ্যমে একজনের মন থেকে মনান্তরে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক যেভাবে শারীরবৃত্তীয় তথ্যের একক জিন ছড়িয়ে পড়ে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। যে ব্যক্তি মিমটি বহন করে তাদের মিমটির ‘হোস্ট’ বা বাহক বলা যায়। এগুলো নিয়ে আমি আমার প্রথম পর্বে লিখেছিলাম। তবে এর বাইরেও অন্য অনেক মডেল আছে। সামনে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে।
আর সায়েন্স, টেক্নোলোজী ইত্যাদি ক্ষেত্রে আণুষঙ্গিক পরিসংখ্যানগুলো পেলে জানাবো।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অভিজিৎ রায়ের লেখা মানেই অনেক পড়ালেখার ফল। বিশ্বাসের ভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়।
যদিও গবেষণা লব্ধ কথা, তবে চারপাশ তাকালেও তা বুঝা যায়। বুদ্ধিমান বলেই তো নাস্তিক এবং উদারপন্থি। বুদ্ধি আছে বলেই তো বুজরুকিতে অনাস্থা।
এসব লেখা একবার reading পড়লে হয় না। কাজেই শুধু soft copy কপি নয়, hard copy মানে ছাপার অক্ষরে সংগ্রহে রাখতে আমার পছন্দ । তবে ধর্ম যুদ্ধের নমুনা দিতে গিয়ে —-
রামায়ণ থেকে উদ্ধৃতিটি না দিলেই ভাল হত। কারণ অন্যান্য উদাহরণের মত রামায়ণের ঘটনা কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য নয়। বাল্মিকী প্রতিভার কল্পনাপ্রসূত। রামায়ণের ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন নাস্তিকদের উচিত নয়।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ গীতাদি। আপনি ঠিকই বলেছেন রামের ব্যাপারটা মিথই। ওটা তালিকাইয় না থাকি উচিৎ।
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@গীতা দাস,
অন্যান্য ঘটনাগুলোর মত বাস্তব না হলেও রামায়নের ঘটনাটি উল্লেখের প্রয়োজন আছে। অনেক হিন্দুই আছেন যারা দাবি করেন রাম নাকি বর্ণবাদের উর্ধে ছিলেন।
@অভীক,
:no: বিজ্ঞান নির্ভর এবং ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত সম্বলিত লেখায় বিষয়টি খাটে না বলে আমি মনে করেছি।
আরেকটা অভিজিতীয় ক্লাসিক। অভিনন্দন, অভিজিৎ! আশা করছি, তোমার এই লেখা বিশ্বাসের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অবিশ্বাসের ভ্যাকসিন হয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
@ইরতিশাদ,
অনেক ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই, পঠন এবং মন্তব্যের জন্য।
লেখাটা দারুন হইছে। গ্রাফ, ডাটা এবং আপনার চমৎকার প্রাসংগিক আলাপে অনেক কিছুই উঠে এসেছে। নীচের ব্যাপারটা নিয়ে একটু বলি-
আমেরিকা ধনী দেশ এবং জিডিপি অনেক বেশি। কিন্তু এইদেশের অনেক নাগরিকরাই কিন্তু হেলথ ইনস্যুরেন্স, চাকরির নিশ্চয়তা সহ অনেক কিছুতে এখনও ইনসিকিউরড। আপনারা সেখানে থাকেন, আরও ভালো বলতে পারবেন। আর যতই জীবনে ইনসিকিউরিটি আসবে ততই যে মানুষ “ল্যাম্পপোস্টের” কাছে প্রার্থণা বেশি করে করবে সেটা তো আর নতুন কোনো ধারণা না।
আরেকটা ব্যাপার হলো, চার্চ কেন্দ্রিক সামাজিকতা নির্ধার্মিক সংখ্যাগরিষ্ট অনেক দেশেই আছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কথাই ধরা যায়। সেখানে কেউ ধর্ম পালন না করলেও, চার্চ ছাড়া বিবাহ হবে এটা ভাবতেই পারেনা। সামাজিক প্রথা আর কি!
