জরাথ্রুষ্টবাদঃ

পৃথিবীর সকল ধর্মের উপর জরাথ্রুস্টবাদের বা পারসীবাদের প্রভাব সম্পর্কে ভিন্নমত থাকলেও অধিকাংশই এর পক্ষে মত দিয়েছেন। Widengren এর স্পষ্ট বার্তা,

“ইরানের ক্রমবিকাশে সেখানকার ধর্মসমুহের বড় প্রভাব রয়েছে,এমনকি পশ্চিমের ইরানীয়ান মতবাদভিত্তিক ধর্মগুলো উপরেও। এই ধর্মগুলোর ভিতরে আছে ৫৯৮-৫৩৭ খ্রিঃপূর্বাব্দে ব্যাবিলনিয়া থেকে বিতাড়িত ইহুদী সম্প্রদায় অনুসৃত মতবাদ, হেলেনীয় গুপ্তধর্ম সমুহ যেমন Mithraism,Gnosticism এবং ইসলাম। ইসলামে শিয়া মতবাদে ইরানীয়ান প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।”

Widengren তার Die Religionen irons (1965) বইতে ইহুদীদের ব্যাবিলন থেকে বিতাড়নের সময়কালে ওল্ড টেষ্টামেন্টের উপর জরাথ্রুষ্টবাদের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সম্ভবত Morton Smith ই প্রথম ব্যক্তি যিনি ওল্ড টেস্টামেন্টের ইসাইয়া(৪০-৪৮) ও জরাথ্রুষ্টদের প্রার্থনা সঙ্গীত ,যা ‘গাথা’ নামে পরিচিত,তার ৪৪:৩-৫ অংশের অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন। ঈশ্বর আলো ও অন্ধকার উভয়ই সৃষ্টি করেছেন-এই কথাটি উভয় গ্রন্থেই রয়েছে। John Hinnels তার Zoroastrian Savior Imagery and Its Influence on the New Testament বইতে খ্রিঃপূর্ব ২য় শতকে ইহুদীদের সাথে পার্থিয়ানদের মিলনের ফলে এই মিল লক্ষিত হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
ইসলাম জরাথ্রুষ্টবাদ দ্বারা সরাসরি অনুপ্রাণিত,কিন্তু ইসলামের উপর ইহুদী ও খ্রিষ্টধর্মের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। এইকারনেই,আমরা দেখব ইহুদী ধর্মের সাথে জরাথ্রুষ্টবাদের মিল সমুহ,যা পরে ইসলাম আত্মস্থ করে।
‘আহুরা মাজদা’,ইরানের সর্বশক্তিমান,সর্বব্যাপী ও শ্বাশ্বত প্রভু-তার শক্তিকে তিনি ‘স্পেন্টা মাইনু’ বা পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত করেন এবং পুরো জগতকে তার ফেরেশতাদের দিয়ে চালনা করেন;ধারণাটি ইহুদীদের ‘জিহোভা’ বা YHWH এর প্রতিরুপ। কিন্তু তার ক্ষমতা তারই পরামর্শদাতা ‘আহরীমান’ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,যাকে শয়তানের সাথে তুলনা করা যায়। পৃথিবী ধ্বংসের দিন ‘আহরীমান’ এর রাজত্বও শযতানের ন্যায় ধ্বংস হবে।
এখানে ধারণার মিল লক্ষ্য করা যায়-পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে এবং পুনরায় ‘মেসিয়া’র আগমনে একটি ‘নিখুঁত ও সত্য’ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে,মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে এবং সেই জীবন হবে অক্ষয়। দুটো ধর্মেই ঈশ্বর নবীর নিকটে উপস্থিত হয়েছেন- আহুরা মাজদা তার আদেশ নির্দেশ ‘জরাথ্রুষ্ট’ এর কাছে পবিত্র দুই পাহাড়ের মিলিত শীর্ষে দেখা করে পৌছে দিয়েছেন, এবং জিহোভা মুসা নবীর কাছে সিনাই পাহাড়ে একই রকমভাবে ১০ টি নির্দেশ পৌছে দেন।
জরাথ্রুষ্টবাদের বিশুদ্ধিকরন নীতি,বিশেষত সেইসব নিয়মগুলি যেগুলো সাধারনত মৃত ও অপরিস্কার জিনিসের সংস্পর্শে ঘটে থাকে ,তা ওল্ড টেস্টামেন্টের সাথে মিলে যায়।

