Human history began when men created gods. It will end when men become gods
মানুষের ইতিহাসের ইতি ঘটবে যেদিন মানুষ নিজেই ঈশ্বরে রূপান্তরিত হবে। ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারি বলেন, “আমরা ক্রমাগত ঈশ্বরে পরিণত হওয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।”
ইউভাল নোয়াহ হারারি একজন ইজরায়েলি ইতিহাসবিদ এবং আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ বিক্রিত ‘স্যাপিয়েন্স’ বইয়ের লেখক। মানুষের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সে বিষয়ে তিনি ‘হোমো ডিউস’ নামে আরও একটা বই লিখেছেন। তিনি সম্প্রতি লস এঞ্জেলসে ‘বারগ্রুয়েন্স ইন্সটিটিউট’ এবং ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ডপোস্ট’ অফিসে একটা সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি নতুন কর্তৃপক্ষ ডাটাইজম বা তথ্যবাদ এবং ঈশ্বরের মত সর্বক্ষমতাময় বিজ্ঞানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন ভবিষ্যৎ মানুষের ছক এঁকে দিচ্ছে বিজ্ঞান এবং নতুন প্রজাতির অজৈবিক প্রাণীর জন্ম দিচ্ছে যার নাম হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: আপনার আগের বই স্যাপিয়েন্সে আপনি পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা বাস্তবে অস্তিত্ব নাই এমন কল্পিত বিষয় এমনকি মামুলি সংকেত যেমন পৌরাণিক কাহিনী, ধর্মের ধারণা নিয়ে নিজেরা সংগঠিত হতে পারে। হোমো ডিউস বইতে আপনি আলোচনা করেছেন যে নতুন একটা চিন্তাধারা আবির্ভূত হয়েছে যার নাম ডাটাইজম বা তথ্যবাদ যা মানুষকে নতুনভাবে সংগঠিত করছে। তথ্যের ভাণ্ডারের সাথে যখন জীববিজ্ঞানের বিয়ে হবে, প্রকৃতপক্ষে এমনটাই ঘটতে চলেছে যেমনটা আমরা বলছি, তাহলে আপনার আমার সবার জন্য মাথা ব্যথার বিষয় যে, তথ্যের সাথে জীববিজ্ঞানের মিশ্রণ জৈব উপাদান কিছু তথ্যের সমষ্টিতে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং পূর্ব নির্ধারিত অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রত্যাশিত চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে। যারা ইতিমধ্যে প্রাণকে অ্যালগরিদম হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা বিশ্বাস করেন মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জিনকে ইচ্ছেমত সাজানো সম্ভব। তাহলে কম্পিউটার যদি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে বেশি তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারে এবং ছক কষতে পারে তাহলে আমরা অজৈব প্রাণী-সৃষ্টি করতে পারবো। যার নাম হতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
নিশ্চিত থাকুন, কোন মরণঘাতী ভাইরাসের রহস্য উন্মুক্ত হয়ে যদি মহামারী আকারে রোগ বিস্তার করতে শুরু করে তখনও হয়ত মানুষ তাকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু মানুষ বলতে আমরা ভালোবাসা, সহানুভূতি, সৃষ্টিশীলতা, রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি দোষগুণের মিশ্রণ মনে করি, তাহলে অ্যালগরিদমের এই যুগে এসে মানুষ বলতে আমরা কী বুঝব? মানুষ কি তাহলে মানবিক গুণাবলী আর কম্পিউটারের সাংকেতিক ভাষার মাঝামাঝি কোন অবস্থায় পরিণত হবে? ঈশ্বরের মত অমিত শক্তিশালী সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সেই মানুষ প্রজাতি কি মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে নাকি তারা হবে আশু অন্ধকারের ভবিষ্যৎবাণী?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: প্রতিটি প্রধান আবিষ্কারের ভালো এবং মন্দ দুইটা সম্ভাবনাই আছে। কিন্তু সেটা পরিমাপের পন্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি আমার বইয়ের নাম ‘হোমো ডিউস’ রেখেছিলাম এই কারণে যে, মানুষ সত্যি সত্যি আক্ষরিকভাবেই যথাসম্ভব ঈশ্বরে পরিণত হচ্ছে। আমরা এমনকিছু ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠছি যা সবসময় ভেবেছি সেটা বুঝি ঐশ্বরিক ক্ষমতা বিশেষত যখন আমরা প্রাণ সৃষ্টির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এবং আমাদের সৃষ্ট সৃষ্টি দিয়ে যা খুশি তাই করতে পারি।