@রায়হান আবীর,
এরা সামাজিক প্রথা অনুযায়ী বিয়ে করে ঠিক, তবে এসব প্রথার বাইরেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর ১৫%-২০% জনস্যংখা বিয়ে করে প্রথাবিহীন যার নাম বোরিয়ারলীগ বিয়ে এবং মারা গেলে মৃতলাশও দাপন করা হয় ধর্ম ও প্রথাবিহীন যার নাম বোরিয়ারলীগ দাপন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাই, নরওয়ে সুইডেন – এই সব দেশ নিয়ে একটু ডিটেল লেখেন। এদের নামই কেবল শুনে আসলাম, ঘুরে দেখার ইচ্ছে আছে। সম্প্রতি ফিল জুকারম্যানের একটা বই পড়লাম Society without God নামে। লেখক বলেছেন ওই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে ঈশ্বরে বিশ্বাসের হার বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ সেসব দেশে নাকি অপরাধপ্রবণতা সবচেয়ে কম। শুধু তাই না, ডেনমার্ক – যেখানে ঈশ্বরে অবিশ্বাসের হার প্রায় শরকরা ৮০ ভাগের কাছাকাছি – জরিপে দেখা গেছে তারা নাকি এখন পৃথিবীর অন্যতম সুখি দেশ। বেশ কৌতুহল নিয়ে বইটা পড়লাম।
ঠিক আছে অন্যান্য ধর্মের কেউ বোধ হয় খুব একটা অবজেকশন করার কিছু পাবেনা, আবার তাদের অনেকে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন। মুসলমানরা এর একটা ঘটনাকেও সত্য বলে স্বীকার করবেনা। কারণ তাদের ধর্মের নাম তো শান্তি (ইসলাম)। পয়ত্রিশ বছরের ইতিহাসে মাত্র কয়েকটা বছর আংশিকভাবে ক্ষমতায় থেকে জামাত বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধ ‘নাই’ করে দিয়েছে। দেড় হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাস থেকে বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত কিছু মানুষ ‘জামাল যুদ্ধ’ সিফফিন যুদ্ধ’ নাই করে দিয়েছে।
আচ্ছা বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে তো পার্থক্য আছে। ঐ যে রামকৃষ্ণ, মুতাজিলা, সাধু সন্যাসী, মারেফতি টাইপের মানুষ যারা –
মারে নাকো কাটেনা
করেনা কো ফুস-ফাস / মারেনা কো ঢুস-ঢাস
যাক ওসব।
‘সাভানা অনুকল্প’ এখানে একটি লিংক যোগ করা চাই।
@বন্যা আহমেদ,
আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, বুদ্ধিমান বনাম বেকুব চিত্রটিতে বুদ্ধিমান ব্যক্তির উদাহরণ দুজনই পুরুষ, আর রক্ষণশীল তথা বেকুব দুজনই মহিলা।
:coffee:
@রৌরব,
কোকাকোলা আর পপকর্ণ নিয়ে বসলাম পিসির সামনে, “জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা” দেখব,রৌরবকে অসংখ্য ধন্যবাদ :rose2: :coffee: ।
@রামগড়ুড়ের ছানা এবং রৌরব,
সেই গুড়ে বালি মনে হচ্ছে। আমার মনে হয়না বন্যা কিংবা অন্য কোন লিবারাল মেয়ে কেবল মহিলা বলেই উইচক্রাফট করা ক্রিস্টিন ও ডেনেল কিংবা ইদানিংকালের ‘রক্ষণশীলদের হার্টথ্রব’ স্যারা প্যালিনকে সমর্থন করবে। বরং এই দুইটার সাথে বন্যারে জুড়ে দেয়ায় তোমরাই গালি খাইবা মনে হচ্ছে। সামলাতে পারো কিনা দ্যাখো। 🙂 হাসিনা খালেদা যেমন আর মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করে না, ও ডেনেল কিংবা প্যালিনও তাই। তারা বরং রক্ষণশীল বিশ্বাসীদের প্রতিমূর্তি। একজন তো প্রায় উইচক্রাফটই করা শুরু করেছিল, আরেকজন আলাস্কায় বিজ্ঞানের ক্লাসে ক্রিয়েশনিজম পড়াবেন বলে জোরালো ক্যাম্পেন করেছিলেন। 😀