‘জেনেসিস’ এ বর্ণিত ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কাহিনী একইভাবে জরাথ্রুষ্টিয়ানদের ছয়ভাগে পৃথিবী সৃষ্টির ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ন। উভয় ধর্মমতেই মানুষ সৃষ্টি হয়েছে একজোড়া মানব মানবী থেকে, Mashya(ইরানীয়ান ADAM) ও Mashyana(ইরানীয়ান EVE)। বাইবেলে আমরা দেখতে পাই যে একটি প্লাবন শুধুমাত্র একটি পরিবার ছাড়া আর সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, জরাথ্রুষ্টিয়ানদের Avestan Vendidad গ্রন্থেও দেখা যায় একটি প্রবল শৈত্যপ্রবাহ একটি মাত্র পরিবার (YIMA, বাইবেলে নোয়া বা নুহ) ছাড়া সবকিছু দ্বংস করে দেয়। উভয়ক্ষেত্রেই পৃথিবী পুনরায় কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে প্রত্যেক প্রজাতির সেরা দুই জোড়া প্রাণী দ্বারা এবং পরবর্তীতে তিনটি রাজ্যে বিভক্ত হয়। Yima এর সন্তান Thraetaona এর তিন পুত্র Airya, Sairima and Tura পারসীয়ান কাহিনীতে রাজত্ব করে,আরবীয় গল্পে দেখতে পাই Shem,Ham ও Japheth কে রাজত্ব করতে। ইহুদীবাদ জরাথ্রুষ্টিয়ানবাদের ফেরেশতা ও শয়তান ধারণার কাছে ঋনী,সম্ভবত পুনরুথ্থান এর ধারনাও একইভাবে পেয়ে থাকতে পারে।
স্বীকৃত ইসলামী পন্ডিতদের মধ্যে প্রথমে Goldziher ই ইসলামের উপর জরাথ্রুষ্টবাদের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন, তাই আমি এই অংশে তার গবেষনার উপরেই নির্ভর করব।

৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কুদিসীয়ায় সাসানিয়ান পারসীয়ান বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে ইরানে ইসলাম প্রত্যক্ষ্য ভাবে প্রবেশ করে। অধিকতর উন্নত পারসীয়ান সংস্কৃতি ইসলামকে প্রভাবিত করে। সদ্য পরাজিত ও ধর্মান্তরিত পারসীয়ানরা ইসলামের মধ্যে চিন্তার নতুন ধারা প্রচলন করেন। উমাইয়া বংশের সমাপ্তিতে যখন আব্বাসীয় বংশ ক্ষমতায় আসে,তা ছিল মূলত পারসীয়ান প্রচেস্টা। আব্বাসীয়রা অনেক সাসানীয় প্রথা গ্রহন করে। তারা খলিফার ধারণার প্রতি পুরোপুরি সচেতন থেকেও উপাধি গ্রহন করে ‘The King of Persia’,তাদের রাজ্য ছিল ধর্মশাসিত যেখানে শাসকেরা ছিল ধর্মের প্রতিনিধিস্বরুপ।সাসানিয়ানদের মতোই তারা নিজেদেরকে স্বর্গীয় ভাবত। রাষ্ট্র ও ধর্মের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক ছিল,এবং একটা পরস্পরনির্ভরতা দুটিকে এক করেছিল। সরকার ও ধর্ম ছিল একইভূত,তাই ধর্মই ছিল জনগনের সরকার।
কোরান আবৃত্তি করে পাপমুক্ত হওয়ার বিষয়ও পারসীয়ানদের থেকে ধারকৃত- পারসীয়ানরাও Avestan Vendidad পাঠ করে পাপমুক্ত হওয়াতে বিশ্বাস করত। উভয় ধর্মবিশ্বাসেই পবিত্র গ্রন্থ থেকে আবৃত্তি যেকোন জাগতিক অপশক্তিকে রুখে দিতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করা হয়। এই আবৃত্তি এমনকি আত্মার মুক্তির জন্যও প্রয়োজন। মুসলিম ও জরাথ্রুষ্টিয়ান উভয়ই মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় মৃত্যুর কয়েকদিন পর পর্যন্ত পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করত। উভয় ধর্মমতেই মৃতের জন্য আহাজারী নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মুসলিমদের অপার্থিব নিক্তি ‘মিযান’ এর ধারনাও এসেছে পারসীয়ানদের কাছ থেকে(কোরান সুরা ২১:৪৭)। তাদের প্রভাবে প্রভাবান্নিত হয়ে মুসলিমরা ভাল ও মন্দ কাজের পরিমাপের বিভিন্ন একক বের করে। যেমন, নবীজি বলেন,
