ব্যাকরণে নাস্তিক শব্দটি নাস্তি দিয়ে শুরু হলেও নাস্তিক কোন নেতিবাচক শব্দ নয়। নাস্তিকতা মানে হল মানুষের মাথার উপর থেকে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির ক্যামেরার মত একজন স্বৈরশাসকের অস্তিত্ব অস্বীকার করা, তার সর্বগ্রাসী অভিভাবকত্বকে চ্যালেঞ্জ করা, সেই দণ্ডধারী ঈশ্বরের অনুসারীদের বানানো কুসংস্কার, ক্ষতিকর প্রথা, পারস্পরিক হিংসার বাণী ও লোভের লালাকে খারিজ করে দেয়া। ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে নিজের উপলব্ধি নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম এরকম —-
তিনি সর্বত্র বিরাজমান বলেই লিখিত জ্যোতির্বলয় ছাড়া কোন অস্তিত্ব নেই।
তিনি সব কিছু দেখেন তাই পক্ষপাত দুষ্ট, ক্ষেত্র বিশেষে অন্ধ
তিনি অসীম দয়ালু, আমাদের শান্তির জন্যে তৈরি করেছেন নরক,
তিনি পরম ক্ষমাশীল, আবার অভিশাপে জর্জরিত করেন,
তিনি সব কিছু শুনতে পান, আর্তের বেদনা কানে পৌঁছায় না,
আমাকে অনাহারে রেখে অন্ন দাতা উপাধি পেয়েছেন তিনি,
তিনি সব কিছু জানেন এবং বোঝেন,
তাই আমার সাথে এক রৈখিক যোগাযোগ।
তিনি সর্ব শক্তিমান, পছন্দ করেন অধীনের স্তব,
তিনি সর্বজ্ঞ, কিন্তু চিনতে পারেন না আমাকে
তিনি সর্ব নিয়ন্তা, অথচ কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই।
ত্রিকাল দর্শী হলেও তাঁর কোন দর্শন নেই।
তিনি রক্ষাকর্তা, আর বোমার আঘাতে গুড়ো হয় আমার হাড় আর ঘর
তিনি আমার কাণ্ডারি,
আবার তিনিই তীরে এনে আমার তরী ডুবিয়ে দেন।
তিনি আমার বন্ধু,
আমার উপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে ভালবাসেন।
তিনি আমার ত্রাতা,
তাই অপৌরুষেয় পুস্তকে আমাকে ভয়ে কাঁপার পরামর্শ দেয়া হয়।
অনেকেই দাবী করেন নাস্তিক্যবাদ সম্পর্কিত আলোচনা হয়ে গেছে, এটা এখন খুব ক্লিশে বিষয়, এটা হালের ফ্যাশন, সমাজ বিরাগভাজন হবে, সংখ্যাগুরুর রোষানলে পড়তে হবে, মৃত্যুর হুমকি আছে ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে এই সংক্রান্ত পঠন, পাঠন, আলোচনাকে দমিয়ে রাখতে চায় বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চায়। তার প্রমাণ তো সেই সুদূর অতীত বর্তমানের মানুষ কম দেয় নাই, মূল্যও চুকাতে হয়েছে নিজের প্রাণের বিনিময়ে। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে এমন মতবাদ প্রকাশের কারণেও মানুষের জীবন দিতে হয়েছে, তবুও কিন্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়নি। সুতরাং বন্ধুর পথে কোনদিনই বন্ধু ছিল না। কিন্তু এই মানুষগুলো কীভাবে বিপদ সংকুল বন্ধুর পথে হাটা শুরু করলো তা আমরা কেউ জানি না, কেউ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের আলোকে উত্তরণের কথা লিখেও যাননি। কার্ল স্যাগান, রিচার্ড ডকিন্স, জোসেফ ক্যাম্পবেল বা আমাদের হুমায়ুন আজাদ যদি তাদের স্রষ্টা বিচ্যুতির কথা লিখে যেতেন তাহলে আমরা হয়ত আরও সমৃদ্ধ হতে পারতাম। আরজ আলী মাতুব্বর, বার্ট্রান্ড রাসেল বা প্রবীর ঘোষ যেমন লিখেছেন কেন তার স্রষ্টা বিশ্বাস চলে গিয়ে চৈতন্যের দিকে আলোক যাত্রার ইতিহাস।
