আমার কাছে মনে হয় হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে যেভাবে উপর্যপুরি আক্রমণ হয়েছে সেটা নিশ্চিতভাবে জাতিগতভাবে তাদেরকে নির্মূল করে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সেকারণেই আমি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছি। হাজারাদেরকে হত্যার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। – সাকিব নিসার (পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, ১০ মে, ২০১৮)

হাজারা জনগোষ্ঠী ১৯ শতকের শেষের দিক থেকেই ধর্মীয় এবং জাতিগতভাবে নির্মূলকরণের শিকার। কিছু কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আফগান শাসক আবদুর রেহমান তার (১৮৮০-১৯০১) শাসনামলে অর্ধেক হাজারা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এবং তারা বাধ্য হয়েছে মাতৃভূমি আফগানিস্তান ছাড়তে। তারপর ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি এসে হাজারা জনগোষ্ঠী আফগানিস্তানের তালিবান এবং আল-কায়েদার হাতে নির্মম নিপীড়ন এবং গণহত্যার শিকার হয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র তালিবান সরকারকে উৎখাত করলে সাময়িকভাবে হাজারাদের নিরাপত্তা কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সেটা তো বালির বাঁধ, কিছুদিনের মধ্যেই তালিবান আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে, আফগানিস্তানে দায়েশের (আইসিস) মত নতুন জঙ্গি দলের আগমন ঘটে ফলে হাজারাদের উপর নেমে নিত্য নতুন আক্রমণ। সবজঙ্গি মিলেমিশে হাজারা পথচারীদেরকে তাদের যাত্রাপথে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করতে শুরু করে।

১৮৯০ সালের শুরুতে হাজারা জনগোষ্ঠীর উপর নিয়মিত হত্যাকাণ্ড চলতে থাকায় তারা ভয়ে দলে দলে পালিয়ে যেতে থাকে প্রতিবেশী ইরান এবং তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়াতে। প্রাণের দায়ে পালিয়ে আসা বেশীরভাগ হাজারাদের আশ্রয় হয় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কোয়েটায় (বর্তমানে পাকিস্তানে) এবং কোয়েটাতে তারা বেশ সুখে শান্তিতেই ছিল। এমনকি ১৯০৪ সালে ইন্ডিয়াতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ লর্ড কিচনার, মেজর ক্লদ জ্যাকবকে কোয়েটার হাজারা যুবকদের নিয়ে আলাদা রেজিমেন্ট গঠন করতে নির্দেশ দেন। নতুন সেনাদলের নাম দেয়া হয় ‘১০৬তম হাজারা পায়োনিয়ার’ যদিও ১৯৩৩ সালের মধ্যেই নবগঠিত সেনাদলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বেলুচিস্তানে তারা শতাধিক বছর ধরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু হাজারাদের শান্তি বুঝি বেশিদিন সয় না, বেলুচিস্তানেও তাদের উপর শুরু হয়ে গেল হত্যা, নিপীড়ন, গুম, সন্ত্রাসী আক্রমণ। তাদের মুখের আদল সেন্ট্রাল এশিয়ান হওয়ার কারণে বেলুচিস্তানের অন্যান্য জনগোষ্ঠীদের থেকে হাজারাদের সহজেই আলাদা করা যায়। ফলে হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজন হত্যা খুনের সহজ নিশানায় পরিণত হয়।

কোথা থেকে এসেছে এই হাজারা জনগোষ্ঠী?

হাজারা জনগোষ্ঠী বেলুচিস্তানে শতাধিক বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করলেও এই শতকের মাঝেই তাদের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন জঙ্গি-দল, জঙ্গি-দলের স্থানীয় সাগরেদ নিয়মিত বিরতিতে হাজারাদেরকে নিপীড়ন এবং হত্যা চালিয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশে বিদেশে এই জনগোষ্ঠীর পরিচিতি তুলে ধরেছে তবুও এখনো পাকিস্তানী জনগণের মনে ‘চায়নিজ চেহারার’ পাকিস্তানি হাজারাদের ইতিহাস এবং কোথা থেকে এসেছে জেনে বিস্ময় জাগে। হাজারাদের ভৌগলিক ইতিহাসের উৎস-ভূমি বর্তমানের আফগানিস্তান। বহুকাল ধরে তারা মধ্য আফগানিস্তানের ‘হাজারাত’ নামক স্থানের শুকনো পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে আসছিল এবং তারা প্রায় সবাই ধর্মে শিয়া মতাবলম্বী মুসলিম।

ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর (১৪৮৩-১৫৩০) তার আত্মজীবনী ‘বাবুরনামা’ গ্রন্থে আফগানিস্তানের হাজারিস্তান এবং ১৫০৫ সালে পাঞ্জশির উপত্যকায় হাজারার তুর্কি আদিবাসীদের সাথে যুদ্ধের কথা আলোচনা করেছেন। হাজারা জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ‘দক্ষিণ এশিয়া এবং আফগানিস্তান’ গবেষক প্রফেসর গ্রান্ট ফার বলেন, হাজারা জনগোষ্ঠী হলো ১৩শতকের বর্তমানের আফগানিস্তানের মঙ্গল বংশের অবশিষ্ট জনসংখ্যা। প্রফেসর ফার মনে করেন হাজারাদের পূর্বপুরুষেরা চেঙ্গিস খানের ছেলে চাগাতাই’র সৈনিক ছিল। চাগাতাই ১৩ শতকে চেঙ্গিস খানের কাছ থেকে এই অঞ্চল শাসনের দায়িত্ব পায়। হাজারাদের মুখের আদলেও মধ্য এশিয়ার মঙ্গলয়েড প্রভাব প্রকটভাবে লক্ষ করা যায়। চোখের নিচের হাড় উঁচু, মুখে অল্প দাড়ি, ছোট চোখের কারণে তাদেরকে অন্যান্য নৃগোষ্ঠী থেকে আলাদাভাবে চেনা যায়।

হাজারাদের ‘হাজারাগি’ ভাষাতেও তাদের মঙ্গল পূর্বপুরুষের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়। হাজারাগি হলো পার্সি ভাষার আঞ্চলিক অপভ্রংশ। হাজারাগি ভাষায় বিপুল পরিমাণ পার্সি শব্দ আছে আর বাক্যের গঠন পার্সি, তুর্কি আর মঙ্গলের সংমিশ্রণ। অন্য একজন গবেষক জেমস মিনাহ্যান লিখেছেন হাজারা জনগোষ্ঠী তুর্কি আর মঙ্গলদের মিশেলে সৃষ্টি কিন্তু তাদের শারীরিক অবয়বে মঙ্গল প্রভাবের আধিক্য রয়ে গেছে। হাজারা নামটা এসেছে মঙ্গলদের একটা যোদ্ধা দলের এক হাজার সেনা নিয়ে গঠিত বাহিনী এবং এসম্পর্কিত মিথ থেকে কিন্তু এখন হাজারা বলতে পাহাড়ি আদিবাসীকে বোঝায়। ২০১৭ সালে কোয়েটার ১৫৩ হাজারা পুরুষদের জেনেটিক স্টাডি করে জানা যায় জিনগত-ভাবে এই জনগোষ্ঠী মঙ্গল এবং কাজাখদের সাথে ঘনিষ্ঠ। ইতিপূর্বে পরিচালিত অন্য আর একটি গবেষণা থেকে জানা যায় দুই তৃতীয়াংশ হাজারা পুরুষ চেঙ্গিস খানের ওয়াই ক্রমোজোম বহন করে।

পাকিস্তানে হাজারা নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ

প্রায় দুই দশক ধরে হাজারা জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে হত্যা, নিপীড়নের খাঁড়ার তলে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে বেলুচিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী এবং হাজারাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সরদার নিসার আলিকে হত্যা করতে চেষ্টা করা হয়। কোয়েটাতে আততায়ীর হামলা থেকে অল্প আঘাতে রক্ষা পেলেও তার ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই মারা যান। সরদার নিসার আলিকে হত্যা চেষ্টা ছিল হাজারা জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রমের শুরু মাত্র। হাজারা জনগোষ্ঠী দাবী করেছে ২০০০ সাল থেকে তাদের ২০০০ জন হাজারা বোমা হামলায়, আততায়ীর আঘাতে এবং চিহ্নিত করে পরিকল্পিত খুনের শিকার হয়েছে। কোয়েটা শহরের আশেপাশেই এই বিপুল পরিমাণ হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে এবং মৃত্যুর তালিকায় পুরুষ, নারী এবং কিশোর নাবালক এবং শিশু সবাই আছে। ২০১৮ সালের মার্চে ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান (NCHR) প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৫০৯ জন হাজারা খুন হয়। বেলুচিস্তান সরকারের অফিসিয়াল তথ্যের উপর ভিত্তি করে NCHR “হাজারা নৃগোষ্ঠীর নিপীড়ন পাঠ” শিরোনামে উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

হাজারাদের উপর অনির্দিষ্টকাল ধরে চলমান দমন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে হাজার হাজার হাজারা পাকিস্তান ছেড়ে অন্যদেশে চলে গেছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সংসদ অধিবেশনে ফরহাতুল্লাহ বাবর এবং রোজি খান কাকার হাজারাদের উপর হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে না পারায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। সেদিন সংসদ অধিবেশনের সবাই জানতে পারে ৭০,০০০ হাজারা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে আশ্রয় নিয়েছে। সিনেটর ফরহাতুল্লাজ খান পাকিস্তান থেকে হাজারাদের পালিয়ে যাওয়ার সাথে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার তুলনা করেন কারণ প্রত্যেকেই নিজ বাসভূমি থেকে উৎখাতের শিকার।

আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান উভয় দেশেই হাজারা লোকজন বিভিন্ন সুন্নি জঙ্গি-দল যেমন তালিবান, আল-কায়েদা, লস্কর-ই-জাংভি এবং দায়েশ’র সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়। ১৯৯০’র দিকে তালিবান শাসনামলে তালিবান এবং আল-কায়েদা যৌথ উদ্যোগে হাজারা নিধনে মেতে ওঠে। পাকিস্তানে লস্কর-ই-জাংভিহাজারাদের খুঁজে খুঁজে মারতে থাকে এবং পরে দায়েশ এসে নিধনযজ্ঞের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। তখন বেলুচিস্তানে হামলা করে হাজারা হত্যার দায় শিকার করে দায়েশ।

আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধে হাজারা জনগোষ্ঠী

হাজারা জনগোষ্ঠী নন-পশতুন নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’র সাথে যুক্ত ছিল এবং আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে বাস করত। তালিবান এবং তালিবানের সহযোগী আল-কায়েদা হাজারাদেরকে ধর্মদ্রোহী এবং ইসলামের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৯৭ সালের ২৫ মে তালিবান-বাহিনী নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’র শক্ত ঘাঁটি আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের শহর মাজার শরীফ দখল করে। তালিবান অতিদ্রুত তাদের শরিয়া আইন চালু করে স্কুল এবং অফিস আদালত বন্ধ করে দেয় আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়। পাকিস্তানি সাংবাদিক ও লেখক আহমেদ রশিদ মনে করেন তালিবান এবং হাজারাদের মাঝে সংঘাত চরমে পৌঁছায় ২৪ মে ১৯৯৭ সালে যখন মাজার শরীফের হাজারা যোদ্ধারা অস্ত্র ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তালিবানকে পালটা জবাব দিয়ে দেয় এবং হাজারা জনগোষ্ঠী বিদ্রোহ শুরু করে। ১৫ ঘণ্টার তুমুল যুদ্ধে ৬০০ তালিবান জঙ্গি নিহত হয় এবং যুদ্ধ থেকে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে জীবন্ত ধরা পড়ে আরও ১০০০ জন তালিবান। হাজারা বিদ্রোহীরা তালিবানের কাছ থেকে আফগানিস্তানে উত্তরাঞ্চল এবং কাবুলের আশেপাশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কবজায় নেয়।

কিন্তু কিছুদিন পরেই তালিবান দ্বিগুণ শক্তিতে বলিয়ান হয়ে প্রতিশোধ নিতে আসে এবং মাজার শরীফ পুনর্দখল করে পরের বছরেই। এরপরে চলতে লাগল একটানা খুনোৎসব। খুঁজে খুঁজে নন-পশতুন অধিবাসী বিশেষ করে হাজারাদের পেলে রেহাই নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি। জাতিসংঘ এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের প্রতিবেদনের হিসেব মতে দুই দিন ধরে চলমান গণহত্যায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ হাজারা খুন হয়।

হিউম্যান রাইট ওয়াচ ১৯৯৮ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে:

“পার্শি-ভাষী হাজারা জনগোষ্ঠী ধর্মে শিয়া মুসলিম। তারা বিশেষভাবে চিহ্নিত কারণ তাদের ধর্মীয় পরিচয়। বাড়ি বাড়ি খুঁজে খুঁজে ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। তালিবানের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ যাতে গড়ে উঠতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য তালিবান জঙ্গিরা হাজারাদের গড়ে হত্যা করে যুবক বৃদ্ধ শিশু কেউ বাদ পড়ে না। ১৯৯৭ সালের মে থেকে জুলাইতে মাজার শরীফ দখলের আক্রমণ ব্যর্থ হলে তালিবান-বাহিনী কয়েক হাজার যোদ্ধা হারায়, সেই ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তালিবান হাজারাদের কচুকাটা করে দেয়। একদিনেই নিকেশ করা হয় ২০০০ হাজারাকে যেন হলোকাস্টে ইহুদি নিধনের পুনঃমঞ্চায়ন। সারা মাজার শরিফের সব মসজিদের খুতবায় দেয়া বয়ানে তালিবান গভর্নর মোল্লা মানান নিয়াজি ১৯৯৭ সালের হত্যাকাণ্ডের জন্য হাজারাদের দোষারোপ করেন”।

১৯৯৭ সালের আগস্টের শুরুর দিকে তালিবান বাহিনী খাদ্যকেই ব্যবহার করেছিল যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে। তারা হাজারা অধ্যুষিত হাজারাজাতে বামিয়ান উপত্যকায় অবরোধ আরোপ করে ফলে সেখানকার অধিবাসী হাজারা জনগোষ্ঠী মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়ে। ত্রাণের গাড়ি, অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্য সংস্থা কেউই মাজার শরিফে যেতে চায় না। এই শহরেই পাহাড় কেটে বানানো বুদ্ধের বিশাল মূর্তি আছে। আহমেদ রাশিদ তার তালিবান বইতে লিখেছেন, নারীর প্রতি কেমন আচরণ করে এই ভিত্তিতে ভাগ করলে তালিবান আর হাজারাদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। তালিবান বাহিনী হাজারাদের নারীদের কাছে পর্যদস্ত হয় কারণ হাজারা সমাজে রাজনীতি, সামাজিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। অনেক হাজারা নারীই পুরুষের সহযোগী হিসেবে পাশাপাশি যুদ্ধ করে। নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণ দেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালিবানকে নিন্দা করে, অপরদিকে হাজারা ইউনিটি পার্টিতে কার্যনির্বাহী পরিষদে ১২ জন নারী সদস্য।

তালিবান বা আফগান জিহাদের আগে থেকেই আফগানিস্তানে হাজারা বিরোধী ঘৃণার প্রচলন ছিল তার কারণ স্রেফ তাদের ধর্ম বিশ্বাস এবং নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী। ১৮৯০ সাল থেকেই সেখানে হাজারা জাতিগত ঘৃণা এবং ধর্মীয় বৈপরীত্য বিদ্যমান। জাতিগত ঘৃণার আগুন দাবানলে পরিণত হয় ১৯৯০ সালের রক্তক্ষয়ী আফগান গৃহযুদ্ধের সময়। পাকিস্তান থেকে পরিচালিত জঙ্গি-দলের মধ্যে অন্যতম লস্কর-ই-জাংভিতালিবানের সাথে যোগ দেয় হাজারা নিধন ত্বরান্বিত করতে। তারা আফগান যোদ্ধাদের পাশাপাশি থেকে আফগানিস্তানের শিয়া প্রধান নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ শুরু করলে সবকয়টি জিহাদি জঙ্গি-দল এবং তাদের সঙ্গী হাজারা বিরোধীরা আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয় সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী বেলুচিস্তানেও ছড়িয়ে পড়ে হাজারাদের প্রতি ঘৃণা। বেলুচিস্তানে মোটামুটি বেশ পরিমাণে হাজারাদের বসবাস। পাকিস্তানি হাজারা সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবেই ২০ শতক থেকে কোয়েটাতে বসবাস করছিল কিন্তু অচিরেই আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গি যারা হাজারাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছিল তারা নতুন উদ্যমে কোয়েটার হাজারাদের উপর হামলা শুরু করে দিলো। ২০১১ সালে লস্কর-ই-জাংভিদাবী করে তারা কাফের হাজারাদের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। লস্কর-ই-জাংভিআনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় তারা পাকিস্তানের আনাচে-কানাচে থেকেও হাজারাদের হত্যা করতে চায় ঠিক যেভাবে তারা আফগানিস্তানে হত্যা করেছিল।

নিচে কয়েকটি জঙ্গি-দলের উল্লেখ করা হলো যারা বেলুচিস্তানে হাজারা জনগোষ্ঠীর উপর বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হামলার দায় স্বীকার করেছে।

লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে)

শিয়া মুসলিমদের বিরোধিতা করতে গিয়ে উগ্র সালাফি মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কট্টর ওয়াহাবি মুসলিমরা ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে) প্রতিষ্ঠা করে। ধারণা করা হয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, সিপাহ সাহাবা, হরকাতুল জিহাদ-ই-ইসলাম (হুজি), ইরানের জানদাল্লাহ, আইসিসের মত ভয়ংকর জঙ্গি দলের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে) তালিবানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আফগানিস্তানে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে) এবং সিপাহ সাহাবা পাকিস্তানের সদস্যরা ৯০ দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানের শিয়া মুসলিমদেরকে পাইকারে হারে হত্যা করে। লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে)’র অনেক ফেরারি সদস্যকে তৎকালীন তালিবান সরকার আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেয়। ২০১১ সালের জুলাইতে লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে) বেলুচিস্তান শাখা নিম্নোক্ত ফতোয়া জারি করে।

“সব শিয়াদেরকে হত্যা করা জায়েজ। পাকিস্তান থেকে অপরিচ্ছন্ন মানুষের কবল থেকে রক্ষা করা হবে। পাকিস্তান শব্দের অর্থ পবিত্রভূমি, সেই পবিত্র-ভূমিতে শিয়াদের বাস করার কোন অধিকার নেই। আমরা সম্মানিত ইসলামি চিন্তাবিদদের স্বাক্ষরিত ফতোয়াতে ঘোষণা করছি শিয়া মুসলিমরা কাফের। আমাদের যোদ্ধারা যেভাবে আফগানিস্তানের হাজারা শিয়াদের বিরুদ্ধে সফল জিহাদ পরিচালনা করেছে সেভাবে আমাদের লক্ষ্য পাকিস্তানের প্রতিটি শহর, গ্রাম, আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামের বিকৃতিকারী শিয়াদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। অতীতের মত পাকিস্তানের বিশেষ করে কোয়েটার হাজারাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ভবিষ্যতেও জারি রাখতে হবে। আমরা পাকিস্তানকে হাজারা শিয়াদের কবরে পরিণত করবো আর তাদের বাড়িঘর বোমার আঘাতে এবং আত্মঘাতী বোমার আক্রমণে গুড়িয়ে দেব। আমরা সেই দিন হবো শান্ত যেদিন পাকিস্তানের পবিত্র-ভূমিতে ইসলামের প্রকৃত সত্য পতাকা উত্তোলন করতে পারবো। শিয়া হাজারাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এখন আমাদের ঈমানি দায়িত্ব”।