ইতিপূর্বে আপনি বলেছেন মানুষ কীভাবে নিছক কিছু কল্পিত ধারণার উপর ভিত্তি করে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার কী বিস্তৃত জাল সৃষ্টি করেছে। আমি নিজে ‘কল্পিত ধারণা’ শব্দটিকে খুব বেশি পছন্দ করি না কারণ অধিকাংশ মানুষই কল্পিত ধারণা নিয়ে চিন্তা করে না। কল্পিত ধারণা নিয়ে চিন্তা করা সাধারণ মানুষের জন্য খুব কঠিন। বরং তারা আবহমান কাল ধরে প্রচলিত গল্প নিয়ে চিন্তা করে। ভালো গল্পগুলো কখনোই নিছক কল্পনা নয়, তারা অনেক জীবন্ত। যদি আপনি বড় বড় ধর্মগুলোর দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন ধর্মগুলো মানবজাতির বিপুল পরিমাণ মানুষকে একত্রিত করেছে। মানুষ বিশ্বাস করে দেবতাদের অস্তিত্ব আছে। আকাশের ওপারে একজন রাগান্বিত বৃদ্ধ-লোক বসে আছে, যদি আমি ভুল কিছু করি, তাহলে তিনি আমাকে শাস্তি দিবেন।
আমার বইতে আমি কল্পিত ধারণার বদলে সাহিত্যের গল্প শব্দটি ব্যবহার করেছি, কারণ বাস্তবিকভাবে গল্পই মানুষকে একত্রিত করেছে। নতুন নতুন বিপ্লবের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য যা এখন আমরা বুঝতে পারছি। বাস্তবে কল্পনায় কোন বিপ্লব হয় না, বিপ্লব সত্যি সত্যিই ঘটে।
আপনার জীবনে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনি এখন আর ঈশ্বরের কাছে ফরিয়াদ করেন না, আপনি গুগল বা ফেসবুকের কাছে জানতে কারণ জানতে চান
ডাটাইজমের প্রাথমিক ধারণা হলো কর্তৃপক্ষের পালাবদল। অতীতে ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ আকাশে মেঘের ওপারে বাস করতেন এবং তাদের পরম্পরা ছিল পোপ, রাজা বা সম্রাট। এরপরের দুই তিনশ বছরে ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ মেঘ থেকে নিচে নেমে এলেন আর ঠাই নিলেন মানুষের হৃদয়ে। এখন আপনার অনুভূতিই সর্বোচ্চ ক্ষমতা, আপনিই আপনার কর্তৃপক্ষ। ভোটারের যৌক্তিকতা নয়, গণতন্ত্রে ভোটারের আবেগ দিয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হয়। অর্থনীতিতে ভোক্তা সমাজের ক্রেতার আবেগ অনুভূতি দিয়ে নির্ধারিত হয় কেমন হবে প্রতিটি বাজার ব্যবস্থা। নীতিশাস্ত্রে প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের একান্ত ভাবনায় হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। “যদি ভালো লাগে, করো” এটাই হলো মানবিকতার প্রধান নীতিগত আদর্শ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে অতীত ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ মেঘ থেকে নেমে মানুষের হৃদয়ে অবস্থান নিলেন এবং এখন গুগল বা মাইক্রোসফটের ক্লাউডে রূপান্তরিত হয়েছেন। তথ্য এবং তথ্যকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এখন নতুন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে আপনি কী পড়বেন, কাকে বিয়ে করবেন অথবা কাকে ভোট দেবেন আপনার জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এরকম প্রাত্যহিক কোন সমস্যায় পড়লে আপনি মেঘের উপরের ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞেস করেন না বা আপনার নিজের অনুভূতির উপরও নির্ভর করেন না বরং আপনি গুগল বা ফেসবুকের কাছে সমস্যার কথা জানতে চান। গুগলের কাছে যদি আপনার সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য থাকে এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকে তাহলে তারা জানে ইতিমধ্যেই আপনি কী নিয়ে ভাবছেন এবং কীভাবে ভাবছেন। বিশ্লেষিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে গুগল বা ফেসবুক আপনার পক্ষে আপনার থেকেও ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: তাহলে চূড়ান্ত বাস্তবতার ঘোষণা হলো- যা আপনার পরিচয়কে শুধু তথ্যে সংকুচিত করে দিচ্ছে সেই তথ্য কি আগে পূর্ব থেকেই অনুমিত নাকি অন্যকোন মাধ্যম থেকে সংগৃহীত? অথবা এটা কি সম্পূর্ণ বিপরীত কোন ব্যাপার যেমন কারো ব্যক্তিগত পছন্দ বা অগ্রাধিকারের কারণেই উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটছে? অথবা বিষয়টা কী এমন যে, ব্যক্তিকে পক্ষপাত করে অ্যালগরিদম ইনপুটের জটিলতা নাকি ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য আর অ্যালগরিদমের যৌথ মিশ্রণ?
