জরাথ্রুষ্টবাদঃ
পৃথিবীর সকল ধর্মের উপর জরাথ্রুস্টবাদের বা পারসীবাদের প্রভাব সম্পর্কে ভিন্নমত থাকলেও অধিকাংশই এর পক্ষে মত দিয়েছেন। Widengren এর স্পষ্ট বার্তা,
“ইরানের ক্রমবিকাশে সেখানকার ধর্মসমুহের বড় প্রভাব রয়েছে,এমনকি পশ্চিমের ইরানীয়ান মতবাদভিত্তিক ধর্মগুলো উপরেও। এই ধর্মগুলোর ভিতরে আছে ৫৯৮-৫৩৭ খ্রিঃপূর্বাব্দে ব্যাবিলনিয়া থেকে বিতাড়িত ইহুদী সম্প্রদায় অনুসৃত মতবাদ, হেলেনীয় গুপ্তধর্ম সমুহ যেমন Mithraism,Gnosticism এবং ইসলাম। ইসলামে শিয়া মতবাদে ইরানীয়ান প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।”
Widengren তার Die Religionen irons (1965) বইতে ইহুদীদের ব্যাবিলন থেকে বিতাড়নের সময়কালে ওল্ড টেষ্টামেন্টের উপর জরাথ্রুষ্টবাদের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সম্ভবত Morton Smith ই প্রথম ব্যক্তি যিনি ওল্ড টেস্টামেন্টের ইসাইয়া(৪০-৪৮) ও জরাথ্রুষ্টদের প্রার্থনা সঙ্গীত ,যা ‘গাথা’ নামে পরিচিত,তার ৪৪:৩-৫ অংশের অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন। ঈশ্বর আলো ও অন্ধকার উভয়ই সৃষ্টি করেছেন-এই কথাটি উভয় গ্রন্থেই রয়েছে। John Hinnels তার Zoroastrian Savior Imagery and Its Influence on the New Testament বইতে খ্রিঃপূর্ব ২য় শতকে ইহুদীদের সাথে পার্থিয়ানদের মিলনের ফলে এই মিল লক্ষিত হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
ইসলাম জরাথ্রুষ্টবাদ দ্বারা সরাসরি অনুপ্রাণিত,কিন্তু ইসলামের উপর ইহুদী ও খ্রিষ্টধর্মের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। এইকারনেই,আমরা দেখব ইহুদী ধর্মের সাথে জরাথ্রুষ্টবাদের মিল সমুহ,যা পরে ইসলাম আত্মস্থ করে।
‘আহুরা মাজদা’,ইরানের সর্বশক্তিমান,সর্বব্যাপী ও শ্বাশ্বত প্রভু-তার শক্তিকে তিনি ‘স্পেন্টা মাইনু’ বা পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত করেন এবং পুরো জগতকে তার ফেরেশতাদের দিয়ে চালনা করেন;ধারণাটি ইহুদীদের ‘জিহোভা’ বা YHWH এর প্রতিরুপ। কিন্তু তার ক্ষমতা তারই পরামর্শদাতা ‘আহরীমান’ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,যাকে শয়তানের সাথে তুলনা করা যায়। পৃথিবী ধ্বংসের দিন ‘আহরীমান’ এর রাজত্বও শযতানের ন্যায় ধ্বংস হবে।
এখানে ধারণার মিল লক্ষ্য করা যায়-পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে এবং পুনরায় ‘মেসিয়া’র আগমনে একটি ‘নিখুঁত ও সত্য’ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে,মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে এবং সেই জীবন হবে অক্ষয়। দুটো ধর্মেই ঈশ্বর নবীর নিকটে উপস্থিত হয়েছেন- আহুরা মাজদা তার আদেশ নির্দেশ ‘জরাথ্রুষ্ট’ এর কাছে পবিত্র দুই পাহাড়ের মিলিত শীর্ষে দেখা করে পৌছে দিয়েছেন, এবং জিহোভা মুসা নবীর কাছে সিনাই পাহাড়ে একই রকমভাবে ১০ টি নির্দেশ পৌছে দেন।
জরাথ্রুষ্টবাদের বিশুদ্ধিকরন নীতি,বিশেষত সেইসব নিয়মগুলি যেগুলো সাধারনত মৃত ও অপরিস্কার জিনিসের সংস্পর্শে ঘটে থাকে ,তা ওল্ড টেস্টামেন্টের সাথে মিলে যায়।
‘জেনেসিস’ এ বর্ণিত ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কাহিনী একইভাবে জরাথ্রুষ্টিয়ানদের ছয়ভাগে পৃথিবী সৃষ্টির ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ন। উভয় ধর্মমতেই মানুষ সৃষ্টি হয়েছে একজোড়া মানব মানবী থেকে, Mashya(ইরানীয়ান ADAM) ও Mashyana(ইরানীয়ান EVE)। বাইবেলে আমরা দেখতে পাই যে একটি প্লাবন শুধুমাত্র একটি পরিবার ছাড়া আর সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, জরাথ্রুষ্টিয়ানদের Avestan Vendidad গ্রন্থেও দেখা যায় একটি প্রবল শৈত্যপ্রবাহ একটি মাত্র পরিবার (YIMA, বাইবেলে নোয়া বা নুহ) ছাড়া সবকিছু দ্বংস করে দেয়। উভয়ক্ষেত্রেই পৃথিবী পুনরায় কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে প্রত্যেক প্রজাতির সেরা দুই জোড়া প্রাণী দ্বারা এবং পরবর্তীতে তিনটি রাজ্যে বিভক্ত হয়। Yima এর সন্তান Thraetaona এর তিন পুত্র Airya, Sairima and Tura পারসীয়ান কাহিনীতে রাজত্ব করে,আরবীয় গল্পে দেখতে পাই Shem,Ham ও Japheth কে রাজত্ব করতে। ইহুদীবাদ জরাথ্রুষ্টিয়ানবাদের ফেরেশতা ও শয়তান ধারণার কাছে ঋনী,সম্ভবত পুনরুথ্থান এর ধারনাও একইভাবে পেয়ে থাকতে পারে।
স্বীকৃত ইসলামী পন্ডিতদের মধ্যে প্রথমে Goldziher ই ইসলামের উপর জরাথ্রুষ্টবাদের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন, তাই আমি এই অংশে তার গবেষনার উপরেই নির্ভর করব।
৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কুদিসীয়ায় সাসানিয়ান পারসীয়ান বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে ইরানে ইসলাম প্রত্যক্ষ্য ভাবে প্রবেশ করে। অধিকতর উন্নত পারসীয়ান সংস্কৃতি ইসলামকে প্রভাবিত করে। সদ্য পরাজিত ও ধর্মান্তরিত পারসীয়ানরা ইসলামের মধ্যে চিন্তার নতুন ধারা প্রচলন করেন। উমাইয়া বংশের সমাপ্তিতে যখন আব্বাসীয় বংশ ক্ষমতায় আসে,তা ছিল মূলত পারসীয়ান প্রচেস্টা। আব্বাসীয়রা অনেক সাসানীয় প্রথা গ্রহন করে। তারা খলিফার ধারণার প্রতি পুরোপুরি সচেতন থেকেও উপাধি গ্রহন করে ‘The King of Persia’,তাদের রাজ্য ছিল ধর্মশাসিত যেখানে শাসকেরা ছিল ধর্মের প্রতিনিধিস্বরুপ।সাসানিয়ানদের মতোই তারা নিজেদেরকে স্বর্গীয় ভাবত। রাষ্ট্র ও ধর্মের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক ছিল,এবং একটা পরস্পরনির্ভরতা দুটিকে এক করেছিল। সরকার ও ধর্ম ছিল একইভূত,তাই ধর্মই ছিল জনগনের সরকার।
কোরান আবৃত্তি করে পাপমুক্ত হওয়ার বিষয়ও পারসীয়ানদের থেকে ধারকৃত- পারসীয়ানরাও Avestan Vendidad পাঠ করে পাপমুক্ত হওয়াতে বিশ্বাস করত। উভয় ধর্মবিশ্বাসেই পবিত্র গ্রন্থ থেকে আবৃত্তি যেকোন জাগতিক অপশক্তিকে রুখে দিতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করা হয়। এই আবৃত্তি এমনকি আত্মার মুক্তির জন্যও প্রয়োজন। মুসলিম ও জরাথ্রুষ্টিয়ান উভয়ই মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় মৃত্যুর কয়েকদিন পর পর্যন্ত পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করত। উভয় ধর্মমতেই মৃতের জন্য আহাজারী নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মুসলিমদের অপার্থিব নিক্তি ‘মিযান’ এর ধারনাও এসেছে পারসীয়ানদের কাছ থেকে(কোরান সুরা ২১:৪৭)। তাদের প্রভাবে প্রভাবান্নিত হয়ে মুসলিমরা ভাল ও মন্দ কাজের পরিমাপের বিভিন্ন একক বের করে। যেমন, নবীজি বলেন,
“যে ব্যক্তি মৃতের জানাযার নামাজ পড়ে সে এক ‘কিরাট’ পূন্য অর্জন করে,কিন্তু যে মৃতদেহ কবরস্থ করা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে,সে দুই কিরাট পূণ্য অর্জন করে। যার ভিতরে একটি কিরাটের ওজন চাঁদ পর্বতের থেকেও বেশি।”
মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী,হাশরের(শেষ বিচার) দিন জিব্রাইল ফেরেশতা পাপ পূণ্য পরিমাপক দাঁড়িটি নিয়ে অপেক্ষা করবেন,যার একটি পাল্লা বেহেশতের উপর ও অন্যটি দোজকের উপর থাকবে। একইভাবে, পারসীয়ানরাও বিশ্বাস করত শেষ বিচারের দিনে স্বর্গ ও নরকের সংযোগ সেতুর ওপর দুই ফেরেশতা দাড়িয়ে থাকবেন,প্রত্যেক অতিক্রমকারীকে লক্ষ্য করবেন। একজন ফেরেশতা যিনি ঈশ্বরের দয়ার প্রতীক, হাতে দাঁড়ি নিয়ে সব মানুষের কাজ মাপবেন। যদি ভাল কাজ বেশি হয়,তাহলে তাকে স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তা না হলে অন্য ফেরেশতা,যিনি ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের প্রতীক,তাদেরকে নরকে নিক্ষেপ করবেন। পাপপূণ্যের বিচারসংক্রান্ত অন্যান্য ইসলামী ধারণাগুলো বিভিন্ন খ্রিষ্টিয়ান ধারণা থেকে উদ্ভুত,যা আমরা পরে আলোচনা করব।
মুসলিমদের দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার পেছনেও পারসীয়ান অনুপ্রেরনা আছে। মুহম্মদ প্রথমে দিনে দুইবার নামাজ পড়া চালু করেন। তারপরে কোরানে যেমন বলা আছে,তিন নম্বরটি যোগ করা হয়। তখন নামাজ ছিল তিনবার-ভোরের,সন্ধ্যার ও দুপুরের নামাজ যা ছিল ইহুদীদের তিনবার প্রার্থনা-shakharith, minkah ও arbith এর অনুরুপ। কিন্তু জরাথ্রুস্টদের সংস্পর্শে এসে মুসলিমরা ভক্তিতে পিছিয়ে পড়তে চাইলো না। পারসীয়ানরা যেভাবে দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে,মুসলিমরাও পাঁচওয়াক্ত নামাজ প্রচলিত করলো।
ইহুদীবাদ ও খ্রিষ্টিয়ানিটির মাধ্যমে ছাড়াও আর কিভাবে প্রাক মুসলিম যুগে আরবে জরাথ্রুষ্টদের প্রভাব পড়েছিল? মক্কার বাণিজ্যিকরা পারসীয়ানদের সংস্পর্শে প্রায়ই আসত।তাছাড়া কিছু আরব কবিদের ইউফ্রেটিস তীরবর্তী আল-হিরায় ভ্রমনের কথা জানা যায়,যেটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে পার্সীদের অধিকৃত। এজন্যই Jeffery এ স্থানটিকে আরবের সংস্কৃতিতে ইরানীয়ান প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্র বলেছেন।