“যে ব্যক্তি মৃতের জানাযার নামাজ পড়ে সে এক ‘কিরাট’ পূন্য অর্জন করে,কিন্তু যে মৃতদেহ কবরস্থ করা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে,সে দুই কিরাট পূণ্য অর্জন করে। যার ভিতরে একটি কিরাটের ওজন চাঁদ পর্বতের থেকেও বেশি।”

মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী,হাশরের(শেষ বিচার) দিন জিব্রাইল ফেরেশতা পাপ পূণ্য পরিমাপক দাঁড়িটি নিয়ে অপেক্ষা করবেন,যার একটি পাল্লা বেহেশতের উপর ও অন্যটি দোজকের উপর থাকবে। একইভাবে, পারসীয়ানরাও বিশ্বাস করত শেষ বিচারের দিনে স্বর্গ ও নরকের সংযোগ সেতুর ওপর দুই ফেরেশতা দাড়িয়ে থাকবেন,প্রত্যেক অতিক্রমকারীকে লক্ষ্য করবেন। একজন ফেরেশতা যিনি ঈশ্বরের দয়ার প্রতীক, হাতে দাঁড়ি নিয়ে সব মানুষের কাজ মাপবেন। যদি ভাল কাজ বেশি হয়,তাহলে তাকে স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তা না হলে অন্য ফেরেশতা,যিনি ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের প্রতীক,তাদেরকে নরকে নিক্ষেপ করবেন। পাপপূণ্যের বিচারসংক্রান্ত অন্যান্য ইসলামী ধারণাগুলো বিভিন্ন খ্রিষ্টিয়ান ধারণা থেকে উদ্ভুত,যা আমরা পরে আলোচনা করব।

মুসলিমদের দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার পেছনেও পারসীয়ান অনুপ্রেরনা আছে। মুহম্মদ প্রথমে দিনে দুইবার নামাজ পড়া চালু করেন। তারপরে কোরানে যেমন বলা আছে,তিন নম্বরটি যোগ করা হয়। তখন নামাজ ছিল তিনবার-ভোরের,সন্ধ্যার ও দুপুরের নামাজ যা ছিল ইহুদীদের তিনবার প্রার্থনা-shakharith, minkah ও arbith এর অনুরুপ। কিন্তু জরাথ্রুস্টদের সংস্পর্শে এসে মুসলিমরা ভক্তিতে পিছিয়ে পড়তে চাইলো না। পারসীয়ানরা যেভাবে দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে,মুসলিমরাও পাঁচওয়াক্ত নামাজ প্রচলিত করলো।
ইহুদীবাদ ও খ্রিষ্টিয়ানিটির মাধ্যমে ছাড়াও আর কিভাবে প্রাক মুসলিম যুগে আরবে জরাথ্রুষ্টদের প্রভাব পড়েছিল? মক্কার বাণিজ্যিকরা পারসীয়ানদের সংস্পর্শে প্রায়ই আসত।তাছাড়া কিছু আরব কবিদের ইউফ্রেটিস তীরবর্তী আল-হিরায় ভ্রমনের কথা জানা যায়,যেটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে পার্সীদের অধিকৃত। এজন্যই Jeffery এ স্থানটিকে আরবের সংস্কৃতিতে ইরানীয়ান প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্র বলেছেন।
আরবী কবি আল-আস্ পারসীয়ান শব্দে সমৃদ্ধ কবিতা লিখেছেন। Avestan ও মধ্য পারস্য (Pahlavi) থেকে বিপুল সংখ্যক পারসীয়ান শব্দ আরবীতে স্থান পেয়েছে। এমনকী আরবের কিছু এলাকাতে পৌত্তলিক থেকে জরাথ্রুষ্টিয়ান হওয়ারও প্রমান পাওয়া যায়। দক্ষিণ আরবে পারসীয়ানদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল কিছু সাসানিয়ান কর্মকর্তার দ্বারা। সর্বোপরি,আমরা কোরানেও জরাথ্রুষ্টিয়ানদের উল্লেখ পাই,যেখানে তাদেরকে ‘মাদজুস’ (Madjus) বলা হয়েছে ও ইহুদী,স্যাবিয়ান ও ক্রিশ্চিয়ানদের সাথে একই গোত্রে ফেলা হয়েছে-যারা বিশ্বাসী (সুরা ২২:১৭)