@অভিজিৎ,
আমি কিছু জানিনা,সব দোষ জনাব রৌরবের,আমি নিরীহ দর্শক (দরকারি ইমোটিকনের অভাব অনুভব করছি 🙁 ) । আসল পয়েন্ট হলো আপনার ছবিতে চালাক দুজনই পুরুষ,বেকুব দুজনই মহিলা। যাই হোক আমি কিছু জানিনা :cake: ।
@অভিজিৎ,
দাদা আমি আপনার সাথে একমত।শত্রুর মুখে ছাই (! 😛 ) দিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিলেন। ওয়েল ডান।
বন্ধুমহলে কিভাবে যেন আমি, এই নিতান্ত নিরীহ ভালমানুষটি নারীবাদী ও প্রতিবাদী নারী নামে একটি বদনাম কামিয়ে ফেলেছি, সেই আমিই যখন আপনার সাথে ঝগড়া করলামনা তার মানে আপনার ভয় নেই 😛 😉
@লীনা রহমান,
যাক, বাঁচলাম! 🙂
ও হ্যা, রামগড়ুড়ের ছানা কিন্তু আপনার জন্য ‘গার্বেজ বাক্স’ বানিয়ে দিয়েছে, দেখেছেন নিশ্চয়! এখন মনের সুখে গার্বেজের সুগন্ধ নিয়ে থাকুন, আমি ভাগি।
@রৌরব,
দেখেন অভিদা কী সুন্দর ম্যানেজ করে ফেলেছেন। আসলে সঠিক পরিকল্পনাহীন যেকোনো উদ্যোগ বিফল হতে বাধ্য। 😛
আমি লিটারেচারের ছাত্রী ছিলাম। ” modern literature” ফাইনাল ভাইভা পরীক্ষায় আমার একটি প্রশ্নের উত্তরে “কোরাণ” বিরোধী সুর থাকায় আমি সেই সময়েই স্যারের কাছে প্রিয় ছাত্রী থেকে একজন বেয়াদব মেয়েতে পরিনত হলাম,( এবং পরবর্তীতে গ্রেড পয়েন্ট জ্যামিতিক হারে কমতে থাকল ওই স্যারের অন্য সাবজেক্ট গুলোতেও)।আমি আমার পরের রোল নম্বরের ছেলেটিকে বল্লাম আমার করুন অভিজ্ঞতার কথা, সাথে সুপরামর্শ দিলাম প্রশ্ন স্যার যাই করে থাকুক না কেন কোরান সুন্নাহ ভিত্তিক উত্তর দিতে।আমি পাশের ঘরেই ছিলাম, আরেকজন স্যারের কম্পিউটারে টাইপ করে দিচ্ছিলাম একটা কালচারাল অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট। শুনতে পাচ্ছিলাম আমার পরামর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমার সহপাঠী কিভাবে ওয়েস্টারন সমাজের তুলোধুনা করছে। তার বক্তব্যের সারমর্ম হল ইসলাম গ্রহনেই সব সমস্যার মুক্তি। মহান এই আস্তিক বন্ধুটির শেষ কথাটা আপনাদের সবার সাথে শেয়ার না করে পারছিনা।
” স্যার আমার আগে যে মেয়েটি এইখানে ভাইভা দিয়ে গেল ও একটু অন্য রকমের। কথা বার্তা ইসলাম বিরোধী টাইপ। ও ক্লাসেও সবার সামনে নবীজী কে নিয়ে কটুক্তি করেছে।”
:-X
@সাধারণ মেয়ে,
ধন্যবাদ আপনার ‘অসাধারণ’ মন্তব্যের জন্য। আরো বেশি করে আলোচনায় অংশ নিন। এরকম ঘটনা আরো বেশি করে তুলে ধরুন।
খুব ভাল লেখা। অনেক কষ্ট করে লেখার জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের লেখা আরও বেশী করে প্রকাশ ও প্রচার করা উচিত। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন- ধর্মের এ ভাইরাসের এন্টি ভাইরাস কি আবিষ্কার করা যায় না ? যদি না করা যায় , তাহলে ধর্মের এ ভাইরাস কি গোটা মানব জাতিকে আক্রান্ত করে মানব জাতির সমূলে বিনাশ ঘটাবে কি ?