যাইহোক মানুষের অবিশ্বাসের যাত্রা একদিন সুন্দর সকালে হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় না। এর জন্য দরকার গভীর আত্মোপলব্ধি, নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া এবং অনেক দিনের সামাজিক দ্বন্দ্ব ও দ্বৈরথের পথচলা। ছোটবেলায় যেদিন প্রথম শুনলাম ভগবানের কথা, যে তার কথা না শুনলে পাপ দেয়, সেদিন থেকেই তার উপর থেকে আমার ভক্তি উঠে গেল, দেখা দিলো সন্দেহ। অবাধ্য হলেই শাস্তি দিবে, এটা কি ঈশ্বরের যোগ্য কথা? তিনিও যদি মানুষের মতই আচরণ করেন, তাহলে তার বিশালতা কোথায়? আমি মোটামুটি ধার্মিক পরিবারেই বড় হয়েছি। বাড়িতে প্রতিদিন লক্ষ্মী নারায়ণের পুজো হতো, শালগ্রাম শিলা এবং পিতলের ঘট ছিল এবং ঘটের উপর আমের পল্লব। বাবা প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী মন্ত্র পড়ত, ধর্মীয় আলোচনা হতো, মা প্রতি সন্ধ্যায় ধূপের ধোঁয়া দিতো, তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালাত। মাঝেমধ্যে আমিও দিতাম। প্রতি শুক্রবারে মন্দিরে যেতাম গীতা পড়তে। যতদিন এলাকায় ছিলাম স্থানীয় হিন্দু মুসলমান যেকেউ মারা গেলেই আমি সেই বাড়িতে যেতাম, সাধ্যমত মৃতদেহ সৎকারের আয়োজন করে দিতাম। তখনো আমাদের এলাকায় মানুষের মাঝে ধর্মীয় বিভাজন এত প্রকট হয়ে উঠেনি। এমনকি সংশয় শুরু হওয়ার পরেও আমি এলাকার হিন্দু মৃত বাড়িতে গিয়ে গীতা পড়তাম। ঈশ্বর বা ভগবান বা এই জাতীয় সর্বশক্তিমান কেউ যে নাই এই উপলব্ধি পরিপূর্ণ হইছে শ্মশান এবং কবরস্থানে গিয়ে। পরিপূর্ণ উপলব্ধিটা ঘিলুতে স্থায়ীরূপ নিছে হিন্দুদের বর্ণান্ধতা, উঁচুনিচু বিভেদের কারণে সামাজিক মর্যাদার রকমফের আর মুসলিম বন্ধুদের মাত্রাতিরিক্ত বোকামি (যেমন ঈদের সময় গরুর গোশত খাওয়ার অফার, হিন্দু প্রেমিকা বানায়ে দেয়ার আবদার, মালাউন বলে গালি শোনা, তোদের ধর্ম তো মিথ্যে, শুধু শুধু মাটির প্রতিমা পুজো করিস কেন, তোদের তো ভারতে বাড়ি আছে ইত্যাদি আরও কত প্রশ্ন) দেখে। একটু বড় হয়ে বুঝেছি হিন্দুদের বর্ণের অন্ধকার কত ভয়ানক, তখন মনে হইছে ঈশ্বরের নিয়ম এত কদর্য হয় কী করে! আমাদের এলাকার বারোয়ারি মন্দিরের পাশেই একটা ঋষি পরিবার ছিল। দুর্গা পুজোর সময় তারা ঢাক, কাঁসর বাজালেও মন্দিরে তাদের অধিকার ছিল সীমিত, যদিও তারা সর্বজনীন পুজোতে চাঁদা দিতো। মন্দিরের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ঋষি বাড়ির ছেলেটিকে দেখে মনে হতো, মা দুর্গা বোধহয় ছেলেটিকে কৃপা করেনি। তখন মনে হতো, মা কেন দুর্গা শুধু ব্রাহ্মণদের প্রতি সদয়, কারণ পুজোর দক্ষিণা থেকে শুরু পুজোর প্রসাদ, নৈবেদ্যতে ব্রাহ্মণের একচ্ছত্র অধিকার।
আমার ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় এক দাদা ছিল। মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী, গরিবের ডিরোজিও। সেই দাদা এমন সব অদ্ভুত কথা বলতেন যে সেই সময়ে আমার ব্রেইন টিজিং শুরু হয়। একদিন বললেন, ইবনে সিনার সেই বিখ্যাত উক্তি, “স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছে কে?” এই দাদার সাথে মাঝেমধ্যে বিকেলে মধুমতীর পাড়ে হাঁটতে যেতাম, দাদা অনেক বিষয়ে