নবীর জীবনীলেখক ইবনে হিশাম এর কাছ থেকে আমরা জানতে পারি যে নাদের-ইবনে-আল-হারিথ নামক একজন গল্পকার ছিলেন,যিনি মক্কানদের পারস্যের রুস্তম,ইসফান্ডিয়ার ও পারস্যের সম্রাটের গল্প বলতেন এবং সর্বদা দাবী করতেন মুহম্মদের গল্পগুলি তার গল্পের থেকে উন্নতমানের নয়। Torrey এর মতে,
“এর ফলে নবীজি দেখলেন তার শ্রোতাকুল উধাও হয়ে গেছে। এর প্রতিশোধ তিনি নিয়েছিলেন বদর যুদ্ধের পরে। ধূর্ত ও বর্বর প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে যুদ্ধে বন্দী হন এবং পরে জীবন দিয়ে তার গল্পের মূল্য শোধ করেন।”
আমরা ইবনে হিশাম এর বর্ণনা থেকে পাই যে নবীর সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন সালমান নামে,যিনি পারস্য থেকে আগত ছিলেন। তার পক্ষেও নবীকে তার পূর্বপুরুষদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানানো সম্ভব হতে পারে।
মুহম্মদ নিজেও জরাথ্রুষ্টিয়ানদের দ্বারা ‘বিশ্রাম দিন'(Sabbath) সম্পর্কে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বিশ্রাম গ্রহন সম্পর্কিত ধারণার বিরুদ্ধে ছিলেন। পার্সীরাও ইহুদীদের Sabbath এর বিরুদ্ধমতের ছিল। মুহম্মদ ও সমস্ত মুসলিমদের জন্য শুক্রবার ‘পবিত্র বিশ্রাম দিবস’ ছিল না,ছিল শুধু পারস্পরিক মিলনের দিন।
মুহম্মদ তার ‘মিরাজ’ বা স্বর্গারোহন সম্পর্কিত তথ্যে বলেন যে তিনি ‘বোরাক’ নামক প্রানীর পিঠে আরোহন করে জিব্রাইল,মুসা,ইব্রাহীম ইত্যাদি পূর্বপুরুষদের দেখা পান। বোরাকের চেহারার বর্ণনায় বলা হয় সাদা,দুইপাখা ওয়ালা গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি আকারের প্রাণী। ‘বোরাক’ আসলে আসিরিয়ান ‘গ্রিফোন'(Gryphon) এর অনুকরণে বর্ণিত। কিন্তু Blochet দেখিয়েছেন যে এই সম্পর্কিত সবকিছুই পারসীয়ানদের থেকে ধারকৃত। স্বর্গারোহনের বিস্তারিত বর্ণনা পারসীদের কাহিনী থেকে ধারকৃত। ‘মিরাজ’ এর মুসলিম বর্ণনা এইরকম (মুহম্মদের জবানীতে),
” জিব্রাইল আমাকে বোরাকের পিঠে বসালেন এবং সর্বনিম্ন স্তরের বেহেস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। “তুমি কে?” একজন জানতে চাইল। “আমি জিব্রাইল”,জিব্রাইল উত্তর দিলেন। “তোমার সাথে কে আছে?” -পুনরায় প্রশ্ন হলো। ” আমার সাথে মুহম্মদ আছে”-জবাব দিলেন জিব্রাইল। “তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?”-পুনশ্চ শুনতে চাইলো দ্বারী। জিব্রাইল হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলে দ্বারী বলল,” তাকে সুস্বাগতম জানাই।তার আসায় কি যে ভাল হয়েছে!”।এর পরে সে দরজা খুলে দিল। ঢুকে জিব্রাইল বললেন,”এখানে তোমার বন্ধু আদম থাকেন। তাকে সালাম দাও।” সুতরাং আমি সালাম দিলাম । তিনি প্রতিউত্তরপূর্বক বললেন,”অসাধারন নবীর প্রতি সুস্বাগতম।” তারপরে জিব্রাইল আমাকে দ্বিতীয় স্তরে নিয়ে গেলেন,যেখানে ছিলেন ইয়াহিয়া ও ঈসা,তৃতীয় স্তরে ছিলেন ইউসুফ,চতুর্থ স্তরে ইদ্রিস,পঞ্চমে হারুন এবং ষষ্ঠস্তরে মূসার সাথে দেখা হলো।