হারারি: আপনি কি মনে করেন এটা সত্যি?
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: অবস্থাদৃষ্টে আমার কাছে যা মনে হয় তা হলো প্রযুক্তির দুইটা অগ্রগতি সমানভাবে এগিয়ে চলছে। তথ্য গ্রহণ, কৃত্রিম বোধবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত সামাজিক গণমাধ্যম প্রতিটি মানুষের বিপুল পরিমাণ তথ্য যোগাড় করে গাণিতিক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কোন চূড়ান্ত লক্ষ্যে কাজ করে। একই সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি ঘটনার উদ্দেশ্যের বিস্ফোরণ। বিকল্প ঘটনা বা তথ্যের সত্যতা, বানোয়াট সংবাদ যেগুলো বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আপনার সমমনা সঙ্গীরা হয়তো এতে পছন্দ বা অপছন্দ কিছুই করছে না।
হারারি: আমি মনে করিনা ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্যে শব্দের অর্থ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার ঘটনা নতুন কোন ঘটনা, শব্দের অর্থ বদলে দেয়া বর্তমানে নতুন নয়। হাজার হাজার বছর ধরে শব্দের অর্থ বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। প্রতিটি বড় বড় ধর্মই বানোয়াট তথ্য আর গুজবের উপরে প্রতিষ্ঠিত। বাইবেলের কথাই চিন্তা করুন। বানোয়াট সংবাদই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী আসন দখল করে নেয়।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: অনন্তকালব্যাপী বানোয়াট সংবাদ……
হারারি: পৃথিবীর বৃহত্তর পরিসরের ঐতিহাসিক সংগ্রামে ইতিহাস কখনো সত্যের সাথে সন্ধি করে না। ইতিহাস সেই গল্পই বলে যে গল্প বাজারে চলে এবং সচারচর কার্যকর এবং প্রচলিত গল্পগুলো সত্যি নয়। যেসব মতবাদ বা ধারণায় মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করে কিছুদিন আগে বা পরে হলেও সে বুঝতে পারে কিছু একটা অসত্য ঢুকে পড়েছে। সব বড় বড় ধর্মগুলোর ক্ষেত্রে একই মিথ্যার পুনরাবৃত্তি।
যদিও একটা ভালো সম্ভাবনা আছে যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করলে অ্যালগরিদম একদিন যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিথে পরিণত হবে। মানুষ তখন অ্যালগরিদমে বিশ্বাস করা শুরু করবে। মানুষ স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে অ্যালগরিদমের হাতে সেই কর্তৃত্ব তুলে দেবে এবং প্রযুক্তির যে উৎকর্ষতার যুগে আমরা বাস করবো সেখানে অ্যালগরিদমই হবে বাস্তবতা। আমাদের চতুর্দিকে এখনি অ্যালগরিদমের রাজত্ব চলছে। আপনি যখন কোন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেন বা কোন বড় কর্পোরেশনে চাকরির জন্য আবেদন করেন তখন আপনার আবেদন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং সেখানে মানুষের কোন সংস্পর্শ থাকে না। ধরি, অ্যালগরিদম আপনাকে ফিরিয়ে দিলো তখন কিন্তু আপনি আর ঐ কোম্পানিতে চাকরি পাবেন না বা সেই ব্যাংক আপনাকে লোন দেবে না। আপনি হয়ত কোম্পানির কাছে গিয়ে বললেন, “কেন আমি চাকরিটা পেলাম না?” তখন কোম্পানি আপনাকে বলল, “কারণ অ্যালগরিদম বলেছে, তাই এই কোম্পানিতে আপনার চাকরি হবে না। ”আপনি আবার প্রশ্ন করলেন, “অ্যালগরিদম কেন আমাকে না করে দিলো?” তখন কোম্পানি থেকে জানালো, “সেটা তো আমরা জানি না।” যদি আমরা নিজেদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে বুঝতে পারতাম, তাহলে আমাদের আর অ্যালগরিদমের দরকার হতো না।
নতুন প্রজন্মের কম্পিউটারের অ্যালগরিদম এতই সংগঠিত যে কম্পিউটারের সফটওয়্যার নিজেই নিজেকে শিক্ষা দিতে সক্ষম। অত্যাধুনিক এই সফটওয়্যার বিশাল তথ্যের ভাণ্ডার থেকে মানুষের পছন্দ অপছন্দের ধরণ নির্ধারণ করতে পারে যেটা মানুষ করতে পারে না। যেমন কর্পোরেট কোম্পানির কাজের জন্য আপনি উপযুক্ত কিনা সেটা কোন মানুষের তথ্য দেখে অ্যালগরিদম সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আমরা দিনের পর দিন কম্পিউটারের বিশ্লেষণের উপর বেশি বেশি আস্থা স্থাপন করছি।