@ভবঘুরে,
অবশ্যই। আপনার মত লেখকেরাই তো একেকটি অ্যান্টিভাইরাস। মুক্তমনা সাইটের প্রায় সব লেখকই তাই।
এমন ঢালাওভাবে নাস্তিকদের আই.কিউ যে বেশি এটা বলা কি ঠিক?? আমি আমার দৈনন্দিন জীবনে এই কথার অনেক অনেক ব্যতিক্রম দেখেছি। আমার মতে আই.কিউ না, আস্তিকদের বিশ্বাসের মুলে আছে তাদের পুরানো ধ্যান ধারনার প্রতি আনুগত্য। তাদের নৈতিকতার উৎস হচ্ছে ঈশ্বর, সামাজীকিকরনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাদের নৈতিকতার ভিত্তিমুলে ঈশ্বরকে স্থাপনই তাদের বিশ্বাসী হয়ে ওঠার প্রধান কারন। তাদের বুদ্ধিমত্তা বেশি থাকলেও তারা সেই বুদ্ধি ব্যয় করে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষের প্রমাণ খোজায়। বুদ্ধিমান বিশ্বাসীরা সর্বদাই বিশ্বাসী থেকে যায় কারন তারা ঈশ্বরের অনস্তিত্বের ধারনাটা ভয় পায়।
@শোয়েব,
আমি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা থেকেই ফলাফল হাজির করেছি, ব্যক্তি বিশ্বাসের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে নয়। আর যখন কোন ট্রেন্ডের কথা বলা হয় গড়পরতা ট্রেন্ডের কথাই আসে। ব্যতিক্রমী উদাহরণ তো আছেই। কিন্তু গড়পরতা নাস্তিকদের বুদ্ধিবৃত্তি বা আইকিউ বিশ্বাসীদের যে কিছুটা বেশি বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে। সেটা বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরাটাই উদ্দেশ্য। তারপরেও আপনি দ্বিমত করতেই পারেন। তবে একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার। আইকিউ নিয়ে মতামত আমার লেখাটির একটি ছোট অংশ। মূল বক্তব্য বিশ্বাসের ভায়োলেন্স এবং দারিদ্রের সাথে বিশ্বাসের সম্পর্কের সাম্প্রতিক ফলাফলগুলো তুলে ধরা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ দা,
অবশ্যই আই.কিউ ব্যাপারটা প্রবন্ধটির ছোট একটি অংশ, কিন্তু প্রবন্ধের বাইরের নয়। অন্যান্য বিষয়ে আমি মোটামুটিভাবে একমত।
নাস্তিকেরা একইসাথে চিন্তা-চেতনায় বুদ্ধিমান এবং সাহসী। কিন্তু কোন আস্তিকের বুদ্ধিমত্তা বেশি হলেও সে হয়তোবা চিন্তা-চেতনায় ততোটা সাহসী নয় তাই সে আস্তিক রয়ে যায়। নিম্নবুদ্ধিমত্তার মানুষেরা প্রচলিত বিশ্বাসেই অটল থেকে যায় যার ফলে এ সকল বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় বিশ্বাসীরা গড়পড়তা বুদ্ধিমত্তায় পিছিয়ে পড়ে।
আমি আপনার অনেক লেখাই পড়েছি। মোটামুটি সব বিষয়ে একমত হওয়াতেই এখনো আপনার প্রবন্ধে মন্তব্য করার প্রয়োজন মনে করিনি। বিভিন্ন বিষয়ে আপনার বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা অসামান্য কৃতিত্বের দাবি রাখে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বাসীদের পরোক্ষ ও সুক্ষ্মভাবে “নির্বোধ” প্রমাণ করাটা আমার মতে অনুচিত। এতে বিশ্বাসীদের কাছে “মুক্তমনা” গ্রহনযোগ্যতা হারাবে। কোন মতামত প্রচার করার জন্য খেয়াল রাখা উচিত প্রচার মাধ্যমটি যাতে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায়।
@শোয়েব,
ঠিক আছে। আপনার উপদেশ এবং দ্বিমতের কথা মনে থাকবে ভবিষ্যতে। তবে একটি বিষয় পরিস্কার করব। আমি কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বাসীদের পরোক্ষ ও সুক্ষ্মভাবে “নির্বোধ” প্রমাণ করার জন্য অনুচ্ছেদটা লিখিনি। আইকিউ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদটা এসেছে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ এর করোলারি হিসেবে। আমরা স্কুলে জ্যামিতি পড়ার সময় উপপাদ্যের পাশাপাশি করোলারি উপপাদ্য পড়তাম না, অনেকটা সেরকমের! 🙂 । তবে আমি মনে করি ব্যাপারগুলোকে আবেগের বশবর্তী হয়ে না নিয়ে যৌক্তিকভাবে নেয়া উচিৎ। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ‘ঔচিত্য’, ‘গ্রহণযোগ্যতা’ না নিয়ে আসাই শ্রেয়। যেমন একজন মন্তব্যকারী সমীক্ষা উল্লেখ করেছেন নাস্তিকদের চেয়ে আস্তিকেরা দান খয়রাত বেশি করে, আমি ত মেনে নিয়েছি। তাহলে বিপরীতটা মানতে আপত্তি হবে কেন? অনেক সময়ই অতিরিক্ত বিশ্বাসনির্ভরতা যৌক্তিক বিশ্লেষণে বাধা দেয়, বুদ্ধিবৃত্তিকে পঙ্গু করে ফেলে। আইকিউ নিয়ে সমীক্ষার ফলাফল কি সেই সত্যেরই প্রতধ্বনি নয়?
