আজকের লেখার প্রসঙ্গ হল চিন্তা এবং নিজেকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি আয়নায় দাঁড়িয়ে যদি দেখেন একটা মোটা কিংবা কালো মুখে কালচে দাগ, কিংবা চোখের নিচে কালি পড়া একটা কুৎসিত মানুষ তবে এই লেখা আপনার জন্য। সাইকোলজিতে একটা কথা আছে ‘থটস আর অনলি থটস নট ফ্যাক্টস”। এর মানে হল , চিন্তা বিষয়টা মস্তিষ্কের নিউরোনগুলোর তড়িৎরাসায়নিক সংকেতগুলো ছাড়া আসলে আর কিছু না। চিন্তা মানেই বিষয়টা সত্যি এমন না, আর এই চিন্তা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে আমরা যা দেখি তা আসলে সত্যি না।
আজকের বিষয় মিডিয়া ম্যানুপুলেশন না।কিন্তু এর সাথে মিডিয়া ম্যানুপুলেশন জড়িত বলে প্রথমে মিডিয়া ম্যানুপুলেশন নিয়ে আলোচনা করা জরুরী । মিডিয়া ম্যানুপুলেশন সাথে হয়ত অনেকেই পরিচিত, সহজ করে বললে, এর মানে হল আমাদের চিন্তা এবং মন এই মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উদাহরণ দেই, এই যে মেয়েদের শরীরের এর শেপ ৩৬-২৪-৩৬ হলে সেটা পারফেক্ট বডি, এই কনসেপ্ট আপনি অবশ্যই জানেন, কিন্তু আপনি কিভাবে জানেন? আপনার মাথায় কি করে এল,কে এই মিজারমেন্ট করল আর কেন করল সেটা ভেবেছেন?
উত্তর দিচ্ছি, তার আগেএকটু ইতিহাস এর দিকে তাকাই, এই নারী শরীর নিয়ন্ত্রণের কনসেপ্ট নতুন না। চীনে মেয়েদের পা এর আঁকার ছোট করা, মিশরে সমস্ত চুল ফেলে দিয়ে পরচুল ব্যবহার, গলার উচ্চতা বাড়ানোর জন্য করেন উপজাতিদের রিং এর ব্যবহার, সবই নারী শরীর নিয়ন্ত্রেনের উদাহরণ। কেউ ধর্ম, কেউ রীতি কিংবা কেউ সৌন্দর্যের নামে নারী শরীরের এই পরিবর্তন কে জায়েজ করেছে।
ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান সম্ভ্রান্ত নারীরা লম্বা গাউনের নিচে এক ধরনের শক্ত অন্তর্বাস এবং বডি শেইপার ব্যবহার করতেন যাতে তাদের স্তন্য, কোমর এবং নিতম্বের আঁকার পরিবর্তিত হত। যেহেতু ক্ষমতাধর এলিট সোসাইটি ঘাস খেলে সেটাই হয় স্ট্যান্ডার্ড তাই পরবর্তীতে সাধারণ নারীরা ঐ সব নারীদের কে অনুকরণ করতে বডি শেইপিং শুরু করে।
আর বর্তমানে বডি অপ্সেশনের কনসেপ্ট লুফে নিয়েছে ক্যাপিটালিজম। ৩৬-২৪-৩৬ কনসেপ্ট হল, এই বডি অপ্সেশন কে কাজে লাগিয়ে ক্যাপিটালিজম প্রসারের ঠিকাদার মিডিয়ার উগড়ে দেয়া জঙ্গাল। জঙ্গাল বলার কারন, ২৪ কোমর মানে অস্বাভাবিক রকম সরু কোমর, মেডিক্যাল সাইন্স এর ভাষ্য অনুযায়ী এই কোমর শরীরের উপরের ভাগের সমস্ত ভার বহন করার জন্য মোটেও হেলদি না।
কিন্তু প্লেবয় ম্যাগাজিন এই কনসেপ্ট সারা পৃথিবীতে এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, নারী শরীর এর জন্য এটাই স্ট্যান্ডার্ড যৌনাবেদনাময়ী শরীর কিংবা পারফেক্ট শরীর। আর এই শরীর পাবার জন্য সারা পৃথিবীটিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রডাক্ট বিক্রি হচ্ছে। প্লেবয়ের বদৌলতে পাড়ার সদ্য গোঁফ গজানো ছেলেটা জানে নারী শরীর এর পারফেক্ট সাইজ হল ৩৬-২৪-৩৬! আর সদ্য বেণি দুলিয়ে হাই স্কুল পেরোন মেয়েটা জানে ফোমের অন্তবাস না পরলে তার শরীর কুৎসিত লাগবে!