কম্পিউটারের এমন অভূতপূর্ব উন্নতি আমাদের সামনে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে এবং এর অনেক ভাল দিক আছে কিন্তু একই সাথে সমূহ মহা বিপদের ঝুঁকিও আছে। ২০ শতকে আফ্রিকান, আমেরিকান, নারী, সমকামী অথবা ইহুদীদের মত সমগ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিসংখ্যানের তথ্য উপাত্ত দিয়ে মিথ্যা সংবাদের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।
মানুষ এখন অতীতের সেইসব দিনের দিকে তাকিয়ে বলছে, “আমাদের অবশ্যই নতুন করে যুদ্ধ করতে হবে, হ্যাঁ, সম্ভবত কিছু ক্ষেত্রে পুনরায় যুদ্ধের দরকার আছে। ”কিন্তু একজন সামরিক রণকৌশল বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি জানি, মানুষ অতীতের ঘটে যাওয়া যুদ্ধের জন্য অনুশোচনা এবং প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সামনে আগত যুদ্ধে হেরে যায়। অনাগত দশকে বিপদের ঝুঁকি শ্রেণি বৈষম্য থেকে আসবে না কিন্তু বিপদ আসবে কাফকার জাদুবাস্তব গল্পের মত প্রতিটি মানুষের উপর ব্যক্তিগত বৈষম্য সৃষ্টির কারণে। আধুনিক কম্পিউটারের অ্যালগরিদমের বৈষম্য আপনাকে কোন ঋণ দেবে না, আপনাকে কোন চাকরিতেও নিয়োগ দেবে না কারণ অ্যালগরিদম আপনাকে উপযুক্ত মনে করছে না। অ্যালগরিদম জানে না আপনি ইহুদি নাকি মুসলিম নাকি সমকামী এবং এসব কারণেও আপনার সাথে অ্যালগরিদম বৈষম্য করছে না। কিন্তু অ্যালগরিদম যে কারণে বৈষম্য করছে সেটা আপনি নিজেই।
আপনার তথ্যেই এমন কোন ঝামেলা আছে যার জন্য অ্যালগরিদম আপনাকে পছন্দ করে না। বিষয়টা এমন না যে আপনি কোন বিশেষ শ্রেণিতে পড়েছেন বলেই আপনার সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। আপনি নিজেই নিজের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আপনার সাথে বাকি অন্যদের তথ্যের এমন কিছু বৈপরীত্য আছে যার কারণেই অ্যালগরিদম আপনাকে নিয়ে শঙ্কিত। আপনি হয়ত জানেনও না আপনার অলক্ষ্যে কী ঘটে গেছে। এমনকি আপনি যদি বুঝেও যান অ্যালগরিদম কী কারণে আপনার সাথে বৈষম্য করছে তাহলে তাকে প্রতিহত করার জন্য আপনি কারো কাছে অভিযোগ জানাতে বা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না কারণ পৃথিবীতে আপনার মত আর কেউ এই ধরণের বৈষম্যের শিকার হয় নি। মুদ্রার অপর পিঠে বর্তমানে যে বিষয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে সেটা হলো অ্যালগরিদমের প্রতিটি ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র করে আলাদা করার ক্ষমতা। আপনি শুধু একজন মানুষের জন্য একটা আস্ত বই লিখতে পারেন, একজন মানুষের জন্য একটা গান বা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানাতে পারেন। সুতরাং আমরা যেমন একজন মানুষের জন্য কোনকিছু সৃষ্টি করছি তেমনি একজন মানুষকে বৈষম্যের শিকার বানাচ্ছি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অত্যন্ত উল্লসিত যে তারা অতি শীঘ্রই পুরো দেশটাকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করার মত প্রযুক্তি পেতে যাচ্ছে। গাজার অধিকৃত অঞ্চলেও এই নজরদারি ও তদারকি প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন ইজরায়েল পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর না করে দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় এবং প্রতিটি ব্যক্তি মানুষকে আলাদা করে অনুসরণ করতে পারবে।
We are developing the capacity to create for one person but also the capacity to oppress just one person.