আরবী কবি আল-আস্ পারসীয়ান শব্দে সমৃদ্ধ কবিতা লিখেছেন। Avestan ও মধ্য পারস্য (Pahlavi) থেকে বিপুল সংখ্যক পারসীয়ান শব্দ আরবীতে স্থান পেয়েছে। এমনকী আরবের কিছু এলাকাতে পৌত্তলিক থেকে জরাথ্রুষ্টিয়ান হওয়ারও প্রমান পাওয়া যায়। দক্ষিণ আরবে পারসীয়ানদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল কিছু সাসানিয়ান কর্মকর্তার দ্বারা। সর্বোপরি,আমরা কোরানেও জরাথ্রুষ্টিয়ানদের উল্লেখ পাই,যেখানে তাদেরকে ‘মাদজুস’ (Madjus) বলা হয়েছে ও ইহুদী,স্যাবিয়ান ও ক্রিশ্চিয়ানদের সাথে একই গোত্রে ফেলা হয়েছে-যারা বিশ্বাসী (সুরা ২২:১৭)
নবীর জীবনীলেখক ইবনে হিশাম এর কাছ থেকে আমরা জানতে পারি যে নাদের-ইবনে-আল-হারিথ নামক একজন গল্পকার ছিলেন,যিনি মক্কানদের পারস্যের রুস্তম,ইসফান্ডিয়ার ও পারস্যের সম্রাটের গল্প বলতেন এবং সর্বদা দাবী করতেন মুহম্মদের গল্পগুলি তার গল্পের থেকে উন্নতমানের নয়। Torrey এর মতে,
“এর ফলে নবীজি দেখলেন তার শ্রোতাকুল উধাও হয়ে গেছে। এর প্রতিশোধ তিনি নিয়েছিলেন বদর যুদ্ধের পরে। ধূর্ত ও বর্বর প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে যুদ্ধে বন্দী হন এবং পরে জীবন দিয়ে তার গল্পের মূল্য শোধ করেন।”
আমরা ইবনে হিশাম এর বর্ণনা থেকে পাই যে নবীর সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন সালমান নামে,যিনি পারস্য থেকে আগত ছিলেন। তার পক্ষেও নবীকে তার পূর্বপুরুষদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানানো সম্ভব হতে পারে।
মুহম্মদ নিজেও জরাথ্রুষ্টিয়ানদের দ্বারা ‘বিশ্রাম দিন'(Sabbath) সম্পর্কে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বিশ্রাম গ্রহন সম্পর্কিত ধারণার বিরুদ্ধে ছিলেন। পার্সীরাও ইহুদীদের Sabbath এর বিরুদ্ধমতের ছিল। মুহম্মদ ও সমস্ত মুসলিমদের জন্য শুক্রবার ‘পবিত্র বিশ্রাম দিবস’ ছিল না,ছিল শুধু পারস্পরিক মিলনের দিন।
মুহম্মদ তার ‘মিরাজ’ বা স্বর্গারোহন সম্পর্কিত তথ্যে বলেন যে তিনি ‘বোরাক’ নামক প্রানীর পিঠে আরোহন করে জিব্রাইল,মুসা,ইব্রাহীম ইত্যাদি পূর্বপুরুষদের দেখা পান। বোরাকের চেহারার বর্ণনায় বলা হয় সাদা,দুইপাখা ওয়ালা গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি আকারের প্রাণী। ‘বোরাক’ আসলে আসিরিয়ান ‘গ্রিফোন'(Gryphon) এর অনুকরণে বর্ণিত। কিন্তু Blochet দেখিয়েছেন যে এই সম্পর্কিত সবকিছুই পারসীয়ানদের থেকে ধারকৃত। স্বর্গারোহনের বিস্তারিত বর্ণনা পারসীদের কাহিনী থেকে ধারকৃত। ‘মিরাজ’ এর মুসলিম বর্ণনা এইরকম (মুহম্মদের জবানীতে),
” জিব্রাইল আমাকে বোরাকের পিঠে বসালেন এবং সর্বনিম্ন স্তরের বেহেস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। “তুমি কে?” একজন জানতে চাইল। “আমি জিব্রাইল”,জিব্রাইল উত্তর দিলেন। “তোমার সাথে কে আছে?” -পুনরায় প্রশ্ন হলো। ” আমার সাথে মুহম্মদ আছে”-জবাব দিলেন জিব্রাইল। “তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?”-পুনশ্চ শুনতে চাইলো দ্বারী। জিব্রাইল হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলে দ্বারী বলল,” তাকে সুস্বাগতম জানাই।তার আসায় কি যে ভাল হয়েছে!”।এর পরে সে দরজা খুলে দিল। ঢুকে জিব্রাইল বললেন,”এখানে তোমার বন্ধু আদম থাকেন। তাকে সালাম দাও।” সুতরাং আমি সালাম দিলাম । তিনি প্রতিউত্তরপূর্বক বললেন,”অসাধারন নবীর প্রতি সুস্বাগতম।” তারপরে জিব্রাইল আমাকে দ্বিতীয় স্তরে নিয়ে গেলেন,যেখানে ছিলেন ইয়াহিয়া ও ঈসা,তৃতীয় স্তরে ছিলেন ইউসুফ,চতুর্থ স্তরে ইদ্রিস,পঞ্চমে হারুন এবং ষষ্ঠস্তরে মূসার সাথে দেখা হলো।মূসা যখন সালামের উত্তর দিচ্ছিলেন,ক্রন্দনরত মূসাকে আমি ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললেন,” আমার পরে প্রেরিত তোমার বেশি লোক বেহেস্তে প্রবেশ করবে।” অতঃপর সপ্তম স্তরে প্রবেশ করলে জিব্রাইল বললেন,” এই তোমার পিতা ইব্রাহিম। ” আমি যথারীতি সালাম দিলাম। সবশেষে আমরা যেখানে পৌছলাম সেখানে হাতির কানের মত গাছের পাতা ও সুন্দর ফল ঝুলছিল। “এইটা শেষ বেহেশত”.জিব্রাইল বললেন।”এখানে চারটি নদী আছে,দুটি ভেতরে এবং দুটি বাহিরে।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম “সেগুলো কি কি?” ” ভেতরের দুইটি হল বেহেশতের নদী,আর বাইরের দুটি হচ্ছে ‘ইউফ্রেটিস’ ও ‘নীল’। ”
এই মিরাজ বা স্বর্গারোহন কাহিনী মুসলিম যুগ শুরুর কয়েকশ বছর আগে লেখা পাহলভী কাহিনী ‘আর্তা ভিরাপ’ (Arta Virap) এর সাথে তুলনা করা যাক। জরাথ্রুষ্ট পুরোহিতরা মনে করছিলেন যে তাদের মধ্যে বিশ্বাসীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে,তাই তারা আর্তা কে স্বর্গে পাঠালেন সেখানকার অবস্থা দেখতে। আর্তা এক স্তর থেকে আরেক স্তর স্বর্গে ভ্রমন করলেন ও শেষে পৃথিবীতে ফিরে তার দর্শনলব্ধ কাহিনী বর্ণনা করলেন-
“আমাদের উর্দ্ধগমনের প্রথম বিরতি ছিল স্বর্গের সর্বনিম্ন স্তরে;….সেখানে আমরা ফেরেশতাদের দেখলাম যাদের দেহ থেকে উজ্জল কিন্তু নরম আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। আমি ‘সারোশ’ (সঙ্গী ফেরেশতা) কে জিজ্ঞাসা করলাম,”এই জায়গার নাম কি,এরাই বা কারা?”[এর পরে আর্তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্বর্গে গমনের কথা বর্ণিত আছে] ” স্বর্নালী সিংহাসন থেকে উঠে ‘বাহমান'(Bahman),ফেরেশতাদের নেতা,আমাকে নিয়ে ‘অর্মাদ'(Ormazd) এর কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তখন ফেরেশতা ও স্বর্গীয় ব্যক্তিদের সাথে বসেছিলেন। সবার গায়ে এত উজ্জ্বল অলংকার ছিল,যা আমি পূর্বে কখনও দেখি নি। আমার পথপ্রদর্শনকারী বললেন, এই হচ্ছে অর্মাদ; আমি তাকে সালাম দিলাম এবং তিনি আমাকে বললেন যে পংকিল পৃথিবী থেকে এই নিষ্কলুষ স্থানে আমাকে স্বগত জানাতে পেরে তিনি গর্বিত….. সব শেষে,আমার পথপ্রদর্শনকারী ও আগুনের ফেরেশতা আমাকে স্বর্গ দেখালেন,নরক প্রদর্শন করালেন;তার পরে পুনরায় পবিত্র অর্মাদের সুন্দর বাসস্থানে নিয়ে গেলেন। আমি তাকে সালাম করলে তিনি বললেন,” আর্তা ভিরাপ,জাগতিক পৃথিবীতে ফিরে যাও,সবাইকে বোলো যে তুমি অর্মাদকে দেখেছ,যে অর্মাদ সর্বশক্তিমান ও নীতিবান।””
মুসলিম কাহিনীতে আমরা “সিরাত” বা রাস্তা’র কথা জানি,যা কখনও কখনও ধর্মের সঠিক পন্থা বোঝাতে ব্যবহার হলেও সাধারনভাবে বেহেশত ও দোজকের মধ্যের একটি সেতুকে বোঝায়। সেতুটিকে বলা হয়েছে ‘চুলের থেকেও সরু কিন্তু তরোয়াল থেকেও তীক্ষ্ণ’ এবং দৃইধারে কাঁটা গাছ দ্বারা পরিবৃত। ধার্মিকেরা এটি বিদ্যূতের বেগে পার হয়ে যেতে পারবেন,কিন্তু অধার্মিকেরা তাদের পা পিছলে দোজকের আগুনে পড়বেন।
এই ধারণাটিও অবশ্যই জরাথ্রুষ্টদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর পরে,মানুষের আত্মাকে রিকুইটার ,চিনভাট পেরেটু (Requiter,Chinvat Peretu) অতিক্রম করে যেতে হবে যা অধার্মিকদের জন্য ছুরির থেকেও ধারালো হবে ও পার হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
ভারতীয় ও পারসীয় ধর্মের মধ্যে অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়,যেহেতু ভারতীয়দের পূর্বপুরুষরা পারসীয়দের পূর্বপুরুষদের সাথে মিলে একই গোত্র ‘ইন্দো ইরানীয়ান’ গঠন করেছিল,যারা আবার আরও বড় গোত্র ‘ইন্দো ইউরোপিয়ান’ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তাই,স্বর্গ ও নরকের মধ্যের সেতু সম্পর্কে দুই সভ্যতাতেই মিল খুজেঁ পাওয়া অবাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে যজুর্বেদে এরকম সেতুর কথা বলা আছে। তাহলে,মুসলিম বেহেশতের বর্ণনা ইরানীয়ান ও ভারতীয় সভ্যতার কাছ থেকে পাওয়া বলা যায়। জরাথ্রুষ্টবাদের গ্রন্থ, Hadhoxt Nask, মৃত্যুর পরে আত্মার পরিণতি নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেয়। সৎ ব্যক্তির আত্মা মৃত্যুর পরবর্তী তিন রাত মৃতদেহের নিকটে থাকবে,তারপরে আত্মা অতি সুন্দর একটি পঞ্চদশী কুমারীর দেখা পাবে,যে তাকে নিয়ে স্বর্গের দিকে যাত্রা করবে। এই দর্শন হিন্দু দর্শনের ‘অপ্সরা’দের অনুরুপ,যারা ‘ ইন্দ্রের রাজ্যের অতি সুন্দরী চির যৌবনা কুমারী’ । তারা ইন্দ্রের রাজসভার নর্তকী,কিন্তু মৃতদের আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্বও পালন করে। যারা ধর্মযুদ্ধে মারা যায় তাদের সেবার জন্য স্বর্গে অপ্সরারা নিয়োজিত থাকে।
সুতরাং,স্বর্গ সম্পর্কিত হিন্দু দর্শন অনেকাংশে মুসলিমদের ধারণার অনুরুপ,যেখানে (মুসলিম দর্শনে) বেহেশতের রগরগে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে লোভনীয় হুর ও কুমারীদের নিয়ে,যা খ্রিষ্টান পাদ্রিদের বিদ্রুপের শিকার হয়েছে। এই কুমারীরা যুদ্ধে ‘শহীদ’ মুসলিম যোদ্ধাদের মনোরঞ্জন করার দায়িত্বও পালন করবে। কোরানে বেহেশতের বর্ণনায় ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ নিশ্চিতভাবেই পারসীয়ান উদ্ভুত: ‘ইবরিক'(ibriq) যার অর্থ পানপাত্র ; ‘আরায়িক'(araik) যার অর্থ পালংক।
জেফরী(Jeffery) এই ব্যাপারে বলেন,””হুর” শব্দটি শব্দগতভাবে সাদা জিনিস বোঝায়,যা শ্বেতচামড়ার কুমারী বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে। কথাটি উত্তর আরবীয়দের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছ থেকে,এবং পরে মুহম্মদ ইরানীয়ান প্রভাবে এই শব্দটিকে বেহেস্তের অপ্সরায় রুপ দিয়েছেন।