যা হোক আপনার সথে আলোচনা করে ভাল লাগল। মুক্তমনায় আরো লিখুন।
@অভিজিৎ দা,
ধন্যবাদ। অবশ্যই মুক্তমনায় আরো লেখা চালিয়ে যাবো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন অবিশ্বাসী, আবেগের বশবর্তি না হয়ে যৌক্তিকভাবেই ব্যাপারটি পর্যবেক্ষন করেছি বলে আমার ধারনা। সহজ কথায় আমার বক্তব্য ছিল আপনি যদি কানাকে কানা বা খোড়াকে খোড়া বলেন, কথা সত্যি হলেও সেই কানা বা খোড়ার কাছে আপনি আপনার গ্রহনযোগ্যতা হারাবেন, এবং পরবর্তিতে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপনার সকল প্রচেষ্টাই বৃথা হতে পারে।
বিঃ দ্রঃ আমি বিশ্বাসীদের কানা, খোড়া বলিনি। ব্যাপারটা বোধগম্য করার জন্য এটি আমার উদাহরন মাত্র।
@শোয়েব,
আপনি কি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন?
(একটু জানার দরকার ছিল)
[email protected] এটা আমার ইমেইল আইডি। একটু যোগাযোগ করবেন আশা করি।
@শোয়েব,
উল্টোটাও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগী যখন তার রোগ সম্বন্ধে সচেতন হবে, তখনই সে সুচিকিৎসার দিকে যাবে, তার কোন রোগ নেই বলে চোখ বুজিয়ে রাখলে নয়। কানাকে আপনি কানা না বলতে চান, দৃষ্টিহীন বলুন। কিন্তু বলতেই হবে, নইলে অন্ধত্বের উপসম করতে রাজীই হবে না। ঠিক একই ভাবে খোড়াকে খোড়া না বলুন, অন্ততঃ খঞ্জ বলুন, নইলে সে পঙ্গুত্ব সাড়াতে যাবে কেন?
যাহোক, আন্তন চেখভের একটা চমৎকার উক্তি আছে এ প্রসঙ্গে –
Man will become better when you show him what he is like.
চেখভের উক্তিটি আরো একবার পড়ুন। আমি এর চেয়ে ভালভাবে মনে হয় আপনাকে ব্যাপারটা বলতে পারবো না।
পাশাপাশি আরো একটা ব্যাপার বলি – আপনার ‘কী বনাম উচিৎ এর হেত্বাভাস (“Is” vs. “Ought” fallacy) সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া দরকার। আমি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা থেকেই নির্মোহভাবে বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাপারটা দেখিয়েছি, কি হলে কি হওয়া উচিৎ তা নয়। আপনি বার বার – ‘সকল প্রচেষ্টাই বৃথা হতে পারে’ বলে ব্যাপারটাকে যেদিকে নিচ্ছেন সেটা “Ought” fallacy। সাধারণভাবে বিজ্ঞানের কাজ প্রকৃতি, মানুষ বা সমাজ কি রকম সেটা ব্যাখ্যা করা, সেগুলো কিরকম হওয়া উচিৎ তা নয়।
যা হোক আমরা মনে হয় দু’জনই দুজনের কথা বলে ফেলেছি। বাকিটুকু পাঠকের দায়িত্ব।
সহমত।
লেখার শুরুটা পড়তে অনেক খারাপ লাগছিল। প্রায় প্রতিটি ধর্মেই মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলে মনে করার একটা ধারণা প্রচলিত আছে। আর ধার্মিক মানুষগুলো এটা ভেবে বেশ তৃপ্তিও পায় এবং বিবর্তনের পক্ষে লাখো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা একে স্বীকার করতে চায়না কারণ নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জীবের পর্যায় থেকে নামিয়ে আনতে তাদের অহংবোধ আহত হয়। তাই ধর্মীয় আচার ঠিকমত পালন করেনা এমন ব্যাক্তিও তার ভেতরে পৈত্রিক ও সামাজিক বিশ্বাসের জোরে বিবর্তন তত্ত্বকে হেসেই উড়িয়ে দেয়। কিন্তু এধরণের হত্যাগুলো এই তথাকথিত শ্রেষ্ঠ জীবগুলোকে কোথায় নামিয়ে আনছে সে সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। আর এটা মনে হয় তাদের ছাগুত্বের অন্যতম উৎকৃষ্ট প্রমান।