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: এখানেও আমাদের একই রকম ভাষ্য, যেসব অদৃশ্য নিয়ামক যা আমাদের প্রত্যেক মানুষকে ব্যক্তি বিশেষে পরিণত করেছে যেগুলো হয়ত হারিয়ে গেছে, সেসব নিয়ামকগুলো দুইটা সাংকেতিক সীমারেখার মধ্যে পড়ে যার ফলে ব্যক্তি মানুষটি আর প্রত্যাশিত নকশার সাথে মিলছে না। ফলে সে ব্যক্তি মানুষটি অ্যালগরিদমের বিভাজন খড়গের নিচে পড়ে গেল তখন সে অবাস্তব মানুষ হয়ে গেল।
মানুষের এই ধরণের অবাস্তব হয়ে যাওয়া বিশেষ করে যখন বিশাল পরিমাণ তথ্যের ভাণ্ডারের সাথে অ্যালগরিদম সম্মিলিতভাবে কাজ করে তখন জীববিজ্ঞান মানুষের মানবিক বোধ কমিয়ে নতুন একটা সাহসী জৈব-তন্ত্রের জন্ম দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জৈব-তন্ত্র কি মানুষের জীবনের শুক্রাণু থেকে জীবাণু, জঠর থেকে কবর পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করবে? সংক্ষেপে যদি আমি প্রশ্ন করি, অ্যালগরিদমের দৈবচয়নের কারণে যদি ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কি মানুষের নিজস্বতা হুমকির দিকে এগিয়ে যায় না?
হারারি: অবশ্যই। কিন্তু আবারও বলছি, এখানে সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটিই বিদ্যমান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যালগরিদমের প্রভূত মঙ্গলময় দিক আছে। আজকের দিনেও পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ যথাযথা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। রোগ নির্ণয়ের জন্য তাদের কোন চিকিৎসক নাই, নাই ব্যবস্থাপত্রানুযায়ী কোন ওষুধের নিশ্চয়তা। সেইদিন দূরে নয় যখন কম্বোডিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত স্মার্ট ফোনের সাহায্যে আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মানুষ চিকিৎসকের থেকে উন্নত স্বাস্থ্য পরামর্শ পাবেন।
২১ শতকের সবচেয়ে সংগ্রাম হবে ব্যক্তি মানুষের গোপনীয়তা এবং স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যই জিতে যাবে। বেশিরভাগ মানুষই গুণগত স্বাস্থ্যসেবার বিনিময়ে নিজেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিলিয়ে দেবে। তখন মানুষ তাদের শরীরের অভ্যন্তরে ২৪ ঘণ্টায় কী ঘটছে সেটা তদারকি করার সুযোগ দেবে। খুব শীঘ্রই মানুষ তাদের শরীরে এমনকি অভ্যন্তরের বায়োমেট্রিক সেন্সর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে তখন হয়ত মানুষ ফেসবুক বা চীনা সরকার বা অন্য কাউকে তাদের শরীর অভ্যন্তরে কী ঘটছে সেটা সার্বক্ষণিক তদারকি করার অনুমতি দেবে। যেদিন থেকে তাদের শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু প্রথম বাসা বাঁধবে এবং ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে সঙ্গে সঙ্গে গুগল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ তার শরীরের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ শনাক্ত করে ফেলবে এবং অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেবে। যেদিন থেকে কোন জ্বর মহামারী আকার ধারণ করবে সেদিন থেকেই কর্তৃপক্ষ জানতে পারবে কে রোগজীবাণু বহন করছে, ফলে তারা খুব দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে এবং স্বল্প খরচে রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে। সুতরাং সম্ভাবনা বিপুল।