মূসা যখন সালামের উত্তর দিচ্ছিলেন,ক্রন্দনরত মূসাকে আমি ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললেন,” আমার পরে প্রেরিত তোমার বেশি লোক বেহেস্তে প্রবেশ করবে।” অতঃপর সপ্তম স্তরে প্রবেশ করলে জিব্রাইল বললেন,” এই তোমার পিতা ইব্রাহিম। ” আমি যথারীতি সালাম দিলাম। সবশেষে আমরা যেখানে পৌছলাম সেখানে হাতির কানের মত গাছের পাতা ও সুন্দর ফল ঝুলছিল। “এইটা শেষ বেহেশত”.জিব্রাইল বললেন।”এখানে চারটি নদী আছে,দুটি ভেতরে এবং দুটি বাহিরে।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম “সেগুলো কি কি?” ” ভেতরের দুইটি হল বেহেশতের নদী,আর বাইরের দুটি হচ্ছে ‘ইউফ্রেটিস’ ও ‘নীল’। ”
এই মিরাজ বা স্বর্গারোহন কাহিনী মুসলিম যুগ শুরুর কয়েকশ বছর আগে লেখা পাহলভী কাহিনী ‘আর্তা ভিরাপ’ (Arta Virap) এর সাথে তুলনা করা যাক। জরাথ্রুষ্ট পুরোহিতরা মনে করছিলেন যে তাদের মধ্যে বিশ্বাসীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে,তাই তারা আর্তা কে স্বর্গে পাঠালেন সেখানকার অবস্থা দেখতে। আর্তা এক স্তর থেকে আরেক স্তর স্বর্গে ভ্রমন করলেন ও শেষে পৃথিবীতে ফিরে তার দর্শনলব্ধ কাহিনী বর্ণনা করলেন-
“আমাদের উর্দ্ধগমনের প্রথম বিরতি ছিল স্বর্গের সর্বনিম্ন স্তরে;….সেখানে আমরা ফেরেশতাদের দেখলাম যাদের দেহ থেকে উজ্জল কিন্তু নরম আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। আমি ‘সারোশ’ (সঙ্গী ফেরেশতা) কে জিজ্ঞাসা করলাম,”এই জায়গার নাম কি,এরাই বা কারা?”[এর পরে আর্তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্বর্গে গমনের কথা বর্ণিত আছে] ” স্বর্নালী সিংহাসন থেকে উঠে ‘বাহমান'(Bahman),ফেরেশতাদের নেতা,আমাকে নিয়ে ‘অর্মাদ'(Ormazd) এর কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তখন ফেরেশতা ও স্বর্গীয় ব্যক্তিদের সাথে বসেছিলেন। সবার গায়ে এত উজ্জ্বল অলংকার ছিল,যা আমি পূর্বে কখনও দেখি নি। আমার পথপ্রদর্শনকারী বললেন, এই হচ্ছে অর্মাদ; আমি তাকে সালাম দিলাম এবং তিনি আমাকে বললেন যে পংকিল পৃথিবী থেকে এই নিষ্কলুষ স্থানে আমাকে স্বগত জানাতে পেরে তিনি গর্বিত….. সব শেষে,আমার পথপ্রদর্শনকারী ও আগুনের ফেরেশতা আমাকে স্বর্গ দেখালেন,নরক প্রদর্শন করালেন;তার পরে পুনরায় পবিত্র অর্মাদের সুন্দর বাসস্থানে নিয়ে গেলেন। আমি তাকে সালাম করলে তিনি বললেন,” আর্তা ভিরাপ,জাগতিক পৃথিবীতে ফিরে যাও,সবাইকে বোলো যে তুমি অর্মাদকে দেখেছ,যে অর্মাদ সর্বশক্তিমান ও নীতিবান।””
মুসলিম কাহিনীতে আমরা “সিরাত” বা রাস্তা’র কথা জানি,যা কখনও কখনও ধর্মের সঠিক পন্থা বোঝাতে ব্যবহার হলেও সাধারনভাবে বেহেশত ও দোজকের মধ্যের একটি সেতুকে বোঝায়। সেতুটিকে বলা হয়েছে ‘চুলের থেকেও সরু কিন্তু তরোয়াল থেকেও তীক্ষ্ণ’ এবং দৃইধারে কাঁটা গাছ দ্বারা পরিবৃত। ধার্মিকেরা এটি বিদ্যূতের বেগে পার হয়ে যেতে পারবেন,কিন্তু অধার্মিকেরা তাদের পা পিছলে দোজকের আগুনে পড়বেন।