কথা বলতেন আর কেমন যেন ধীরে ধীরে আমার চিন্তার পরিধি, বিষয় বদলে যেতে লাগল। সেই সময় গোগ্রাসে বই গিলেছিলাম। এরপর মহম্মদপুর এলেন এক সরকারী কর্মকর্তা। তিনি অন্যদের থেকে আলাদা, তার কোন অহংকার নেই। স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলেপেলেদের আড্ডা দেন। একদিন স্থানীয় লাইব্রেরিতে বসে একটা বিশেষ বই পড়ছি, তিনি বইটা হাতে নিয়ে বললেন, এ পড়ে কী হবে? এর থেকে ক্লাস নাইনের সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়লেও অনেক কিছু জানা যায়। সত্যি, উপস্থিত সকলেই চমকে উঠেছিলাম, এই কথা শুনে। কিন্তু ভদ্রলোক বড় সরকারী কর্মকর্তা হওয়াতে কেউ কিছু বলতে পারে নি। ক্ষমতার কাছে ঈশ্বরও কত অসহায়! ঈশ্বর নিজে কোন প্রতিবাদ বা শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলেন না কিন্তু ঈশ্বরের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে চ্যালাদের শরীরি ভাষায় অসহায়ত্ব ছাপিয়ে একটা চোয়াল শক্ত অবস্থান সেদিন দেখেছিলাম, সেটাই ঈশ্বরের প্রাপ্তি। সেদিনই মনে হয়েছিল ঈশ্বরের চেহারা মানুষের মত বা মানুষ ঈশ্বরের মত। দুজনের মাঝে দেখা হলে দুজনেই হয়ত চমকে উঠে বলবে, “ঐ যে আমার স্রষ্টা!” ঈশ্বর সম্পর্কিত যাকিছু জেনেছি তাতে মনে হয়, মানুষের মত ঈশ্বরেরও রাগ, ক্ষোভ, লোভ, হিংসা, সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র আছে। মানুষ তার কথা না শুনলে রেগে যায়, শাস্তির ভয় দেয়, তার আদেশ মান্য করলে চির সুখের জগতে অনন্তকাল বিলাসে বসবাসের লোভ দেখায়। ঈশ্বর তার অনুসারী বাড়ানোর জন্য রাজ্য বিস্তার করতে বলে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, “ঈশ্বরের আড়ালে কোন মানুষ কলকাঠি নাড়াচ্ছে না তো, যেমনটা পুতুলনাচে দেখি!”
ঈশ্বর বিশ্বাস চলে যাওয়ার একটা কষ্ট আছে, দিনের শেষে সমস্ত অবিচার, অন্যায় বৈষম্যর বিচার দেয়ার জন্য একজন ভরসার আশ্রয় হারানোর কষ্ট। আমার বাবা যেমন পুজোর পরে প্রণাম করে তার সারাদিনের অভাব অভিযোগ বলতে পারত, এজন্মে সুখের নাগাল না পেলেও ভরসা ছিল, মরে গেলেই তো পেয়ে যাবে অনন্ত যৌবন, হাতের কাছেই মদের গেলাস, কোলের উপর আগুন সুন্দরী, টেবিলে সাজানো মাংস কাবাব। সেই সুযোগ আর আমার নেই। ঈশ্বর বিশ্বাস চলে যাওয়ার একটা সুখ আছে, সেটা হল, যাক আমি এখন স্বাধীন, ঈশ্বরকে অমান্যের অভিযোগে আমার আর কোন পাপ হবে না। কেউ সবসময় চীন সরকারের মত আমার উপর তদারকি করছে না, কী স্বস্তি! নেই কোন সর্বব্যাপী সার্ভিলেন্স সিসিটিভি ক্যামেরা।
নাস্তিকের ঈশ্বর বা ধর্মের নাগপাশ মুক্তির আনন্দ আছে, নি-ধার্মিকের গমনাগমনে কোন বাঁধা নেই, সীমাবদ্ধ গণ্ডী নেই। ততদিনে জেনে গেছি নাস্তিক সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করলেও তার নাস্তি জ্ঞানের কোন ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। তাই সে নিশ্চিন্ত মনে হিসুস্থান, মুতালয়, হওয়া বাড়ি, মরা বাড়ি যেতে পারে। সিদ্ধ, নিষিদ্ধ খাবার খেতে পারে। নাস্তিকের কোন পাপ নেই। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। ন্যায়, অন্যায়ের বোধ আছে। ধর্মগ্রন্থরা মনে করে ধর্মই সকল নীতি নৈতিকতার মূল কিন্তু সহি কথা হল ধর্মই হল নৈতিকতা ধ্বংসকারী। আসলে ধর্ম নিজের প্রচার প্রসারের জন্য সুযোগ সুবিধামত তৎকালীন বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, আচার, সংস্কার নির্লজ্জভাবে চুরি করেছে। এখানে বলে রাখা ভালো, নৈতিকতার কোন আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা নাই, সর্বজনীন অথবা সর্বজন স্বীকৃত নৈতিকতা বলে কিছু নেই। এক দেশে যা পাপ গণ্য অন্য দেশে পুণ্য তাই। এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে ও ছিল কল্যাণকর, বেশিরভাগ ধ্বংস করেছে ধর্ম ও তার স্রষ্টার অনুসারী ধার্মিক বর্বর। এই ধ্বংসাত্মক এবং অলীক অস্তিত্বশীল পরজীবী স্রষ্টাকে অস্বীকার করার নামই নাস্তিকতা। নেতিবাচক শব্দ হলেও নাস্তিকতা পৃথিবীর সামগ্রিক মঙ্গলের জন্য ইতিবাচক। নাস্তিকের ভবিষ্যতে পুনরুত্থানের কোন সম্ভাবিলিটি নাই, নাস্তিক আসেনি কোন ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে, নাস্তিক দাঁড়াবে না কোন সাদা দাড়িওয়ালা কঠোর বিচারকের সামনে, সাথে থাকবে না হিসেবের খাতা। কারণ নাস্তিকের মৃত্যু মানেই হল জীবনের চূড়ান্ত বিরামচিহ্ন, তার আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা। তাই নিচের কবিতাটা লিখেছিলাম:
বন্ধু বলল, তুমি নাস্তিক?
কেউ ঠেকাতে পারবে না, দোযখে যাবি অসামাজিক।
পরোপকারী সে, আমার জন্য প্রার্থনা করতে চায়,
নিয়েছে মানবতার লিজ, যেন আমি বিপথে না যাই।
হ্যাঁ আমি নাস্তিক, সমাজেও প্রান্তিক,
ভাড়া দিইনি ঘিলু, তাই করি যা মনে করি ঠিক।
যদিও লুসিফার আমি, তবু পুজো করি না শয়তান,
জয়গান করি না ধর্মের, ঘৃণাও করি না ভগবান।
শুধু গোনায় ধরি না আকাশে থাকা ঈশ্বর,
দেবেন আমায় মেনোকা ও উর্বশী বর।
দরকার নেই আমার রূপক বই হাজার পাতার,
ধর্মাধর্মের ক্ষুরধার পথ, শাস্তি ও লোভের বাহার।
নীতি ও নৈতিকতার জন্য দরকার নেই ধর্ম,
জানো বন্ধু, ধর্ম হল রাজনীতিবিদের পিঠ বাঁচানো বর্ম।
ধূর্তের শেষ আশ্রয় ও লোভীর প্রসাদ,
ভিতুর পিঠে সাওয়ারি, ঘৃণার চাষাবাদ।
নাস্তিকতার কথা বললে আস্তিক শ্রেণি ভয় পেয়ে যায়, তাদের প্রিয় ঈশ্বর হারানো সম্ভাব্য শোকে তারা কাতর হয়ে পড়ে, তারা অসহায় বোধ করে, তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি আর ব্যবসার ঘটি বাটির গণেশ উল্টে যায়। তাই আগ্রাসী হয়ে ওঠে। ধার্মিক নিজেই প্রমাণ করে ধর্ম হল লোভ, ভয় আর হুমকির মিশেলে এক অদ্ভুত পাঁচন যা অনেকে খেতে চায় না কিন্তু সমাজ তাকে জোর করে গিলতে বাধ্য করে।
আর্টিকেলটা অসাধারণ ছিল। আপনি যদি চাইতেন তবে বর্তমানে একটা ধর্ম তৈরি করা যাইতো। আপনার মধ্যে সেই প্রতিভা আছে যা দিয়ে আপনি মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতে পারবেন।
একটা কথাই বলতে চাই আর্টিকেলটি অসাধারণ ছিল।
নাস্তিকতায় ক্লান্ত, তবু- এইটা যেন নিৎসের সত্যের পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতার মত। যা আজকে দিতে পারে সর্বোচ্চ চূড়া, অথবা সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার জন্য নতুন শক্তি!
