ঈশ্বর একটি ভাইরাস। যার কাজ সংক্রমণ, অন্য ধর্ম ও মতাদর্শের বিপক্ষে এন্টিবডি তৈরি। প্রথমে এ ভাইরাস একজন ব্যক্তির মস্তিষ্ককে সংক্রমণ করে, আর তারপর সে অন্য ধর্মের বিপক্ষে ডিফেন্স তৈরি করে। ব্যক্তির বডি ও ব্রেন ফাংশনকে নিজের দখলে নিয়ে যায় এবং তাকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালনা করে। সে অন্য মানুষের মস্তিষ্কে প্রতিলিপি তৈরি করতে চায় ধর্ম প্রচার করার মাধ্যমে।
অভিজিৎ রায়কে কেনো হত্যা করা হলো? কি এমন উপযোগীতা ছিল তাকে হত্যা করার মাঝে? ডারউইনের বিবর্তন অনুসারে আমাদের টিকে থাকার উদ্দেশ্য প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি। কিন্তু টিকে থাকার সুস্পষ্ট কোন উপযোগিতা ব্যতীত যখন আপনি কারো মধ্যে কোনো বিশেষ আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন আপনি বুঝতে পারবেন এটি প্যারাসাইটিক! কিছুকিছু পিঁপড়া আছে তারা বারবার ঘাসের ডগায় উঠানামা করে, তারা বুঝতে পারেনা যে তারা কেনো এ অযৌক্তিক আচরণ করছে। এমন নয় যে ঘাসের ডগায় উঠে সে দূরবিন দিয়ে তার টেরিটোরি পর্যবেক্ষণ করছে। এমনও নয় যে সে সম্ভাব্য যৌনসঙ্গী অনুসন্ধান করছে। তার এ বিভ্রান্তির পেছনে টিকে থাকার সাথে সম্পৃক্ত কোনো সুস্পষ্ট উপযোগ নেই। সে মূলত এমন করছে কারণ তাকে প্যারাসাইট সংক্রমিত করেছে যে জন্য সে বারবার ঘাসের ডগায় উঠে আবার নেমে যায়! একটা সময় কোনো গরু যখন সে ঘাসের ডগা ভক্ষণ করে, সে সরাসরি গরুর অন্ত্রে চলে যায় ও বংশবৃদ্ধি করে। মূলত প্যারাসাইট তার ব্রেন ফাংশন দখল করে তাকে গরুর খাদ্যে পরিণত করে নিজের বংশবৃদ্ধি করার জন্য। যেখানে বাহকের নিজের কোনো জৈবিক উপকারীতা নেই! ঠিক তেমনি ঈশ্বর ভাইরাস ধার্মিকদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে পরিচালনা করে যে জন্য তারা বিভ্রান্ত পিঁপড়ার মত বারবার মসজিদ ও মন্দিরে ছুটে যায়! আর তাদের এ আচার আচরণগুলোর ভেতর দিয়ে গড ভাইরাস অন্যদের ব্রেনে সংক্রমিত হয়।
এ কথাগুলো বলার কারণ হলো এ মহাবিশ্ব নিষ্কাম ও নিরপেক্ষ ফিজিক্সের সূত্র দ্বারা পরিচালিত কিন্তু আমাদের ব্রেন এমন একটি ধারণার প্যারাসাইট দ্বারা সংক্রমিত, যে প্যারাসাইটে সংক্রমিত হয়ে সে মহাবিশ্বের ফিজিক্যাল রিয়েলিটিকে বুঝতে চায়না! প্যারাসাইট সংক্রমিত পিঁপড়া যেমন বায়োলজিক্যাল উপকারীতা না থাকা সত্ত্বেও একটি ঘাসের মধ্যে বারবার উঠানামা করে, আমরাও ঈশ্বর প্যারাসাইটে সংক্রমিত হওয়ার পর মহাবিশ্বে ঈশ্বর নামক কোনো ফিজিক্যাল রিয়েলিটির অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও বারবার সেই ভাইরাসকেই এ মহাবিশ্বের ঈশ্বর বলে অভিহিত করি!
আর অভিজিৎ রায় আমাদের বলেছিলেন, না! কোন ভাইরাস নয়, এ মহাবিশ্ব আসলে ফিজিক্সের সূত্রের তৈরি আর এ ফিজিক্সের সূত্রগুলো এসেছে একদম শূন্য থেকে, শূন্যতা থেকে আর কোনোকিছু সিমেট্রিক্যাল হতে পারেনা, আর এইজন্য শূন্যতা অস্থিতিশীল। এ মহাবিশ্বে ফিজিক্সের সূত্রগুলো সর্বত্র একইরকম কারণ শূন্যতার কোনো ডিরেকশন নেই। এ মহাবিশ্বকে তৈরির জন্য ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে কোয়ান্টাম শূন্যতা থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্ভব। প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হয়ে চলছে এমন অজস্র মহাবিশ্ব!
হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ যে ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত ছিল, অভিজিৎ শুধু সেই ভাইরাসটির স্বরুপ সবার সম্মুখে উন্মোচন করে দিয়েছেন। তিনি এদেশের মানুষকে চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেই পাগলা গারদের পাগলদের গণ-আক্রমণের শিকার হয়েছেন! মানুষের ভুল ভাঙানোর অপরাধে, মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ্য করার অপরাধে এ ভাইরাস আক্রান্ত অসুস্থ্য সমাজ ব্যবস্থা তাকে হত্যা করেছে যে ভাইরাসের সাথে সুস্পষ্টতই তাদের টিকে থাকার কোনো উপযোগিতা ছিল না, এ ভাইরাসের কাছে ছিল না, মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ!
কুকুর এসেছে আজ থেকে ১, ৩০, ০০০ বছর পূর্বের বাদামী নেকড়ে থেকে৷ নেকড়েরা ছিল সংঘবদ্ধ প্রাণী। দলবদ্ধভাবে শিকার ও টিকে থাকার উদ্দেশ্যে তাদের ব্রেন লিডারকে অন্ধভাবে অনুকরণ করার জন্য বিবর্তিত হয়েছিল। ১৪,২০০ বছর পূর্বে মানুষ আর কুকুর একসাথে বসবাস করা শুরু করে। কিন্তু কুকুরের বাচ্চার ব্রেন তখনও কে মানুষ আর কে কুকুর এ পার্থক্য করার জন্য বিবর্তিত হয়নি । এমনকি আজও অনেক বড় বড় পোষা কুকুর মানুষকেই তাদের দলের বড় কুকুর মনে করে। আর এজন্য কুকুর মানুষের প্রতি এত বেশি অনুগত।
আসলে কুকুরের মস্তিষ্ক ১৪,২০০ বছরে নিউরাল স্ট্রাকচারগত দিক থেকে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ঠিক এ জন্য কুকুর এখন মানুষকেই তাদের দলের বড় কুকুর মনে করছে। ঠিক তেমনি আজ থেকে আনুমানিক ৪৭ হাজার বছর পূর্বে আমাদের মস্তিষ্কে গল্প বলার ক্ষমতা জন্ম হয়, আর সে গল্প থেকে আমরা ঈশ্বরের ধারণা জন্ম দেই। এর পেছনে আমাদের মস্তিষ্কের মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের একটা হাত ছিল। যে জন্য আমরা এ মহাবিশ্বকে কুকুরের বাচ্চার মতোই ফিজিক্সের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা না করে গড ভাইরাস দিয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু করি! আর অভিজিৎ রায় সেই অন্ধ কুকুরের বাচ্চাদের বলেছিলেন যে, বিবর্তনীয় সীমাবদ্ধতার কারণেই তোমাদের নিকট মনে হচ্ছে এ মহাবিশ্বে একটা বড় কুকুর বা ঈশ্বর আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে এ মহাবিশ্বে কোনো বড় কুকুরের অস্তিত্ব নেই! এ মহাবিশ্ব নিষ্কাম ও নিরপেক্ষ ফিজিক্সের সূত্র দ্বারা শাসিত, এটি কোনো বড় কুকুর দ্বারা শাসিত নয় !!এমন একটি জলজ্যান্ত সত্য প্রকাশের অপরাধে কুকুরের বাচ্চারা সবাই একত্রিত হয়ে ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে অভিজিৎ রায়কে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে!
গভীর শ্রদ্ধার সাথে আমরা আপনাকে স্মরণ করছি প্রিয় অভিজিৎ রায়, বাংলার ব্রুনো ! এ স্মরণের পেছনে কোনো ধর্ম বা স্প্রিচুয়াল অনুপ্রেরণা নেই! হাতি থেকে শুরু করে বানর সবাই তাদের প্রিয়জনের জন্য শোক পালন করে। আর আমিও একই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে আমার প্রিয় লেখকের জন্য আজ গভীরভাবে শোকগ্রস্ত!
সুন্দর লিখেছেন বন্ধু।
অসম্ভব মেধাদীপ্ত একটি লেখা।