এই ধারণাটিও অবশ্যই জরাথ্রুষ্টদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর পরে,মানুষের আত্মাকে রিকুইটার ,চিনভাট পেরেটু (Requiter,Chinvat Peretu) অতিক্রম করে যেতে হবে যা অধার্মিকদের জন্য ছুরির থেকেও ধারালো হবে ও পার হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
ভারতীয় ও পারসীয় ধর্মের মধ্যে অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়,যেহেতু ভারতীয়দের পূর্বপুরুষরা পারসীয়দের পূর্বপুরুষদের সাথে মিলে একই গোত্র ‘ইন্দো ইরানীয়ান’ গঠন করেছিল,যারা আবার আরও বড় গোত্র ‘ইন্দো ইউরোপিয়ান’ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তাই,স্বর্গ ও নরকের মধ্যের সেতু সম্পর্কে দুই সভ্যতাতেই মিল খুজেঁ পাওয়া অবাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে যজুর্বেদে এরকম সেতুর কথা বলা আছে। তাহলে,মুসলিম বেহেশতের বর্ণনা ইরানীয়ান ও ভারতীয় সভ্যতার কাছ থেকে পাওয়া বলা যায়। জরাথ্রুষ্টবাদের গ্রন্থ, Hadhoxt Nask, মৃত্যুর পরে আত্মার পরিণতি নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেয়। সৎ ব্যক্তির আত্মা মৃত্যুর পরবর্তী তিন রাত মৃতদেহের নিকটে থাকবে,তারপরে আত্মা অতি সুন্দর একটি পঞ্চদশী কুমারীর দেখা পাবে,যে তাকে নিয়ে স্বর্গের দিকে যাত্রা করবে। এই দর্শন হিন্দু দর্শনের ‘অপ্সরা’দের অনুরুপ,যারা ‘ ইন্দ্রের রাজ্যের অতি সুন্দরী চির যৌবনা কুমারী’ । তারা ইন্দ্রের রাজসভার নর্তকী,কিন্তু মৃতদের আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্বও পালন করে। যারা ধর্মযুদ্ধে মারা যায় তাদের সেবার জন্য স্বর্গে অপ্সরারা নিয়োজিত থাকে।
সুতরাং,স্বর্গ সম্পর্কিত হিন্দু দর্শন অনেকাংশে মুসলিমদের ধারণার অনুরুপ,যেখানে (মুসলিম দর্শনে) বেহেশতের রগরগে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে লোভনীয় হুর ও কুমারীদের নিয়ে,যা খ্রিষ্টান পাদ্রিদের বিদ্রুপের শিকার হয়েছে। এই কুমারীরা যুদ্ধে ‘শহীদ’ মুসলিম যোদ্ধাদের মনোরঞ্জন করার দায়িত্বও পালন করবে। কোরানে বেহেশতের বর্ণনায় ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ নিশ্চিতভাবেই পারসীয়ান উদ্ভুত: ‘ইবরিক'(ibriq) যার অর্থ পানপাত্র ; ‘আরায়িক'(araik) যার অর্থ পালংক।
জেফরী(Jeffery) এই ব্যাপারে বলেন,””হুর” শব্দটি শব্দগতভাবে সাদা জিনিস বোঝায়,যা শ্বেতচামড়ার কুমারী বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে। কথাটি উত্তর আরবীয়দের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছ থেকে,এবং পরে মুহম্মদ ইরানীয়ান প্রভাবে এই শব্দটিকে বেহেস্তের অপ্সরায় রুপ দিয়েছেন।
একটি ‘পাহলভী’ গ্রন্থে স্বর্গের বর্ণনায় বলা হয়েছে,বাগানে সর্বত্র ঝরনা প্রবাহিত,যেখানে সব ধরনের ফুল ও গাছ আছে। একই কথা আমরা কোরানেও পাই,(সুরা ৫৬.১২-৩৯;৭৬.১২-২২;১০.১০;৫৫.৫০) :
“আল্লাহকে যারা ভয় করে,তাদের জন্য দুটি বাগান রয়েছে………ছায়াময় বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত…..প্রতিটাতেই ঝরনা প্রবাহমান……..প্রতিটাতেই সকল প্রকার ফল জোড়ায় জোড়ায় বিরাজমান।”