২০০১ সাল থেকে হাজারা জনগোষ্ঠী বেলুচিস্তানে শয়ে শয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আক্রমণের বেশিরভাগ দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে)। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য ভয়াবহ আন্তঃ-ধর্মীয় কোন্দল ঘটে যায় এবং কোয়েটাতে হাজারাদের আক্রমণ পরিচালনা করে লস্কর-ই-জাংভি(এলইজে)। হাজারাদের বাসস্থানের পাশের রাস্তা আলমদার রোডে হাজারাদের লক্ষ্য করে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারির সেই হামলায় ঘটনাস্থলেই ৯৩ জন হাজারা নিহত হয়, আহতদের হাসপাতালে নিতে নিতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। হামলার জবাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ভেঙ্গে দেয় এবং রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেয়।

২০০১ সাল থেকে হাজারা জনগোষ্ঠী বেলুচিস্তানে শয়ে শয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আক্রমণের বেশিরভাগ দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-জাংভি (এলইজে)। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য ভয়াবহ শিয়া-সুন্নি আন্তঃ-ধর্মীয় কোন্দল ঘটে যায় এবং কোয়েটাতে হাজারাদের আক্রমণ পরিচালনা করে লস্কর-ই-জাংভি (এলইজে)। হাজারাদের বাসস্থানের পাশের রাস্তা আলমদার রোডে হাজারাদের লক্ষ্য করে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারির সেই হামলায় ঘটনাস্থলেই ৯৩ জন হাজারা নিহত হন, আহতদের হাসপাতালে নিতে নিতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। হামলার জবাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ভেঙে দেয় এবং রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেয়।

যাইহোক, প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসন ভেঙে দিলেও লস্কর-ই-জাংভির নিত্যনতুন আক্রমণ কিন্তু থেমে থাকে না। লস্কর-ই-জাংভি মাত্র একমাসের মাথায় ১৬ ফেব্রুয়ারি হাজারা শহরে একই রকম বিধ্বংসী একটা হামলা চালিয়ে ১১০ জন হাজারাকে হত্যা করে এবং যথারীতি হত্যা বাদ পড়ে না একটা নারী ও শিশু। এই হামলার আঘাতে পঙ্গু হয়ে যায় আরও দুইশ জন। তাছাড়াও লস্কর-ই-জাংভি হাজারাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশদেরকেও লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

২০১৫ সালের জুলাইতে মুজাফফরগড়ে পাঞ্জাব মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে মুখোমুখি বন্দুক-যুদ্ধে লস্কর-ই-জাংভির ১৩ জন সদস্যসহ পালের গোদা মালিক ইশাক নিহত হয়। এর আগে কোয়েটাতে দুইটা বোমা হামলার আঘাতে ৬৫ জন হাজারাকে হত্যা পরিকল্পনার মূল হোতা হিসেবে গ্রেফতার হওয়া উসমান সাইফুল্লাহ কুর্দ এবং দাউদ বাদিনি লস্কর-ই-জাংভি’র প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৩ সালের ৮ নভেম্বরে আদালতের রায়ে তারা ফাঁসির আসামী। কুর্দ এবং বাদিনি গ্রেফতার হলে বেলুচিস্তানে হাজারা হত্যায় কিছুটা ছেদ ঘটে। যাইহোক, কুর্দ এবং বাদিনি দুজনেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেও ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কোয়েটার জেল থেকে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানের ইংরেজি ‘দ্য নিউজ’ দৈনিক সংবাদপত্রে ছাপা হয়……

২০০৮ সালে ১৮ জানুয়ারি লস্কর-ই-জাংভি’র জেলে আটক উভয় বন্দি বড় অদ্ভুতভাবে এবং রহস্যজনক উপায়ে কোয়েটার সেনানিবাস এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ভিতরে থেকেও জেল ভেঙে পালিয়ে যায় অথচ যেখানে নিরাপত্তা পাস ছাড়া যাওয়া আসা করা একবারেই অসম্ভব। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার পাকিস্তানের মাইনরিটি সাপোর্ট এনজিও অভিযোগ করে অপরাধী পালিয়ে যাওয়ার সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এই ঘটনার মধ্যে শক্তিশালী কোন পক্ষের সুসংগঠিত হাত রয়েছে। পাকিস্তানের মাইনরিটি সাপোর্ট এনজিও’র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় পালিয়ে যাওয়ার রাতে উসমান কুর্দ এবং দাউদ বাদিন ইতিপূর্বে জেলে বন্দী শফিকুর রহমান রিন্দ’কে সাথে নিয়ে পালায় যাকে ২০০৩ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেদিন হঠাৎ করেই জেলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হাজারাদের ছুটি দিয়ে পাহারার সময় সূচিতে আমূল পরিবর্তন করে কোয়েটার জেলার।

পরে অবশ্য ২০১৫ সালে কোয়েটার ফ্রন্টিয়ার পুলিশের গুলিতে নিহত হয় উসমান সাইফুল্লাহ কুর্দ। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আমির মির লিখেছিলেন, সাইফুল্লাহ কুর্দের মৃত্যু লস্কর-ই-জাংভি’র উপর প্রবল আঘাত। কুর্দের মৃত্যুতে বেলুচিস্তানে লস্কর-ই-জাংভির কোমর ভেঙে যায়। তদুপরি লস্কর-ই-জাংভি মরার উপর খাড়ার ঘা দেয়ার মতই হাজারা সম্প্রদায়ের উপর হামলা জারি রাখে। হাজারাদের উপর হামলার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করে যদিও পাকিস্তানে লস্কর-ই-জাংভি সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি বাহিনী।
লস্কর-ই-ঝাংভি’র নেতা রমজান মেঙ্গালকে মুক্তি দেয় বেলুচিস্তান সরকার ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। তারপরেই বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার জঙ্গি-গ্রুপের উপর সাঁড়াশি অভিযান চালাবে শুনে জঙ্গি-দলগুলো সরকারের উপর নতুন করে হামলা ঘটায়। যদিও অতীতে এই রমজান মেঙ্গাল জনসম্মুখে সমগ্র হাজারা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি দেয়। মুক্তির দুইদিনের মধ্যেই রমজান মেঙ্গালের পরিচালনায় কোয়েটা শহরের উপকণ্ঠে হাজারাদের সবজির বাজারে বোমা হামলা করে এবং এই হামলায় ৮ জন হাজারাসহ ১৮ জন মানুষ মারা যায়। জঙ্গি-গ্রুপ দায়েশ তাদের অফিশিয়াল সংবাদ মাধ্যম ‘আমাক’ এর মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। লস্কর-ই-জাংভি বেলুচিস্তানের শিয়া হাজারাদের নিশ্চিহ্ন করতে আল-কায়েদা এবং দায়েশ উভয় গ্রুপের সাথে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয়।

ইসলামিক স্টেট (দায়েশ)

দায়েশ হাজারাদেরকে হত্যা করে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান দুই দেশেই। আফগানিস্তানে হাজারা জনগোষ্ঠী দায়েশ এবং দায়েশের সহযোগী জঙ্গি-দলের সম্মিলিত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ইসলামিক স্টেট হলো সালাফিবাদের উগ্র বহিঃপ্রকাশ। দায়েশ মূলত ১৯৯৯ সালে সালাফিবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জর্ডানের সালাফি নেতা আবু মুসাব আল-জারকাবি প্রতিষ্ঠিত ‘জামাতুল তাওহিদ ওয়াল জিহাদ’ নামের ধর্মান্ধ জঙ্গি দল। ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি দায়েশ তাদের খোরাসান শাখার যাত্রা ঘোষণা দেয়। খোরাসান হলো জিহাদিদের কল্পনায় আঁকা ভৌগলিক সীমারেখা যেখানে পাকিস্তান এবং এর আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত আছে। টিটিপি’র সাবেক ডাকসাইটে যোদ্ধা হাফিজ সাইদকে ইসলামিক স্টেটের খোরাসান শাখার প্রধান করা হয়।

২০১৪ সালের শুরু থেকেই পাকিস্তানে দায়েশের আতংক দেখা দেয়। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার চিঠি লিখে কেন্দ্র সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে দায়েশ লস্কর-ই-জাংভি এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতকে প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানে একসাথে কাজ করার জন্য। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের চিঠির বরাত দিয়ে জানা যায়, দায়েশ দশ সদস্য নিয়ে কৌশলগত পরিকল্পনার বিশেষ দল গঠন করে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘জারব-ই-আযব’ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যদের উপর হামলার পরিকল্পনা করে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারী সেই চিঠিতে উল্লেখ ছিল দায়েশ দাবী করছে পাকিস্তানের খায়বার পখতুনখাওয়া প্রদেশের হানগু এবং কুররাম জেলায় ১০ থেকে ১২ হাজার অনুসারী আছে। ১২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে কোয়েটার বোমা হামলার দায় স্বীকার করে দায়েশ এবং সেই হামলাতে যে ১৮ জন মানুষ নিহত হয় তাদের মধ্যে ৮ জন হাজারা। আফগানিস্তানে দায়েশের হাজারা বিরোধী আক্রমণ ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠতে লাগল।

তেহরিক তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)

অন্যান্য জঙ্গি গ্রুপের মতই তেহরিক তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) হাজারাদেরকে হত্যা করে দায় স্বীকার করতে লাগল। ২০১০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কোয়েটা শহরে হাজারাদের ধর্মীয় শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হয় আহত হয় আরও ১৬০ জন। শোভাযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল কোয়েটার একটা ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় টিটিপি। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের বোমা হামলাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নিহত এবং আহত হয় যাদের বেশিরভাগই হাজারা এবং যার দায় স্বীকার করে যৌথভাবে টিটিপি এবং দায়েশ। ধারণা করা হয় টিটিপি নিম্নোক্ত জঙ্গি সংগঠনগুলো সহযোগী/ স্লিপার সেল হিসেবে কাজ করে।