একটি ‘পাহলভী’ গ্রন্থে স্বর্গের বর্ণনায় বলা হয়েছে,বাগানে সর্বত্র ঝরনা প্রবাহিত,যেখানে সব ধরনের ফুল ও গাছ আছে। একই কথা আমরা কোরানেও পাই,(সুরা ৫৬.১২-৩৯;৭৬.১২-২২;১০.১০;৫৫.৫০) :
“আল্লাহকে যারা ভয় করে,তাদের জন্য দুটি বাগান রয়েছে………ছায়াময় বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত…..প্রতিটাতেই ঝরনা প্রবাহমান……..প্রতিটাতেই সকল প্রকার ফল জোড়ায় জোড়ায় বিরাজমান।”
‘পবিত্র মানুষ’ সম্পর্কিত ধারণায় জরাষ্ট্রায়ান ও ইসলাম,বিশেষত সুফী ইসলামে প্রচুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। উভয় ধর্মমতই উপাসনার পেছনে একটা অভিপ্রায় থাকাকে সমর্থন করে। উভয় মতই কিছু “সাধারন” কুসংস্কারে বিশ্বাসী: যেমন ‘৩৩’ সংখ্যাটি দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। পার্সীরা বিশ্বাস করত ৩৩ ফেরেশতা মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যায়,অপরদিকে ইসলামে আমরা পাই ৩৩ তাসবি,৩৩ তাহমিদ,৩৩ তাকবীর ইত্যাদি।
শয়তান,জ্বীন ও অন্যান্য রহস্যময় চরিত্রঃ
পূর্বে উল্লেখিত সমস্ত আধিভৌতিক উদাহরনগুলো দেখেও যে অষ্টাদশ শতকের চিন্তাবিদরা ইসলামকে কিভাবে একটি যুক্তিবাদী ধর্মের মর্যাদা দিয়েছিলেন,তা ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়। তারা যদি ইসলামের গভীরে ঢুকে এর জ্বীন,শয়তান ও অশুভ শক্তি সম্পর্কিত ধারণাসমুহের সাথে পরিচিত হতেন,তাহলে তারা নিজেদের সারল্যের বোকামীতে লজ্জিত হতেন নিশ্চিত।
ফেরেশতা ও শয়তান এর ধারনা পার্সীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ( কোরানের শব্দ “ইফরিত” (Ifrit) ,যার অর্থ শয়তান,একটি পাহলভী উদ্ভুত শব্দ)। এই ধারনা সত্যি ধরলে এই আত্মীকরন মোহাম্মদের বহু আগে ঘটেছে। আরব পৌত্তলিকরা একটি রহস্যময় প্রাণীর অস্তিত্ব মানত যা ‘সবখানে বর্তমান কিন্তু কোনখানেই স্পষ্টভাবে বোঝার অতীত’,যাকে আরবরা ‘জ্বিন’ (Jinn বা Djinn) বলত। জ্বিন শব্দের প্রকৃত অর্থ খুব সম্ভবত গুপ্ত রহস্য বা অন্ধকার। জ্বীনের ধারনাটি সম্ভবত প্রকৃতির অবশীভুত ভৌতিক দিকটি ব্যাখ্যা করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। পৌত্তলিক আরবেরা এটিকে প্রধানত ভয়ের চোখে দেখত; ইসলামের অগ্রগতির সাথে সাথে তাদের দেখাও পাওয়া যেতে লাগল আর তাদের চরিত্রের উপকারী দিকটিও উন্মোচিত হল।
পৌত্তলিক আরবদের চোখে জ্বীন ছিল অদৃশ্য,কিন্তু নানারকম রুপধারনক্ষম,যেমন সাপ,গিরগিটি ও কাঁকড়াবিছে। যদি জ্বীন কোনও ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে,তাহলে হয় তাকে পাগলে পরিণত করে অথবা তার চিন্তাশক্তি দখল করে নেয়। এইজাতীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা মুহম্মদ এই আধিভৌতিক চরিত্রে বিশ্বাস চালু রাখলেন,” প্রকৃতপক্ষে নবী মোহাম্মদ পৌত্তলিক দেবদেবীদের ‘শয়তানে’র শ্রেনীভুক্ত করেছিলেন (কোরান (৩৭:১৫৮)।এই কারনেই এই আদিম কুসংস্কারটি শুধুমাত্র আরবেই সীমাবদ্ধ থাকলো না,তা সমস্ত ইসলামী বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এবং অন্যান্য জায়গার ভৌতিকতার ব্যাখ্যা হিসেবেও জ্বীন,শয়তানকে ব্যবহার করা হতে লাগল। ”
প্রফেসর ম্যাকডোনাল্ড (Macdonald) দেখিয়েছেন কিভাবে মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি হাসান-ইবনে থাবিত প্রথমে একটি মহিলা জ্বিনের প্রভাবে কবিতা লিখেছিলেন,
” সে (মহিলা জ্বীন) তার (হাসান-ইবনে-থাবিত) সাথে মদিনার এক রাস্তায় মিলিত হল,তার উপরে উঠে বসল,তাকে চেপে ধরে কবিতার তিনটি লাইন বলতে বাধ্য করলো। তারপরে সে একজন কবি হয়ে গেল, এবং তার কবিতাগুলি সরাসরি জ্বীনদের কাছ থেকে আসত। সে নিজেকে “জ্বীনদের সহোদর” বলত ,যারা তাকে ছন্দোবদ্ধ শব্দচয়ন করে দিত,এবং বলত কিভাবে লাইনগুলি বেহেশত থেকে তার কাছে প্রেরিত হচ্ছে।…..মজার ব্যাপার হচ্ছে,তার লেখার ভাবধারা ‘কোরানের’ ভাবের সাথে মিলে যেত,যা কিনা বেহেস্ত থেকে প্রেরিত।”
ম্যাকডোনাল্ড আবারও হাসান-ইবনে-থাবিতের কাহিনীর সাথে মুহম্মদের নব্যুওয়াতপ্রাপ্তির ঘটনার মিল নির্দেশ করে বলেন,
” হাসানের যেমন মহিলা জ্বীন কর্তৃক ভুপাতিত হয়ে কবিতার লাইন হৃদয়ে প্রবিষ্ট হয়েছিল,এবং মুহম্মদের নব্যুওয়াত প্রাপ্তির ঘটনাও জিব্রাইল কর্তৃক হৃদয়ে প্রবিষ্ট করানোর কথা বলে। মিল এখানেই শেষ নয়। জিব্রাইল মুহম্মদের সাথী হিসেবে ওহী পৌছে দিতেন,যেমন জ্বিনি (মহিলা জ্বিন) কবিকে সঙ্গ দিত। উভয়ের ক্ষেত্রে একই শব্দ ‘নাফাথা’ (Nafatha) ব্যবহৃত হয়,যার অর্থ বসিয়ে দেওয়া(Emboss) ,জ্বিনি ও জিব্রাইল উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে তথ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে।”
মুহম্মদের নিজের জ্বীনের ধারনা কোরানে পাওয়া যায়,যেখানে জ্বীন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে অনেক আয়াত পাওয়া যায়: ৭২ নম্বর সুরা
,যাকে ‘সুরা জ্বিন’ বলা হয়েছে,এছাড়া ৬:১০০ তে যেখানে মক্কানদের তিরস্কার করা হয়েছে জ্বিনদের আল্লার সাথী ভাবার কারনে,৬:১২৮ যেখানে তাদের প্রতি মক্কানদের উৎসর্গ প্র্র্রদানের কথা বলা হয়েছে, ৩৭:১৫৮ যেখানে মক্কানদেরকে নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের সাথে আল্লার সম্পর্কের বিষয়ে;৫৫:১৪ তে যেখানে বলা হয়েছে আল্লা তাদেরকে ধোঁয়াহীন আগুন থেকে তৈরী করেছেন। জ্বীনসম্পর্কিত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রচুর সাহিত্য গড়ে উঠেছে। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে এই কুসংস্কারটি কোরান অনুমোদিত,এবং ধর্মীয়ভাবে ইসলামে জ্বিন পূর্ণস্বীকৃত এবং ম্যাকডোনাল্ডের ভাষ্যানুযায়ী তাদের নিয়ে পরিপূর্ন বিশ্লেষন করা হয়েছে,
” ইসলামী আইনে জ্বীনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে,এবং তাদের সাথে মানুষের বিবাহ ও সম্পত্তির সম্পর্কও পর্যালোচিত হয়েছে। ”
ইবনে সিনা’ই সম্ভবত প্রথম ইসলামী চিন্তাবিদ যিনি জ্বীনদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।
কোরান মুসলিম বিশ্বে “শয়তানের চোখ” নামক আর একটি কুসংস্কার প্রচলনে ভূমিকা রেখেছে,যাকে দুর্ভাগ্যের কারণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে (সুরা ১১৩)। মুহম্মদ নিজেও এই শয়তানের চোখকে স্বীকার করে গেছেন। আসমা বিনতে উমাইস (Asma bint Umais) থেকে বর্ণিত
,” আমি বললাম,ও নবী,জাফরের পরিবার বিষাক্ত শয়তানের চোখের কবলে পড়েছে,আমি কি কোরান তেলাওয়াত (আবৃত্তি) করে তা দুর করতে পারি?” নবীজি বললেন,” নিশ্চয়ই পার, পৃথিবীতে ভাগ্যকে পরিবর্তন করার মত ক্ষমতা একমাত্র শয়তানের চোখের আছে।”
(ইবনে ওয়ারাকের “Why I am not a Muslim” থেকে অনুবাদকৃত)
সবার মন্তব্য পড়লাম। পড়ে যা বুঝলাম ; খাই দাই ঘুমাই আমার কোন টাইম নাই। এমন কিছু মানুষ যারা একটা ইতিহাস বইয়ের প্রথম পাতা পড়ে বলে, ‘ আমি তো মহা জ্ঞানি হয়ে গেলাম’। ব্যস যে বিষয় নিয়ে তুকতাক সে বিষয়ের গুষ্ঠি উদ্ধার। উদ্ধ্যত্যের সীমা থাকা দরকার। ফারুকি, মালিকি সাহেবরা আমাকে প্রশ্ন করুন যত পারেন। শুধু ইসলাম নিয়ে। আমি প্রস্তুত আছি।
:-/
[মন্তব্যটা ভুল করে উপরে হয়ে গেছে। এডমিন সাহেব, অনুগ্রহ করে উপরের মন্তব্যটা প্রকাশ না করে এই মন্তব্যটা প্রকাশ করেন]
রুশদি,
১.
আমি যা বলেছিলাম, তা এখানে পেস্ট করে দিয়ে আলোচনা শুরু করে দিতে পারতেন। ভালো হতো। ভবঘুরের লেখাটা পড়তে না আসলে তো আমার “ঘাপটি” মারা সম্বন্ধে আমি নিজেই জানতাম না। ভবঘুরেকে ধইন্যাপাতা।
আমি বলছিলাম, ইবনে ওয়ারাক যে-কথাগুলো বলেছেন কপিপেস্টিং সম্পর্কে, ঠিক একইরকম একটা কথা কোরানও বলেছে, রাসুলও বলে গেছেন। তারা বলেছেন একভাবে, ইবনে ওয়ারাক বলছেন ভিন্নভাবে।
ইসলামের বক্তব্য হলো ক, খ এবং গ প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘ-এর কাছে থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় মোটামুটি একইরকমের বক্তব্য নিয়ে এসেছে।
কিন্তু ইবনে ওয়ারাক বলেছেন, ঘ-এর আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই। এই যে গ-কে দেখছি, এ আসলে খ এবং ক-এর কাছ থেকে কপিং পেস্টিঙ করেছে।
____________________
আমি শুধু এটুকুই বলতে চেয়েছিলাম।
মনে হচ্ছে এই বিষয় নিয়ে আপনার মন-মুবারকে বহু কথা লুক্কায়িত হয়ে রয়েছে। অনুগ্রহ করে তা-সকল খোলাসা করুন।
_______________________________
২.
এই সঙ্ক্রান্ত আর একটা কথা। মনে করি মুহম্মদ স. আসলেই কপি-পেস্টিং করেছেন। তো সেইটা কখন? ধরেন নতুন একটা ধর্ম প্রচারের ইচ্ছা। মানুষের যদি সেইটা কপি-পেস্টিং সন্দেহ হয় তাহলে তো এখনকার এন্টাইভণ্ডের মত “একই স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত” এই ভুজুং ভাজুং দিয়ে পার পাওয়া যাওয়ার কথা না। তার চেয়ে বড় কথা, মুহম্মদ স.-এর ওহি লেখক ছিলেন বহু। এইটা একটু সন্দেহজনক না? কপিং করলে তো যতবেশি ওহি লেখক, ততবেশি রিস্ক। একজন যদি গাইগুই করে, মাশাল্লা, শেষ নবী হবার মহাপ্লান তো শুরু থেকেই ফটাশ!