‘পবিত্র মানুষ’ সম্পর্কিত ধারণায় জরাষ্ট্রায়ান ও ইসলাম,বিশেষত সুফী ইসলামে প্রচুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। উভয় ধর্মমতই উপাসনার পেছনে একটা অভিপ্রায় থাকাকে সমর্থন করে। উভয় মতই কিছু “সাধারন” কুসংস্কারে বিশ্বাসী: যেমন ‘৩৩’ সংখ্যাটি দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। পার্সীরা বিশ্বাস করত ৩৩ ফেরেশতা মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যায়,অপরদিকে ইসলামে আমরা পাই ৩৩ তাসবি,৩৩ তাহমিদ,৩৩ তাকবীর ইত্যাদি।

শয়তান,জ্বীন ও অন্যান্য রহস্যময় চরিত্রঃ

পূর্বে উল্লেখিত সমস্ত আধিভৌতিক উদাহরনগুলো দেখেও যে অষ্টাদশ শতকের চিন্তাবিদরা ইসলামকে কিভাবে একটি যুক্তিবাদী ধর্মের মর্যাদা দিয়েছিলেন,তা ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়। তারা যদি ইসলামের গভীরে ঢুকে এর জ্বীন,শয়তান ও অশুভ শক্তি সম্পর্কিত ধারণাসমুহের সাথে পরিচিত হতেন,তাহলে তারা নিজেদের সারল্যের বোকামীতে লজ্জিত হতেন নিশ্চিত।
ফেরেশতা ও শয়তান এর ধারনা পার্সীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ( কোরানের শব্দ “ইফরিত” (Ifrit) ,যার অর্থ শয়তান,একটি পাহলভী উদ্ভুত শব্দ)। এই ধারনা সত্যি ধরলে এই আত্মীকরন মোহাম্মদের বহু আগে ঘটেছে। আরব পৌত্তলিকরা একটি রহস্যময় প্রাণীর অস্তিত্ব মানত যা ‘সবখানে বর্তমান কিন্তু কোনখানেই স্পষ্টভাবে বোঝার অতীত’,যাকে আরবরা ‘জ্বিন’ (Jinn বা Djinn) বলত। জ্বিন শব্দের প্রকৃত অর্থ খুব সম্ভবত গুপ্ত রহস্য বা অন্ধকার। জ্বীনের ধারনাটি সম্ভবত প্রকৃতির অবশীভুত ভৌতিক দিকটি ব্যাখ্যা করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। পৌত্তলিক আরবেরা এটিকে প্রধানত ভয়ের চোখে দেখত; ইসলামের অগ্রগতির সাথে সাথে তাদের দেখাও পাওয়া যেতে লাগল আর তাদের চরিত্রের উপকারী দিকটিও উন্মোচিত হল।
পৌত্তলিক আরবদের চোখে জ্বীন ছিল অদৃশ্য,কিন্তু নানারকম রুপধারনক্ষম,যেমন সাপ,গিরগিটি ও কাঁকড়াবিছে। যদি জ্বীন কোনও ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে,তাহলে হয় তাকে পাগলে পরিণত করে অথবা তার চিন্তাশক্তি দখল করে নেয়। এইজাতীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা মুহম্মদ এই আধিভৌতিক চরিত্রে বিশ্বাস চালু রাখলেন,” প্রকৃতপক্ষে নবী মোহাম্মদ পৌত্তলিক দেবদেবীদের ‘শয়তানে’র শ্রেনীভুক্ত করেছিলেন (কোরান (৩৭:১৫৮)।এই কারনেই এই আদিম কুসংস্কারটি শুধুমাত্র আরবেই সীমাবদ্ধ থাকলো না,তা সমস্ত ইসলামী বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এবং অন্যান্য জায়গার ভৌতিকতার ব্যাখ্যা হিসেবেও জ্বীন,শয়তানকে ব্যবহার করা হতে লাগল। ”
প্রফেসর ম্যাকডোনাল্ড (Macdonald) দেখিয়েছেন কিভাবে মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি হাসান-ইবনে থাবিত প্রথমে একটি মহিলা জ্বিনের প্রভাবে কবিতা লিখেছিলেন,