1. আল-কায়েদা
2. লস্কর-ই-জাংভি
3. ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তান
4. হাক্কানি নেটওয়ার্ক
5. হরকাতুল জিহাদ-ই-ইসলামি (হুজি)
6. জৈশ-ই-মহম্মদ (জেম)
7. তেহরিক-ই-নাফাজ-ই-শরিয়তি-মহম্মদি (টিএনএসএম)
8. জান্দাল্লাহ
9. লস্কর-ই-তৈয়্যেবা

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত (এএসডব্লিউজে)ঃ

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পূর্বে নাম ছিল সিপাহ-ই-সাহাবা যাদের কাজই ছিল বছরের পর বছর জুড়ে বিরোধী প্রচারণা চালানো। পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে জনসংযোগ এবং প্রচারণা করতে পারে, শিয়াদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাক দিতে পারে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত মূলধারার রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলাম এবং জামিয়াত উলেমা ইসলামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। ২০১৮ সালের জুলাইতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের দণ্ড প্রাপ্ত আসামী রমজান মেঙ্গাল সহ অনেক নেতাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে হাজারা জনগোষ্ঠী আতংকে জড়সড় হয়ে পড়ে কারণ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত হলো লস্কর-ই-জাংভি’র রাজনৈতিক ছদ্মবেশ। কাতারের আল-জাজিরা টেলিভিশনের সাথে কথা বলার সময় হাজারা রাজনৈতিক নেতা আগা রেজা বলেন, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত সংসদ পর্যন্ত পৌঁছাতে চায় কারণ যাতে তারা হাজারা জনগোষ্ঠীকে হত্যাকারী লস্কর-ই-জাংভি’কে রক্ষা করতে পারে।

অতিমাত্রায় সহিংসতা:

হাজারা জনগোষ্ঠী অতিমাত্রায় সহিংসতার শিকার হতে লাগল। হিউম্যান রাইট ওয়াচ হাজারা হত্যা নিয়ে ২০১৪ সালের ২৯ জুন একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় হাজারা হত্যার ভয়াবহ পরিসংখ্যান। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল “আমরা চলমান শবযাত্রা” প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ সালে পাকিস্তান জুড়ে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ খুন হয়েছে যাদের বেশিরভাগই বেলুচিস্তানের হাজারা। ২০১৩ সালে নিহত হওয়া শিয়া সম্প্রদায়ের অর্ধেকই হাজারা। হাজারা জনগোষ্ঠী অভিযোগ করে প্রাদেশিক সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হাজারাদের নিরাপত্তাকে অবহেলা করে। হিউম্যান রাইট ওয়াচ’র প্রতিবেদন মতে, সরকার সন্ত্রাসীদেরকে পিছনের দরজা দিয়ে গোপনে শক্তি সামর্থ্য এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল কী না তার কোন শক্ত প্রমাণ নেই কিন্তু হাজারা বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করতে সরকার কিছুই করে নি।
ক্রমাগত আক্রমণের কারণে কোয়েটা শহরের উপকণ্ঠে পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে দুইটা বস্তি বানিয়ে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হল হাজারাদের চলাচল। হাজারাদের বস্তিতে সবগুলো প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী আছে। মূলধারার মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কোয়েটা শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ার পরেও তারা দ্রুত সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে গুছিয়ে নিচ্ছিল। যদিও তাদের ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে শহরের মূল কেন্দ্রে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং সামান্য কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবশিষ্ট থাকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। হাজার হাজার হাজারা মানুষ পাকিস্তান ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোন দেশে পাড়ি জমায়। বরাবরের মত হাজারাদের উপর প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলাতে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
হাজারাদের উপর আক্রমণ হয় আর পাকিস্তানের প্রশাসন হাজারাদের নিয়ে মেতে ওঠে ঠাট্টা মশকরায়। বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আসলাম রাইসানি একবার সন্ত্রাসী হামলায় ভুক্তভোগীকে বিদ্রূপ করে বলে একটা প্রদেশের মাত্র ৪০ জন মানুষ মরে যাওয়া এমন কোন আহামরি ঘটনা নয় যেখানে মানুষের সংখ্যা লাখ লাখ। মুখ্যমন্ত্রীর রসিকতা সীমা ছাড়িয়ে যখন সে বলে, ভুক্তভোগী হাজারাদের চোখের পানি মুছে দেয়ার জন্য সে কয়েক ট্রাক টিস্যু পেপার পাঠিয়ে দিতে পারে। ২০১৩ সালে হাজারাদের উপরে একটা ভয়াবহ বোমা হামলার পর রাইসানি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেই হামলাতে কোয়েটার শতাধিক হাজারা মারা যায়।

এই নীরবতা কি মেনে নেয়া যায়?

পাকিস্তানি সাংবাদিক এবং লেখক খালেদ আহমেদ ১১ মার্চ ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত নিউজ উইকের একটা প্রবন্ধে লেখেন, “পাকিস্তান রাষ্ট্রের যদি কখনো বিলীন হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় সেটা হবে কোয়েটার হাজারা সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার অপরাধে।” খালেদ আহমেদের প্রবন্ধই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় ঘটনার ভয়াবহতা কত গভীরে। প্রতিটি নৃশংস হামলার পরে রাষ্ট্র পক্ষ থেকে নিন্দা জ্ঞাপন আর সমবেদনার বিবৃতি শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। পাকিস্তানের হাজারাদের এখনই নিরাপত্তা দেয়া দরকার। সরকারকে অবশ্যই জঙ্গিবাদীদের নির্মূল করতে হবে, বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিদের অবকাঠামো ভেঙে দিতে হবে যাতে তারা অতীতের মত আর জঙ্গি হামলা করে না পারে এবং নিশ্চিত করতে হবে কোন জঙ্গি যেন শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি না পায়। যারা হাজারাদের উপর জঙ্গি হামলা চালায় এবং জঙ্গিবাদের মদদ দেয় তাদেরকে গ্রেফতার করে জঙ্গিবাদ বিরোধী আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। হাজারাদের সুরক্ষায় ন্যাশনাল একশন প্লান প্রস্তাব করা হয় এবং হাজারাদের সমস্যা সমাধানে ২০১৪ সালে কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু সরকারের সেই সুরক্ষা প্রস্তাব পড়ে আছে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কাগজের ফাইলের কবরে। সুরক্ষা প্রস্তাবনাকে অবশ্যয়ই বাস্তবায়ন করা দরকার। হাজারাদের জীবন রক্ষা করা এখন পাকিস্তানের সাংবিধানিক, আইনগত এবং নৈতিক দায়িত্ব কারণ হাজারা জনগোষ্ঠী অবুঝ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রিয়জনের লাশ কবরে শোয়াতে আর গণকবর খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্ত। হাজারাদের বিরুদ্ধে বারংবার আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে না পেরে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে কোন যুক্তিই আর গ্রহণযোগ্য নয়।

হাজারাদের জন্য বস্তির মত পৃথক বাসস্থান আর কিছু নির্দিষ্ট হাজারা ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেও সমস্যার মূলে কখনো হাত দেয়া হয়নি। কারণ হাজারাদের হত্যাকাণ্ড থামাতে জঙ্গিদের তৎপরতা নির্মূল করতে কোন বাস্তবিক পদক্ষেপ নেই। ফলে জঙ্গিরা কোয়েটা প্রদেশে নির্বিঘ্নে তাদের অভিযান জারি রেখেছে। জঙ্গিদের অবকাঠামো অবশ্যই চিরতরে সমূলে উৎপাটন করে এবং অর্থের যোগান বন্ধ করে জঙ্গি-বিস্তারের চক্রবৃদ্ধিহার বন্ধ করতে হবে। একই সাথে পাকিস্তান দেশটি যেহেতু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সন্ত্রাসবাদের জন্য নজরদারিতে আছে সেহেতু বেলুচিস্তানের একটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রতিনিয়ত হত্যা করলে সরকারের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কষ্টসাধ্য হলেও যদি আন্তর্জাতিক মহলকে পাকিস্তান বোঝাতে সক্ষম না হয় যে তারা যেকোনো ধরণের জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আন্তরিক, তারা কোন মতবাদকে প্রশ্রয় দেয় না তাহলে পাকিস্তানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাছাড়াও সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদের ফাঁদে আটকে মানুষের মৃত্যু ও সম্পদের ক্ষতির ভয়াবহ খাঁদে পড়বে পাকিস্তান। কোন সন্দেহ নেই আর বিন্দুমাত্র দেরি না করেই পাকিস্তান সরকারের উচিৎ জঙ্গি হামলায় মানুষ মারা গেলে শোকের বিবৃতি না দিয়ে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের নিরুদ্ধে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
রক্তমাখা পথ

১৯৯৯ সাল থেকে বেলুচিস্তানে হাজারা জনগোষ্ঠী উপর জঙ্গি আক্রমণের দিনপঞ্জি-

১৯৯৯ঃ ৬ অক্টোবর, ১৯৯৯, অজ্ঞাত পরিচয়ের ওঁত পেতে কিছু বন্দুকধারী হাজারাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বেলুচিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী সরদার নিসার আলিকে কোয়েটাতে অতর্কিত হামলা করে। মন্ত্রী আহত অবস্থায় কোনরকমে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয় তার গাড়িচালক। কোয়েটাতে হাজারাদের উপর নিয়মিত হামলার এখান থেকেই শুরু, এরপরেই হাজারাদের মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল।

২০০১ঃ কোয়েটার কিরানি সড়কের পুদগালি সংযোগস্থলে হাজারা সম্প্রদায়ের কিছু মানুষকে বহনকারী একটা সুজুকি পিকআপ আসতেই লুকিয়ে থাকা অস্ত্রধারী জঙ্গিরা অতর্কিত হামলা করে। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০১ সালের সেই হামলায় ৮ জন হাজারা মারা যায়।

২০০৩ঃ বন্দুকধারী মোটর সাইকেল আরোহী জঙ্গি অতর্কিত হামলাকারী কোয়েটার সারিয়াব সড়কে ১৩ জন হাজারা পুলিশ ক্যাডেটকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় আহত হয় আরও ৮ জন। হাজারা গোত্র থেকে পুলিশে সদ্য নিয়োগ পাওয়া এসব ক্যাডেটরা পুলিশ প্রশিক্ষণ স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছিল। ক্যাডেটদের বহনকারী টয়োটা পিকআপকে থামিয়ে গুলি করে জঙ্গিরা। এই জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করে।