সুতরাং সেইটা শুরুর দিকে না হওয়ারই কথা। মানে মাক্কী লাইফের সুরা গুলো কপিং পেস্টিং না হবারই কথা, এসম্পর্কে আপনি কী বলেন?
[মাদানী লাইফে তো ধরেন নবীর হেভি ফোর্স। কেউ কিছু কইবো তো ফুটাং! কারো কিছু বলার সাহস থাকলে তো!]
প্রথম দিকের মুহাম্মদের জীবনীকাররা (Biographer) কেহই ইরানী ছিলেন না। ঐ কাহিনীকাররা প্রতেকেই ছিল ১ম সারির বিশিষ্ট মুসলীম আরবীভাষী স্কলার এবং ইসলামের গভীর অনুসারি। তারা তদের সমস্ত জীবন ইসলামের পিছনে ব্যায় করেছেন।
১) মুহাম্মাদ ইবনে ইশাকে (৭০৪-৭৬৮) – মুহাম্মদের সর্বপ্রথম জীবনীকার, author of “Sirat Raoul Allah” ইরানী ছিলেন না। তার পূর্বপুরুষ ছিল ইরাকের অধিবাসী। তার দাদা ইয়াসার (yasar) কে ডিসেম্বর, ৬৩৩ সালে মুসলিমরা বন্দী (দাস) করে মদীনায় নিয়ে আসা হয়।ইসলাম গ্রহন করার পর তাকে দাস থেকে “মুক্ত” করা হয়। ইবনে ইশাকের বাবা ইশাক এবং চাচা ‘মুসা ইবনে ইয়াসার’ ছিল well known Hadith transmitter.
৩) আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ওমর ইবনে ওয়াকিদ আল আসলামী, সংক্ষেপে “আল ওয়াকিদি (Al-Waqidi)- জন্ম মদিনায় (৭৪৭-৮২৩)। তার বই “Kitab Al Maghazi (deals with expedition of Mohammad”.
৪) মুহাম্মাদ বিন সা’দ (Ibne Saad) -জন্ম বসরায় (৭৮৪-৮৪৫) -Author of “Kitab Al Tabaqat Al Kabir”.
এদের পরে এসেছে ইরানী স্কলাররাঃ
৫) ইমাম বুখারি (৮১০-৮৭০), ইমাম মুসলীম (৮২১ -৮৭৫)
– অত্যন্ত সতর্কতার সাথে হাদীস সগ্রহ করেছেন, অধিকাংশ হাদিসই repetition from previous sources.
৪) আবু জাফর মুহাম্মাদ বিন জারির আল তাবারি (৮৩৯-৯২৩)
– author of “Tarikh Al Rasoul Wal Muluk”. মুহাম্মাদের জীবনীকার হিসাবে সে ইবনে ইশাক ও পূর্ববর্তী মুসলীম স্কলারদেরই উদ্ধৃতি দিয়েছেন। নতুন করে কিছু আবিষ্কার করেন নাই।
“ইরানীরা প্রতিশোধের উদ্দেশ্য ইসলামকে বিকৃত এবং নবীর চরিত্রে জঘন্য কালিমা লেপন করেছে” – এরুপ মন্তব্য যারা করেন তারা স্পষ্ঠতই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ। তারা কোনভাবেই মানতে পারেন না মুহাম্মাদের মুখ নিসৃত কুরানে বর্নিত ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ’ (তার নিজেরই কথা -আল্লাহর reference টেনে) এত সব কুকীর্তির নায়ক হতে পারে। কারন, তারা মুহাম্মদের যে ‘পুত-পবিত্র’ ছবি মনের মধ্যে আজন্ম লালান করে রেখেছেন তার সম্পূর্ন বিপরীত চরিত্র জানার পর তা বিশ্বাস করতে পারেন না। আসলেই এটা খুবই কষ্টকর একটা অনুভুতি, আমি নিজেও একসময়ই ঐ একইরুপ চিন্তা করতাম। ‘অমুসলীমের লিখা ইতিহাস, শিয়াদের লিখা ইতিহাস, ঈমানে দূর্বল/মুসলীম নামধারী মানুষের ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতার ফসল – ইত্যাদি নানা রকম যুক্তির আমদানী করে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এত বেশি নৃশংস ঘটনার চাক্ষুষধারীর /অংশ গ্রহনকারীর Testimony কে অবিশ্বাস বা অস্বীকার করা ‘ভাইরাসে আক্রান্ত’ মনন অথবা নিরেট অজ্ঞতা ছারা সম্ভব নয়।
@গোলাপ,
ভাইজান, দারুন বলেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো ইসলামিস্টরা প্রচার করছে জোরে সোরে যে ইবনে ইসহাকের অরিজিনাল লেখা পাওয়া যায় না , যা পাওয়া যায় তা বিকৃত। বুঝলেন ? তার মানে হলো আসল আরবী ভাষী ইতিহাস বিদদের লেখাকেই অস্বীকার করার অপচেষ্টা প্রবলভাবে শুরু হয়ে গেছে। কারন বোধগম্য অর্থাৎ আপনি যা বললেন সেটা। যা হলো আপনার নীচের মন্তব্য –
@গোলাপ,
ভাইজান, দারুন বলেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো ইসলামিস্টরা প্রচার করছে জোরে সোরে যে ইবনে ইসহাকের অরিজিনাল লেখা পাওয়া যায় না , যা পাওয়া যায় তা বিকৃত। বুঝলেন ? তার মানে হলো আসল আরবী ভাষী ইতিহাস বিদদের লেখাকেই অস্বীকার করার অপচেষ্টা প্রবলভাবে শুরু হয়ে গেছে। কারন বোধগম্য অর্থাৎ আপনি যা বললেন সেটা। যা হলো আপনার নীচের মন্তব্য –
ইবনে ইসহাকের অরিজিনাল লেখা না পাওয়া গেলে আবু মুহাম্মাদ আবদ আল-মালিক বিন হিশাম (ইবনে হিশাম, মৃত্যু ৮৩৩) তা Recension করতে পারতেন না (Sirat Rasoul Allah). ইবনে হিশাম নিজেও আরবীভাষী, বিশিষ্ট সুন্নী মুসলীম। তিনি বসরার অধিবাসী ছিলেন। “সিরাত বিকৃত (মুহাম্মাদের মৃত্যুর ১২০ বছর পর ১ম লিখা), হাদিসের উপর ভরসা করা যায় না কারন তা মুহাম্মাদের মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর সংগ্রহ করা ইরানীদের (সুন্নী) চক্রান্ত -ইত্যদি, ইত্যাদি” – তাহলে অবশিষ্ট আর থাকলো কি? সিরাত এবং হাদিসকে বাদ দিয়ে মুহাম্মাদকে জানার আর যে কোন উপায়ই নাই তা বলায় বাহুল্য।
ইসলামীস্টরা যখন ঐরুপ মন্তব্য করেন তখন তারা ভুলে যান যে ইসলামের একদম basic and fundamental tenants হচ্ছে ‘শাহাদা’ঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস (কুরান) এবং মুহাম্মাদের (তার রাসুল) প্রতি বিশ্বাস (two almost equally important halves of Islamic creed) – যা স্বীকার না করলে কেহই নিজেকে মুসলমান দাবী করতে পারবে না। আমারা সবাই জানি আল্লাহকে জানার মাধ্যম হলো “কুরান (আল্লাহর বানী)”, আর মুহাম্মাদকে জানার মাধ্যম হলো “সীরাত (মুহাম্মাদের জীবনী) এবং হাদিস (যা মুহাম্মাদ করেছেন, বলেছেন বা সম্মতি/নিষেধ করেছেন”। কুরান অনলি মুসলীম (নব্য আতেঁল- half Muslim according to above definition) এবং ইসলামীস্টরা কুরানকে অবিকৃত জ্ঞান করেন, কারন তা অবিকৃত রাখার দায়িত্ব লেখক (আল্লাহ) নিজেই নিয়েছেন বলে কুরানে জানিয়েছেন। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে – ‘সীরাত /হাদিস (মুহাম্মাদকে জানার মাধ্যম -another half of Islamic creed) কে অবিকৃত রাখার দায়িত্ব কার? নিশ্চয়ই সেই ঘোষনাকারী লেখক আল্লাহর। ‘সীরাত /হাদিস’ সবকিছু বিকৃত এমনতর মন্তব্য যারা করেন তারা প্রকারন্তরে পরোক্ষভাবে তাদের আল্লাহকেই ‘চরম অবিবেচক’ প্রমান করেন। এটা যে রিতিমত ব্লাসফেমী তা বোধ হয় ইসলামীস্টরা বুঝতে পারেন না।
তার চেয়েও অতি সাধারন ও গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নঃ “কোন ধরনের মানুষ সমালোচনায় ভয় পায় /রুষ্ঠ হয় এবং সমালোচনাকারীকে হত্য করে মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন?” This tradition itself speaks a lot. মুহাম্মদের সমাচোলকদের হত্যার ব্যবস্থা আজকের ‘মৌলবাদীদের’ আবিষ্কার নয়।
@গোলাপ,
আপনি এই যে শাহাদার কথা বল্লেন , এটা ভুল। সঠিক শাহাদা জানতে পড়ুন- সঠিক শাহাদা , শাহাদা।(সাক্ষ্য) (২) , শাহাদা।(সাক্ষ্য) (১)
জার্মান অধ্যাপকের দাবী – মুহম্মদের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমান করা সম্ভব নয়। কারন পর্যাপ্ত ঐতিহাসিক প্রমান আমাদের হাতে নেই।
WORLD NEWS NOVEMBER 15, 2008 Excerpt: Muslim Academic Questions Muhammad’s Existence
@ফারুক,
পড়লাম, আপনার লিখা আর্টিকেল ও আপনার আবিষ্কৃত শাহাদার ধারনার বিবরন জানলাম। আপনি লিখেছেন,
আমিও তো তাই লিখেছিলাম। আপনিতো সমস্ত মুসলীম জাহানকে বুড়া আংগুল দেখিয়ে একদম নতুন বৈচিত্রময় definition হাজির করলেন!
আল্লাহর সততার সাফাই (১০০% সত্যবাদী) আমরা কার কাছে জেনেছি? মুহাম্মাদের মুখ থেকে। মুহাম্মাদ কে? আপনি লিখেছেন,
মুহাম্মাদকে এই সার্টিফিকেট (১০০% গ্যারান্টি ) কে দিল? আল্লাহ নিজেই বলেছেন মুহাম্মদের মুখ দিয়ে।। খেয়াল করেন, দুই খানেই মুহাম্মাদের মুখ – আল্লাহর স্থান মুসল্মানের মস্তিষ্ক (বিশ্বাস) ছারা কোথাও নাই। পুরোটাই মুহাম্মাদ। ফারুক ভাই, এই সার্কুলার লজিক আর কতদিন চলবে! ১৪০০ বছর ধরে Denial stage টাই পার হতে পারছি না। আপনি আরো লিখেছেন,
আপনার এ Definition অনুযায়ী ইহুদী ও খৃষ্টানরা ঐ একই আল্লাহর কাছে আগে থেকেই আত্মসমর্পন করে ছিল। কিন্তু শুধু মুহাম্মাদকে স্বীকার না করার কারনে মুহাম্মদের “আল্লাহ’ (‘প্যাগান মুন গড’ -আল্লাহ নামটাও মুহাম্মাদ ধার করেছিলেন প্যাগানদের কাছ থেকে -তার বাব আবদ আল্লাহ -slave of Allah) এবং মুহাম্মাদ তাদের প্রতি কতটা নিষ্ঠুর তার বর্ননা কুরানের পাতায় পাতায়। পরিশেষে আপনি যথার্তই লিখেছেন,
একটা ভিডিও ক্লিপ দেখা যাকঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=fDp7pkEcJVQ&feature=player_embedded
বুঝতে পারছি আপনি আপনার ‘বিশ্বাসের’
@গোলাপ,
এটাকে মনে হয় লজিক্যাল ফ্যালাসি বলে। এটা অনেকটা শুড়ির সাক্ষী মাতালের উপমার মত। অথচ অধিকাংশ ইমানদার মুসলমান এ লজিক্যাল ফ্যালাসি টা বোঝে না। কারন আল্লাহ এদের হৃদয়ে সীল মেরে দিয়েছেন, মস্তিস্ককে করেছেন ব্লক।
@গোলাপ,
আমাদের ফারুক ভাই অনেক কিছুরই নতুন আবিস্কারক। আপনি বোধ হয় তা এখনও বুঝতে পারেন নি বা শুনেন নি। আমরা এ ব্লগে ওনার নিত্য নতুন আবিস্কারের কাহিনী পড়ি ও অনেক কিছু জানতে পারি।
@গোলাপ,
দারুণ মন্তব্য। বহু মুসলিমের মধ্যে যে তালগাছীয় প্রবণতা দেখা যায় এই “ইরানী ষড়যন্ত্র তত্ব” তারই বহিঃপ্রকাশ। ইরানী কবি-সাহিত্যিক-বিজ্ঞানীদের বগলদাবা করে “ইসলামী” স্বর্ণযুগের আওতাভুক্ত করব, ইরানীরা নিজেরাই কিভাবে দলে দলে ইসলামে যোগদান করেছে তার গপ্প বলব, কিন্তু প্রয়োজন হলেই আবার “ইরানী ষড়যন্ত্র”-এর ধুয়ো তুলব। চমৎকার।
@গোলাপ,
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি তার বিখ্যাত বই ‘তাফসীর-এ কবির’ লেখার পর স্বীকার করেছিলেন যে,
“All my intellectual and supposedly logical statements in the explanation of the Quran turned out to be lame. All the explanations of the Quran done by the so-called Imams are misguided and misleading. All of us were the tools of Satan. Our souls were polluted by our physical desires. Our efforts of this world promise to bring us nothing but torture and doom.”