” সে (মহিলা জ্বীন) তার (হাসান-ইবনে-থাবিত) সাথে মদিনার এক রাস্তায় মিলিত হল,তার উপরে উঠে বসল,তাকে চেপে ধরে কবিতার তিনটি লাইন বলতে বাধ্য করলো। তারপরে সে একজন কবি হয়ে গেল, এবং তার কবিতাগুলি সরাসরি জ্বীনদের কাছ থেকে আসত। সে নিজেকে “জ্বীনদের সহোদর” বলত ,যারা তাকে ছন্দোবদ্ধ শব্দচয়ন করে দিত,এবং বলত কিভাবে লাইনগুলি বেহেশত থেকে তার কাছে প্রেরিত হচ্ছে।…..মজার ব্যাপার হচ্ছে,তার লেখার ভাবধারা ‘কোরানের’ ভাবের সাথে মিলে যেত,যা কিনা বেহেস্ত থেকে প্রেরিত।”
ম্যাকডোনাল্ড আবারও হাসান-ইবনে-থাবিতের কাহিনীর সাথে মুহম্মদের নব্যুওয়াতপ্রাপ্তির ঘটনার মিল নির্দেশ করে বলেন,

” হাসানের যেমন মহিলা জ্বীন কর্তৃক ভুপাতিত হয়ে কবিতার লাইন হৃদয়ে প্রবিষ্ট হয়েছিল,এবং মুহম্মদের নব্যুওয়াত প্রাপ্তির ঘটনাও জিব্রাইল কর্তৃক হৃদয়ে প্রবিষ্ট করানোর কথা বলে। মিল এখানেই শেষ নয়। জিব্রাইল মুহম্মদের সাথী হিসেবে ওহী পৌছে দিতেন,যেমন জ্বিনি (মহিলা জ্বিন) কবিকে সঙ্গ দিত। উভয়ের ক্ষেত্রে একই শব্দ ‘নাফাথা’ (Nafatha) ব্যবহৃত হয়,যার অর্থ বসিয়ে দেওয়া(Emboss) ,জ্বিনি ও জিব্রাইল উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে তথ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে।”

মুহম্মদের নিজের জ্বীনের ধারনা কোরানে পাওয়া যায়,যেখানে জ্বীন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে অনেক আয়াত পাওয়া যায়: ৭২ নম্বর সুরা
,যাকে ‘সুরা জ্বিন’ বলা হয়েছে,এছাড়া ৬:১০০ তে যেখানে মক্কানদের তিরস্কার করা হয়েছে জ্বিনদের আল্লার সাথী ভাবার কারনে,৬:১২৮ যেখানে তাদের প্রতি মক্কানদের উৎসর্গ প্র্র্রদানের কথা বলা হয়েছে, ৩৭:১৫৮ যেখানে মক্কানদেরকে নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের সাথে আল্লার সম্পর্কের বিষয়ে;৫৫:১৪ তে যেখানে বলা হয়েছে আল্লা তাদেরকে ধোঁয়াহীন আগুন থেকে তৈরী করেছেন। জ্বীনসম্পর্কিত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রচুর সাহিত্য গড়ে উঠেছে। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে এই কুসংস্কারটি কোরান অনুমোদিত,এবং ধর্মীয়ভাবে ইসলামে জ্বিন পূর্ণস্বীকৃত এবং ম্যাকডোনাল্ডের ভাষ্যানুযায়ী তাদের নিয়ে পরিপূর্ন বিশ্লেষন করা হয়েছে,
” ইসলামী আইনে জ্বীনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে,এবং তাদের সাথে মানুষের বিবাহ ও সম্পত্তির সম্পর্কও পর্যালোচিত হয়েছে। ”
ইবনে সিনা’ই সম্ভবত প্রথম ইসলামী চিন্তাবিদ যিনি জ্বীনদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।
কোরান মুসলিম বিশ্বে “শয়তানের চোখ” নামক আর একটি কুসংস্কার প্রচলনে ভূমিকা রেখেছে,যাকে দুর্ভাগ্যের কারণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে (সুরা ১১৩)। মুহম্মদ নিজেও এই শয়তানের চোখকে স্বীকার করে গেছেন। আসমা বিনতে উমাইস (Asma bint Umais) থেকে বর্ণিত

,” আমি বললাম,ও নবী,জাফরের পরিবার বিষাক্ত শয়তানের চোখের কবলে পড়েছে,আমি কি কোরান তেলাওয়াত (আবৃত্তি) করে তা দুর করতে পারি?” নবীজি বললেন,” নিশ্চয়ই পার, পৃথিবীতে ভাগ্যকে পরিবর্তন করার মত ক্ষমতা একমাত্র শয়তানের চোখের আছে।”

(ইবনে ওয়ারাকের “Why I am not a Muslim” থেকে অনুবাদকৃত)