আর পরবর্তী অংশও গ্রাফ দিয়ে আলোচনা করায় ভাল লাগল।
সব মিলিয়ে আরেকটি দুর্দান্ত লেখা উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ অভিজিৎ দা। :rose2:
আমার মনে হয়না বিশ্বাস হতে মানুষ কখনও মুক্তি পাবে। হয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বিলুপ্ত হবে না, কিন্তু কোন না কোন কুসংস্কারের রুপে বিশ্বাস ঠিকই মানুষের মধ্যে রয়ে যাবে।
@পৃথিবী,
আমার মনে হয় মানুষ একদিন অবশ্যই বিশ্বাসের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে। বিশ্বাস বিষয়টা এখনই অনেকটা হাস্যকর হয়ে উঠেছে। কেউ যদি কোনো যুক্তি-প্রমাণ না দিয়ে কোনো কিছুকে “বিশ্বাস” করে এর স্বপক্ষে সাফাই গায় তবে সবাই তার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতেই তাকায়।
আমি বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বাসীদের হাতেই বিশ্বাসীদের যেভাবে নাজেহাল হতে দেখি তাতে মনে হয় না বিশ্বাসের দৌরাত্ম খুব বেশি দিন থাকবে।
@পৃথিবী, বিশ্বাস থেকে মানুষ মুক্তি পাবে কি পাবে না তা সময়ই বলে দিবে।কিন্তু আমাদের কী উচিত না এই অন্ধ বিশ্বাস থেকে লোকজন যাতে মুক্তি পায় তার চেষ্টা করা?পেসিমিস্টিক হয়ে লাভ কী!!!
:guru:
কানাজাওয়া’ র বিবর্তন সম্পর্কিত তত্ব গুলির ওপরে বেশী নির্ভর না করাই ভালো। বিখ্যাত বিবর্তন প্রচারক ও জনপ্রিয় বিগ্গ্যান ব্লগ Pharyngula র উদ্যোক্তা PZ Myers বলেছেন, “Kanazawa the “great idiot of social science”(১)। এটা তো অনেকটা প্রতিষ্ঠিত যে আস্তিকতাই মানুষের default অবস্থা। একটি উদ্দেশ্যবিহীন বিশ্বে কষ্ট করে একটি সুস্থ জীবন কাটানোর মতো মানসিক শক্তি খুব কম মানুষেরই আছে। যারা বুঝেশুনে নাস্তিক হন তাদের শিক্ষা বেশী হওয়ারই কথা। শিক্ষার সাথে অর্থের এবং বুদ্ধিমত্বার সম্পর্ক নিয়ে বলার কিছু নেই।
কমুনিস্ট চীনে Christianity ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আমার অনেক পরিচিত চাইনিজ কে দেখেছি যারা দীর্ঘদিনের অবিস্বাসী পরিবার থেকে এসেও নতুন করে ধর্ম গ্রহন করছে।
আমি নীচে দে্য়া লিংকটি একটু ঘেটে দেখতে বলছি। এছাড়াও অনেক স্টাডিতে দেখা গি্য়েছে যে রক্ষনশীলরা বেশী দানখয়রাত করে ও সমাজের জন্যে বেশী সময় দেয়। একজন পুরনো সংশয়বাদী হিসেবেই বলছি, আস্তিকতার যে evolutionary advantage আছে বিশেষ করে Group Selection এ, তা অস্বীকার করা সহজ নয়। Steven Pinker তার প্রথম বইয়ে Selfish Gene এর দাসত্ব খন্ডন করতে নিজের জিনকে বলেছিলেন go jump in a lake। অপরদিকে সবধর্মের আসন্ন কেয়ামতে বিশ্বাসীরা পূর্নদ্যমে তাদের জিন ছড়িয়ে যাচ্ছেন। বিবর্তনের শেষ কথা হল যে ইনফরমেশন টিকে থাকে।