ইবনে খাতির লিখেছেন যে যদি ইবনে তাবারী এই অদ্ভুত তথ্য লিখে না যেতেন তবে তিনি এই কাজটি করতেন না।(Tafseer Ibn Katheer, Khilaafat-e-Mu’awiya-o-Yazeed, Mahmood Ahmed Abbasi)
ইবনে খালদুন বলেছেন তার মুকাদ্দামায় বলেছেন, “The Muslim historians have made a mockery of history by filling it with fabrications and senseless lies.
ইমাম রাঘিব বলেছেন যে তাবারী, ওয়াকিদি, মা’সুদি, সায়ুতি তাই লিখেছে যা হাতের কাছে পেয়ছেন। এছাড়াও আবু মুকনিফ, লুত বিন ইয়াহিয়া এবং মুহাম্মদ বিন সায়েব কলবী নামে কেউ ছিলনা। এই সবগুলি চরিত্র ইমাম তাবারী কতৃক রচিত। এমনকি তাবারী তার বইয়ের শুরুতে বলেছেন যে, যে সব অসংগত ঘটনা তিনি বর্ণনা করেছেন তার জন্য তিনি দায়ী নন বরং যারা তাকে বলেছেন তারাই দায়ী। তিনি আরও লিখেছিলেন তার পারসিক পুরোহিতমন্ডলীগণ (Magian) তাকে যে ভাবে উপদেশ দিতেন এবং তার রাজকীয় নিয়োগ-কর্তাদের আদেশ অনুযায়ী তিনি তার বই লিখেছেন। এগুলো ছাড়াও, তিনি আরো উল্লেখ করেছেন তার এসব ঘটনা বর্ণনার উৎস হারমুযান, জাফীনা এবং সা’বা বিন শামি’উন (এরা সবাই খলীফা বা ইমাম হত্যার সাথে জড়িত ছিলো) বংশধরদের কাছ থেকে এসেছে।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে জানা যায় যে ইমাম তাবারী তার পারসীয়ান পরিচয় গোপন করার জন্য নিজ নাম ইবন জরীর বিন রুস্তম ইবন তাবারী (Ibn Jareer bin Rustam Ibn Tabar) থেকে ইবন জরীর বিন ইয়াজিদ তাবারী (Imam Ibn Jareer bin Yazeed Tabari) নামে পরিচয় দিতেন। তার সম্বন্ধে অনেক বিতর্কিত খবর আছে, অর্থাৎ ইসলামের কোন দল কে (শিয়া/সুন্নী, খারীজি/অথবা জরোয়াস্ট্রিয়ান)তিনি অনুসরন করতেন। প্রচলিত আছে যে ইমাম তাবারী বিন ইয়াজিদ এবং ইমাম তাবারী বিন রুস্তম দু’জন ভিন্ন ব্যক্তি, যদিও তারা দু’জনেই জন্মেছেন একই দিনে, দু’জনেই ইতিহাসবিদ, একই শহরে বাস করতেন, একই রকম দেখতে, একই রকম পোশাক পরিধান করতেন এবং এমনকি একই দিন মৃত্যূ বরন করেন।
কারবালা যুদ্ধের যে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় তার সম্পূর্ণটাই তাবারী কর্তৃক রচিত এবং তা উল্লেখিত কারবালা যুদ্ধের ২৩৯ বছর পর লিখিত; এবং এখানেও সেই একই ভাবে শুরু করেছেন,”আবু মুকনিফ বলেছিল এটা, আবু মুকনিফ বলেছিল ওটা-“। শাহ আব্দুল আজিজ, আল্লামা তামান্না ইমাদি, এবং মওলানা হাবিবুর রহমান খানদালবী এক গবেষণার পর মতামত দেন যে ‘আবু মুকনিফ’ একটা কাল্পনিক চরিত্র।
খলীফা ওসমানের সময় থেকে সরকারী কাজে লিখিত সনদের প্রচলন শুরু হয়—এখন প্রশ্ন হচ্ছে জানা মতে, মদীনায় কখনো কোন প্রাকৃতিক দুযোর্গ ঘটেনি; তাহলে এগুলো গেল কোথায়?
আর এই কয় বছরে কি কেউ নবী চরিত্র লিখে যাননি, সেগুলো কোন ভান্ডারে লুকায়িত? তাহলে ইবনে ইশাকের তথ্য সূত্র কি?
মুহম্মদ সম্বন্ধে জানার আগে যারা তাকে নিয়ে লিখেছেন তাদের সম্বন্ধে জানুন এরপর বিচার করতে বসুন।
@আইভি,
আপনার মন্তব্য পড়ে বুঝতে পারছি আপনি ইবনে ইশাকের কিংবা তাবারীর (volume V1-IX) লিখা মুহাম্মাদের জীবনী ইতিহাস পড়েন নাই! পড়লে এমন ঢালাও মন্তব্য করতে পারতেন না। তাদের প্রতিটা ঘটনার বর্ণনায় Isnad (name of the chain of narrator) উদ্ধৃত আছে। একই সাথে ঐ একই তথ্য অন্যান্য লেখকের আর কোন্ কোন্ বইয়ে আছে তারও Reference দেয়া আছে। সমচোলকদের (যাদের সাথে আপনার “বিশ্বাসের” মিল আছে) বহু ‘উদ্ধৃতি’ দিয়ে আপনি প্রমান করতে চাচ্ছেন যে ইবনে ইশাক, ইবনে হিশাম, আল-ওয়াকিদী, ইবনে সা’দ এবং পরবর্তীতে তাবারী, ইমাম বুখারী সহ সমস্ত হাদিস সংগ্রাহকরা ‘চক্রান্ত করে” সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করেছেন। আর তার আকাট্য প্রমান – এই, এই, এই। সুতরাং তা গ্রহনযোগ্য নয়।
কিছুদিন আগে অন্য আলোচনার এক পর্বে আপনার অনুরুপ জবাব ও জিজ্ঞাসার উত্তর ফারুক ভাইকে (উনিও আপনার মত “সীরাত ও হাদিসে’ আস্থাহীন) দিয়েছিলাম। দেখুন এখানে।
আইভি, আপনাকে খুবই সহজ একটা প্রশ্ন করি। ধরুন (hypothetical) যদি একদম উল্টোটা হতো (অর্থাৎঃ ইবনে ইশাক, ইবনে হিশাম, আল ওয়াকিদী, ইবনে সা’দ, তাবারী, ইমাম বুখারী সহ সমস্ত হাদিস সংগ্রাহকরা ১০০% ভাল ভাল কথা (সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের যা হওয়া উচিত) লিখে যেতেন, আর আপনি যাদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তারা ইশাক-হিসামের মত করে লিখতো) আপনি কাদের লিখাকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করতেন?
@আইভি,
এগুলো কোথায় গেল-সেটা আপনাকে বা আপনার মত মানুষকে খুজে বের করতে হবে যারা যে কোন ভাবেই হোক আপনাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুক্তি সংগত কিছু বললে অন্ধের মত ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেন। খুজে বের করে অত:পর আপনাদেরকেই প্রমান করতে হবে যে অন্য যারা মোহাম্মদের জীবনী বা হাদিস লিখে গেছে তারা সবাই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে লিখে গেছে। যেহেতু আপনারাই দাবী করছেন ঐ সব লেখকদের লেখা বা হাদিস বানান বা নানা দোষে দুষ্ট, তাই প্রমান করার দায়ীত্বটা আপনাদেরই, আমাদের নয়। আশা করি এ সাধারন লজিক টা আপনি বোঝেন।
@ভবঘুরে,
অন্ধের মত কিছু ডিফেন্ড করিনি। আর হ্যাঁ, যাদের প্রয়োজন হচ্ছে তারা ঠিকই মিসিং লিঙ্ক খোঁজার চেষ্টা করছে খুঁজে পেলে আপনাদের তা জানাবে এবং আপনারা সেই তথ্যটা ইচ্ছে মতো ব্যবহার করবেন। সত্য-মিথ্যায় কি আসে যায়! ইসলাম নিয়ে মাথা ব্যথা নেই অথচ সমালোচনায় মুখর!!! আর বিষয়গুলো আপনার-আমার বলে ঠেলে দিচ্ছেন কেন-এটা পৃথিবীর মানুষের ইতিহাসের একট অংশ। ছড়ি ঘুরালে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরাবেন, নইলে নাই। আপনারা ইসলামের যে সব বিষয়গুলো পড়ে অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, আমাদের মত অনেকেই সেগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছ। এই যে জাকির নায়েক এখন ইসলামের যে বিভিন্ন বিষয়ে মতা-মত দিচ্ছে, সব মুসলমানরাই কি তার যুক্তি মেনে নিচ্ছে? অথচ আজ থেকে ৫০/৬০ বছর পর এই আপনার মত কিছু লোকই জাকির নায়েকের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠবে। জাকির নায়েকের মতামত কতখানি নন্দিত বা নিন্দিত সেই সত্যের দরকার কি? যত নামী-দামী ইমাম-আলেম ইসলামের জগতে রাজত্ব করে যাচ্ছেন তাদের কর্ম-কান্ড যদি যুক্তি আর কার্য করনের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, তাতে মুহম্মদকে ডিফেন্ড করা হবে কেন? মুহম্মদকে ডিফেন্ড করার জন্য যা ইচ্ছা জগাখিঁচুড়ি বলার চেষ্টা করছি–আপনারা এইকথাটা বলে আনন্দ পেতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আর উপরের প্রশ্নটা কি খুব অযৌক্তিক? যদি ইসলামের ইতিহাসের প্রথমদিকের বা যেটাকে স্বর্ণযুগ বলায় অর্থাৎ ইসলামের প্রথম ১০০ বছরের সনদ পত্রের হিসেব চাওয়া হয় তাতে ডিফেন্ড করা হবে কেন? এর চেয়েও পুরনো অনেক সমাজের নথি-পত্র এখনো বিদ্যমান অথচ চার-খলিফার সময়কার ইসলামভিত্তিক সমাজের নথি-পত্রগুলো কই? কেন ইসনাদ বা শোনা কথার উপর ভিত্তি করে ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে?
