ম্যানিওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিসের প্রথম প্রস্তাবক জিওনার্দো ব্রুনোকে আজকের (1600, February 17,) এ দিনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। ১৫৮৪ সালে ব্রুনো একটি বই প্রকাশ করেছিলেন যার নাম ছিল ‘Of Infinity, the Universe, and the World’ . কোনোপ্রকার টেলিস্কোপের সহযোগিতা ছাড়াই তিনি বলেছিলেন, মহাকাশে অজস্র নক্ষত্রপুঞ্জ আছে, আছে সূর্য ও গ্রহ। আমরা সূর্যকে দেখি কারণ এটি আমাদের আলো দেয় কিন্তু গ্রহগুলো অদৃশ্য থেকে যায় । অগণিত পৃথিবী তাদের সূর্যের চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে। তারা আমাদের পৃথিবী থেকে কোন অংশেই কম নয়! আজ আমরা জানি যে, রাতের আকাশ কালো কারণ এমন অজস্র গ্যালাক্সি আছে যেগুলো আমাদের থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে যে জন্য তের বিলিয়ন বছর সময়ের ভেতর সে সব গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো এসে পৌঁছাতে পারেনি , আলোর গতি সীমাবদ্ধ । ইনফ্লেশনের কারণে প্রকৃত মহাবিশ্ব আমাদের থেকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন আলোকর্ষ দূরে সরে গেছে , আমাদের এ মহাবিশ্ব রিয়েল মহাবিশ্বের তুলনায় অসীম ক্ষুদ্র একটি বিন্দু যে বিন্দু থেকে আমরা রিয়েল ইউনিভার্সকে দেখতে পাইনা! হয়তোবা অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল দূরত্বে অজস্র বিশ্ব আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে, প্যারালাল ওয়ার্ল্ড। ব্রুনো সে সময় ইনফ্লেশন সম্পর্কে জানতোনা, তাঁর কাছে ছিল না হাবল টেলিস্কোপ। এ মহান বিজ্ঞানী তার অসাধারণ কল্পনাশক্তি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের এই গ্রহ মহাবিশ্বের একমাত্র গ্রহ নয়, আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্র বিন্দু নই , আমাদের গ্রহের মত এমন আরো অজস্র এক্সপ্লানেট মহাকাশে লুকিয়ে আছে, গ্রহদের আলো নেই তাই আমরা তাদের দেখতে পারিনা, তিনি কল্পনা করেছিলেন ম্যানিওয়ার্ল্ডের কথা, এ অসীম মহাবিশ্বে এমন অজস্র এক্সপ্লানেট আছে যেখানে থাকতে পারে আমাদের মতোই প্রাণ, আমাদের গ্রহ সেই অগণিত গ্রহদের নিকট আসলে বিশেষ কিছু নয়!
একমাত্র অজস্র জগতের অস্তিত্বের সাক্ষাৎ দেবার অপরাধে ব্রুনোকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল কারণ অনন্ত সংখ্যক জগতে অনন্ত সংখ্যক ঈশ্বর ও অনন্ত সংখ্যক ঈশ্বর দূত যা ক্যাথোলিক চার্চ মেনে নিতে পারেনি। তারা মেনে নিতে পারেনি যে, আমরা ছাড়াও এখানে অন্য কোনো জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। ম্যানিওয়ার্ল্ডকে কল্পনা করতে সেদিন চার্চের পিশাচদের কষ্ট হয়েছিল ! অসীমের সাক্ষাৎ দেবার অপরাধে কাউকে এভাবে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করাটা কত বড় নির্মম ও অমানবিক আচরণ হতে পারে সেটা আমরা আজ কল্পনা করলেও শিউরে উঠি । তাঁর অন্যায় ছিল এই যে, তিনি এক্সোপ্লানেটের কথা বলেছিলেন, তিনি অজস্র জগতের কথা বলেছিলেন , তিনি বিকল্প বুদ্ধিমত্তার কথা বলেছিলেন!
অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ম্যানিওয়ার্ল্ড! তিনি পৃথিবীকেন্দ্রীক মতবাদ সমর্থন না করে, সূর্যকেন্দ্রীক কোপারনিকান ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন, তার প্রেম ছিল মহাকাশের সাথে আর এটাই ছিল ঈশ্বর ও ক্যাথোলিক চার্চের সাথে তার একমাত্র বিরোধ! ব্রুনো বলেছিলেন, মেজরিটি ভাগ মানুষের বিশ্বাসে কখনো সত্য পরিবর্তন হয়না। তার সমস্ত মুখ ও চোয়াল লোহা দণ্ড দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, লোহার স্পাইক দিয়ে তার জিহবা দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল! উলঙ্গ ও রক্তাত্ব অবস্থায় তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল জনসম্মুখে! ভিন্ন জগতের অস্তিত্বের কল্পনার জন্য, এলিয়েন লাইফের সম্ভাবনা প্রকাশের জন্য কেনো ব্রুনোকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল তা আজও আমাদের যৌক্তিক মনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!
ব্রুনোর শেষ উক্তি ছিল, যিনি আমার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন তিনি হয়ত আমার থেকে অনেক বেশি ভীতসন্ত্রস্ত!
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে ২০১৫ সালের ২৬’শে ফেব্রুয়ারী প্রায় ৪১৫ বছর পর সেই একই ইতিহাসের আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটে । বাংলার এক ব্রুনোকে ঠিক একইভাবে জীবন্ত কুপিয়ে জনসম্মুখে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল তাঁর রক্তাত্ব,অসহায় ও বিধ্বস্ত স্ত্রী রাফিদা বন্যার চেতনার ভেতর!! সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতোই সেদিন তারা ছিলেন সম্পূর্ণ একা! ইতিহাস সাক্ষী! শুধুমাত্র অনন্ত মহাবিশ্বের সংবাদ প্রচারের অপরাধে সেদিন তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়! আর কোনো অন্যায় ছিল না তাঁর! তিনি শুধু আমাদের, ঈশ্বরবিহীন এক মহাবিশ্বের সন্ধান দিয়েছিলেন, দিয়েছিলেন শূন্য থেকে মহাবিশ্বের সন্ধান…
Leave A Comment