(১)http://www.alternet.org/belief/145903/controversy_grows_over_study_claiming_liberals_and_atheists_are_smarter
@Shafiq,
ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। আপনি কানাজাওয়া সম্বন্ধে যেটি লিখেছেন সেটা আমি জানি। উইকিতে দেখেছি আগেই। তবে কী জানেন কে কাকে ইডিয়ট বলল সেটিতে কিন্তু বক্তব্য খণ্ডন হয় না, সেটি পি জ়ে মায়ার্সই হোক কিংবা ডকিন্সই হোক। এটা বরং এডহোমিনিয়াম এটাক এবং ফ্যালাসি। বক্তব্য খণ্ডন করতে হলে যৌক্তিকভাবেই করতে হবে। কানাজাওয়ার গবেষণার ফলাফল সিএনএন সহ অনেক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথেই প্রচারিত হয়েছে (যেমন দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, কিংবা এখানে)। কেবল কানাজাওয়া ‘ইডিয়ট’ বলে দিয়ে এটাকে খণ্ডন করা যাবে না।
তবে দান খয়রাতের ব্যাপারটা সার্বিকভাবে সত্য, নাস্তিকদের চেয়ে আস্তিকেরা দান খয়রাত বেশি করে থাকে বলে প্রচারিত। সব ধর্মেই আছে দান, খয়রাৎ এবং যাকাতের রমরমা হরেক রকম আয়োজন। আমি যেখানে থাকি , সেখানে চার্চগুলোর তৎপরতা তো আলাদাভাবে উল্লেখ করার মত। তবে এগুলো কতটুকু সত্যিকার আর কতটুকু লোকদেখানো আমার সন্দেহ আছে। হজ্জ করার আয়োজনও দেখি চারপাশে প্রচুর, কিন্তু হজ করলেই হাজি সেলিম বা আলহাজ হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ভালমানুষ হন নাকি? আমার সন্দেহ আছে।
@অভিজিৎ,
দান, খয়রাৎ, যাকাত যারা দিচ্ছেন তাদের বেশীরভাগ লোকই দিচ্ছেন উদ্দেশ্যমুলকভাবে। কারন দান, খয়রাৎ, যাকাত দিয়ে তিনি যে অর্থ ব্যয় করছেন তার থেকে কয়েকগুন হাতিয়ে নিচ্ছেন পরবর্তিতে দেশ ও দশের কাছ থেকে। সুতরাং সবটাই হলো অসৎ বিজিনেস।
ঘটনা-১ঃ ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলাম।পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল।তো এক পর্যায়ে কিছু লোক বলতে শুরু করল-মানুষের জানের-ই যেখানে লাইসেন্স নেই,সেখানে গাড়িকে আর কতটুকু বিশ্বাস করা যায়?কথায় কথায় মৃত্যুর আলোচনা চলে আসল।এক লোক বলল যে কোন ব্যক্তির যদি জানাযা হয়ে যায়,তবে সে মারা যাবে।এক ব্যক্তি নাকি এই পরীক্ষা করতে যেয়ে মারা গেছে।আরেক যাত্রী বলল, নাহ, এগুলো মিথ্যা কথা।সঙ্গে সঙ্গে অন্য যাত্রীরা ক্ষেপে উঠল।বলল,এটা না-কি হাদিসে আছে।এটাই সত্যি।আমি ভাবছিলাম কিছু বলব কি-না।কিন্তু দেখলাম সবাই ঐ লোকটির উপর প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছে।ক্ষ্যান্ত দিলাম।
ঘটনা-২ঃহাই স্কুলে প্রথম নাস্তিকতা প্রচার শুরু করি আমি।এতে টিচাররা আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে যান।এলাকায়ও বদনাম ছড়ায়।তখন এগুলো পাত্তা দিইনি,এখনো দিই না।এস এস সি তে অল্পের জন্য আমার এ* মিস হয়।আমাদের এক হুজুর শিক্ষক প্রচার করতে থাকেন,আমি না-কি ধর্মে খারাপ করেছি,যদিও ধর্মে আমি এ প্লাস পেযেছিলাম।আল্লাহ পাক না-কি আমার বিচার করেছেন!!