বিপদের সম্ভাবনাও প্রচুর। একটু উত্তর কোরিয়ার কথা চিন্তা করুন। মনে করুন, একজন মানুষ বায়োমেট্রিক ব্রেসলেট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন সে দেয়ালে দেখতে পেল স্বৈরশাসক কিম জং উন এর পোস্টার এবং তার রক্তচাপ বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে অ্যালগরিদম রক্তচাপকে রাগের সাথে তুলনা করে ফেলল। ব্যাস, সেখানেই তার ভবলীলা সাঙ্গ।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: চীন ইতিমধ্যেই তাদের দেশে “সোশ্যাল ক্রেডিট” নামে একটা ব্যবস্থা চালু করেছে যার ফলে প্রতিটি মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে যেমন মানুষটি কী কেনে, কার সাথে কথা বলে, রাস্তায় চলা পথে কোন আবর্জনা ফেলে দিলো কিনা। কোন ব্যক্তি বিশেষের কাজের উপর নির্ভর করে সে সারা জীবন স্কোর পেতে থাকবে যার ফলে সে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে বা বাড়ি কেনার জন্য ঋণ পাবে। এই স্কোর দেখেই বোঝা যাবে তার রাজনৈতিক আনুগত্য এবং অফিসে কোন দুর্নীতি করে কিনা।
হারারি: ভবিষ্যতে আমরা এরকম আরও দেখতে পাবো সর্বত্র। এরকম প্রকৃত অভিযোগ এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, স্বাস্থ্য সুবিধার আড়ালে না জানি কী লুকিয়ে আছে! কিন্তু মানুষ স্বেচ্ছায় নিজেদের গোপনীয়তা উন্মুক্ত করে দেবে।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: স্বাস্থ্যসেবা হলো সেই দেবতা যা হলো তথ্যভাণ্ডারের ঈশ্বরে আনুগত্য স্থাপনে বাধ্য করবে।
হারারি: ঠিক তাই। অনাগত শতাব্দীতে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আর স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে প্রধান দ্বন্দ্ব দেখা যাবে এবং সেখানে স্বাস্থ্যসেবা জয় লাভ করবে।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: আপনার তথ্যবাদের ধারণা কিভাবে একাকীত্ববাদের সাথে সম্পর্কিত? আপনি কি মনে করেন একাকীত্ববাদ এমন একটা বিজ্ঞানভিত্তিক অবস্থা যে ব্যক্তি মানুষের সম্মিলিত সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়া? তথ্যবাদ বিষয়টা কি পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে হঠাৎ করে কোন অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে যাওয়া বা মানুষের জীবনের উপরে অ্যালগরিদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া? অন্যদিকে বাস্তুসংস্থান মানুষের সম্ভাবনা এবং প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। তাহলে আপনার তথ্যবাদ কোন পরিবেশের সাথে মানানসই?