@আইভি, :yes:
@আইভি,
আপনি কি সত্যি প্রথম চার খলিফার রাজত্বকে স্বর্ণযুগ মনে করেন নাকি ? যে চারজন খলিফার তিন জনই ঘাতকের হাতে খুন হয় তার মধ্যে আবার খোদ আবু বকরের ছেলে আব্দুল্লাহর হাতে খুন হয় হযরত ওসমান- সে সময়কালকে একমাত্র উন্মাদ বা উদ্ভ্রান্ত মানুষরাই স্বর্ণ যুগ বলতে পারে। তার মধ্যে মোহাম্মদের প্রিয়তমা বালিকা বধু আবার মোহাম্মদের প্রিয় শিষ্য চতুর্থ খলিফা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
ইসলাম নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই মানে ? দারুন মাথা ব্যাথা। এই দেখুন না , আপনি একজন মহিলা, বেহেস্তে মোহাম্মদ আপনার জন্য কিছুই ব্যবস্থা করে নি , বেহেস্তে ব্যবস্থা শুধু পুরুষ মানুষদের জন্য আর তা হলো চির যৌবনা হুর, কারন আপনাদের কথা তার মনে ছিল না , মহিলাদের কথা তার মনে পড়ত একমাত্র বিয়ে করা ও সেক্স করার সময়, এর পরেও আপনি কত বড় বিশ্বাসী মুসলমান। যে ইসলাম মানুষকে এরকম ভাবে উন্মাদ ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয় তা নিয়ে শুধু আমি না বর্তমানে গোটা পৃথিবীই ভীষণভাবে মাথা ব্যথায় আক্রান্ত।
কিন্তু আপনি আপনার মন্তব্যে দেখলাম আসল বিষয় এড়িয়ে গেছেন। আমি আপনার কাছে অনুরোধ করেছিলাম ইসলামের আসল ইতিহাস বের করে তা প্রকাশ করতে কারন আপনাদের মতে যারা ইসলামের ইতিহাস বা হাদিস লিখে রেখে গেছে তারা সবাই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভুলভাবে কাজগুলো করে গেছে। তাহলে প্রকৃত ইতিহাস এখন তুলে ধরার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের ওপর বর্তায় . তাই না ? কিন্তু আপনি এ ব্যপারে কিছু না বলেই সম্পূর্ন ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারনা করলেন , বিষয় কি ? নাকি এ ব্যপারে আপনার বলার মত কিছুই নেই ?
@ভবঘুরে,
অসাড় মন্তব্য।
প্রথম ১০০ বছরের সনদ পত্র পাওয়া যায় না কেন–সেটাইতো আমার প্রশ্ন ছিলো? যারা খোঁজে আছে, খুঁজে পেলেই আপনাদের দেব। যে সোর্স থেকে ইসলাম, মুহম্মদ সম্বন্ধে এত জানেন তা এই সোর্সের তলানী ঘাটতে এত অনীহা কেন? ইসলাম ও মুহম্মদ পৃথিবীর ইতিহাসের একটি অংশ। আপনি তর্কবাগীশ। জিতাটাই আপনার লক্ষ্য, তাই অঙ-বং আমাকে কিছু বলে গেলেন।
ইসলাম নিয়ে যেহেতু লিখছেন তাই আপনাকে প্রশ্ন করা! সত্য উদঘাটন আপনার উদ্দেশ্য নয়।
@আইভি,
আপনি আমার কাছে এ প্রশ্ন করছেন কেন ? এ প্রশ্ন তো আমি আপনার কাছে করব । আমরা কোরান হাদিস সিরাহ ইত্যাদি যা হাতের কাছে পেয়েছি তার ওপর ভিত্তি করেই মোহাম্মদকে চেনার চেষ্টা করছি আর তাতে মোহাম্মদের আসল চেহারা জানতে পারছি। এখন আপনার যদি মনে হয়ে থাকে আমাদের জানাটা ভুল তাহলে আপনাকেই আসল ইতিহাস বের করে প্রমান করতে হবে যে আমরা যা জানছি তা ভুল। সুতরাং সেই প্রথম ১০০ বছরের ইতিহাস খুজে বের করার দায়িত্ব আপনার , আমার নয়। আমি প্রথম থেকেই খেয়াল করছি যুক্তি তর্কের নীতিটাই আপনার কাছে অজানা। ধরুন , আমি ভবঘুরে কোর্টে আপনার বিরুদ্ধে যদি মামলা করি এই বলে যে , আপনি আমার সম্পদ লুটপাট করেছেন , তাহলে আপনি যে লুটপাট করেছেন কোর্টে সেটা প্রমান করার দায়িত্ব আমার আপনার নয়, আপনি শুধু বললেই হবে যে আপনি নির্দোষ। আর কিছু আপনার করনীয় নেই। আপনাকে প্রমান করতে হবে না যে আপনি নির্দোষ। এখন আপনি দাবী করছেন যে মোহাম্মদের মৃত্যুর ১০০ বছরের ইতিহাসের ভিতর মোহাম্মদের সত্যিকার শ্রেষ্ট মানবের পরিচয় লুকিয়ে আছে তাহলে সে ইতিহাস খুজে বের করে তা প্রকাশ করার দায়িত্ব আপনার, আমার নয়। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন এবার ? আর যদি সেটা না পারেন তাহলে আপনার দাবী করা কথার কোন দাম নেই, আপনার বিশ্বাসের কোন দাম নেই। যতদিন সেটা খুজে না পাবেন ততদিন আপনার কথা অসংলগ্ন প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আশা করি এবার পরিস্কার হয়েছে সব।
@আইভি,
চার-খলিফার সময়কার ইসলামভিত্তিক সমাজের নথি-পত্র বিদ্যমান আছে, বিশিষ্ট মুসলীম ইতিহাসবিদেরই লিখা। অল্পকিছু দিন আগে স্বাক্ষর শতাব্দের এরুপ এক মন্তব্যের (১ম কৌম-স্বর্নযুগ) জবাবে লিখেছিলাম।
@গোলাপ,
আপনার জবাবটি পড়লাম। ইসলামের এই তথা কথিত ইথিহাস আগেই জানা ছিল। আর এই ইতিহাস এসেছে ইশাক, তাবারীর মাধ্যমেই। আমার প্রশ্ন তাদের লেখার সূত্র কি বা সনদ কই? ইসনাদ বা জনশ্রুতির কথা আর বলবেন না। এটা সত্য উদ্ঘাটনের কোন ক্রেডিবল পন্হা হতে পারেনা।
@আইভি,
যে কোন বিষয়ের উপর ধারনা/সিদ্ধান্ত নিতে গেলে “available resources” এর উপরই ভরসা করতে হয় (শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কোনই উপায় নেই)। দোষী /নির্দোষী সব কিছুই নির্ধারন হয় ‘প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান’ -এর ভিত্তিতেই, অনুৎঘাটিত প্রমানের উপর নয়।যে কোন সাধারন (reasonable /rational) মানুষই স্বীকার করবেন যে “প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান’-এর ভিত্তিতে বিচার করলে মুহাম্মাদের ঐসব কাজগুলো ছিল ‘Demonic’ (তার নিজের ভাষায় ‘জাহেলিয়াত’- তৎকালিন সমসাময়িক কিংবা পূর্ববর্তী প্রচলিত কাজগুলোর অনুসরন)। বোধ করি আমদের মত আপনারাও এব্যাপারে একমত, যার বহিপ্রকাশ ‘সীরাত-হাদিসে’ আস্থাহীনতা’। যে জায়গাই আমাদের দ্বিমত তা হলোঃ
১) আপনারা ‘conspiracy theory’ দাঁড় করিয়ে ঐসব ‘devout and dedicated Muslim’ দের গালিগালাজ করছেন, ইতিহাস বিকৃতির অপবাদ দিচ্ছেন। আর আমরা বলছি এগুলোকে বাদ দিয়ে মুহাম্মাদকে জানার কোন উপায়ই নেই, তারা সবাই বিশিষ্ট মুস্লীম- চক্রান্তকরে ‘প্রিয় নবীর” অপবাদ দেয়ার পিছনে কোন ‘নির্ভরযোগ্য’ কারন নেই। নিদেনপক্ষে প্রাপ্ত ইতিহাস মতাবেক ‘until proven otherwise’ মুহাম্মাদ অত্যন্ত বিতর্কিত একজন মানুষ এবং তাকে ও তার কিতাবকে মান্য করার কোনই যুক্তি নাই।
২)আপনারা “সীরাত হাদিসকে’ সম্পূর্ন আস্বীকার করে, ‘কোরান/মুহাম্মাদ > মুহাম্মাদ /কুরান’ যুক্তি দিয়ে আপনাদের ‘বিশ্বাসের’ সত্যতা প্রমান করতে চাইছেন। আর আমরা বলছি, circular reasoning একটি অসাড় (logical fallacy) ও হাস্যকর যুক্তি, উপরের ভিডিও ক্লিপটির মত।
আপনার বিশ্বাসের আমি সস্মান করি যদি না তা মানব জাতিকে “Us versus Them” এই দুভাগে বিভক্ত করে ‘Them” দের অসন্মান, ঘৃনা আর পদানত করার ইসলামী শিক্ষা না দেয়।
ভাল থাকুন।
@গোলাপ,
ভাল বলেছেন।
যুক্তির চোখে এর অন্যথা হতে পারে না।
@আইভি,
কিন্তু আপনার ধারনা বা বিশ্বাসের সূত্র কি ? সেটা তো বলছেন না একবারও। সত্য উদ্ঘাটনের ক্রেডিবল পন্থাটা কি , দয়া করে সেটা বলবেন অযথা কথা না বাড়িয়ে ?
@আইভি,
শুনে খুশী হলাম যে, অন্তত আপনি স্বীকার করছেন ওগুলা আগে থেকেই লেখা আছে, আপনি পড়েছেন। অনেক শঠালাপী অন্ধবিশ্বাসী আছে তারা স্বীকারই করেনা সেই ইতিহাস কেউ কোথাও লিখে রেখেছে। আবার অনেকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও দুই হাতে চোখ বন্ধ করে থাকে, মনে করে চোখ বন্ধ করলেই ওসব মিথ্যে হয়ে যাবে। এই লেখার নীচে কিছু বইয়ের নাম দেয়া আছে। ওগুলো কি আমরা লিখেছিলাম?