২০০৩ঃ ৪ জুলাই ২০০৩, এবছরেই পাকিস্তান ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস জঙ্গি হামলা হয় কোয়েটা শহরের প্রিন্স রোডের একটা শিয়া মসজিদে। হাজারাদের লক্ষ্য করে জঙ্গি একে-৪৭, গ্রেনেডসহ তিনজন আত্মঘাতী ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুক্রবারে জুম্মা নামাজে জড়ো হওয়া শিয়া হাজারাদেরকে প্রথমে একে-৪৭ দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে, তারপরে আততায়ীদের একজন শরীরে থাকা বিস্ফোরকে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। হামলাতে শিশু কিশোরসহ নামাজরত ৫৮ জন হাজারা শিয়া মুসলিম নিহত হয়, আহত আরও দুই-শতাধিক। এছাড়াও জঙ্গিরা মসজিদের বাইরে দুইটা বোমা পেতে রাখে পরে বোমা নিষ্ক্রিয় করার বিশেষজ্ঞ দল বোমাকে অকার্যকর করতে সক্ষম হয়।

২০০৪ঃ ২ মার্চ ২০০৪ তারিখে কোয়েটার শিয়া হাজারাদের আশুরার তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় ৪০ জন নিহত হয়, আহত হয় ১০০ জনের মতো। তাজিয়া মিছিল কোয়েটা শহরের প্রবেশের মুখেই জঙ্গিরা প্রথমে ভিড়ের মধ্যে গ্রেনেড মারে, লোকজন আতংকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে শুরু এলোপাথাড়ি গুলি। যথারীতি বীর-দর্পে এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় লস্কর-ই-ঝাংভি। এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য যে, তাজিয়া মিছিলের শহর প্রদক্ষিণ পথকে নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার।

২০০৮ঃ ২০০৮ সালের ৩০ মে কোয়েটার সামুংলি সড়কে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় ৬ জন শিয়া মুসলিম মারা যায়, মারাত্বক আঘাতের পরেও বেঁচে যায় ৪ জন। বেলুচিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘বেলুচ লিবারেশন আর্মি’ জঙ্গিদল এই হামলার দায় নেয়। বিবৃতিতে বলা হয় নিহতরা বেলুচ জঙ্গিদের কার্যকলাপের উপর গোয়েন্দাগিরি করছি।

২০০৮ঃ তিনজন হাজারাকে কোয়েটা শহরে দুইটা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয় ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে। ইউসুফ আলি এবং মহম্মদ আলমকে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেলে আরোহী অস্ত্রধারী জঙ্গিরা গুলি করে। একই দিনে কোয়েটার মুনাওয়ার কলোনিতে হাজারা সম্প্রদায়ের জামান আলি জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়।

২০০৯ঃ ৫ জানুয়ারি ২০০৯, কোয়েটার কিরানি সড়কে জঙ্গিরা দুজন হাজারাকে হত্যা করে যদিও মহররম উপলক্ষে তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব কড়াকড়ি ছিল। পুলিশ উদ্ধার করে মহম্মদ এশা এবং মহম্মদ খানের মৃতদেহ।

২০০৯ঃ ১৪ জানুয়ারি ২০০৯, অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু অতর্কিত হামলাকারী ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্টসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে এদের মধ্যে তিনজন হাজারা। লস্কর-ই-জাংভিএই হামলার দায় স্বীকার করে।

২০০৯ঃ ২৬ জানুয়ারি ২০০৯, কোয়েটার ব্যস্ত জিন্নাহ সড়কে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজারা ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন আলি ইউসুফকে গুলি করে জঙ্গিরা। লস্কর-ই-জাংভিএই হামলার দায় স্বীকার করে।

২০০৯ঃ ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর রিফিউজি’র (UNHCR) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আমেরিকান নাগরিক জন সোলেকি’কে কোয়েটার চামান হাউজিং সোসাইটি থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাতনামা কিছু বন্দুকধারী। অপহরণের সময় গুলিতে নিহত হয় সোলেকি’র হাজারা ড্রাইভার।

২০০৯ঃ ৪ মার্চ ২০০৯, কোয়েটার পূর্বাঞ্চলের বাইপাসের কাছে চারজন হাজারা দিনমজুর খুন হয়।

২০০৯ঃ ১১ মার্চ ২০০৯, কোয়েটার আরবাব কারাম খান সড়কে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারায় দুজন হাজারা।

২০০৯ঃ ১১ মার্চ ২০০৯, কোয়েটার স্পিনি সড়কে অজ্ঞাত বন্দুকধারী তিনজন হাজারাকে গুলি করতে শুরু করে, সেই হামলায় তারা তিন জন কোনক্রমে বেঁচে যায়, সেখানে একজন পথচারীর গায়েও গুলি লাগে।

২০০৯ঃ ১২ এপ্রিল ২০০৯, অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে কিরানি সড়কে একজন মারা যায়। পুলিশ শনাক্ত করে নিহতের নাম গোলাম হুসাইন। হামলায় আরও একজন আহত অবস্থায় বেঁচে যায়। তারা দুজনেই হাজারা সম্প্রদায়ের।

২০০৯ঃ ১২ অক্টোবর ২০০৯, জঙ্গিরা বেলুচিস্তান খনির পরিদর্শক প্রধান আশরাফ আলিকে হত্যা করে কোয়েটার সারিয়াব সড়কে। আশরাফ আলি ছিলেন হাজারা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

২০০৯ঃ ১৫ অক্টোবর ২০০৯, হাজারা গোত্রের মুহম্মদ আসিফকে কোয়েটার জিন্নাহ সড়কে একটা দোকানে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। আসিফ ছিলেন মুসা জাফরির ছোটভাই, যদিও মুসা জাফরি বেলুচিস্তান পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

২০০৯ঃ জঙ্গিরা কোয়েটা-করাচী মহাসড়কে হাজারা গোত্রের ছোট্ট ছেলে মেহমুদ আলিকে হত্যা করে। ঐ একই হামলায় মহম্মদ ইউসুফ নামের আরও একটা বালক মারাত্মক জখম হয়।

২০১০ঃ ২০১০ সালের মার্চে কোয়েটার আখতারাবাদে গোলাম রসুল এবং মুহম্মদ আলি নামের দুজন হাজারা দিনমজুরকে হত্যা করা হয়।

২০১০ঃ ২০১০ সালের মার্চে বন্দুকধারী জঙ্গিরা হাজারা গোত্রের সাব্বির হুসাইনকে হত্যা করে। হাজার গঞ্জি এলাকায় তাকে হত্যা করার সময় সে তার দোকানে কাজ করছিল।

২০১০ঃ ২০১০ সালের মার্চে হাজার গঞ্জি এলাকায় সবজি বিক্রেতা মুহম্মদ আলি, গোলাম রাজা এবং রমজান আলিকে হত্যা করে। নিহতরা সবাই হাজারা শিয়া মুসলিম।

২০১০ঃ ২০১০ সালের মে মাসে আলি মুর্তাজা নামের একটা ছোট্ট হাজারা ছেলে খুন হয় সিরকি সড়কে।

২০১০ঃ ২০১০ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে জঙ্গিরা কোয়েটার মিজান চকে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় হাজারাদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায়, ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৫৯ জন আহত হয় আরও ২০০ জন। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। হামলার বিবৃতিতে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান জানায় সুন্নি ইসলামি চিন্তাবিদকে হত্যা করার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হয় যদিও তারা কাকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিশদ কোন তথ্য জানায় না।

২০১০ঃ ২০১০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে হাজারা ব্যবসায়ী মুহম্মদ আলির মৃতদেহ পাওয়া যায় কোয়েটার কিল্লি কামবারানি অঞ্চলে। হত্যা করার মাস খানেক আগে তাকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল। তার পরিবার অপহরণকারীদেরকে মুহম্মদের পরিবার তার মৃত্যুর দুইদিন আগেও ২ কোটি রুপি মুক্তিপণ দেয়। তবুও শেষরক্ষা সম্ভব হয়নি।

২০১০ঃ ২০১০ সালের অক্টোবরে মুক্তিপণের দাবীতে চারজন হাজারাকে অপহরণ করে, যদিও তারা কেউ আর বাঁচেনি। অপহৃতরা হলেন আল-আব্বাস স্টোরের মালিক হাজি আলি আকবর, তার ছেলে, দেহরক্ষী এবং দোকানের একজন কর্মী।

২০১০ঃ ২০১০ সালের নভেম্বরে কোয়েটার বরকত ঔষধালয়ের মালিক হাজি ইদ্রিসকে অপহরণ করে নিয়ে যায় জঙ্গিদল। অপহরণকারীরা হাজি ইদ্রিসের দেহরক্ষী মোহম্মদ আলিকে হত্যা করে যায়।

২০১০ঃ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে কোয়েটার আরবাব কারাম খান সড়কে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয় চার বছরের মেয়ে শিশুসহ তিনজন হাজারা।

২০১১ঃ মে ২০১১ একটা পার্কে সকালবেলা শিশুসহ ৮ জন হাজারা নিহত হয় জঙ্গিদের ছোড়া রকেটের আঘাতে আর বন্দুকের গুলিতে। রকেট ছোরার পরে হাজারদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাড়িতে বসে থাকা বন্দুকধারীরা এলোপাথাড়ি করে পালিয়ে যায়। লস্কর-ই-জাংভিএই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।

২০১১ঃ মে ২০১১, পুলিশে কর্মরত মুহম্মদ মুসা এবং ইসহাক আলি নামের দুইজন হাজারা গোত্রের মানুষকে তাদের বাড়ি ফেরার পথে সিপনি সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২০১১ঃ জুন ২০১১, পাকিস্তানের সাবেক অলিম্পিয়ান এবং পাকিস্তান স্পোর্টস বোর্ডের সহকারী পরিচালক আবরার হোসাইনকে তার বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাতনামা মোটর সাইকেল আরোহী আততায়ী গুলি করে পালিয়ে যায়। আবরার ছিলেন হাজারা বংশোদ্ভূত।