হারারি: তথ্যবাদের সাথে মানুষের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমার কাছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে মনে হয় এমন একটা অবস্থা যেখানে আমাদের সমস্ত কল্পনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ কারণ মানুষের কল্পনা হলো মানুষ যা জানে তারই একটা রকমফের মাত্র। এমন অনেক বিষয় আছে যার মাধ্যমে আমরা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ধারণায় পরিবর্তিত হতে পারি। এটা হতে পারে জৈব-প্রকৌশলের ব্যাপক উন্নতির মাধ্যমে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবন করে অথবা দুইটার সমন্বয়ের মাধ্যমে। হতে পারে এটা সম্পূর্ণ নতুন কোন প্রযুক্তির আবিষ্কার যার খোঁজ এখনো আমরা পাইনি। প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো আপনি হয়ত প্রযুক্তির উন্নয়নে একটা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন যেখানে আপনার কল্পনার সব রঙ মিশে গেছে এবং জেনে গেছেন মানুষের আদ্যোপান্ত। তখন আপনার কাছে পৃথিবীকে মনে হতে পারে অপ্রাসঙ্গিক কারণ, আপনি জানেন, সবকিছুই তো পরিবর্তনীয়।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: মানুষ বাস্তুসংস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানের প্রতিশ্রুতি এবং তথ্যবাদের আশু বিপর্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বেড়ায় যাতে মানুষ প্রকৃতি থেকে অধিক সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং বিজ্ঞানের অন্ধকার দিকের দ্বারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি বলছেন আমাদের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা উচিৎ এবং পরিবর্তনে সামিল হওয়া উচিৎ।
হারারি: আমি বলছি না ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ বা তথ্যবাদ আহামরি ভালো কিছু। আমি শুধু মানুষের ইতিহাসের দীর্ঘ বাঁকের উত্থান পতন দেখছি। মানুষ সময়ের সাথে সাথে যত উন্নতি করেছে ততই সে প্রকৃতির ভারসাম্য ছাপিয়ে বেশি বেশি সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। যখন আপনি প্রকৃতির কোন ব্যবস্থাকে কোন বিশেষ সুবিধার নিরিখে পরিচালনা করেন এবং তারপরে প্রকৃতিকে পুনরায় আগের ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করবেন এর ফলে হয়ত আপনি কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারবেন কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুধু ভারসাম্যহীনতায় বাড়াবে। সুতরাং সমস্যা কিন্তু আরও বাড়ছে। তখন মানুষের প্রতিক্রিয়া হলো প্রকৃতিকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করো, আরও বেশি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যবহার করো।
১৯’শতকে ফিরে যান এবং কার্ল মার্ক্সের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়েন, দেখবেন সেখানে মার্ক্স বলেছেন, “যা কিছু কঠিন সেটাই বাতাসে পরিণত হবে।” মার্ক্সের ইতিহাস পাঠের আলোচ্য দিক হলো আধুনিক সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের ক্রমাগত পরিবর্তন এবং দ্বন্দ্ব। মার্ক্সের অনুসিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি কখনো ভারসাম্য করতে পারবেন না। আধুনিক সমাজে তো ভারসাম্য অনেক আগেই মৃত। আপনি যদি ভারসাম্যে পৌঁছাতে চান তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়বে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্থনীতিকে সব সময় প্রবৃদ্ধির উপর নির্ভর করতে হয়। আমরা যদি শূন্য প্রবৃদ্ধিতে নেমে আসে এবং কয়েক বছর যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে তাহলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: আমার কাছে মনে হয় আপনার “হোমো ডিউস” বইটা সত্যিকার অর্থেই গ্যাঁটে’র ফাউস্ট নাটকের অসাধারণ আধুনিকায়ন। জগদ্বিখ্যাত এই সাহিত্যকর্মে পৃথিবীর প্রাণ যেন ফাউস্টকে বিদ্রোহী করে তোলে এবং ফাউস্ট দুনিয়ার সবকিছু অর্জন করতে চায়। ফাউস্ট বলছে, “আপনার আত্মাকে আপনি যতটা চিনতে পারেন, আপনি ঠিক ততটুকু” অর্থাৎ মানুষের জ্ঞানের পরিধি দেবতাদের সমকক্ষ নয়। আপনি কি আমার সাথে একমত?