ছোটবেলা থেকে একটা ঘটনার এক পৃষ্ঠা শুনে পড়ে এসেছি, বড় হয়ে জানলাম ঘটনার অপর একটি পৃষ্ঠা আছে। সত্য-মিথ্যা নিয়ে তর্ক হতে পারে, বিশ্বাস করা না করা তা’ও নিজ নিজ পছন্দ।
কিন্তু সেই অপর পৃষ্ঠা জনসমক্ষে তোলে ধরাটা কি অপরাধ? এই ঘটনা যেহেতু লেখা আছে, তা একদিন তো প্রকাশ হবেই।
আশা করেছিলাম এন্টাই ভন্ড এই আলোচনায় যোগ দিবেন,ওনার সাথে এই ব্যাপারগুলা নিয়ে একটা আলোচনা বাকী আছে। যদি আপনি এখানে পড়ে থাকেন,দয়া করে আলোচনাটি শুরু করতে পারেন।
@রুশদি,
এন্টাই ভন্ড ঘাপটি মেরে আছে মনে হয়। হয়ত সুবিধামত কোন যুক্তি তুলে ধরতে পারছে না বা তুলে ধরার জন্য নিরন্তর মাথা ঘামাচ্ছে।
আসল ব্যপার হলো- যখন মক্কা মদিনাতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় সে তুলনায় ইরানী সভ্যতা ও সংস্কৃতি অনেক অনেক উন্নত ছিল । তাদের বাদশাহের পরাজয়ের মাধ্যমে ইসলাম ইরানে প্রবেশ করলেও ইরানীরা তাদের কৃষ্টি ও সভ্যতা ত্যাগ করতে চায়নি। তাছাড়া তাদের ছিল বেশ কিছু পন্ডিত ব্যাক্তি। তারা মোহাম্মদের ইসলামের সব কিছু হুবহু মানতে চায় নি। তাদের বিদ্যা বুদ্ধি ইসলাম নিয়ে নানা রকম চিন্তা ভাবনা করতে বাধ্য করেছে। আর সে কারনেই দেখা যায় , ইরানেই ইসলামের বিরুদ্ধবাদী বহু মতবাদের উত্থান। ইরানীরা মক্কাবাসী আরবদের মত আধা সভ্য মানুষ হলে এরকম হতো না। ইরানী সভ্যতায় জরস্থ্রুষ্ট ধর্মীয় মতবাদ যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল। সে মতবাদে চিন্তাভাবনার অনেক উপাদান ছিল। পরে ইরানে ইসলাম প্রবেশ করলেও তারা তাদের পুরনো ধর্মীয় মতবাদের সব কিছু ত্যাগ না করে অনেককিছুই তারা ইসলামের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করে। এরই ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, বর্তমানে ইসলাম ত্যাগকারী অধিকাংশ মানুষও ইরানী। আর তারা ইসলামের ত্রুতি বিচ্যুতি খুজে বের করতে গলদঘর্ম।
@ভবঘুরে,
এন্টাইভন্ড সাহেবের লজিক্যাল সেন্স কিন্তু খুবই ভাল বলেই আমার মনে হয়েছে।
ইসলাম বিকৃত করনে ইরানীদের প্রভাব সম্পর্কে মনে হয় কোরান ওনলীদের এই ধরনের মতবাদ আছে। এই ফোরামে আগে আইভি আসতেন। তিনিও এমন বিশ্বাস করেন। তার মতে মুসলমানদের কাছে ইরানী প্যাগানরা অসিতে পরাজিত হয়ে মসিতে তার প্রতিশোধ নিয়েছে, অর্থাৎ পুরো ধর্মই বিকৃত করে দিয়েছে।
ইসলাম বিকৃত করনের উপর আইদিদ সাফার নামের এক ভদ্রলোকেরও কি কি গবেষনা আছে। যদিও জানি না উনি ইরানী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বাস করেন কিনা।
রুশদিকে অনেক ধন্যবাদ, এমন তথ্যবহুল একটি প্রবন্ধের জন্য। যারা মুক্ত মন নিয়ে ইসলামকে জানার জন্য পড়াশুনা করেছেন তারা খুবই ভালভাবেই জানেন ইসলামের “মৌলিকত্ব” যৎসামান্য, প্রায় পুরোটাই পূর্ববর্তী ও সম সাময়িক ধর্ম ও আচার-বিধির Copy and paste with addition/delition and amendment. এ প্রবন্ধে তার অনেক উদাহরন দেয়া হয়েছে। ইহুদীদের কাছ থকে নেয়া ট্রাডিশানে আরো কিছু উদাহরণঃ
১) শুকুরের মাংশ ভক্ষন হারাম
২) ‘সাব্বাহ (Sabbat) – প্রথমে মুহাম্মাদ তা পালন করেন ইহুদীদের মতই শনিবারে, পরে তা পার্থক্য করার জন্য হয় ‘শুক্রবার’ জুমাআর নামাজ।
৩) Circumcision
৪) জাকাত প্রথা (Charity)
৫) আশুরার দিন রোজা রাখা – পরে সেটা পরিবর্তন করে করা হয় ‘রমজানের’ এক মাসব্যাপি রোজা, যেটা মক্কার ‘হানিফ’ মতাদর্শীরাও পালন করতো।
হিজরতের পর মদীনায় ইহুদীদের দলে ভিরাতে ব্যর্থ হয়ে ‘আল্লাহ’ খুবিই upset হলেন. পূর্ববর্তীতে ইহুদিদের বিষয়ে আয়াত যেখানে বলা হয়েছিল তৌরাত একটা Divine book containing guidance (Quran 6:154), পরে আর divine থাকলো না, তা হলো became perverted by Jews (Quran 2:70)”। যে ইহুদীদের আগে বলা হয়েছিল privileged above all people (Quran 45:16)”, তা হয়ে গেল those who show the greatest hostility to the believers (Quran 5:82)
এই সেই বিখ্যাত ‘সালমান দি পারসিয়ান (সালমান পার্শী) যে মুহাম্মাদকে মক্কাবাসীদের আক্রমন থেকে মুসলমানদের বাঁচাতে মদীনার চারিপাশে “খন্দক” করার পরামর্শ দিয়েছিলেন (খন্দক যুদ্ধ/battle of ditch). পারসিয়ান যুদ্ধের এ কৌশলটা জানতো. এ যুদ্ধের আগে আরবরা তা জানতো না।
@গোলাপ, ইহুদী এবং খ্রিষ্টান,দুই ধর্মকে ছাড়া মুহম্মদ নবী হয়ে উঠতে পারতেন না। তাই তিনি চতুরভাবে নিজেকে ঈসা মুসার উত্তরাধিকারী হিসাবে উপস্থাপন করলেন। যদি সম্পূর্ন আলাদা প্রেক্ষাপটে যেতেন,তার বুঝরুকি সেই আমলেই ধরা পড়ত। তিনি তা জানতেন বলেই ঢাল হিসেবে খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের ব্যবহার করেছেন।
সুন্দর স্কলারি পোস্ট লেখার জন্য রুশদীকে ধন্যবাদ। অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। শুভ অভিষেক!
@আল্লাচালাইনা, আপনার অপদার্থ মুসলমান লেখাটি কি লেখা হচ্ছে?
ধর্ম একটি সাংস্কৃতিক প্রোডাক্ট।
পৃথিবীর সব ধর্মই আগের ধর্মগুলিকে উন্নত করতে উদ্ভব হয়েছে-এবং অনেক ধর্মকে একসাথে সিন্থেসিস করেছে। বৌদ্ধরা এসেছে হিন্দুদের প্রতিবাদি আন্দোলন থেকে-ইসলাম এসেছে প্যাগান দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি আন্দোলন এবং তার সাথে ইহুদি ও খৃষ্ঠানদের একেশ্বরবাদকে শুদ্ধিকরন থেকে।
সুতরাং কোরান, গীতা এগুলোকে ঈশ্বর কথিত ও নির্দেশিত বলে যারা মানে তাদের দাবী খুবই হাস্যকর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক কারনের মধ্যে একটি কারন হচ্ছে ধর্মের ইতিহাস নিয়ে অজ্ঞতা।
তবে অজ্ঞতার অন্য নামই ধর্ম ভীরুতা।
@বিপ্লব পাল, বিশ্বাস করা ও মেনে চলা,দুটির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে কম, মানেও কম,আর মুসলিমরা বিশ্বাস করে বেশী এবং মানতে প্রাণপন চেষ্টা করে। ধর্মের ইতিহাস খোলামনে পড়ার যেগ্যতা ৯৯ভাগ মুসলিমের নেই,এটাই বাস্তবতা। মুহম্মদ সেখানে সকল বিতর্কের উর্দ্ধে।
তাহলে বাকি আর রইলো কী? বলতে চাচ্ছেন সবই কপি পেস্ট? বলুন তো দেখি কোন কিতাবে লেখা আছে বদর থেকে তাবুক? অন্তত মানতে হবে, এইটুকু তো আমার নবী কপি পেস্ট করেন নাই। কোন কিতাবে লেখা আছে- তোমরা খুন করোনি খুন করেছি আমি, তোমরা তীর ছুঁড়ে মারোনি মেরেছি আমি? (সুরা আনফাল- তাওরাত দ্রস্টব্য) সুতরাং আমার নবী মুহাম্মদ সর্বকালের, সর্বযুগের জন্যে অনুসরণীয়, অনুকরণীয়, সর্বশ্রেষ্ট দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক। শুধু- – –
শুধু দাসপ্রথা আর বাল্য বিবাহের ব্যাপারে আমার নবী সেই যুগের সেই প্রথার সেই সময়ের মানুষ।
দাঁড়ান আরেকটা কথা আছে- আমার নবীর শিশু বিবাহ আর পুত্রবধু বিবাহ নারী কেলেংকারি, স্ত্রী কেলেংকারি কোরানে আছে সত্য, কিন্তু এ নিয়ে কিছু লেখার আগে ভেবে দেখবেন অন্যদের ধর্মগ্রন্থে কী লেখা আছে। ‘ বিধবাদের সাথে সঙ্গম আর মায়ের সাথে সঙ্গম একই কথা (মনু), নিজের স্ত্রীকে বোন বলে মিথ্যাচার (ইব্রাহিম, মাতাল হয়ে নিজের দুই মেয়ের সাথে সেক্স করা (নুহ) এ সমস্ত কিন্তু কোরানে নেই।
তথ্য বিকৃতির জন্যে আপনাকে বুড়ি আঙ্গুল দেখায়ে ডাবল মাইনাস! :yes: :yes:
ইসলামের ‘মৌলিকত্ব’ এখানেই। ‘লা-ই-লাহ ইল্লালাহ্ এবং মোহাম্মদ তোমার রসুল’ এটা মানার পর, এই সত্য প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য চাতুরী-মিথ্যা-ছলনা (Taqiya), খুন-খারাবি-রাহাজানী-যুদ্ধ ইত্যাদি যে কোন ‘জিহাদী মাধ্যমে’ সমস্ত দুনিয়াকে ইসলামের পদতলে নিয়ে আসার সাধনায় মুমিনদের কোনই অপরাধ নাই। কুরানের লেখক আল্লাহ পাক নিজেই সে সবের সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন। এতে মুমীনদের লাভই লাভ। বাঁচলে গাজী সাথে জান (দাস- যৌন সহযোগী দাসী), অঢেল লুন্ঠন সামগ্রীর মালিক (Booty) এবং ক্ষমতা। আর মরলে সরাসরি বিনা বিচারে সর্বত্তোম বেহেশ্তের V.I.P status সহ সুখ শান্তি।
@আকাশ মালিক, মাইনাসটি সযত্নে গৃহিত হল। আমি মাঝে মাঝে ভাবি,এই মুহম্মদ নামক চিজটি কত বুদ্ধিমান ছিলেন। দেখেন,আমুতে এন্টাই ভন্ড ও অন্য আরেকজন বললেন যে এখানে যে ভাবনাটি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে,সেটি হল মুহম্মদ নতুন কিছু প্রচলন করেননি। তিনি পুরনো বোতলে নতুন মদ পরিবেশন করেছেন। আমাদের ফারুক ভাই আমার এই কথায় ‘থাম্বস আপ’ দিয়েছেন। অর্থাৎ উনিও একমত। তারাও বললেন,এটা তো মুহম্মদই বলেছেন যে ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়। বোঝেন তাহলে,কত ধূর্ত ব্যক্তি এই মোহাম্মদ। বুদ্ধি করে এই জালিয়াতি বন্ধের ব্যবস্থাও করে গেছেন,যাতে তারপরে আর কেউ নতুন ধর্ম চালু না করতে পারে নবী হিসাবে। এই কাজটা না করে গেলে এতদিন হাজারখানেক নবী তৈরী হত। হয়ত দেখতাম নবী আকাশ মালিক(সঃ) তার নতুন ধর্ম “মালিকী” নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। হ্যাটস্ অফ টু মোহাম্মদ,দি গ্রেট ফক্স।
@রুশদি,
:yes: :yes: :yes: জব্বর বলেছেন 🙂 ।
এই জরাথ্রুষ্টবাদ নিয়ে অনেক কথা শুনি, তবে পরিষ্কার ধারনা ছিল না। আজকের ইরান বা আর কোথাও কি এই ধর্মানুসারীদের কোন অস্তিত্ব আছে?
ইসলামের ইতিহাসে মনে হয় ইরানীদের ভাল রকম গুরুত্ব আছে। কোরান ওনলিরাও দাবী করেন যে ইসলামের ওপর হাদীস চাপিয়ে ইসলামে নানান রকমের সমস্যা/বিতর্ক চাপানো ইরানীদেরই কীর্তি। প্রধান হাদীস লেখকেরা সবাই ইরানী তাদের মতে শুধুই কাকতালীয় নয়।
ইরানী বিজয়ের আগে মুসলমানেরা কেবল ৩ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত এর কি কোন ঐতিহাসিক সূত্র আছে?
– জ্বীনের সাথে মানুষের বিবাহ ইসলামের কোথায় আছে? নাকি এটা শুধু এই ম্যাকডোনাল্ড সাহেবের উর্বর মস্তিষ্কের আবিষ্কার?
@আদিল মাহমুদ,
খুবি দরকারি একটি প্রশ্ন করেছেন। এর সুত্র জানা গেলে খুব উপকার হতো। মিঃ রুশদি সু্ত্রের অপেক্ষায় থাকলাম।
@ফারুক,
আপনার কথা জানি না, অনেক কোরান অনলী তো দাবী করেন যে নামাজ রোজা এসবই নাকি পরে ঢোকানো হয়েছে। কোরানে বর্নিত সালাত নাকি প্রচলিত নামাজ নয়।
@ফারুক, ভাই,জবাব তো আপনিও জানেন,তাই না? তবু যখন জানতে চাইলেন,তখন বলি,কোরানে নামাজ শব্দটাই নেই খুব সম্ভবত। আছে সালাত। তো এই সালাতের আয়াতগুলি দেখে নেন।
১।ফজর(২৪:৫৮)
২।মধ্যাহ্নকালীন (২:২৩৮ ও ১৭:৭৮)
৩।ইশা (২৪:৫৮)
একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি,আপনি কয় ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন? বলতে আপত্তি থাকলে বলতে হবে না।
@রুশদি,
আমার প্রশ্নের সরাসরি জবাব হল না। কোরানে প্রচলিত নামাজ বলতে আমরা যা বুঝি তা সরাসরি নেই তা সবাই জানি। ঘোর ইসলাম ভক্ত লোকেও সেটা অস্বীকার করবেন না।
তবে তার মানেই “ইরানী বিজয়ের আগে মুসলমানেরা কেবল ৩ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত ” এই কথা সত্য এমনও কোন কথা নেই। আমি জানতে চাইছি এই ৩ ওয়াক্ত নামাজ তত্ত্বের কি কোন ঐতিহাসিক সূত্র আছে? কোন হাদীস কিংবা সমসাময়িক ইতিহাসের বিবরন এই জাতীয় কিছু?