২০১১ঃ জুন ২০১১, ইরান থেকে তীর্থ দর্শন করে ফেরার পথে হাজারাদের বহনকারী বাস কোয়েটা শহরের হাজার গঞ্জি এলাকায় প্রবেশ করতেই অস্ত্রধারী জঙ্গিরা প্রবল গুলি বর্ষণ শুরু করে। এই হামলাতে ৩ জন হাজারা মারা যায় এবং আহত হয় ১১ জন।

২০১১ঃ জুন ২০১১, কোয়েটার সিপনি সড়কে হাজারাদের বহনকারী একটা সুজুকি ভ্যানে জঙ্গিরা হামলা চালালে একজন নারীসহ ১১ জন হাজারা মারা যায়।

২০১১ঃ সেপ্টেম্বর ২০১১, জঙ্গিরা বোমা হামলা করে চারজন নারীসহ ১৩ জন হাজারাকে হত্যা করে ঈদের দিন। বোমা হামলার লক্ষ্য ছিল ঈদের সকাল বেলার নামাজে উপস্থিত হাজারা সম্প্রদায়। কিন্তু যে গাড়িটি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে বহন করছিল সেটা মূল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগেই একটা দুর্ঘটনায় বিস্ফোরিত হয়ে যায় সামান্য দূরত্বে।

২০১১ঃ সেপ্টেম্বর ২০১১, কোয়েটা থেকে হাজারাদের বহনকারী একটা তীর্থযাত্রার গাড়িতে হামলা জঙ্গিরা। কোয়েটার মাসটুং এলাকায় হাজারাদের গাড়ি থামিয়ে এক একজন করে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ২৬ জন হাজারাকে গুলি করা হয়।

২০১১ঃ সেপ্টেম্বর ২০১১, অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হাজারাদের বহনকারী একটা ভ্যানে হামলা চালিয়ে ৩ জন হাজারাকে হত্যা করে। হামলাতে কোন ক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় একটা হাজারা শিশু।

২০১১ঃ অক্টোবর ২০১১, কোয়েটার সবজি বাজারে যাওয়ার পথে ১৪ জন হাজারা সবজি বিক্রেতাকে হত্যা করে অস্ত্রধারী জঙ্গীদল।

২০১২ঃ ২৫ জানুয়ারি ২০১২, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’র পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, শিল্পী আবিদ হুসাইন নাজিস, সরকারী কর্মকর্তা মহম্মদ আনোয়ার হুসাইন কোয়েটা থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেকোনগি সড়কে গুলিবিদ্ধ হন। হাজারা গোত্রের তিনজন একটা গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে আততায়ীরা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে রাস্তার মধ্যে।

২০১২ঃ ২৬ মার্চ ২০১২, ইজাজ হুসাইন এবং এবং আলি আসগার নামের দুজনকে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সাবজার সড়কে গুলি করে হত্যা করে। নিহত দুজনেই হাজারা গোত্রের।

২০১২ঃ ২৮ মার্চ ২০১২, জাওয়াদ আহমেদ এবং খাদেম হুসাইন অস্ত্রধারী জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়। হামলা থেকে বেঁচে যায় তাদের তিনজন সঙ্গী। মাসটুং জেলার দাসত এলাকায় এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।

২০১২ঃ ২৯ মার্চ ২০১২, অজ্ঞাত জঙ্গিদের গুলিতে কোয়েটার স্পিনি সড়কে কমপক্ষে ৫ জন হাজারা নিহত হয় এবং আহত হয় ৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে হামলা হয়েছিল ইসলাম ধর্মের আন্তঃ-সংঘর্ষের কারণে।

২০১২ঃ ৩ এপ্রিল ২০১২, কোয়েটার মেকোনগি সড়কে দুইটা দোকানে ২ জন হাজারাকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী। নিহতদের নাম যথাক্রমে আলি আকবর এবং আলি রেজা।

২০১২ঃ ৯ এপ্রিল ২০১২, কোয়েটার প্রিন্স সড়কে একটা জুতার দোকানে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন মামা করিম, মহম্মদ হাসান, কুরবান আলি, নাদির আলি, সাব্বির হুসাইন। নিহতরা সবাই হাজারা।

২০১২ঃ ১৪ এপ্রিল ২০১২, বন্দুকধারী আততায়ী মোটরবাইকে চড়ে একটা চায়ের দোকানে অতর্কিতে গুলি শুরু করে। ঘটনা স্থলেই মারা যায় তিনজন। একই দিনে কোয়েটার ব্রিউয়ারি সড়কে ওঁত পেতে থাকা অস্ত্রধারীদের গুলিতে ট্যাক্সির মধ্যে ৬ জন হাজারা নিহত হয়। নিহতরা হাজারা অধ্যুষিত কিল্লি ইব্রাইমাজিতে যাচ্ছিল।

২০১২ঃ এপ্রিল ২০১২, মোটর সাইকেল আরোহী অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে কুয়ারি সড়কের একটা টায়ারের দোকানের মালিক সালমান আলি হাজারা নিহত হন।

২০১২ঃ ২১ এপ্রিল ২০১২, কোয়েটার ব্রিউয়ারি সড়কে হাজারা শহর থেকে নিজেদের বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় বাবন আলি এবং হুসাইন আলি নামের দুই হাজারা ভাই।

২০১২ঃ মে ২০১২, অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে নিজ দোকানে নিহত হয় টায়ার ব্যবসায়ী মহম্মদ আলি।

২০১২ঃ মে ২০১২, কোয়েটার পাসপোর্ট অফিসের সামনে একটা রাস্তার মোড়ে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয় মহুম্মদ তাহির এবং মহম্মদ কাদির। নিহত দুজনেই হাজারা। গুলি করে তারা পালিয়ে যায়।

২০১২ঃ জুন ২০১২, ইরান থেকে ফেরার পথে তীর্থযাত্রার বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চৌদ্দ-জন হাজারা নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে দুইজন পুলিশ এবং একজন নারীও ছিল। আহত হয় প্রচুর মানুষ। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজের গাড়িতে বিস্ফোরক নিয়ে কোয়েটার হাজার গঞ্জিতে তীর্থযাত্রার সেই বাসে হামলা করে।

২০১২ঃ আগস্ট ২০১২, হাজারা শহরের মারিয়াবাদ থেকে কোয়েটার স্পিনি সড়কে যাওয়ার পথে বন্দুকধারীদের গুলিতে তিনজন হাজারা নিহত হন এবং তিন জন মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

২০১২ঃ আগস্ট ২০১২, মোটরবাইকে আরোহী বন্দুকধারীদের গুলিতে রিকশায় করে হাজারা শহরে যাওয়ার পথে তিনজন হাজারা নিহত হয়। মৃতদের মধ্যে দুইজনকে চিহ্নিত করা গেছে একজন গোলাম হুসাইন এবং অন্যজন খাদিম হুসাইন।

২০১২ঃ সেপ্টেম্বর ২০১২, মোটরসাইকেল আরোহীদের দুইটি পৃথক হামলায় সাতজন হাজারা শিয়া মুসলিম নিহত হয়।

২০১২ঃ অক্টোবর ২০১২, একটা ভাঙ্গারি দোকানে একটা হামলায় চারজন হাজারা গুলিবিদ্ধ হয়। জঙ্গিরা মোটর সাইকেলে এসে সিরকি সড়কের কাবারাহি মার্কেটে অকস্মাৎ গুলি বর্ষণ করলে ঘটনা স্থলে আতা আলি, মুহম্মদ ইব্রাহিম, গুলাম আলি এবং সৈয়দ আভিজ নিহত হয়। আততায়ীরা হত্যা নিশ্চিত করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

২০১২ঃ ৬ নভেম্বর ২০১২, বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার স্পিনি সড়কে মোটরবাইকে চড়ে আসা জঙ্গিরা একটা হলুদ ক্যাবে গুলি করলে হাজারা সম্প্রদায়ের তিনজন নিহত হয়। ঐ হামলায় দুইজন আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। বেলুচিস্তান পুলিশের ডিআইজি হামিদ শাকিল এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানায়, “নিহতরা হাজারা শহরে যাওয়ার পথে ক্যাবের মধ্যে তারা আক্রমণের শিকার হয়। ঘটনা স্থলেই তিনজন নিহত হয় এবং আহতদেরকে দ্রুত বোলান মেডিকেল কলেজ টিচিং হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।”

২০১২ঃ ৪ ডিসেম্বর ২০১২, কোয়েটার বিমানবন্দর সড়কের কাছে আসকারি পার্কে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই ভাইকে গুলি করে জঙ্গিরা। সেখানেই এক ভাই মারা যায় এবং অন্য ভাই মারাত্মক আহত হয়। আক্রান্ত দুই ভাই শিয়া মুসলিম এবং পুলিশের কনস্টেবল। জঙ্গিরা দুজনকে দীর্ঘপথ ধাওয়া করে আসকারি পার্কের কাছে এসে গুলি করে।

২০১৩ঃ ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারিতে কোয়েটার আলমদার সড়কে শিয়া হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এই হামলায় কমপক্ষে ৮০ জনের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত হয় আরও ১২০ জন। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আলমদার সড়কের একটা স্নুকার ক্লাবে হামলা করে নিজেকে বোমার আঘাতে উড়িয়ে দেয়। উদ্ধার কর্মীরা যখন বোমার আঘাতে মৃতদেহ আলাদা করছিল আর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করছিল তখনই দ্বিতীয় দফায় আরেকবার শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে নতুন করে বাড়তে থাকে লাশের মিছিল। লাশের সারিতে পুলিশও বাদ যায় নি। লস্কর-ই-জাংভিভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করে।

২০১৩ঃ ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারিতে জঙ্গিদের গুলিতে কোয়েটার সাবজাল সড়কে আলি দাদ হাজারা এবং সমির বালোচ নামের দুইজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়।

