লিখেছেন: শিবব্রত গুহ
বিশ্ব সাহিত্যের এক অন্যতম প্রধান সাহিত্যের নাম হল ইংরেজি সাহিত্য। এই ইংরেজি সাহিত্যকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন নানা কবি – সাহিত্যিকেরা। তাঁদের মধ্যে একজনের কথা আমি আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাঁর নাম উইলিয়াম শেক্সপীয়ার, একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব।তিনি ইংরেজি ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে সারা বিশ্বে সন্মানিত হয়ে থাকেন আজও। তিনি বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকারও বটে। তাঁকে ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি সন্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁর নাটক প্রতিটি প্রধান জীবিত ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের এলিজাবেথিয়ান ও জ্যাকোবিয়ান যুগের একজন সার্থক কবি ও সাহিত্যিক।
১৫৬৪ সালের ২৩শে এপ্রিল, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শেক্সপীয়ার। তাঁর বাবা দস্তানা তৈরির কাজ করতেন। তাঁর মা ছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে, ভূসম্পত্তির মালিক। আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৫৯২ সালে, তিনি নাট্যকার হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। সে সময়, লন্ডনের নাট্যকার রবার্ট গ্রিন, এক নিবন্ধে, শেক্সপীয়ারের নাটকগুলোর খুব প্রশংসা করেছিলেন।
১৫৯৭ সালের মধ্যে তিনি নাটক লিখেছিলেন ১৫ টি। তাঁর প্রশংসা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। ১৫৯৯ সালে, তিনি তাঁর ব্যবসায়ী অংশীদারকে নিয়ে
টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে বিখ্যাত “গ্লোভ থিয়েটার” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর লেখা নাটকগুলোর অধিকাংশ এই থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল। তিনি তাঁর রচনাগুলোর অধিকাংশ লিখেছেন ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যে।
তাঁর প্রথম দিকের নাটকগুলো ছিল কমেডি, ঐতিহাসিক ও বিয়োগান্তক। হেমলেট, ওথেলো, কিং লেয়ার, ম্যাকবেথ ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত ট্রাজেডি গুলোর মধ্যে অন্যতম। যেগুলো শুধু ইংরেজি সাহিত্য নয়, বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচিত হয় এখনো। তিনি হলেন একজন কালজয়ী কবি, সাহিত্যিক ও নাট্যকার। তাঁর রচনা গুলো আজো খুব খুব জনপ্রিয় সারা পৃথিবী জুড়ে।
১৬২৩ সালে শেক্সপীয়ারের নাটকগুলোকে ভাগ করা হয়েছিল তিনটি শ্রেণীতে। যথা –
১. মিলনান্তক বা কমেডি।
২. ঐতিহাসিক বা হিস্টোরিকাল।
৩. বিয়োগান্ত বা ট্রাজেডি।
তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন শেক্সপিরিয়ান সনেটের প্রবর্তক। তাঁর সনেটগুলি সত্যিই অসাধারণ। যার জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বের যেখানেই আজও ইংরেজি সাহিত্যের চর্চা হয়, সেখানে সিংহভাগ জুড়ে থাকে শেক্সপীয়ার ও তাঁর সৃষ্টিকর্ম। তাঁকে বাদ দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যের কথা ভাবাই যায় না। তাঁকে ইংরেজি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ বললেও অত্যুক্তি হয় না।
শেক্সপীয়ারের একটি সুন্দর সনেটের উদাহরণ এখানে দিলাম:
নিবিড় মিলনের মাঝে দুটি মন যদি এক হয় তবে
তার মাঝে কখনই কেন বাধা স্বীকার করবে না,
যে প্রেম প্রেমই না, যে প্রেম ক্ষণেক্ষণে মত বদলায়
অথবা নূতন প্রভুর কাছে নব অঙ্গীকার করে চলে।
যে প্রেম প্রকৃত তা চিরদিন লক্ষ্যে চিরস্থির থাকে।
ঝড়ের আঘাতে সে কোনদিন’ই কম্পিত হয় না।
অচঞ্চল দূরের নক্ষত্র যেন কখনই কক্ষচুত হয় না
যে মহত্ত্ব অনস্বীকার্য যদিও তার যোগ্যতা অজ্ঞাত।
কালের করাল হাতে এই প্রেম কখনই ক্রীড়নক নয়,
অথচ কাল-গ্রাসে ক্ষয় হয় সুন্দর কত গন্ড আর ওষ্ঠাধর।
কালের গতির ঘায়ে এই প্রেম কখনই নিরর্থক হয় না।
সমস্ত ধ্বংসের মাঝে এই প্রেম রয়ে যায় অজর অমর।
এ যদি ভুল বলে প্রমাণিত হয়, মিথ্যা হয় তবে আমার সব কবিতা
মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে, আমার প্রেম মিথ্যা বলে বিদিত হবে।
এবার শেক্সপীয়ারের কিছু বাণীর এখন উল্লেখ করছি:
১. আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না।
২. মনের সৌন্দর্যকে যে অগ্রাধিকার দেয় সংসারে সেই জয়লাভ করে।
৩. ভীরুরা মরার আগে বারে বারে মরে। সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে।
৪. কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চাও? তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখো।
৫. সংসারে কারো ওপর ভরসা করো না, নিজের হাত এবং পায়ের ওপর ভরসা করতে শেখো।
চরিত্র সৃষ্টিতে শেক্সপীয়ারের দক্ষতা ছিল অপরিসীম। তাঁর এক একটি চরিত্র হল তাঁর সৃষ্টির মতোই অমর। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো এক
এক বৈশিষ্ট্য সমন্বিত। তাই, তো তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো আজো এত জনপ্রিয়।
যেমন – কিং লীয়রের কনিষ্ঠ কন্যা কর্ডেলিয়া, ওথেলো পত্নী ডেসডিমোনা, হ্যামলেট নাটকের বিপন্না ওফেলিয়া, রোমিও, জুলিয়েট প্রভৃতি। তাঁর সৃষ্টি সম্ভার দেখলে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। সাহিত্যকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে, সেযুগের এক পরিষ্কার সমাজ চিত্র প্রস্ফুটিত হয় আমাদের সামনে।
যাঁর তুলনা তিনি নিজেই, তিনিই হলেন উইলিয়াম শেক্সপীয়ার, অবশ্যই উইলিয়াম শেক্সপীয়ার।
Leave A Comment