@আদিল মাহমুদ,
কোরানে বলা আছে সালাত প্রতিষ্ঠা কর (ওয়া আকিমুসসালাত)। আর মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত সালাত মানে নামাজ পড়া বা praying, performing, offering। তাহলে পড়া বা প্রতিষ্ঠা করা এক অর্থ বহন করে? অন্য একটি ব্লগে এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাইনি, এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানাকার ব্লগাররা কি বলেন? যদি অর্থ একই হয় তাহলে আমার ভুল। আর যদি পড়া ও প্রতিষ্ঠার মধ্যে পার্থক্য থাকে তাহলে কোরান পাঁচ বা তিন কোন ওয়ক্ত নামাজের কথা বলেনি। কোরানে যতবার সালাতের কথা এসেছে প্রায় ততবার জাকাতের কথা এসেছে। ঢিপ ঢিপ সিজদা দাও আর উঠে বসে দান কর–এ দু’টো কাজের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই।
@আইভি,
কে জানে এসব প্রশ্নের সমাধান কি? কেউ কেউ থিয়োরী দেন যে প্রচলিত নামা নাকি আসলে ইরানের মাজেন্দ্রান অঞ্চলের অগ্নি পূজকদের রিচুয়াল?
ধর্ম হল পারিবারিক সূত্রে পাওয়া কিছু অন্ধবিশ্বাস এবং রিচ্যূয়ালের সমষ্টি। এর মাঝে যুক্তি তর্ক খুজতে যাওয়াই মনে হয় সময় নষ্ট। মানুষ নিজের বাপ দাদাকে যেভাবে ধর্ম পালন করে আসতে দেখেছে সেভাবেই পালন করতে চায়। এর বিরুদ্ধে কিছু শুনতে গেলেই তার কাছে বিরাট কালচারাল শকের মত দেখা দেয়। এটা অনেকটা বড় হবার পর হঠাত করে জানতে পারা গেল যেই বাবাকে সে আজন্ম বাবা ভেবে এসেছে তা আসলে ঠিক নয় এই ধরনের একটা শকের মত কাজ করে। এই শক সামাল দেওয়া সোজা কথা না। এই জন্যই ধর্মের খাতিরে মানুষ এত সহজে উন্মাদ হতে পারে।
প্রচলিত নামাজ ওয়ালারা এখন গাদাগাদি হাদীস বের করতে পারেন নামাজের স্বপক্ষে। আবার ওনারাই ওনাদের পছন্দমত না হলে অনেক হাদীস ভেজাল আছে বলে গোঁ ধরে বসবেন। অর্থহীন সব তর্ক।
অনেকদিন আগে মনে হয় আপনাকে সদালাপে দেখেছিলাম কে যেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন যে প্রচলিত নামাজের যাবতীয় সব নিয়ম কানুন নাকি কোরানেই আছে। আপনি কোরান অনলী হয়েও কোরান আসলে ভাল করে পড়েননি এমন একটা কথা উঠেছিল মনে পড়ে। জানি না আসলেই ঘটনা কি।
আমার কাছে ক্রাইটেরিয়া খুব সোজা। যাতে মানুষের উপকার হয় (সুপার ফিশিয়াল পরকালের বালাখানার গ্রাফিক বর্ননা মূলক নয় ), কারো কোন ক্ষতি না হয় সেটাই আমাকে দেখান, মেনে নেব। সে সূত্র কোরান হোক, হাদীস হোক, বেদ হোক কি আরজ আলী মাতুব্বরের বই হোক।
@আইভি,
প্রতিষ্ঠা করা একটা ব্যপক শব্দ যার মধ্যে পড়া ব্যপারটাকে আংশিক হিসাবে ঢুকানো যায়।এ হিসাবে সালাত প্রতিষ্ঠা কর অর্থে নামাজ পড় বিষয়টা খুব একটা তারতম্য সৃষ্টি করে বলে মনে হয় না। বরং সালাত প্রতিষ্ঠা কর বলতে এটা বুঝানো যেতে পারে যে – নামাজ খালি পড়লেই হবে না, নামাজের সাথে সাথে জীবনের আচরন ও বদ অভ্যাসগুলোও বদলাতে হবে। তবে ৫ ওয়াক্ত নামাজের ব্যপারটা হাদিস থেকে এসেছে সেটা সবাই জানে। মুস্কিল হলো- অন্য একজায়গায় মন্তব্যে আপনি হাদিসকে বানান বলছেন অথচ এটাকে বানান বলছেন না – এর রহস্যটা কি ? নাকি এ হাদিস মোহাম্মদের চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত নয় এ জন্যে বানান বলছেন না ? আমার মনে হয় যে- সব ধর্ম নিয়েই নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করার সময় এসে গেছে। আগেই একটা বিষয় চুড়ান্ত অন্ধভাবে বিশ্বাস করে পরে সে বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে কিতাব এর বানীকে সুবিধা মত বাদ দেব , সুবিধা মত নিজস্ব ব্যখ্যা দেব – এটা করে অন্তত একবিংশ শতাব্দির মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না এটা নিশ্চিত।
@ভবঘুরে,
কোন হাদিসটাকে বানানো বলছিনা? এখানে তো আমি কোন হাদিস প্রসংগই আনিনি।
@আদিল মাহমুদ,
ইরানে বেশ কয়েক হাজার জরাথ্রুষ্টবাদী আছে। জাতীয়তাবাদী কারণে অনেক ইরানী মুসলিমও জরাথ্রুষ্টকে নবী মনে করে।
তবে সবচেয়ে বেশি আছে ভারতে, যারা আরব বিজয়ের পরে পালিয়ে চলে আসে। পশ্চিম ভারতে “পার্শী সম্প্রদায়” বলে পরিচিত সম্প্রদায়টিই এটা। জিন্নাহর বউ, ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী এরা পার্শী, অর্থাৎ জরাথ্রুষ্টবাদী ছিলেন।
হতে পারে, কিন্তু রুশদীর প্রবন্ধে দেখা যাচ্ছে আগাগোড়া সবই আসলে ইরানীদেরই কীর্তি, কাজেই ঠগ বাছতে… ;)?
@রৌরব,
ভারতের পার্সীরাই যে এনারা তা জানা ছিল না। তবে পার্সী হতে আমার আপত্তি নেই, শুনেছি এনারা নাকি সবাই বেশ ধনী হন 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ, মানুষ জ্বীনের সম্পর্ক নিয়ে ইসলামে গভীর গবেষনা হয়েছে। এ ব্যাপারে পাকিভাইদের অগ্রগতি ঈর্ষনীয়। শুনছিলাম তারা তো জ্বীনের রাসায়নিক বিশ্লেষনের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল। পরে আর খোঁজ রাখিনি। যাইহোক,এব্যাপারে এচলামি বিজ্ঞানীদের মধ্যে ২ টি মত দেখা যায়-প্রথম পক্ষ মনে করেন,মানুষ ও জ্বীনের বৈবাহিক সম্পর্ক ‘হারাম’,কারন কোরানে সুরা আন নিসায় বলা হয়েছে যে আল্লাহ মানুষকে তার নিজের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে স্বামীস্ত্রী নির্বাচন করার ক্ষমতা দিয়েছেন। যেহেতু জ্বীন মানুষের প্রজাতি না,তাই এ ধরনের বিবাহ হারাম।
দ্বিতীয় পক্ষে আছেন ইমাম মালিক(রঃ) ,যিনি মনে করেন এ ধরনের বিয়ে সম্ভব,কিন্তু পুরুষ জ্বীনের সাথে মানবী’র বিয়ে করা উচিত নয়। নারী জ্বীনের সাথে ঈমানদার মুসলিমের বিবাহ চলতে পারে। :laugh: :laugh:
এই নিয়ে একটা বিজ্ঞানভিত্তিক পোষ্ট দেওয়ার উচ্ছা জাগ্রত হচ্ছে,যাতে সমস্ত নাস্তিকদের তুলোধুনো করে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়া হবে যে জ্বীন আছে,তারা ইসলামের সত্যতা প্রচারে অকাট্য প্রমান হয়ে বিরাজ করছে। এক পাকি ভাই দেখলাম জ্বীন কর্তৃক রেপ করার ঘটনাও উল্লেখ করেছেন,যেখানে ফলাফল হয়েছে নাকি একটি ‘হিজরা’ শিশু।
এই ব্লগের সকল বিবাহিত উৎপাদনক্ষম ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া কর্তব্য মনে করি;আপনারা অবশ্যই সহগমনের পূর্বে এজন্য যে বিশেষ দোয়াটি মোহাম্মদ আবিস্কার করেছিলেন,সেটি তিনবার পড়ে নিবেন। তা না হলে কিম্পুরুষ উত্তরাধীকারী সৃষ্টি হতে পারে।
@রুশদি,
পাকিরা/ জড় মাথার লোকেরা এই জাতীয় বহু কাহিনী কেচ্ছা বানায় সেটা জানি। আমি নিজেও সেগুলি নিয়ে মজা করি।
তবে কিছু মাথা মোটা লোকের পাগলামীর দায় অযাচিতভাবে ইসলামের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না। কোরান না হোক, অন্তত হাদীসিয় সূত্র থাকা উচিত।
এ জাতীয় রেফারেন্স বিহীন কথাবার্তা বললে লেখার মূল বিষয় বাদ দিয়ে এসব নিয়েই আক্রমন চলবে।
@রুশদি,
আপনার এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা আপনার প্রতি যার পর নাই কৃতজ্ঞ। :laugh:
@আদিল মাহমুদ,
জরাথ্রুষ্টবাদীরা শুধু ইরান কিংবা ভারতেই নেই এমনকি আপনার আশেপাশেও আছে। ZOROASTRIAN SOCIETY OF ONTARIO
আর একটা ইন্টারেস্টিং (আমার কাছে) তথ্য হলো ভারতের সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস, এইচ কাপাডিয়া একজন জরাথ্রুষ্টবাদী।
ইরান বিজয়ের আগে কিংবা পরে জানিনা তবে ইসমাইলীরা কিন্তু এখনও তিন ওয়াক্ত নামাজ পরে।
আমার ধারণা ইসমাইলীরাও যেহেতু কোরান মানে তাই তাদের মতে এর কারণ নিশ্চয়ই এই যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার কথা অরিজিনাল নয়, আপডেটেড। নইলে তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ার যুক্তি থাকে না।
তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট। অনেক কিছু জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
Widengren এর Die Religionen irons বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ ও John Hinnels এর Zoroastrian Savior Imagery and Its Influence on the New Testament বইদুটি কি online পাওয়া যায়?
চমৎকার!! আপনি দারুন একটা কাজ করছেন। অনুবাদটি ভাল হয়েছে।
আসলে ইসলাম-জুডাইজম-খৃস্ট ধর্ম সম্পর্কে জানতে হলে জরাথ্রুষ্টবাদ সম্পর্কে জেনে নেয়া খুবই প্রয়োজন।
:yes: উনাকে বলা হয় সালমান ফারসি, তার বেশ প্রভাব ছিল মুহাম্মদের উপর।
ইসলামের অতি উদ্ভট পুলসিরাতের ধারণাটিও জরথ্রুস্টুবাদ থেকে এসেছে।
(প্যারাগুলো আলাদা করে দিন, পড়তে ভাল লাগবে)
@সৈকত চৌধুরী, আলাদা করে দিলাম।
এই কথাটা যেন বুঝলাম না। ব্যাবলনিয়া থেকে বিতাড়িত? ব্যবলনিয়ান দাসত্বের কাহিনী হল: ইহুদীদের ব্যবিলনের সম্রাট ধরে ব্যবিলনে বন্দী করে রাখে, পরে পারস্য ব্যবিলন দখল করার পরে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
ইন্টারেস্টিং। পার্থিয়ানদের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার ব্যাপারটা জানা ছিল না। এটা আরেকটু বিস্তারিত জানতে পারলে মন্দ হত না।
লেখাটি ভাল হয়েছে :yes:
ইবনে ওয়ারাকের বইটা বেশ ভাল ছিল, তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গায় তথ্যসূত্রের অনুপস্থিতি খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে। বিশেষ করে তথাকথিত “মুসলিম” বিজ্ঞানীদের নিয়ে লেখা বইয়ের অংশগুলোতে বেশিরভাগ তথ্যই মূলত ফরাসী প্রাচ্যবিদদের কর্ম হতে ক্রস-রেফারেন্স করা। সরাসরি “মুসলমান” চিন্তাবিদদের কর্ম থেকে রেফারেন্স করলে ভাল হত।
@পৃথিবী, আসলে বইটা আরো বেশি রেফারেন্স সমৃদ্ধ হলে ভালই হত,তবে যা হয়েছে তাই বা কম কি?