২০১৩ঃ ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে কোয়েটায় হাজারা শিয়া অধ্যুষিত দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গিরা নারী শিশুসহ ৮৪ জনকে হত্যা করে। এই হামলায় আহত হয় ২০০ জন।

২০১৩ঃ ২২ জুলাই ২০১৩ বেলুচিস্তানের রাজধানী শহর কোয়েটার শাহারা-ই-ইকবাল সড়কে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা একটা ট্যাক্সিতে গুলি করে ট্যাক্সিতে আরোহী দুজন শিয়া হাজারাকে হত্যা করে।

২০১৩ঃ ২৪- নভেম্বর ২০১৩, কোয়েটার কিরানি সড়কে মুসলিম জাতিগত সংঘাতে আরিফ হুসাইন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২০১৪ঃ ১২ এপ্রিল ২০১৪, কোয়েটার সারিয়াব সড়কে দুজন বাসযাত্রী শিয়া হাজারাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০১৪ঃ ২৯ জুলাই ২০১৪, কোয়েটার সবজল সড়ক এলাকায় অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদের গুলিতে দুইজন শিয়া হাজারা নিহত হয়। নিহতদের নাম জাকির হুসাইন এবং গুলাম হুসাইন।

২০১৪ঃ ২৩ অক্টোবর ২০১৪ সালে বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিগত সংঘাতের কারণে হাজারা সম্প্রদায়ের উপর একযোগে পরিচালিত হামলায় শিয়াদেরকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়। হাজারগঞ্জি এলাকায় ভোরবেলার এক হামলাতেই ৮ জন হাজারা নিহত হয়। নিহতরা প্রতিদিনের মত সবেমাত্র সবজির বাজার শেষ করে বাসায় ফিরে যাচ্ছিল। এক ঘণ্টার ব্যবধানে বন্দুকধারী জঙ্গিবাহিনী মোটরবাইকে করে কিরানি সড়কে গিয়ে অতি দ্রুত আর একটা হামলা চালিয়ে আরও হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা করে।

২০১৫ঃ ১২ মে ২০১৫ কোয়েটার কাসি সড়কে পরিকল্পিতভাবে হাজারাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করলে হাজারা সম্প্রদায়ের ৫ জন নিহত হয়। এই হামলায় দুইজন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়।

২০১৫ঃ ২৫ মে ২০১৫, কোয়েটার মুহম্মদ আলি জিন্নাহ সড়কের দুইটা পৃথক ভবনে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদের গুলিতে তিনজন শিয়া হাজারা নিহত হয়, আহত হয় আরও নয়জন।

২০১৫ঃ ২০১৫ সালে আনোয়ার আলি হাজারা নামের একজন ব্যবসায়ীকে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা গুলি করে হত্যা করে কোয়েটার ফাতিমা জিন্নাহ সড়কে। এই হত্যার প্রতিবাদে হাজারা জনগোষ্ঠী মানব বন্ধন করে বিচার চায়।

২০১৫ঃ ২০১৫ মুহম্মদ আরিফ এবং মুহম্মদ হোসাইন নামের দুইজন শিয়া হাজারাকে হত্যা করে জঙ্গিবাহিনী। অন্য একটা হামলায় মুহম্মদ এশা নামের এক হাজারা যুবক তার নিজের কাপড়ের দোকানে গুলিবিদ্ধ হয়। কোন জঙ্গিবাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

২০১৫ঃ ২০১৫ সালে কোয়েটার বাচা খান চক এরিয়াতে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদের গুলিতে কমপক্ষে পাঁচজন হাজারা নিহত হয়।

২০১৫ঃ ২০১৫ সালে কোয়েটাতে নিজের বাড়ি যাওয়ার পথে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয় হাজারা সম্প্রদায়ের গুলাম রাজা।

২০১৫ঃ ৭ নভেম্বর ২০১৫ অতর্কিত হামলাকারীরা কোয়েটার স্পিনি সড়কে দুইজন হাজারাকে হত্যা করে।

২০১৬ঃ ২০১৬ সালের ২৮ জুন হাজারা গোত্রের দুইজন পুলিশ নিহত হয়। কোয়েটার হাজারাগঞ্জ এলাকায় নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশের ড্রাইভার মুহম্মদ আলি এবং নিরাপত্তা-কর্মী মুহম্মদ আইয়ুব।

২০১৬ঃ ২০১৬ সালের ১ আগস্টে গুলাম নবী এবং মুহম্মদ নবীকে লক্ষ্যে করে আক্রমণ করে জঙ্গিরা। কোয়েটার সারিয়াব সড়কে সরকারী ডিগ্রী কলেজের নিকটেই বাড়ি ফেরার পথে এই দুইজন শিয়া হাজারা খুন হয়।

২০১৬ঃ ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর কোয়েটার কিরানি সড়কে পুডগালি চকে যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা গুলি করে কমপক্ষে চারজন হাজারা শিয়া মুসলিম নারীকে হত্যা করে। এই হামলায় আহত অবস্থায় কোনক্রমে বেঁচে যায় একজন।

২০১৭ঃ ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি কোয়েটার স্পিনি সড়কে কিলা মুবারক এলাকায় শিয়া-সুন্নি দ্বান্দ্বিকতায় অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয় পাঁচজন হাজারা শিয়া মুসলমান।

২০১৭ঃ ৪ জুন ২০১৭, শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের একজন তার বোনকে নিয়ে কোয়েটার স্পিনি সড়কের দিকে যাওয়ার পথে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়।

২০১৭ঃ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, কোয়েটার কুচলাক এলাকায় চামান থেকে ফেরার পথে বিকেলের দিকে একটা যাত্রীবাহী গাড়িতে হামলা করে জঙ্গিরা পাঁচজন হাজারাকে হত্যা করে।

২০১৭ঃ ৯ অক্টোবর ২০১৭, কোয়েটার গাওয়ালমান্ডি এলাকায় কাসি সড়কে একটা গাড়িতে অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা গুলি করে পাঁচজন শিয়া হাজারাকে গুলি করে হত্যা করে এবং একজ গুরুতর আহত হয়।

২০১৭ঃ ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, কোয়েটার নাখাইলাবাদ এলাকার পশ্চিম বাইপাস সড়কে হাজারাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করে জঙ্গিরা। এই হামলায় দুইজন নিহত হয় আহত হয় আরও দুইজন।

২০১৮ঃ ২০১৮ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোয়েটা শহরে একটা বাইপাস সড়কে শিয়া সুন্নি সংঘাতে হাজারা সম্প্রদায়ের দুইজনকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। একজন মারাত্মক আহত হয়। ১৮ এপ্রিল একজন হাজারা মুদি দোকানদার নিহত হয় এবং এপ্রিলের শুরুতে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয় জঙ্গিদের আক্রমণে।

২০১৮ঃ হাজারা সম্প্রদায়ের দুজন নিহত হয়। কোয়েটার পশ্চিম প্রান্তের বাইপাসে আরও একজনকে পাওয়া যায় রক্তাক্ত অবস্থায়।

২০১৯ঃ ১২ এপ্রিল ২০১৯ সালে হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আঘাত করা শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২০ জন হাজারা মারা যায়। হামলায় মারাত্মকভাবে জখম হয় আরও কমপক্ষে ৪৮ জন হাজারা/। কোয়েটার হাজারগঞ্জির জনবহুল বাজার এলাকার এই হামলায় দায় স্বীকার করে আইসিসের মুখপাত্র। দায়েশ বৃষ্টির গান গেয়ে শোনাও।

রেফারেন্স:

• Philips, David J., “Peoples on the move: Introducing the nomads of the world”, p. 267.
• Minahan, James, “Encyclopedia of stateless nations”, p. 728.
• Farr, Grant, “Disappearing people? Indigenous groups and ethnic minorities in South Asia”, p. 155