ঘটনা-৩ঃকলেজে জীববিজ্ঞান ক্লাশে আমাদের টিচার বলছিলেন,কোরান বিবর্তন তত্ত্বকে সাপোর্ট করে না।আমি প্রশ্ন করলাম,ম্যাডাম,কোরান সত্যি না-কি বিবর্তন?ক্লাশে যেন একটি গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল।ম্যডামের চোখে-মুখে বিস্ময়।তিনি বললেন,এগুলো কি বল?অবশ্যই কোরান সত্যি।বিবর্তন তো কাফেরদের প্রচার। এগুলো ঠিক না।
ঘটনা-৪ঃবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম।প্রতিদিন রাতে শিবিরের একদল কর্মী আমার ব্রেন ওয়াশ করতে আসত।একদিন তারা বলল(সবাই বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল,জেনেটিক্সের ছিল একজন)-চাঁদের মাটিতে নীল আর্মস্টং আর অলড্রিন না-কি আযানের ধ্বনি শুনতে পেয়ছিল।আমি বললাম,ভাইয়া চাঁদে তো বাতাস নেই,আর শব্দ তো ভ্যাকুযামে চলতে পারে না।তার উত্তর দিয়েছিল,এটা আল্লা পাকের কুদরত।
ঘটনা-৫ঃ ক্লাশ চলছিল।তো পাশ্চাত্য মিথ নিয়ে আলোচনা কালে অন্যান্য ধর্মের আলোচনা চলে আসল।যে ম্যাডাম ক্লাশ নিচ্ছিলেন তিনি বললেন,সব ধর্মগ্রন্থ-ই পরিবর্তিত হয়েছে।শুধু কোরাণ পরিবর্তিত হয়নি।আমি কথা শুনে হাসছিলাম।ম্যাডাম বললেন,তুমি মনে হয় আমার কথার সাথে একমত নও।আমি বললাম,শুধু লাস্ট বাক্যটার সাথে একমত নই।সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে।ক্লাশে সবগুলো চোখ যেন আমার উপর এসে আটকে রইল।আমি বললাম,কোরান যে পরিবর্তিত হয়েছে সে সম্বন্ধে আমার কিছু পড়াশোনা আছে।ম্যাডাম হঠাৎ করে বললেন,ওগুলো কাফিরদের রচনা।তারপর আলোচনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন।
এই হচ্ছে জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার খন্ডিত চিত্র।এর মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও বুঝা যায়,আমাদের মানসিকতার প্রত্যেকটি স্তরে ধর্ম কী রকম আধিপত্য বিস্তার করে আছে।একদম সাধারণ ব্যক্তি-স্তর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে আছে একদম উপরের স্তর পর্যন্ত,ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্য দিয়ে।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম, এ ধরণের পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই দেখা যায়। সমাজ রাষ্ট্র সবই এটা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অধিকাংশ জায়গায়। দুঃখজনক।
:-Y :-Y :-Y
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
শহরে না থাকায় আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে অনেক দেরী হল। আপনার বলা প্রতিটি ঘটনাই এতো বাস্তব যে এ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। বাংলাদেশে এগুলো খুবই বাস্তব ঘটনা। বিশ্বাসের ভাইরাসের চাষ ছাড়া আর কীই বা বলা যায়! :-X
ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগমূহুর্তে লেখাটা চোখে পরলো। আপাততঃ দ্রুত চোখ বুলিয়ে গেলাম পরে সময় নিয়ে পড়ে আবার মন্তব্য করব। তবে এই মূহুর্তে ছোট্ট একটি অনিচ্ছাকৃত “বানান” ভুল চোখে পরল।
রিচার্ড ডকিন্সের ‘ভাইরাসের অব দ্য মাইণ্ড’ রচনাটির আগে জৈববৈজ্ঞানিকভাবে ধর্মের মডেলকে বোঝা যায়নি।
:yes:
@হোরাস,
ধন্যবাদ হোরাস। ডকিন্সের লেখাটির নাম ‘ভাইরাসেস অব দ্য মাইণ্ড’ হবে।
আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।