হারারি: বিষয়টা সেরকম কিছু নয়। ফ্রাংকেনস্টাইনের মত ফাউস্ট বা “দ্য ম্যাট্রিক্স” সিনেমার এখনো মানবিক দিক আছে। এই মিথগুলো মানুষকে নিশ্চয়তা দেয় যে যা কিছুই ঘটুক না কেন মানুষের নিজের থেকে ভাল কিছুই নাই। আপনি যদি নিজের থেকে ভালো কিছু সৃষ্টি করতে চান তাহলে সেটা দুর্দশা ডেকে আনবেন এবং আপনি কখনো সফল হতে পারবেন না। সব নৈতিক শৃঙ্খলার শিক্ষা এই যে, প্রথমত, মানুষ প্রযুক্তির যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় হয়ত কল্পনার সর্বাঙ্গ সুন্দর জগত সৃষ্টি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সেখানে দেখা দিতে পারে বিবিধ বিপত্তি। তৃতীয়ত, দেখা দেবে আশাভঙ্গের অভিশাপ, সর্বাঙ্গীণ সুন্দর পরিণত হবে বিরান শ্মশানে। মানুষকে এটা বলে শান্ত করা খুব সহজ যে, মানুষের চেয়ে নহে কিছু মহীয়ান যা মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে ট্যালেন্টে আর টিআরপি’তে। ঠিক এই কারণেই আমি আলডাস হাক্সলি’র “ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড” বইটা এত-বেশি পছন্দ করি। এখানে হাক্সলি কয়েকটি চিত্রকল্প ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন যেমন প্রথমত, আমরা কল্পনার জগত সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলাম, দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা সফলতাও পেয়েছিলাম। এবং সফলতায় ভয়ানক। এমনকিছু বেরিয়ে পড়তে পারে যা আগের থেকেও ভাল।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: কিন্তু সফলতা হলো ব্যর্থতার সোপান যেখান থেকে মানুষের নিজের স্বাধীনতা এবং আত্মপরিচয় মুছে যাওয়ার শুরু।
হারারি: এটা আলোচনার জন্য সর্বজনের কাছে উন্মুক্ত প্রশ্ন। বেশীরভাগ মানুষ হয়ত এভাবেই চিন্তা করতে পছন্দ করে। হয়ত আশঙ্কা বাস্তবে নাও ঘটতে পারে।
ওয়ার্ল্ডপোস্ট: কিন্তু ইতিহাস এতদিন পর্যন্ত এই শিক্ষাই দিয়ে এসেছে। আপনি কি এখন ভিন্ন কিছু বলতে চাচ্ছেন?
হারারি: পৃথিবীর এবং ফাউস্টের মূল ভাবনার কাছে যদি আপনি ফিরে যান তাহলে দেখতে পাবেন, মানুষ এখন এমনকিছু করছে যা বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচন করত না। মানুষ এখন অজৈব জীবন সৃষ্টি করছে আমরা যার নাম দিয়েছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আপনি পৃথিবীতে প্রাণ বিকাশের মহাজাগতিক ৪ বিলিয়ন বছর বয়সের দিকে তাকান, অথবা মানুষের ৫০০০০ বছরের ক্ষুদ্র সময়ের ইতিহাসের দিকেও তাকান তাহলে দেখতে পাবেন, মানুষ জীবনের জৈবিক বন্ধন ভেঙে ফেলার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। তাহলে আমরা পৃথিবীর প্রাণের কাছে ফিরে গিয়ে বলতে পারি, “জীবন সম্পর্কে তুমি কী ধারণা করো? পৃথিবী তুমি নিজে নয়, বরং আমরা মানুষ নিজেদের যতটা চিনতে পেরেছি আমরা ঠিক ততটুকু।” মানুষের ইতিহাস শুরু হয়েছিল মানুষের হাতে ঈশ্বর সৃষ্টির মাধ্যমে এবং সেই ইতিহাসের সমাপ্তি হবে মানুষ যখন নিজেই ঈশ্বরে পরিণত হবে।
মূল প্রবন্ধ:Historian: Human History ‘Will End When Men Become Gods
হারারির আরও দুটি সাক্ষাৎকার:
মানুষ হলো সত্য বিবর্জিত প্রাণী: ইউভাল নোয়াহ হারারি
জঙ্গিবাদের নাট্যমঞ্চ-নোয়াহ হারারি
ভালো অনুবাদ। ধন্যবাদ বিকাশ মজুমদার!
হারারি যে বিষয়গুলো বোঝাতে চাইছেন তা একবাক্যে সবটুকু মেনে নিতে বা উড়িয়ে দিতে পারি না। তবে, আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থায় আছি যেটা এখনও বর্তমান বিশ্বের উন্নত শিক্ষার সাথে তাল মিলাতে পারিনি। ফলে, হারারির ধারণাগুলো বুঝতে বেশ কঠিন হবে।
দারুন, অনেক ধন্যবাদ
অনেক সুন্দর অনুবাদ ৷
এমন আরো চাই ৷
ধন্যুবাদ আপনাকে।