সারমর্ম: হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আইনসঙ্গত হয় নাই , কিন্তু তার কথা যারা রেকর্ড করেছে ও ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সেই একই অভিযোগ আনা যায়।

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে বাংলাদশ দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৫(এ) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি উপাসনার স্থান বা বস্তু ধ্বংস করে বা ভাঙ্গে কোন ধর্মকে অপমান করার উদ্দেশ্য নিয়ে, তাহলে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা দুইটাই দেয়া যেতে পারে।

295. Whoever destroys, damages or defiles any place of worship, or any object held sacred by any class of persons with the intention of thereby insulting the religion of any class of persons or with the knowledge that any class of persons is likely to consider such destruction, damage or defilement as an insult to their religion, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-11/section-3115.html

এখানে পরিষ্কার, হৃদয় মণ্ডল উপাসনার স্থান বা বস্তু ভাঙ্গেন নাই। সুতরাং তার বিরুদ্ধে ২৯৫ ধারায় মামলা করা যায় না।

২৯৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি চিন্তাভাবনা করে, আগে থেকে প্ল্যান করে (deliberate) এবং বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে (malicious) অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা দুইটাই দেয়া যেতে পারে।

295A. Whoever, with deliberate and malicious intention of outraging the religious feelings of any class of the citizens of Bangladesh, by words, either spoken or written, or by visible representations insults or attempts to insult the religion or the religious beliefs of that class, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-11/section-3116.html

হৃদয় মণ্ডল কী নিজে থেকে ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন? অবশ্যই না–রেকর্ডিং থেকে সেটা পরিষ্কার। সুতরাং সেটা “deliberate” ছিল না। তার কি কোন বিদ্বেষপূর্ণ (malicious) উদ্দেশ্য ছিল? সেটা বোঝা কঠিন। কিন্তু খেয়াল করতে হবে, আইনে আছে, deliberate AND malicious, অর্থাৎ দুইটাই হতে হবে এই AND এর জন্য। নয়তো আইনে লেখা থাকতো “অথবা” (OR)। যেহেতু AND, সুতরাং ২৯৫(এ)-ও এখানে প্রযোজ্য নয়।

তাহলে হৃদয় মণ্ডল এর বিরুদ্ধে ২৯৫(এ) ধারায় মামলা কেন? তিনি গ্রেফতার কেন? তার জামিন হয় নাই কেন?

এর সাথে আরো বড় একটা কথা আছে। বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) নির্দেশনা দেয়, কীভাবে, কখন দণ্ডবিধির প্রয়োগ করা যাবে। এই কার্যবিধির ১৯৬ ধারা খুব পরিষ্কার ভাষায় বলছে, ২৯৫(এ) ধারায় কারুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে গেলে সরকার বা যথাযথ কর্মকর্তার আদেশ বা অনুমতি ছাড়া কোন আদলত এই ২৯৫(এ) ধারার কোন চার্জ আমলেই নিবেন না।
196. No Court shall take cognizance of any offence punishable under (ছোট রাখার জন্য বাদ দিয়েছি) section 295A unless upon complaint made by order of, or under authority from, the 1[Government, or some officer empowered in this behalf by the Government].

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-75/section-21022.html

পুলিশ এই “সরকার বা যথাযথ কর্মকর্তা”-র তালিকায় নেই।

তাহলে পুলিশ এই ধরনের মামলা কেন করলো? কার ইঙ্গিতে? স্কুলের আরেক বিজ্ঞান শিক্ষকের নাম আসছে এখানে। আমার বিশ্বাস হয় না। আশপাশের রাজনৈতিক পেশীশক্তির ইশারা ও ইন্ধন না থাকলে পুলিশ পরিষ্কারভাবে আইন ভাঙ্গার সাহস দেখাতো না বলে আমার বিশ্বাস।

এবং এখন আমার পালটা প্রশ্ন–যারা এই রেকর্ডিং করেছে, তারা ক্লাসে ফোন নেয়া নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্তেও ফোন নিয়েছে। এটা “deliberate”, আগে থেকে প্ল্যান করা। তার পর তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশ্ন করেছে। তারপর আরেক দল লোক সেটা ছড়িয়েছে, কী হবে সেটা জেনেই। অতএব এটা malicious। সুতরাং তাদের কাজ deliberate এবং malicious। তারা গ্রেফতার হয় নাই কেন?

আশাকরি বাংলাদেশের বড় আইনজীবীরা এটা নিয়ে লড়বেন। তাদের প্রথম কাজ হবে হৃদয় মণ্ডলকে মুক্ত করে আনা, তার পরে এই deliberate এবং maliciousভাবে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে, তাদের যেন ২৯৫(এ) ধারায় বিচার হয়, সেটার ওপর নজর রাখা।