এবার আসি আজকের লেখার প্রসঙ্গে, লেখার শুরুতেই বলেছিলাম আজকের লেখার প্রসঙ্গ হল চিন্তা তথা নিজেকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি আসলে আয়নায় নিজেকে দেখেন না, দেখেন আপনার মাথায় বহুদিন ধরে যে কনসেপ্টগুলো ঢুকানো হয়েছে সেই স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে মেলে এমন মানুষটাকে, যখন মেলে না তখন নিজেকে কুৎসিত ভাবতে শুরু করেন।
আপনি জেনেছেন কালো দাগ মানে কুৎসিত তাহলে কালো টিপ কেন পরেন ? ওটাও তো দাগ তাই না ? কালো রঙ মানে কুৎসিত তাহলে কালো কাজল কেন পরেন ? শরীরে প্রচুর পশম মানে কুৎসিত তাহলে মাথায় সেই পশম মানে চুল না থাকলে সেটা কুৎসিত কেন ? এই যে শরীরে মেদ জমা কুৎসিত কিন্তু স্তন্যে কিংবা নিতম্বে মেদ কেন সুন্দর ? কিংবা ভ্রু প্লাক অথবা বর্তমানে প্লাক করা ভ্রু একে মোটা করা কেন?
কারন আপনি নিজেকে যখন আয়নায় দেখেন তখন চারপশের মাধ্যমগুলো থেকে শেখা সৌন্দর্যের মাপকাঠিগুলো দিয়ে নিজেকে বিচার করতে বসেন। দীপিকা সুন্দর কিন্তু তার স্তন্য ৩৬ না অথচ আপনার হয়ত স্তন্য ভরাট কিন্তু আপনি সুন্দর না । বিষয়টা খুব উদ্ভট না ? প্লেবয় এর মডেলরা শুকনা পাঠকাঠি অথচ আপনি শুকনা বলে রীতিমত কুৎসিত ভাবেন নিজেকে! কিন্তু কেন ?
প্রত্যেকটা মানুষ এর শরীর আলাদা, কেউ শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য শরীর চর্চা করে সেটা আলদা বিষয় কিন্তু এর সাথে রঙ, শরীরের গঠন, আঁকার , সাইজ এর কোন সম্পর্ক নেই পুরাটাই দেখার দৃষ্টি ভঙ্গি ।
এই কারনে সন্তানের কোন খুঁৎ মায়ের চোখে পড়ে না। এই কথা নিজের জন্য প্রযোজ্য। নিজেকে ভালবাসলে আয়নার সামনের মেয়েটাকে মনে হবে সব চেয়ে সুন্দর মেয়ে, যার চোখে প্রচণ্ড মায়া আর হাসলে গালে আনন্দ ভাঁজ হয়ে লেগে থাকে ।
জাস্ট নিজেকে সুন্দর ভাবতে শুরু করুন, তারপর মাথা থেকে ঐ যে সুন্দরের ফালতু কনসেপ্টগুলো ফেলে দিন এবং আয়নায় দাঁড়ান । দেখবেন আপনি নিজে আপনার প্রেমে পড়েছেন।
অনেক ভালো বলেছেন বর্তমানের অবস্থাটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে চিন্তাধারা বদলানো উচিত। লোকের কথায় আমরা বেশি মনোযোগ দেই।
লেখাটা সত্যিই দারুন। চালিয়ে যান।
লিখাটি ছোট , কিন্তু সময়উপযোগী ও বেশ গোছানো। ধন্যবাদ লেখক কে।
লেখাটা খুব ভালো লেগেছে ।
ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটার জন্য।
কিছু কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলা থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি । এগুলো থেকে বেরিয়া আসা উচিত ।
আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।সব থেকে এই কথা তা ভাললাগেছে ( সন্তানের কোন খুঁৎ মায়ের চোখে পড়ে না।)
ধন্যবাদ 🙂
If thoughts are only electrochemical signals of neuron then why there are handful of good thinker when everyone has neuron and electrochemical signal??
সুন্দর লেখা
লেখাটা সুন্দর হয়েছে ।
লেখাটি বেশ মজার। প্রথমে ভেবেছিলাম কোন তাত্ত্বিক আলোচনা। পড়ে পরে বুঝলাম বর্তমান মিডিয়ার কারসাজিতে ব্যক্তিজীবন নাজেহালের ঘটনা। লেখাটি খুবই ছোট। তবে ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ । 🙂
ভালো লাগলো লেখাটা । পরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার প্রাচীন মেয়েলি এই রেওয়াজ বর্তমানে বানিজ্যিক রুপ নিয়েছে । চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা । ভোগের সামগ্রী হিসেবে এখনো নারীরাই শীর্ষ এ । আধুনিক মানুষ হিসেবে এ লজ্জা রাখবেন কোথায় ।
আমরা যেমন পশু, পাখি লালন পালন করি ভোগের জন্য , তেমনি আধুনিক মিডিয়া গুলোও খুঁজে খুঁজে এনে অতি যত্নে গড়ে তোলে আবেদনময়ী নারী ।হায় সভ্যতা ! তুই কোন দিকে চলিস ? সামনে নাকি পিছনে ?