আসলে চারপাশে এত অপবিশ্বাস আর বিশ্বাসের নস্ট প্রতিযোগিতা – মাঝে মানব জীবন ক্লান্ত হলো শুধু।
সত্যি আমাদের একজন স্রষ্টা থাকা দরকার ছিল যে হত আমাদের সুখ দুঃখের সাথী। তার সাথে আমরা কথা বলতাম, তাকে দেখে মনে সাহস জাগত, তার কাছে কোন আলাদীনের চেরাগ চাইতাম না, শুধু বলতাম-তুমি দুষ্টদেরকে কষ্ট দিয়ে শুদ্ধ করো আর শিষ্টদের একটু সুখে রাখ। বিনিময়ে যত এবাদত চাও, দেবো। এই শূন্যতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় তবু আমি ধর্মের কল্পিত স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে পারি না।
ঈশ্বর বিশ্বাস চলে যাওয়ার একটা কষ্ট আছে, দিনের শেষে সমস্ত অবিচার, অন্যায় বৈষম্যর বিচার দেয়ার জন্য একজন ভরসার আশ্রয় হারানোর কষ্ট।
আসলেই
এই বিশ্ব ব্রম্ভান্দ এতো বিশাল আর এতো জটিল তার কাছে আমরা খুধ্রাতুর ক্ষুদ্র । এই বিরাটত্বর কাছে আমাদের ঔদাত্থতো দেখান একটা হাস্যকর ব্যাপার ।
আইনেস্তাইন বলেছিলেন আমাদের ধর্ম গুলতে যে আল্লহার গল্প গাথা র বর্ণনা আছে তা হয়তো ঠিক নয় কিন্তু কিছু একটা আছে । যা আমরা আমাদের এই সীমাবদ্ধ বুদ্ধি দ্বারা বুঝতে পারব না। আমরা তো অনেক কিছুই জানিনা। Black Mattar and Black Energy কি ভাবে কাজ করে তা আমরা জানিয়া বা কি দ্বারা গঠিত তাও জানিনা । গ্যালাক্সি গুলো একটা থেকে আর একটা দ্রুত গতিতে সরে যাচ্ছে ,কোথাই যাচ্ছে , কিসের টানে যাচ্ছে তাও জানিনা । এই বিশ্ব ব্রম্ভানড সম্বন্ধে আমরা কতটুকু জানি । যুক্তি হীন ফালতু রূপকথা বাদ দেয়া যায় সব ধর্ম থেকে কিন্তু কিছু একটা আছে তা বাদ দেয়া যাই না ।
খুব ভালো লেখা । পড়ে অসাধারণ ভালো লাগলো,
অনেক কিছু জানা ছিলো না আজ জানা হল।।
নাস্তিকতা শিখিয়েছে বস্তুুবাদ আর ধর্ম শিখিয়েছে নৈতিকতা ও বস্তুুবাদ। পৃথিবীর সব প্রানীর আছে বস্তুবাদী চিন্তা ধারনা কিন্তুু মানুষের আছে নৈতিকতার পাশাপাশি বাস্তুবাদী চিন্তা ধারা। এটাই তো আসল পাথক্য। কিন্তু নাস্তিকেরাা আসল কাজকে বাদ দিয়ে নকল নিয়ে শুধু বাড়াবাড়ি যাতে খুঁজে পাওয়া যায় না আত্মা ও দেহের মিল।
“কার্ল স্যাগান, রিচার্ড ডকিন্স, জোসেফ ক্যাম্পবেল বা আমাদের হুমায়ুন আজাদ যদি তাদের স্রষ্টা বিচ্যুতির কথা লিখে যেতেন তাহলে আমরা হয়ত আরও সমৃদ্ধ হতে পারতাম।” আমার জানামতে ড: রিচার্ড ডকিনস, কার্ল স্যাগান স্রষ্টা বিচ্যুতির কথা বেশ কবার বলেছেন।
“ঈশ্বর বিশ্বাস চলে যাওয়ার একটা কষ্ট আছে, দিনের শেষে সমস্ত অবিচার, অন্যায় বৈষম্যর বিচার দেয়ার জন্য একজন ভরসার আশ্রয় হারানোর কষ্ট।”
সত্য, বিশ্বাস হারানোর পর প্রথম ২ বছর বেশ কষ্ট লাগত, কিন্তু এখন আর লাগেনা। বরং মানব মস্তিষ্ক থেকে সৃষ্ট ভুত সদৃশ প্রমানহীন ও অস্তিত্বহীন কারো প্রতি মাথা নত করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছি।