বেশ কিছুদিন অভিজিৎ রায়ের কথা খুব মনে পড়ে। তার কথা স্মরণ হলে নিজের অজান্তেই দুটি চোখ ভিজে ওঠে। আমি সাধারণত কারও জন্য কাঁদি না। বন্যায় কিছুদিন পূর্বে নিজের ঘর ডুবে যাওয়ার কথা শুনেও আমি শান্ত ও স্থির ছিলাম। মানুষের পক্ষ থেকে হাজার হাজার অপমান ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েও আমি মিটমিট করে হাসি। যেদিন আমাকে নাস্তিকতার অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়া করেছিল, সেদিনও আমার চোখে পানি ছিল না। কিন্তু এ মানুষটার জন্য আমি কারণে অকারণে কেঁদেছি। তার জন্য আমার ভেতর একটা সমুদ্র রিজার্ভ করা আছে। এটা কখনো শেষ হওয়ার নয়। আজ অভিজিৎ রায়ের জন্মদিন ছিল। কিন্তু আমার মনে ছিল না। কারণ বেশ কিছুদিন যাবত আমার দিন বা তারিখের হিসেব নেই। আমি উদাসীন ও নির্লিপ্ত। গতকাল আকস্মিক মনে হয়েছিল, অভিজিৎ রায়ের জন্মদিন কখন! অনেকদিন হয়ে গেলো তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই না। মনে হয় তার জন্মদিন খুব কাছাকাছি। আমার অবচেতন মনের সন্দেহই সঠিক ছিল। হ্যাঁ আজ, আজই অভিজিৎ রায়ের জন্মদিন। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর আমার একমাত্র প্রশ্ন ছিল, কেন তোমরা এ কাজটি করলে? কেন আমাকে আমার শিক্ষক থেকে বিচ্ছিন্ন করলে? আমি তো তাকে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেললাম! অসীম জ্ঞানের নেশা জাগিয়ে এ মানুষটি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো! আমার পাগল পাগল লাগছিল! উফফ! তার মতো মানুষ আমি আর কোথায় পাব! তার মতো করে কে মহাবিশ্ব ও জীবনের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দেবে! বিশ্বাস করুন, দেশ বিদেশের আমি প্রায় ৩০,০০০ লেখকের বই পড়েছি। কিন্তু অভিদার লেখার নির্যাস আমি কারও মাঝে পাইনি! বিশ্বাস করুন, পাইনি। আমি এখনো অভিজিৎ রায়কে খুঁজে বেড়াই। আমি প্রচুর বই পড়ি, প্রচুর। প্রচুর লেখালেখি করি, তার মতো করে লিখতে চাই। কিন্তু কেন যেন হয় না। তার ফ্রিকোয়েন্সিই ছিল আমার কাছে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তার সময়টাই ছিল অনন্য। তার ব্যক্তিত্বটাই ছিল জাদুকরী। হ্যাঁ, আমি কিছুটা বায়াসড হয়তো, কিছুটা আবেগগ্রস্ত এবং নেশাগ্রস্ত। এ আবেগ আমার অনেক বড় সম্পদ।
আমি জানি না, তার মতো দার্শনিক আবার কখন জন্ম নেবে। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা ভাবলে খুব মন খারাপ হয়। অভিমান হয়! আজ অভিজিৎ রায়ের মতো চিন্তার ডায়নোসররা হারিয়ে গেছে বলে, এখানে ইঁদুর এবং বেড়ালরা ডমিন্যান্ট হয়ে আছে। নিজের ভেতর নিজেই পুড়ে যাই। মনে মনে প্রশ্ন করি, দাদা! আপনি কোথায়? আজকের এ সংকটকজনক সময় আপনাকে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল! আপনার চিন্তা, জ্ঞান, ভালোবাসা ও পরামর্শ খুব খুব দরকার ছিল। আপনার তৃষ্ণা আমি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারি না। অন্ধকার লাগে!
আপনার কলমের কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগে! খুব অসহায়!
শুভ জন্মদিন!🥹🖤