• https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1180246/
• https://www.researchgate.net/publication/319310620_Genetic_portrait_of_the_Hazara_population_of_Pakistan_with_26_Y-STR_loci_INTRODUCTION
• https://www.independent.co.uk/news/science/a-family-affair-how-genetic-mixing-has-affected-us-all-9126993.html
• https://www.idahostatejournal.com/members/descendants-of-genghis-khan-fight-for-survival-in-afghanistan-and/article_3bbd13f3-abfb-5e48-a9e0-4ebc58078049.html
• https://www.hrw.org/legacy/reports/reports98/afghan/Afrepor0.htm
• https://fp.brecorder.com/2017/11/20171110233723/
• https://epaper.dawn.com/DetailImage.php?StoryImage=05_05_2018_009_002
• https://timesofindia.indiatimes.com/world/pakistan/is-claims-responsibility-for-attack-in-pakistans-quetta/articleshow/68872236.cms
• https://www.dawn.com/news/1475867
• https://www.dawn.com/news/560121
• https://www.dawn.com/news/1396273
• http://newsweekpakistan.com/hunting-the-hazara/
• https://www.dawn.com/news/1477660
• https://www.aljazeera.com/indepth/features/quetta-hazaras-despair-religious-supremacists-contest-election-180712222735530.html
• https://opensiuc.lib.siu.edu/cgi/viewcontent.cgi?referer=https://en.wikipedia.org/&httpsredir=1&article=1224&context=theses
• https://www.refworld.org/docid/3f52085b4.html
• https://tribune.com.pk/story/267225/who-are-the-hazara/
• https://www.aljazeera.com/news/2018/11/afghan-hazaras-slaughtered-australian-families-action-181130021409272.html
• https://www.refworld.org/docid/3f52085b4.html
• https://www.bbc.com/news/world-asia-42219669
• https://www.khaleejtimes.com/international/pakistan/terror-group-claims-suicide-attack-in-pakistans-quetta
• https://www.dawn.com/news/777973/timeline-hazara-killings-in-balochistan
• https://gmcmissing.wordpress.com/2009/02/06/hazara-under-attack-in-quetta/
• http://www.na.gov.pk/uploads/documents/1333523681_951.pdf
• http://www.ipripak.org/panel-discussion-on-national-action-plan-nap-imperatives-and-impediments/
• https://minorityrights.org/minorities/hazaras/
• https://study.com/academy/lesson/who-are-the-hazara-people-definition-culture.html
• https://www.wdl.org/en/item/11510/
• http://www.iranicaonline.org/articles/hazara-4
• https://www.worldatlas.com/articles/who-are-the-hazara-people.html
• http://www.kushan.org/general/other/part1.htm
• https://historypak.com/hazara-culture/
• https://www.dawn.com/in-depth/i-am-hazara/
• https://minorityrights.org/minorities/hazaras/
• https://www.refworld.org/cases,AUS_AAT,592d82644.html
• https://www.refworld.org/pdfid/514308cb2.pdf
• https://www.hrw.org/report/2014/06/29/we-are-walking-dead/killings-shia-hazara-balochistan-pakistan
• https://www.bbc.com/news/world-asia-42219669
• https://www.bbc.com/news/world-asia-46262269
• https://www.khaleejtimes.com/international/pakistan/terror-group-claims-suicide-attack-in-pakistans-quetta
• Aron Edwards, “war”, Beginner`s guides, Chapter: what is war, 2016.
• Marc Sageman, “Misunderstanding terrorism”, Chapter 4, Page 121-162, University of Pennsylvania,
• Philadelphia, September 2, 2016, Page. 1-122.
• Robert Spencer, “The Complete Infidel’s Guide to ISIS”,2015
• Anthony J. Masys, “Disaster Forensics: Understanding Root Cause and Complex Causality”, springer,
• 2016, page.168.
• Joseph Spark, “Atrocities Committed By ISIS in Syria & Iraq: ISIL/Islamic State/Daesh”, 2014.
• Michael Glint, “Can a War with Isis Be Won? Isil/Islamic State/Daesh”, 2014
• Charles Lister, “Profiling the Islamic state"13, November 2014, Brookings Doha Centre Analysis paper,
• page 3-36
• http://www.brookings.edu/~/media/Research/Files/Reports/2014/11/profiling%20islamic%20state%20lister
• http://www.eurasiacenter.org/publications/ISIS_Briefing_Colin_Tucker.pdf. Retrieved on 25 November,
• 2014
• https://www.thesun.co.uk/news/2595042/isis-islamic-state-daesh-terror-group-name/
• https://edition.cnn.com/2014/08/08/world/isis-fast-facts/index.html
• https://web.archive.org/web/20140824121659/http://english.al-akhbar.com/node/21234
• https://www.lrb.co.uk/v38/n05/patrick-cockburn/end-times-for-the-caliphate
• https://books.google.com.pk/books?id=A8nuBQAAQBAJ&pg=PAPA99&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
• https://books.google.com.pk/books?id=koeMCwAAQBAJ&pg=PAPA21&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
• https://www.rand.org/content/dam/rand/pubs/research_reports/RR600/RR637/RAND_RR637.pdf
• https://www.nytimes.com/2010/04/20/world/middleeast/20baghdad.html
• https://www.washingtoninstitute.org/uploads/Documents/pubs/ResearchNote_20_Zelin.pdf
• https://web.archive.org/web/20070930180847/http://www.jamestown.org/publications_details.php?volume_id=400&issue_id=3179&article_id=2369020
• https://www.theguardian.com/world/2007/may/01/iraq.alqaida
• http://www.washingtonpost.com/wp-dyn/content/article/2006/06/09/AR2006060902040.html?noredirect=on
• https://web.archive.org/web/20070401114027/http://www.nps.edu/Library/Research/SubjectGuides/SpecialTopics/TerroristProfile/Current/AlQaidaIraq.html
• Jacinta Carroll, “COUNTERING DAESH EXTREMISM EUROPEAN AND ASIAN
• RESPONSES”,2016, page 1-270
• Tariq Parvez, “The Islamic State in Pakistan”, United States Institute of Peace, 2016
• Tariq Parvez, “The Islamic State in Pakistan”, Department of Humanities, Social and Political
• Sciences,2016
• https://books.google.com.pk/books?id=RMeqBfA9-RUC&pg=PA37&dq=defintion+salfist+jihadist&hl=en&sa=X&ei=AH1nVaCEFYnloATx_YKYDQ&redir_esc=y#v=onepage&q=defintion%20salfist%20jihadist&f=false
• https://www.aljazeera.com/news/2017/10/gunmen-target-hazara-shia-muslims-quetta-city-171009094724088.html
• https://www.aljazeera.com/news/2017/10/gunmen-target-hazara-shia-muslims-quetta-city-171009094724088.html
• https://cisac.fsi.stanford.edu/mappingmilitants/profiles/mujahideen-army
• http://www.hrw.org/reports98/afghan/Afrepor0-01.htm
• https://www.cbsnews.com/news/the-taliban-in-afghanistan/
• https://books.google.com.pk/books?id=lusgDAAAQBAJ&pg=PA16&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
• https://www.nytimes.com/2018/12/20/world/asia/taliban-afghanistan-usa-military.html
• http://www.nytimes.com/2009/08/08/world/asia/08pstan.html.
• https://www.itct.org.uk/archives/itct_terrorist_net/islamic-emirate-of-afghanistan-afghan-taliban
• https://core.ac.uk/download/pdf/145192828.pdf
• https://www.cambridge.org/core/journals/journal-of-asian-studies/article/taliban-militant-islam-oil-and-fundamentalism-in-central-asia-by-ahmed-rashid-new-haven-yale-university-press-2001-288-pp-3250-cloth-1495-paper-originally-published-as-taliban-militant-islam-oil-and-the-new-great-game-in-central-asia-london-and-new-york-i-b-taurus-2000/3BA28DC49FBD26E13905197DC884F663
• http://www.cfr.org/publication/15422/pakistans_new_generation_of_terrorists.html?breadcrumb=%2Fbios%2F13611%2Fjayshree_bajoria%3Fgroupby%3D1&hide=1&id=13611&filter=456
• http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/3645114.stm
• https://www.belfercenter.org/publication/profile-tehrik-i-taliban-pakistan
• https://www.ctc.usma.edu/posts/the-complicated-relationship-between-the-afghan-and-pakistani-taliban
• http://www.state.gov/j/ct/rls/crt/2012/209989.htm
• http://www.understandingwar.org/sites/default/files/BackgrounderIMU_28Jan.pdf;
• https://www.ctc.usma.edu/v2/wp-content/uploads/2012/07/CTC_Haqqani_Network_Financing-Report__Final.pdf
• http://tribune.com.pk/story/367215/not-allies-8-dead-as-ttp-haqqani-network-clash-in-north-waziristan/
• http://www.longwarjournal.org/archives/2013/07/313_brigade_claims_c.php
• http://www.state.gov/j/ct/rls/crt/2013/
• http://www.state.gov/j/ct/rls/crt/2010/170264.htm
• https://www.ctc.usma.edu/posts/a-profile-of-tehrik-i-taliban-pakistan.
• http://carnegieendowment.org/files/LeT_menace.pdf;
• http://www.worldaffairsjournal.org/article/next-al-qaeda-lashkar-e-taiba-and-future-terrorism-south-asia
• https://www.aljazeera.com/news/2017/10/gunmen-target-hazara-shia-muslims-quetta-city-171009094724088.html
• https://www.reuters.com/article/us-pakistan-quetta-bombing/pakistani-shiites-call-off-protests-after-quetta-bombing-arrests-idUSBRE91I0Q420130219
• https://thediplomat.com/2015/08/malik-ishaq-and-pakistans-sectarian-violence/
• https://cisac.fsi.stanford.edu/mappingmilitants/profiles/lashkar-e-jhangvi-lej
• https://thediplomat.com/2016/11/an-alliance-between-islamic-state-and-lashkar-e-jhangvi-in-pakistan-was-inevitable/
• https://www.satp.org/satporgtp/countries/pakistan/terroristoutfits/Ssp.htm
• https://www.aljazeera.com/news/2017/10/gunmen-target-hazara-shia-muslims-quetta-city-171009094724088.html
• https://cisac.fsi.stanford.edu/mappingmilitants/profiles/islamic-state
• http://www.dopel.org/SSP.htm
• https://www.hrw.org/report/2014/06/29/we-are-walking-dead/killings-shia-hazara-balochistan-pakistan
• http://humanityjournal.org/issue-5-3/from-helsinki-to-human-rights-watch-how-an-american-cold-war-monitoring-group-became-an-international-human-rights-institution/
• https://www.ecoi.net/en/document/1185032.html
• https://www.refworld.org/topic,50ffbce5307,50ffbce5394,,0,HRW,,.html
• https://www.reuters.com/article/us-europe-migrants-hazaras/who-are-the-hazaras-and-what-are-they-escaping-idUSKCN11S0WG
• https://www.dawn.com/news/1365033
• https://www.academia.edu/25300077/SIMMERING_SHIA_GENOCIDE_IN_PAKISTAN_EARLY_WARNING_AND_ACTION
• UN Human Rights Committee, “The Nature of the General Legal Obligation Imposed on States Parties to the Covenant (art. 2),” General Comment No. 31, UN Doc. CCPR/C/74/CRP.4/Rev.6, March 29, 2004, para. 8.
• http://dawn.com/2013/02/22/army-says-it-has-no-links-with-lj/
• https://www.thenews.com.pk/archive/print/627907-usman-kurd,-the-man-who-caused-fall-of-raisani-govt
• https://www.thenews.com.pk/print/24495-killing-of-usman-kurd-a-major-blow-to-lej
• https://www.pakistantoday.com.pk/2019/04/13/hazarganji-blast-hazara-community-stages-sit-in-at-western-bypass-in-quetta/
• https://roadsandkingdoms.com/2018/hazara-restaurant-quetta-pakistan/
• http://old.satp.org/satporgtp/countries/pakistan/Balochistan/data/incident_2011.htm
• http://old.satp.org/satporgtp/countries/pakistan/Balochistan/timeline/2003.htm
• https://www.dawn.com/news/777973

মূল প্রবন্ধ: The Hazara People: A Trail of Blood & Persecution